নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

✍️সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র





✍️সম্পাদকীয়....


"ভাঙছে হৃদয়।মোমবাতি মিছিল।
অবরোধ কিংবা পলিটিক্যাল ইস্যু...
এসো তবে ধর্মান্ধতা।অভিমান।হিংসা
        বিসর্জন হোক সব কিছু'র..."



দেখতে দেখতে পুজো শেষ।কারো ফিরে যাবার পালা ,কারো বা সেই রোজ ব্যস্ত ভিড় বাসে কিংবা ট্রেনে একটু বসবার জায়গার সেই ঠেলাঠেলি ।ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়া মুখ ,একাকী হাটা পথ ,নিজেকে বন্ধ করে দেওয়া সেই মানুষটা হয়তো আবার হারিয়ে যাবে ।


শহরে সেই আলোয় আলোয় ভরে উঠা অন্ধকার গলি পথ ,ব্রিজের নীচে বিষণ্ন মুখ ,খদ্দেরহীন আবার, রাত পাহারা দেবে কেউ খামোখা ,তুমি "প্রেম নয় নরম শরীর খোঁজে আচর দিয়েছো যাকে"



ভাসানের সুর বেজে ওঠে তারপর ,কই এলো নাতো সে এবারেও ,সদ্য বিয়ে হওয়া বিরোহিনী রাই এখন পথ চেয়ে ।অথচ সে কোনো দিনই ফিরবে না জেনেও প্রতীক্ষাটা বেঁচে থাকে ,বেঁচে থাকতে শেখায় ।ল্যান্ড মাইনে ছিন্ন ভিন্ন ঝলসে যাওয়া মুখটা প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা মাত্র ।



ছোট্ট মেয়েটাকে তার মা সামলে রাখে খুব ,হারিয়ে যদি যায় ,তার নিখোঁজ প্রেমিক ফেরেনি আর বিসর্জন এ ।


ব্যর্থ প্রেমিক কবি হয়ে উঠে তারপরও 

অনেক কিছু পাওয়া অনেক কিছু হারিয়ে যাওয়ার মাঝেই কেটে গেল পুজোর এই কয়েকটা দিন 

সব থেকে খুব কাছের লোককে হারালাম এবারেও 

প্রিয় শিল্পী"আইয়ুব বাচ্চু" ও কবি ও সম্পাদক পৌলমী সেনগুপ্ত "মহাশয়া কে 

 "কেন তুমি এতো অচেনা হলে" এর মত হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গানের সুরে তবুও বেজে ওঠে ভিতরে সত্যিকি অচেনা হবেন তারা ? না! হবেন না রয়ে যাবে হৃদয়ে হৃদয়ে ,




ঠিক এমনি এক মরশুমে কিছু কলমের আগুন জ্বলে উঠল আমাদের "বিসর্জন" এর সংখ্যা 

প্রীতিবারের মতো এবারও আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন অতিথি কবি হিসাবে মৌসুমী ভৌমিক মহাশয়া ,অনেক অনেক ধন্যবাদ উনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য 

এবারেও আমরা অনেক জনের লেখা পেয়েছি ,অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সকলকে ,
এভাবেই সঙ্গে থাকুন ,ভালো থাকুন সবসময়।



                         ধন্যবাদান্তে,
                             জ্যোতির্ময় রায় 
                       কার্যকরী সম্পাদক 






✍️সূচিপত্র.....




অতিথি কবি :
মৌসুমী ভৌমিক 

✍️কবিতা :
রোমা মন্ডল ব্যানার্জি 
অনোজ ব্যানার্জী
মাধব মণ্ডল,
পিয়াংকী মুখার্জী 
বন্দনা মিত্র 
প্রভাত মন্ডল
তপন জানা 
শ্যামল কুমার রায়
রাণা চ্যাটার্জী 
অরিন্দম দাস
বিকাশ মন্ডল 
হোসাইন শাহাদাত
রাজীব লোচন বালা
অক্ষয় কুমার সামন্ত
কাজী জুবেরী মোস্তাক
সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র
সুনন্দ মন্ডল 
চিরঞ্জিত সাহা 
ঋজুলেখা দত্ত 
শ্রাবণী  নায়েক
প্রাপ্তি মণ্ডল ভৌমিক 
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
এস. কবীর
সোমা দাস
কামরুল বসির
যতীন্দ্র নাথ মণ্ডল(অতিথি)
টিংকু রঞ্জন মিত্র
অজন্তা রায় আচার্য্য
তানিয়া ব্যানার্জী,
রূপা রায়
প্রবীর রায়
পাপাই সেন
কার্তিক  ঢক্
অভিজিৎ দাসকর্মকার
পবিত্র কুমার ভক্তা
বৈশাখী চক্কোত্তি
শ্যামাপদ মালাকার
সুপ্রভাত দত্ত 
লীনা দাস
ধীমান ব্রহ্মচারী
আফরোজা সুলতানা 
রণধীর রায়
জারা সোমা
সুষ্মিতা কর
প্রশান্ত সেন, 
কিশলয় গুপ্ত
মোনালিসা নায়েক
অনুপ রায় 
সুদীপ ঘোষাল
বিশ্বজিৎ ভৌমিক
সম্পা পাল 
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
রুদ্র সাহাদাৎ
অমিতাভ মীর 
জয়দীপ রায় 
সুধাশ্রী মণ্ডল
শিল্পী দত্ত

✍️গল্প
পবিত্র চক্রবর্তী
ইমরান হাসান 
নিগার সুলতানা লিয়া 
পিনাকি
সাজ্জাদ আলম 
সোমিনা ইয়াসমিন
স্বরূপা রায়
আবুবকর সরকার 
রাজিত বন্দোপাধ্যায় 
পায়েল মিত্র
রবি মল্লিক
অমৃতা রায় চৌধুরী

✍️অনুগল্প

 শুক্লা মালাকার
মৌমিতা মিত্র
✍️কয়েক কলম: 
রানি মজুমদার




মৌসুমী ভৌমিক








✍️সাক্ষাৎকার
    ***********

প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ?
উত্তর : আমার কাছে কবিতা হল বন্ধু, আমার সুখ, দুঃখ ও যাপনের সঙ্গী।
     ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর : আমার প্রিয় কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর।
   অন্যান্য কবিদের কবিতাই মূলতঃ প্রেরণা।

     ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ?
উত্তর : বলা মুশকিল। তবে একটা কবিতা লেখার পর কিছু শান্তি অনুভব করি। হয়ত তাই লিখি।

     ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত)
উত্তর : প্রথম কবিতা - 'মৌন'। 2011 সালে সানন্দা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
           প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ - 'যাপন'। 2017 সালে উড়ান প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

     ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?
উত্তর : আত্মিক সম্পর্ক হওয়া উচিত। কবিতা যখন মন ছুঁয়ে অন্তর ছুঁয়ে যায়, সে শব্দমালা তখন শুধু কবির নয়, পাঠকেরও হয় বৈকি।

৬. ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ?
উত্তর : ফেসবুক বর্তমান যুগে এক বড় প্লাটফর্ম। আজ যারা ফেসবুকে কবিতা লিখছে, ভবিষ্যতে তাদেরই কেউ বড় কবি হয়ে উঠবে না, এমন কথা বলা যায় না। সময় বলে দেবে এর গুরুত্ব কতখানি।

৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?
উত্তর : যে যার নিজের জায়গায়। ছাপার অক্ষরে লেখা পড়ার যেমন বিশাল সুবিধে আছে, অপরদিকে অনলাইন ম্যাগাজিন খুব কম সময়ে অনেক দুরবর্তী স্থানেও পাওয়া ও পড়া সম্ভব। অনলাইনে অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছানোও সুবিধাজনক।

৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুখ হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর : বই বিমুখতার কারণ বহুবিধ। বইসংখ্যা প্রচুর, তাছাড়া অনলাইনে বই/কবিতা/লেখা পড়ার ফলে কেনার চাহিদাও কমে যাচ্ছে। তবে ভাল বইয়ের পাঠক আজও বর্তমান।

৯. উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ?
উত্তর : যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কবিতারও আধুনিকীকরণ ঘটবে, এটাও কাম্য। তবে দেখতে হবে এ কবিতাও যেন পাঠককে স্পর্শ করে।

১০. গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তর : গদ্য কবিতায় অন্ত্যমিল থাকে না। তারও নিজস্ব ছন্দ থাকে তবে নির্দিষ্ট নয়।



মৌসুমী ভৌমিকের কাব্যগ্রন্থ "যাপন" ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্তে ঘরে বসেই পেয়ে যান ডেলিভারি । অর্ডার করতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কেঃ https://goo.gl/ivub8T



✍️কিছু কবিতা



শব্দরা
***********




পাহাড়ের গা বেয়ে চলা রাস্তা ধরে
শব্দরা হেঁটে যাচ্ছে
নির্বাক আমি নিথর হয়ে বসে থাকি


ঢালু উপত্যকার কোল বেয়ে
খাদের পাশ দিয়ে গেলে যেমনটা হয়
শব্দরা সেভাবে হাঁটছে
স্পষ্টতঃ বললে
শব্দরা খেলছে, অক্ষর ভেঙে ভেঙে
আবার ক্রমশঃ নিজেদের জুড়ে নিয়ে


শব্দের বৃষ্টি আয়নাবাচক হলে
তাদের গল্পটা বুঝতে পারি
নির্বাক আমি জেগে উঠলে
শব্দরা হাসে -
শব্দরাও প্রগলভতা ভালবাসে



আঁধার
***************



আলোর পৃথিবীকে আঁধার স্পর্শ করলে
            রাত্রি হেসে ওঠে ।
নাক্ষত্রিক আকাশে জোছনার প্লাবন এলে স্বর্গীয় দ্যোতনায়
              ভেসে থাকে দিগন্ত।
অখিল বিশ্ব রাত্রির চান্দ্রিক সুষমার
    কাছে ঋণী হয়ে থাকে।
জন্মাধতার মুখোশ খুলে হে মানুষিক অসুর
      এই মোহময় অপরূপ জ্যোস্নায়
ধুয়ে নাও বিষাক্ত মন
সন্ত্রাসের আগুন।
আঁধারের মৌনতাকে সম্মতি না মেনে
মৌনমিছিল বলে জেনে রাখো।
আঁধারের সম্মোহন মুছে দিক যত রক্তাক্ত চেতনা। পৃথিবীর পাণ্ডুলিপিতে লেখা হোক শুধু মানবতা, ভাতৃত্ববোধের অক্ষর।
তারপর এ পৃথিবী অ-আসুরিক হোমযজ্ঞে
শুদ্ধ হয়ে লাবণ্যময়ী মমতাময়ী মাতৃভূমি।



আলোহারা জীবন
*****************


মনগুলোতে অন্ধকার জমলে
মুখগুলো পরে  নেয় মুখোশ
নক্ষত্রদের পুড়িয়ে দিয়ে
রক্তের স্বাদে ভাঙে উপোস।
ক্ষমতার কাছে নুইয়ে মাথা
শব্দ  হারায় প্রতিবাদী স্বর
মোমবাতি জ্বলে, কান্নারা শুধু
দুঃখ ঢাকে, কাটে আঁচড়।
জমজমাট অন্ধকার অলিগলি
আলোহারা চাঁদ, দিগদিগন্ত
জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে
থাকে না কোনো মুহূর্ত।
তবু, আশ্চর্য ভাত ফুটে উঠলে
গন্ধে আবার বেঁচে ওঠে জীবন।






পদযাত্রা       
***************



দিনের আলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে
এসো দুপুরআলো সেলাই করি
সূর্য কাছে এলে ছায়াও ভয় পায়
নিজেকে গুটিয়ে ছোট হয়ে এলে
আমার ছায়াও আমাতে মিশে যায়
আমি একাত্ম হয়ে প্রহর গুনি
সন্ধ্যার আঁধার হেঁটে এলে
গোধূলির আলোতে মুখ ধুই
মেখে নিই নরম আলোর প্রশান্ত আভা
ক্লান্ত আমি অতল স্বপ্নের সুলভ খামে
হারিয়ে যায় সম্মোহিতের মতো
জীবনের কথা বিছিয়ে যে ইচ্ছেরা জাগে
সকালের সোনালি আলোয় তাদের
আবার পদযাত্রা।




আমি ও গাছ          
***************


আমি দেখি
মাঠের মাঝে গাছগুলি একাকী দাঁড়িয়ে -
তখন আর নিজেকে একা মনে হয় না ঠিকই
বরং গাছের থেকেও অসহায় মনে হয় ।
শেকড়হীন সুগন্ধহীন জীবন
সারাজীবন কারো না কারোর অপেক্ষায় বহুবার মরার পরেও বেঁচে থাকে ।
জেগে থাকে শূন্য করতল মেলে পৃথিবীর মায়ার মাঝে
কিছুই তো নেই - ভিক্ষাপাত্র নিয়ে প্রবজ্যা দরজায় দরজায়
তার চেয়ে গাছ হওয়া ভাল।




সাক্ষাৎকারে: জ্যোতির্ময় রায়

রোমা মন্ডল ব্যানার্জি



মেরুদন্ডীয় মেঘ
"""""""""""""""""



মেঘ পেরুলেই আমার  বাড়ি,
যাবিরে 'টগর' যাবি ?
দিগন্ত ছুঁলেই মস্ত আকাশ
মাটি ছোঁয়া জানালাও খোলা পাবি...

জানিস 'টগর,'
সেই জানালা দিয়ে ভোরও আসে,
আসে  শিরদাঁড়াদের পাল ,
রুগ্ন রোদ ওড়ে না বাতাসে,
'আ ঢাকা আঙ্গুলে' আসে সকাল..

মেঘ পেরুলেই  আমার  বাড়ি,
চলনা 'টগর' , যাবি  ...?

মন মেঘ সরালেই সাদা সড়ক
নেই তো প্রতিহিংসার মোড়..
এইখানেতে 'আধমরা রোদ',
শুধুই মিথ্যে ভুরি ভোর.....

চিৎ শুয়ে রয় শরীর ঘাটে
খসখসে হিংসা,প্রতিশোধ...
শিরদাঁড়া'টা শ্যাওলা পড়া পঙ্গু মনে
এইখানেতে,আঁচড়ায় জীবন বোধ.....

ঐ তো, মেঘ পেরুলেই আমার  বাড়ি,
চলনা 'টগর'  যাবি  ....?

ঐ খানেতে  অ্যাসিড জল নেই,
নেই  কামুক, লোভী বাতাস,
'উলঙ্গ  রাজা'র দেশের সত্য বলা
সেই ছেলেটারও এইখানেতেই বাস..

ঐ তো 'টগর' মেঘ  পেরুলেই 
আমার  বা়ড়ি, চলনা  'টগর'  যাই,
মেঘ সরালেই ন্যায্য আকাশ,
মাটি, মা আর মানবিকতার গন্ধ  পাই  ...

ঐ তো 'টগর'... 
কালো মনের মেঘ  সরালেই  আমার  বাড়ি,
চলনা, চলনা 'টগর'  যাই  .....

পবিত্র চক্রবর্তী







আজব পুরাণের গপ্প
****************


                          ( ১)
       
সে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের কথা । তখন দুর্গা ঠাকুর বসন্তকালে সিংহের পিঠে চেপে বাপের বাড়ী আসতেন । সময়টাও ছিল খাসা । বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হরেকফুলে সেজে উঠত । মা মেনকা আর অন্যান্য সখীরা নানা ফুল তুলে এনে কত রকম সাজ বানাতেন । আহা কৈলাস দেখো , চারিদিকে বরফ আর বরফ ! কী আর করা বাপ-মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শীতের দেশে বিয়ে দিতে বাধ্য হন । সে যাইহোক যা হওয়ার হয়ে গেছে । বছরে এখন একটিবার মেয়েকে কাছে পেয়ে কত আদর করে , চুমু দেয় । আর দাদু প্রাচীনবর্হি সে তো আনন্দে দিশেহারা ।
একদিন সকালবেলা আঙুরের রস পান করতে করতে দেবী দুর্গা তার দুই বোন কদ্রু আর বিনতার সাথে সাধের ফুল বাগিচায় ঘুরছেন । দুর্গাকে কাছে পেয়ে ফুল গাছেদের শরীরেও খুশী । দেবীও তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । কিন্তু কেন জানি না আজ সকাল থেকেই পার্বতীর মনটা কেন জানি না খারাপ । বড় বোন মশকরা করে জিজ্ঞেস করেন , “ হ্যাঁ রে পার্বতী ভোলানাথের জন্য মন খারাপ নাকী ?” দেবীর মুখে হাসি কিন্তু মনের কোথাও কী যেন না থাকার দুঃখ । এই বাগানেই বাসা বেঁধে থাকে নীলকণ্ঠ দম্পতি । পার্বতীর মনের কথা বুঝতে পেরে তারা টুঁই টুঁই করে গান গাইতে গাইতে বলে –
“ বাসন্তীর মনে বসন্ত নেই-
তাই তো মা হারিয়েছে খেই ।
শ্যামদেশে আছে এক বৃক্ষ-
ফুটলে ফুল যাবে সব দুঃখ ।”



                                  ২

প্রজাপতি দক্ষ চিন্তায় আকুল । কী এমন গাছ যা তার বাগিচায় নেই ? আর শ্যামদেশ সেটাই বা কোথায় ? সুপ্রাচীন দাদু প্রাচীনবর্হি নাতনীর মনের দুঃখের কথা জানতে পেরে প্রপিতামহ ব্রহ্মার আশ্রম ব্রহ্মলোকে যান । ব্রহ্মা বলেন “ দেখো বাছা প্রাচীনবর্হি আমি বিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টি করলেও বয়েসের কারনের বর্তমানে কিছু স্মৃতি বিলোপ ঘটেছে । তুমি বরং বিষ্ণুলোকে যাও ।” 
প্রাচীনবর্হি সেখানেও যান । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু তখন অনন্ত শয্যায় , ঘুম ভাঙানো যাবে না । অবশেষে নারদমুনির পরামর্শে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে শ্যামদেশ (বর্তমানের থাইল্যান্ড) থেকে আনা হয় শেফালি ফুলের গাছ । পরম যত্নে তা লাগানোও হল , কিন্তু ফুল বসন্ত শেষেও আর ফোটে না । এ যে বড় বিড়ম্বনা । 
                
                                   ৩

এদিকে রাবণের আক্রমনে সকল দেবকুল চিন্তিত । ভগবান বিষ্ণু তখন রাম অবতারে ধরায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপ্রিয় সীতাকে উদ্ধারের আশায় । কিন্তু পরাক্রমশালী রাবণকে বধ করা যে সহজ নয় তা জেনেই শরৎকালের এক সকালে কালিয়াদহের পাড়ে বসে একাগ্র চিত্তে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করে বসেন । এই সময় দেবকুলের ঘুমানোর সময় । কী আর করা দেবীকে রামের কাছে পাঠানো হল পরম শক্তি দেওয়ার জন্য । রাম দেবীকে একশো আটটা নীল পদ্মে পূজা দিলেন । একেই ঘুমের সময় কিন্তু একটা মিষ্টি গন্ধে দেবীর মুখ পরম আনন্দে ভরে উঠলো । তিনি দেখলেন , অনেক ফুলের মাঝে শ্বেত-স্বর্ণ কান্তি ক্ষুদ্র কিছু ফুল । দেবী শ্রীরামের কাছে জানতে চান , “ বৎস এহেন মধুর ফুল কোথায় পেলে ?” করজোড়ে রাম জানায় , “ দেবী এ ফুল এ দেশে কেবল আপনার পিতার বাগানে শরৎকালেই ফোটে । আপনার পিতামহ এনেছিলেন ।”
এরপরের ইতিহাস সকলেরই জানা । শোনা যায় এরপর থেকেই দেবী দুর্গা কেবলমাত্র প্রিয় শেফালি ফুলের জন্যই শরৎকালে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ী আসেন । রামকে আর সেই নীলকণ্ঠ পাখীকেও আশীর্বাদ করেন । ফলে রাম যুদ্ধে জয়ী হন আর নীলকণ্ঠ পাখী শরৎকালের দুর্গাপূজায় মায়ের সাথে খানিকটা পূজা পেয়ে থাকে ।
গপ্প শুনে আমার ভাগ্নী পটা তো দিব্যি খুশী । আমাকে বলল “ মামা এ গল্প কোথায় পেলে ? বন্ধুদের বলতে হবে তো ।”
আমি বললাম , “ খবরদার ! এ শুধু তোর আমার গপ্প , ‘ আজব পুরাণে ’এসব আছে লেখা ।।”



ইমরান হাসান




বিসর্জন
********


রেখা বেদে দের মেয়ে, তার বিয়ে টা হয়েছিল অনেক অল্প বয়সে।তার একটাই দুঃখ তার পেট থেকে নতুন জীবন এর জন্ম হয়নি। সে বন্ধ্যা। সবাই তাই বলে থাকে। তবে তার মনে হয় না। কেননা তার মাঝেও মীনরূপ জলদেব প্রকট হন প্রতি মাসে। তার তিননদী তেও বান ডাকে প্রতি মাসের তিন দিন।

আজকে সে এই কারণেই এসেছে বরেন্দ্র মহাস্থান এ। এখান নিশুম্ব নামের এক মহাতান্ত্রিক এর বাস সে শুনেছে, সবাই নাকি তার দেখা পায় না। তবে সে আশায় আছে, সে হয়ত পেয়ে যাবে। কেননা সে শুদ্র দেবতার পূজারী। নিশুম এর ন্যায়।

রেখা মেঠোপথে এগুচ্ছে তার মাথার উপরে একটা ঝুড়ি। সেই ঝুড়ির মাঝে নানা রকম এর জিনিস। সে এগুলো বিক্রি করে বিভিন্ন এলাকা তে।

সে আসতে আসতে পৌছাল একটা গড় এর কাছে। ঢিবির মত উঁচু হয়ে আচ্ছে গড়টি। এখান থেকেই নিশুম্ব এর এলাকা শুরু।

সে পূজা করে এক অজানা অন্ধকার দেবতার। তবে তার অনেক নাম ডাক। সন্তান চাইতে গিয়ে যারা তার দেখা পেয়েছে তারা কেউই নাকি খালি হাতে ফেরেনি।

“সেইডা তো ঠিক আছে, কিন্তক তান্ত্রিক এর কাছে যাওনের আগে শুইন্না লও সে কিন্তক সব কিছুর একটা কইরা দাম লয়”

সে গরীব বেদেনি। এরপরেও সে চলেছে তার কাছে।

সবার অপবাদ সইতে পারে না সে। তার আর ভালো লাগে না বন্ধ্যার এই অপবাদ। তার স্বামীকে শুনতে হয় হাটকুড়া নাম।

কিছু না বললেও তার মুখ দেখলে পারে বোঝা যায়। যে তার ভেতর টা ছিড়ে যায়।

এই কারণে তান্ত্রিক যা দাম চায়, সে দিয়ে দেবে,

সেটা যা-ই হোক না কেন।

যদিও তান্ত্রিক চরিত্রহীন নয়। তাকে ব্রহ্মচর্য এর সাধনা করতে হয়। এই কারণে যদি সে তার সমস্ত সম্পদ চেয়ে বসে তাও পিছে হটবে না সে।সে হয়ত চাইবে তার জীবন , সেটিও দিতে সে রাজি। যদি সন্তান এর জন্মের পর সে তাকে বলি দেয় সে হাসতে হাসতে বলি তে উঠবে।

সে ভাঙ্গা দেউল এর কাছে এল। এই দেউল টা সেই পৌরাণিক যুগ এর। মহাভারত এর যুগের রাজা পুণ্ড্রক বানিয়েছিল নাকি এটা।
এর মাঝে এখনও আঁধার সেই দেবতার পূজা করা হয়। যার পূজা পুণ্ড্রক করত।
দেউলটা শুন্য। ভেতরে কেউ নেই , শুধু ছুঁচোর বিষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে যেন নেই।

অন্ধকার এর একটা একটা করে স্তম্ভ যেন সবদিকে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে সে কোথায় পাবে সেই তান্ত্রিক কে। এটাই বুঝতে পারছে না।একদিকের ছায়া গুলো নাচছে যেন নাচতে নাচতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর অপর দিকেও ছায়ার নাচন দেখা যাচ্ছে। এই ছায়া গুলো কাঁপতে কাঁপতে ঘরের কোনাতে জড় হতে লাগলো , একটু পরে সে দেখতে পেল সেখানে ঘুলঘুলি এর কাছে একটা কৃষ্ণরঙের মানুষ বসে আছে। তার উপরে ছোঁয়া লেগেই ছায়া কাঁপছে।

সে গেল তার কাছে , সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে গিয়ে তাকে থামিয়ে দিল সে।

তার ঠোঁট নড়ল না, কিন্ত স্পষ্ট বুঝতে পারল সে তার মনের ভেতরে কথা বলে চলেছে সে ,

“তুই হাটকুঁড়ে তাই লস কি?”
“হ স্বামীজী , হামি হাটকুঁড়া” সে বলল
“তোরে আমি বাচ্চা দিতে পারুম না, পারবি তুই, তুই পারবি, কিন্তক তোর মনের মইদ্ধে যে ভয় আছে তাক তাড়ান লাগবো, তুই তোর জন্য বাচ্চা আনবি ছাওয়াল আনবি, কিন্ত তোর বাচ্চা অইব, কাঁকড়ার বাচ্চার লাহান”

“এইটা কি কন”
“হ, যা কইতাছি মন দিয়া শোন। তুই এখান থেকএ গিয়া দীঘির জলে গা ধুইবি, তোর স্বামীরে নিয়া আইছস তো?”

“হ ,কিন্তক স্বামীজী আপনার এলাকাত তো পুরুষ মানা, তাই আনি নাই”
“এরপরে তোর স্বামীর লগে তুই নরলীলা করবি”
“তোর বাচ্চা হইব , কিন্ত কাঁকড়ার বাচ্চার লাকান হইব”
“ওর কি দাঁড়া থাকব? তাইলে তো সবাই তারে দানো কইব!”
“আরে না ও কাঁকড়া হইব না, কাঁকড়া তো হইবি তুই” যা আর দেখতে পাইবি না আম্রে তুই, যা”

একমুঠো ধুলো নিয়ে তার দিকে ছুড়ে দিল সে।তার চোখ জ্বালা করে উঠল, চোখ বন্ধ করল সে, তবে চোখ খুলে সে দেখে যে আর কেউ নেই। 

সে ফিরে এল, পরনের পোশাক নিয়েই নামল দীঘিতে, দীঘির পানি যেন কেমন আঁশটে একটা গন্ধ করছে যেন অনেক গাড় কিছু একটা পানিটা। এরপরে ডুব দিয়ে উঠল সে।

তার স্বামীর কুটির এর দিকে যাত্রা করল সে, এখানে এক বেনের কুটিরে আছে তারা , বেনে গেছে প্রাগজ্যোতিষ এ।
স্বামীর কাছে নিজেকে সঁপে দিল সে।

পরের দিন সকাল থেকেই, যেন নিজের মাঝে এক ধরণ এর পরিবর্তন এর ছোঁয়া পেতে শুরু করল সে, যেন কোন কিছু তার ভেতর থেকে টানছে, যেন কিছু একটা তার ভেতরে থেকে তার মাঝ থেকে বের হচ্ছে।

ধীরে ধীরে তার পেট স্ফিত হতে শুরু করল দুই তিন মাস এর মাঝেই, সবাই বুঝতে পারল সে মা হতে চলেছে।

তবে সে কিছুই বুঝতে পারল না তখনও, তবে তার মনে হত যেন খুব ধীরে ধীরে কিছু একটা তার ভেতর থেকে তার শক্তি কে শেষ করে ফেলছে।

তবে সেটা খুব বেশী না। এটা বুঝতে শুরু করল সে যখন থেকে ৬ মাস হতে লাগলো তার। তার পেট অস্বাভাবিক রকম এর ফুলে গেল। আর তার হাত পা গুলো যেন ছোট ছোট হয়ে গেল, সে সারাদিন শুয়ে থাকে বিছানার মাঝে,

এরপরেই শুরু হল শুকিয়ে যাওয়া, তার পেট এর ভেতর থেকে ধীরে ধীরে যেন সবকিছু সেই নতুন প্রাণ গ্রহণ করে নিচ্ছে। সে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে, তার পেট টা খোলস এর মত বড় হতেই আছে, আছে, এখন তাকে দেখলে মনে হয় চার হাতি একটা কাঁকড়া। তান্ত্রিক এর ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হচ্ছে যেন ধীরে ধীরে।

যেদিন এর প্রসব এর সময় আসল, দাই ভয় পেয়ে গেল, কেননা তার দেহ কাগজ এর মত হয়ে গেছে, এত পাতলা চামড়া।

ধীরে ধীরে সে যখন তাকে একটু একটু করে বাচ্চাকে এই ধরা তে নিয়ে আসল, তারা পেট ফেড়ে বের হয়ে এল, একদম তার মত দেখতে একটা মেয়ে আর তার স্বামীর মত একটা ছেলে। রেখার মুখে হাসি নিয়েই সে ঢলে পড়ল চিরনিদ্রা এর কোলে।

সে সেভাবেই জন্মদিল তার সন্তান দের কে যেমন করে কাঁকড়া মা তার সন্তান জন্ম দেয়, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে, সে জানত এটাই হবে, এই কারণে সে এটা নিয়ে কখনই কিছুই বলেনি। তার শব কে পোড়াতে বা কবর দিতে রাজি হয়নি পুরোহিত মশাই, তিনি বলেন “এই কন্যা সাক্ষাৎ মাতৃ দেবী” তার শব মাটি ধারণ করতে সক্ষম হবে না, তার মাঝে এত শক্তি নেই, আমরা একে দেবীর ন্যায় বিসর্জন দেই মা গঙ্গার মাঝে, তিনিই তাকে দেখবেন,

নির্দিষ্ট দিনে লাল বেনারসি পরিয়ে তাকে ভাসিয়ে দেওয়া হল জাহ্নবী এর তীর থেকে। ধীরে ধীরে সেও যেন আরেক দেবীর ন্যায় বিসর্জিত হল গঙ্গার মাঝে। আসলে মাতৃত্বই তো দেবীর ধর্ম, আর তার মন্ত্র বিসর্জন এর গান। 



অনোজ ব্যানার্জী




বিসর্জন
********



"বিসর্জন " কথাটি,, একবারমাত্র ভাবলেই,কিএক গহীন, দুঃসহ, অসীম বেদনায় ডুবে যায়, আমাদের সকলের মন।
মগজের মধ্যে ঝিলিক মারে সর্বক্ষণ, কি যেন গেল হারিয়ে,কি যেন গেল ফুরিয়ে.....দেবদেবীর
পুজোর ঘট আনা হবে,পুজোর বেদীতে হবে তার আবাহন, পঞ্চপ্রদীপ জ্বলবে, ধূপ, ধুনোর সুগন্ধে,,  ঢাকের বাজনা, কাঁসির শব্দ ,শঙ্খধ্বনিতে ভরে যাবে মন্দিরপ্রাঙ্গন।
তারপর,,,,সমস্ত আমোদ,,হইহুল্লোড় যাবে ফুরিয়ে। আনন্দরা যাবে যেন কোথায় হারিয়ে,,,,
দিতে হবে বিদায়,,দেবদেবীকে,,,
ঘট বিসর্জন,,প্রতিমা নিরুঞ্জন,,,...
*******
এখন,,
পুজোর বেদীতে,, বসে বসে নিচ্ছে পুজো
যেসব রাক্ষসের দল,, দেশটাকে পাঠাচ্ছে জাহান্নামের অন্ধকারে যারা,,,
আরাম করে,আয়েস করে কাটেচ্ছে সুখের জীবন,,,
নিচ্ছে কেড়েকেড়ে  আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরশমাণিকটিকে,
তাদের দিতে হবে এবার বিসর্জন।
হাজার কুসংস্কার, পাপ,অন্যায়,দুর্নীতি, গুণ্ডামি,
অত্যাচার,, অনাচার,ধর্ষণ,
ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা,,প্রবঞ্চনা,
বোম,বারুদ, বুলেটে অগণন তাজা তাজা মানুষের অকারণ, রক্তপাত,,,কত শহীদের বেদনার্ত লাশের মিছিল,,
কত মায়ের কোল হলো খালি....
এসবের যারা করছে পুজো,,ভক্তিভরে,,
যারা দায়ী এসব কুকাজের জন্য,যে সব দানব ঘটাচ্ছে এসব কুকর্ম,,
আমাদের দেশমাতাকে করছে যারা কলংকিত,
অবিরত,,,,
দেশটাকে যারা দিচ্ছে বেচে বিদেশীদের হাতে,গরু-ছাগলের মত, এই সুন্দর পৃথিবীটাকে,  যারা দিচ্ছে ডুবিয়ে..
অনাদ্যন্ত, নরকের গভীর পঙ্কিলতায়,,
এবার আর তাদের কোন ক্ষমা নয়,,,
সুসভ্য সমাজের বেদী থেকে তাদের দিতে হবে
সমূলে বিসর্জন।
হবে বসাতে রাজসিংহাসনে,,
ভদ্র,সত্যনিষ্ঠ, বিচক্ষণ , দেশপ্রেমিক, বীর নেতাকে।। প্রস্তুত হও এবার ঘরেঘরে।।

মাধব মণ্ডল






হাত
---------




ইস, এ হাতে এখনো বসে
দুব্বো ঘাসের পাতা
একটু একটু কালচে ঘৃণাও
ঘর দালান উঠোন ফুঁড়ে
আসি আসি ভাব।

জিভ সব ভেঙে ভেঙে
কথা বা গান ছাড়ে
নদী বা পুকুর ঘাটে
আমার লোমশ বুকে
খুকি তুই কাকে যে খুঁজিস!!

গল্প গল্প মন তোর
এ হাত আলমারি পাক
নিদেনপক্ষে একটা তাক
পেয়ারার ডালে বুলবুলি
আর ফুটে থাকা থোকা থোকা ফুল।

কাল রাতে কেঁদেছিল খুকি
গভীর দুঃখ পেলে ও খুকি কাঁদে
সেই সুর আদি গঙ্গা খায়
ও হাতে এবার কি তুলেছিস?
কচি কচি দুব্বো? ঘৃণা?

পিয়াংকী মুখার্জী





প্রত্যয় 
*******



জলছবির অচেতন  জলোচ্ছ্বাস ,
আজ অনেকটা বিষাদ ভর্তি ফেলে আসা আকাশ  বাতাস !
মেঘ-মল্লার জমিয়েছে আসর,
 সরগম-তান-রাগ-রাগিণীর সমন্বয়ে ,
সেই লালচে বিকেলের আসরে বিলম্বিত দোসর !

পা ভিজলেও ভিজতে পারে মনের আয়নায়,
হৃদয় স্নাত হতেও পারে খুশির ঠমকে আর অঙ্গজ গয়নায়...

বিসর্জনের সুর যদি বাজে পূরবীর তালে...
আমার নূপুর বাঁধা পা নাচবে 
রাগাশ্রয়ী ইমনের  মীরের অন্তরালে ॥

জলাঞ্জলি জলছবিকে কাঁদায় না , 
এ বহিঃদেহী অন্তবৃত্তে পুঁতে দেয় আগুন ঝলসানো কিছু নির্মম  অক্ষর...

দহনের আগুন পোড়ায় না 
বরং কলমের বুক চিরে রোপণ করে অঙ্কুরোদগমের জন্মান্তর । 

এভাবেই , 
আগামী প্রজন্ম জন্ম নিক প্রত্যয়ী চিত্তে 
লৌহপ্রতিজ্ঞা সম্ভাবনা আঁকুক ছন্দসাজানো  মাত্রাবৃত্তে ॥

বন্দনা মিত্র





ভাতের গন্ধ
*********



অনেক রাত্রি শেষে নবান্নের ভোরে
ছেলেটা তাকিয়ে দেখে
সবুজ ধানের শিষে ভাতফুল ফুটে আছে ।
আশ্চর্য ফুলের ঘ্রাণে ম ম করে
পৃথিবীর মাঠ ঘাট ।
ক্ষুধা ঋতু শেষ হল নাকি ?
বিস্ময়ে আনন্দে রোমকূপে কদম্বের ছোঁয়া ।
 দুর্গা দালান জুড়ে সমারোহ , আলপনা ,
 বসুধারা দেয়ালের গায়ে -
ঢেঁকিঘরে শালি ধান,
ঢিমে আঁচে ঘন হয়  দুধ -
উনানের ধোঁয়া লেগে চোখে জল আসে ।
গরম ভাতের গন্ধ মনে করে নেশাগ্রস্ত  মাতালের মত
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ঝিম চোখে ।
বোধনের ঢাকে কাঠি  , নেত্রদান , কলা বৌ স্নান
আরতির ঘন্টা বাজে , অঞ্জলি শুরু হয় ।
অপূর্ব গন্ধ মাখা ছেলে মেয়ে
প্রতিমার মত মুখে প্রসাদের স্বাদ পায় ।
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ঝিম চোখে,
ভাতের গন্ধ শোঁকে , খিদে পায় ।
এবার সিঁদূর খেলা,  ভাসানের বোল ওঠে ,
প্রতিমার মুখে মিঠাপান, সন্দেশের গুঁড়ো –
সন্ধ্যার বিজয়া বাতাসে আকুল ভাতের গন্ধ,
ছেলেটার খিদে পায়, রাগ হয়।
অসম্ভব, খুনে রাগ,  রক্তমাখা আঙুলের নখে
আগুন ঝরানো রাগ ।
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ, পোড়া শব, বারুদের ঝাঁঝ,
পুলিশের ভারী বুট,  সন্ধ্যার জ্ঞান গর্ভ আলোচনা ,
রাস্তায় নিয়মিত মোমবাতি ।
সবকিছু  পার করে জেগে থাকে
নবান্নের ভোরে,  অমিত ক্ষুধার ঋতু
উন্মাদ,  ক্ষুধিত,  ক্রুদ্ধ নগ্ন বালক এক,
চরাচর মেশামিশি বাতাসে ভাতের গন্ধ ।









প্রভাত মন্ডল





বিদ্রোহী কলম
   ==========
                        


হে কলম, 
     আর কত দিন থাকবে স্তব্ধ, 
তোমার টানে
      হয়ে উঠুক সারা বিশ্বে আজ বিদ্রোহ। 
তোমার লেখণী
        আর কত থাকবে, মৌন অসাড় বুকে, 
তোমার প্রতিটি ঘর্ষন
        আজ বিদ্রোহী হয়ে পৌঁছাক বিশ্ব দরবারেতে। 
তোমার রক্তের কালি দিয়ে
        আজ পঞ্জিকা লিখে মৌলাবাদের মুখোস দাও খুলে
তুমি ধর্মের নামে বজ্জাতি
          আর চলবে না তুলে ধর বিশ্ব আদালতে, 
তোমার লেখা ধর্মের নামে
           আর রক্তাত হতে দেবে না এই ভূবনকে। 
তোমার  ঘর্ষনে
            আজ জাগ্রত হোক মৃত আগ্নেয়গিরি দ্বার
তার লাভাতে জ্বলে 
             যাক যত গোঁড়া মৌলাবাদী নরখাদকের দল। 
জাগবার দিন আজ
              র্দুদিন আসছে চুপিসারে, 
করুক্ষেতের মাঠ
              আজ প্রশস্ত হচ্ছে ধর্ম ধর্ম করে। 
তোমার লেখণীর খঞ্জরের ধারে
                আজ রোধ হোক মৌলাবাদের কন্ঠস্বর। 
প্রশয় দেব না
               গোঁড়া মৌলাবাদীদের
করবো না 
             ওদের আর ডোর। 
বিশ্বের থাকবে একটাই 
             ধর্ম,  মানব ধর্ম তার নাম
তোমার  লেখন শৈলীতে
               এটাই হবে স্লোগান।

তপন জানা




দেবী "মা "ই তোর মা
"""""""""""""""""""""""""""""""""


জয় মা দুর্গা বলে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে,
হাজার মানু‌ষের ভিড়, দুহাত জড়ো করে।
প্রতিমা দর্শনের নামটি করে,
আড় চোখেতে তাকিয়ে দেখে দেবী অংগের ভাজ।
চক্ষু কটিদেশে, চায় বক্ষ মাঝে।
তাই তো সেদিন গলির শেষে,
পোড়ো বাড়ির ভেতর
বিবস্ত্র এক দেবী দেহ সাজিয়েছিস রক্ত সাজে।
"মা " "ম " বলে যার পায়েতে আজ লুটিয়ে দিলি মাথা।
সেদিন রাতের ঘন আধারে নিজের মা কে তাড়ালি,
দিয়ে দুঃখ, ব্যাথা।
দেবী মায়ের পুজোর কত আয়োজন, কত আড়ম্বর।
কিন্তু নিজের জন্মদাত্রী কে
পাঠিয়েছিস বৃদ্ধাশ্রমের এক চিলতে ঘর।
যার জন্য এত প্রসাদ, এত ভূষন
সাজিয়েছিস শ্রদ্ধা ভরে।
সেই মায়েরে দুবেলা দুমুঠো দিস না খেতে ঘরে।
"মা দুর্গা "র মূর্তি সাজালি দামি শাড়ি গহনায়,
সেই মা তোর ছেঁড়া কাপড়ে শুয়ে মাটির বিছানায়।
মৃন্ময়ী মা তো চিন্ময়ী রুপে
  সে যে তোর মা,
নিজের মায়েরা দিস না কষ্ট কর ভক্তি শ্রদ্ধা।
বিজয়াতে বাঁচিয়ে রাখিস একটু চোখের জল।
জন্মদাত্রী র জন্য ফেলতে হবে  ওই বাঁচানো জল।
নিজের মা কে শ্রদ্ধা করলে
   খুশি দেবী মা।
জন্মদাত্রী মা যে তোর দেবীরুপী মাতৃ প্রতিমা।
মেয়ে মানেই তো সুলভ, নয়তো লেহ্য চুস্য।
রাস্তার ওই মেয়েটি ও তো, তোর মা বোনের ই মতন।
নিজের মায়ের পায়ে মাথা রাখ,
দেবী মায়ের আগে।
তাহলেই তোর সব পাপ "মা "দেবেন ক্ষমা করে।

রানি মজুমদার




নবজাতক: অঙ্গীকার
*******************




বেশ্যা হও, বেশ্যা হওয়া তোমাদের জন্মগত অধিকার....আমরা পুরুষ, আমরা এনজিও, আমরা সমাজ !!.. .. মহিলার শরীরকে বাজার বানানোর যে যুক্তিটা যত্ন করে সকলকে বোঝানো হয়, তা হলো অভাব....শিক্ষার নাকি চাল ডালের ?... কিন্তু শিক্ষা দিয়ে  প্যান্টের তলায় মারাত্মক অস্ত্রটাকে কে কবে শান্ত করতে পেরেছে !...  আর অভাব. ? আমাদের নীচুপাড়ার সাঁওতাল মাসিরা প্রতিদিন সকালে দলবেঁধে মিস্ত্রীর কাজে যায় সেটাও তো অভাবের তাড়নাতেই...তবে ?....মনুয়ার স্বামী থাকতেও আরো একটা পুরুষ শরীরের প্রয়োজন ছিলো....কেন ?... কারন একটাই.সেটা তীব্র কাম যন্ত্রনা ....কিন্তু তাই বা কী করে হয় ?.. সেই তাড়নাতেই যদি কেউ শরীরকে ভাড়া খাটায় তাহলে জীবনে এত অন্ধকার কেন ?... এখানে একটা মজাও আছে, সম্মতিতে যৌনশিল্প আর অসম্মতিতে ধর্ষন !...অথচ দুটো ভাত কাপড়ের জন্য  নারী শরীরে প্রতিদিন তিরিশটা শরীরের দাপাদাপি এটা অত্যাচার নয় ?... ইঁদুর পচা ঘন্ধময় পেনিসকেও চুষতে বাধ্য করা  আরো ১০০ টাকা দিয়ে, এরপর পেছনে নাও, কুকুর সাজো..ইত্যাদি ইত্যাদি......যৌন কর্মী !!....নিজের নিজের ঘরের  মা  বোনেদের সুরক্ষিত রেখে "বাইরের"  ঘরের মেয়েদের অসহায় দেখতে আমরা খুব  ভালোবাসি, সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে আরো ভালো বাসি.... অসহায়  সেই বাজারের মেয়েটি কারোর বোন নয় ? কারোর মেয়ে নয় ?....অথচ এই ব্যবসাকেই শিল্প নাম দিয়ে আমরাই মুনাফা লুটি,.. যুক্তি দেখাই এদের জন্য নাকি আমাদের নিজের ঘরের মা বোনেরা সুরক্ষিত থাকে !!.. এদিকে তারা রয়ে যায় অন্ধকারেই তবে কারোবারিদের পকেট ভরে, লকপকানো পুরুষ অঙ্গ ঘন্টাখানেক তৃপ্ত হয়..... আমাদের পরম মাননীয়া  সিএমের  যখন কন্যাদের নিয়ে এত প্রকল্পের কথা শুনি....তখন বিশ্বাস করুন  মুখ লুকোনোর জায়গা পাই না.....অষ্টম শ্রেণীর স্কুল ছুট নাবালকও স্কুল ড্রেস ব্যাগে লুকিয়ে সোনাগাছির ঘরে ঢোকে.....সোনাগাছি, কাদারোডে যারা এই যৌন শিল্পের কারবারে নেমেছেন সেখানে ১৩ বছরের কচি মালও পাওয়া যায়.....এই মা, দিদি, বোনেদের ওপর প্রতিদিন চলা অমানুষিক অত্যাচারকে আমরা কেউ কেউ  নির্লজ্জ সমর্থন করি... অতএব " সে  মন্দিরে দেব নাই"....এ মন্দিরেও আর  আমাদের মনূষ্যত্ব নাই.....পড়ে আছে শুধু  "মানুষ"  নামক আমড়ার আঁটি....

আর রেপ টেপ দেখতে চান তো গুগলে আসুন...বৌদির শাড়ি ছাড়া থেকে স্নান....হস্ত মৈঃ থেকে হার্ড ফাকিং.....  OK আপনার কচি মাল পসন্দ  তাই তো ?স্কুল সেক্সে পেয়ে যাবেন....আছে   টিন সেক্স....১৬ বছরের যুবতীর সব কিছু. ...খিড়কি  থেকে সিংহদুয়ারের ভেতরের  সমস্তটা....বৌদি মানে লাখ লাখ বৌদি.....যুবতী মানে লাখ লাখ যুবতী.......হাতের মুঠোয়  ভ্যারাইটিস যৌনাঙ্গ....থেকে থেকে মেয়েদের মুখে আরামের আওয়াজ.....ক্লাস ফাইভের ছেলের দলও টিফিনে  স্কুলের মাঠে বসে  দেখে নিচ্ছে সব টুকু.....মাল  !!গুরু মাল !! ....মোমবাতি, বেগুনেই যদি শীৎকার হয়....তবে লোহার রোড, ভাঙা কাচের বোতল, গাছের গুঁড়িতে তো সুখ সাগরে  মাল ভেসে ভেসে  উঠবে....সন্দেশ খালির বৃদ্ধার যৌনাঙ্গ থেকে নাকি  নাড়ি ভূড়ি বেরিয়ে এসেছিলো.....গোপন অঙ্গ আর গোপন নেই, লজ্জাস্থানে আর লজ্জা নেই.....মা বাবা তাদের ছেলেকে মোবাইল না কিনে দিলেও ছেলে বন্ধুর মোবাইল থেকে দেখে নেবে XXX.....কচি মাথাতে যা ঢোকে তা রয়ে যায় বরাবর.....তবে?...  উপায় ?....কী হবে ভবিষ্যত- পৃথিবীর ??উপায় জানা নেই...তবে ভাবলে গা শিউরে উঠছে.....বিকৃতির যেন প্রতিযোগিতা চলছে....নৃশংসতায় আমার চেয়ে কে আগে !!. ২২ দিন যমে মানুষে টানাটানি, অবশেষে সেই মায়ের মৃত্যু ...সেই রাতের রেপ,  ভাঙা বোতল ঢোকানো যোনিদ্বারের  লাইভ ভিডিও যদি  নেটে এসে গেছে....তা দেখে কত শত পুরুষ অঙ্গ  যে প্যান্ট ভেজাবে তার ইয়াত্তা নেই....এদিকে ততদিনে সেই শরীর পুড়ে ছাই, জীবনেও, মরনেও.....সাড়ে তিন থেকে একষট্টি !!.... মহিলা  হলেই হলো....রাস্তার পাগলীটাও চলবে..... কে  দায়ী এ প্রশ্ন বৃথা. ..দায়ী আমরা নিজেরাই......জ্যাঠামো নাম দিয়ে সব সতর্কতাকে  তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মাশুল গুনছি আমরা........

শ্যামল কুমার রায়






বিসর্জন 
-----------


গিরিরাজ কন্যা পার্বতী তুমি, 
পিতৃপক্ষের অবসানে মর্ত্যে আবির্ভূত হও তুমি, 
খুশির জোয়ারে মর্ত্যবাসী ভাসে।
আনন্দের আগমন হয় তোমার সাথে,
 মর্ত্যবাসী ভালোবেসে তোমাকে আনন্দময়ী বলে ডাকে।
তোমাকে ঘিরে আছে পৌরাণিক কাহিনী কত ! 
কার্ত্যায়নের আশ্রমে পূজিত হয়েছিলে তুমি -
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী ।
দশমীর ঐ শুভ দিনে অসুর বধ করেছিলে তুমি ।
দেবতারা ফিরে পেল স্বর্গের অধিকার।
অশুভ শক্তির হল নাশ , 
শুভ শক্তির হল উচ্ছাস ।
পৌরাণিক ঐ উপাখ্যান যদি হয়ও প্রতীকী, 
অশুভ শক্তির বিনাশে তুমি চির ব্রতী ।
গীতার ঐ উবাচ নয় যে মিছে, 
ধর্মেরই প্রতিস্থাপনে তুমি আস যে মর্ত্যে ।
পৌরাণিক ঐ অসুরের তবু ছিল ন্যায় অন্যায় বোধ, 
আজকের অসুর ওসব থেকে বহু দূরে, 
নীতি, নৈতিকতার নেইকো বালাই ,
কামিনী, কাঞ্চনে আসক্ত এরা ভাই।
ভোগের বাসনা ভীষণ তীব্র, 
যোগ্যতার চেয়ে এদের প্রত্যাশা বেশি, 
সবকিছুই পেতে এদের ভীষণ তাড়াতাড়ি ।
আইনের শাসন এরা মানে না কখনও ।
এরা কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, 
অপরাধীর কোনও ধর্ম হয় না জেনো, 
অপরাধীকে শুধু মানবতা বিরোধী মেনো ।
কোথাও এরা ধর্ষক, কোথাও ছিনতাইকারী, 
কোথাও বা ধর্মোন্মাদ , কোথাও জেহাদী ।
শিক্ষিত আর অশিক্ষিতে এখানে ফারাক নেই কোনও ।
মগজ ধোলাই করে এদের ফিদায়ে বানানো হয়। 
সন্ত্রাস  আর ধ্বংসে হয় উল্লাস এদের ।
এদের অত্যাচার থেকে বাদ যায় না কেউ, 
নির্ভয়া থেকে নিরীহ জনতা হয় এদের শিকার, 
এদের হাত থেকে বাঁচাতে মাগো অবতার আসা দরকার ।
এরা যে শুধু সমাজে আছে, তা কিন্তু নয় !
শিক্ষিত পরিবারেও কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয়।
সুরক্ষিত নয়কো মানুষ সমাজের কোথাও ।
শিক্ষা নিকেতনেও শিশু নির্যাতিত হয়। 
তুমি তো বধিলে একটা অসুর , 
মনুষ্যরূপী অসংখ্য অসুর বধে মাগো অনেক দুর্গা দরকার, 
বর্ষব্যাপী যারা করবে এদের সংহার।

রাণা চ্যাটার্জী






মৃত্যু 
*****


                    

মৃত্যুর রঙ কে দেখেছো ? গাঢ় নীল না সবুজ ! 
মৃত্যু ঘন্টা বাজলে পরে,নিস্তব্ধতা,সব অবুজ । 
দিকে দিকে ওই লেলিহান শিখা,মৃত্যুর পরোয়ানা,
টিভির পর্দা,খবরকাগজে অকালে মৃত্যুর মুন্সিয়ানা

  জীবন ও মৃত্যু ব্ন্ধু প্রগাঢ়,হিম শীতল  গভীরতা , 
  মৃত্যু তো, মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ,স্পন্দিত নীরবতা । 
  কিছু মৃত্যু তবু রোখা যায়, এলে পরেও মৃত্যু থাবা , 
 নারীশিক্ষা,সচেতনতা,জীবনকে সহজ ভাবে ভাবা।কতো সহজে মৃত্যুর গ্রাস, পুরুষ তন্ত্রের দেখি ধ্বজা
মাতৃ শক্তি হয়েও নারী,বয়ে চলে কতপাপের বোঝা

কোথাও মৃত্যু সরল মায়ের,জন্ম দেওয়ায় কন্যা , 
মেয়ের মুখে অ্যাসিড অ্যাটাক, বইলে রূপের বন্যা। আবার মৃত্যু গৃহ বিবাদ,মদ্যপ স্বামীর মাতাল গুনে,  
অসহ্য চাপে আত্মহত্যা,কেরোসিনে দগ্ধ আগুনে । 

আরো কতো বলি মৃত্যুর পথ,ধর্ষণ,খুন,পণ প্রথা , 
নারীর ওপর যত বাহাদুরি ,ছল চাতুরী ,কু-কথা ।
এই নারীই সৃস্টি কারী , সমাজের  ধারক বাহক,  
নয়কো নারী সেবা দাসী, কিংবা পুরুষ তুষ্ট গ্রাহক। 

তবু আজ বলি ,গর্বে ফুলি,নারী পুরুষের নেই ভেদ,
মৃত্যু আনে করাল ছায়া,জীবনহানি,হটাৎ পূর্ণচ্ছেদ।

অরিন্দম দাস





 "হায়রে সমাজ"
    -----------------



সত্যিই কি আমরা জীবিত
আর যদি জীবিত হয়...
তাহলে কেন আমাদের প্রতিনিয়ত
মরার অভিনয় করতে হয়,
বেঁচে থেকেও ।
কেন পারিনা আমরা
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে,
কিসের এত ভয়।
দোষ করে দোষী কেন মুক্তি পায় ?
উত্তর দেবে  আমায় ?
জানি
উত্তর নাই..
প্রতিদিনই সংবিধান তৈরি হয়,
টাকার খেলায়।
আর উকিল বুদ্ধি ও যুক্তি কে সাজিয়ে গুছিয়ে
অন্যায় কে ন্যায়,ন্যায় কে অন্যায়
প্রতিষ্ঠা করে।
হায়!এ কোন সমাজ
যেখানে শাস্তি পায় সাধারণ মানুষ,
মুক্তি পায় অপরাধী।।

বিকাশ মন্ডল

  


"গণতন্ত্র ধর্ষণ"
**************



বিষাক্ত রক্তিম জেহাদ, নাস্তিক সমর্থকেরা সব মার্কসবাদী,
ঠোঁটকাটা স্লোগান, প্রতিবাদে হাতে নিয়ে মোমবাতি।
গণতন্ত্র প্রবঞ্চকের হাতিয়ার, ক্ষমতা জাহিরের আস্ফালন,
ইস্যু পেলেই রাস্তায় নামে, লোক দেখানো আন্দোলন।
রাজনীতির মূল সংজ্ঞা পাল্টেছে, লিপ্ত ওরা হানাহানিতে,
কখনও গোষ্টীদ্বন্দ্ব, তো কখনও মত্ত গদি নিয়ে টানাটানিতে।
দেশের মেয়ে ধর্ষিতা হয় রাত-দিন, ধর্ষকরা পায় না কোনো সাজা,
ছোট্ট ইস্যু পেলেই বনধ ডাকার নীতি, কারণ ওরাই দেশের রাজা।
নির্বাচনের আগে হাতে-পায়ে ধরে, দেখায় কত শত ছলনা,
জেতার পর পাঁচটা বছর হাতে পেলে, ওদের টিকিটি তখন মেলে না।
জনগণও বোতাম টেপে, কার হয়ে কে জানে দাদার না দিদির?
আদতে ওরাও জানে না, তবুও স্লোগান দেয় জয় হোক রাজনীতির।
তাই আতঙ্কের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলে ব্যাসল্ট বুকে সাহস করো অর্জন,
রাজনীতির ভুতকে হাড়িকাঠে দাও বলি, ভয়কে করো বিসর্জন।

নিগার সুলতানা লিয়া





মা
***


প্রথম যেদিন তার সাথে পরিচয় হয়েছিল,  খুব অবাক হয়েছিলাম আমি৷  আর হ্যাঁ, অনেক ভয়ও পেয়েছিলাম৷ পাবই বা না কেন? কতই বা বয়স তখন আমার? কেবল ১২ কি ১৩ সপ্তাহ৷ সবে হাত পা নড়াচড়া শুরু করেছি তখন৷  একদিন আমার ছোট্ট আঙ্গুলখানি মুখে পুরে গভীর এক ভাবনায় ডুবে আছি৷ ভাবছি, শীতকাল তো এল বলে৷  আমার এই পানিভর্তি প্যারাস্যুটটাতে থেকে এই কনকনে শীত পার করব কীভাবে?

হঠাৎ তার ছোঁয়া পেলাম৷  একটা কোমল মায়ার আবেশে আমার ছোট্ট ভুবনখানি দুলে উঠল৷ ভীত-সন্ত্রস্ত আমি চুপসে এক কোণে সরে আসলাম৷  মৃদু কাঁপা কণ্ঠে বললাম, “কে? কে ওখানে?”
কেউ শুনতে পেল কিনা বুঝলাম না৷ কোনো জবাবও এল না৷ কান পাতলাম দেয়ালটায়৷ শুনতে পেলাম মিষ্টি রিনরিনে কণ্ঠে কে যেন বলছে, “জ্বী ম্যাডাম, আমি টুং বাবুর নড়াচড়া টের পাচ্ছি৷ এ এক অন্যরকম অনুভূতি৷ প্রথম মা হবার সবকিছুই অনেক উপভোগ করছি৷”

“অনুভূতি?” ভ্রূ কুঁচকে গেল আমার৷  এতদিন খুব মন খারাপ করে ভাবতাম, আমি বুঝি একা৷  কিন্তু না, এই যে বাইরের কে যেন আমাকে নিয়ে মিষ্টি অনুভূতি পাচ্ছে৷ মনটা প্রচণ্ড রকমের ভালো হয়ে গেল৷ হঠাৎ খেয়াল করলাম আমি অ্যাঙরি বার্ডের গানটাতে নাচ শুরু করে দিয়েছি৷ নাচ শুরু হতেই বাইরের উনি হঠাৎ ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলেন মনে হল৷
“ইশশ ব্যাথা দিয়ে ফেললাম মনে হয়৷ সরি৷” নিজে নিজেই বললাম আমি৷ মানুষটাকে আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল, আচ্ছা, উনার কী নাম দেওয়া যায়? এত নরম হাতে আদর করে আমায়...উমম... পমপম কিংবা তুলতুল? সেই থেকে পমপমের সাথে ভাবটা জমেই গেল বেশ করে৷

সেদিনের পর থেকে সে প্রায়ই আমার উপর হাত বুলায়৷ আমিও আমার ছোট্ট আঙ্গুলটা দিয়ে দিয়ে তাকে একটু ছুঁয়ে দিই৷ যেন খুব আপন মনে হয় তাকে৷ আমরা একসাথে “মাশা এণ্ড দ্য বিয়ার” কার্টুন দেখি৷ গল্প শুনি৷  আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প মেকু কাহিনী৷  প্রিয় কবিতা বীরপুরুষ৷ পমপম এতবার শুনিয়েছে যে আমি মুখস্থই করে নিয়েছি৷  ভাবছি কোনো একদিন টুপ করে প্যারাস্যুট থেকে বেরিয়েই বলব,  “এই আমি,আমি বলব৷ শুন তুমি চুপটি করে৷” সে নিশ্চয়ই খুব খুব অবাক হয়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকবে৷

পমপম একটা স্কুলে পড়ায়৷ একদিন শুনি স্কুলের বাচ্চারা নাকি আমার জন্য ছবি এঁকে, চকলেট নিয়ে এসেছে৷ শুনে তো আমার খুশিতে কান্নাই চলে আসল৷  বাইরের মানুষগুলো তাহলে এত ভালো?

পমপম আজ একটা নতুন গল্প বলেছে৷  আগের সব গল্প থেকে আলাদা৷ খুব আলাদা এক আবেগের গল্প৷ দেশে যুদ্ধের সময় বাচ্চাকে বাঁচাতে এক মায়ের জীবন দেবার গল্প৷ যুদ্ধ কী সেটা না বুঝলেও মা শব্দটা আমার হৃদয়ে গেঁথে গেল৷ “মা,মা,মা” বারবার আওড়ালাম আমি৷  এত মিষ্টি-মধুর শব্দটা তাহলে এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল?
আমার এই ছোট্ট আদুরে টুং নামটা খুব পছন্দের৷  পমপম মা এখন আমাকে এই নামেই ডাকে৷ আর আমি সাথে সাথে একটু নড়েচড়ে জ্বী বলি৷ তখন মা আমায় একটু আদর করে দেন৷
আজকে শুনলাম আমি নাকি মেয়ে বাবু৷ তারমানে আমার গলাটাও মায়ের মত মিষ্টি রিনরিনে হবে৷ কোমল মমতা মেশানো হাতটা চুড়িতে ভর্তি থাকবে মায়ের মতই৷  মা আজকাল আর স্কুলে যাননা৷  ব্যালকনিতে ক্লান্ত শরীরে ইজি চেয়ারটাতে বসে আমার জন্য লাল টুকটুকে একটা উলের লাল জামা বোনে আর আমায় গল্প শোনায়৷  আর আমি ভাবি লাল জামাটা পরে লাল, ক্লিপ পরে ঝুঁটি করে মায়ের স্কুলের বাচ্চাদের একদিন থ্যাঙ্কস দিয়ে আসব৷ ঐ ছবিগুলো দেখতে কত যে ইচ্ছে হয় আমার৷  এসব ভাবতে ভাবতে আঙ্গুলটা মুখে পুরেই ঘুমিয়ে গেলাম৷

হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার৷ মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠল৷ মাকেও কেমন অপ্রস্তুত মনে হচ্ছে৷  ভয়ে গুটিসুটি হয়ে কয়েকবার ডাকলাম মাকে৷  সাড়া দিলেন না৷ আদর করে বললেনও না “ভয় পাসনা টুং, আমাতো আছি৷”হঠাৎ খুব চিৎকার- চেচামেচি, ভাংচুরের শব্দ৷ কানে হাত দিতে বাধ্য হলাম৷ কিন্তু  “যৌতুক” “মেয়ে বাচ্চা” এরকম কয়েকটা শব্দ কানে এল৷ তবে কি, তবে কি বাইরের মানুষগুলো চায়না আমায়? কিন্তু..কিন্তু আমিতো না দেখেই ওদের ভালবেসে ফেলেছিলাম৷

হঠাৎ মাকে ওরা খাট থেকে ফেলে দেয়৷ এলোপাথাড়ি মারতে থাকে৷  আমার খুব ব্যথা লাগছে৷  এর চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে মায়ের জন্য৷ চেঁচিয়ে বলতে লাগলাম, “প্লিজ,তোমরা আমার মায়ের সাথে এমন কোরোনা৷” হঠাৎ পাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে কে যেন আগুনের কথা বলে উঠল৷ প্রচণ্ড ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম আমি৷  ওরা মাকে টানতে টানতে বাড়ির উঠানে নিয়ে গেল৷ মা এই প্রথম মুখ খুললেন৷ “আমার জীবনের বিনিময়ে আমার টুংকে তোমরা বাঁচতে দাও, বাঁচতে দাও৷” হাসির রোল পড়ে গেল৷  অট্টহাসির গভীর ফাটলে পড়ে চাপা পড়ে গেল বাঁচার আকুতি-আর্তনাদ৷  একি? আমার এত গরম লাগছে কেন? আমার প্যারাস্যুটটা পুড়ে যাচ্ছে দ্রুত৷  রক্তের প্রবল স্রোত নাক মুখ দিয়ে ঢুকছে৷ আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার ৷  কেবল মায়ের মুখটা একটাবার দেখতে ইচ্ছে করছে...প্রচণ্ডভাবে৷

তারপর…. মেকু কাহিনীরা কাগজের পাতায় ধুলো ময়লায় মাখামাখি হয়৷  রিনরিনে সেই গানের সুরগুলো বিরহের সুর তোলে তানপুরায়৷ ছোট্ট লাল সেই উলের জামাটি ঝুল-কালি মেখে পড়ে থাকে চুলোর একপাশে৷  লাল-নীল রঙিন স্বপ্নগুলো সুতো কাটা ঘুড়ির মত মেঘের দেশ পাড়ি দিতে দিতে হয়ত ক্লান্ত হয়ে আটকে যায় সময়ের ডালে৷  কিন্তু এত বড় পৃথিবীটা আমাদের মত টুংদের আর চোখ মেলে দেখা হয় না৷ একটা নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে অনেকটা অভিমান নিয়ে খুব সন্তর্পণে চলে যেতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে৷  এ শুধু আমার মত কেবল কোনো নিরপরাধ প্রাণ কিংবা রঙিন স্বপ্নগুলোর বিসর্জন নয়, যুগে যুগে শাশ্বত নারীজন্মের পাপমোচনও৷  ধরার মানুষদের সে খোঁজ রাখার ফুসরতটুকু ও মেলেনা৷ কেননা, সত্যিই তো, এ জগতে কে কার?