নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অনিন্দ্য পাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অনিন্দ্য পাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ভবিতব্য : অনিন্দ্য পাল


ভবিতব্য
কয়েকটা প্রশ্ন করি তোমায়
কে সৃষ্টি করেছিল তোমায়?
তুমি অতীত না ভবিষ্যৎ?
তুমি কি সবার?
নাকি শুধুই ভ্রম আমার?
ভবিতব্য তোমার ও কি আছে ভাগ্য
ওই ভেসে যাওয়া অসহায় মাকড়ের মত?

উত্তর পাবোনা, জানি
জানি সেই ভবিতব্য নেই আমার
ছিল কি কখনও?
সত্যিই কি ঘটেছে কিছু?
কোন ঘটনা অথবা ধংস অথবা সৃষ্টি?
নাকি সবটাই ভ্রম আমার?
যেমন নিজেই আমি!
====================

পথজাল : অনিন্দ্য পাল


পথের শেষ হয় না কখনও
সব পথই অন্য পথে মেশে,
পরিশেষে
জুয়াড়ি জীবন তবু পথ খোঁজে
অসংখ্য ঐশ্বরিক জালে,
ভ্রষ্ট মন সব শেষে দেওয়ালে পিঠ রাখে
অন্য পথ তবু যদি মেলে!
নিজের কৌশলে মৃত্যু মহীয়ান
নির্বাক গোপন কাহার
শাখা প্রশাখা সব এক মোড়ে বাঁধন
পথ নেই, পথ আছে ...

শূন্যের ভিতরে শূন্য, অতল সাধন। 

মৃত্যু : অনিন্দ্য পাল


তোমাকে লিখতে পারি না
সমস্ত বয়ে চলা থেমে গেলে
সমস্ত পথ উপপথ মিশে গেলে এক বিন্দুতে
সবকটা আলোর মোড়ক পৌঁছে গেলে তারপর
তোমার শুরু
অক্ষরে - সংলাপে
অবচেতন - অচেতনে
ধূসর শূন্য গুহামুখে একলা নির্জনে
জন্ম নাও তুমি ...

তোমাকে খুঁজতে ভয় হয়
তোমাকে ভাবতে ভয় হয়
অন্তরাল সুড়ঙ্গে নেমে যেতে পারি না
তবু জানি, জানি তুমি আসবে নিশ্চয়

মৃত্যু
তোমাকে ভয় পাই নি কখনও
পরখ করে চোখে চোখ রেখে দেখো কোনদিন
পিউপিলে খুঁজে পাবে জমানো ভালোবাসা
তবে বুকের এক কোণে কোথাও কেঁপে ওঠে
মন
যখন
সে তোমার জন্য নয়
যাদের জন্য আমি বলতে পারি "আমার"
সেই সব উজ্জ্বল মুখ-চোখ তাদের সবার
ওরাই আটকে রেখেছে, আত্মার কারাগার,

মৃত্যু
তুমি শাসন
তুমি শাসক
তুমি স্রোত
তুমি বাহক
হতে পারো তুমি মহাবিশ্বের যতি
আমি এঁকেছি তোমাকে এই দরজার ওপাশে
অন্য ব্রহ্মাণ্ডে, অন্য এক স্থপতি।

অনিন্দ্য পাল এর গুচ্ছ কবিতা









"আমি " নৈশব্দের বন্ধু নই 


ইস্পাত পড়ে গেল তোমার হাত থেকে 
ঝনঝন শব্দ ছিঁড়ে দেয় নিদ্রাশিকড় 
পায়ের তলায় দৃষ্টি দিয়ে বুঝি 
আসলে ঘুম নয় 
তুমি ভেঙেছ মিথ্যা সত্যের ঘোর ...

বাসন ঝনঝন করতে করতে থেমে যায় 
একসময় 
কিছুই বদলায় না আগে আর পরে গৃহময় 
শুধু বেওয়ারিশ নৈশব্দ লুকিয়ে পড়ে 
আমায় ছেড়ে ...
হঠাৎ গতিময় হয়ে ওঠে চারধার, 

শুধুই চলে যায় মুখ লুকিয়ে, তেমন নয় 
অস্পষ্ট প্রাচীন কখনো এসে বসে পাশে 
কলঙ্কহীন ইস্পাতের আর্তনাদ থামে একসময় 
বোবা বাতাস আমার অসহায়তায় হাসে ...

শব্দ মিথ্যা নয় 
রোদ্দুর মিথ্যা নয় 
অন্ধকারকে শুধু বলেছি যেও না আওয়াজ হলে 
সবই সত্যি, সবাই রয়েছে প্রকৃতি জুড়ে 
তবু কোন সেতু ভেঙে যায় 
সুতো ছিঁড়ে যায় , নৈশব্দে "আমি" ডুবে গেলে ...





যদি

সেই দিন যদি ছুঁয়ে দিতাম ঠোঁট 
তবে লিখতাম এখন অন্য উপাখ্যান 
এত বড় রাত হয়ত হত এইটুকু মুষ্টিজোট 
হয়ত বৈপ্লবিক সুরে গাইতাম একই রাতের গান 

যদি সেই মাদুর আসনে বসে বিঘত দূরে 
ছুঁয়ে দিতাম তির তির কাঁপা ঠোঁট 
তুমি বুঝতে আমি ভিতু নই এতটুকু 
শুধু বুঝতে না কত ভারি, দারিদ্রের মোট 

যদি সেদিন ভুলে যেতাম আগে পিছে লুকোচুরি 
তোমার আদর ঠেলে পৌঁছতাম না করাতের বুকে 
দরজা খুলে আসন পেতে রেখেছিলে তোমার ঘরে 
রাতপাহারায় হেঁটে বেড়াই এখন আফসোস ঠুকেঠুকে 

যদি সাড়া দিতাম সেই কুঁড়ি ফুটে ওঠার ডাকে 
এখন তবে আমার বাগানে প্রজাপতি মাখা ফুল 
তবু তুমি এখন সুখি জীবনে জমকালো 
তুমি ভালো আছো, আমি ভালো আছি, 
কোথাও হয় নি  ভুল! 

যদি : অনিন্দ্য পাল


সেই দিন যদি ছুঁয়ে দিতাম ঠোঁট
তবে লিখতাম এখন অন্য উপাখ্যান
এত বড় রাত হয়ত হত এইটুকু মুষ্টিজোট
হয়ত বৈপ্লবিক সুরে গাইতাম একই রাতের গান

যদি সেই মাদুর আসনে বসে বিঘত দূরে
ছুঁয়ে দিতাম তির তির কাঁপা ঠোঁট
তুমি বুঝতে আমি ভিতু নই এতটুকু
শুধু বুঝতে না কত ভারি, দারিদ্রের মোট

যদি সেদিন ভুলে যেতাম আগে পিছে লুকোচুরি
তোমার আদর ঠেলে পৌঁছতাম না করাতের বুকে
দরজা খুলে আসন পেতে রেখেছিলে তোমার ঘরে
রাতপাহারায় হেঁটে বেড়াই এখন আফসোস ঠুকেঠুকে

যদি সাড়া দিতাম সেই কুঁড়ি ফুটে ওঠার ডাকে
এখন তবে আমার বাগানে প্রজাপতি মাখা ফুল
তবু তুমি এখন সুখি জীবনে জমকালো
তুমি ভালো আছো, আমি ভালো আছি,
কোথাও হয় নি  ভুল!

অবাক এক এলা খেলোয়াড় : অনিন্দ্য পাল


আড়ামোড়া ভাঙতে ভাঙতে যখন কমে আসে
রাতের আয়ু, নিদ্রা ছেড়ে ফ্যালে একের পর এক
রাতের পোষাক, ওদিকে ঘুলঘুলি পেরিয়ে পৌঁছায়
সবুজ আলো - বিনা অনুমতিতে ছুঁয়ে যায়
নিষিদ্ধ অঞ্চল, ঠিক তখনই আমার বুদ্ধিকোটরে
কিলবিল করে বেঁচে ওঠে, মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে থাকা
সমবয়সী অপমান ...
তারপর,
চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলে সেই সব ফুৎকার
যেগুলোর হুকুমে কালো হয়ে যায় রোজ ভোরবেলা
অন্ধকার বাড়তে বাড়তে যখন দুচোখের গহ্বরে
ফুটে ওঠে মৃতভোজী কৃষ্ণ গহ্বর
তখন আবার এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণ
আমাকে পৌঁছে দেয় শূন্য সময়ে
কাউকে পাই না সেখানে
কোন মুখ নেই
অবয়ব নেই
ভালোবাসা নেই
ঘৃণা নেই
জন্ম নেই
মৃত্যুকেও দেখিনা শরীরে বা অশরীরে
শুধু আমি
একা আমি আর সমস্ত না থাকা অথবা
বর্তমান শূন্যতা ঘিরে ধরে চারধারে
ভেঙে পড়ে আমার ভিতরে
মিশে যেতে থাকি স্থান-কাল সহবাসে...

তারপর কখন জ্বলে ওঠে খিদে
বেজে ওঠে অশালীন ডোরবেল
ডেকে যায় বাজারের থলি
আবার ঘুমিয়ে পড়ে সমস্ত কৃষ্ণগহ্বর এবং
অসীম শূন্যতা

তখনই, ঠিক তখনই জেগে উঠি আমি
জীবনের চোরকাঁটা ভরা মাঠে
রেফারীর বাঁশি শুনে তখন আমি
অবাক খেলোয়াড় ...

সমুদ্রে রেখেছি সময় : অনিন্দ্য পাল


সমুদ্র নিয়েছিল একপাটি নকল চটি
আমার তখন ছায়ার দেশে বাস
সেখানে বাতাস প্রবেশ নিষেধ
বচ্ছরভর আমার মলমাস

একপায়ে জুতো, অন্য পায়ে বালি
সমুদ্রে চেয়ে অনেক লোনা অক্ষিজল
কোথাও কেউ কান পেতে নেই শোনার
নিজের কথা নিজেকেই শুধু বলি

আমার শুন্যতা ভরা ছিল প্রতিবেশী
তাদের তখন থৈ থৈ প্রেমবেলা
আমার মুখে সন্ধ্যা বেলার হাসি
মনজুড়ে ঝোপঝাড়,
নিজের সঙ্গে আমার লুকোচুরি খেলা

দু একটা চোখ তবুও চিবুকে বুকে
করতলে রহস্য মাখিয়ে যেত
আমার এক পায়ে তখন নকল চটি
এগোলে হয়তো সমুদ্র পিছিয়ে যেত ...

মাত্র দুই :অনিন্দ্য পাল


১. রাতের মোড়কে তোমার পশমিনা গুহা
অন্ধ ভ্রমর আলোয় পুড়ে মরে ...
২.দোলনাতে কেটে যায় অলস দুপুর
অতীত আদর দেয়, ভবিষ্যৎ অচেনা সুর...
৩. রাতভর বসে আছে শীতের শিকারী
প্যালেস্তারা খসে পড়ে, কাঁদে বিপজ্জনক বাড়ী ...
৪. এত রাত খরচ হয়ে গেছে কবে ভগ্নাংশ জীবন
কোন রাতে খরচা হল, জীবনের মন!
৫. উঁচু আরও উঁচু বোবা অট্টালিকা
পাষণ্ড পাষাণ নিয়েছে জীবনের ঠিকা!
৬. নৈশব্দের গল্প নিয়ে এল  ম্যাগেলান আমার
তখন আলোর উপোস, জোনাকিআলোয় স্নান...
৭. চরম এক মেঘলা সুখ ধীরে ধীরে
বর্ষাদেহে ঢুকে পড়ে রোমকূপের গভীরে ;
৮.সমস্ত মনখারাপের জীবানুদের আজ ছুটি
যুবতী হয়েছে কলঙ্কিনী চাঁদ ...
৯. মনের দেওয়ালে লেগেছে কাল-ঘুণ
জীবাশ্মে রাখ পা, জ্বালাও উন্মাদ আগুন ;
১০. অনেক দূর থেকে পৌঁছে দিয়েছে প্রেম
অথচ আমার পরমায়ু ধুয়ে গেছে, সমুদ্র সৈকতে ...

বেড়া : অনিন্দ্য পাল


পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় এসে গেছে শুনেছিলাম দুধেদাঁতবেলায়, এখন ছোট হতে হতে মোবাইল অ্যাপে ঢুকেছে ক্লিক-শরীরে; অথচ কাঁটাতার বরাবর মৃত্যু এখন আরও রহস্যময় এবং খোলাখুলি,
ঘরের বাইরে উঁচু হয়ে ওঠে রামতুলসীর বেড়া, ছাদ আঁটা ঘর থেকে বের হলে পথ রোখে কনেসাজানো পাঁচিল, স্মার্ট যজ্ঞ থেকে উঠে আসে যথাক্রমে দেশ আর বিদেশ ...
আকাশের তাঁবু ছোট হতে হতে এখন
 সীমান্তে চায়ের ভাঁড়,
তার উপুড় হওয়া নাভিগহ্বরে বেঁচে থাকে
নুনভাত আর ডিজিট্যাল মাঢ়
সেই সব ব্যকরণে পাতা নেই, পাতা থাকেনা কালক্রমে
"ফিউচার টেন্স" গিলে খেয়ে বেঁচে থাকে,
রক্ত বেচে দিয়ে খালিপেটে থাকে, চাঁদা দেয় গুমনামে

সবুরে এখন দ্রাক্ষা ফল ফলে,
তপস্যায় সোনালি বোতল
তাঁবুর ছাতে ছেঁদা বড় হয়

পৃথিবী এখনও কি তেমনি গোল !

অকালে বর্ষণ : অনিন্দ্য পাল


পাঁচিলের উপরে পেরেকগুলো ভেজারোদে মাখামাখি
দুটো শালিখ সেই উল্টানো পেরেকের শাসানি ভুলে
নাচছিল
খুনসুটি করছিল
আর বৃষ্টিতে ভিজছিল
                                 এখন আইনত বসন্তের শেষ
বর্ষার ধারা নামে ঝুরঝুরে আইনের মত
এখন কি খুব দরকার ছিলো
                                         বৃষ্টির ?
বসন্ত শেষ হয়নি এখনও
টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্ম
বৃষ্টির কনভয় কোথাথেকে ঢুকে গেল
                                                      অকাল নিয়মে?
দরকার ছিল কি খুব ... এ বসন্তের শেষে
আকাশ-মেঘ আর দেবদারু গাছের দুঃখ দুঃখ খেলা?
দেবদারু পাতা থেকে স্রোত
নেমে এল অন্ধকূপ থেকে
নিদ্রা গেছেন দেব

অপ্সরীদের এখন ঋতুকালীন ছুটি
                                            ভেজা শিথিল রোদ্দুর
                         স্নান সেরে হেসে ওঠে বিফল বসন্ত
                  ভেজা হাসি থেকে ঝরে 
পারলৌকিক ফোঁটা

কান্না যদি বলা যায় সেই সব অকাল বৃষ্টিস্বরে
কবুতর মন তবে
                  ভেঙেচুরে নেমে আসা
                                           আকাশ আঁকড়ে ।

অসময়ে : অনিন্দ্য পাল


সেই তারিখটা মুছে দিয়েছি ডেট ক্যালেন্ডার থেকে যদিও শুণ্যতারও ভাষা আছে জানি, অস্তিত্বহীনতা
কথা বলে নিজের মত করে, তবু 'কিছু নেই ' থেকে ভেসে আসে 'না ', আমিও তাকে মুঠো করে লুকিয়ে ফেলতে চাই, ভুলে যাই হারিয়ে যাওয়ার ও নিজস্ব অঙ্ক থাকে ...

চুল্লির ও খিদে থাকে দুর্ভাগা কয়েদির মত।

উদ্বাস্তু :-অনিন্দ্য পাল


যেমন সব কিছু থাকে
ঘাস মাটি পাথর , ঝরা পাতা
অস্তিত্বে প্রত্যয়িত বাস্তব অথচ ঠিকানা নেই কোনো
ঠিক তেমনি,
ওরাও আছে জোয়ারের জলে ভেসে আসা
অমর পলিথিনের মত
অনেকটা ওই খাল বিল নদী থেকে সদ্যজাত
চঞ্চল মেঘ
নাম গোত্রহীন
না হিন্দু না মুসলিম না খৃষ্টান না ইহুদি
 অথবা বৌদ্ধ অথবা জৈন
ওদের ধর্ম বর্তমান দিন
ওরা সামাজিক অথচ বাস্তুহীন

কোথাও স্থায়ী নয় দর্মা পাঁচিল
একফালি টিনছাদ, পোষাক বাতিল
ওরা কারা জানে না ওদের ছেলেমেয়ে
জীবন দরজাহীন, নেই কোন খিল

অসীম না হোক এই নীলগ্রহ অনেকটা বড়
স্থল জল এত কিছু দখল নিল কে?
শুরুতে সবাই ছিলাম বন্য একাকার
কেন কেউ স্বর্গ পেল, কারো হাহাকার

এদেশ ওদেশ নিজের ঠিকানা কোথায়
সন্তান আঁকড়ে বুকে বাবা মারা যায়
আয়লান একা নয় অসংখ্য যেমন
অদ্ভুত জেলখানায় বাঁচতে বাধ্য হয়

সীমারেখা টানলো কে পৃথিবী টা কার?
বাস্তুনেই তবু বাঁচে ওদের সংসার
দেবালয় ঠাঁই দেয় আর আছে ফুটপাথ
ওদের সরকার নেই, আছে নগ্ন কালো হাত

প্রমাণ কোথায় তোমরা এ পৃথিবীর জীব ?
গ্যারান্টি দেবে কে তোমরা নও ক্লীব!
এ নাটকে অভিনেতা নও তুমি, দর্শক ও নও
তুমি শুধু এ গ্রহের উদ্বাস্তু হও!

মন পুরাতন :-অনিন্দ্য পাল


এখন একুশ শতকের হিমবাহ গলে নেমে আসছে
এ শতাব্দীর শিশুরা ,তাদের গতিবিধি যন্ত্ররেখায়
এ প্রজন্মে হাতে খড়ি হয় মোবাইল স্ক্রিনে
শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ আসে অশরীরী অনলাইনে।

এ প্রজন্মে ছায়া গলে গলে পড়ে এস এম এস বুকে
নিশাচর লক্ষ চোখ, টাচ্ মুখ জ্বলেপুড়ে ঘুম সিন্দুকে
পূর্বরাগ অভিমান কাঁদে বাইট সঙ্কেতে
যন্ত্র থেকে যন্ত্রে ছোটে প্রেম,লাইন পড়ে অ্যাপগুমটিতে
স্পর্শ ক'রে ছুঁড়ে দেওয়া স্মৃতির লেফাফা
কোথায় যে থিতু হবে, আলাস্কা বা নামডাফা
স্ক্রিন পঞ্জিকায় ভাসে নতুন মন্ত্র
'লাইফ ইজ অ্যা গেম ' শেখায় নেটওয়ার্ক তন্ত্র,

একুশ শতক ছোটে অজানা উৎসমুখে
এ প্রজন্ম চিন্তাহীন বাঁচে অ্যান্ড্রয়েড সুখে
তবুও যে সব মন এখনও ছিন্নমূল
নতুন রুমাল মুছবে তাদের, জন্মাবে গুগল,

এযুগে রোদ নেই,জানালা জুড়ে শুধু তথ্যের বিকিরণ
ঘুলঘুলি মরে গেলে বাতাসে ভেসে আসে কূটসমীকরণ
কাদা নেই ধুলো নেই বৈদ্যুতিন বিকেল
ছন্দনেই, কাব্যনেই, এ এক আবিশ্ব কারাগার-জেল ,

 এ প্রজন্মের মেরুদণ্ডে ছোটে বেতাল স্নায়ুঝড়
পুরোনো যা বেঁচে আছে, অর্বাচীন সব গড় ।

একান্ত ব্যক্তিগত : অনিন্দ্য পাল


কোনো কোনো দুঃখ অহল্যা পাষাণীর মত চেপে থাকে
বুকে, সবটুকু একাকিত্বের শুকনো কুয়োয় হাবুডুবু খেতে খেতে মনে হয় আমার জন্য বরাদ্দ নেই বোধহয়
দেবতার টুকরো। পাষাণের মৃত্যুভয় নেই, তবু ঘোর কৃষ্ণ এক রাতে কেঁপে ওঠে অস্তিত্ব, জলজ প্রতিবিম্বের মত অস্পৃশ্য মনে হয় আমার 'আমি'কে। ছুঁতে চাই যখন, আষ্টেপৃষ্ঠে ধরতে চাই যখন, চারিদিকে চেয়ে দেখি, অসংখ্য মিথ্যা ঝুলে আছে নিরুচ্চার বাদুড়ের মত। অথচ দুঃখ এই প্রথম নয়, সময়ের মর্গে থরে থরে শুয়ে আছে সেই সব মনোগত শব। তবু কোন কোন কাঁটা আজীবন গেঁথে থাকে বুকে, কান্না শুকিয়ে জমে থাকে নিষ্পাপ তুহিনের মত।

দেশ //অনিন্দ্য পাল



সময়ের তিক্ত ইতিহাস লুকিয়ে পড়েছিল
ক্যালেন্ডারের পিছনে
ঘৃণার পাঁচিল উঁচু হতে হতে এখন
ঢেকে ফেলেছে মেঘ

 তেতো কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে
অক্টোপাসের মত কালি ছোঁড়ে
গৃহী এবং সন্ন্যাসী

ফুটপাতে শুয়ে থাকা রিকেট শিশু
খিলখিলিয়ে হেসে উঠে পাগলী মা কে বলে
দেখ্ দেখ্ দোকানের টিভিতে
দুটো কাদা মাখা লোক কেমন সার্কাস দেখাচ্ছে!

পাগলী আকাশ দেখে তারপর হেসে উঠে বলে
যা চান করে আয়
ওরা কেউ চান করে না
সব নোংরা
সবাই নোংরা।

পৌঁছায়নি এখনও...... অনিন্দ্য পাল


ওয়াটার প্রুফ প্যাকেটে মুড়ে পাঠিয়েছি সন্তান
অথচ একবারও প্রাপ্তি স্বীকার করেনি কেউ

আমার আর সেই ডাকদেশের মধ্যে আছে মনে হয়
অমীমাংসিত কোনও কৃষ্ণ গহ্বর
সমস্ত অক্ষর, মাত্রা আর যতি পাল্টে চলেছে নিয়ত
অভিশপ্ত অসীম ক্ষুধায় ...

অসংখ্য শব্দ ঝনঝন করে টুকরো হবার আগে
কোথায় তলিয়ে যায় অন্ধকূপের যোনিতে
হয়ত অন্য কোথাও জন্ম হয় আবার
অন্য কোন উচ্চারণে

অতীত মুছে ফেলা সেই সব জারজ সংলাপ
বড় চেনা মনে হয়
তবু চিনতে পারি না একবারে
মনে হয় যেন সব কটা মুখোশের নিচে শুয়ে আছে
আমার অলাজ মুখ ...

অনিন্দ্য পালের এক গুচ্ছ কবিতা

      




    পরিবর্তন যদি ...




সব আলোই নিভে যায় কোন দিন কোন সময় 
নক্ষত্রও কেঁদে ওঠে মৃত্যু যন্ত্রনায় 
দেবতারাও বদলে ফেলে চামড়ার রঙ 
রামধনু হারিয়ে যায়, কানাগলির ঠিকানায় 

বদলে যায় পাতার সবুজ 
পলির গন্ধে মিশে যায় আদিম মৃত্যুর গন্ধ 
বদলে যেতে গিয়েও কি ফিরে আসে আবার 
নিরুত্তাপ বেঁচে থাকা, পাথর ভাঙার ছন্দ ?

পর্বতের শিখর ছুঁয়ে ভেবে নেওয়া সহজ 
উচ্চতা তোমাকে দিয়েছি সভ্যতার পদধূলি 
সমুদ্র পার হয়ে মনে হতে পারে 
পৃথিবী মাত্র এইটুকু, ক্যানভাস রঙ তুলি!

তবু মনে হয়, সব মহত্ত্ব ভালোবাসা যদি 
মূর্তি হয়ে দাঁড়াত, সভ্যতার মোড়ে মোড়ে 
সমস্ত রঙ যদি মিশে যেত এক হয়ে 
পোড়ামাটির থালায় 
হয়ত আবার তবে চৌচির আকাশ জুড়ে 
ফুটে উঠতো একটাই নীল 
 সব দেবতার পূজা হত একটাই সাদা মালায় ।









                 সম্মানার্থে    




এক পশলা আগুন অথবা তীক্ষ্ণ আকাশ 
নেমে এলো মেঘনাদের শরের মত 
কেঁদে উঠলো পৃথিবী
মাটি আর মা 
জঠরে আঘাত করে হত্যা করলো 
ভ্রূণ-সন্তান, 
সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে দিলো বিষ 
হত্যা নয়, মুক্তি দিল
সঙ্গে দিল অবশিষ্ট আদর, আশীষ ।

এই দৃশ্যপট জ্যোতিষের কুষ্ঠিবিচার নয় 
অথবা নয় কোনো সময়ঢাকা ধূসর ইতিহাস 

কালক্রমে এ সব এখন ছাপার খবর 
পড়া হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয় স্তূপের উপর 

তারপর শুরু হয় আবার তপ্ত লোকাচার 
এবং সময়ের উর্বর কোটরে বেড়ে ওঠে 
                             অবাধ্য ভ্রূণ আবার ...






                  দহন   




জলের কবরে আঁকুপাঁকু করে সূর্য 
আমাদের ও তো পাঁকাল মাছের জীবন 
মাথার উপরে আকাশ যেন ছেঁদা কৌটো 
আগুন ঝরে আগুন বয়ে আনে বাতাস বাহন,

আগুন রঙের ওড়নায় ঢাকা নিদমহল 
এত ক্ষোভ কেন, কেন রাগ এত বিশ্বপিতা?
না হয় করেছি লোভ, করতলে পিষেছি শিষ্ট-সবুজ 
তবু ভালোবাসা দেবে না এতটুকু, শুধুই উষ্ণতা! 

এভাবেই তো সয়ে আছি অভিশাপ-দহন 
তোমার তূণীরে দিবানিদ্রা যায় অলস শীতলতা...

যদিও রোজ ডুবে মরে, আত্মকেন্দ্রিক 
আগুনে দেবতা 
প্রশ্নহীন মাথা নেড়েও এঁকে রাখি জিজ্ঞাসা 
নতুন সকাল কি পাবো না কখনও ?
বেঁচে আছি , বেঁচে থাকি ...
বাকিটুকু হয়তো বা দুঃখ বিলাসিতা। 

আঁকা মানুষ :অনিন্দ্য পাল


শেষ হয়ে যাওয়া সময়টুকু পেরিয়ে এসেছি সবে
সব নাম-বেনাম বেরিয়ে গেছে শেষ নিঃশ্বাস হয়ে
আমার "আমি"র মুখে বারবার এঁকে রাখা সব মুখোশ
খরার আদরে ফাটাফুটি দোঁয়াশের মত চেয়ে আছে
আকাশের দিকে,
ধরো সেখানে ভেসে আছে একটাই মেঘ
অথবা অভিশাপ
বৃষ্টি হলে ,ধুয়ে যাবে রঙের পরত
না হলে , ধূসর গুঁড়ো হয়ে বাতাসে মিশে যাবে
আঁকা পরিচয়
স্তরে স্তরে গড়ে তোলা বল্মীক জীবন

এখন দেখছো এই সব শব যা চেয়ে দেখ
আকাশের দেওয়ালে ফুটে আছে নাম
আঁকা মানুষ ...

নির্বাচন :অনিন্দ্য পাল


ভালোবাসা অথবা নরম মিষ্টি পায়েস
আসলে ঘৃণার হিউমাস থেকে জন্মে ওঠা
একরোখা শাসন

কাঁধের ঝোলা ব্যাগে বইতে হয় শুধু
জমাখরচের ইস্তাহার

উপুড়হস্ত ঢেলে দেয় সুখ
আসলে ছদ্মবেশ
সব মহড়া ঘটে চলে বোবা ক্যামেরার
নিস্তেজ চোখের সামনে

মহোৎসব আসে, যায়
স্বপ্ন ও...
তারপর শেষ বিকেলে ছাপা হয়
সম্মান লুঠ
বা
আরও একজন মা বেচে দিয়ে যায়
কোলের সন্তান।

নির্বাচন। :অনিন্দ্য পাল


ভালোবাসা অথবা নরম মিষ্টি পায়েস
আসলে ঘৃণার হিউমাস থেকে জন্মে ওঠা
একরোখা শাসন

কাঁধের ঝোলা ব্যাগে বইতে হয় শুধু
জমাখরচের ইস্তাহার

উপুড়হস্ত ঢেলে দেয় সুখ
আসলে ছদ্মবেশ
সব মহড়া ঘটে চলে বোবা ক্যামেরার
নিস্তেজ চোখের সামনে

মহোৎসব আসে, যায়
স্বপ্ন ও...
তারপর শেষ বিকেলে ছাপা হয়
সম্মান লুঠ
বা
আরও একজন মা বেচে দিয়ে যায়
কোলের সন্তান।