নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

গুচ্ছ কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
গুচ্ছ কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা







আহ্বান

গুমরে মরেছি শুধু মনের গভীরে।
 অস্ফুট আর্তিতে , অপেক্ষায় -অপেক্ষায়
 বয়ে গেছে রক্তধারা এই যমুনায়।
রুধিরের স্রোত জল বৃথা, সব বৃথা ।
অনেক মায়াবী রাত ঝলমলে দিন ,
নিতান্ত নিস্ফল তারা, অপুষ্পক স্মৃতি।
এখনও গোলাপবাগে আধফোটা  কুঁড়ি,
ভ্রমরের স্পর্শ পেতে প্রচণ্ড উন্মুখ।
প্রতীক্ষা, প্রতীক্ষা নিয়ে রাত ভোর জেগে,
সরিয়ে  রেখেছি পাশে বরমাল্য খানি।
তারার জন্মের পর তারার মৃত্যুতে,
চুপচাপ কাল স্রোতে বয়ে গেছে কাল।
নিঝুম দুপুর থেকে ধূসর বিকেলে
অলিন্দে একাকী বসে দেখেছি জগত।
লুকিয়ে রেখেছি কত চোরাবালি স্রোত।
লুকিয়ে রেখেছি কত পক্ষ বিধূনন।
আগ্নেয়গিরির সেই উদ্গিরণের মত,
আজ আমি অভিসারী, রোমাঞ্চ পিয়াসী।
তুমি এসো...মুগ্ধতার সে প্রাচীন আধিকার নিয়ে এসো।
 রুদ্ধদ্বারে বার বার কর করাঘাত।
তোমার উদ্ধত ফনায় আমাকে বিদ্ধ কর,
 মুগ্ধ কর, কর শিহরিত।
বাজিয়ে তোমার বীণ,
 নিয়ে চল জ্যোৎস্নার মায়াবী জগতে।
তোমার ডানার স্বেদ বিন্দু
 গড়িয়ে পড়ুক আমার ডানায়।
কানায় কানায় উপচে উঠুক রসস্রোত।
পিয়াসী  তৃষ্ণার্ত বুকে
ঢেলে দাও অমৃত তোমার ...


---------------------------------------------------------------

বৃষ্টি এলে

বৃষ্টি এলে বুকের ভিতর গোলাপ কুঁড়ি ফোটে
বৃষ্টি এলে মনটা বড় উদাস হয়ে ওঠে।
বৃষ্টি এলে শিউলিতলায়, ছাতিমগাছের ডালে
মনটা বড় কেমন করে বৃষ্টি-ঝরা কালে।
এখন তুমি অনেকদূরে না জানি কোনখানে,
ভিজছো কিংবা গুনগুনিয়ে সুর তুলেছো গানে।
তোমার গানের সেই সুরটাই বৃষ্টি হয়ে এসে
টাপুরটুপুর পড়ছে ঝরে মেঘকে ভালবেসে।
মেঘ বিরহী,কান্নাটা তার বৃষ্টি হয়ে ঝরে
তোমার বুঝি মেঘ দেখলেই আমায় মনে পড়ে?

************---------*******------****----



কবিতা

সেটা আকাশ থেকে হঠাৎ ভেসে আসে
সেটা স্বপ্ন হয়ে নামে আমার পাশে।
তার আলোর সুরে শুকতারাটি হাসে
তার খুশির দোলা প্রতিটি ঘাসে ঘাসে।
তার সুরের ধারা আপনি বয়ে চলে
তার গভীর সুরে প্রাণটি কথা বলে।
তাকে মনন করে মনের সীমা বুঝি
তার গভীরতায় পাতালপুরী খুঁজি।
তাকে অস্ত্র করে দূর বিদেশে যাই
সেই তারার পারে মরণ সীমানায়।
তাকে আগলে বুকে জীবনে বেঁচে থাকি
তাকে যত্ন করে আবেগ দিয়ে আঁকি।
তার প্রাণের সুরে বাঁধা আমার প্রাণ
তার গানের সুরে সুর যে পেল গান।
তার উথলে ওঠা আবেগটুকু নিয়ে
ওই ঝর্ণা ছোটে পাহাড় চিড়ে দিয়ে।
তার শক্তি কত বলতে পারে কেউ?
সে তো রোজই বলে সাগর সেঁচা ঢেউ।
তাকে আগলে রাখি মাথায় করে চলি
তার সপ্ত সুরে প্রাণের কথা বলি।
তার চলার পথে আবেগ রাশি রাশি
তাকে আদর করি, তাকেই ভালবাসি...

****-----------------------*****************------


 *আহাম্মকি*

মগজে তালাচাবি দিয়ে
বুকের সব লাল গোলাপগুচ্ছ
বাগান উজাড় করে তোমায় দিলাম।


কানাকড়ির চেয়েও কম দামে
বিকিয়ে দিলাম নিজেকে।


সব বাঁ পায়ে মাড়িয়ে মশমশিয়ে চলে গেলে।


বুকের গভীরে বিঁধে থাকা পেরেক
উপড়ে ফেলতে না পেরে,
নির্জন সমাধিতে আজও একা শুয়ে।


আজকাল কেউ স্ফটিক চাইতে এলে
তাকে কাচের টুকরোও দিতে পারি না!


______________________





 *শূন্যতা*

দিনকে ফাঁকি দিতে পারলেও
রাতের কাছে হেরে যাই রোজ!
স্বপ্নেরা সব মুখ থুবড়ে পড়ে
চোখের জলে বালিস ভিজতে থাকে।

তারপর খুব ক্লান্ত হলে,
গভীর ঘুমে পাই মৃত্যুর স্বাদ।

সারারাত জ্বলতে-জ্বলতে
রাতের তারার সলতে ফুরিয়ে যায়।

আবার একটা দিন...
আবার ছোটা শুরু...





______________________



 *মরণের পার থেকে


কীদোষে ছিলাম দোষী,কীদোষ আমার?
অনেক ভেবেছি তবু সদুত্তর নেই,
গোলাপ ফুলের মত নতুন কিশোরী
স্ত্রীলিঙ্গ শরীরে ছিল, দোষ ছিল এই!

মানুষেরা পশু নয়, সেকথা জেনেই
ধর্ষিতা হতে হতে কেঁদেছি অঝোর,
আমার মতোই কত কেঁদেছে কিশোরী
তবুও তো রাত কেটে আসেনি গো ভোর।

অনেক কাঁদার পরে, অবশেষে থেমে
নিথর আমার দেহ কফিনে শোয়ানো;
মোমবাতি মিছিল হবে ! হাঁটো মিছিমিছি,
সোহাগ দেখাতে কিছু ফুল কিনে আনো।

যেদেশে ধর্ষণ, খুন আর অনাচার
অসভ্য সেদেশ ছিল ঠিকানা আমার!

লেখক পরিচিতি :-

নাম- সুদীপ্ত বিশ্বাস,জন্ম ১৯৭৮,
কবিতা লিখছেন ১৯৯২ সাল থেকে।কবিতার প্রথম প্রকাশ  ২০১০ সালে। কবির কবিতা প্রকাশিত হয়েছে শুকতারা, নবকল্লোল, উদ্বোধন, কবিসম্মেলন, চির সবুজ লেখা, তথ্যকেন্দ্র, প্রসাদ, দৃষ্টান্ত, গণশক্তি ইত্যাদি বাণিজ্যিক পত্রিকা ও অজস্র লিটিল ম্যাগাজিনে। কবিতার আবৃত্তি হয়েছে আকাশবাণী কলকাতা রেডিওতে। ঝিনুক জীবন কবির প্রথম বই। ২০১০ এ প্রকাশিত হয়। এরপর মেঘের মেয়ে, ছড়ার দেশে, পানকৌড়ির ডুব, হৃদি ছুঁয়ে যায়, Oyster Life বইগুলো এক এক করে প্রকাশিত হয়েছে। দিগন্তপ্রিয় নামে একটা পত্রিকা সম্পাদনা করেন। কবি পেশাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। নদিয়া জেলার রানাঘাটের বাসিন্দা। শিক্ষাগত যোগ্যতা বি ই,এম বি এ, ইউ জি সি নেট। স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত তিন ছন্দেই কবিতা লেখেন।বড়দের কবিতার পাশাপাশি ছোটদের জন্যও কবিতা লেখেন।


রান্নাঘর : অভিজিৎ দাস কর্মকার



ক.
দুটো ইট পাশাপাশি লম্ব ভূমি দিয়ে
অতিভুজ পাশে ডিপথেরিয়া ভাইব্রিসির
ডগায় নিয়ে বিড়াল মাসি মাছের
পিটুইটারি বঁটিতে কাটে।
খ.
টম্যাটো আর সাবান গুড়ির ঝগড়ায়
অসমান বৃত্ত
রান্নাঘর কোণার পাশে প্যাকেট দুধ ল্যাকটেট  ক্যাপশুলে বৃত্তচাপ আঁকে।
গ.
বাজারের ঝুড়ি আর ঝাঁটার মধ্যে দূরত্ব ব্যাপার থাকলেও সমিকরণ থেকে কিছু
অংক কথায় ত্রিভুজ চতির্ভুজ সরলরেখায় কাগজে প্রমানিত সমান্তরাল।
ঘ.
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে চাপ তাপ দিয়ে ওভেনবাবু উত্তেজিত হোতেই পদার্থ গুলো জামা-প্যান্ট খুলে ব্যারোমিটার ফেটে

ঙ.
এদিকের পেরেক থেকে উত্তর দেওয়ালের
দড়ি চার দেওয়ালকে কর্ণ বলে।দরজা তখনও অতিভুজ ভেবে বিসমত্রিভুজে আলকাতরা মাখে।
চ.
স্টীলের মগে পিতলের চামচ-গোঁদলের কোঁদল লাগতেই শব্দ-তরঙ্গ-লুপ নীচের রোয়াকে কাল্পনিক সরলরেখা টানে।
ছ.
নোনা কৌটো হলুদবাবুকে আলাদা ফ্লোরে দিলেও জিরেমশাই কু-মন্থরা। গরম ঘিলুতে পাঁচফড়ং নাড়াতেই গায়ে ফোস্কা ফোটে।
জ.
নীল ডাব্বার চাল ডেকচির নিকেল জলে ফেনাতেই ফুড ভ্যালু মুড়ি ভাজা হয়ে নাচে। টিনের কৌটোর স্পাইনাল কর্ডে সাঁতরে বেড়ায় বেরিবেরি।



ঝ.
বেসিন কলের মুখে তাকিয়ে প্রেমালাপ দিতেই কল থেকে বেরিয়ে এলো জল।
জল সেলাইন ওয়াটার নয়। কলের প্রেম নিবেদনে কিছু কুলকুচি শব্দই মিনারেল হয়ে বেসিনের ঠোঁটে লেপ্টে যায়।

ঞ.
অনেক জ্যামিতিক ঝনঝনানিতে বাসনের রেক মাথার পেরেকের সাথে চু-কিৎকিৎ তীব্রতার আলোকবর্ষেই ভেঙে যায় পাঁচটি পুরনো সম্পর্ক।

ট.
রোয়াকের উপর ফাঁকা বিসলেরি বোতলের
মধ্যে রেশনের কেরোসিন সাপ্তাহিকী পড়ে চোদ্দ কেজির সিলিন্ডারে আজ গ্যাস হয়েছে অ্যাকুয়াটাইট আড়ং-এ জোয়ান ঢেকুর তোলে।
ঠ.
ডাইনিং টেবিলে পাতা কাগজ পড়াশুনোতে বর্ণমালা ঝ ট প ট উল্টে নিতেই থালা বাটি গ্লাস বাবুদের বিরক্তিতে নুনদানিটি গড়িয়ে পড়লো,ছড়িয়ে গেলো গনতন্ত্র ,নোনা...

অমিতাভ মীরের গুচ্ছ কবিতা

১.
সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায়
  - অমিতাভ মীর

ইচ্ছের বিরুদ্ধেই যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখি-
বুকের গভীরে বাসা বেঁধে থাকা যত ব্যথাকাঁটা।
ফাল্গুন-শ্রাবণ বলে কোন কথা নেই
রাত অথবা দিনের বাঁধা নেই
মরা কটাল আর ভরা কটালের প্রভাব নেই
যখন তখন বুকের ভেতর নড়ে চড়ে ওঠে;
মনে পড়ে যায় গত জীবনের কত কথা।

এক ফাল্গুনের প্রথম প্রভাতে নব মঞ্জরিতে
বিকশিত নন্দনের প্রিয় পারিজাত কলি;
ভরে দিলো বুক সৌরভ গৌরবে অনাবিল সুখে।
হৃদয়ের তানপুরা সাধে সুর তার গীত গানে
মহুল বনের তল গেল ভেসে অপার প্রণয় বানে,
হাতে রেখে হাত অভিসার শতবার পথে পথে দেখা;
এখনও অমলিন জেগে আছে সেই পথ রেখা।

নুপুর পায়ে ঝুমুর তালে এলো শ্রাবণের ঘনঘটা,
বৃষ্টির পরশে প্রকৃতি পেল ফিরে নব জীবন,
নব মঞ্জরিতে বিকশিত হলো বৃক্ষ-তরু-লতা।
তারপর, এলো বেদনার অঝর সেই শ্রাবণ সন্ধ্যা,
রজনীগন্ধা হাতে কাকভেজা ভিজে গিয়েছিলাম প্রিয় আঙিনায়,
আবেগের ভুলে ভুল বোঝাবুঝি, ঘটলো ছন্দপতন;
বুকে বিঁধে গেল ব্যথাকাঁটা হায়, সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায়।


২).
গোলাপ বাগানে পোড়া গন্ধ
   - অমিতাভ মীর

গোলাপ বাগানে ভাসে শ্বাসরোধী পোড়া গন্ধ একী,
দাবানল করেনি তো গ্রাস প্রান্তরের বনাঞ্চল,
গৃহদাহ ঘটেনি কোথাও
জনপদ স্বাভাবিক, নদীও নীরব;
বহুতল ভবনেও নিত্যকার কোলাহল
শ্মশান চিতায় সে কবে পুড়েছে শব,
তারপর থেমে গেছে সব কলরব।
পুড়ছে তবে কি?

মনের চিতার আগুন সে-ও তো গেছে নিভে,
পোড়া গন্ধ নয়, এখন রক্তের স্বাদ লাগে জিভে।
যৌবনের তাপ নেই হিমেল শীতল অনুভূতি,
ছায়া ঘোরে পায়ে পায়ে সমাহিত ডাক শুনি।
অন্দর পোড়েনি, বাহির পোড়েনি
পোড়েনি বন্দর, বালুকার চর,
পতাকা পোড়েনি, ভূখণ্ড পোড়েনি;
পোড়েনি মায়ের কনক গৈরিক।

ওই যে বিশাল আসমুদ্রহিমাচল
সে-ও দেখি আছে নীলিমার নীচে স্থির অবিচল।
পাতালপুরীতে সুনসান কবরের নীরবতা,
কেন তবে ভাসে গোলাপের বাগে শ্বাসরোধী পোড়া গন্ধ?
পুড়ছে কী তবে হৃদয়ের ঘর,
যেখানে শাশ্বত প্রেম-হেম অনির্বাণ জ্বলে!
খোঁজাখুঁজি শেষে দেখি অনিমিখ-
দাউ দাউ পুড়ছে মানুষের বিবেক।


৩).
হলুদ ঘাসের কফিনে ঘাসফড়িঙের শব
    - অমিতাভ মীর

খরায় পুড়ে যাওয়া শস্যক্ষেতের মত বিষন্ন আকাশে-
একা জেগে থাকে আষাঢ়ের একাদশী চাঁদ,
হাপরের টানে উস্কে ওঠা গনগনে আগুনে
ঝলসে যায় সকালের নরম রোদ;
স্বার্থের ঘুণপোকা ধীরে ধীরে কুরে খায়
প্রকৃতির কোমল গতর,
তপ্ত লাভার উদগীরণে পুড়ে খাঁক
বিস্তীর্ণ বনানী, জনপদ, সবুজ শহর।

সীসার চাঁদোয়ার তলায় চাপা পড়ে থাকে
বিষবৃক্ষের মত কংক্রিটের জঞ্জালে ভরা নগর জীবন,
হুহু করে বাড়তে থাকে তাপানুকুল বাড়ি-ঘর
লালসার বিষাক্ত লালায় ভিজে যায়
ভোগবাদী আধুনিক নগর সভ্যতা;
চিতাভস্মের তলায় ডুবে থাকে সবুজের সমাধি
পাপের শাপে অঙ্গার হয়ে যায়
দশ দিগন্তের স্বচ্ছতোয়া বিপুল জলধি।

মধু ফাল্গুনের রাজপাটে শ্রাবণের আগ্রাসন,
আষাঢ়ের কোল জুড়ে জ্যৈষ্ঠের দহন,
হলুদ ঘাসের কফিনে ঘাসফড়িঙের শব
জল বিনে চাতকের যায় বুঝি প্রাণ!
পাপের কলসি পূর্ণ দেখেও নেই কোন অনুতাপ,
রীতিহীন নগরায়ন বাড়ায় প্রকৃতির ক্রোধ;
বনজ প্রতিবেশ ধ্বংসের অর্বাচীন ফল-
গুটি পায়ে ধেয়ে আসে প্রকৃতির প্রতিশোধ।


৪).
মনখারাপের বৃষ্টি যখন নামলো
   - অমিতাভ মীর

মনখারাপের বৃষ্টি যখন নামলো চোখের পাতায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিকাঁটা জাগায়।
কাজল মেঘের অভিমানে আকাশ পাগলপারা,
ঝমঝমিয়ে মাটির বুকে নামলো শ্রাবণধারা।

মাটির দহন নিভলো যখন শ্রাবণ ধারায় ডুবে,
আমার বুকের সুপ্তসুখ তখনই গেল উবে।
ছলছলিয়ে চোখের আকাশ ঝরছে নিরবধি,
কলকলিয়ে উঠলো দুলে বুকের গহীন নদী।

সেদিন এসেছিলো পাশে কেউ গভীর ভালোবেসে,
ভুল বুঝে সেও গেল চলে আনমনে বাঁকা হাসি হেসে!
গরম কফির ধোঁয়ায় স্মৃতির আবেশ জুড়ায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিকাঁটা বেঁধায়।

অঝর ধারার বর্ষণমুখর এক উদাসী সন্ধ্যায়,
ভেজামন নিয়ে কেউ এসেছিলো আমার আঙিনায়।
মজেছিলো দু'টি ঠোঁট গরম কফির কাপের ছোঁয়ায়,
বুকের নদীর পাড় ভেঙেছিলো সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায়।

তারপর কেটে গেছে অনেক বর্ষণমুখর শ্রাবণ,
বুকের নদীর পাড় ভাঙে আজো চোখের প্লাবন।
আজ মন বেসামাল মনখারাপের শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিকাঁটা বেঁধায়।


৫).
অদ্ভূত কানার বাজার
     - অমিতাভ মীর

এই বৃষ্টি এই রোদ্দুর ভেজা শরীর রোদে শুকায়,
মনমর্জি চলছে ওরা, আমার কথায় কি এসে যায়!
বৃষ্টির সাথে চোখের প্রীতি হাত বুলিয়ে দেয় রোদ্দুর,
বৃক্ষতলে ঠেস দিয়ে ওদেরও কাটে অলস দুপুর।

বৃষ্টিভেজা রোদে পুড়ে কোটার আগুন রাজপথ জুড়ে,
ছেলে-মেয়ে একাট্টা হয়ে আসছে যেন পাতাল ফুঁড়ে!
হঠাৎ ফের বৃষ্টি নামে মেধার ছাতা লাগে না কাজে,
বিভীষণ সব ঘিরে ধরে মুঠোবন্দী হাতুড়ি রাজে।

হাড়-মাংস থেতলে গেলে রোদের তাপের কি দোষ আছে?
শুনছো না? কারা যেন কাঁদছে ভীষণ দূরে কিবা কাছে!
কোন মায়ের ধন হারিয়ে গেল চেনা সেই অন্ধকারে,
দোষ না করেও দোষী সবাই অদ্ভূত কানার বাজারে।

ভণ্ডরা সব একজোট হয়েছে ভাঁড়ের দলের সাথে,
জ্ঞানপাপীরাও নেই বসে আজ কর্তাল বাজায় হাতে।
অন্ধরা সব দেখছে বেশী, মুখ খুলেছে সব বধির,
ভাঁড়ামিতে কে কার সেরা; ঘোড়ার রেসে ছুটছে অধীর।

শব্দমালা হাতে, মৌন যাত্রাস্রোতে ভিজে গেছে রাজপথ,
অভিযাচনা সবার, সূত্র এক; ভিন্নতা পথ ও মত।
যাচনা করার নেই অধিকার, দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ,
ফসিল ইতিহাসের পাতা খুলে দেয় বন্ধনের গিঁট।

৬,


ক্ষোভের বারুদে বুক ঠাসা
  - অমিতাভ মীর

পরাধীনতার বৃত্তে পথিক শেকল ভাঙার গান ভুলেছে,
শৃঙ্খল মুক্তির উদ্দীপনাময় স্লোগানে এখন গ্রহণ লেগেছে,
অধিকার আদায়ের রাজপথ জুড়ে শকুনীর বিচরণ;
বুকের কথা মুখে ফোটে না, ধমনীতে জাগে না তো শিহরণ।

ব্যালটের রফা বুলেটের ভয়ে, ভোটারের দায় সহজে কি মেটে?
রাতের আঁধারে বাক্সের ভেতরে ব্যালট ঢুকেছে পায়ে হেঁটে।
ব্যালটের দখল কাদের হাতে ছিলো, কারা করেছে তা নিয়ন্ত্রণ?
শূণ্য জনপ্রিয়তায় করে কে ভোটারকে কেন্দ্রে নিমন্ত্রণ?

বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীন হয়েছে দেশ,
বাইশ লাখের ওপর পরিবার এখন জাঁকিয়ে বসেছে বেশ।
মুক্তির সোপানতলে বয়েছে লাখো শহীদের রক্তের স্রোতধারা,
স্বাধীনতার এই তবে অর্জন গোটা দেশ আজ গণতন্ত্রহারা।

রাজনীতি আজকে দেউলিয়া ভীষণ, সবাই স্বার্থের বাজিকর,
ভণ্ডামির চূড়ামণি মিথ্যার বেসাতিতে রচেছে আপন বাসর।
তেজময় সত্য প্রকাশিত হবে, খসে পড়বেই মিথ্যার নেকাব,
সময়ের কোপানলে একদিন দিতেই হবে সব হিসাব।

লুটের সম্পদ থাকে না দেশে ভিনদেশে হয়ে যায় পাচার,
দ্বৈত নাগরিক রসে-বশে বেশ করছে তারাও এধার-ওধার।
দু'চোখ ঘিরে নামবে অন্ধকার, আকাশের বুকে তারা খসা,
সব ছেড়ে যাবে শূন্য হাতে, লুটের টাকার কী হবে অন্তিম দশা!

মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক এক দেশ চেয়ে,
স্বাধীনতা এসেছে লাখো অগ্রজের শহীদী রক্তের বন্যায় ধেয়ে।
আমেরিকা-সিঙ্গাপুর হতে নয়, দেশ হবে সার্বভৌম- এই ছিলো আশা,
শহীদ হওয়ার এসেছে সময়, ক্ষোভের বারুদে বুক ঠাসা।