নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

মান্নুজা খাতুন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মান্নুজা খাতুন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

একটি মেয়ের আত্মকথা : মান্নুজা খাতুন





আমি তার প্রেমে পড়ি বারবার
হ্যাঁ  তাকে মুগ্ধ  নেত্রে চেয়ে দেখেছি বহুবার৷

আজ মুক্তির প্রথমদিন দীর্ঘ বন্দিত্বের পর আমি আজ মুক্ত, মেয়ে বলেই সমাজ আমার পায়ে শেকল দিয়েছিল,  বই খাতা একদিন পুড়িয়ে দিয়েছিল, পথে ঘাটে বার বার আমায় অপমান করেছিল৷ আমার দাদা আমায় ভীষণ  বকেছিল,  বাবা চোখ রাঙিয়েছিল, সমাজ বলেছিল চৌকাঠের বাইরে এলে ভেসে যাবে কোথায় তা ঠাহর করতে পারবে না৷  ভুল তো আমি কিছুই করি নি সেদিন,  আমার ভুল ছিল আমি লেখাপড়া শিখেছিলাম,  আমার ভুল ছিল সমাজের আর মেয়েদের পড়তে শেখাচ্ছিলাম, বোঝাচ্ছিলাম কোনটা অন্যায় কোনটা ন্যায়,  তাদের প্রতিবাদী হতে শেখাচ্ছিলাম, আত্মনির্ভরশীল  হতে উৎসাহ দিচ্ছিলাম। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ  সেটা ভালো চোখে নিল না,  আমাকে শাসিয়ে  গেল, বন্দিজীবন  কাঁটাতে হবে।  ঘরের বাইরে প্রায় ঘোরা ফেরা করে তারা৷  সেই থেকে আমি বন্দি। 

আজ প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল রাতের গভীরে ভাইয়ের ছদ্মবেশ এ ওই গ্রাম ত্যাগ করে শহরে এসেছি মামার বাড়িতে। এখানে অবশ্য সমাজ নামক কোনো যমদূত  নেই। এখানে সবাই মুক্ত।  মামার ছেলে মেয়ে সবাই ইংরেজি  পড়ে জুতো মোজা পরে, স্কুল - কলেজ যায় এখানে পড়াশোনার জন্য কোনো চোখ রাঙানি নেই।  এখানে এসে আমার ভয় ভীষণ  করছে কেননা মা আর ভাই একা আছে,  ভয় হচ্ছে ওই সমাজের লোকগুলোর কথা ভেবে তারা যদি আমাকে না পায় তবে কি তাদের প্রতি নির্যাতন  করে যদি। বাবা আমায় সান্ত্বনা  দিয়ে গ্রামে ফিরে গেল,   মামী অভয় দিল, মায়ের মতোই কাছে টেনে নিল। দিন কয়েকপরে মামা আমায় স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল। 

এই ১০বছরে আমি অনেক এগিয়ে এসেছি। একা স্বাধীন  জীবন যাপন করতে শিখেছি। শহরের অলিতে গলিতে বহুপথ হেটেছি।  কিন্তু আমি নিজের জন্ম স্থানে ফিরতে পারি নি এখনো।  আর কিছুদিন পরেই আমায় কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে যেতে হবে   তাই মনে প্রানে চাইছি গ্রামের সেই পরিবেশ  এ মন খুলে ঘুরে বেড়াতে,  আমি চাইছি বাল্যবন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ  করতে। কিন্তু আমি জানি আমার স্বপ্ন ঠিক পুরন হবে না৷

হঠাৎ  আজ মামী একখানা চিঠি  এনে আমার হাতে দিল। মায়ের চিঠি অবশ্য লেখাটা বাবার।  মা তার দৈনন্দিন জীবনের সব কথায় ব্যক্ত করত। কিন্তু  আজ অন্য কথা লিখেছে আমার ছেলে বেলার বন্ধু সরলার বিয়ে।  সেই সরলা মা কে অনুরোধ  করেছে আমায় যেন চিঠি  লিখে ডেকে নেয়৷  চিঠির সাথে আর একটা চিঠি পেলাম সেটা সরলার। চিঠি দুটো পড়ে স্থির করলাম আমি গ্রামে ফিরব,,  সরলা অনেক কিছুই লিখেছে,গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা  নিয়েও, সেই আমিই একজন ডাক্তার হয়ে কি ভাবে নিজের গ্রামকে অন্ধকারে রাখব এই প্রশ্নই আমাকে গ্রামে ফিরে যেতে বলছে৷ 

আজ ১০ বছর পর গ্রামে ফিরছি  তবে ছদ্মবেশ  এ নয় আমার চেনা রুপ নিয়েই।  সেই গ্রামের স্বাস্থ্যদপ্তরের ডাক্তার হয়ে।  স্বাস্থ্যদপ্তরে মহিলা ডাক্তার না থাকায় মেয়েরা বাড়িতেই সন্তান প্রসব  করত এতে অনেক সময় সন্তান প্রসবের পর নাড়ি ছেদের ভুলে মায়ের কিংবা সন্তানের মৃত্যু হয়,নতুবা রক্তপাতের কারনেও মৃত্যু হয়।  যাই হোক গ্রামে প্রবেশ করে মুগ্ধ  নেত্রে সব চেয়ে দেখছি,  আমাদের সেই বটতলা যেখানে খেলাধুলা করতাম,  সেই খোলা মাঠা,  সেই লুকিয়ে আমের বাগানে আম চুরি সবই মনে পড়ছে।  কিছুটা যেতেই গ্রামের মাতব্বর জগদীশ ভট্টাচার্য  এর সাথে দেখা হলো। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবেন?  স্বাস্থ্য সংস্থার  নাম  বলাতে পথ দেখিয়ে দিল আর আশ্চর্য  হয়ে আমার মুখের পানে চেয়ে চলে গেল। আমিও আরও অবাক হলাম যে আমায় চিনতে পারল না। 

যাই হোক স্বাস্থ্য  সংস্থার কেন্দ্র থেকে ফিরেই বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম মা বাবা ভাই এর সাথে আমার বন্ধু সরলা ও তার মাও অপেক্ষা  করছে৷ বাড়িতে সবাইকে প্রনাম করে একটু গল্প করে খেতে বসেছি যেই সেই সময় বাড়ির বাইরে কে বা কারা যেন বাবার নাম ধরে ডাকছে।  বাবা খাবার ফেলে রেখেই উঠে গেল,  মা ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমাকে লুকিয়ে রাখার জন্য কিন্তু আমি মা কে বারণ করলাম এসবের দরকার নেই। 
বাইরে বেরিয়ে এলাম আমিও দেখলাম জগদীশবাবু ছাড়াও আরও অনেকেই আছেন যারা আমাকে গ্রাম ছাড়া করাবার জন্য এসেছে।  কিন্তু আমি তো ফিরে যাবার জন্য আসি নি। এ গ্রাম আমার,  এই আমার জন্মস্থান কেন আমি ফিরে যাব?  তাদের কথার যথেষ্ট  প্রতিবাদ করলাম এবং তারা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে গেল।  আমার মা আমায় আবার ফিরে যাওয়ার অনুরোধ  করল৷ কিন্তু আমি তো ফিরে যাওয়ার জন্য আসি নি। 

পরের দিন বাবার সাথেই স্বাস্থ্য দপ্তরে গেলাম।  আমার কাজ বুঝে নেওয়ার পরও বাবা সেখানে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হয় নি ফিরে যেতে বললাম।  হ্যাঁ  খুব মনে আছে সেদিন আমার হাতে একটা কেস এসেছিল, তাতে আমি যথাযথ  সফল ছিলাম। একজন মহিলা ডাক্তার পেয়ে গ্রামের অনেক  মহিলায় নিশ্চিত  হয়েছে কিন্তু আমার প্রতি যাদের ব্যক্তিগত  আক্রোশ  তার খুশি হতে পারে নি। 

একের পর এক কেস আসতে থাকে,  আমিও আমার কাজ করতে থাকি । সরলার বিয়েও হয়ে গেছে কদিন আগেই৷  সেদিন তেমন কাজও ছিল না৷ বসে আছি বাইরের বারান্দায়  হঠাৎ  দেখি জগদীশবাবু এগিয়ে আসছে দলবল নিয়ে।  আমায় শাসিয়ে  যাচ্ছে গ্রাম ত্যাগ করতে,  আমাকে সেদিন কিছুই বলতে হয়নি যা বলার সেদিন গ্রামবাসীরাই বলেছিল।  প্রত্যেকেই আমার  পাশে দাঁড়িয়েছিল, প্রতিবাদ করেছিল৷  জগদীশ বাবু ফিরে যায়। 

ঘন্টাখানেক  পরেই জগদীশবাবুর বাড়ির একটা ছোট ছেলে এসে জানাল তার দিদা তাকে ডেকে পাঠিয়েছে, তার মেয়ের ডেলিভারি  কেস আছে শুধু জগদীশবাবুর ভয়ে স্বাস্থ্য  কেন্দ্রে আনতে পারছে না।  আমি যাব কি যাব না এটা যখন ভাবছি তখন আমার পাশে যারা ছিল তারা জানাল যদি বিপদ  হয় তবে কি করবে? তারাও সাথে যাবে।  কিন্তু তাদের নিরস্ত করে একজন নার্স কে সাথে করে ঘরে এগিয়ে গেলাম। 

জগদীশবাবুর বাড়ির গেট এ পৌচ্ছেই বাঁধা পড়ল দারোয়ানের।  কিন্তু সে বাঁধাও টিকল না উপর থেকে জগদীশবাবুর স্ত্রী তা দেখতে পেয়ে দারোয়ানকে পথ ছেড়ে দিতে বলল। 
গেট পেরিয়ে অন্দরমহলে  প্রবেশ করতে গিয়ে দেখলাম জগদীশবাবুর রক্তাক্ত  চোখ,  আমার এই বাড়িতে উপস্থিতি  তার সহ্য হচ্ছে না,, একবার আমায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করল।  কিন্তু সে অনুরোধও টিকল না।  ওনার স্ত্রী প্রতিবাদ করল, তাকে পূর্ব ঘটনা ( ছেলের বউ এর মৃত্যু) মনে করিয়ে দিল,,  তখন একমাত্র মেয়েকে হারানর বেদনায় আর কিছু বলল  না৷ 

৩০ মিনিট  এর চেষ্টায়  আমি সে অপারেশনেও সফল হই।  সফল হওয়ার পর যখন নীচে নেমে এলাম জগদীশবাবুর স্ত্রী আমার কাছে তার স্বামীর ব্যবহার  এর জন্য ক্ষমা চাইল ও অনেক আশির্বাদ  করল।  আশির্বাদ  নিয়ে যখন বেরিয়ে আসছি তখন দেখি গেট এর সম্মুখে জগদীশবাবু দাঁড়িয়ে।  আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম, দেখলাম  তার সে রক্তচক্ষু  নেই, সেই রাগ আর নেই,  যেন মাটির একটা  মানুষ ।  তার পুর্বভুলের জন্য ক্ষমা চান আমার কাছে।  ততক্ষণে  গ্রামের অন্যান্যরাও এগিয়ে এসেছি জগদীশ বাবুর বাড়ির দিকে বাবাও এলেন।  জগদীশবাবুর এ হেন আচরনে আমি ক্ষমা না করে পারলাম না। এবং তার মেয়ের জীবন বাচানোর জন্য বকশিস  দিতে চাইলে আমি নিজের জন্য না চেয়ে গ্রামের জন্য একটা স্কুল চাইলাম।  খুশি মনে তা মেনেও নিল।

আজ আমি বহুদিন পর মুক্তি পেয়েছি।  হেরে না গিয়ে জিতে গেছি।  খোলা মাঠে খুশি মনে ঘুরছি ফিরছি। আর গ্রামের জন্য কাজ করছি।

||একটি নাবালিকা বোনের কথা || মান্নুজা খাতুন





   জন্ম নেবার পর সময়ের সাথে তাল রেখে
স্বপ্ন দেখেছিলিস অনেক!  অনেক ;

চেয়েছিলিস গড়তে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ,

করেছিলিস অঙ্গীকার বাবা-মাকে ভালো রাখার।

তখনও শুনিস নি বোধহয় সংসার নামক শন্দটা,

বুঝিয়ে কেউ দেয় নি তোকে ঘর- সংসার স্বামীর অর্থ।।


বারোর কাটা অতিক্রম করে সবেমাত্র দিয়েছিলিস পা পনেরোই

সময় হয়েছিল তোর,  এজগৎকে নতুন করে চেনার

তার পরিবর্তে! অভাবের সংসারের দোয়ায় দিয়ে

এতটুকুন তোকে ঘোমটা পরিয়ে দিয়ে এল ছাদনাতলায়

পুতুলের মতো করলি মন্ত্রপাঠ,  বাবা মা ফেলল স্বস্তির নিঃশ্বাস।।


বিনিময়ে!  বিনিময়ে পেলি টা  কি তুই বোন?

বয়সে দ্বিগুণ স্বামীর বিকৃত কামের ফাঁদের পড়ে

বিয়ে বাড়ির সানাই বন্ধ হওয়ার আগেই ঠাই হলো তোর হাসপাতালে;

দিনের আলো ফুটতে বা ফুটতে হারালি তাদের

মন্ত্রপাঠ করে করেছিলিস গোত্র ধারণ যাদের

স্বামী পালাল কৈফিয়ৎ আর লজ্জার ভয়ে,  আত্মীয় পালাল দায়সারাভাবে দ্বায়িত্ব পালন করে।।


দুর্ঘটনার খবর পেয়ে

পাত্রপক্ষের ঝুলি ভরতে গিয়ে সর্বশান্ত হওয়া হতভাগ্য পিতা এল দ্রুতপদে।

রক্তের অভাবে,  অর্থের অভাবে ধুকতে ধুকতে চলে গেলি অকালে।

বুঝলি না তুই সংসারের মর্মবাণী,  পেলি না আস্বাদ

কৈশোরের লীলাচপলতার

রয়ে গেল অজানা সব কিছু তোর অভিধানে

তবু তুই জেনে গেলি বোন!  নারীর যন্ত্রণা।।

অনুপম সমীপে: মান্নুজা খাতুন


অনুপম!
বহুদিন লেখা হয়নি তোমাকে নিয়ে
তাই কি ফিরিয়েছ মুখ অভিমানে! 
পাচ্ছ ব্যাথা ও হৃদয়ে? 

ভাবছ!
নতুন কাউকে পেয়ে ভুলে গেছি অতীতকে -তাই না! 
ভাবছ! ভুলে গেছি
দিনের শেষে  তোমায় ভাবতে!
অগোছালো  জীবনের বহু প্রশ্নের উত্তর  খুজতে! 
রাতের চাঁদ থেকে কিছু আলো নিয়ে স্বপ্ন বুনতে ;

এত প্রশ্নের জবাব হয়তো বিশ্লেষণ  করা যাবে না! 
বোঝানো যাবে না তোমায় আমার ক্ষুদ্র অভিধানের শব্দগুলো দিয়ে
আশ্বস্ত  করতে পারব না তোমার জিজ্ঞাসু মনকে
শুধু এটুকুই জেনে রেখো -
তোমাকে নিয়ে ভাবি না এমন নয় -
ভাবি কিন্তু সেটা ভালবেসে নয়! 
জীবনের কিছু জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজতে তোমায় মনে আসে
শুধু নামটা! তোমার অবয়বটা এখন আর মনে আসে না
তবে এটা অস্বীকার  করতে পারি না যে " তোমায় ভালবাসি নি "।

বন্ধু তুই : মান্নুজা খাতুন


মেঠোপথের আলবেয়ে
চলতে শেখার অন্য এক নাম
বন্ধু তুই ;
আমার প্রতিদিনের অভ্যাস
 গলির মোড়ে ধোয়াওঠা কফি কিংবা
 ফুচকার স্টলে দাঁড়ানোর অন্য এক নাম
 বন্ধু তুই ;
 প্রতিদিন একই পথের যাত্রী
প্রিয় রঙের জামা
হালকা সাজগোজ
এসব কিছুর অন্য এক নাম
বন্ধু তুই ;
বিকেলের খোলা আকাশ
মুক্ত বাতাস,  ভরা গঙ্গায়
গোড়ালি  ডুবিয়ে বসে থাকা
কামরাঙা মেঘ দেখে
রুপকথা বানানো
এসব কিছুর অন্য নাম
বন্ধু তুই ;  

সুখটুকু : মান্নুজা খাতুন



বামপাশের পার্লামেন্টে  ক্ষুদ্র ইচ্ছেখানি ধারণ  করে
বিভোর  ভাবুকতার রঙিন মায়ার আবেশে
নিশিদিন রচেছি হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে সুখমাল্য।।

প্রবৃত্তির কঠিন পীড়নে  হায়!
গড়া স্বপ্ন  ধূলিসাৎ হয়ে যায় ;
তবুও অতৃপ্ত আত্মাটি সব ভুলে
ভাবের তাপে আবারও  গড়তে বসে
হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ পুস্পের সমাহারে সুখমাল্যখানি
খুঁজতে থাকে সত্যকারের হৃদয়াসনটি। 

সব অভিমান ভুলে : মান্নুজা খাতুন (মালা)



চলো সব অভিমান ভুলে কল্লোলিনী তিলোত্তমার
জনজোয়ারের ভিড় ঠেলে এসপ্ল্যানেডের ধার বেয়ে
এক শান্ত প্রদোষবেলায় গঙ্গার তীরে।।

চলো পাশাপাশি বসি আরও একবার
সহস্র বছরের পুরানো ; সহস্র স্মৃতির সাক্ষী
বাঁধানো সেই অশ্বত্থের নীচে!
যার ডাল গুলো নুয়ে পড়ে ঠেকেছে মা গঙ্গার বুকে
যার কোটরে এখনও বাস করে
কয়েকশো পক্ষীযুগল ও তার পরিবার।।

চলো ভুলে গিয়ে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব
আরও একবার আসি কাছাকাছি
দুহাতের মুঠোয় হাতপুরে ; ছলছল নেত্রে
চেয়ে থাকি একে-অপরের পানে  কিছুক্ষন;
করি বিচরনে আবেগের রাজ্যে।।

ভুলে গিয়ে সব অভিমান,   মুছে ফেলে সব দ্বিধাদ্বন্দ
চলো রচি  আরও একবার প্রেমের নিগড়।।
      

ছুটির নির্ঘন্ট : মান্নুজা খাতুন

আয় না সবাই মজে থাকি
আজকের এই দিন-টাই
আজকে তোরা খেলার সাথি
ছুটির সারাদিনটাই।।
আয় সবাই ছুটে বেড়ায়
যে দিকে যাই চোখ
আয় না সবাই উড়িয়ে ধুলো
গ্রামের মেন রোড।।
কি করে আর খেলব বল!
বাড়িতে যে বড়োর দল!  
ভাদ্রের এই ভর দুপুরে
খেলতে এলে হায়
মুছড়ে দেবে কান
পিঠে পড়বে ছড়ি!  

এসব বললে শুনব না
মানবো নাকো কথার ছল
বকলে বকুক ,  মারলে মারুক
খেলব সারাদিনটাই।।  

তখন ও এখন :- মান্নুজা খাতুন


একটা সময় বড্ড অচেনা ছিলাম তাই না?
ব্যস্ততার পথ ধরে চলতে ফিরতে
পথের অন্তিমে তোমার বেখেয়ালে লেগেছিল ধাক্কা 
অবনত নয়নে, খুব ছোট্ট করে বলেছিলে ‘'সরি’। 

তারপর!
ঘরে ফিরে ক্লান্ত দুচোখ এক করেছি যেই
ভেসে উঠতে থাকে তোমার ছবি!
আর শুনতে পায় তোমার মিস্টি সুরের ‘’ সরি’ শব্দটা।।

সেদিন হঠাৎ করেই হয়ে গেল সাক্ষাৎ
অফিস ফেরতা পথে। 
শেষ সন্ধ্যার এক্সপ্রেস কামরার তৃতীয় শ্রেনীর কামরাতে
লজ্জায় তুমি করেছ আনত মুখ, আমি হেসেছি মুচকি।।

তারপর আলাপ,  আলাপ হতে বন্ধুত্ব
বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে গেছিল কখন আমার অনুভূতি
তা জানতে পারি তোমার দীর্ঘ অদেখায়!
যদিও আমি জানি আমার মতোই হয়েছিলে ব্যাকুল
খুজেছিলে অফিস ফেরতা পথে
উৎসুক দৃস্টিতে চেয়েছিলে ফাঁকা  স্টেশনের পানে
দেখা যেদিন হয়েছিল প্রিয় অভিমানে ঘুরিয়েছ মুখ
সে আমি জানি।
কিন্তু কখনো কি জানতে পারবে প্রিয়
দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদের অনলে আমিও পুড়েছি মরে
দিবস কি রজনী অবসর সময়ে মনে করেছি তোমাকে
আর হৃদয়ের পার্লামেন্টে  লড়েছি  ভালোবাসার প্রতীকে
জিতেছি শেষ মুহুর্তে যখন দেখা হলো তোমার সাথে।।             
   

শ্রাবনের ধারা ও পক্ষীকূল :- মান্নুজা খাতুন



হয়তো কোন এক গাছের বড় ডালের নিচে
নয়তো বা কারো ব্যালকনির ছোট ফোকরে
নিয়েছে আশ্রয় মা-পাখিটি।
ঠোঁটের ফাঁকে হয়তো এখনো ধরা আছে
 খাদ্যশস্যের ছোট্ট টুকরোটি
দুরের ওই বট গাছের ফোকরে
এখনো হয়তো পথ চেয়ে আছে
সদ্যজাত পক্ষী শাবকটি।
     
শ্রাবণের বৃস্টি,  অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ
সব মিলিয়ে দিশেহারা মা-পাখিটি করে ছটফট
বাসায় ফেলে আসা ছানার কথা ভেবে
ওদিকে অশ্রুসিক্ত  চোখে পথ চেয়ে থাকে পক্ষীশাবকটি।

ফাঁকি দিয়ে :- মান্নুজা খাতুন ( মালা)



ফাঁকি দিয়ে যদি লুকায় মাগো
মেঘের আড়াল কোনে
দিনের শেষে হন্য হয়ে
খুজবি কি আর পথে?

খাবার খেতে বসবি যখন
চিনু মিনুর সাথে
আমার অনুপস্থিতি দেখে
ডাকবি কি আর খেতে?

দিনের শেষে ফিরতে হলে দেরি
বারে বারে করবি কি আর খোঁজ
পদধ্বনি শুনলে মাগো
দু চোখ রোষে আগুন করে
বকবি কি মা রোজ?

ছোট্ট আমি ভয় পেলে মা
গভীর রাতের শেষে
উঁকি মেরে দেখবি কি মা
দোরের আড়াল হতে!
সত্যি করে বল না মা আমায়!
তোর ওই বন্য চোখের দুপথ বেয়ে
ফেলবি কি আর অশ্রুধারা
দীর্ঘদিনের জন্য যদি
লুকায় মাগো কোথাও।।

প্রাক্তন তোমাকে :মান্নুজা খাতুন



মার্কেটের  ভরা ভিড়ে পিছু হতে তোমার অবয়ব দেখে
মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেছিল সখা,
শরীরের যত শক্তি আছিল
পা দুটোয় করেছিল ছিল ভর
স্বচ্ছ জলের মতো ছুয়ে গেল মন
ফেলে আসা নানা রঙিন স্মৃতি গুলো।
ভেবেছিলাম কখনো হবে না দেখা ;
মনে মনে করেছিলাম সংকল্প
কভু দেখা না দেবার, 
তবুও সময়ের খেয়ালে হয়ে গেল দেখা
ব্যস্ততায় ভরা জন জোয়ারের স্রোতে।


মন চাইছিল প্রিয়
একটা মিস্টি হাসি হেসে
তোমার খবর নিতে।
দু হাতের মুঠোয় দুটি হাত পুরে
হদয়ে গ্রহন করিতে ।
নিকোটিনের জ্বলন্ত স্পর্শে পুড়ে যাওয়া ঠোটে
একটা গভীর চুমু এঁকে দিতে৷

কিন্তু! 
বিবেকের ষড়যন্ত্রনায়
সব ইচ্ছেকে ফেলে করেছি পথ অতিক্রম
তোমার গা ঘেষে, না দেখার অভিনয় করে।     
     




০৪/০৫/১৯
১টা ৪৫ মিনিট (দুপুর)

অশ্রুবারি : মান্নুজা খাতুন



কিছুক্ষণ আগেই এই শহরের বুক ছেয়ে নেমে এল
বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঘন কালো মেঘ
বজ্রের ধাক্কায় ভেঙে পড়ল মনের অর্গল গুলো
আঁখি পল্লবের বাঁধ ভেঙে নিমেষে নেমে এল
বাঁধ ভাঙার বন্যার জলের ধারা
সাজানো স্বপ্ন গুলো নিমেষে ভাসিয়ে নিয়ে গেল
তপ্ত জলের দুর্গম ধারা
তবু! তবুও বেচে ওঠার লড়ায়ের খেলায় মেতেছে স্বপ্নরা
তরবারি হাতে নেমেছি আমি ভীষণ রণোন্মাদনায়।।

ভোরের প্রথম চিঠি স্মৃতির ঠিকানায় মান্নুজা খাতুন



ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে  ছুটে গিয়ে লেখার খাতাখানি কোলের পরে নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে যেতে। কিন্তু লিখব টা কি? অভিমান? সে তো লিখে শেষ  করা যাই না!  তবে কি কস্ট গুলো লিপিবদ্ধ  করে সাজিয়ে দেব তোমার অর্ঘ্য  হিসেবে? তুমি কি তাতে তৃপ্তি পাবে! আদ্য কি তুমি আমার লেখার  সব টা পড়বে? যদি দুঃখ ময় সুখের কথা লিখি তুমি কি আমার পানে চাইবে? আমার বিবশা বিবর্ণা কালিমাময় মুখের পানে  দৃষ্টি তুলে চাইবে? নাকি! সরিয়ে দেবে সম্মুখ হতে?

 আচ্ছা আমি যদি আমার কস্ট গুলো লুকিয়ে রেখে মিথ্যে সুখের খেয়া তরীটি নিয়ে তোমাদের গ্রামের খেয়াঘাটের অশ্বত্থের নীচে উপনিত হই তুমি কি আমার সেই ছদ্মবেশী সুখ দেখে তৃপ্তি পাবে? তবে তাই হোক প্রিয়! আমি ছদ্মবেশেই আসব তোমার খেয়াঘাটে যে ঘাটের একপাশে রয়েছে আমাদের ফেলে আশা হাজারো স্মৃতির সাক্ষী  বড় অশ্বত্থের গাছটি, যে ঘাটে এখনো মেয়ে বউরা বাসন মাজে , ঝুপঝাপ জলে পড়ে জল ছিটিয়ে  স্নান করে ছোট ছেলেমেয়ে গুলো, দূরে গাছের আড়ালে অপেক্ষায় থাকে কোনো বিরহী প্রেমিক প্রিয়তমার ঘাটে আসার পথ চেয়ে, যে ভাবে তুমি থাকতে আমার পথ চেয়ে।   আজ যদি সেই ঘাটে ফিরে যাই, তুমি কি আসবে? পুরনো দিনের মতো একরাশ বন কলমি হাতে কিংবা কদম্ব ফুল হাতে বরণ করতে। তুমি কি এগিয়ে আসবে?পরিচিত হাসি নিয়ে এক পা দু পা ফেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আসবে কি প্রিয়?  সেই নির্জন নদীর কিনারে যেখানে ঘনঘন হতো আমাদের শুভদৃষ্টি। ফিরবে কি?  সেই স্মৃতির রাজ্যে।

আজ বড্ড মন কেমন করছে। মিশে যেতে ইচ্ছে করছে মাটির সাথে, যে মাটির বুকে রয়েছে তোমার-আমার নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া প্রেমের রেনু, যে মাটির বুকে রয়েছে আমাদের হাজারো স্মৃতির পদচিহ্ন। আজ তার বুকে মিশে গিয়ে তোমাকে না পাওয়ার বেদনা ভুলতে চাই, ওই এক মুঠো ধুলো হাতে তুলে নিয়ে সারা অঙ্গে মাখতে চাই,  আমি চিৎকার করে বলতে চাই, এ ভাবে চলে যাওয়াটা বড় অন্যায় হয়ে গেছে তোমার;  চিৎকার করে বলতে চাই অনুপম!  তোমাকে হারিয়ে আমি একদম ভালো নেই, বড় অসহায় আমি! বড় একাকী। অসহায়ত্বের সেই আগুনে আজ দ্বগ্ধ হয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে চাই। মিশে যেতে চাই স্মৃতিময় সেই ঘাটের পঙ্কিলকে বক্ষে ধারন করে।

অনুপম! এই আজ শেষ লেখা লিখলাম, অভিযোগের ঝাঁপি বন্ধ রেখে, আমার বুকের কস্ট গুলোকে বোতল বন্দি করে শুধু আকুতি টা লিখেছি। এই লেখা পেয়ে অহংকারের জোয়ারে ভেসে যেও না প্রিয়? প্রেয়সীর সাথে মশকরা করো না এ লেখা নিয়ে ! বড় আঘাত পাব প্রিয়; উপহাস করো না, ব্যাঙ্গাত্মক কটু কথার ফলায় বিদ্ধ করে আনন্দ পেও না যে ভাবে ব্যাধ পায় আনন্দ। এই শেষ লেখা লিখলাম প্রিয়, গত দিন হয় তো পাবে না খুজে আমার অস্তিত্ব। যদি ভালোবাসো আমায়,  খুজতে বেরিও না পথে, আমি নিমজ্জিত হলাম অসহায়ত্বের পঙ্কিলে, রেখে গেলাম শুধু ক্ষীনতম পরিচয়, আর আমার অবুঝ প্রেমের হাহাকার।

মন বনাম শরীর মান্নুজা খাতুন ( মালা)



তোমার আমার সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল
চলমান ব্যস্ত জীবনের অন্যতম অঙ্গিকার
ইন্টারনেটের দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে
এমনই এক ভরা গ্রীষ্মের দাবদাহে ভরা দুপুরে!
আমি তখন কতই বা!
এই উনিশ পেরিয়ে বিশে
দেহে আমার নতুন যৌবন,
মন পূর্ণ ছিল আবেগে
তাই তো তখনও  বুঝি নি
তোমার সাজানো কথা গুলোর চাতুরী
যখন তোমার কথা বলছিলে,
আমি শুনছিলাম আর বুঝতে পারছিলাম
আমার যোগ্যতার কাছে হেরে যাচ্ছ তুমি
তবুও  স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে,
 দেখিয়েছিলে তুমিও
একটা সংসার
একটু ভালোবাসা
   আর
সুখি জীবনের।
ভুল বুঝলাম সেইদিন
যেদিন দেখা হয়েছিল তোমার সাথে
সেইদিন বুঝতে পারলাম ভালোবাসার মনটা তোমার মৃত
বেচে আছে শুধু শরীরটা,  আর বিকৃত কামনার লালসা।

কখনো জানা হয় নি:মান্নুজা খাতুন



বহুদিন পরে একপেয়ালা বিষাদের স্রোতে
ভেসে গেলাম আমি।
ভাসতে  ভাসতে ঠেকেছি গিয়ে স্মৃতির দোরগোড়ায়
যেথা রচে ছিলাম মোরা স্বপ্নের খেয়াতরী।
 লোনাজলের প্রতিটি বিন্দুর ফোকাসে
 ভেসে উঠছে অস্পস্ট হয়ে স্মৃতি গুলো।।

দুরত্বের  বেঁড়াজাল ভেঙে
চুপিচুপি  করেছিলে পদার্পণ  আমার শহরে
করেছিলে চুরি হৃদয়ের সোনারকাঠি
হরণ করেছিলে মনের শান্তি।।

তথাপি
কখনো জানা হয় নি আমার
কোন স্বার্থের লীলাখেলায় ভাসিয়েছিলে আমায়?
কোন কস্টের প্রতিহিংসার খেলায় খেলিয়েছিলে আমায়?


সমস্ত ধর্ষিতা আমার বোন : মান্নুজা খাতুন



ষোড়শী তুই কি  ফিরবি আবার সেই চেনা জীবনে?

অন্ধকার রুদ্ধ ঘরের থেকে বেরিয়ে কি আসবি?

এই আলোর পৃথিবীতে!

তুই কি বাঁচবি আর পাঁচটা মেয়ের মতো?

পাশের বাড়ির মেয়েটির মত তোর কি ইচ্ছে করে না?

রাস্তার ধারে বাটি হাতে ফুচকা খেতে!

মাইলের পর মাইল পথ উজিয়ে পড়তে যেতে!

তুই কি আর স্বপ্ন দেখবি না বোন?

তুই কি হবি না নতুন ভবিষ্যতের আদর্শ শিক্ষিকা?

তোর তো স্বপ্ন ছিল বোন! তোরও তো ইচ্ছে ছিল!

কিন্তু আজ কি হলো তোর!

ওই ভাবে দুই হাটুর পরে মাথা গুজে আর কতদিন?

বেরিয়ে আয় বোন এই আলোর পৃথিবীতে

দেখিয়ে দে ওই নরপিশাচদের, ছুড়ে দে ওদের মুখে চুনকালি।

কিন্তু বোন

বেরিয়ে আয় বোন,  তোর পাশে আছি

সব ভুলে গিয়ে চল ফিরবি আবার চেনা জীবনে।

তোর চোখে জল কেন বোন!

ভাবছিস তোর কোন মুল্য নেই এই ধরাধামে

আছে!!  তুই আমার বোন, পাশের বাড়ির মালতীর বোন, আমার এ লেখা যে তারও ছোট বোন

এ ভাবে ভেঙে পড়িস না বোন আমরা আছি

মুক্ত কন্ঠে বলতে পারি

সমস্ত ধর্ষিতা আমার বোন, আমার দিদি আমার মা।

বসন্তের কনকাঞ্জলী: মান্নুজা খাতুন


প্রতিদিন  প্রত্যুষে ভেজাচুলের গোছা মেলে
কার কথা ভাবো তুমি!
 তোমার ভাবনায় এখনো কি আমি আছি?
যে আঁখিদ্বয়ে এঁকেছ  সীমানা অঞ্জনের কালো রেখায়
সেই চোখে আজ তুমি কার ছবি আঁকো?
যে মিস্টি অধরের  হাসির কারণ ছিলাম আমি
সেই অধর তাম্বুলে রঞ্জিত  করে
কার পথ পানে চেয়ে থাকো? কার মুখাবয়ব  দেখে মিটিমিটি  হাসো?
শীত গত হতে আর বাকি নেই বসন্ত নাড়ে দরজায় কড়া
প্রকৃতি সাজে আপন তেজে, বাতাস মুখরিত হয় নানা ফুলের  সৌরভে
সেই বসন্তের প্রথম  দিবসের প্রত্যুষে হলুদ ডুরে শাড়ি পরে আজ তুমি  কার ফেরার পথ চেয়ে রয়েছে?
প্রেয়সী,  বলিবে কি?
তোমার আঁখিদ্বয়ের কাজল, রক্তিম অধর,  হলুদ শাড়ি এসব কার জন্য?

কল্পনার শেষ নেই : মান্নুজা খাতুন (মালা)





ধরে নাও!  একই পথের সারথি হবো দুজনে,

এক পা দু পা ফেলে এগিয়ে যাব গঙ্গার পাড় বেয়ে

মুগ্ধ দু নয়নে দেখব সন্ধ্যার প্রথম সাজ; তারপর!

ধীরে ধীরে পালটে যাবে শহরটা, গাঢ় হয়ে আসবে অন্ধকার।

গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাব বড় রাস্তার পাড় বেয়ে

বড় জোর স্টেশন অবধি যাব,  ল্যাম্পপোস্টের নীচে বসে

ধূমায়িত চায়ে চুমুক দেব;

তারপর!

স্টেশনে এসে ভীড়বে সন্ধ্যার প্রথম ট্রেন

দুরের বেঞ্চে বসে প্ল্যাটফর্মের অপর প্রান্ত থেকে

যাত্রীদের ঘরে ফেরা দেখব; স্টেশন শুন্য হয়ে এলে

আকাশের পানে চেয়ে নক্ষত্র ও তারাদের

লুকোচুরি খেলা দেখব!

তারপর! নির্লিপ্ত পায়ে এগিয়ে যাব বাসস্ট্যান্ডের  দিকে

চার পয়সায় টিকিট কেটে ফিরব গৃহের পথে;

গন্তব্যস্থলে পৌচ্ছে জানাব দিনের শেষ সম্ভাষন।

এ সব কি মন্দ দেখাবে অনুপম?       

    

হঠাৎ দেখা :মান্নুজা খাতুন




দেখেছ! সময়ের খেয়া স্রোত কিভাবে মিলিয়ে দিল আমাদের

ক্ষনিকের জন্য কি ভাবে এক করে দিল তোমার-আমার দৃস্টি

কেমন একটা অজান্তেই দেখা দিল আমাদের ঠোঁটে একটা লাজুক হাসি।

সত্যি কি তুমি জানতে? আজ এমনটা হবে 

যে পথে দেখা হল সে পথ তো তোমার নয় প্রিয়!

তুমি কি পথ ভুলে এসেছ আজ এই পথে?

নইলে  এই পথে আজই বা কেমন করে এলে?

প্রিয়!

তুমি প্রশ্ন করেছ আমায়; একি স্বপ্ন নাকি বাস্তব?

নাহ! প্রিয় বিস্মিত হও তুমি, এ স্বপ্ন নয় এ যে বাস্তুব সত্য।

দিনের আলোয় যা দেখেছ সে তো স্বপ্ন হয় না প্রিয়।


যদিও তোমাতে আমাতে হয় নি কথা

তবুও জেনে গেলাম অনেক কিছু, জেনে গেলাম তোমাকেও

তোমার ওই একটুকরো হাসি দেখে।



আচ্ছা প্রিয়!

আমরা কি কখনো পাশাপাশি বসে দেবদারু কিংবা বটগাছের চাতালে বসে গল্প করব না?

তোমাতে আমাতে কি এই ভাবেই দূরত্ব রয়ে যাবে।


তবে যাই বলো না প্রিয়;

তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি

তুমি না বাসতেও পারো,তাতে আহত হবো না।

বরং তোমাকে নিয়ে দেখব হাজার হাজার স্বপ্ন

যে স্বপ্নে থাকবে তুমি থাকবে আমার ভালোবাসা।

সতীর্থ :মান্নুজা খাতুন





যেখান থেকে শুরু হয়েছিল দিনের প্রথম ট্রেনটি

ঠিক সেইখান থেকেই আমরা ছিলাম একই পথের যাত্রী।

তুমি অচেনা আমার কাছে তবুও যেন অনেক দিনের চেনা

তুমি জানো না আমার গন্তব্যপথ,আমিও ঠিক তাই

তবে মনে বরাভয়

হয় তো নেমে যাবে মাঝ পথে নয় তো জেলার শেষপ্রান্তে

অজানা এক আশংকায় খোদাকে ডাকি

মনে মনে হাত জোড় করে বলি এই পথ যেন শেষ না হয়।


চলার পথে হাজারও গোলমালে

পড়েছে তোমার চোখে চোখ,

হয় তো বা হয়ে ছিলাম দুজনেই বড়োই অপ্রস্তুত


সারা পথ চুপ চাপ দুজনেই মুখোমুখি, কেটে যাই সময় নিস্তব্ধ দুপুরের ঘুমন্ত রুপ দেখে

কখনো বা আড় চোখে চেয়েছি দুজনে দুজনের পানে

লুকোচুরি খেলতে গিয়েও পড়ে গেছি ধরা

অপরাধীর মত আনত করেছি মুখ

তারপর।

তারপর ফুরিয়ে আসে পথ

মনে জাগে এক অপরিণত চঞ্চলতা।

অবশেষে পৌচ্ছালাম যেখানে হয়েছে শেষ সব ট্রেনের গতি পথ

দুজনেই নেমে গেলাম এক রাশ হতাশা নিয়ে

শহরের ভীড়ে হারিয়ে গেলাম দুজনেই।

অতঃপর  নিজেদের অজান্তে পেছন ফিরে দেখা

মুখ ফুটে পারি না বিদায় জানাতে

কেন না সারা পথ একসাথে এলেও হয় নি আলাপচারিতা

যা হয়েছে সব কিছুই হৃদয়ের!

বামপাশের পার্লামেন্টের ওয়াল ক্লকে টিকটিকি করে প্রহর গোনে

আবার কখন আসবে দিনের শেষ ট্রেন।