নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

হেমন্ত সরখেল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
হেমন্ত সরখেল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

প্রিয় দুশমন :হেমন্ত সরখেল


যখনই এভাবে বলো
মনে হয়
আমায় হেরে যেতে বলছো।

উৎসাহ হত হলেই মৃত্যু, স্তব্ধতা, বর্তমানহীন
মাটি ঠেকা পিঠে।

এভাবেই অজান্তে দুশমন হয়ে ওঠো।
আরো বেশী ভালোবেসে ফেলি তোমাদের।

তুমিই এসো।
চরম সত্যে-
তোমার আগে তো ওকেও চাওয়া যায় নি!
                          

আগ্রাসী যাপন :হেমন্ত সরখেল



দগ্ধ কাঁচুলি ছেড়ে
মন নামছে-
অমৃত সন্ধ্যার বুকে।
তোমার প্রখর রৌদ্র পুরো নষ্ট দিনটা জুড়ে -
ফালা ফালা, ধিকিধিকি।
করুক তৃপ্ত- সন্ধ্যা, একটু শ্রান্ত হাসি।

আগের ধ্বংসাবশেষ নোনা ইঁটে জড়।
এবারে, তাই রসের ভান্ড নিয়ে বসি -
জীবাশ্ম চাটলেও আর নোনতা লাগবে না।

উন্মুক্ত বুকের প্রচ্ছদে আধখোলা মনের
উঁকি
রন্ধ্র খোঁজে, পদ্মনাভি, কস্তুরী।
নোংরা লাগলে -
হাত গুটিয়ে আবার খোঁজে অমৃতকুম্ভ
আরো নিচে??
শতদ্রুর পিঠের নিচে নিয়েছে শয়ান?

এসব জানা থাকতে নেই।
অজ্ঞের পরিতৃপ্তি অন্তহীন।
হাতেকলমে নামলে শিখবে
বুদ্ধাসনে মুখোমুখি
বিজাতীয় মন্ত্রেই উদযাপন। সন্ধান। নিরসন।

এভাবেই সাঙ্গ হয় পুজো
মেঘ জমে থাকে আঁচলের ডগায় ডগায়
সুন্দরী অহমিকার ডাক কত্থকী-
 ' আয়, তেঁতুলতলায় যাবি?'
       ----এসো, প্রাণসখা।
পাশাপাশি বসে
সেই ছোট্টবেলার মতো
বুড়ো আঙুল চুষি।

বৃষ্টি না এলে, তেমনভাবে আমরা
 - ভিজব কেমন করে?
                         

ঋজু রেখ: হেমন্ত সরখেল



                                     

রেখা চাই। ঋজু, সটান।

ভূমি ফুঁড়ে ওঠা কালের বৈজয়ন্ত হলেও স্তর ভেঙে এগোতে
   তুমি বেঁকে যাবেই। অদ্ভুত তো নয়!

খসে যায় পলেস্তারা। দাঁত হ্যা-হ্যা নোনা। বেঁকে-চুরে মোম
ঝড়ে ঝাড় লন্ঠন
চলিত শব
     যবনিকা অন্ধকার, চাপ চাপ।

ওঠো।
মাথায় ঠেকছে আকাশ?
ভেদ করো। এটাই প্রকৃষ্ট সময়।

বক্র নয়। ঋজু। হাঁটো, ছোটো, গতি দাও।
রেখ খোঁজো, রেখ
রেখ রাখো, রেখ
রেখ বোঝো, রেখ
রেখ বাঁচো, রেখ
আরো আরো আরো যতটায় ব্রহ্মান্ড শেষ হয়
                                 অনন্ত নিঃশেষ

প্রবল শক্তিতে
শেষবারের মতো
             ঋজু রেখ-এ
                                                       
এ যাবৎ না-টানা কবিতার রেখায়
        অনমনীয়  গর্ভাধান যাও রেখে।
                           

সত্য : হেমন্ত সরখেল





না।
কিছু পেতে আসিনি। দিতেও না। সবটাই আজকাল বিস্বাদ। আলুনি। অম্বুবাচী ক্ষণ।
নেই আশা। সূর্যালোক।
অদেখা রয়েছে অবিনাশী। কে দেখেছে তাকে? দেখতে হলে- অবিনাশী হতে হয়। তত্ত্ব, নিয়ম,অবধারণা- সময়ের হিসেবে পাল্টে যায়। অমর যে নয় সে কিভাবে দেবে বরাভয়?

জানি। এই লেখাও থাকবে না অনন্তকাল। থাকে না। সভ্যতা বদলে গেলে স্মৃতি ব্যাকডেটেড হয়। মুছতে মুছতে হারিয়ে যায়। হয়তো লরির চাকায়, ট্রেনের নীচে, ট্রাই-গ্লিসারাইডে, কর্কটে একদিন কেড়ে নেবে কলম। হা-হুতাশ কিছুক্ষণ, কিছু দিন-মাস-বছর-শতাব্দী-সহস্রাব্দ। তারপর? বোঝাতে এসো না। পারবে না। আপেক্ষিক যেখানে সব সেখানে নৈতিক আর অনৈতিক দুয়েরই এক রব।
               এটুকুতেই উপকৃত হবো। যদি না বলো- ভবঃ। আমি নেই- এটা মেনে, চলুক যাপন, আমিও আছি। চলে যাওয়াই সত্য। তাই ভেবো না, এখনও আমি আছি। কোনো পাখি, নদ, বিল, কোনো ঘাস, আগাছা, কোনো বাতাস, শব্দ, প্রেম ধরে রাখে না যেন আমায়- প্রিয় শুধু অস্তিত্বহীনতা। কার সাথে কেটে গেল সময়-সকাল, কোন্ প্রাচীরে রইল  স্বার্থ বেতাল, কতোদিন মনে রেখে দেবে? অতো সময় আছে কার? শুধু একটা ছবি, ক্রমক্ষয়িষ্ণু, মুছে যাক আজই, কেন বইবে সবটা আমার। মনে হচ্ছে- এবার সময় হয়েছে থামার।
                           

ক্লিভেজে আমরা:হেমন্ত সরখেল



                             



ক্লিভেজ থেকে মুখ সরাতে দ্বন্দ্বে ভুগেছি বারবার।
      মনে রাখা যায় নি- ঠিক কতোবার।

       রেজাল্ট প্রসবিতা অশ্বডিম্ব
                        কিংবা
      প্রথম চতুর্থকে প্রশান্তিতে রাখা
     মা আর তুমি, দুজনেই জলঢাকা।
              ক্লিভেজ- নয় নিতম্ব
     নয় কোনো প্রতিষ্ঠিত গালাজ
 শুদ্ধতা হরে প্রায়ই যত লালাবাজ।

ভেঙে খানখান্ হতে গেলে আমাদের ওটা প্রয়োজন
হেরে, ঘুরে দাঁড়াতে হলে এখানেই শক্তির আয়োজন
     ভেজা মাথা মুছবে আঁচল- ক্লিভেজ
 মৃত্যুপথের কোণ থেকে জাগবে দরবেশ।

আমরা জাড্যে একটাই মেতে আছি
সুখকে দাঁড় করাই অপরিমেয় দুখের কাছাকাছি।
সব রসে জমা থাকে বেদুঈন ধুলো
উন্মত্ত অঙ্গারে তীক্ষ্ণ রসস্থ আলো।
জঠর দেহজ হলেও ভূ-মিষ্ট-পরমধাম
অদৃশ্য দেওয়ালে লেখা আবির্ভাবী মধুনাম।

দৃশ্যমান যা - তা ই জড়িয়ে থাকা এখানে
মনের ক্লিভেজে তাই আশার যাওয়া সন্তর্পণে।
                             

হেমন্ত সরখেল









আমার ছুটির দিনগুলি
                         



গতকাল রাত থেকেই কলম বুদুম্ মেরে বসে আছে। ভাবনারা ধাপ্পা-ধাপ্পা খেলছে ওর সাথে। আমার এই এক জ্বালা! সবাই আমার অথচ কেউ ই কারো সাথে সদ্ভাব রাখতে চায় না। টেনে হিঁচড়ে এক জায়গায় বসিয়ে কি আর পঞ্চায়েতী সম্ভব? নাকি সে প্রক্রিয়া মনোবাঞ্ছিত ফল প্রদান করে? একজনকে টেনে আনি তো অন্যজন মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে- ও! ওকে আগে টানলে! আমি বুঝি ফ্যালনা! চারিচক্ষুর ধারায় তিতিলাম শুধু আমি। ঐ যে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়-- আজ এটার প্রকৃত অর্থটা আমার কাছে পরিস্কার। ওদের নাটুকে অভিমানে আমার স্যালো আঁখি জুড়ে! আরে কথা শোন্ ক্ষ্যাাপারা- সকাল হতেই তো মস্তিষ্ককিটের দুর্দমনীয় আস্ফালন শুরু হয়ে যাবে। কি হে! কোথায় তোমার সৃষ্টরম্ভা? তোদের যদি এই অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে, তাহলে তো আমার ভূগোল বদলে যাবে!! ধুত্তেরি!! কতো আর পারা যায়!এতো তেল নেই বাপু! এমনিতেও ডি.এ. যৎসামান্যই, কাজে কাজেই রাধাও নাচবে না। ভাঁড় মে যাও।

                     মেখলী দুধ দিতে আসে। কাল আসে নি। ওর আদমী নেপাল গেছে, ফেরে নি। তাই গতকালকেরটা নিয়ে আজ হাজির। বাজার থেকে ফিরে দেখি, দুয়ারে গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
'--- কি ভেলো? এনা কথিলা বইসল্ ছি?'
      পানে কালো কোশীর গেট তুলে বলল- ' কাইল আইব নই সকলিয়ে। মরদ নই রহে। তোরা দিক্কৎ ভ্যায় যেতে ন? ত্যায় চইল এলিয়ে। আয় তোরে টা দেবে। কম্মে ছে '। প্রায় তিন কিলোমিটার ওর বাড়ি আমার কোয়ার্টার থেকে। এবারে 'খাদের' দাম জি.এস.টির কল্যানে ওদের হাতের বাইরে যাবে। সম্পন্নরা হয়তো গহুম কাটবে, কিন্তু ওদের কি হবে বলা যায় না। হয়তো খেতে বসেই বেচে দেবে সবটা।সুদ টানতে থাকা আর কতো সম্ভব! তাই দুধ একদিন ও 'নাগা' করা যাবে না। আমার কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকাটা যত তাড়াতাড়ি ও শোধ করতে পারে এটা তারই প্রচেষ্টা। ওর বহু'র গায়ে পটুয়ার আগ ধরে গেল মাস তিনেক আগে। খবর পেয়ে ছুটলাম 'অস্পতাল'। সেখানের খরচগুলো তখন আমাকে সামলাতে হয়েছিল, এটা ন্যাচারাল, হতেই পারে। ওকে বলেছিলাম- ও আমারই মেয়ে, ভেবে নে না! তোকে এসব ফেরৎ দিতে হবে না। পেটে গামছা বাঁধবে তবু সম্মান খোয়াতে নারাজ ওরা সপরিবার। দুধ খাইয়ে, গহুম দিয়ে, খেতের সব্জী দিয়ে শোধের আপ্রাণ একটা বিনম্র প্রচেষ্টা আমার চোখে জল এনে দেয়! এই দেশই তো খুঁজতে বেড়োই আমি, দেশান্তরে।জানি, ওদের সময় বদলাবে না, বদলায় না। তাই বলে ও রাখি, প্রয়োজনে বলবি, লাজ করে কে কাম নই ছে। পইসা জরুরত পড়তে তো ল্যা যাইয়ো।
             মার্চের শেষ। তাই একটা গা ছাড়া ভাব সকাল থেকেই। পুরো কলোনীটা জুড়ে। সে দেবাদিদেব আজ সপরিবার বাড়ি যাচ্ছেন। তবে ওনার হাতে মাত্র একটা বাজারের ব্যাগ। বৌয়ের মাথায় সুটকেস। বাচ্চাদুটো পেছনে লেতুর দিয়ে। এখানে একটা কথা বহুল প্রচারিত। " বিহারী মরদ চলতে অগারি, কনিয়া পিছারী, সামান ল্যাকে। বঙ্গাল মে একার উল্টা হইছে। বচ্চা অউর সামান ল্যাকে মরদ পছারী পছারী 'লড়লে' যাইছে।" পার্থক্যটা এটা দ্যাখে, বোঝে ও হয় তো বা। সমাজের রীতি যা করায় সেটাই আবহমান কাল ধরে কোশীর ঠান্ডা স্রোতে মজ্জায় মজ্জায় পরিব্যপ্ত। আমি দেখি, বুঝতে চেষ্টা করি- এটাই কি সেই বৈচিত্র্য? অহিন্দীভাষী আমার জন্য এদের সম্মান প্রাণৈক্যের বোধ ছড়িয়ে দেয় শরীর মন জুড়ে। ওদের উদ্দেশ্যে মনে মনে বলি- এই আমার দেশ, দেশবাসী। সুখ, দুঃখ দিয়ে ঘেরা জীবনপথের পথিক। তোমাদের চলা যে ইতিহাস তৈরী করে তা কলম ছড়ায় না দিকে দিগন্তে। কোনো পথনাটিকা হয় না তোমাদের জীবন বদলে দিতে। না কেউ স্নাতকোত্তরে তোমাদের জানতে চায়! তবু তোমরা ইতিহাস গড়ে যাও, প্রতিনিয়ত, সংস্কারে, কৃষ্টিতে, দারিদ্রের দাসখতে, ধৈর্য্যের অন্নপূর্ণা হয়ে।