নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অপেক্ষায়: শুভম চক্রবর্ত্তী


ঐ যে দেখো হাঁটছে, রাস্তা মাঝে;
ঐ যে দেখো মানুষ রুপি সাজে।
হল্লা করে পাড়ার মোড়ে,
খিল্লি করে কাজে।

ঐ যে তোমার আগামী,
তুমি যেমন রেখেছো তাকে।
সাবধানতার আশ্রয়ে,
সুস্বাস্থ্য লুকিয়ে থাকে।

ঐ যে দেখো নিয়ম কানুন,
তোমার অনিচ্ছার আড়ালে।
বাঁচিয়ে দিচ্ছে তোমাকে ,
এ বিশ্ব ব্যাধির আকালে।

তাই আপামর একটা উপায়,
শান্ত হয়ে বসো ঘরে।
এই একঘেয়েমির অন্তরালে-
তোমার সু-ভবিষ্যৎ খেলা করে।

বেসরকারি ইংরেজির আদর : রাজা দেবরায়


তমন্নাঃ আর ভালো লাগেনা । এপ্রিলেই আবার নতুন সেশন । আবার নতুন একগাদা বই ! দাম কত পড়বে এবার কে জানে !

আদিত্যঃ বললাম সরকারী স্কুলেই ভর্তি করাও । শুনলে না তখন । নাও এবার ঠ্যালা সামলাও !

তমন্নাঃ কী করবো ! সবাই তো বলেছে যে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়ামে না দিলে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে না, জাতীয় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি । আচ্ছা বই এত বেশি কেনো বলো তো ?

আদিত্যঃ বই বেশি হলেই তো তোমার মতো সবাই 'স্ট্যান্ডার্ড' স্কুল বলবে । ইংরেজী ভালো শিখতে পারবে বলবে । বলবে, 'স্মার্টনেস' আসবে তাড়াতাড়ি !

আসলে বই বেশী হলে মা-বাবার পক্ষে পড়ানো সম্ভব হবে না । অগত্যা প্রাইভেট টিউটর !! আর বই বেশী হলে স্কুলের 'আয়'ও বেশি হয় !

তাছাড়া বই বেশি হলে বাচ্চারা ছোটো বয়স থেকেই মুক্ত চিন্তা থেকে দূরে সরে থাকবে, তাতে 'অনেকের' অনেক কিছু 'লাভ' হয় এবং 'ভবিষ্যত'ও সুনিশ্চিত হয় !!!

তমন্নাঃ শেষ কথাগুলো কী বললে বুঝতে পারিনি । একদম মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে !

আদিত্যঃ বলেছি, চিন্তা করো সন্তানকে দার্শনিক বানাবে নাকি শুধুই 'দক্ষ শ্রমিক' !!

করোনার করুনায় : রুমকি দেবনাথ


       ঋষি খেতে বসেছিল। ভাতটা গলে দলা হয়ে গেছে,তরকারিটা পুরে গেছে।এমন ভাত করলে মাকে হাজারটা কথা শোনাতো,কান্না পাচ্ছে আজ। ফোনটা বাজলো,স্ক্রীনে ভেসে উঠলো - 'মা!!' ঋষি চোখের জলটা মুছে মনটা শক্ত করে ফোন ধরলো -
 'হ্যালো,মেরী পিয়ারী মাম্মী বলো কি খবর??'
''আবার ওইসব হিন্দী-মিন্দী? বলেছিনা আমায় ওসব বলবিনা!শোননা বাবু পুকুরের মাছ গুলো কত বড়ো হয়ে গেছে, তুই কবে বাড়ি আসবি বলতো? তিনমাস হয়ে গেল,বলেছিলি তো এই ইংরেজি মাসের শেষে আসবি,তা ১৫ তারিখ তো হয়েই গেল, ছুটির কথা কিছু বললি অপিসে?''
'মা গো একটু আস্তে,আস্তে, একটু দম নিয়ে বলো।আরে এই মাসে বাড়ি যাওয়া হবে কিনা বলা যাচ্ছেনা, অফিসের প্রচুর চাপ এখন। তবে ওই মাসের প্রথমেই ছুটি পেয়ে যাবো চিন্তা করো না।'
''সে কি রে?? সে যে ঢের বাকি। আবার তোর বাবা বলছিল কীসব রোগ হচ্ছে বাইরে বাইরে,ছুঁলেই নাকি আরেকজনের হবে, খবরে দেখাচ্ছিল যে! চলে আয় দিকি তুই বাড়ি।''
'আরে পাগল সে তো অন্য রাজ্যে,ওই রোগের নাম করোনা। তবে আমাদের কলকাতায় কোনো ভয় নেই। তুমি অতো চিন্তা করো না তো, কিচ্ছু হবে না।'
এরপর প্রতিদিনের মতো কথা বলে রেখে দিল। Ⓜ️

     এভাবে কেটে গেল আরও পাঁচদিন।এর মধ্যে রাজ্যে করোনার ছোঁয়া শুরু হয়ে গেছে,দু তিনজন মতো আক্রান্ত হয়েছে।আজ ঋষিদের অফিস হাফটাইমে ছুটি দিয়ে দিল। পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ছুটি থাকবে। ও ঘরে এসে সব গুছিয়ে রেখে দিল, ভোরের ট্রেন হাওড়া থেকে।ওর বাড়ি মেদিনীপুরের একটা গ্ৰামে। ওর ঘরের বাকি দুজন আজই রওনা দিল, ওদের বাড়ি তুলনামূলক কাছে, রাতের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

   কিন্তু পরদিন সরকারীভাবে বন্ধ ঘোষণা হল। ট্রেন সব বন্ধ।ওর আর বাড়ি যাওয়া হল না। যদিও ওর মা বলেছিলেন কোনো অন্য গাড়ি করে চলে আসতে কিন্তু ওর বাবা বললেন একদিন তো,থাক পরদিন চলে আসবে। কিন্তু বিধি বাম! রাতে ঘোষণা হল পুরো ২০দিনের জন্য গোটা দেশ লকডাউন থাকবে,প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনো যাবে না। যথারীতি বাস,ট্রেন সব বন্ধ।ওর মা কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। অবশ্য ওর অতো চিন্তা হয়নি। ও ভাবলো ফোন ঘাটবো, রাঁধবো আর খাবো।Ⓜ️

  কিন্তু দিন দশেক পরে ভয়াবহতা বুঝতে পারলো। করোনা মহামারীর রুপ নিল।ডাক্তাররা ওষুধ আবিষ্কার করতে পারছেন না,কিছু করার নেই, শুধু বাড়ি বসে থাকা। চারিদিকে হাহাকার শুরু হয়ে গেল, দিনমজুর দের উপবাস, রাস্তার পাশের মানুষ গুলোর করুন অবস্থা। লকডাউন ২০দিনের পর আরোও ১৫দিন হল। ঋষির আশার আলো আবার কমে গেল। একমাস পর অফিস থেকে জানানো তারা আর কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। এদিকে ঋষিদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা এমন নয় যে তারা টাকা পাঠাবে। তাই তাদের মিথ্যা বলে বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নিয়ে কোনোরকম চালাতে লাগলো। পুরো বিল্ডিংয়ে ও একা, মাঝে মাঝে নিজেকে কেমন ভুতের মতো লাগে ওর। রান্না করতে ইচ্ছে না হলে মুরি খেয়ে কাটায় সেটাও না হলে খালি পেট।Ⓜ️

   পরদিন ওর বান্ধবী রিয়ার ফোন। রিয়ারও একই অবস্থা তবে ওর বাবার অনেক টাকা,এটাই রক্ষা।
রিয়া - 'আজ বাড়ির মালিক এসে বলে গেল,বলছে পাঁচ তারিখের মধ্যে ঘর ছেড়ে দিতে হবে।'
''মানে??বললেই হল? একটা মেয়েকে এভাবে বের করে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই ওনার। কোথায় যাবি তুই এর মধ্যে??''
'উনি বললেন সেসব জানেন না, বাড়ি ছাড়তেই হবে। বাবাকে জানিয়েছি,দেখি যদি কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করা যায়।'
   হ্যাঁ সে হতে পারে কারণ রিয়ার বাড়ি ট্রেনে ঘন্টা তিনেক, তাই গাড়ি করে যাওয়ায় যায়। কিন্তু ঋষির এমন কোনো আশা নেই,কারণ একে তো ওর বাড়ি অনেক দূরে তাছাড়া টাকাও নেই!!Ⓜ️

    আরোও দশদিন পর মাঝরাতে হঠাৎ ওর মায়ের ফোন -
''বাবু তোর তারককাকা মারা গেছেন।''
'কী বলছো?? কি করে হল এসব?কখন??'
"আজই,গত এক সপ্তাহ আগে হেঁটে বাড়ি আসবে বলে বেরিয়েছিল।আজ দুপুরে রাস্তার মাঝেই......'' মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তারককাকা ওদের প্রতিবেশী। পুনেতে একটা হোটেলে কাজ করতেন। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কাকীমা বাড়িতে থাকেন। এবার ওদের কী হবে?কে দেখবে?? নাহ্ আর ভাবতে পারছেনা ও!!!!Ⓜ️

      পরদিন ঋষি খবরে দেখল এইসবের মধ্যে আবার একটা ঝড়  আসছে,যা এত শক্তিশালী নাকি এক মুহূর্তেই সব তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।ও আর দেরি করল না হাতে যা টাকা ছিল তা দিয়ে একটা পুরনো সাইকেল আর কিছু খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে কিছু জানালো না মা বাবা চিন্তা করবেন বলে।
'মা শোনো ফোনটা একটু ডিস্টার্ব করছে দুদিন ধরে। আমি সময়মতো তোমাকে ফোন করে নেবো, তোমাকে করতে হবে না।'
"এর মধ্যে আবার তোর ফোন খারাপ হলো? আচ্ছা বাবা সাবধানে থাকিস।"Ⓜ️

  ও বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু রাস্তায় নেমে বুঝতে পারলো কতটা কষ্ট!!একে তো মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ, পিঠে ভারী ব্যাগ, তাতে আবার খাওয়ার কষ্ট।আর ক্ষিদে পেলে বেশীক্ষণ চালানোও যায় না। রাস্তাও চেনেনা, গুগল ম্যাপ ভরসা।ফোনে কদিন চার্জ থাকবে জানে না।যা আছে তিনদিন মতো যাবে কিন্তু তারপর?প্রায় গোটা দিন কেটে গেল এখনও সবে কলকাতা পেরিয়েছে।
   এভাবে দুদিন চলল। মাকে সেদিন সকালে ফোন করল -
"বাবু তুই ঠিক আছিস তো? আমার কেমন মনে হচ্ছে তুই ভালো নেই।"
'আমি ঠিক আছি মা,কিচ্ছু হয়নি আমার। তোমরা কেমন আছো?'
"আমরা ঠিক আছি,আজ তো ঝড় হবে, তোর বাবা আমাদের দোকান ঘরটা (এককালে দোকান থাকায় ওটা বেশ বড়ো, হলঘর মতো) খুলে দেবে বলছিল,গ্ৰামে যাদের কাঁচা ছাউনি তারা থাকতে পারবে।"
ঋষিদের বাড়ি ওই একটাই ছাদের ঘর ওই দোকানঘর,বাকি ওদের থাকার ঘর সব টালি দিয়ে বানানো,ওর মা বাবা যে এই সময়ে গ্ৰামের লোকের কথা ভেবেছে এতে ওর বেশ ভালো লাগলো।ওর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা টা দিগুন হয়ে গেল।
'ভালো করেছো মা, খুব ভালো করেছো।'
"তোর ফোনটা ঠিক হলো?কী রাঁধলি আজ?"
'না ফোন টা ঠিক হয়নি,আর আজ আমি, আমি ফেনাভাত রেঁধেছিলাম,পেট ভরে খেয়েছি। তুমি একদম চিন্তা করো না আমাকে নিয়ে,ঝড় আসছে তোমরা সবাই কে নিয়ে সাবধানে থেকো।'Ⓜ️

    এরপর এলো সেই ভয়াবহ ঝড়, সেই কালো রাত। ঋষি রাস্তার পাশের একটা স্কুলের সাইকেল গ্যারেজে কোনরকমে আশ্রয় নিল।ও তো প্রাণে বেঁচে গেল কিন্তু গাছ পড়ে ওর সাইকেল টার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। তার সাথে শেষ হতে বসল ওর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন।এখন হাতে যা টাকা আছে তাতে আর একটা সাইকেল কেনা সম্ভব নয়। এদিকে ক্ষিদেয় চোখে অন্ধকার দেখছে। পাশে কোনো দোকান খোলা নেই যে কিছু কিনে খাবে। সামনের টিউবওয়েল থেকে বার তিনেক জল খেয়েছে, তাতে ক্ষিদে কমার দায় আরো বেড়ে গিয়েছে। ফোনটা বেজে উঠলো, রিয়ার কল।
"হ্যালো ঋষি,রনি বলল তুই নাকি সাইকেলে বাড়ি যাচ্ছিস? পাগল হয়েছিস তুই?"
'আমার কিছু করার নেই রে, এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। কি করতাম আমি বলতো?'
"কিন্তু এত কষ্টে এভাবে কদিনে পৌছাবি তুই??আদেও কি......."
'হুম আদেও পৌছাবো কিনা জানিনা, কারণ কালকের ঝড়ে সাইকেল টাও গেছে। দেখি ওটার কোনো গতি করতে পারি কিনা, নাহলে এই পা দুটো ছাড়া কোনো ভরসা নেই (মনে মনে ভাবলো সে দুটোও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে)। জানি না রে তবে বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।'
ফোনটা রেখে বাড়িতে ফোন করল।দুবার পুরো বেজে গেল, কিন্তু কেউ তুলল না। এমন তো কখনো হয়না,ও ফোন করলে একবার বাজতে না বাজতেই মা ছুটে এসে ধরে,মা কোনো কারণে ব্যস্ত থাকলে বাবা ধরে।ও এদিক ওদিক দেখতে লাগলো কোনো সাইকেলের দোকান যদি দৈবাৎ খোলা থাকলে যদি সাইকেল টার কোনো ব্যবস্থা হয়।ওর গুগল ম্যাপ বলছে আর দুদিন মতো গেলেই ও গ্ৰামে পৌঁছাবে। তবে মা ফোন না ধরাতে একটু দুশ্চিন্তা হতে লাগলো,যা ঝড় হল তাতে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি তো?Ⓜ️
             চারিদিকে গাছ ভেঙ্গে পড়ে, ইলেকট্রিক তার জরিয়ে খুবই খারাপ অবস্থা, তবে একটু উঁচু এলাকা হওয়ায় রাস্তায় জল জমেনি এই রক্ষা। সাইকেল টা ঠেলতে ঠেলতে কোনোক্রমে এগোতে লাগলো। হঠাৎ পাড়ার মিন্টুর ফোন -
"হ্যালো। তুই কোথায় আছিস? ঠিক আছিস তো?"
'হ্যারে আমি ঠিক আছি। তবে বাড়িতে বলিস না আমি গত তিনদিন ধরে সাইকেলে বেরিয়েছি, বাড়ি যাব বলে।আর দুদিন, ঠিক পৌঁছে যাবো বল?'
"সাইকেলে?ওহ তা বলছিলাম.."
'আগে বলতো আমাদের বাড়ির কি অবস্থা?মা ফোন ধরলো না,ঝড়ে সব ঠিক আছে তো?'
"কি বলি বলতো? মানে..... তুই......"
'ভাই সত্যি করে বলতো সব ঠিক আছে তো???'
"তোর বাবা....কাল ঝড়ের মধ্যে একটা কুকুরছানা কে বাঁচাতে গিয়ে বাইরে বেরিয়েছিল, ঠিক সেইসময় তোদের বড়ো পিটুলি গাছটা পড়ে.....জ্যাঠা...জ্যাঠা আর নেই ঋষি....."
ফোনটা সুইচ অফ হয়ে গেল। ঋষি স্থানু হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিসব বলে গেল মিন্টু? নিজের কানে কি শুনলো ও? এতো কষ্ট করে ও তিনদিন যুদ্ধ করছে শুধুমাত্র ওই মুখ দুটো একবার দেখবে বলে!! তারপর সাইকেল ফেলে দিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতে লাগল।Ⓜ️
    খানিকটা যাবার পর রাস্তার পুলিশ ওর পথ আটকালো।কী নাম, কোথায় বাড়ি,কোথা থেকে আসছে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর না পেয়ে ওর ব্যাগ নিয়ে জিনিসপত্র ঘাঁটতে লাগল। আরেকটা পুলিশ অফিসার এসে ওকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। কিছুক্ষণ মার খাওয়ার পর ও আর্তনাদ করে উঠলো,বুক চিড়ে হৃদপিন্ড টা বুঝি ওইখানেই বের করে আনবে।
  "আমার বাবা....আ.....সে মারা গেছে!!!তাকে আর আমি দেখতে পাবোনা। আমার ডাকে সে আর সাড়া দেবেনা.... আমার সব শেষ.... শেষ দেখাটাও......"জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল দুদিনের অভুক্ত শরীর টা। Ⓜ️

      এই জ্ঞান আর ফিরবে কিনা আমার জানা নেই।কতো হাজার হাজার মানুষ এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তাও জানা নেই। কতটা পরিমাণ নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে তারা তার আন্দাজ টুকুও হয়তো করতে পারবোনা আমরা ঘরে বসে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার বা সাহায্য করার কোনো উপায়ও নেই আমাদের কাছে। শুধু ঘরে বসে প্রার্থনা করতে পারবো মানুষগুলোর জন্য,যেন তারা মরার আগে অন্তত তাদের প্রিয়জনের মুখ দেখতে পায়।ব্যাস এইটুকুই.....
                                                                                          

নিরন্তর অপেক্ষা : শোভন মন্ডল


আমরা কি এইভাবে হারিয়ে যাবো?

কোমরের নীচ থেকে যে তীব্র আকুতি কুড়ে খাচ্ছে
তার কোন বিহিত হলো না

জানা নেই নিরন্তরকাল আসলে কী
খুঁড়ে রাখা গর্তের ভিতর থেকে কিলবিল করছে কীট
অজস্র,  অনন্ত লেজযুক্ত কীট

সময় নেই ,  সময় নেই আর
ঝিমিয়ে পড়ছে প্রাণ,  ভেসে যাচ্ছে নিথর খোলস

এইসব দেখতে দেখতে অপেক্ষায় থাকা শত শত ডিম্বাণুরাশি
প্রতিনিয়ত  রক্তাক্ত করছে
নিজেকে



পরিযায়ী : আর্য দাস



গভীর অসুখ, ভীষণ সংকট দেশে
তারা যায় ভিনদেশে
সন্ধানে দুমুঠো অন্ন, পরিযায়ী বেশে।

ওরা হাঁটছে রোদের সাথে
আকাশ যখন জ্বলতে থাকা দীপ
সলতে পাকায় পেটের ক্ষিদের ব্যামো
ছাড়তে হবেই পরিযায়ীদের দ্বীপ।

অববাহিকার রেলের লাইন জুড়ে
ঘুমোয় যত রুটি আধপোড়া
পোড়াকপাল শ্রমিক যত্তসব
ঘুমিয়ে মরে হেঁটে আগাগোড়া।

গোরার বিবেক তবুও কি কাটা পড়ে,
কালামানুষের দেখে ছিন্ন লাশ ?
উপত্যকার রাস্তায় চাপা পড়ে
মোমবাতি হাতে মিছিলের অবকাশ।

পৃথিবীর যত যুদ্ধ আর মহামারী
জীবন মেলায় ওদের আরবার,
প্রাপ্য রুজির সন্ধানে ওরা পাবে
শুধু সমান্তরাল মৃত্যু উপহার।

অসম লড়াই চলছে যুগে যুগে
শ্রেণীসংগ্রাম সংখ্যায় বারেবারে
বন্দী বিপ্লব প্রমাণ দিয়ে গেল;
সর্বহারারা আজও কতভাবে হারে।


             

পুনরায়: রিঙ্কু মন্ডল


বর্ণভেদের ছোঁয়াছুয়ি করার
অভ্যাসটাই বদলালো না;
উপরন্তু দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ।

মানুষের সাথে মানুষের সাক্ষাৎ নেই
হেরে যেতে বসেছে সমাজ;
জীবন কাটছে ইতর প্রাণীগুলোর মতই।

আমাদের ব্যবহার-
ভালো অথবা খারাপ
মৃত্যুর পরে সংস্কাররূপে আত্মাতে থেকে যায়।

কতদিন হয়ে গেল
গৃহবদ্ধই হয়ে আছে মানুষ,
দিন কাটায় একাকিত্বে।

বিষাক্ত ভাইরাস ধ্বংস হওয়ার পর
যদি একাকিত্বের সংস্কার থেকে যায়,
তাহলে আর একবার হবে
আমাদের পরাজয়;
যা মহামারির পর দ্বিতীয় এক মহামারি।

শব্দ : অর্ঘ্যকমল পাত্র



ডান পায়ের শব্দে এগিয়ে আসে
আমাদের বাঁ পা।
বাঁ পায়ের শব্দে একঝাঁক শুকনো পাতা
শব্দ করে জানান দেয়—অস্তিত্ব
শুকনো পাতার আওয়াজে
সবার উদ্ধতভাব নিবিয়ে দিতে
ভিজে যায় মাটি।
জলের শব্দে সে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে
একটা বীজ এবং জন্ম নেয়
একটা গাছ

যে গাছের নীচে বসে
এই তো সেদিন আমরা
কোনো শব্দই শুনতে পাইনি!


রিয়াজুল হক সাগর একগুচ্ছ কবিতা



১.
এই সময়ে

এ খন রাত এসেছে অন্ধকার
সত্যের বিজয় নিশান উড়ছে,
এই বাংলায়, সাহস রেখ আগামির
পথে পথে, এই হোক অঙ্গিকার।
সমাজের চিত্র বদলে গেলেও
বদলায়নি মানুষের চরিত্র,
আবার একটি পলকে বদলাতে
পারে মানুষ নামের অমানুষ ।
এই মানুষ যেতে হবে বহু দুরে
অচিনপুরের একটি গ্রামে,
সেখানে হবে বিচার তোমার
থাকবে শুধুই তুমি নামের একমাত্র আমি।

২.
যা….রে করোনা --

দুরে চলে যা হে করোনা
কোথা হতে আসলি রে তুই,
তোর কাছে সবাই মাথা নত
অতি শক্তিশালী তোর প্রলয়।
তুই কি তাকিয়ে দেখেছিস,
কত লাশের মিছিলের ধিক্কার
তোকে শুনতে হয়েছে
কোটি কোটি প্রাণের চিৎকার।
এই করোনা কি করিলি?
দুনিয়া জুড়ে দেখছে তোকে
তাকিয়ে তাকিয়ে, তোর ভয়ে।
লকডাউনের যাতা কলে এখন
পৃথিবী মানব শুন্য দেখা মেলে না
অতি আপনজনের, এই করোনায়
হে করোনা তুমি চলে যাও দেশ হতে।

৩.
নালিশ

করিতে নালিশ
করবে আমায় পালিশ,
মামলা দিয়ে
করতে চায় হালিস।
চোরদের দাপট
চোখে পরার মত,
আনাচে কানাচে দেখা যায়
বৃক্ষ রাজির মত।
সত্যের বিজয় জেনেও
আজ নিচ্ছুপ,
বিবেক নামের
সেই স্বত্বা আমার হারিয়ে গেছে।

৪.
নাইরে দিন

দিন গেল তোর আগে ভাগে
একলা দিনের মত,
আজে বাজে স্বপ্ন দেখে
 হাজার কথা শত ।
মিষ্টি মেয়ের দৃষ্টি পড়ে
ঝাকড়া চুলের দিকে,
রাখাল ছেলের বাশিঁর সুরে
মাঠ গেছে হায় পিকে।
এই দিনের কাছে
সেই দিনের হার,
নদীর বুকে ঢেউয়ের খলাৎ খলাৎ
ডাকু শুনে আমিও দিলাম পার।


৫.
ভাতের লাগিয়া…

দু..দিন গেল পেটে ভাত পরে নি
কেটে গেল বেলা,
অবুঝ শিশুর চোখের পানি
স্বপ্ন করে খেলা।
বাবা যে তার কাজে গেছে
আনবে কিনে খাবার,
পাইনি কাজ বাবা তাহার
দিন শেষে পেলনা আহার।
এই করোনার ভয়ে ভয়ে আজ
দিশেহারা গরীব মানুষ,
লুট করে খেল সব
ফিরলো না তাদের হুস।

কোভিড-19 : রাহুল শীল


বুকের ভেতর ভীষণ ভয়ের বাস
নিরাপদ শুধুই কোয়ারেন্টিন,
মায়ের মুখেও একটা শুধু শব্দ
বিপদের নাম কোভিড-19।

আকাশ ফাটে।খাঁচার ভিতর মানুষ
করোনা নামে চিনা ভাইরাস,
পাশের বাড়ির কাকার হাই প্রেশার
ইতালিতে থাকে ছেলে পলাশ।

খবর কাগজ, মৃত্যু মিছিল গুনে
কানের কাছে করে ফিসফিস,
নিউজ চ্যানেল বার্তা পাঠায় শুধু
করোনা আক্রান্তের মিলল হদিশ।

ভিড় এড়াতে সতর্কতার বাণী,
এক মিটার দূরে পথ চলুন।
নিজামুদ্দিন বাড়ালো আক্রান্ত সংখ্যা
কার কথা কে শোনে বলুন।

যে জনগণ মৃত্যু দেখে শেখেনা
তাদের জন্য কিছু করার নেই,
ঘরে বসেই মৃত্যু মিছিল দেখুন
করোনা হতে বাঁচবেন এভাবেই।।
                 

বারুদ : The Elixir of Life : প্রীতম বিশ্বাস


" Life always wants to sustain itself, if possible then eternally. "

       'অল-ইকসির' অর্থাৎ আশ্চর্য বস্তু। সময়টা সপ্তম শতাব্দী, তার আগে 'Elixir' শব্দ টা আসেনি। যদিও শব্দ দুটো ৫২-৫৩, তবুও এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ঔষধি বস্তু আর আশ্চর্য বস্তু এক জিনিস নয়। কিন্তু ওষুধ টা যদি অমরত্বের বা চিরযৌবনের হয় ? কি ? হোঁচট খাচ্ছেন তো ! এগোতে থাকুন আরো খাবেন।
       জীবনের শুরুর সময় থেকেই আশ্চর্য বস্তু খোঁজ এখনো অবধি অবিচল আছে বরং বেড়েছে কয়েকশো গুণ। প্রোক্যারিওটস্ থেকে শুরু করে এখনো অবধি জীবন যে কোন উপায়ে অমরত্ব পেতেই চায়। তার বিভিন্ন উপায়ে অবশ্য জীবন ইতিমধ্যে খুঁজে ফেলেছে। মানবজাতি সেটা বুঝতে আজও অক্ষম, কারণ মানুষ জীবনের থেকে অনেক পিছিয়ে। আর ঠিক সেই জন্যই অমরত্ব বলতে যা আমাদের মাথায় আসে তা হল অমৃত, philosopher's stone, আব-ই-হায়াত্ , ochimizu ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকমই একটা নাম "The Elixir of Life", যার মানে অমরত্বের বা চিরযৌবনের একটা সিরাপ ।

       প্রশ্ন আসছে নিশ্চয়ই এসবের সাথে বারুদ এর কি সম্পর্ক ! খুব স্বাভাবিক। আসুন তবে;
পুরাকালে 'অমৃতের খোঁজে হলাহল' , বা philosopher's stone এর জন্য অসংখ্য মৃত্যু - এসব জানে অনেকেই। তবে তা নিছক রূপকথা এমন দাবি করতে আমার দ্বিধা নেই। কিন্তু রূপকথা সত্যি হবে না এমনও তো কোনো মানে নেই।

       " Accidents are normal in life." , এই কথাটায় আমি খুব বিশ্বাস করি। দেশটা চীন, সময়টা তখনও আন্ত-সাম্রাজ্য যুদ্ধের। বহু রোগ-ব্যাধি-ক্ষত এসবের উত্তর খোঁজা চলছে বিশ্বব্যাপী, এবং চীনেও। বহু ওষুধে সালফার, পারদ এর ব্যবহার অপরিহার্য। এর মাঝেই জীবনের চির চাহিদা মেনে নিয়ে কিছু মানুষ খুঁজছিল 'Elixir of Life' । বিভিন্ন মিশ্রণ, তাতে সালফার, পারদ, চারকোল এসব থাকতো।  প্রথম শতকের অর্ধেকের দিকে তারা সন্ধান পান সল্টপিটার এর, এক ধরনের জারক লবণ। 'টাও' নামে এক জনজাতি, তারা এসব মিশিয়ে রোগমুক্ত, জড়ামুক্ত, মৃত্যুমুক্ত জীবন খুঁজছিল। যদিও তা পাওয়ার একটা পথ গৌতম বুদ্ধ বহুকাল আগেই বলে গিয়েছেন, তবুও ওই যে "যত মত তত পথ" । এরকম খোঁজের এক মিশ্রণে ছিল সালফার, পারদ, চারকোল, সল্টপিটার এসব। সালফার আর চারকোল জ্বালানী অন্যদিকে সল্টপিটার জারক। ব্যাস ঘটে গেল 'magical accident' । মন্থনে উঠে এলো 'বিষ', নাম পরল 'huoyao' অর্থাৎ 'fire medicine' ‌। খেয়াল করুন শব্দ দুটো fire এর সাথে medicine । হ্যাঁ, একটা Taoist লেখা অনুযায়ী, 'huoyao' was an accidental by product from the experiment seeking to create the Elixir of Life .

       এই huoyao আর কিছুই নয়, যাকে আপনি বারুদ বা gunpowder বলে থাকেন। তারপর এর দৌলতে যে কাল সাম্রাজ্য এখনো চলছে বিশ্বব্যাপী তাতে আমার 'black powder' নামটা বেশি প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
       Elixir of Life পাওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র সংশয়ে আচ্ছন্ন নই, কারণ জীবন তার অমরত্বের পথ খুঁজে ফেলেছে কোটি বছর আগে। কিন্তু অবিরাম মন্থনে এই যে সব 'বিষ' উঠে আসছে, তা গলায় ধারণ করার জন্য গাঁজাপেয়ী পাগলের যে খুব দরকার, আর বিশ্বের হিরোশিমায়ন বা নাগাসাকি-করণ হওয়ার আগেই দরকার ।

ভবিতব্য : অনিন্দ্য পাল


ভবিতব্য
কয়েকটা প্রশ্ন করি তোমায়
কে সৃষ্টি করেছিল তোমায়?
তুমি অতীত না ভবিষ্যৎ?
তুমি কি সবার?
নাকি শুধুই ভ্রম আমার?
ভবিতব্য তোমার ও কি আছে ভাগ্য
ওই ভেসে যাওয়া অসহায় মাকড়ের মত?

উত্তর পাবোনা, জানি
জানি সেই ভবিতব্য নেই আমার
ছিল কি কখনও?
সত্যিই কি ঘটেছে কিছু?
কোন ঘটনা অথবা ধংস অথবা সৃষ্টি?
নাকি সবটাই ভ্রম আমার?
যেমন নিজেই আমি!
====================

মানুষ তুমি মানুষ হও : কাজী জুবেরী মুস্তাক



সারা পৃথিবী আজ বাঁচার জন্য লড়ছে
ঈশ্বরের সামনে নতজানুই বসে থাকছে ;
সকলে থাকতে চায় মহাবিশ্বের উপরে
মুখোশের উপরে আরেক মুখোশ পড়ে ।

ক্ষমতার দম্ভ নেই আজ পৃথিবীর বুকে
অহিংসা পরম ধর্ম বাণী সকলের বুকে ;
কাঁধে কাঁধ রেখে বাঁচার স্বপ্নটা দেখছে
ব্রহ্মাণ্ডের এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে ?

পৃথিবী জুড়ে আজ শুধুই মানুষ মরছে
হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ভেদাভেদ ভুলেছে  ;
আলোর অপেক্ষায় পৃথিবীটাও বহমান
জ্বালো আলো ঈশ্বর ;আল্লাহ ;ভগবান ।

যুদ্ধ দাঙ্গা ভুলে মানবতা এক কাতারে
মহানুভবতা থমকে যায়নি কাঁটাতারে ;
মানুষ আজকে মানবতা ফেরি করছে
সব ভুলে ভালোবাসাটাও বিলি করছে ।

ভেঙে চুরে গেছে আজ সব অহংকার
ভাগাভাগি করে করছে সবাই আহার ;
কিসের এতো দম্ভ জীবনটাইতো ছোট
মানুষ তুমি আবারও মানুষ হয়ে ওঠো।

স্নেহ : শুভঙ্কর রাহা



পাঁচ বছর হলো সে বাড়ি আসেনি। এই পাঁচ বছরে না এসেছে একটা ফোন, না এসেছে কোনো চিঠি, না কোনো খবর। প্রথম দিকে বেশ কয়েক মাস ফোনে চেষ্টা করা হতো, এখন সেই চেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে। এখন তো দেখছি বৌদি ঠিকঠাক সিঁদুর টুকুও মাথায় দেয় না।
জ্যাঠা আগে একাই চাষ করতো। একই জমির একদিকে লাগাত মুশুরি, একদিকে আলু আর পিঁয়াজ। আলু উঠলে পাট হতো। অন্য জমি গুলোতে ধান চাষ করতো। এখন আর পারে না। ছেলের চিন্তায় কিছুটা অকাল বার্ধক্য এসেছে। এখন বেশিরভাগ টা ভাগচাষী রাই চাষ করে, ফসল উঠলে ফসলের ভাগ আর টাকা মিলিয়ে যা হাতে আসে তাতে ওদের তিনজনের সংসারে বিলাসিতা না থাকলেও ভাতের অভাব নেই। জেঠি বরাবর ঘর-গৃহস্থালি, গরুর গোয়াল নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আজও তাই। তবে গরু টা আর নেই তাকে বিক্রি করে একটা ছোটো ছাগল নিয়েছে, আর বাকি টাকা টা ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাখা আছে। ছাগল টাকে জেঠি আর বৌদি মিলে দেখা শোনা করে। বৌদি রোজ নিয়ম করে কাঁঠাল পাতা খাওয়ায় ছাগল টাকে।

বিকাল হলে বৌদি ছাদে ওঠে। আমাদের ছাদ আর বৌদি দের ছাদের মাঝে একমানুষ দূরত্ব। প্রথম প্রথম বৌদির ছাদে ওঠা টা আমাকে উৎসাহ দিত একরকম adrenaline rush বলা চলে। বৌদিকে দেখিয়ে দেখিয়ে ১০-২০ টা স্কিপ বেশি করতাম, পুশ আপের সংখ্যাও বেড়ে যেত। বৌদি সেটাকে কেমন ভাবে নিত তা আমার জানা নেই। কিছুদিন পর থেকে আর এমনটা করতাম না, আড়চোখে তাকিয়ে দেখতাম বৌদি কিছু বলতে চেয়েও ইতস্তত বোধ করে। তাই আমিই একদিন বৌদির কাছে জ্যেঠির শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চেয়ে কথা শুরু করার চেষ্টা করলাম। পাশের বাড়ির জেঠিমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার মতো বোকা বোকা প্রশ্ন দিয়ে কথা বলার অজুহাত দেখে বৌদি তো আমাকে নিয়ে বেশ ঠাট্টা করলো। আমিও ব্যাপারটা উপভোগ করলাম।
তারপর থেকে রোজ বিকালেই বৌদির সাথে কথা হতো, নানান রকম কথা। সে কথা কত ডালপালা বিস্তৃত করে, আমি নিজেকে সামলে নিই। পাড়ার বয়জেষ্ঠ্য রা বাঁশ পেকে ট্যাস ট্যাস করার আগে তাকে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে যায় জ্যাঠা কে। বন্ধুরা আমাকে ভ্রু তুলে,  মাথাটা হালকা বাঁ দিকে বেঁকিয়ে ইশারা করে। পাড়ার টাইম কলে জল আনতে গিয়ে শুনলাম ' ছেলেটার কি দোষ? ওই মেয়েছেলে টাই ফুসলেছে। আসল ব্যাপার হলো অভাবে স্বভাব নষ্ট। বাড়ির রোজগেরে পুরুষ যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে যা হবার তাই হচ্ছে।'
আমি জলের জায়গাটা ভরে একবার থুতনি টা তুলে আবার সেটাকে নামিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

শহরের ইতিকথা : নন্দিনী পাল


আকাশটা আজ নেমে এসেছে চৌকাঠে
ছুঁয়ে আছে মিনারের মাথা
বহুতলের ছাদের উপর ধূসর দিগ্বলয় 
সাঁতরে যাচ্ছে সময়,
জলের উপর তরঙ্গ ফেলে।
দূরে ওই ব্রীজের পাঁজরে
বর্ষার রুগ্ন জোলো হাওয়া 
নদীর বুকে লঞ্চটা ভোঁ আওয়াজ দিয়ে
ডাকেনি অনেকদিন
কারখানার মৃত চিমনিগুলো
আকাশের দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে
কপাটের তালায় পড়েছে জং
অনেকদিন কোন কোলাহল নেই
নেই ব্যস্ততা
অন্ধকার শীতল এখানে
যান্ত্রিক নিস্তব্ধতা শুধু পায়রার ডানায় ভেঙে খানখান
সাড়া দেবার কেউ নেই
দমবন্ধ কিছু কান্নারা ফিরে গেছে কড়া নেড়ে,
উৎসবের জ্যোৎস্নার আদরমাখা সন্ধ্যায় আজানের সুরে
 চাঁদের চর্যাপদ
ওদের একফালি রুটির আশ্বাস দিও।