নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিবর্ণ ছবির সাথে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়



কেন এমন টা হয় !   
আটপৌঢ়ে জীবনের খাতায় ?   
সমস্ত সুখ --- চাওয়া পাওয়া যেন --     
বন্ধ করতলের আঙ্গুলের ফাঁক গলে   
কোথায় কোথায় যেন হারিয়ে যায় ।   
আর এখানে পড়ে থাকা --   
ইট কাঠ সিমেন্টের তলে     
আটটা - সাতটা প্রাত্যহিক ছুটন্ত জীবনের তলে --   
কোথায় কোথায় চাপা পড়ে থাকে   
তোমার বিবর্ণ ছবির সাথে হায় !!     


আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। সতের ।।


সেইসময় ক্লাস ফোর কি ফাইভ পড়ি। এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। নাম সৌমিত্র প্রসন্ন সরকার। বাবার বদলির চাকরি। তাই এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে হয়। বাবার সঙ্গে পরিবারও। সৌমিত্র আমাদের স্কুলে ছিল একবছরেরও কম। প্রচণ্ড অস্থিরে। যা মনে করত তাই করত। কারও কথা শুনত না। শিক্ষকের হাতে এইজন্যে তাকে প্রায়ই প্রচণ্ড মার খেতে হত। আমার সঙ্গেও তার বিশেষ কোনো যোগ ছিল না। তবুও তাকে মনে আছে আমার। যে আমি কত কত কথা মুহূর্তে ভুলে যাই, সেই আমি কি করে সৌমিত্রকে মনে রাখলাম! মনের কোন কোণে সে এতদিন পর্যন্ত বন্দি আছে। আর কেনই বা আছে? একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের সামনেই একটা দোকান ছিল। আমরা টিফিনবেলায় সেই দোকানে থেকে কুলের আচার কিনে খেতাম। একদিন টিফিনে আমি কুলের আচার খাচ্ছি। সৌমিত্র হঠাৎ এসে হাজির। আমি ওকে কুলের আচারের ভাগ দিলাম। এরপর সৌমিত্র বলেছিল, " আমি জানি তোর ভাগ আমি পাবই।" কেন বলেছিল তাও জানি না। আমার ওপর তার এমন কিছু জোর ছিল না যেখান থেকে সে এটা বলত পারে। তবে সৌমিত্রকে দেখে মনে হত সে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক গভীর করতে চায় না। যেহেতু সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় তাই তার কোথাও শিকড় গাড়া উচিত নয়। মনে হতো এটা সে রক্ত দিয়ে বিশ্বাস করত। এই মনে থাকাটা আমার কাছে সত্যিই রহস্যময়। হয়ত এটাই নিয়ম। কত কত কান্নার মধ্যে বর্ষায় রাস্তার ধারের একটা ফুটপাতে একটা কুকুরের কান্না যে কারণে আমৃত্যু মনে থাকে, সৌমিত্রও সেই কারণে আজও আমার মনে অমলিন।



।। আঠারো ।।

আরও একজনের নাম মনে আছে। যাকে আমি জীবনে কখনও চোখে দেখি নি, ছেলে কি মেয়ে তাও জানি না। নাম ওডোনেল ডিকস্টা। একজন পোর্তুগীজ। একটি পত্রিকার তরফ থেকে মাইকেলের জন্মদিনে তার কবরে কবিতা পড়তে গেছি। যখন কবরস্থানে গিয়ে পৌঁছলাম তার একটু আগেই একজনকে কবর দেওয়া হয়েছে। মাটি তখনও কাঁচা। বোর্ডে তার নাম লেখা। ওই নামটুকুর মধ্যে দিয়েই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। কবিতা পড়তে পড়তে আমি কেবলই পিছন ফিরে তার দিকে তাকাচ্ছি। মনে হচ্ছে সে যেন আমার কবিতা শুনছে। মনে হচ্ছে এযেন তার অনেক দিনের ইচ্ছা। হয়ত সে মাইকেলের ভক্ত। তার জন্মদিনে তো আর জন্মানো হল না। অবশ্য জন্মেছে কি না তাই বা কে জানে। তাই মাইকেলের জন্মদিনে মরে সে গুরুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। কবিতা শুনবে বলেই আজকের এই বিশেষ দিনে তার মরে যাওয়া। হয়ত এই স্বতন্ত্রতার জন্যেই ওডোনেল ডিকস্টাকে আমার পঁচিশ বছর পরেও মনে আছে


(ক্রমশ..)

আঁকা মানুষ :অনিন্দ্য পাল


শেষ হয়ে যাওয়া সময়টুকু পেরিয়ে এসেছি সবে
সব নাম-বেনাম বেরিয়ে গেছে শেষ নিঃশ্বাস হয়ে
আমার "আমি"র মুখে বারবার এঁকে রাখা সব মুখোশ
খরার আদরে ফাটাফুটি দোঁয়াশের মত চেয়ে আছে
আকাশের দিকে,
ধরো সেখানে ভেসে আছে একটাই মেঘ
অথবা অভিশাপ
বৃষ্টি হলে ,ধুয়ে যাবে রঙের পরত
না হলে , ধূসর গুঁড়ো হয়ে বাতাসে মিশে যাবে
আঁকা পরিচয়
স্তরে স্তরে গড়ে তোলা বল্মীক জীবন

এখন দেখছো এই সব শব যা চেয়ে দেখ
আকাশের দেওয়ালে ফুটে আছে নাম
আঁকা মানুষ ...

প্রথম চিঠি : ঈশিতা দেবনাথ



রূপকথার প্রথম চিঠি তার দিদির কাছে

প্রিয় দিদি,
অনেক দিন থেকেই তুই অনেক দূরে আছিস আমার থেকে, চাইলেও তোর কাছে পৌঁছতে পারছিনা তবে আমি না পৌঁছলেও আমার এই লেখা তোর কাছে পাঠাচ্ছি,

আমরা সব সময় ভাবি "আলো"-র কথা, সবসময় আলোর কামনা করি। জীবনে কখনো অন্ধকার নেমে আসুক সেটা চাইনা, কিন্তু এই চাওয়া না চাওয়ার মাঝে এটা ভুলেই যাই যে অন্ধকার না থাকলে আলোর অনুভব টা কোনো দিনই করতে পারতামনা, আলো আর অন্ধকার এর পার্থক্য করতে পারতাম না, জীবনের খারাপ দিন গুলো ভুলে ভালো দিন গুলো মনে করতে চাই,
তবে আমার মনে হয় আলোর পাশাপাশি জীবনে অন্ধকারের ও গুরুত্ব আছে।

অন্ধকার এ থাকতে থাকতে হাঁসফাঁস করে উঠতাম একটু আলোর জন্য, মনে হতো কেন যে  দিনের পরে রাত আসে....!!!
 মনে হতো কেন যে দিনের বেলায় পাওয়া স্বাধীনতা গুলো রাতের জন্য বরাদ্দ থাকেনা...!
আর প্রতিনিয়ত অন্ধকার কে দোষারোপ করে গিয়েছি,

কিন্তু আজ এই অন্ধকারই, হাজার আলোর মাঝে পাওয়া খুশির চেয়ে বেশি তৃপ্তি এনে দিলো,
আজ সন্ধ্যের অন্ধকার এ চলে যাওয়া সেই দিনের খুশি মনে করিয়ে দিলো,
 তোর মনে পরে.... যখন সন্ধে বেলায় তুই আর আমি বাজার এ যেতাম...তুই বেশিরভাগ সময় হেটে যেতে পছন্দ করতি, আর রাস্তায় সাইকেল নিয়ে হেটে যাওয়ার অভ্যেস টা তোর থেকেই পাওয়া। এখন একা রাস্তায় সাইকেল নিয়ে হাঁটলে তোর কথা খুব মনে পরে,
তুই আমাকে বলতি..."বোন...তুই কিন্তু কখনো প্রেম করতে যাসনা, প্রেম খুব খারাপ জিনিস" তখন অনেক গর্বের সাথে বলতাম "না রে....আমি ওসব প্রেম ট্রেম করবোনা...আমারতো কোনো ছেলেকেই ভালো লাগেনা..."
আজ যদিও সেসব ইতিহাস...তবুও বলবো সেইদিন টা অনেক শান্তির ছিলো, অনেক ভরসা, বিশ্বাস, অনেক স্বাধীনতা ছিল সেইদিন।
সেইদিনের সন্ধ্যে আর আজকের সন্ধ্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই...তবে একটা জিনিস এর অনেক পরিবর্তন এসেছে...আমার মনের....
সেইদিন মন মুক্ত ছিল, সেদিন স্বাধীন ভাবে ভাবতে পারতাম, সেইদিন বাস্তবের কঠিনতা গুলো কে আন্দাজ করতে পারতাম না, সেই দিন পিছন ফিরে তাকিয়ে এটা মনে করতে হতোনা যে "আগেই ভালো ছিলাম"
কিন্তু আজ তা মনে হয়, আজ ভাবনার জন্যও আর কান্নার জন্যও কইফেত দিতে হয়,
আজ স্বাধীন ভাবে ভাবা আর কথা বলার কোনো সুযোগ নেই, সবটাই যে অভিজ্ঞতার দোষ তা নয়, কিছুটা বয়সের চালাকিও রয়েছে।

আজ জানিস তো খুব বেশি করে অনুভব করলাম ...আমাদের মাথার ওপর যে হাত গুলো সব সময় ভরসা দিয়ে গিয়েছে তাদের জীবনেও এমনই কোনো আকাঙ্খা জেগে থাকতো....এই রকমই বয়স আর পরিস্থিতির চাপে পরে সব বদলে গেছে,হয়তো বদলে ফেলতে হয়েছে!

তাদের আসার কাছে আমাদের চাওয়া গুলো অনেক ছোটো... কিন্তু তারা নিজেদের আশা গুলোর সাথে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে আমাদের পাশে থাকে, পাশে আছে, এমনকি থাকবেও।

তাই নিজের অস্তিত্ব টা কে সর্বশেষ করবার আগে তাদের কথা ভেবে পিছিয়ে আসাটা  বোকামি নয়......
একজন সন্তানের কর্তব্য, দায়িত্ব, ভালোবাসা...❤

হাঁদা : মাধব মণ্ডল



একমুখে মধু আর অন্যমুখে আর্সেনিক
নির্দ্বিধায় দু'টোই চাটছি মায়া যাদু!

টলছি বেতাল টলা মাটি আর ঘাসে
ঘাস মরে যায়, মাটিও কঁকাচ্ছে!

হাতের তালুতে খনার আঁচড়
দেখি কিনা বোবা বিস্ময়ে!

একেকটা আর্সেনিক বিস্ফোরণ
ছিন্ন ভিন্ন কথা রাখি চুপড়িতে

কথাগুলো না মরে আবার ডাকে
বিস্মরণের তুমি আবার জাগো

মধু নদী সাঁই সাঁই ছোটে
পাড়ে আমি একা হাঁদা!

নেমকহারাম : উজান উপাধ্যায়



আমার প্রেমিকা কবিতা লিখতে বসলেই
আমি হাঁ করে সামনে বসে যাই।

ওর বুকের ভিতরে কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরনোর মতো বেরিয়ে আসে দগ্ধ পাঁজরের গা থেকে পুড়ে যাওয়া রক্তদাগ।

আমি ওর মাথায় একবালতি দুধ ঢেলে দিই।

হঠাৎ রাখাল সেজে হাতে বাঁশি, মাথায় মুকুট।

আমি ওকে ধাক্কা দিতেই এবার খসখস করে বাবার গল্প লেখে।
এ সময়ে ও অহংকারী।

এবার উঠে গিয়ে দেওয়ালে ক্যালেন্ডার নাড়া দিতেই ওর চোখে ভয়ংকর একটা নেকড়ের ছবি।

আমি হেসে ফেলতেই ও রান্নাঘর থেকে সেদ্ধভাতের হাঁড়ি উপুড় করে গরম মাড় তুলে এনে ফ্যামিলি এলবামের ওপর ঢেলে দেয়।

করো কি কবি, বলতেই আমার প্রেমিকা দাঁত খিঁচিয়ে উঠে বসন্তসেনার মতো কোমর থেকে তরবারি বার করে।

গোটা দৃশ্যে চিতা, হাসপাতাল, এম্বুলেন্স, প্রমোটারের লোভী চোখ, সংবিধান ও নারী দিবসের চকচকে ডিজিটাল আলো-

এবার খুব গুছিয়ে চুম্বন দিতেই প্রিয়তমা অমাবস্যা, আর নেমকহারাম অন্ধকারকবিতার  পান্ডুলিপিরা পরস্পরের সমকামী হয়ে ওঠে।

চোখের সামনে এসব দেখছি, আর কফিকাপে জমিয়ে রাখছি গুপ্ত ঈর্ষা।

রাত পর্যন্ত অপেক্ষা, ঘুমিয়ে পড়লেই প্রেমিকার সব কবিতা আমার নামে ছেপে দেব।

না হলে তো ওর পুরুষালি বুকের ছাতি এ জীবনে দেখার সুযোগ মিলবে না।

কবিতা লেখা শেষ হতেই ও নীল আলো জ্বেলে একটার পর একটা আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে জ্বলন্ত হাঁপড়ে-

এইবার খেলা শুরু-নপুংসকের।

আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। পনের ।।

গরমকালের ভোরবেলা একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিবেশ। মা ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে থাকত। আমি আস্তে আস্তে উঠে বাইরে পালাতাম। তখন সবেমাত্র একটু একটু আলো ফুটছ। উদ্দেশ্য আম কুড়ানো। কিন্তু সেটাই একমাত্র নয়। আসলে ভোরের আকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস আর চারপাশের নির্জনতা আমাকে ভীষণভাবে টানতো। তাই যখন আমবাগানে গিয়ে দেখতাম আমার অনেক আগেই অনেকে আমতলা খুঁজে ফেলেছে তখন এতটুকু মনখারাপ হতো না। ভোরবেলা বাইরে আসতে পেরেছি এটাই যেন অনেক আনন্দের। কোনো কোনো দিন আমবাগানের ভেতরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। চারপাশের মানুষজনদের আস্তে আস্তে জেগে ওঠা, পাখির ডাক ----- এসব কিছুর মধ্যে ভাসতে ভাসতে কখন যেন আমের কথা ভুলে যেতাম।



।। ষোল ।।


সন্ধে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ আস্তে আস্তে নির্জনতায় ডুবে যাওয়া, বাসায় ফেরা পাখিদের চিৎকার চেঁচামেচি। ঠিক এর পরেই কানে আসত কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। আর কান পেতে শুনতাম সন্ধের আবহসঙ্গীত। একটু পরেই শুরু হতো সন্ধের আরতি। দেখতাম মা হাতজোড় করে ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কোনো দিন দেখতাম মা ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাঁদছে। আজও যখনই কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ কানে আসে তখনই ভেতর থেকে আমাকে কে যেন টেনে ধরে। সন্ধের আবহসঙ্গীত আবিষ্ট হয়ে পড়ি। পার্থিব জগৎ থেকে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই।


(ক্রমশ...)

রূপবান মৃত্যু : মাধব মণ্ডল


যাও পা পা করে, খোঁড়ামণি
দেখ মৃত্যু ছুঁড়ছে কারা

মৃত্যুকে একবেলা ভেজে চারবেলা খাই
কতো অপমান করতে হয়েছে গাদা

শ্যাওলাও মৃত্যুকে কাছে বসায়
আমি অভিন্ন মন হয়ে হাসি হি হি

কার কি ছোঁড়ার আছে আর
এই তো এখানে আমি আজও পড়াই

শিঙির কাঁটার যন্ত্রণা ঘিলুর ভাঁজে ভাঁজে
মৃত্যু রূপবান হয়ে নাচো নাচো আরও জোরে

বর্ণহীন প্রভাত : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

 

জেগে উঠে দেখি --     
বসন্তের প্রভাত রঙে ঢাকি       
রেখে গেছে ভাল লাগা ভোর !     
আমার জীবন ব্যাপী --     
কেবলি অনিশ্চিতের কঠিন খোল ,       
জীবনেরে অশান্ত করে অর্থনীতি       
ঢেলে দেয় বাঁচার এক তিক্ত লড়াই ।   
নিরন্নের সারিতে বৃদ্ধি --     
চারিদিকে মেহনতের নেই কোন বোল !   
এমন দেশের চালক --   
জীবনেরে দেখায়ে ঝলক কেবলি বিজ্ঞাপনে     
বসন্তেরে করেছে মলিন হতবাক !   
তবু চায় তারা আরো সমর্থন --     
বুকের পাটার দেয় নির্লজ্জ মাপ   
অথচ কাজের বেলায় দেখি  ফাঁক !   
বসন্তে জেগে থাকি যদি --   
বর্ণহীন হোক তবে তাহাদের হাত ,     
মারছে , মারুক যদি ভাত ।   
বসন্তের অঙ্গীকারে হয় যদি হোক     
তাহাদের বর্ণহীন প্রভাত ।     



প্রিয় দুশমন :হেমন্ত সরখেল


যখনই এভাবে বলো
মনে হয়
আমায় হেরে যেতে বলছো।

উৎসাহ হত হলেই মৃত্যু, স্তব্ধতা, বর্তমানহীন
মাটি ঠেকা পিঠে।

এভাবেই অজান্তে দুশমন হয়ে ওঠো।
আরো বেশী ভালোবেসে ফেলি তোমাদের।

তুমিই এসো।
চরম সত্যে-
তোমার আগে তো ওকেও চাওয়া যায় নি!
                          

মন খারাপের বসন্ত : প্রলয় কুমার বিশ্বাস



কেন জানি না এ বসন্ত
কবি মনে দাগ কাটেনি তেমন একটা।
একটা শূণ্যতা,  স্বজন হারানো বেদনা।

আগুণ ঝরা ফাগুনের মধুমাসে
অশোকেও শোক ছিল!
পলাশও কেঁদে গেছে লাশে!

লাল রঙা শিমুল কিংবা শুভ্র সজিনাও
সে অস্থিরতাকে দূর করতে ব্যর্থ।
সুমিষ্ট কোকিলের কুহুতানও পারেনি
সে শোক মেটাতে বিন্দুমাত্র।

শুধু, চোখে ভাসছে ভাইয়ের লাশ,
বাসন্তীর চোখে জল.....!!
           

কাঁচ : সুপ্রভাত দত্ত



জলের উপর অজানা হাঁসের আঁচড়,
কত ছায়া কত আকাশ ভাঙে..
ভেঙে যায় পুরোনো কোনো প্রহর,
নতুন এক প্রহরের সন্ধানে!

মুঠোর ভিতর শিউরে ওঠে রেখা।
মুঠো, তুমি বাস্তবতায় ভরা...
একটি মন চোখের উপর লেখা
চোখের জলে কেঁপে ওঠে তারা।

একলা পথে কাতর হয় স্মৃতি,
অন্ধকারে বুক কাটে কাঁচে...
কাঁচের ভিতর জমা সহানুভূতি,
কান্না গুলো শূণ্যতাতে বাঁচে।

সমস্ত ধর্ষিতা আমার বোন : মান্নুজা খাতুন



ষোড়শী তুই কি  ফিরবি আবার সেই চেনা জীবনে?

অন্ধকার রুদ্ধ ঘরের থেকে বেরিয়ে কি আসবি?

এই আলোর পৃথিবীতে!

তুই কি বাঁচবি আর পাঁচটা মেয়ের মতো?

পাশের বাড়ির মেয়েটির মত তোর কি ইচ্ছে করে না?

রাস্তার ধারে বাটি হাতে ফুচকা খেতে!

মাইলের পর মাইল পথ উজিয়ে পড়তে যেতে!

তুই কি আর স্বপ্ন দেখবি না বোন?

তুই কি হবি না নতুন ভবিষ্যতের আদর্শ শিক্ষিকা?

তোর তো স্বপ্ন ছিল বোন! তোরও তো ইচ্ছে ছিল!

কিন্তু আজ কি হলো তোর!

ওই ভাবে দুই হাটুর পরে মাথা গুজে আর কতদিন?

বেরিয়ে আয় বোন এই আলোর পৃথিবীতে

দেখিয়ে দে ওই নরপিশাচদের, ছুড়ে দে ওদের মুখে চুনকালি।

কিন্তু বোন

বেরিয়ে আয় বোন,  তোর পাশে আছি

সব ভুলে গিয়ে চল ফিরবি আবার চেনা জীবনে।

তোর চোখে জল কেন বোন!

ভাবছিস তোর কোন মুল্য নেই এই ধরাধামে

আছে!!  তুই আমার বোন, পাশের বাড়ির মালতীর বোন, আমার এ লেখা যে তারও ছোট বোন

এ ভাবে ভেঙে পড়িস না বোন আমরা আছি

মুক্ত কন্ঠে বলতে পারি

সমস্ত ধর্ষিতা আমার বোন, আমার দিদি আমার মা।

সফলতা : নাহার নাসরিন



তোমারই মতো এসেছিলাম আমিও মাতৃকোলে।
কিন্তু তুমি পালিত হয়েছ আদর- আবদারে,
আমি হয়েছি অবজ্ঞা - অনাহারে।
তাই বলে তুমি ভেবো না, মা আমায় বাসেনি ভালো,
তোমারই মায়ের মতো আমারও মা বেসে আমায় ভালো।

আজ তুমি রঙ্গ মঞ্চে করো অভিনয়,
আমি তারই দর্শক দেখি সেই অভিনয়।
আমারও স্বপ্ন ছিলে হব অভিনেতা
অভিজ্ঞতা অনেক ছিল, ছিল না শুধু সাফল্যতা।
ধনীর ঘরের দুলাল তুমি তাইতো এত সফলতা
চাষীর ঘরে এসে দেখো,
কোথায় তুমি আর কোথায় সফলতা।।

মৃৎ সঞ্জিবনী :তপন কুমার মাজি



কোলাহল যদি না পাওয়াদের মিলিত রূপ হয়
তবে বিবেকদের সাক্ষী রেখে ঝড় উঠাবেই উঠাবে একদিন চেতনারা,
প্লাবন ঘটাবে মরুপ্রান্তরে,
বালিয়াড়ির বুকে জমাবে পলির আস্তরণ।

সহ্যের ঘরে বন্দি থাকা কন্ঠদের কলরবে যেদিন
জ্বলে উঠবে শ্লোগান,
কালবৈশাখীর হঠাৎ সফরে বয়ে আনা অশনির মতো
বৃষ্টিতে সেদিন ধুয়ে যাবে সমস্ত ধুলো-বালি।

পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যেখানে রৌদ্রের গতিপথ রুদ্ধ
সূর্য নিজেই সেদিন চুমু খাবে সেখানে
প্রত্যন্ত প্রদেশের ধুকতে থাকা বিষন্নদের মুখে,

মাহেন্দ্রক্ষণে সেদিন বইবে মিঠেল হাওয়া
রক্তিম আশারা কইবে কথা ফুলেদের সাথে,
হরিৎক্ষেত্রে জমে উঠবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রেমের আলাপ,
মৃৎ-সঞ্জিবনী ফেরাবে সেদিন পাষাণের মৃতপ্রাণ !

হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি : মো.রফিকুল ইসলাম


ভোরের প্রভাতে শুনতে পাই তোমার সুরে
আর্তমানবতার ধ্বনি ।
তোমার সুরে ভেসে উঠে আকাশে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দানবের মরণ ফাঁদের বিরুদ্ধে তুমি
প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি ।
রাজপথে মুখরিত শ্লোগান তোমার সুরে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জালিমের বিরুদ্ধে ধারালো তলোয়ার
তোমার তরঙ্গের গতি আজ ।
মেহনতি মানুষের আওয়াজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
শোষণ-বজ্ঞণা মজলুমের বিরুদ্ধে
অসহায় মানবের সম্মোহনী ।
অশুভ শক্তির ধ্বংসের সৈনিক তুমি অগ্নি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দিন-মুজুরি শ্রমিকের আর্তনাদের হাহাকার
দিশাহারা মানবের সৈনিক তুমি ।
তোমার সুরে বাতাসে বহে মুক্তির গান
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
সাম্যের প্রতিকী নৃত্যের প্রাঙ্গণে
বীরঙ্গণা মায়ের আর্তনাদ ।
তোমার কন্ঠে রাজপথ আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
তুমি বিপ্লবীদের , বিপ্লবী কন্ঠস্বর
তোমার আওয়াজে মুখরিত ভূমি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জোসনার আলোয় রজনী সন্ধ্যায়
আলোর দিশারী তুমি ।
অন্ধজনের স্বজন আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।

কান্না :তপন কুমার মাজি


দুর্বল আর নরম মানে কী শুধুই পরাজয় ?
গতিপথে যার ঢের অন্ধকার
আমার সেই শিকড় খুঁজে নিয়েছে বাঁচার রসদ !

প্রয়োজনে ফুটো করেছি পলিথিন-
গুঁড়ো করেছি নুড়ি-
ভেঙেছি পাথর,
কঠিন যে কোন কাঠিন্যই নয়
প্রমাণ করেছি ঝড়কে প্রতিহত করে,
কখনো লাঙলের ফলায় হয়েছি ছিন্নভিন্ন-
হয়েছি নাগরিকদের যূপকাষ্ঠে বলি,
তবুও...

ছেড়েছি কী হাল ?
নীরবে ছড়িয়েছি প্রাণরস ডালে ডালে--
পাতায় পাতায়--
কীটাণুদের বিষকে করেছি নির্বিষ,
ফুটিয়েছি ফুল বৃন্তে বৃন্তে,
দিয়েছি বেঁধে নাড়িকে বিটপের প্রতিটি শিরায়,
ফলাতে ফল,
দুঃস্থ পৃথিবীর প্রয়োজনে...

সদিচ্ছা আর মনোবলকে পাথেয় করে হাঁটছি--
এখনও হাঁটছি
অনিশ্চিত আগামীর পথে
যদিও কুঠারের আঘাতে শুনতে পাই আমি
কোন এক কান্না
যে কান্না অত্যন্ত গভীর ও ব্যঞ্জনাবাহী !!


আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়







।। তেরো ।।

চৈত্র মাসের সন্ধেবেলা। হ্যারিকেন নিয়ে পড়তে গেছি। অর্ধেক পড়া হয়েছে। ঝড় উঠলো। একটু পরেই বৃষ্টি। সারাটা দুপুর বেশ গরম গেছে। এখন বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। সন্ধের একটু পরের বৃষ্টি চারপাশকে কেমন চুপচাপ করে দেয়। তার ওপর আবার গ্রাম। হ্যারিকেন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। ব্যাঙ ডাকছে। রাস্তায় দু'একটা লোক। আমি প্রায় একাই। রাস্তার ধারে ধারে আমগাছ। ঝিঁঝিঁ ডাকছে। ভয় যে একেবারেই করত না তা নয়। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যেত একটা ভালোলাগা বোধ। কতদিন হল ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁর ডাক কান থেকে সরে গেছে। আজ মনে হয় ওইগুলোই ছিল প্রকৃত গ্রামীণ জীবনের সঞ্চয় যা একটা মানুষকে ইঁট কাঠ পাথরের মাঝেও আমৃত্যু সবুজ রাখতে পারে।




।। চোদ্দ ।।

দেওয়ালীর রাতে প্রতিটা বাড়িতে মোমবাতি জ্বলছে। আমরা সারা পাড়া ঘুরে ঘুরে দেখছি কোন বাতিগুলো নিভে গেছে। বাতি নিভে গেলেই আমরা সেগুলো নিয়ে নিতাম। নেভা বাতি তুলে নেওয়ার সময় খুব তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে একটা দুটো বাতি নিভিয়ে সেগুলোও হাতে তুলে নিতাম। যখন বাড়ি ফিরতাম মনে হতো রাজ্য জয়ের আনন্দ। বাতিগুলো পেয়ে যে কি আনন্দ হতো তা বলে বোঝাতে পারবো না। বছর ঘুরে গেলেও সেগুলোকে কাছ ছাড়া করতাম না। আজও ভাবলে বাতিগুলো মনকে উষ্ণ রাখে।

(কর্ম

দাসপ্রথা ও দাসত্ব : সারিফ হোসেন


ইতিহাসের পাতা খুঁজলে পাওয়া যায় শব্দ দুটি
              " দাসপ্রথা ও দাসত্ব ”।

ইংরেজি ভাষার মায়াজালে
               আজ গর্বিত বাঙালির ও
বাংলা ও বাঙালীয়ানার ভাবনা ছেড়ে
               ইংরেজি দাসপ্রথার দাসত্ব মানে।।

শ্বেতবর্ণের নেশায় চড়ে
               গর্বিত কৃষ্ণের ভক্তও
কৃষ্ণকলির কৃষ্ণকায় দেখে লজ্জিত
               কারণ আমরা শ্বেতকায় আবদ্ধ।।

নীল আকাশের নীচে বসে
               বিন্দু বৃষ্টির স্পর্শ নিয়ে
ভাবি আমি, আমরা আজও কি
               "দাসপ্রথা ও দাসত্বের" গন্ডি পেরিয়েছি?


জানিনা, উত্তর নিজ নিজ
               আপন মননের অন্তরালে
খুঁজতেই হবে পথ আমাদের
               নতুবা রইবো আমরা দাসত্বেরই বেড়াজালে।।

সব্যসাচী তাই : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

     

পৃথিবীর সব কথা , সব ব্যথা     
সহেও যেন শব্দ বেছে যাই ,   
সমস্ত অন্যায়ে যেন --   
শব্দের সংঘাতে কাটতে চাই ।   
আমি শুধু কবি নই ছন্দের -- 
অক্ষর অস্ত্র হাতে সৈনিক ভাই !   
জীবনের শত রণে -- 
লড়ি একা সব্যসাচী তাই ।। 


শিরোনামহীন গল্প : বিকাশ দাস (বিল্টু )



রাত ঘুমিয়ে আছে,  তারারা ক্লান্ত ,
আর
চাঁদ মেঘের দেশে ---

আমি নির্জন রাতে একা গল্প লিখি ।
যোগ বিয়োগের প্রাপ্তি আর ভালোবাসার ।
তবে -
     কলম দিয়ে নয়,
নীরবে একা আঁধার রাতে  মনে মনে ।

  মন তো কত গল্প লিখে চলে ;
                             সব কি মনে থাকে?
হিসেব চলে..........

 আবার কিছু গল্প শেষ হয়েও শেষ হয়না ।
                                  যদি আরও কিছু হতো....

আমার  গল্পও  শেষ হলো না,
                                শিরোনাম পারিনি  দিতে।
ভাবছি রাত শেষ করবো বুঝি?
            তখনি বুঝি নতুন গল্প শুরু।

 শিরোনাম নতুন প্রভাতের আবছায়া  আলোতে ।
আর,
আমার মন  লিখে চলছে কত না জীবন কথা ।
তবুও _
যোগ বিয়োগ কিছুতেই হিসেবে  আসেনা  না ।
.
.

রাত শেষ, সকাল।
  ------ তবুও গল্প ফুরালো না ।

আগ্রাসী যাপন :হেমন্ত সরখেল



দগ্ধ কাঁচুলি ছেড়ে
মন নামছে-
অমৃত সন্ধ্যার বুকে।
তোমার প্রখর রৌদ্র পুরো নষ্ট দিনটা জুড়ে -
ফালা ফালা, ধিকিধিকি।
করুক তৃপ্ত- সন্ধ্যা, একটু শ্রান্ত হাসি।

আগের ধ্বংসাবশেষ নোনা ইঁটে জড়।
এবারে, তাই রসের ভান্ড নিয়ে বসি -
জীবাশ্ম চাটলেও আর নোনতা লাগবে না।

উন্মুক্ত বুকের প্রচ্ছদে আধখোলা মনের
উঁকি
রন্ধ্র খোঁজে, পদ্মনাভি, কস্তুরী।
নোংরা লাগলে -
হাত গুটিয়ে আবার খোঁজে অমৃতকুম্ভ
আরো নিচে??
শতদ্রুর পিঠের নিচে নিয়েছে শয়ান?

এসব জানা থাকতে নেই।
অজ্ঞের পরিতৃপ্তি অন্তহীন।
হাতেকলমে নামলে শিখবে
বুদ্ধাসনে মুখোমুখি
বিজাতীয় মন্ত্রেই উদযাপন। সন্ধান। নিরসন।

এভাবেই সাঙ্গ হয় পুজো
মেঘ জমে থাকে আঁচলের ডগায় ডগায়
সুন্দরী অহমিকার ডাক কত্থকী-
 ' আয়, তেঁতুলতলায় যাবি?'
       ----এসো, প্রাণসখা।
পাশাপাশি বসে
সেই ছোট্টবেলার মতো
বুড়ো আঙুল চুষি।

বৃষ্টি না এলে, তেমনভাবে আমরা
 - ভিজব কেমন করে?
                         

স্মৃতি :বৈশাখী চক্কোত্তি



বেশ তো আছো। আমার থেকে
 গুটিয়ে নিয়েছ নিজেকে
আমি খুঁজে মরি হণ্য হয়ে
তোমার স্পর্শ লেখনীতে ।

কখনো কি মনে পড়ে
এই শ্যামা মেয়েকে
উনুনতপা আঁচে, ধীরে ধীরে
সেঁকেছিলে যার মনকে?

ভালো থেকো ।
আর পথ হারিয়ে ফেলোনা ।
নদীর ঘন নীল জলে
বন্য গন্ধের আবেশ আর মিশিয়ে দিও না।

দোহাই প্রেম! আমার জীবনে
এনো না আর ফাগুনের বার্তা ।
থাক্ বন্ধ দরজা। কেন বারবার
করাঘাত হানো অশনি সংকেতের দরজা!!!

        

বসন্তের কনকাঞ্জলী: মান্নুজা খাতুন


প্রতিদিন  প্রত্যুষে ভেজাচুলের গোছা মেলে
কার কথা ভাবো তুমি!
 তোমার ভাবনায় এখনো কি আমি আছি?
যে আঁখিদ্বয়ে এঁকেছ  সীমানা অঞ্জনের কালো রেখায়
সেই চোখে আজ তুমি কার ছবি আঁকো?
যে মিস্টি অধরের  হাসির কারণ ছিলাম আমি
সেই অধর তাম্বুলে রঞ্জিত  করে
কার পথ পানে চেয়ে থাকো? কার মুখাবয়ব  দেখে মিটিমিটি  হাসো?
শীত গত হতে আর বাকি নেই বসন্ত নাড়ে দরজায় কড়া
প্রকৃতি সাজে আপন তেজে, বাতাস মুখরিত হয় নানা ফুলের  সৌরভে
সেই বসন্তের প্রথম  দিবসের প্রত্যুষে হলুদ ডুরে শাড়ি পরে আজ তুমি  কার ফেরার পথ চেয়ে রয়েছে?
প্রেয়সী,  বলিবে কি?
তোমার আঁখিদ্বয়ের কাজল, রক্তিম অধর,  হলুদ শাড়ি এসব কার জন্য?

তুমি না থাকলে :পলি ঘোষ



তুমি না থাকলে আমার কাছে
সকালটা এত মিষ্টি হতো না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
মেঘ করে যেত বৃষ্টি হতো না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে চাঁদটার গায়ে পরে যেত মরচে ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
আকাশের নক্ষত্ররা এত উজ্জ্বল হতো না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
স্বপ্নের রঙ্গ হয়ে যেত খয়েরি ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
বন বন করে দুনিয়াটা আর পারত না ঘুরতে ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
রামকৃষ্ণ -বিবেকানন্দের বাণী মিথ্যা হয়ে যেত ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
বাগানের ফুলগুলো এত সুন্দর হতো না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
দিবা -নিশির সম্পর্ক বুজতাম না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
মনের গভীরতা কি বুজতাম না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
সময়ের মূল্য কি বুজতাম না ।

তুমি না থাকলে আমার কাছে
প্রেমের যন্ত্রণা কি বুজতাম না ।

দেবীপক্ষ : রমা সিমলাই



এইমাত্র নিজের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফিরলাম !

পান্ডুলিপি জুড়ে বিষাদের একমুঠো ছাই !
প্রলয়ের  সাঙ্কেতিক রোজনামচায় এক ঘাটে
জল খাওয়া বাঘে গরুতে উপবাস করে আমার  তর্পণ করবে, কথা দিয়েছে !!

প্রবালপ্রাচীর থেকে নেমে আসা ধর্ষিতা মেয়েরা
মুক্তির আনন্দে সাবলীল সামিল হয়েছে যজ্ঞের
বেদীতে, যজ্ঞকাঠ আজকাল আগুনকে ভয় পাচ্ছে
বলে, মৃদু কিছু সমস্যা !!

অন্যরাতে পদাবলী আর রসকলি গল্পে যত কিছু
অমায়িক স্নিগ্ধ অনিয়ম, ভ্রূণ হত্যা করেছিলো নিয়মিত, প্রেতযোনী রাতে তাদের সে কী হাসাহাসি,
বৈধ নথিপত্র নিয়েই  একমাঠ কুরুক্ষেত্র !!

ও মানুষ, মাটির বিকলাঙ্গ সন্তান..........
পোড়ামাটি ছেনে যেটুকু আমিষ সুখ জড়ো করেছো, আমার অনাত্মীয় শরীরের নদী ঢেউ উপত্যকা অন্ধকার নিয়ে শ্মশানের পথময় যতখানি
আদিখ্যেতা দিলে, আমি তাকে আপন ভাবি নি।

নিজের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফিরেছি ।
                                     এবার পোড়াবো তোমায়  ।

               
                 আমি আজ দেবীপক্ষ  !!!


অপেক্ষা :নাহার নাসরিন


সকাল থেকে বসে আছি অপেক্ষায় তোর         
আসবি বলেছিলি এলি না তো কই?
এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্টা বসে,
এমন করেই প্রাণ বাঁচাস ডাক্তার তুই অবশেষে?
আশার বাঁধন যাচ্ছে ছিঁড়ে আর কতক্ষণ
শত শত মানুষ যে চেয়ে আছে তোর দিকে সর্বক্ষণ।
আস্তে আস্তে নিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে বিশ্বাস
তবুও আছি অপেক্ষায় নিয়ে মনে বিশ্বাস।
অবশেষে,
আসবি তুই দেখবি নাস, বলবি শেষে সর্বনাশ।
চোখ রাঙিয়ে বলবি আমায়
এতো দেরি করলে কী হয়।
ইচ্ছে হল বলি একবার করি নি আমি দেরি
অপেক্ষায় ছিলাম আমি, এসেছি অনেক আগেই।।

সুখী ও অসুখী ঘাম : উজান উপাধ্যায়


শক্ত করে এঁটে বসা প্লাস্টিক আবরণ তুলে দিতে গেলে আঁঠার শত্রু কোনও তরলকে খুব প্রয়োজন।

শহরে গরম এলে মানুষের দ্বিস্তরীয় খোসা উঠে যায়। ফুটপাতে নিরাময়ী চোখ রাখে আঁশহীন খোলামেলা  ফল, বহুতল ছেড়ে আসা ক্লান্ত টহল।  খোসা ছুঁড়ে ছায়া ফুঁড়ে বেহুলা আঁচল -- হঠাৎ রাস্তা জুড়ে সারি সারি বৃহন্নলা গাছ-চিঠি জুড়ে নাগরিক ঘাম বাধ্য শহর জুড়ে ছড়িয়েছে সুখের অসুখ। অসুখের পারদেরা উপেক্ষিত বিধবার সিঁথি জোড়ে, শিৎকারে শিষ্ট নষ্টামির পালতোলা খাম।

শহরে গরম এলে পরিযায়ী পাখিদের প্রবল আরাম। শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরা গাছগুলো দিনগত পাপক্ষয়ে মুছে ফেলে শহরের নাম।  সুখী ও অসুখী ঘাম প্রয়োজন অনুসারে চুকিয়েছে ভ্রমনের দাম।

না আমি কবি নই : সারিফ হোসেন


না আমি কবি নই,
                    নিছক তোমাকে ভালোবেসে ঠাকুর বাড়ির
 দু-চার কথা চুরি করে লিখেছিলাম কয়েকটি।

কিন্তু বিশ্বাস করো,
                    বর্তমানে আমিও আজ কবি অ্যাখ্যায়িত।
                    কি নিদারুণ পরিহাস সমাজের।  তাই
                    বাংলার গৌরব, বাংলার অহংকার আজ শায়িত।।

হ্যাঁ আমি ফেসবুক কবি,
                    হাজারো সস্তা জিনিসের মাঝে আমার অবস্থান।
                    বাংলা লেখনীর ইতিহাস না পড়েই আমি কবি
                    এই জায়গা ছাড়া আর কোথায়বা হয়ে পারে স্থান?

খুব ভোরে সকাল বেলা,
                    চায়ের সাথে কবি আর কবিতা কবিতা রব।
                    কটাক্ষের সুরে মানুষ হাজারে হাজারে
                    বাঘের মত বাঙালীরও কী তবে ভালো কবির অভাব?

না আমি কবি নই,
                    লিখতে লিখতে নতুন করে আবার লেখনীকে ভালোবাসা।
লুপ্তপ্রায়,  দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া
বাংলা ভাষা চোখ তুলে,  মেরুদন্ড সোজা করুক
                    এই টুকুই আশা।।

অভিসারী শহর : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

   

অভিসারী শহরের বুকে নামে       
সর্পিল পিচ্ছিল রাত --   
যৌনতা নগ্ন হয় সুরভি ও সৌরভে ।   
রাতের মায়ার আছে রূপ --     
যৌবনেরে করে যায় শিকার ;       
তার নখরের আঘাতে করে ক্ষত   
যৌবন পরাস্ত দেখ যৌন অভিঘাতে --   
অভিসারী রাত তবু বিকে চলে     
আকাশের প্রান্ত হতে একমুঠো বিকার !       
এখানে নারী - পুরুষ সব একাকার !!       

প্লাবন ভূমি : বিকাশ দাস (বিল্টু )



নীরবতা যখন বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস হয়ে প্লাবিত হয় প্লাবন ভূমিতে

প্লাবন ভূমি যখন প্লাবনের জলে লবনের আস্তরনে
চাষ অযোগ্য

লাঙল চালিয়ে ফসল ফলানোর চেষ্টা
      বীজ বপন করতে ভয় লাগে -
অঙ্কুর কি হবে?
                না ভ্রূণ সুপ্ততেই বিনাশ....

প্লাবনের জল কবিতা হয় ;
  ভ্রূণ হয়, চারা গাছ হয়ে বাঁধ দেয় ।
প্লাবন আটকে যায় গাছের শিকড়ে ।

জল আর লবন হয়না !
এই তো কবিতায় শান্তি ,এই তো মনের সুখ ।

থাক না প্লাবন ;
                  জমি পলি হবেই হবে ।
ক্ষতি হউক না !হতে দাও ,
জল তো আছেই জীবনের বাঁচার রসদ হয়ে ।

গাছ আরও কিছু লাগাতে হবে নদীর ধারে ।
আসুক যত নোনা জল ,
সূর্য আছে তাপ আছে কবিতা আছে ।

ভয় নেই তাই  ।

ঋজু রেখ: হেমন্ত সরখেল



                                     

রেখা চাই। ঋজু, সটান।

ভূমি ফুঁড়ে ওঠা কালের বৈজয়ন্ত হলেও স্তর ভেঙে এগোতে
   তুমি বেঁকে যাবেই। অদ্ভুত তো নয়!

খসে যায় পলেস্তারা। দাঁত হ্যা-হ্যা নোনা। বেঁকে-চুরে মোম
ঝড়ে ঝাড় লন্ঠন
চলিত শব
     যবনিকা অন্ধকার, চাপ চাপ।

ওঠো।
মাথায় ঠেকছে আকাশ?
ভেদ করো। এটাই প্রকৃষ্ট সময়।

বক্র নয়। ঋজু। হাঁটো, ছোটো, গতি দাও।
রেখ খোঁজো, রেখ
রেখ রাখো, রেখ
রেখ বোঝো, রেখ
রেখ বাঁচো, রেখ
আরো আরো আরো যতটায় ব্রহ্মান্ড শেষ হয়
                                 অনন্ত নিঃশেষ

প্রবল শক্তিতে
শেষবারের মতো
             ঋজু রেখ-এ
                                                       
এ যাবৎ না-টানা কবিতার রেখায়
        অনমনীয়  গর্ভাধান যাও রেখে।
                           

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। এগারো ।।

ছোটবেলায় রোদ উঠলে খুব আনন্দ হতো। হ্যাঁ, রোজ রোজ এই আনন্দ পেতাম। একনাগাড়ে তিন চার দিন বৃষ্টি হওয়ার পর মেঘলা আকাশ দেখে যখন খুব মন খারাপ সেই সময় সকালে ঘুম থেকে চোখ খুলেই মাকে জিজ্ঞাসা করতাম, রোদ উঠেছে কিনা। মায়ের নেতিবাচক উত্তরে এত মনখারাপ হতো যে কী বলব! আমি আবার ঘুমিয়ে পড়তাম। এত কষ্ট হতো যে মনে হতো আমার যেন কিছু হারিয়ে গেছে। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। বরং আরও বেড়েছে। কিন্তু আমি রোদ ভালবাসি কেন?? আমি দেখেছি রোদের আলোয় আমি নিজেকে পড়তে পারি। মেলে ধরতে পারি। মেঘলা দিনে আমার আলোর পৃথিবী ঢাকা পড়ে যায়। কারও মুখ দেখতে পাই না। মনের মানুষ ছাড়া থাকবো কি করে? মেঘলা দিনে আমার মনের মানুষ আভরণহীন। তাই তো এতো মনকষ্ট!


।। বারো ।।

সবেমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। তখন একটা চার্মস সিগারেটের দাম ছিল পঁচিশ পয়সা। দুজনে পয়সা দিয়ে কিনতাম। তারপর অনেকটা সাইকেল চালিয়ে অনেক দূরে চলে যেতাম। ধরানোর আগে সিগারেটটা ভালো করে দেখতাম। আর মনে মনে ভাবতাম একটা সিগারেট একটা মানুষকে কত তাড়াতাড়ি বড় করে দেয়। সেই সময় কেউ যদি ছোট বলতো তাহলে এতো রাগ হতো না! আর কিছু বলতেও পারতাম না। তবে পঁচিশ পয়সার একটা সিগারেটের হাত ধরে আমি রোজ একটু একটু করে বড় হয়ে যেতাম।

(ক্রমশ...)

ফিরে আসি :রূপম অধিকারী


আমার হৃদয়ে ব্যাথা বহমান
শরীর পীড়িত তোমার আঘাতে
নিঃশ্বাস ফেলছি আজো
হয়তো কিছু প্রত্যাশায়

এখন আমার দু- হাত যা জড়াবে
তাকে ধরে রাখবো কোথায়
আমি আজও ঈশ্বর দেখিনি
খোঁজ করিনি কোনো উপরওয়ালার
তবু দেখেছি মানুষের ধর্মের নৃসংশতা
ভেবেছি কিভাবে পালাবো
তুমি যেখানে আছো লুকিয়ে
সেখানে গিয়েই লোকাবো

এখন আর শেষবার একবার বাঁচতে চাও
সবকিছু ভুলে সবাইকে বাদ দিয়ে
নিজের ভিতরের আমিকে খুঁজে নাও
বৃষ্টির জলে ভেজে শরীর মুছবো না
চোখ ঢাকবো কালো চশমায়
আজও ফেরিওয়ালা হেঁকে যায়
ফেলে দেওয়া কোনো জিনিষের আশায়
বালিশ জানে চোখের নোনতা
মনের খবর কেউ রাখে না

এটাই শেষবার, আর সুযোগ নেই
কিবোর্ডের বোতাম টেপার গরজ শেষ
তুমি ছিলে আমার মতন আনকড়া
গানের সুরে সাজানো মহড়া
নীল রংটা খুব প্রিয় জানতাম
সব উপহার নীলেই মিশতাম
তবুও রাখতে পারিনি আটকে
হারিয়ে যাওয়া বহু সময়
মুখ ফিরে তাকায়

সম্পর্ক বোঝার চেষ্টায়,ক্লান্ত শরীর ক্লান্ত মন
সিঁড়ি ভাঙার অঙ্কে আজো ভুল করি
হাতে রাখা সংখ্যা হাতেই রেখে দি
তোমাকে যদি বন্ধুই ভাবি,তবু আছে স্বার্থ
আকাশ বলে, আমি তোমার খারাপ থাকার কারণ
যে জানলায় দাঁড়াতে,তাতে আজও রোদ আসে
বৃষ্টির জল ঢোকে ঘরে. আমি দেখি
আমার মুখ থেকে ঝরে পরে কথা
শোনার জন্য কোনো পাখি এসে বসে

কবে থেকে ভাবি চলে যাবো
বহু দূরে শহর ছেড়ে
তত এগিয়ে আসো কাছে
কষ্ট বিঁধিয়ে দাও বুকে
যতবার কবিতার কাছে আসি
ততবার ভালোবাসা শুখে নি নাখে
দিক ভুল হয়ে যায় অচেনা লাগে
অক্ষত কথাগুলো টেনে নিয়ে চলে

ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে চলার শুন্যতা
আমাকে ডেকে নিয়ে যায়
মাথার ওপর থাকা অপরাধবোধ
ভুল করে বাড়ি ফিরিয়ে আনে

নৌকাসমগ্র : শুভঙ্কর দাস



কবির ভেতর থেকে নৌকা বেরিয়ে ভেসে যায় জলে,নাকি নৌকার ভেতর থেকে কবি বেরিয়ে এসে হেঁটে চলে যায় পাড়ে!
মাঝখানে জিরাফের মতো মুখ বাড়ানো সন্ন্যাসীগাছের ছায়ায় নৌকা দুলছে,কবিও।

পাড়ের দিকে চাও,প্রথমে গুহা,পাথুরে পথ,আর একটু এগোলেই গরুর খুরের ধুলো,আর একটু গেলেই নিকানো উঠোন,তুলসিতলা,হলুদরঙা শাড়ি

জলের দিকে চাও,প্রথমে ঢালু এবড়ো-খেবড়ো আহ্বান,তৃষ্ণা নিবারণের ধ্বনিগুণ, অভিযানের অলৌকিক হাতছানি আর এক দিগন্তরঙিনগভীরতা

নৌকার যাত্রা শুরু জলে আর পাড়ে,পাড়ে আর জলে।অতলে,অশোকে এবং অবিরাম মুক্তির বন্ধনে

এই নোঙরে চুম্বন করে,এই ডুবে যায় সুদীর্ঘ স্রোতের মধ্যিখানে,এই পাথরে খোদাই করে আকাশ,এই আদি তরলে খুঁজে ফেরে মনতরঙ্গের আয়না

ক্লান্তি পাথরের মতো জমাট বাঁধে,ঈর্ষা মরা শামুকখোলের মতো ধারালো,দুঃখ শুকিয়ে যাওয়া জলের দাগের মতো অসহায়

শুধু মহাকালের একটি চোখ সময়ের চশমা পরে দেখে,সুদীর্ঘ রক্ত-মাংসের ছায়ার নিচে

একটি নৌকা একা দুলছে,কবিও।

ইচ্ছে :প্রসেনজিৎ(বাপ্পা)

চেয়েছিলাম,  ছুঁয়ে দেখব তোমায়
কোন এক কাক ভেজা ভোরে।
ছুটেছি চড়াই উতরাই বেয়ে।
চলে গেছ তুমি, দিয়ে মোরে ফাঁকি!
ভেবেছিলাম, মেখে নেব রঙ
যা ছুঁয়ে যায় তোমায়, গোধূলি বেলায় কিংবা চাঁদের রাতে।
রঙতো নয়, পেলাম ধূম্রশীতলতা!
বুঝিনি সেদিন, কার পথও চেয়ে
ছুটেছি নিতি!
আলেয়া তুমি, না মরীচিকা!
তবুও এপরানে আজও  রয়েছে তুমি
ও মেঘ বালিকা, মোর মেঘ বালিকা।
পেরিয়েছি আজ অনেক সময়
মেপে ঘড়ির কাঁটা।
গড়িয়েছে অনেক জল
সপ্তসিন্ধু পারে।
তোমায় আজ দেখি জান
দূর থেকে, চলে যাও তুমি!
খুলে রাখি, জানালা তবু
যদি আস তুমি
পথ ভুল করে,  কিংবা
কালচক্রের উল্টো পথে হেঁটে!!!

বাঁচতে চাই আমি :তপন কুমার মাজি



পুড়তে চাই না আমি বৃষ্টিহীন
বাসন্তী আগুনে,
ভিজতে চাই আমি বাসন্তীহীন
চিরবৃষ্টির ফাগুনে !

পাতার আচ্ছাদন নেই যে গাছে,
নেই সবুজের ভরাট-
থাকুক যতই তার ফুলের বাহার
কিংবা রক্তিম ললাট,

আমি চাই না রাঙতে সেই রঙে...
চাই না মৃত্যু পলাশীর যুদ্ধে,
বাঁচতে চাই আমি আম্রকাননে
হাজার মুকুলের গন্ধে !


অসমরেখ :সামসুল হক



জীবনের প্রত্যেকটা বাঁক ঘুরে ঘুরে
 এক একটা যাপন ঘর
সুখের পরোয়া করিনি কোন দিন
আজও করি না
জীবন আমার নিজের ভালোলাগা, 
 হিংসাহীন হালকা চালে নিজেকে ফিরে দেখা ।

হে মহাজীবন, চলেছি তোমার দেখানো পথে ...
মিথ্যা আর হিংসার শরক্ষেপ
রক্তাক্ত হই রাত্রি-দিন,
গ্রহণ চলছে সভ্যতার হৃৎপিণ্ডে
ছায়াহীন-কায়াহীন-মায়াহীন
ধূ-ধূ ঊষর মানব-জমিন ।

আজীবন তৃষ্ণা বেড়ে চলে
মরনেও নাই সুখ
সরলরেখা ভুলে সবাই বিন্দুতে দেখে মুখ ।
           

চাঁদের দিকে চেয়ে : অনিন্দ্য পাল


চাঁদের দিকে হাঁটতে হাঁটতে কখন
পেরিয়ে এসেছি পিচ রাস্তার মোড়
ঝিঁঝিঁ ডাকা আগাছার ঝোপ
আর বৈদ্যুতিক আনন্দ
চোখ নামিয়ে অস্তিত্ব বুঝলাম যখন
চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখি তারপর
আমার দিকে চেয়ে আছে যেন এক আফ্রিকান মেয়ের
চওড়া কপালে হলুদ কাদার টিপ
আমি চোখ নামিয়ে নিয়ে ফিরে যেতে যেতে বললাম
তোমাকে যখন প্রথম দেখি
তখন তুমি শিউলির হাঁসুয়ার মত ধারালো ছিলে
আমি তাইতো আসছিলাম
রাত পেরিয়ে
নিজেকে সঁপে দেবো বলে।

কল্পনার শেষ নেই : মান্নুজা খাতুন (মালা)





ধরে নাও!  একই পথের সারথি হবো দুজনে,

এক পা দু পা ফেলে এগিয়ে যাব গঙ্গার পাড় বেয়ে

মুগ্ধ দু নয়নে দেখব সন্ধ্যার প্রথম সাজ; তারপর!

ধীরে ধীরে পালটে যাবে শহরটা, গাঢ় হয়ে আসবে অন্ধকার।

গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাব বড় রাস্তার পাড় বেয়ে

বড় জোর স্টেশন অবধি যাব,  ল্যাম্পপোস্টের নীচে বসে

ধূমায়িত চায়ে চুমুক দেব;

তারপর!

স্টেশনে এসে ভীড়বে সন্ধ্যার প্রথম ট্রেন

দুরের বেঞ্চে বসে প্ল্যাটফর্মের অপর প্রান্ত থেকে

যাত্রীদের ঘরে ফেরা দেখব; স্টেশন শুন্য হয়ে এলে

আকাশের পানে চেয়ে নক্ষত্র ও তারাদের

লুকোচুরি খেলা দেখব!

তারপর! নির্লিপ্ত পায়ে এগিয়ে যাব বাসস্ট্যান্ডের  দিকে

চার পয়সায় টিকিট কেটে ফিরব গৃহের পথে;

গন্তব্যস্থলে পৌচ্ছে জানাব দিনের শেষ সম্ভাষন।

এ সব কি মন্দ দেখাবে অনুপম?       

    

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। নয় ।।

মানুষের পয়সা হলে কতরকম ভাবে মানুষ তার ব্যবহার করে।শিল্পী সুনীল দাসের কথা মনে পড়ে যায়। একদিন তাঁর চেতলার স্টুডিওতে বসে গল্প করছি। হঠাৎ সুনীলদা বলে উঠলেন, "জানো, আমার কিন্তু এখন অনেক পয়সা হয়েছে।" হঠাৎ এরকম একটা কথার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তাই কথাটা শুনেই আমি হেসে উঠলাম। উনি বলে চললেন ----- চারপাশ থেকে যদি আমার কানে আসে কেউ পড়াশোনা করতে পারছে না, সঙ্গে সঙ্গে আমি তাকে ডেকে পাঠাই। তারপর তার অসুবিধার কথা শুনে আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। টিভিতে যদি শুনতে পাই একটা ছাত্র তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করতে পারছে না। আমি টিভি অফিসে ফোন করে তার পরিচয়টা জেনে নিই।" সুনীলদা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু তাঁর কথাগুলো আজও মনের মধ্যে জ্বল জ্বল করছে। সমাজের নিঃস্ব মানুষগুলোর জন্যে সুনীলদার মতো মানুষের যেন আরও পয়সা হয়।



।। দশ ।।

সেই কোন ছোটবেলা থেকে আমার মনে একটা প্রশ্ন খুব উঁকি দিত। একজন শিল্পী একটা ছবি কতদিন ধরে আঁকেন? এর উত্তর আমি নিজেও জানি। তাহলে প্রশ্ন করছি কেন? করছি এই কারণে যে আমি এই প্রশ্নের চিরাচরিত উত্তরের অতিরিক্ত কিছু শুনতে চাইছি। শিল্পীদের সঙ্গে আমার যখন ওঠা বসা শুরু হল তখন একদিন শানু লাহিড়ীকে এই প্রশ্ন করলাম। উনি বললেন, "অদ্ভুত প্রশ্ন তো! দেখো একটা ছবি আঁকতে অনেক সময় লাগে। বিভিন্ন জনের কাছে সেই সময় বিভিন্ন হয়। তবে আমারটা আমি বলতে পারি, আমি একটা ছবি তিনমাসে আঁকলেও, আসলে ওই ছবিটা আঁকতে আমার লেগেছে আসলে মাত্র তিন মিনিট। কারণ ওই সময়টুকুতে আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আর ওইসময় আমার হাত দিয়ে যা বেরিয়েছে সেগুলোই আগামী দিনে চিত্রমোদী দর্শকেরা আলোচনা করবে।" সত্যিই সৃষ্টির মধ্যে কতই না রহস্য আছে। য়ত শুনি ততই অবাক হয়ে যাই।


(ক্রমশ...)

শেষ অধ্যায় : রাণা চ্যাটার্জী


  সুদূরে ,কাশ্মীরে সংশয়
 কথা রোজ,দূরত্ব বাধা নয়,
 কল্পনায় ছুঁয়ে হই মায়াময়,
 অনুভবে বাঁচত এ হৃদয়।

  তুমি নেই হঠাৎই এ দেহ 
    রক্তাক্ত হামলা সন্দেহ!
 মালা ঢাকা কফিনে শ্রদ্ধায়, 
 অসহায় মৃত্যু,শেষ অধ্যায়!

তবু থাকি কষ্টেই নীরবে,
 তব অস্তিত্বেই বুক গর্বে,
 নেই মৃত্যু,যেন শহীদের,
গর্জে মুঠো হাত আমাদের।

দিকে দিকে সন্ত্রাস,হামলাও,
আর নয়,পিছুহটা সামলাও।

আয় তর্জনি : মাধব মণ্ডল



এ্যাতো বারবার বাতাস কাটছে তর্জনি
এবার কি লক্ষ্য আমার চোখ কোটর?

আয় তর্জনি যুদ্ধ  করি
নিদেনপক্ষে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি

ক'বার আর প্রাণটা যাবে?
ক'বার আর মুন্ডু বেচবি হাটে?

নোবেল খাবি নোবেল পরবি?
তাজা রক্ত চিবিয়ে চিবিয়ে খাস!

নির্বাচন :অনিন্দ্য পাল


ভালোবাসা অথবা নরম মিষ্টি পায়েস
আসলে ঘৃণার হিউমাস থেকে জন্মে ওঠা
একরোখা শাসন

কাঁধের ঝোলা ব্যাগে বইতে হয় শুধু
জমাখরচের ইস্তাহার

উপুড়হস্ত ঢেলে দেয় সুখ
আসলে ছদ্মবেশ
সব মহড়া ঘটে চলে বোবা ক্যামেরার
নিস্তেজ চোখের সামনে

মহোৎসব আসে, যায়
স্বপ্ন ও...
তারপর শেষ বিকেলে ছাপা হয়
সম্মান লুঠ
বা
আরও একজন মা বেচে দিয়ে যায়
কোলের সন্তান।

চোখ :পীযূষ গায়েন



প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তোমায়
সেদিন থেকেই চোখ ফেরানো বারন,
ক্লাসের সাথে ফুরিয়ে গেলে সময়
সারাটা দিন মন কেমনের কারন।

আমি তো বরাবরের মতোই
চোখে চোখ পরলে লুকাই খানিক,
আজ তোমাকে দেখছি আমি যত
আড়চোখে তা দেখতে সেটাও যানি।

এরপর চোখে চোখেই কথা
ইশারায় বুঝিয়ে দিতে সবি,
চোখ ঠেলে বলে যেতে রোজ
সাবধানে রাস্তা পার হবি।

তুমি ওই কাজল দিলে চোখে
আমি তো হারিয়ে যেতাম রোজ,
কেনো এক ক্লাস পালানোর ঝোঁকে
একই সাথে দুই মানুষে নিখোঁজ।

এভাবেই কাটলো বছর খানেক
দু-চোখে নেই তো চাওয়া পাওয়া,
হঠাৎ এক নতুন বাউল গানে
পৌষে কালবোশেখি হাওয়া।

ক্রমশ চোখের কোনে জল
ভালবাসা ঝরছে দু-চোখ থেকে,
অজথা মিথ্যে কথার ঢল
রাতোরাত চোখে চোখ রেখেই।

এভাবেই হারিয়ে গেল প্লাবন
দুচোখে শান্ত জোয়ার ভাঁটা,
কোনো এক মনখারাপের ফোন,
 দুটো গিঁটে ঝুললো আড়কাটা।

সকালে নিথর একটা শরীর
সাদা থান নিজেই পরে নিলো
সব শেষ,গলায় চাপা দরী
তখনও চোখটা খোলা ছিল!!

মিথ্যে ভালোবাসা: রূপম অধিকারী



কাটিয়ে দিলাম অনেক গুলো দিন

মনে কি পরে আজ আমাকে ?

চুকে গেছে প্রেমের সব ঋণ

চিঠি রাখা আছে বইয়ের ফাঁকে

তোমার ছড়িয়ে দেওয়া ব্যাথা

মনে জমাট অভিমান

ধুলো পড়া কত কথা

লেখা প্রেমের সংবিধান



ভেবেছিলাম অনেক কিছুই হবে

হয়নি কিছুই অবশেষে

রাত আজ স্লিপিং পিলেই কাটে

ভুল করেছি মিথ্যে ভালোবেসে

কি বা আছে আমার ?

কোনোই বা ভালোবাসবে আমায়

ভালোবাসা ছাড়া আমি

কি বা দিতে পারি তোমায় ?

ভালো লাগে ভালোবাসতে

তোমার কথা মনে করতে

রঙ্গিন ছিল পুরোনো দিন গুলোই

ভরা ছিলো টুকরো স্মৃতিতে

আজও মনে হয় খুব

ছুটে ই সেইসব খেয়ালে

ভালোবাসা জাহির করে লেখা

থাকতো ফেসবুকের ওয়ালে

শরীরে প্রাণ নেই আর

বেঁচে আছি ভাবনায়

নিশ্বাস-প্রস্বাস সবই অবাঞ্ছিত

মনে পরে তোমার মুখটায়



মাঝ রাতে পাশ ফিরে শুয়ে

হাত খোঁজে তোমার শরীর

স্বপ্ন গুলো খায় কুঁরে কুঁরে

শাস্তিকি হয় খুনি- অপরাধীর

রাস্তায় হটাৎ যখন দেখি

মনে হয় ভালো আছো তুমি

দুঃখ- কষ্ট যা দিয়েছো সবই

সারা গায়ে মেখে নিয়েছি আমি

ভালোবেসে ফেললে পরে তখন

খারাপ বাসা কি যায় আর ?

তোমার কাছে মরে গেছি যখন

ভালোবেসে শহীদ হয়েছিলাম সেবার

হুমের বায়না: জামান আহম্মেদ ইমন



হুমের বায়না মায়ের কাছে
যাবে নানীর বাড়ি,
আম কুড়াঁবে ঝরের দিনে
দিবে যমুনা পাড়ি।

হুমের চড়ার অনেক ইচ্ছা 
রেলগাড়ী নৌকায়, 
নতুন জামা কাপড় নিবে
চামড়া জুতা চায়।

হুমের কাছে বাবা প্রিয় 
আরো প্রিয় মা,
বড় বোন হুরায়রা আক্তার
নাইরে তুলনা। 

হুমের পড়াশোনায় ভীষণ মন
বইগুলো হয় সঙী,
হুমের চোখে ঘুম আসিলেও
ধরেনা কোনো ভঙী।

হঠাৎ দেখা :মান্নুজা খাতুন




দেখেছ! সময়ের খেয়া স্রোত কিভাবে মিলিয়ে দিল আমাদের

ক্ষনিকের জন্য কি ভাবে এক করে দিল তোমার-আমার দৃস্টি

কেমন একটা অজান্তেই দেখা দিল আমাদের ঠোঁটে একটা লাজুক হাসি।

সত্যি কি তুমি জানতে? আজ এমনটা হবে 

যে পথে দেখা হল সে পথ তো তোমার নয় প্রিয়!

তুমি কি পথ ভুলে এসেছ আজ এই পথে?

নইলে  এই পথে আজই বা কেমন করে এলে?

প্রিয়!

তুমি প্রশ্ন করেছ আমায়; একি স্বপ্ন নাকি বাস্তব?

নাহ! প্রিয় বিস্মিত হও তুমি, এ স্বপ্ন নয় এ যে বাস্তুব সত্য।

দিনের আলোয় যা দেখেছ সে তো স্বপ্ন হয় না প্রিয়।


যদিও তোমাতে আমাতে হয় নি কথা

তবুও জেনে গেলাম অনেক কিছু, জেনে গেলাম তোমাকেও

তোমার ওই একটুকরো হাসি দেখে।



আচ্ছা প্রিয়!

আমরা কি কখনো পাশাপাশি বসে দেবদারু কিংবা বটগাছের চাতালে বসে গল্প করব না?

তোমাতে আমাতে কি এই ভাবেই দূরত্ব রয়ে যাবে।


তবে যাই বলো না প্রিয়;

তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি

তুমি না বাসতেও পারো,তাতে আহত হবো না।

বরং তোমাকে নিয়ে দেখব হাজার হাজার স্বপ্ন

যে স্বপ্নে থাকবে তুমি থাকবে আমার ভালোবাসা।

ভালোবাসার নিকোটিন : সৌজন‍্য ভট্টাচার্য্য

হৃদয়ের বৈঠকখানায় জমেনা মজলিস
প্রেম বড়ো বেরসিক হয়ে গেছে,
প্রনয়ের প্রস্তাব গুটি পাকায় না গোলাপের ঠোঁটে
কেননা কামুক অস্থি মজ্জায় জং ধরেছে।
ভ্রমরের সুরে ছন্দপতন ঘটছে বারবার
ডানার ঝাপটা শোনাই শুধুই শঙ্কিত আওয়াজ,
শতদলের সোহাগ রেনু অপেক্ষায় প্রহর গোনে
তার উদগ্রীব আকুতির নেই কোনো লাজ।
ক্ষুধার্ত যৌবন হাতড়ে বেড়ায় ঋণ
নতুন স্বপ্ন তার কাছে যে আলেয়া,
মনের কোনটা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন
দাগা দিয়ে গেছে (পুরানো) আদরের নিকোটিন।।
          

ঝোড়া-তালি :তনয় চৌধুরী



ছোট একটা ল্যম্পশেড
গল্প করছে মাঝরাত
এসব কথায় একঝাক
মনের গ্রামে হিংসে।

ক্রসফায়ারের তুমি টাই
সমস্ত রাত জেগেছো
মোমের রঙের রিংটোন
আমার হাতে পুড়ছে।

একফালি ঘুম। ছিমছাম
বাড়ির সামনে ঘুরঘুর
তোমার কোন নাম নেই
মন ও অবুঝ। খুব জেদ।

আদেখলা সব অ্যটিটিউড
চোখ ভিজিয়ে নির্ভীক
তোমার মতো দিব্যি
কাছে টেনেছে ল্যাপটপ।

কী যে ভাবছো। মুখভার
অ্যসট্রে জুড়ে ধোয়া-সা
ঠিকুজি তোমার বানানো
রেখায় কলম। উত্তাপ।

সমাধিরা রাত জেগে কিছু কথা নিয়ে পাসলড্। অনুতপ্ত। চিন্তিত।


শেষ যাত্রা : মোঃ মিজানুর রহমান



চারিদিক মেঘে ঢাকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি
তাকিয়ে দেখি আমি কোনো এক
বিশাল উচ্চতার দালানের অচেনা
শতশত মানুষের ভিড়ে শুয়ে আছি।
ভাবলাম আমি কি স্বপ্ন দেখছি!
কেমন জানি ভয় ভয় লাগলো
খানিক বাদে আমার কানে ভেসে এলো
জৈনিক এক লোকের কন্ঠ।
বুঝতে পারলাম আমি-
জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কেলেজের
তৃতীয় তলার কোনো এক বেডে শুয়ে আছি।
আমার মাথার কাছে বসা
সবচেয়ে আপনজন
আমার ভালোবাসা সারা জীবনের সঙ্গী
ডান পাশে বসা আমার অতি আদরের
তনয় তনয়া
যাক একটু স্বস্তি পেলাম।
সবার মুখ মলিন হয়ে আছে
সবাইকে আমি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কেনো জানি আজ আমার কোনো কথাই ওদের কানে পৌছে না
আমি একটু অভিমান করলাম।
গা কেমন জানি ব্যথায় জ্বলে যাচ্ছে
কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চারপাশে
লোকজন জড়ো হতে লাগলো।
ওমা ওরা আমাকে এভাবে দেখছে কেনো?
ও আল্লাহ্ কেউ আমার কথা শুনছেনা কেন?
হায় আল্লাহ্ লাশের গাড়ি আসলো কেনো?
কে জানে কার কি হয়েছে।
একটু পরেই তিন চারজন আমাকে আলগা করে তিন তলা থেকে নামাতে
শুরু করলো।
আমার সারা শরীরে ব্যথা
আমি চিৎকার করে বলতে থাকলাম
আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও
আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছি না
আমি মরে গেলাম
আমার বউ ছেলে মেয়েদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না।
আমি নিরুপায়।

মিনিট পাঁচেক পর আমাকে লাশের গাড়িতে উঠানো হলো
আমি ভয় পেয়ে গেলাম
ভাবলাম আমাকে এ গাড়িতে তুলছে কেনো?
আমি সারা জীবন যাকে আগলে রাখলাম
সেই অর্ধাঙ্গীনী আমার কথা শুনছেনা
এতো আদর যত্নে যে সন্তানদে বড় করে তুললাম তারা আমার সাথে এমন করছে।
কথা শুনেও না বুঝার ভান করছে
যাক যখন আমার কথা কেউ শুনবে না
আমার শরীরে যতই ব্যথা হোক ওদের আর বলবো না দেখি কি হয়।
কয়েক ঘন্টা পর আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হলো।
বাড়ির লোক পাড়াপড়শির সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো।
হঠাৎ মা এসে আমার মুখের কাছে মুখ করে অঝরে মায়ের চোখের পানি ঝরছে
আর চিৎকার করে বলছে
খোকা ও খোকা সোনা মানিক আমার
ঘুমিয়ে আছিস ওঠো বাবা আমার
আমি মা বলছি ওঠো যাদু আমার
আমার কলিজা ছিড়া ধন
চল তোকে নতুন কলম কিনে দিবো
তুই না কবিতা লিখতে পছন্দ করিস
একটা ডাইরীও কিনে দিব বাপ
মাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবি না খোকা।
আমি মাকে বললাম মা ওমা
লিখবো তো তোমার জন্য একটা কেনো হাজারো কবিতা হৃদয়ে জমা।
আজ আমার কথা মা শুনতে পাচ্ছেনা
কেনো?
দেখলাম আমার মমতাময়ী মা জ্ঞান
হারিয়ে আমার বুকের উপর শুয়ে পড়লো।
আমি চিৎকার করে উঠলাম ওমা গো
আস্তে আমাকে ধরো সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা।
একটু পরেই আমাকে সবাই আলগা করে ধরে উঠানের পূর্ব কোণে নিম গাছের নিচে
একটা চৌকির উপর কলা গাছ বিছানো
তার উপর আমাক শুইয়ে দিলো।
ও মাগো মরে গেলাম পিঠে কি অসহ্য ব্যথা।
এমন খোলা আকাশের নিচে আমাকে শুয়াতে পারলো।
যেখানে আমি নতুন পরিষ্কার মশাড়ি ছাড়া ঘুমাইনি আজ আমাকে ওরা একটা জীর্ণ মশাড়ির নিচে শুইয়ে দিলো।
যাক হয়তো মশার কামড়ানি খেতে হবে না।
 এরপর যা শুরু হলো আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
কয়েকজন আমার শরীর থেকে সমস্ত পোশাক খুলে ফেলল আমি লজ্জানত হয়ে গেলাম এরা
করে কি আমার সাথে?
ভাবলাম কিছু একটা না বললে চলবে না
কিন্তু কি করার ওরাও আমাকে পাত্তা দিলোনা।
স্বস্তি এতটুকুই ওরা আমার লজ্জাস্থান ঢেকে দিল।
এবার আমার শরীরে গরম জল ঢেলে দেওয়া হলো আমি সইতে পারিনা
কইতে পারিনা।
কি সব পাতা ভিজানো গরম জলে
আমাকে কসকো সাবান ঘসা হচ্ছে।
মনে হচ্ছে আমার গায়ের সব চামড়া তুলে ফেলবে।
গোসল সেরে আমাকে পাঁচ টুকরো সাদা
কাপড় পরিয়ে দিলো।
আমি মনে মনে কষ্ট পেলাম সারা জীবন কতো দেশি-বিদেশী নামি দামি ব্রান্ডের কাপড় পরলাম আর আজ শুধু পাঁচ টুকরো সাদা কাপড়?
আমি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম
কিন্তু লাভ হলোনা।
কেউ আমার কথা শুনার প্রয়োজন মনে করলো না।
এতদিন যারা আমার কথায় উঠবস করতো তারা আজ কেউ আমার কথা রাখেনা আমি নিরুপায় দেখে যাওয়া ছাড়া
কিছুই করার নেই।
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে আসলো
বাড়ির পাশে মাদ্রাসা মাঠে হাজারো মানুষের সামনে আমাকে রাখা হলো
একটা চারপাওয়ালা খাটে।
সবাইকে দেখছি কিন্তু আমার মা-বাবা কই
আমার সহধর্মীনী কই।
আমার অতি আদরের মা-মনি কোথায়?
আমার বাড়ির সবাই কই।
এ সাদা কাপড়ের ভিতর আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।
ও আল্লাহ সবাই আমার সাথে এমন করতেছে কেনো।
যাক এইতো আমার আদরের মানিক গুলো
আমার কাছে আসতেছে।
ওরা সবাই আমাকে খাটে করে সামনে যেতে আমি খুশিতে আটখানা হয়ে গেলাম।
মনে মনে ভাবলাম যাক আমাকে ওরা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
এবার শান্তিতে ঘুমোতে পারবো।
কিন্তু মিনিট দুয়েক পরে আমাকে গোরস্থানের পাশে খোড়া একটা কবরের পাশ রাখা হলো।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম আমাকে এখানে আনা হলো কেন?
আশপাশে হাওমাও কান্নাকাটিতে
আমি চমকে যাই।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম সবাই আমাকে খাট থেকে নামাচ্ছে আর আমার অতি আদরের দুজন সন্তান কবরের দুইপ্রান্তে নামলে আমি চিৎকার মেরে কেঁদে ফেলি
বাবা সোনা মানি আমার ওখানে নামিস না
ওখানে তো মরা লাশ থাকে
ওখানে থাকতে অনেক কষ্ট হয় বাবা তোরা উঠে আয়।
আয় আমার বুকে আয়
তোদের গালে আমি চুমো খাব
আয় বাবা উঠে আয়।
হায় আল্লাহ মাবুদ এতো দেখি ওদের সাথে আমাকেও করবে নামিয়ে দিলো।
যাক তবুও ভালো হলো আমার মানিকদের আর ভয় নেই।
আমি বাবা ওদের সাথে আছি।
বড় ছেলে আমার মুখের মোড়া খুলে
মুখের কাপড় সরালে একটু সস্তি পেলাম।
পাশে কেউ নেই ওদের দুজনকে দেখে গায়ের ব্যথা মনের কষ্ট সব ভুলে গেলাম।
কিন্তু একি আমার এতো ভয় লাগছে কেন?
ও মানিক ধন তোরা আমাকে এ অন্ধকারে একা রেখে কই গেলি বাবা।
একি পাশে কেউ নেই ?
মা ওমা বাবা গো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আল্লাহ গো ওরা সবাই আমার সাথে এমন করছে কেন
আমাকে ওরা বাঁশ চাটাই দিয়ে ঢেকে দিলো কেন?
তাহলে কি ভাবনা নয় এটাই চরম সত্য
আমি আর পৃথিবীর সদস্য নই
এটাই আমার শেষ যাত্রা।
ওমা তুমি কই ও বাবা গো
 ও আল্লাহ মাবুদ সহায় হোন।
দুনিয়ার সবাই তোমরা এমন স্বার্থপর।
কি না করেছি তোমাদের জন্য
আর আমাকে পাঁচ টুকরো সাদা কাপড় সাড়ে তিন হাত মাটি কয়েক টুকরো বাঁশ
আর কয়েক ফোঁটা আতর গোলাপের ছিটা ব্যাশ এ হলো আমার জীবনের পরম
পাওয়া।

বিজয়: জয়ীতা চ্যাটার্জী



উদিসীনতা, ও আমার পাথর চাপা দুখ।
বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়েছে আজ,
এগিয়ে যাওয়ার নেশা চেপেছে,
পায়ের পাতায় ফুটছে, আজ রক্ত কাঁটা সুখ।

বড়ো  সাধ চেপেছে মনে মনে চাইছে গৃহ কোন।
যারা রঙ তুলিতে ইতিহাস আঁকে,
তাদের তো দুঃখ নেই ছিন্ন পোশাকের,
জীবন জোড়া না পাওয়া আর তাতেই উপশম।

উদাসীনতা, ও আমার বড়ো শান্তির আপন গাছের তলা।
এবার যে তোর তেষ্টা পাবে, ভেতর জুড়ে
গুলিয়ে উঠবে চাবির শোক, স্পর্শের সৌজন্যে
 পুড়ে যাবে কথা, নিঃশ্বাসে থেকে যাবে সমস্ত না বলা।

আমার বই এর পাতা হলুদ হয়েছে, তাকে বুকে নিয়ে ফিরতে  হবে দিগন্ত থেকে ও কিছু দূরে। পলাশের বন, দীঘির কোনের সামনে দিয়ে যাব, আসন ছেড়ে না ,
সেই অসংখ্য অধ্যায়দের ইচ্ছে করে ভুলে।।

দেউলিয়া নদীর পাশে আমার ঘর : মহঃ রাফিউল আলম



       
তোর আকাশে এখন
অনেক তারা---কিংবা তোকে ঘিরে
        পঞ্চহ্রদ
   আমার আকাশ শূন্য আজ
আমি দেউলিয়া নগরীর রাজকুমার।
         

           
তোর চোখের প্রত্যেক ফোঁটা
   অশ্রুবিন্দুকে জিজ্ঞেস কর----
কতটা ব্যাথা পেলে তারা বাইরে আসে?
তোর নষ্ট রাতকে জিজ্ঞেস কর
   কেন তারা অকারণ রাত জাগে?

যতটা ব্যাথা তুই পেয়েছিস---
বিপরীত প্রান্তে থাকা মানুষটির
নিকোটিনে পোড়া ঠোঁটকে একবার জিজ্ঞেস করলে
বুঝতে পারতিস----তার আগে
কতবার সে নিজেকে পুড়িয়েছে?

অনন্যা :শ্যামল কুমার রায়



                      তুমি অনন্যা!
     তোমার সাথে অন্য কারোর তুলনা হয় না।
   সবাই যখন আঘাত করে পুলকিত হয়-
   তুমি তখন আঘাত করেও বেদনাহত হও!
   সবাই যখন চলার পথে অঘটনই চায়-
তুমি তখন ফেরার পথে অপেক্ষাতেই রও।
     সবাই যখন উন্নতিতে চরম ঈর্ষান্বিত
    তুমি তখন বিপদ ভেবে সদা শঙ্কিত ।
  সবাই যখন গুছিয়ে নিতে সদা তৎপর
তুমি তখন সাজিয়ে দিতে ভুলেছো আপন পর।
ব্যবহার করে বাগিয়ে নিতে ধান্দাবাজের ভিড়
  তুমি তখন তফাত বাড়াতে ভীষণ অস্থির।
  সবাই যখন ঝামেলা করে বেশ ফুরফুরে
তোমার কেন ঝামেলা করে আঁখি জল ভরে ?
       সবাই যখন তোষামোদে শশব্যস্ত
  তুমি তখন ভুল ধরতে করো না ইতস্তত।
 তুমি যখন অভিমানী , কও না কোনো কথা,
  শুধু তোমার মান ভাঙাতেই থাকে কারকতা।
তোমার মত দ্বিতীয় কেউ খুঁজে পাওয়া ভার!
    অনন্যা থাকতে আর কিসের দরকার?
         

সত্য : হেমন্ত সরখেল





না।
কিছু পেতে আসিনি। দিতেও না। সবটাই আজকাল বিস্বাদ। আলুনি। অম্বুবাচী ক্ষণ।
নেই আশা। সূর্যালোক।
অদেখা রয়েছে অবিনাশী। কে দেখেছে তাকে? দেখতে হলে- অবিনাশী হতে হয়। তত্ত্ব, নিয়ম,অবধারণা- সময়ের হিসেবে পাল্টে যায়। অমর যে নয় সে কিভাবে দেবে বরাভয়?

জানি। এই লেখাও থাকবে না অনন্তকাল। থাকে না। সভ্যতা বদলে গেলে স্মৃতি ব্যাকডেটেড হয়। মুছতে মুছতে হারিয়ে যায়। হয়তো লরির চাকায়, ট্রেনের নীচে, ট্রাই-গ্লিসারাইডে, কর্কটে একদিন কেড়ে নেবে কলম। হা-হুতাশ কিছুক্ষণ, কিছু দিন-মাস-বছর-শতাব্দী-সহস্রাব্দ। তারপর? বোঝাতে এসো না। পারবে না। আপেক্ষিক যেখানে সব সেখানে নৈতিক আর অনৈতিক দুয়েরই এক রব।
               এটুকুতেই উপকৃত হবো। যদি না বলো- ভবঃ। আমি নেই- এটা মেনে, চলুক যাপন, আমিও আছি। চলে যাওয়াই সত্য। তাই ভেবো না, এখনও আমি আছি। কোনো পাখি, নদ, বিল, কোনো ঘাস, আগাছা, কোনো বাতাস, শব্দ, প্রেম ধরে রাখে না যেন আমায়- প্রিয় শুধু অস্তিত্বহীনতা। কার সাথে কেটে গেল সময়-সকাল, কোন্ প্রাচীরে রইল  স্বার্থ বেতাল, কতোদিন মনে রেখে দেবে? অতো সময় আছে কার? শুধু একটা ছবি, ক্রমক্ষয়িষ্ণু, মুছে যাক আজই, কেন বইবে সবটা আমার। মনে হচ্ছে- এবার সময় হয়েছে থামার।
                           

বিশ্বাসঘাতক : অনোজ ব্যানার্জী



   ‎

 ওরা মস্ত বড়ো কুখ্যাত ভিলেন,
 ‎তৃতীয় নয়নে ওদের হবে চিনে নিতে।
 ‎চিনতে যেন করোনা কখনো  ভুল।
 ‎সুন্দর, সুগন্ধি মনোলোভা ফুল সেজে,সেজে,,
 ‎প্রিয় আপন সেজে,বন্ধু সেজে,হিতাকাঙখী সেজে,,
 ওরা ‎আসবে তোমাদের,  আমাদের, কাছেকাছে। ওরা সংসার ভাঙে,ওরা সমাজ ভাঙে,,,
 ‎ওরা কখনো সাদা মুখে হাসে,কখনোবা থাকে রঙিন মুখোশে।ওরা সদাসর্বদাই রয়েছে আমাদেরই আশেপাশে। অর্থ, স্বার্থ, পদ, গদি, ক্ষমতার লোভে,,, ওরা,পবিত্র- মহান-বিশ্বাসের, কোমল দেহ-মন-আত্মাকে,পিছন থেকে করে ছুরিকাঘাত,। করে অমর্যাদা, অবলীলায়, অবিরত। কখনোবা সামনাসামনি। ওরা বোঝেনা আপন-পর।
ওরা বিশ্বাসের ঘাতক,,ওরা  বিশ্বাসঘাতক।
আদর্শবান বিশ্বাস, ধূলায় পড়ে লুটিয়ে,খায় গড়াগড়ি, যখন তখন।
এক আত্মার সঙ্গে অপর আত্মার জড়াজড়ি,
এক মনের সঙ্গে,অন্য মনের, মধুর সম্পর্কের মজবুত অক্ষয় সাঁকো ওরা ভেঙে ভেঙে করে চূড়মাড়, করে ছাড়খাড়।ওরা সমাজের শত্রু।
ওরা দশের শত্রু,ওরা দেশের শত্রু,ওরা শত্রু স্বর্গ মর্ত্য পাতালের।ওরা আছে যুগেযুগে,ওরা থাকবে যুগেযুগে।
ভয়ঙ্কর রাক্ষস, লংকার রাজা রাবণ, ভিখারির ছদ্মবেশ ধরে,,ভগবান রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাদেবীকে করেছিল অপহরণ।
মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় দুশো বছর ধরে,,ছিলাম আমরা পরাধীনতার কালো অন্ধকারে।
মীরজাফর,, রাবণ,, ওদের মৃত্যু নেই,
ওরা চারিপাশে, ঘিরেঘিরে রয়েছে আমাদের নিরন্তর,, ,, সাবধান!!!!

স্মৃতির দেয়ালে:তপন কুমার মাজি



         

গজাচ্ছে পাতা    আসছে কুঁড়ি
       ফুটছে ফুল বসন্তে,
খসছে পাতা    মরছে কুঁড়ি
       ঝরছে ফুল একান্তে!

মাখছে রং    সাজছে সঙ
      চলছে প্রেম চুটিয়ে,
তিরিক্ষি-তিন     খেলছে খেলা
    খেলছে হলি লুকিয়ে!

ঢোলে-ঢাকে    আসছে প্রেম
     উঠছে আবেগ উথলে,
ফাগুন শেষে     কাটছে ঘোর
    আসছে বিরহ না বলে!

ঘুরছে পৃথিবী     ঘুরছে ঋতু
    ঘুরছে মানুষ খেয়ালে,
পাচ্ছে ব্যথা      লিখছে গাথা
   গাঁথছে স্মৃতির দেয়ালে। 


অগ্রজ :শ্রাবনে শ্রাবনী




আগে জন্মালে...
নদীর কিনারে কিনারে হাঁটতুম, সভ্যতার মাদুলি না পড়েই

আগে জন্মালে...
গ্রহের হাট খুলে রাখতুম, পাথুরে প্রলাপেই

সলতে পাকাতুম, সেঁজুতি সাজাতুম
ভিনদেশী কোনও জাহাজে, পথভ্রষ্ট নাবিকের অপেক্ষায়

ধ্রুবতারা দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিতুম রাত
আকাশের নীচে পাতা বিছানায়

আগে জন্মালে, পাহাড় চিনতুম কিন্তু চাঁদে যেতুম না
জঙ্গল চিনতুম,তবু মঙ্গলে পা রাখতুম না
শিকার করতুম কিন্তু উটের পিঠে চেপে বর্ডার দেখতে যেতুম না...

আগে জন্মালে, অগ্রজ হতুম
দূরে কোনও অনাবিষ্কৃত দ্বীপে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতুম
সেন্টিনেলিজদের মতন পাতার পোশাক পড়ে, তবু ছেঁড়া ছেঁড়া এমন ব্র্যান্ডেড প্যান্টালুন পড়তুম না

আগে জন্মালে
পেতুম না কুইনাইন, ফিনাইল কিংবা জুভেনাইল অ্যাক্ট
তবু নিপাট বাঁচতুম কেরোসিন তেলে আগুন জ্বেলে জ্বেলে

আগে জন্মালে, বারকয়েক দেখে আসতুম ভেতো গলি, শুষ্ক মুখ আধপেটা মায়ের আর বাবার রুক্ষ পায়ের তলা

শহরের গলির অন্ধকারে, বিদেশী ফার্ণিচারে
এমন মুখ লুকাতুম না|

না বলা কথা :নাহার নাসরিন



 কি বলব কি লিখব কিছুই বুঝে পাই না
শুধু জানি কিছু তো ছিলো তোকে বলার।
এমন নই যে সময় হয়নি বলার
সময় অনেক ছিল শুধু পাইনি তোকে বলার।
যা ছিল না বলা আজও তা রয়ে গেল না বলাই।
অপেক্ষায় রয়েছি আমি হতভাগি
আশা নিয়ে বলে যাব তোকে সবই।
অবুঝ পাগল মন কেন বোঝে না
তোর কাছে সময় হবে না।
কেন মন বোঝে না তুই বড় ব্যস্ত
অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে আশস্ত ।
মন কেন বোঝে না
না বলা কথা চিরকাল না বলায় থেকে যাবে।
না বলা কথা খাতার পাতায়ও তার ভাষা পাবে না।।