ভাতের গন্ধ
*********
অনেক রাত্রি শেষে নবান্নের ভোরে
ছেলেটা তাকিয়ে দেখে
সবুজ ধানের শিষে ভাতফুল ফুটে আছে ।
আশ্চর্য ফুলের ঘ্রাণে ম ম করে
পৃথিবীর মাঠ ঘাট ।
ক্ষুধা ঋতু শেষ হল নাকি ?
বিস্ময়ে আনন্দে রোমকূপে কদম্বের ছোঁয়া ।
দুর্গা দালান জুড়ে সমারোহ , আলপনা ,
বসুধারা দেয়ালের গায়ে -
ঢেঁকিঘরে শালি ধান,
ঢিমে আঁচে ঘন হয় দুধ -
উনানের ধোঁয়া লেগে চোখে জল আসে ।
গরম ভাতের গন্ধ মনে করে নেশাগ্রস্ত মাতালের মত
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ঝিম চোখে ।
বোধনের ঢাকে কাঠি , নেত্রদান , কলা বৌ স্নান
আরতির ঘন্টা বাজে , অঞ্জলি শুরু হয় ।
অপূর্ব গন্ধ মাখা ছেলে মেয়ে
প্রতিমার মত মুখে প্রসাদের স্বাদ পায় ।
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ঝিম চোখে,
ভাতের গন্ধ শোঁকে , খিদে পায় ।
এবার সিঁদূর খেলা, ভাসানের বোল ওঠে ,
প্রতিমার মুখে মিঠাপান, সন্দেশের গুঁড়ো –
সন্ধ্যার বিজয়া বাতাসে আকুল ভাতের গন্ধ,
ছেলেটার খিদে পায়, রাগ হয়।
অসম্ভব, খুনে রাগ, রক্তমাখা আঙুলের নখে
আগুন ঝরানো রাগ ।
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ, পোড়া শব, বারুদের ঝাঁঝ,
পুলিশের ভারী বুট, সন্ধ্যার জ্ঞান গর্ভ আলোচনা ,
রাস্তায় নিয়মিত মোমবাতি ।
সবকিছু পার করে জেগে থাকে
নবান্নের ভোরে, অমিত ক্ষুধার ঋতু
উন্মাদ, ক্ষুধিত, ক্রুদ্ধ নগ্ন বালক এক,
চরাচর মেশামিশি বাতাসে ভাতের গন্ধ ।