নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অপরাজিতা (দুই):দেবব্রত সেন






হয়তো টিনের চালের বাড়ি,দোচালা চৌয়ারি ঘর দুটো ইংরেজি এল এর মতো গঠন। যদিও ঘর গুলো অনেক পুরোনো, তবুও মোটামুটি ভালোই আছে।  আর  ডিতটা সিমেন্টে পাকা করা, বাড়িটা শতকরা অঙ্কের হিসেব করলে পাঁচ  পৌনেপাঁচ কাঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। শহর লাগোয়া তিস্তা পাড়ের গ্রাম। বর্তমান বাড়িটার চেহারা গরীব গরীব বোঝালেও গাছগুলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা এরকম যে যেকোনো লোক বাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবে। আর গ্রামের বাড়ি গুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাই সাধারণত হয়ে থাকে।
পূজার মা শচীনকে বারান্দায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো বাবা, বসো। যা গরম পরেছে সহ্য করা যায় না বাবা। একটা টেবিল ফ্যান বের করে শচীনের কাছাকাছি রেখে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বলল, তুমি বাবা এখানে বিশ্রাম নাও আমি বরং ঠাকুর ঘরে ফুলজল দে আসি কেমন! 
-----ঠিক আছে মাসিমা। যাই বলুন মাসিমা প্রচন্ড রোদ্দুর পড়েছে, এই সময়টা বাইরে বেরোনোটা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
পুজার মা ঠাকুর ঘরে গেল, আকাশটা তখন চুপচাপ, শুধু গরম আর গরম!  এই সময় একটা হালকা বাতাস এল, মে জুন মাসে যেরকম লু নামের গরম বাতাস বয় ঠিক সেরকম ভাবে শীতল বাতাস এল, আকাশটা যে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলি হাওয়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল, দুচারটে পায়রা ডানা ঝাপটে আঙিনা থেকে টিনের চালে গিয়ে বসল, দুজোড়া পাশাপাশি!চোখ বিনিময় করছে এরকমটা বোঝাচ্ছে,   মনে হয় যেন তারাও যুগল প্রেম করছে। আর শচীন একা একা সেটা ভোগ করল,  সে ভাবছে ইস যদি আমার জীবনে কখনও  এমন সময় আসে খুব রোমান্স হবে।শচীনের ইচ্ছে হল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে চেয়ারটা নিয়ে বসি কিন্তু হল না, ততক্ষণে পূজার মা ঠাকুর ঘর থেকে বারান্দায় এল, শচীন একা বসে আছে।
বলল,  তো এখানে কোথায় এসছো ? আমি মাসিমা 
----হুম। 
......জানতেই পাচ্ছেন আমি সাংবাদিকতার মানুষ, খবর সংগ্রহে এখানে ওখানে যেতে হয়। জানো মাসিমা,  আপনাদের পাশে জমিদারপাড়ায় একটা নারী  নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তারই কিছু তথ্য সংগ্রহে এসেছি। তাড়াতাড়ি হয়েগেল তাই ভাবলাম একটু পূজার সঙ্গে দেখা করেই যাই।
-----না না  বাবা বেশ ভালো করেছো। পুজার মুখে তোমার সাংবাদিকতার কথা শুনেছি বাবা, তবে ......
এই বলে চুপ করল।
-----তবে কি মাসিমা? বলেন সংকোচন করবেন না।
আসলে কি, পূজা আর শচীনের মধ্যে যে প্রেম ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সেটা পূজার মা ভালো করেই আন্দাজ করেছিল, তাই বোধহয় তবে করেই থেমে গেল। আর মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়, এটা ছেলেখেলা নয়। আর যদি ভালোভাবে তাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তাহলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে,পূজার বাপটা বেচে থাকলে হয়তো তাকে এসব বিষয়ে মাথা ঘামতে হত না।  সত্যিই তো প্রেম ভালোবাসা এরকম জিনিস সেটা উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না অন্তরের ভিতর প্রবেশ করে বুজে নিতে হয়। এটাই ভাবছে সে।আর এটাও ঠিক মেয়ে ও ওই ছেলেদের তো মন বলে কিছু আছে, সব থেকে বড় কথা কারও মন ভাঙা হচ্ছে  মন্দির ও মসজিদ ভাঙার সমান সমান।
পুজার মা বলল,  বলছিলেম বাবা কোন পত্রিকায় কাজ করো?
---- দৈনিক জনজাগরন পত্রিকায়! 
----আচ্ছা তুমি থাক, আমি একটু  ততক্ষণে লেবু সরবত করে আনি।
-----না না মাসিমা এসবের আবার কি প্রয়োজন?
----ধুর!  চুপ কর!  বসো দেখি
পূজার মা মালতি রায়! পুজা আর শিবু যখন তিন ও দেড় বছর বয়স, তখন তার স্বামী মারা গেছে। পূজার বাবারা ছিল তিন ভাই।কিন্তু তাড়া এখন কোলকাতাতে থাকে হঠাৎ যদি খবর নেয় নেয়, আর না  হলে যোগাযোগ বন্ধ, আসলে কি পুজার মা বিধবা আর ভরন পোষনের ব্যাপার তো রয়েইছে, হয়তো এলে বুঝি টাকা করি কিংবা অর্থ করি দিয়ে সাহায্য করতে হবে এই ভয়ে। আর বেচারা পুজার মা শহরের বাবুদের বাড়িতে কাজ করে আসছে ছেলেমেয়ে দুটোকে তো  মানুষ করতে হবে!সংসারটার ভরন পোষন করতে হবে, ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে হবে! আর অর্থ সাহায্য লাগলে বাবুদের কাছেই নেয়, একটু গায়ে গতরে খেটে দেয়।  এখন ওরা অসহায় ঠিকই এককালে জমিদার ছিল পরিবারটা।   জমিদার বাড়ি মানুষ আজকে বাবুদের বাড়িতে খাটছে ....আসলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ---আজকে রাজা কালকে ফকির। ঠিক সেরকম।
পূজা স্নান ছেড়ে বেরিয়ে এল, স্নান করতে করতে সে সব শুনেছে, যে  শচীন তাদের বাড়িতে এসছে ও গল্প করছে!  তবুও সে শচীনকে বলল,  আরে শচীনদা কখন এলে? আসতে অসুবিধে হয়নি তো? 
----আরে না রে পাগলি!  তো কেমন আছিস? কলেজ যাবি বুঝি?
----- আরে বাপরে বাপ কোন ছেড়ে কোনটা বলি। আচ্ছা শচীনদা তুমিই বলো যে কখন এলে।
----- শচীন বা হাতের ঘড়িটার দিকে একবার তাকাল, দেখল দশটা চল্লিশ বাজে তখন। বলল, কুড়ি মিনিট হল রে। 
------ আমি ভালো আছি দাদা। এখন কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।
-------বেশ ভালো তো!
তোমার জানি কিসে অনার্স?
বাংলায়।
এইসময় মালতি, কাচের গ্লাসে লেবু সরবত নিয়ে এল! বলল, এই নাও ধরো বাবা একটু সরবত। খেতে খেতে না হয় গল্প হবে। 
যেহেতু খাটুনি করে বানিয়েছেন মাসিমা তবে কিন্তু না খেলেই নয়, এক চুমু দিতেই বলে উঠল, আহ মাসিমা দারুণ হয়েছে, মনে হচ্ছে এখন একটু তৃপ্তি পেলাম, 
লেবু ও পুদিনা পাতার সরবত। দারুণ লাগছে।। আমরা বাইরে যা খাই মাসিমা। বাড়িতে তো লোক নেই! আর বাপ ভাই  ছাড়া কেউ নেই। মা ছিল,  দুবছর আগে আমাদের ছেলে চলে গেছে। এখন ভাই আমি আর বাবা।
গল্প করতে করতে বেলা গড়াতে চলল, গল্পেই যেন সবাই মজে গেছে। প্রায় ১টাই বাজে, ১২:৪৭ মিনিট। মালতি বলল,  তোরা গল্প কর দেখি, আমি একটু রান্না ঘর থেকে আসি।
এদিকে রান্না হয়েছে পূজাদের বাড়ির কত আগেই । এখন শুধু খাওয়ার পালা। আর খাওয়া সেরে যে যার কাজে যাব রোজকার মতো।  তার মধ্যে বাড়িতে কেউ এলে তাকে তো অতিথি বলাই যায়।
বারান্দার টেবিলে চলে এলো পূজার মা মালতির হাত বেয়ে সাজানো থালা ভরা ভাত আর বাটি ভরা সবজি। সঙ্গে  চুনোপুটি মাছের দুটো পদও!  রসুনপেয়াজ দিয়ে চটচটি আর মাছের টক আম দিয়ে। সে দিন শিবুই গেছে পাড়ার বন্ধুদের সাথে জাল নিয়ে! ভাগাভাগি করে আড়াই /তিনশ গ্রাম মাছ সে ভাগে পেয়েছে।
হয়তো খেতে চাইছিল না শচীনবাবু, ভাবছে চুনোপুটি মাছ, আর মাছের টক!! সে অনেক দিন হল খায়নি!  মা বেচে থাকতে সেই কবে খেয়ে ছিল। এখন দোকানের ভাত তরকারি ছাড়া উদ্ধার হয় না, পেট কামরায়। সব থেকে বড় কথা হল আজকে মায়ের মতো হাতের রান্না পেয়েছে সে, খেতে রাজি হল। এদিকে অতিথি যে তাই না খেয়ে ওঠা, এটা একরকম খারাপ ছাড়া কিছুই নয়।
সময় গড়াল অনেকটা,  তাই আর কারও কোথাও যাওয়া হল না, এতক্ষনে হয়তো পুজা কলেজে যেত, আর তার মা শহরেবাবুদের বাড়িতে থালাবাসন মাজা কিংবা রান্নার কাজে লেগে যেত, আর শিবুটা স্কুলে।


(চলবে..)

দশ চক্র ( দুই) : সিদ্ধার্থ সিংহ







হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে ঋজু আর পরমার্থ অপেক্ষা করছিল। ওরা একটু আগেই এসেছে। গত কাল রাত সাড়ে বারোটায় অফিস থেকে বেরিয়ে নীচে যখন ড্রপ কারের জন্য অপেক্ষা করছে ঋজু, তখন হঠাত্‌ই পরমার্থ ওর কাছে এসে বলল, এই রে, আশিস তোমাকে বলতে বলেছিল। একদম ভুলে গেছি। কাল দাঁতনে একটা উত্‌সব আছে। সেখানে কবিতা পাঠেরও ব্যবস্থা আছে। ও তোমাকে বারবার করে যেতে বলেছে। তুমি যাবে?
ঋজু কী ভাবছিল। ও কিছু বলছে না দেখে পরমার্থ ফের বলল, কাল তো তোমার অফ ডে। চলো না।
— কখন?
— কাল সকালে। সাতটার সময়। হাওড়া থেকে।

হাওড়া থেকে ঋজুর বাড়ি খুব একটা দূরে নয়, চেতলায়। ওখান থেকে একটাই বাস। সতেরো নম্বর। কখন আসে কোনও ঠিক নেই। তাই হাতে একটু সময় নিয়েই ও বেরিয়েছিল। কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার আগেই দেখে বাস আসছে। ফলে সাতটা নয়, তার অনেক আগেই ও চলে এসেছে। এসে দেখে, অফিস থেকে অত রাতে বাড়ি গিয়েও এই সাতসকালেই সেই বিরাটি থেকে পরমার্থও এসে হাজির। ঘড়িতে তখনও সাতটা বাজতে মিনিট দশেক বাকি।
ও সামনে আসতেই পরমার্থ বলল, চা খাবে?
— ওরা আসুক না। একসঙ্গে খাব। ট্রেন ক’টায়?
— তা তো জানি না। আশিস তো বলল, সাতটার সময় এখানে দাঁড়াতে।
— এখানেই বলেছে তো?
— হ্যাঁ রে বাবা...
— সাতটা তো প্রায় বাজে।
— এখনও বাজেনি। আসবে তো সেই সল্টলেক থেকে। সবার বাড়ি তো আর তোমার মতো হাওড়া স্টেশনের পাশে নয়, যে বাসে উঠলাম আর হাওড়ায় পৌঁছে গেলাম। চা খাবে? ওই তো আশিস...
ঋজু দেখল, শুধু আশিস নয়, ট্যাক্সি থেকে একে একে নামছে আরও তিন জন। তার মধ্যে দু’জন মহিলা।
আশিস কাজ করে আকাশবাণীতে। পরের সপ্তাহে রেডিওতে কী কী অনুষ্ঠান হবে, সেই অনুষ্ঠান-সূচি আনতে প্রত্যেক সপ্তাহে পরমার্থকে যেতে হয় ওর কাছে। আনন্দবাজারের যে দফতরে ও কাজ করে, সেখানে প্রুফ দেখা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ওই অনুষ্ঠান-সূচি এনে কম্পোজ করে দেওয়া ওর কাজ।
এই কাজ করতে করতেই আশিসের সঙ্গে ওর বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সেই সূত্রেই পরমার্থ যেমন জেনেছে, ও লোকসঙ্গীত গায়। কবিতা লেখে। দুটো কবিতার বইও বেরিয়েছে। শুধু ও একাই নয়, ওর বউ রিনাও কবিতা লেখে। তেমনি আশিসও জেনেছে, পরমার্থও ইদানিং কবিতা লিখতে শুরু করেছে। অনেক কবির সঙ্গেই ওর আলাপ আছে। ওর মুখেই ঋজুর নাম শুনে আশিস বলেছিল, উনি কি আপনাদের অফিসে কাজ করেন নাকি?
— কেন, আপনি চেনেন?
আশিস বলেছিল, না, আলাপ নেই। তবে ওর অনেক কবিতা পড়েছি। উনি তো প্রচুর লেখেন। এত লেখেন কী করে? আপনার সঙ্গে ওনার কী রকম সম্পর্ক?
পরমার্থ বলেছিল, ভালই। ও তো আমাদের ডিপার্টমেন্টেই আছে।
— তাই নাকি? পারলে এক দিন নিয়ে আসুন না, জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।

ঋজুকে সে কথা বলতেই ঋজু বলেছিল, ঠিক আছে এক দিন যাবখ’ন। কিন্তু আজ নয়, কাল নয়, করে আর যাওয়া হচ্ছিল না। তাই পরমার্থ এক দিন ওকে বলল,


আরে বাবা চলো না, গেলে তোমার লাভই হবে। ও এখন অভিজ্ঞানটা দেখে। কবিতা পড়ার জন্য ওর পেছনে কত লোক ঘুরঘুর করে, জানো? আর ও নিজে থেকে তোমাকে ডাকছে, তুমি যাবে না? ওখানে কবিতা পড়লে পাঁচশো টাকা দেয়।
তাতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিল না দেখে ঋজুকে প্রায় জোর করেই ও একদিন নিয়ে গিয়েছিল আকাশবাণীতে। সেই আলাপ। তার পর এই।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে কাঁধের ব্যাগটা সামলাতে সামলাতে লম্বা লম্বা পা ফেলে ওদের সামনে দিয়ে যেতে যেতেই আশিস বলল, চলে আসুন, চলে আসুন। দেরি হয়ে গেছে।
ও আগে আগে। পেছনে ঋজুরা। তারও পেছনে ট্যাক্সি থেকে নামা বাকি তিন জন।
কাউন্টারে তেমন ভিড় ছিল না। টিকিট-ফিকিট কেটে ওরা ট্রেনে উঠে পড়ল। না। ট্রেনেও খুব একটা ভিড় নেই। ছুটির দিন। তাই ফাঁকা ফাঁকা। একটা খোপেই ওরা সবাই বসার জায়গা পেয়ে গেল। এ দিকের সিটে ঋজু, পরমার্থ আর ট্যাক্সি থেকে নামা কোর্ট-প্যান্ট পরা ওই ভদ্রলোক। বাকিরা উল্টো দিকের সিটে। ট্রেন ছাড়ার আগেই আশিস সবার সঙ্গে সবার আলাপ করিয়ে দিল। কোর্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোকটাকে দেখিয়ে বলল, ইনি মহাদেব মোশেল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। বিবাহের ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক একটা বই লিখেছেন। এ ছাড়া ছড়া-টাড়াও লেখেন। আর ইনি হচ্ছেন কণিকা রায়। কলকাতা টেলিফোন্‌সে কাজ করেন। এখন টেলিফোন ভবনে, না? কণিকার দিকে তাকিয়ে নিজেই যেন তার কাছে জানতে চাইল। তার পরে বলল, ক’দিন আগে ওর একটা সুন্দর কবিতার বই বেরিয়েছে। আর এর পরিচয় কী দেব, ইনি আমার গিন্নি, রিনা গিরি।
ঋজু মহাদেববাবুর দিকে তাকাল। মহাদেববাবু আর কণিকার কথাবার্তা দেখে হঠাৎ কেন জানি ঋজুর মনে হল, ওদের মধ্যে কোনও একটা সম্পর্ক আছে।


(চলবে )

রুহীর পুতুল : রাজিত বন্দোপাধ্যায়







।। ১ ।।




-- রুহী ? ... রুহী --- কোথায় গেল মেয়ে টা , একদন্ড যদি স্থির থাকে !    
মায়ের সহকর্মীদের সাথে কথা বলবার ফাঁকে রুহী মেন রোডের ফুটপাত সংলগ্ন বড় কাঁচ ঢাকা দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে । মার ডাক কানে এলেও নড়তে পারছে না । পুতুলটার চোখে চোখ পড়তেই তার মনে হল যেন জাদু আছে পুতুলটার চোখে । হঠাৎই ঐ চুল বিহীন ডল পুতুলটাকে ফুটপাতের পাশের বড় দোকানটার শোকেসে দেখে সে এগিয়ে এসেছিল । অনেদিন ধরে তার একটা বড় ডল পুতুলের শখ । অথচ মাথায় চুল নেই দেখে কিঞ্চিত অবাক হয়েই সে আকৃষ্ট হয়েছিল । মা ডাকছে , কিন্তু নড়তে পাড়ছে না সে । পুতুল টা তার মন নিশ্চই পড়তে পারছে , না হলে হঠাৎই তার মাথায় চুল গজাতে যাবে কেন ! নিজের বড় বড় পেলব দু চোখ মেলে সে শিহরিত হতে হতে দেখতে লাগল পুতুলটাকে । হঠাৎ মার ছায়া নিজের পাশে দেখে শোরুমের কাঁচে আঙ্গুল দিয়ে পুতুল টা দেখিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ স্বরে সে বললে ,  
-- মা , আমায় এই জাদু পুতুল টা কিনে দাওনা মা ।    
-- তোমার সব পুতুলই তো জাদু পুতুল লাগে । আমার কাছে অত পয়সা নেই বুঝেছো ? চল এখান থেকে ।   
মা তার হাত ধরে গজগজ করতে করতে হাঁটতে লাগল ।  
-- আমার হয়েছে যত জ্বালা । তিনি তো এই আদুরে মেয়ে আমার ঘাড়ে ফেলে কোথায় ডুব দিলেন । আর এবার ভুগে মর তুই ।   
রুহী কিন্তু তখনও মুগ্ধ দুই চোখে পিছু ফিরে দেখেই চলেছে ঐ দোকানটাকে ।     
                  
                                                                   [ চলবে ]