নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়








।। ঊনত্রিশ ।।



               বছর পাঁচেক আগের কথা। আনাজ বাজারে মৃণালদার সঙ্গে দেখা। আমার বাজার করাটা যেন একটা যন্ত্রণার মতো। শুরু থেকেই শেষ হওয়ার কথা ভাবি। মৃণালদা কিন্তু ঠিক এর উল্টো। উনি বেশ ধরে ধরে সময় নিয়ে বাজার করেন। কি একটা বিষয়ে কথা হতে হতে আমি হঠাৎ বলে বসলাম, " আচ্ছা মৃণালদা, শেষ কবে মনের কথা কাউকে বলছেন ? "দেখলাম মানুষটা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেলেন। খুব কাছে দাঁড়িয়েও আমি যেন তাকে ছুঁতে পারছি না। " ঠিক বলেছ ভাই, অনেক দিন হলো কাউকে মনের কোনো কথা বলতে পারি না। " মনে হলো, উনি আরও কিছু বলতে চান। আমি আরও দু'একটা কথা বললাম, " একবার ভেবে দেখুন, বৌদির কোনো কথা বলার ইচ্ছা হলে আপনাকে বললেন। ভাইপো, ভাইঝির কোনো কথা বলার দরকার হলে ওরা আপনাকে বলবে। কিন্তু আপনি ? কোনো সুযোগ নেই। আপনাকে সব কথা বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখতে হবে। " দেখলাম, মৃণালদা চোখ বুজে। একটু পরেই দেখি উনি কাঁদছেন। আমি তো বেশ সমস্যায় পড়ে গেলাম। ভাবতেই পারি নি, কথাটা ওনাকে এতখানি আঘাত করবে।




।। ত্রিশ ।।


               রোজই ভাবি, আজকের রাতটা আর ঘুমাব না। সারাটা রাত লিখে পড়ে কাটিয়ে দেব। কিন্তু পারি না। ছ'টা বাজলে উঠতেই হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো থাকে। রাত চিনেছি মায়ের কাছ। মাকে পড়ে কিছুতেই সন্তুষ্ট করা যেত না। পড়তে পড়তে কত রাত হয়ে যেত। মা তবুও রাতের খাবার দিত না। এইভাবে পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়ে যেত। এই যে রাত জাগার অভ্যাস আজ পর্যন্ত তার সামান্যটুকুও কমে যায় নি বরং আরও অনেক বেড়ে গেছে। আসলে রাত হলে আমি নিজেকে যেন খুঁজে পাই। রাত আমাকে আমার কাছে এনে দেয়।


(চলবে..)

রাতের ভাঁজে চশমাকাচে : সৌমেন দাস





রাত বাড়ে

ফ্যাকাশে হয় অনুভূতির মানিপ্লান্ট

শেষ চুমুকে পেয়ালাজুড়ে উঁকি দেয়
কত শত কাহিনিরা

শীর্ণ হয়ে আসে খুশির রেখা

টেবিলে রাখা নতুন চশমাটাও ঠাট্টা করে

ভিজে যায় নিরিহ দুটি চোখ

আর পদ্যরা সব গদ্যপাড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে …

অপরাজিতা(প্রথম পর্ব) : দেবব্রত সেন






কতই বা বয়স বাপ মরা মেয়েটার, সবে স্কুল ছেড়ে কলেজে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে আবার গোলাপের হাবুডুবু, রঙ্গিলা বাতাসের গুন গুন সূর। ভালোবাসার পরশপাথর ছুঁয়েছে, হৃদয়পূর্ণ কোকিল কোকিলা মন। মধু চন্দ্রিমার রাতে শশীবাবু যেমন একলা বসে থাকা রুপসীর ঘরে জানলা দিয়ে উকি মারে কিংবা কোনো এক দুপুরে ছায়া ঘেঁষা শ্রাবণী মেঘের বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধে শালিক জোড়াযুগলের অপরুপ রোমান্টিক দৃশ্যের মতো।  তার পর আর কি! বিয়ে -সংসার জীবন। মেয়ে মানুষের নাকি স্বামী ব্রত প্রধান ধর্ম।


১//সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে

সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে, ঘরটা শূন্য মানবহীন! শোনার কেউ নেই একলা বসে শুনছে ঘরটা। থাকলেও থাকতে পারে, তবে হয়তো যে যার কাজে ব্যাস্ত আছে ক্ষন, তাই বোধ হয় এরকম হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর, দশ সাড়ে দশটা নাগাদ হবে, একজন যুবকের বাইক এসে দাঁড়াল পূজাদের বাড়ির সামনে। এসেই দেখল কলিংবেল আছে! সে কলিংবেল টিপল। সঙ্গে সঙ্গে পূজার মা পূজাকে বলল, এই পূজা, পূজা কই গেলি মা! দ্যাখ না কে এল। পুজা তখন স্নান করছে, সে কলেজে যাবে! পূজা স্নান ঘর থেকে বলল, মা আমি স্নানে। তুমি যাও। আমি পারব না মা।
ঠিক এই সময়ে আবার কে এল বাবা আর পারছি না, ঠাকুর ঘর ফেলে আসতে হচ্ছে এই বলতে বলতে পূজার মা বাড়ির উঠান পেরিয়ে সদর দরজার কাছে এল এবং দরজা খুলে দেখল  বছর পচিঁশ ছাব্বিশের একজন যুবক, কাধে একটা ব্যাগ ঝোলানো, চোখে চশমা, গায়ের রং ফরসা আর লম্বা। সে দাড়িয়ে আছে কখন দরজা খুলবে তার অপেক্ষায়।

দরজা খোলার সাথে পুজার মা একটু হতভম্ব হল কারন এই ছেলেটা হঠাৎ করে, তাছাড়া ওনার ছেলের বন্ধু বান্ধব হলে না হয় হত কিন্তু ছেলের বয়স চৌদ্দ পনের হবে,  আর এই ছেলেটা এসে দাড়িয়ে আছে সে তো বয়সে অনেক বড়! পূজার মা গড় হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারল না, সে শুধু অবাক দৃষ্টিতে ভাবতেই লাগল। আত্মীয় স্বজন হলেও হতো কিন্তু সেই ছেলেটা অচেনা, কি আর বলবে?
এরম করতে করতে পূজার মা আমতো আমতো করে ছেলেটাকে বলল, আপনি কে বাপু? আপনাকে তো এর আগে দেখিনি?
------আপনি পুজার মা তো?
---- আজ্ঞে হুম, বলুন।
-----নমস্কার নেবেন মাসিমা, আমি শচীন বর্মন, বাড়ি শিলিগুড়ি শিব মন্দির এলাকায়।
-----সে কি মাসিমা পুজা আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেনি?

পুজার মা একটু ঘাবরে গেলেন আর ভাবলেন বাইরের একটা অচেনা ছেলে আমাকে কিসব বলছে, বিষয়টা ভালো ঠেকছে না।
হুম মনে পড়েছে, কলেজে প্রথম প্রথম যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুজা একটি ছেলের কথা বলেছিল কিন্তু সে তো সাংবাদিকতার চাকরি করত! আলাপ হয়েছে পূজার কলেজে, কিন্তু সে আবার প্রেম করছে না তো?  আমাদের মতো গরিবের কপালে প্রেমট্রেম হজম হয় না বাবা, সে না হলেই ভালো হয়। এই ভাবে ভাবতে বলল, ও হ্যাঁ মনে পরেছে। আপনিই তাহলে সেই শচীন? আমি ভাবছি কোন, কোন শচীন! এসো বাড়ির ভেতর এসো।

শচীন পূজাদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেই দাড়িয়ে পড়ল, কারনটা কি! পুজা তাকে বলেছিল ওদের বাড়ির উঠানের উত্তর দিকে একটা নারকেল গাছ আর সেখানে বৈশাখ - জ্যৈষ্ঠে বাবুই পাখির দল বাসা বানিয়েছে, দেখতে লাগছে খুবই সুন্দর যেন সবুজ সবুজ কলসী ঝুলছে। অন্য দিকে উঠানে প্রবেশ করার মুহূর্তে একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ, গাছে লালে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে দেখলে চোখ জুড়োয়। আর পায়রা গুলো বাকুম বাকুম করে ডাকছে,  এ টিনের চাল থেকে ও চাল উড়ে যাচ্ছে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য। পুজার মা বলল, কি দেখছো বাবা? বারান্দায় চেয়ার টেনে বসো যাও।

হয়তো টিনের চালের বাড়ি,দোচালা চৌয়ারি ঘর দুটো ইংরেজি এল এর মতো গঠন। যদিও ঘর গুলো অনেক পুরোনো, তবুও মোটামুটি ভালোই আছে।  আর ডিতটা সিমেন্টে পাকা করা, বাড়িটা শতকরা অঙ্কের হিসেব করলে পাঁচ পৌনেপাঁচ কাঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। শহর লাগোয়া তিস্তা পাড়ের গ্রাম। বর্তমান বাড়িটার চেহারা গরীব গরীব বোঝালেও গাছগুলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা এরকম যে যেকোনো লোক বাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবে। আর গ্রামের বাড়ি গুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাই সাধারণত হয়ে থাকে।

পূজার মা শচীনকে বারান্দায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো বাবা, বসো। যা গরম পরেছে সহ্য করা যায় না বাবা। একটা টেবিল ফ্যান বের করে শচীনের কাছাকাছি রেখে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বলল, তুমি বাবা এখানে বিশ্রাম নাও আমি বরং ঠাকুর ঘরে ফুলজল দে আসি কেমন!
-----ঠিক আছে মাসিমা। যাই বলুন মাসিমা প্রচন্ড রোদ্দুর পড়েছে, এই সময়টা বাইরে বেরোনোটা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।

পুজার মা ঠাকুর ঘরে গেল, আকাশটা তখন চুপচাপ, শুধু গরম আর গরম!  এই সময় একটা হালকা বাতাস এল, মে জুন মাসে যেরকম লু নামের গরম বাতাস বয় ঠিক সেরকম ভাবে শীতল বাতাস এল, আকাশটা যে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলি হাওয়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল, দুচারটে পায়রা ডানা ঝাপটে আঙিনা থেকে টিনের চালে গিয়ে বসল, দুজোড়া পাশাপাশি!চোখ বিনিময় করছে এরকমটা বোঝাচ্ছে,   মনে হয় যেন তারাও যুগল প্রেম করছে। আর শচীন একা একা সেটা ভোগ করল, সে ভাবছে ইস যদি আমার জীবনে কখনও এমন সময় আসে খুব রোমান্স হবে।শচীনের ইচ্ছে হল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে চেয়ারটা নিয়ে বসি কিন্তু হল না, ততক্ষণে পূজার মা ঠাকুর ঘর থেকে বারান্দায় এল, শচীন একা বসে আছে।
বলল,  তো এখানে কোথায় এসছো ? আমি মাসিমা
----হুম।
......জানতেই পাচ্ছেন আমি সাংবাদিকতার মানুষ, খবর সংগ্রহে এখানে ওখানে যেতে হয়। জানো মাসিমা,  আপনাদের পাশে জমিদারপাড়ায় একটা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তারই কিছু তথ্য সংগ্রহে এসেছি। তাড়াতাড়ি হয়েগেল তাই ভাবলাম একটু পূজার সঙ্গে দেখা করেই যাই।
-----না না  বাবা বেশ ভালো করেছো। পুজার মুখে তোমার সাংবাদিকতার কথা শুনেছি বাবা, তবে ......
এই বলে চুপ করল।
-----তবে কি মাসিমা? বলেন সংকোচন করবেন না।

আসলে কি, পূজা আর শচীনের মধ্যে যে প্রেম ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সেটা পূজার মা ভালো করেই আন্দাজ করেছিল, তাই বোধহয় তবে করেই থেমে গেল। আর মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়, এটা ছেলেখেলা নয়। আর যদি ভালোভাবে তাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তাহলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে,পূজার বাপটা বেচে থাকলে হয়তো তাকে এসব বিষয়ে মাথা ঘামতে হত না।  সত্যিই তো প্রেম ভালোবাসা এরকম জিনিস সেটা উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না অন্তরের ভিতর প্রবেশ করে বুজে নিতে হয়। এটাই ভাবছে সে।আর এটাও ঠিক মেয়ে ও ওই ছেলেদের তো মন বলে কিছু আছে, সব থেকে বড় কথা কারও মন ভাঙা হচ্ছে মন্দির ও মসজিদ ভাঙার সমান সমান।



(চলবে ...)

শেষ বৃষ্টি হয়ে : তোহাদ্দেশ সেখ





ভাল থেকো তুমি। 
কোন অল্পে নয় কোন কল্পে নয় কোন গল্পে নয়
তোমার শহরে তুমি ভাল থেকো। 
রুপোলী স্মৃতি  মুছে যাক, মুছে যাক সব স্বপ্ন
তবুও তুমি ভালো থেকো।
তোমার অবাধ্য চুল অবুঝ হয়ে চোখে আলতো ছুঁলে নিজেই সরিয়ে নিও,
ক্লান্ত দুপুরে দখিনা বাতাস এলে
নিজেকে নিজেই জড়িয়ে নিও,
মন খারাপের বৃষ্টি হলে একলা হাতেই রোদ বিলিও
রুদ্ধদ্বারে বন্দি আমি পারবো নাকো যেতে।
তাই তোমার শহরে তুমি ভালো থেকো।

স্মৃতির ক্যানভাসে ব্যস্ততারই ধুলো
পড়বে আমি না থাকায়
অসহায় ছবিগুলি দুলবে গোপন ভয়ে সব হারাবার।
ভালোবাসি কথাটা শুধু আছে বুকের ক্ষতে
খুনসুটি দুষ্টুমি ডুবে গেছে মাঝপথে,
ভাগ্যের করিডরে দুজনেই অচেনা পথিক
শুধু বাইরে পথের ধুলো দ্যাখে দুঃখ নিশান।
আমার ভালো থাকার মিথ্যা শুনেও তুমি ভালো থেকো।
তুমি ভালো থেকো।

আর কোনদিন বলব না_'তোমার ওই দু'চোখে চোখ রেখে আমার তাকানো তুমি কখনো ভুলতে পারবে না'।
আর কোনদিন বলবো না 'এভাবেই দুজন দুজনকে ভালবেসে যাবো'।
বেখেয়ালে আঘাত পেলেও আর বলবো না 'একটি চুমু এঁকে দাও'।
মিথ্যা ভাল থাকায় থাকবো বেঁচে তাই তুমি শুধু ভাল থেকো। তোমার মতো করে তুমি ভালো থেকো।

কোন সাদামাটা বিষন্ন বিকেলে যদি মন কেমনের আকাশ সাজে, তুমি অনুভবে হাসতে শিখো,
স্মৃতির এক চিলতি দুঃখ যদি বৃষ্টি হয়ে ঝরে তুমি গালের নিচে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিও।
তার পরেও যদি তোমার পাশে হটাৎ কেউ হাতটি চেপে ধরে তুমি স্বপ্ন ভেবে একলা থেকো।
আমি না হয় স্বপ্নগুলি বুকে রেখে দুঃখগুলি আপন করে 
বর্ষে যাব শেষ বৃষ্টি হয়ে না ফেরা নদীপথে।
 তবুও তুমি ভালো থেকো_ ভালো থাকো তুমি।

আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। সাতাশ ।।




          ছোটবেলায় মাটি দিয়ে মূর্তি বানাতাম। তখন বোধহয় ক্লাস ফাইভে পড়ি। এঁটেল মাটি হবে সম্ভবত। একটা কাঠের ছোট্ট পাটার ওপর মূর্তিটা তৈরি করতাম। স্নান করে খেয়ে উঠে বসতাম। সেরকম বলার মতো কিছুই নয়। কাদাটাকে নিয়ে হাতের কায়দায় মোটামুটি একটা আকার দেওয়া। ঘন্টা খানেকের পরিশ্রমে কিছু একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা। কি হয়ে উঠত জানি না তবে কাজ শেষ হলে রান্নাঘরের চালে শুকোতে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মূর্তি তৈরির দিনগুলোতে ঘুম থেকে উঠতে কি ভালো লাগতো। মনে হতো ঘুম থেকে উঠে যেন চোখের সামনে অন্য কিছু দেখব। রোদের ছোঁয়ায় মূর্তিটা যেন অন্য রূপ পেয়ে গেছে। কিন্তু দেখতাম অন্য ছবি। রোদ এসে মূর্তির মাটিটাকে পুরোপুরি ফাটিয়ে দিয়েছে ! মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত। সঙ্গে সঙ্গে ওই ফাটা জায়গাগুলোতে মাটি লাগিয়ে দিতাম। তারপর ঘরে তুলে রাখতাম। পরের দিন দুপুরে আবার রোদে দিতাম। ঘুম থেকে উঠে আবার ফেটে যেতে দেখতাম। আবার ফেটে যাওয়া অংশটায় মাটি ধরাতাম। এত মাটি যে কোথায় যেত ! অথচ মূর্তিটা একটুও মোটা হতো না !



।। আঠাশ ।।


          আমাদের ঘরেই ছিল পথের পাঁচালীর হরিহর। আমার বাবা। বাবার সঙ্গে অনেক জায়গাতেই যেতাম। রাতের অনুষ্টানগুলো একটাও বাদ যেত না। বিয়ে বাড়ির অনুষ্টান থাকলে রাত দুটো আড়াইটে বেজে যেত। গ্রামের ধুলো ওঠা রাস্তা। বাবা আর আমি রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফিরছি। বাবার হাতে হ্যারিকেন। বাবা এমনিতেই বেশি কথা বলত না। রাতের রাস্তায় তো কথাই নেই। আমি আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাতকে পড়বার চেষ্টা করতাম। কোনো কোনো জায়গায় এসে বাবা দাঁড়াত। চারপাশ এতো চুপচাপ যে আমরা আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছিলাম। মুখে না বললেও বাবার আচরণেই স্পষ্ট হয়ে যায় ------ সেও রাতের সময়টুকু তার নিজের মতো করে রাতকে পড়ছে।


(চলবে...)

বৃষ্টিফোঁটায় শব্দশোক: মোনালিসা নায়েক





মেঘের কান্না বৃষ্টিফোঁটা
 বুক পেতে দেয় আমার শহর
জ্যোৎস্না তখন অভিমানী
 শব্দশোকের গভীর জ্বরে

পসরা সাজায় দুঃখ বাসর।

বৃষ্টিধারা: সত্তাপ্রিয় বর্মন



তারপর একদিন আকাশে মেঘ করল
বৃষ্টি এলো
বৈশাখী ঝড়ে ভেঙে গেল কুটির
উপড়ে পড়ল বৃক্ষ
কত পাখি নীড় হারা হল,
ফুটপাথে শুয়ে থাকতো যে পরিত্যক্ত মানুষটি
তার স্থান সংকট দেখা দিল:
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি -
কত জয় পরাজয়, ভাঙন গরন সব মিশে গেল,
জোয়ার ভাটা এলো
জোয়ার ভাটা...
আমার রিক্ত বিষন্ন হৃদয়ে বৃষ্টি এসেছে
ধুয়ে মুছে গেছে রাতের আকাশে নক্ষত্রের আলো।
শূন্যতা
শূন্যতার পর ভোর
শিশিরের মধ্যে সূর্য
তারপর সূর্যের মত একটা ভালবাসা,
সেদিন রাতে ভালোবাসাবাসি হয়েছিল।



স্মৃতিফুল :সৌমেন দাস




তোর কথা খুব মনে পড়ছে আজ
মনে পড়ছে দুপুরের সেই নির্জনতা
যেদিন তোর বুকের খাঁজ ঠেলে
কামনা এসে ছুঁয়েছিল আমার পাতলা ঠোঁট
মনে পড়ছে তোর দুটি নেশাচোখ
আর রোদভেজা শরীরের শীৎকার
বড়ো মনে পড়ছে রে আজ ...

আচ্ছা, তোরও কি মনে পড়ে সেইসব?
আজকের চেনা ভূগোলে একবারও কি
উঁকি দেয় সেই চেনা ইতিহাস?



"বেলা শেষে সবাই একা" : অপেক্ষার প্রহর






#মাদার তেরেসা একবার বলেছিলেন
" সবচাইতে ভয়ঙ্কর দারিদ্রতা হচ্ছে একাকিত্বের দারিদ্রতা এবং এইটা অনুভব করা যে আমাকে কেউ ভালোবাসেনা। "
 
“The most terrible poverty is loneliness, and the feeling of being unloved.”

সারাজীবন দরিদ্র,অসহায়,দুস্থমানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মাদার তেরেসা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ডের মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব কাকে বলে।
টানা একমাস খেতে না পারা হাড় জিরজিরে শরীরের মৃতপ্রায় সোমালিয়ান বালক কিংবা ঘুর্ণিঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার ,মানব জীবনের যত রকমের দারিদ্রতা যত রকমের কষ্ট আছে সেইটা মাদার তেরেসার চাইতে বেশী কেউ কাছ থেকে দেখেছিলেন কিনা জানিনা।

 
সেই মাদার তেরেসাও দিনের শেষে এসে বলেছিলেন
" দা গ্রেটেস্ট পোভার্টি ইজ দা লোনলিনেস। "

সবচাইতে বড় অভাব হৃদয়ের সঙ্গীর অভাব। সবচাইতে বড় যন্ত্রনা একা থাকার যন্ত্রনা।
 
কিন্তু সবচাইতে স্যাড ফ্যাক্ট হলো,দিনের শেষে আমরা সবাই একা।
   
 
আমি প্রায় সময় আমার লেখায় রবিন উইলিয়ামস নামক এক ভদ্রলোকের কথা বলি। এই ভদ্রলোক কে আপনারা জুমানজি হিসেবেই চিনেন। আজীবন মানুষ কে হাসিয়ে গেছেন। বিভিন্ন রোল প্লে করে। গুড উইল হান্টিং এ ম্যাট ডেমনের থেরাপিস্ট হিসেবে ডেমন কে ডিপ্রেশন থেকে বেঁচে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। কিন্তু সেই রবিন উইলিয়ামস কে অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউ ছিলনা।
একদিন তার লাশ পাওয়া গেলো বেল্টে ঝুলন্ত অবস্থায়।
আজীবন মানুষ কে হাসানো মানুষটা নিজের বলা সেই বিখ্যাত উক্তিটিকেই প্রমাণ করে গেলেন।

" এমন অনেক মানুষ থাকে যারা মানুষ কে হাসায়, সেসব মানুষ ভিতর থেকে অনেক একলা। তারা অন্যকে হাসায় কারণ একা থাকার যন্ত্রনা কি সেটা তারা জানে। "

রবিন উইলিয়ামসের টাকা পয়সার অভাব ছিলনা। লেজেন্ডারি এক্টর্। কিন্তু রবিন উইলিয়ামস একা ছিলেন। অনেক বড় একটা হোল ছিল তার বুকের ভেতর্। পৃথিবীর সব টাকা পয়সা দিয়ে এই হোলটা ভরাট করা যায়না।

এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ নিজস্ব অবস্থান সাপেক্ষে তিনটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বাস করে।

রবিন উইলিয়ামসদের মত লেজেন্ডদের  আত্মহত্যা আসলে এইটা প্রমাণ করে ,টাকা পয়সা যশ খ্যাতি এইসব একটা পর্যায় পর্যন্ত কোন মানে রাখে।
   
 টাকা ,পয়সা ,নাম খ্যাতি এইসবের দৌড় বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ড পর্যন্ত।

আবার পরিবার ,আপনজন এরা থাকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আসলেই কি শেষ পর্যন্ত। না। রবিন উইলিয়ামসেরও সন্তান ,স্ত্রী ছিল। তারা যথেষ্ট ভালোবাসত তাকে। সাপোর্ট দিত। কিন্তু পরিবার ,আপনজন , আত্মীয় স্বজন ,বন্ধু বান্ধব ,প্রিয়তম, প্রিয়তমা এরা একজিস্ট করে মানুষের সামাজিক জীবন বা সোশাল ওয়ার্ল্ডে। এটা মানুষের দ্বিতীয় জগত যেখানে সে প্যারালালি বাস করে।

আর একটা জগত থাকে। রাত বারোটা পেরোনার পর সেই জগতে মানুষ ঢুকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর ছেলে মেয়ে দের কে গুডনাইট জানিয়ে ,বিছানায় স্ত্রী কে আদর করে শেষ একটা চুমু খেয়ে বা ফোনে প্রিয়তম কে ঘুমিয়ে যেও বলে প্রতিটা মানুষ পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে সেই জগতে ঢুকে পড়ে।

আমাদের বাস করা সেই তৃতীয় জগতের নাম হলো স্পিরিচুয়াল ওয়ার্ল্ড। আধ্যাত্বিক জগত। সেই জগতে আমরা সবাই একা। এটা শুধু নিজের একান্তই নিজের জগত।
 
সেই জগতে আমরা প্রত্যেকেই মস্তিষ্কের নিওরনগুলোর সাথে হিসেব কষতে বসি।
অদ্ভুত সব প্রশ্ন রাখি নিজের সামনেই।
আমি কে?
কি আমার পরিচয়?
শুধু দুই বেলা ভাত খাওয়া আর দু তিন বার রিপ্রোডাকশন করাই কি আমার কাজ? প্রকৃতির সাইকেলে আমার ভূমিকা কি শুধু একটা রিপ্রোক্টাটিভ এলিমেন্ট হিসেবে? গাছকে কার্বন ডাই অক্সাইড দান করাই কি আমার কাজ?

আচ্ছা আমি কি সুখী? আচ্ছা সুখী হওয়ার ডেফিনেশন কি? আমার যদি কষ্ট পেতে ভালো লাগে তাহলে কি কষ্টই আমার সুখ নয়? জীবন এত আপেক্ষিক কেন?

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিজের আত্মার কাছে নিজে এইসব প্রশ্ন রেখে উত্তরের অপেক্ষায় ঘুমাতে যাই। আমরা ভাল থাকি। কিন্তু  কেউ কেউ প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়ে খেপে যায়। নিজের মন কে প্রশ্ন যেতে থাকে। আমার অবস্থানের মানে টা কি? উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। হাল ছেড়ে দেয়। একদিন এই বোবা পৃথিবীর উপর প্রচন্ড অভিমান করে দুম করে মরে যায়। বুম ,দা শো ইজ ওভার্।

কিন্তু এই অশরিরী বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে লুকোন থাকে একমাত্র সত্যটি।

সারাদিন সন্তান ,বন্ধু ,ভাই বোন , এমপ্লয়ি ,স্বামী স্ত্রী ,বাবা মা হিসেবে রোল প্লে করে ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে রাত বারোটার পর আমরা সবাই একা। উই আর অল এলোন। দিস ইজ দা ওনলি ইউনিভার্সাল ট্রুথ!

আমার তো জানালা নেই :রোমা





আমার তো জানালা নেই
জানালা দিয়ে আমি
কাঁচকথাদের দেখিনি কতোদিন
আমার তো ছাদ নেই,
আকাশটাও দেখা হয়নি কতো কাল তাই,
এক টুকরো উঠোন! সেটাও কি ছিল কোনদিন?
তুলসী তলার সেঁজুতিটাও
তাই নিভে  গেছে সেই কবেই.....
 
কতোকাল দেখিনি
গাছ গাছালির অরন্য রোদন,
পূব আকাশটার অকাল বোধন,
পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া,,
দেখিনিতো জোনাক আলো,
জোনাক বাতি ছিল বুঝি কভু ,
সকল বাঁধন ছাড়া. ??

আজও কি রাতের আকাশ
আমার অপেক্ষায়?
আজও কি তারাগুলো
আগের মতোই হেসে লুটোপুটি খায়..?
আজও কি ঐ চাঁদটা অমনই সুন্দর দেখায়?
আজও কি আকাশের গায়ে
মেঘেরা সহবাসে যায়?

মেঘ ,বৃষ্টি, বারি
তারা আজও কি আছে সই?
আজও কি মেঘগুলো পরবাসী,
তবে বারির বাড়ি কই?
আর বৃষ্টি!
সেকি আজও উদাস মনে
আমার উঠোনেই ঝরে,
আমার তো জানালা নেই
তবে দেখব কেমন করে ??

আমার তো জানালা নেই,,,
তাই আকাশ,বাতাস,রোদ বৃষ্টি
দেখা হয়নি কতো কাল
দেখিনি রাতের আন্তরিকতা,,
মানবিকতার সকাল.....

আমার তো জানালা নেই,
 নিজেকেও দেখিনি কতো কাল....


প্রাক্তন তোমাকে :মান্নুজা খাতুন



মার্কেটের  ভরা ভিড়ে পিছু হতে তোমার অবয়ব দেখে
মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেছিল সখা,
শরীরের যত শক্তি আছিল
পা দুটোয় করেছিল ছিল ভর
স্বচ্ছ জলের মতো ছুয়ে গেল মন
ফেলে আসা নানা রঙিন স্মৃতি গুলো।
ভেবেছিলাম কখনো হবে না দেখা ;
মনে মনে করেছিলাম সংকল্প
কভু দেখা না দেবার, 
তবুও সময়ের খেয়ালে হয়ে গেল দেখা
ব্যস্ততায় ভরা জন জোয়ারের স্রোতে।


মন চাইছিল প্রিয়
একটা মিস্টি হাসি হেসে
তোমার খবর নিতে।
দু হাতের মুঠোয় দুটি হাত পুরে
হদয়ে গ্রহন করিতে ।
নিকোটিনের জ্বলন্ত স্পর্শে পুড়ে যাওয়া ঠোটে
একটা গভীর চুমু এঁকে দিতে৷

কিন্তু! 
বিবেকের ষড়যন্ত্রনায়
সব ইচ্ছেকে ফেলে করেছি পথ অতিক্রম
তোমার গা ঘেষে, না দেখার অভিনয় করে।     
     




০৪/০৫/১৯
১টা ৪৫ মিনিট (দুপুর)

আধখানা অপেক্ষা :অভিজিৎ দাসকর্মকার





আমাকে যে তিলটি ভাবিয়েছে
কল্পনাপ্রবনে ফিরে এলাম-

দিগন্ত আসছে-

ট্রাপিজিয়ামের দেওয়ালে
গতকালের রাত আশ্চর্য হচ্ছে
শব্দকোষ সিগারেট টানছিল
সময়ের মুখোমুখি

তীব্রতাকে মধ্যাহ্নভোজন করাবো-

উচ্চাঙ্গসংগীতে যৌবন উড়ছে
সাক্ষী থাকুক কৃষ্ণপক্ষের জ্যোৎস্নাকলা

অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ধস নেমেছিল সূচক ধরে
বাদ দিয়েছে তিল
ছায়াগন্ধ নিয়ে আল্পনা দিচ্ছি
চোখের রাতজাগা কালিতে

মহোদয়া
অব্যবহৃত তোষকের নীচে আমার কান্না রাখা
বিপরীতপন্থীরা স্নানজলে ধুয়ে দিচ্ছে
আধখানা অপেক্ষা

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়








।। পঁচিশ ।।


          অনেক বছর পরে ছোটবেলার হাত ধরে একটু বেরিয়েছিলাম আমার জন্মগ্রামের রাস্তা দিয়ে। আমি পায়ে পায়ে পথ ভুল করছি। কিছুতেই একটানা পথ চলতে পারছি না। কতবার যে থামতে হচ্ছে তা গুণে শেষ করা যাবে না। ভাগ্যিস ও সামনে ছিল তাই, না হলে যে কি হতো! নিজস্বতাকে কি কেউ এইভাবে খেয়ে নিতে পারে ? কিছুতেই চিনতে পারছিলাম না। শুধু বাড়ি আর বাড়ি। একটা গাছ নেই। ছোটবেলায় যাদেরকে খুব কাছ থেকে চিনতাম তারা আজ একজনও নেই। পথের মেজাজটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কতবার এই পথ ধরে হেঁটে গেছি। কত কষ্টয় গাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি। কখনও বসেও পড়েছি। গাছকে জড়িয়ে সামনে তাকিয়েছি। প্রখর দুপুরে গাছ প্রকৃত পিতার মতো বিছিয়ে দিয়েছে তার ছায়া। আজ কোথায় তারা! মনে আজ স্বজন হারানোর বেদনা। যেদিকেই তাকাই সারি সারি বাড়ির বন্ধ দরজা। চারিদিকে শুধু সন্দেহ আর বিদ্বেষের বিষবাষ্প। মানুষগুলোও কত বদলে গেছে। এদের একজনকেও আমি ঠিক চিনি না। আগে রাস্তায় দাঁড়ালে কত লোক হাত বাড়াত। এখন সব জানলা দরজা বন্ধ। কোনো কোনো বাড়ির অনেক উঁচুতে একটা জানলা হয়ত খোলা। তাও সেখানে কোনো মুখ নেই। অন্ধকারের মতো একটা গর্ত হয়ে আছে।



।। ছাব্বিশ ।।


          জীবনের অনেকটা সময় আমার বিভিন্ন রেল স্টেশনে কেটে গেল। গ্রীষ্মের দুপুরগুলো তো অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। একা একা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি। কেন এত ভালো লাগে রেল স্টেশন ? অনেক প্রশ্ন করেছি নিজেকে, কোনো উত্তর পাই নি। আজ বুঝতে পারি সে কেন এত প্রিয়। ছোটবেলা থেকে একা একাই থেকেছি নিজের মনে। কাউকে কখনও বিরক্ত করি নি। ছোটবেলায় জ্বর হলে সকলেই মাকে খোঁজে। আমি একা একা বিছানায় শুয়ে থাকতাম। মায়ের এই নিয়ে একটা কষ্ট ছিল। আসলে আমি চাইতাম না আমাকে নিয়ে সবাই খুব বেশি ভাবুক। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। মানুষকে ভাবিয়ে তোলার মতো কোনো কাজই আমি করে উঠতে পারি নি।
          রেল স্টেশনে বসলে আমার মনে হয়, পৃথিবীর অনেক কিছু থেকে যেন নিজেকে বার করে আনতে পেরেছি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো আমি তখন নিজের মনে উড়ে বেড়াতে পারি।



(চলবে....)

প্রেমের দাবিতে ধর্ণা : ফিরোজ হক্






দীর্ঘদিন একে অপরকে নিয়ে এক আকাশ স্বপ্ন দেখার পর একজনের একরখা সিদ্ধান্তে সেই স্বপ্নে বাজ পড়লে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া-এই ধরনের ঘটনা আজকের নয় দীর্ঘদিনের।এখানে একজন বলতে কোনো একটি জাতিকে(ছেলে কিংবা মেয়েকে) বোঝালে ভুল করা হবে।'প্রতারক' শব্দটা আজ বেশ সস্তা দরেই বিক্রি হয়।সেখানে একজন ছেলে যেমন প্রতারক তেমনি একজন মেয়েও প্রতারনা করে এরকম ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে।এক্ষেত্রে কোনো একদিকে পাল্লা ভারি করলে একটি জাতির উপর ঘোর অন্যায় করা হবে বলে মনে করি।

কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়েদের কাছে আজকাল ভালোবাসা বেশ সস্তা, রাস্তাঘাটে মুড়ির মোয়ার মতো।তাইতো তারা ভালোবাসাকে খেলার সামগ্রীর মতো মনে করে।এক্ষেত্রে খেলোয়ারের কিন্তু খেলার সামগ্রীর উপর একটা মায়া থেকে যায় তাই দীর্ঘদিন যাবৎ তারা কোনো খেলা খেললে(কম্পিউটার গেম কিংবা ফিল্ড গেম) সেই খেলা হুট করে ছেড়ে দিতে পারেনা।কিন্তু এই সমস্ত ছেলে-মেয়েরা কি করে একটা মানুষকে হুট করে ছেড়ে দিতে পারে সে তাকে খেলনা হিসাবেই ব্যবহার করুক না কেন!মায়া তো থাকে নাকি!

একথা আমরা সকলেই জানি কিংবা সাধারণ জ্ঞানেও এই কথাটা মানি যে ভালোবাসার সময়সীমা যত দীর্ঘ হবে সেই ভালোবাসার মানুষকে ত্যাগ করা বা ত্যাগ করে চলে যাওয়া ততটাই বেদনাদায়ক হবে।তবে একবছরের ভালোবাসা বা কিছুদিনের ভালোবাসা যে পীড়াদায়ক নয় এটা বলা ভুল।এক্ষেত্রে যারা আপাতত এই ধরনের প্রতারনার স্বিকার হননি কিংবা কোনোদিন কাউকে ভালোবাসেননি তারা এই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন বলে আমি মনে করিনা।

এখন আসি প্রেমের দাবিতে ধর্ণার বিষয়টিতে।যদিও অনেকে এই বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে দেখতে একপ্রকার বিরক্ত হয়ে পড়েছেন।তাদেরকে আরেকটু বিরক্ত করি আর কি!এখানে দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্কের পর ছেলেটির মাথায় হঠাৎ বাজ আছড়ে পড়ে।রাগ-অভিমান করে ব্লক করে দেওয়া কিংবা কথা না বলা ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক কেননা দুধ ছাড়া যেমন ক্ষীর হয়না তেমনি রাগ-অভিমান ছাড়া ভালোবাসা ঠিক জমেনা।তবে এই ধর্ণার বিষয়টি একটু ভিন্ন।এখানে রাগ-অভিমান করে ব্লক করা,কথা না বলা এসব ঘটেনি।এখানে ছেলেটি দীর্ঘ আট বছর পর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে।

তবে ছেলেটি এখানে যে ব্যতিক্রমী কাজটা করেছে সেটা হল ছেলেটা নিজেকে আত্মহনন করেনি।প্রথমত ছেলেটা মেয়েটার বাড়ির অভিভাবকের কাছে বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে গিয়েছে,তাদের ভালোবাসার কথা জানিয়েছে।ছেলেটা বারংবার চেষ্টার পর যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন ধর্ণার মতো ব্যতিক্রমী পথ চয়ন করেছে।সম্ভবত ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা পূর্বে ঘটেনি এমনটি দাবি করা যায়।

এখানে সমস্যাটি হল আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল ছেলের এই কাজটিকে হাস্যকর মনে করেছে কিংবা ছেলেটির এই কাজটিকে অন্যায় মনে করেছে।অনুরূপ কাজ একজন মেয়ে করলে... বাকিটা আশা করি বলতে হবেনা।একথা ঠিক যে জোর করে ভালোবাসা আদায় করা যায়না তবে দীর্ঘ আটবছরের ভালোবাসার শিখা হঠাৎ নিভে যাবে এটা একজন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা কিভাবে মেনে নিবে!

ভারতবর্ষে অনেক বিপ্লব কিংবা আন্দোলন ঘটেছে তবে মনে নিয়ে খেলা করা-এর বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার বিপ্লব ঘটেনি।তবে এই ধরনের ব্যতিক্রমী বিপ্লব ভারতবর্ষে কি দরকার ছিলো না!

আমি মনে করি এই ধরনের বিপ্লব ভারতবর্ষে অবশ্যই দরকার ছিল।এখানে যুবসমাজ একটা শিক্ষা পেয়েছে বলা যায়।১০০জন বা ১০০০জনের মধ্যে এই ঘটনা দেখে একজনও যদি শিক্ষা নেয় তবেই এই বিপ্লবের সার্থকতা।কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে ভালোবাসার নামে প্রতারণামূলক কাজ করার ক্ষেত্রে যদি একবার চিন্তিত হয় তবে সেটা ভারতবর্ষের বৃহত্তর জনজাতির ক্ষেত্রে কি সুফল নয়!তবে এই বিপ্লব কতটা কার্যকরী হলো এটা আমরা জানতে পারবো না এই যা।

এবার আসি ছেলেটি একপ্রকার জোর করেই মেয়েটিকে বিয়ে করেছে তাদের পরবর্তী জীবন কতটা সুখের হবে এই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।যে মেয়ে আট বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করতে পারে সে নিশ্চয়ই বিয়েকেও অস্বীকার করতে পারবে!তারপর ছেলের বাড়ি থেকে কিংবা ছেলে স্বয়ং পণের জন্য মেয়ের উপর অত্যাচার করবে না এমনটিও দাবি করা যায় না! এই প্রশ্নগুলি আমার নয়,আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল থেকে উঠে এসেছে এই ধরনের হাজারো প্রশ্ন।

এবার শুরু করি আমার প্রশ্ন।যে ছেলে নিজের জীবনের পরোয়া না করে একটি মেয়ের জন্য ধর্ণায় বসতে পারে তার ভালোবাসা ঠিক কতটা হতে পারে!যদিও মানুষের মন পরিবর্তনশীল তবুও এই ধরনের ঘটনা করার পূর্বে ছেলেটির মনে কি ভয় থাকবে না!দ্বিতীয়ত-আট বছরে ছেলেটির উপর কি মেয়েটির এক ছিটেফোটাও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়নি!ছেলেটি একপ্রকার অসুস্থ হওয়ার পর মেয়েটি বিবাহের জন্য রাজি হয়।এখান থেকে কি বোঝা যায়!ছেলেটির প্রতি মেয়েটির একটু হলেও তো ভালোবাসা ছিল!

যাই হোক অনেক বেশি বলে ফেললাম।এখন আশা করি ছেলেটির সমুদ্রের মতো অন্তহীন ভালোবাসায় মেয়েটি এক ছিটেফোটা ভালোবাসা নিয়ে দুজনে পরবর্তী বৈবাহিক জীবনে সুখ খুঁজে পাবে।তাদের পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা রইলো।ভারতবর্ষে প্রেমের প্রতরণামূলক ফাঁদ থেকে ছেলে মেয়ে উভয়েই রক্ষা পাক এই আশা রাখি।

নুনের কৌটো : অসীম মালিক




                     ( ১)
নুন ,
তুইতো ঝালেও আছিস
ঝোলেও আছিস
অম্বলেও আছিস ।

তুই তো সমুদ্রকে ভালোবাসিস !

নুন ,আমি যে বস্তির দগ্ধ চাঁদ ,
তোকে উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাই ---
একমুঠো গরম ভাতের সঙ্গে
তুই একটিবার আমার ঘরে আসিস ।

                            (২)
নুন
    নুন
         নুন ....

তোর গুনে বিস্বাদ লাগেনি ,
                         কচিপাঁঠার খুন !

                              (৩)

নুন ,
তুই কি খবর রাখিস ?
        একটা আস্ত নদী খেয়েও
                  কেন সমুদ্রের হয়না অবগুন !

                                  (৪)
নুন ,
   নুন ,
       নুন ....

তোকে দেখেছি ঘামে ।
শূন্য থালায় হারিয়ে গেছিস ,
                  ধর্মতলার জ্যামে ....

                                      (৫)
নুন ,
তুই কি জানিস ?
অন্ধকারেও বস্তির ছেলেটা
করে
      গুন
            গুন ....

                                    (৬)
নুন ,
   নুন ,
       নুন .....

ভাতের থালা দোলপূর্ণিমার চাঁদ হলে
            তুই আমার ফাগুন ...

সৌরভ:দোলন দাস মণ্ডল



সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছ তুমি,
প্রতিটা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে সে তোমার
নীল শার্ট, নীল জিন্স, চশমার ফ্রেম.....
চলার পথেই তোমার হাত ঠিক করে নিলো চুল। 
তুমি ছোট থেকে বড় হতে হতে মিশে গেলে ভীড়ে,
খুব সামনে ছবি হয়ে ফুটে উঠলে তারপর
হাতের ইশারায় তাকে ডেকে নিলে কাছে।
পাশাপাশি হাঁটছে এখন দুটো মানুষ,
পা মেলাচ্ছে পায়ে ।
এ ছন্দ যেন ভুল হবার নয়!
দু'জোড়া আড়চোখের দৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে গাল-কপাল-চুল পরস্পরের
এখন তার সামনাসামনি বসে তুমি... কথা ঝরে পরছে টুপটাপ
তোমার হাত আবার ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার চুল অভ্যাসবশত।
আবার বদলে যাচ্ছে স্থান, সামনে থেকে পাশে....
পথের দোলানিতে হাঁটু ছুঁয়ে যাচ্ছে হাঁটু,
হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে হাত। 
চোখে চোখও যাচ্ছে ছুঁয়ে.....
ভিতরে ভিতরে অনুসন্ধিৎসু আরও দু'জোড়া চোখ...
ঠোঁটের পাতারা গল্প বুনছে।
গভীর পুলকে হেসে উঠছে সময়।
ধারাপাতের হিসাব থেকে দুটো মানুষ সংখ্যা তুলে নিচ্ছে ইচ্ছে মতো।
তারপর নিজেদের মন মতো লিখছে নামতা।

খুব কাছ থেকে আমি ওদের দেখছি...
এ শহর ওদের চেনে না,
তারপরও ওদের গা থেকে খুব সন্তর্পণে মেখে নিচ্ছে সৌরভ
রেলস্টেশন থেকে পথ, পথ থেকে শপিং মল, শপিংমল থেকে ফুটপাত....।

এর বহুদিন পর,
অনেকগুলো শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে
একলা জোড়া পা...আজও
শহরটার শরীর জুড়ে গন্ধটা খোঁজে,
মিলিয়ে যাওয়া ধূলোছাপে পা মিলিয়ে হাঁটতে যায়...
ফুটপাতের ঘাড়ে নাক গুঁড়ে গন্ধটা নিতে চায় প্রাণপণ...।

কিছু গন্ধেরাও আসলে নদীর মতো.....
যার উৎস থেকে মোহনা...মোহনা থেকে উৎস..
শেষ হয়, তবু শেষ হয় না।

 

স্ত্রী : শুভ্রা দে (লন্ডন)





আমি নারী তাই তো পুরুষ তোমার পুরুষ বলে  এত গর্ব।
আমি নিচু করি মাথা তাইত পুরুষ তুমি পারো মাথা উঁচু  করে চলতে।
আমি কাঁদি তাইত তুমি পুরুষ পারো অট্টহাসি হাসতে।
আমি রাখি গুছিয়ে তোমার সংসার  তাইত পুরুষ  তুমি সুখি।
আমি দিই তোমায় সন্মান তাইত তুমি পুরুষ পারো নারী কে করতে অসন্মান।
আমি নারী।
পারি আমিও হতে পুরুষ কিন্তু হইনা
থাকি স্ত্রী হয়ে তবেই তো  বাঁচো তুমি পুরুষ।
নারী সমর্পণ করে নিজেকে তবেই আজ তুমি পুরুষ।
অবহেলা,অনাদর, অপমান নিজের অস্তিত্ব ত্যাগ করি, যাতে তুমি থাকো  অহংকারি হয়ে।
বেঁচে আছি পরাধীন হয় তবেই তো তুমি পুরুষ স্বাধীন।
বেকার নই আমি!  আমি নারী আমি ই শক্তি।
পুরুষ তুমি কি প্রমাণ করতে চাও। নারী আমি!  আমার জন্যই তোমার অস্তিত্ব।
নারী আমি আমার জন্যই পুরুষ তুমি।
 আমাতেই জন্ম তোমার।
আমি নারী!  নারী আমি।
আমি গর্বিত আমি নারী।
আমি পুরুষ নই।

উপলব্ধি শিবির:অঞ্জনা দে ভৌমিক




জীবনের করিডোরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছে
উপলব্ধি শিবির!
হৃদয়ের আকাশে আবেগের প্রহরী সাক্ষ্য দেবে মরনে।
চোখে, পাপ পূণ্যের সঞ্চয়ের স্তুপ!
বেহাল জীবনের কিছু জিজ্ঞাসা?
দৃষ্টিতে,  ধ্বংস স্তুপ!
পিপাসা প্রশ্বাস ছুঁয়ে, ক্লান্ত হৃৎপিন্ড দিশাহারা;
দিঘির জলে ভিড় করে আসে সন্ধ্যার তারারা
রাত্রি এসে শেখায় কানামাছি খেলা।

চাঁদের ছবি যখন নদীর জলে
মিষ্টি ছোঁয়া  তৃষ্ণা মেটায় শীতল বুকে ;
আগুন নিয়ে যত খেলা,  কাঁদায় বিশ্ব নগরীকে
হিসাব নিকাশ  জীবন খাতায় তারই অংক করে।
কেউ বা কাঁদে সারারাত জেগে
কেউ বা হাসে তৃপ্তির অহংকারে!
জীবনযুদ্ধে স্যালুট করে অস্তমিত সূর্যে,
পূর্ণতার সন্ধানে।


স্তব্ধতা:মিতা বিশ্বাস বসু



দিনের আলোতে
যে কথা স্তব্ধ
আঁধারে সে কথা
সাবলীল তত,
মনের বার্তা মনেতে চলেছে-
কালোতে মাখিয়ে
ভাবনা জুড়ছে।

নামুক আঁধার বন্ধ চোখেতে
ভালোবাসা শুধু আছে অনুভবে,
পারাপার তার
নাই কোনখানে-
'স্তব্ধতা'-সে তো
জীবনের মানে।


ভাবনার আঁচলে তোমার রং : প্রণব রায়




এক আঁচল বাতাস যখন
    ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে
     কল্পনাকে সুড়সুড়ি দেয়..
আমি তখন অন্ধ বাউল
    একতারাতে হারিয়ে গিয়ে
   তোমার রঙে একলা রাঙি;
এক আকাশ ভাবনা যখন
  আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে
    নতুন দিনের গল্প বলে...
আমি তখন আকুল পাগল
            দিগন্তেতে ছুটে গিয়ে
    তোমায় ডাকি দুহাত তুলে;
একটি দুটি স্বপ্ন যখন
      বোতাম খুলে উঁকি মেরে
    ঘুলঘুলিতে লুকিয়ে পড়ে..
আমি তখন ফেরিওয়ালা  স্বপ্ন নিয়ে একলা হাঁটি
পড়ে থাকে বঞ্চিত সব পথের মাঝে ;
দুচার ফোঁটা বৃষ্টি যখন
      আমার কাছে ছুটে এসে  সরস করার উপায় খোঁজে...
আমি তখন ঝর্ণা হয়ে
 তোমার বুকে হারিয়ে গিয়ে  উড়াই নিশান ঠোঁটের ভাঁজে।

বালিজুড়ি :তাপসী লাহা





প্রত্যাবর্তন
মানে ফিরে এলে,

দু পায়ের সমগ্রে থিতিয়ে জমে যাওয়া ভেজা বালির ভার।

শুধু  কি  এ ভার  নিয়েছি!

সাথে মিশে আছে মনের নিঝুম ঘর উপচে পড়া কালিঝুলি।

রোজ দেখি ঝাড়বো বলেও  হাত লাগাই না।

মলিনতার সাথে ধূসর বিষাদের অনুষঙ্গ।


মুক্তির কথা ভাবিনা।


শুধু এসব অন্যমনস্ক আবহের প্ররোচনায় টের পাই না ঘাতক শেকড়ের বিস্তার পায়ের তল ভেদ করে জাপটে ধরেছে অবদমনের মাটি আর আমার ঘরে ফেরা বাতিল হয়ে যায়।

পোড়া : শ্যামল কুমার রায়



                         

               আগুনে সব পোড়ে
               সোনা গলে,পুড়ে খাঁটি হয়।
               মনও পোড়ে। তবে-
               মন কষাকষিতে, বিরহে, বিচ্ছেদে-
                        এমন কি প্রেমের আগুনেও।
               সব পোড়াতেই -
               শেষে পুড়তে হয় নিজেকেই।
               কখনো চিতার আগুনে-
               আবার কখনো বা জীবনে।
               একটা খাঁটি সোনা-
               চির ভাস্বর,
               জীবনে, মননে।
                

স্ট্রাজেডি বিকেলে স্টপ: বিকাশ দাস (বিল্টু )





একটি তরতাজা বিকেলে পেন্ডুলাম ঘড়ি টিক টিক আওয়াজে মনের স্রোতের লাভাকে আগ্নেয়গিরির লাভা করে বুনো মহিষের মতো চঞ্চল করে তোলে....

কভার পেজে তোমার ছবি, "ব্ল্যাক ডে "হয়ত আমারই, পুরানো মলাটটা বেঘোরে মারলো...

জামার পকেটে শিরশির হাওয়াতে উত্তপ্ত ধমনী ;
হার্ট বিট মেপে দেখি ডানহাত বামহাতের উপরে রেখে :72 প্লাস

বুক পকেটে রাখা তোমার দেওয়া শেষ বাটা পান আজ ঝিমিয়ে আছে;রস নেই।ঠিক আমার কিডনীর মতো, সেটাও তো নিকোটিনে ভরা ...

তবুও বাটাপান মুখে দিয়ে: হারিয়ে যাওয়া রোমন্থনকে ডেকে তুলি

সদ্য কেটে নেওয়া  বোরো ধান ক্ষেতের উপর তোমার নগ্ন পায়ের জলচাপ খুঁজি

কুড়িয়ে নেওয়া ধানের খোঁসা ছাড়িয়ে, মুখে নিয়ে দানা একাই হেঁটে চলি দিগন্তের পথে, কিছুটা অভ্যাসগত....

যেখানে মাছরাঙা ঠোঁটে মাছ নিয়ে আমার অপেক্ষায়..... তবুও কল্পনা হয়ত !

শেষ বিকেলের শেষ চিঠি তবুও ডাকে গেলোনা, চিঠি তো গাঁজার কলকেই হলো.... বা !!বা'রে !!

আজকাল বিকেল গুলো খুবই ভাবুক করে তোলে, বকবক করে ফেলি অনেকটা বেশিই মেকি হয়ে -

তবে মেকির আড়ালে বুক পকেটের ব্যথা জমাই থাক পেন্ডুলামের ঘড়ির কাছে

টিক টিক টিক... স্টপ.... ব্যাটারী নেই, অভিশপ্ত বিকেল তবুও রেহাই দিলো না......

এই বুঝি স্ট্রাজেডি... হা হা হা... !!!

              

দিবস গুলি পালিত হয়:শুভঙ্কর রাহা




২৭ শে জুন ।
গত কয়েক বছরের মতো এইবছরেও দেবু দা সকাল সকাল পৌঁছে গেছেন Lilabati Orphanage এ। সাথে নতুন জামাকাপড়ের কয়েকটি সেট, হরেকরকম মিষ্টি ভরা কিছু প্যাকেট এবং একটা কেক।
পৌনে আটটায় প্রার্থনা সেরে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলো অদ্ভুত এক আনন্দ এবং নতুন কিছু চমকের আশায় দেবু দার কাছে এসে হাজির হলো। দেবু দা কেক কেটে সেই কেক , উপহার এবং মিষ্টি গুলো ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোর মধ্যে ভাগ করে দিলেন।

ওখান থেকে বেরিয়ে অফিসরুমে এসে এক টুকরো কেক orphanage এর কর্তা সৌমিত্র বাবুকে দিয়ে দেবু দা বললেন, " সৌমিত্র বাবু এটা আপনার জন্য।"

সৌমিত্র বাবু কেকের টুকরো টা খাওয়া শেষ করে দেবু দা কে জিজ্ঞেস করলেন, " দেবব্রত বাবু, গত ৭ বছর ধরে আপনাকে দেখছি প্রতি ২৭ শে জুন আপনি এই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু গুলোর সাথে দিনটি উদযাপন করেন। কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করি? "
-" আরে না না কিছু মনে কেন করব? অবশ্যই জিজ্ঞেস করুন। ", দেবু দা বললেন।
- " এই ২৭ শে জুনেই কেন? আজকের দিনটিতে কী হয়েছিল দেবব্রত বাবু? "

দেবু দা একটু থমকে গেলেন। চুপ করে নরম হয়ে যাওয়া চোখের কোনা দুটো মুছে দেবু দা বললেন," সৌমিত্র বাবু, তখন আমি কলেজের লাষ্ট ইয়ারের ছাত্র । আমার বাড়ির থেকে ২ টো গলি পাশেই সোহিনী থাকত। আমি বই-খাতা গুছিয়ে টিউশন যাই, সে দাঁড়িয়ে থাকে গলির মাথায়। উৎসুক চোখ, হেয়ার ব্যান্ডে ঢাকা ছোট চুল। ফ্রকের লেস আঙুলের মাঝে জড়াতে জড়াতে লক্ষ্য করে আমার চাপ দাড়ি বেয়ে নেমে আসা জল, লক্ষ্য করে কপাল থেকে গড়িয়ে আসা ঘামে ঘোলাটে হয়ে যাওয়া চশমার কাঁচ, অদক্ষ সাইকেল চালকের মতো কাঁপতে থাকা হাত, এককথায় সর্বাঙ্গ।

এভাবে একদিন আলাপ হলো। কথা হলো।
তারপর একদিন বিকেলে বাড়ি ফিরছি ওদের গলির সামনে দিয়ে। পথ আটকে বলে উঠলো, 'দেবু দা জানো আজ আমার জন্মদিন।'
আমি বললাম কি রে তুই? আগে জানাস নি কেন? আজ তো তোর দিন রে পাগলি। কী নিবি তুই বল?
ও বললো, ' দেবে যা চাইবো?'
আমি বললাম, আমার সাধ্যের মধ্যে হলে নিশ্চয়ই।
ও বললো, ' দেবু দা আমাকে ওই অনাথ আশ্রম টায় নিয়ে যাবে? ওই নিষ্পাপ ছেলেমেয়ে গুলোর সাথে আজ দিনটা কাটাব।'

আমি ওর এই মিষ্টি বায়না রেখে ওর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম সেই প্রথম। শেষবারও বটে।
কারন তারপর তার না বলা বায়না টা আমি বুঝতে পারা সত্ত্বেও আমি মুখ ফুটে তাকে বলতে পারি নি।

শেষে আমাকে বলেছিল, "ভিতু তুমি একটা"।
তারপরেই দৌড়ে তার শেষ চলে যাওয়া।

সৌমিত্র বাবু আজই সেই ২৭ শে জুন। সোহিনীর জন্মদিন। ও তো একমাত্র মুখফুটে এটাই চাইতে পেরেছিল আমার থেকে। "

সৌমিত্র বাবু তখন হতভম্ব। মনে মনে ভাবছেন- এইভাবেও দিবস পালন করা যায়?
হ্যাঁ। আমাদের চেনা অচেনা পরিবেশের মধ্যেই এমন কতশত দিবস পালিত হয়। হ্যাঁ এইভাবেই দিবস গুলি পালিত হয়।


আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




।। তেইশ ।।



          মানুষ মুখে বলে এক, আর যখন কাজ করতে যায় তখন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ। এটা দিনের বেশিরভাগ সময় করে বলে এটা তার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু করার নেই। চেষ্টা করলেও সেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারছে না। কারণ তার ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকে সে এইসবেরই অনুশীলন করেছে। কিন্তু যখন সে বাইরে আসছে, মানুষের সঙ্গে মিশছে তখন সে নিজের একটা অন্যরকম ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাইছে। আসলে সে তো জানে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। আসলে বাড়িতে যে জামাই পড়ুক, বাইরে একটা অন্যরকম ছাল দরকার হয়ে পড়ে। এটাও ঠিক সেরকম। খুব ঘনিষ্ঠ জন যখন এটা করে তখন এটা খুব কষ্ট হয়।
আমরা অসহায়। কিছু করার নেই। বাঁচতে তো হবে। তাই এসব মানুষদের নিয়েই পথ চলতে হবে। জীবন থেকে বাদ দেওয়ার উপায় নেই, তাহলে তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।



।। চব্বিশ ।।


          প্রায় ত্রিশ বছর লেখালিখির সঙ্গে ঘর করার পর মনে হল, আমি লিখতে পড়তে দুটোই ভালোবাসি। লেখা ছাপানোর থেকে লেখা লিখতেই আমি বেশি খুশি হই। আমি সবসময় বলি, লিখে আমি যে আনন্দ পাই, সেই আনন্দ আমাকে কেউ কোনদিন দিতে পারবে না। এতদিন সাহিত্যের সঙ্গে ওঠাবসা করার পর বুঝতে পারলাম, এটা একটা এমন জগৎ যেখানে থাকে সম্পূর্ণ নিজের একটা পৃথিবী। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা যেখানে প্রবেশ করতে পারে না। ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। কে কত বড় কবি সে তো সময় বলবে। কিন্তু একটা জিনিস পেয়েছি ------- হাজার না পাওয়ার মাঝেও নিজের মধ্যে পরিপূর্ণতার একটা স্বাদ। এজন্য সাহিত্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

সকাল: অজাত শত্রু




মিঠে আলো ,কে ছুঁলো? রোদ ভিজেছে জানালা।
ঘুম ভাঙা গান,হারানো পাখির কলতান,মুখ ছুঁয়ে যায় ওড়না ।।

বেহাসাবি দিনযাপনে ,দৌড়ঝাঁপময়।হাতছানি'র সময় ।
আজ চেনা মুখ কাল মুখোশ'এ ,বাঁচার অভিনয় ।।

হদ্দ বোকার মত আমিও গিলছি আবেগে
ভাঙছে ,ভাঙছি নিজেই নিজে,চোখ ক্লান্ত হলে ।।

তারপর দীর্ঘ মৃত্যুর উপভোগ।নিথর শরীর
চোখ খুলে দেখি ,একা নই, অনেক মাছির ভিড় ।।

আলো - ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। একুশ ।।




          একদিন এক কবিসম্মেলন থেকে রাতের ট্রেনে ফেরার সময় মনে হল, কতদিন বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা হয় নি। কথাও হয় নি কতদিন। এরকম মাঝে মাঝেই মনে হয়। এমন নয়, কবিতা লেখার একটা ঘোরার মধ্যে আছি তাই এমন একটা ইচ্ছা জেগে উঠেছে। এই মনে হওয়াটা ভীষণই স্বাভাবিক। নিজের মধ্যেই কেমন যেন একটা তালগোল পাকিয়ে যায়। কিছুতেই সেই জট ছাড়াতে পারি না। ভেতরে ভেতরে এত অস্থির হয়ে উঠি যে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারি না। জন্মগ্রামে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা দূরে থাকি। মনে হয় এক্ষুণি দূরত্বটা পেরিয়ে যাই।
          যে কথা মাকে বলা যায় তা তো আর কাউকে বলা যায় না। হয়ত বলা যায় কিন্তু শুনবে কে মায়ের মতো অত ধৈর্য্য ধরে ? কার অত সময় আছে ? তাই বলতেও পারি না। বুকের মধ্যে জমা হয়ে থাকে কত কথা। হঠাৎ যেদিন সন্ধেবেলা বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় সেদিন বই পড়তে, কবিতা লিখতে কিছুই ইচ্ছা করে না। চোখের সামনে ভাসে,  মা রান্না দুয়ারে বসে ভাত রান্না করে। ভাত ফোটার আওয়াজ শুনতে পাই। খিদে বাড়তে থাকে। রান্না দুয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকি। লম্ফর আলোয় মায়ের মুখের ঘাম চকচক করে। একসময় মা ভাত খেতে ডাকে। গরম ভাতের গন্ধ আর মায়ের মুখের হাসি। আমি ভাত খাই আর মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কত বছর কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি। তাই মাঝেমাঝেই মাথাটা খুব ভারি হয়ে যায়, কিছুতেই তুলতে পারি না।



।। বাইশ ।।


          রথ এলেই মেজ জেঠিমার কথা খুব মনে পড়ে। আমাকে রথ দেখতে দিত পঞ্চাশ পয়সা। আর ছোটো ঠাকুমা দিত পঞ্চাশ পয়সা। তবে মেজ জেঠিমাই এই নিয়ম প্রথম চালু করে। আমার একটা মন আছে আর সেই মনও আনন্দ চায়। তাই কোনো মেলা উপলক্ষে আমার মতো একটা ছেলেকে পয়সা দেওয়া যেতেই পারে। এই এক টাকা নিয়ে আমি সেদিন রথের রাজা। আজ বড় হয়ে গিয়ে কত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পয়সা দিতে হয় কোনো মেলা উপলক্ষে। খুব আনন্দ পাই এসব দেওয়াতে। তবুও আজ খুব পেতে ইচ্ছা করে। আমি চাই কেউ মেলা উপলক্ষে আমাকেও পয়সা দিক। তবে এসব কথা তো কাউকে ভুলেও বলা যাবে না। কারণ খুব সহজেই সে আমাকে পাগল বলে চিহ্নিত করবে। মনে পড়ে, তখন মহাশ্বেতা দেবীর "বর্তিকা" পত্রিকাটি দেখাশোনা করি। বিকেল হয়ে গেছে। কাজ শেষ করে বাড়ি আসব এমন সময় দিদি আমাকে ঘরে ডেকে দশটা টাকার একটা নোট হাতে দিলেন বইমেলায় যাবার জন্য। আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম সেদিন।  সত্যিই আজ আমার জীবনে পয়সা দেবার মতো কোনো মানুষ নেই।




অশ্রুবারি : মান্নুজা খাতুন



কিছুক্ষণ আগেই এই শহরের বুক ছেয়ে নেমে এল
বজ্র-বিদ্যুৎসহ ঘন কালো মেঘ
বজ্রের ধাক্কায় ভেঙে পড়ল মনের অর্গল গুলো
আঁখি পল্লবের বাঁধ ভেঙে নিমেষে নেমে এল
বাঁধ ভাঙার বন্যার জলের ধারা
সাজানো স্বপ্ন গুলো নিমেষে ভাসিয়ে নিয়ে গেল
তপ্ত জলের দুর্গম ধারা
তবু! তবুও বেচে ওঠার লড়ায়ের খেলায় মেতেছে স্বপ্নরা
তরবারি হাতে নেমেছি আমি ভীষণ রণোন্মাদনায়।।

সংকোচিত প্রেম : শুভঙ্কর বিশ্বাস




অস্মিতা,
ভাবো,হেসো ওঠো,কেউ নেই ভালোবাসার
সন্ধ্যাতারার গায় মুছে ক্লান্তি,জাগো আবার
এতদিন রক্তে পথ চলা ,ঠোঁট রাখার আশ্বাসে
স্তম্ভিত বুক ফুরে সূর্য ওঠা যৌবন,অবাক কেন?

অস্মিতা,
গাঢ় সবুজে রক্তিম ঠোঁট ঠোঁট আবেগ
দেওয়াল ভাঙা ,ঘুলঘুলি বাওয়া আলোয়,
তপ্ত মরুতে বাষ্পিক অশ্রু জলীয় প্রতিশ্রুতি
আন্দোলিত পাতে ঘরবাঁধনে আপন স্বপ্ন মিথ্যা।

অস্মিতা,
দ্বাদশ নং চিঠি,হতাশা উত্তর ,তোমার প্রথম কান্না
অষ্টাদশে অপেক্ষার বালুচর,বিনিদ্র নদীর পথ খোঁজ
কি সমাজ!মানল না চিরন্তন স্বপ্ন,কেন বলো তো?
প্রশ্ন একটাই বিনুনি করে আজও কি হাসো?

আজো ভুলিনি : বারেক উল্লাহ





আজো স্মৃতিতে স্মরণে বারেবারে দেয় হানা বাহান্ন সনের কাহিনী,
ভাষার তরে রক্ত দিয়েছিল যারা তাদের আজো আমরা ভুলিনি।
পাকিস্তানি শাসক,দালাল  কেড়ে নিতে চায় যখন মুখের ভাষা বাংলা আমারি,
তখনি গর্জে উঠে  বাঙ্গালী রাজ পথ মুখরিত করে তুলে মিছিলের সারি।
এদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চায় যখন পাকিস্তানি  কুশাসক,
তখনি বাংলার জনগণ জাতীয়তাবাদে হয়ে উঠে আস্তে আস্তে  সচেতন।
বাঙ্গালীদের দমিয়ে রাখতে পাকিস্তানি শাসক যখন জারি করে ১৪৪ ধারা,
বাঙ্গালী তা ভঙ্গ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লে পাক হানাদার নির্বিচারে গুলি চালায়।
রক্তে তখন রঞ্জিত হয়ে শহীদ হলেন সালাম,বরকম,রফিক সহ আরো অনেক বীর সৈনিকেরা।
তাদের রক্তের বিনিময়ে ফিরে পেলাম বাংলা আমার মাতৃভাষা।


মেয়েদের চরিত্র : অপেক্ষার প্রহর






#মেয়েদের কিছু স্বভাব, চরিত্র, গুণ, আচার, আচরণ, অভ্যাস যা কমবেশ অনেকের ক্ষেত্রেই আছে। অনেকে এখন হয়ত বলবে আমি নারী গবেষক হয়ে গেছি, হু নারী গবেষণাও একটা গবেষণ :


১-কারো সাথে পারুক আর নাইবা পারুক মুখে মুখে তর্ক করেই যাবে।

২-কিছু একটা জানলে নিজেকে অনেক বড় মাপের জ্ঞানী মনে করবে। কিন্তু সে জানেনা এই জানা আরো অনেকেই জানে।

৩-কোথাও জেতে লাগলে আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে একনাগাড় চিন্তা করতে থাকবে কোন জামাটা গায়ে দিয়ে যাবে।

৪-সাজগোজ করে বারবার আড়া চোখে আয়না দেখবে আর নিজেকে ভাববে আলালের বউ দুলালী।

৫-ছোট ভাইকে অকারণে রাগিয়ে দিবে। মাথার চুল সব ছিঁড়ে ফেলবে তবুও তারে রাগাবে।

৬-ভ্যানিটিব্যাগে আলাদা কিছু খুচরা টাকা রাখবে যেন ছোট ভাই চুরি করে নিয়ে যায়। আবার চুরি করলে তাকে বকাবকিও করবে।

৭-প্রিয় মানুষটির সাথে অযথা রাগ দেখাবে। এই ধরো আজ ফোন দাওনি কেন! তুমি অন্য কারো সাথে টাংকি মারো আমাকে রেখে! যাও তোমার সাথে আড়ি।

৮-সারাদিন খাবে কিন্তু মোটা হওয়া যাবেনা। মোটা হয়ে যাবে সে চিন্তা করে তেমন একটা আর খায়না। ডায়াবেটিস রোগীদের মতো।

৯-সন্ধ্যা হলে হতাশা চেপে ধরবে। সারাদিনের কিচ্ছা কাহিনী সব সন্ধ্যা বেলায় বিষণ্ণতার সাথে গণ্ডগোল বাঁধিয়ে দিবে।

১০-তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা হুট করে মুখে বলতে পারেনা কিন্তু মনে মনে হাজার বার বলে দেয়।

১১-জাগতিক সবচেয়ে বেশী খাতির থাকে বাবার সাথে। প্রিয় মানুষ বলতেও একান্ত বেশীরভাগ বাবাকেই বুঝে।

১২-যে মেয়ের বাবা নেই সে মেয়ে জানে পৃথিবী তার জন্য কতটা নির্মম। যখন অনেক কষ্টে থাকে তখন বারবার শুধু বাবাকেই মনে পড়ে। আর কাঁদে।

১৩-শ্বশুর বাড়ীতে যদি তুচ্ছতাচ্ছিল্যতা পায় এরপরেও মা বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বিনয়ী হয়ে মিথ্যা বলে দেয় অনেক ভাল আছি।

১৪-স্বামীকে অপমান করে একরকম পৈশাচিক আনন্দ পায়। আনন্দটা বাহ্যিক। সাইকোলজি ভাষায় এটাকে সেক্সুয়ালি বলে।

১৫-খুব ছোট থেকে পৃথিবীর নোংরামি বুঝে যায় খুব সহজে। প্রকৃতি এই জিনিসটা খুব তাড়াতাড়ি তাদের কাছে পোঁছে দেয়।

১৬-কাউকে অপমান করলে পরবর্তীতে সংকুচিত বোধ করে। মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা করে। নিজেকে তখন অনেক বড় অপরাধী মনে করে।

১৭-প্রথম ফেসবুক আইডি খোলার পর পাসওয়ার্ড মনে রাখেনা। যে খুলে দেয় পরবর্তীতে তার কাছে গিয়ে বলে আইডি হ্যাক হয়ে গেছে।

১৮-সবকিছুতে কারবারি দেখাবে। কেউ কিছু একটা করতে লাগলে যদি সে সামান্যতম কিছু জানে তখন সেখানে গিয়ে কারবারি করবে।

১৯-কিছু একটা জানতে কৌতূহলী হয়ে থাকবে। এই ধরুন আমি আর আপনি একটু ফিসফিস করে কথা বলছি। মাঝখানে সে শুনতে পায়নি। তখন বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকবে কি হইছে, কি হইছে!

২০-কেউ তাকে ভালোবাসে কিনা এই জিনিসটা জানতে আগ্রহী হয়ে থাকে। কিন্তু যখন জানতে পারে বা প্রপোজ পায় তখন আর তাকে পাত্তা দেয়না।

২১-যাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে তাকে নিজের চেয়েও বেশী বাসে। কিছু বললেও মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়।

২২-সহ্য করার ক্ষমতা অসীম। সৃষ্টিকর্তা এই জিনিসটাও এদের অগাধ ক্ষমতা দিয়েছেন যার তুলনা ছেলেরা ক্ষীণ।

২৩-প্রতিটা স্বামীর আসল চেহারা তথা ভণ্ডামি স্ত্রী'রা খুব কাছ থেকে দেখতে পায়। দেখেও কিছু বলেনা কারণ এটা তার আরেকটা পৃথিবী

যেতে নাহি দিব: সুরঞ্জনা বিশ্বাস দে





  তোমার শেষ চিঠিটা এসেছিলো একটা
   সাদামাটা খামে,
   (এখনও চিঠি লেখা রেওয়াজটা অনিকেত
    দেয়নি ছেড়ে ),
   খোলা চিঠিতে কয়েকটা সাজানো শব্দ—
    “তুমি একবার আসবে লাবণ্য
     সেই নীলকুঠির ধারে?”

     অনেক বছর পরে এলাম ,
      যেখানে আমার ঠিকানাটা একদিন
      ভেসে গিয়েছিল কোপাই এর জলে।
      সেই কোপাই,
     এখনও সে চৌডল হারানো কিশোরী
     আর ফুলডাঙার মাঠের পাশে সেই
     পোড়ো নীলকুঠি,রাঙচিতার ঝোপ আর
      পাথুরে চড়াই।
     কোপাই -এর মাটি ছোঁওয়া জলে
   আমাদের ইচ্ছেগুলো তখন ভাসতো টলটলে,
    শেষবেলায় কোপাই -এর বুক ছুঁয়ে উড়ে
     যেত বক, তার পাখসাটে
     এলোমেলো হতো আমার চুল
     তুমি সাজিয়ে দিতে নিজের হাতে।
     এই মুহূর্তগুলোই শুধু এখনও পড়ে আছে
     নোনাধরা সিঁড়ির পৈঠাতে। 
   
    সেবার বান এসেছিল কোপাই -এ,
    তোমার শরীর জুড়ে ছিল তখন পলাশের
     নেশা ,আর আদিবাসী উৎসবের রাত,
     মাদল -মউলের মৌতাত।
   ধীরে ধীরে পাড় ভেঙে পড়ছিল কোপাই-এ,
   পড়ন্ত বিকালে তুমি হাঁটতে পা মেপে মেপে,
    এক ছটাক ,দু ছটাক —শেষ পথ। 
   একদিন বললে “ তুমি এগোও,আমি আসছি”
   সেই শেষ দেখা, তুমি হারিয়ে গেলে।
 
   আজ আবারও আমরা হাঁটছি ,
   ঘর বাঁধতে না পারা দুজন যেমন হাঁটে ,
   পাশাপাশি কোন কথা না বলে,
   কিছুটা পথ,কিছু মুহূর্ত ,কিছু পিছুটান ফেলে,
   চলবো আমরা ,যতক্ষণ না সূর্যাস্ত হয়।
   তারপরে হাসনুহানার বোঁটা বেয়ে নামবে
    চাঁদলাগা রাত,সে এক অন্য মেয়েলিকথা।।

           
              

আবার না হয় বৃষ্টি নামুক :- মুহাম্মদ ইয়াসীন



আবার না হয় বৃষ্টি নামুক অঝোর ধারায়।
পাখ-পাখালী গাছ-গাছালী ঝড়ের বেগে উড়ে হারাক।
পথের ধূলোয় বৃষ্টি নামুক ধুয়ে দিতে
টিনের চালে দালানের গায়ে ময়লা মুছুক।
মনের দেয়াল উড়ো হাওয়ায় দোল খেয়ে যাক
জমে থাকা কালো দাগে
বৃষ্টি এসে রং মেখে যাক।

আবার না হয় বৃষ্টি আসুক রৌদ্র ছায়ায়।
বন-বাদাড়ে শিয়াল হাকুক গলা ছেড়ে।
হাওয়ার ভারে ধান শালিকের ডানা উড়ুক
ধানের গায়ে ঘাস ফড়িংয়ের চলা থামুক।
রাখাল বালক গরুর পালে বাড়ি ফিরুক
চাষী মাঠে কাচি ফেলে একলা হাঁটুক।

আবার না হয় হালকা করে বৃষ্টি নামুক।
বাতাস বয়ে সাদা মেঘে কালো কাটুক।
মেঘের গায়ে নাম লেখা হোক কারো কারো
বৃষ্টির ফোঁটায় গান লেখা হোক নব প্রেমের।
যুগল প্রেমিক বৃষ্টি মাখুক সারা গায়ে
তেপান্তরের মাঠ তাল পুকুরের ঘাট
রহিম মিয়ার ছালা ঘরে বৃষ্টি ঝরুক
বাদ না থাকুক একটি ফোঁটার খালি জায়গা।

আবার না হয় বৃষ্টি আসুক হৃদয় ছুঁয়ে
ঢলে ফোঁটায় গা ফেটে যাক ছিদ্র হয়ে।
ঝমঝমিয়ে শনশনিয়ে বৃষ্টি পড়ে গা ধুয়ে যাক।
মনের মাঝে জমে থাকা পাথরাবরণ
ছয়টি রিপুর সকল ধাপে ভাটা পড়ে হোক নিবারণ।
জগৎ জুড়ে বারতা নামুক শান্তিময়
বৃষ্টি এসে নেক ধুয়ে সব ভ্রান্তিময়।

জল: অভিজিৎ দাসকর্মকার



একটু জল আর
না-ধোয়া রসায়ন ভাঙে
অক্সিজেন পরমাণু।

সারাদিন রাসায়নিক ভাবে সংগঠিত হয় জলের পরমাণুটি---
হাসির আলোকদশায়, হাইড্রোজেনের দ্রাব্যতা স্পষ্ট।

ঠাট্টার নজরে মলিন চোখের কোণায়, আজও কৃষ্ণচূড়ার ফুলফোটে-

আসলে অনুঘটিত ছিলাম-
গাল বেয়ে সরেসপেশীর অনর্গল যাতায়াত,

কেনোনা ---
জল ফেলেছিলাম অনেক
কিন্তু হাত ধোয়া হয়নি এখনো...

সভ্যতা: রবি মল্লিক





ভোর রাতের গাঢ় অন্ধকারের বুকে
বিক্ষিপ্ত তারাদের দীপ্ত প্রকাশ...

দিগন্তের সাঁকো বেয়ে হেঁটে আসা আভা
অন্ত ঘটায় স্বপ্নের-

ঘুমন্ত দানব জেগে ওঠে-
সড়কে, বাজারে , কারখানায়,
কামারশালায় চলে সভ্যতার সৃজন,
গাছের মৃতদেহের শ্রাদ্ধ হয় কংক্রিটে-
তুমি জাপটে ধরো মুঠোফোন,
কৃষ্ণচূড়া মাটিতে লুটায়-

: Breaking news : মল্লিকা দাস



প্রতিদিনের মতোই আজও ভোরে আমি ঘুমচোখে আড়মোড়া ভেঙে তোমাকে খুঁজেছি পাশে....
মনে আছে কেমন করে ভোরের আদর ছুঁইয়ে দিতে কপালে চুমু এঁকে,,, তারপর বেড টি তে চুমুক দিয়ে ভাঙতো তোমার ঘুমের আমেজ,,
কাল রাত থেকেই বৃষ্টির আর্দ্রতা ও ঠান্ডা ঠান্ডা জোড়ালো হাওয়া নতুন করে প্রেম সৃষ্টি করছিল,,, এমন ওয়েদার এ কড়া করে চা তোমার ভীষণ পছন্দের,
আজ ভোরে আমায় ডাকোনি তুমি, তোমার ভালোলাগার মতন করে আদর দিয়ে বানানো টাটকা উষ্ণ চা টাও এখন বাসি, কাল রাত ১ টার breaking news টা এখনও টিভিতে দেখাচ্ছে ..... তুমি আর ফিরবে না সোহাগ মাখাতে আমার ভোরের বিছানায়, আবদার গুলোও ক্রমশ ফিকে হয়ে গেছে.....
নিউজ পেপার পড়তে আজ আমায় সঙ্গ দেবে কে?????
ওহ্, ভুল বললাম কাল রাতের তোমার অ্যাকসিডেন্ট এর খবরটা আজ নিউজ পেপারের শিরোনামে আমার বোবা মনের সঙ্গী হয়েছে.......

বিকেলের রামধনু :রিনা চৌধুরী



 সেই শেষ বারের মতো বর্ষা নেমেছিল,
সেই শেষ বার তুমি বর্ষণ দেখেছিলে,তারপর থেকে তোমার আর বর্ষা দেখা হয়নি।সেই যে শেষবার মেঘের গর্জন শুনেছিলে;থামিয়ে দিতে চেয়েছ বারেবার। কিন্তু মেঘ......? মেঘ ততক্ষণ গর্জে ছিল যতক্ষণ সে বারিধারা হয়ে ঝড়তে পারেনি।তারপর.....তারপর শুনলাম নাকি বর্ষণও থামাতে চেয়েছিলে। তবে আজ আথ শোনো না কেন মেঘেদের গর্জন?কেন দেখতে পাওনা আজ ইর মন খারাপের মেঘলা আকাশ?কেন মেঘ আর তোমার থামিয়ে দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা কে উপেক্ষা করে বৃষ্টি ঝড়িয়ে দেয় না?
   তবে কি তুমি ঠিকানা বদলেছো?বদলে গেছে তোমার আকাশ?বদল হয়েছে কি তোমার আবহাওয়ার পূর্বাভাস?
           যেখানে আমি বারবার চেষ্টা করি মেঘের মন খারাপ টুকু পড়ে নিয়ে,এক লহমায় বৃষ্টি ঝড়িয়ে দিয়ে, মন খারাপ টুকু কে  ~গোধূলি আকাশে  বৃষ্টিভেজা বিকেলের মতোই রামধনু তে মিশিয়ে দেওয়ার।।

বিশ্ব প্রকৃতি মা : নাহার নাসরিন




স্নেহের আসনে আমি তোদের রেখেছি বসিয়ে
ফ্যালনা ভেবে তোরা আমায় দিলি সরিয়ে।
যেই কোলেতে আমি তোদের রেখেছিলাম আগলে
আজ তোরা সেটাই দিলি আবর্জনায় ভরিয়ে।
সুস্থ পরিবেশ,  সুস্থ হাওয়া
 তোদের আমার কাছে পাওনা।
একবারও কি ভেবে দেখেছিস
আমায় তোরা কি দিয়েছিস?
দিন দিন আমি যাচ্ছি ভরে
আবর্জনা আর আস্তাকুঁড়ে।
উনুনের ধোঁয়ায়,  গাড়ির ধোঁয়ায়
দিন দিন আমি যাচ্ছি সর্বনাশায়।
তারপরে তো কলকারখানার ধোঁয়ার
সবার উপরে স্থান যে তার।
শব্দ দূষণের পর্যায় তো হায়
উচ্চ থেকে উচ্চতরে যায়।
ক্ষতি তোদের হচ্ছে জেনেও
মেতে আছিস ধ্বংসের খেলাই।
তারপরও চুপ কি করে থাকি
বিশ্বমাতা যে তোরাই বলিস
আমি যে তোদের মা
বিশ্ব বাংলা,  বিশ্ব প্রকৃতি মা।।

ভোরের প্রথম চিঠি স্মৃতির ঠিকানায় মান্নুজা খাতুন



ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে  ছুটে গিয়ে লেখার খাতাখানি কোলের পরে নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে যেতে। কিন্তু লিখব টা কি? অভিমান? সে তো লিখে শেষ  করা যাই না!  তবে কি কস্ট গুলো লিপিবদ্ধ  করে সাজিয়ে দেব তোমার অর্ঘ্য  হিসেবে? তুমি কি তাতে তৃপ্তি পাবে! আদ্য কি তুমি আমার লেখার  সব টা পড়বে? যদি দুঃখ ময় সুখের কথা লিখি তুমি কি আমার পানে চাইবে? আমার বিবশা বিবর্ণা কালিমাময় মুখের পানে  দৃষ্টি তুলে চাইবে? নাকি! সরিয়ে দেবে সম্মুখ হতে?

 আচ্ছা আমি যদি আমার কস্ট গুলো লুকিয়ে রেখে মিথ্যে সুখের খেয়া তরীটি নিয়ে তোমাদের গ্রামের খেয়াঘাটের অশ্বত্থের নীচে উপনিত হই তুমি কি আমার সেই ছদ্মবেশী সুখ দেখে তৃপ্তি পাবে? তবে তাই হোক প্রিয়! আমি ছদ্মবেশেই আসব তোমার খেয়াঘাটে যে ঘাটের একপাশে রয়েছে আমাদের ফেলে আশা হাজারো স্মৃতির সাক্ষী  বড় অশ্বত্থের গাছটি, যে ঘাটে এখনো মেয়ে বউরা বাসন মাজে , ঝুপঝাপ জলে পড়ে জল ছিটিয়ে  স্নান করে ছোট ছেলেমেয়ে গুলো, দূরে গাছের আড়ালে অপেক্ষায় থাকে কোনো বিরহী প্রেমিক প্রিয়তমার ঘাটে আসার পথ চেয়ে, যে ভাবে তুমি থাকতে আমার পথ চেয়ে।   আজ যদি সেই ঘাটে ফিরে যাই, তুমি কি আসবে? পুরনো দিনের মতো একরাশ বন কলমি হাতে কিংবা কদম্ব ফুল হাতে বরণ করতে। তুমি কি এগিয়ে আসবে?পরিচিত হাসি নিয়ে এক পা দু পা ফেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আসবে কি প্রিয়?  সেই নির্জন নদীর কিনারে যেখানে ঘনঘন হতো আমাদের শুভদৃষ্টি। ফিরবে কি?  সেই স্মৃতির রাজ্যে।

আজ বড্ড মন কেমন করছে। মিশে যেতে ইচ্ছে করছে মাটির সাথে, যে মাটির বুকে রয়েছে তোমার-আমার নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া প্রেমের রেনু, যে মাটির বুকে রয়েছে আমাদের হাজারো স্মৃতির পদচিহ্ন। আজ তার বুকে মিশে গিয়ে তোমাকে না পাওয়ার বেদনা ভুলতে চাই, ওই এক মুঠো ধুলো হাতে তুলে নিয়ে সারা অঙ্গে মাখতে চাই,  আমি চিৎকার করে বলতে চাই, এ ভাবে চলে যাওয়াটা বড় অন্যায় হয়ে গেছে তোমার;  চিৎকার করে বলতে চাই অনুপম!  তোমাকে হারিয়ে আমি একদম ভালো নেই, বড় অসহায় আমি! বড় একাকী। অসহায়ত্বের সেই আগুনে আজ দ্বগ্ধ হয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে চাই। মিশে যেতে চাই স্মৃতিময় সেই ঘাটের পঙ্কিলকে বক্ষে ধারন করে।

অনুপম! এই আজ শেষ লেখা লিখলাম, অভিযোগের ঝাঁপি বন্ধ রেখে, আমার বুকের কস্ট গুলোকে বোতল বন্দি করে শুধু আকুতি টা লিখেছি। এই লেখা পেয়ে অহংকারের জোয়ারে ভেসে যেও না প্রিয়? প্রেয়সীর সাথে মশকরা করো না এ লেখা নিয়ে ! বড় আঘাত পাব প্রিয়; উপহাস করো না, ব্যাঙ্গাত্মক কটু কথার ফলায় বিদ্ধ করে আনন্দ পেও না যে ভাবে ব্যাধ পায় আনন্দ। এই শেষ লেখা লিখলাম প্রিয়, গত দিন হয় তো পাবে না খুজে আমার অস্তিত্ব। যদি ভালোবাসো আমায়,  খুজতে বেরিও না পথে, আমি নিমজ্জিত হলাম অসহায়ত্বের পঙ্কিলে, রেখে গেলাম শুধু ক্ষীনতম পরিচয়, আর আমার অবুঝ প্রেমের হাহাকার।

কবিতারা বড়ো আত্মহত্যাপ্রবণ : অর্পন দে



যে কবিতাগুলো তোমার উদ্দেশ্যে লিখেছিলাম
পূর্ণতা পাবার বিশ্বাস নিয়ে
আজকাল ব্যর্থ হয়ে তারা বড়ো আত্মহত্যাপ্রবন ।

যে শব্দগুলো তোমার হাসির সঙ্গতে অজান্তেই মর্মের জমিন খুঁজে আসতো চাঁদের আলোয় ।
তুমি সংগোপনে সঙ্গ ছাড়ায় তারা আজ প্রতিবন্ধকতায় আরষ্ঠ ।
প্রতিটি অক্ষরও তাই পৃথক পৃথক রঙ নিয়ে বাঁচে !!!
ওই সুবাস রঙগুলির আপাতকোণে মিশে থাকে একরাশ অন্ধকার ...

প্রতি পংক্তির অভিনিবেশ যে কল্পনার উপকূল দিয়ে তোমার মনের আলাস্কা ছুঁয়ে এসেছিল ....
সেই খণ্ড খণ্ড অবশেষ জুড়ে নেমে আসে হাহাকারের অপচ্ছায়া ...
তাই শেষ লগ্নে কবিতারা অপূর্ণতার কারণ বিশ্লেষণ করে ...
উত্তর হয়তো ফোড়নের সন্ত্রাস নতুবা তোমার সৌন্দর্যের মহাকাশে তা নিত্যন্তই মূল্যহীন !!!

ইদানিং কোনো অজ্ঞাতনামা কবি তাই ইনসোমনিয়ায় কবিতার বদলে কষ্ট আঁকে সকলের অগোচরে ...
বোধহয় কষ্ট আড়ালকে ভালোবাসে বলে ...

বৃষ্টির ধ্বনি : মৌ সাহা




ক্লান্তিহীন শুনশান শহরের বুকজুড়ে বিষাদময় প্রহর,
অবিরাম গতিতে ছুটেচলে নির্দিষ্ট সময়।
ল্যাম্পপোস্টের ক্ষীণ আলোয় অচেনা ঝিঁঝিঁ পোকাদের শোরগোল,
ভেসেআসা করুণস্বরে সাইরেনের সুর।
শ্রাবণধারায় ভিজে পরিশ্রান্ত নীড়হারা পাখি।
আনমনে ভাবে মন কত অলীক কল্পনা,
মৃদু আলোয় বৃষ্টির ফোঁটায় অবারিত প্রশ্নের ধারাপাত।
ঘুমন্ত শহরের বুকজুড়ে মানবতার আর্তনাদ ভেসে আসে।
ভেজা শরীর বেয়ে নেমে যায় অতৃপ্ত বাসনা,
কারা যেন ফিসফিস করে বলে তুমি নিষ্পেষিত।
ধোঁয়াহীন কফির মগে উষ্ণতার ছোঁয়া জাগে।
খুঁজেফেরে বিশ্বস্ততার ছায়াশীতল পরশ মাখা ভোর।

আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। উনিশ ।।

নদীর পাশে এসে একবার দাঁড়ালেই হলো। কত কথা যে মনে পড়ে যায়। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, আমার সব হারানো অতীত নদীর শাখাপ্রশাখার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বরং এর উল্টোটাই। কিন্তু তবুও নদীর হাত ধরে আমি অনেক অনেক দূরে চলে যাই। আমার ফেলে আসা পথ। আসলে আমার জীবনের বেশিরভাগটাই নদীকে পাশে নিয়ে কেটেছে। ঠিক একইভাবে গাছের পাশে দাঁড়ালেও আমার অনেক কিছু মনে পড়ে যায়। এক একটা পাতা খসে পরে আর আমিও একটু একটু করে পিছনে চলে যাই। আসলে গাছ নদী ----- এসবই এক একটা প্রবাহ। ঠিক মতো পা মেলাতে পারলে আমরা যেখানে খুশি উড়ে যেতে পারি।


।। কুড়ি ।।

আমাদের ছাত্রজীবনে আমরা শীতকালের পুরোটাই ঘুড়ি উড়িয়ে কাটাতাম। নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে আমাদের বাৎসরিক পরীক্ষা হয়ে যেত। এরপর দুপুর বিকেল জুড়ে চলত আমাদের ঘুড়ি ওড়ানো। একসঙ্গে অনেকজন মিলে নয়। দুজন কি চারজনে আমরা কিছু খেয়েই বারোটা নাগাদ ধান কাটা মাঠে নেমে পড়তাম। একটু দূরে দূরে আমরা বসে পড়তাম যে যার নিজের নিজের ঘুড়ি নিয়ে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে, আমরা ঘুড়ি ওড়াতাম অথচ কাটাকাটি খেলতাম না। এইভাবেই আমাদের মনে ছোটবেলা থেকেই কেটে দেওয়া, ছিঁড়ে দেওয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো স্থান পায় নি।