নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

উৎসব লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
উৎসব লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

📜 সম্পাদকীয় ✍️







"গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ ,আমার মন ভুলায় রে"
দূরে থাকা প্রিয় মানুষ জানি উৎসবেই আসবে ফিরে "।।

উৎসব মানেই ফিরে আসা ,ফিরে দেখা ,মিলন
ছুটির আমেজ,খুশির ছোঁয়া, ঠিক ভালো হয়ে যাবে মন।।

নদীর পাড়ে শুনতে পেলাম,ঢাকের আওয়াজ,ঈদে
মাটির গন্ধে ভিজছে আঁচল,হঠাৎ দেখা ছোট্টবেলার হারিয়ে যাওয়া বান্ধবীকে।।

শালুক ফুলের বউ মালা আর,পদ্মদীঘির পাড়
দেওয়াল দেওয়া মনের ভিতর, ফের পাতাবে সংসার।।

এমন সময় ফুরফুরে মন,ইচ্ছে আলিশ কিনছে বই
দূরের কোথাও বন্ধুকে বলা ,এবার পুজোয় ফিরবো'ই।।

তাই তো আবার নতুন করে ,নতুন ভাবে পথ চলা
মনের ভিতর জমছে কথা ,ফের হোক একটু বলা।।

দেখতে দেখতে কাটছে সময়,গুনছে দিন
ভিড় জমাটি মোড়ের মাথায়, পুজোর আমেজ খুব রঙ্গিন।।

সাজবে আলো,শহর জুড়ে ,মন পড়ে থাক উৎসবে।
দূরেও জানি ফুটবে খুশি,দিনান্তের দুবেলা ভাত,মফঃস্বলে।।


যেমন প্রিয় ফিরলো বাড়ি,বছর পাঁচেক পর,

উমা'ও এলো বাপের বাড়ি ,জানান দিচ্ছে গ্রাম-শহর।।


তাই
সবার কলম লিখছে কথা,জমছে বুকে নিন্মচাপ ,
আপনার “না বলা কথা’য়” ফের নিকোটিন প্রাণ পাক।

হারিয়ে যাওয়া মাস্তুলে ,পুড়ছে সবাই,চিবুকের কাছে একা,
তোমার আমার কথা’র মাঝেই ,মন-জমি কে “উৎসবে’তেই দেখা।।


ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন,হাসি থাকুক প্রিয় মানুষটির মুখে,
শুভেচ্ছাটা সঙ্গে নেবেন,সঙ্গে রেখো এই আগন্তুক কে।।






                                                  ধন্যবাদন্তে,
                     
                                নিকোটিন ও নিকোটিন পরিবার



📜 সুচিপত্র


সুমিত মোদক 
 অরূপ সরকার
   জিয়া 
রুনা দত্ত
শুভঙ্কর গড়াই
 জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি
 রাণা চ্যাটার্জী
মৌসুমী রায়
উত্তম মণ্ডল
শতাব্দী মজুমদার
অমিত কুমার জানা
 মাধব মণ্ডল
 সীমন্তিনী
স্বাগতপর্ণ গোস্বামী
সুদীপ ভট্টাচার্য্য
সায়নদীপা পলমল
যীশু চক্রবর্তী
 সুমিত মোদক
 অমিত কুমার জানা
প্রতিভা দে
 আশীষ মাহাত
শিবানী বাগচী
রবি মল্লিক
আমিনুল ইসলাম
শাহীন রায়হানের গুচ্ছ কবিতা
অনিন্দ্য পাল এর গুচ্ছ কবিতা
 সুজাতা মিশ্র(সুজান মিঠি)
সবুজ জানা ,
অনাদি রায় এর গুচ্ছ কবিতা
অভিজিৎ আচার্য্য
জয়দীপ রায় এর গুচ্ছ কবিতা
তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
আকাশদীপ গড়গড়ী
জিয়াউল হক
কাজী জুবেরী মোস্তাক
 তন্মনা চ্যাটার্জী
জসিমদ্দিন সেখ
মৌসুমী রায়
শুভম চক্রবর্ত্তী
মান্নুজা খাতুন





।।শুদ্ধিকরণ ।।সুমিত মোদক






জেগে উঠে প্রথম সকাল
তানসেনের সুরে .....
সম্রাট অশোকের রাজপ্রাসাদ
দূরে , বহু দূরে ....


তোমার মধ্যে সেই শিশুটি
জাগতে দেখি আবার ....
বিক্রমাদিত্যের সিংহাসনে বসত যে
বারবার , এবার ....


জল চেয়েছি , প্রাণ চেয়েছি ,
বাতাস চেয়েছি শুদ্ধ .....
তোমার সঙ্গে শুদ্ধি করণে
আমরা ঐক্যবদ্ধ ....


মেলে দেবো সবুজ পাতা 
বৃক্ষরাজি , নম্রতায়  ..
চাণক্যর অর্থশাস্ত্রে ইলশে গুঁড়ি
বৃষ্টি আজি , সভ্যতায় .. . 

।।যাপন ।। অরূপ সরকার




    রাত শেষ হচ্ছে বিলম্বিত লয়ে,
বালিঘড়ি ও ক্লান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ,
দূরে কোথাও হচ্ছে দেবীর থানে ওঠার আবাহন 
সময় চক্রে খন্ডিত হওয়া ব্রহ্ম নাভি  জানাচ্ছে দেবীর আগমন।
মুছে গেছে সব হিংস্রতা, আজানের সুরে জেগেছে মানুষ,
হ্যাঁ হ্যাঁ মানুষ,সকলেরই তো মা এসেছেন,
সকলের সুরই মিলে গেছে চন্ডী পাঠে,
ধুনোর গন্ধ গায়ে মেখে নিয়ে নাচছে ওই কুতুবউদ্দিন,
ঈদের তো বাকি আর মাত্র কয়েক দিন।
সমস্ত বেড়া দ্রাঘিমা ও অক্ষ পুড়ে গেছে  মণিকর্ণিকার  ঘাটে,
কোনো ফারাক আর নেই গীতা আর কোরানে,
না প্রয়োজন নেই কোনো পান্ডা বা ঈমামের

জিভ নিজেই স্বয়ংক্রিয়,উচ্চারণ  করতে জানে ।
গীতা ও কোরান দুই আত্মীয় পাশাপাশি শুয়ে থাকে ।

।।একটা নদীর গল্প।। জিয়া




দরজার কোনে উঁকি দিয়ে দেখতাম সিনেমা
মায়ের কালসিটে বেয়ে গড়াতো রক্ত,
ছুটে পালাতাম ছাদের কোনে চুপিসারে
সব চাপা দিয়ে হতে হবে বাবার ভক্ত।

দিন পনেরো কাটতো পেতাম না কোল
মায়ের স্তন অনাহারে গেছিলো শুকিয়ে,
দুধ না পাওয়ায় শুরু হতো অত্যাচার
কাঁদতাম আড়ালে., মায়ের চোখ দিতাম মুছিয়ে।

চাকরির পরীক্ষা আসে যায় পোড়ে বইপত্র
বাবাও কিন্তু চাইতোনা মায়ের হোক আয়,
পাছে স্বনির্ভরতায় সে বিচ্ছেদ চেয়ে বসে
মানসিক যন্ত্রণা দিতো,সাফল্য পাওয়া দায়।

দাদা একটু বড় হলো বুঝতে শিখলো সব
ঘরবন্দি মাকে মারতে দেখে সপাটে দিলো থাপ্পড়,
প্রতিবেশীদের হাসাহাসি সম্মান হলো নষ্ট
দাদার পায়ে পড়লো কোপ ঠান্ডা হলো চড়।

মা ভীষণ অভিমানী দেওয়ালে ঠেকলো পিঠ
আমার বয়স তিন কি চার কিছুই বুঝিনি,
সিলিংয়ে ঝুলছিলো মা চারিদিকে হাহাকার
বোবার মতো দেখছিলাম চোখ মুছিনি।

দাদা বড্ডো শান্ত হলো বাবার মুখে হাসি
আমার মা আমাকে আর সোনা বলে ডাকেনি,
নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ি ঘরের এককোনে
দাদার মুখে সিগারেট আর ঘরে ফেরেনি।

নতুন মা আগলায়নি বাসেনি একটুও ভালো
বাবাও আর বরাবর চায়নি কাছে আসেনি,
অন্য দাদা আপন হলো মেয়ে ঘাড়ের বোঝা
সব হারিয়ে নিঃস্ব, ওরা কেউ কথা রাখেনি।

অন্য দাদা যখন পড়লো ঝাঁপিয়ে.,বয়স নয়
শরীরে কত রক্ত ছিল ব্যাথা পেয়েছিলাম খুব,
দিনে দিনে বাড়লো ব্যাথা কেউ জানতে আসেনি মায়ের কাছে এলাম, দিয়ে নদীর স্রোতে ডুব।।

বিয়োগচিহ্ন: রুনা দত্ত



মনে হয় হারিয়ে যাচ্ছি
বা ফুরিয়ে যাচ্ছি
তাও শব্দরা হারায় না

শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে
লিখে যাই ....

জীবনের কথা আমার কথা
বা তোমার আমার কথা।

এইভাবেই ফিরে যেতে যেতে
বারবার ফিরে আসি
চেতনে বা অবচেতনে
আমার নৈসর্গিক পৃথিবীতে ....

যেখানে আমার জন্য
আজও অপেক্ষায়
অজস্র সাদা কালো শব্দ

তাই আবার কলম তুলেনি
মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে
সৃষ্টি করে চলি ...
জীবনের শব্দরূপ বা রূপকল্প

যা কবিতা হয়ে ফুটে ওঠে
বাস্তবের পটভূমিতে
শেষ বিয়োগচিহ্নের মতো


|| এক বৃষ্টি রাতের ভোর || শুভঙ্কর গড়াই



- আচ্ছা , তোমার বৃষ্টি ভালো লাগে ?
- হুম , ভালো লাগে । রাতের বৃষ্টিটা বেশি পছন্দের,
আর তোমার ?
- আমার ! ,  আমার কাছে বৃষ্টি অনেকটা নেশার মতো,
বৃষ্টির ছন্দে নিজেকে মাতাল বলে মনেহয় ।
- দেখেছো বৃষ্টির দাপট যেনো আরো বাড়ছে ।
- হুম , মনেহয় বৃষ্টি আমাদের কথাগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছে ।
[ হঠাৎই প্রচন্ড মেঘ ডাকার শব্দ ]
- এভাবে কষে চেপে ধরলে যে , একি আমার প্রতি ভালোবাসা নাকি মেঘের গর্জনে ভয় ?
- হুম , আমার ভীষণ ভয় করে ।
- একি , এই যে বললে বৃষ্টি ভালোবাসা , তাহলে মেঘের শব্দে এত ভয় ?
- ও তুমি বুঝবে  না , সব ভালোবাসায় একটা ভয় ও থাকে ।
- আচ্ছা , তাই নাকি ? তা  এইযে তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো , তাহলে এই ভালবাসাতেও বুঝি ভয় আছে তোমার ।
- হ্যাঁ, আছে তো , খুব ভয় পাই ।
- সে কি , আমি কি তোমাকে ভয় দেখায় নাকি ?
- ধুর বোকা !  এ ভয় সে ভয় নয় ।
- তবে ?
- তবে , তবে এই পাগলটাকে সারাজীবন আগলে রাখতে পারার  ভয় ।
- মানে ?
- মানে , তুমি যখন বর্ডারে যাও তখন ভীষণ ভয় করে জানো !
- ধুর পাগলি , এতো কিসের ভয় । তোমার ভালোবাসা কি আর আমাকে মরতে দেবে ।
- এই একদম উল্টো পাল্টা কথা মুখে আনবেনা ।  একটা রাত তোমাকে কাছে পেয়েছি , কাল থেকে আবার দিন গোনা শুরু হবে ।
- তোমার এই খোলা চুলের গন্ধটা আমাকে পাগল করে জানো । সত্যিই আমি বড়ো অভাগা জানো , দিনের শেষে তোমাকে ছুয়ে দেখার জন্য অন্তরাত্মা টা ছট্ফট্ করে ।
- শুধুকি তোমার , আর আমার করেনা বুঝি ।
- এই তুমি কাঁদছো কেন ?
- ও কিছুনা , চোখে একটু জল এসেছে এই যা ।
- এই দেখো বোধ হয় কারেন্ট অফ হয়ে গেল । ড্রয়ারে একটা মোমবাতি আছে , দাঁড়াও ওটা জ্বেলে আসি ।
- দাঁড়াও , অন্ধকারে নেমো না , আমি ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বলছি ।
- কি দেখছো অমন করে , আরে ফ্ল্যাশটা অফ করো আমার তো মোমবাতি জ্বালা হয়ে গেছে ।
- ফুলের বাগান দেখছি প্রিয় । বহু দিনের কাঙ্খিত আমার একান্ত ফুলের বাগান ।
- উফফ , কি যে বলোনা তুমি ।
[ ফ্ল্যাশটা অফ করতেই সমস্ত ঘরটা মোমবাতির অগ্নিশিখার সোনালী আলোয় মেতে উঠলো ]
- দেখেছো বৃষ্টিটা কেমন নিজের তেজ সমান তালে ধরে রেখেছে ।
- হুম , হয়তো আমাদের এই মুহূর্তটাকে আরো ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলার জন্য। হয়তো বৃষ্টি ও রাতের আকাশের সাথে প্রেমে মেতেছে ।
[ এর পর এক স্তব্ধতা , এই স্তব্ধতা যেনো দুটো শরীরের হাজার হাজার কথোপকথনের  একান্ত গোপণ পথ ।এই স্তব্ধতায় দুটি শরীরের আত্মা , দুটি শরীরের হৃদয় যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে , দুটি ঠোঁটের এই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখে যেনো মোমবাতির অগ্নি শিখাও লজ্জায় কেঁপে উঠছে । মোমবাতির আলোয় ঘরে এক অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি হয়েছে , সেই মায়ার বাঁধনে দুটো শরীর অদ্ভুতভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দুটি শরীরের এতদিনের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা সমস্ত ভালোবাসার ক্ষুধা যেনো পাকে পাকে গর্জে উঠছে । এই গর্জন বৃষ্টি ভেজা রাতের গর্জনের শব্দকে হার মানিয়ে আবার ঠোঁটের মিলনে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে । ঘরের দেওয়ালে মোমবাতির আলোয় যেন দুই নগ্ন দেহের ভালোবাসা মাখা আলপনা সৃষ্টি হয়েছে । ]

- তোমাকে এভাবেই আমার অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত কাছে পেতে চাই । বলো , এভাবেই থাকবে তো আমার পাশে । থাকবে তো আমার হয়ে !

- হুম কথা দিচ্ছি অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকব ।

[ অনেকটা রাত পেরিয়ে এসেছে , বৃষ্টির প্রতি ফোঁটা হীরক টুকরোগুলো ধীরে ধীরে আকৃতিতে ছোটো  হয়ে তেজ কমাচ্ছে । মেঘের দূর প্রান্ত থেকে মৃদু মৃদু আওয়াজ ভেসে আসছে ! ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই । কিছুক্ষণ পরেই  বৃষ্টি ভেজা পাখিগুলো ভোরার আলোয় কিচির মিচির শুরু করে দেবে । মেঘের বুক চিরে দূর প্রান্তে মৃত নদীর মতো ভোরের আলো উকি দিচ্ছে ।]

- এই তোমার পিঠের তলায় বোধহয় আমার ব্লাউজ টা আছে , একটু  পিঠটা তলোতো ।
- হুম , এই নাও ।
- এই শুনছো ঘড়িতে পৌনে পাঁচটা বাজে । আমি তোমার ব্যাগ রাতে গুছিয়ে রেখেছি , তোমার তো সাড়ে ছটায় ট্রেন আছে , তুমিও উঠে পড়ো এবার , আমি তোমার জন্য চা করে আনছি । ।


বুঝতে পারছি: জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি






বুঝতে পারছি,


বেশ বুঝতে পারছি ফেসবুকে আটকে গেছে কলম

লাইক ও কমেন্ট

হাত তুলে, হাত বাড়িয়েও

তবু আসছি, তবু লিখছি


সুন্দরীরা ফেসবুকে ভিড় করে আছে

আমাকে আসতেই হয়

লেখালেখি শুরু ফেসবুকে, আমাকে লিখতেই হয়


লিখি, পোস্ট করি

পোস্ট করি, লিখি

‘এক বাঁও জল, দু বাঁও জল’

কখনও তরতরিয়ে, কখনও বেশ ধীরে

পাল তুলে, চালিয়ে পানসি বেলঘরিয়া


ক্রমশ সরে সরে যাচ্ছে দৃশ্য

দ্রুত, অতি দ্রুত

তালে তাল মিলিয়ে আঙুল ছাপিয়ে তরতর

বিজ্ঞাপনের ভাষায় যারে কয়, টু মিনিটস্ নুডুলস্

মন ভরে, পেট ভরে কিন্তু শরীরে লাগে না


দেখি, যদি পারি আসব যাব

নোঙর ফেলব মাঝ দরিয়ায়

ভেসে ভেসে, আর জল ভালো লাগে না







রাণা চ্যাটার্জী'র গুচ্ছ কবিতা





স্বপ্ন সন্ধানী
                 

একটু অন্ধকারের বড় দরকার,
    চারদিকে শুধু আলোর ঝলকানি,
      মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ।
মাঝে আমি, আমি পিঠ চাপড়ানো শব্দ...

মুক্তির অলিন্দে খুঁজে নিতে চাই,
             অন্ধকারের মায়া বেষ্টনী ।
কাউকে চাই না, বিদায় হোক সব
নিয়ন আলো,গেজেট -ল্যাপি আবর্ত..

পারলে দু-চারটা জোনাকি ছেড়ো
        নিকষ কালো আঁধারে....
আলোর তীব্রতা মুক্ত,অদ্ভুত প্রশান্তির
কোমল স্পর্শে,পাহাড় ঘেরা উপত্যকার
                   নিস্তব্ধতায় এক গামলা ঘুম ।





               পুনর্বাসন
           

অনেক তো হলো এবার না হয়
     একটু একা থাকা শুরু করি
             নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ডুবে ...

অনুভবে তোমার মনের গহনে
পাট্টা পাওয়া জমিতে অজান্তেই
         গড়েছি সাত মহলা প্রাসাদ।

মন্ত্রী-সেপাই,বরকন্দাজ ভিড়ে
     দখিনের খোলা বারান্দায়
         নিজেকে দিয়েছি পুনর্বাসন।
লাগোয়া অলিন্দে,দুধসাদা পর্দা,
মখমলি সোফায়, তুমি তুমি আতর গন্ধে
                বেঁচে থাকার নির্যাস।

বুকের মাঝে হাস্নুহানা:মৌসুমী রায়



যাক এটাও অনেক পাওয়া
আজো রয়েছি ঘরের সিলিং এর ঝুলে
হয়তোবা অজান্তেই মনের ভুলে...
রয়েছি বইয়ের তাকে
অথবা আঙুলে গোঁজা সিগেরেটের ফাঁকে।

ভালোবাসার কবরে ঘুমায় হাস্নুহানা
আমার চিতা জ্বলে শরীর পোড়ে
তোমার খাটে রোজ রাতে,
কেউ না পাওয়ার শোকে কাঁদে
কেউ পাওয়ার সুখে মাতে।

যন্ত্রণা পুষে রাখব ততদিন
যতদিন না মুক্তির পথ খুঁজে পাই
জীবনের সুর ভুলেছি তাল কেটেছি
শব্দগুলো রোজই হারাই...
ভুলের পথে আমি রোজ হেঁটে চলেছি।


অন্তর্বাহিনী নদী : উত্তম মণ্ডল




আমার বাপ মাকে দেখবো না বললে
তোমার হাত ধরে ছাড়লাম ঘর
তুমি যেটা জমে গেল বলে ভাবছো
সেটা আসলে সম্পর্ক নয়
                                পঞ্চরসের গান।
মাদুরের মত ছলাৎ করে শরীর পেতেছে রোদ্দুর
তুমি একটা সেলফি নিতে চাইলে
এত্তো খুশি, আত্মহারা, রোদ ঝলমলে
মুহুর্ত বন্দি করে রাখলে ক্যামেরায়
স্ক্রিনে নরম আঙুল ছুয়ে ছুয়ে মিলিয়ে নিচ্ছো   
                                          এক একটা ছবি
আর ভিড় করে আসছে রোদ-বাতাস-বৃষ্টির
                                               অবশ স্মৃতি।
প্রতিটা ছবিতে আমার চোখ বড় অদ্ভুত
এতো এতো বালি কাদা কেড়ে নিয়েছে নাব্যতা
সম্পর্ক অন্তর্বাহিনী নদী হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে সংকীর্ণতায়।   


ভুলে যাওয়া কি সহজ ? শতাব্দী মজুমদার





ভুলতে ভুলতে এগোই আমরা,
অতীতকে ফেলে বর্তমানে বাঁচি ভীষণভাবে।
সত্যি কি ডাকে না ফেলে আসা স্মৃতি?
বলে না আসবে আর একবার,
নেবে কুড়িয়ে টুকরো টুকরো খুশি?
দেখবে ফিরে মনের অলি গলি,
বৃষ্টি ভেজা পায়ে হাঁটবে আবার শহরের প্রান্তর?
ভুলে যাওয়াটাই যদি ইচ্ছা হয়,
তবু কি ভোলা যায়?
ভেসে ওঠে না কিছু চলন্ত ছবি,
চিনচিন করে না বুকের মধ্যিখান?
ফ্ল্যাশব্যাকে পুরোনো ব্যথার এক ঝলক,
কান্নার শুকনো দাগ,মন খারাপ এক বিকেল,
বেদনার দীর্ঘশ্বাস,
হটাৎ আর্তনাদ,বুক জোড়া হাহাকার!!
ভুলে যাওয়া যায় বুঝি সব কিছু --
বন্ধ করা যায় নাকি মনের খড়খড়ি!
ওসব গল্প কথা,
বেঁচে থাকার,ভালো থাকার অজুহাত মাত্র।
মনের গভীর কোণে,
অতি সঙ্গোপনে,
পড়ে থাকে কিছু স্মৃতি,
খুশির ছোঁয়া,হাসির মূহুর্ত,
রাগ অভিমান,প্রেম বিরহ
রঙিন দিন, ভালোবাসার উচ্ছ্বাস,
অথবা কঠিন রূঢ় অতীত
দগদগে ঘা,
বিবর্ণ মলিন কিছু সময়,
অপ্রাপ্তি,আক্ষেপ,কিছু লাঞ্ছনা,
বিশ্বাসঘাতকতা,অপমান
যেনো শুকনো মরুভূমি।
ভুলি না আমরা কিছুই,
একটু একটু করে সরে আসতে থাকি
বাঁচতে হবে যে
ভালো থাকতে হবে যে
নতুন রূপে,নতুন ভাবে ।।

শারদীয়া আসছে : অমিত কুমার জানা





সেই তটিনীর তীরে    মন গিয়েছে আবারও ফিরে,
            যেথা হাওয়ায় দোলায়িত সাদা কাশ।
  ভোরের শিউলির ঘ্রাণ    ভরায় মন প্রাণ,
             এসেছে শারদীয়ার বাতাস।

সকালে গাঁয়ের রাস্তায়    খুশির দ্যুতি ঘাসের আগায়,
             আগমনির বার্তা নিয়ে এলো।
মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ার কাজে   পূজামণ্ডপ নবরূপে সাজে,
              ওহ্ কি যে তোড়জোড় শুরু হলো।

আমাদের শহর সাজে    প্যাণ্ডেল গড়ার কাজে,
              অলি-গলিতে পোশাকের বিজ্ঞাপন।
পূজোর অফারের সুরে    কান দুটো যায় ভরে,
               অন্তরে আনন্দমাখা শিহরণ।

শুরু হলো দিনগোনা   নানা পরিকল্পনায় আনমনা,
              সমারোহে ভরা পূজোর বাজার।
   ওই চারটে দিনের তরে   প্রস্তুতি ঘরে ঘরে,
               নিজেকে গুছিয়ে নেয় যে-যার।

তুমি :মাধব মণ্ডল






তুমি চাইলে এই ময়ূরাক্ষীর পাড়েও ঘর বাঁধতাম
কালরাতে চেয়েছিলে তাই এপাশে ওপাশে ছিলাম

আলুনি জীবনে তোমার চাওয়া আর চাহনি
ক্ষতগুলো মুছে দিতে চড়চড় এগিয়ে আসে

ফেসবুকে পাতা ফাঁদে জড়িয়ে মরতে গিয়ে
বুঝেছিলে সুখের অসুখ, আঁকড়ে ধরলে জোর

আধদামড়া আধদামড়া ছাপ মেরে ছুঁড়ে ফেলে
অনিদ্রার শান্তি কামড়ে আমাকেও জাহান্নমে রাখো

যৌনতা আরো চায় টাকা, চায় না-ফুরানো শরীর
ধর্ম অসহায় চেয়ে দেখে, আঙুল মটকায় কচলায়

সন্দেহ জাগায় প্রশ্ন, একে একে সব ধর্ম মরে ঐ
হাঁসপাশ ধমনি শিরা বুকের বাঁদিকে তোলপাড়

মায়া সুর কাটো প্রিয় নারী, যথার্থ নদীর পাড়ে
জলের ছলাৎ ছলাৎ, কান্না আজও ঐ ভাসে



আমি আর আসবো কবে?
বর্ষা আর তুই শীত
আমার জিনিসে চোখ রাখিস কেন???
আমি অতো মানাতে মারিনা!

প্রথম ফাল্গুণে এমন নাছোড়বান্দা
ওহো, প্রেম কোরো না হে বৃষ্টিরাণি
আমি তো আধদামড়া
আমি আর আসবো কবে?

আহা, কত আর দেখবো আদিখ্যেতা
ঝরছেন তিনি ঝরছেন!
পশলা পশলা রাণি সাজা বৃষ্টি
আহা, কী লজ্জা লজ্জা ভাব!




তুমি যখন নামের আগে ড., ডাঃ বা খেতাবি কিছু লেখ
এমনকি নামের পরেও লাগাও লেজ
আমার মন করকর চলতেই থাকে

তুমি তো একটা চাকুরি সফল প্রাণ
আমার বাঁদিকটা, অনেকটা ফাঁকা হতেই থাকে

তোমাকে সেদিন দেখলাম ফর্সা, নরম, মায়াবির হাতের রেখায়
আমি চোলাই খোরের মত একাকী চিৎপাত রাস্তায়

তোমার দামি গাড়িটা ছুটে এসে হুড়কো মেরে হাসে
এখন আমি নিজেই পেট্রোল, আগুনও জ্বালি নিজেই

কিন্তু তুমি যেই লোথাল থেকে কোটি কোটি সেকেন্ড পর উঠলে
আর বললে, মরো না, তোমাকেই আমি চাই
আমার লেডি কিলার বলা চোখ ও চোখের পাতা
আর একটিবারও ব্লটিং পেপার হলই না





আজ সকালে বর্ষা এসেছে ভেবে ব্যাঙেরা হুলুস্থুল গানে
তুমি ক'গ্লাস তাড়ি সান্টিং করো, বা না করো, তাদের কিছু যায় আসে না

মেঘ আর সমুদ্র
সোমত্ত পাঁঠি, পাঁঠাও
সুপার সাইক্লোনে নিবিষ্ট হল

অল্প জানাদের ওপর ছড়ি চালায় ওস্তাদেরা
তুমি 'অ' কে গেলো 'আ'
এরপর একলাই একটা মিছিল হবে?

সুপার সাইক্লোন?
ঝুমঝুমি রাগে বিজ্ঞান যেখানে নাচে
প্রকৃতার্থে সে সুপার সাইক্লোন!





এসো তো সূর্য-কন্যা
তোমারই রঙ মাখি অগোছালে...
বাজারটা তোমারই
আমি তো আলতো ছোঁয়ায় খুশি

সূর্য্য-কন্যা
না হোক আমিও বেঁচে আছি
না হোক কেউ কেউ তো আমাকেও গান ছোঁড়ে

সূর্য্য-কন্যা
তবুও বালি-তাতা রোদে তুইই একমাত্র রঙ
না, না, মেঘ-কন্যার পথ সেই কবেই হলো ভেন্ন!

ফিরিয়ে দেবে কি ? সীমন্তিনী





কোন এক শিউলি ঝড়া বিকেলে ,এই ধরো তুমি খুব সেজে গুজে ........ওই কপালে লাল টিপ,কানে একজোড়া বড়ো ঝুমকো,
না ,গলায় পরার অভ্যাস তোমার নেই।
                          আমি ওই পাড়ার মন্ডপে ,
একটা হলুদ পাঞ্জাবী....হাতে একটা ঘড়ি,,
তোমার জন্য পাগল প্রেমের ক্ষীণ সংকোচ
চায়ের কাপে হঠাৎ চুম্বন তোমার নামের,
আর ভীড়ের মাঝে তোমায় হাড়িয়ে নতুন করে খোঁজ।
                     এই ধরো সেদিন ছিলো অষ্টমী,
তোমার সাজের বড্ড ঘনঘটা ,
আমার চোখে প্রেম ,এ মন সর্বনাশা।
তুমি ও ভীষণ বুঝতে পারার আগেই,
একটা চিঠির খাম ,কোন এক পাড়ার বখাটে ছেলে।
                               তারপর  সেদিন দশমী,
আমি আর থাকতে পারিনি ,
তোমার ওই কাজল কালো চোখে,
আর মুখের কোনে সিঁদুরে আড়ম্বর।
আমি এক অবাধ্য মন নিয়ে
ছুঁটে যাই তোমার দিকে ধেয়ে,
তোমার মনে ভীষন উথাল পাথাল
যদি,
এক চিলতে সিঁদুর রাঙাই সিঁথে.....
                  বলো তুমি কি আমায় ফিরিয়ে দেবে???



                                          

দোলনচাঁপা: স্বাগতপর্ণ গোস্বামী




অনেকগুলো বসন্ত গুনে নিজেকে চিনতে পারিনি আজো। প্রচন্ড অন্ধকারের পাহারা পেরিয়ে তোমার স্বপ্নের সাথে স্বপ্ন মিলানোর কাজ পেয়েছি ভেবে আমি অপেক্ষায় থাকি উজ্জ্বলতার প্লাটফর্মে। এক কবি বলেছিল --" মন একটি স্নায়বিক প্রক্রিয়ার নাম, যেখানে বসত করে স্বপ্ন।" চারপাশ তার কাঁচের দেয়াল। ওখানে ভয়ংকর ভাঙন। উজ্জ্বলতা তোমারও খুব পছন্দ, আমি জানি কিংবা টের পাই। আমার অকপট ধারণার সাথে একমত না-ও হতে পারো তুমি। কারণ, মনের প্রধানতম সম্পদ দ্বিধা আমাদের নির্বিরোধ ভালালাগাগুলোকে তছনছ করে দেয়। এটাও সত্য...মনকে পুঁজিবাদে বিকশিত হতে হয়। মন আর স্বপ্ন বিক্রি করেই উপরে ওঠা মানুষ সক্রিয় শত্রুতে পরিণত হয়।আমি তাই স্বপ্ন মিলাতে চেয়েছি।

সত্য তো একটাই। যে কোন মুহূর্তের জন্য মাত্র একটা মুহূর্তই নির্ধারিত। একটা মুহূর্তই সত্য। তাই ভালবাসতে শুরু করলাম তোমাকে। মনের ভেতর যে স্বপ্নের বসত। এক ভালবাসার না--বোঝা ভাষা নিয়ে উৎকন্ঠায় হৃদয়ের হালটাকে শক্ত করে ধরে আমি আবার বাইতে শুরু করেছি। তোমার স্বপ্নের সাথে স্বপ্ন মিলাবো বলে। তোমার আপত্তি থাকতে পারে। প্রত্যেকেই সকাল দেখে...প্রত্যেকের চোখেই ভিন্নতার স্বাদ। অথচো দেখো...সকালের কিন্তু ভিন্নতা নেই, যেমন নেই রাতেরও।

একাকি অনিদ্রায় চোখ....প্রজাপতির ডানা মেলে উড়বার মত সুখ খুঁজে অপেক্ষায়। তুমিও জানো, আঁধার ছিন্নভিন্ন করে দেয়। নীল করে শিরা-উপশিরা। অদৃশ্য এক দেয়ালে আটকে রাখে। আমি কৃত্রিমতা, সমস্ত সৌজন্যতা ছাড়াই তোমাকে ভালবেসেছি। যদিও জানি...অস্থিরতা কোনো স্থায়ী জিনিস নয়, জীবন বিকাশে চাই স্থিরতা। তবে যে মূল যাত্রায় স্থির হয়ে যেতে হবে...!! ভালবেসে নাহয় একটু অস্থির হলাম। আমার অপেক্ষাগুলোও হলো নাহয় অস্থির! আমার স্মৃতির ভেতরে  চলে স্বপ্ন মিলাবার বিপদজনক খেলা। চূড়ান্ত বিষন্নতা যদি গ্রাস করে ফেলে তবুও তোমাকেই ভালবাসবো। জানি না উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে কিনা! প্রতিটি ক্ষণে তবুও তোমাকে চাই। এসো স্বপ্ন মিলাই।

দ্বিধায় কিংবা অনুতাপ এসে পোড়ায়, পোড়াক, আমি আরেক হাজার বসন্ত নাহয় অপেক্ষা করবো।

ভালো থেকো প্রাণ।

। শেষ সহবাস ।।সুদীপ ভট্টাচার্য্য





বিছানায় আড়াআড়ি শুয়ে থাকি প্রত্যেক দুপুরবেলায়
নিজেকেই মাঝেমাঝে মনে হয় আমি যেন আস্ত একটা লাশ।
ঠোঁটে মাখা নিকোটিনে প্রেমিক মাছিরা বসে প্রায়
পাশের টেবিলে থাকে অ্যাসট্রে, আধখাওয়া মদের গেলাস।।
এরপর বহু কষ্টে পাশ ফিরি, জানলার দিকে থাকে মুখ
নিভে আসা রোদের আঁচল থেকে সন্তর্পণে চুরি করি ওম।
সেইটুকু উত্তাপ গোপনে পকেটে থাকে শাঁখবাজা সন্ধ্যের পর
মায়ের কোমল স্পর্শে কবিতার ঘোর থেকে মুহূর্তে ফেরে সম্ভ্রম।।
মরফিনে অভ্যস্ত এ চোখে আজকাল ঘুম আসছেনা
কালকের 'ঠিক' গুলো বদলেছে, হয়েছে আজ পাপ।
নিয়মিত রাত জাগি আরও একটা নতুন সূর্যের অপেক্ষায়
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্মৃতি দিয়ে ফের বাঁধি প্রেমের ম্যারাপ।।
দূরবীনে অপলক চোখ রাখি, ধরা দেয় মস্ত বড় পুরনো আকাশ
চাঁদের দাগের চেয়ে আরও বেশি কালো তোর তিল।
এভাবেই আজকাল আমার মনের মধ্যে অনায়াস তোর যাতায়াত
এভাবেই আজকাল আমার সম্মতি ছাড়া তোর স্মৃতি করছে মিছিল।।
লোডশেডিং এর পালা এলে স্বানন্দে জ্বালিয়ে রাখি প্রেম
পূব থেকে ভেসে আসে অতি ক্ষীণ, অস্পষ্ট আকাশবাণীর স্বর।
কফিতে চিনির ভাগ বেশ কম, তবু আজ নো প্রবলেম
পুরনো প্রেমের নামে এই শেষ উদযাপিত স্বেচ্ছা অবসর।।
অগাধ সময় আজ, অনুপাতে কবিতা লেখার পালা কম
মধুবনী তাকিয়াতে তা দিই, তাছাড়া দিবানিদ্রা, আর কিই বা করি।
দু-একটা লং ড্রাইভ সাম্প্রতিক একঘেয়েমির উপসম
বাউন্ডুলে ভাব হলে ব্যাগেতে প্রেম গুছিয়ে ঘুরে আসি বেথুয়াডহরি।।
গোবি-সাহারার চেয়ে পানের বরোজ আর সিঙ্গুরের ধান জমি ভালো
মনের উর্বর ক্ষেতে বীজ বুনি, জল দিই, মহানন্দে করি প্রেম-চাষ।
ক্রমে আসে মল মাস, পাকা ফসলের টানে ধেয়ে আসে কিছু পঙ্গপালও
এমনই আশঙ্কিত মাঝরাতে তোর-আমার শেষ সহবাস।।

মাতৃরূপেন : সায়নদীপা পলমল






"ইয়া চন্ডী মধু কৈটভাদিদৈত্যদলনী

ইয়া মহিষোম্মুলিনী

ইয়া ধুম্রক্ষণচন্ডমুন্ডমথনী

ইয়া রক্তবীজাশনি..."




কাঁপা কাঁপা হাতে রেডিওর নবটা ঘোরাতেই ভেসে এলো সেই কালজয়ী কন্ঠস্বর। আজও এই গলাটা শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এখন টিভিতে অবশ্য অনেক রকমের মহালয়া হয়, অনেক রকমের গপ্পো দেখায় তাতে, কিন্তু সেসবে মন ভরে না মঞ্জুলা দেবীর। মহালয়ার দিন সকালে তাই এখনও তাঁর সঙ্গী ফিলিপসের এই রেডিও। বহু বছর আগে মানুষটা কিনেছিলেন এটা। সময়ের অভাবে মানুষটা টিভি, রেডিও কিছুই দেখার বা শোনার সুযোগ পেতেন না, কিন্তু তবুও এই যন্ত্রটা কিনেছিলেন শুধুমাত্র আজকের এই দিনটার জন্যই, মহালয়া শুনবেন বলে। আজকে মানুষটা নেই, পাঁচ বছর হল মঞ্জুলা দেবীকে ছেড়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন অনন্তলোকে। মানুষটা নেই, কিন্তু পেছনে রেখে গিয়েছেন এই বাড়ি আর তাঁর অজস্র স্মৃতি। সেই স্মৃতিরই একটা অংশ এই যন্ত্রটাও।

    রেডিওর নবটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শব্দটা পরিষ্কার করলেন মঞ্জুলা দেবী। তারপর উঠে গিয়ে বসলেন খাটে। যদিও সবে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ, তবুও গা'টা শিরশির করছে। ইদানিং তো প্রায় রাতদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, তার ওপর বয়সও হচ্ছে। শীতটা তাই সহজেই কাবু করে ফেলতে পারে। একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসলেন মঞ্জুলা দেবী। বাইরে থেকে শিউলির গন্ধ ভেসে আসছে ঘরে, একটা ঠান্ডা বাতাস ছড়িয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে। কয়েকটা পাখির ঘুম ভেঙে গিয়েছে ইতিমধ্যেই, তারাও শুরু করে দিয়েছে তাদের কলতান। সব মিলিয়ে মনটা বড় ভালো লাগছে মঞ্জুলা দেবীর। আর মাত্র এক সপ্তাহের অপেক্ষা, তারপরেই তাদের এই বাড়িটা গমগম করে উঠবে, এখান থেকেও ভেসে উঠবে আগমনীর সুর। এই বাড়ির পুজোটা বহু প্রাচীন, আগে অনেক জাঁকজমক করে হত, হলোই বা সিংহবাহিনী ঘট পুজো, তবুও আড়ম্বরের কিছু কমতি থাকতো না। কিন্তু সময়ের সাথে তো সবই পাল্টায়, জাঁকজমক কমে আসছিল ধীরে ধীরে, তারপর মানুষটার চলে যাওয়ার পর তো সেই আড়ম্বরের মাত্রা ঝপ করে নেমে গেছে অনেকখানি। ছেলেমেয়েরা সব বাইরে, মঞ্জুলা দেবীকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল তারা কিন্তু উনিই এই বাড়িটা ছেড়ে যেতে রাজি হননি। প্রত্যেক বছর মহালয়ার পর থেকেই এক এক করে আসতে থাকে ওরা, শুরু হয়ে যায় পুজোর তোড়জোড়। যতই কমুক জাঁকজমক, তবুও নিজের বাড়ির পুজোর ব্যাপারই আলাদা।


    কখন যেন আবার ঘুম ধরে গিয়েছিল মঞ্জুলা দেবীর। টেলিফোনের ঝনঝন শব্দে ঘুম ভাঙল। এতো ভোরে কে ফোন করবে তাঁকে! তবে কি ছেলেমেয়েগুলোর কেউ আজই আসছে? ধীর পায়ে উঠে গিয়ে ফোনটা ধরলেন তিনি।

"হ্যালো কাকিমা, আমি নবারুণ বলছি।" নবারুণ মঞ্জুলা দেবীর শ্বশুরমশাইয়ের জ্যেঠতুতোদাদার নাতি। আগে সম্পর্কগুলো ভালোই ছিল, তারপর কালের নিয়মে ফাঁকা পড়ে গেছে সব। তিক্ততার সৃষ্টি না হলেও সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়ে যায় সম্পর্কগুলোও, নবারুণদের সাথেও তাই হয়েছে। কিন্তু আজ হঠাৎ সকাল সকাল নাবরুণের ফোন পেয়ে একটু অবাকই হলেন মঞ্জুলা দেবী। অবাক ভাবটাকে গোপন রেখে বললেন, "হ্যাঁ বাবা বল।"

"কাকিমা ঠাকুমা কাল রাতে মারা গেলেন।"

"সেকি! কখন?"

"ওই ধরো রাত এগারোটা নাগাদ। মা বলল তোমায় জানিয়ে দিতে।"

    ফোনটা রেখে কাছের চেয়ারটায় বসলেন মঞ্জুলা দেবী। ফুল জ্যেঠিমা চলে গেলেন তবে! নিরানব্বই বছর বয়েস হয়েছিল, বিগত ছয় সাত বছর প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন। নবারুণের মাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে অনেক করতে হয়েছে শ্বাশুড়ির। অবশেষে শান্তি পেলেন ফুল জ্যেঠিমা, শান্তি পেল বাকি মানুষগুলোও। তবুও কেন কে জানে কারুর মৃত্যু সংবাদ শুনলেই আমাদের ভেতরে একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে ওঠে। ঘড়িটার দিকে তাকালেন মঞ্জুলা দেবী। ছ'টা পয়নতাল্লিশ। ডায়েরি দেখে মেয়ের নম্বরটা ডায়াল করলেন… সুইচ অফ। এখনও ঘুমোচ্ছে বোধহয়। মেয়ের নম্বরের নীচেই লেখা বড় নাতবৌ এর নম্বর। ওরাও কি ঘুমোচ্ছে! দেখাই যাক না। নম্বরটা ডায়াল করলেন মঞ্জুলা দেবী। একটু পরেই ধরল রিকিয়া, "হ্যালো ঠাম্মা বলো। তুমি ঠিক আছো তো?"

  "হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। তোমরা ঠিক আছো তো?"

"হ্যাঁ। তোমার নাতির কাল নাইট ডিউটি ছিল, এই ফিরল।"

"ওহ এবার তো তাহলে বিশ্রাম নেবে তো। তা বলছি দিদিভাই তোমাদের ফুল বড়মা মারা গেছেন কাল রাতে।"

  "তিনি কে ঠাম্মা?"

রিকিয়ার প্রশ্নে নিজের ভুলটা বুঝতে পারলেন মঞ্জুলা দেবী। সত্যিই তো মেয়েটা কি করে চিনবে ফুল জ্যেঠিমাকে! তিনি বললেন, "তুমি চিনবে না, আমাদের এক জ্যেঠিমা হতেন। তুমি দাদুভাইকে বলো, ও ঠিক বুঝতে পারবে।"

"আচ্ছা। কিন্তু ঠাম্মা আমাদের কি তবে অশৌচ?"

"হ্যাঁ, অশৌচ তো হবেই।"

"ওহ গড, তার মানে পুজো হবে না এ'বছর!"

রিকিয়ার কথা শুনে ব্যাপারটা মাথায় এলো মঞ্জুলা দেবীর, সত্যিই তো পনেরো দিনের অশৌচ তাদের, পুজোর আগে তো কাটবে না।

"হ্যাঁ দিদিভাই, পুজো আর কি করে হবে! তা তোমরা কবে আসবে?"

"পুজোই হবে না যখন গিয়ে কি করব! দেখি তোমার নাতিকে বলি।"

  নাতবৌ এর শেষ কথাগুলো যেন বুকে এসে তীরের মত বিঁধল মঞ্জুলা দেবীর। পুজো হবে না যখন তখন এসে কি করব….!


                                  ★★★★★


    "ও দিদিমণি কি ভাবছো?"

ছোট্ট পারুলের ডাকে সম্বিৎ ফিরল মঞ্জুলা দেবীর। কাল থেকে কিছুতেই মনটাকে শান্ত করতে পারছেন না তিনি। পুজো হচ্ছেনা শুনে ওরা কেউ আসতে রাজি হল না। মানছি অনেক ছুটি ম্যানেজ করে আসতে হয় ওদের, কিন্তু তা বলে একদিনও কি আসা যেত না? আচ্ছা ওদের কি একবারও মনে হল না এই বুড়িটা কিভাবে ওই শূন্য ঘরে কাটবে পুজোর চারটে দিন! সারা বছরের কথা এক, কিন্তু পুজোর দিনগুলোর কথা আলাদা। কার ভালো লাগে শূন্য ঘরে একাকী বসে থাকতে, যখন সারা বাংলার মানুষ মেতেছে আনন্দে!

"ও দিদিমণি কি হয়েছে তোমার?"

এবার উঠে এলো জগু। চোখের কোণে আসা ছোট্ট জলের ফোঁটাটাকে চট করে লুকিয়ে ফেললেন মঞ্জুলা দেবী। বললেন, "কই না তো। কি আবার হবে আমার?"

"কিছু একটা তো হয়েছে তোমার…" চোখ পাকিয়ে বলল বিন্দি। ওকে কোলে তুলে নিয়ে মঞ্জুলা দেবী বললেন, "তবে রে পাকা বুড়ি, আমার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে! তা যেটা লিখতে দিলাম সেটা লেখা হয়েছে?"

"এই রে…" বলে জিভ কেটে বাচ্চাগুলো আবার যে যার বসে পড়ল খাতা কলম নিয়ে।

এই ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোই এখন মঞ্জুলা দেবীর জীবন। একসময় স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। বিয়ের পর শ্বাশুড়ি বলেছিলেন চাকরি ছাড়তে হবে, মঞ্জুলা দেবী রাজি হননি। বড় ছেলে হওয়ার পর তো চাকরি ছাড়ার জন্য চাপ আরও বাড়তে থাকে, সেই সময় ঘরে বাইরে সব দিক সামলাতে সামলাতে নিজেও হিমশিম খাচ্ছিলেন মঞ্জুলা দেবী। তখন তাঁরও মাথায় একবার আসে চাকরি ছাড়ার চিন্তা, কিন্তু এই সময় পাশে দাঁড়ান সেই মানুষটা। তিনি বলেন সবসময় মেয়েদেরই কেন স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে! সন্তান যখন দু'জনের তখন তাকে মানুষ করার দায়িত্বও দু'জনের। মানুষটার কথায় এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলেন মঞ্জুলা দেবী। শিক্ষকতা করা ছিল তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন, তাহলে শুধু শুধু সেই স্বপ্নকে কেন হারিয়ে যেতে দেবেন! মনের জোরকে সঙ্গী করে দাঁতে দাঁত চিপে এরপর তিনি সমানভাবে সামলে গেছেন ঘর বাইর দুটোই, মানুষ করেছেন চার ছেলেমেয়েকে। অবশ্য জীবনের এই যুদ্ধে প্রতিমুহূর্তে পাশে পেয়েছিলেন সেই মানুষটাকেও।

এরপর সময়ের নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, রিটায়ার করেছেন মঞ্জুলা দেবী, মানুষটা চলে গিয়েছেন তাঁকে ছেড়ে। এরপরেই অবশ্য মঞ্জুলা দেবীর মাথায় আসে এই চিন্তাটা। তাঁর বাড়ির কাছাকাছিই আছে বস্তিটা। ওখানের বাচ্চাগুলোকে দেখেছেন মিড-ডে-মিলের লোভে ইস্কুলে যায় ঠিকই কিন্তু পড়াশুনা তাদের শেখা হয়না আদৌ। বাড়িতে তো পড়াশুনা করার পরিবেশই নেই। তাই মঞ্জুলা দেবী নিজের পেনশনের টাকায় ওদের জন্য কিনে ফেলেন বই, খাতা, পেন্সিল। কেনেন একটা ব্ল্যাক বোর্ড আর চকও। তারপর প্রত্যেক সন্ধ্যেতে বস্তির সাত আটটা বাচ্চাকে পড়তে বসান নিয়মিত। বেশিরভাগ দিনই রাতের খাবারও খাইয়ে পাঠান। এই করে চলছে তাঁর দিন। অবশ্য ব্যাপারটা গোড়াতে এতোটা সহজ ছিলনা। প্রায় সপ্তাহ তিনেক নিয়মিত ওদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হয়েছে পড়াশুনো করার প্রয়োজনীয়তা। নতুন বই খাতা পেন্সিলের লোভ দেখাতে হয়েছে রীতিমতো। ফোনে তো মেয়ে ওনার কর্মকান্ডের কথা শুনেই রেগ আগুন হয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, "কি দরকার মা এসবের? বই পড়ো, গান শোনো, কোনো বয়স্কদের ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে যাও। সময় ঠিকই কাটবে, কিন্তু তা না করে এসব করার কি দরকার?"

মেয়ের কথা শুনে সেদিন চুপ করে গিয়েছিলেন মঞ্জুলা দেবী। এরপর থেকে মেয়ের কাছে আর এই প্রসঙ্গ তোলেননি কোনোদিনও। কিন্তু তিনি নিজে জানতেন তাঁকে কি করতে হবে। তাই তো হার মানেননি তিনি, অবশেষে বাচ্চাগুলো এক এক আসতে শুরু করেছিল তাঁর কাছে। আর এখন তো দিদিমণির ক্লাসে না এলে ওদের চলেই না।


    শুধু এখানেই থেমে থাকেননি মঞ্জুলা দেবী। স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় একবার এক ক্যাম্পে গিয়ে শিখেছিলেন কিভাবে চিপস বানাতে হয়। এবার সেই বিদ্যেকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। বস্তির কিশোরী মেয়েদের নিয়ে শুরু করেছিলেন চিপস বানানোর কাজ। প্রথম প্রথম উনি সম্পূর্ণ নিজের খরচে জিনিসপত্র কিনে আনতেন, তারপর মেয়েরা সেগুলো দিয়ে চিপস বানাতো। ওনার পরিচিত কিছু দোকানে সেই চিপসগুলো রাখতে শুরু করেন। লভ্যাংশ পুরোই দিয়ে দিতেন মেয়েগুলোকে। আস্তে আস্তে তাঁদের চিপসের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে লাভের পরিমাণও। এখন মেয়েরা নিজেরাই লাভের টাকা থেকে কাঁচামাল কেনে, ওদের সাথে যোগ দিয়েছে বাড়ির বউরাও। সব মিলিয়ে ওদের চিপসের ব্যবসা এখন বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এখন ওরা নিজেরাই সব কাজ করতে পারে, তবুও মাঝে মাঝে পরামর্শ নিতে আসে মঞ্জুলা দেবীর কাছে। উনি এখন ওই বস্তির সবার প্রিয় দিদিমণি। প্রথম দিকে বস্তির পুরুষেরা ওনার এই উদ্যোগকে মোটেও ভালো নজরে দেখেনি, নানান ভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে ওনাকে। কিন্তু মঞ্জুলা দেবী কোনোদিনও হেরে পিছিয়ে আসতে শেখেননি, তাই তিনি দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করে গিয়েছেন, অটল থেকেছেন নিজের সংকল্পে। অবশেষে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে ছেলেগুলো। এখন ওরা মঞ্জুলা দেবীকে যথেষ্ট সম্মান করে সকলে। রাস্তাঘাটে দেখতে পেলেই এগিয়ে আসে ওনাকে সাহায্য করতে।


     সব মিলিয়ে এদের নিয়ে মঞ্জুলা দেবীর চলে যাচ্ছে বেশ। তবুও পুজোর সময় বলে কথা! নিজের ছেলে মেয়ে নাতি নাতনিগুলোর জন্য বুকটা হুহু করে ওঠে। কিন্তু তাদের কি একবারও মনে পড়ে এই বুড়িটার কথা! তাদের কাছে তো পুজোর আনন্দটাই সব।


                                 ★★★★★


এবছর পুজো কমিটি থেকে কাছের বট গাছটায় একটা মাইক বেঁধে দিয়ে গেছে। ষষ্ঠীর দিন ভোর হতে না হতেই মাইকে ভেসে উঠল আগমনীর সুর…


"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু

শক্তি রূপেন সংস্থিতা…"


গায়ে কাঁটা দেওয়া  মায়ের সেই স্তোত্র।  প্রত্যেকটা বাঙালীর মননে জড়িয়ে আছে এই মন্ত্র। বাঙালীর আবেগ, অনুভূতি সব কিছু জড়িয়ে এই পুজো…

গায়ে চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন মঞ্জুলা দেবী। শিউলি গাছটার তলায় শ্বেত শুভ্র পাপড়ির সজ্জা, গাছটাও সাদায় সাদা, মাঝে মাঝে হালকা কমলা আলো। মৃদুমন্দ বাতাস দিচ্ছে বাইরে, বাতাসের সাথে ভেসে আসছে শিউলির সুবাস। পায়ে পায়ে তিনি এগিয়ে গেলেন শিউলি তলার দিকে। চাদরটা মেলে ধরে সংগ্রহ করতে লাগলেন শিউলি ফুল।

"এই টোপাই দেখ, তোর চেয়ে আমার ফুল বেশি…"

মঞ্জুলা দেবী দেখতে পেলেন গাছের তলায় প্রতিযোগিতায় মত্ত ছোটো নাতনি জুন আর নাতি টোপাই।

"দাদুভাই…" ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই আচমকা চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল ওরা। হঠাৎ করে কান্না পেয়ে গেল মঞ্জুলা দেবীর। শিউলি গাছের গুঁড়িটা ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন তিনি।


    ঘড়িতে এখন দশটা বাজে। বটগাছে লাগানো মাইকটার বোধহয় কিছু গন্ডগোল হয়েছে, চুপটি করে বসে আছে ঘন্টা দুয়েক। টিভিটা চালিয়ে দিয়ে সোফায় বসেছিলেন মঞ্জুলা দেবী। টিভিতে কি হচ্ছে সেদিকে মন নেই তাঁর। সেই যে সকালে একবার চা বিস্কুট খেয়েছিল তারপর থেকে আর কুটোটি কাটেননি দাঁতে। ইচ্ছে হয়নি। বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে। ছেলেমেয়েগুলোও পড়তে আসবে না এই কটা দিন। সবাই আনন্দ করবে পুজোয়। শুধু মঞ্জুলা দেবীই একা। কিন্তু হঠাৎ করে বাইরে একটা শোরগোলের আওয়াজ পেলেন তিনি, তারপরেই কেউ যেন বাইরের গেটটা খুলল। আশ্চর্য, এসময় কে আসতে পারে তাঁর কাছে! আজ তো কারুর আসার কথা নয়। উঠে গিয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই পারুল, জগু, ঝিনটিদের দেখতে পেলেন এক সঙ্গে, ওদের পেছনে রুমকিরাও আছে। কি ব্যাপারটা কি, কোনো গন্ডগোল হল না তো! দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। নাহ, ওদের চোখমুখ দেখে তো গন্ডগোল বলে মনে হচ্ছেনা, বরং প্রত্যেকের মুখে একটা চাপা হাসি।

"কিরে তোরা আজ এই সকাল সকাল, কি ব্যাপার?"

"তুমি তো আমাদের এ বছর পুজোয় নেমতন্ন করতে ভুলে গিয়েছো তাই আমরা নিজেরাই চলে এলাম।" বলল ঋতু।

"ওরে পাগলী ভুলবো কেন? তোরাই তো ভুলে গিয়েছিস যে এ বছর আমাদের বাড়িতে পুজো হবেনা।"

"পুজো হবে না বললে তো চলবে না, পুজো যে হতেই হবে।"

কথাটা কে বলল তাকে দেখতে পেলেন না মঞ্জুলা দেবী, কিন্তু কন্ঠস্বরটা অতি পরিচিত ঠেকলো তাঁর কাছে।

"কে?" একটা দ্বিধা মিশ্রিত গলায় প্রশ্নটা করলেন তিনি। নাহ, তাঁর অনুমান ভুল ছিল না। ভীড়ের মধ্য থেকে এগিয়ে এলো রিকিয়া।

"দিদিভাই তুমি!"

"হুঁ ঠাম্মা আমি…"

"আর শুধু রিকিয়াই নয়, আমরাও আছি।" কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে এলো প্রাঞ্জল, কিঞ্জল, শিঞ্জিনী, শিবাঙ্গি… মঞ্জুলা দেবীর চার অংশ। শুধু ওরাই নয় বৌমা, জামাই আর সব নাতি নাতনিরাও আছে।

মঞ্জুলা দেবী যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না, এমনটা তো সিনেমাতে হয়! চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিয়ে চোখ দুটো একবার ভালো করে মুছলেন তিনি। নাহ, ভুল হয়নি, ওরা সত্যিই দাঁড়িয়ে সামনে। দু'চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল মঞ্জুলা দেবীর গালে।

এগিয়ে এলো শিঞ্জিনী। মায়ের গলা জড়িয়ে বলল, "আয়াম সরি মা। আসলে পুজো হবে না শুনে আমরা এতটাই আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম যে ভেবেছিলাম এখানে এসে আর লাভ কি! ভুলেই গিয়েছিলাম পুজো হবেনা শুনে আমাদের যদি এতো কষ্ট হয় তাহলে তোমার মনের অবস্থা কি হবে! ভাগ্যিস রুমকি ফোন করেছিল আমায়।"

"রুমকি!" অবাক হয়ে মঞ্জুলা দেবী তাকালের গেটের কোণে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। গোটা বস্তির মেয়েদের যখন বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন মঞ্জুলা দেবী, তখন এই মেয়েটাই এগিয়ে এসেছিল সবার প্রথম। বলেছিল, "আমি তোমার কাজ শিকবো দিদিমণি, শেকাবে আমায়?" সেই থেকে রুমকি যেন ছায়াসঙ্গী হয়ে গিয়েছে মঞ্জুলা দেবীর, দিদিমণির সব দিকে তার নজর। মেয়েটা কখন কে জানে লুকিয়ে লুকিয়ে শিঞ্জিনিকে ফোন করে বলেছে তার প্রিয় দিদিমণির মন খারাপের কথা!

চোখ দুটো মুছলেন মঞ্জুলা দেবী; আর তখনই টোপাই বলে উঠল, "পিপি তুমি কেন বলছো পুজো হবে না? পুজো তো হবে।"

শিঞ্জিনী কোনো জবাব দেওয়ার আগেই মঞ্জুলা দেবী বললেন, "পুজো কি করে হবে দাদুভাই, আমাদের যে অশৌচ!"

"হুমম অশৌচে মাটির প্রতিমার পুজো করা মানা, কিন্তু জীবন্ত প্রতিমার পুজো করা তো মানা নয়।" পাশ থেকে কথাগুলো বলে উঠল বড় নাতি আকাশ।

"মানে?" অবাক গলায় জানতে চাইলেন মঞ্জুলা দেবী।

"মানে মা আমাদের কাছে জীবন্ত মা দশভূজা থাকতে আমরা কেন মাটির প্রতিমার পুজো করব বলতে পারো?" বলল কিঞ্জল।

"কিসব বলছিস তোরা!"

"ভাই ঠিকই বলেছে।" প্রাঞ্জল বলল, "আমি জানি মা আমি হওয়ায় পর থেকে ঘরে বাইরে কাজ সামলাতে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে তোমার। পরিষ্কার মনে না থাকলেও ঠাকুমা কিভাবে তোমায় অপদস্থ করতে চাইত অল্প অল্প মনে পড়ে, ঠাকুমা সবসময় তোমায় খোঁটা দিত বাইরে চাকরি করা নিয়ে…"

"আহা এসব কথা আজ কেন! থাকনা এসব পুরোনো কথা।"

"না মা, থাকবে না। দাদাকে বলতে দাও। আমরা জানি তুমি কি পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেছো আমাদের মানুষ করতে। দু'দিক সামলাতে নিজে অনেকসময় না খেয়ে ছুটেছ কিন্তু আমাদের না খাইয়ে রাখনি কোনো সময়। শুধু আমাদের কেন, বাড়ির প্রতিটা মানুষের মন জুগিয়ে চলতে হয়েছে তোমায়। সব মেয়েকেই হয়তো হয়, কিন্তু তারই মাঝে তুমি নিজের মনের কথাও শুনেছো। শত বিপত্তির মধ্যেও নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছো। কটা মেয়ে পারে এমনটা করতে!" কথাগুলো বলতে বলতে মাকে এসে জড়িয়ে ধরল শিবাঙ্গী। বড় জামাই রণিত কাছে এসে বলল, "শুধু কি তাই? মা এখন যে কাজটা করছে তা কি কম প্রশংসার যোগ্য? সেসময় মা তোমাদের মানুষ করেছেন, আর এখন এতোগুলো মানুষকে নতুন জীবনের দিশা দেখাচ্ছেন। মা সত্যিই স্বয়ং দশভূজা।"

"আর তাই তো এই দেবীপক্ষে আমরা ঠাম্মার পুজো করবো।" বলে উঠল জুন।

"ধ্যাত কি যে বলিস না দিদিভাই!" নাতনিকে ছদ্ম ধমক দিলেন মঞ্জুলা দেবী। রিকিয়া বলল, "বকলেও কোনো কাজ হবে না ঠাম্মা, এ বছর আমরা জীবন্ত মায়ের আরাধনা করব, কোনো বারণ শুনবো না তোমার।"

রিকিয়ার কথা শেষ হওয়া মাত্রই হৈহৈ করে সকলে এসে ঘিরে ধরল মঞ্জুলা দেবীকে। আর তৎক্ষণাৎ আবার বেজে উঠল পুজোর মাইকটা---


"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু

শক্তি রূপেন সংস্থিতা…"



দেবী : যীশু চক্রবর্তী




১.

আচমকাই আমার জানালা জুড়ে শরৎ,
                        লেভেলিং করে সাঁটিয়ে দেওয়া রোদ্দুর।
             বৃষ্টির সপাট চড়ে টলো-মলো পাহাড়।।

২.
নতুন সকালে প্লট হাতড়ে পাই বীরেন্দ্রকৃষ্ণকে,
     
নিংড়ে নেওয়া শৈশব সোল্ড-আউট।।
রোজনামচা কবিতারা কেনাকাটায় ব্যস্ত..



আমি তবে যাই দোজখের দরজায়,
                 মাটির ঢেলায় শেষ ফিনিশিং চলছে..

     জমজমাট চারদিনে ব্রাত্য ভিখিরি শিশু
মাকে বলি - "পৃথিবী সুখী হোক"।


৪.

 কফি-কাপে গরম আর শীতের স্যান্ডউইচ,
                    কুড়িয়ে পাওয়া একটা জীবন।। 

শেষ রাতে পথ আটকে দাঁড়ায়  ভেঙে যাওয়া প্রতিমা......

||মানুষ গড়ার স্বপ্নে||সুমিত মোদক






জোয়ার এলেই নদী শব্দ তোলে ছলাৎ ছলাৎ ,
ছলাৎ ছলাৎ ....
সে শব্দ নদী-চর ছুঁয়ে ছুঁয়ে উঠে আসে 
মাটির বাঁধ বরাবর ;
তার পর সে শব্দ ছড়িয়ে পড়ে ,
ঢুকে পড়ে লোকালয়ে ,
বুকের ভিতর ;



আমার বুকের ভিতরের নদীতে জোয়ার-ভাঁটা ,
ছলাৎ ছলাৎ শব্দ .....
সে নদীতে ভাসিয়ে দিতে পারি জীবন-নৌকা ,
ভাটিয়ালি  , আগমনিগান ;



আমি এখন অষ্টাদশী ;
আমি এখন স্কুল পেরিয়ে কলেজে ;
আমার মননে সোঁদামাটির ঘ্রাণ ;
সুন্দরী-গড়ান-হেতালের ছায়া ;



আমার মা এখনও শাঁখা-সিঁদুর বন্ধক রাখে 
বনবিবি-দক্ষিণরায়ের কাছে ;
বাবা খাঁড়িপথে কাঁকড়া ধরতে গেলে ;
কত মানুষ যে বাঘের পেটে চলে গেল তার হিসাব নেই ;
হিসাব রাখেনা এ সুন্দরবন ;
কেবল হিসাব রাখে মা , 
বাবার বাড়ি ফেরার দিনের ;



বাবা বলেছে ----
তোকে মানুষ হতে হবে ,
একটা গোটা মানুষ , সম্পূর্ণ মানুষ  ;
আর গড়তে হবে হাজার হাজার মানুষ ;
যারা বাঁচাবে এই জল-জংলার দেশ ,
বাদাবনের কাদাজল ;




জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে বাবা কাঁকড়া ধরেই বাড়ি ফেরে ;
জীবন নিয়েই বাড়ি ফেরে ;
একটা জীবন একটা পরিবার ;
একটা জীবন একটা স্বপ্ন , মানুষ গড়ার স্বপ্ন ;
আমাকে মানুষ হতে হবে , 
গোটা একটা মানুষ ;
গোটা একটা দেশ , ভারতবর্ষ ;



বাবা গল্প শোনায় , গল্প ....
দিনের গল্প , রাতের গল্প ;
সে গল্প জুড়ে মাঝি , বহরদার , রাতের শব্দ ,
পায়ের ছাপ , মানুষখেকো ...
বাবার গল্পে জাগে গঙ্গারিডি সভ্যতা ;
গল্পে জাগে শেষ হয়ে আসা এ সভ্যতা ;
জলের নীচে ব-দ্বীপ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ;



গুরু মশায়ের পাঠশালায় কোনো দিন যায়নি বাবা ;
অথচ , প্রকৃতির পাঠশালায় পাঠ নিতে নিতে 
নিতে নিতে জেনে গেছে 
জলের স্তর বাড়ছে উষ্ণায়নের ফলে ;
শেষ হয়ে আসছে এ জঙ্গল ,
এ ব-দ্বীপ , এ জনপথ , এ সভ্যতা ;
বাঁচাতে হবে , 
বাঁচাতে হবে আমাকে , আমাদের ...



জোয়ার এলেই নদী শব্দ তোলে ছলাৎ ছলাৎ ,
ছলাৎ ছলাৎ .....
মাঠে মাঠে এখন কাশফুল ,
জলাভূমিতে রঙবেরঙের শালুক ,
উঠানের বেড়াতে জড়িয়ে ফুটে থাকা অপরাজিতা ,
আর দূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের আওয়াজ 
জানিয়ে দেয় পূজা আসছে ;
আর ভিতর থেকে কে যেন বলে উঠছে ----
তং হি দুর্গে দশপ্রহরণ ধারিণী নমামি তাং....

।।ভগবতী।।অমিত কুমার জানা





দুই নাতির আবদারে দাদু (তপনবাবু)গল্প শুরু করলেন। তিনি বললেন, -"বুঝলি, বহু বছর আগে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটতো। আজকের ভোরে তো মহালয়া, তো তোদের এই মহালয়া দুর্গাপূজা নিয়ে একটা গল্প বলছি শোন। 
আমার বয়স তখন তোদেরই মতো। আমাদের পাড়ার চার মেয়ে রিমি, মিমি ,সুমি আর ভগবতী একই ক্লাসে পড়াশোনা করতো। ভগবতীর গায়ের রং শ্যামলা হওয়ায় এবং দেখতে কুশ্রী হওয়ায় তাকে তিন বন্ধু দলে মেশাতে চাইতো না। সেইদিন ছিল মহালয়ার ভোর। বাড়ির দুয়ারে রেডিওতে মহিষাসুর মর্দিনী শুরু চলছে। আমি আর ওরা চারজন বসে বসে তা শুনছি।  ভগবতী বলে উঠলো যে সে দুর্গা সাজতে চায়। বাকি তিন বন্ধু নাক উঁচু করে তাকে অপমান করে বললো যে এমন কুৎসিত মেয়ে সে আবার দুর্গা সাজবে! ভগবতী কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে গেল।  হঠাৎ রেডিও থেকে তীক্ষ্ণ কন্ঠে ভগবতীর আওয়াজ শোনা গেল-" আমি ভগবতী,তোদেরকে আমি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।"
রেডিওর মধ্য থেকে এই ভয়ানক আওয়াজে সবাই আতঙ্কে চিৎকার করে ঘরে প্রবেশ করলো। সবাই দেখতে পেল ভগবতী তো ঘুমিয়ে আছে! প্রত্যেকে প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকালো।
তারপর আবার এক অত্যাশ্চর্য কাণ্ড ঘটলো সপ্তমীর দিন। ঐ তিন বন্ধু মিলে ভগবতীকে না জানিয়েই পাড়ার দুর্গা প্রতিমা দেখতে এল। প্যান্ডেলের সামনে প্রচুর জনসমাগম। রিমি,মিমি এবং সুমির নিকটে হঠাৎ উপস্থিত হলো ভগবতী। সে প্রচণ্ড ক্ষোভে জ্বলে উঠে দেবীদুর্গার রুদ্রমূর্তি ধারণ করলো এবং চিৎকার করে বললো, " তোরা আমায় এত ঘৃণা করিস কেন?" তিন বান্ধবী অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়লো। 
এমন সময় দাদুর ভাঙা রেডিওতে মহিষাসুর মর্দিনী শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ রেডিও থেকে ভগবতীর তীব্র কন্ঠ ধ্বনিত হলো  " বুড়ো তপন, আমি তো তোর একমাত্র বোন ছিলাম, দেখতে খারাপ বলে তুইও তো আমায় কোনদিন স্নেহ করিস নি।"
দাদু (তপনবাবু) জ্ঞান হারালেন।