নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

প্রভাতী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
প্রভাতী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অধুনান্তিক ধর্ম :তন্ময় চৌধুরী






যদি অবরোহী একটি পূর্ববর্তী কার্যপ্রণালী হয় 
তাহলে সঠিক পথে কোনো মুখোশধারীকে পর্যবেক্ষণের 
পূর্বেই ধরে নিতে পারবে 

তোমার জানার বাইরে এইসব পদ্ধতি 

এর জন্য গণিতের সমস্যা সমাধানের পূর্বে 
ইনডেক্স দেখেতে হয় 
কোনো ধর্মপ্রধান এতে অংশ নিতে আসবে না 

কারণ প্রারম্ভিক স্তর থেকে কর্ম করাটাই শ্রেয় 
যেখানে প্রেরন শব্দটি একটি নরকদূতের সঙ্গে সম্পর্কিত |

কলম চলছে,চলবে: সীমা দে






কলম চলছে,চলবে
গরীবের দুঃখের কথা সে বলবে।
যদি দেখাও ভয়
তবুও হবো না ক্ষয়।
যদি বলো যা সরে
তবুও যাবো না নরে।
গরীবের উপর অত্যাচার
নেই কোনো সমাচার।
কলম কথা বলবে...
তোমাদের মুখোশ খুলবে।
লোকের দরবারে দেবে পৌঁছ
তাই তোমরা ভয় দেখিও না মিছে।
যদি পারো দেখাও ঠেকিয়ে
এই কথা রাখলাম তোমাদের জানিয়ে।।

"আমার কাছে কবিতা হল আত্মখনন।নিজেকে নির্মমভাবে খুঁড়তে থাকা।" সাক্ষাৎকার দিলেন কবি মাধব মন্ডল







পরিচিতি : 
---------------
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতায় এম. এ.;যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এড.। ১৯৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় একফর্মার কবিতার বই ‘ছায়াপাত’।এ বছর বর্ধমান লিটিল ম্যাগাজিন বইমেলায় প্রকাশ পাচ্ছে ‘ব এ বর্ণমালা’।মূলতঃ ছড়া এবং কবিতা নিয়ে লেখালেখি ।ছোটদের বেসরকারি একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । জীবন শুরু সেন্ট জুডস্ একাডেমিতে শিক্ষকতা দিয়ে । কালান্তর দৈনিকে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত ছিলেন । বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মী।১৯৬৮ এর মার্চে জন্ম। জন্মস্থান সুন্দরবন, এখন সোনারপুরে বসবাস।
প্রকাশিতব্য বই ২৩ টি।




সাক্ষাৎকার 
***********


প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ? 
উত্তর: আমার কাছে কবিতা হল আত্মখনন।নিজেকে নির্মমভাবে খুঁড়তে থাকা।খুঁড়তে খুঁড়তে কখনও কখনও যন্ত্রনায় দু'চোখ বেয়ে ধারা নামে।তারপর পারিপার্শ্বিকতাকে বলি এবার খুশি তো!

     ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, জয় গোস্বামী প্রমুখ।
আমার কবিতার অনুপ্রেরণা আমার একান্ত।

     ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ? 
উত্তর: জীবনে না পাওয়া স্বপ্নগুলো, বাইরের জগতের ঝড় ঝাপ্টা, টালমাটাল হয়ে পড়া জীবন - এসবই আমার কবিতা লেখার কারণ।


     ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত) 
উত্তর: আমার প্রথম প্রকাশিত লেখা একটি চার লাইনের ছড়া "পিড়িং পিড়িং", এটি বেণারসের "সবার সাথি" প্রকাশ করে ১৯৮৮ সালে। 

প্রথম প্রকাশিত বই "ছায়াপাত", ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে এটি নিজ খরচে প্রকাশ করেন "মৌসম" পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় তপন মণ্ডল।
আনন্দবাজার ও বর্তমান বইটির খুব প্রশংসা করেছিল।

     ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ? 
উত্তর: আমার মনে হয় কবির সঙ্গে পাঠকের সম্পর্কটা দ্বন্দ্বমধুর।অনেক অভিজ্ঞ পাঠক কবিকে যথার্থ পরামর্শ দেন।এমনকি ঘোরতর বিপদে অন্ন - জল - আশ্রয়ও দেন, সাহস যোগান।
আমি তার বড় উদাহরণ।


৬. ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ? 
উত্তরঃ ফেসবুকে কবিতাসহ অন্যান্য লেখালেখি নিয়ে এই বছর দেড়েক আমি এসেছি।অনেক শক্তশালী কবির লেখা এখানে পাচ্ছি। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সাহিত্য সংস্থাগুলো প্রিন্ট মিডিয়ার লেখককূলের মত এদেরকে গণ্য করলে বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে হয়।তবে কবিদের / লেখকদের পূর্ণাঙ্গ বইও এখানে প্রকাশিত হওয়া দরকার। আশার কথা এটা এখন বেশি বেশি হচ্ছে।এবং আর্থিক পুরস্কারও চালু হয়েছে।


৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ? 
উত্তর: ছাপা ম্যাগাজিনগুলো এখন ওয়েব ম্যাগাজিনগুলিকে ভয় পাচ্ছে, তাই নিজেরাও ওয়েবে এসেছে বা আসছে।সুতরাং এটা পরিস্কার ওয়েব ম্যাগাজিনের গুরুত্ব দিনকে দিন বাড়বেই।

৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর: দেখে তো মনে হচ্ছে না মানুষ বই বিমুখ।বই এর জন্যে দৌড়াচ্ছে, মেলা হচ্ছে, কিনছেও ছাপাবই বা অনলাইনে।আর যারা হুজুগে মাতে তাদেরকে মানুষ হুজুগ শেষে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।বই তো মানসিক উৎকর্ষসাধন করে,তাই না? যার সেটা দরকার সে তো কিনবেই। চারধারেই তো প্রচার চলছে, সব মিডিয়ায়।

৯.ছন্দ ও ছন্দ পতন বলতে আপনার কি মনে হয় ? অনেক সময় দেখা যায় যে একটি কবিতা স্বরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ তে শুরু হলেও শেষ হয় অক্ষর বৃত্ত ছন্দে ,এতে কি কবিতার ছন্দ পতন হয় বলে আপনার মনে হয় ? কেন ?

উত্তর: ছন্দ কবিতা সহজে মানুষের মনে গেঁথে যায়।মানুষ এই কারণেই শোকে তাপে আনন্দে বিষাদে সেগুলো আবৃত্তি করে। আমরা কোন বিষয় যখন কাউকে বোঝাই তখন কি এক স্বরে লয়ে তা বোঝাই? কখনও নিচু কখনও মধ্য বা কখনও উঁচু খাতে, কখনও ধীরলয়ে কখনও দ্রুত বা কখনও মধ্যলয়ে বোঝাই,তবেই না সেটা সহজবোধ্য হয়।কবিতার ক্ষেত্রেও একই।সুতরাং একই কবিতায় ভিন্ন ভিন্ন ছন্দ ব্যবহৃত হলেও ছন্দপতনের প্রশ্ন আসে না।



১০.কবিতার ক্ষেত্রে ছন্দ ও মাত্রা এর কি বিশেষ প্রয়োজন আছে নাকি নেই ? 
থাকলে তা গুরুত্ত্ব কত খানি ? 
উত্তর : আগেই বললাম ছন্দ কবিতা মানুষের মনে সহজে গেঁথে যায়। গদ্য ছন্দও এর ব্যতিক্রম নয়।তারমানে এই নয় আমি আবার সনেটে ফিরব, পয়ারে ফিরব, যা বাতিল তাকে ফিরিয়ে কি করব? বরঞ্চ অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও দলবৃত্ত - এই তিন মূল ছন্দরীতিকে আত্মস্থ করে নতুন কিছু করা যায় কিনা সেটাই দেখব।


কিছু কবিতা দিয়েই শেষ হোক তবে ...



শব্দেরা লুকিয়ে ঐ শূন্যতায়


একটা দিনের
দুটো দিনের
দিনের পর দিনের
চাওয়াগুলো হতাহত হয়।

অসহায় পিতৃ মন।

আমার কি ডালপালা কাটছে কেউ?

এত চোরাস্রোত আমাকেই ঘিরে!

স্বপ্নগুলো পাথর
আর
পাথরগুলো স্বপ্ন হচ্ছে বারংবার।

একদিন
দুদিন
দিনের পর দিন
ভালবেসে দেখেছি
জল চাইছে সবাই
এমনকি ঘাস লতা পাথরও।

আমার কি কিছু হওয়ার কথা ছিল?
কারো ছায়া
কারো শীতের রোদ?

আমি তো আকন্ঠ বেসেছি ভাল
সন্তানকেও
তার রোগে
হতাশার অন্ধকারে
তাথৈ আনন্দেও।

তবুও পেরেক বাঁধা হাটু
বেঁকে থাকা লেগ হেড
জোড়া পাঁজর
কোমরের জোড়া হাড়েরা
বিন্দু বিন্দু জল চায়
চিৎকার জোড়ে
মড়াকান্না কানে তোলে।

এত জল কোথায় যে পাই!

ভূত্বকের জীবিত ঈশ্বরেরা কাঁদে
মানুষকে জল বিলোতে বিলোতে
তাদের চোখও আজ খটখটে মরুভূমি।



দীর্ঘ সাড়ে কুড়ি বছরেরও বেশী পর.......
কিছু সুখী-স্মৃতি........
কিছু ডুকরে ওঠা স্মৃতি পিছু টানে...... 
আচমকা হৃদকম্পনে........
এমনটা তো হবারই ছিল....... 
কারো কি কিছু হারিয়েছিল?........
কেউ কি তুমুল খেয়েছিল নাড়া.......... 
নাকি অনেকেই চুপিচুপি বা প্রকাশ্যে অসহায় ছিল?........
অজানা শ্মশানে তোর পোস্টমর্টেম করা শরীরটা ........ 
রাতের অন্ধকারে আগুনকে দিয়ে খাওয়ালাম...........
তুই চলে গেলি.......
কিছুই নিয়ে গেলি না...........
কিম্বা আমার ভাল থাকা নিলি........
কিম্বা অন্য কেউ কেউ শতছিদ্র হলো দুর্দান্ত ...........

পাশাপাশি কতদিন এক তক্তাবোসে আর ঘুমাইনা.........
গুলিও খেলিনা, কউও না......
মনে আছে কউ লেগে থুতনি ফেটে গেল তোর?........ 
সব রহস্য, সব মরমী রেষারেষি, প্রশংসা সব আগুনে মিশল......
শুধু ঊনত্রিশ বছরের স্মৃতিগুলো একি আজো দগদগে হায়! ..........


ঘিলু আঁটকে ঘাঁটকে টানি
বোধ খুঁড়ে শূন্যতাকে তুলে আনি।

আয় শূন্যতা লোফালুফি খেলি
আরে তুই কি করে পারবি!
আমার সন্তান যে আজ আমারই পাশে।

তোকে ভস্ম করে
তোর ছাই চটকে চটকে
দ্বিতীয় হুগলি থেকে ওড়াব আকাশে।

আগুন বাতাসে ফাগুন বাতাসে
সে খবর পৌঁছে যাবে
ভূত্বকে সবে আসাদেরও কানে।

শূন্যতা তুই কি ভেবেছিলি 
আমার এ সারি শরীর
ফুলচারায় ভরাবি, লাগাবি বাগানে?



একা থাকলেই কিসের যেন শব্দ আসে
সবাই আসো আর শোনো রহস্য কথা।

লোকটা রোজ ভোরে কাকেদের কিছু বলে
কিছু কথা হয় শিউলিদের সাথে, নিঃশব্দে।

অনেক শব্দ নিজে নিজেই কথা বলে
ভূত্বকে আপন আপন শব্দ সব ডাকে।

শূন্যতাই কঠিন কুয়াশায় লুকালে শরীর মন
হাহাকার সমাজ সংসারে, একা থাকা মনে।

কিছু অলৌলিক লোক শব্দকে জাপ্টে ধরে
মায়ার শরীরে ঈশ্বরের বারবার জন্ম হয়।

সব শূন্যতাই জন্ম দেয় ভরা বিস্ময়
শব্দেরা লুকিয়ে ঐ শূন্যতায়, ঐ শূন্যতায়।

আহা, শব্দ বাণে শব্দ কব্জা করে, কব্জা করে
রামের মত অভিশাপ খায় সব কবি মনে হয়।


ঠিক কতটা বাড়লে নাগাল পাওয়া যায় হাকুতকুত করতে করতে জানার চেষ্টায় আছি, ছাইগাদার উপরে ফেলা কাঁঠালের ছালে বসছে আর উড়ছে ডুমো ডুমো মাছি, তোমাকে হয়নি বলা এখন আমি দর্শকে বাঁচি।

পাখিদের হঠাৎ ছায়াতে ঠকে যায় ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ, আমি কি করবো বল পাশেই দাঁড়িয়ে গাছ, ও তে তো ফল ভরা পাখি করে নাচ, মুখ কালো বানরেরা লেজে চুল বাছ।

তোমাকে হয়নি বলা করে নিও আঁচ, বেঁচে তো এখনও আছি, চারদিকে কাঁচ, মাঝে মাঝে হাত পা কাটি, রক্তের নাচ, এখনও খেলে, চেয়ে থাকে গাছ।



সাক্ষাৎকারে : জ্যোতির্ময় 

ঝর্ণা :অযান্ত্রিক(অনুপ রায়)







নিলোফার,আমি “যদি ঝর্ণা ফোটাই  তুমি দেখতে আসবে?”
না না ,হয়তো শক্তি বাবুর মত নয়,তবে আমার তো সাধ হয়।
কালের জমানো স্মৃতি,পাথরের মতো রয়েছে বুকে,দেখতে আসবে?
কাছ থেকে বোঝা যায় না, দূর থেকে  খাঁজ হীন পাহাড় মনেহয়।

যদি একটা ঝর্ণা ফোটাই, আর কিছুটা নীচে, পেটের কাছে সরোবর,
তাতে শুধু নীল,ঘন নীল জল, রক্তাভ পদ্ম,
আর কিছু শালুক ফুটে উঠবে নাভির কাছাকাছি।
পাহাড়ের উপরের দিকে কার্তিকের বাতাস ছুঁয়ে যাবে জঙ্গলের চুল,
ছোটো ছোটো রংবেরঙের পাখিদের দল শীষ দেবে, ডাকবে, যেমন 
হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা ডাকতো, ভালোবাসার নাম করে।
নিলোফার, “যদি ঝর্ণা ফোটাই  তুমি কি দেখতে আসবে?”


একেকদিন, খুব ঘুম পায়, রাত যৌবন পেলে, 
একেকদিন আবআর পায় না,
কিন্তু রোজ চোখ বুঝলেই আমার বিছানা জুড়ে জেগে ওঠে জঙ্গল,
 আমার ভাবনার জঙ্গলের পাশে জেগে ওঠে পাহাড়।
তার নীচ থেকে কালো রাস্তা চলে যায় দিগন্তের দিকে,পথচারী হীন।
পাহাড়ের গা থেকে ঠিকরে পরে গোলাপী জোৎস্না,কার্তিকের হিম,
জঙ্গলের কোনো বুড়ো গাছের কোটর থেকে 
হাহুতাশ করে লক্ষী পেঁচা,
মাঝে মাঝে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পরে কোজাগরী চাঁদ,
যদিও এমন পাহাড়ের গায়ে ঝর্ণা বড্ডো বেমানান, 
বড্ডো একপেশে।
কিন্তু তবুও এখানেই “যদি ঝর্ণা ফোটাই,তুমি দেখতে আসবে”?

বহুদিন বন্ধুদের মুখ মনে পড়ে না, 
নাম বলতেই মনে পড়ে শুধু কিছু কচি শিশুদের মুখ,
আমার বোজা চোখের পাহাড়ের নীচে ,কালো রাস্তা দিয়ে ,
মাঝে মাঝে ছুটে যায় মালবাহী ট্রাক, উন্নতির বোঝা নিয়ে,
আমার গল্প গুলো মাঝে মাঝে সেই ট্রাকের চাকায় থেতলে যায়,
রাস্তা পার হতে গিয়ে কিন্তু কেউ দেখার নেই, 
আমি সেই গল্পের মৃতদেহ  কোলে করে নিয়ে ফিরি বাস্তবে,
আমি যদি সেখানেই একটা ঝর্ণা ফোঁটাই, আর সেই গল্পের ,
সরোবর এঁকে দি, বুকের নীচেই,
তুমি কি দেখতে আসবে নিলোফার?,
প্রেমিকের মৃতদেহ, ঝর্ণা আর পাহাড় নীরবতা।


অরাজকতা: রবি মল্লিক





দেশ আমাদের এগিয়ে চলেছে,
                 উন্নয়ন হচ্ছে খুব,
  উন্নয়নের জোয়ারে তাই
                সকলেই দিয়েছে ডুব;
রাজ্য আমার দালালদের হাতে
              ঘুষখোরদের বাসা,
লন্ডন আজ রিক্সা নগরী
               চপ শিল্পীতে ঠাসা;
দেশ-প্রেম বাড়াতে নাকি
          সেনায় যোগদান চাই,
শারীরিক দুর্বল দের কী তবে
               দেশ ভক্তি নাই!
রাজ্যজুড়ে সুচিকিৎসার
           উল্লাস যখন বাড়ে,
গরিব রোগীরা ডাক্তারের অপেক্ষায়
            বিনা চিকিৎসায় মরে;
কোটি কোটি নয় ছয় করে
          কেউ দেশ ছেড়ে পালায়,
গরীবের টাকা কেটে নেওয়া হয়
           তিন হাজার নেই খাতায়৷

হায় কপাল : মাধব মন্ডল







কথার ভিড়ে সমাজ ওড়ে তুই কেডা!
হিংসা ওড়ে ভর দুপুরে মার গুলি।

গুরু কি দিলে রোয়াবি চাল মর সব
লাশের কথা শুনতে দেব? মার লাথি!

লাশেই শুরু কর্মনীতি বোলচাল
বোলচালেতে নষ্ট গুরু গুলি ছোঁড়ে।

লাগ ভেল্কি লাগ ভেল্কি লাগুক না
লাগলে জোর অক্কা পাব তুমি আমি।

হায় কপাল! জন্ম থেকে দেখি খেলা
বুঝবো ঠ্যালা এবার তালে ক্ষেপে ক্ষেপে?

আর এক সংঘাত,পদত্যাগ" : রাণা চ্যাটার্জী




প্রতিবাদ,মতান্তর হলেই নিশানা-এ ঘটনা নতুন কিছু নয়।যদি সে সংঘাত হয় সর্ব শক্তিমান ভেবে বসা অর্থ মন্ত্রক,সরকারের বিরুদ্ধে তবে তো সম্মান খোওয়ানোর আগে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে সরে যাওয়া বেশি
ভালো,এমন আর এক নমুনা দেখে ফেললো আপামর দেশবাসি।

রাষ্ট্রপ্রধান জনসমক্ষে প্রশংসার পিঠ চাপড়ে  দক্ষ অর্থনীতিবিদ বলে দিয়েছেন তবু চলে যেতেই হলো  রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের দায়িত্ব ছেড়ে উর্জিত প্যাটেলকে। কি পেলাম আর কি পাচ্ছির যখন হিসেব নিকেশ, আর মাত্র কয়েক মাস পরই লোকসভা ভোটের দামামা বাজার পূর্বে এমন কিছু ছন্দ পতন কিসের ইঙ্গিত দেয় জানিনা।তবে আম আদমি সাদা চোখে দেখছে,মেয়াদ ফুরানোর নয় মাস আগেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর,যা আবার উদাহরণ সৃষ্টি করে গেল সব থেকে কম সময়ে ওই দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকার।

মেয়াদ শেষের আগে দেখেছি নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান পানগড়িয়ার ইস্তফা,ল।গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সুব্রহ্মন্যমের পর আবার এমন গুরুত্বপূর্ন পদ থেকে পদত্যাগ,তবে কি সরকারের অতিরিক্ত নাগপাশ,খবরদারি,মতানৈক্য এ বিষয়ে  সরকার,বিরোধী,জনগন সকলের মনেই চাপা গুঞ্জন ছড়িয়েছে।

কিছু বেশি দু বছর আগে এমন পরিস্থিতি জনসমক্ষে এসেছিল পূর্ববর্তী গভর্ণর বনাম সরকার সংঘাত,মতবিরোধ।রঘুরাম রাজনের ইস্তফা মুহূর্তে সবার মনে এটাই এসেছিল সরকার তার আস্থাভাজন ব্যক্তি কে নিয়ে আসছেন,হয়তো সেটার সারবত্তাও ছিল,কিন্তু আবার দ্বন্ধ, মানসিক সংঘাতের যবনিকা।অর্থ মন্ত্রকের চাপ ক্রমশ বাড়ছিল ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে টাকা চেয়ে,এই রকম নানান চাপান উতোর,মত পার্থক্যের পরিনাম প্রকাশ্যে এসে যাবে,তা দৃষ্টি ঘোরাতে  দক্ষ পারদর্শী অর্থনীতিবিদ না বললেও মুশকিল।কিন্তু অভিমানী বিদায়ী গভর্নর ,সকল সহকর্মী,পরিচালন বোর্ডের ডিরেক্টরদের ধন্যবাদ জানালেও প্রধানমন্ত্রী,অর্থমন্ত্রীর নাম মুখে না আনায় সেটাকেই অনেকে প্রতিবাদ হিসাবে দেখছেন,বিশেষ করে প্রাক্তন গর্ভনর রাজন মহাশয়।দেশের অর্থনীতি নির্ধারক, এই তাবড়
তাবড় ব্যক্তিদের মান সম্মান বাঁচিয়ে পদত্যাগ খুব কিন্তু ভালো বার্তা দিচ্ছে না।

২০১৬সালে ৪ সেপ্টেম্বর গুড বয় হিসাবে উর্জিত প্যাটেলের গর্ভনর হওয়া। দুমাসের মধ্যে এত বড়ো নোটবন্দির সিদ্ধান্ত সরকার নেওয়ায় সে ধারণা সত্যিই জোরদার হয়েছিল কিন্তু সরকারের সাথে উর্জিতের লড়াই,সংঘাত বোর্ডের মিটিংয়ে চলতে থাকায় অতি সম্প্রতি কিছু কমিটিও তৈরি হয়।আগামী ১৪তারিখ ডিসেম্বরের বৈঠকের ঘোষিত দিন ছিল তারমধ্যেই এমন আকস্মিক খবরে নানান কৌতূহলের জন্ম দিচ্ছে।হয়তো সরকার পক্ষ থেকে আরো চাপ,আরো জটিলতার জন্ম,তার আগেই নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে ইস্তফাই ভালো পদক্ষেপ।

বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোট অলরেডি শুরু হয়ে গেছে,রেজাল্টে পারদের ওঠা নামা। আগামী কয়েক মাস পরই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের কুর্শির দাবিদার দল কে আসছে তার কাউন্টডাউন শুরু।  দেখছি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি,কৃষকের আত্মহত্যা, একের পর এক দুর্নীতি আজ সামনে, উজ্জ্বল নিয়ন আলোয়। বিপুল ঋণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া মহানদের বহাল তবিয়তে বিদেশে দিন গুজরান করছেন আর  নুন্যতম দৈনন্দিন পরিষেবার তথৈবচ অবস্থার সাক্ষী হয়ে আমআদমিগণ গ্যালারিতে বসে মুখ চাওয়া চাওয়ি ও হাততালি দিতে মগ্ন।

সম্প্রতি সরকারের কাজে হিন্দুত্বের রাজনীতির একটা স্রোত নজরে আসছে আবার সরকার উদার অর্থনীতির মধ্যে একটা লাগাম টানতে উদ্যত।টাকার অবমূল্যায়ন,কি পাবো আর কি পেলামের হিসেব নিকেশ,লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জন সাধারণের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম।বিরোধী শিবিরের লাগাতার আক্রমণে একপ্রকার উপেক্ষা করছি ভাবনা দেখালেও সরকারের মধ্যেই নানান অনৈক্যের চোরা স্রোত ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতির  মেরুদন্ড ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে নিয়ে এই গভর্নর পদে আসা সম্মানীয় ব্যক্তিগণের নিজস্ব কিছু ভাবনা  থাকে ।বেশ কিছু সংঘাত যা আগের সরকারের আমলে ওয়াই ভি রেড্ডি,সুব্বারাওয়ের সাথেও হয়েছিল কিন্তু এই আমলের মতানৈক্য,কিছু নতুন মাত্রা এনেছে।একের পর এক ব্যবসায়ী যখন বিপুল ঋণ নিয়ে বিদেশে বহাল তবিয়তে পালিয়েছে,সরকার দোষ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওপরই। আবার যখন গর্বিত বুকে দেশ থেকে কালো টাকা ধ্বংস করার মহান ব্রত সামনে রেখে নোট বন্দীর বিপুল কর্ম যজ্ঞ ,পরিসংখ্যান দিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তখন শুনিয়েছে,সব টাকাই ফিরে আসছে ব্যাঙ্কে।তবে কি কালো টাকা ছিল না ,এই অস্বস্তি সরকারের প্রগতির বেলুনকে  যথেষ্ট খোঁচা দিয়েছে। সর্বশেষ বেসরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলিকে ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে সংঘাত যে আগামী বৈঠকে চরম আকার নিতো সেটা অনুমান করেই এমন সরে যাওয়া।সেই সঙ্গে আরো যে কিছু চমক বাকি আছে এই সরকার বনাম রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তা বোঝা যায় ডেপুটি গভর্নরের ,"সরকারের উচিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বশাসিত চরিত্র বজায় রাখা"এই গোপন মন্তব্য ফাঁসে।

মেয়েটি: মৌসুমী ভৌমিক





মেয়েটির দশ হাতে অস্ত্র হয়ত নেই
তবু মেয়েটি লড়াই করে
লড়াই করে বেঁচে থাকবার
লড়াই করে  একটি ছাদের জন্য 
লড়াই করে -
বেঁচেও থাকে ।

অস্ত্র নেই
তবু যুদ্ধ আছে 
তবু সংগ্রাম আছে 
তবু জিততে হয়, কারন অসুর আছে ।

এই যে ভাতগন্ধ খুঁজে নিতে 
দৈনন্দিন ছোটাছুটি, তার ব্যস্ত পরিসর
সেখানে কোনো উৎসব নেই। 
অন্ধকার পথে একমুঠো আলো খুঁজে খুঁজে 
এই পথচলা
এই  দৃঢ়তা 
এই সশক্ত জীবন
তাকে কুর্নিশ না করে বসে থাকি কী করে? 

সে দুর্গা নয়
সে আমার চারপাশে অহর্নিশ হেঁটে চলা মেয়েটি। 
কিভাবে ভুলে যাব, ব্যক্তিগত চৌকাঠ পেরিয়ে সে তো নিজেই বসে গেছে অনুক্ত ইতিহাসে। 

পিয়াংকী






আমিত্ব 
*******



চুপিসারে নৈঃশব্দ এসে লিখে যায় অন্তহীন সংলাপ , 
উত্তাপ পুড়িয়ে তৃপ্ত হয় বিভাজিকা , 
সমাজের চিলেকোঠায় যখন প্রেম মাপে নিষিদ্ধতা ...
ঠিক সেই মুহূর্তেই পিয়াংকী পোশাক ছেড়ে আমি হয়ে উঠি তোমার অনিন্দিতা॥

কবিতাযাপন আত্মায় আঁকে বিশুদ্ধ শ্বাস , 
মুহূর্তরা বন্দী হয় খাতার সাদা পৃষ্ঠায় 
অলৌকিক আতিশয্যে ক্রমাগত মুড়তে থাকি অস্তিত্ব 
উপপাদ্যের পাতায় স্পর্শক , আমায়  উৎসর্গ করে চেতনায় ॥

বৈশাখী চ্যাটার্জি







সর্বনাশ 



এক অদ্ভুত ভালোলাগা ছুঁয়ে গিয়েছিল । 
তোমার নিস্তব্ধ অবয়ব জুড়ে ভেসে বেড়াতাম আমি , একটা সাদা মেঘের মতন। 
কতবার তোমায় বৃষ্টি ভিজিয়ে গেছি । 
তার থেকেও বেশি ভিজেছি নিজে । 
কি স্বছন্দে তুমি অস্বীকার করে গেছো ওই বৃষ্টির জল । 
কি স্বছন্দে তুমি জানাতে পেরেছ আরো কতো মেঘ আসে -ভেসে বেড়ায় তোমাকে ঘিরে । 
কিছু কষ্ট কথা নষ্ট ঘরে ভাসে , 
কিছু ভালোবাসা ফিরে যায় ফিরে ফিরে আসে । 
তুমি আমার তেমনটি এক সুখ । 
ভাঙ্গা আয়নার প্রতিফলনের বিরাট অসুখ। 
আজ বলছি ভালোবাসি । 
তোমায় ছুঁয়ে হাসি । আমার বৃষ্টি গুলো তোমায় ঘিরে ঝরে।  
ভাঙ্গা আমার ঘর 
কালো তোমার ঠোঁট 
মন সর্বনাশে পোড়ে । 
পোড়া বাতাস ওড়ে । 

সুদীপ ঘোষাল







রোদবেলা



ভট্টাচার্য পাড়ার দুর্গাপুজো দেখলেই মনে পড়ে বাল্যপ্রেম,অমিতের।কাঁসর    ঘন্টা বাজত আরতির সময়।অমিত ভালো কাঁসর বাজাত।আর তাছাড়া সীমার মুখ দেখবার লোভে ছুটে চলে যেত পুজোমন্ডপে।অমিত আরতির ফাঁকে দেখে নিত সীমার    চোখ।তার চোখের নজর অমিতের দিকেই থাকত। অমিত সারাদিন তাকিয়ে থাকত ওদের বাড়ির দিকে।যদি একবারও দেখা যায় সীমার মুখ। অসীম খিদে চোখে কেটে গেছে তার রোদবেলা।

আজও বাহান্ন বসন্তের পরে অমিত ভুলতে পারেনি তার অতৃপ্ত প্রথম রোদবেলার কথা...

ঋজুলেখা দত্ত







অলীক মানুষ
************



ফসকে যায় , ক্রমাগত অবিরত
সে ফসকে যায় , অনেকবার
তার মুখোমুখি হয়েছি
চেপে ধরেছি তার খসখসে হাত
অভিজ্ঞতার কর্কশ ছোঁয়া ,
কখনোবা নির্ঘুম রাতের
নির্জন বাঙ্ময় অন্ধকারে
তার সাথে নিজেকে মিশিয়ে
দিতে দিতে বলেছি -
''বল্ না - তুই কি চাস ? ''

আমি কাঁদলে - সেও নিঃশব্দে কাঁদে ,
আমি হাসলে - সেও কেমন হাসে ,
আমি রাগলে - ওর মুখটাও কেমন
রাগী রাগী দেখায় , কিন্তু ..
প্রশ্নের জবাবে সেও একই
প্রশ্ন করেছে - নিরুত্তর দৃষ্টি !

সত্যি বলছি আয়নার পিছনের
অলীক মানুষটাকে আজও চিনতে পারিনি !

মৌসুমী রায়




নদী ও ক্ষ্যাপা
************




ওই যে ক্ষ্যাপাটা উদলা গায়ে
নদীকে ছুঁলো নদীতে শরীর ডোবালো
নদী ভুলে গেলো নিজের গতিপথ।
আজ রমণের দাগ তার কাছে ধারালো।

নদীর শরীরের নোনাস্বাদ বাড়ছে
বাতাসের পাতায় জলের কালি দিয়ে লেখে
তার শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে গোপন কবিতা
ক্ষ্যাপার মুখ নির্লিপ্ত প্রেমহীন দেখে।

নদী পালাচ্ছে দূরে কোথাও হারাচ্ছে
কতটা পালালে আবার মিলন হবে জানেনা
নিষ্কাম নগ্নতায় জড়িয়ে শুয়ে থাকবে শুধু
ক্ষ্যাপা বিনে মিলন পূর্ণতা পাবেনা।


রাজকুমার বিশ্বাস





পৌষের সকাল
*************




পৌষের হিমেল সকাল কুয়াশা ঘিরেছে চারপাশে;
রাজপথের চলন্ত দানব;হোঁচট খাচ্ছে
হাওয়া ব্রেকে |
"নিশুতি রাতের ",চৌকিদার 
ক্লান্ত কুকুর ;
এলিয়ে দেহ পড়ে আছে ফুটপাতে আফিম খোড়ের মতো |

ঘুম ভাঙেনি পথশিশুদের;
সারারাত মশার সাথে লুকোচুরি খেলে
শ্রান্ত দেহ ঢেকেছে ছিন্ন মাদুরে |

ব্যস্ত ফেরিওয়ালা জীর্ণ পোশাকে,
ছেঁড়া চপ্পলে আওয়াজ তুলে,
মোট মাথায় চলেছে হনহনিয়ে,
বিকিকিনির হাটে;--পসারসাজাতে ।

চায়েরদোকানের  চুলার ধোঁয়ায়
বর্তুলের-কুণ্ডলী মিশে কুয়াশায় ;
ধুোঁয়াশার--পালে ,জোড় বাড়িয়েছে |

কাগজের ফেরিওয়ালা;-বিড়ি ফুকে -
শেষ সুখটান টেনে;
দিচ্ছে চাপ, -- সাইকেলের ভাঙা প্যাডেলে|

হরিজন দম্পতি--খুকখুক কেশে;-
ঝাড়ু হাতে--নেমেছে ,
রাস্তা ঝাঁটের কাজে |

যারা সভ্যতার জঞ্জাল তোমাদের চোখে, 
তারা জ্বেলে আগুন জঞ্জালের স্তূপ, 
হিমে ভেজা গায়ে 'ওম' নিচ্ছে। 

আর ,
সুট-বুট-কোটে ফুলবাবু সেজে;
সিগারেটে ধোঁয়া ছেড়ে; পানের পিকে;
সভ্যতার' বাবু' রাজপথ লাল করে, উঠছ বাসে -ট্রেনে-ট্রামে |

পৌষের হিমেল সকাল কুয়াশা ঘিরেছে 
চারপাশে |

অভিষেক মিত্র







স্বপ্ন



কবিতা – তুমি হয়ে যাও সবুজ শরীর।
বদলে যাও সেই ভাষায়
যার উপর ভর করে উড়ে যাব আমি,
স্বপ্নের ডানায়।
কখনও তুমি আদিম সুর,
আফ্রিকার অচেনা উপজাতির
জড়িয়ে নাও মায়াবী ক্লিভেজ,
আমি চাইতুমি আজ বিপ্লব হও
আমার এই ক্ষুধার্ত জিভে।

এস.কে.এম মিজানুর রহমান






মা




সাত জনমের মাগো তুমি 
ব্যথা দিলে
কাঁদছি আমি,
তোমার ছেলে আমরা সবাই 
তোমার হাসি ভুবন ভরা,
স্বপ্নে এসো মাগো তুমি 
দেখব হাসি আবার আমি,
ফুটবে ফুল জগৎ সংসারে
মাগো
রূপ কথার সে গল্প বটে
ঘুম পাড়ানোর আগে,
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি
ভোর হওয়ার আগে,
মাগো তুমি ভালো থেকো 
পারলে এসো ঘরে,
কাঁদব আমি দেখবে তুমি 
তোমায় বুকে ধরে,
আর পারিনা সইতে মাগো
তোমায় ছেড়ে
সকল ঘরে প্রদীপ জ্বেলো 
সন্ধ্যা নামার আগে

তানিয়া ব্যানার্জী





সুখ
-----------------------




ওরা আসবেনা ভাবে রোজ রোজ..
ছোঁবেনা ভাবে রোজ রোজ।
ফুসফুস নিয়ত ছোটো হতে হতে নিদান হাঁকে,
ওরা অভুক্ত,  ওরা নিদ্রাহীন...
নির্জলা উপবাসে বাঁচে রোজ রোজ।
উপেক্ষার বুদবুদে নদী নালা মিশে এক হয়ে যায়,

ওরা আসে... ওরা যায়..... ওরা বাস করে মজ্জায় মজ্জায়,
কেমো থেরাপি বড্ড কড়া ডোজ----
দাঁতে দাঁত দিয়ে,  জীবানু মারার অভিপ্রায়,
তবু' তো ওরা আসে,  সারা শরীর ,  রক্তে মেশে --
দৃশ্য দূষণ,  কাব্য দূষণ,  সঙ্গ দূষণে বাড়ে রোজ রোজ।
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে পোঁতা,  ওদের বীজ,
জানলা বেয়ে.. দরজা বেয়ে আসে ওরা,
হাত বড়ালেই পাতা মুড়ে যায় --
লজ্জাবতীর মত....তবে কি! 
গাছেদেরও অসুখ হয়!  কাছে ফিরে এলে,  পেতে চাওয়া যত!

চৈতালি গোস্বামী






এমন অনেক স্বপ্ন থাকে 



কিছু অমলিন স্বপ্ন থাকে। 
সবার থাকে। 
পূরণ যদি হবার নয়, তবুও থাকে। 
নিরীহ কিছু ইচ্ছে থাকে
তুমি ভরসা দিলে বেড়ে উঠবে 
এই বর্ষায় মাথা তুলবে
বাগান জুড়ে বেঁচে থাকবে

বিরাট ক্ষেতে তোমার মুখের জন্ম দেব
তোমার আদল, তোমার চোখ 
তোমার নখের স্পর্শ দেব
আমার এমন স্বপ্ন ছিল মালী হব
আকাশ ফুঁড়ে রোদ আনব
মাটি খুঁড়ে আনব জল
সেচ করব, ফসল তুলে ভরব ঘর
আগুন আঁচে সেঁকব রুটি 
নরম রুটি তাওয়ার আঁচে তৃপ্তি পাব। 
তৃপ্ত হব।
হা, এমন স্বপ্ন সবার থাকে। 
আমার থাকে, তোমার থাকে। 

দীপ্তি মৈত্র







স্মৃতিপটে জীবনানন্দ
********************




   
নির্জনতার কবি জীবনানন্দ 
সাহিত্য প্রাণে আনে নব ছন্দ।
১৮৯৯সন১৭ইফেব্রুয়ারি, 
পিতা হন সত্যানন্দ,
মাতা কুসুম কুমারী। 
‘রূপসী বাংলা’র বরিশাল গ্রাম;
শালিকের খয়েরী ডানা,
তমালের নীল ছায়া-
কবির নিবাস তিনি শিশু যখন।
‘ঝরা পালক’ সম বাতাসে ভেসে 
কবি জীবনের বৈঠা বাওয়া।
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’তে সঞ্চিত থাকা
বিষণ্ণতা,স্বপ্নলোকে অভিসার বাসনা।
জীবন সলিলে পাড়ি দেওয়া
সেই বিদীর্ণ ক্লান্ত প্রাণেরে
দু দণ্ড শান্তি দিয়েছিল, 
নাটোরের বনলতা সেন।
‘মহাপৃথিবী’,‘মাল্যবান’,‘সুতীর্থ’
‘সাতটি তারার তিমির,’ ‘আমিষাশী তরবার’
মাতিয়ে দিলো সাহিত্যের দরবার।
এ হেন তিমির বিনাশী কবির
চিত্রকল্প,সৃজন দক্ষতা,অলংকার মাধুর্য
দৈবাৎ একদিন হলো স্তব্ধ।
ট্রাম দূর্ঘটনায় আহত হল কবি প্রাণ-
রক্ত মাংসের শরীর,সৃষ্টিশীল মন
দপদপ্ করে জ্বলতে জ্বলতে
একদিন গেল নিভে-
রেখে গেল তাঁর অমূল্য সৃজন।
তিমির বিনাশী হলেন তিমির বিলাশী
‘কবিতার কথা’আামাদের রেখে 
ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন
 নক্ষত্রের দেশে-
আজি এ দিনে প্রাঞ্জলিতে
জানাই তাঁরে প্রণাম।

চিরঞ্জিত সাহা







তৃণা





পেনের ক্ষত মোছার মোহে মগ্ন যখন শেষ রবার
গণিকা মনে নীরব বিরাজ , হাজার বাতির নীলচে  ঝাড় ।
ছুটছে ঘড়ি জেটের টানে , রং মুছেছে ক্যালেন্ডার ,
আজ ঘুড়ি তোর প্রেমের চিঠি , নির্বাচনী ইস্তেহার ।
তোর নদীতে নতুন জোয়ার , গড়ছে নতুন পোতাশ্রয়
তেজস্ক্রিয় মনফোয়ারা , মানবতার অবক্ষয় ।
উন্নয়নের পাহাড়চূড়া , রঙিন তারার হ্রাদ-উৎপাদ ,
আমার গ্রামে শুষ্ক সাগর , ন্যায় সততার বীর্জেহাদ ।

প্রথম রোদের সোনালি আভা , প্রথম শাড়ির গোলাপি পাড়
আমি তখন কবিতা -ক্যুইজ , ফিউনারিয়া হাইগ্রো঵ মার ;
ব্যস্তবাগিশ শেষ লোকালে , গড়তে তোর স্বপ্নগড়,
সিঁড়িভাঙা তোর মিথ্যে আজান , জুম্মা নামাজ বছরভর । 
বারুদ যেমন বাঁধছে জমতে , বাজিতে রোশনাই
তুষারদিনে একফালি রোদ , চুল্লির শেষ ছাই ;
প্রেম যেখানে মরফিন , সেথা খড়কুটো আজ ঘৃণা ,
অভিধান বলে পবিত্রতার অপর নাম তৃণা ॥