নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিসর্জন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বিসর্জন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মৌসুমী ভৌমিক








✍️সাক্ষাৎকার
    ***********

প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ?
উত্তর : আমার কাছে কবিতা হল বন্ধু, আমার সুখ, দুঃখ ও যাপনের সঙ্গী।
     ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর : আমার প্রিয় কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর।
   অন্যান্য কবিদের কবিতাই মূলতঃ প্রেরণা।

     ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ?
উত্তর : বলা মুশকিল। তবে একটা কবিতা লেখার পর কিছু শান্তি অনুভব করি। হয়ত তাই লিখি।

     ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত)
উত্তর : প্রথম কবিতা - 'মৌন'। 2011 সালে সানন্দা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
           প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ - 'যাপন'। 2017 সালে উড়ান প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

     ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?
উত্তর : আত্মিক সম্পর্ক হওয়া উচিত। কবিতা যখন মন ছুঁয়ে অন্তর ছুঁয়ে যায়, সে শব্দমালা তখন শুধু কবির নয়, পাঠকেরও হয় বৈকি।

৬. ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ?
উত্তর : ফেসবুক বর্তমান যুগে এক বড় প্লাটফর্ম। আজ যারা ফেসবুকে কবিতা লিখছে, ভবিষ্যতে তাদেরই কেউ বড় কবি হয়ে উঠবে না, এমন কথা বলা যায় না। সময় বলে দেবে এর গুরুত্ব কতখানি।

৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?
উত্তর : যে যার নিজের জায়গায়। ছাপার অক্ষরে লেখা পড়ার যেমন বিশাল সুবিধে আছে, অপরদিকে অনলাইন ম্যাগাজিন খুব কম সময়ে অনেক দুরবর্তী স্থানেও পাওয়া ও পড়া সম্ভব। অনলাইনে অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছানোও সুবিধাজনক।

৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুখ হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর : বই বিমুখতার কারণ বহুবিধ। বইসংখ্যা প্রচুর, তাছাড়া অনলাইনে বই/কবিতা/লেখা পড়ার ফলে কেনার চাহিদাও কমে যাচ্ছে। তবে ভাল বইয়ের পাঠক আজও বর্তমান।

৯. উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ?
উত্তর : যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কবিতারও আধুনিকীকরণ ঘটবে, এটাও কাম্য। তবে দেখতে হবে এ কবিতাও যেন পাঠককে স্পর্শ করে।

১০. গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তর : গদ্য কবিতায় অন্ত্যমিল থাকে না। তারও নিজস্ব ছন্দ থাকে তবে নির্দিষ্ট নয়।



মৌসুমী ভৌমিকের কাব্যগ্রন্থ "যাপন" ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্তে ঘরে বসেই পেয়ে যান ডেলিভারি । অর্ডার করতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কেঃ https://goo.gl/ivub8T



✍️কিছু কবিতা



শব্দরা
***********




পাহাড়ের গা বেয়ে চলা রাস্তা ধরে
শব্দরা হেঁটে যাচ্ছে
নির্বাক আমি নিথর হয়ে বসে থাকি


ঢালু উপত্যকার কোল বেয়ে
খাদের পাশ দিয়ে গেলে যেমনটা হয়
শব্দরা সেভাবে হাঁটছে
স্পষ্টতঃ বললে
শব্দরা খেলছে, অক্ষর ভেঙে ভেঙে
আবার ক্রমশঃ নিজেদের জুড়ে নিয়ে


শব্দের বৃষ্টি আয়নাবাচক হলে
তাদের গল্পটা বুঝতে পারি
নির্বাক আমি জেগে উঠলে
শব্দরা হাসে -
শব্দরাও প্রগলভতা ভালবাসে



আঁধার
***************



আলোর পৃথিবীকে আঁধার স্পর্শ করলে
            রাত্রি হেসে ওঠে ।
নাক্ষত্রিক আকাশে জোছনার প্লাবন এলে স্বর্গীয় দ্যোতনায়
              ভেসে থাকে দিগন্ত।
অখিল বিশ্ব রাত্রির চান্দ্রিক সুষমার
    কাছে ঋণী হয়ে থাকে।
জন্মাধতার মুখোশ খুলে হে মানুষিক অসুর
      এই মোহময় অপরূপ জ্যোস্নায়
ধুয়ে নাও বিষাক্ত মন
সন্ত্রাসের আগুন।
আঁধারের মৌনতাকে সম্মতি না মেনে
মৌনমিছিল বলে জেনে রাখো।
আঁধারের সম্মোহন মুছে দিক যত রক্তাক্ত চেতনা। পৃথিবীর পাণ্ডুলিপিতে লেখা হোক শুধু মানবতা, ভাতৃত্ববোধের অক্ষর।
তারপর এ পৃথিবী অ-আসুরিক হোমযজ্ঞে
শুদ্ধ হয়ে লাবণ্যময়ী মমতাময়ী মাতৃভূমি।



আলোহারা জীবন
*****************


মনগুলোতে অন্ধকার জমলে
মুখগুলো পরে  নেয় মুখোশ
নক্ষত্রদের পুড়িয়ে দিয়ে
রক্তের স্বাদে ভাঙে উপোস।
ক্ষমতার কাছে নুইয়ে মাথা
শব্দ  হারায় প্রতিবাদী স্বর
মোমবাতি জ্বলে, কান্নারা শুধু
দুঃখ ঢাকে, কাটে আঁচড়।
জমজমাট অন্ধকার অলিগলি
আলোহারা চাঁদ, দিগদিগন্ত
জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে
থাকে না কোনো মুহূর্ত।
তবু, আশ্চর্য ভাত ফুটে উঠলে
গন্ধে আবার বেঁচে ওঠে জীবন।






পদযাত্রা       
***************



দিনের আলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে
এসো দুপুরআলো সেলাই করি
সূর্য কাছে এলে ছায়াও ভয় পায়
নিজেকে গুটিয়ে ছোট হয়ে এলে
আমার ছায়াও আমাতে মিশে যায়
আমি একাত্ম হয়ে প্রহর গুনি
সন্ধ্যার আঁধার হেঁটে এলে
গোধূলির আলোতে মুখ ধুই
মেখে নিই নরম আলোর প্রশান্ত আভা
ক্লান্ত আমি অতল স্বপ্নের সুলভ খামে
হারিয়ে যায় সম্মোহিতের মতো
জীবনের কথা বিছিয়ে যে ইচ্ছেরা জাগে
সকালের সোনালি আলোয় তাদের
আবার পদযাত্রা।




আমি ও গাছ          
***************


আমি দেখি
মাঠের মাঝে গাছগুলি একাকী দাঁড়িয়ে -
তখন আর নিজেকে একা মনে হয় না ঠিকই
বরং গাছের থেকেও অসহায় মনে হয় ।
শেকড়হীন সুগন্ধহীন জীবন
সারাজীবন কারো না কারোর অপেক্ষায় বহুবার মরার পরেও বেঁচে থাকে ।
জেগে থাকে শূন্য করতল মেলে পৃথিবীর মায়ার মাঝে
কিছুই তো নেই - ভিক্ষাপাত্র নিয়ে প্রবজ্যা দরজায় দরজায়
তার চেয়ে গাছ হওয়া ভাল।




সাক্ষাৎকারে: জ্যোতির্ময় রায়

রোমা মন্ডল ব্যানার্জি



মেরুদন্ডীয় মেঘ
"""""""""""""""""



মেঘ পেরুলেই আমার  বাড়ি,
যাবিরে 'টগর' যাবি ?
দিগন্ত ছুঁলেই মস্ত আকাশ
মাটি ছোঁয়া জানালাও খোলা পাবি...

জানিস 'টগর,'
সেই জানালা দিয়ে ভোরও আসে,
আসে  শিরদাঁড়াদের পাল ,
রুগ্ন রোদ ওড়ে না বাতাসে,
'আ ঢাকা আঙ্গুলে' আসে সকাল..

মেঘ পেরুলেই  আমার  বাড়ি,
চলনা 'টগর' , যাবি  ...?

মন মেঘ সরালেই সাদা সড়ক
নেই তো প্রতিহিংসার মোড়..
এইখানেতে 'আধমরা রোদ',
শুধুই মিথ্যে ভুরি ভোর.....

চিৎ শুয়ে রয় শরীর ঘাটে
খসখসে হিংসা,প্রতিশোধ...
শিরদাঁড়া'টা শ্যাওলা পড়া পঙ্গু মনে
এইখানেতে,আঁচড়ায় জীবন বোধ.....

ঐ তো, মেঘ পেরুলেই আমার  বাড়ি,
চলনা 'টগর'  যাবি  ....?

ঐ খানেতে  অ্যাসিড জল নেই,
নেই  কামুক, লোভী বাতাস,
'উলঙ্গ  রাজা'র দেশের সত্য বলা
সেই ছেলেটারও এইখানেতেই বাস..

ঐ তো 'টগর' মেঘ  পেরুলেই 
আমার  বা়ড়ি, চলনা  'টগর'  যাই,
মেঘ সরালেই ন্যায্য আকাশ,
মাটি, মা আর মানবিকতার গন্ধ  পাই  ...

ঐ তো 'টগর'... 
কালো মনের মেঘ  সরালেই  আমার  বাড়ি,
চলনা, চলনা 'টগর'  যাই  .....

পবিত্র চক্রবর্তী







আজব পুরাণের গপ্প
****************


                          ( ১)
       
সে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের কথা । তখন দুর্গা ঠাকুর বসন্তকালে সিংহের পিঠে চেপে বাপের বাড়ী আসতেন । সময়টাও ছিল খাসা । বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হরেকফুলে সেজে উঠত । মা মেনকা আর অন্যান্য সখীরা নানা ফুল তুলে এনে কত রকম সাজ বানাতেন । আহা কৈলাস দেখো , চারিদিকে বরফ আর বরফ ! কী আর করা বাপ-মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শীতের দেশে বিয়ে দিতে বাধ্য হন । সে যাইহোক যা হওয়ার হয়ে গেছে । বছরে এখন একটিবার মেয়েকে কাছে পেয়ে কত আদর করে , চুমু দেয় । আর দাদু প্রাচীনবর্হি সে তো আনন্দে দিশেহারা ।
একদিন সকালবেলা আঙুরের রস পান করতে করতে দেবী দুর্গা তার দুই বোন কদ্রু আর বিনতার সাথে সাধের ফুল বাগিচায় ঘুরছেন । দুর্গাকে কাছে পেয়ে ফুল গাছেদের শরীরেও খুশী । দেবীও তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । কিন্তু কেন জানি না আজ সকাল থেকেই পার্বতীর মনটা কেন জানি না খারাপ । বড় বোন মশকরা করে জিজ্ঞেস করেন , “ হ্যাঁ রে পার্বতী ভোলানাথের জন্য মন খারাপ নাকী ?” দেবীর মুখে হাসি কিন্তু মনের কোথাও কী যেন না থাকার দুঃখ । এই বাগানেই বাসা বেঁধে থাকে নীলকণ্ঠ দম্পতি । পার্বতীর মনের কথা বুঝতে পেরে তারা টুঁই টুঁই করে গান গাইতে গাইতে বলে –
“ বাসন্তীর মনে বসন্ত নেই-
তাই তো মা হারিয়েছে খেই ।
শ্যামদেশে আছে এক বৃক্ষ-
ফুটলে ফুল যাবে সব দুঃখ ।”



                                  ২

প্রজাপতি দক্ষ চিন্তায় আকুল । কী এমন গাছ যা তার বাগিচায় নেই ? আর শ্যামদেশ সেটাই বা কোথায় ? সুপ্রাচীন দাদু প্রাচীনবর্হি নাতনীর মনের দুঃখের কথা জানতে পেরে প্রপিতামহ ব্রহ্মার আশ্রম ব্রহ্মলোকে যান । ব্রহ্মা বলেন “ দেখো বাছা প্রাচীনবর্হি আমি বিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টি করলেও বয়েসের কারনের বর্তমানে কিছু স্মৃতি বিলোপ ঘটেছে । তুমি বরং বিষ্ণুলোকে যাও ।” 
প্রাচীনবর্হি সেখানেও যান । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু তখন অনন্ত শয্যায় , ঘুম ভাঙানো যাবে না । অবশেষে নারদমুনির পরামর্শে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে শ্যামদেশ (বর্তমানের থাইল্যান্ড) থেকে আনা হয় শেফালি ফুলের গাছ । পরম যত্নে তা লাগানোও হল , কিন্তু ফুল বসন্ত শেষেও আর ফোটে না । এ যে বড় বিড়ম্বনা । 
                
                                   ৩

এদিকে রাবণের আক্রমনে সকল দেবকুল চিন্তিত । ভগবান বিষ্ণু তখন রাম অবতারে ধরায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপ্রিয় সীতাকে উদ্ধারের আশায় । কিন্তু পরাক্রমশালী রাবণকে বধ করা যে সহজ নয় তা জেনেই শরৎকালের এক সকালে কালিয়াদহের পাড়ে বসে একাগ্র চিত্তে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করে বসেন । এই সময় দেবকুলের ঘুমানোর সময় । কী আর করা দেবীকে রামের কাছে পাঠানো হল পরম শক্তি দেওয়ার জন্য । রাম দেবীকে একশো আটটা নীল পদ্মে পূজা দিলেন । একেই ঘুমের সময় কিন্তু একটা মিষ্টি গন্ধে দেবীর মুখ পরম আনন্দে ভরে উঠলো । তিনি দেখলেন , অনেক ফুলের মাঝে শ্বেত-স্বর্ণ কান্তি ক্ষুদ্র কিছু ফুল । দেবী শ্রীরামের কাছে জানতে চান , “ বৎস এহেন মধুর ফুল কোথায় পেলে ?” করজোড়ে রাম জানায় , “ দেবী এ ফুল এ দেশে কেবল আপনার পিতার বাগানে শরৎকালেই ফোটে । আপনার পিতামহ এনেছিলেন ।”
এরপরের ইতিহাস সকলেরই জানা । শোনা যায় এরপর থেকেই দেবী দুর্গা কেবলমাত্র প্রিয় শেফালি ফুলের জন্যই শরৎকালে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ী আসেন । রামকে আর সেই নীলকণ্ঠ পাখীকেও আশীর্বাদ করেন । ফলে রাম যুদ্ধে জয়ী হন আর নীলকণ্ঠ পাখী শরৎকালের দুর্গাপূজায় মায়ের সাথে খানিকটা পূজা পেয়ে থাকে ।
গপ্প শুনে আমার ভাগ্নী পটা তো দিব্যি খুশী । আমাকে বলল “ মামা এ গল্প কোথায় পেলে ? বন্ধুদের বলতে হবে তো ।”
আমি বললাম , “ খবরদার ! এ শুধু তোর আমার গপ্প , ‘ আজব পুরাণে ’এসব আছে লেখা ।।”



ইমরান হাসান




বিসর্জন
********


রেখা বেদে দের মেয়ে, তার বিয়ে টা হয়েছিল অনেক অল্প বয়সে।তার একটাই দুঃখ তার পেট থেকে নতুন জীবন এর জন্ম হয়নি। সে বন্ধ্যা। সবাই তাই বলে থাকে। তবে তার মনে হয় না। কেননা তার মাঝেও মীনরূপ জলদেব প্রকট হন প্রতি মাসে। তার তিননদী তেও বান ডাকে প্রতি মাসের তিন দিন।

আজকে সে এই কারণেই এসেছে বরেন্দ্র মহাস্থান এ। এখান নিশুম্ব নামের এক মহাতান্ত্রিক এর বাস সে শুনেছে, সবাই নাকি তার দেখা পায় না। তবে সে আশায় আছে, সে হয়ত পেয়ে যাবে। কেননা সে শুদ্র দেবতার পূজারী। নিশুম এর ন্যায়।

রেখা মেঠোপথে এগুচ্ছে তার মাথার উপরে একটা ঝুড়ি। সেই ঝুড়ির মাঝে নানা রকম এর জিনিস। সে এগুলো বিক্রি করে বিভিন্ন এলাকা তে।

সে আসতে আসতে পৌছাল একটা গড় এর কাছে। ঢিবির মত উঁচু হয়ে আচ্ছে গড়টি। এখান থেকেই নিশুম্ব এর এলাকা শুরু।

সে পূজা করে এক অজানা অন্ধকার দেবতার। তবে তার অনেক নাম ডাক। সন্তান চাইতে গিয়ে যারা তার দেখা পেয়েছে তারা কেউই নাকি খালি হাতে ফেরেনি।

“সেইডা তো ঠিক আছে, কিন্তক তান্ত্রিক এর কাছে যাওনের আগে শুইন্না লও সে কিন্তক সব কিছুর একটা কইরা দাম লয়”

সে গরীব বেদেনি। এরপরেও সে চলেছে তার কাছে।

সবার অপবাদ সইতে পারে না সে। তার আর ভালো লাগে না বন্ধ্যার এই অপবাদ। তার স্বামীকে শুনতে হয় হাটকুড়া নাম।

কিছু না বললেও তার মুখ দেখলে পারে বোঝা যায়। যে তার ভেতর টা ছিড়ে যায়।

এই কারণে তান্ত্রিক যা দাম চায়, সে দিয়ে দেবে,

সেটা যা-ই হোক না কেন।

যদিও তান্ত্রিক চরিত্রহীন নয়। তাকে ব্রহ্মচর্য এর সাধনা করতে হয়। এই কারণে যদি সে তার সমস্ত সম্পদ চেয়ে বসে তাও পিছে হটবে না সে।সে হয়ত চাইবে তার জীবন , সেটিও দিতে সে রাজি। যদি সন্তান এর জন্মের পর সে তাকে বলি দেয় সে হাসতে হাসতে বলি তে উঠবে।

সে ভাঙ্গা দেউল এর কাছে এল। এই দেউল টা সেই পৌরাণিক যুগ এর। মহাভারত এর যুগের রাজা পুণ্ড্রক বানিয়েছিল নাকি এটা।
এর মাঝে এখনও আঁধার সেই দেবতার পূজা করা হয়। যার পূজা পুণ্ড্রক করত।
দেউলটা শুন্য। ভেতরে কেউ নেই , শুধু ছুঁচোর বিষ্ঠা ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে যেন নেই।

অন্ধকার এর একটা একটা করে স্তম্ভ যেন সবদিকে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে সে কোথায় পাবে সেই তান্ত্রিক কে। এটাই বুঝতে পারছে না।একদিকের ছায়া গুলো নাচছে যেন নাচতে নাচতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর অপর দিকেও ছায়ার নাচন দেখা যাচ্ছে। এই ছায়া গুলো কাঁপতে কাঁপতে ঘরের কোনাতে জড় হতে লাগলো , একটু পরে সে দেখতে পেল সেখানে ঘুলঘুলি এর কাছে একটা কৃষ্ণরঙের মানুষ বসে আছে। তার উপরে ছোঁয়া লেগেই ছায়া কাঁপছে।

সে গেল তার কাছে , সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে গিয়ে তাকে থামিয়ে দিল সে।

তার ঠোঁট নড়ল না, কিন্ত স্পষ্ট বুঝতে পারল সে তার মনের ভেতরে কথা বলে চলেছে সে ,

“তুই হাটকুঁড়ে তাই লস কি?”
“হ স্বামীজী , হামি হাটকুঁড়া” সে বলল
“তোরে আমি বাচ্চা দিতে পারুম না, পারবি তুই, তুই পারবি, কিন্তক তোর মনের মইদ্ধে যে ভয় আছে তাক তাড়ান লাগবো, তুই তোর জন্য বাচ্চা আনবি ছাওয়াল আনবি, কিন্ত তোর বাচ্চা অইব, কাঁকড়ার বাচ্চার লাহান”

“এইটা কি কন”
“হ, যা কইতাছি মন দিয়া শোন। তুই এখান থেকএ গিয়া দীঘির জলে গা ধুইবি, তোর স্বামীরে নিয়া আইছস তো?”

“হ ,কিন্তক স্বামীজী আপনার এলাকাত তো পুরুষ মানা, তাই আনি নাই”
“এরপরে তোর স্বামীর লগে তুই নরলীলা করবি”
“তোর বাচ্চা হইব , কিন্ত কাঁকড়ার বাচ্চার লাকান হইব”
“ওর কি দাঁড়া থাকব? তাইলে তো সবাই তারে দানো কইব!”
“আরে না ও কাঁকড়া হইব না, কাঁকড়া তো হইবি তুই” যা আর দেখতে পাইবি না আম্রে তুই, যা”

একমুঠো ধুলো নিয়ে তার দিকে ছুড়ে দিল সে।তার চোখ জ্বালা করে উঠল, চোখ বন্ধ করল সে, তবে চোখ খুলে সে দেখে যে আর কেউ নেই। 

সে ফিরে এল, পরনের পোশাক নিয়েই নামল দীঘিতে, দীঘির পানি যেন কেমন আঁশটে একটা গন্ধ করছে যেন অনেক গাড় কিছু একটা পানিটা। এরপরে ডুব দিয়ে উঠল সে।

তার স্বামীর কুটির এর দিকে যাত্রা করল সে, এখানে এক বেনের কুটিরে আছে তারা , বেনে গেছে প্রাগজ্যোতিষ এ।
স্বামীর কাছে নিজেকে সঁপে দিল সে।

পরের দিন সকাল থেকেই, যেন নিজের মাঝে এক ধরণ এর পরিবর্তন এর ছোঁয়া পেতে শুরু করল সে, যেন কোন কিছু তার ভেতর থেকে টানছে, যেন কিছু একটা তার ভেতরে থেকে তার মাঝ থেকে বের হচ্ছে।

ধীরে ধীরে তার পেট স্ফিত হতে শুরু করল দুই তিন মাস এর মাঝেই, সবাই বুঝতে পারল সে মা হতে চলেছে।

তবে সে কিছুই বুঝতে পারল না তখনও, তবে তার মনে হত যেন খুব ধীরে ধীরে কিছু একটা তার ভেতর থেকে তার শক্তি কে শেষ করে ফেলছে।

তবে সেটা খুব বেশী না। এটা বুঝতে শুরু করল সে যখন থেকে ৬ মাস হতে লাগলো তার। তার পেট অস্বাভাবিক রকম এর ফুলে গেল। আর তার হাত পা গুলো যেন ছোট ছোট হয়ে গেল, সে সারাদিন শুয়ে থাকে বিছানার মাঝে,

এরপরেই শুরু হল শুকিয়ে যাওয়া, তার পেট এর ভেতর থেকে ধীরে ধীরে যেন সবকিছু সেই নতুন প্রাণ গ্রহণ করে নিচ্ছে। সে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে, তার পেট টা খোলস এর মত বড় হতেই আছে, আছে, এখন তাকে দেখলে মনে হয় চার হাতি একটা কাঁকড়া। তান্ত্রিক এর ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হচ্ছে যেন ধীরে ধীরে।

যেদিন এর প্রসব এর সময় আসল, দাই ভয় পেয়ে গেল, কেননা তার দেহ কাগজ এর মত হয়ে গেছে, এত পাতলা চামড়া।

ধীরে ধীরে সে যখন তাকে একটু একটু করে বাচ্চাকে এই ধরা তে নিয়ে আসল, তারা পেট ফেড়ে বের হয়ে এল, একদম তার মত দেখতে একটা মেয়ে আর তার স্বামীর মত একটা ছেলে। রেখার মুখে হাসি নিয়েই সে ঢলে পড়ল চিরনিদ্রা এর কোলে।

সে সেভাবেই জন্মদিল তার সন্তান দের কে যেমন করে কাঁকড়া মা তার সন্তান জন্ম দেয়, নিজেকে বিসর্জন দিয়ে, সে জানত এটাই হবে, এই কারণে সে এটা নিয়ে কখনই কিছুই বলেনি। তার শব কে পোড়াতে বা কবর দিতে রাজি হয়নি পুরোহিত মশাই, তিনি বলেন “এই কন্যা সাক্ষাৎ মাতৃ দেবী” তার শব মাটি ধারণ করতে সক্ষম হবে না, তার মাঝে এত শক্তি নেই, আমরা একে দেবীর ন্যায় বিসর্জন দেই মা গঙ্গার মাঝে, তিনিই তাকে দেখবেন,

নির্দিষ্ট দিনে লাল বেনারসি পরিয়ে তাকে ভাসিয়ে দেওয়া হল জাহ্নবী এর তীর থেকে। ধীরে ধীরে সেও যেন আরেক দেবীর ন্যায় বিসর্জিত হল গঙ্গার মাঝে। আসলে মাতৃত্বই তো দেবীর ধর্ম, আর তার মন্ত্র বিসর্জন এর গান। 



অনোজ ব্যানার্জী




বিসর্জন
********



"বিসর্জন " কথাটি,, একবারমাত্র ভাবলেই,কিএক গহীন, দুঃসহ, অসীম বেদনায় ডুবে যায়, আমাদের সকলের মন।
মগজের মধ্যে ঝিলিক মারে সর্বক্ষণ, কি যেন গেল হারিয়ে,কি যেন গেল ফুরিয়ে.....দেবদেবীর
পুজোর ঘট আনা হবে,পুজোর বেদীতে হবে তার আবাহন, পঞ্চপ্রদীপ জ্বলবে, ধূপ, ধুনোর সুগন্ধে,,  ঢাকের বাজনা, কাঁসির শব্দ ,শঙ্খধ্বনিতে ভরে যাবে মন্দিরপ্রাঙ্গন।
তারপর,,,,সমস্ত আমোদ,,হইহুল্লোড় যাবে ফুরিয়ে। আনন্দরা যাবে যেন কোথায় হারিয়ে,,,,
দিতে হবে বিদায়,,দেবদেবীকে,,,
ঘট বিসর্জন,,প্রতিমা নিরুঞ্জন,,,...
*******
এখন,,
পুজোর বেদীতে,, বসে বসে নিচ্ছে পুজো
যেসব রাক্ষসের দল,, দেশটাকে পাঠাচ্ছে জাহান্নামের অন্ধকারে যারা,,,
আরাম করে,আয়েস করে কাটেচ্ছে সুখের জীবন,,,
নিচ্ছে কেড়েকেড়ে  আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরশমাণিকটিকে,
তাদের দিতে হবে এবার বিসর্জন।
হাজার কুসংস্কার, পাপ,অন্যায়,দুর্নীতি, গুণ্ডামি,
অত্যাচার,, অনাচার,ধর্ষণ,
ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা,,প্রবঞ্চনা,
বোম,বারুদ, বুলেটে অগণন তাজা তাজা মানুষের অকারণ, রক্তপাত,,,কত শহীদের বেদনার্ত লাশের মিছিল,,
কত মায়ের কোল হলো খালি....
এসবের যারা করছে পুজো,,ভক্তিভরে,,
যারা দায়ী এসব কুকাজের জন্য,যে সব দানব ঘটাচ্ছে এসব কুকর্ম,,
আমাদের দেশমাতাকে করছে যারা কলংকিত,
অবিরত,,,,
দেশটাকে যারা দিচ্ছে বেচে বিদেশীদের হাতে,গরু-ছাগলের মত, এই সুন্দর পৃথিবীটাকে,  যারা দিচ্ছে ডুবিয়ে..
অনাদ্যন্ত, নরকের গভীর পঙ্কিলতায়,,
এবার আর তাদের কোন ক্ষমা নয়,,,
সুসভ্য সমাজের বেদী থেকে তাদের দিতে হবে
সমূলে বিসর্জন।
হবে বসাতে রাজসিংহাসনে,,
ভদ্র,সত্যনিষ্ঠ, বিচক্ষণ , দেশপ্রেমিক, বীর নেতাকে।। প্রস্তুত হও এবার ঘরেঘরে।।

মাধব মণ্ডল






হাত
---------




ইস, এ হাতে এখনো বসে
দুব্বো ঘাসের পাতা
একটু একটু কালচে ঘৃণাও
ঘর দালান উঠোন ফুঁড়ে
আসি আসি ভাব।

জিভ সব ভেঙে ভেঙে
কথা বা গান ছাড়ে
নদী বা পুকুর ঘাটে
আমার লোমশ বুকে
খুকি তুই কাকে যে খুঁজিস!!

গল্প গল্প মন তোর
এ হাত আলমারি পাক
নিদেনপক্ষে একটা তাক
পেয়ারার ডালে বুলবুলি
আর ফুটে থাকা থোকা থোকা ফুল।

কাল রাতে কেঁদেছিল খুকি
গভীর দুঃখ পেলে ও খুকি কাঁদে
সেই সুর আদি গঙ্গা খায়
ও হাতে এবার কি তুলেছিস?
কচি কচি দুব্বো? ঘৃণা?

পিয়াংকী মুখার্জী





প্রত্যয় 
*******



জলছবির অচেতন  জলোচ্ছ্বাস ,
আজ অনেকটা বিষাদ ভর্তি ফেলে আসা আকাশ  বাতাস !
মেঘ-মল্লার জমিয়েছে আসর,
 সরগম-তান-রাগ-রাগিণীর সমন্বয়ে ,
সেই লালচে বিকেলের আসরে বিলম্বিত দোসর !

পা ভিজলেও ভিজতে পারে মনের আয়নায়,
হৃদয় স্নাত হতেও পারে খুশির ঠমকে আর অঙ্গজ গয়নায়...

বিসর্জনের সুর যদি বাজে পূরবীর তালে...
আমার নূপুর বাঁধা পা নাচবে 
রাগাশ্রয়ী ইমনের  মীরের অন্তরালে ॥

জলাঞ্জলি জলছবিকে কাঁদায় না , 
এ বহিঃদেহী অন্তবৃত্তে পুঁতে দেয় আগুন ঝলসানো কিছু নির্মম  অক্ষর...

দহনের আগুন পোড়ায় না 
বরং কলমের বুক চিরে রোপণ করে অঙ্কুরোদগমের জন্মান্তর । 

এভাবেই , 
আগামী প্রজন্ম জন্ম নিক প্রত্যয়ী চিত্তে 
লৌহপ্রতিজ্ঞা সম্ভাবনা আঁকুক ছন্দসাজানো  মাত্রাবৃত্তে ॥

বন্দনা মিত্র





ভাতের গন্ধ
*********



অনেক রাত্রি শেষে নবান্নের ভোরে
ছেলেটা তাকিয়ে দেখে
সবুজ ধানের শিষে ভাতফুল ফুটে আছে ।
আশ্চর্য ফুলের ঘ্রাণে ম ম করে
পৃথিবীর মাঠ ঘাট ।
ক্ষুধা ঋতু শেষ হল নাকি ?
বিস্ময়ে আনন্দে রোমকূপে কদম্বের ছোঁয়া ।
 দুর্গা দালান জুড়ে সমারোহ , আলপনা ,
 বসুধারা দেয়ালের গায়ে -
ঢেঁকিঘরে শালি ধান,
ঢিমে আঁচে ঘন হয়  দুধ -
উনানের ধোঁয়া লেগে চোখে জল আসে ।
গরম ভাতের গন্ধ মনে করে নেশাগ্রস্ত  মাতালের মত
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ঝিম চোখে ।
বোধনের ঢাকে কাঠি  , নেত্রদান , কলা বৌ স্নান
আরতির ঘন্টা বাজে , অঞ্জলি শুরু হয় ।
অপূর্ব গন্ধ মাখা ছেলে মেয়ে
প্রতিমার মত মুখে প্রসাদের স্বাদ পায় ।
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ঝিম চোখে,
ভাতের গন্ধ শোঁকে , খিদে পায় ।
এবার সিঁদূর খেলা,  ভাসানের বোল ওঠে ,
প্রতিমার মুখে মিঠাপান, সন্দেশের গুঁড়ো –
সন্ধ্যার বিজয়া বাতাসে আকুল ভাতের গন্ধ,
ছেলেটার খিদে পায়, রাগ হয়।
অসম্ভব, খুনে রাগ,  রক্তমাখা আঙুলের নখে
আগুন ঝরানো রাগ ।
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ, পোড়া শব, বারুদের ঝাঁঝ,
পুলিশের ভারী বুট,  সন্ধ্যার জ্ঞান গর্ভ আলোচনা ,
রাস্তায় নিয়মিত মোমবাতি ।
সবকিছু  পার করে জেগে থাকে
নবান্নের ভোরে,  অমিত ক্ষুধার ঋতু
উন্মাদ,  ক্ষুধিত,  ক্রুদ্ধ নগ্ন বালক এক,
চরাচর মেশামিশি বাতাসে ভাতের গন্ধ ।









প্রভাত মন্ডল





বিদ্রোহী কলম
   ==========
                        


হে কলম, 
     আর কত দিন থাকবে স্তব্ধ, 
তোমার টানে
      হয়ে উঠুক সারা বিশ্বে আজ বিদ্রোহ। 
তোমার লেখণী
        আর কত থাকবে, মৌন অসাড় বুকে, 
তোমার প্রতিটি ঘর্ষন
        আজ বিদ্রোহী হয়ে পৌঁছাক বিশ্ব দরবারেতে। 
তোমার রক্তের কালি দিয়ে
        আজ পঞ্জিকা লিখে মৌলাবাদের মুখোস দাও খুলে
তুমি ধর্মের নামে বজ্জাতি
          আর চলবে না তুলে ধর বিশ্ব আদালতে, 
তোমার লেখা ধর্মের নামে
           আর রক্তাত হতে দেবে না এই ভূবনকে। 
তোমার  ঘর্ষনে
            আজ জাগ্রত হোক মৃত আগ্নেয়গিরি দ্বার
তার লাভাতে জ্বলে 
             যাক যত গোঁড়া মৌলাবাদী নরখাদকের দল। 
জাগবার দিন আজ
              র্দুদিন আসছে চুপিসারে, 
করুক্ষেতের মাঠ
              আজ প্রশস্ত হচ্ছে ধর্ম ধর্ম করে। 
তোমার লেখণীর খঞ্জরের ধারে
                আজ রোধ হোক মৌলাবাদের কন্ঠস্বর। 
প্রশয় দেব না
               গোঁড়া মৌলাবাদীদের
করবো না 
             ওদের আর ডোর। 
বিশ্বের থাকবে একটাই 
             ধর্ম,  মানব ধর্ম তার নাম
তোমার  লেখন শৈলীতে
               এটাই হবে স্লোগান।

তপন জানা




দেবী "মা "ই তোর মা
"""""""""""""""""""""""""""""""""


জয় মা দুর্গা বলে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে,
হাজার মানু‌ষের ভিড়, দুহাত জড়ো করে।
প্রতিমা দর্শনের নামটি করে,
আড় চোখেতে তাকিয়ে দেখে দেবী অংগের ভাজ।
চক্ষু কটিদেশে, চায় বক্ষ মাঝে।
তাই তো সেদিন গলির শেষে,
পোড়ো বাড়ির ভেতর
বিবস্ত্র এক দেবী দেহ সাজিয়েছিস রক্ত সাজে।
"মা " "ম " বলে যার পায়েতে আজ লুটিয়ে দিলি মাথা।
সেদিন রাতের ঘন আধারে নিজের মা কে তাড়ালি,
দিয়ে দুঃখ, ব্যাথা।
দেবী মায়ের পুজোর কত আয়োজন, কত আড়ম্বর।
কিন্তু নিজের জন্মদাত্রী কে
পাঠিয়েছিস বৃদ্ধাশ্রমের এক চিলতে ঘর।
যার জন্য এত প্রসাদ, এত ভূষন
সাজিয়েছিস শ্রদ্ধা ভরে।
সেই মায়েরে দুবেলা দুমুঠো দিস না খেতে ঘরে।
"মা দুর্গা "র মূর্তি সাজালি দামি শাড়ি গহনায়,
সেই মা তোর ছেঁড়া কাপড়ে শুয়ে মাটির বিছানায়।
মৃন্ময়ী মা তো চিন্ময়ী রুপে
  সে যে তোর মা,
নিজের মায়েরা দিস না কষ্ট কর ভক্তি শ্রদ্ধা।
বিজয়াতে বাঁচিয়ে রাখিস একটু চোখের জল।
জন্মদাত্রী র জন্য ফেলতে হবে  ওই বাঁচানো জল।
নিজের মা কে শ্রদ্ধা করলে
   খুশি দেবী মা।
জন্মদাত্রী মা যে তোর দেবীরুপী মাতৃ প্রতিমা।
মেয়ে মানেই তো সুলভ, নয়তো লেহ্য চুস্য।
রাস্তার ওই মেয়েটি ও তো, তোর মা বোনের ই মতন।
নিজের মায়ের পায়ে মাথা রাখ,
দেবী মায়ের আগে।
তাহলেই তোর সব পাপ "মা "দেবেন ক্ষমা করে।

রানি মজুমদার




নবজাতক: অঙ্গীকার
*******************




বেশ্যা হও, বেশ্যা হওয়া তোমাদের জন্মগত অধিকার....আমরা পুরুষ, আমরা এনজিও, আমরা সমাজ !!.. .. মহিলার শরীরকে বাজার বানানোর যে যুক্তিটা যত্ন করে সকলকে বোঝানো হয়, তা হলো অভাব....শিক্ষার নাকি চাল ডালের ?... কিন্তু শিক্ষা দিয়ে  প্যান্টের তলায় মারাত্মক অস্ত্রটাকে কে কবে শান্ত করতে পেরেছে !...  আর অভাব. ? আমাদের নীচুপাড়ার সাঁওতাল মাসিরা প্রতিদিন সকালে দলবেঁধে মিস্ত্রীর কাজে যায় সেটাও তো অভাবের তাড়নাতেই...তবে ?....মনুয়ার স্বামী থাকতেও আরো একটা পুরুষ শরীরের প্রয়োজন ছিলো....কেন ?... কারন একটাই.সেটা তীব্র কাম যন্ত্রনা ....কিন্তু তাই বা কী করে হয় ?.. সেই তাড়নাতেই যদি কেউ শরীরকে ভাড়া খাটায় তাহলে জীবনে এত অন্ধকার কেন ?... এখানে একটা মজাও আছে, সম্মতিতে যৌনশিল্প আর অসম্মতিতে ধর্ষন !...অথচ দুটো ভাত কাপড়ের জন্য  নারী শরীরে প্রতিদিন তিরিশটা শরীরের দাপাদাপি এটা অত্যাচার নয় ?... ইঁদুর পচা ঘন্ধময় পেনিসকেও চুষতে বাধ্য করা  আরো ১০০ টাকা দিয়ে, এরপর পেছনে নাও, কুকুর সাজো..ইত্যাদি ইত্যাদি......যৌন কর্মী !!....নিজের নিজের ঘরের  মা  বোনেদের সুরক্ষিত রেখে "বাইরের"  ঘরের মেয়েদের অসহায় দেখতে আমরা খুব  ভালোবাসি, সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে আরো ভালো বাসি.... অসহায়  সেই বাজারের মেয়েটি কারোর বোন নয় ? কারোর মেয়ে নয় ?....অথচ এই ব্যবসাকেই শিল্প নাম দিয়ে আমরাই মুনাফা লুটি,.. যুক্তি দেখাই এদের জন্য নাকি আমাদের নিজের ঘরের মা বোনেরা সুরক্ষিত থাকে !!.. এদিকে তারা রয়ে যায় অন্ধকারেই তবে কারোবারিদের পকেট ভরে, লকপকানো পুরুষ অঙ্গ ঘন্টাখানেক তৃপ্ত হয়..... আমাদের পরম মাননীয়া  সিএমের  যখন কন্যাদের নিয়ে এত প্রকল্পের কথা শুনি....তখন বিশ্বাস করুন  মুখ লুকোনোর জায়গা পাই না.....অষ্টম শ্রেণীর স্কুল ছুট নাবালকও স্কুল ড্রেস ব্যাগে লুকিয়ে সোনাগাছির ঘরে ঢোকে.....সোনাগাছি, কাদারোডে যারা এই যৌন শিল্পের কারবারে নেমেছেন সেখানে ১৩ বছরের কচি মালও পাওয়া যায়.....এই মা, দিদি, বোনেদের ওপর প্রতিদিন চলা অমানুষিক অত্যাচারকে আমরা কেউ কেউ  নির্লজ্জ সমর্থন করি... অতএব " সে  মন্দিরে দেব নাই"....এ মন্দিরেও আর  আমাদের মনূষ্যত্ব নাই.....পড়ে আছে শুধু  "মানুষ"  নামক আমড়ার আঁটি....

আর রেপ টেপ দেখতে চান তো গুগলে আসুন...বৌদির শাড়ি ছাড়া থেকে স্নান....হস্ত মৈঃ থেকে হার্ড ফাকিং.....  OK আপনার কচি মাল পসন্দ  তাই তো ?স্কুল সেক্সে পেয়ে যাবেন....আছে   টিন সেক্স....১৬ বছরের যুবতীর সব কিছু. ...খিড়কি  থেকে সিংহদুয়ারের ভেতরের  সমস্তটা....বৌদি মানে লাখ লাখ বৌদি.....যুবতী মানে লাখ লাখ যুবতী.......হাতের মুঠোয়  ভ্যারাইটিস যৌনাঙ্গ....থেকে থেকে মেয়েদের মুখে আরামের আওয়াজ.....ক্লাস ফাইভের ছেলের দলও টিফিনে  স্কুলের মাঠে বসে  দেখে নিচ্ছে সব টুকু.....মাল  !!গুরু মাল !! ....মোমবাতি, বেগুনেই যদি শীৎকার হয়....তবে লোহার রোড, ভাঙা কাচের বোতল, গাছের গুঁড়িতে তো সুখ সাগরে  মাল ভেসে ভেসে  উঠবে....সন্দেশ খালির বৃদ্ধার যৌনাঙ্গ থেকে নাকি  নাড়ি ভূড়ি বেরিয়ে এসেছিলো.....গোপন অঙ্গ আর গোপন নেই, লজ্জাস্থানে আর লজ্জা নেই.....মা বাবা তাদের ছেলেকে মোবাইল না কিনে দিলেও ছেলে বন্ধুর মোবাইল থেকে দেখে নেবে XXX.....কচি মাথাতে যা ঢোকে তা রয়ে যায় বরাবর.....তবে?...  উপায় ?....কী হবে ভবিষ্যত- পৃথিবীর ??উপায় জানা নেই...তবে ভাবলে গা শিউরে উঠছে.....বিকৃতির যেন প্রতিযোগিতা চলছে....নৃশংসতায় আমার চেয়ে কে আগে !!. ২২ দিন যমে মানুষে টানাটানি, অবশেষে সেই মায়ের মৃত্যু ...সেই রাতের রেপ,  ভাঙা বোতল ঢোকানো যোনিদ্বারের  লাইভ ভিডিও যদি  নেটে এসে গেছে....তা দেখে কত শত পুরুষ অঙ্গ  যে প্যান্ট ভেজাবে তার ইয়াত্তা নেই....এদিকে ততদিনে সেই শরীর পুড়ে ছাই, জীবনেও, মরনেও.....সাড়ে তিন থেকে একষট্টি !!.... মহিলা  হলেই হলো....রাস্তার পাগলীটাও চলবে..... কে  দায়ী এ প্রশ্ন বৃথা. ..দায়ী আমরা নিজেরাই......জ্যাঠামো নাম দিয়ে সব সতর্কতাকে  তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মাশুল গুনছি আমরা........

শ্যামল কুমার রায়






বিসর্জন 
-----------


গিরিরাজ কন্যা পার্বতী তুমি, 
পিতৃপক্ষের অবসানে মর্ত্যে আবির্ভূত হও তুমি, 
খুশির জোয়ারে মর্ত্যবাসী ভাসে।
আনন্দের আগমন হয় তোমার সাথে,
 মর্ত্যবাসী ভালোবেসে তোমাকে আনন্দময়ী বলে ডাকে।
তোমাকে ঘিরে আছে পৌরাণিক কাহিনী কত ! 
কার্ত্যায়নের আশ্রমে পূজিত হয়েছিলে তুমি -
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী ।
দশমীর ঐ শুভ দিনে অসুর বধ করেছিলে তুমি ।
দেবতারা ফিরে পেল স্বর্গের অধিকার।
অশুভ শক্তির হল নাশ , 
শুভ শক্তির হল উচ্ছাস ।
পৌরাণিক ঐ উপাখ্যান যদি হয়ও প্রতীকী, 
অশুভ শক্তির বিনাশে তুমি চির ব্রতী ।
গীতার ঐ উবাচ নয় যে মিছে, 
ধর্মেরই প্রতিস্থাপনে তুমি আস যে মর্ত্যে ।
পৌরাণিক ঐ অসুরের তবু ছিল ন্যায় অন্যায় বোধ, 
আজকের অসুর ওসব থেকে বহু দূরে, 
নীতি, নৈতিকতার নেইকো বালাই ,
কামিনী, কাঞ্চনে আসক্ত এরা ভাই।
ভোগের বাসনা ভীষণ তীব্র, 
যোগ্যতার চেয়ে এদের প্রত্যাশা বেশি, 
সবকিছুই পেতে এদের ভীষণ তাড়াতাড়ি ।
আইনের শাসন এরা মানে না কখনও ।
এরা কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, 
অপরাধীর কোনও ধর্ম হয় না জেনো, 
অপরাধীকে শুধু মানবতা বিরোধী মেনো ।
কোথাও এরা ধর্ষক, কোথাও ছিনতাইকারী, 
কোথাও বা ধর্মোন্মাদ , কোথাও জেহাদী ।
শিক্ষিত আর অশিক্ষিতে এখানে ফারাক নেই কোনও ।
মগজ ধোলাই করে এদের ফিদায়ে বানানো হয়। 
সন্ত্রাস  আর ধ্বংসে হয় উল্লাস এদের ।
এদের অত্যাচার থেকে বাদ যায় না কেউ, 
নির্ভয়া থেকে নিরীহ জনতা হয় এদের শিকার, 
এদের হাত থেকে বাঁচাতে মাগো অবতার আসা দরকার ।
এরা যে শুধু সমাজে আছে, তা কিন্তু নয় !
শিক্ষিত পরিবারেও কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয়।
সুরক্ষিত নয়কো মানুষ সমাজের কোথাও ।
শিক্ষা নিকেতনেও শিশু নির্যাতিত হয়। 
তুমি তো বধিলে একটা অসুর , 
মনুষ্যরূপী অসংখ্য অসুর বধে মাগো অনেক দুর্গা দরকার, 
বর্ষব্যাপী যারা করবে এদের সংহার।

রাণা চ্যাটার্জী






মৃত্যু 
*****


                    

মৃত্যুর রঙ কে দেখেছো ? গাঢ় নীল না সবুজ ! 
মৃত্যু ঘন্টা বাজলে পরে,নিস্তব্ধতা,সব অবুজ । 
দিকে দিকে ওই লেলিহান শিখা,মৃত্যুর পরোয়ানা,
টিভির পর্দা,খবরকাগজে অকালে মৃত্যুর মুন্সিয়ানা

  জীবন ও মৃত্যু ব্ন্ধু প্রগাঢ়,হিম শীতল  গভীরতা , 
  মৃত্যু তো, মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ,স্পন্দিত নীরবতা । 
  কিছু মৃত্যু তবু রোখা যায়, এলে পরেও মৃত্যু থাবা , 
 নারীশিক্ষা,সচেতনতা,জীবনকে সহজ ভাবে ভাবা।কতো সহজে মৃত্যুর গ্রাস, পুরুষ তন্ত্রের দেখি ধ্বজা
মাতৃ শক্তি হয়েও নারী,বয়ে চলে কতপাপের বোঝা

কোথাও মৃত্যু সরল মায়ের,জন্ম দেওয়ায় কন্যা , 
মেয়ের মুখে অ্যাসিড অ্যাটাক, বইলে রূপের বন্যা। আবার মৃত্যু গৃহ বিবাদ,মদ্যপ স্বামীর মাতাল গুনে,  
অসহ্য চাপে আত্মহত্যা,কেরোসিনে দগ্ধ আগুনে । 

আরো কতো বলি মৃত্যুর পথ,ধর্ষণ,খুন,পণ প্রথা , 
নারীর ওপর যত বাহাদুরি ,ছল চাতুরী ,কু-কথা ।
এই নারীই সৃস্টি কারী , সমাজের  ধারক বাহক,  
নয়কো নারী সেবা দাসী, কিংবা পুরুষ তুষ্ট গ্রাহক। 

তবু আজ বলি ,গর্বে ফুলি,নারী পুরুষের নেই ভেদ,
মৃত্যু আনে করাল ছায়া,জীবনহানি,হটাৎ পূর্ণচ্ছেদ।

অরিন্দম দাস





 "হায়রে সমাজ"
    -----------------



সত্যিই কি আমরা জীবিত
আর যদি জীবিত হয়...
তাহলে কেন আমাদের প্রতিনিয়ত
মরার অভিনয় করতে হয়,
বেঁচে থেকেও ।
কেন পারিনা আমরা
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে,
কিসের এত ভয়।
দোষ করে দোষী কেন মুক্তি পায় ?
উত্তর দেবে  আমায় ?
জানি
উত্তর নাই..
প্রতিদিনই সংবিধান তৈরি হয়,
টাকার খেলায়।
আর উকিল বুদ্ধি ও যুক্তি কে সাজিয়ে গুছিয়ে
অন্যায় কে ন্যায়,ন্যায় কে অন্যায়
প্রতিষ্ঠা করে।
হায়!এ কোন সমাজ
যেখানে শাস্তি পায় সাধারণ মানুষ,
মুক্তি পায় অপরাধী।।

বিকাশ মন্ডল

  


"গণতন্ত্র ধর্ষণ"
**************



বিষাক্ত রক্তিম জেহাদ, নাস্তিক সমর্থকেরা সব মার্কসবাদী,
ঠোঁটকাটা স্লোগান, প্রতিবাদে হাতে নিয়ে মোমবাতি।
গণতন্ত্র প্রবঞ্চকের হাতিয়ার, ক্ষমতা জাহিরের আস্ফালন,
ইস্যু পেলেই রাস্তায় নামে, লোক দেখানো আন্দোলন।
রাজনীতির মূল সংজ্ঞা পাল্টেছে, লিপ্ত ওরা হানাহানিতে,
কখনও গোষ্টীদ্বন্দ্ব, তো কখনও মত্ত গদি নিয়ে টানাটানিতে।
দেশের মেয়ে ধর্ষিতা হয় রাত-দিন, ধর্ষকরা পায় না কোনো সাজা,
ছোট্ট ইস্যু পেলেই বনধ ডাকার নীতি, কারণ ওরাই দেশের রাজা।
নির্বাচনের আগে হাতে-পায়ে ধরে, দেখায় কত শত ছলনা,
জেতার পর পাঁচটা বছর হাতে পেলে, ওদের টিকিটি তখন মেলে না।
জনগণও বোতাম টেপে, কার হয়ে কে জানে দাদার না দিদির?
আদতে ওরাও জানে না, তবুও স্লোগান দেয় জয় হোক রাজনীতির।
তাই আতঙ্কের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলে ব্যাসল্ট বুকে সাহস করো অর্জন,
রাজনীতির ভুতকে হাড়িকাঠে দাও বলি, ভয়কে করো বিসর্জন।

হোসাইন শাহাদাত




জাতির বিবেক
----------------------------



জাতির বিবেক কি ঘুমিয়ে আছে?
ঘুম থেকে জাগ্রত করার দায়িত কাকে দিয়েছে?
ঘুম ভাঙলে জল খাবার কি খাবে?
খবরের কাগজে কি দেখতে চাইবে।
হাজারো প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে?

জাতির বিবেক কি বিবেক আছে?
নাকি বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী হয়ে
পরিবর্তনের জোয়ারে টালমাটাল করছে।
নাকি বিবেকহীনতার পুকুরে অবগাহন করছে।
নাকি অদৃশ্য কারাগারে আটকা পড়েছে?

জাতির বিবেকের হাতে হাতকড়া কেন?
পায়ে বেড়ি কে পরিয়েছে?
কোন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে?
কত ধারায় তার সাজা হয়েছে
নাকি পাল্টা-পাল্টি বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে!
নাকি আমার আমির রাজ্যে গুম হয়েছে!

পিনাকি






ছেঁড়া পালকের  ঠিকানা 
 
                         


                        ১

হাওড়া স্টেশনের  বাইরে  ট্রলি  নিয়ে   প্রায় একঘণ্টা  দাঁড়িয়ে  আছে  ।  বাইরে  রোদ ।সকাল  দশটা । সামনের  রাস্তা  দিয়ে  অনবরত  বিরামহীন  জন স্রোত , ঠিক  যেন  নদীর  জলধারা । এই স্রোতের  একপাশেই অপেক্ষা    করছে  বনিতা  । ট্রেন  থেকে  নেমেই  এই  শহর    তার কাছে   অপরিচিত  হয়ে  উঠেছে !
 কুড়ি   বছর  আগে  এখানেই সে  এসে  দাঁড়িয়েছিল ;   সন্ধ্যা ছিল  ; সূর্য  ডুব দিয়েছে ।  কলকাতার  আকাশে  নিভে  যাওয়া  সূর্যের  জন্য  কেউ  অপেক্ষা  করেনা । এতো  সময় নেই  ।  বনিতা  অপেক্ষা  করেছিল । পাঁচ  বছর  আগে  ,   সেইদিন  সে  একা ছিলনা । পাশে  একজন  ছিল । বনিতাকে  নিয়ে  ট্রেনের   বগিতে  বসিয়ে দিয়েছিল  ।  ট্রেন  ছাড়তে   তখনো  আধ ঘণ্টা  বাকী  , নিজের হাতে  বাকী  রাস্তা  যাতে  বনিতার   ক্ষিধে  না  পায় – তারজন্য  পাউরুটি   , কলা , তিনটে  ডিম  আর   জলের  বোতল  কিনে  দিল । যাওয়ার  সময়  বনিতার  চোখে  জল ছিল । 
ঘড়ির  দিকে  তাকিয়ে  , বনিতা   দেখল  এখন  দশটা  কুড়ি ।এই সময়  সামনে  অনেক মানুষ   নিজেদের  গন্তব্যের দিকে    ছুটে চলেছে । এদের  দিকে তাকিয়ে  মনে –মনে  বলল – আজ  শুধু  আমিই  কোন কাজ করব না !বনিতা   ধাবিত  উল্কাদের  দিকে  তাকিয়ে -- এক  স্থির  শান্ত  গ্রহাণু হয়ে   পর্যবেক্ষণ  করছে ! জীবন  চলমান । এখানে  কেউই   থামতে  রাজী  নয় ।  মেয়েটা  ছুটে  চলা  মানুষের মুখে  অদ্ভুত আলো  দেখতে  পায় । স্থির  জীবন  আসলে পরাজয়ের নাম । 
এখানে  ছুটি  কাটাতে  আসেনি ।  শিলিগুড়িতে   বনিতার  নিজস্ব  এন জি ও  রয়েছে ;  অনাথ  পথ শিশু  আর   আশ্রয়হীন  বয়স্ক  মানুষের  হয়ে  কাজ করে  । সেই  সূত্রে  নানা রকমের প্রোজেক্ট  তাদের  করতে  হয় । এমনই  একটা  প্রোজেক্ট  নিয়ে  কলকাতার  কিছু  ব্যবসায়ী   মহলের  সাথে  মিটিং  হবে  ।   তারাই   গেস্ট  রুমের  ব্যবস্থা   করে  দিতে  চেয়েছিল ।বনিতা  নিজেই  সেই  প্রস্তাব  ফিরিয়ে  দিয়েছে  ।   একা-একা   কাউকে  না  জানিয়ে  কলকাতা  ঘুরে  বেড়ানোর  একটা  মজা  রয়েছে । প্রায়  কুড়ি  বছর বাদে এই শহরে  ফিরে  আসা  ।  এই  শহরে  শ্বাস  নেওয়া । এই  শহরের  চীৎকার কান পেতে  শুনে  নেওয়া । এটাই জীবন । শিলিগুড়িতে  বনি  খুব  পরিচিত । কলকাতায়  ব্যবসায়ী  মহল  তাকে  চিনলেও , শহরের  মানুষের  কাছে  অপরিচিত । সে চাইছে , তিনদিনের  ট্যুর  তাকে  কুড়ি  বছর  আগের   মুহূর্তে   ফিরিয়ে  নিয়ে  যাক । সেই  উন্মাদনা , উত্তেজনা , স্বপ্ন ----  এই সব  কিছু  আজও বনিতার  কাছে  খুব দামী । 
‘বনি ’---  চেনা স্বর কানে আসতেই , স্মৃতি থেকে  ফিরে  এলো বনিতা ।     হারিয়ে  যাওয়া মন  গুটিয়ে  নিয়েছে  ।  সামনে  লম্বা   মধ্যবয়সী  উজ্জ্বল  বর্ণের পুরুষ  দাঁড়িয়ে । তার  দিকে  তাকিয়ে  হাসল ।  বলল – দেরী  হয়ে  গেলো ! আসলে ...
বনিতা   পুরুষটির  দিকে  তাকিয়ে  বলল – থাক , ফোন  করে  আমায়   যেতে  বলনি , তাই  ভাগ্য  ভালো ।
-রেগে গেলে ?
- শিলিগুড়ি  থেকে   জার্নি  করে  আমি এমনিতেই  ক্লান্ত ।  এখানে  মানে  এই রোদের  মধ্যে  দাঁড়িয়ে  ,   আমার  ঝগড়া  করতে ভাল লাগছে  না । প্লিজ  গেস্ট  হাউস ঠিক  হয়েছে ?
-একদম ।  দু’দিন আগেই  সব  ব্যবস্থা  হয়ে  গিয়েছে । যেমন বলেছিলে , একদম অচেনা ।  তোমার  রুমের  জানলা থেকে  দেখা  যাবে সামনের   সবুজ মাঠ , বাগান ।  লোকের  ভিড়  নেই  ।   নির্জন  গলি ।
-এখন আমরা  যাব কোথায় ?
-সল্টলেক ।   আজ সারাদিন   ঘুরব ।  তারপর   গেস্ট হাউস ।
-মানে  , এই ট্রলি  নিয়ে  ঘুরব !
-আচ্ছা  তাহলে  , আগে  চলো  গেস্ট হাউসে  গিয়ে  ফ্রেশ  হয়ে  তারপর  না হয়     বাকী প্ল্যান ।
-গেস্ট হাউসটা  কোথায় ?
-সল্টলেকে । অফিসের  গাড়ি  ইচ্ছা  করেই  আনিনি  । আমি চাইছি  আজ আমরা  আমাদের  কুড়ি  বছর  আগের  জীবনটা  উপলব্ধি করব । তাই  দেখো  হলুদ  ট্যাক্সি  নিয়ে  এসেছি  !

বনি  দেখল , ট্যাক্সিটা  দাঁড়িয়ে  আছে  ।  সময়  নষ্ট  না  করে  দু’জনেই  উঠে  বসল ।




                               ২


গাড়ি  ছুটছে। কলকাতার  রাস্তা , ফুটপাত ,  কোলাহল , দূষণ , বিজ্ঞাপন ,  স্বপ্ন  , স্বপ্নবিলাসী  মানুষের   ছুটোছুটি    নিয়ে  ছুটে  চলেছে ।  এত  কিছু দেখে  , বনিতা  বলল – আবির , আমাদের  প্রথম  দেখা  কোথায়  হয়েছিল ?
-রবীন্দ্রভারতী । বুধবার ।  বিচিত্র  ভবনের  সামনে । ভুলে যাইনি । মানুষ ভোরে  সুন্দর  স্বপ্ন  দেখলে ,  ঘোরটুকু  চোখে  লেগে  থাকে  , দিনের  শেষেও  তা  মুছতে  পারেনা ।
-মুছতে চায়না । মানুষ খুব  চালাক , ভালো  স্বপ্ন  মনে  রেখে  দেয় ।
-যেমন আমরা দিয়েছি  !
কথাটা  বলেই  বনিতার  হাতের  নরম  আঙুল গুলো ,  পুরুষটি  নিজের  হাত দিয়ে   ধরল । চোখের ঈশারা  করে বনিতা বুঝিয়ে  দিল  , এখন  নয় ; ড্রাইভার  আছে ।
ছোট্ট নিঃশ্বাস  ফেলে  বলল -  দিবাকর  আমাদের  কত  বয়স  হল ?
-আমার  চল্লিশ  ।  তোমারটা  বলতে  পারব না । দেখে   কুড়ি  -পঁচিশ  মনে  হয় ।
বলেই  দিবাকর হাসল ।  বনিতা  দিবাকরের  দিকে  তাকিয়ে  বলল – আমি  বুড়ি । মেয়েরা  কুড়িতেই  বুড়ি ।

দিবাকর পকেট  থেকে  সিগারেট   বের করতেই ,  বনিতা চোখে  নিজের  আপত্তি  বুঝিয়ে  দিল । জানালা থেকে  বাইরের  দিকে  তাকিয়ে  বলল -   দিবু ,  শহরটা  আর আগের  মতন নেই ।
-পৃথিবীতে কখনই কোন  জায়গা  আগের  মতন  থাকেনা বনি । পরিবর্তন  আসবেই । তবে  এখনো  শীতে  গঙ্গার  ধারে  সদ্য  যুগলেরা রোদ পোহায় ।  ময়দানে ভীড়  হয় ।  ভিক্টোরিয়াতে  কোন  বেকার সাহসী  যুবক  তার  সদ্য  প্রপোজ   করে  আপন করে  নেওয়া  প্রেমিকার  ঠোঁটে  ঠোঁট  রাখে ।
-সে  ঠোঁট নিশ্চই  কাঁপে ।  জীবনের প্রথম  চুমুটাও অনেকে  ঠিক করে  দিতে  পারেনা ।  চুমু  দিতে  গিয়ে  কামড় 
হয়ে যায় !
দিবাকরের  ফর্সা মুখ লাল  হয়ে  গেল  ।  কুড়ি  আগের    যুবক  ,তার  প্রথম  চুমু  ব্যর্থতার জন্য  আজো লজ্জিত ; মেয়েটির  বয়স  এখন  চল্লিশ , পাশে  বসে আছে  , সে  ভুলতে  পারেনি  ।  কোন মেয়েই  হয়ত প্রথম  ভালোবাসার  চুম্বনের  স্মৃতি   ভুলতে পারেনা  । 
-তুমি সত্যি , এখানেই  এইসব বলতে হত !
দিবাকরের  দিকে  তাকিয়ে  বনিতা   শব্দ  করে  হেসে  উঠল । এতক্ষণ  এমন  এক  বিস্ফোরণের জন্যই  সময় অপেক্ষা  করে  ছিল ।   থুতনিতে  হাত রেখে  বলল -  নদের  চাঁদ  নিমাই আমার । লজ্জা  করছে না ?  এদিকে  একা  পেলেতো  নির্লজ্জের  মতন  সারা  মুখ  কামড়ে  দাও ।
বলেই  আবার  হাসতে  শুরু  করল । 

গাড়ি  সেক্টর  ফাইভে  ঢুকে  পড়েছে ।  নিক্কোপার্ক কাছেই  ,  ছোট্ট  গলি । সেখান  থেকে  ঢুকছে । একটা  তিনতলা  রিসর্টের   সামনে  এসে  থামল ।  গাড়ি  থেকে  নেমেই  দিবাকর  ট্রলি  ব্যাগটা  হাতে  নিয়ে  , ড্রাইভারকে  টাকা  দিতে  গেলেই  বনিতা  বলল – এই  ফেয়ারটা  আমিই  দেব । সারাদিনের  দায়িত্ব তোমার । 
দিবাকরের  দিকে  তাকিয়ে  বলল -  সোনা , প্লিজ   ইগোতে  নিও না।  এমন কথাই  ছিল  । 
-ঠিকাছে । মনে থাকে  যেনও । তা ফ্রেশ  হয়ে  নাও  । তারপর  গল্প করা যাবে ।
বনিতা  তাকিয়ে  রয়েছে , তারপর নরম আঙুল  চালিয়ে   দিবাকরের   এলোমেলো  ঘাড়ের  কাছে   লুটিয়ে পড়া  চুল ঠিক  করে  বলল – আজ  অফিস  থেকে  ছুটি । আমি ছাড়বনা ।  কিছুতেই না। 
-কিন্তু ?
-দিবা  , আবার  সেই  কবে  দেখা  হবে  ঠিক  নেই  ।  আজ  গোটা  দিন   আমার সাথে  থাকো ।  এখানে  এসেছি  শুধু  তোমার সাথে   কিছু সময়  কাটাবো  বলে । একদিন  আমাকে সময়  দিতে  পারবে না ?
-তা নয় । কোম্পানি  একটা  বড় প্রোজেক্ট  পেয়েছে । দিন-রাত  আমরা  স্টাফেরা  চেষ্টা  করে  চলেছি । অন্তত  এক ঘণ্টার জন্য  , আমাকে  ছাড়ও  ডার্লিং । তারপর  কথা  দিচ্ছি  লাঞ্চের  পর বিছানায়  তোমাকে  পুষিয়ে  দেব ।

দিবাকর ভীষণ  দুষ্টু ।    কলেজের  দিন গুলোতে  সে  এর থেকেও  বেশি  বেয়াদপ  ছিল  । অসভ্য  ছিল  । বর্বর  ছিল। এমন  হয়েছে , বৃষ্টির  দিনে  ; মেঘলা  আকাশের  নীচে  সকলেই  আকাশ  ভাঙা  বৃষ্টির  ভয়ে  আশ্রয়  খুঁজতে  ব্যস্ত । ক্যান্টিনের  পিছনে  ,  ফাঁকা  জায়গা দেখে  ---  দিবাকর  দ্রুত  চুমু  খেয়ে  নেয়  ! বনিতা  কিছু  বুঝে  উঠবার  আগেই  টের পায়  থুতু  মেখে  গিয়েছে  !ঠোঁট  মুছে  বলেছিল  - অসভ্য ।
  দিবাকর  চুমু  খায় না  , দিবাকর   ঠোঁটে  ঠোঁট  রেখে  চোষে । 
পুরানো    দৃশ্য  ভাসতেই  লজ্জা  পেয়ে  গেল  ।  দিবাকর  বলল – অনেক হয়েছে । রুমে খাবার আসবে  ? নাকি গিয়ে  খাবে ?
বনিতা হাসল । বলল – রুমেই ।
                                                           
                            ৩


হোম  ডেলিভারির   খাবার ভর্তি  বাক্স  গুলো কাঁচের  টেবিলের  উপর রয়েছে ।  পাশের বিছানায়  ওরা  শুয়ে  আছে । দুজনেই  নগ্ন । নরম  সাদা  বিছানার  উপর   দুই  পুরুষ  আর নারী  শুয়ে  রয়েছে । ঘড়িতে  দুপুর  তিনটে । বিছানার পাশে বিয়ারের  বোতল ।
বনিতা  চিত হয়ে  শুয়েছে   । দিবাকর  তার  বুকের  উপর  উপুড়  হয়ে  স্তনের   খাঁজে  নাক ঘষছিল । কিছুক্ষণ আগে  জিভ দিয়ে  স্তনবৃন্ত  ভিজিয়ে  দিয়েছিল ।  বনিতা হাত দিয়ে  মাথার চুল  টানছে ।  ঠোঁটে ঠোঁট  ছোঁয়ালো ।
-বনি , তুমি এখনো  সেই আগের  মতন  আছো !
-তুমিও ।  অথচ আমরা  আর সেই আগের সময়ে  নেই ।
-তোমার জন্য খারাপ লাগছে ।
কিছুক্ষণ  বনিতা দিবাকরের  দিকে  তাকিয়ে  বলল – যা  হয়েছে , তা  ভুলে যাও । আমিও  গিয়েছি  । জীবনে  সবাই  সব  কিছু পায়না । সব  কিছু  পেলে,   না  পাওয়ার আক্ষেপই  থাকবেনা    । জীবনকে  রোমাঞ্চকর  রাখবার  জন্য  এই  না-পাওয়া গুলোই অনুঘটকের  কাজ  করে । দিবা , আমরা দু’জনেই  যখন  এই  এতটুকু পাওয়া নিয়ে  বেঁচে  রয়েছি , কেন  আমাদের ব্যর্থতাকে   স্বীকার করব ?
-আমার বাড়ির লোক তোমাকে  মেনে নেবে না । তাই  বিয়ে  করলাম  না । আমি জানি , তুমি  বলবে  আমাদের  কিছু  করবার  ছিল  না । সত্যিই  ছিল না ? নাকি আমি কাপুরুষের মতন  পালিয়ে  গেলাম !
-পালিয়ে  কেন যাবে ? বিশ্বাস করো  আমি  বিয়ে  করিনি  , তাতে আমার  বিন্দুমাত্র  দুঃখ নেই  । এটা আমার  নিজের  ইচ্ছা । তোমার পরিবারের দায়িত্ব  তুমি  নিয়েছো  । আমি জানি  তুমি  দায়িত্ব   থেকে  পালিয়ে  যাওয়ার মানুষ  নও ।
দিবাকর পাশ  ফিরে  শুয়ে  পড়ল ।  দু’জনের  শরীর  এই  অনন্ত  তৃপ্তিতে  ভরে  গিয়েছে । বনিতা গভীর নিঃশ্বাস   নিল ।  ঘড়িতে  চারটে কুড়ি । বন্ধ কাঁচের জানালার  ওই পাড়ে  সোনালী আলোর  বিকেল ।  সবাই  যেন অপেক্ষমান  দর্শক , সুযোগ  দিলেই  ওদের জড়িয়ে  ধরবে ।
দিবাকর  বিছানা থেকে  নেমে  ট্রউজার  পড়ে  নিল । বনিতা  পাতলা  নাইটি পড়ে  নিয়েছে ।


 ঘরের  দরজা খুলে  বারান্দায়  এসে  , সিগারেট  ধরিয়ে  দিবাকর বলল -   চারপাশে  বিকেলের সুর ছড়িয়ে পড়ছে । পাখিরা সুর  করে  গেয়ে  চলেছে । এদের   মনে  আমাদের  মতন  এতো জটিলতা  নেই ।
পিছনে  দাঁড়িয়ে  বনিতা  শুনছিল । কাঁধে হাত রেখে  বলল – মানুষ  এতো  স্বাধীন নয় । তাকে  অনেক  হিসেব  কষতে হয় , বুঝলে  ?
মাথাটা  দিবাকরের  কাঁধে  ছুঁইয়ে  বলল -  এই পাঁচ  বছর  আমরা এখানে  দেখা  করছি ।  তোমার  বাড়ির লোক  জানেনা । তুমি  ভীতু নও ।  দেখো   যারা অন্যকে   কষ্ট  দিতে  পারেনা , তাই  নিজের  কষ্ট বুকে  লুকিয়ে  রাখে  -- তাদের  দুর্বল  ভাবা  ঠিক নয় । দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাপুরুষ  ভেবে নেওয়াটাও  ঠিক  নয় । 
-আমাকে সান্ত্বনা   দিচ্ছো  ? 
-না । আমি  বলছি , আমাকে  ভালবাসছো এটাই অনেক । বিয়ে  হলে  আমরা  এক সাথে  থাকতে  পারতাম।
-ভালোবাসার  মর্যাদা  পেতাম ।
দিবাকরের  দিকে  তাকিয়ে  বলল – তারমানে  , আমাদের  প্রেমের  স্বীকৃতি  দেবে  চারপাশের  মানুষজন  ! এই প্রেম আমাদের   কাছে  ততটা  গুরুত্বপূর্ণ  নয় , যতটা  সমাজের  কাছে  ?
-আমি  বলিনি । তবে  তোমার  জীবনে  আমার পাশে  দাঁড়ানো দরকার  ছিল  ।
-মানে  ?  দিবাকর  আমাদের  মেয়েদের  এতটাই  অসহায়  ভাবো ?  বিয়ে  করলেই  পাশে  দাঁড়ানো  হবে  । সারাজীবন  শুধুমাত্র  পরস্পরকে  ভালবেসে   পথ চলা  যাবে  না ! তোমার  নিজের  আলাদা  পরিবার  আছে  । জানি সেখানেও  তোমার  দায়বদ্ধতা  রয়েছে ।  তুমি  নিজের বিবাহিতা  স্ত্রীকে  নিয়ে  থাকতেই পারো । আমি আসব না ।
-আমার থেকে  তুমি আলাদা হতে পারবে  ? এত দিন চেষ্টা করেছি । ভুলতে পারিনি । তুমিও পারনি । আমি জানি , তুমি সব কিছু  ছাড়তে  চেয়েছিলে । আমিই  পারলাম না !
-দেখো  আমি জানি , তুমি আমাকে সম্মান করো । একজন  ভালোবাসার  মানুষ  এই সম্মানটুকুই  চায় তার কাছের জনের  থেকে ।
-তুমি  বলতে পারলে । খুব সহজেই বললে । শুধু আমি জানি , প্রতিদিন  আমার ভিতরে ঝড় উঠছে । ভিতরটা তোলপাড় করে , লণ্ডভণ্ড করে  দিচ্ছে  আমার  নৈতিক যন্ত্রণা ।
-আমার ভালবাসনা  ? তাই হয়ত , আমার ভালোবাসা তোমাকে  শান্ত করতে পাচ্ছে  না ।

দিবাকর দেখল , মেয়েটার চোখে  চাপা  যন্ত্রণা ।



বাইরে  বিকেল  ফুরিয়েছে । সন্ধ্যার  আলো  আকাশের  বুকে  মেখে   রয়েছে  এখনো ; এই  রঙ একেবারে  নিজের  ।  বনিতার  বুকে  চাপা  কষ্ট  হচ্ছে  । খুব কাঁদতে ইচ্ছা  করছে ।  দিবাকর  দেখল ,  দুচোখ  ভরা প্রতীক্ষা ; এখনই হয়ত চোখের জল  নেমে  আসবে  ! দিবাকর  , নরম  ফোলা গালে হাত দিয়ে  বলল – তোমাকে  ভালোবাসতে   না পারলে  এমন  ভাবে  ছুটে  আসতাম  সোনা ?
বনিতা আলতো করে  দিবকরের  বুকে  মাথা  রেখে  বলল – ভিতরে  চলো ...পাখিরা বাসায় ফিরছে ।
চোখ  দুটো  অভিমানী মেয়ের  মতন । বোঝাই যায়না , এই মহিলা  অনেক  পুরুষেরই  কাঙ্ক্ষিত । 




                             ৪

 রাত  দশটা  বাজতে  দশ  মিনিট বাকী । বিছানায়  দিবাকরের  বুকের  উপর  মাথা  রেখে  শুয়ে  ছিল বনিতা । আজ ওদের  বাইরে  ঘুরবার  পরিকল্পনা  ছিল  , ভেস্তে  গেল  ।  বনিতাই  বলল , বাইরে  গিয়ে সময় নষ্ট করতে  হবেনা। এই  যে  নিবিড় হয়ে , দু’জনেই  বুকে  বুক  ঠেকিয়ে , দিবাকরের  বুকে  মুখ  রেখে  শুয়ে  রয়েছে ; এক মুহূর্ত  তৈরি    হয় । অনেক  মানুষ গোটা জীবনে  এমন  অনুভূতির  জন্য  অপেক্ষা  করে  থাকে  !

বনিতা  চেয়ারে  বসে , সিগারেট  ধরিয়ে  পা  বিছানার  উপর  দিয়ে  লম্বা  নিঃশ্বাস  ছেড়ে বলল -  তুমি টাকাটা  চেকে  না  ক্যাশে  নেবে  ?
উল্টো  দিকে  পুরুষটি , যাকে  এতক্ষণ  দিবাকর  বলছিল  সে  জুতোর  ফিতে  লাগিয়ে  বলল – ম্যাডাম  চেকেই  দিন । 
- তিরিশ  হাজার  চেকে  , আর  এক্সট্রা  তিরিশ  ক্যাশে  দিচ্ছি  । 

ছেলেটি  বলল – অতিরিক্ত  কেন ?
-আজ  তুমি  আমাকেই  সময়  দিয়েছো । দেখো  ডিয়ার  রাত  বারোটা  হয়েছে  । তোমাকে   দশটা পর্যন্ত থাকবার   জন্যই হায়ার  করা  হয়েছিল ।
 ছেলেটি মনে – মনে  বলল – এমনিতেও  এই ক্লাইন্টের   সাথে  থাকবার  সময়  , মানসিক চাপ এতটাই  থাকে  যে  নতুন  খরিদ্দারের  প্রতি  মনোযোগ  দিতে  পারেনা । তাই  সে   আর  কোন খরিদ্দারের কাছে  যায়  না । 
তার  কাজ   টাকার  বিনিময়ে  যৌন আনন্দ  দেওয়া । যারা  তাকে  টাকা  দিয়ে  ভাড়া করেন , অনেক  সময়ই মুডের উপর  নির্ভর করতে  হয় ।  যৌন  আনন্দের  সাথে  মানসিক  আনন্দ দিতে  হয় । প্রথম  যখন  বনিতার সাথে  কথা   হয় ,আর পাঁচজন   খরিদ্দারের মতনই  ভেবেছিল । বনিতা  এক অদ্ভুত  শর্ত রাখে  ।  অবশ্য এরজন্য সে  অতিরিক্ত  পারিশ্রমিক পাবে । ব্যাপারটা হচ্ছে  অনিমেশকে  অন্য একটি  চরিত্রে অভিনয়  করতে  হবে  ।  শুধু অভিনয় করলেই  হবেনা , বনিতা বর্মণকে  বিশ্বাস করাতে  হবে  । আজথেকে  পাঁচ  বছর  আগে  বনিতার  সাথে  অনিমেশের  পরিচয় ।
এই পাঁচবছর ধরে  এই  বিশেষ  দিনটিতেই  দিবাকরের  চরিত্রে  অভিনয়  করে  অনিমেশ । দিবাকরের  মুখ দিয়ে  যে কথা  গুলো  বলতে হয় , তা  বনিতার  লেখা  চিত্রনাট্য । পাঁচ  বছর  একই  চিত্রনাট্য বলতে –বলতে , অনিমেশ  বুঝতে পেরেছে , সে  নর্তক  না  হয়ে  অভিনেতা  হতে  পারত ।
পাঁচ  বছরে  সে  বনিতাকে  জিজ্ঞেস  করতে পারেনি ,  দিবাকর  চরিত্রের  পিছনের  রহস্য । কেনই বা  এই  বিশেষ  দিনেই  দিবাকর  ফিরে আসে  ? আজ ঠিক  করে  নিল  জিজ্ঞেস  করবেই ।  যদিও খরিদ্দারকে  কোন কিছুই  ব্যক্তিগত  কথা জিজ্ঞেস করা  যায় না , তাও আজ  একটু  সাহস  নিয়ে  অনিমেশ  বলেই ফেলল ...



বনিতা  চোখ  বন্ধ  করে , সিগারেটের   শেষ  ধোঁয়া  ছেড়ে  বলল – তাহলে  নাছোড় বান্দা ? আমি আমার দুঃখ   অন্যজনের কাছে  ভাগ  করতে  রাজী  নই । তুমি  টাকার জন্য  আমাকে  সঙ্গ  দিয়েছো । তাও আমি  তোমাকে  আজ  বলব । তুমি  একদিনের  জন্য  হলেও  দিবাকর । আমার দিবাকর । আমি  তোমার ঠোঁট ,  বুক  , ঘামের  গন্ধে ... আমার পাঁচ  বছর  আগের  দিবাকরকে  খুঁজে  পেয়েছি ।
-দিবাকর কে ?
-আমার  কলেজ প্রেম । বলতে পারো প্রথম আর শেষ প্রেম । আমাদের  বিয়ে  হয়নি ।  আমরা আজও                প্রেমিক –প্রেমিকা। কলেজে  প্রথম  দেখা । যা অভিনয় করেছো , সব  সত্যি । আমার লেখা  চিত্রনাট্যে  মনগড়া সংলাপ  লেখা নেই  ।  সবটাই জীবন থেকে  নেওয়া ।
-আপনারা  যখন  পরস্পরকে  এতো ভালোবাসতেন বিয়ে  করলেন না !
-না। দিবাকরের  বাড়ির লোক  আমাকে  মেনে  নিতে  চায়নি । আমি বাড়ি থেকে  ওকে  আলাদা  করতে  চাইনি । দিবাকর  না  চাইলেও ,  আমার চাপেই  বাড়ির কথায়  বিয়ে  করতে হল ।
অনিমেশ বলল – তার মানে  আপনি একা , আর দিবাকর বাবু  এখন  নিজের  বউ  সংসার  নিয়ে  আনন্দে  রয়েছেন । আপনি এখনো  তাঁর প্রেমে   ডুবে রয়েছেন !
বনিতার  দু’চোখ  জলে  ভেজা । নাক টানল । অনিমেশ  দেখছিল ।  মেয়েটাকে  কেন জানি আদর করতে ইচ্ছা  করছে । দিবাকরের ঠোঁট  দিয়ে  নয় ,  অনিমেশ হয়ে । 
বনিতা  বলল – অনিমেশ , তোমার  সাথে  প্রথম  যেই  বছর  দেখা  করলাম । তার একবছর  আগেই  দিবাকর  আত্মহত্যা  করেছিল ।

কথাটা  শুনেই ,  অনিমেশ  চমকে  উঠল । গল্প আচমকাই  গতিপথ  পাল্টেছে !
বনিতা  চোখ মুছে  বলল – আমার  কথায়  বিয়ে  করলেও , নিজেকে  ঠকাতে  পারেনি  । আত্মহত্যা করবার  আগের দিন আমরা এই  রুমেই  ছিলাম ।  এগারোটা পর্যন্ত । যাওয়ার  আগে  আমাকে  একটা  চিঠি  দিয়ে  গেল  ।   বলেছিল  সে  চলে গেলে  , আমি যেন চিঠিটা পড়ি । 
-আপনি  পড়েছিলেন ?
-সেই রাতে  পড়া  হয়নি ।  পড়ের  দিন আমাদের  কাছের  বন্ধুদের  থেকেই  খবরটা পেলাম  , দিবাকর   বাড়িতেই  ঘুমের  ওষুধ খেয়েছে । ডাক্তার  চেষ্টা করেও  বাঁচাতে পারল  না।
কথা  থামিয়ে  , জল ঢালল  গলায় । আবার  বলতে  শুরু  করল – চিঠি খুলে  দেখলাম , দিবাকর  নিজেকে  ঠকানোর যন্ত্রণা  মেনে  নিতে  পাচ্ছিল না  । নিজেকে  কাপুরুষ  আর  দায়িত্বহীন  ভাবছিল ।এই  পৃথিবী  থেকে  নিজেকে  সরিয়ে  দেবে  । তার  এই  অবস্থার  জন্য  দিবাকরের  চোখে  আমিই  দায়ি ।
অনিমেশ দেখল , বনিতা  বাচ্চা  মেয়ের  মতন  ফুঁপিয়ে কাঁদতে  শুরু  করেছে ।  বনিতা  বলল – সেই  দিন  থেকে  ঠিক করলাম  আমি  নিজেই  নিজেকে   ঠকাবো । দিবাকর  চিঠিতে  লিখেছিল  ----   সাহস  থাকলে  অন্য  মানুষ কে  দিবাকর  ভেবে  ভালবেসে  দেখব । সত্যিই আমি পারিনি । ঠিক করলাম  একদিন  , ওর মৃত্যু দিনে  নিজেকে  ঠকাবই ।  দেখব , দিবাকর  প্রতিদিন  নিজের কাছে  নিজে  ঠকে  যে  যন্ত্রণা পেয়েছে , তার  প্রায়শ্চিত্ত আমি  আমার  যন্ত্রণা  দিয়ে  করতে  পারি  । অনিমেশ  দিবাকরের  শেষ  চিঠিতে উল্লেখ  করা কথা কে  মাথায় রেখেই  আমার এই  নাটকের  চিত্রনাট্য । বিশ্বাস করো অনমেশ , আমি  দিবাকরকে  ভালো  দেখতে  চেয়েছিলাম ।

বনিতা  কাঁদছে ।  মুখে  দু’হাত দিয়ে  ফুঁপিয়ে –ফুঁপিয়ে কাঁদছে ।
অনিমেশ  ভাবছিল , পাখির  দেহ থেকে   যে   পালক  ছিঁড়ে যায় , তা সারা  জীবন উড়ে  চলে  । পাখির কাছে  ফিরে  আসেনা । অনিমেশ  চাইলেও  দিবাকর  হতে পারবেনা ।  বনিতা  নিজেকে  ঠকিয়েও , ছেঁড়া পালকের  ঠিকানা খুঁজে  পাবেনা............ 

রাজীব লোচন বালা




"অন্ধকারে এ উৎসব"
  *****************

                     

আজ এ পৃথিবী ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময়, 
মা দুর্গা আসছে , আনন্দ বাড়ছে যার... আছে ।
আজ মহাপঞ্চমী , কত সুর- কত গান চারপাশে করি আকর্ণন ,আজও কিছু শব্দ শুনতে পাই, "ও দাদা কিছু দাও না" "কদ্দিন ধরে কিচ্ছুটি খাইনিগো"।

আজ উৎসব এসেছে, মনে দোলা দিয়ে যায় প্রেমিক প্রেমিকার,
আমার ঘর এখনো আঁধারে, মা আজও কান্না করে, বোন আজও ভিক্ষা মাগে।
কিঞ্চিৎ উৎসব দিয়ে  সব ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আজ,
পাড়ায় পাড়ায়, কত ঘরে ঘরে , যার আছে....।

আজও সেই বড় প্যান্ডেলের সামনে দিয়ে অর্ধ নগ্ন  "মা" , একটা থালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
আর ভেতরে আরেক মা লক্ষ টাকার স্বর্ণখোচিত শাড়িতে বন্দিত হয়।
বাইরে আমার মা, রাস্তার পাশে ড্রেনের কাছে এসে খাবার খায়,
আর ভেতরে খাওয়ারের জোয়ার এসেছে, 
এখন হাত দেওয়া যাবে, কালকে ফেলে দেওয়া হবে।
সেই  খাবার  কুকুর- বেড়ালের সাথে খাচ্ছে দেখো "উৎসব" কতদিন ধরে।

আবার আমরা অনেক এগিয়ে, অনেক! এই গোলকের মহানপ্রাণী ,
ও সৌরভের মা , এবার তোর ছেলের ক'টা জামা হয়েছে?
এইতো দিদি, বেশী না মোটে দশ খানা, তোমার  মেয়ের থেকে  ছয় খানা কম্ 
ওওওওও... এত জামা নিয়ে কী করবে বলো সামনে আবার দিওয়ালি আসছে...তো
মেয়েটার ইচ্ছে হয়েছে, তাই মামা, কাকা, জ্যাঠা , দাদু, পিসি, বাবা, মা, সব্বাই মিলে দিয়েছে।

নিত্যদিন নতুন নূতন ..... আর আমার ছেলেটা ,বলেই মা কানতে কানতে  বললো ওও রাজশ, তাপস আর বারিণ,, ওদের উৎসব চুকে গেছে...
কত আশা করে বাড়ি এসেছিল, কত কিছু নিয়ে , এক উৎসব , তার মৃত্যু উৎসব হয়ে গেল..
সব তার মুছে গেছে, চিতাভষ্ম আজ শীতল হয়ে গেছে।

তোমাদের মশগুল জীবন পুজার আনন্দে ভালোই কাটছে।
আমার উৎসব মাটির ঘরে, শতশত মৃত্যুর অন্ধকারের শব বানায়....
মৃন্ময়ী আজ সাজসজ্জায়, চিন্ময়ী  রাস্তায় রাস্তায়
খুব ভালো উৎসব হচ্ছে কোটি টাকার লাল শরবতে আর বিছানায়।

উন্নতির আলোকসজ্জা রাস্তায় রাস্তায়, জীবন ভরে পেটে আগুন নিয়ে,
পুজোর দিনে সাজবে হাজারে হাজারে ,রঙে্র বাহারে
বিসর্জনে মায়ের মুখশ্রী জলের তলায়, কাকের বিষ্ঠায় কালো ছায়া,
চার- পাঁচ এদিনের আলো , আজকের অন্ধকারের উৎসবকে ভেঙ্গায়।