নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

কাটমানি : শিবানী বাগচী



রাজনীতিতে আজ হানাহানি,
জনরোষে পড়েছে কাটমানি!
দিন রাত হিংসায় হানহানি,
আগুন জ্বলছে জ্বলবে জানি!

মুখোসের আড়ালে ছদ্মবেশ,
দুর্নীতিতে আজ গেলো বুঝি দেশ!
নেতা নেত্রির লুঠতরাজে,
নোংরামিতে হলো আজ সব শেষ!

যারা যা নিয়েছো ফেরৎ দাও,
আমলারা ঝেড়েছে কত শত টাকা!
আজ কেন তবে স্বীকার করে না,
বন বন ঘুরছে যে নিয়মের চাকা?

কোমড় বেঁধে নেমেছে জনতারা,
এবার খুলবে হিসেবের খাতা!
দিদি দাদা তুমি সাবধানে থাকো,
জনজাতির নামে এ সব নষ্ট কথা!

কাটমানি ইস‍্যুতে রাজনীতি আজ,
এলোঝেলো দল নেই কোন কাজ।
ভোটের আগের লুটের বোঁচকা,
খুলেছে এবার বসে করবে রাজ!

এক দল ছেড়ে দল পাল্টাও,
হাত পাল্টে বেশী বেশী ঘুস খাও।
তাই বলি শোনো সময় থাকতে,
যেন কাটমানি সবাই ফেরৎ দাও!

শ্রাবনের ধারা ও পক্ষীকূল :- মান্নুজা খাতুন



হয়তো কোন এক গাছের বড় ডালের নিচে
নয়তো বা কারো ব্যালকনির ছোট ফোকরে
নিয়েছে আশ্রয় মা-পাখিটি।
ঠোঁটের ফাঁকে হয়তো এখনো ধরা আছে
 খাদ্যশস্যের ছোট্ট টুকরোটি
দুরের ওই বট গাছের ফোকরে
এখনো হয়তো পথ চেয়ে আছে
সদ্যজাত পক্ষী শাবকটি।
     
শ্রাবণের বৃস্টি,  অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ
সব মিলিয়ে দিশেহারা মা-পাখিটি করে ছটফট
বাসায় ফেলে আসা ছানার কথা ভেবে
ওদিকে অশ্রুসিক্ত  চোখে পথ চেয়ে থাকে পক্ষীশাবকটি।

বৃষ্টি হতে পারোনি :শিবানী বাগচী



হঠাৎ বৃষ্টি নামলো ভুল ঠিকানায় -
ভিজে ইচ্ছেদের সাথে ডুব সাঁতারে
হারাতে চাই জোছনা সিক্ত প্রশান্তি মেখে!

ঘুম আসেনা চোখে -
নিস্তব্ধ রাতের কোচকানো বিছানায়
তোর স্মৃতিগুলো দিয়ে কাটাকুটি খেলি!

ফেলে আসা রোজ নামচা,
গোলির মোড়ে আড়াল হয়ে চোখ ইশারা -
খাতার ভাঁজে,ব‍্যগের খাঁজে,
স্পর্শ খুঁজেছি বৃষ্টিতে ভিজে!

ইমনের নি রে গা তে আঙুলের ডগায়
লেগে থাকা ঘূণ পোকারা তাই
দেহ মন আজও কুড়ে কুড়ে খায়!

অঝোর ধারায় ভেসে যাক সব বিষন্নতারা --
অকাল বর্ষণে বৃষ্টি নুপূরের রিনি রিনি -
চেয়ে আছো মোর পানে;
কিন্তু তুমি তো বৃষ্টি হতে পারোনি?

আত্ম দহন :অথৈ দেবনাথ (রিনা)



রক্ত যেখানে জল হয়ে যায়,
বক্ষ তটিনী শুকায়।
স্বার্থ সেথায় বাঁধিছে চরাবলী,
ওরে ও অবুজ পাখি।
সেইখানে তুই ,
আসিয়াছিস কোন ভরসায়?
আত্মবিশ্বাস লয়ে।
মোহিত হৃদয়ে
ফুটাতে কুসুম কলি,,
করিছো কাহার কাছে
হৃদয় দাবী?
ওরে ও অবুজ পাখি।
আপন যাদের ভাবলি এতদিন,
তারা সে তোর নয়কো আপন।
ভাটির টানে স্বার্থনাষে,
যখণ রক্ত শুকায় অঙ্গ মাঝে।
সময় তখণ,
 এসে দেয় যে বলে
কে সে তোর আপনজন।।


আলিঙ্গনায় অদ্ভুত অর্থ :নঈম হাসান



নীলাঞ্জনা তুমি কোথায়?...
তোমার নামের অর্থ হয়েছে অনেক
আগুনের মত ঝলসে যাওয়া
রক্ত গরমের মত ছড়াছড়ি
হ্মন্ডলিপির মত আছড়ে খেয়ে পরে
প্রতিটি অহ্মর।
কখনো আবার হ্মন্ডলিপির মত
আগুনের বারুদ হয়ে
উফরে পরে
দেহের প্রতিটি খন্ড।
সেটি পরিহ্মার অগ্রগতি "হলেও
নীল সীমানায় ঢেকে আছে
দেহের হ্মন্ড।
আছড়ে পরছে বিভিন্ন্য আকাড়ে
স্বরলিপির কিঞ্চিৎ শব্দে।
বিহ্মন্ড হ্মন্ড হয়েও
অজস্রো শ্রাবণ ভাবে
এক বিদুৎের ঝলক আসে
ভয়াবহ তীব্র স্থানে।
শরীরের কুচড়ানো মাংস খন্ড
হ্মত-বিহ্মত হচ্ছে
আর
চুষছে লাল গোলাপের মিস্টি আচে।
একটি ঠোট
তখনি খন্ডলিপির মত ছড়িয়ে পরছে
রক্তের স্থানে মিশছে
সাগরের কিনারে
তখনি একটি
আলিঙ্গনায় প্রেমিক জড়িয়ে যায়
অহ্মরে এক বিষ পান
মধুরত এই সাগরে।
তখনি
মধুরত হয়ে ওঠে
হ্মত-বিহ্মত শরীরটি নিয়ে
আর
ফুটাই
 বিভিন্ন্য আকাড়ের
খন্ড খন্ড দেহ।

জলে ভেজা রাত :শিবানী বাগচী



ঘুঘুর ডানাঝাপটানো গোপন শয‍্যায়
দু জোড়া চোখ;মুখটা বড় আবছা দেখা যায়!

রাতের ছায়ার ফিসফিসানি
নাকি ঘড়ির টিকটিক,
বলতো কে বেশী জোড়ালো?

দিশাহীন সুখের ঘোরে,
জোছনায় ভিজে বিছানায় ঝাঁপ!

তারাদের অট্টহাসিতে তরলের ফোয়ারা ছোটে;
এক ঘটি জলেই হাবুডুবু,সারারাত ভিজে যায়!

রাত জাগা চোখে প্রশ্নগুলো
কেবলি আছাড় খায় -
অধিকারহীন ভ্রুণ ঘাপটি মেরে প্রহর গোনে;
জন্মের ইচ্ছে পূরণ যে নিয়তির বরদান!

মুহূর্তগুলো বুঝি রাখবো লিখে
ডায়রীর শেষ পাতায় -
কেউ কিন্তু কোন প্রশ্ন করোনা?

ছুঁতে না পারা : আকাশ কর্মকার



কবিতারা আজকাল তেমন আর আসে না..
চোরাস্রোতের টানে হারিয়ে যাচ্ছে আবেগ..
বৃষ্টির বিকেলে কেউ আমার কবিতা পড়ে প্রেয়সী হতে চাইবে,
সেরকম কবিতা আর এলো কই!
ধূসর একটা আস্তরণে আবৃত হয়ে পড়ছি নিজের অগোচরেই।
না এলো মেঘ, না পেলাম বৃষ্টির দেখা!
সঙ্গী শুধু কয়েকটা ভাঙা ভাঙা শব্দ।
অনুভূতি গুলো ঝাপসা, আরো ঝাপসা হচ্ছে দিনদিন।
শব্দের তীব্রতা, ক্ষিপ্রতা আজ ম্রিয়মাণ..
সাদা কাগজ গুলো হলদেটে হয়ে ঝুলে মিশছে ক্ষণেক্ষণে।
ঝিরঝিরে বৃষ্টির মাঝে এ আমার একা পথচলা..
পথগুলো জরাজীর্ণ, ক্লান্ত কলমের কালি;
আশ্রয় খুঁজেছে সে কোনো এক নিশীথে নিষিদ্ধ পল্লীতে।
আমাদের যে আর সত্যিই দেখা হয়না আজকাল!

আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





ঊনচল্লিশ



               তারকেশ্বর লাইন। মালিয়া স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমেই মনটা ভরে গেল। চারপাশ সবুজ। খোলা মাঠ। যেদিকেই তাকাই চোখ জুড়িয়ে যায়। যখন নামলাম তখন ঘড়িতে চারটে বেজে পনের। বেশ খানিকটা সময় বসে রইলাম চুপচাপ। কখনও স্টেশনটা দেখছি। কখনও দেখছি স্টেশনের চারদিক। এইসব জায়গায় এলেই একমাত্র মনে হয় সব কথা যেন বলা হয়ে গেছে। মনে হয় বোকারাই যেন কথা বলে। প্রকৃতির মতো মিতভাষী আর কে আছে ! নিঃশব্দে যেন সে কাজ করে যাচ্ছে । কথা বলতে গেলে তো ফাঁকি হয়ে যায়। আর তাছাড়া কিসের এতো কথা বলা। আমি তো নতুন কিছু বলতে পারব না। যা বলব তা যেন প্রকৃতি আগেই ছড়িয়ে রেখে দিয়েছে।
               মাঠের আল ধরে হেঁটে গেলাম। মুরগি, হাঁস, গরুর পাশ কাটিয়ে গিয়ে উঠলাম একটা প্রাইমারি স্কুলে। খুবই আন্তরিক ওখানকার মানুষজন। কবিতা পাঠ হল। অনুষ্টানের শেষে মুড়ি আর ফুলুরি। কী দারুণ তৃপ্তি করে খেলাম। এই খাওয়াটাই যদি আমার শহরে হতো তাহলে মোটেই এই আনন্দ পেতাম না।
               অনুষ্টান শেষ করে যখন স্টেশনে এসে পোঁছলাম তখন চারপাশে অন্ধকার নামছে। দূরে একটা মাঠে কিছু ছেলে দলবেঁধে ফুটবল খেলছে। ওই দলের মধ্যে আমি যেন আমাকেও দেখতে পেলাম। একটু পরেই বাড়ি ফিরব। বাড়িতে ঢোকার আগে পুকুরে নেমে হাত পা ধোব। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখব, বাবা দুয়ারে বসে পুঁথি লিখছে আর মা রান্নাচালায় বসে সন্ধের চা তৈরি করছে। সম্বিত ফিরলে দেখলাম চোখের কোলটা কখন যেন ভিজে গেছে।

জীবন মানে : প্রবীর রায়


জীবন মানে শূন্য হেথায়,জীবন মানে মৃত্যু
জীবন যখন জীবন মারে,ছোবল মারে পিত্তু
জীবন মানে কয়লা খনী,পুড়বে ধিরে ধিরে
জীবন মানে রক্ত দেখা,স্ফূর্তি পাঁজরা ঘিরে
জীবন আজ ঝলসা আগুন,মেরুদণ্ডে পচন
হাস্য রসের ঘোর পেয়ালা,মিথ্যে বাঁচার বচন
জীবন আজ মরতে শেখায়,স্বাধীনতার দিনেও
ঘৃণ্যতা আজ গর্জে ওঠে,প্রেমের নীতি বিনেও
জীবন আজ কাফন ঘরে,বেহুশ আছে কল্পে
বাঁচবে জীবন বাঁচার মতো,শূন্যতারই গল্পে।

তরঙ্গে :দেবলীনা


  

বহুদিন পর আজ আমি আকাশ দেখছি ! 
  ঘন নীলে জড়ানো মেঘলা মসলিন 
 চারদিকে থৈ থৈ মুক্তির ঘ্রাণ ,
 কিছু পুরোনো হিসেব মিলে যাওয়ার 
     ইঙ্গিতবাহী সুরতান । 

 সারা দুপুরের জল ভরা টুকরো মেঘের  জমায়েত দেখে,
      পশ্চিমের ছায়াসূর্য পাশ ফিরে শোয় - 

  সেই থেকেই , নীল ধারায়
 ব্যাকুল বাঁশির সুর বেজে যায় ,
    ইথার তরঙ্গে - 
আর ঠুং ঠাং জলতরঙ্গে আকাশ ভেসে যায় !

ধর্ম :সুদীপ্ত বিশ্বাস

 

আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে কেউ মুসলমান ছিল না।আজ থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে কেউ হিন্দু ছিল না।কিন্তু  তার আগেও বহুকাল ধরে মানুষ ছিল।মানুষের সাথে মানুষের বিবাদ বা বিভেদ যেটুকু ছিল তা ছিল খাদ্য ও বাসস্থানের। এরপর এল কিছু সুবিধাবাদী চালাক মানুষ। তারাই ধর্ম সৃষ্টি করল। পুঁতে দিল বিভেদের বীজ।এরপর মানুষ মানুষের থেকে এভাবে আলাদা হয়ে গেল যে আজ এতযুগ পেরিয়ে এসেও, এই স্মার্ট ফোনের যুগেও মানুষ এক হতে পারেনি।বরং ধর্মের বিষগাছটি শাখা প্রশাখা বিস্তার করে মানুষের রক্ত মজ্জায় ঢুকে গেছে।মানুষ হয়ে পড়েছে ধর্মান্ধ।শিক্ষা মানুষের জ্ঞান চক্ষুর উন্মোচন ঘটায় কিন্তু ধর্মের অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে না।মানুষের জীবন, রাজনীতি, চিন্তাভাবনা সব কিছুর মধ্যেই ঢুকে পড়ে মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে সেই অতীতকালে কিছু চালাক মানুষের তৈরি ' ধর্ম '।

 ধর্ম আমাদের অন্য ধর্মের মানুষের থেকে আলাদা করে দেয়।ধর্ম সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে।আর সম্প্রদায় থেকেই আসে সাম্প্রদায়িকতা।অনেকে মুসলমান ধর্মের লোকজনকে বিশ্ব সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করেন।কিন্তু প্রকৃত সত্য হল সব ধর্মই সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ায়।প্রকট বা প্রচ্ছন্ন ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়াটাই ধর্মের উদ্দেশ্য। ধর্মের প্রধান কাজই নিজের আখের গুছানো আর অন্য ধর্মের নামে কুৎসা রটানো। পৃথিবীতে এমন কোনও ধর্ম নেই যেটা বলে অন্য ধর্মগুলোও ভাল আর মঙ্গলকর।বরং সব ধর্ম এই শিক্ষা দেয়, যে সেই ধর্মই একমাত্র ভাল আর সব ধর্মই ভয়ংকর খারাপ। এভাবে মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে যত লেলিয়ে দেওয়া যায় ততই জ্বলে ওঠে সাম্প্রদায়িকতার আগুন।ধর্ম ব্যবসায়ীরা মনের আনন্দে এই আগুন জ্বালিয়ে রাখে আর সাধারণ মানুষ পোকার মত আত্মাহুতি দেয় নিজের বাড়ি,পরিবার এমনকি জন্মভূমিও।

 আমাদেরকে বলতে হয় না আমরা আগুনে বিশ্বাস করি, বা জলে বিশ্বাস করি।আগুনে বিশ্বাস করে আগুনে হাত দিলেও হাত পোড়ে, আগুনে অবিশ্বাস করে হাত দিলেও হাত পুড়ে যায়।জলে ডুবে যাওয়ার সাথে জলকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের কোনও সম্পর্ক নেই।সুতরাং, যা কিছুর প্রকৃত অস্তিত্ব আছে তা আমাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের তোয়াক্কা করে না।যার অস্তিত্ব নেই তাকে আমাদের বিশ্বাসে ভর দিয়েই বেঁচে থাকতে হয়।আমরা যদি ভূত,প্রেত, জীন, পরি, হুর,ঈশ্বর এসবে বিশ্বাস না করি, তাহলে এদের কোনও অস্তিত্বই থাকে না আর।আর তাই আমরা 'ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না' বললেই ধর্ম ব্যবসায়ীরা রে রে করে তেড়ে আসে।আমাদের অন্ধত্বই তাদের ব্যবসার প্রধান মূলধন। মানুষের মধ্যে যত বিদ্যা বুদ্ধি ও বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটে ততই অন্ধকার দূরে সরে যায়।অন্ধবিশ্বাস যত দূরে সরে যায়,প্রকৃত সত্য তত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। প্রকৃত শিক্ষা আমাদেরকে অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করে যুক্তিবাদী হতে অনুপ্রেরণা দেয়।

ছিলো না সায় : বিকাশ দাস



কবিতা আগে কোনদিন পড়িনি।
কবিতার সরোবরে  নাইতে এলে নন্দিনী
পুরুষের চোখ কতোটা ডুবলে জানবে,  লজ্জার স্বচ্ছতায়
নারীর সম্মতি। দৃষ্টির সায়। বুঝিনি। 
তুমি বয়স ছুঁয়ে লিখেছো কবিতা     ভালোবেসে নারীর স্বচ্ছতা 
আঙুলের স্পর্শের দাগে অনেক মেয়েলি শব্দ হয়েছিলো ধর্ষিতা  
মেয়েদের বুক ভারি হলেই যে সবাই নারী, জানি জানতে সে কথা। 
লজ্জার লাবণ্যতা 
অন্তর্বাসের পিঠের সুতো আগলা না করে।

তবু আধুনিক সভ্যতা 
কাঁখের লাজুক নগ্নভাঁজ শরীরের যুবতী কারু কাজ
স্বচ্ছতার আকর্ষণে ভেতরের আকর্ষী চেখে দেখার প্রবণতা  
দূর থেকে দু’চোখে মাখলে ধিক্কারে বলেছে এতো অসভ্যতা!  

কিছুটা বাজলো ঠোঁটের শিসে 
কিছুটা জিভ  খোয়ালো  বিষে  
কতোটা লিপ্সা কোন দেখার দর্শন,  বলবে যৌনতার ধর্ষণ? 
ফুলের তোড়ায় জড়িয়ে সৌজন্যতার ভাণ  
সুবিধাবাদিরা, নারী  খুবলে চোষার আনচান 
আছে, থাকবে যতোদিন নারী পুরুষ অসমান। 

আদালত আইন পড়বে আইন মেনে 
কথার ব্যকারণ পোশাকে আশাকে টেনে 
কতোটা স্বচ্ছতার দায়,  দৃষ্টির স্নান জেনেছে মানবকোষ অভিধান? 

উচ্চতা : জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়




পাহাড় উঠেছে খাড়া কোন পরিচয়ে
কালোসাদা দুধজল মাখামাখি। 
প্রকল্প ছিল কি ? পরিকল্পনাময় প্রবীন প্রান্তর
পাথরের দ্বীপ তরলজমানো সুখ
বিক্ষোভবিভোর
জিনগত ব্যাপার ছিল না দ্বিপদের
মগজও ছিল না কূট তবে?
সঙ্ক্ষুব্ধ বাষ্পীয় উষ্ণতার বুড়োকাল
ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে আক্ষেপে ফোঁসে।

এই সবুজের ভিড়ে সোনালি ধানের শিষ নেই
আকাশমঞ্জরিরেণু পোড়াবাড়ির ছাই হয়ে ওড়ে
মরা ব্যাঙের মতো পড়ে আছে অন্ধকার
এ উচ্চতায় খুজে নাও
জোনাকির সিগন্যাল নীল ও হলুদ।

ঐতিহ‌্য রক্ষার লড়াই :প্রভাত মণ্ডল


একটা আস্ত তমসা ভরা রাত
বন্ধ‌্যা নারীর মাতৃত্বের হাহাকার সম
ঐতিহ‌্য রক্ষার লড়ায়ে বাঙালী আজ। 
থমকে আছে বিবেক এখন ধমক খাওয়ার ভয়ে
পাশার চালে, হাত পড়েছে বাংলা মায়ের গায়ে। 
করুক্ষেত্র উঠছে সেজে, তুমি থাকো নীরব
নেতাজী, ক্ষুদিরামের সোনার বাংলায়
এখন পাবে কাঠ-কয়লার শব। 
বাঙালী আজ জাগো শীতের ঘুম হতে
তাবেদীয়ানার বেড়া ভেঙে আসো সাজায় সোনার বাংলাকে। 
                      

ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ: অলোক মিত্র



রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে
ডেকে বলতো কবি হবি, 
আয় চলে আয়,আমার শান্তি নিকেতনে
লালমাটির মলাটে মোড়ানো কবিতার 
খাতায় শুরু হোক আজ থেকে 
তোর কবিতার ক্লাস।
আমি জীবনানন্দের শহর ছেড়ে
কখন যেন বোলপুর এসে কবিতার
ঈশ্বর পুত্রকে খুঁজি দু'নয়নে
বাতায়ন খুলে, লালমাটি ও 
তার বুক চিরে একটা মাংগলিক সূর্য
আমাকে অভিবাদন জানালো
অচেনা লতাগুল্মের স্নেহ পরশ কান্ডে।
আমি ভালোবাসার ব্যবচ্ছেদ করি
হরিতকী আর অর্জুন শাঁখে।
হয়ে যাক এক কাপ লিকারে গাঢ় রং চা, 
প্রত্যাদিষ্ট কবি বসে আছেন লালমাটি
খড়িমাটি রূপ রসের মাতাল সমীরণে।

"হারিয়ে যাওয়া নাটক পাড়া" : বটু কৃষ্ণ হালদার


আজ থেকে প্রায়
100 বছর আগে বিশ্ববাসীর বেশি সংখ্যক জনগণ কোন না কোন দেশের আওতায় পরাধীন ছিলেন।যতদিন যায় মানসিকতায়  আসে পরিবর্তন ।পরাধীনতার থেকে মুক্ত হতে চলতে থাকে মহাসংগ্রাম ,লড়াই ।অবশেষে দাসত্ব প্রথার অবলুপ্তি ঘটতে থাকে ।আধুনিক সভ্যতার বিকাশ ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। এসময় 8 ঘণ্টা কাজ 8 ঘণ্টা বিনোদন 8 ঘন্টা বিশ্রামের জন্য শুরু হয় লড়াই। দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে প্রতিবাদী দের রক্তের বিনিময়ে আসে আটঘণ্টা কাজ ,আট ঘণ্টা বিনোদন, আধঘন্টা বিশ্রাম।এ কথা আজ আমরাসবাই ভুলে গেছি।8 ঘণ্টা বিনোদন এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হল নাটক নাটক কি বর্তমান সমাজে তা বোধ হয় বিশেষ করে বলার অপেক্ষা রাখে না তবে  এই সুসভ্যতায়নাটকের বিশেষ গুরুত্ব আছে বলে বোধগম্য হয় না নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান এই অন্তনিহিত শব্দটির মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষকে বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে বিশ্বের দরবারে।ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষজনদের ভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেই অনুষ্ঠান কেন্দ্রিক এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব চরিত্র হলো নাটক। সাহিত্য রচনা একটি বিশেষ শ্রেণী হলো এই নাটক।প্রাচ্য ও নাট্যশাস্ত্র একই দৃশ্যকাব্য বলে অভিহিত রেছেন গ্রিক ভাষা থেকে আগত ড্রামা শব্দটির অর্থ হলো অ্যাকশন অথবা কিছু করে দেখানো ।বাংলা নাটক নাট্য নট-নটী প্রভৃতি শব্দ থেকে শব্দ উদ্ভূত হয়েছে নট ধাতু থেকে যার অর্থ নাড়াচাড়া করা নড়াচড়া করা অর্থাৎ নাটকের মধ্যে এক ধরনের গতিশীলতা রয়েছে যা একটি ত্রিমাত্রিক শিল্প কাঠামো গড়ে তোলে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য যেবর্তমান সময়ে নাটক পরিবেশন এর জনপ্রিয় মাধ্যম টেলিভিশন হলেও মঞ্চস্থ নাটক এর প্রকৃত যথার্থ পরিবেশ স্থল প্রকৃতপক্ষে নাটকের মধ্যে একটি সমষ্টিগত শিল্প প্রয়াস সম্প্রদায়ভুক্ত থাকে ।এতে অভিনেতারা দর্শকদের উপস্থিতিতে মঞ্চে উপনীত হয়ে গতিময় মানব জীবনের কোনো এক বা একাধিক বিশেষ ঘটনার প্রতিচ্ছবি অভিনয় মাধ্যমে উপস্থাপনা করেনসাধারণভাবে নাটক যে চারটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয় তা হল কাহিনী বা প্লট চরিত্র সংলাপ পরিপ্রেক্ষিত ।কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং সহায়ক বিভিন্নচরিত্রের সংলাপ কে আশ্রয় করে উপস্থাপিত হবার প্রয়াস পায় নাটকে।এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে নিত্য গীত আবহসংগীত শব্দ সংযোজন আলোরসজ্জা মঞ্চকৌশল প্রভৃতি।
দুরন্ত সময়, প্রতিযোগিতার পাল্লা ঊর্ধ্বমুখী, বিশ্ব আজ তালুবন্দি, সময় কি আজ মানুষ লাগাম দিতে পারেনি কর্মমুখী ব্যস্ত জীবনে মানুষ হারিয়ে ফেলেছে নিজেদের জীবনের বৈচিত্র পিছনে ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই আজ কারো। ফেলে আসা শৈশব আজ পিছন থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।বৈচিত্র্যময় জীবন কাহিনীতে মানুষ মিথ্যা নাটক করতে করতে ভুলে গেছে সত্যি নাটকের দিনগুলো। ভিন্ন সম্প্রদায়ে দেশ ভারত বর্ষ, বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিকউৎসব লেগে থাকে, বিশেষ করে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, গ্রাম বাংলার আত্মার আত্মীয়ও হল। এই উৎসবকে ঘিরে লেগে থাকত উদ্দাম উদ্দীপনা উত্তেজনা। দূর-দূরান্তের মানুষজন জড়ো হতে উৎসবকে কেন্দ্র করে আপন জন বন্ধু বান্ধব একে অপরের আত্মিকতায় ভরিয়ে তুলতে মেলা প্রাঙ্গণ। সেই মেলায় হত নাটক, যাত্রাপালা ,পুতুল নাচের গান আরো নানান সামাজিক অনুষ্ঠান। নাটকের মঞ্চ হল অভিনেতার প্রথম প্রতিফলন ।এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বহু নামীদামী শিল্পী যারা অভিনয় মঞ্চে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সাড়া বিশ্বে। একসময় কলকাতা ও নাটক নিয়ে থেমে থাকেনি এক সময়ে বহু নামিদামি শিল্পীদের আনাগোনা ছিল নাটক পাড়ায় বহু নামিদামি শিল্পীদের । জীবন অতিবাহিত করার প্রধান উৎস ছিল নাটক । বহু শিল্পী জীবনের মূল পন্থা হিসেবে।অনেক নামীদামী শিল্পী তার জীবন অতিবাহিত করেছে এই নাটকের মধ্য দিয়ে। নাটকের উন্মাদনা কে ঘিরে তৈরি হয় কলকাতার বুকে অনেক বড় বড় মঞ্চ। শিশির মঞ্চ ,তপন থিয়েটার হল,দাশুমতি ভবন ,নন্দন,উৎপল দত্ত মঞ্চ, আরো অনেক বড় বড় মঞ্চ। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, আর সেই শিক্ষার প্রথম মঞ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেমনই অভিনয় জগতের প্রথম ধাপ হলো নাটক। গতিময় জীবনের বৈশিষ্ট্য আজ বড্ড ফ্যাকাশে গেছে। বই কে ঘিরে উন্মাদনা যেমন নেই বইপ্রেমী দের, আজ বই এর জন্যে বই মেলায় ভিড় লাগেনা। তেমনই বর্তমানে নাটক নিয়ে উন্মাদনা আর নেই নাটক পাড়ায়। আমরাই আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি গুলোকে হারিয়ে ফেলেছি জীবনের অঙ্ক থেকে।মানব জীবন আটকে গেছে হাতের তালুর মধ্যে। বাস্তব জীবন ছেড়ে কৃত্তিম জিবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এর থেকে মুক্তির উপায় নিজেদের বের করতে হবে। এর জন্যে স্মার্ট ফোন। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল মনে হবে আদিম মানুষ দের ভিড়। সবাই ঝুঁকে কি যেনো খুঁজছে স্মার্ট ফোনের ভিতর। তাহলে বুঝবো পৃথিবীর আদিম মানব জীবনে ফিরে যেতে হয় তো কি আর বেশি দূরে নয় ?

জন্ম লগ্ন : আমিনুল ইসলাম


উপত্যকায় উষ্ণতা বাড়লে পাপড়ি ঝড়ায় গোলাপ
কলাপাতার আন্দোলনে অনুভূত তোমার স্বত্তা
অনূদিত শব্দ সমন্বয়ে অথই চোখ উপছে পড়ে
পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনাই স্নায়ু জুড়ে উত্তাল।
ঢেউ আছড়ে পড়ে বুকে। বুকের গন্ধ শুকে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু। জন্মদাগ আঁকা মায়ের জঠর,
আমার নখে মুখে লেগে আছে পাপের দুর্গন্ধ।
পুরুষ পশুত্ব ভুলিনি আজো, প্রত্যাশার প্রাচীর জুড়ে
গেঁথে থাকা আলপিন বেদনা জড়িয়ে রাখে।
ভয় ও শঙ্কা নিয়ে পেরিয়ে যায় কত শত মেয়েলি ১৮বছর।
আমি ৪৬শের কাঁচা পাকা চুলে মেলে ধরেছি বার বার
বারংবার শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতির জন্ম লগ্ন।

চলেছি কোন পথে :- রাণা চ্যাটার্জী



যত বেশি স্বাধীনতা তত দেখছি এর অপব্যবহার।চায়ের দোকানে এঁটো বাসন মাজা ছেলেটার বাড়িতে ভাত ফুটানোর জোগাড় আছে কিনা ঠিক নেই,হকার দাদাটার কাল কি করে চলবে চিন্তায় নেই কপালে ভাঁজ কিন্তু পকেটে এন্ড্রয়েড মোবাইল আর ডেলি ফ্রি ডাটা মজুত। হোক আটা দামি বয়েই গেল,নেট দুনিয়ায় রগরগে ভিডিওর প্রতুলতা বুঁদ করে রেখেছে শিক্ষিত অশিক্ষিত ছোট বড় সকলকে। প্রকাশ্যে ঘুরছে যৌন উস্কানি ভিডিও রমরমা।অশ্লীলতার মোড়কে পণ্য জাত হচ্ছে নারী শরীর।এ যেন মগের মুলুক স্বাধীনতা,যখন যাকে খুশি যা খুশি ভাবে করায়ত্ত করার প্রচেষ্টা আর বাধা পেলেই নোংরা তকমায় বিদ্ধ।

কি দেখতে হয় আর কি দেখার বয়স হয় নি এই লক্ষণ গন্ডি ধুয়ে মুছে সাফ। পরশু খবরে পড়লাম মফস্বল ছোট শহরে এক মধ্য বয়স্ক ঠান্ডা মাথায় প্রতিদিন বিভিন্ন বাড়ি ঢুকে মহিলাদের খুন করতেন আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন। শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে ভয়ঙ্কর অপরাধ প্রবণতা।স্কুল বাচ্চা প্রায়শই ধর্ষণের শিকার,সদ্যজাত ঝলসে উঠছে লালসার আগুনে,বৃদ্ধা হোক মধ্যবয়সী সে হোক নান কিংবা ভিখারি সবাই টার্গেট এই নর পিশাচ আবহাওয়ায়।তবে কি  কোথাও  নিরাপদ নয় আমরা,আমাদের মহিলা,শিশু কন্যা মহল?

কিসের আমাদের বড়াই তবে?রুচি সংস্কৃতির দোহাই। দেওয়াল জুড়ে মনীষী দের বাণী নিভৃতে কাঁদে।সদা জাগ্রত প্রশাসন কি করবে মনের মধ্যে যদি অপরাধ প্রবণতার বিষাক্ত লেলিহান আষ্টেপৃষ্টে বাঁধে আমাদের। সম্প্রতি ফুলের মতো একরত্তি শিশু তিন বছরের টুইঙ্কেলকে যেভাবে নৃশংসতার সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় খুন করে  ফেলে দিয়ে যাওয়া হলো শিহরণ বয়ে গেল ঠান্ডা রক্ত স্রোতের।দেখ কেমন লাগে আর কত ভয়ঙ্কর হতে পারি আমরা এই বার্তা  প্রকাশ্যে খুল্লম খুল্লা ছোবল মারছে। "দেশ বাঁচাও বেটি বাঁচাও স্লোগানের ছত্রছায়ায় মা বাবার স্নেহ ভালোবাসায় হাসি খুশিতে বড়ো  হওয়া শিশু কন্যা যার বাড়ির  উঠোন জুড়ে  এখনো পাবে হরেক খেলনা বাটি,পুতুল ঘর কন্না। কানে বাজছে বাঁশি লাগানো জুতোর পিক পিক শব্দ।কিন্তু কোথাও নেই,হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গেল তাকে এক ডাস্টবিনে না চিনতে পারা ছিন্ন ভিন্ন  টুকরো হয়ে নৃশংশতার  স্মৃতি চিন্হ মেখে এক তাল রক্তাক্ত মাংস পিন্ড হয়ে।

মানুষ কখনো এভাবে ঐ টুকু বাচ্চা কে শ্রীখন্ডি করে মা বাবাকে শিক্ষা দিতে এতটা বীভৎসতার নজীর সৃষ্টি করতে কি  পারে ভাবতে অবাক লাগছে।কিন্তু কি অপরাধ মা বাবার? 
প্রায় দশহাজার টাকা ধার নিয়ে অভাবের সংসারে শোধ করে উঠতে পারছিল না  তারা। চেষ্টা চলছিলো যত জলদি  টাকা দিয়ে দিতে পারে হুমকি ভয় ,নোংরামি থেকে মুক্তি।কিন্তু কি পেলাম আমরা? অসহায় মা বাবাকে শিক্ষা দিতে তাদের তিন বছরের ফুলের শিশু টুইঙ্কেল কে তুলে নিয়ে গিয়ে চোখ,চুল উপড়ে, গায়ের চামড়া চেঁছে,শরীরের সব অঙ্গ বিকৃতি বা গায়েব করে ফেলে দিয়ে গেছে বাড়ির কাছে।শ্বাস নালি,কিডনি,যৌন অঙ্গ সব কিছু তছনছ যে আসলে সমাজের গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসানো পেল্লাই চড়।

ভাবতে অবাক লাগে কোন মায়ের কোলে জন্মেছিল এই কুলাঙ্গার গণ, তাদের কি বাড়ি,পরিবার সন্তান বলে কিছুই নেই। কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ কে ফোঁপড়া করে বহাল তবিয়তে দিন গুজরান কিছু মহান চোরের, আর সামান্য কিছু টাকা ধার নিয়ে এ এমন পাশবিক ঘটনার সাক্ষী হওয়া তাও নিজের সন্তানকে এভাবে দেখা কি যায় ,না সম্ভব কখনো?আবার আমরা মোমবাতি জ্বালাবো,শোক প্রস্তাব পাঠ করে মৌন মিছিলে হাঁটবো কিন্তু পারবো না সমাজটাকে নিরাপদ আশ্রয়ে মুড়ে রাখতে,এই সুন্দর সমাজকে ফুলের মতো শিশুদের বাসযোগ্য করে তুলতে । তাই আর কিছু চাইনা,স্তব্ধ হোক লোকদেখানি এই  প্রতিবাদ ,সহানুভূতি।

-হাজার ভগ্নাংশে! -শিবিনী বাগচী



শ‍্যাওলার আস্তরনে চাপা পড়ে গেছে,
গলা পচা সমাজের সস্তা নৈতিক বোধগুলো!

রোষের দাবানলের ঝাঁঝালো গন্ধে
মিশেছে মৃত‍্যুর হাহাকার!

মায়ের বুক থেকে উপড়ে নেওয়া
হৃদয়টাকে খন্ড দিয়েছে বার বার!

ছিনিয়ে নেওয়া মৃত‍্যুর অমোঘ
ছটফটানীর কাতরে ওঠা চিৎকারে -
মায়ের প্রসব কালীন যন্ত্রণা আছড়ে পড়ে!

যেন দূরন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনে
জলন্ত অঙ্গারে কয়লা ঠেলা আর্তনাদ;
আকাশ বাতাস করেছে তোলপাড়!

হিংস্রতার নগ্ন মূল‍্যবোধ নিকশ কালো অন্ধকারে,
নেশা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে
ভালো লাগা কোনাগুলোর পরতে পরতে!

খুঁড়তে খুঁড়তে একদিন হয়তো আমরাও খুঁড়ে ফেলবো
নরপিশাচদের অস্তিতকে খন্ড দিয়ে হাজার ভগ্নাংশে !!

শেষে কী পেয়েছো,,,,, সুরভী ইসলাম





না জানি কবে থেকে আমি,
একটি আস্ত মেঘের মুখ দেখিনি
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ,আমার বুকের
উপর কত দিন নামেনি।

সেই কবে যেন শিকড়গুলো
উপড়ে ফেলে ছিলো যে,
নতুন করে গাছ লাগাতে
আর ফেরেনি তো সে।

গরম লুএর ছোঁয়ায় আমার বুক ক্রমশ ফাটছে!
হাহাকার করছে যারা ঐ খালি পায়ে হাঁটছে ।
কেউ কি আটকাইনি তাদের,
নাকি ওরা কারও কথা শোনেনি?
বন জঙ্গল কাটছে বেদম,
এখনো কি কিছুই বোঝেনি?

নাজানি কবে থেকে,
আমি একটি পাখির মুখ দেখিনি।
সে যে দল বেঁধে সব রওনা দিয়েছিলো,
সেকি! এখনো তো তারা ফেরেনি ?
সকাল বিকেল দিঘির ধারে বসতো তারা এসে।
ওদের কথা শোনা যায়না আর,
গেছে দিঘির জলে ভেসে।

দিনের  পর দিন পৃথিবীটা আমার ,শুধু ব্যথায়  কাতরাচ্ছে ।
আমার বুকের  ভেতর গর্ত করে ,তারা এখোনো হাতড়াছে।

তেল ,কয়লা,সোনা,রুপা ,খুঁড়ছে সবাই , ভাবছেনা কেউ!!!
গলছে হিমবাহ ,ফুলছে সাগর,উঠছে সুনামি ঢেউ । । ।

কোন্ ভবিষ্যতের  কথা ভেবে সব এড়িয়ে তুমি  চলেছো?
একবার ঘুরে তাকিয়ে  দেখো পেছোনে কী তুমি ফেলেছো। ।

সেই সবুজের দেশ,শিতল হাওয়া,মিষ্টি  পাখির ডাক,
শেষ কবে শুনেছো,কবে বৃষ্টিতে ভিজেছো,বলো শেষে কী পেয়েছো? 

ঈশ্বর সব জানেন,,,, অযান্ত্রিক



ওই যে চৌখুপ্পি ঘর, বিস্কুটের মতো বারান্দা,ঠিক ওই খানেই,
ইস্কুল খুলেছেন আমার ঈশ্বর,
মানুষ ওখানে বাঁচার তরীকা শিখতে আসে,
লক্ষ্যে পৌঁছানো শিখতে আসেন।

সবার কাঁধের উপর রাখেন হাত,
বলেন সোজা করো পাঁজর ধনুক।
বলো কি দেখতে পাও, ঘর বাড়ি,
হাসপাতাল অফিস কাছারি।

শিষ্য বলে ওঠে সব ,সব দেখছি হে প্রভু,
ঈশ্বর বিস্মিত হন,তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানো হলোনা।
একজন আসেন ,বলেন আমি শুধু লক্ষ্য দেখছি,
পাখির নীল চোখ,খরগোশের লেজ,
তাহলে চালাও, ইচ্ছের তীর,
কেটে যাক বন্ধুর মাথা ,মায়ের কান্না ,
তুমি থামবেনা,ছুঁড়ে যাবে তীর।
তোমাকে লক্ষ্যে পৌঁছুতেই হবে,

হায়, ইশ্বর লক্ষ্য বোঝেন ,দুঃখ বোঝেন না।

অপমৃত্যু -সুকান্ত ঘোষ



চায়ের ভাঁড়ে দীর্ঘ একটা ফু দিয়ে খানিক্ষণ চুপ থেকে অনেকটা উষ্ণ বিস্ময় নিয়ে এবার রাহুল প্রশ্ন করল।

-"থিয়েটার ছাড়ছিস কেন?"

সমীর কোনো উত্তর দিলো না, আর্দ্র চোখে শুধু চুপ করে রইল।

-"কিরে, চুপ থাকিস না, বল।"

রাহুল আবার প্রশ্ন করল। সামনে থেকে এবার উত্তর এল।

-"এমনি...."

-"কী এমনি? '১৭ ই জুলাই'-তে তোর অভিনয় সবার খুব পছন্দ হয়েছিল। সবাই তো তোর কতো নাম করল, আর তুই কী না...."

-"সেটা তো ছোটো চরিত্র....."

-"মানে? ছোটো চরিত্র পেলি বলে দল ছেড়ে দিলি? অন্য দলে নাম লিখিয়েছিস বুঝি?"

-"না সেটা না...থিয়েটার আর করব না।"

-"সেটাই তো বলছি, করবি না কেন?"

-"এমনি..."

রাহুল ধৈর্যের মাত্রা খানিকটা সামলে পায়ের আঙুল কচলে, ভুরু দুটো ঘনিষ্ঠ করে আবার প্রশ্ন করল।

-"তোর কী হয়েছে বলতো? এই তো 'গাজনা চড়ের বাজনা' আর 'কপিকলে'-এ বড়ো দুটো চরিত্র পেলি, এমনকি স্যার বলেছেন পরের নাটকে তোকে লিড ক্যারেকটার দেবেন। এতো ভালো একটা সুযোগ সামনে, আর তুই বলছিস থিয়েটার ছেড়ে দিবি?"

-"হ্যাঁ..."

-"কী হ্যাঁ? তাহলে 'অনার্য বার্তা'-র কী হবে? সামনের মাসেই সো, অভিমন্যু কে করবে?"

-"জানি না.."

-"তার মানে সত্যিই থিয়েটার আর করবি না?"

-"হ্যাঁ"

-"তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?"

-"হ্যাঁ.."

-"ধুর্! সত্যি তোর মাথাটা গেছে, যা সাইক্রাটিস্ট দেখা, তোর সাথে কথা বলাই বেকার, যা খুশি কর.........."

এবার রাহুল ধৈর্য হারাল, চায়ের ভাঁড়াটা পোস্টের গোড়ায় সজোরে ছুড়ে আর কিছু শোনার অপেক্ষা না রেখে সোজা চলে গেল সদনের দিকে, রাহুলের কথা গুলো ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে হাওয়া মিলিয়ে গেল।

সেই ভাঁড়ের টুকরো গুলোর মতো না বলতে পারা কতগুলো টুকরো কথা কুড়িয়ে মনের এক পাশে তুলে রাখল সমীর। একাডেমীর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো নিঃশব্দে ভালোবাসা জানিয়ে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস বুকে চেপে সোজা চলে গেল ক্যাথিড্রাল রোড ধোরে ময়দানের দিকে।

আজ সাত বছর হল সমীরের বাবা মারা গেছেন। এতোদিন মা সংসারের হাল টেনেছেন, ওদের দুবেলা খাইয়ে, পড়ালেখা শিখিয়ে বড়ো করেছেন। মা এখন অসুস্থ, তাই আর পারেন না। সমীরের একটা ভাই আছে, ওর থেকে দু-বছরের ছোটো, সে কাজ করে, সংসার চালায়। ওরা বেলগাছিয়ায় একচালা একটা টালির বাড়িতে ভাড়া থাকে। সংসারে সমীর বেশি টাকা দিতে পারেনা। থিয়েটার করে কতই বা ওঠে? অথচ যা পায় সবটাই নিঙ্গরে দেয়। তবুও কিছু মানুষের কাছে সমীর নিষ্ঠুর, তারা অগোচরে সমীরের নাম করে- "কোনো মুরোদ নেই। মা, ভাইকে খাটিয়ে মারে, কাজ নেই বাজ নেই খালি রং মেখে সং সাজা।" এসব কথায় সমীর নিষ্ক্রিয়। বুকের ভেতর এসব ভাঙা ভাঙা কষ্টের স্তূপ সাজিয়ে সে সারাক্ষণ অভিনয় করে, কী জীবন্ত সেই অভিনয়।

মামার হাত ধরে সমীরের থিয়েটারে আসা। সেই ১৩ বছর বয়স থেকে ও থিয়েটার করছে, মামার কাছেই অভিনয় শেখা। আজ আর মামা নেই। এই ৯ বছর সমীর থিয়েটারকে ভালোবেসে থেকেছে। এতোদিনে বেশ নাম-ডাক-খ্যাতি পেয়েছে। আর কতো মানুষ দেখেছে, কতো মানুষ সেজেছে, কতো শিক্ষা পেয়েছে, কতো অভিজ্ঞতা কুড়িয়েছে। আজ থেকে সে আর কিছু কুড়োতে যাবে না সেখানে। "থিয়েটার এবার ছাড়তে হবে।"

সমীর নিজেকে প্রশ্ন করে। "এই ভাবে আর কত দিন?শেষে মা-ভাইকে না খাইয়ে মারবি? আরে আমাদের জীবনটা থিয়েটার নয়। এখানে অনেক নাটক নেই, এখানে শুধু একটাই নাটক, বেঁচে থাকার নাটক, খেয়ে-পোরে কোনো রকম বেঁচে থাকার নাটক। আর না, এবার স্টেজ ছেড়ে বাস্তবের অডিটোরিয়ামে নেমে আয়, আর দেখ যারা অন্ধকারে বসে আছে, এখন আর কেউ তোকে দেখছে না, তোকে কেউ চেনেই না, কে তুই? সবাই শুধু হা করে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে, দেখছে কতো গুলো রংচঙে মিথ্যা মানুষ আর তাদের মিথ্যা অভিনয়। স্টেজে তুই তাদের মতোই একটা মিথ্যা মানুষ, ওরা ওই মিথ্যা মানুষটাকে চেনে। গ্রিন রুমের এই সত্যি মানুষটাকে কেউ চেনে না। ওরা শুধু মিথ্যা ভালোবাসে, সত্যিটাকে কেবল অবজ্ঞা করে। কাজ কর, সংসার চালা, থিয়েটার নিয়ে বাঁচিসনা। ওটা মিথ্যা জীবন..."

"থিয়েটার ছেড়ে দেব? একদিন যে থিয়েটারের জন্য সব ছেড়ে এসেছিলাম আজ সেই থিয়েটার ছেড়ে দেব? কার জন্য?"

সমীরের মনের ভিতর একটা বর্ণহীন দ্বৈত-মানসিক দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। একদিকে অভাববোধ, সাংসারিক-বাস্তবতা, ঘরের অন্ধকার আর অন্যদিকে রঙ্গমঞ্চ, থিয়েটার, সটেজের আলো। সমীরের বুকের ভিতরটা শূন্য হয়ে আসে, এ কোথায় এসে পড়ল সে? আজ বাবার কথা খুব মনে পড়ছে তার। বাবার না থাকা আজ তাকে আরো বেশি একা করে তুলেছে। চোখের সামনে শুধু ভাসছে অসুস্থ মায়ের সেই আশার মুখ, "আমি না থাকলে ভাইটাকে দেখিস..." সমীর আর সামলাতে পারে না নিজেকে, বুকের ভিতরটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে, এবার হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে সে। এতো একা সে কোনোদিন ছিল?

সেদিনের পরে আজ অনেক গুলো বছর কেটে গেছে। সমীর সত্যিই থিয়েটার ছেড়ে দিয়েছে। এখন সে একটা সামান্য চাকরি করে, যা মাইনে পায় তাতে মোটের উপর শুধু সংসারটাই চলে যায়। ৯টা-১০টার ডিউটি। একই জায়গা, একই ঘর, একই চরিত্র, একই অভিনয়। আর কতো গুলো একই অস্পষ্ট মানুষ, কেউ কারোর সাথে তেমন কথা বলে না, সবাই চুপচাপ কেমন যেন নিজেদের মুঠো করে রাখে। সবকিছু কেমন গতানুগতিক। এসব আর সমীরের ভালো লাগেনা, তবুও সে বিরক্ত হয় না। আজ ও সেই সব পেয়েছে যা ও কোনোদিন চায়নি। এখন সমীর আরো বেশি একা। সে থিয়েটার ঠিকই ছেড়েছে কিন্তু অভিনয় ছাড়েনি, ছাড়তে পারেনি, সে এখনো অভিনয় করে চলেছে নিজের সাথে, ভালো থাকার অভিনয়, বেঁচে থাকার অভিনয়। আর হাতরে বেড়াচ্ছে নিজেকে, দৈনন্দিনের ভিড়ে যে হারিয়ে গেছে অনেক আগেই।

সমীরের মতো মধ্যবিত্ত কি নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের জীবনেটা একটা রুক্ষ মস্ত রেল লাইনের মতো, দুটো লাইন সোজা গিয়ে একটা বিন্দুতে মিশেছে, যত এগোনো যায় বিন্দুটা তত সরে সরে যায়। গন্তব্যহীন একটা দীর্ঘ পথ, এই পথের কোনো শেষ নেই, সামনে যা পিছনেও তাই, অতীত যা ভবিষ্যতও তাই। চলার পথটাই শুধু আছে, একটা নিরবচ্ছিন্ন আশা আর কিছু বিষণ্ণ সংশয় নিয়ে হেঁটে যাওয়াই সার। অভাব, পরিস্থিতি আর বাস্তব এই ভাবেই গ্রাস করে কতো স্বপ্ন, ইচ্ছে আর আনন্দ। জীবনের সঙ্গে আষ্টে-পৃষ্ঠে মিশে থাকা এই কদর্য অগ্রাহ্য রেল লাইনেই কাটা পড়ে কতো স্বপ্ন আর অভাব তাড়িত প্রতিভা। আর এই ভাবেই প্রতিনিয়ত অপমৃত্যু

রুপময়ী হাওয়র কন্যা..... রুদ্র সুশান্ত



হাওয়র কন্যার এতো মুগ্ধকারী রুপ, তোকে অনাবৃত না দেখলে কোন শালায় বুঝতে পারবে না।

ঈশ্বরের চরম সৃষ্টির মায়াবী চন্দ্রিমা যখন লুটোপুটি খায় তোর সুঠান বক্ষে তখন পৃথিবীর যেকোন যুবক স্বর্গের গালে থুথু মেরে প্রাচীনতম চুম্মা দিবে তোর উদ্যমী ঠোঁটে, পেটের দায়ে টিউশন করা ছেলেটা জীবন ভুলে গিয়ে সারা মাসের মাইনে দিয়ে তোর জন্য একটা উজ্জ্বল রক্তিম লিপস্টিক কিনে নিবে অনায়াশে,
পাড়ার বেকার ছেলটা চাকরীর জন্য হন্যি হবে তোর রুপময়ী ঠোঁটের আশায়।
আর এ ধরিত্রীর যেকোনো কবি তাঁর নির্মিত পবিত্র পান্ডুলিপি সহস্র বছরের জন্য বন্ধক দিবে তোর দৃষ্টিনন্দন ঠোঁটের নেশায়।

হাওয়র কন্যা, তুই রাতবিরেতে আমার সাথে শুষ্ক বিছানায় গড়াগড়ি খাবি, আমার বিছানায় একটা মাত্র চাঁদ--তুই। কুঁপি বাত্তির আলোয় তোর মুখে এঁকে দিই ভালোবাসার উদ্যান, তুই পরম তৃপ্তভরে জড়িয়ে নিবি একটা যুবককে।
আহা-- কি যে মোনায়েম সুখ!
তোর বক্ষ না হলে পৃথিবীর কোন শালা এ সুখ বুঝতে পারবে না, খালি অবোধ শিশুর মতো হামাগুড়ি খাবে,
তুইও তো জানিস না কুঁপি বাত্তি নিভে যখন চাঁদের আলোয় সজ্জিত হয় তোর সমগ্র দেহ তখন তোর নাভি হয়ে উঠে স্বর্গোদ্যানোর দ্বার।

একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী... সবকটা দিনেই তুই রহস্যময়ী মোনালিসা।
ঈশ্বর হয়তো তোরও প্রেমিক, তুই জানিস না।
তোকে ভালোবেসে ইশ্বর আর কাউকে এমন নয়নাভিরাম করে বানায় নি।

রাসররাতে তোকে চুমু খেয়ে যেকোন যুবক পরবর্তী চব্বিশঘণ্টা মাতাল থাকবে, নতুবা ফের তোর সাথে মৈথুনে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত।
তুই পুরোটাই রহস্যময় রুপের কুঞ্জণ।

আমি ভাসতে ভাসতে হাওয়র কন্যা নগ্ন ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলেছিলাম---আজ অবধি পৃথিবীর পবিত্রতম চুমো হলো এটাই।
তুই চোখ তুলে বলেছিলি -- "আমি লজ্জায় মরে যাই"।
আমরা নয়নোৎসবে মিলিত হলাম খোলা আকাশের নিচে, তুই তো বলেছিস- তুই নাকি স্বর্গে যাবিনা।
বললাম কেনো? তুই আবার বললি --"এই তো আমার অমরাবতী"।
সেই দিন আমি বুঝেছিলাম আমিও তোর প্রেমিক হতে পেরেছি। হাওয়রে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা তোর সুডোল বক্ষে আমি যতবার মগ্ন হয়েছি ততবার তোকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। তোর আছে রহস্যোপন্যাস, আমি পৃষ্টায় পৃষ্টায় ঠোঁট লাগিয়ে তোকে ইচ্ছে মতন পড়ে নিই।
আমি প্রথম তোর কাছেই জেনেছি, নীরবতা মানে আরো কিছু চায়।

আমি আকাশ হাতের মুঠোয় পুরে বলছি- পরজন্মেও আমি তোকে অনাবৃত করবো।
কন্যা, অমন করে হাসিস না, মানব জাতির ইতিহাস সাক্ষী থাকবে, আমি তোর কাছে বেহায়া হবো কোটিকোটি বার।

তোর উচ্ছ্বল হাসি ঈশ্বরেরও ধ্যান ভঙ্গ করে, আমরা তো মানুষ মাত্র,
এবার বুঝ পৃথিবীর কতো যুবক তোর ঠোঁটে পাগল হতে চায়(?)

আমার বাসরে তোর চাঁদমাখা মুখখানিই সারাক্ষণ জ্বলে। তোর মিলনে আমার প্রতিরাতে বাসর হয়, রুপময়ী।

অনুভবে -সুকান্ত ঘোষ



সকাল ১১:১০ এ পুঁচি রেজাল্ট দেখল। এতক্ষন উত্তেজনায় পা যেন মাটি থেকে সরছিল না। এখন স্বস্তি। পুঁচি উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়েছে, স্কুলে কৃতি ছাত্রীদের মধ্যে তার নাম রয়েছে। এই সাফল্য ওর জীবনের একটি বড়ো পদক্ষেপ। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে পুঁচি যাবে বাইরের এক বিশাল জগতে। সেখানে ওকে লড়তে হবে কোমর এঁটে, ও প্রস্তুত। সকলের শুভকামনা, আশীর্বাদ ও পুঁচির অমোঘ পরিশ্রমে আজ এই সফলতা।

সকাল থেকে বাড়িতে পুঁচিকে নিয়ে হুড়োহুড়ি, রেজাল্ট আনতে যাওয়া, বাবা-দিদি-বোন সবার সাথে ঐকান্তিক আনন্দ বিনিময়, বন্ধুদের সাথে শেষ দেখা সেই সঙ্গে আবার-সাক্ষাতের শপথ গ্রহণ, ম্যাডামদের প্রশংসা, ও বিশেষত যার কাছে হাতেখড়ি সেই দিদিমনির আনন্দে চোখের জলে ভাসা, এমন কী পাড়ার সবচেয়ে খিটখিটে কাকুর ৫০০ টাকা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সব যেন পুঁচির কাছে জীবনের এক অপ্রত্যাশিত আনন্দ।

দিনের শেষে যখন সব শান্ত। ঘরের দরজার সামনে একা বসে আছে পুঁচি। প্রথমার রাত্রে জ্যোৎস্নার ম্লান আলো সামনের কৃষ্ণচূড়ার লাল-সবুজ চাদরের ফাঁক দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়, সেই ক্ষীণ আভা ম্লান করেছে তিনটি শরীর। চৌকাঠে উপবিষ্টা পুঁচির নিথর দৃষ্টি স্থির অদূরে অবস্থিত দুটি প্রাণীর ওপর। পুঁচি দেখছে একটি নিষ্পাপ, নিরীহ, ক্ষুদ্র কুকুর ছানা তার ঘুমন্ত মাকে ঘিরে খেলা করছে, আর ঘুমন্ত মায়ের একটি পা বার বার আগলে নিচ্ছে শিশুটিকে। জ্যোৎস্নার স্বচ্ছতায় প্রাণী দুটি যেন আরো নিষ্পাপ নিরীহ মনে হচ্ছে। পুঁচির দৃষ্টি স্থির, দেহ
 নিথর।

সেই স্থির দৃষ্টি যেন এবার অস্থির হয়ে আসছে। পুঁচির চোখ দুটি জলে ভোরে উঠেছে। ম্লান আলয়ে ছলছল করছে সেই চোখ সমুদ্রের জলে বিচ্ছুরিত জ্যোৎস্নার মতো। বাঁ দিকের গাল বেয়ে চুয়ে পড়ল এক ফোঁটা নোনা অশ্রুজল বাঁ হাতের চামড়া ওঠা জীবন্ত ফোসকাটির ওপর। পুঁচির সমস্ত শরীর-মন জ্বলে উঠল। পুঁচি কাঁদছে। আজ ৮ বছর ও মা-কে হারিয়েছে। আজ ওর মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। "আজ যদি মা থাকতো? খুব আনন্দ পেত, আমায় জড়িয়ে ধরত। মা-এর মুখের সেই অমলিন হাসি দেখে আমারও হয়তো চোখে জল আসত। কোথায় রাখতাম সেই আনন্দ গুলো? তা তো আজ আর সম্ভব নয়। এই ক্ষতি তো পুরণ হওয়ার নয়!" আজ মায়ের অভাব পুঁচির বুকের ভিতরটা একেবারে শূন্য করে দিয়েছে। এই কষ্ট ওর একার, একেবারে নিজের। পুঁচি চাইলেও যেতে পারবেনা ওর মায়ের কাছে, ছুঁতে পারবেনা সেই অমলিন হাসি।

কিন্তু হঠাৎ পুঁচির অস্থির দৃষ্টির চঞ্চলতা এবার বেড়েছে। ও ক্রমশ অনুভব করতে পারছে বাঁ হাতের চামড়া ওঠা জীবন্ত ফোসকার জ্বালা যেন অস্বাভাবিক শীতল হয়ে আসছে। কে যেন একটা ঠান্ডা স্পর্শ রেখেছে তার উপর। পুঁচি অনুভব করছে একটা ঠান্ডা শরীর যেন তাকে জড়িয়ে ধরেছে। পুঁচির সমস্ত শরীর হীম হয়ে উঠছে। পুঁচি বুঝতে পারছে এই স্পর্শ ওর খুব চেনা। এই স্পর্শ যে ওর মায়ের। পুঁচির নিথর দেহ ক্ষণিকের জন্য প্রাণ পেয়ে আবার অসার হয়ে পড়েছে, কেবল দুই চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে, বোবার মতো নিঃশব্দে প্রচন্ড চিৎকার করে কেঁদে চলেছে সে।

পুঁচি বুঝল ওর মা দুই হাত বাড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছে, দৃঢ় স্নিগ্ধ শীতল সেই স্নেহালিঙ্গন। এই সমস্ত ও অনুভব করছে। দেখতে পাচ্ছে মায়ের সেই অদৃশ্য অমলিন হাসি। আর কাঁদছে।

এই অনুভূতি কেবল পুঁচির নিজের একার। ও অনুভব করেছে মায়ের অস্তিত্ব, শুধু বস্তুজগতের বাহ্য ব্যবধানের জন্য তা আজ অদৃশ্য। সমস্তকিছুই তো কেবল অনুভূতির দ্বারা গ্রাহ্য, বাস্তব অপেক্ষা অনুভবে অস্তিত্বের সত্যতা তো সর্বাধিক।

অন্তর কালা .... আহাম্মেদ হৃদয়



ধর্ষিতা নও তুমি,
ধর্ষক বটে
এই পৃথিবীতে এইসব,
হাজারো দূর্লভ ঘটনা ঘটে।

দেহ পোড়ানো জ্বালা
ভুলিতে পারেনা তারা।
যে জ্বালিয়ে মারে তাকে
সে তো বোঝেনা তাহার কষ্টটাকে।
সে মোহে অন্ধ হয়ে জ্বালায় তাকে।

নিজের দেহ হয় দখল
অন্তর হয় কালা
এই সব ঘটনা ঘটে
মধ্য রাএীবেলা।

বিবেক শুন্য প্রতারক তুমি
ক্ষমা পাবিনা আর
তদের জন্য আসছে একদল
সুশীল ছাত্র সমাজ।

অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করে
পিছু পা হাঁটেনা তারা
ন্যায়ের পক্ষে জন্ম তাদের
অন্যায় দেখলে জ্বলে ওঠে তারা।

জীবন তরী" কলমে - রাসমণি সাহা দেবনাথ



নিদ্রাহীন আঁখি,
নিশাচর পাখি...
মুখোমুখি একাকী।

রাত জাগা ভোর,
আলগা প্রেমের ডোর...
ভাঙছে বিশ্বাসের জোর।।

অবিশ্বাসের চোরা বালি,
গহীনমনে বাড়ছে খালি...
শূণ্য ক্রমে জীবনপদ্মের ডালি।

জীবন বড্ড আপেক্ষিক,
সংজ্ঞা গুলো নৈমিত্তিক...
কেবল উদাহরণ সহস্রাধিক।

বাঁচার মতো বাঁচতে হলে,
মনের ক্ষত ঢাকতে হলে...
জীবনতরী ভাসাতে হবে উজান গাঙে।।

~~~~~~~~~~~~~

গানের সাঁকো.. সৈকত ঘোষাল

"গানের সাঁকো"
হঠাৎ ঝ'রে যাওয়া ফুলের মতন
ঝ'রে পরে সন্ধে,
সিঁদুর রঙের মেঘকে সাক্ষী রেখে
সাঙ্গ হয়,টবে লাগানো ফুলগাছ গুলির স্নান।
'গীতবিতান' এর দুপাশে
চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুজন,
যাদের মধ্যে ক্ষুদ্র যোগাযোগের
সেতু গ’ড়ে দেয় অসংখ্য গানের স্বরলিপি।।


দৃশ্যসংলাপ... কল্যানী



চেনা গন্ধের বীজে প্রকান্ড গাছের সংকেত খুঁজি এখোনো।
নীলচোখের দম্পতি যারা....
তাদের শাখাজুড়ে চেনা চেনা ফুলেদের আঁশ।
মাটির তলায় রোজ শিকড় ছড়ায়।
আর্দ্র শপথে তাই দৃশ্যেরা সারিদিয়ে আছে।
হলুদপাতা বিছানো পথ আর রোদেলাচাদর
 খামখেয়ালী হাওয়ায় উষ্ণতার ভ্রম।

একমুখ আলোনিয়ে এখোনো সেখানেই
আলোচুরির দায় নিয়ে দাঁড়িয়েছো...
যে আলোতে পুড়বো না আমি।

প্রেমস্নাত বিকেল..... রুদ্র সুশান্ত



কতো ভালো বাসলাম তোমায় কেমন করে বলি?
সবুজে সবুজে সবুজপত্র বিলিয়ে দিয়ে জানাবো- আমিও এসেছিলাম শিশিরের কোলাহল ছুঁয়ে।

কিরণে উধাও হলো শিশিরজল,  আমার দিকজুড়ে তখনো শিশিরস্নাত বর্ষা, তুমি এলেনা, বসলেনা, বাসলে না ভালো। উন্মুক্ত আহ্বানে ডাকলে না এই শিশিরধৌত সকালকে।

তবুও শিশিরবিন্দু কথা রেখেছে, সূর্যোদয়ে মিলিয়ে গেলো, ভোর পেরিয়ে সকাল, তারপর দুপুর হলো। ভালোবাসার একটি বাক্যও বিনিময় হয়নি আমাদের। 

এতো ভালোবাসা নিয়ে আজো অপেক্ষমান আছি, পথিক পথ পেরুলেই হয়তো তোমাকে পেয়ে যাবো, হে প্রিয় বিকেল। 

তোমার ভালোবাসায় আমার আড়মড়া ভাঙবে, এ প্রত্যাশায় রোজ তোমার অপেক্ষায় থাকি।
বিকেল আসবে, আমিও ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিবো।

রক্ত আমার মৃত্যমুখী কবি- সাম্যব্রত রায়



রক্ত আমার মৃত্যমুখী তোমার ক্লাসেই দিচ্ছে ফাঁকি
দিনের শেষে বৃষ্টি হলেই মনখারাপ!

সঙ্গী আমার চোখের জল, হাতরে হারাই জলের তল
কোন এককে মাপবে তুমি প্রেমের মাপ!

তিনটে পাখির ছোট্ট দল, আবার হব বন্ধু চল
আমাদের ওই দুরত্বটা কয়েকহাত!

রাতের পরে ছাইয়ের স্তূপ, কান্না শেষে সবাই চুপ।
 আমিও জানি, তুমিও জানো
 প্রেম নিছকই রক্তপাত।

বাচাল সময় ,, কবি - অযান্ত্রিক



মূর্খের বাচালতা শুনে আপন কিছু দিন করেছি পর,
কিছু নিন্দার দাম তোমাকেও নিতে হবে  সহিস,
 নামতে হবে মাটিতে ,রাখতে হবে ছিপটি মাটির উপর,
তবেই বুঝবে, প্রশংসা আসলে প্রাপ্য ছিলো নাকি বিষ।

আমার আয়ুনদীর স্রোত স্থিমিত,অধিকার বাড়ছে চরে,
দূর কে কাছের কাছে আনতে লাগছে টলমলে সাঁকো।
সহিস এই মূর্খতার কি দাম দেবে ,মৃত্যুর অনেক পরে,
এই অকালে কি নাম দেবে ভাবো, ভাবতেই থাকো।

চোখের নীচে মেঘ,কালো কিন্তু জলদগম্ভীর নয়,
সহিস তুমি কি সত্যিই বাগে আনতে পারো ঘোড়া,
নাকি আঘাতের ভয় দেখিয়ে বশ্যতা কোরো আদায়
মঞ্চে মঞ্চে বাচলের কীর্তন শুনে ,আর ভালো লাগে না।

হাতে হাতে প্রচার তাবীজ, মন্ত্রের মতো উচ্চারণে লোভ,
বিজ্ঞাপনে ডেকে আনে লোলুপ কদর্য ভিখারী বৃত্তি।
আমি সেরা আমি উত্তম বলে চিৎকার করে সব,
মূর্খের চিৎকারে ঘেন্না লাগে ,থুঁতু উঠে আসে,”সত্যি”।

অমলদার বাস্তবতা বিকাশ দাস (বিল্টু )




রক্তপ্রবাহ স্থিমিত;অলিন্দ -নিলয়ের সংঘাত, আড্রিনালিনের উর্ধ্বচাপ ;বিমূর্ত হয়ে জীবন দর্শন খুঁজি....

পাথরে -পাথরে ঠোকাঠুকিতে স্ফুলিঙ্গ হয় , এই স্ফুলিঙ্গই তো আগুনের জাত, হিসেব বোঝেনা  ;ভস্ম করে নিজেও স্থিমিত হয়....

হিংসা -বিদ্ধেশ , বিবেক -উপলব্ধি মানুষকে শেখায়- ভাবায়  ;মানুষে মানুষে সংঘাত হলে,প্রশ্ন থেকে যায়? বারুদ তো কৃত্রিম ;অকৃত্রিমতার দাবানল তো  দাউ দাউ করে......

উবাচ অমলদা।অলস দুপুরে সব সমীকরণের সমতা আনে, মাত্রা তুলে দিয়ে আলেয়ার ব্যাখ্যা দেয় -এই আলেয়ার রহস্যকে ভাবতে বলে, "সম্পর্ক "-"মাত্রিক" -কি'না?- জানতে চেয়ে কথার ইতি টানে......

স্তব্ধ দুপুরে ভাবতেই থাকি, সত্যিই বড়ই অদ্ভূত অমলদা !খুঁজে পেয়েছি সব উত্তর, রক্ত প্রবাহেরও মানে ;পাথর -মানুষের সম্পর্ক আর জীব -রসায়ন...

               

দেশ //অনিন্দ্য পাল



সময়ের তিক্ত ইতিহাস লুকিয়ে পড়েছিল
ক্যালেন্ডারের পিছনে
ঘৃণার পাঁচিল উঁচু হতে হতে এখন
ঢেকে ফেলেছে মেঘ

 তেতো কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে
অক্টোপাসের মত কালি ছোঁড়ে
গৃহী এবং সন্ন্যাসী

ফুটপাতে শুয়ে থাকা রিকেট শিশু
খিলখিলিয়ে হেসে উঠে পাগলী মা কে বলে
দেখ্ দেখ্ দোকানের টিভিতে
দুটো কাদা মাখা লোক কেমন সার্কাস দেখাচ্ছে!

পাগলী আকাশ দেখে তারপর হেসে উঠে বলে
যা চান করে আয়
ওরা কেউ চান করে না
সব নোংরা
সবাই নোংরা।

#পরস্পর_বিপরীতধর্মী ,, রাহুল কর্মকার



নাহ ঋতু আমার সমস্যা নেই তোমার চলে যাওয়া নিয়ে , হয়তো তুমি যেভাবে বাঁচতে চাও সেভাবে পারতে না আমার সাথে হয়তো এটা বুঝতে তোমার এতোটা সময় লেগেছে কারণ এতো দিন তোমার অবস্থার পরিবর্তন হয়নি তাই ॥
আজ তুমি আমার থেকেও বড়ো চাকরি পেয়েছো , মাইনে বেশি তাই হয়তো অনেক কিছু তোমায় হাতছানি দিচ্ছে তাই হয়তো আমাদের সেই একসাথে শিমলা যাওয়ার প্ল্যান প্রথম রাতে 'এই রাত তোমার আমার 'গান করার প্ল্যান , রাতে হটাৎ বাইক নিয়ে long drive এ যাওয়ার প্ল্যান , বৃষ্টি হলে বারান্দা তে একসাথে ভেজার প্ল্যান আর ওই একে ওপরের পরিপূরক হওয়ার প্ল্যান ওসব আর আনন্দ দেয়না তোমায় ।
নাহ ঋতু আমার সত্যি সমস্যা নেই তোমার চলে যাওয়া নিয়ে আমি আজকাল আর তোমার মধ্যে সেই প্রেমিকা কে খুঁজে পাইনা ,খুঁজে পাইনা নিজেকে তোমার মধ্যে কোথাও ॥
have a nice life 😊

have a nice life ! মানে টা কি অমিত , হ্যাঁ আমি চাকরি পেয়েছি আগে তো কি ! তুমিও পাবে তার মানে ছেড়ে চলে যেতে হবে তোমায় ।
দেখো এতো দিন একসাথে এতো মুহূর্ত কাটিয়েছি এতো স্বপ্ন দেখেছি দুজনে , হ্যাঁ অবশ্যই তোমার চাকরি পাওয়াটাও দরকার কিন্তু আমি আগে পেয়ে গেছি বলে ড্যাং ড্যাং করে বাবার দেখা ছেলে কে বিয়ে করে তোমায় ছেড়ে চলে যাবো সে আমি পারব না । তুমি চেস্টা তো করছো দেখবে পারবে নাহলে কিছু না কিছু করলেই হবে দুজন সব manage হয়ে যাবে , ফালতু কথা আর বলবে না ॥
এবার congratulation জানাও তো ভালো করে ।

congratulation
সত্যি বলো সুমি আমাদের কতো লড়াই করতে হয়েছে তাই আমরা আজ একসাথে , এই congratulation টা তোমার জন্য তোমার এই লড়াইয়ের জন্য , কিভাবে তুমি তোমার বাবা মা কে বোঝাতে পেরেছো যে আমরা ভুল নয় কিভাবে নিঃশব্দে লড়াই করে গেছো আমার চোখের আড়ালে কিভাবে অপেক্ষা করেছো সঠিক সময় আসার জন্য । কিভাবে পারলে তুমি আমার কথা বোঝাতে ওনাদের , আমার সাথে কথা না বলেই কিভাবে ওনারা মানলেন ?
ভালবাসলে আর বিশ্বাস থাকলে মেয়েরা পারে ওতো বুঝতে হবে না ।
শুধু পাশে থেকো ॥

শুধু পাশেই তো চেয়েছিলাম সুদীপা, আজ বলছ তোমার নাকি বাড়িতে মানবে না যেখানে আমি ভালো চাকরি করি , তোমাকেও ভালোবাসি ,
সুদীপা তুমিতো কথাও বলতে দিচ্ছো না তোমার বাড়িতে ।
এইভাবেই হেরে যাচ্ছ এইভাবেই মেনে নিচ্ছ , আমায় চেস্টাটাও করতে দিলে না ॥ বেশ জোর করবো না ॥
All the best .

Be happy 😊

চাইছি এখন; চাইছি না কবি: মনদীপ ঘরাই



খুব বেশি তো চাই নি আমি!
সকাল সকাল ধোঁয়া ওঠা উষ্ণ তোমার একটা ফোন...
রিসিভারের ও প্রান্ত থেকে দরদ নিয়ে
জানতে চাইবে: তুমি ভালো আছ তো?
আমি ইথারে ভাসিয়ে দেব উত্তর:
ভালো আছি। ভালো আছি।

খুব বেশি কি চেয়েছি আমি?
আনমনা দুপুরে ক্ষুদেবার্তার ভেলায় আসবে ভেসে:
এখনও খাও নি কেন? চুপ করে খেয়ে নাও।
আমি ক্ষুধার্ত বাঘের মতো খেয়ে নেব
দুপুরের রোদ, যানজট আর অপেক্ষার সব মেঘ।
তারপর তৃপ্তি করে বলবো:
তুমি না থাকলে কী যে হতো আমার!

এর বেশি তো চাই নি আমি!
ক্লান্ত সন্ধ্যায় মেসেঞ্জারের উত্তাল জগতে টুং করে শব্দ হবে দুবার। তুমি লিখে পাঠাবে:
ভালোবাসি। ভালো থেকো।
আমি তোমার জন্য ভাল থাকবো পুরোটা সন্ধ্যে-রাত।

রাত। ও হ্যাঁ, রাত।এখন অনেক রাত।
যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নীরবতার ক্যাপসুল খেয়ে ঘুমাচ্ছে রাতের পর রাত।
ওরা জানেও না, এ কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গাতে তোমার লাগে মুহূর্তখানেক সময়!

অথচ তুমিও ঘুমাচ্ছ ওদের মতোই। নীরবে। আদরে।

আমার পাঠানো বার্তাও হয়তো পৌঁছায় না তোমার করতলে।
ইস! যদি পৌঁছাতো আমার বলা-না বলা সব কথা।
এখন আমি....
এর বেশি চাইতে ভুলে গেছি।

#ধার্মিক..... কৃষ্ণ বর্মন .....



আমি অক্ষরে অক্ষরে ধর্ম মেনে চলি।
আমি একজন গোঁড়া ধার্মিক।
ধর্ম বলতে তোমরা যা জানো আমিও তা জানি
কিন্তু আমি তোমাদের মত করে বুঝি না।
তোমাদের বোঝাটাকে যদি জোর করে
আমার উপর বোঝার মত চাপিয়ে দাও
তখন আমি তো কথা বলবই।

ভোর চারটের আজান কিংবা চৌ রাস্তার মোড়ের
জয় শ্রীরাম ধ্বনি আমাকে বিভ্রান্ত করে না।
ছোটো বেলায় দেখেছি ভোর চারটের আজান শুনে
আমার ঠাকুমা ঘুম থেকে উঠে
দুই মাইল পথ পায়ে হেঁটে গঙ্গা থেকে জল এনে
সকালের প্রথম সূর্য কিরনে ধুঁইয়ে দিত
আমাদের বাড়ীর দু'শো বছরের পুরানো তুলসী চাতাল।
একটু বড় হলে সন্ধ্যার জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুনে
মনসুর আলির ছেলে রহমতও আমার সাথে মন্দিরে ছুটে গেছে
সোনামুগের প্রসাদী লাড্ডুর আশায়।
সেদিন আমার মন মস্তিষ্কে কোনো বিভ্রাট ঘটেনি
আজও ঘটে না।

তোমরা যদি জোর করে আমার ধর্মকে মন্দির মসজিদ
কিংবা গীর্জায় আটকে রাখার চেষ্টা কর
তখন আমি তো চুপ থাকব না।
আমার ধর্মে আঘাত লাগলে
কিংবা বিচ্যূতি ঘটিয়ে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে চাইলে
আমি তৎক্ষনাৎ চীৎকার করে বলব
আমি একজন গোঁড়া ধার্মিক,
তোমার ধর্ম আমার ধর্ম নয়।

যেদিন তোমার ধর্ম আমার বাড়ির ফ্রিজে নজরদারি চালাবে না
যেদিন তোমার ধর্ম জেহাদের নামে
আমার বাড়ির কিশোর কিশোরীর মস্তিষ্ক অপহরন করবে না
কিংবা রক্ত ঝরাবে না রথযাত্রা ইস্টারে অথবা জুম্মাবারে
সেদিন জানবে তোমাদের সকলের ধর্মই আমার ধর্ম।

মায়া,,,, রহমান জিল্লুর


.

দ্বিধাগ্রস্ত -
হৃদয়ে যারা পাড়ি দিতে চায় প্রণয় সমুদ্র। আমি
চিরকালই অস্বীকার করি তাদের। কভু -
যারা অন্ধ বিশ্বাসে -

                                                          প্রেয়সীর
                           ঠোঁট শুষে পান করেনি অমৃত
        শবার। আমি চিরকালই তাদের ঘেন্না করি।

তথাপিও নিজের প্রতিও আছে কিছু অভিযোগ।

আমি কেবল, প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের মত এসেছি
ফিরে, ঘর পালানো জ্যোছনা রাতে
নিবৃত্ত অভিমানে।

স্তব্ধ নয়নে নিদ্রার গভীরে স্পষ্ট দেখেছি
নিজেকে খুলে   -

                                                 রোজ বিকেলে

                                     "একটি কিশোর ছেলে
        চুপি চুপি সাগরের কূলে দাঁড়াতো একাকী
তন্ময় চোখে তার রাশি রাশি বিস্ময় নিয়ে " -

                                                         জেনেছি
                             জীবন যাত্রা যদিও দীর্ঘ নয়
            তবুও বিদায়ের অধিক দুঃখ বুকে নিয়ে
পৃথিবীর দিকে'ই চেয়ে থাকে শব মানুষের হৃদয়।

বেওয়ারিশ গনতন্ত্র,,, প্রভাত মণ্ডল


একটার পর একটা লাশ পড়ছে
বেওয়ারিশ গনতন্ত্রের।

কোনো শিল্পীর তুলির নৈপুণ‌্যতায়
রক্তাভ বাংলার ক‌্যানভাস।

নির্বাক বায়োস্কোপের দশর্কাসনে
আমি তুমি উপভোগ করছি,

দেখেছি পচন ধরা গনতন্ত্রের বেওয়ারিশ লাশ।



#রূপনামা_রূপকার#.....উচ্চিঙ্গে



কথারা রূপ হয়ে যায় তোমার মাদকতায়।
নারায়ণে রূপ দিয়ে বসে থাকি মুক্ত প্রকৃতিতে
আমাকে ক্ষমা করেনি সে ও...
ধোয়া হয়নি চক্রপুরের মণিপুরী ধাম
হাত থেকে লাল নিয়ে শুধু টিপ এঁকেছি

যেখানে যায় না কেউ- যেখানে যায়নি কেউ
সেখানে সুর বেঁধেছি - সে সুর কীর্তন হয়নি আজও
জাগতিক রূপে যখন এসে দাঁড়াও মণিপুরে
 - ব্রহ্মনাদ শুনি...
কখন অচেতন হয়ে যাই খোঁজ রাখে কেবল মায়া
যে প্রেম লিখি রোজ - সেখানেই তুমি আসো
 সদাবিরাজমান।

ভুলে যায় রূপনগর
ভুঁয়ো আলোরন ভুলে যাই নিছক নাটুকে কথকতা।
সব মায়া।
ছায়া হয়ে ওঠে পাপকুন্ড
ক্ষমা নেই এ রূপকথায়-
কেবল  রূপোলী রূপময়তায় হাসে বৈরাগ্য রূপকার।।


বহিস্কৃত প্রেমিক এস.এম বিল্লাল

বহিস্কৃত প্রেমিক
                        এস.এম বিল্লাল

তোমার সুউচ্চ পাহাড়ের মত
অঢেল সম্পদ কোন একদিন,
তৃষ্ণার্ত ভুভুক্ষের দল
গনতন্ত্রের বুলি আওড়াতে
আওড়াতে ছিঁড়ে খুবলে খাবে।

আমরা গুটিকয়েক প্রেমিক
হাইকোর্টে মদনলেখায় স্মারক লিপি
জমা দিবো, পশ্চিমপাড়ায় মানববন্ধন
করে, সকালের সমুদ্রে পূন্যস্মান সেরে
 মাজার জিয়ারত করবো।

ওরা সমস্ত অপরাধ জমা দিবে
কোন রাজনৈতিক মিছিলে।
নিজের সাথে যুক্ত করবে
সরকারি নেতার পরিচয়।

অথচ আমরা সংস্কারপন্থী ছিলাম না
শুধু মাত্র নৈতিকতা ধারণ করার
অপরাধ ছিলো। রাস্তায়, পার্কে বা
ঘুটঘুটে সন্ধ্যায় জড়িয়ে ধরিনি তোমায়।
কিছুটা অভাব ছিলো বটে
তাই ভাড়া হয়নি লিটনের ফ্লাট।
এ অপরাধ কম কিসে?

সময়ের লেনাদেনায় অমিল ছিলো বেশ
নিজের দলে নিগৃহীত আজ
পরিচয়ে তাই যুক্ত হয়েছে
বহিস্কৃত প্রেমিকের সাঁঝ

প্রশ্ন,, সুমন সিংহ



ব‍্যেলোট গেছে অনেক আগে
শুরু হয়েছে বুলেট বিদ্ধ।

মানব রক্তে রাজপথ রাঙা
মায়ের দুচোখে অশ্রু ধারা।

ফেরৎ দাও ফেরৎ চাই
শান্তি মান পৃথিবী দৃশ্য।

পারবে তোমার জননেতারা
বন্ধ করতে এই ধর্ম যুদ্ধ?

সব দেহ নিয়ে কাড়াকাড়ি
মানবতার মুখে কালি।

মৃত্যু যে আজ ভয়ে মরে
পাছে, তাকে নিয়ে মিছিল করে।

ভোটের সময় দ্বারে দ্বারে
তারপর সব লাথি মারে।

মানব সেবা করবো বলে
মঞ্চে এরা শ্লোগান তুলে।

পারবে তোমারা জননেতারা
এই মৃত্যু খেলা বন্ধ করতে??

ব‍্যেলোট গেছে অনেক আগে
শুরু হয়েছে বুলেট বিদ্ধ।

মানব রক্তে রাজপথ রাঙা
মায়ের দুচোখে অশ্রু ধারা।

ফেরৎ দাও ফেরৎ চাই
শান্তি মান পৃথিবী দৃশ্য।

পারবে তোমার জননেতারা
বন্ধ করতে এই ধর্ম যুদ্ধ?

সব দেহ নিয়ে কাড়াকাড়ি
মানবতার মুখে কালি।

মৃত্যু যে আজ ভয়ে মরে
পাছে, তাকে নিয়ে মিছিল করে।

ভোটের সময় দ্বারে দ্বারে
তারপর সব লাথি মারে।

মানব সেবা করবো বলে
মঞ্চে এরা শ্লোগান তুলে।

পারবে তোমারা জননেতারা
এই মৃত্যু খেলা বন্ধ করতে??

বিষাক্ত ভালোবাসা... সৌজন্য ভট্টাচার্য্য

তোমার চুমুর ছোবলে আজ আমার প্রেম গর্ভবতী
তীব্র কালকূট কামরস ঢেলেছো আমার অন্তরে,
প্রতিটা লোমকূপ খাড়া হয়ে উঠেছে প্রসব বেদনায়
শুধু আদরের সংখ্যা গুনছি আমার নীলাভ শরীর জুড়ে।
পাঁজরের রীডে বেজে চলেছে হারিয়ে যাওয়ার রাগিনী
ধমনীর গতিপথে শীতল খরস্রোতা প্রবাহমান,
স্বপ্নের ভাঁড়ারে শেষ সম্বল শুধু কল্পনার নাভিশ্বাস
কিন্তু অসাড় মেরুদন্ডে আশার ক‍্যাকটাস বিদ‍্যমান।
আরো আরো বিষ ঢালো আমার প্রতিটা শিরায়
আমার ফ‍্যাকাসে জীবন রঙিন হোক বিষের জ্বালায়,
তোমার কথার তলোয়ারে দ্বিখণ্ডিত হোক তাজা কলিজা
তবু তোমার শুকনো আদর ভিজিয়ে নেবো আমার ঠোঁটের লালায়।
আসলে বাসি মৃত্যুর গন্ধটা কেমন যেন মোহময় লাগে
দেখি আধপোড়া কাঠটাও অস্বীকার করে মৃত্যুর তাবেদারী,
বেওয়ারিশ লাশের বুকে থাবা মারে ক্ষুধার্ত শৃগাল
বলে, দেখো মৃত্যু আমি তোমার চেয়েও বেশি অহংকারী।।

সোনার বাংলা দেনার দায়ে অনোজ ব্যানার্জী


  ‎

 আমার বাংলা মা,,সোনার বাংলা মা,,আমি তোকে  কত ভালোবাসি।
 ‎তোর সর্বসুখে,, আমার মুখে, আনন্দেতে
 ‎ফোটে  আলো,হাসি।।
 ‎ ‎তোর সকল দুঃখে,আমার বুকে, চোখ ফেটে আসে জল।
 ‎অভাগিনী মা,দুঃখীনি মা,কেন তোর আজি  আঁখি ছলছল??
 ‎
 ‎তোর সন্তানের রক্ত ঝরে,,পথেঘাটে,
রাজপথে, খালেবিলে।
 ‎কান্নার রোলে,ভিজে আকাশেবাতাসে , ওড়ে ছাই চিতাঝিলে।।
 ‎ ‎সোনার বাংলায়, কোথায় সোনা? শুধু দানবের আনাগোনা,,
 ‎সোনার বরণ যে,পুড়ছে আগুনে,,বাঁচাবে কে?? নেই জানা।
 ‎
 ‎তোর সম্পদ খাচ্ছে লুটেপুটে,  ‎মীরজাফর
 ‎জোচ্চরের দল।
 ‎তোর সাজানো বাগান,হলোযে শ্মশান  , ভূতের বেড়েছে বল।।
 ‎মানুষেরা আজ, জীবন্ত লাশ, লাশ হয়ে আছে বেঁচে।
 ‎ভূতেদের ফাঁদে সাধুজনে কাঁদে,,ডাকিনী
 ‎যোগিনী হাঁচে।
 ‎
 ‎ডাইনীরা আজ ডাইনিং হলে,শ্যাম্পেন পানে মগ্ন।
 ‎নাচে  হাসে গায় ক্যাবারে বারে,,পোশাকেতে অর্ধনগ্ন।।
 ‎ ‎সোনার বাংলা দেনার দায়ে,কেন, কেন জর্জরিত আজ?
 ‎ভাতভাত করে বেড়ায় কেঁদেকেঁদে কেন  ভুখা পল্লীসমাজ।??
 ‎
 ‎
 ‎দেশমাকে ভালবেসে সেদিন,দিয়েছিলেন যারা নিজের প্রাণ,,
 ‎স্বাধীনতার ইতিহাসে তারা  সবাই কি পেয়েছেন স্থান?
 ‎
 ‎মহামানবের স্নেহ, আশীর্বাদের বৃষ্টি যে আজো  ঝরে।
 ‎সেই আশীষে,সবুজ পাতায় ফুলফল আজো ধরে।।
 ‎জাতি,ধর্ম নিয়ে কেন মাতামাতি, কেন কোন্দল ঘরেঘরে?
 ‎মানুষে মানুষে কেন ভেদাভেদ এত, সোনার বাংলার তীরে??
 ‎.......................
 ‎ ‎নেতারা এখন আপন স্বার্থে,,পরের ঘরেতে লাগায় আগুন।
 ‎বিরোধীদের গুণ্ডা দিয়ে, হাসতে হাসতে করায় খুন।।
 ‎
 ‎এ কোন বাংলা দেখছি মাগো,,উষার লগ্নেই অন্ধকার!!
 ‎ ‎হায়নারা ওই অট্ট-হাসে,,কেন আয়না ভাঙে? কেন,বন্ধদ্বার।।
 ‎ ‎সমাজসেবায় কাদের সেবা? রাজনীতিতে কিসের গীতি?
 ‎জনতা আজ পথেঘাটে, পাচ্ছে কেবল বারুদ বুলেট ভীতি।।
 ‎
 ‎সোনার বাংলায় হ্যাংলারা আজ, দিব্যি স্ফূর্তি করে স্বর্গাসনে।
 এখনো মোমবাতির মিছিল করে,প্রতিবাদী বিদ্বজনে।।
 ‎*******-******---***--************
 ‎কপিরাইট © অনোজ ব্যানার্জী।লাভপুর।বীরভূম। ভারত।
 ‎*-***************-** R******
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎

ডায়েরির পাতা থেকে,, পায়েল ব্যানার্জি



আজ আমার জন্মদিন।সকালবেলা ছেলে একটা কেক এনেছিলো,সেটা কাটলাম।দুপুরে মিমি (ছেলের বউ) পায়েস বানিয়েছিল,আর আমার ছোট নাতিটা একটা পেন দিয়েছে আমাকে।ডায়েরি লিখতে ভালোবাসি জানে।মাঝে মাঝে এসে আমাকে বলে
"ও ঠাম্মি তুমি যখন দাদুর কাছে চলে যাবে আমায় তোমার ঐ নোটবুকটা দিয়ে যেও।আর তোমার লেখা গল্প কবিতার ডায়েরিটা।আমি তোমার লেখা গুলো ছাপাব।তোমার প্রচুর নাম হবে।"
আমি শুধু হাসি আর বলি হ্যাঁ দিয়ে যাবো দাদুভাই।খুব পাকা পাকা কথা।ওকে নিয়েই সারাদিন কাটে আমার।এখন ওই আমার কর্তা মশাই।

আজ আমি সত্তর বছরের প্রৌঢ়া।কোথা দিয়ে পলকে জীবন কেটে গেল বুঝতেও পারলাম না।পড়াশোনায় ছোটো থেকেই ভালো ছিলাম।গ্র্যাজুয়েট হবার আগে থেকেই ছেলে দেখা শুরু হয়ে গেলো।তারপরেই বিয়ে।বাবা- মা কে বলেছিলাম আরো পড়তে চাই,চাকরি করতে চাই তারপর বিয়ে করবো।বাবা বলেছিলেন না ভালো ছেলে পেয়েছি করে নে মা।আমাদের অবর্তমানে কে দেখবে তোকে?মা বলতো বিয়ের পর পড়াশোনা করিস শ্বশুর বাড়ি গিয়ে। শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে পড়লাম বড় সংসার।তার উপর আবার বাড়ির বড় বউ ছিলাম সংসার সামলাতে সামলাতে পড়াশোনাটা ধোঁয়াশা হয়ে গেল।পুরো সংসারের সমস্ত দায়িত্ব আমার কাঁধে থাকলেও স্বাধীনতা কিছুই ছিল না আমার।বাড়িতে আমি বৌমা,জা,কাকী,মামী বেশি ছিলাম রঞ্জিতের (আমার বর)বউ কম ছিলাম।সামান্য রঞ্জিতের পাশে বসতেও পারতাম না কে কি ভাববে এই ভেবে।দিনের শেষে বিছানায় দুটো শরীর চাহিদা বসতো এক হতো।তারপরেই যে যার মতো সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে এপাস ওপাশ।মন দুটো যেন কর্পূরের মতো উবে যেতো।
                              তারপর বউ,বৌমা সমস্ত সম্পর্ক ফেলে মা হলাম।নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সব পালন করে বাচ্চাকে মানুষ করতে করতে কেটে গেলো সারাটা জীবন।নিজের শখ বলতে শুধু ছেলে কে কি করে বড় করবো মানুষ করবো।নিজের লেখার শখ ছিল খুব।সেটা আর চরিতার্থ হয়নি।আর তখন তো এখনকার মতো এত মুঠোফোনের ব্যবহার ছিল না।যে তার মধ্যে দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেকে পৌঁছে দিতে পারবো।দায়দায়িত্ব আমার থাকলেও বাচ্চার কোনো ব্যাপারে ডিসিশন নেওয়ায় অধিকার আমায় দেওয়া হতো না কোনদিন,সব রঞ্জিত নিত।কোনোদিন আমিও প্রশ্ন তুলিনি নিজের অধিকার প্রসঙ্গে।ভেবেছিলাম ও তো বাবা যা করবে ভালোই হবে।দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো ছেলে,বিদেশ গেলো পড়তে।নিজের ইচ্ছায় বিয়ে।ছেলের বিয়ে দিয়ে ভেবেছিলাম রঞ্জিতের সাথে কাটাবো।ব্যাস ছেড়ে চলে গেলো আমাকে।ছেলে বউয়ের হাতে ফেলে রেখে।'আমাদের দুজনের'আর সময় কাটানো হলো না কোনোদিনই।পুরোপুরি ভাবে ছেলের ওপর নির্ভর করে দিন কাটাতে হয় এখন।না ছেলে বউ আমার খুবই ভালো তাদের নিয়ে অভিযোগ কিছুই নেই আমার।সারাদিন ছেলে বউ চাকরিতে বেরিয়ে গেলে নাতির সাথে ভালোই সময় কাটে আমার।ওই সব মুঠোফোনের দরকার ও হয়নি,আর ব্যবহারটাও ও ঠিক জানিনা ওই সব স্পর্শকাতর ফোনের।কিন্তু,তবুও দিনের শেষে কোথাও যেনো আমি একা।কিছু,টেলিভিশন সিরিয়াল আর আমি সন্ধ্যে থেকে একসাথে কাটাই।মাঝে মাঝে এই নীল রঙের ডায়েরিটার সাথে নিজের রাগ,দুঃখ,আবেগ,আক্ষেপ ভাগ করেনি।ছেলে বউ নিজের মতো সময় কাটায়, বাইরে ঘুরতে যায় ,সময় কাটায় নাতিও যায়,সারা বাড়িতে আমি একা।না,তারা তো তাদের মতো সময় কাটাবেই,সেই নিয়ে আক্ষেপ নেই আমার।আমি যা পাইনি,রঞ্জিতের সাথে সময় কাটাতে ,তারা তাই করুক আমি চাই।তারা আমাকেও নিয়ে যেতে চায় সাথে করে।কিন্তু,এখন যে আমি শরীরের অধীনতা শিকার করেছি।আমার শরীর আমার সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।এখন সারা শরীর শুধু ব্যাথার অধীনে।ভালো করে নড়তেই পারিনা।এবার গেলেই হয় সব ছেড়ে।কিন্তু, মৃত্যু যতো দিন না চাইবে আমায় নেবে না।সেখানেও আমার স্বাধীনতা নেই।মৃত্যুর ওপর তো কারুর হাত নেই।সে নিজে বড় স্বেচ্ছাচারী।বড় রাগ হয় মহাভারতের  ভীষ্মের ওপর যদি পারতাম অমন স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করতে।

আসল কিছু মেয়েদের সারাটা জীবন শুধু পরের অধীনতাতেই কেটে যায়।বিয়ের আগে ভাবি স্বাধীন আছি।কিন্তু,বাড়ি থেকে বেরোলেই সময় বেঁধে দেওয়া হয়,মনে করিয়ে দেওয়া হয় আমরা মেয়ে। বাড়ির বাইরে বিপদ নাকি পদে পদে!সন্ধ্যের পর বাড়ির বাইরে মানেই হাজার সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়।এখন অবশ্য সময় বদলেছে।তবুও কাগজের পাতায় যা পড়ি তাতে মনে হয় না মেয়েরা স্বাধীনতা পেয়েছে।আরও বেশি পরাধীন হয়েছে হয়তো।বিয়ের পর স্বামী সংসারের অধীনে থাকতে হয়।তারপর জীবনের কোন এক মোড়ে এসে বাচ্চাদের অধীনে  আসতে হয় ইচ্ছা অনিচ্ছাকৃত ভাবে।এই সমস্ত বাধা কাটাতে না কাটাতে 'রোগ 'হানা দেয় শরীর জুড়ে।আর তার কাছে মৃত্যু কাল অবধি মাথানত করে থাকতে হয়।
আমার মতো অনেকেই হয়তো এই অবস্থায় আছে।এই ভাবেই সাদরে গ্রহণ করে চলেছে জীবনটাকে।নিজের আক্ষেপ গুলো দূরে সরিয়ে রেখে,জীবনের এই শেষ বয়সে উপনীত হয়ে এখন শুধুই বলতে হয় যেভাবেই আছি 'ভালো আছি'।ছেলে,বৌমা,নাতি নিয়ে ভরা সংসারে বেশ কাটছে দিন গুলো।আজকে আরও একধাপ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলতে চাই এবার মৃত্যু চাই স্বাধীন হতে চাই সারা জীবনের মতো।
          রমলা।

                       

পাঁচ মিনিট,,,, শুভঙ্কর রাহা




বিয়ের দিন রীতিমত বর উঠে বসলো ঘরের চালে। শিউলি তার বরের উদ্দেশ্যে বলল-
"চালে থেইকে নামো তুমি, নিড়ানি খুঁইটে খাইয়াইবো আমি"।

বিয়ের দিনের কথা অনুযায়ী জমিতে নিড়ানি দিয়ে না হলেও ওই পাশের পাড়ার নকুল দত্ত মশাইয়ের বাড়িতে কাজ করে সংসারের কিছুটা সাহায্য করতো শিউলি রাজোয়ার। স্বামী রমানাথ তখনও আড়পেটে।
রাজমিস্ত্রি দলের প্রধান সেদিন বলল- ' রমা তুর তো দেখছি হাত ভালোই পাকা হইছে রে। ত রাজমিস্ত্রী হবি?'

সে দিন থেকে রমা রাজমিস্ত্রি। বউকে শুনিয়ে রেখেছে, ' বুঝলি শিউলি তুই আর কামিন খাটবিক লাই। উ দত্ত গিন্নি কে বইলে দিবি অন্য কামিন খুঁইজে লিতে।'
তারপর সেদিন তিনতলায় কাজ চলছিল গ্রামের হাইস্কুলের। সদ্য ডি. এম সাহেব এসে জমি ঠিক করে গেছিলেন। সুখ আর দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ভাড়ার বাঁশ খুলে পড়লো রমানাথের উপর। দুটো বড় পেরেকও ঢুকে গেল, একটা মাথায় আর একটা ডান কাঁধে।
ডাক্তারবাবু বললেন,' পাক্কা ছয় মাস বিশ্রাম'।

দু মাস গেল, তিন মাস গেল। ঘরে আর টাকা নেই। ডাক্তার, ওষুধে যে অনেক টাকা গেল। পেরেকের ক্ষতগুলো সেড়ে গেলেও ব্যাথা টা এখনো বেশ আছে। এদিকে বাজারে এখন থেকেই ধার বাড়ছে।
সুভাষ মুদি তো সেদিন বলেই উঠলো, ' চালের দাম টা কিন্তু বাকি আছে। সঙ্গে দুটো নুনের দাম পাই। '

শিউলির অনেক চাপ। একদিকে টাকা নেই। অন্য দিকে স্বামীর কামিন খাটার উপর নিষেধাজ্ঞা। যাকে বলে ধর্ম সংকট।

-' শিউলি রে। তুকে আমি উনেক কষ্ট দিয়ে ফ্যালছি রে। আমি যদি একটু ওপর পানে তাকাতাম তাইলে আর আমার ওপরে পইড়তো না। '
-' ছাড়ো ওইসব। তুমার তো ওষুধ ফুরাই যাইচ্ছে। এই টা তো কাল সকাল অবধি চইলবে'।

-'আর খাবো না রে। আর তো টাকাও নেই মুনে হয়।'

শিউলি রান্না ঘরে উঠে গিয়ে চোখের জল মোছে। তারপর ফিরে এসে বলে-
' তুমি ৫ মিনিট বসো। আমি আইসছি। '

ছুট্টে গেল শিউলি দত্ত গিন্নির কাছে। দত্ত গিন্নির উঠোন ঝেঁটিয়ে, উনুন নিকিয়ে, বাসন মেজে অগ্রিম ৫০০ টাকা নিয়ে ওষুধ কিনে বাড়ি এলো শিউলি। দত্ত গিন্নি কে কথা দিয়ে এলো কাজ না ছাড়বার।
এতক্ষণে প্রায় ঘন্টা দেড়েক হয়ে গেছে।

- রমা বিছানায় শুয়ে বলে উঠল সেই কখন ৫ মিনিট বলে বেড়িয়েছিস। এই তোর সেই ৫ মিনিট? '


সুপারস্টার(প্রথম পর্ব) : সুকান্ত মন্ডল





বৈশাখ মাস ।  প্রকৃতির প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। চারিদিকে নির্জীবতার ছায়া । মাঠ -ঘাট চৌচির আর শুনশান । বিবর্ণ প্রকৃতিরানী। দুপুরের ঝলসানো প্রখর রোদ্রে , তুহিনের হাজার স্বপ্ন ও বিবর্ণতার রূপ পায়। নীলকণ্ঠপুরের তীব্র গরম ও বুঝতে পারছিল , সে খুবই কষ্টদায়ক ও একঘেয়েমি । কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না।  সময় হলেই একটা সবুজ পাতাতেও তার চিহ্ন থাকবে না। এখন তার সাম্রাজ্য,  তার রাজত্ব  । দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে জমিয়ে যখন একটা নীরব ঘুম দিতে যাচ্ছিল, হঠাৎ তুহিনের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে দেখল , তুহিনের বাবা  দরদরে ঘাম গায়ে রাগান্বিত অবস্হায় চোখ বড়ো বড়ো করে জুতো দিয়ে পিটছে ক্লাস ইলেভেনে পড়া ছেলেটিকে।                                আর পুরো নীলকণ্ঠপুর গ্রাম কাঁপিয়ে তুহিনকে গালিগালাজ  করছে - "এতো রোদ্রে তো পরিশ্রম করতে হয়নি।  মাথা ফাটাতে হয়নি। ভালোবেসে বাড়িতে থাকতে বলেছি। মাঠে ধান কাটতে নিয়ে যায়নি এক গ্লাস জল চেয়েছি এই যাচ্ছি বলে ,এক ঘন্টা কাটিয়ে দিল !  এদিকে বাবা- মা রোদে জ্বলে -পুড়ে মরছে দুটো ভাত জোগাড়ের তাগিদে,  আর সে জানোয়ার সিনেমা দেখায় মগ্ন। সিনেমার সুপারস্টার হবে !  ছাই আর কচু হবে ।    আরে ! সুপারস্টার তো তাদেরই বলে : বাস্তবে যারা বাবা -মাকে সাহায্য, সহানুভূতি  আর স্নেহ করে । পড়াশোনা তো গাছে উঠে গেছে কবেই। বাপের হোটেলে গোগ্রাসে দুটি গিলছে আর খালি টিভি আর টিভি।  এরকম ছেলে ঘরে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো, দূর হয়ে যায় না কেন "

  অন্যদিকে প্রতিপক্ষ তুহিন ও মারতে যাচ্ছিল বাবাকে ।  কোনোরকম তুহিনের মা দুজনকে সামলে নিয়েছিল। তুহিনের মেজাজি গলা তুহিনের বাবার মেজাজি গলার থেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল  , 'কি ভেবোছো টা কি ? তোমার টাকায় খাচ্ছি বলে দোষারোপ  করছো !'


(চলবে...)

দশচক্র (তিন) : সিদ্ধার্থ সিংহ








ফোন বাজলেই সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিসিভার তোলে ঋজু। ওর ছেলে বাবি ক্লাস ফোরে পড়ে। ক’দিন হল ছেলেকে নিয়ে ও আর স্কুলে যাচ্ছে না। বউকে পাঠাচ্ছে। 
সপ্তাহখানেকও হয়নি ওর অফিসে একটা ফোন এসেছিল। ও-ই ধরেছিল। ফোনটা একটি মেয়ের। সে লেখালিখি করতে চায়। তাদের কাগজে লেখা দিতে হলে কী ভাবে পাঠাতে হবে, কাকে পাঠাতে হবে, মনোনীত হল কি না, ক’দিনের মধ্যে জানা যাবে, এই সব টুকিটাকি কথা সে জানতে চাইছিল। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ঋজুই দিচ্ছিল। হঠাত্‌ মেয়েটি ওর ফোন নম্বর চায়। ও বলে, এই নম্বরেই করবেন। সন্ধের দিকে করলে আমাকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু মেয়েটি নাছোড়বান্দা। সে ওর অফিসের নয়, বাড়ির নম্বর চায়। ঋজু দেখেছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা দূরে ও যখন কোথাও যায়, কবি নয়, খবরের কাগজে কাজ করে শোনার পরেই অনেকে ওর কাছ থেকে টেলিফোন নম্বর নেয়। কিন্তু কস্মিনকালেও কেউ ফোন করে না। এই মেয়েটিও সে রকমই একজন ভেবে, ও ওর বাড়ির টেলিফোন নম্বরটা দিয়ে দিয়েছিল। আর তখনই ও জেনেছিল, মেয়েটির নাম শালিনী। তার পর থেকে দু’-একদিন ছাড়া ছাড়াই মেয়েটা ফোন করে। 
গলার স্বর খুব নরম। বাচ্চা বাচ্চা। মনে হয় ইলেভেন-টুয়েলভে পড়ে। গত পরশু যখন ফোন করেছিল, ঋজু ঘুমোচ্ছিল। ধড়মড় করে উঠে ফোন ধরতেই ও প্রান্ত থেকে শালিনী বলেছিল, কী মশাই ঘুমোচ্ছেন নাকি? 
— এই উঠলাম। হ্যাঁ, বলো। এত সকালে? 
— না, এমনিই করলাম। কোনও দরকার নেই। আসলে ভাইয়ের সঙ্গে দুধ আনতে বেরিয়েছি তো, দুধের ডিপোর পাশে নতুন একটা এসটিডি বুথ হয়েছে। দেখেই মনে হল আপনাকে একটা ফোন করি। তাই করলাম। কিছু মনে করলেন না তো? 
কেউ যে তাকে এমনি এমনি ফোন করতে পারে, এই ফোনটা না এলে সে জানতেই পারত না। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল সে। আর সেই খুশিতেই সারাটা দিন তার খুব ভাল কেটেছিল। 
লোকে বলে, কারও কারও মুখ দেখলে নাকি দিন খারাপ যায়। আবার কারও কারও মুখ দেখলে দিন ভাল যায়। কারও মুখ নয়, তার দিন ভাল করে দিয়েছিল শালিনীর ফোন। তাই তার পর দিন, মানে গত কাল একটু সকাল সকাল উঠে সে তার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল। যদি আজও করে! কিন্তু না। সাড়ে সাতটা-আটটা-সাড়ে আটটা বেজে গেল। সে ফোন করল না। এমনকী সারা দিনে অফিসেও একটা না। রাতে শোবার সময় ভেবেছিল, কাল সকালে নিশ্চয়ই ও ফোন করবে। তাই সকাল থেকে যত বার ফোন বেজে উঠেছে, ও প্রায় লাফিয়ে গিয়ে ফোন ধরেছে। এবং দেখেছে, সবই এর ওর তার ফোন। কিন্তু যার ফোনের জন্য ও অপেক্ষা করে আছে, তার কোনও পাত্তা নেই। ঘড়িতে তখন ন’টা বেজে গেছে। নাঃ, ও আজ আর ফোন করবে না! ঋজু স্নানে ঢুকে পড়ল। 
বেরিয়ে শোনে, একটা ফোন এসেছিল। 
— কার? 
ওর মা বললেন, রিনা গিরি বলে একটা মেয়ে ফোন করেছিল। 
— ও, রিনা গিরি! মানে আশিসের বউ। কী বলল? 
— কিছু বলেনি। শুধু বলল, কখন পাওয়া যাবে? তা আমি বললাম, আধ ঘণ্টা পরে করুন। ও স্নানে গেছে। 
ঋজু একটু বেলা করেই ব্রেক ফাস্ট করে। দুধ-মুড়ি খেতে খেতে ও শুনল, ফোন বাজছে। ফোনের কাছে মা। তাই ও আর উঠল না। এটা নিশ্চয়ই শালিনীর ফোন না! 
ফোন ধরেই মা বললেন, ঋজু, তোর ফোন। 
— আমার! এত দেরিতে ফোন করল! পড়ি কি মড়ি করে ছুটে গেল ও— হ্যাঁ, ঋজু বলছি। 
ও প্রান্ত থেকে একটা কোকিল কণ্ঠি ভেসে এল— আমি কণিকা রায় বলছি। চিনতে পারছেন? কাল আমরা একসঙ্গে দাঁতনে গিয়েছিলাম... 
— আরে, হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন। কাল ফিরতে কোনও অসুবিধে হয়নি তো? কেমন আছেন? এখন কোথায়? 
— আমি তো অফিসে। 
— এত সকালে? 
— সকাল কোথায়? পৌনে দশটা বাজতে চলল... 
— আপনাদের ক’টা থেকে? 
— আমাদের তো সাড়ে ন’টার মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। আমরা ডাইরেক্ট সিজিএমের সঙ্গে কাজ করি তো... 
— তাই নাকি? 
— আমরা তো আর আপনাদের মতো সাংবাদিক নই যে, বিকেল বেলায় অফিস। 
— বিকেলে শুরু হয় ঠিকই, কিন্তু থাকতে হয় ক’টা পর্যন্ত, সেটা দেখুন। আপনারা তখন ঘুমোন। 
— অনেকে হয়তো ঘুমোয়, কিন্তু সবাই ঘুমোয় না। খুব ধীরে ধীরে কেটে কেটে কথা ক’টা বলল কণিকা। 
— কেন? আপনি কি জেগে থাকেন? 
— একদিন বেশি রাতে ফোন করে দেখবেন। 
— হ্যাঁ, আপনাকে বেশি রাতে ফোন করি, আর আপনার কর্তা সন্দেহ করা শুরু করুক, এত রাতে আমার বউকে ফোন করছে কে! 
— সন্দেহ করবে না। 
— কনফার্ম? 
— জানলে তো করবে। 
— মানে? 
— উনি অন্য ঘরে শোন। 
— ও। বলেই, একটু থেমে, অন্য প্রসঙ্গে যাবার জন্যই ঋজু বলল, একটু আগেই রিনা ফোন করেছিল। 
— কখন? 
— এই তো, মিনিট দশ-বারো আগে। 
— রিনা নয়, আমিই করেছিলাম। 
— আপনি? মা যে বললেন, রিনা গিরি... 
— হ্যাঁ, আমি রিনার নামই বলেছিলাম। আসলে আপনার বাড়ির কে কী রকম, আমি জানি না তো। কে আবার কী ভাববে, তাই রিনার নাম বলেছিলাম। এক দিন চলে আসুন না আমাদের বাড়িতে। 
— ওরেব্বাবা, আপনাদের বাড়ি তো সেই তেপান্তরের মাঠে। যেতে আসতেই সারা দিন লেগে যাবে। 
— মোটেও তা নয়। 
— আমি তো দু’-এক বার এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে গেছি, জানি। 
— লাস্ট কবে এসেছেন? 
— বছর পনেরো আগে। 
— প... নে... রো...  ব... ছ... র... আগে! এখন এক বার এসে দেখুন... 
— আসলে সল্টলেক শুনলেই না গায়ে জ্বর আসে। লোকে যে কী ভাবে ওখান থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে, কে জানে! 
— ঠিক আছে, আপনাকে আমাদের বাড়িতে আসতে হবে না। আপনি একদিন আপনার সময় সুযোগ মতো আমাদের অফিসে আসুন। 
— আপনার অফিসে যাবার জন্য আমার কোনও সময় সুযোগ লাগবে না। রোজই যেতে পারি। আমাদের অফিস থেকে টেলিফোন ভবন তো একটুখানি। 
— তা হলে আজকেই চলে আসুন। 
— আজকে! 
— হ্যাঁ, আজকে। 
— ঠিক আছে, দেখছি। 
— দেখছি না। চলে আসুন। নীচে এসে আমাকে একটা ফোন করে নেবেন। 
— আপনার নম্বরটা যেন কত? 
কণিকা শুধু অফিসের নম্বরই নয়, তার মোবাইল নম্বর, এমনকী বাড়ির ফোন নম্বরটাও দিয়ে দিল। ঝটঝট করে লিখে নিতে নিতে ঋজু বলল, বাড়ির নম্বরটা পেয়ে ভালই হল। রাতের দিকে অনেক সময় কাজের চাপ কম থাকে। তখন কথা বলা যাবে। আপনি ক’টা অবধি জেগে থাকেন? 
— করুন না। যখন খুশি করতে পারেন। 
— রাত বারোটায়? 
— বারোটা কেন? একটা, দুটো, তিনটে... যখন খুশি। 
— ফোন ধরবেন তো? 
— করেই দেখুন না... 
সে দিন সকালে শালিনী ফোন করার পর সারাটা দিন অদ্ভুত এক আনন্দে সারা শরীর যেমন চনমন করে উঠেছিল, আজও তেমনই এক আনন্দে ঋজুর মনপ্রাণ খুশিতে ভরে উঠল। 

তিন 

কয়েক সপ্তাহ আগে বিধান দত্তের সঙ্গে সুন্দরবন গিয়েছিল ঋজু। বিধানদা কবিতা লেখেন। গল্প লেখেন। ফিচার লেখেন। বিখ্যাত লেখকের উত্তরসূরি.....


(চলবে )

রুহীর পুতুল : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

    







                             ।। ৩ ।।   





            রুহী চোখ মেলে সিটে উঠে বসে মা কে সামনে না দেখতে পেয়ে চমকে উঠে আসে পাশে চাইল । তারপর দেখল মা তো ট্রেনের দরজার দিকে যাচ্ছে । সে তাড়াতাড়ি করে নেমে সেই দিকে চলতে গিয়ে হঠাৎ চমকে উঠল । বা পাশের একটা খালি সীটে সেই বড় বারবি ডল পুতুল টা শুয়ে ! তবে মাথাটা এখন আবার ন্যাড়া । বোধ হয় চুল ছিল এককালে , আজ আর নেই । তা হোক , এটা কে ফেলে গেল দেখতে হবে । সে এগিয়ে গিয়ে দু হাতে পরম যত্নে তুলে নিল পুতুলটাকে । রুহী কে অবাক করে দিয়ে জীবন্ত মানুষের মত পুতুল টা চোখ মিটমিটাল মনে হল তার ! মুখ টা হাসি হাসি । অঃ - অঃ - অঃ করে একটা খুব নীচু স্বরের আওয়াজও বুঝি শুনতে পেল সে । আশ্চর্য ! এ সত্যি জাদুর পুতুল !!  
-- রুহী ?   
মায়ের কড়া গলার ডাকে সে তড়বড় করে ট্রেনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল পুতুলটাকে কোলে নিয়ে । তার স্কুলের ব্যাগ মার হাতে । ওর হাতের পুতুল টা দেখে মায়ের সে কী রাগ ! কার না কার ! এখন যখন তখন সন্ত্রাসবাদীরা বাচ্চাদের খেলনাতেও বোমা ফিট করে দিচ্ছে , তখন কেন সে ওটা নিল ? মার প্রশ্নে কান্না এল রুহীর । সামনে দাঁড়ানো পুলিশ কাকু তার দিকে চেয়ে মিষ্টি কোরে হেসে বললে ,   
-- দেখি দেখি তোমার পুতুল টা । বাঃ বেশ তো ! পুলিশ কাকু পুতুল টা হাতে নিয়েই প্রথমে ভাল কোরে দেখে নিল সেটায় কোন বোমা টোমা আছে কিনা । তারপর জনে জনে জিজ্ঞাসা করে পুতুলের মালিক না পেয়ে রুহীর হাতেই ফিরিয়ে দিল । মা করুণ চোখে পুলিশ কাকুর দিকে চেয়ে বললে ,   
-- দেখুন দাদা ...     
তাকে শেষ করতে না দিয়ে পুলিশ কাকু বললে ,    
-- আরে না না দিদিমণি , ও আপনার মেয়েই নিয়ে যাক । কেউ যখন পাওয়া গেলনা । এতটুকু মেয়ে আপনার , দেখছেন না কত খুশী দেখাচ্ছে ওকে ।   
মা বললে ,   
-- পুলিশ কাকুকে ধন্যবাদ বল রুহী ।   
-- ধন্যবাদ কাকু ।    
পুলিশ কাকু তাকে আদর করেচলে যেতেই মা কড়া চোখে চেয়ে তাকে বললে ,   
-- বাড়ি চলো ।    
তারা দুজনে বাইরে বেরোবার গেটের দিকে রওনা হয়ে পড়ল ।   
                                                                            [ চলবে ]    

অপরাজিতা : দেবব্রত সেন



         
সুলেমান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুবাদে মাঝে মাঝে এলাকার কিছু সমস্যা তুলে ধরেন সংবাদপত্রে। প্রবন্ধ আকারে। এছাড়াও ভালো ভালো লেখক ও কবির লেখা পড়ে, মতামত দিত। আজকে মনে পড়ছে তার কবি শ্রীজাত  বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই লাইন দুটো ----
            মানুষ হতে মানুষ আসে
                বিরুদ্ধতার হাতবাড়ায়
             আমিও মানুষ তুমিও মানুষ
                 তফাৎ শুধু  শিরদাড়ায়।।

এটাই ভাবছে সে। কিছুক্ষণ চুপচাপ।  পরে সুলেমান উঠে দাঁড়াল, দুহাতের আঙ্গুল গুলো সংযোগ করে ঘারটা দুপাশে ঘুরিয়ে ফুটিয়ে নিল, বলল,, আচ্ছা শিবু  পুজা মা উঠিরে আইজ, কাইল দেখা করবাম তর মা 'য়ের লগে! বলতে বলতে উঠোন পেরবে এমন সময় পুজার মা মালতি বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল।আরে সুলেমান যে, কখন এয়েছো? সুলেমান বলল, প্রায় আধ ঘন্টারও বেশি হবে বৌদি।
আর বলিস না সুলেমান , মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যানের ছোটো মেয়েটার জন্মদিন,তাই আর ছাড়ল না, একটু যোগাড়টোগারে সাহায্য করতে হলো।কি করব শহরে বাবু কথা শুনতেই হবে! আর কাজ করেই তো খাই।
বউদি একটা কতাকই? রাগের কিছুই নাই কিন্তু? যেইডা মানবিক হেইডাই কমু! এর বেশি কমু না?
----কি বলবি সুলেমান বলেই ফেল? আমি হাত পা চোখ মুখে জল দিয়ে আসি আগে কেমন!
----- ঠিক আছে বউদি! আহ আগে! তারপর

এই সময় মনে পড়ে গেল, পুজার কলেজে ভর্তির সময় চেয়ারম্যান সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার কথা। সেটাই ভাবতে লাগল সুলেমান। সেইদিন যখন পুজার কলেজে ভর্তির জন্য, কিছু সাহায্য চাইতে গেলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি, চেয়ারম্যান সাহেব  যা নয় তাই বলল, আর দেখা করতে বলল,  মিউনিসিপালিটি অফিসে, সেখানও ঠেসা ঠেসি করছে, কখনও এর দিকে,,  কখনও আবার ওর দিকে দেখিয়ে দিয়ে বিষয়টা এরিয়ে যেতে চাইছে! মনে হয় চেনেও নাচেনার ভান ! আরে বাবা দিবি কিনা সেটাতো বল, সেটা বলছে না! না দিলে, না বলে দিলেই হত। আর গরীব অসহায় মানুষগুলানরে ওরকম করাই ওদের স্বভাব ! আসলে গরীব মানুষদের বলার লোক নাই, তাই এরম। শালার বিরোধি নেতারাও তো ওরকমই, তোর হয়ে কতা বলে ঠিকই যখন ভোটে জিতে ক্ষমতার গদিতে বসে, তখন তাড়াও একই পইন্থা করে বসে। মনে হচ্ছিল। একটা নিশ্বাস নিল সুলেমান, মনে মনে বলল, আর কারে ভালো কমু? কারেই বা বিশ্বাস করমু? এই দুনিয়ায় ভাল মাইনষি নাই কেন আছে, তবে হাতে গোনা শত করার অংকের মতন। হাজারে দশটা মিলে।

  সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতই হতে লাগল। ফাঁকা তিস্তা চরে মাঠে কিছু কুকুর শেয়াল তাড়া করছে। ঘেউঘেউ করে পিছু নিল কুকুরের একটি দল। ঘেউঘেউ আওয়াজে তা বোঝা গেল।

হাত-পা চোখেমুখে জলদিল পুজার মা মালতি। মুছতে মুছতে  হাই তুলছে , আহ্বা..... করে উঠল।আর বলছে, কি যেন বলছিলি সুলেমান। এবার বলো। চা, দিয়েছে পুজারা?  এই পুজা কাকুকে চা দিয়েছিস তো, মা?

পুজা রান্না ঘর থেকে বলল, হুম, মা। সে তখন কড়াইএ খুন্তি  নাড়ছে। পটল ভাজা করছে। ডাল একটু আগে হয়েছে! ডাল আর পটল ভাজা ভাত করছে পুজা! পুজার মা পুজাকে বলল, রান্না শেষ হয়েছে তো মা,! তোর কাকুটা আছে একসাথে খাই।

সুলেমান বলল,  না না বৌদি আমি কিন্তু খাব না!  তোমরা খাও। মালতি বলল, খাও কিরে এটা তো তোমার বাড়ি তাই না! বন্ধু থাকলে হয়তো, কত কত আনন্দ করতিস, গল্প করতিস! আর বলতিস বৌদি ভালো করে দুকাপ চা দিয়ে যাও তো! নাহলে কষা কষা খাসির মাংসের কথা! বলতিস আজ কবজি ডুবিয়ে খেয়ে যাব। তোর মনে আছে সুলেমান, একবার বিজয়াদশমীর হালযাত্রায়, তুমি বললে না আজ বৌদি কবজি ডুবিয়ে খেয়েছি, জীবনে স্মরণীয় থাকবে। এমনভাবে বলছে মালতি যেন তাদের পাশে বসেই গল্প শুনছে তার স্বামীও! আসলে কিন্তু তা নয়। এই সময় সুলেমান বলল, বৌদি ওসব থাক। ,। আসল কথায় আসি।কি জন্য ডাকছিলা হেই কথা কও। আসলে সুলেমানের মন এখনও কাঁদে বন্ধুর জন্য।

সুলেমান জাতে মুসলমান ঠিকই,  অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল রয়েছে! তার কাছে পুজার বাপের মতো  মনুষ্য ধর্ম ও কর্তব্যবোধ সমান ভাবে মেনে চলে। পুজাদের মতো অসহায় পরিবারটা পাশে সব সময় দাড়িয়েছে, শুধু আপন বন্ধু বলে নয়। শৈশব থেকে তিস্তা পাড়েই পুজার বাপ আর সে খেলা ধূলা, বড় হওয়া স্কুল জীবন কেটেছে!!

অস্বস্তির মধ্যে স্বস্তির বোধ আইতাছে বৌদি, দ্যাওয়াটাত মেঘ ভীড় করতাছে,  ঝর বৃষ্টি নামবে বুঝি , আইজ যাই বৌদি! অন্য একদিন আইমু। এহন তো আর সময় কম, জমিনে জল জমলে,  কাইল থেকে আবার রোয়া রোপন লাগবো, বিচন তুলতে হইব, জমি চাষ দেওনের লাগব। কি করব! সারা বছরের খাওয়া তো জোগাড় করন লাগব এইডাই সময় ! ও কত্তদিন হইল বৃষ্টি নাই!মাটি যারা যারা রোপন করছিল, তাদের জমিন মাটি ফাটা ফাটা হইছে!  আইলে ভালাই হয়।

----হুম! তাই তো রে সুলেমান। জীবনটা একটা চক্রকার, ঠিক যেমন গরমকাল পেরিয়ে বর্ষা, শরৎ যাবে হেমন্ত আসবে! শীত আসবে তারপর আবার বসন্ত, তারপর আবারও গ্রীষ্ম পেরিয়ে বরষা। কখনও জোয়ার, কখনও ভাটার!  জীবন চক্রে সবই থাকে আর যে মানুষ গুলো চলে যায়, সে আর আসে না ফিরে।  শুধু এটুকুই পার্থক্য।

....বৌদি হক কথা কইছ। এইটাই আল্লাহর বিধান।

......আল্লাহ আর ভগবান যাইহোক,  সবাই যেন বিধিবাম। এত দিন থেকে ভেসে সংসারটা আগলাচ্ছি, কই আছে? আহা করে হাই তুলে, চোখে জল পড়া আঁচলে মুছতে মুছতে বলল। বলল, আর ভগবান? আছে ওই বড়লোকের ঘরে!ওর  যা চায় তাই করতে পারে টাকার জোরে। বাদ দেয় সে সব সুলেমান।

আগে পুজা শিবুকে দেখল মালতি ! কারণ তাদের আড়াল করে আলোচনা হবে মনে হয়, শিবু তখন বিছানায় ঘুমিয়েছে,বেচারার খাওয়া হয়নি তখনও! মা আর সুলেমান কাকু গল্প করছে, তাই সে বিছানায় । পুজা কল পারে, হা পা ধুতে গেল।
মাসদুয়েক আগে একটা ছেলে এসেছিল, ছেলেটা সংবাদ পত্রে কাজ করে! আমার মনে হয় পেরেম টেরেম আছে, তুই একটু খোজ করে দেখিস তো সুলেমান! আমি মেয়ে মানুষ, আমার দ্বারা ওসব হবে নারে।
-----ও! হেই কথা। আমি একদিন শহরে গিয়েছিলাম, কি কাজে ঠিক মনে কইরতে পাচ্ছি  না! তবে, সে দিন ওরা রাজবাড়ী দীঘির পাশে বসে গল্প কইরছে। ভাবলাম থাক! এ বয়সে ছেলে মেয়েরা এরকমই করে। তারপর একদিন  ছেলেটার সঙ্গে দেখা কইরলাম৷ আলোচনা হল, বুজলাম ওরা দুজন দুইজনকে ভালোবাসে। তোমাকে বলাই হয়নি বৌদি। ওর বাড়ি গিয়েছি, বাড়ি শিলিগুড়ি, শিবমন্দিরের ওইদিক।

-----আমার ঠিক এই জায়গাটায় ভয় হচ্ছিল রে সুলেমান।

----ভয়ের কি আছে বৌদি? কওনে! বিয়ের কথাই আলোচনা কইরত  হইব।তোমার কি মত বৌদি?

----- আমি কিছু বুজে উঠতে পারছি নারে সুলেমান। ভাবছিলাম একটা ভালো মাস্টারি চাকরি ছেলে দেখে বিয়ে দেব! কি হল! আর কি ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

-----আমার মইতে বিয়ে ঠিক কইরা ফালাই ভালো। ভালোবাসা আছে ওদের মইধ্যে! তখন আবার কি না কি হয়!

......ঠিক আছে সুলেমান! তোর হেফাজতে দিলাম মেয়েটাকে। তুই যেটা ভালো বুজিস, সেটাই করিস।

----আমি আর কি বৌদি? সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আইজ উঠি। দ্যেওয়াটাত মেঘ ছড়াইতেছে! যাই! বৃষ্টি আইবো।

বিয়ে তে মত দিল মালতিও। শুধু আলোচনা দুপক্ষের অর্থাৎ দুবাড়ির সময়ের অপেক্ষা। তারপর বিয়ে। চারহাতের ফার্স্ট ব্র্যাকেটক্লোস। পুজা তার বিয়ের ব্যাপারটা কলপাড় থেকে সব শুনল।পুজার মা মালতি পুজাকে ডাকল,  এই পুজা, পুজা তোর ভাইকে ডাক নারে মা। আয় রান্না ঘরে আয় খাওয়া দাওয়া  সেরে নিই।বৃষ্টি আসার আসার উপক্রম হয়েছে, তাড়াতাড়ি আয়।
শিবু ও পুজা রান্না ঘরে এল, পুজার মা থালা ভরা ভাত সাজিয়েছে তিনটে থালায়। খাওয়া হল সবার।

জোরদার বৃষ্টি শুরু হল, এদিকে আকাশটা ফুটছে চারাং চারাং করে, কোথাও হয়তো উল্কা পিন্ড খোসে পড়ল বুঝি। যে দিকটা পড়ে সেখানে কয়ে বলে যায়, একে বারে পুড়ে ঝলছে যায়! গতবছর এক বিকেলে সুলেমান দের নারকেল গাছটায় পড়েছিল, পোয়াল পুজিটা একবারে ছাই হয়ে গিয়েছিল, গোরু রাখার জায়গাটা ছিন্ন ভিন্ন হয়েছিল! সুলেমানদের কালো গাইটা তো সেই উল্কা পাতের শকে মারা যায়,,ও গাভীটা কি না ভালো ছিল। দিনে লিটার চারেক দুধ দিত! এখন দুধের যা অবস্থা গোয়ালরা অর্ধেক দুধে অর্ধেক জল মেশায়। ও শ্বশুর মশাই থাকতে আমাদের তিনটে বড়ো বড়ো জার্সি গোরু ছিল, সেই ভহাবহ বন্যায় দুটো গোরু কোথায় চলে গেল, ভেসে গিয়ে হয়তো কোথাও আশ্রয় পেয়েছে, কিংবা মারাও যেতে পারে! তবে বাড়ি  যে গাভীটা ছিল, সে অবশ্য ঠিক অবস্থায় ছিল, বেচারাটারও আমাদের সঙ্গে বাধে দিন কেটে ছিল,  না খাওয়া অবস্থায়! আর বাছুরটা জলে ভিজে জ্বরের দাপটে মারা গেল। কি কান্না? ও ।সে ভাবা যায়। ওরাও মায়াবি জীব। পরে কিন্তু বাছুর ছাড়াই দুধ দিত। ওই গোরু গুলো নাকি বাছুর ছাড়াই দুধ দেয়!

পুজার মা রা শুয়ে পড়ল! পুজার মালতি ভাবছে
সেদিনের কথা! পুজার বাবা থাকলে হয়তো বলত পুজার মা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়! কালকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙ্গতে লাগবে! শশীবাবুদের বাড়ি গিয়ে জমিতে হাল দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে লাগবে! জমিতে ধান বুনতে হবে। এখন আর জমি কই? মানুষটা বেচে থাকলেও খেটে খেতেই হত। যা হয়, জমিদার বাড়ির দুর্দিন। আহ্া........।।