নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

দীপাবলি সংখ্যা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দীপাবলি সংখ্যা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

দীপাবলী (দ্বিতীয় সংখ্যা) এর সূচীপত্র






মেশকাতুন নাহার 

রূপবিলাস মণ্ডল

শাবলু শাহাবউদ্দিন

অনোজ ব্যানার্জী

সুমিত মোদক

অমিত কুমার জানা

রেজাউল করিম রোমেল

অঞ্জলি দেনন্দী

শাহীন রায়হান

জিয়াউল আলম ফারুকী

শম্পা সামন্ত

ভীষ্মদেব সূত্রধর



বিশেষ ঘোষণা:

আসছে নিকোটিন ২.০ দ্বারা নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" প্রতিদিন সকালে প্রকাশিত হবে ।দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসামাজিকতার বিরুদ্ধে,শাসকের বিরুদ্ধে ..যেকোনো প্রতিবাদী কণ্ঠ কে সাদরে স্বাগত ।

"কলম এবার বন্দুক  হবে,বারুদ হবে কালি, 

"রাজা তোর কাপড় কোথায়?"বলে সবাই না দিয়ে হাততালি "




রেজাউল করিম রোমেল

 কাশফুল


শরতের আগমণে
ফুটেছে কাশফুল,
ফুলে ফুলে ভরে গেছে
অপূর্ব কুল।

তোমাকে দিলাম
আমার প্রিয় কাশফুল,
যত্ন করে রেখ
কোরো নাকো ভুল।

পথ ঘাট মাঠে প্রান্তরে
ফুটেছে কাশফুল,
শরতের এই অপূর্ব ফুল
দেখতে কোরো না ভুল।

অঞ্জলি দেনন্দী

 দীপাবলী




ঘোর অন্ধকার।
অমাবস্যা।
মা কালী, সাকার।
আঁধারের তপস্যা।
কালো রূপে বিরাজিতা দেবী।
ভক্তিতে তাঁর শ্রীপদ সেবী।
দীপ জ্বালিয়ে দিই।
আশিস চেয়ে নিই।
লোভের দিই বলী।
জবায় দিই অঞ্জলি।
তারায় সাজে গগণ।
পৃথিবী ধ্যানে মগন।
বড় পুণ্যের লগণ।
ফুল, ফলে ভরে পূজার ডালি।
জয় শ্রী মা কালী!

জিয়াউল আলম ফারুকী

 বোধ




অবাক হয়ে শুনি
রক্ত কথা কয়,
কূল হারা নাবিক
ভাংগা মাস্তুল অঁকড়ে
খুঁজে নতুন দিন।

দিন আসে দিন যায়
গারদবদ্ধ শালিক
ধান খুঁজে মাঠের পর মাঠ,
আস্ত খাঁচাটায় যে পাখি
কাঁতরায় মুখোস আড়ালে।

দূর দিগন্ত হতে হয়ত
কেউ আসবে,পাশে বসবে,
দুয়ার খুলে বলবে,
বনের পাখি তুমি খাঁচায়
কেন!কী করে উড়ে যেতে হয়?

অতঃপরএকটি সবুজ
খামে বারতা আসুক
বনের পাখি,মনের পাখি
মুক্ত আকাশ হোক
তোমার কপোতি চারণ।

ভীষ্মদেব সূত্রধর

 খোঁজ, স্বপ্ন ও সংজ্ঞা 


আফ্রোদিতি'র খোঁজে মহল্লার গেরস্তের বাড়ির খবর রাখিনা
একে একে চলে গেছে...বিবর্ণ সকাল আমার একার
ভাঁজা খেয়েই আমি তৈলাক্ত শিথিল! 
ঘন্টার পর ঘন্টা টেবিলের পায়ার কথা ভাবি
চারপায়ে হেঁটে চলা জন্তু আর জোনাকি
ভোরের কাক প্রেমিক হয়ে 
উৎকৃষ্টতর নীল বেদনায় ঝুলে পড়ে বৈদ্যুতিক তারে
একটি আত্মহত্যা এবং হন্তারক সন্ধ্যারতির দীপ্যমান মুখ।
বন্যপুষ্প-সুরভিত উত্তপ্ত বাতাস
ঘিরে অক্ষরাদি ভেসে যায় প্রদত্ত উঠোনে
নোনাজলাবদ্ধ ওষ্ঠাগত দ্বিপ্রহরে।
পিছনের পুকুর থেকে অনুজীব জলপরী
কুকুরের মত্ত সহবাস
চোখ ওঠা লাল চোখ
জল ঝরা হাতা
আমি ধর্ণা দিইনি নদীর বুকে অপ্সরা নেমে আসে 
কারো বুকে
কারো জঙ্ঘায়
ইপ্সায়!
ভীষণ টিটকারি,  ভাঙা আয়নায় সিলভার প্রলেপ
আমার মুখোমুখি 
আমি আদৌ কোন কিছু দেখি
বারবেলা ঘুমিয়ে ক্লান্তি জমলে
আমিও চাঁদ ছুঁতে ছুটে যাই স্বপ্নে-মদিরায়।
কিছু ওষুধের পরিত্যক্ত খাম
পুরান টর্চ
সাহসের পর দুঃসাহসের ঘাম অবশেষে টেনে তোলে চাটি মারে। ধুর।


 

শম্পা সামন্ত

 কুমারীর আলিঙ্গন


ধীরে ধীরে আমি মৌন মন্থর আলিঙ্গন করছি কোনো বৃহদায়তন পান্থ পাদপের চরণ।
আর সেই আলিঙ্গন এক আকাশের গায়ে চাঁদের ছায়া।
যে রাতে ঘুমিয়ে থাকার কথা ছিল সে রাতে আর ঘুম এলোনা।
দীর্ঘকাল যেন সূর্যের নীচে শুয়ে থাকা যাপন।
আর কম্পিত নি: শ্বাস প্রবাহিত হচ্ছে।
আমি এপর্যন্ত যা জানি তা করা উচিত হলনা আর যা যা জানা নেই তা যেন অপটু হতে সেরে ফেলছি। 
এক পটু শিকারির মত।
আমি যা যা দেখিনি তা আমার ভাবনা।
আর যা ভেবেছি তাও শরীরি কল্পনা।
আর সবুজ বনানী ঘিরে আমার হারিয়ে যাওয়া।
অস্তিত্বহীন। নাম।

সাকিন

অসুস্থতা তোমার পারগতাকে চাগিয়ে তুলতে পারে  অকর্মন্য এক জীবন খুঁজে পেলে।
লাল রঙা গোধুলির মাঝে এই প্রেম ভ্রূপল্লবিত।
ছায়ামুখ যেন আঁকাবাঁকা পথময় ছড়িয়ে।ঐ আলোময় মুখ ঘিরে আমার অনুভব।এই ক্লিশে হয়ে যাওয়াস্মৃতি মেদুর গতি।আর হাজার বছর আমি টিকে থাকি।
বিষাদের আঁধার টুকু নিয়ে, বেরসিকের মত।আর ক্ষতগুলো সানিয়ে নিচ্ছে তরবারি।
এখন একটা সঙ্গী পেলে পারাবার পেরোতে পারি।
একটা অশ্লীল কবিতা লিখতে অঙ্গীকার করি। 
তুমি কী আমার সঙ্গী হবার প্রতিজ্ঞায়  হাত ধরবে?

শাহীন রায়হান

 তোমার বিরহ বেলুন 


মনের উঠোনে দাগ কেটে কেটে
প্রজাপতি রং সারাদিন আনমনে এঁকে যায়- 
মৃত প্রায় বিষখালী হরিণঘাটার ধূ ধূ বালুচর 
সর্পিল পায়রার সমুদ্রগামী ফেনায়িত লাল মোহনা
এক বিকারগ্রস্ত জলময়ুরীর ছবি। 

পুরনো স্মৃতির ঝলসানো ক্যানভাস থেকে 
পলেস্তরার মতো খসে পরে
আলুথালু চিরচেনা স্বপ্নীল দুটি হাত-

বেখেয়ালি মন হেঁটে যায়
নদীমুখী জল থৈ থৈ কালমেঘা খাল পেরিয়ে 
বকমুখী নলটোনা ঘাটে। 

বুকের চিকন সরল রেখায় থেমে থেমে দোলখায়
এক দিকভ্রান্ত দুর্ভাগা গো-শালিক
তার জরা চোখে বরাবর বেহিসাবি আমি 
জীবনের নতুন পুরনো সব হিসাব মিলাই 

তারপর পীতরঙা পৃথিবীর কোমল নিতম্ব ছিঁড়ে 
জেগে ওঠে ঘুমন্ত লাউ মাচা, দূর হিজলের বন
আমার লাজুক মনের ভাঁটফুল দাওয়ায় 
ঝড় তোলে পশ্চিমা বাউরি বাতাস
আর পলাশের লাল পাপড়ি ছুঁয়ে নীরবে উড়ে যায় 
তোমার বিরহ বেলুন।

অমিত কুমার জানা

 সভ্যতার ভিত



আমরা যখন ইঁট হয়ে থাকি
হতবাক হয়ে চেয়ে দেখি
তোমাদের কি নিষ্ঠুর মানবিকতা!
হেয়জ্ঞান করে অবজ্ঞাভরে
লাথি মেরে সরিয়ে দাও সুদূরে,
তাই মোরা নিক্ষিপ্ত হেথাহোথা।

পুনরায় স্ব স্ব প্রয়োজনে,
উন্মত্ত হও আমাদেরই অন্বেষণে।
আমাদের অগণিত সহোদরে
একসাথে রাখো জড়ো করে।
গড়ে তোল অট্টালিকা গগনভেদী,
স্তরে স্তরে সজ্জিত মোরা বহুদূর অবধি।

যাদের দিয়ে গড়েছো সভ্যতার ভিত,
তাদের অবজ্ঞা করো না কদাচিৎ।
সভ্যতার ভিতে যদি ধরে ফাটল,
নিষ্ঠুর শাসকের গদি হবে টলমল।

সুমিত মোদক

 জ্বেলে যায় দীপ



অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে বার করে নিতে হয়
সামনের এগিয়ে চলার পথ ;
পথিক বার বার পথ হারায় ;
তবুও পথে নামে পঞ্চপাণ্ডব ও পাঞ্চালী ;

ঘোর অমাবস্যায় তন্ত্র সাধনায় মগ্ন অঘোরী-জীবন ;
গভীর জঙ্গলে থেকে উঠে আসে প্রেত-তত্ত্ব ,
মহাকাল …
অথচ , মুখোশের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যায় ;
দিকে দিকে চুরি হয়ে যায় শ্মশান ;
কেবলমাত্র পড়ে থাকে আধপোড়া চিতাকাঠ ,
ফুটোকলসি ;

রাতচরাপাখি গুলো রাতের অসুখ দেখে
ভয়ে ভয়ে থাকে ;
এই বুঝি আকাশ থেকে ভেঙে ভেঙে পড়বে 
সহজ সরল মানুষের কান্না ;
সে কান্নার শব্দ গুলোকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা
তাদের নেই ;
সে কারণে অপেক্ষায় থাকে নতুন ভোরের ;

ডোম হরিশচন্দ্র এখনও খুঁজে বেড়ায় 
একটা শ্মশান ;
চারপাশে তার হাজার হাজার মৃত দেহ ;

এমনই অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই হেঁটে যায়
গৌতম বুদ্ধ ;
খুঁজে পেতে বোধিবৃক্ষ , সুজাতা পায়স …

এতো কান্না , এতো অন্ধকার , এতো নৈশব্দ
তবুও করা যেন দিকে দিকে , দিগন্তে 
জ্বেলে যায় দীপ ;
আলোয় আলোয় ভরে উঠছে সনাতন ভারত ভূমি ।

অনোজ ব্যানার্জী

 দীপাবলী


দীপ চায় শিখা,শিখা চায় দীপ,

আঁধারেতে তাই,আলো জ্বেলে যায়।
কালো মেয়ে আসে,বাংলা তাই হাসে,
সাজো সাজো রব,আলোর বন্যায়।

দুর্নীতি যত,যত অন্যায়,
এসো মাগো তুমি,দাও মুছে সব।
অসুরের হাত,দাও ভেঙে দাও,
শুনতে তো চাই,হাসি কলরব।

ছলনার ফাঁদে,দেবতারা কাঁদে,
বাঁচাবে কে আজ,স্বর্গের সুখ?
রক্তের বন্যায়,পথ,ঘাট ভাসে,
দেখাবে কে আজ শান্তির মুখ?

ডাকি মনেপ্রাণে এসো শ্যামা মা,
ওই অসুরদের দাওগো বলি,
আমাদের ঘরে ঘরে তাই আজ
দেবো জ্বেলে শুভ দীপাবলি।।

শাবলু শাহাবউদ্দিন

 টিএসসির চত্ত্বরে


 

টিএসসির চত্ত্বরে রবীন্দ্রনাথ ভেঙে হয়েছে খান খান

শিক্ষিত সমাজ রাখল না তার আজ মান-সম্মান

কাজী নজরুলের কণ্ঠে বাজে না আজ বিদ্রোহের গান

কবি সাহিত্যিকেরা হয়েছে বড়ই বেইমান

তাদের আছে দেহ, মণ্ডু খুঁজে পায় না কেহ্

তবে কে দেখবে আর এ দেশের সম্মান !

আইনের বেড়া জালে, জেলখানার ভয় পেলে

হবে কি স্বাধীন ? এ দেশের মান অভিমান !

বাঙালি হয়ে জন্মেছি মা, মানুষ হবো কবে ?

শিক্ষিত তো হয়েছি মা, আমরা সবাই ঘরে ঘরে

কে দিবে তার আসল প্রমাণ, স্বাধীন বাংলার তরে !

 

রূপবিলাস মণ্ডল এর কবিতাগুচ্ছ

 



বুদবুদ

  

কোন এক সন্ধ্যায় তোমার

হৃদয়ের‌ উষ্ণ  প্রস্রবণ ,

উষ্ণতা আমায় ঢেলে দিয়ে

শীতলতা করেছ বরণ।

জীবনের ধারাপাত জুড়ে

যোগ বিয়োগের এই খেলা ,

বিষন্ন  আকাশ বুকে করে

বিশ্ব পথে হেঁটেছি একেলা।

ক্ষণিকের অতিথির মতো

কিছু পথ ধরেছিলে হাত,

হাত ছেড়ে কোথায় হারালে,

কুসুমিত শুভ্র প্রভাত!

আমার প্রগাঢ় অনুতাপ

তোমায় নামায় মেঘ করে,

বৃষ্টি, সে দূরে সরে রয়

স্বপ্নের ক্রন্দসী পারে।

নিত্য এ আসা যাওয়া খেলা

বুদবুদ ঊর্মিমালায় ,

প্রেম আর অপ্রেম মিলে

জন্মায়, অসীমে মিলায়।

 

 

 

 

 

 

মানবতার ফেরিওয়ালা

 


 

শৈশব আর কৈশোর গেছে চুরি

স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে যৌবন,

উদ্ভ্রান্ত এ সময়ের অভিঘাতে

স্বপ্নের এক ফেরিওয়ালা প্রয়োজন।

সে স্বপ্ন  হবে মানবতা প্রতিরূপ

জীবনের তরে সঞ্জীবনীর মতো,

দুচোখে আঁকবে স্বপ্নের  অঞ্জন

দূরীভূত হবে হতাশা-দুরাশা যতো।

 

দিকে দিকে আজ বিপন্ন মানবতা

আর্ত কান্না বিষিয়েছে প্রতিদিন,

মানবতা হীন জীবন পশুর মতো

ফেরিওয়ালা করো মানবতা উড্ডীন।

গান্ধী ,নেতাজী যে স্বপ্ন দেখেছিলো

সেই স্বপ্নই বয়ে নিয়ে চল তবে,

সবাইকে যদি স্বপ্ন দেখাতে পারো

দেশ জননীর স্বপ্ন সফল হবে।

যে স্বপ্ন খোঁজে জাতপাত হীন বিশ্ব

মানবতা আনো,যেখানেই খুঁজে পাও ,

ঈর্ষা এবং হিংসা মুক্ত পৃথিবী ,

যুদ্ধ চাইনা, যুদ্ধ থামিয়ে দাও।

সাম্যের তরে এক হোক গোটা দুনিয়া

গভীর স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাক মন,

স্বপ্ন দেখুক শ্রমিক  মজুর কৃষক

পৃথিবীটা হোক আনন্দ নিকেতন ।

 

আসল কথা

 


 

আসল কথা বলতে গেলেই

ভরিয়ে দিচ্ছে নকল কথায় ,

সবাই হয়ে মন্ত্র মুগ্ধ

বোকার মতো হাততালি দেয়।

তুলছে না কেউ  আসল কথা

ভুলছে সবাই অভিনয়ে,

এরা ভাবছে ওরা বলুক

সত্য ডোবে অবক্ষয়ে।

 

কার প্রাপ্তি কে হাতড়ায়

কার অধিকার ধুলায় লুটায় !

নকল লড়াই বাধিয়ে  দিয়ে

নেপোয় শেষে  দ‌ই মেরে দেয়।

তোমায় যারা শোষণ করে

তাদের নিয়ে মাথায় তোল,

নিজের কথা, দেশের স্বার্থ

তোমায় ভোলায়, তুমি ও ভোলো।

 

এসব প্রশ্ন কে করবে?

বলবে যারা নেশার ঘোরে ,

প্রতিবাদের ঝাণ্ডা ঢেকে

সহজ পথে স‌ওদা করে।

সত্যি কথা, আসল কথা

সবাই মিলে বলতে হবে,

না হলে ওই শোষক শ্রেণীর

মর্জি মতো বাঁচতে হবে।

 

মেকি কথা মিটিয়ে দিয়ে

তোল সবাই  আওয়াজ তোলো

আসল প্রশ্ন উপেক্ষিত,

আসল কথা সবাই বলো।

মেশকাতুন নাহারের কবিতাগুচ্ছ

 শরতের আহ্বান

শরৎ বাবু বলছে ডেকে 
যাবে আমার সাথে? 
শিউলি ফুল মালা গেঁথে 
দেব তোমার হাতে।

শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে
হাঁটবো দুজন মিলে, 
শাপলা হাসে চেয়ে দেখ
দুপুর বেলা ঝিলে। 

ইচ্ছে করে মেঘের দেশে
দেই দুজনে পাড়ি, 
নীল আকাশটা ছুঁয়ে দেখব
চড়ে হাওয়াই গাড়ি।

নদীর তীরে ফুলে ফুলে
কাশবন গেছে ভরে,
আসমানি রং শাড়ি পরে
থাকবে হাতটা ধরে।

মাঝে মাঝে উড়ে যাবে 
শালিক ময়না টিয়ে,
সুখের তরী বাইবো রানি
শুধু তোমায় নিয়ে।


সুখের চাবি


ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ পড়ে ভাবি! 
জীবনের ঢের দিন হয়ে গেছে পার,
অর্থকে ভেবেছি সুখ দুয়ারের চাবি 
মৃগতৃষ্ণায় ছুটে যে খেলাম আছাড়।
আপন কে দূরে ঠেলে পেয়েছি বিষাদ 
চারপাশে শূন্যতায় খাঁ-খাঁ মরুভূমি!
ছুটে চলেছি শুধুই গড়তে প্রাসাদ, 
সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভুল করে  গোঁয়ার্তুমি।

দু'চোখের আয়নাতে ভাসে কত ছবি! 
দিশেহারা ক্লান্ত যাত্রী পথ খুঁজে চলে, 
আঁধার শেষে উঠবে নিশ্চয়ই রবি, 
হৃদয় কানন পুনঃ ভর্তি হবে ফলে।
ব্যথা সব ছুড়ে ফেলে বাঁধি নব আশা, 
সবচেয়ে বড় সুখ শুদ্ধ ভালোবাসা।

সুখের তালাশে


ও পারে সুখের ঠিকানায় 
এ আমি তালাশে নিরালায় 
কি এক জটিল মায়াজালে,
এ মন প্যাঁচালো কুটচালে। 

সে পীড়া মনের মোহনায়, 
এ আঁখি জোয়ারে কান্নায়।
সে জ্বালা সবার অগোচরে, 
তা ক্ষত হয়েছে গহ্বরে।

ও মাঝি নাওনা কিনারায়, 
এ আমি ভাসছি নিরাশায়।
পা ফেলে নদীর লহরীতে,
সে চলে গতির বিপরীতে।

না জেনে নেমেছি তটিনীতে,
এ মোর বেদনা ধমনীতে। 
কি করি বলো'না প্রতিকার,
সে হেতু ভাবনা লেখিকার।

ও মাঝি ধরো'না দুটিহাত
এ হৃদে লাগছে করাঘাত
সে আমি করছি আহবান, 
এ প্রাণ পেয়েছে জ্ঞানদান।



ধ্বংসযজ্ঞ 


আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ যেন চলছিল অন্তর প্রদেশে,
তীর ধনুক কিংবা বর্শার আঘাত নয়!
যুদ্ধাস্ত্র ছিল নিউক্লীয় বোমা! 
এ ধ্বংসযজ্ঞ আরেকটি বার হিরোশিমার কথা মনে করিয়ে দেয়,
প্রাণচঞ্চল হিরোশিমা নাগাসাকি শহর হয়েছিল পঙ্গুত্বের গহ্বর।
ঠিক সেইরকমই যেন আকষ্মিক ভাবে মর্মদেশ কম্পিত হয়ে ওঠে! 
স্বপ্ন শহর হলো মূর্ছিত! হলো নিষ্ক্রিয় পাথর!
যে হৃদয় নগরীতে নির্মিত ছিল ব্যাবিলনের উদ্যান,
ধুলোয় মিশে ধ্বংস স্তুপে আজ হয়েছে ম্রিয়মাণ।
সেখানে আজ অঙ্কুরিত হয় না সবুজের সমারোহ,
বাসা বাঁধে না কোনো পাখি, 
বাতাসে ভেসে বেড়ায় না মিষ্টি সুরের মূর্ছনা।
বয়ে চলছে সেথায় শব্দহীন শুকনো অশ্রু প্রপাত। 
শ্যাওলা জমে স্যাঁতসেঁতে হৃদয়ের কুঠুরিটা, 
হিরোশিমা আর জাগবে না,আর জাগবে না, 
পাবে না ফিরে সেই যৌবনের মুখশ্রীটা।


কঙ্কাবতীর দুঃখ 


এক যে ছিল দস্যি সর্দার দেখতে ঠিকই মানব,
কিন্তু সে যে আঁধার রাজ্যের মহা একটা দানব, 
কঙ্কাবতী কে আনে ধরে এমন বিকট মূর্তি, 
অনুরাগের ছোঁয়া পেতে ঘটায় অদ্ভুত কীর্তি।

কঙ্কাবতী তোমায় আমি রাখবো রানি করে, 
হীরা পান্নার মালা দিয়ে দেবো তোমায় ভরে।
রাজকুমারীকে নাকি সে করতো বহুত পেয়ার,
কারাগারে বন্দী করে চালায় ভীষণ প্রহার। 

দৈত্য সম্রাট বুঝে না যে রাজকুমারীর মন,
নারকীয় তাণ্ডব লীলায় করতো আক্রমণ। 
মিথ্যাচরণ আর লুকোচুরিতে করে নিত্য খেলা, 
রাজকুমারীকে কয়েদ রেখে 
বসায় জলসার মেলা।

সোনার পালঙ্কে ঘুম কি হয়! দৈত্য রাজের ভয়ে,
কত পালানোর উপায় খুঁজে চুপিচুপি সংশয়ে।
শক্তি দিয়ে কেনা যায় কী খাঁটি ভালোবাসা? 
দোহাই লাগে দৈত্য সম্রাট করিস না আর তামাশা।

দীপাবলী (দ্বিতীয় সংখ্যা )




 "দীপাবলি" (সংস্কৃত: दीपावली) নামটির অর্থ "প্রদীপের সমষ্টি"। এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। দীপাবলির অনুষ্ঠানে সারি-সারি প্রদীপের আলোতে স্বর্গের দেবতাকে গৃহে বরণ করে নেওয়া হয়। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।দীপাবলির মাধ্যমে উপনিষদের আজ্ঞায় এই কথাটা খুবই সদৃঢ় ভাবে চরিতার্থ হয়ে ওঠে 

অসতো মা সত্ গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।
ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ॥

অর্থাৎ, অসৎ হতে সত্যে নিয়ে যাও,
অন্ধকার হতে জ্যোতিতে নিয়ে যাও,
মৃত্যু হতে অমরত্বে নিয়ে যাও।
সর্বত্র যেন ছড়িয়ে পড়ুক শান্তির বার্তা।

 তাই নতুন করে আবার আপনাদের প্রিয় কলমের সঙ্গে নতুন ভাবে আলো জ্বালাতে নিকোটিন 2.0 ফিরলো প্রায় পাঁচ বছর পর নতুন ভাবে ।আশা করি সবার এই সংখ্যাটি ভালো লাগবে ।আগামীতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আরো আরো বেশি করে লেখা পাবো বলে আশা রাখি সকল লেখক ও কবিদের থেকে এই কুলষিত সমাজকে আরও আলো জ্বালিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবার কলম আরও শক্ত করে তুলতে আমাদের আরও একবার প্রচেষ্টা। 


আগে যেমন পাশে ছিলেন আবারও সবাইকে পাশে পাবো বলে আশা রাখি। সকলে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন যাদের লেখা একসংখ্যায় স্থান দিতে পেরেছি যারা নিকোটিনকে ভালো বেসে পাশে আছেন পাশে ছিলেন সবাইকে।

                                                 ধন্যবাদান্তে ,

                                                 জ্যোতির্ময় রায় 

                                              নিকোটিন ওয়েব ম্যাগ চিফ এডিটর 

কবিতা -দীপাবলী সংখ্যা









                   *দীপাবলি*


                        শাল্যদানী



এই আলোতে নিয়নলাইট
আঁধারিয়া উৎসুক
কালো আলো লাগে ভালো
সিগারেট ছাই ছায়া দোলে।
রংমশাল
আলাপন মেহেন্দি আঁকা হাত
তাতে আমি লেখা।
এই আমিটা আলোর দিন
এই আমিটা হাওয়াই
এই আমিটা ল্যাম্ফো জ্বালা
এই আমিটা নাই
এদিনে মিষ্টিমুখ হয়ে যাক। কিন্তু
একটা আলোর বলি লেপ্টে থাকে
কান্নাখেকো রাতে আসে যায়
সে এবং তার আলো
আলেয়া
আলোর রাত।





দীপ।আ।বলী




জ্যোতির্ময় মুখার্জি





দলাপাকানো আঁশটে রোদের মশারি বেয়ে
           ক্রমশ নিভৃত অন্ধকারে
অ্যাসিডিক ক্রোমোজোমের নীলাভ আয়নায়
       আঠালো।চ্যাটচ্যাটে।আত্মঘাতী
                   কিছু আলো
বারুদপোড়া চামড়া আর রক্তের মাঝে
   স্প্রিংয়ের মতো জড়িয়ে আমাদের
             শান্তিতে ও শ্রান্তিতে
                অর্থ খুঁজে নেয়
              এ-তে-গন্ধ-পুষ্পে…..।







দীপাবলি





সঙ্গীতা পাল


আশ্চর্য শূন্যতায় ভরেছে সময়
চারিদিকে টুনির রোশনাই
এখন আর কেউ মাটির পিদিম জ্বালেনা।
চারিদিকে মানুষ চায়নিজ ফানুস উড়ায়
বিদেশি পটকা বাজীতে আকাশ মুখরিত হয়।
কোন ক্লাব কত টাকার খেলায় মাতবে,
 সবাই সবার প্রতিদন্দী আলোর স্ফূরণ।
বন্ধু লক আউটের চা বাগানের শ্রমিক দল
 হাড়িয়ার গন্ধে বিভোর হয়।
বধুনি এক্কা বা ফুলমনি ওড়াও দের মাদল নৃত্য শুরু হয়।



~*** আলো জ্বেলো "মা" ***~



               মনিকান্ত সর



হালকা শীতের আমেজ গায়ে, কুয়াশা ভেজা ভোরে,
শ্যামা মায়ের পূজা আজ, ভুত চতুর্দশীর পরে ।
শহর গ্রামের নেইকো ফারাক, মিলেমিশে এক সবাই,
আজ মাতবে ছেলে, মাতবে বুড়ো, মায়ের আরাধনায়।
মোমবাতি আর মাটির প্রদীপ, জ্বলবে সবার ঘরে,
আলোয় আলোয় কাটবে আঁধার, অনেক দিনের পরে।
পুড়বে বাজি, জ্বলবে মশাল, আকাশে রঙের মেলা,
চোখ জুড়াবে টুনি আলোয় আর ঝাড়বাতির খেলা ।
বিষাদ যেন না থাকে আর, তোমার আশীষ পেয়ে,
আঁধারগুলোকে মুছিয়ে দিও, যাবার আগে ধুয়ে ।
চাওয়া বলতে মায়ের কাছে, শুধু একটি দিন নয়,
আলো যেন সবার জীবনে প্রতিটা দিন রয় ।



                     অন্ধকারের আলো



                        জয়তী দাস





  এভাবেই পুড়ে যাও কালিমা ঘুচাতে,
  কতটুকু আলো জ্বলে মাটির সরাতে!
 
  বিছানো আসন, সামনে কলাপাতা
  চাল কলা মেখে, পরমান্ন এক হাতা
  কোথাও হাসছে শোক কলিঙ্গের মাঠ
  কোথাও কান্না ছাপায় ভরানদী থাক ।
  কেউ ডাকে চিন্ময়ী, কেউ জানে মৃন্ময়
  আমি তো দেখি তার জলেতেই ক্ষয় ।
  জবারা রাতেই ফোটে, তুমিও তো চেনো
  শিউলিকে না ঝরিয়ে বুকে রাখো বলো !
  কানা বলে যাকে ডাকি, সেকি আমায় জানে
  দিইনি জানলা খুলে, ঢাকা অন্তরালে ।
  ভাত বলে যাকে জানি,সেতো আমার খিদে
  ছড়িয়ে খায় কাক, কাদের কাদের দিলাম সিধে !
জ্বালাতে পারলাম কই দীপালীর আলো ,
প্রদীপের শিখা জানে কে রাত,আর কে কালো ।।




                দীপাবলী




           মৌসুমী ভৌমিক





শ্যামা মায়ের আশীষে জ্বলুক দীপাবলীর আলো
আলোর প্লাবনে আঁধার শেষে উদিত হোক ভালো।
তমসাচ্ছন্ন পৃথিবীর হাজার যন্ত্রণায় জমেছে গভীর ক্ষত
হৃদয়ে হৃদয়ে গ্লানি কলুষতা, মানবতার ক্ষয় অবিরত।
ভবতারিণীর শুভেচ্ছায় গৃহ আলোকিত, আনন্দের দীপ জ্বালি
প্রাণেতে বাজুক সুর, অন্তরেও বিকশিত হোক দীপাবলী।





   
        কিছু প্রদীপ




কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর



আজ একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে দাও--
ফসলের দাম না পেয়ে আত্মঘাতী চাষির,
ছবির নিচে।
কালশিটে পিঠ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া ছেলেটার
মাথার পাশে।
প্রতিরাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়া আমার মায়ের
বিছানার পাশে।
প্রচণ্ড যন্ত্রনায় ককিয়ে উঠেও ছাড় না
পাওয়া,নিশ্চিন্ত ঘুমে,আমার বোনটার
পাশে।
একটা প্রদীপ জ্বেলে দাও--
জল না পড়া দাওয়ার কোনটায়।
ফেনভাতের উপরে।
স্কুলের গেটের সামনে।
বাকিসব প্রদীপ তোমাদের।
তোমরা সাজিয়ে দাও সারা আকাশ ।



কাঠের ফুল
                     

           অসীম মালিক 





সোনাঝুরি গাছের খাটে ঘুমিয়ে সমাজ l
আশার আলো নিয়ে জেগে ,
কাঠমিস্ত্রির করাত ,ছেনি ,রাঁধা ,হাতুড়ি ...
আর রংমিস্ত্রির তুলি l 
কাঠগোলায় বসন্ত আসেনি ,
শাল ও মেহগিনি গাছের গুঁড়িতে গুঁড়িতে লেগে আছে
কোকিল পাখির পায়ের ছাপ l 
করাত কলের বাতাসে উড়ছে ,
মিহি মিহি কাঠের গুঁড়ো l
গোলায় ফুটেছে করাত ফুল ...
পলাশ ফুলের কবিতা কণ্ঠে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে
কতশত রঙিন প্রজাপতি l
কিন্তু তারাও খাটের পায়ায় শিকড় ছড়াতে পারেনি ,
তাই ঘরময় ফুটেছে কাঠের ফুল l 
জানালাটা খুলে দাও ,
ভেসে আসুক সোনাঝুরি গাছের অক্সিজেন l




         কালো-আলোময়



                   ইন্দিরা ব্যানার্জী



করালবদনা; মুক্তকেশী; চতুর্ভুজা; মুণ্ডমালা বিভূষিতা।
ত্রিনয়না; বরমুদ্রা-অভয়মুদ্রা প্রদানকারী; খড়্গ হস্তশোভিতা।।
শুম্ভ-নিশুম্ভ বিনাশকারী; চণ্ড-মুণ্ডের মুণ্ডদ্বয় খণ্ডিতা; চামুণ্ডা; শিষ্টের পালন দুষ্টের দমনে সিদ্ধহস্তা।।
স্বামীর বুকে রাখেন পা; শ্মশানে অবাধ বিচারিতা; তন্ত্র সাধনায় তুষ্টা দেবী; পূজার দিন আলোর সাজে জগৎ সাজে দ্বীপান্বিতা।।
আরাধনায় মাকে অহংবোধ ঘোচে; রিপুদমনে জাগে আত্মনিবেদন।
তনু-মন এক করি ভেদাভেদ ভুলি আত্মশুদ্ধিতে সার্থক জীবন।।
"জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী; দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমস্তুতে।।"





     শ্যামাঙ্গি মা আসে 


             কাকলী দাস ঘোষ 



আজ জ্বলে দ্বীপ হাজার জড়য়া অলংকারে ,
আজ গলে মোম হাজার  কাঁচের  ঝাড়ে ,
মুখরিত আজ আলোয় আকাশ
মাটির দাওয়া -কুটির -বাতাস ,
ফুলঝুড়ি জ্বলা লক্ষ্য ফুলকী হীরক ঝিলিকে হাসে ;
কোটি হাসির রঙ মশালে
আমার শ্যামাঙ্গি মা আসে l 





 
নজরুল স্মরণে


- অভিজিৎ পাল



মসজিদে​ বাজাই শ্যামার গান
বন্দনা গাই নামাজের সুরে
আনমনে হেঁটে চলেছেন দুখু
ডাবড় চোখে তার অদ্ভুত স্বপ্ন
এখানে কোথাও ক্লান্তি নেই
নতুনতর সীমারেখা নেই
অবিচ্ছেদ্য একবাচক নব্য অদ্বৈতবাদ
নতুনতর চেতনায়​ জেগে ওঠেন​
রুদ্রনীলাভ নজরুল ।





= * অনু-রাধা প্রাণে * =




      তপন সত্পথী




ইচ্ছে ডানায় ভেসে চলি দিনরাত
মন খেয়ালেই ঘুরিফিরি ভিন দেশে ,
সবুজ ভূমির শান্ত চরণ চুমি
দিগদিগন্তে উড়ি মেঘ গায়ে ভেসে ।
সরু পথে আছে ঘাসের মেঠো আল
নদী নালা মিশে সাগরের জল ছুঁয়ে ,
দেখো দিকে দিকে আমার সকল চিহ্ন
নিষ্পাপ চোখে দূরে আছি পথ চেয়ে !
যে কোনো গ্রামের শান্ত ছায়ায় এসো
রাখালিয়া বাঁশি ভরাবে হৃদয়খানি ,
কিংবা কোথাও শাল পিয়ালের বনে
ঝিঁঝিঁ পোকা সুরে আমার পদধ্বনি ।
শীতের সকালে শিউলির ঝরা ফুলে
ভিজা ঘাস ছুঁয়ে নীরব সবুজ প্রাণ ,
সূর্যের আলো পড়বে ঘাসের 'পরে
প্রভাত ক্ষণেই পাবে তুমি চেনা ঘ্রাণ ।
বেলা বয়ে যাবে নিয়মের পথ ধরে
নিখিলের মাঝে সজীব প্রানের রেশ ,
ঠিক অবেলায় গোধূলির লাল আভা
তোমার দুয়ারে সীমানার হবে শেষ !
নিঝুম প্রদোষ উৎসুক চুপি মন
অনু-রাধা প্রাণে আলোর অকুলান ,
অকথন যত প্রকাশ নীরব ভূমে
স্থির কনীনিক অশ্রুতে রবে ম্লান !
বহু পুরাতন কোন নির্জন স্থানে
জোনাকি আলোয় রাত হবে চুপ চাপ
ফিরে দেখো তুমি আঁধারের মুখ পানে
উজ্জ্বল হাসি নেই কোনো অনুতাপ ।



        উদযাপনে দীপাবলী



                 অনন্যা রায়



গোধূলীর শেষ আলোটাও
লেপে নেয় দিনান্তের সুখ আঁচল ভরে ।
আর তারাদের কানাকানিতে শোনা যায় পূর্ণ ইশারা ।
একে একে জ্বলে ওঠে আকাশপ্রদীপ
চোখের বারান্দায় সুখী ম্যানিকুইন
আর জীবনের সেতু বাঁধে আলোর খেয়া ।
আমার কুসুম রঙা টিপ উৎসবের বাতিদান
বিকিকিনির জীবনে নিঃশর্ত ভালোবাসার বর্ণমালা।
নিবেদনের রাজপথে যাপন মোম হাতে
হেঁটে চলে উৎসবের ভোর
তোমার চোখে উদযাপনের স্বপ্ন দেখবে বলে।






                 আলো রে, জ্বালো রে



                      গোলাম কাদের




                সেই-দিনটাই ভালো ছিল।
      বাল্যের সোনাঝরা দুষ্টুমির অমোঘ টানে
                বৃষ্টির মতো ফুলকি ঝরতো
                  পুকুরের প্রান্ত বরাবর,
       শুশতানির মাঠ হয়ে রমাদের বাঁশঝাড়
           পরিব্যাপ্ত টুকরো টুকরো আলো
    পাড়াময় হয়ে জ্বলতো নিঃসীম অন্ধকারে ।
             অশরীরী উৎপাত মনে হলেও
    মা-মাসির কন্ঠে ভালোবাসার রেওয়াজ ছিল।
        বড়োদের বকাঝকা, কাঁচা কঞ্চির স্বাদ 
            খুশিময় এপাড়া থেকে ওপাড়া
       কাঠি সাজিয়ে আলোর বিক্ষিপ্ত নিশান ।
                 সে-দিনটাই ভালো ছিল।
          দরজায় দরজায় কড়া লাগানো ঘরে
                     আলোর গভীরতা,
                       মাপা সহজ নয়
           সম্পর্কের রোশনাই ফিকে হচ্ছে ।
         অবোধরা অভিশাপ আঁকছে প্রত্যহ।
    কষ্টের নীরবতা বাল্যসখীর মতো আনমনা ।
            কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি দিনরাত!
      সীমাবদ্ধ ঘরে ছাত্ অবধি বিচরণে ক্লান্ত
   ঐশ্বরিক টানে দিশেহারা স্মৃতিদের হাত ধরে
               ঘরে ঘরে আলো খুঁজছি ।
        সেই-দিনটাই বড্ড বেশি ভালো ছিল
                 যেদিন খুব সহজেই -
কাঁচা আগুনের খোঁচাই পুড়িয়ে ফেলতে পারতাম
            অশুদ্ধ, অশুভ অন্ধকারকে!







                           অমা 

                        জয়দীপ রায় 


        আলো মাখা অমা   নিলয় ফুটে ও পজিটিভ
               রেয়ার রক্ত জমা
শ্যামবর্ণ মেয়েটি    পান আঁকা তার মুখ
         গরিব হলেও কয়লা ভেঙে,কিনত কিছু সুখ
       আলো আঁকা রোয়াক থেকে   রকেট উড়ল শেষে
       মিথ্যে নয় রুপকথা নয়      আর্ফিয়ুসের দেশে l






              মৎস্য কন্যা




              তাপসকিরণ রায়



তুমি খেয়ে প’রে ভাল আছ,
সুখে থাকতে থাকতে সময় কাটে না তোমার
ভাবো, এই কি জীবন ? শুধু খাওয়া পরা ?
সময় ও বাতাসের মাঝে দিন গড়িয়ে যাচ্ছে
কখনও মনে হয়, আমি বেঁচে আছি তো ?
নড়েচড়ে দেখি, হ্যাঁ, কিছু দুঃখ তো নেই ?
তা কি করে হয়,
শ্রাবণ দিনের বিয়োগ ব্যথার কথা সে তো ভুলবার নয়
এসো তার কথা ভাবি, পথ হারা  শিশুটার কথা,
তার ভিক্ষা পেটারার কথা ভাবি। 
তারপর একদিন তুমি ঝাঁপ দিলে জলে
কাপড় শূন্য হল তলদেশ
নাসা রন্ধ্রে ঢুকে গেলো এক মৎস্য কন্যার কথা ও ঘ্রাণ।
একাধারে তোমার রসনা ও দেহ উথলে উঠলো।
--কি করে পাবে তাকে ?
বুকের দড়ি ফাঁস খুলে তুমি জাল পাকালে
ঘূর্ণন সৃষ্টি করে ডেকে নিলে সেই কন্যাকে
আপাত সে মাছের আঁশ ছেড়ে গেলো,
তুমি জলের ধারে বসে চমৎকারী খেলা খেলছো !
তাও কিছু যেন ভাল লাগছে না --
তাকে একদিন ব্যঞ্জনায় পেয়ে যাবার ঢেক তুললে 
ভারী পেটে হজমি গুলি খেয়ে
শেষে আপাত পালক-শয্যা গ্রহণ করলে।



 





দীপাবলী নিয়ে কিছু কথা





















বাংলায় ‘দীপাবলি’, হিন্দিতে ‘দিওয়ালি’-যার সংস্কৃত অর্থ “প্রদীপের সারি”। এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র মতে, কালী হচ্ছেন অগ্নির সপ্তম জিহ্বা আর অগ্নি হচ্ছেন স্বয়ং ঈশ্বর; যা কালী বা শ্যামা নামে ভক্তদের কাছে উপস্থিত হয়। মাতৃ আরাধনার আরেক রূপ হচ্ছে শ্যামা পূজা। দীপাবলি হচ্ছে এই পূজার অন্যতম আকর্ষণ। এই দিন বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন।

হিন্দু পুরাণ মতে, দেবী কালী- দুর্গারই একটি রূপ। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মাহাত্ম্য। কালীদেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুণ্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।

উত্তর ভারতীয় হিন্দুদের মতে দীপাবলির দিনেই শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যা ফেরেন। নিজের পরমপ্রিয় রাজাকে ফিরে পেয়ে অযোধ্যাবাসীরা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে তোলেন তাঁদের রাজধানীটাকে। এই দিনটিতে পূর্বভারত বাদে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষে লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর নিয়ম আছে। জৈন মতে, ৫২৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন। ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র দীপাবলির দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এই উৎসব পালন করেন। আর্য মাজ এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন পালন করে। তারা এই দিনটি “শারদীয়া নব-শস্যেষ্টি” হিসেবেও পালন করেন।

দীপাবলি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে একটি সরকারি ছুটির দিন।

প্রত্যেক সার্বজনীন আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করে। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। নিজের ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমঃকে দীপ শিখায় বিদূরিত করার দিন। প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে- এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন- আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেছেন-
‘‘ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো
দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো, আপন আলো
সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’’

তথ্য- উইকিপিডিয়া