নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রাজিত বন্দোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রাজিত বন্দোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রুহীর পুতুল : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

    







                             ।। ৩ ।।   





            রুহী চোখ মেলে সিটে উঠে বসে মা কে সামনে না দেখতে পেয়ে চমকে উঠে আসে পাশে চাইল । তারপর দেখল মা তো ট্রেনের দরজার দিকে যাচ্ছে । সে তাড়াতাড়ি করে নেমে সেই দিকে চলতে গিয়ে হঠাৎ চমকে উঠল । বা পাশের একটা খালি সীটে সেই বড় বারবি ডল পুতুল টা শুয়ে ! তবে মাথাটা এখন আবার ন্যাড়া । বোধ হয় চুল ছিল এককালে , আজ আর নেই । তা হোক , এটা কে ফেলে গেল দেখতে হবে । সে এগিয়ে গিয়ে দু হাতে পরম যত্নে তুলে নিল পুতুলটাকে । রুহী কে অবাক করে দিয়ে জীবন্ত মানুষের মত পুতুল টা চোখ মিটমিটাল মনে হল তার ! মুখ টা হাসি হাসি । অঃ - অঃ - অঃ করে একটা খুব নীচু স্বরের আওয়াজও বুঝি শুনতে পেল সে । আশ্চর্য ! এ সত্যি জাদুর পুতুল !!  
-- রুহী ?   
মায়ের কড়া গলার ডাকে সে তড়বড় করে ট্রেনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল পুতুলটাকে কোলে নিয়ে । তার স্কুলের ব্যাগ মার হাতে । ওর হাতের পুতুল টা দেখে মায়ের সে কী রাগ ! কার না কার ! এখন যখন তখন সন্ত্রাসবাদীরা বাচ্চাদের খেলনাতেও বোমা ফিট করে দিচ্ছে , তখন কেন সে ওটা নিল ? মার প্রশ্নে কান্না এল রুহীর । সামনে দাঁড়ানো পুলিশ কাকু তার দিকে চেয়ে মিষ্টি কোরে হেসে বললে ,   
-- দেখি দেখি তোমার পুতুল টা । বাঃ বেশ তো ! পুলিশ কাকু পুতুল টা হাতে নিয়েই প্রথমে ভাল কোরে দেখে নিল সেটায় কোন বোমা টোমা আছে কিনা । তারপর জনে জনে জিজ্ঞাসা করে পুতুলের মালিক না পেয়ে রুহীর হাতেই ফিরিয়ে দিল । মা করুণ চোখে পুলিশ কাকুর দিকে চেয়ে বললে ,   
-- দেখুন দাদা ...     
তাকে শেষ করতে না দিয়ে পুলিশ কাকু বললে ,    
-- আরে না না দিদিমণি , ও আপনার মেয়েই নিয়ে যাক । কেউ যখন পাওয়া গেলনা । এতটুকু মেয়ে আপনার , দেখছেন না কত খুশী দেখাচ্ছে ওকে ।   
মা বললে ,   
-- পুলিশ কাকুকে ধন্যবাদ বল রুহী ।   
-- ধন্যবাদ কাকু ।    
পুলিশ কাকু তাকে আদর করেচলে যেতেই মা কড়া চোখে চেয়ে তাকে বললে ,   
-- বাড়ি চলো ।    
তারা দুজনে বাইরে বেরোবার গেটের দিকে রওনা হয়ে পড়ল ।   
                                                                            [ চলবে ]    

রুহীর পুতুল : রাজিত বন্দোপাধ্যায়







।। ১ ।।




-- রুহী ? ... রুহী --- কোথায় গেল মেয়ে টা , একদন্ড যদি স্থির থাকে !    
মায়ের সহকর্মীদের সাথে কথা বলবার ফাঁকে রুহী মেন রোডের ফুটপাত সংলগ্ন বড় কাঁচ ঢাকা দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে । মার ডাক কানে এলেও নড়তে পারছে না । পুতুলটার চোখে চোখ পড়তেই তার মনে হল যেন জাদু আছে পুতুলটার চোখে । হঠাৎই ঐ চুল বিহীন ডল পুতুলটাকে ফুটপাতের পাশের বড় দোকানটার শোকেসে দেখে সে এগিয়ে এসেছিল । অনেদিন ধরে তার একটা বড় ডল পুতুলের শখ । অথচ মাথায় চুল নেই দেখে কিঞ্চিত অবাক হয়েই সে আকৃষ্ট হয়েছিল । মা ডাকছে , কিন্তু নড়তে পাড়ছে না সে । পুতুল টা তার মন নিশ্চই পড়তে পারছে , না হলে হঠাৎই তার মাথায় চুল গজাতে যাবে কেন ! নিজের বড় বড় পেলব দু চোখ মেলে সে শিহরিত হতে হতে দেখতে লাগল পুতুলটাকে । হঠাৎ মার ছায়া নিজের পাশে দেখে শোরুমের কাঁচে আঙ্গুল দিয়ে পুতুল টা দেখিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ স্বরে সে বললে ,  
-- মা , আমায় এই জাদু পুতুল টা কিনে দাওনা মা ।    
-- তোমার সব পুতুলই তো জাদু পুতুল লাগে । আমার কাছে অত পয়সা নেই বুঝেছো ? চল এখান থেকে ।   
মা তার হাত ধরে গজগজ করতে করতে হাঁটতে লাগল ।  
-- আমার হয়েছে যত জ্বালা । তিনি তো এই আদুরে মেয়ে আমার ঘাড়ে ফেলে কোথায় ডুব দিলেন । আর এবার ভুগে মর তুই ।   
রুহী কিন্তু তখনও মুগ্ধ দুই চোখে পিছু ফিরে দেখেই চলেছে ঐ দোকানটাকে ।     
                  
                                                                   [ চলবে ]

একটু উষ্ণতার জন্য :রাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়





একটু উষ্ণতার জন্যে বারবার 
অপদস্ত হয়েছি -- 
নিজের বন্ধু সজন ' আহারে '   
নামের করুণা বর্ষেছে ! 
একটু উষ্ণতার জন্যে -- 
ক্ষুন্নিবৃত্তি চাপা দিতে দিতে 
পৌঁছে গিয়েছি   
সিনিয়র সিটিজেনের কোঠায় !   
একটু উষ্ণতার জন্যে --   
আজও কেটে যায় প্রতিক্ষণ 
একাকী শৈত্য বাহিত বিছানায় !     
একটু উষ্ণতার জন্যে --
পেট কেটে কেটে খাটতে না পারা   
দিনের জন্য সঞ্চয়ের ঝোলায় -- 
গত পাঁচ বছরে   
পড়েছে দুই শতাংশের মার !   
আজ তাই শেষের পথে --   
আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত প্রতিটি মূহুর্ত্ব   
জীবনের রণে শৈত্যতার ঝড় ! 
আজো তাই -- 
একটু উষ্ণতার জন্যে জীবন   
ব্যাকুল মেহনত দিবার লোভে ।   
অথচ সামনে স্থবির হবার ডাক !   
এ জীবন রাজ কার্যের দান -- 
তাই আর প্রয়োজন নেই   
বলার তোমাকে সাবধান ।   
নীতির বস্তা ফেলে --   
এইবার একটু উষ্ণতার জন্যে   
হোক তোমার পুনর্জন্ম খান !!   


বিবর্ণ ছবির সাথে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়



কেন এমন টা হয় !   
আটপৌঢ়ে জীবনের খাতায় ?   
সমস্ত সুখ --- চাওয়া পাওয়া যেন --     
বন্ধ করতলের আঙ্গুলের ফাঁক গলে   
কোথায় কোথায় যেন হারিয়ে যায় ।   
আর এখানে পড়ে থাকা --   
ইট কাঠ সিমেন্টের তলে     
আটটা - সাতটা প্রাত্যহিক ছুটন্ত জীবনের তলে --   
কোথায় কোথায় চাপা পড়ে থাকে   
তোমার বিবর্ণ ছবির সাথে হায় !!     


বর্ণহীন প্রভাত : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

 

জেগে উঠে দেখি --     
বসন্তের প্রভাত রঙে ঢাকি       
রেখে গেছে ভাল লাগা ভোর !     
আমার জীবন ব্যাপী --     
কেবলি অনিশ্চিতের কঠিন খোল ,       
জীবনেরে অশান্ত করে অর্থনীতি       
ঢেলে দেয় বাঁচার এক তিক্ত লড়াই ।   
নিরন্নের সারিতে বৃদ্ধি --     
চারিদিকে মেহনতের নেই কোন বোল !   
এমন দেশের চালক --   
জীবনেরে দেখায়ে ঝলক কেবলি বিজ্ঞাপনে     
বসন্তেরে করেছে মলিন হতবাক !   
তবু চায় তারা আরো সমর্থন --     
বুকের পাটার দেয় নির্লজ্জ মাপ   
অথচ কাজের বেলায় দেখি  ফাঁক !   
বসন্তে জেগে থাকি যদি --   
বর্ণহীন হোক তবে তাহাদের হাত ,     
মারছে , মারুক যদি ভাত ।   
বসন্তের অঙ্গীকারে হয় যদি হোক     
তাহাদের বর্ণহীন প্রভাত ।     



সব্যসাচী তাই : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

     

পৃথিবীর সব কথা , সব ব্যথা     
সহেও যেন শব্দ বেছে যাই ,   
সমস্ত অন্যায়ে যেন --   
শব্দের সংঘাতে কাটতে চাই ।   
আমি শুধু কবি নই ছন্দের -- 
অক্ষর অস্ত্র হাতে সৈনিক ভাই !   
জীবনের শত রণে -- 
লড়ি একা সব্যসাচী তাই ।। 


অভিসারী শহর : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

   

অভিসারী শহরের বুকে নামে       
সর্পিল পিচ্ছিল রাত --   
যৌনতা নগ্ন হয় সুরভি ও সৌরভে ।   
রাতের মায়ার আছে রূপ --     
যৌবনেরে করে যায় শিকার ;       
তার নখরের আঘাতে করে ক্ষত   
যৌবন পরাস্ত দেখ যৌন অভিঘাতে --   
অভিসারী রাত তবু বিকে চলে     
আকাশের প্রান্ত হতে একমুঠো বিকার !       
এখানে নারী - পুরুষ সব একাকার !!       

রিক্ত যৌবনে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়


কাল তুমি এসেছিলে --   
ঘোর ঘুম পথ ধরে ,       
এই জীর্ণ দীর্ন স্মৃতির পটভূমে !     
কাম রাঙা ঘুম ঘোরে আমি     
হঠাৎ আবিস্কার করলাম তোমার   
যৌবন দীপ্ত অধর ;     
তোমার বিপন্ন যৌবন যেন       
আমায় হাতছানি দিয়ে বলে  --     
ভালো আছো তো ,     
হে সুজন তোমার আমা রিক্ত যৌবনে  ?     


কবে তুমি জাগবে চে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

 

কাউকে পড়তে বলিনি আমার এ চিঠি ।     
হয়তো তোদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়বে !   
কিন্তু বিশ্বাস কর এ আমার আর্ত বেদনা --     
আমার দেশ , আমার শৈশব     
আমার যৌবন , বার্ধক্য জড়িয়ে আছে এতে !     
চে গ্রাভারার মত --   
অদম্য অত্যাচার সহেছি নীরব হাসি মুখে !     
আমার জননী এ দেশ ভাঙ্গছে ,     
ভেঙ্গে চুরে চুর চুর হয়ে পড়ছে ,   
এখনও চুপ করে থাকার মূল্য --     
প্রতিদিন গোনে অসহায় মেয়েটি !   
ট্রামে , বাসে , স্কুলে , ঘরে --   
হাজার টা ধর্ম আর জাত নিয়ে ।   
দলিত হয়ে জন্মানোর খেসারত   
নগ্ন হয়ে দিচ্ছে গ্রামের একঘরে !   
আর আমি চুপ করে আছি --     
ওরা ধমকে গিয়েছে পাড়ায় ,   
এবার ভোট যদি হয় একটা কম ,     
উনিশো ছেচল্লিশের নোয়াখালি     
দেখা দিবে এ পাড়ার মাঠে !     
আর আমি চুপ করে আছি --   
আর কবে তুমি জাগবে চে ?   
কিউবার মত চিৎকার করে --   
আবারও বলতে চায় এ বোবা মন  !! 


হিং টিং ছট :রাজিত বন্দোপাধ্যায়



 

পৃথিবীর সব কথা শুনেছি আমি --     
পৃথিবীর সব ব্যথা বুকেতে আমার !   
দহনে গিয়েছে বিগত অনেক দশক ,     
দেখেছি রাজনীতি কেবলি বিত্তের পোষক !     
তোমাকেও দেখেছি দু চোখ ভরে       
আজ যারা টু মি বলে --     
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়  !     
সুযোগ খুঁজেছে রেখে --   
বিত্তের কাঁধে দুই উষ্ণ হাত ,   
তাদেরই মুখেতে টুমি - র প্রভাত !!   
রাজনীতির ঘুঙুর শিঞ্জনে বাঁধা   
এদেরও অনেকের মুখ ,   
দশকের দহনের পরে পুরুষেরে     
দিয়ে দেখে অসুখ --   
হৃদয়ের জ্বালা জোডানোর ছলে ।     
কোন দুর্মুখ করে ব্যাদন ?   
রাজনীতি হিং টিং ছট বলা   
তোতার মতন --     
বিত্তের পোষক পরে নিজেরে পালে ।     
সোনার খাঁচার মোহ --   
সোনার সিংহাসন , গরীবের পোষক !   
হিং টিং ছট --  !     


রাজিত বন্দোপাধ্যায়






সেদিনের বিসর্জন    
****************




              অনেক দিন পরে নদীর পাড়ে এল দীপ্ত । তার চুলে আচমকাই ঐ কাশ ফুলের রঙ লাগতে শুরু করেছে । আজ দশমী । একটু দূরে ঘাটে একের পর এক প্রতিমা এসে জড়ো হচ্ছে । সেই দিকে চাইতে ইচ্ছে করছে না । এখানে এই দিনটাতে না এলেই বোধকরি ভাল হত । নদীর সামান্য জল স্রোতের দিকে চেয়ে তার মনে হল । আরো দূরে রেল লাইনের অপর পারে নদী ঘেসে পার্বতী ঘাট । সেখানে মাথার উপর ফিকে নীল ধোঁয়ার দাগ । চিতা জ্বলছে ! হঠাৎ আবার সেই দিনটা তার মস্তিষ্কের ভিতর ছাইতে শুরু করল । ডাক্তার এটাকে প্রশ্রয় দিতে বারবার মানা করেছে তাকে । কিন্তু দীপ্ত বহু চেষ্টা করেও বিসর্জনের ঢাকের আওয়জটা কিছুতেই বন্ধ করতে পারল না । আস্তে আস্তে সিনেমার রূপালী পর্দায় ফুটে ওঠার মত স্পষ্ট হতে লাগল তা দীপ্তের ধূসর মগজে !  
-- শালা ! হারামখোর , রাজনীতি করছিস । বলেছিলাম ঐ পার্টিতে তোকে না থাকতে , শুনলি ? এই রামদেও কুত্তা কো ঘসিট কে লা তো ।  
রামদেও গেট খুলে কম্পাউন্ডের ভিতরে চলে এল । সবে মাত্র কোলকাতা থেকে আসা শারদ সংখ্যা খানা খুলেছে দীপ্ত ভট্টাচার্য । এতে তার একটা বড় গল্প ছেপেছেন পত্রিকাটির সম্পাদক মন্ডলী । একটা বেসরকারী কলেজে ইংরেজী পড়ায় সে । রাজনীতিতে খুবই ইনভলবড্ । কিন্তু পাড়াটার জন্য , এলাকার জন্য এত দিনের এত সেবা কাজে এল না এই দূর্গা পূজোর দশমীর সকালে । সবাই ব্যস্ত , কেউ এগিয়ে এলো না । হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিল উমাবতী । তার বৌ । তাকে রামদেও টেনে হিচড়ে গেটের দিকে নিয়ে যাবার ফাঁকে বারবার পায়ে পড়তে লাগল । কিন্তু গেটের ওপারে দাঁড়িয়ে সরযূ লালা নির্বিকার ! রামদেও দীপ্তর কলার ধরা অবস্থায় হঠাৎ বলে উঠলে ,   
-- অরে বস ইসসে তো আচ্ছা হোগা ইসে না মার কর ইসকা বিবি কো হী লুট লেনা । একদম ঝকাস হ্যায় শালী । হ্যাঃ - হ্যাঃ - হ্যাঃ !!
-- তেরা দিমাগ ভী তো ঝকাস হ্যায় রামদেও । লা , তব উসে হী লা ।  
দীপ্ত কে ছেড়ে উমাবতী কে ধরতেই দীপ্ত ঝাপিয়ে পড়েছিল । রামদেও তাকে একটা নীট লাথি ঝাড়তেই তার মাথাটা ভয়ঙ্কর ভাবে লোহার গেটে লাগল । দীপ্ত জ্ঞান হারাতেই রামদেও ঝটপট উমাবতী কে উঠিয়ে নিল কাঁধে ।   
সমস্ত পাড়া কে স্বাক্ষী রেখে সেদিন প্রকাশ্যে যে বীভৎস ধর্ষণ কান্ডটি হয়েছিল , তা পরের দিন খবর কাগজের প্রথম পাতা দখল করেছিল । বিস্তারিত ভাবে ছেপেছিল দৈনিক গুলো । লোকেরা আড়ালে বলেছিল , একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক পার্টির টাকাই নাকি ছিল এই বিস্তারিত ভাবে খবর টি ছাপার পিছনে ! আসল কথা হল একটা প্যানিক ছড়ানো ।
               জ্ঞান ফিরতে সুমসান রাস্তার উপর উমাবতীর রক্তাক্ত নিষ্প্রাণ দেহটা দেখতে পেল দীপ্ত । তার দু চোখ শুকনো । লাল চোখে সে অতি কষ্টে উঠে গিয়েছিল সেখানে । সকালের আমেজ কেটে তখন সূর্য দীপ্তমান দেখাচ্ছিল । থানা পুলিশ করে যখন দেহটা বেরুল , তখন নিজের দলের গুটিকতক ছেলে ছাড়া আর কাউকে পেলনা সে । তার অনুরোধে কোন মিছিল বা শশ্মানে ভিড় জমালো না তার দল । বড় নেতারা কেবল অত্যন্ত লজ্জাকর ও বেদনার বলেই বিদায় করেছিল সংবাদ কর্মীদের সেদিন ।  
পড়ন্ত বেলায় পার্বতী ঘাটে অস্তি বিসর্জনের সময় অপর পারে আচমকাই বেজে উঠেছিল বিসর্জনের বাজনা ! অত ঢাকের প্রবল আওয়াজে হঠাৎ যেন কী হয়ে গেল দীপ্তর । অস্তির সরা সমেত সে পড়ে গেল খরকাইয়ের জলে । ওপারে আদিত্যপুরের ঘাটে তখন বেজে চলেছে ঢাক মহোৎসবে ।   
দীপ্তর জ্ঞান ফিরেছিল হাসপাতালের বেডে । এর মধ্যে এক সপ্তাহ যে কেটে গেছে সে জানে না । আর তারপরই তার মনরোগটা চাগিয়ে উঠেছিল কানে ঢাকের আওয়াজ শুরু হতেই সেদিনের ছবিটা ক্রমে ক্রমে সিনেমার পর্দার মত ফুটে উঠতে শুরু করত ! রাঁচীতে প্রায় বছর দেরেক চিকিৎসা করানোর পর ক্রমে সুস্থ হল ।  
হঠাৎ একটা পটকার বিকট আওয়াজে গড়ে উঠতে থাকা ছবিটা হারিয়ে যেতেই সচেতন হল দীপ্ত । ওদিকে তখন ঘাটে ঘাটে বিসর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে । মা যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন কৈলাসের দিকে । দীপ্ত হঠাৎই দু হাত জড়ো সেই চলে যেতে থাকা মা দূর্গার উদ্দেশ্যে মনে মনে বলতে লাগল , হে মা দূর্গা , এই জঘন্য রাজনীতি , রাজনৈতিক ইস্যু , ঐ মোমবাতির মিছিল , অভিমান , হিংসে , ধর্ষণ সব ,  সব কিছুরই বিসর্জন হয়ে যাক তোর প্রতিমার সাথে । শান্তি , সৌহার্দ , প্রেম আর অহিংসা দে মা , দিয়ে যা এই পতিতালয়ে !   

রাজিত বন্দোপাধ্যায়







জীবনের চাপ    
*************

 
আবার এলো উমার আসার পালা
বেহায়া মনে ছমকাছমকি রে ,  
মনের খুলে খড়খড়িটা --  
একি বেশে চলে উমা অভিসারে !   
শিবের ত্রিনয়ন শক্তিহীন এখন      
পরকীয়ার পরম রসে --     
জেন তাতে আর না আছে   
কোন ক্লেশ মা উমার কাছে !!   
তোমরাই তো মা নরনারী তরে  
খুলেছো রুদ্ধ পরকীয়া দ্বার --     
আইনের বেড়ি ফেরি হল আজ   
বিচারকের করি জয় জয়কার ।  
তোমাদের উমা মাটির প্রলেপে  
যত রুদ্ধশ্বাসে সাজুক না কেন --   
যতই ঝলসাক হ্যালোজেনের আলোয়    
গহনা আর পরিপাটির তাপে ,     
সবকিছু আজ বদলে গিয়েছে যে ছাই    
তোমাদের নতুন জীবনের চাপে ।