নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আগমনী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আগমনী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

✍️সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র



✍️সম্পাদকীয়.....


"দীর্ঘ প্রতীক্ষা ।দিন গুনছে নব বধূ।বাঙালী..
কাশফুলে মন ভিজেছে, টুকরো টুকরো মেঘ বলে দেয়
                       "আগমনী...."



হমম সারা বছর একটাই অপেক্ষা কবে পূজো আসবে ,পুজো মানেই দুর্গা পুজো ।বাঙালীর ইমোশন যেখানে ।
সব বিবাদ ভুলে গিয়ে মেতে উঠা উৎসবে ।


ব্যস্ত জীবন ,হাঁফিয়ে উঠা ক্লান্তিদের একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ,ভাঙা হৃদয় ,ভাঙা মন নিয়ে নিজেকে বন্ধ করে দেওয়া মেয়েটি বা ছেলেটির মনে ঢাকের শব্দে বুক কেঁপে ওঠে ..নতুন করে ভালোবাসার ,নতুন করে বাঁচতে শেখার গল্প লিখে রোজ মরতে থাকা মানুষ গুলো ।মুখোশের বাইরে বেরিয়ে এসে হঠাৎ দশমীতে নেচে উঠে তারাও ।



যেখানে আলো নেই ,যেখানে ভাত নেই ,যেখানে ভালোবাসা নেই ,শুধু থাকে হিংস্র থাবার আঁচড় সেই খানেও আলো জ্বলে ওঠে ,ভালোবাসার ছন্দে গেয়ে উঠে গান ।ভাতহীন ফুটপাতেও  হাসি হাসি মুখে বলে দেয় আগমনী আসছে ,তারাও জানে এবার কিছু খেতে পাবে ।


 সদ্য বিবাহিত মেয়েটাও অপেক্ষা করে ,বর্ডারে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রাণের মানুষটি এবার হয়তো ফিরে আসবে ? নতুন করে আলতা পরে পায়ে ,বিয়ের শাড়ী পরে নিয়ে আয়নায় বারবার লজ্জানত হয় ,রাত্রি যায় ...দিন যায় অপেক্ষায় ,ফিরে আসে কি ?



ভিরের মাঝে একাকী হাঁটতে থাকা ছেলেটি আজও খুঁজে চলে তার ছোট বোনকে ,সেবার পুজোয় হারিয়ে গিয়েছিলো ,হয়তো ভিড়ের মাঝে হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে ..

বাবাকে কোনোদিন চোখে দেখেনি মেয়েটি ,মা বলত পুজোয় বাবা আসবে ,এসে তাকে আদর করবে ,তার জন্য নতুন জামা কিনে দেবে মাকে আর লোকের বাড়ি কাজ করতে হবে না ...প্রীতিক্ষায় থাকে প্রতিবারের মতো ।



অনেকটা প্রত্যাশা নিয়েই শুরু হয়ে যায় পুজোর মরশুম,কবি/লেখক দের কলম প্রতীক্ষা করে পত্রিকার পাতায় জ্বলে ওঠার ।

ঠিক তেমনি এবারেও প্রত্যাশা রাখি সবাই সঙ্গে থাকবেন ।

তাই এবারেও আমাদের পত্রিকায় জ্বলে উঠেছে একশোর বেশি কলমের আঁচর ,কিছু না বলা কথা ,কিছু তোমার আমার কথা ।



আমাদের সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসাবে রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে কবি কাজী জুবেরী মোস্তাক ,যাঁর কাছে কবিতা মানেই একটা অস্ত্র ...সমাজকে শুধরে দিতে

আছেন মৌসুমী রায় ,যাঁর কাছে কবিতা মানেই জীবনের বেঁচে থাকার রসদ

আছেন লণ্ডন থেকে  শুভ্রা দে  ,মনের না বলা কথা গুলোর বহিঃপ্রকাশ হল কবিতা


অনেক অজানা তথ্য আমরা জানতে পারবো উনাদের কাছে ।
এবারেও আমাদের রয়েছে "ইচ্ছেমতো" ও "কলমের জোর" বিভাগ ।


সকল কবি ও লেখক দের জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ ,সঙ্গে থাকার জন্য এবং অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা । সবাই খুব ভালো থাকুন ,ভালো রাখুন প্রিয় মানুষটিকেও ।


                                   ধন্যবাদন্তে,
                               জ্যোতির্ময় রায়







সূচিপত্র
******

✍️অতিথি কবি
      *********
শুভ্রা দে(লণ্ডন থেকে)
মৌসুমী রায়
কাজী জুবেরী মোস্তাক (বাংলাদেশ থেকে)

✍️কলমের জোর
     ************

✍️কবিতা
     *****
দীপান্বিতা বিশ্বাস
লগ্নজিতা রায়
অমিত কুমার দাস
চিরঞ্জিত সাহা
রিয়া ভট্টাচার্য
সুষ্মিতা কর
শুভজিৎ কোলে
তোহাদ্দেশ সেখ
দোলন দাস মণ্ডল
প্রনবেশ চক্রবর্তী
পারমিতা সাধুখাঁ
রবি মল্লিক
চন্দন বাসুলী
কুনাল গোস্বামী
শোভন মণ্ডল
জারা সোমা
সোমা দাস
অনির্বাণ দাস
রবি মল্লিক
তাপসকিরণ রায়
স্বরূপা রায়


✍️গল্প:

রাণা চ্যাটার্জী
অনুরাধা সরখেল






✍️ইচ্ছেমতো
  **********


✍️কবিতা
  *********


সম্পা পাল
গোপাল চন্দ্র সাহা
বৈশাখী চ্যাটার্জী
তুলি রায়
রাজিত বন্দোপাধ্যায়
কার্তিক ঢক্
অভিজিৎ দাসকর্মকার
জারা সোমা 
দীপাঞ্জন দাস
রানি মজুমদার
পূরব ব্যানার্জী
ধীমান ব্রহ্মচারী
শুভদীপ পাপলু
বিশ্বজিৎ সরকার
সুদীপ ঘোষাল
পুলক মন্ডল
সৌরভ ঘোষ
সুদীপ্ত সেন
অনির্বাণ দাস
শাহীন রায়হান
তপন জানা
মোঃ রফিকুল ইসলাম
হোসাইন শাহাদাত
রুনা দত্ত
তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
সুজান মিঠি
   এস. কবীর
সুনন্দ মন্ডল
 রনিতা মল্লিক
তপময় চক্রবর্তী
সন্দীপ ভট্টাচার্য
প্রতিভা দে
সোনাই
সঙ্কর্ষণ
অনোজ ব্যানার্জী
লীনা দাস
মৌ ঘোষ
কিশলয় গুপ্ত
রণধীর রায়
সুশান্ত সৎপতি
অনাদি রায়
সুদীপ্ত বিশ্বাস
শাল্যদানী
সুদীপ্ত নিয়োগী
বিনয় লাহা
মাধব মন্ডল
মোনালিসা পাহাড়ী
সুপ্রভাত দত্ত
রুদ্র সাহাদাৎ
পিয়ালী সাহা
চৈত্রী ঘোষ হাজরা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
চিরঞ্জিত সাহা
সুধাশ্রী মণ্ডল
নবনীতা সরকার
অসীম মালিক
বিশ্বজিৎ ভৌমিক
অনন্য বন্দ্যোপাধ্যায়,
রাজকুমার বিশ্বাস
সায়ন্তনী  হোড়
ইউনুস হোসেন
দেবব্রত মল্লিক
মোঃ মিজানুর রহমান
রাণা চ্যাটার্জী,
সুদীপ্ত বিশ্বাস,
অন্তরা সিংহরায়,
রাজীব লোচন বালা,
শুক্লা মালাকার,
জয়দীপ রায়,
শ্যামল কুমার রায়,
প্রবীর রায়

✍️প্রবন্ধ:
*********


পবিত্র চক্রবর্তী

✍️চিঠি:
********

শ্যামাপদ মালাকার

✍️কিছু কথা:
***********

বৈশাখী দাস
প্রভাত মণ্ডল
শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়
তাপসী  লাহা


✍️গল্প:
   *****

পলি ঘোষ
অক্ষয় কুমার সামন্ত
পায়েল খাঁড়া
সুজান মিঠি
সীমা দে
জয়ী সামসুল
পুলক মন্ডল
মতিউল ইসলাম
রজত শুভ্র কর্মকার

  

শুভ্রা দে






কবি শুভ্রা দে

(লন্ডন)

সাক্ষাৎকার 
***********


১:- আপনার কাছে কবিতা কি ? 
উত্তরঃ: কবিতা হল আত্মার ঔষধ ,মন খারাপির ঔষধ, নতুন করে বাঁচতে শেখার ,নতুন করে ভালোবাসার কিছু না বলা কথার প্রকাশ ।

     ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তরঃ শরৎ চন্দ্র আমার প্রিয় লেখক ,প্রিয় কবি হল রবীন্দ্রনাথ

আমার অনুপ্রেরণা হল কবি অতনু নন্দী 
 
     ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ? 
উত্তরঃ ওই মন খারাপে কিংবা ভীষণ ভেঙে পড়লে ওই কবিতাই নতুন করে বাঁচতে শেখায় ,তাই মনের খেয়ালে লিখে চলি কিছু কথা ।

     ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত) 
উত্তরঃ প্রথম বই ( পঞ্চদর্শী)প্রকাশিত 
প্রথম লেখা কবিতা ( আমার মা)

     ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?
উত্তরঃ কবি/কবিতার সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক ভীষণ আত্মীয়র। আত্মার টান থাকাটা খুব জুরুরী । মনের খুব কাছের মানুষ হচ্ছে ওই পাঠক । 
৬. ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ? 
উত্তরঃ ফেসবুকের কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যতে এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।এখন হয়তো এর গুরুত্ব আমরা সেরকম দেই না ,কিন্তু ফেসবুকে এর মাধ্যমে অনেক পাঠকের সঙ্গে অনেক কবির সঙ্গে ,কবিতার সঙ্গে পরিচয় হয় ।

৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ? 
উত্তরঃ ছাপা ম্যাগাজিন এর গুরুত্ব অবশ্যই বেশি ।তবে ব্লগ বা ওয়েব ম্যাগাজিন এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ,করছে ।

৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর: বই বিমুখ হওয়ার মূল কারণ হিসেবে আমি মনে করি এই ইন্টারনেট ,এখন হাতের মুঠোয় সব জিনিস সবাই পেয়ে যাচ্ছে ।
বই মুখী করার উপায় হিসাবে আমার মনে হয় ,যে বই মেলা ,বই দিসব পালন ইত্যাদির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাধ্যমে করা যেতে পারে ।

৯. উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ?

উত্তরঃ কবিতা হবে সহজ ও সরল , যা এটি সহজে বলে দেবে অনেক কথা ।
 
১০. গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?

উত্তরঃ অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট রীতি ও তাল ও ছন্দ থাকবে কবিতায় ,তা আধুনিক হোক কিংবা মধ্যযুগীয় হোক 






কিছু কবিতা:

তুমি বলেছিলে ভালোবাসি
********************


নীল পাহাড়ের পিছন থেকে লাল সূর্যটা কেমন ফুটে  বেরুলো। ।

 হিমেল বরফচুড়া গুলি থেকে একের পর এক সোনা গলে পড়ছে।

 বল তো( তুমি ) কত সুন্দর হবে আমাদের  সেই দিন গুলি
                                                   ৷ কি চমৎকার  অপরূপ চাঁদ লাখো তারাদের নিয়ে আকাশটাতে কেমন সাজাবে নতুন করে।।

 মামুলি এলোমেলো নদীটা কখন ঝিলমিল ঝিলমিল করে জলতরঙ্গের মত বাজবে।

নদীর ধারে পলাস ফুলের গালিচায় আমরা হাত ধরাধরি করে বসে  থাকবো দুজনে।।                 

  এক শুন্য  জীবনে এসবই এক  স্বপ্নের মত ভেসে গেলো।।

কেননা কালরাতে আমায়  তুমি বলেছিলে,“ভালোবাসি। ”



এদেশ ও বিদেশ
************



জন্মভূমি তুমি মাগো,
তোমার কোলেই মানুষ আমি,
কর্মসূত্রে মাগো আমি এখন পরদেশ বাসি।
বেদনা ছাড়া জোটেনি কিছু তোমার ভূমিতে,
পেয়েছি যা কিছু আমি এই বিদেশে।

সভ্যতার নজরানা
শিখেছি মাগো পরবাসী হয়ে, সম্মান ও শিক্ষার আলো পেয়েছি এখানে।

শিশুদের শ্রমিক বানায় না এ দেশ
 শৈশব শিকারি নয় এ দেশ।
হয়েনা নারী অত্যাচার
করেনা শ্লীলতা হানি
কোনো নারীর
মাগো মাটি আমার
আমার ভারত জন্মভূমি,
তোমার মাটি আমার কাছে
এখনো বড় দামি।




এখনো!       
 *******


ভালোবাসার মশাল জ্বলেছিল একদিন আজ নিভে গেছে।
বৈদ্যুতিক কারিকুরি সব কবে যে বিকল হলো।
লণ্ঠনের তেল ফুরিয়ে দপ্ করে নিভে গেলো।
ভোর হতে ঢের দেরী জেনে গেছে আকাশের তারারা আজ।
  এস পরম মমতায়  ভালোবাসায় ফের হাত ধরি।
ভয় কি? এখনও  আকাশে জেগে আছে মায়াবি  চাঁদ ।





পূজোয় প্রবাসে
************
                 
এখানে জাঁকালো সড়ক আর টেমসের জলকে কুয়াশারা হিংস্র বাজের মত অহরহ শীকার করে। 
 অথচ আমার স্বভূমি,আমার বাঙলায় আজো কিছু  শারদ শিউলি,  কিছু  কাশফুল ফোটে ।
বন্যার জলের মত সোনালি রোদ গৃহস্থের আঙিনা ভাসিয়ে  জানালা দিয়ে কখন যে  ঢুকে পড়ে ন্যাংটো খোকার সাথে খেলতেএ শুরু করল!
আমার স্বদেশবাসী আজো তেমন শেখে নি কেতাবি সহবত, মাপা হাসি বা রুমালী কান্না।
খিদে পেলে তারা  আজো বড় তারস্বরে চীৎকার করে। 
তবু আমার স্বদেশে আজ সন্ধ্যায় লাখো লোক  তেঁতুল গোলা জলে ফুচকার উদগীরণ তুলবে ।
একজনের উচ্ছিষ্ট শালপাতা মাড়িয়ে সহস্র  লোক মাতৃদর্শনে যাবে প্যান্ডেলথেকেপ্যান্ডেলে। 
জৌলুস প্রাচুর্য জমকে লন্ডন নয় স্বদেশআমার।
 তবু সে ই শুধু আমার আমি, আমার সমগ্র।
 চিরকালের দুখী সামান্য সুখেই  হিল্লোলিত আমার জন্মভূমি  আমার বাংলা মা, আমার গর্ভধারিণী মা আর জগজ্জননী উমা  কবে যে এমন মিলেমিশে
একাঙ্গী হযে উঠল!


অচেনা বন্ধু
*********


রাঙা মেঘ হলুদ জোছনা
ঝিক মিক তারা
চেনা মুখ ! মুখোস পড়া বন্ধু
চেনার মাঝে, চিনি নি তাকে
বর্ষা কাজল চোখে
ভা লো বা সা র অভিনয়
রক্তের ফোঁটা ফোঁটা
কৃষ্ণচূড়ার লাল, সবুজ জলতরঙ্গ
বেজে ওঠে মুখরিত ঝঙ্কার
অহেতুক কৌতূহল অগ্নিবলয়
কৌতুকের ছলে বলে যাই
বেঁচে রব কবিতার আনাচে কানাচে
বিদ্রোহী বৃষ্টি ভিজিওনা আমাকে




সাক্ষাৎকারে: জ্যোতির্ময় রায়

মৌসুমী রায়




মৌসুমী রায়

40b,Dr Sundari Mohan Avenue

Kolkata-700014



সাক্ষাৎকার :

১:-আপনার কাছে কবিতা কি ? 

উত্তর: কবিতা আমার বেঁচে থাকার উৎস,জীবনের সব রং এর মাধ্যমেই পাই।আমার সুখ দুঃখ হাসি কান্না এর সাথেই জড়িয়ে।

২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উত্তর: প্রিয় কবি বলতে প্রথমেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তারপর নির্মলেন্দু গুণ। আমার অনুপ্রেরণা আমার বন্ধুরা যারা প্রতিদিন আমায় নতুন ভাবে নতুন লেখায় উৎসাহ দেয়।

৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ? 
উত্তরঃ আমার একাকীত্বের সাথি কবিতা,কবিতার মাধ্যমে আমার না বলা কথারা প্রকাশিত হয়।

৪:-আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত) 
উত্তরঃ আমার প্রথম কবিতার বই "কষ্টেই সুখী"

৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?
উত্তরঃ কবির লেখা এমন হওয়া দরকার, যেখানে পাঠক নিজের না বলতে পারা কথা খুঁজে পাবে। একাত্ব হতে পারবে কবি ও কবিতার সাথে।

৬:- ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ? 
উত্তর: গুরুত্বের কথা বলতে পারিনা কিন্তু এটা মানি যে ফেসবুকের মাধ্যমে পাঠকের কাছে পৌছানো অনেক সহজ।

৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ? 

উত্তরঃ অবশ্যই ছাপা ম্যাগাজিনের ।ছাপা ম্যাগাজিন মানে আমার লেখা একটা ছাপা অক্ষরে থাকছে ,পাঠককে পড়তে হলে সেই লেখা কিনে পড়তে হবে ,অর্থাৎ লেখাটার একটা মূল্য থাকছে ,অপর দিকে ব্লগ বা ওয়েব ম্যাগাজিন এর গুরুত্বও আছে ,অনেক লেখা একসঙ্গে পাওয়া যায় ,সহজে পড়া যায় ওহ কিনতে হয় না । একসময় আসবে যেদিন খাতা কলম থাকবেন না ,সেই সময় এই ব্লগ গুলোই তো থাকবে ।হয়তো এখন নয় ,হয়তো কয়েক শতাব্দী পর ।

৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর: আসলে মানুষ আস্তে আস্তে বিনোদন এর যে বিষয় বা মাধ্যমে কেই বুঝে উঠতে পারছে না ,যে কোন জিনিসটা তাকে বেশি আনন্দ দেবে ।যেমন ধরুন ফেসবুক বা ইউটিউব এ কিছুক্ষন সময় কাটানোর পরই মনে হচ্ছে না। ,আর ভালো লাগছে না ,এই যে ভালো না লাগাটা জন্ম কিন্তু এই ইন্টারনেট ।আসল মানুষ এখন সব কিছু হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছে ,পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত দেখতে পাচ্ছে যেগুলো আমরা বই পড়েই আগে জানতাম ,বুঝতাম এবং কল্পনায় সেই ছবি আঁকতাম ,হয়তো বিভিন্ন জনের সেই কল্পনা আলাদা হতো ,কিন্তু একটা কল্পনা শক্তি ছিল ,একটা ভাবার শক্তি ছিল এখন সেই শক্তিকে  পঙ্গু করে দিয়েছে ,আর এই জন্যই সবাই বই বিমুখ হয়ে গেছে ।



৯. উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ? 

উত্তর: উত্তরাধুনিক কবিতা মানে এই নয় যে শুধু ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করলেই হবে ।উত্তরাধুনিক কবিতার একটা নির্দিষ্ট রীতি আছে ,একটা নির্দিষ্ট তাল ,ছন্দ । ধরা যাক পদ্য কবিতার ক্ষেত্রে ...আগে যেমন লেখা হত
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।"

এইখানে ভূরি ও চুরি ,একদম কাছাকাছি শব্দ দিয়ে মিল করেছেন 
উত্তরাধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে 

"তুমি কিসের মহৎ ,তুমি কিসের উদার 
সাপের কামড় খেয়ে মেটায় ক্ষুধা " 

এখনকার মিল ,ছন্দ গুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ,একটা আলাদা রীতি সম্মিলিত ।

কবিতা মানেই তো একটা ছান্দিক রীতিতে অনুরিত হওয়া কিছু অপ্রকাশিত শব্দমালার বহিঃপ্রকাশ ।
যা সহজে বুজে নেয় মনের আকুতি ,মনের গভীরতা।তাই কবিতা এরকমই হওয়া উচিত ,যা বোধগম্য ।


১০. গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তরঃ গদ্য কবিতা মানে গদ্য নয় কিন্তু কবিতা যার একটা নিদির্ষ্ট তাল থাকে ,একটা ছন্দ থাকে ।
গদ্য পদ্য কবিতা বলতে একটা গদ্য কবিতার একটা নির্দিষ্ট পদ্য রীতি ।



কিছু কবিতা : 


তাসেরঘর
********


ভুল করে যদি মাঝরাতে 
তোমার নাম ধরে ডাকি
তুমি কি বেঁধে নেবে মায়ার বাঁধনে...
না আবারো দিয়ে যাবে ফাঁকি?

ইচ্ছে মতো গড়ে নেবো 
তোমার আমার তাসের ঘর 
যা খুশি তাই বলুক লোকে, বাইরেটাকে... 
বদলে দিয়ে রাখব তোমায় বুকের ভিতর।

মনখারাপের সাজিটাতে ভরে রাখি
আমার না বলা সব সুখ
মেঘের আঁচলে রাখব ঢেকে চড়া রোদে...
আমার ভালোবাসার মুখ।

জীবন মানে তোকেই বুঝি
আমার মনে অবৈধতার অসুখ
তোর ছোঁয়াতে ব্যাকুল থাকি...
তোর হাসিতে দূর হয়ে যায় আমার যত দুখ।


দূরত্ব
*****


লাল মাটির কাঁকড় বিছানো স্টেশনে
দাঁড়িয়ে মনে হলো কত জায়গায় 
যাওয়ার ছিলো তোমার সাথে
হোলোনা আর কোথাও যাওয়া।
অনেক ভিড়ের মাঝে 
সবচেয়ে কাছের মানুষের
মুখটা মিশে গেলেই ভয় হয়...
হয়তো আর কোনদিন তাকে
হবেনা কাছে পাওয়া।
এখন গোধূলি নেই দিগন্তে ঢলেছে দিন
সন্ধ্যার আকাশপাত্রে টলোমলো রঙ...
পাখিরা বাসায় ফেরে সাথে 
আপাদমস্তক অভিমানে মুড়ে,
আমিও ফেরার পথে আবারো তুমিহীন।




নদীর কথা
**********


নদীর কথা ভাবলে আমার
তোমায় মনে পড়ে...
আবছা বাদলদিনে বৃষ্টি ফোঁটায়
দুজন কূল হারিয়েছিলাম শরীর ঝড়ে।

আমার পাশে আজকে তোমায়
আর ঘন হয়ে বসতে দেখিনা...
নদীর বুকে আজো গভীর ছায়া পড়ে
খামখেয়ালেও তুমি কি আর ভালো বাসতে পারোনা?

নদীর ওপার থেকে আমায় কেউ
খুব আদর করে ডাকে...
আমার প্রাণের চিলতে আলো আসছে নিভে

আমায় কে আর আটকে রাখে।



কাঁচের স্বপ্ন
**********


তোর কারনে আঁচড় কাটি
জমাট বাঁধা অন্ধকারে
মনের ভিতর মনের রোপণ
কজনাই বা পারে...
তোর কারনে সিঁদুর কাঠি
খেলনাবাটি সব ছড়িয়ে ফেলা।
সাধ ছিলো শুধুই কাঁচের চুড়ির
তাও দিলিনা কত আসলো গেলো মেলা
তোর কারনে চোখের জলে 
মাথার বালিশ ভিজে ঢোল..
একবার তোর আসল রূপটা দেখা
একবার মুখোশটা কে খোল।
চেষ্টা করেছি বহুভাবেই
তোর তালে পা মিলিয়ে চলার
বুকের খাঁচায় চাপ বাড়িয়ে...
ভেবেছি বাড়ুক পাপের ভার।
হৃদয়ের মন্থনে উঠতো জেগে
আমার প্রেমিক কূলছাড়া বৈরাগী
আরেকবার চল নাহয় অলীক স্বপ্নের..
বাঁধন কেটে গোটা চাঁদরাত জাগি।




বেরঙ জীবন
************

           

আটকুঠুরির যে কোন দুয়ার খুললেই..
তোমার মুখোমুখি চোখে চোখ রাখা
পলক ফেলতেই অন্ধকার
অভিব্যক্তিহীন হৃদয় স্থির শূন্যে ফেরারি বলাকা।

বিবশ বিবেক অবশ মন্ত্রে
ঘর সামলানো আজ দায়
যখন থাকো ঘুমঘোরে প্রিয়, 
জাগরণ তোমার বুকে হাঁটে কিসের ছলনায়।

আটকুঠুরির যে কোন দুয়ার খুললেই
প্রিয় তোমাকেই পাওয়া যায়..
ছায়া ঘেরা চোখ খুঁজে ফেরে মন
রামধনু রঙ হারিয়ে আজ সাদা কালো জীবন।


সাক্ষাৎকারে :জ্যোতির্ময় রায় (কার্যকরী সম্পাদক)

সম্পা পাল





উমা , তোমার অপেক্ষায়
**********************




শুনছো তুমি !
আমি ভাদ্রের একা দুপুরে বসে ,
মেঘগুলো এখন প্রায়ই ছাঁদে আসে ।
রোজই দুপুরে কীটস , বায়রন ,রবীন্দ্রনাথের সম্মেলনে আমিও ছাঁদে আসি ।
ওরা বিশ্ব , আমি তুচ্ছ , নগন্য , বালির কণা ।
এক কোনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকি , সূর্যটা কখনো কখনো বিরক্তও করে ।

যেদিন বৃষ্টি থাকে সেদিন আর আসা হয় না ।
সেদিন জানালার পর্দা সরিয়ে ডুয়ার্সের বৃষ্টি দেখি ,
দেখি পাহাড় আর সমতলের সঙ্গম ।

রোজনামচার জীবন ভেঙে এবার আমায় উমা এনে দাও
পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া সামিয়ানা এখনো আমাদের আলমারিতে ।
আমার আয়োজন শুরু হয়েছে , উঠোনে ঢাক বাজবে 
একা এক ঢাকুরে ফাঁকা স্টেশনে বসে  , হয়তো অপেক্ষায় .........

কাজী জুবেরী মোস্তাক






কবি পরিচিতিঃ
নামঃ  কাজী জুবেরী মোস্তাক
জন্মঃ ১৯৮৩ সালের ২১এ সেপ্টেম্বর ।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বি,এ পাস  ।
পারিবারিক জীবনঃ পিতামাতা ও ছোট এক ভাই পিতা ছিলেন একজন সরকারী কর্মচারী ও একজন সংগীত শিক্ষক , মা পুরোপুরি গৃহিণী ৷
স্ত্রী এক পুত্র এবং এক কণ্যা সন্তান নিয়ে পারিবারিক জীবন  ।
পেশায় একজন সরকারী চাকুরীজীবি
সাহিত্য কর্মঃ ১৯৯৮ সাল থেকেই অনিয়মিত  ভাবে লেখালেখির  সাথে জড়িত ।
দৈনিক পত্রিকা , সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন সাময়িকী ম্যাগাজিনে বিভিন্ন সময় কবিতা ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে ৷ এখন পর্যন্ত কোন একক বই প্রকাশিত হয়নি তবে বিভিন্ন সময়ে যৌথ কাব্যগ্রন্থেই লেখা প্রকাশ হয়েছে যেমনঃ
শতকের স্বপ্ন প্রাপ্তি
ভোরের পাখি
শততারা
হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু
বিশ্ব সাহিত্য ও কবিতা সম্ভার 


শখঃ পড়া ও লেখা, আড্ডা, ভ্রমণ ।

সাক্ষাৎকার 
***********



১:- আপনার কাছে কবিতা কি ? 
উত্তর :- কবিতা আমার কাছে একটা অস্ত্র যে অস্ত্র দিয়ে মানুষের রক্তে আগুন জ্বালানো সম্ভব, সম্ভব জলন্ত দাবানল নিভিয়ে ফেলা ৷

২:- আপনার প্রিয় কবি কে ? আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উত্তর:- আমার প্রিয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ৷
আমার বিবেক এবং দ্বায়বদ্ধতাই আমার অনুপ্রেরণা ৷

৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ? 
উত্তর:- কবিতা লিখি জেগে ঘুমিয়ে থাকা মানুষ গুলোকে সজাগ করার জন্য ৷

৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত) 
উত্তর:- আমার প্রথম কবিতার নাম " শহীদ মিনারের গল্প "
কবিতাটা লেখার ৮ বছর পরে শতকের স্বপ্ন প্রাপ্তি নামক বইয়ে কবিতাটি স্থান পায় বইটি যৌথ ছিলো ৷

৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ? 
উত্তর:- কবি বা কবিতার সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক হওয়া উচিত অক্সিজেন এবং কার্বনডাই অক্সাইডের মতো কবি বা কবিতা ছাড়বে পাঠক গ্রহণ করবে আবার পাঠক ছাড়বে কবি বা কবিতা বেঁচে থাকবে ৷

৬:- ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ? 
উত্তর:- মানুষ এখন আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হতে শিখেছে , প্রযুক্তির এই যুগে ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্য জগৎকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে বা করা শুরু করে দিয়েছে ৷ তবে হ্যাঁ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা অনেক গ্রুপ আছে যেগুলো সাহিত্য জগৎকে কলঙ্কিত করতে পারে ৷

৭:-ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?
উত্তর:-তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ ছাপা ম্যাগাজিন এর চাইতে ব্লগ বা ওয়েব ম্যাগাজিনের দিকে ঝুঁকছে ৷ আমি মনে করি প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ব্লগ বা ওয়েব ম্যাগাজিনের গুরুত্বটাই বেশি ৷

৮:-আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর:- ভালো বই বা ভালো লেখার পাঠক নেই তা না পাঠক প্রচুর আছে ৷ তবে মূল সমস্যা হলো প্রত্যেকেই নিজেকে কবি বলে দাবি করি ঠিকই কিন্তু পাঠক কি চায় তা তারা জানেনা বা বোঝেনা ৷ একজন পাঠকের চাহিদা যদি কবি বা সাহিত্যিক বুঝতে পারে তবে অবশ্যই পাঠক বই পড়বে ৷
প্রকাশকরা এখন প্রতিভার মূল্যায়ন করেনা তারা চিন্তা করে একজন নতুন লেখকের বই কেনো একজন পাঠক পড়বে? যদি না পড়ে তার লগ্নিকৃত অর্থ জলে চলে যাবে ৷
একজন প্রকাশককে অবশ্যই আগে বিচারিকজ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে সঠিক পান্ডুলিপি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তবেই পাঠকের চাহিদা মাফিক লেখা পাঠক পড়তে পাড়বে এবং বই মুখি হবে ৷

৯:-উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ? 
উত্তর:-দাত ভাঙা গুটি কয়েক শব্দ জুড়ে দিলাম আর এটা উত্তরাধুনিক কবিতা হয়ে গেলো আমি অন্তত এটা মনে করিনা ৷

১০:- গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তর:-গদ্য কবিতা নির্দিষ্ট বিষয়ের ভিত্তিতেই শুরু হয় এবং শেষ হয় ৷ তবে নির্দিষ্ট ছন্দ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন ৷ আর গদ্য-পদ্য কবিতায় অবশ্যই তাল এবং ছন্দ জরুরী ৷







কিছু কবিতা 
************



সব তন্ত্রের একই মন্ত্র
*******************
 

কানের ঠিক কিছুটা উপরে একটা পিস্তল তাক করা ,
সামনে সাজানো রয়েছে বিশাল এক পেটোয়া বাহিনী ,
পিছনেও পড়ে আছে রাজ্যের তামাম রক্ষি বাহিনী ;
কারনতো একটাই জনতাকে ওদের মতো
করতে না পারা ৷

গণতন্ত্র নামক এক দিল্লিকা লাড্ডু ঝুলিয়ে রাখা সামনে ,
একনায়কতন্ত্রকেও বৈধতা দিয়ে;নাম তার অাজ গণতন্ত্র ,
স্বার্বভৌমত্ব ভেবে ছিনিয়ে নিয়ে দেখি সেও এক ষড়যন্ত্র ,
সব তন্ত্রেরই ঠিক একই মন্ত্র যা জনতার 
কাপর খোলে ৷

স্বৈরাতন্ত্রের নিয়মিত চলাচল আজকে আমার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ,
স্বাধীনতা'তো হলো এক ট্রাম কার্ড তার জুয়ার টেবিলে বসে ,
সব তন্ত্রকেই দেখি দিনের শেষে স্বার্থতন্ত্রেই 
গিয়ে মিশে ,
বাম ঘরামী স্বভাব আমার সেতো শুধুই আপন দম্ভে ৷


মৃত্যুদন্ডের দাবি 
***************


আমি অমরত্ব নিতে আসিনি
আমি আমার মৃত্যুদন্ড নিতে এসেছি ,
আমি জানি এখনই আমাকে বন্দী করা হবে
শেকল পড়ানো হবে আমার উন্মুক্ত হাতে পায়ে ৷
আমি জানি আমি দেশদ্রোহী ,
তোমরা কতোটা দেশ দরদী বলবে ?
আমার টাকা চুরি করে গড়েছো অট্টালিকা
তাতেও আবার বসিয়েছো দেখি সিসি ক্যামেরা ৷
আমি জানি আমি সংখ্যালঘু ,
কারন বিদ্রোহী হয়ে জন্মায় খুব কম ,
আর যারা বিদ্রোহী লাশ থাকে তাদের ডোবা,নালায়
তাদের নিস্তব্ধ দেহতে শেয়াল শকুনেরাও মচ্ছোব চালায় ৷
আমি জানি আমি একা ,
কারন আমি কোন দুর্নীতিবাজ না ,
পেনশনের ফাইল আটকে হাত পেতে দিইনা
অথবা অন্যায়ের সাথে আমি আপোষহীন চলি তাই একা ৷
মধ্যরাতে আমার ছবি যাবে প্রেসে ,
আমার কন্ঠ রোধ করতে ক্রসফায়ার হবে ,
শিরোনামে থাকবে আমার মৃত্যু হয়েছে বন্দুক যুদ্ধে
আর পা চাটার দলেরা তখন চায়ে টোস্ট ভিজিয়ে খাবে ৷
আমি অধিকার চাইতে এসেছি ,
নির্যাতিত নিপীড়িতের কথা বলতে এসেছি ,
মনে রেখো আমাকে হত্যা করলেই সব শেষ হয়ে না !
১০মাস ১০দিন পরে আবারো অামার জন্ম হয় অন্য কোন গর্ভে ৷



আপন স্বার্থে দ্বন্দ
****************


অঘোষিত এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি আজকে ,
প্রতিনিয়তই এক স্বার্থ যুদ্ধ চলছে পৃথিবীতে ,
ইরাক,প্যালেষ্টাইন আজও জ্বলছে সেই দ্বন্দে ,
কাশ্মীর আজও স্বার্থের দ্বন্দে রক্তা রক্তি খেলে ৷
তিব্বত আজও নিষিদ্ধ তাই অজানাই রয়ে গেছে
স্বার্থের দ্বন্দে আফগানীরা ঐ তালেবান হয়ে গেছে ,
সিরিয়াও তাই আপন গৃহেই আজও বন্দী পরে আছে ,
আর আই,এস,আই সেখানে করা পাহারায় বসে আছে ৷
শান্তির পতাকা হাতে স্বার্থপর ঐ ছুটছে দেশ বিদেশে ,
ধর্মের কথা বলে ঐ স্বার্থপরই আবার অধর্মের গান গাইছে ,
ওদের স্বার্থেই মানুষ আজ দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে
আপন স্বার্থে দেশে-দেশে সবাই যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে ৷
কখনোবা নিজের স্বার্থেই দ্বন্দে জড়িয়েছ তুমি আমাকে ,
আবার কখনো সে স্বার্থে যুদ্ধেই জড়িয়েছি আমি তোমাকে ৷
অস্ত্রের মুখে বিরোধীতা করবে বলো কার সাধ্য আছে?
তবুওতো কেউ না কেউ গর্জে উঠবে হয়তো সেটাও আপন স্বার্থে ৷




যেদিন তর্জনী উঠবে 
******************



আমার পক্ষেও একদিন তর্জনী উঠবে
রাস্তার মোড়েও সেদিন পিকেটিং হবে ,
ছাত্র জনতা মিলে রাজপথ দখল নিবে
ঝড়ো স্লোগানে চারিদিক মুখরিত হবে ৷

আমার পক্ষেও একদিন কেউ দাঁড়াবে
কাঁধে কাঁধ রেখে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে ,
ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে পাশে দাঁড়াবে
ন্যায়ের পক্ষে বুকটা টান করে দাঁড়াবে ৷

আমার পক্ষেও একদিন ওরাই লিখবে
যে কলম আজকে ভয়ে পকেটে আছে ,
সংবাদপত্র সেদিন আবারো সরব হবে
টিভি রিপোর্টাররাও ছুটে চলে আসবে ৷

আমার জন্যও কোন মা সিজদায় রবে
আবার কোন মা ঠাকুর ঘরে পড়ে রবে ,
কেউ রোজা রবে ,কেউবা রাখি বাঁধবে
জয়ীও হবো ওদেরই দোয়া আশির্বাদে ৷

একদিন ওরা ঠিক সংগ্রামী হয়ে যাবে
দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি জ্বলে উঠবে ,
অন্যায়ের প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে
নিজের অধিকারও আদায় করে নিবে ৷




যাচ্ছি কিন্তু যাচ্ছিনা 
******************


তবে তাই হোক তোমাদেরই জয় হোক
আমার নাহয় ব্যারাকেই ফিরতে হোক
আমার জন্য দরকার নেই কোন শোক ৷

জয় হোক আজকে ওদেরই জয় হোক
যারা ভঙ্গুর সমাজে রক্তখেকো জোঁক
আমরা নাহয় হলাম আজ ছোটলোক ৷

বেঁচে থাকো তোমরা শতাব্দীর সমদিন
বিবেকের কাছেই থাক তোমাদের ঋণ
শতায়ু হোক তোমাদের বাঁচার এইদিন ৷

আজকে আমরা ব্যারাকে ফিরে যাবো
আমাদের যাই আছে জমা দিয়ে দেবো
দেশপ্রেম আর প্রতিজ্ঞাটা রেখে দেবো ৷

আজকের মতো হয়তোবা ফিরে যাবো
নতুন করে আবারও সব গুছিয়ে নেবো 
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে স্বপ্নটা সাজাবো ৷




কিছুই অবশিষ্ট নেই 
*****************


এখানে আজ আর কিছুই চাওয়ার নেই 
এক সুশৃঙ্খল সমাজ চাইতে গিয়ে দেখি ! 
সে সমাজ উশৃঙ্খলতার আগুনে পুড়ছে
অথচ সমাজপতিরা আলু পোড়া খাচ্ছে ৷

এখানে আজ আর কিছুই পাওয়ার নাই 
সস্তায় আজ যা মেলে তা শুধুই উপদেশ ,
নয়তো নেতাজীদের মিথ্যে আশার বাণী
আর কৃত্তিমতায় ঝড়ানো চোখের পানি ৷

এখানে আজ স্বপ্ন দেখাই যেনো দুঃস্বপ্ন 
ইচ্ছাগুলো গলাটিপে হত্যা করছি রোজ ,
স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন প্রতিদিন হয় নিখোঁজ 
আর ; সমাজপতিরা দেখায় মিছে দরদ ৷

এখানে আজ বেঁচে থাকাটাই বিলাসিতা 
আর মৃত্যু সেতো আজ একেবারেই সস্তা ,
জীবন সাজাতেই জীবন আজকে মরিয়া 
অথচ মৃত্যুকে রাখি বুকপকেটে ঢাকিয়া ৷

এখানে আজকে কেউই ইতিহাস ঘাঁটেনা
ক্ষমতা আর অর্থ দম্ভই যেনো মূল চেতনা
মগজেও লালন করে নোংড়া চিন্তা,ছলনা
অথচ ভাবটা তার ; সে ধোয়া তুলসিপাতা ৷




আমার চাওয়া 
*************




বুক সেল্ফে বন্দী পড়ে থাকা গণতন্ত্র আমার চাইনা ,
যে গণতন্ত্রর মুখোশে স্বৈরাতন্ত্রর বাস তাকে চাইনা ,
বুক ফুলিয়ে যে গণতন্ত্রে কথা বলা যায় তাকে চাই ৷

পর্দার আড়ালে বিদ্রোহী কবিতা আবৃতি করবোনা ,
জনমঞ্চে দাঁড়িয়ে পাঠ করতে চাই বিদ্রোহী কবিতা ,
আজকে আমি আমার বাকস্বাধীনতার মুক্তি চাই ৷

রাজনীতির পকেটে বন্দী গণতন্ত্রকে অামার চাইনা ,
হাতে-পায়ে শেকল জড়ানো কথিত গণতন্ত্র চাইনা ,
মুক্ত বিহঙ্গের মতো সতন্ত্র হয়ে উড়ার গণতন্ত্র চাই ৷

যে সংবিধান স্বাধীনতার মুক্তি দেয়না তাকে চাইনা ,
যে সংবিধান রাজনেতার হয় জনতার না তা চাইনা ,
আমার সংবিধানে আমার জন্য বলার ক্ষমতা চাই ৷

যে আইন দূর্বলের না হয়ে সবলের হয় তাকে চাইনা ,
ক্ষমতা অার টাকায় বিক্রি হওয়ার আইনও চাইনা ,
আমার আইন সেতো ভরসা ও আস্থার হওয়া চাই ৷

আমার দূর্বলতাকে পূঁজি করে দুর্নীতি হতে দেবোনা
আমার ন্যায্য হিস্যায় অনিয়ম হবে তাও মানবোনা
দুর্নীতিহীন অধিকারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া চাই ৷






আমি যা চাই 
************



তোমাদের বাক্সবন্দী স্বাধীনতা আমি চাইনা
আমি শুধু মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে চাই ,
যে হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে না বারুদের গন্ধ  
অাবার ; পঁচা লাশের গন্ধও নাকে লাগবেনা ৷

অবচেতন মনের চেতনাবাদ আমার চাইনা ,
আমিতো শুধুই আমার আগামী ফেরত চাই ,
অনেক হয়েছে এবার এ ব্যবসা বন্ধ করো
বিশ্বাস করো ধোঁকাবাজি আর সহ্য হয়না ৷

নীতিহীনদের নীতিকথা আর শুনতে চাইনা
ওদের গালগল্প , ভন্ডামি আর কত সইবো ? 
আমিতো শুধুই দূর্নীতিমুক্ত এক সমাজ চাই ,
নীতি আদর্শহীন ভাবে আমি বাঁচতে চাইনা ৷

আমি বাক প্রতিবন্ধী হয়েতো বাঁচতে চাইনা ,
আমিতো শুধু উচিত কথাগুলো বলতে চাই ,
আর চাই ; ন্যায্য পাওনা চাওয়ার ক্ষমতাকে
বলতে গেলে কণ্ঠ চেপে ধরবে তা মানবোনা ৷






পুরোনো শহরের স্মৃতি
********************




একদিন আমিও ছিলাম তোমার পুরোনো শহরে 
আমারও বসতভিটা ছিলো তোমার পুরোনো সে 
শহর জুড়ে ৷

ভালোবাসাময় এক যৌথ খামার ছিলো সেখানে ,
দুয়ার ছিলো ; ছিলো জানালা ভরা প্রিয় আকাশ 
আর তুমি ছিলে ৷

আমার অপেক্ষাতেই বন্দী থাকতে ভেতর দুয়ারে
কখন ফিরবো আর কড়া নাড়বো খামারের সেই 
বন্ধ দুয়ারে জোড়ে ৷

আজও স্বপ্ন দেখার স্বপ্নেরা আছে তোমার শহরে ,
শূন্যতা আর হতাশার যৌথ গ্রহণ চলছেই আজও
আমার শহর জুড়ে ৷

যে শহরে একদিন ছিলো ভালোবাসার মাদকতা
সে শহর আজকে ভালোবাসাহীন ; আছে শূন্যতা 
আর ব্যার্থতা ৷

তোমার শহরে আজ জানালা ভরা প্রিয় আকাশ ,
আর আমার শহরে আজও পাওয়া না পাওয়ার 
যন্ত্রনার বসবাস ৷

তোমার শহরে তুমি তোমার মতো ভালো থেকো ,
অামিও ভালো থাকার অভিনয়টা আমার মতো  
শিখে নেবো 





আমি তোমার দখলে 
*******************


যতোই সময় যাচ্ছে 
তোমার ওজন বেড়ে যাচ্ছে
তুমি জেকে বসছো এ অন্তরে ,
প্রতিনিয়ত তোমার বিস্তৃতি ঘটছে
তুমি দখল নিয়েছো এই অম্তরে ৷
যতোই সময় যাচ্ছে 
তোমার আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে
ছায়ার মতো থাকছো আমার পাশে ,
আর তোমার বসতি গড়ে উঠছে 
আমার এই ভাংগাচুরা অন্তর জুড়ে ৷
যতোই সময় যাচ্ছে
আমি হারিয়ে ফেলছি নিজেকে
তোমাকে দেখছি সারা সত্তা জুড়ে ,
নির্ভরশীল হচ্ছি তোমার উপরে
ঠিক পরজীবিদের মতো করে ৷
যতোই সময় যাচ্ছে
বেওয়ারিশ চর দখলের মতো করে
আমিও যাচ্ছি তোমার পূর্ণ দখলে ৷



সাক্ষাৎকারে : জ্যোতির্ময় রায়

গোপাল চন্দ্র সাহা





বিপ্রতীপ  
*******





চাঁদের এ'পিঠে গল্পের ইলসে গুড়ি জ্যোৎস্না 
অলিন্দের জাফরানি আলপনায় 
মৃদুল ছন্দ তল্লাশে, 
স্নিগ্ধ প্রত্যাশা জমিয়ে
রাত্রি কঙ্কণে কেটে যায় ঋতুর গমনাগমন
শুভক্ষণী প্রাঞ্জল অন্তরাগে

উৎসুক চাহনি থমকে যায় যেখানে 
চাঁদের ও'পিঠে
শূন্যতার বিক্ষিপ্ত ঝড়ে পেচিয়ে যায় সন্ধ্যাচারী
সেখানে এক খন্ড মেঘ আলেয়া ছায়ায় হাঁটে 
তাল রেখে নিরুদ্দেশে
আর ক্রমাগত পুড়ে যায় 

দুকুল ছাপিয়ে প্লাবিত কথারা ঘেমে ওঠে
ধমনীর গোলাপী অথবা বিবর্ণ কোলাজে

ধীরে ধীরে এ'পিঠ আর ও'পিঠ
দুই বিপ্রতীপ ডুবে যায় কোন একক প্রদর্শনে 
ঘন অমা-রস কল্লোলে  ।।

পলি ঘোষ




মন
****



মন এমনই এক আশ্চর্য অনুভূতি যা কিছু সবার সাথে শেয়ার করা যায় না! কিছু এমনই প্রতিচ্ছবি এঁকেছি আমার মনের অন্তরালে! যা কেবলই ছুঁয়ে যায় আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে অন্তরে অভিমানে কেঁদে যায় দূর হতে আর এক আশ্চর্য অনুভূতি আকুলতা বিশ্বাস অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় সদস্য হতে! জানি আমি সে কেবলই আমার একরাশ আন্তরিক অভিনন্দন আমার বন্ধু হবে!

অমৃত বাণী সোনাই যখনই দেখি মনটি উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে অবাক নয়নে নয়ন মেলে! আজ সে বলে মনে মনে ভাবলাম আমার সারা জীবনের সঞ্চয় অনুভূতি সকল ইচ্ছা তোমারই চরণে নিবেদন করতে করতে আজ আমি এক আশ্চর্য লাবণি ক্লান্ত পথিক! যা কিছু নিরবে চোখের অশ্রু ঝরে যায় উত্তরার মত কিছু করে!

জানি মনের নাকি দুটো সন্তান !এক হলো কু মন আর অপরটি সু মন! যখন নাকি কু মন খুব আকুল হয়ে উঠে কোনো মানুষ খারাপ ব্যবহার করে! আর সু মনের জোরে মানুষ প্রতি দিন পবিত্র কিছু ভালো কাজ করতে ব্যাস্ত হয়ে ওঠে!

আমার মনে তো সব অপমান জ্বালা সহ্য করে ও কারো খারাপ করার চেষ্টা ও করি না! আমার মন তাই বলে উদ্ভুত ঈশ্বর বিচার!

আজ আমি ধন্য মনে মনে পেরে আনন্দিত হলাম নিজেকে নিজেই আবিস্কার করতে পেরে! এ এক আশ্চর্য অনুভূতি আমার জীবনে!

দীপান্বিতা বিশ্বাস



তামসী
******





মেকী শহরের মিথ্যে ভালোবাসা--
ইতস্তত ঘুরছে ট্রামলাইন ঘেরা রাস্তায়।
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে কিছু মিথ্যে প্রতিস্তুতি,
নিয়ন আলো ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে নোংরা গলির অন্ধকারে।
আবেগী নৌকারা বটবৃক্ষের তলায় স্থির দাঁড়িয়ে অবহেলার আস্তরণ মেখে,
গঙ্গার প্রতিটা ঢেউয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে শত অপেক্ষামান রংমশাল।
নীলকণ্ঠী পাখির বোবা কান্না চাতকের মতো চেয়ে আছে,
শ্মশানে এককোনে পড়ে থাকা নিথর দেহের দিকে।
কবিতা থেকে বেরিয়ে কিছু প্রেত খুঁজে চলেছে--
"বাঁচার ঠিকানা"।
ছাইরঙা গ্রিলে গ্রাস করেছে অন্ধকারের ছন্দবানী..
মাটি ফুঁড়ে ওঠা সবুজ অঙ্কুরকে গিলে খেয়েছে কিছু রাক্ষুসে শিকড়।
শ্যামলা মেঘের দোলদুলানি অনেকটা কমে গেছে চলমান ব্যস্ত জীবনে,
হলুদ কদমফুল গুলো শুকিয়ে গেছে বৃষ্টির অভাবে।
ভালোবাসার প্রতিটা ছটা কাঁপছে কামারের গরম হাতুড়ির অগ্নিস্ফুলিঙ্গে...
আর কিছু রুদ্ধশোক হাত পা বেঁধে পরে আছে রেললাইনের ইস্পাতে।।

বৈশাখী দাস



গল্প নয়
*******

গল্প তো সবারই থাকে।কারুর গল্পে গণনারা হাঁতড়ায় 'আগামী',জন্মতারিখের হরোস্কোপে।কারো আবার, চিতাভস্মের দহনে অশ্রুর আর্দ্রতা ঢালতে ঢালতেই এগোয় যাপনচিত্র।কেউ কেউ সুখ-দুঃখের সমান্তরালেই আঁকে গল্পের সঞ্চারপথ।কেউ, স্থিরচিত্রে থেমে থাকা প্রশ্বাসহীন মুহূর্তে রেখে যায় অসমাপ্ত গল্পের উত্তরাধিকার।গল্প তো সবারই থাকে।স্বপ্নসম্ভবা রাত্রিও জমায় আকাঙ্ক্ষিত ভোরের গল্প।গল্প কি শুধুই বাক্যবিনাসে,কল্পনায়,অলঙ্করনে?কলমের কৌলীন্যে,শব্দের অনুরণনে?ছুঁয়ে দেখো, নৈঃশব্দ্যেও লেগে থাকে কি নিবিড় গল্পের ঘ্রাণ!
   

বৈশাখী চ্যাটার্জী




পুজো এলে
**********



পুজো এলে -পুরনো উঠোনটায় একটা স্থলপদ্মের গাছ মনে পরে ।
ফ্রক পড়া একটা মেয়ে -ঝুড়িতে স্থলপদ্ম গুলো সাজিয়ে দুর্গা মণ্ডপে নিয়ে যেত পুজোর চারটে দিন ।
ষষ্ঠীর সকালটা কি দারুণ প্রত্যাশা নিয়ে আসত ।
মণ্ডপে তখন ব্যস্ততার চূড়ান্ত প্রস্তুতকরণ  ।

বাবা বলতেনা -'মা এসে গেছে ষষ্ঠী তলায়' । 
মেয়েটা কোথায় যে খুঁজবে সেই ষষ্ঠীতলা বুঝেই পেতনা ,
তবু অলীক স্বপ্ন সাজিয়ে নিয়ে দেখত কোন একটা গাছের তলায় মা দুর্গা দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে । পুলক লাগত মনে --!

শরৎকালীন সকালগুলো নদীর চর ধরে আজও আসে ।
ফ্রক পড়া মেয়েটা প্রবাহিনীর চরের ওপর  সাদা কাশফুলের পথে হাঁটতে হাঁটতে কখনো যেন বদলে গেলো ।
বদলে গেলো মহালয়ার ভোর ,
শরৎ আকাশ -
কাশফুল -
এমনকি দুর্গাপুজোর মন্ডপটাও  ।

পুরনো উঠোনটা এখন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো ।
স্থলপদ্ম আর ফোটে না ।
মেয়েটাও আর এ পাড়ায় আসে না পুজোতে ।
তবে তার চোখ এখনও সাদা সাদা মেঘে,  সাদা কাশফুল খুঁজে বেড়ায় ।
উঁকি মেরে খুঁজে আনতে চায়-
সেই সকালটা -ঢাকের শব্দ , নদী থেকে ঘট তুলে আনা , কলাবউ এর স্নান ।

চণ্ডীপাঠের শব্দ ভেসে আসলে -!
রোমকূপে কেমন শিহরণ হয় ,
মনে পড়ে,  দূরে অনেক দূরে একটা ফ্রক পড়া মেয়ে ।
অমনি আনমনে কেঁদে ওঠে ভেতরটা ।
শারদ সকালগুলো এখন নতুন শহরে ভাসে ।
ফ্রক পড়া মেয়েটির মুখে , মনকেমনগুলো সাদা কাশফুল হয়ে এখনও দিব্যি হাসে  ।

                   

তুলি রায়





বেলা অবেলা কালবেলা
******************



যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে খেইগুলো
মাঝ দরিয়ার তরী
উড়ছে শুধু ছাই
চিত্রনাট্যের নাটকীয়তায়
প্রলাপ সংলাপগুলো
মাখছে বিসর্জনের মাটি
আবাহনের থেকে বিসর্জন অনেক সহজ ছিল
যবনিকার পরেও জেগে থাকে উপন্যাসের আলো
যতটা আঁধার
তার থেকেও তীব্রতর হয় মুহূর্তমগ্নকাল
কাল-আকালের লীলায়
বাঙ্ময় হয়ে থাকে
আমাদের যাবতীয় ধূসর বার্তালাপ


                                     

লগ্নজিতা রায়






টাকার সম্পর্ক
***********



কুঁড়েঘরে জন্মানো একবেলা না খেয়ে থাকা
ওই শিশুটাও মা'য়ের অর্থ বোঝে,
দিন পেরোলে মা'য়ের আঁচলে মাথা পাতে,
জ্বরের সময় বদ্যি লাগেনা,মা'ই যথেষ্ট

অপরদিকে ফ্ল্যাটবাড়ির ওই শিশুটা 'মা' বলতে
মাদার্স ডে তে কিংবা চিলড্রেন্স ডে তে
 উপহারের মধ্যে মা'য়ের সুখ খোঁজে;
স্কুল থেকে ফিরেই সে জানে তাকে টিউশনে যেতে হবে,
সামনের মাঠটা তার খেলার জন্য নয়
ওখানে তো বস্তিবাড়ির ছেলেরা খেলে;

আমরা দোষ এড়াই কাজের অযুহাতে,
টাকা দিয়ে শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ি হোস্টেলের চারগন্ডির মাঝে,
এভাবেই তারা একদিন গড়ে ওঠে উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার,
যেন ইতিহাসের চাকার মত
দায় এড়াতে তারাও একদিন আমাদের ঠিকানা খোঁজে
বৃদ্ধ কোনো আবাসনে ।।

অমিত কুমার দাস



তোমার কি ইচ্ছে হয়না সর্বনাশ করতে?
***********************************



প্রতিদিনের গল্পগুলো লেখা থাকে ডায়েরিতে,
কথাকার থাকেন নামে বেনামে।
তুলতুলে বালিশে খটখটে মাথায় সর্বনাশী চিন্তা,
ভালোলাগার পরশে আবারও মাথা হয় তুলতুলে।

ওই লোকটাকে দেখেছ?যিনি একগোছা ঢেঁকিশাক তুললেন?বাড়িতে স্মিতহাস্যে বলবেন 'কিনে আনলাম'।

সেই বাবাটাকে দেখেছ?যিনি কাঁধের ব্যথায় কুপোকাত হয়েও চিনিকলে কাজ করে চলেছেন?ছেলের জন্য হরলিক্স আনবেন বলে!

পৃথিবীর কতরুপ তাইনা?
এসব দেখে তোমার কি ইচ্ছে হয়না সর্বনাশ করতে?
আবার নতুন করে গড়তে?

চিরঞ্জিত সাহা




তৃষ্ণা
******




দেয়ালের স্রোতে ধোঁয়া টিকটিকি সাজে ,
আদিম আরশি হাসে শরীরের খাঁজে
প্রেমহীন যৌনতা কন্ডম যুগে ,
মিশছে রক্তে নেশা,বিষের হুজুগে ।
সূর্য দেবতা কুন্তীর যোনি চিরে
সাদরে কুলীন মধ্যমাদের ভিড়ে ,
আটকে পার্থ ঊর্বশীর ওই বুকে
বৃহন্নলা ঘুমপাড়ানি বন্দুকে ।
তবু বনলতা আসে ঘৃণ্য স্বভাবে
ক্লিওপ্যাট্রারা হাসে ভুলের হিসেবে ,
হস্তমৈথুনের ক্লান্ত দুপুরে
তোর স্মৃতিদের ভিড় কেন কারাগারে? ?

রিয়া ভট্টাচার্য






ধর্মের দোহাই

 

আমরা ধর্মের সওদা করি,
ধর্ম ধুয়ে খাই....
আচ্ছা বলো চণ্ডীচরণ;
মানুষ কোথা পাই!!
ধর্মের নামে মানুষ নিধন....
বলি - কুরবানী সার,
ঈশ্বরকে কি পেয়েছ খুঁজে?
জানি পাওনি, মিথ্যে কপচেছ বেদ - কোরান '
আসলে তোমরা মানুষ চিনতে চাওনি।
দম্ভে করেছ পুঁথির বিচার....
শিক্ষা চিবিয়ে হয়েছ তোতাপাখি, 
আদপে বিচার করেছ প্রথাগত ডিগ্রির '
ভুয়ো ঔদ্ধত্যে ছোঁওনি মাটি।
তোমরা যারা পশু মারো ' গা ফুলিয়ে বলো "মোরা জায়েজ খিদমতগার"... 
আসলে তোমরা ঈশ্বর দেখোনি ' তার হয়না রক্তের দরকার।
বেদ - পুরাণ বলে এসেছে ঈশ্বর সবার পিতা,
তবে বলো হে মূর্খ ধর্মধ্বজী বলির কিবা প্রয়োজনীয়তা?
কুরবানী করে উল্লাস করো, গরীবের নামে দোহাই...
বলো কগ্রাস অন্ন জুগিয়েছ তার মুখে;
মনুষ্যত্বের করো বড়াই!!
খাদ্যশৃঙখল মিথ্যা নয়,
নয় মিথ্যা খাদ্য - খাদক আস্ফালন....
তবে কেন যুক্ত করো তাকে ঈশ্বরের সাথে??
দোহাই দেওয়ার কিই বা প্রয়োজন!!
আমি অত ধর্ম বুঝিনা..... 
বলতে পারো বিধর্মী কোনো কাফের,
হিন্দু - মুসলিম মানিনা ভেদ ' তুলে ধরি শুধু স্পষ্ট ছবিখানা,
এবার নাহয় মানুষ হও ; তবেই পাবে প্রকৃত ঈশ্বরের ঠিকানা।।

সুষ্মিতা কর





সমাজ
******



ক্ষুরধার লেখনীর আজ ভীষণ অভাব
অভাবই এ যুগের দেশবাসীর স্বভাব।
সাড়ে তিন বছরের শিশুর দেহে ছুঁচের অস্তিত্ব;
ধর্ষনের পূর্বে যৌনাঙ্গের মুখ কেটে বড় করার কৃতিত্ব
বা কামদুনিতে পৈশাচিক যৌনতার প্রমাণ
বার বার স্মরণ করায় নির্ভয়ার যন্ত্রণা, নারীর অপমান।
কোথায় এ সব আজ বুদ্ধিজীবীদের লেখায়?
না কি ভাবনাগুলো এখনও সৃষ্টি হয়নি মাথায়?
কেউ কি বাক্ স্বাধীনতাকে সংবিধান থেকে মুছে ফেলল?
না কি সংবাদপত্রের পাতার সংখ্যা কমে গেল?
ভুল পৌরুষত্বের সুযোগ নেওয়া?
না কি লিঙ্গবৈষম্যকে প্রশয় দেওয়া?
প্রতিবাদ না করে চুপ করে যাওয়া
একেই কি বলে আগুনে জল সিঞ্চন করা?
এই সব ধারণা ত্রুটি দিয়ে গড়া
নিঃশ্বাসও নেয় না এ সব ছাড়া!
নিশ্চুপতা যখন ঘি হয়ে যাবে
এক চামচ ঘি-ই যজ্ঞকে পুনঃজীবন দেবে-
দাবানল ডেকে আনবে কলুষিত হওয়া লাজ
পুড়ে ছাই হয়ে যাবে তখনই বিভীষিকাময় সমাজ।

শুভম রায়




শরৎ
-------


আকাশে সূর্য ডুবল, 
ঘনিয়া নামল আঁধার ।
দূরে দূরে জঙ্গলে - 
মাঝে মাঝে জ্বলে 
ওঠে বাতি।
গ্রামের মাঝিরা নৌকা 
ঠেকায় পাড়ে।
সবুজ ঘাসের সাদা বাগান, 
দোলায় মাথা বায়ুর সাথে ।
শরতের ঠান্ডা বাতাস 
করে তোলে স্নিগ্ধ পরিবেশ ।
এই শরতেই আসবে, 
মোদের দুগ্গা মা ।
শরতের শুভেচ্ছা জানাই বাংলাবাসী কে ।


(ষষ্ঠ শ্রেণি ।
জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় ।)

শুভজিৎ কোলে






কেও প্রতিবাদ করব না
================


স্বার্থের রাজনীতি,
ধর্মীয় উস্কানি,
মানুষে মানুষে বিভেদ,
রক্তাক্ত পথ ঘাট,
অশিক্ষার অন্ধকারে,
দেশ ভাগের চক্রান্ত,
এসবই ঘরে বসে বসে
তুমি আমি দেখব।
তবুও কোনো প্রতিবাদ করব না।
তুমি আমাকে বলবে
দ্যাখো তুমি এসব ব্যাপার নিয়ে,
রাস্তা ঘাটে কনো আলোচনা করোনা।
আমিও তোমাকে বলব
শোনো কারোর কাছে তুমি এইসব
ব্যাপারে আলোচনা করোনা।
আক্রোশে ফেটে যাবে বুকের ভিতরটা,
তবুও কোনো প্রতিবাদ করবনা।
তোমার ভেজা ঠোঁটে,
আলত চুম্বন দিয়ে শুয়ে পড়ব
রাত ঘুমের আশায়।
ঘুম আসবে না।
তোমারও না আমারও না।
মাথার ভিতরটা
গোলতাল পাকাবে।
দুজনে দুজনকেই বলবো
কি হলো এখোনো ঘুমাওনি?
রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পড়।
পরের দিন রাস্তা ঘাটে নিস্তব্দ,
কেউ কোনো প্রতিবাদ করবে না।
তোমাকে কথা দিয়েছি,
তাই আমিও প্রতিবাদ করব না।
তুমিও কথা দিয়েছো আমাকে,
তাই তুমিও প্রতিবাদ করবে না।