নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

স্বরূপা রায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
স্বরূপা রায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

স্বরূপা রায়








এই রাত
*******




রাত এখন বেড়ে চলেছে,
নিঁঝুম হলো এই পৃথিবী।
ঘুমিয়ে পড়েছে সবকিছু,
শুধু জেগে আছি আমি।
মাঝে মাঝে স্তব্ধতা ভাঙছে,
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে।
পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি মারছে,
গাছের ডালের ফাঁকে।
চারিদিকে চলছে এখন,
আলো আঁধারের খেলা।
আকাশ জুড়ে বসেছে,
অজস্র তারার মেলা।
অন্ধকারে ফুটে উঠেছে,
হাজার জোনাকির আলো।
রাতের এরূপ দেখলে,
কে বলবে রাত হয় কালো!


স্বরূপা রায়






বিসর্জনের সুর
*************




"কি রে, আজ তোকে খুব খুশি খুশি লাগছে।" ত্রিদীব বললো অংশুমানকে।
"ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে, বাড়ি যাচ্ছি ভাই।" খুশি হয়ে বললো অংশুমান।
"তাই নাকি? আমার পরশুদিন থেকে।"
"তোদের তো নবরাত্রী আর দশেরা। আমাদের তো মহালয়া থেকে পূজো পূজো রব শুরু। প্রতি বছর মহালয়া থেকেই কত ব্যস্ত থাকতাম পাড়ার প্যান্ডেলে। এবার তো তাও সপ্তমীতে যাচ্ছি।"
"আমাদের নববাত্রী নয়দিন ধরে বাড়িতে পালন হয়। বাড়িতে এই সময় পরিবেশই আলাদা থাকে। এইবার প্রথম শেষদিন গিয়ে উপস্থিত হবো বাড়িতে।"
"আমাদের দায়িত্ব যে আজ দেশ ভাই!"
"সেটাই! একদিকে ভালো হয়েছে। নাহলে এই নয়দিন মাম্মি কত যে কাজ করায়!" বলে হেসে দিল ত্রীদিব। অংশুমানও হেসে ফেললো।
"তা ঠিক বলেছিস। আমার তো বাবা নেই। আর কোনো দিদি বা বোনও নেই। তাই মা বাজারে যেত দুর্গাপূজার আগে আমাকে নিয়েই। নিজের জামা কেনার সময় ঠিক আছে। বাকি সময় খুব বিরক্ত লাগতো!"
"সত্যি রে!"
"কিন্তু কষ্টও লাগে ভাবলে, এবার মাকে একা একাই সব করতে হয়েছে। আমার কথা তো সারাক্ষন ভাবেই।"
"আমাদের পরিবারের কষ্ট আমাদের থেকেই দ্বিগুন।"
"সেটাই!"
"আমার সেই গম্ভীর পাপা তো ফোন করলেই শুধু কাঁদে ফোনে।"
"আমার মাও তাই। তখন আরোও খারাপ লাগে।"
"আসলে আমাদের এক বছর মাত্র হয়েছে তো তাই অভ্যেস হয়নি বাবা-মায়ের। আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর জিনিসপত্র গোছানো শেষ?"
"হ্যাঁ ভাই।"
"কখন বেরুবি?"
"এই আধ ঘন্টার মধ্যেই।"
"থোরা সা ভি হিলনা মাত।" একজন বন্দুকধারী মুখে কালো কাপড় বাঁধা জঙ্গী ত্রীদিব আর অংশুমানের পেছন থেকে মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে বললো।
সাথে সাথে অংশুমান আর ত্রীদিব হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদের বুঝতে অসুবিধে হলো না যে, ওদের সেনা ক্যাম্পে জঙ্গীহানা পড়েছে।
অংশুমান চালাকি করে হাত বাড়িয়ে পাশে রাখা বন্দুকটা নিতে গেলে জঙ্গী টের পেয়ে যায়, আর সাথে সাথে এক সেকেন্ডেরও দেরী হলো না। জঙ্গীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল অংশুমানের তাজা প্রাণ।
তেরো ঘন্টার জঙ্গী আর সেনার লড়াইয়ে পাঁচজন সেনার মৃত্যু ঘটলো। অংশুমানের মতো ত্রীদিবের তাজা প্রাণটাও অকালে চলে গেল।
দেবীর বিসর্জনের দিন অংশুমান আর ত্রীদিবের সাথে আরোও তিন জন শহীদ যুবকের মৃতদেহ এসে পৌঁছালো ওদের বাড়িতে। যেখানে মানুষ ব্যস্ত দুর্গামা চারদিন বাপের বাড়ি থাকার পরে ফিরে যাওয়ার দুঃখ নিয়ে। সেখানে পাঁচ মায়ের কোল খালি করে চলে গেল ছেলেগুলো।
আমাদের দেশে যেখানে একজন সেনার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে উৎসব না মানানোটাই ভালো। আমরা যখন নতুন জামা কার কয়টা হলো, কার এখনো জুতো কেনা হলো না, কার অফিস এখনো বোনাস দিল না, কার সেল্ফিটা ভালো উঠলো না, পূজোর চারদিন বৃষ্টি হবে কিনা, দুর্গাপূজায় ঘোরার জন্য বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড পাবো কিনা বা কোন দুর্গা প্যান্ডেলের থিমটা ভালো, এই নিয়ে ব্যস্ত। তখন আমাদের দেশের সেনা পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে দেশকে পাহাড়া দিচ্ছে। যাদের জন্য আমাদের বাড়িতে উৎসবের আলো ফুটছে৷ তাদের বাড়িতেই ছেলে বা মেয়ের শহীদ সংবাদে বাজে বিসর্জনের সুর।


স্বরূপা রায়



থিমের দুর্গা
*******



যেদিন মিনা ঢুকেছিল অজিতের বাড়িতে কাজের জন্য, সেদিন থেকেই খারাপ নজরে দেখছে ওকে অজিত। প্রতিদিন যখনি মিনা কাজ করতে আসে, ওকে অজিত একেবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেপে নেয়। অজিতের স্ত্রীয়ের আড়ালেই চলতো অজিতের এই রঙ্গলীলা।
আগামীকাল মহালয়ার পূণ্যলগ্ন। তাই আজ পাড়ার ক্লাবের সব মেম্বাররা মিলে ঠিক করেছে যে, রাত জেগে পিকনিক করবে। অজিত এই ক্লাবেরই সেক্রেটারি।
অজিতদের এই ক্লাবে বড় করে দুর্গাপূজা হয়। আগে সাধারণ মূর্তি এনে পূজা হলেও, এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে থিম পূজার আয়োজন করা হয়। পাড়ার কিছু ধনী ব্যক্তির সহায়তার জন্যই বাজেটটা বড় রাখা সম্ভব হয়।
রাতে ফিরবেনা স্ত্রীকে জানিয়ে অজিত চললো ক্লাবের দিকে। ক্লাব ঘরের ছাদেই হবে পিকনিক।
পিকনিকে খাওয়াদাওয়া শেষে মদের আসর জমে উঠলে নেশার ঘোরে অজিতের চোখের সামনে ভেসে উঠলো মিনার ছবি। মিনা নগ্ন অবস্থায় ঠিক কেমন লাগতে পারে অনুমান শুরু করলো অজিত। নিজের বয়সী তিনজন ক্লাবের বন্ধুকে বললো, "একটা কচি মাল আছে। লাগলে আমার সাথে যেতে হবে এখনি।"
একজন ভয়ে বললো, "আমি নেই বাবা এসবে।"
"ধুর ভিতু" বলে অজিত বাকিদের দিকে তাকালো। বাকি দুজনে একটু ভেবে রাজি হয়ে চললো অজিতের সাথে।
বাপ-মা মরা মিনা একাই থাকতো গ্রামের বাড়িতে। অন্ধকার আর গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশের সুযোগ নিয়ে অজিত আর ওর বন্ধুরা সবার আড়ালে এসে পৌছালো মিনার কুঁড়েঘরের সামনে। তারপর বেড়ার দরজা সহজেই ভেঙে ঘরে ঢুকেই শুরু করে দিল মিনার উপরে পাষবিক খেলা। মিনা যাতে চিৎকার করতে না পারে সেইজন্য একজন চেপে ধরলো ওর মুখ।
মিনার চোখেমুখে ভয়ের সাথে এক অবাক দৃষ্টি। যাকে ও "কাকাবাবু" বলে চেনে, তাকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে মিনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
নিজেদের অমানবিক খেলা শেষে মিনা যাতে ওদের ফাঁসাতে না পারে, সেইজন্য একটা বড় পাথর নিয়ে এসে যখন অজিত ওর মাথাটা থেঁতলে দিতে নিল, তখন বাইরে অল্প অল্প আলো ফুটছে। মিনা কাতর কন্ঠে নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। কিন্তু অজিত থামলো না, নিমেষেই থেঁতলে দিল মিনার মাথাটা। তখনি আশেপাশেই কোনো বাড়ি থেকে বেজে উঠলো আগমনী সুর, "আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির"।
মিনাকে ওভাবেই ফেলে রেখে নিজেদের জামাকাপড় খুলে একটা ক্যারিব্যাগে ভরে অজিত আর ওর বন্ধুরা পা বাড়ালো ক্লাবের দিকে। ক্লাবে এসে দেখে, সবাই মদের নেশায় ঘুমে আচ্ছন্ন। তাড়াতাড়ি আগুন দিয়ে নিজেদের জামাকাপড় জ্বালিয়ে দিল ওরা।
আগুন নেভার পরে, "এবার আমি আসি রে।" বলে অজিত বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। রাস্তায় হঠাৎই দেখা হওয়া পাশের পাড়ার একজন বয়স্ক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, "কি রে কোথায় যাচ্ছিস?"
"এই তো বাড়ি ফিরছি। ক্লাবে রাতে পিকনিক ছিল।" অজিত বললো।
"তাই নাকি! তা এবারের থিম কি?"
"নারী নির্যাতন।"

স্বরূপা রায়




অগ্রাধিকার নয়, সমাধিকার চাই
*****************************



নাবালক ছেলেকে ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত দুই মহিলা...
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার প্রেমিকা...
বাসের মধ্যে শ্লীলতাহানি, পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন যুবক...
বন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা, গ্রেপ্তার মহিলা...
স্বামীকে পুড়িয়ে মারলেন স্ত্রী, পলাতক স্ত্রী...
নিজের পেটের শিশু কন্যাকে গলা চেপে খুন করলেন মা, সিসিটিভি ফুটেজে সেই ভয়াবহ দৃশ্য...
আপনারা আমার লেখা পড়ছেন, আর ভাবছেন যে লেখিকা পাগল।
না, না আমি একদম সুস্থ, পাগল না। উপরে আমার লেখা খবরগুলো বাস্তব। কিন্তু তা প্রকাশ্যে আসে না।
তার কারণ কি?
কারণ, পুরুষরা এখনো নির্যাতিত হলেও সেটা নিয়ে অভিযোগ করতে ভয় পায়। যারা অভিযোগ করে সাহস করে, তাদের উপর সমাজ হাসে। কম মশলাদার আর মানুষের তেমন কৌতুহল এই বিষয়ে না থাকায় কোনো খবরের কাগজে বা খবরের চ্যানেলে এসব খবর তেমন দেখানো হয় না। আর মূল কারণটা হলো, আমাদের সমাজ নারীর দোষ দেখে না, নারী সবসময় মা-বোনের অজুহাতে পাড় পেয়ে যায়। আর নারীর হাতে তো মোক্ষম অস্ত্র আছেই, মিথ্যা নারীকেন্দ্রিক মামলা।
পণের জন্য যেমন বধূ হত্যা হয়, তেমনি পরকীয়া বা আর্থিক মর্যাদা স্বামী বজায় রাখতে না পারলে স্বামী হত্যাও হয়।
নারীর যেমন ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি হয়, তেমন পুরুষেরও ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি হয়।
অনেক বাবা যেমন সন্তানকে মেরে ফেলে অবাঞ্ছিত কারণে, অনেক মাও সন্তানের ঘাতক হয়ে ওঠে।
স্কুল-কলেজে ছাত্রীরা বা অফিসে মহিলা কর্মচারীরা যেমন সুরক্ষিত না, তেমনি ছাত্ররা বা পুরুষ কর্মচারীরাও সুরক্ষিত না।
আমার বা আপনার মা, বোন, দিদি, মেয়ে, বউদি, কাকীমা, বান্ধবী, প্রেমিকা বা স্ত্রী যেমন সুরক্ষিত না আমাদের সমাজে। ঠিক তেমনি আমাদের বাবা, দাদা, ভাই, ছেলে, জামাইবাবু, কাকু, বন্ধু, প্রেমিক বা স্বামীও সুরক্ষিত না আমাদের সমাজে।
ভারতীয় মহিলা কমিশনের ২০১৩-১৪ রিপোর্ট অনু্যায়ী ৫৩.২% ধর্ষণের মামলা মিথ্যা। ধর্ষণ হলে তো আমরা খবর পাই। কিন্তু সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হলে, আমাদের কান অবধি সেটা পৌঁছায় না।
কত স্ত্রী নিজের আর্থিক মর্যাদা বজায় রাখার জন্য স্বামীর উপর অত্যাচার করে। এটা পণের জন্য অত্যাচারের চেয়ে কম কি?
কত নাবালক ছেলেগুলো বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন নারীর তীব্র পাষবিক যৌন লালসার শিকার হয়। আমরা কয়টা জানতে পারি?
আসলে আমরা ছোট থেকেই শুনে এসেছি নারীর উপর অত্যাচার, নারী পণ প্রথার বলি, এই সমাজ নারীকেন্দ্রিক। আর সেই নিয়েই নারীর অধিকারের লড়াই।
কিন্তু নারীর অধিকার লড়াইয়ে যে আমরা আমাদের সমাজের পুরুষদের নরকে ঠেলে দিচ্ছি সেটা কেউ লক্ষ্য করলো না।
যেক্ষেত্রে নারী পিছিয়ে, সেই ক্ষেত্রে নারী অধিকার পাক। কিন্তু সমাধিকার, অগ্রাধিকার নয়।
আর যেক্ষেত্রে নারীরা আজ অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং তাতে পুরুষদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। সেই ক্ষেত্রে নারীকেই দাঁড়াতে হবে নিপীড়িত পুরুষদের পাশে।
একদিন বহু বিবাহ প্রথা বন্ধে, বাল্যবিবাহ বন্ধে বা সতীদাহ প্রথা বন্ধে যেমন আমাদের সমাজের পুরুষরা এগিয়ে এসেছিলেন। আজ তেমনি পুরুষ নির্যাতন বন্ধ করতে আমাদের নারীদেরই এগিয়ে পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
নারী বা পুরুষ কারোরই অগ্রাধিকার চাইনা আমরা। আমরা চাই নারী-পুরুষের সমান অধিকার। মানবতার স্বার্থে সমাজ এবং আইন ব্যবস্থা এগিয়ে আসুক।