নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






আটত্রিশ


               প্রায় ত্রিশ বছর হল গৃহশিক্ষকতা করছি। কত যে অভিজ্ঞতা তা লিখলে একটা মহাভারত হয়ে যাবে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের একটা বিশেষ আচরণ। গত দশ বছরে যেটা একটা মারাত্মক আকার নিয়েছে। প্রতি বছরই আমার মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী থাকে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে পঁচানব্বই শতাংশ ছাত্রছাত্রী শিক্ষককে জানায়। এর একটাই কারণ তারা প্রায় সবাই আবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা ফলাফল প্রকাশিত হলে মাত্র কুড়ি শতাংশ শিক্ষককে জানায়। এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথম যে কারণটা সবচেয়ে বড় কারণ সেটা হল, অনেক ছাত্রছাত্রীই অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে শিক্ষকদের নিয়মিত গুরুদক্ষিণা দেয় না। তাই শিক্ষককে ফলাফল জানাতে গেলে বাকি থাকা টাকা মেটাতে হবে, সেই কারণে এই পথ আর কেউ মারায় না। দ্বিতীয় কারণ, শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীরা আজকাল আর কেউ শ্রদ্ধাভক্তি করে না। পরীক্ষার ফলাফল সবার আগে যে শিক্ষককে জানান উচিৎ সেই শিক্ষা তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে পায় নি। আর তৃতীয় কারণ হল, বর্তমানে সবকিছুই তো অর্থের অঙ্কে কেনা যায়। তাই আজকের ছাত্রছাত্রীরাও টাকা দিয়ে শিক্ষাকে কিনতে শিখে গেছে। আসলে অভিভাবকদের শিক্ষায় এই শিক্ষা তারা ভালোই আয়ত্ব করে ফেলেছে।
               বারবার অভিভাবকদের কথা বলছি একটাই কারণে, অভিভাবকরা একটু সচেতন হলেই এই চিত্র পুরোপুরি বদলে যেতে পারে। গুরুদক্ষিণার প্রসঙ্গ উঠলেই অভিভাবকদের মুখের ভাষাই হল, " কেন ? আপনাকে দেয় নি ? আমি তো মাস শেষ হলেই নিয়মমতো আপনাকে টাকা দিয়ে গেছি ! " আমি জানি উনি ভুল বলছেন না। কিন্তু টাকা দিয়েই একজন অভিভাবকের দায়িত্ব শেষ ? শিক্ষকের সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ রাখতে হবে না ? আমি তো অর্ধেকের বেশি অভিভাবককে চিনিই না। এটা কেন হবে ? অভিভাবকরা যদি শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখেন তাহলেই তো আর কোনো সমস্যা তৈরি হয় না। পড়া যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন শিক্ষকের কাছে তাঁর সন্তানের কোনো গুরুদক্ষিণা বাকি থাকল কি না সেটা ওনারা জানতে চাইবেন না ? বাকি যদি নাইবা থাকে, একটা শেষ সৌজন্য সাক্ষাৎকারও আশা করা যায় না ?
               পরীক্ষার ফলাফলের খবর সবাই পেয়ে যায়, একমাত্র শিক্ষক ছাড়া ! অথচ তিনিই আসল কাণ্ডারী। অভিভাবকরা তাঁর সন্তানকে কি শেখাচ্ছেন ? শিক্ষক----- যিনি সম্মানে সকলের আগে অথচ মান মর্যাদায় তাঁকে কোথায় রাখা হচ্ছে। তাহলে অভিভাবকরাই তাদের সন্তানদের শেখাচ্ছেন, প্রয়োজনে শিক্ষকের কাছে যাও আর আসল সময় তাঁকে ভুলে যাও। এরপরেও বাবা মাকে যদি তাঁর সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তাহলে কি সেই সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা মায়ের কোনো কিছু বলার মুখ থাকবে ? কারণ, দায় দায়িত্ব ভুলতে কে শিখিয়েছে ? দিনের পর দিন একটা অমানুষ প্রকৃতিকে আমরা প্রশ্রয় দিয়ে গেছি। আজকে তারই ফলভোগ করতে হচ্ছে।

গল্প:- ভাইয়া! মা কথা বলে না কেন? : সূক্ষ্মকোণ আহমেদ




১.
বিরক্তিকর নজরে তাকিয়ে আছি নার্সের দিকে। মা আর নাজিম ঢুকতে দিচ্ছে না এই নার্স। খুবই খারাপ আচারন করছে আমার পরিবারের সাথে।  টাকা দিলেই নিশ্চয়ই ঢুকতে দেবে। আমি জানি আমার মার কাছে একটা ফুটো পয়সা নেই। হয়তো নাজিমকে নিয়ে আমার মা হেটে হেটে এসেছে এই হাসপাতালে।  নাজিম আমার ছোট ভাই।  বেশী নাহ প্রায়ই দু বছরের। বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। এই জানুয়ারিতে বিশ হয়েছে। খুবই করুণ দৃষ্টিতে নার্সের কাছে অনুরোধ করছে নাজিম। 'আফা। আমরা এক্ষন যামু আর এক্ষণ আমু। প্লিস একটু ঢুকতে দেন।' আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল।  আমার কান্না দেখেও নরপশু নার্স ঢুকতে এখনও  অনুমতি দেয়নি। ' টাকা চাই' এই আবেদন আমার পরিবারের কাছে করছে  এই নার্স।  মুখে না বললেও।  তার এই আবেদন তার চোখের চাহনিতে থেকেই বুঝা যাচ্ছে। আমার ব্লাড ক্যান্সার।  যাকে ল্যাটিন  ভাষায় বলে লুকেমিয়া। এই রোগে আক্রান্ত আছি আমি।  ওরা চলে যায়।  নার্সের পোষাক পরিহিত এই পশুটি ঢুকতে দেয় নি আমার পরিবারকে। কিছুক্ষণ পর সেই নার্সটি একটা কাগজ হাতে আমার কাছে আসে।
আর আমি দেখি তার চোখে লাল। আমি নিশ্চিত প্রচন্ড কেঁদেছে সে। মুখে কান্নার দাগ।মেকাপ করা মেয়েদের  কান্না করলে তার চোখে জল যেদিকে যেদিকে গড়িয়ে যায় সেদিকে সেদিকে  মেকাপ ধুয়ে যায় আর দাগ হয়ে যায়। সেরকমটা হয়েছে এই নার্সটির ক্ষেত্রে।  আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, 'আপনি কান্না করছেন কেন?'
কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলে,  'আপনার আম্মা পাঠিয়েছে। '
আমার মা এইট ক্লাস পাশ। লিখতে ও পড়তে তিনি জানেন। আমি বললাম, ' ধন্যবাদ। আপনি কি এই চিঠিটা  পড়েছেন?'
চুপ করে রইলেন তিনি। আর আস্তে চলে গেলেন। আমার বুঝতে বাকী রইলো না যে তিনি এই চিঠিটা পড়ে ইমোশনাল হয়ে গেছে। মেয়েদের আবেগ প্রচন্ড বেশী হয়। মেয়েটির আবেগের সাথে সাথে অহংকারও অনেক বেশী।  আর আমি চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।

' রাসেল,
বাবা তুই আমায় মাফ করে দে। তুই আমার বড় ছেলে কিন্তু তোকে দেওয়ার মতো আমার কিছুই নেই। যেই সময় তোর বয়সী ছেলেপেলেরা আনন্দ উৎসব করতে ব্যাস্ত থাকে সে বয়সে তুই রাজ মিস্ত্রীর কাজ পর্যন্ত  করেছিস।
আমার কোমরের ব্যাথা প্রচণ্ড বেড়েছে।বাড়ির থেকে বেরুতে পারছি না। প্রাকৃতিক কাজগুলো করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।  আর আমাদের টয়েলেটার উপর তোর আবু তাহের চাচা গাছ ভেঙে পড়েছে।  তাই খুব অসুবিধায় আছি। সবাই বলছে তুই নাকি বেঁচে ফিরে আসতে পারবি না। তোর সময় নাকি সংকীর্ণ।  আচ্ছা ওরা কি আল্লাহ? নাউজুবিল্লাহ। আজকালকার মানুষগুলো মানুষের মঙ্গল চায় না। যাইহোক তোর আব্বার রেখে যাওয়া  সম্পত্তি মানে পিছেনের সুপারির বাগান গত সপ্তাহে বিক্রি করে দিয়েছি। মানিক মেম্বারের কাছে। মেম্বার সাহেব অর্ধেক টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে আমি তোর হাসপাতালে ফীর অর্ধেক টাকা দিয়ে দিয়েছি। মেম্বার আর অর্ধেক টাকা নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। টাকা দিতে চাচ্ছে না।  নাজিমকে দুবার পাঠাইয়েছি কিন্তু দুবারই কোন গুরুত্ত্ব না দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। আমি একবার যাবো। এখানে আবার আমি দলিল তার নামে করে দিয়েছি তাই একটু সমস্যা।  কতো বোকা আমি।তুই থাকলে এরকমটা হতো না। তুই মনে করিস না এই কথাগুলো আমি তোকে বলছি তোর টেনশন বাড়ানোর জন্য। এসব বলছি এর কারণ হলো তোর ভিতর বেঁচে থাকার স্পৃহা জাগানোর জন্য। যা তোর এখন দরকার।

কিন্তু কষ্টের ব্যাপার এই যে আজ তোর সাথে কথা বলতে পারলাম না।  যাইহোক আমি এই নার্সকে ক্ষমা করে দিয়েছি।  তুইও করে দিস।আর লিখতে পারবো না নার্স কলমটা আর দিচ্ছে না।

ইতি
তোর মা '

আমি বাকরুদ্ধ। কিছু ভাবার জন্য মানসিক শক্তি  যেন হারিয়ে ফেলেছি। পাশে থাকা ঔষধ আমি নিজে খেয়ে নিলাম। আজ নার্স খাওয়াওইনি। সে চিঠিটা দিয়ে কান্না করতে করতে চলে গেছে। ঔষধ  খেয়ে নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।


২.
ঘুমের থেকে উঠে দেখি সকালে সেই নার্সটি বসে আছে আমার পাশে। হয়তো অনেকক্ষণ ধরে।পাশে ঘড়ি দিকে  তাকিয়ে দেখি বিকাল সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। নার্সটি নার্সে ইউনিফর্মে নেই। মনে হয় তার ডিউটির সময় শেষ।
' গুড আফটারনুন। '  আগ বাড়িয়ে বলল নার্স।
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, ' কেমন আছেন নার্স?'
' আমার নাম নার্স না আমি নাম সুমনা।  হ্যাঁ ভালো আছি। আপনার শরীরের কি অবস্থা? '
' সঠিক তথ্য আমি জানি না। ডাক্তারেরা ভালো জানে।।'
' এই নিন  আপনার রশিদ।'
' কিসের রশিদ? ওহ সকালে আমার মা অর্ধেক টাকা জামা দিয়েছিলো সেই রশিদ নিশ্চয়ই।'
' নাহ। সেই রশিদতো আপনার মা নিয়েই গেছেন।  আর এটা হলো আপনার বাকী টাকা মওকুফের রশিদ।'
' কি? বাকী টাকা মওকুফ হয়েছে। আমার মা কি বাকী টাকা মওকুফ করার জন্য আবেদন পত্র পাঠিয়েছে।এটা পাঠালেও তো টাকা মওকুফের কথা না। বাংলাদেশের হাসপাতাল ব্যাবস্থা এত ভালো হবার কথা না।'
' জ্বি না। আপনার মা কোন আবেদন করি নি। আসলে আমি...'
' আপনি? আপনিতো নার্স সামান্য নার্সের কথা রেখে এত টাকা মাফ করবে হাসপাতাল কৃতপক্ষ।'
' কোন কথা বলবেন না ।  আমি চোখের কথা বুঝতে পারি। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমি পড়তে পারবো।প্রথমত আমি কোন প্রোফেশনাল নার্স না। আমার বাবা এই হাসপাতালের সিভিল সার্জন। তার কাছে পারমিশন নিয়ে  আমি মওকুফ করেয়েছি। আপনার প্রশ্ন হলো আমি কেন নার্সের কাজ করি।  উত্তর হলো আমার ভালো লাগে। এবার আপনার প্রশ্ন হলো  সকালে আপনার কাছে আপনার পরিবারকে আসতে দেওয়া হয়নি কেন? প্রথমত আপনার দুর্দশা সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিলো না। দ্বিতীয়ত আপনার মা তখন হসপিটাল বিল পে করে নাই। তাই অনুমতি ছিলো তাদের ঢুকতে দেওয়ার।  আপনি নিশ্চয়ই ভেবেছেন ব্যাক্তিগত স্বার্থের জন্য আমি তাদের ঢুকতে দেয়নি।'
কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম আমরা দুজনেই।
' আপনার জিবনের গল্প বলবেন। আমি লেখক।  দেখি আপনার জীবন থেকে কোন গল্পের থিম পেতে পারি নাকি।' বেশ হাসি মুখে বলল সুমনা।
' শোনবেন? '
'হুম।'


' আমার নাম রাসেল।  আমার বাবা মারা গেছে। আমি যখন এইটে পড়ি।  বাবা থাকতে আমারদের পরিবারের তেমন উন্নতি ছিলো যে তা নয়। প্রতিদিন ভাত ডাল খেয়ে চলার মতো।
আমি অর্নাস শেষ বর্ষে আছি। ঘরে আয় করার মতো কেউ নেই তাই। আমি সংসারের হাল ধরি এসএসসি পাশের পড় থেকেই।  কিন্তু তখনও মাও কাজ করতো বলে  আমি হাফডে কাজ করলেই পরিবার কোন রকমে দিন কাটাতে পারতো। এইচএসসি পরীক্ষার সময় মা আমার পরীক্ষার ফী আর  ফরম ফী এর জন্য দিনে কাজ করে আর রাতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরে টাকা ধারের জন্য। সে সময় ইট ভাঙতেন আমার মা। ইট নিয়ে আসা খুব কষ্টের কাজ।  এটা কেবল পুরুষরাই করে সাধারণত।  আমার মা ইট টানতে শুরু করলেন। পুরুষদের মাঝে কাজ  করতে খুব কষ্ট হতো। পরীক্ষা মাঝখানে তিনি কোমরে ব্যাথা পেয়ে। বিছানার সঙ্গী হোন। তারপর থেকে আমার উপর চাপ বেড়ে যায়। প্রতিদিন কাজ যেতাম একটি কাপড়ের দোকানে। আমার পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমি দোকানে যেতাম। যথাসময়  পরীক্ষা দিয়ে। পরীক্ষাটা দিলাম পরে জানতেপারলাম  আমি পাশ করেছি। তারপর আমি বেসরকারি ব্যাংকে ড্রাইভারের পদে চাকরী পেলাম। ভালোই চলছিলো কিন্তু ভাগ্যেতো আমার মনে হয় সুখ নেই তাই আবার আমি আক্রান্ত হলাম ব্লাড ক্যান্সারে।'

নিস্তব্ধতা কাজ করছে আমাদের ভিতরে।

৩.
আজ প্রায়ই একমাস পর হাসপাতাল আমাকে ডিসচার্জ করলো। আজ একমাসই আমার পরিবার আমাকে দেখতে আসে নাই। আমি ফোনে বা অন্যকোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু লাভ হয়নি। আমি ততটা চিন্তিত হইনি। আমি বুঝতে পারলাম আমার পরিবার টাকার ভয়ে আসতে পারছে না। হয়ত মেম্বার আমার মাকে ঠকিয়েছে। আসার সময় আমার কাছে অটো ভাড়া ছিলো না। সুমনার কাছে চাইতেই হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিলো।আমি আসার সময় খাবার নিয়ে আসি। আমি মৃত্যু থেকে বেঁচে এসেছি। আমাকে দেখে নিশ্চয়ই হুমড়ি খাবে আমার মা।
বাড়ির সামনে এসে দেখি বাড়ি ঘেরাও করে রয়েছে হাজারো মানুষ। আমার সব আত্মীয় আমার বাড়িতে আসছে। উঠানে একটে খাটে  একটা মৃতদেহ শুয়ে আছে।
আমি আরো কাছে যাই খাটে পাশে বসে বসে কাঁদছিলো  নাজিম। আমাকে দেখতে পায় সে।
আর আমাকে বলল, ' ভাইয়া! মা কথা বলে না কেন?'

কন্যাভ্রুণ,,, সাথী কয়াল




বাবা আমার "কন্যাভ্রুণ" বলছি,
তুমি মেয়ে চাওনি, তাই বাড়তে দেওয়া হয়নি আমাকে!
ফেলে গেছো নোংরা আবর্জনার মতো,
তবে আজ তুমি তোমার ছেলের পাঠানো বৃদ্ধাশ্রমে, --
                কেমন আছো বাবা?
আজ বুজতে পারছো কি আমার সেদিনের মনের বুকের যন্ত্রনা,
এক অস্ফুট সন্তান হারানোর ক্ষত .....!


          আশা করি ভালোই আছো,
বৃদ্ধাশ্রমের  ওই চার দেওয়ালের ঘেরা ঘরে,
অথবা ওই ভীষণ ফাঁকা নির্জন বারান্দায় ....

   তোমার স্মৃতিপটে ফেলে আসা কিছু অতীত,
       তোমাকে আজ বিদ্রুপ করে বুঝি?
জানো আমিও একটা নরম মায়ের কোল চেয়েছিলাম,
চেয়েছিলাম তোমার পরিচয়ে পরিচিত হতে.......

নির্জন স্মৃতি কাতর অথবা কিছু বিবেক বেদনা
এখন যখন তুমি নির্জন বারান্দাতে এসে দাঁড়াও --
 গোধূলির মনকেমনের আলোছায়ায় .......
 উপলব্ধি করেছো নিশ্চয়ই তোমার চোখে রোজ বৃষ্টি নামে,
দু হাত জড়ো করো তখন এক দমকা হাওয়ায় ----!
     তুমি রোজ ক্ষত - বিক্ষত হও!.........

     স্মৃতির ক্যানভাসের সব , সব যেন একগুচ্ছ বিভৎস রং,
  সবকিছু যেন এক বিভ্রান্ত মানবতার সংজ্ঞা মাত্র !
  এখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে পাশবিক কামনার ....
  তবে কেন এই খেদ , কার উপর শত অভিমান!
                      জানো বাবা,
আমি কন্যাভ্রুণ, আমিও একটা নরম মায়ের কোল চেয়েছিলাম!...

ছবিটা যে কয়না কথা ... মোঃ মিজানুর রহমান



দিন শেষে রাত আসে রাত পোহালেই দিন
হিসেব খাতায় শূন্য পাতা শোধ হলোনা
দিনের আলোয় এতটুকু ঋণ।
আলোর দেখা পাইনা দিনে
তাইতো বুকের পাঁজর ভাঙা ব্যথা,
চোখের জলে বুক ভেসে যায়
তবুও ছবিটা যে কয়না কথা।

আগুন জ্বলে আঁখি কোণে
দেখে রাতের খামখেয়ালী আঁধার,
তবে কি?
কিয়ামতের আলামত চোখের সামনে
সুন্দরও পৃথিবী আজই ছেড়ে যাবার।

চায় না যেতে একা ফিরে
সঙ্গী তবে কে?
বুকের পাঁজর ভেঙ্গে নিয়ে
আমায় গায়ে রক্ত মেখে নিঃস্ব করে দে।

সইবো কেমনে এমন কষ্টের সাগর
উথাল-পাতাল সাগরের বে-সামাল ঢেউ,
পাষান সূর্যের প্রখর তাপে দেহ অঙ্গার
বুঝলো না তা কেউ।

রোগে শোকে মান অভিমানে
জিদের বাড়ি ঘুনে পোকার ঘর,
এ যেন জগৎ সংসারের মাঝে
হঠাৎ বৃষ্টি কালবৈশাখী ঝড়।

তারা ভরা নিঝুম রাতে
বাড়ছে মনের ব্যথা,
চোখের জলে বুক ভেসে যায়
তবুও ছবিটা যে কয়না কথা।

ধুসর বকের দল , জয়তী দাস



  এসব লেখা ! সব জঞ্জাল -
  ছাইয়ের মতো কিছু সাদা ধুসর ছেঁড়া কথা।

  মাঝেমাঝে অসহ্য গরমে তেঁতেওঠে অসহায় -
  তেঁতুলের মতো তিতিয়ে রাখে হলুদ থালা,

  সব ছুঁড়ে দিই শূন্যে, পুকুরে -
  কেউ নেয়না, উন্মাদ কথাদের--

  এভাবে বকের মতো ফিরতে পারিনা বাসায় !
  এভাবে একা থাকতে পারিনা নিরবে ঘরদাওয়ায়-

  এত জঞ্জালে পুড়তে কতটা আগুন আর বিষাদ লাগে !
  প্রেম নেই মরু- শিলা থেকে কঠিনতর শিলায়-

  এতবার পণ ভেঙে আমাকে লিখিয়ে নেয়--

  

অরণ্য,,, চিত্তরঞ্জন গিরি


অন্তঃসলিলা ফল্গুধারায় তোমার স্নেহের পদ্ম রেনু ত্যাগের মহিমায় অপার
আধুনিকতার বিষ গতিশীলতায় যখন মাঠ ঘাট ফুসফুস ক্ষয়ে ক্ষয়ে  যায়
তখনই তো তোমার"" ভিনি ভিডি ভিসি"" নবদ্বীপের চৈতন্যময়  প্রেমের অভিসার ।

হেনেছি কুঠার ।প্রবাহমান কালে  বিজ্ঞানের অট্টহাস্য উদ্ধত জয়জয়কার !
সমুদ্র মন্থনের সব গরল শুষে নিয়ে সব সময় তো নীলকন্ঠ হয়ে যাও
প্রাণীর প্রাণ সত্তাকে শাশ্বত করার অঙ্গীকারে কত সহজেই নিজের হাতটি বাড়িয়ে দাও
 কার্বন মনোক্সাইড ও থোরিয়াম বিষবাষ্পের আঘাতে যখন পার্থিব ও প্রাণ সঞ্চার বিঘ্নিত হয়
তখনই তো পরিবেশের উপাদানে ভারসাম্য এনে ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্রের উপকরণ সাজাও

পাখিদের নীড় শান্তির কুজন মাধবীলতা আর কনক মঞ্জুরী
গুন গুন করে যমুনার নৃপশাখে বারবার বলে উঠ আমি  তোমার ই, আমি তোমাদের ই!
প্রেমের ও প্রানের কত লাবণ্য রেখাএঁকে এঁকে যাও
গোদাবরী আমাজন কঙ্গোর তীরে
মধুকর ও মাধুকরীর বনজ্যোৎস্নায় হিমেল হাওয়া উত্তল হয় বাণী গরান শাল পাইনের সমীরে
বাতায়ন খুলে দাও , নদীর তীরে পথঘাট প্রান্তরে ,শাশ্বত প্রাণের আহব্বানে, অমরাবতী এঁকে।
কোয়েলিয়ার গান ,শ্যাম বাঁশরীর গুনগুন সুর ,সবুজ শ্যামলিমায় জেগে উঠুক, পত্র মঞ্জরীর পল্লবীত সুখে।

আয়ুরেখার আত্মচরিত.. নয়নাভ বিশ্বাস



আয়ু রেখা দ্বিখন্ডিত। সন্ধ্যাবেলায় পথে আমি,
গাড়ির আলো পড়লে চোখে, অচেতনেই থামি।

শ্যাম পার্কের উল্টোদিকের মোড়ের মাথায় চায়ের দোকান,
ট্যাক্সিওয়ালার মুঠোফোনে বাজতে থাকে বব ডিলান।

ধোঁয়া ওঠা চায়ের ভাড়ে চুমুক দিই আর ভাবি,
আকাশের ঐ চাঁদটা আজ কিঅপরূপআর মায়াবী!

অনেক কথা লিখব ভাবি, অনেককিছু লিখেও ফেলি,
ঘাের কাটলে ব্যাকস্পেসে সবটা গিলে, সামনে চলি।

বন্ধুরা সব ব্যস্ত মানুষ, জীবন নামের যুদ্ধে শামিল।
আমিও সামিল আমার মতো, মনের মানুষ বড়ই অমিল।

শহর জোড়া ত্রিফলা আলােয় ক্লান্ত আমি, এ পথ চলি,
লােডশেডিং। চাঁদের আলােয় স্নাত আমার শহরতলি।

শ্রান্ত আমি, পা চলেনা। একটা যদি রিকশা পাই....
আয়ু রেখা দ্বিখন্ডিত। কপাল আমার পাথরচাপা'ই৷৷

চাতক. .. শ্যামল কুমার রায়



         তপ্ত দাবদাহে দগ্ধ ধরণী
         তরুছায়ার খোঁজ কম করেনি।
         স্বস্তি মেলা খুবই দুষ্কর
         রুজিরুটির জন্যে সবাই তৎপর।
         অবলা জীব অসহায় বড়
         শীতলতা শুধু কেন খুঁজে মর।
         বৈভবের আশ্রয় শীতল ঘরেতে,গাড়িতে
         ফকিরের দেখা মেলে মাটিতে, ছায়াতে।
         বৃষ্টির জন্যে চাতক সবাই
         আমীর, গরীবতে কোনো ভেদাভেদ নাই।
         তপ্ত ধরণী শীতল অবশেষে
         বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারিত আকাশে।
         শীতল বারিধারা নামল শেষে
         ধরণীর মলিনতা মুছল নিমেষে।
            

উপাসনা ,, রহমান জিল্লুর



হৃদয় মনোনীত একমাত্র উপাসনা তুমি।
আমি দ্বীন প্রেমিক, গত জন্ম ধরে
অপেক্ষায় জেগে আছি
মৃত্যুদ্বীপে... 

অকম্পিত বাতাসে ভেসে গেছে আমার
জাহাজ, স্বপ্নের পাল ছিঁড়ে
অসীম সমুদ্রে...

                     কিনারাহীন ভাসছি আমি
এভাবে ভেসে ভেসে আর কতোদূর
আর কতোটা জন্মান্তর পেরিয়ে
তোমার সান্নিধ্য পাবো?

এই ভেবে, নিদ্রার গভীরে চিৎকার করে
একটি ডাহুক। কুঁয়াশার প্রাচীর -
ভেঙে পালাতে চায়...

ঠা ঠা রোদ্দুরে, ভরা ফসলের মাঠে
বাঁকা আলপথ হেঁটে হেঁটে
আঙুল ছুঁতে চায় -
                                      জলের চিবুক।

শুধু একবার,
প্রীতি উদ্বেলিত চোখ
       খুব কাছে থেকে তোমাকে দেখুক।

কক্ষপথ --পিয়ালী ত্রিপাঠী



জীবনের কক্ষপথে ঘুরছি সবাই ,
আবর্তন না পরিক্রমন জানি না !
পথ যতই বিপদসংকুল হোক ,
কোন বাধাই আর মানি না।

জমাট বাঁধা বরফ জানে
মনের গহীন দুঃখরাশি ;
হাসিমুখে সামলে জীবন
আমরা সুখের ভেলায় ভাসি।

বিশ্বাস ভরেছে নীলাভ বিষে,
ভরসাগুলো মৃতপ্রায় !
প্রহসন শুধু মেলছে শাখা,
সবাই কেবল টাকা চায় ।

ঠোঁটকাটা আজ বাস্তবতা,
ঘুরছে সবাই চাকার মত !
হাসছে সবাই অভিনয়ে ;
ঢাকতে চাইছে গভীর ক্ষত ॥

যা ইচ্ছে তা-ই করো...... রুদ্র সুশান্ত




আমাদের সুদীর্ঘ তৃষ্ণাতলে, জোছনার আবরণে ছিলো  রাত্রির স্বর।
একমুঠো প্রণয়ে,মুখোমুখি বসে, বালির সমুদ্রপৃষ্ঠে ঠোঁট ছিলো নিথর।

কখনো তীর ভাঙা, কখনো বালিমাখা কি নিদারুণ সব ঢেউ।
আমাদের গভীরতা,ভালোবাসাবাসি,
জোছনা ছাড়া জানতো না কেউ।

বিশাল হতো সব, বহুমুখী কলরব, জয়গাঁথা  স্মৃতির কুঠরি,
এখনো মন ভাঙে, ভয়ে ডর জাগে,
ক্ষণে ক্ষণে উঠি শিউরি।

মনে হয় তুমি-আমি, মধুমাখা বহুগামী মন্দিরে মোদের শুচিপত্র রয়,
অমূল্য প্রেম মোরে দিতি,এখন তা-সবই স্মৃতি, আমার মন ডেকে আমারে কয়।

ঐ চাঁদ তলে, জোছনা দলেদলে, মহুয়ার ঘ্রাণ দিতে এখনো আমায় ডাকে,
জোছনা নাই জানে, মনটাও না মানে, তুমি নেই তুমি নেই আমার ভরালোকে।

নাই বা রলে তুমি আর, ফিরানোর দাবী যার, একে একে সব নিলাম তোলে,
বেদনার শঙ্খ বাজায়, আমি কেন রব হারায়, সুখের মৃদঙ্গ ছলে।