নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

তারা শুরু ছেড়ে চলে যায়,হারায় না কোনোদিন



কবি পায়েল খাঁড়া
জন্ম :17 জানুয়ারি 1993
ইহলোক ত্যাগ: 08 ই মার্চ,2019

কি লিখবো সে ভাষা আজ আমার নেই ,কয়েকদিন আগে দিদি বলেছিল শরীর খারাপ ,গতকাল রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে যখন মেসেঞ্জার অন করেছি তখনই শুনতে পেলাম দিদি আর নেই ,প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না ,তারপর সত্যি সত্যিই সে নেই ।

নিকোটিন শুরুর প্রথম থেকেই দিদি সব সময় পাশে ছিল ,নিকোটিন যখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখনও সাহস দিয়ে বলেছিল " এগিয়ে যা ভাই ,সাথে আছি "
কিন্তু  কই আজ সে ?


"রক্তে ভিজছে মাটির পাঁজর, শিরায় বিষ্ফোরক
শতাব্দী, তোকে পেয়েছে এ কোন মারণ খেলার ঝোঁক।"


সত্যিই এ কোন মারণ ঝোঁক ,একে একে সবাই কেমন চলে যাচ্ছে ছেড়ে ।

তাই আজকের নিকোটিন এর" সকাল বেলা "
কবি পায়েল খাঁড়া কে উৎসর্গ করলাম ।


- জ্যোতির্ময় 

আলো ছায়ার গল্পগুলো : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। ছয় ।।

একদিন রেডিওতে শুনলাম ---- "পাখি উড়ে যাবে বলে খাঁচা কিনি না"। একটা গান একটা জীবনকে বদলে দিতে পারে। আমরা সেইভাবে গান শুনলাম কোথায়! আমাদের গানে পুরোটাই বিনোদন। শিক্ষা কোথায়! অথচ এইসব গান আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যদি উঠে আসতো তাহলে আমরা এই ইহজীবনেই দেখতে পেতাম এক ঘর রোদ। আর সেই রোদে মানুষেরা খেলে বেড়াচ্ছে শিশুর সারল্যে।



।। সাত ।।

সত্যিই তার মুখ না দেখে থাকতে পারতাম না। ঘুমের মধ্যেও তাকে দেখতে পেতাম। শুধুমাত একবার চোখের দেখা দেখবার জন্যে কতবার তার বাড়ির সামনে দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরপাক খেয়েছি। দেখা হয় নি। যদিও তাতে কিছু যায় আসে না। বাড়ির সামনে দাঁড়ালেও শান্তি। একদিন কিন্তু সেই চোখ হারিয়ে যায়। কোথায়? অথচ আমারই তো মন। হাজার চেষ্টাতেও যার কাছ থেকে নিজেকে ফেরাতে পারি নি, সেই মনকে কে বোঝালো! কার কথায় সে সরে এলো? যে চোখ ছাড়া মনের মুহূর্ত চলত না, সেই মন অন্য চোখে তাকাবার সময় কখন পেল? মন যে বৈশিষ্ট্যে আমৃত্যু রত থাকার অঙ্গীকার করেছিল তা সে ভুলে গেল কি করে!


।। আট ।।

"এ্যাই দত টাকা দে" ------ চোখের সামনে একটা শুকনো হাত। দুহাত ভর্তি পুরোনো আর বাতিল রঙবেরঙের চুড়ি। একটাও দাঁত নেই। মাথার চুল সাত জন্মেও তেল পড়ে নি। পরনের কাপড় নোংরা আর ছেঁড়া। দুহাতে তিনটে তিনটে ছ'টা ব্যাগ। দশ টাকা দিলাম। কী খুশি। এইভাবে রোজ আসে বুড়ি। একদিন দেখি ফুটপাতে বসে আসন বুনছে। "কাকে বসতে দিবি?" আমার প্রশ্ন শুনে বুড়ির একেবারে হেসে গড়িয়ে পরার যোগাড়। "আজ একত টাকা দে"----- একদিন হঠাৎই চেয়ে বসল। আমি বললাম পুজোর সময় দেব। আর কোনো কথা নেই। হাসতে হাসতে সেদিন দশ টাকা নিয়ে চলে গেল। পুজোর সময় বুড়িকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। মনে হল সে কি অন্য কোথাও চলে গিয়ে রাস্তা খুঁজে পায় নি! একদিন এক বান্ধবী এসে খবর দিল, "তোমার প্রেমিকা লঞ্চঘাটে ঘোরাঘুরি করছে"। এর বেশ কয়েকদিন পরে বুড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়াল। দেখলাম বুড়ির একশ টাকার কথা মনে আছে। কিছু খাওয়াতে গেলে খাবে না। দশ টাকা নিয়ে হাসি মুখে চলে যাবে। আমার ওপর যেন ওর একটা অধিকার জন্মে গেছে। একদিন কে যেন এসে বলল, ওকে টাকা দেবেন না। বুড়ি ছোট ছোট ছেলেদের টাকা বিলিয়ে দেয়। সে নাকি দেখেছে। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান বলে মনে হলো। এমন একটা মানুষ আমার ওপর অধিকার দেখায়।


(ক্রমশঃ...)

সন্ধ্যাতারা :সুমিত ভদ্র



সন্ধ্যা নামলেই ঠোঁটে রঙ মেখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় স্টেশন চত্বরে।
শাড়ীর আঁচলে ঢাকতে হয় তলপেটের মেদ্।
নইলে বাবুদের মনে ধরবে না যে।
প্রথমে খানিকটা দর্ কষাকষি শরীর নিয়ে।
তারপর অন্ধকার গলি নতুবা সস্তা কোনো হোটেলের কামরায় দিতে হয় বাবুদের টাকার বিনিময়ে কিনে নেওয়া ক্ষণিকের শারীরিক সুখ।
প্রত্যেক বার নতুন নতুন বাবু আসে আর যায়।
সভ্য জগতে্র যে বাবুরা দুবেলা টাকার বিনিময়ে
শরীরটাকে ছিঁড়ে খায়,
পথেঘাটে দেখা হলে তাদের মুখেই শোনা যায়-
'দিলি তো সারাদিনটা মাটি করে,
সকাল সকাল বেরিয়েই মুখটা দেখতে হল;
যা হাট সামনে থেকে বেশ্যা মাগী কোথাকার।'
বলি ও বাবু- রাতের অন্ধকারে কোথায় যায় গো
তোমার সভ্যতা?

দ্যাখনদারী :প্রলয় কুমার বিশ্বাস

.               

বছরে এই একটা দিন -
দ্যাখনদারী দেখলে গা পিতপিত করে।

বলি,
আর কত?
তোমাদের জবাব নেই মাইরি!

বলি আর কতটা উন্মুক্ত হলে মিলবে সমান অধিকার?
নাকি মুখ বাঁচাতে নামাবলী জড়ানো?

আহা,কি নারী প্রীতি! 
লা-জবাব!....

তবে মোমবাতি মিছিল কিসের?

নির্বাচন। :অনিন্দ্য পাল


ভালোবাসা অথবা নরম মিষ্টি পায়েস
আসলে ঘৃণার হিউমাস থেকে জন্মে ওঠা
একরোখা শাসন

কাঁধের ঝোলা ব্যাগে বইতে হয় শুধু
জমাখরচের ইস্তাহার

উপুড়হস্ত ঢেলে দেয় সুখ
আসলে ছদ্মবেশ
সব মহড়া ঘটে চলে বোবা ক্যামেরার
নিস্তেজ চোখের সামনে

মহোৎসব আসে, যায়
স্বপ্ন ও...
তারপর শেষ বিকেলে ছাপা হয়
সম্মান লুঠ
বা
আরও একজন মা বেচে দিয়ে যায়
কোলের সন্তান।

এটুকুই তো পারি : চন্দ্রানী পাল


ছেলেমানুষী রয়েই গেল মনে....
ধূপের মত পুড়তে পুড়তে বাঁচি
আর ফুলের মত খিলখিলিয়ে হাসি...
মা বলে..তুই কবে বড় হবি আর!!!

আমি তো....
সব বাধা-বিপত্তি কে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে
দিই,আকাশ পথে...
সমস্ত প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করা রোজ নামচা
আমার....
একলা কষ্টের দুপুর গুলোকে পার করি
নিঃশব্দে ,চুপিচুপি...
দুঃখের হিম শীতল রাত গুলোকে স্বপ্নের
আলো মাখিয়ে ঘুম পাড়াই...
দুচোখ কারণে অকারণে ভিজে গেলে
সোনালী রোদ্দুরে শুকিয়ে নিই....
সন্ধ্যা প্রদীপ দিতে দিতে বুকের ক্ষত গুলোতে
ভালোবাসার প্রলেপ দিই....
কষ্ট গুলোকে অতি যত্নে মন কুঠুরীর ঘরে
জোর করে বন্দী করে রাখি..
আনন্দ গুলোকে ছড়িয়ে দিই পথেপ্রান্তরে
রামধনুর সাত রঙের মিশেল দিয়ে...

জীবন তো সদ্য ফোটা ফুলের মত...
কখন ঝরে পড়বে শ্লথ বৃন্ত থেকে....
অগোচরে,গোপনে,অভিমানে...
সে কি কেউ জানে!!!

আয় তর্জনি : মাধব মণ্ডল




এ্যাতো বারবার বাতাস কাটছে তর্জনি
এবার কি লক্ষ্য আমার চোখ কোটর?

আয় তর্জনি যুদ্ধ  করি
নিদেনপক্ষে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি

ক'বার আর প্রাণটা যাবে?
ক'বার আর মুন্ডু বেচবি হাটে?

নোবেল খাবি নোবেল পরবি?
তাজা রক্ত চিবিয়ে চিবিয়ে খাস!

মিথ্যে ভালোবাসা : :রূপম অধিকারী

মিথ্যে ভালোবাসা

কাটিয়ে দিলাম অনেক গুলো দিন

মনে কি পরে আজ আমাকে ?

চুকে গেছে প্রেমের সব ঋণ

চিঠি রাখা আছে বইয়ের ফাঁকে

তোমার ছড়িয়ে দেওয়া ব্যাথা

মনে জমাট অভিমান

ধুলো পড়া কত কথা

লেখা প্রেমের সংবিধান



ভেবেছিলাম অনেক কিছুই হবে

হয়নি কিছুই অবশেষে

রাত আজ স্লিপিং পিলেই কাটে

ভুল করেছি মিথ্যে ভালোবেসে

কি বা আছে আমার ?

কোনোই বা ভালোবাসবে আমায়

ভালোবাসা ছাড়া আমি

কি বা দিতে পারি তোমায় ?

ভালো লাগে ভালোবাসতে

তোমার কথা মনে করতে

রঙ্গিন ছিল পুরোনো দিন গুলোই

ভরা ছিলো টুকরো স্মৃতিতে

আজও মনে হয় খুব

ছুটে ই সেইসব খেয়ালে

ভালোবাসা জাহির করে লেখা

থাকতো ফেসবুকের ওয়ালে

শরীরে প্রাণ নেই আর

বেঁচে আছি ভাবনায়

নিশ্বাস-প্রস্বাস সবই অবাঞ্ছিত

মনে পরে তোমার মুখটায়



মাঝ রাতে পাশ ফিরে শুয়ে

হাত খোঁজে তোমার শরীর

স্বপ্ন গুলো খায় কুঁরে কুঁরে

শাস্তিকি হয় খুনি- অপরাধীর

রাস্তায় হটাৎ যখন দেখি

মনে হয় ভালো আছো তুমি

দুঃখ- কষ্ট যা দিয়েছো সবই

সারা গায়ে মেখে নিয়েছি আমি

ভালোবেসে ফেললে পরে তখন

খারাপ বাসা কি যায় আর ?

তোমার কাছে মরে গেছি যখন

ভালোবেসে শহীদ হয়েছিলাম সেবার



ন্যাপকিন: বিকাশ দাস (বিল্টু)

(বিশ্ব নারী দিবসে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে)



ঋতুস্রাব, রক্তে লাল হওয়া সাদা ইউনিফর্ম
ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসা মেয়েটির লাগছে শরম ।
ন্যাপকিন চাই, কমনরুমে যাওয়া চাই -
দিদিমনির কড়া শাসনে কিভাবে তা পাই ?
রক্তের ছোপ ;মনের গলিতে আনে নিজের প্রতি ক্ষোভ ।
মেয়ে জন্ম পাপ, তবে কেন জন্ম দিল বেহায়া বাপ ?
লজ্জায় লাল হওয়া মেয়েটি ন্যাপকিন চায় ,
দোকানে অনেক লোক কি করে তবে তা পায়?
ছেলে ছোকরা আড্ডা মারে তা 'য়
ন্যাপকিনের কথা শুনে কতই না সুখ টানে সিগারেট ফুঁকায়  --
মেয়েটি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, ভাবে কখন হবে লোক খালি ।
আর কত!আর কত খেলতেই হবে এ রকম চোরাবালি ?

কেন এত ন্যাপকিনের প্রতি জমা ওই ক্ষোভ ?
কি দাদা এভাবেই কি হচ্ছেনা আমাদের মনুrষত্ব লোপ ?
নেই কি সবার ঘরে দিদি বোন মা --
তবে কেন, কেন নাচে ন্যাপকিনের কথাতে ওই দুরাত্মা ।
বাঁকা চোখে তাকায় কেন তবে সবাই ,
জানিনা ঠিক, হয়ত এভাবেই হয় কত মেয়ের পড়া কামাই ।

কত কথা, নানান অশুচি, কত বিজ্ঞতা
মার গর্ভে ছিলাম সবাই, ভুলে গেছি কি তা?
রক্তের ওই লাল দাগ ভবিষৎরই সুপ্ত আশা
কু কথা গো নয়, দাও না গো একটু সহানুভূতি আর একটু ভালবাসা ।
হবে কেন আর চোখে, বাঁকা চোখে দেখা --
কেন ভুলে যাই সবই তো এ এক সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ।

কোরো 'না গো আর এমন আচরণ --
এভাবেই কি করতে চাও মানুষের মনুষত্বের মরণ ?

আধখানা অপেক্ষা...:অভিজিৎ দাসকর্মকার




আমাকে যে তিলটি ভাবিয়েছে
কল্পনাপ্রবনে ফিরে এলাম-

দিগন্ত আসছে-

ট্রাপিজিয়ামের দেওয়ালে
গতকালের রাত আশ্চর্য হচ্ছে
শব্দকোষ সিগারেট টানছিল
সময়ের মুখোমুখি

তীব্রতাকে মধ্যাহ্নভোজন করাবো-

উচ্চাঙ্গসংগীতে যৌবন উড়ছে
সাক্ষী থাকুক কৃষ্ণপক্ষের জ্যোৎস্নাকলা

অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ধস নেমেছিল সূচক ধরে
বাদ দিয়েছে তিল
ছায়াগন্ধ নিয়ে আল্পনা দিচ্ছি
চোখের রাতজাগা কালিতে

মহোদয়া
অব্যবহৃত তোষকের নীচে আমার কান্না রাখা
বিপরীতপন্থীরা স্নানজলে ধুয়ে দিচ্ছে
আধখানা অপেক্ষা...

কিশোরীর প্রস্ফুটিত স্তন : নয়ন হাফিজ







হরিণের চোখ জোড়া আগামী বসন্তে, নিশ্চিত যন্ত্রণা দগ্ধ সিগ্রেটের বিভৎস কংকালে, খুঁজবে অশ্বত্থের পোড়া জীর্ণ বিবর্ণ পাতায় ঋতুর যাপিত অতীত। নদীর চঞ্চল স্রোতে হাসির উচ্ছ্বাসে ঘেসা সুন্দরবন, ক্রমশ থুত্থুরে বুড়ো সুর্যের তাপে অবৈধ সঙ্গম লিপ্সায় কাতর, পিপাসায় জন্ম দেবে মৃত শাদা বালুর কফিন। লিখে যাচ্ছি, এই উনিশের মার্চে নিরাসক্ত নির্মল আবেশে, নৈর্ব্যক্তিক ও নৈঃশব্দের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও, আদিগন্ত প্রাকৃতিক জীর্ণ জটাজালে, ফুটন্ত শাপলার প্রণয় উপাখ্যান। প্রবঞ্চনা তিক্ত বিষন্ন মনে, নিরন্তর ছুটে চলে দৈন্য দশায়, হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার সঙ্গীতে সুরে সুরে বহুদূর পরিচ্ছন্ন উল্লাসে, স্মৃতিঘেরা দেয়ালে রক্ত পাষাণ, মুখচ্ছবি, খড়কুটো, নির্মল বসন্ত, কোকিলের কুহুতান, ছড়ায় বিদ্বেষ মহামারী, বরং ভুভাগে চঞ্চল নিরঞ্জন মিলেমিশে একাকার, প্রাণান্তকর প্রয়াসে দুঃস্থ বিবর্ণ সঞ্চরণে ঘনঘোর নীলিমার আক্ষেপ। সহস্র কবিতা পেলো কালির আঁচড়, অজস্র কবিতা ভ্রুণ অবস্থায় হারালো প্রাণচাঞ্চল্য, তবু কিছু কবিতা জন্মায় যাদের আদলে গড়ে ওঠে তাজমহল, কবি নয়, বরং কবিতাই কবিতার একনিষ্ঠ গর্ভধারিণী, কবিতা ও কবির গভীর প্রণয়ে কবিতা ক্রমশ হয়ে ওঠে কিশোরীর প্রস্ফুটিত স্তন।


অন্তরালে: ঋজু

শাশ্বত ওমের অন্তরালেও বাষ্প জমে মেঘ বাড়ে;আমি দেখেছি
 গহন পলাশ-লালে বৃষ্টি রং কেমন দগদগে লাগে; পোকার মতো নেভে ফাগুন সেদিন
দেখতে দেখতে নিজের বুড়ো আঙুলের অবচেতন চাপেও খলবলি বীর্যের মতোন
ঝরে যায় বাড়ির কাঠামো-পাঁচিল।
কখনো কবিতার প্রয়োজন আমাদের পড়েনি সত্যিটা বলতে,
পড়ে ও না...
শেষ অন্তর্বস্ত্র টুকু হারিয়েও আত্মীয়তা হাঁসির রোজনামচা হারায়না...
তার ও ওপাড়ে স্নানভীরু সভ্যতা।
দেহ জুড়ে তার অনেক চুপকথা রাত জেগে জাল বোনে...উই জমে
ও কে মুখ ডোবাচ্ছে ওর বুকের মাঝখানটায়..
কুমকুম স্বরে...
গোপনে... ভীষন গোপনে....ও কে?
কে?
দেখতে দেখতে জানা আর মানার বিয়োগ টা আরো স্পষ্ট করে বোঝা যায়
অবশিষ্ট সুবাস টুকুও ততক্ষণে প্যারালাইড;
নিশ্চুপ
রক্তাক্ত।

রাজকন্যে,আজ তো মানো,মুখ কখনো মুখোশের চেয়ে সত্যবাদী হতে পারে না???

পাহাড় জানেনা নারী দিবসের মানে :সম্পা পাল

আমার পাহাড় পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েট নয়
ডক্টরেট শব্দ এখনও তার কাছে কঠিন অক্ষর।
তাই সে কখনো কোনো সেমিনারেও আমন্ত্রিত নয়।

ফাঁকা ডিগ্রির ঘরগুলো কোনো বিকেলেও তাকে ভাবায় না
আসলে সে কখনো স্কুলের সীমানায় পা রাখেনি।

আমার পাহাড় মহানগর থেকে দূরে
বিশ্বায়ন থেকেও দূরে
তবু জীবন প্রবাহে স্বমহিমায়।

পিতৃতান্ত্রিক , মাতৃতান্ত্রিক সমাজের মানে সে জানে না
জানেনা গ্ৰেগোরিয়ান ক‍্যালেন্ডারে নারী  দিবস কেন আসে 
তবু নারীকে সন্মান দেবার তার নিরলস প্রচেষ্টা
সেই টার্সিয়ারী যুগ থেকেই …......

 

সতীর্থ :মান্নুজা খাতুন





যেখান থেকে শুরু হয়েছিল দিনের প্রথম ট্রেনটি

ঠিক সেইখান থেকেই আমরা ছিলাম একই পথের যাত্রী।

তুমি অচেনা আমার কাছে তবুও যেন অনেক দিনের চেনা

তুমি জানো না আমার গন্তব্যপথ,আমিও ঠিক তাই

তবে মনে বরাভয়

হয় তো নেমে যাবে মাঝ পথে নয় তো জেলার শেষপ্রান্তে

অজানা এক আশংকায় খোদাকে ডাকি

মনে মনে হাত জোড় করে বলি এই পথ যেন শেষ না হয়।


চলার পথে হাজারও গোলমালে

পড়েছে তোমার চোখে চোখ,

হয় তো বা হয়ে ছিলাম দুজনেই বড়োই অপ্রস্তুত


সারা পথ চুপ চাপ দুজনেই মুখোমুখি, কেটে যাই সময় নিস্তব্ধ দুপুরের ঘুমন্ত রুপ দেখে

কখনো বা আড় চোখে চেয়েছি দুজনে দুজনের পানে

লুকোচুরি খেলতে গিয়েও পড়ে গেছি ধরা

অপরাধীর মত আনত করেছি মুখ

তারপর।

তারপর ফুরিয়ে আসে পথ

মনে জাগে এক অপরিণত চঞ্চলতা।

অবশেষে পৌচ্ছালাম যেখানে হয়েছে শেষ সব ট্রেনের গতি পথ

দুজনেই নেমে গেলাম এক রাশ হতাশা নিয়ে

শহরের ভীড়ে হারিয়ে গেলাম দুজনেই।

অতঃপর  নিজেদের অজান্তে পেছন ফিরে দেখা

মুখ ফুটে পারি না বিদায় জানাতে

কেন না সারা পথ একসাথে এলেও হয় নি আলাপচারিতা

যা হয়েছে সব কিছুই হৃদয়ের!

বামপাশের পার্লামেন্টের ওয়াল ক্লকে টিকটিকি করে প্রহর গোনে

আবার কখন আসবে দিনের শেষ ট্রেন।

রিক্ত যৌবনে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়


কাল তুমি এসেছিলে --   
ঘোর ঘুম পথ ধরে ,       
এই জীর্ণ দীর্ন স্মৃতির পটভূমে !     
কাম রাঙা ঘুম ঘোরে আমি     
হঠাৎ আবিস্কার করলাম তোমার   
যৌবন দীপ্ত অধর ;     
তোমার বিপন্ন যৌবন যেন       
আমায় হাতছানি দিয়ে বলে  --     
ভালো আছো তো ,     
হে সুজন তোমার আমা রিক্ত যৌবনে  ?     


একা আছি, ভালো আছি :সারিফ হোসেন


কোনো এক কিশোর কালে
প্রিয় বন্ধু কথা দিয়েছিল
আমাদের, আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না
আমিও এক দায়িত্ববান বন্ধু হয়ে উত্তর দিয়েছিলাম
 ঠিক বলেছিস।
আফটার অল উই আর ব্রাদার ফ্রম অ্যানাদার মাদার
কিন্তু স্মৃতির ভেলায় সে বন্ধু আজ ডুবন্ত গুপ্তধন।
সে ছাড়িয়াছে আমার পাছি,
একা আছি, ভালো আছি।।

বসন্তভরা যৌবনে, প্রেমিকার উষ্ণ ঠোট
কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলেছিল
প্রতিটা বসন্ত এভাবেই ধরে থাকবো তোমার হাত
আমিও কেমন আজব ভঙ্গিমায় বলেছিলাম
কেয়া বাত।
আফটার অল আমাদের মাথার উপর ছিল শেক্সপিয়ার  এর হাত।
কিন্তু জীবন নামক বইয়ের পাতায় সে আজ ইতিহাস।
সে আজ অন্য দ্বারে উঠিয়াছি।
একা আছি, ভাল আছি।।

গ্রীষ্মের এক দুপুর বেলায়, আপিসের সহকর্মী
কফি হাতে এসে বলেছিল, ভাই আমাদের বন্ডিংটাই আলাদা, অন্যরকম
আমিও মৃদু হেসে বলেছিলাম, একদম তাই
এক্কেবারে সেইরকম।।
আফটার অল উই হ্যাভ দ্য সেম সেন্স অফ  হিউমার
কিন্তু কর্মক্ষেত্রের তাগিদে সে আজ বহুদূর।
সে আজ অন্য কর্ম করিয়াছি।
একা আছি, ভাল আছি।।

বুকটা কাপিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে
সহধর্মিণী ভালবাসার সুরে বলেছিল
আমরা একসাথে বাচবো একসাথে মরবো,
আমিও বাচ্চাদের স্নেহ করার সুরে বলেছিলাম
আমরাতো সুখের নীড় গড়বো।
 আফটার অল উই আর কানেক্টেড উইথ ইচ আদার
কিন্তু সে আজ ত্রিভুবন ছেড়ে, স্বর্গ লোক পাড়ি দিয়াছি,
আজ একা আছি, ভাল আছি।।

শেষ শীতের সকালে, ধূলোমাখা বইটা
আমার দিকে তাকিয়ে করুণ সুরে বলেছিল
আমায়, আমায় ভুলে গেলে,
আমিও বাধ্য শ্রোতার মতো পাতা উল্টিয়ে
শেষ পৃষ্ঠা পড়িয়াছি।।
আফটার অল বুকস আর মাই ফার্স্ট লাভ
কিন্তু আজ আমার চশমার পাওয়ারের সাথে সাথে
চোখের ছানিও বাড়িয়াছি।
আজ শান্ত আছি, বড়ই ভালো আছি।।

নারী :পলি ঘোষ


নারী আমি তাই আমি অহংকারী ।
নারী আমি তাই আমি প্রতিবাদী ।নারী আমি তাই গর্জনে গর্জে উঠি ।
নারী আমি তাই কৈলাশের পার্বতী ।
নারী আমি তাই মিথ্যা সন্দেহের প্রতিবাদী ।
নারী আমি তাই অত্যাচারীর প্রতিবাদী ।
নারী আমি তাই অন্যায়ের প্রতিবাদী ।
নারী আমি তাই কঠিন বাস্তবের প্রতিবাদী ।
নারী আমি তাই শক্তিরুপী মা ভবতারিনী ।
নারী আমি তাই অসুর দলনী জগত জননী ।
নারী আমি তাই প্রচন্ড ক্ষমতাধারী তেজস্বিনী ।
নারী আমি তাই অম্বিকা ;মাতৃকা জননী ।
নারী আমি তাই কলঙ্কিনী কঙ্ক।বতী ।
নারী আমি তাই মহামিলনের সন্ধিক্ষণ ।
নারী আমি তাই মহামিলনের সঞ্চালনী ।
নারী আমি তাই শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গিনী ।
নারী আমি তাই কালবৈশাখীর ভয়ঙ্করী ।
নারী আমি তাই মা অন্নপূর্ন।রূপে বিরাজিত ।
নারী আমি তাই গর্ভধারিণী ।
নারী আমি তাই গঙ্গা যমুনা সরস্বতী ।

ইচ্ছে করে :পায়েল মিত্র


ইচ্ছে করে ছুঁতে আমার গহীন মনঅরন্য।
 ইচ্ছে করে ছুঁতে আমার উজান নদীর গাঁ।

ইচ্ছে করে কাজল মাখাই তোমার কানের পাশে।
আমার নামের টিকা করে রাখি অহর্নিশে....

ইচ্ছে করে বিনা সার্টিফিকেটে ঘুরি অবুঝ গলি।
ইচ্ছে করে সাজাই আমার আটপৌরে গীতাঞ্জলী।

কিন্তু!
সব ইচ্ছে খেয়ালে তরি ভাসায় না,
সব ইচ্ছে বুক জুড়িয়ে রাখে না।
কিছু ইচ্ছে যে মুখ লুকিয়ে বাঁচে,যেন নৃশংস রাতের বোবাকান্না!


ভয় :শোর্য্যতি



হাত ধরো বলছি...
        মৃত্য উপত্যকায়।লাশ।সবাই।
নিজের মৃত্যুতে দিচ্ছি হাততালি ।।

তুমিও তো বেশ লুকিয়েছো মুখ।শাড়ির আঁচল।
       ক্ষয়-বুকে পাথর।ভালোবাসো ।মিথ্যে
বলেছো স্নানের ঘরে বাষ্প হয়নি'কো জল ...

এরপর আমি ভীষণ বিপ্রতীপ...

ভীষণ কষ্ট হলে ,আঙ্গুল গুনে রাখো।
ভালোবাসি,ভালোবাসি। মৃত্যু তোমায়
               নিভছে সে প্রদীপ।।

সে বুকে মিছিলে কোনো।প্রেমহীন।জমে গেছে
লাল। গুলিতে জমছে রক্ত।

আসলে তোকে ভালোবাসি না'ত...।।


ভালোলাগার জনম : বায়েজীদ বোস্তামী


ভালোলাগার পরে কতটা দিগন্ত,
পারি দিলে, আকাশ ফেটে অশ্রুঝরে,,
গাংচিল অনাহারে মৃত্যু বরন করে,,
মানব তার সভ্যতাকে হারিয়ে ফেলে,
ভালোলাগার কত প্রহর পারি দিলে,
পৃথিবী জুরে অমাবস্যা ঘনিয়ে আসে।
বসন্ত তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে
বর্ষা হারিয়ে ফেলে বাদল,
ভালোলাগার কতটা প্রহর অতিক্রম করলে
একজন মানুষ জীবন্ত লাশে পরিনত হতে পারে,
তবুও ভালোলাগার পরে, ভালোবাসার জনম।

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

     
         




                  ।।তিন।।


মাসখানেক পর যখন দিতি নিজের বাড়িতে ফিরে এলো, তখন চারপাশের মানুষজনদের কাছে সে বিভিন্ন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত। আমি বললাম, দিতি, তোমাকে আমরা ধরতে পারলাম না। বড় সাধারণ চোখে তোমাকে মূল্যায়ন করে ফেললাম। দিতি কাছে এসে আমার হাতে মাথাটা রাখল। সেদিন দিতির কাছে কি আমি আশ্রয় ছিলাম? না কি ওর মনের সবুজ অংশটুকুর অর্থ আমিই একমাত্র ধরতে পেরেছিলাম?


                       ।। চার।।

পড়াশোনা করতে ভালোবাসতাম। পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসত ততই আমার বুকের ওপর রাখা পাথরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। ভয় ঠিক পেতাম না। কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ করতাম। আসলে পরীক্ষাকে সামনে রেখে নিজের পড়াশোনা নিয়ে খুশি হতে পারতাম না। কোথা থেকে যে এতো ঘুম আসত জানি না। পরীক্ষা শেষের দিনগুলো এখনও মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। হল থেকে বেরিয়ে দেখতাম চারপাশটা যেন কতো বদলে গেছে। এতো আনন্দ হতো যে বলে বোঝাতে পারবো না। যার সঙ্গে কথাই বলতাম না তার সঙ্গেও মনে হতো গল্প করি। এই আনন্দ কি শুধু পড়াশোনা করতে হবে না বলে? কিন্তু তা কেমন করে হয়। আমার তো পড়াশোনা করতে ভালোই লাগতো। ওই আনন্দের সঙ্গে অন্য কোনো আনন্দের তুলনাই চলে না। আসলে ওই আনন্দ একমাত্র পরীক্ষা দিয়েই পাওয়া যায়।




                   ।। পাঁচ।।


যে কোনো কারণেই হোক যখন তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। কয়েক পা এগোলেই বলা শুরু হয়। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি এইসব। কি জানি কোথায় যাচ্ছি জানি না ------ বলতে খুব ইচ্ছে করে। এটা কি যে কেউ বলতে পারে? আজ বুঝতে পারি এটা বলা কত শক্ত। একটা উদ্দেশ্যহীন যাত্রা মানুষকে দীর্ঘদিন আলোয় বাঁচিয়ে রাখে। জীবনে একবার হলেও এই উদ্দেশ্যহীন যাত্রায় সামিল হতে চাই।



(ক্রমশঃ)
(০৮/০৩/১৯)

বীরের মা : প্রলয় কুমার বিশ্বাস



উপত্যকায় বারুদের গন্ধ,
    মায়ের চোখে জল।

বসন্তে কোকিলের সুর আজ বিষণ্ন ;
অশোক, শিমুল,  পলাশ
    বিন্দুমাত্র দাগ কাটেনি মনে।

অবশেষে ফিরল বটে,
সমস্ত দুশ্চিন্তার অবসান ঘটায়ে
     কফিন বন্দি হয়ে।

মুখে ছিলো তার তৃপ্তির স্মিত হাসি।

শুধু,
মায়ের চোখের আড়ালে প্লাবন।

আমি ই কি তুমি,,, ? : সাব্বির আলম




আমি জানি—তুমি মোটেই এরকম চাও না,
এটা তোমার কথার কথা ,
 তুমি নিজেই তো বলেছ,
তুমি ... আমি বাঁচতে পারব না—
এর মধ্যে তুচ্ছ অতীতকে টেনে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

পরিপূরক নারী পুরুষ : রাণা চ্যাটার্জী



সুস্থ রুচি সংস্কৃতির,বাড়ির সব দায় সামলায় নারী
আমরা পুরুষ কেবল বড়াই করি দেখাই বাহাদুরি।

গৃহ শান্তি, সন্তান পালন, রান্নাবান্না কত্ত সব কাজ
আদেশ,অভিযোগে ব্যস্ত থাকি,ঠিক যেন মহারাজ।

সমাজ সংসার সুস্থ থাকে পুরুষ যদি থাকে পাশে
 ঝড়ঝঞ্ঝা সামলে নারী, উদ্যমে ঝলমলিয়ে হাসে।

নারী-পুরুষ আসল পরিপূরক,ঠিক যেন মেঘ-বৃষ্টি
দুজনের কেউ বিগড়ালে ঘর,মনের ক্ষতি,অনাসৃষ্টি।

যতই আসুক অভাব মনে ,দুঃখের পাহাড় অনটন,
সু -সম্পর্কে বোঝাপড়া পুরুষ -নারী অমূল্য রতন।

কাগজে কলমে নারী পুরুষ নেই কোন ভেদাভেদ,
যতো নিয়ম,শেকল বাঁধন নারীদের করে বিভেদ।

সূর্য যেমন দৃপ্ত পুরুষ,মিষ্টি রোদ্দুর তার সঙ্গী,
নারীরা পাক যোগ্য সম্মান,বদলাক দৃষ্টিভঙ্গি।

নারী-পুরুষ সমান সমান,অদ্ভুত এক মেলবন্ধন
পুরুষ বাহবা বিনা,সেরা কিভাবে  নারীর রন্ধন!?

নেতা :গোলাম মোস্তফা লিটু


ভোটের আগে সব নেতাদের
হারায় চোখের ঘুম ;
জনগনের বাড়ি বাড়ি, ঘরে ঘরে
যাওয়ার পরে ধুম।

হাতের সাথে হাত মিলায়ে
বুকের সাথে বুক ;
কাধের সাথে কাধ মিলায়ে
বলে- জনগনের, সুখেই আমার সুখ।

নেতা দেয় প্রতিশ্রুতি
আমায় করলে জয়ী ;
ধ্বংস করবো মাদক যত
সমাজে, আছে জীবন ক্ষয়ী।

নিজেই নেতা মদদদাদা
মাদক সাম্রাজ্যের ;
তিনিই আবার ভাষণ দাতা
জয়ী হয়েই করবো বন্ধ, উৎপাদন মাদকের।

আমরা সবাই আম-জনতা
তাদের কথায় নাচি ;
ঋণখেলাপী, স্বার্থবাদী
দুঃশ্চরিত্র নেতার পিছে ছুটি।

নেতার দেয়া চা-পান আর
সিগারেট, বিড়ি খেয়ে ;
সাড়াদিন ঘুরি মোরা
সেই নেতার গুণগান গেয়ে।

একবারও ভাবিনা মোরা
ভোট মোদের, গণতান্ত্রিক অধিকার ;
আছে- ভোট প্রয়োগের জন্য একজন
সৎ যোগ্য চরিত্রবান নেতার দরকার।

আমার ভোটের দাম আছে
ভোটটা মূল্যবান ;
সৎ যোগ্য, আদর্শবান নেতা ছাড়া
করবোনা ভোট দান।

এই উপলব্ধি যতদিন না
আসবে জনতার ;
ততদিন থামবেই না
জয়জয়কার, দুঃশ্চরিত্র ভন্ডনেতার।।।।

মুক্তির দলিল :বারেক উল্লাহ

বিষয়:৭ই মার্চের ভাষণ
                         

৭ই মার্চের এই ভাষণে
বাঙ্গালী পায় শক্তি,
বীর জনতা উঠল জেগে
করল বাংলা মুক্তি।
স্বাধীনতার সংগ্রামেরর কথায় ছিল
১৮ মিনিটের এই ভাষণে,
বাঙ্গালী তাই যুদ্ধে নেমেছিল
পাক হানাদার অপসারণে।
রক্ত ঝরা এই ভাষণে ছিল
স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা,
বাঙ্গালীরা তা মেনেই 
 বিতাড়িত করল পাক সেনা/হায়েনা।
৭ই মার্চের এই ভাষণে
 ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা,
বাঙ্গালীরা বুঝেছিল
 সংগ্রাম ছাড়া তা আসবে না।
 রক্ত যখন দিয়েছি
 আরো দেব রক্ত,
বঙ্গবন্ধু যখন তুলেছিল  এই ধ্বনি।
বাঙ্গালীদের মনে স্বাধীনতা
পাওয়ার ইচ্ছার আগুন
 দ্বিগুণ হল তখনি।
এবারের সংগ্রাম  স্বাধীনতার সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম  মুক্তির সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধু তুলেছিল যখন এই সুর,
বাঙ্গালীদের সংগ্রামে বিতাড়িত হল
পাকিস্তানের সব দূষর।
বঙ্গবন্ধু তোমার এই ভাষণ
আজো বাজে সবার হৃদয়ে হৃদয়ে
তুমি যে আছো বাংলার আকাশে বাতাসে
 সব খানে মিশে।
তোমার এই ভাষণ স্বর্ণ অক্ষরে লিখা আছে
 ইতিহাসের পাতা জুড়ে।
তোমার ঐ ভাষণে শুনে  শিহরিত হই
 আজো আমি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ।

মায়ের পরশ : বিকাশ দাস (বিল্টু )




রাত প্রায় একটা ছুঁয়েছে, চাঁদের আলো ক্ষীণ হয়ে মেঘের আনাগোনা চলছে ।ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে ।পূবের শ্মশান ঘাট থেকে শুধু আওয়াজ শোনা যাচ্ছে" হরি বোল, বল হরি ।"আর আজ কুকুর গুলিও খুব বেহায়া। হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার জুড়ে দিচ্ছে ।এই সময় চয়নের গাড়ির শব্দ শোনা গেল ।গাড়ি বলতে একটা পুরানো বাইক, ওটাই বহু কষ্টে কিনেছে ।বাড়ির পাশের টার্নিং এর এখানে ঘোরাতে  গিয়ে পরে গেল। মা শব্দ শুনতে পেল ।বিড়বিড় করে মা বলা শুরু করলো", এ অমানুষ হয়ে গেল ।আমার হয়েছে যত জ্বালা !আজ হয়ত আবার গলায় ঢেলে এসেছে।"
চয়ন গাড়িটা তুলে আবার স্টার্ট দিয়ে বাড়ি আসলো ।চয়ন ভাবলো মা ঘুমিয়ে আছে ,তাই গাড়িটা তুলে ঘরে রাখা  ঢাকা খাবার খেতে বসলো ।
ভাত নিয়ে বসছে, হঠাৎ মার আগমন ।
"কিরে তুই আজও খেয়ে আসলি? আমি স্পর্ষ্ট শব্দ শুনতে পেলাম , দেখলি তো কেউ তোর কথা ভাবে? আর আমি তো মা.. আমি পারিনা ,আমি পারিনারে -আর এভাবে থাকতে ?ভগবানও এমন আমায় নেয়ও না !"
চয়ন চুপ হয়ে শুনছিলো ।মার মুখোমুখি কথা বলতে ভয় হচ্ছিল। আজ একটু বেশিই খাওয়া হয়েছিল তার ।
"ঠিক আছে খেয়ে শুয়ে পর ... আমি মরলে বুঝবি  ?"
চয়ন আর খেতে পারলো না ।একটু বমি বমি আসছে ।আবার বমি করলে মা আরও সন্দেহ করবে তাই পকেটে রাখা গুটকা টা খেয়ে বাথরুম গিয়ে সিগারেট টা ধরানোর চেষ্টা করলো ।কিন্তু নেশা এত টাই ছিল যে ধরাতে পারছিলো না ।বহু চেষ্টার পরে সিগারেট টা ধরিয়ে ভাবতে লাগলো আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ,"মা ,মা'গো আমি কি আর সাধে খাই? আমি যে আর পারিনা ঠিক থাকতে -?
মা তখনও ঘুমায়নি।
" কিরে চয়ন !যা বাবা এখন শুয়ে পর আর কত? আর পারিনা ।"
মার উপস্থিতি টের পেয়ে সিগারেট টা জলে চুবিয়ে দেয় ।
হ্যা মা...
রাত প্রায় দু 'টা তবুও ঘুম আসছিলো না, শুধু
শ্মশানের কাছ থেকে আসা" হরিবোল  বল হরি  "কানে বিঁধছিলো। তখনি চয়ন হারিয়ে গেল অতীতে।
হ্যা তারও ঘর ছিল, সংসার ছিল, ফুলের মতো ফুটফুটে একটা ভালোবাসার বাগান ছিল ।সেই বাগানের সব থেকে সুন্দর ফুল ছিল গোলাপী ।সেখানে কত সুন্দর খেলা হতো ,হাসি হতো ,অভিনয় হতো আর ভালোবাসাও ছিল ।হঠাৎ একদিন ঝড় আসলো ।বাগান তছনছ হয়ে গেল ।গোলাপী গোলাপ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চয়ন আর্তনাদ করলো --কে শোনে তার কথা ?এর পরদিন চয়ন ঠিক বুজতে পেরেছিলো গোলাপ তো কীট ময় !সেই কীট তাকে ধ্বংস করে দিল ।
গোলাপী মারা যায় ,সুইসাইড করলো ।আর পুরো দোষ পড়লো চয়নদের উপরে। চয়নকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় অথচ যে গোলাপী তার প্রাণ তার ভালোবাসা সেই কিনা আগুনে জ্বলসে যাচ্ছে পারছিলো তার অন্তিম সময়ে উপস্থিত থাকতে ।

সকালে মা আগেই উঠে সিদ্ধ ভাত রাঁধতে শুরু করলো। মা জানে ছেলের সারাদিন খাওয়া হয়নি ।,আর মা এটাও জানে চয়ন তো ওরকম নয় ও তো পাড়ার সব থেকে ভালো ছেলে ।কাউকে দোষ দিয়েও লাভ নেই ?সব ওর কপাল! নাহলে প্রাইমারী চাকরিটা হয়েও হলো না  !ভাইভাতে আউট! এর থেকে দুঃখ কি আর আছে ?
মা ভাত রেঁধে চয়ন কে ডাকতে লাগলো ।
"চয়ন। কি'রে চয়ন ?--ওঠ বাবা। তোর ডিউটি আছেনা?--কিরে ওঠ !"
হ্যা মা...
চয়ন নিজেকে ঠিক করে ভাবতে একটু সময় লাগলো ।ভুলেই গেল রাতে কি হয়েছিল ?একটু মনে হওয়ায় নিজের প্রতি লজ্জা হলো ।ইস! মা কি ভাববে?
চয়ন উঠে ব্রাশ করে স্নানটা সেরে নিল। ঘড়িতে তখন আট টা, সাড়ে আট টায় তার ডিউটি ।আর আধ ঘন্টা সময়। বলা বাহুল্য চয়ন একটা কোম্পানির সুপারভাইজার ।
"এই ভাত বাড়া আছে খেয়ে নে--"
ভাত খাওয়া শেষ হওয়ার পথে মা চয়ন কে বললো ,
"কিরে বাবা, এভাবে আর চলে? এখন নতুন করে ভাব ;লোকে জানলে কি হবে? আর তোর দাদারাও নানান কথা বলছে। এখন একটা সংসার কর। আমি মেয়ে দেখি ।অন্তত আমায় একটু রেহাই দে ।আর আমার পেটের ব্যথাটা ক'দিন থেকে খুব বেড়েছে ।কখন কি যে হয় !"
মা --মা !ওসব বলো না ,তুমি না থাকলে আমি.. তুমি তো জানোই দাদারা দাদাদের মতো কাজে ব্যস্ত ।

চয়ন যেতে যেতে তাই ভাবছিলো কি করবে ?না মার কথাই শুনবে --
আজ কাজেও মন বসছিলো না ।খুব উদাসীন লাগছিল তাকে। দুপুরে লাঞ্চ এর খাওয়া শেষ করে মনে পড়লো মার তো পেটের ব্যথা ,তাই বাজারের MD ক্লিনিক থেকে কয়েকটা গ্যাসের ট্যাবলেট নিল ।সামনে মাসে বেতন পেয়ে মার জন্য একটা ভালো ডাক্তার দেখাবে আর মাকে বলেই দিবে," মা আর তোমার কষ্ট করতে হবেনা ,আমি নতুন জীবন শুরু করব ।"
  এসব ভেবে কিছুটা হাসি আসলেও মনের ভিতরের চাপা কান্না দাও দাও করে জ্বলছিল ।অন্তর থেকে কেউ যেন বলে উঠছিলো আমায় ক্ষমা করে দিও ,শুধু মার জন্যই... প্লিজ আমি শুধু তোমাকেই---
ডিউটি শেষ হওয়ার পরে আজ আর চয়ন কিছু খেলো না, মাকে আজ বলেই দিবে সব কথা,নতুন জীবন কথা--
তাই একটু আগেই বাড়ি আসার চেষ্টা করলো ।কোম্পানি থেকে গাড়িতে কুড়ি মিনিট পথ।কিছুদূর আসার পরে ফোন টা বেজে উঠলো ।প্ৰথম বার তুললো না ।আরও বাজছিলো ,গাড়িটা থামিয়ে ফোনের স্ক্রিনে লেখা বৌদির নাম্বারে ফোন !কি ব্যাপার যে বৌদির সাথে দু বছর থেকে কথা বন্ধ তার ফোন? ভাবলো নতুন কোন মতলব নাকি? তবে পরক্ষনেই মনে হলো ফোনটা ধরা যাক ।
ওই পাশে দাদার গলা ।
"চয়ন !চয়ন! চয়ন !তুই তাড়াতাড়ি আয়। মা খুব সিরিয়াস ।"
চয়ন ফোনটা কেটে খুব স্পিডে গাড়িটা ছাড়লো ,না মা তোমার কিছু হবেনা আমি আছি তো--
কি ব্যাপার এত লোক !

"চয়ন বাবা এসেছিস।"
মা তোমার কিচ্ছু হবেনা ।বলো কি হয়েছে? আমি ডাক্তার ডাকছি। ওই ছোটদা ,ছোটদা!গাড়িকে ফোন কর। অ্যাম্বুলেন্স ডাক না!
" বাবা ওসব করিস না ।আমি হয়ত আর বাঁচবো না। তুই মানুষ হ ।আর বল আর সংসার করবি ।"
 মা আমি সব রাজি ।
গাড়িও আসলো তখন।
"চয়ন আমায় একটু জল দিবি ?"
বৌদি !বৌদি !একটু জল আনো --
বৌদির হাতের গ্লাসটা সজোরে নিয়ে মার মুখে জল দিল ।
"আমি তৃপ্তি ,শান্তি পেলাম ।অয়ন চয়নকে দেখিসরে --আর আমায় তোর বাবার পাশেই রাখিস ,নিজের ভূমিতে তৃপ্তি..... পা...বো.... "

মা- মা- মা --মা...
আকাশ গুমরে উঠলো বাতাস আর্তনাদ করে উঠলো বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে পড়তে লাগলো ।মা চির ঘুমে--

রাত দু 'টার দিকে চয়ন শুধুই শুনছিলো সবাই জোরে জোরে বলছিলো ,"হরি বোল, বল হরি ---"

কবে তুমি জাগবে চে : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

 

কাউকে পড়তে বলিনি আমার এ চিঠি ।     
হয়তো তোদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়বে !   
কিন্তু বিশ্বাস কর এ আমার আর্ত বেদনা --     
আমার দেশ , আমার শৈশব     
আমার যৌবন , বার্ধক্য জড়িয়ে আছে এতে !     
চে গ্রাভারার মত --   
অদম্য অত্যাচার সহেছি নীরব হাসি মুখে !     
আমার জননী এ দেশ ভাঙ্গছে ,     
ভেঙ্গে চুরে চুর চুর হয়ে পড়ছে ,   
এখনও চুপ করে থাকার মূল্য --     
প্রতিদিন গোনে অসহায় মেয়েটি !   
ট্রামে , বাসে , স্কুলে , ঘরে --   
হাজার টা ধর্ম আর জাত নিয়ে ।   
দলিত হয়ে জন্মানোর খেসারত   
নগ্ন হয়ে দিচ্ছে গ্রামের একঘরে !   
আর আমি চুপ করে আছি --     
ওরা ধমকে গিয়েছে পাড়ায় ,   
এবার ভোট যদি হয় একটা কম ,     
উনিশো ছেচল্লিশের নোয়াখালি     
দেখা দিবে এ পাড়ার মাঠে !     
আর আমি চুপ করে আছি --   
আর কবে তুমি জাগবে চে ?   
কিউবার মত চিৎকার করে --   
আবারও বলতে চায় এ বোবা মন  !! 


অপ্রাক্তনীয় :তনুকা ঘোষ



আমি চাই না আমাদের সম্পর্ক টা কোনদিন প্রাক্তন হোক,
হাজার অভিমান,রাগ, ঝগড়ার ভীড়েও তুমি একবার জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলো!
আমাদের নন্দনে বিকেলে কাটানোর দিনগুলো যেখানে তুমি নীল পাঞ্জাবিতে আর আমি খাদির কালো শাড়িতে, খোলা চুল গাঢ় কাজলে বারবার তোমার মনে ঝড় তুলে গেছি;
তোমার সাথে কাউন্টার নেওয়ার ছলে হঠাৎ করে ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে চুমু এঁকে দিয়েছি।
আমার অগোছালো জীবনের কাছে তুমি গোছালো সংসার,
আমার হাজার ভালোলাগার প্রেমিক থাকুক না কেন তুমি তাদের মধ্যে একটুকরো বসন্ত...
যেদিন শেষ দেখা হল আমাদের গঙ্গার ঘাটে তুমি তোমার বিয়ের চিঠি হাতে,
তোমার পরিবারের অমত, তোমার থেকে বয়সে বড় মেয়েকে তারা মানতে নারাজ।
তুমিও ঘর ছেড়ে আমার হাত ধরে বেরিয়ে আসতে পারবে না!
আর আমিও তোমার সংসার ভাঙ্গতে পারবো না...
আমার বেনারসির সাঁজ, কপালে চন্দন, শরীর জুড়ে ফুলের গন্ধ!
বিছানায় তোমার বিয়ের চিঠিটা ছিন্ন হওয়া,
কপালে সিঁদুর পরাতে পরাতে দুজনের চোখেই জল;
বাসর রাতে একটাই প্রশ্ন তোমার?
কিভাবে মানালে  আমার পরিবারকে!
 আমি বলেছিলাম আমাদের সম্পর্কটা কখনও প্রাক্তন হতে দিতে পারবো না।

সত্যি :সুমিত ভদ্র



বিস্তৃত কংক্রিটের রাস্তা;
হাঁটতে হাঁটতে একদিন ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,
সেলাইয়ের পরে সেফ্টিপিনে আটকানো হাওয়াই চটিটা।
পথের ধারে সস্তার ল্যাড়ো বিস্কুট আর এক কাপ গরম লাল চায়ের ধোঁয়াতে
একনিমেষে ফ্যাকাসে হয়ে আসে ঝা চকচকে শহরতলি।
তবুও চোখ বন্ধ করলে
এখনও সামনে আসে নিজের হাতে সাজানো আলোকিত এক স্বপ্নপুরী;
একমুহুর্তের মধ্যেই সমস্ত স্বপ্ন চুরমার করে
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দেনায় জর্জরিত পরিবার আর বেকারত্বের সাথে গভীর সম্পর্ক।
জীবনে কখনও প্রেম ছিল,
ছিল চিত্রকলাতে নতুন নতুন সৃষ্টির আনন্দ-
আজ সবই অতীত,
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দায়ে প্রেম আজ পরিণত বিচ্ছেদে
আর ভার্জিন ক্যানভাসের মতোই সাদা হয়ে থাকে জীবনের সব সৃষ্টির উল্লাস!
তবুও আত্মবিশ্বাস হারায়নি কখনও ছেলেটি;
বুকের মাঝে আজও বাঁচে রবির কলম-
"নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন হবেই হবে।"

দ্বন্দ্ব :মান্নুজা খাতুন



আর কতদিন প্রিয়!

আর কতদিন চলবে এভাবে?

আর কতদিন সময় চুরি করে গঙ্গার তীরে নির্জনতা খুঁজতে হবে?

আর ভালো লাগে না,

এইভাবে চুরি করে ভালোবেসে যেতে

মনে একরাশ ভয় নিয়ে অভিসারে বেরোতে

একটা দুটো কথা বলে মনে শান্তি আনতে 

আর ভালো লাগে না

নিছক আকর্ষন অনুভব করতে

গঙ্গার তীরে নির্জনতা খুঁজতে খুঁজতে বড্ড ক্লান্ত আমি

এত পরিচিত হয়েও অপরিচিতের মতো  একরাশ ক্লান্তি আর অভিমান নিয়ে গৃহে ফিরতে  !

আর কতদিন  সমাজের সমস্ত কুসংস্কার মুছে যাওয়ার পথ চেয়ে রইব?

জ্বর :মাধব মণ্ডল


এ্যাতো ডাকঘুড়ি
এ্যাতো ভোঁ ভোঁ
রক্তে দুলছে জ্বর

আর তো প্রভাবিত হও না

আমার হাজারটা মন
কান্ডজ্ঞান ছিঁড়ছে
রক্তে দুলছে জ্বর

এই অসময়ে তুমি একটা ধাতব স্ট্যাচু হলে

সময় গিলছে আমাকে
চিরস্থায়ী ওষুধে ডুবছি
রক্তে দুলছে জ্বর

তোমার মুখের ভাষা আরো শক্ত হলো

অপেক্ষা পাথর ছুঁড়ছে
আমার ফুসফুস, লিভার আর কিডনি বরাবর
রক্তে দুলছে জ্বর

কপালে বাতিল ছাপ্পা মেরে গুম হয়ে থাকো খালি!

পথে হারা কিশোর জামান আহম্মেদ ইমন



পথে হারা কিশোর আমি
যাচ্ছে থেমে সুর,
যতই ভালোবাসি যাই তোমায়
আমায় রাখ দূর।

আমার পাশে কেউ ছিলোনা
ছিলে শুধুই তুমি,
পাঁজর ভেঙে আঁড়াল হয়েছো
আমি শুকনো ভূমি।

চোখের কূলে জোয়ার তুমি
না আসিলেই ভাঁটা,
আমার ভালোবাসার মানুষ তিথি
স্মৃতি ছাড়াই ঘাটা।

আমি কবি না, দুঃখ পুষি! : অলোক মিত্র



আমি কবিতাকে বুঝি না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
মনের অজান্তে বিরবির করি
দুঃখের প্রলাপন।
দুঃখ সেও ইদানিং হয়েছে চতুর,
রঙ বদলিয়ে ভাইরাসের মতো।
গেও এই ছবির কাছে ছায়া এসে
বলে দেয়, দ্যাখ তো কেমন
বুড়ো হয়ে যাচ্ছিস সময়ের অতলে।
চলে আসছে প্রথম দশক, নুতনের
আগমন, আমি তো গেও ছায়া
কবিতাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি
প্রান্তিক কৃষাণি কইন্যার মায়াভরা বুক।
কি মায়া লাগাইলো মনের গহীন তিমিরে,
ধুম তানা না না! কাচের চুড়ি,
অল্পভাসি কইন্যার মায়াভরা
মুখটি ভাসে ভরদুপুরে পদ্মজলে।
দুঃখ সেও হয়েছে দারুন চতুর,
হুট করে হানা দেয় বুকের ভিতর
হৃদের নরম শরীর।
তির তির বাতাস বহে রক্তস্রোত
বাম অলিন্দে শস্য শ্যামল বাংলা আমার।
ডাল অলিন্দে দুঃখছায়া কবিতা আমার
বাম নিলয়ে শুভ্র সকাল, ডান নিলয়ে
বলেশ্বর আর সন্ধা নদীর ঢেউ ছলাত ছলাত
আমি কবি নই, দুঃখ পুষি
ছায়া এসে বলে, অনেক তো হোল
চল এবার আকাশবাড়ি,
মেঘেরা সব নিয়ে নিবে তোর দুঃখ ভারী
সুয্যি হেসে দেখ না আজকে নিসর্গ পরী।

থেমে আছে : সুজাতা মিশ্র



সেইখানে থেমে আছে , যেইখানে জ্বলেছিল বিদ্যুৎ,
সন্ধ্যেবেলার অবসরে। সেইখানে সেই নিঃশেষ অচ্ছুৎ।
বিছানা হাতড়ানো সেই,  থেমে আছে বালিশের ঘ্রানে।
উপনদী মেশে আশ্বাসে। বর্ষা ভেজে শিউলির স্নানে।

আহ্নিক গতি: জয়ীতা চ্যাটার্জী


পেরিয়ে যাচ্ছে দিন
বাতাস কেটে কেটে।
পেছন থেকে ঠেলা লাগে গরম নিঃশ্বাসের
জানি বাকি আছে পথ পেরতে হবে হেঁটে।

একটা বিশাল রাত
এসে দাঁড়িয়েছে অশ্বত্থের নীচে।
আমি একাকী পেরোচ্ছি বাঁক, প্রাগৈতিহাসিক
তত্ত্ববিদ তাড়া করে আমায়, সময়ের পিছে।

সীমাহীন এক দৌড়,
ছুটতে ছুটতে ছুঁয়ে দেবে আকাশের বুক।
হে পৃথিবী তোমারই গর্ভ থেকে জন্ম
নেয় আরও আরও পৃথিবী, আরও কত দুখ।

আদিমাতা তোমার কাছে
জীবন ,শেষ অঙ্গীকার রাখে।
বিগত জন্মের কাছে কোন প্রশ্ন থাকবে না
ভেসে যাবে মহাশূন্যের নিগূঢ় জ্যোৎস্নাতে।

মিথ্যা জ্ঞান: রিঙ্কু মন্ডল



উত্তম, মধ্যম বৃদ্ধ দর্পণের তুল্য
জ্ঞানান্বিত অনুভবে পৃথিবীর মাঝি,
মিথ্যা ছাড়া জ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ জ্ঞানপূর্ণ সাজি
অধম পারেনা দিতে প্রাপণীয় মূল্য।
বৃদ্ধগনের সম্মুখে বিম্ব হতে যাই
অস্বচ্ছ স্বীয় দর্পণে দেখায় অস্পষ্ট,
বুদ্ধি সকল সংগ্রহে হয় শত কষ্ট
জীবন চলার পথে অসাফল্য পাই।

উত্তম বৃদ্ধ সেদিন বলেছিল সত্য
অধম আমি কেবল করে গেছি হেলা।
মিথ্যা জ্ঞানে শুধু আজ অশান্তির চিত্ত
সমাজে পাগল নামে হয়ে আছি কথ্য।
মরু দেশে বয়ে যায় যৌবনের ভেলা
মাঝে মাঝে লু বাতাস প্রাণ নিতে মত্ত।
     
                                 

আকাশ টা মস্ত বড়:প্রতিভা দে


আকাশ টাতো মস্ত বড়
ঢাকে আকাশ রৌদ্র আলো,কখনো মেঘের রাশি,ঢেকে ফেলে শশী,
নিগ্ধ আলো মিলিয়ে যায়,
অন্ধকারে পথ খুঁজি তায়,
নিরবতায় দিন গুনে যাই
হয়ত তখন বিদ্যুৎ ঝলকায়,
সেই আলো পথ পাই,
ঝড়ের মাঝেও আলো থাকে
সেই আকাশটা নিরব বলি
যাকে।
দেখায় পথ এমন করেই,
আবার সূর্য পাঠায় ভোর
হলেই।

মন্দবাসা : বৈশাখী গোস্বামী


তুমি আমায় জিজ্ঞেস করেছ বহুবার,"কেন আমি বারবার ভালোবাসি? ওরা তো বাসে না।" তখনই আমি খুলে দিই নিজেকে, অকালেই শ্রাবণ নামে নিশ্চুপ থেকে যায় মুঠোফোন, তুমি কেঁপে ওঠো। আসলে যতবার পরাজিত সৈন্যের মতো ফিরি আসি, চোখের তলার পুরু কালো, মুখের অরুচি, নির্ঘুম রাত আর অপ্রস্তুত পরীক্ষা নিয়ে ততবার তুমি সামলে নাও কেমন করে? আমি তো প্রশ্ন করিনি কোনোদিনও। কারণ জানি, তখন আমি হয়ে উঠি তোমার সন্তান আর তুমি আমার পিতা।
ঠিক এ কারণেই আমি বারবার বারবার ভুলে হাঁটি,
তুমি রেশমি আলো, পরিপাটি। তবে, তুমি আমার প্রেমিক না হলেও আমি তোমার অপ্রেমিকা রয়ে যাব আজীবন।
ইতি,
তোমার অপ্রেমিকা

"তবু...ভালোবাসি" : চন্দ্রানী পাল



তোমার রাস্তা সরলরেখায়
আমার রাস্তা বাঁকা
কি করে যে হলো তবু
তোমার সাথে দেখা!!

তোমার দৃষ্টি অধরে মেশে
আমার দৃষ্টি চোখে
তবুও কেন তোমারই ছবি
আমার আঁখি দেখে!!

তোমার চক্ষু রক্তবর্ণ
আমার আঁখি সিক্ত
তবুও তোমায় ভালোবেসে
আজ আমি রিক্ত।

তোমার প্রিয় গোলাপ আজও
আমার প্রিয় জুঁই,
তবু ও তুমি মনেরবন্ধু
তুমি থেকে তুই..।

তোমার প্রিয় ঝোড়ো হাওয়া
আমার হিমেল বাতাস
তবু আমি তোমার চোখেই
দেখি চেনা আকাশ।

তোমার প্রিয় শীত ঋতু
আমার প্রিয় বসন্ত
তবুও যেন মিল খুঁজে পাই
আদি থেকে অন্ত।

তোমার প্রিয় ময়ূরাক্ষী
আমার কর্ণফুলি
তবুও তো দুঃখে-সুখে
হাত ধরেই চলি।

তোমার প্রিয় সুনীলবাবু
আর আমার প্রিয় রবি,
দু-এক কলম লিখতে পারি
তোমার জন্য সবই।

তোমার প্রিয় জামদানী
আমার বালুচরী,
তবুও মোদের এক আকাশ
সুখের সৌধ গড়ি।

যুক্তি তর্কে থাকো তুমি
আমি আবেগে ভাসি
তবুও যেন মিল খুঁজে পাই
তোমায় ভালোবাসি।।


কবিতা, তুমি অমর রবে : জিয়াউর রহমান



সৃষ্টির পূর্বেও ছিলে স্রষ্টার বক্ষমাঝে,
পরেও আছো অধিষ্ঠিত তুমি
বিশ্ব-হৃদয়ের মন্দিরে।
তোমার রঙধনুর রং রাঙা করেছে
কত মানব- মানবীর হৃদয়ের আবেগ!
কত প্রাচীন অর্বাচীনের কামনা তুমি,
সবার উপর বর্ষণ করেছ কৃপাধারা।
প্রেম-গোলাপের কাঁটায় বিদ্ধ-হওয়া হৃদয়-ক্ষতের হয়েছ উপশম,
কখনো-বা হয়েছ চিড়-ধরা সম্পর্ক
জোড়া লাগানোর আসঞ্জন।
সত্যান্বেষীর বাহন হয়ে পৌঁছে দিয়েছ
তাকে তার কাঙ্খিত লালিত লক্ষে।
বর্বরতার পদতলে নিষ্পেষিত নিপীড়িত
জাতির প্রেরণাদায়ী বিপ্লব-গান হয়েছ,
হয়েছ  প্রতিবাদ-ভাষা, দিয়েছ মুক্তি।


ঐ রাখালের বাঁশির মনমাতানো সুরে,
বসন্তের ঐ কোকিলের সুরেলা কূজনে,
মৌমাছির ঐ অবিরাম গুঞ্জনে,
ঐ পাহাড়ী ঝর্ণার জল-তানে
আছো তুমি বাসা বেঁধে।
সময়হীনতার সুধা সেবনে হয়েছ অমর
আর অমরত্ব দিয়েছ তাদের যারা
যতনে লিখেছে তোমায় তাদের
 হৃদয়ের অনপনেয় কালি দিয়ে!


রাত এখন গভীর :পলি ঘোষ


রাত এখন অনেক গভীর
ঘুমের ঘোরে ভাবনার সাগরে ভেসে ভেসে হারিয়ে ফেলেছি আমি নিজেই নিজের জীবন।

রাত শেষ হবার সাথে সাথে শুরু হয় নতুন ঊষাকাল পূব আকাশে।
ঈশান কোনে জমে আছে কত মমতা আর ভালবাসা অনুভব করি তোমার কাছে কিছু আশা।

গোধুলি একাকার হয়ে মিশেছি আমার মতো নগণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে তার ফুসফুসে।

গোধূলির রঙে রাঙিয়ে যাওয়ার পর এসে গেছে বহু দূরে সরিয়ে কালো মেঘ ঢেকে গেছে আর তুমি আমার মনের ভিতর থেকে ছন্দোবদ্ধ এক রঙা আবীর।

সন্ধ্যা বেলা শেষে যখন এসে গেছে সাত সাগর রক্তের বিনিময়ে কিনে পাওয়া গেল আমার অবুঝ পাখি তুমি কেমন আছো।

রাতের অন্ধকারে মিশে থেকেছি এই ভেবে একদিন তুমি আমার মনের ভিতর চাপা কষ্ট ইচ্ছে হলেও পূর্ন করে তোমার অশ্রু অনুভবে কাছে টেনে চোখে চোখ রেখে আবীর রঙা মেঘে রাঙিয়ে নিও।

মধ্যরাতে খোলা আকাশের বুকে টেনে নিয়ে আমার মতো নগণ্য সাধারণ প্রশ্ন লেখ।

শেষ রাতে মেলার উদ্বোধন সেদিনই হয়েছিল তখন আমি নিজেই নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলে ধরে এক লিখেছিলাম নতুন ঊষাকাল পূব আকাশে।

বিধির কাছে প্রশ্ন: জামান আহম্মেদ ইমন



জীবন গেলো দুঃখ কষ্টে
সুখের ছোয়া পাইনি,
যারে ভালোবাসিলাম আমি
আমার আপন হয়নি।


সুখের আশায় ঘর বাধিলাম
সেই সুখ আমার সয়নি,
মনের আয়নায় ছবিটি তার
মূছে ফেলা যায়নি।

তাকে ছাড়া এই জীবনে 
অন্যকিছু চাইনি,
বিধির কাছে প্রশ্ন আমার
তারে কেন পাইনি?

প্রতিকূল : শৌর্য্যিতি



সে'তো গুটিয়ে ফেলেছে বই খাতা, ভীষণ জ্বরে ..
তুমিও মেঘ দিয়েছো তাকে।মনখারাপি উড়ে যায় ফুসমন্তরে..।

শীত নেমে আসে শহর তার,চোখ।বদলে যাওয়া জলবায়ু
আমিও মৃত্যুকে রোজ চুমু খাই,অবরোধ।হেঁটে চলা পথ আয়ু'র

"ভালো আছি " মিথ্যে সে কথা ভীষণ সত্যি, আয়না
"মিছিলে মিছিলে প্রেম হউক" মোমবাতি না ।

বৃত্ত আঁকছি তাই ,সংসার চলে যায় কোনো মতে।বিপ্রতীপ ,
মন আমিও সময় নিচ্ছি কিনে, বিপরীত।।


বিবেক এবং : সুমিত ভদ্র



শহর কেঁপে ওঠে ঘুম ভাঙা চিত্কারে;
থর থর করে কাঁপতে থাকা শরীর বারবার ব্যর্থ হয়
কামলালসায় নিমজ্জিত হিংসাত্মক হাতের থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টায়।
উপভোগ করো শরীর,
নষ্ট করো সম্ভ্রম।
চিঁড়ে ফেলো যোনি তোমাদের কালো রাতের চিহ্ন মুছে দিতে।
মেতে ওঠো শরীর নিয়ে খেলা ও হত্যালীলায়।
তোমাদের কামোত্তেজনা মানে না কোনো বিবেকের বাঁধা!
ছোট্ট প্রানের ধর্ষন ব্যাথার কাতরতাও পৌঁছাতে পারেনা তোমাদের কানে।
বন্ধ ঘরে বা জঙ্গলে বেড়ে যায় আরও একটি শিশুর গলাকাটা লাশের সংখ্যা।
আর প্রতিবাদ ধামাচাপা পড়ে ধর্মাবলম্বি রাজনীতির কচকচানিতে।
শুঁকিয়ে যায় একসময়ের দগদগে ঘাঁয়ের ক্ষত,
নিভে যায় মোমবাতি মিছিলের বাতি,
গতানুগতিক কলরবে ভেঙে যায় কালো কাপড়ে ঢাকা মৌন মিছিলের নীরবতা।
বেকসুর হয় আরও একটি ধর্ষক,
বীজ বপন হয় আরও এক ধর্ষিতার প্রানহানির।

ঝরা পাতা : রাণা চ্যাটার্জী



কালকেও যে সজীব ছিল, আজকে ঝরাপাতা
সাংবাদিক লিখছে কতো,আমার কলম ভোঁতা

এইতো সেদিন চির সবুজ,জাগলো কিশলয়
হঠাৎ দেখি এক যুদ্ধ ছায়া,কখন কি যে হয় !

দস্যি দামাল,ছন্দে কামাল,ভারত সেনানী বীর,
 মনোবলের লেলিহানে গুঁড়াও,যত জঙ্গি শিবির

বড়শি নিয়ে পড়শী দেশ,রোজ করছে নাজেহাল,
 বীর সেনাদের দৃঢ়চেতা ভাব ,হবেইনা টালমাটাল।

গাছের পাতা ঝরতেও দেখি নতুন পাতা আসে
পাখপাখালির মিষ্টি সুর সংগীত হৃদয় ভালবাসে।

  ঝরা পাতা তো ঝরেই পড়ে  নির্ঝরে টুপ করে,
  কচি পাতা আসে দেখি,সেজে ওঠে গাছ ভরে।
                     
 পাতা ঝরে ,খসে যায়ও,কত স্মৃতি রেখে যায়,
 উদাসীন মন,করে হায় হায়,গাছ বুঝি অসহায়।

 নিয়মেরই আঙিনায় সব কিছুই তো সয়ে যায়,
 পৌঢ়রাও সরে যায়,কিশলয় দেখি প্রাণ পায়।

 তবু মন খাবি খায়, সুখ দুঃখের স্মৃতি চমকায়,
 ব্যস্ততা ধমকায়,ঝরা পাতা থমকায়,ধোঁয়াশায়।

           
             

চুপ : বৈশাখী গোস্বামী

কতগুলো মৃত্যু এসে দাঁড়াল
ঠিক আমার দু'পায়ের সীমানায়
এ ওর ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল
এ বলে আমায় তো ও বলে আমায়
কী তাহাদের আকুতি
আমি বিস্মিত, অবিচল
মিলিয়ে দেখি অবিকল
উনিশ কুড়ির তফাৎ
চুপ করে বসি,
কপাট বন্ধ করে শান্ত স্বর...


তারপর দেখলাম জীবনের থেকে শ্রেষ্ঠ মৃত্যু
না! আর হয় না।


মেয়েটা একটা মানুষ : শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়



মেয়েটা পুড়ছিল
মেয়েটা জ্বলছিল
মেয়েটা শুনছিল — হল্লা-হৈ

আসলে মেয়েটা, একাই আগুন।

মেয়েটা ছুটছিল
মেয়েটা ছুটছিল
থামাতে পারেনি তাকে — হাজার কুহক

মেয়েটা চাইছিল, জয়ের তিলক তার কপালে আঁকুক।

মেয়েটা পুড়ছিল
মেয়েটা ছুটছিল
মেয়েটা বলছিল — দুঃখ একবুক

মেয়েটা জিতে নিল, জয়ের মুকুট।

মেয়েটা হাসছিল
মেয়েটা কাঁদছিল
মেয়েটা বলছিল — লড়াই চলুক

আসলে মেয়েটা একটা মানুষ।।

আলো-ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






      ।। (এক)।।

সকালবেলাটা তোমার আমার কারও নয়। সকালবেলাটা সকালবেলার। একেবারেই প্রকৃতির। কতবার ভোরের জানলা খুলে বাইরেটা দেখেই মন ভালো হয়ে গেছে। ভুলে গেছি সব। রাতের অশান্তি মাথা থেকে হাওয়া। একবার এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুর্গাপুর গিয়েছিলাম শুধু এই শর্তে যে বিয়ের পরদিন ভোরবেলা কাউকে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে আসব। কারণ ভোর দেখা। দেখেছিলাম। একবারের জন্যও তাকে আমার ইস্পাতনগরী বলে মনে হয় নি। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা একজন মানুষ। চারপাশ কেমন যেন অগোছালো। এটাই তো আসল রূপ। গুছিয়ে নিলেই তো একটা আরোপিত অস্তিত্ব যেন কোথা থেকে এসে জুটে যায়। যা নেই তাকেও টেনে আনার ইচ্ছা আমাদেরকে গ্রাস করে। আর তখনই নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিকতা। ভোর এসব কিছুর ঊর্দ্ধে। মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ উচ্চারণ ------ " প্রভাত আসে তাহার কাছে আলোক ভিক্ষা নিতে......"। তাই তো ভোরের এই শুদ্ধতা। বাসের জানলা দিয়ে ভোর দেখতে দেখতে স্টেশন পৌঁছেছিলাম।


                      ।।দুই।।

আজ পর্যন্ত জীবনে ক'টা মানুষ আমার কাঁধে এসে হাত রেখেছে? আঙুলের গাঁট গুনতে গুনতে সামান্য এগিয়েই থেমে যেতে হয়। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কারও দিকে আঙুল তোলার কোনো অধিকারই আমার নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ছাড়া অন্য আর কার সাথে মেশার জন্য এগিয়ে গেছি? জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তো চারদেয়ালের মধ্যে ছাত্র পড়িয়ে কেটে গেল। যতটুকু সময় হাতে পেয়েছি তার বেশিরভাগটাই পড়ে লিখে কেটেছে। আর বাকিটা হয় কোনো পরিত্যক্ত মন্দির, না হয় কোনো নির্জন রেলস্টেশন, আর না হয় কোনো গাছতলা। এদের পেরিয়ে এসে ক'টা মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি? আমি যখন বলেছি, জায়গাটা দারুণ, তখন আমার ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠেছে, স্যারের পছন্দ মানেই একটা বড় ফাঁকা জায়গা। খুবই সত্যি কথা। কত কত দিন যে নির্জন স্টেশনে কেটে গেল তা গুনে শেষ করা যাবে না। কথা না বলেই তো বেশি ভালো থেকেছি। তাই হাতে গোনা যে ক'টা মানুষ কাছে আছে তাদের নিয়েই আমায় খুশি থাকতে হবে। হাতে গোনা সংখ্যাও যদি কমে তাহলেও আমার কিছু বলার নেই। হাতের সব ক'টা আঙুল আমি আমার নিজের দিকেই তুলি। কারণ তাতে নিজেকে অনেক কিছু শেখানো যায়।

(ক্রমশ...) 

নারী : সুবিৎ বন্দোপাধ্যায়



তুমি এক ডুবে তুলে আনছ ফুল
খুঁড়ে আনছ জলের পত্রজ হৃদয়
বাম হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছ তারা
হয়ে উঠছে বরাভয়।

পলকে সে অলীক মাছ
মাছ থেকে নবীন গাছ

সহসা জলের তলায় ঝাপটে লাফিয়ে তাকে মুখে করে জেগে উঠছে দিগন্ত আর সর্ষে ক্ষেত 
রঙা মাছরাঙা পাখি ।

সূর্যের গায়ে গায়ে অর্বুদ জলকণা লেগে
স্ফটিকের মত অসংখ্য রামধনু ছটায় ঝিকিয়ে        উঠছ পলে পলে উড্ডীন এক আশ্চর্য্য শিখায়
তুমি সেই কখনো ফিনিক্স কখনো সাইরেন দের তিন বোন অডিসিউসের পরাজয়।


আমিই মা :সৌজন্য ভট্টাচার্য্য

জননী আমি তোদের স্বপ্নের খেলাঘরে,
তাই বাৎসল্য আজ গুমরে কেঁদে মরে।
মৃত্যু যন্ত্রণা হজম করে যখন
একে একে তোদের জন্ম দিলাম
ফোকলা হাঁসিতে প্রসব যন্ত্রণাটা‌ই ভুলে গেছিলাম।
সবাই বলেছিল আমি নাকি রত্নগর্ভা!
সন্তানেরাই একদিন প্রমাণ দেবে জননী সর্বেসর্বা।
আজ তোরা সবাই প্রতিষ্ঠিত নিজের মতো করে,
কিন্তু জানিস! আমি আজও একা আমার কুঁড়েঘরে।
তোদের বাড়িগুলো নাকি খুব সুন্দর সাজানো?
আমার পরণে এখনও সেই জীর্ণ শাড়িটাই জড়ানো।
চোখের দৃষ্টিও হয়েছে ক্ষীণ বয়সের ফাঁকে,
এখন পাড়ায় সবাই আমাকে ভিখারিনী মা বলে ডাকে।
তবে ভিক্ষাবৃত্তি এ আমার প্রথম নয়
শুরু করেছিলাম যখন তোদের জন্ম হয়।
তখন হাত বাড়াতাম তোদের ভালোবাসায়
আজ‌ও আমি দুহাত পাতি দুমুঠো ভাতের আশায়।
জানিনা আমি মা হ‌ওয়া পাপ নাকি পুণ্য,
হ‍্যাঁ রে একবারও কি কষ্ট হয়না এই ভিখারী মায়ের জন্য?
থাক, চাইনা বাপু ওই মেকি ভালোবাসা
কার‌ও কাছে হবোনা আর ঋনী,
বাটিটাই আজ আমার শ্রেষ্ঠ সম্বল
কারণ?? -আমি যে ভিখারিনী।।
                                  

বালিজুড়ি : তাপসী লাহা


প্রত্যাবর্তন
মানে ফিরে এলে,

দু পায়ের সমগ্রে থিতিয়ে জমে যাওয়া ভেজা বালির ভার।

শুধু  কি  এ ভার  নিয়েছি!

সাথে মিশে আছে মনের নিঝুম ঘর উপচে পড়া কালিঝুলি।

রোজ দেখি ঝাড়বো বলেও  হাত লাগাই না।

মলিনতার সাথে ধূসর বিষাদের অনুষঙ্গ।


মুক্তির কথা ভাবিনা।


শুধু এসব অন্যমনস্ক আবহের প্ররোচনায় টের পাই না ঘাতক শেকড়ের বিস্তার পায়ের তল ভেদ করে জাপটে ধরেছে অবদমনের মাটি আর আমার ঘরে ফেরা বাতিল হয়ে যায়।

ভাবনার আঁচলে তোমার রং : প্রণব রায়




এক আঁচল বাতাস যখন
    ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে
     কল্পনাকে সুড়সুড়ি দেয়..
আমি তখন অন্ধ বাউল
    একতারাতে হারিয়ে গিয়ে
   তোমার রঙে একলা রাঙি;
এক আকাশ ভাবনা যখন
  আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে
    নতুন দিনের গল্প বলে...
আমি তখন আকুল পাগল
            দিগন্তেতে ছুটে গিয়ে
    তোমায় ডাকি দুহাত তুলে;
একটি দুটি স্বপ্ন যখন
      বোতাম খুলে উঁকি মেরে
    ঘুলঘুলিতে লুকিয়ে পড়ে..
আমি তখন ফেরিওয়ালা  স্বপ্ন নিয়ে একলা হাঁটি
পড়ে থাকে বঞ্চিত সব পথের মাঝে ;
দুচার ফোঁটা বৃষ্টি যখন
      আমার কাছে ছুটে এসে  সরস করার উপায় খোঁজে...
আমি তখন ঝর্ণা হয়ে
 তোমার বুকে হারিয়ে গিয়ে  উড়াই নিশান ঠোঁটের ভাঁজে।

দরজার ওপারে : সারিফ হোসেন



প্রেয়শী,
 তোমার ওই টানা টানা কাজল আঁখি,
পুষ্প পাপড়ির ন্যায় ঠোঁটের বিন্যাস
অথবা ভ্রু কোচকানো মুখের হাসির
কিংবা রেশমি চুলের শিলান্যাস....

বসন্ত আসার আগমনী বার্তা বহন করে।
না কোনো কোকিল কন্ঠের প্রয়োজন নেই,
নেই প্রয়োজন রং-বেরং ফুলের বাহার।

কিন্তু সেই তুমি ঝাসির রানী বীর রমণী
সমাজের প্রভুত্বের হাত থেকে পৃথিবীর কথা
না ভেবে পারবে কি এই ফাগুনে আমায়
বুকে জড়িয়ে ধরতে! জানি পারবি না।  কারণ
ঘাসের মত নিষ্পাপ ভালোবাসায়, বাতাসের ন্যায় তোমার শরীর স্পর্শ করলেও সমাজের
দরজার ওপারে বেশ্যাবৃত্তি অ্যাখ্যায়িত হবে।।

আত্মহনন :বিশ্বজিৎ সরকার

শরীরের ভিতর জ্বলছে শহর
তোমার চুল এসে তবু আজও মুখ ঢাকে,
ভালো থাকার নামে পুড়ে যাই
লুকানোর মিথ্যে আচেঁ।

গ্রামের পথ ভুলে গেছি
প্রেমিক হবার শখে,
ভালোবাসি তবু আমি
অন্ধগলির শোঁকে।

সৌরভ :দোলন দাস মন্ডল



সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছ তুমি,
প্রতিটা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে সে তোমার
নীল শার্ট, নীল জিন্স, চশমার ফ্রেম.....
চলার পথেই তোমার হাত ঠিক করে নিলো চুল। 
তুমি ছোট থেকে বড় হতে হতে মিশে গেলে ভীড়ে,
খুব সামনে ছবি হয়ে ফুটে উঠলে তারপর
হাতের ইশারায় তাকে ডেকে নিলে কাছে।
পাশাপাশি হাঁটছে এখন দুটো মানুষ,
পা মেলাচ্ছে পায়ে ।
এ ছন্দ যেন ভুল হবার নয়!
দু'জোড়া আড়চোখের দৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে গাল-কপাল-চুল পরস্পরের
এখন তার সামনাসামনি বসে তুমি... কথা ঝরে পরছে টুপটাপ
তোমার হাত আবার ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার চুল অভ্যাসবশত।
আবার বদলে যাচ্ছে স্থান, সামনে থেকে পাশে....
পথের দোলানিতে হাঁটু ছুঁয়ে যাচ্ছে হাঁটু,
হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে হাত। 
চোখে চোখও যাচ্ছে ছুঁয়ে.....
ভিতরে ভিতরে অনুসন্ধিৎসু আরও দু'জোড়া চোখ...
ঠোঁটের পাতারা গল্প বুনছে।
গভীর পুলকে হেসে উঠছে সময়।
ধারাপাতের হিসাব থেকে দুটো মানুষ সংখ্যা তুলে নিচ্ছে ইচ্ছে মতো।
তারপর নিজেদের মন মতো লিখছে নামতা।

খুব কাছ থেকে আমি ওদের দেখছি...
এ শহর ওদের চেনে না,
তারপরও ওদের গা থেকে খুব সন্তর্পণে মেখে নিচ্ছে সৌরভ
রেলস্টেশন থেকে পথ, পথ থেকে শপিং মল, শপিংমল থেকে ফুটপাত....।

এর বহুদিন পর,
অনেকগুলো শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে
একলা জোড়া পা...আজও
শহরটার শরীর জুড়ে গন্ধটা খোঁজে,
মিলিয়ে যাওয়া ধূলোছাপে পা মিলিয়ে হাঁটতে যায়...
ফুটপাতের ঘাড়ে নাক গুঁড়ে গন্ধটা নিতে চায় প্রাণপণ...।

কিছু গন্ধেরাও আসলে নদীর মতো.....
যার উৎস থেকে মোহনা...মোহনা থেকে উৎস..
শেষ হয়, তবু শেষ হয় না।





স্ত্রী :শুভ্রা দে



আমি নারী তাই তো পুরুষ তোমার পুরুষ বলে  এত গর্ব।
আমি নিচু করি মাথা তাইত পুরুষ তুমি পারো মাথা উঁচু  করে চলতে।
আমি কাঁদি তাইত তুমি পুরুষ পারো অট্টহাসি হাসতে।
আমি রাখি গুছিয়ে তোমার সংসার  তাইত পুরুষ  তুমি সুখি।
আমি দিই তোমায় সন্মান তাইত তুমি পুরুষ পারো নারী কে করতে অসন্মান।
আমি নারী।
পারি আমিও হতে পুরুষ কিন্তু হইনা
থাকি স্ত্রী হয়ে তবেই তো  বাঁচো তুমি পুরুষ।
নারী সমর্পণ করে নিজেকে তবেই আজ তুমি পুরুষ।
অবহেলা,অনাদর, অপমান নিজের অস্তিত্ব ত্যাগ করি, যাতে তুমি থাকো  অহংকারি হয়ে।
বেঁচে আছি পরাধীন হয় তবেই তো তুমি পুরুষ স্বাধীন।
বেকার নই আমি!  আমি নারী আমি ই শক্তি।
পুরুষ তুমি কি প্রমাণ করতে চাও। নারী আমি!  আমার জন্যই তোমার অস্তিত্ব।
নারী আমি আমার জন্যই পুরুষ তুমি।
 আমাতেই জন্ম তোমার।
আমি নারী!  নারী আমি।
আমি গর্বিত আমি নারী।
আমি পুরুষ নই।

উপলব্ধি শিবির: অঞ্জনা দে ভৌমিক



জীবনের করিডোরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছে
উপলব্ধি শিবির!
হৃদয়ের আকাশে আবেগের প্রহরী সাক্ষ্য দেবে মরনে।
চোখে, পাপ পূণ্যের সঞ্চয়ের স্তুপ!
বেহাল জীবনের কিছু জিজ্ঞাসা?
দৃষ্টিতে,  ধ্বংস স্তুপ!
পিপাসা প্রশ্বাস ছুঁয়ে, ক্লান্ত হৃৎপিন্ড দিশাহারা;
দিঘির জলে ভিড় করে আসে সন্ধ্যার তারারা
রাত্রি এসে শেখায় কানামাছি খেলা।

চাঁদের ছবি যখন নদীর জলে
মিষ্টি ছোঁয়া  তৃষ্ণা মেটায় শীতল বুকে ;
আগুন নিয়ে যত খেলা,  কাঁদায় বিশ্ব নগরীকে
হিসাব নিকাশ  জীবন খাতায় তারই অংক করে।
কেউ বা কাঁদে সারারাত জেগে
কেউ বা হাসে তৃপ্তির অহংকারে!
জীবনযুদ্ধে স্যালুট করে অস্তমিত সূর্যে,
পূর্ণতার সন্ধানে।


লাল অক্টোপাস :অনিন্দ্য পাল


একটা লাল অক্টোপাস
হিমাঙ্কের নিচে থাকা একতাল হতাশা
আর চালচিত্রে ভণিতা সার্কাস
এসব আমাকে আর ঘুমাতে দেয় না
এসব নষ্টনাটক ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে
আমার ধৈর্য্য
এমনকি আমার পৌরুষযাপন ও যেন
চাল ধোওয়া জল
সমস্ত ইহলোক ডুবে যাচ্ছে আমার পায়ের তলায়
এক সর্বংসহা যোনি সেখানে শুয়ে আছে
নির্বিকল্প মা হয়ে।

একের পর এক চামড়ার মুখোশ খুলে পড়ছে
এমনকি লাল থেকে বিবর্ণ অক্টোপাসের দেহ
ছিঁড়ে ফেলছে ভাবলেশহীন, ফ্যাকাসে পাঁজর
আশ্চর্য একফোঁটা রক্ত পড়েনি আজও !
অথচ এইতো সেদিন চুক্তিবদ্ধ হল সমস্ত শুষে
নেবার পরও অন্তত পৃথিবীকে ভেজাবে একবার
প্রথম বাসর সঙ্গমের মত।

চুক্তিবদ্ধ সব লাল নীল সবুজ গেরুয়া অক্টোপাসের দল একে একে চলেছে ,আমার বিছানার পাশদিয়ে
খুলে রাখা অন্তর-বাসের দিকে ...

টিপ পড়া বৃহন্নলা : পায়েল মিত্র


রিষড়া মিলনমেলা প্রাঙ্গনে প্রতিবার খুব বড় করে দূর্গা পুজো হয়।চার বছরের ছোট্ট মিমানি সকাল থেকে বায়না ধরেছে আজ সে বাপির সাথে রিষড়া পুজো দেখতে যাবে।মা হারা মিমানির অদম্য জেদের উপর না করতে পারলেন না রাহুল বাবু।

একটু বিকেল থাকতেই রিষড়ার উদ্দেশ্য রওনা হলো ছোট্ট মিমানি আর রাহুল বাবু।পুজো মণ্ডপে পৌঁছে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা নেমে এলো।পুজো উপলক্ষ্যে চারিদিকে আলোর ঝলক বাড়ছে,বিভিন্ন ধরনের জিনিস,ভিন্ন ভিন্ন লোকজন মন্ডপের মাঠজুড়ে।চোখজোড়া পুজো অনুষ্ঠান রেখে মিমানির চোখ দুটো দেখছে মায়ের আদর।যেখানে যেখানে মায়েরা তার সন্তানকে আগলে ধরছে ভিড়ের ভয়ে।ছোট্ট  মিমানির চোখ দুটো আটকে যাচ্ছে অলৌকিকভাবে।
কী বোঝে চার বছরের ওই মেয়ে?কিছুই বোঝে না,তবে ও জানে ওর মা তারার দেশে চলে গেছে।যেখান থেকে কেউ আর ফিরতে পারে না।
সারাবিকেল বাবার হাত ধরে অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে মিমানি।
অবুঝ চোখে জল নেই আছে একরাশ না জানি কেমন হতাশা।
উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে রাত্রি হয়ে এলো। মন্ডপে ভিড় বাড়ছে,এমন সময় ছোট্ট মিমানি দেখলো মা দূর্গার মূর্তির আড়ালে দাঁড়িয়ে কে যেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রতিমার দিকে।মিমানি কোনমতে ওর বাবার হাতটা ছাড়িয়ে ছুটলো মণ্ডপের ওদিকে।শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরতেই ঘুরে তাকালো সে।মিমানিকে কোলে তুলে নিয়ে কর্কশ গলায় বললেন,-"কেরে তুই?"এত ভিড়ে একা কেন ঘুরছিস বাছা?"মা,বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিস নাকি?
একটা মোটা গলার স্বর কেমন যেন অদ্ভুত।মিনিট দশেক পর তার ভাবভঙ্গি দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো মিমানি।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ছোট্ট মিমানি বললো,-"মা"
আরে আমাকে মা বলছে পাগলি মেয়ে,ততক্ষনে হিজড়া হিজড়া বলে কিছু লোকজন ছুটে এলো মণ্ডপের কাছে।
এত সুন্দর নাক মুখের নকশা,বোঝার উপায় নেই যে সে একজন বৃহন্নলা।মিমানি কোল থেকে নেমে মা দূর্গার পাশে রাখা থালা থেকে একটা লাল টিপ এনে পড়িয়ে দিয়ে বললো,-"একোন তোমায় পুলো মা লাগছে।"
বৃহন্নলা ছলছলে চোখে ছোট্ট মিমানিকে আশির্বাদে ভরিয়ে দিয়ে বললো,-"তোর মতো অবুঝ নিষ্পাপ একটা মন যদি সবার থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের স্থান নির্দিষ্ট হিজড়া গোষ্ঠীতে নয় এই সমাজে হতো রে মা।কিন্তু আফসোস আমাদের কোনদিন মায়ের মতো লাগতেই পারে না,প্রতিপলে এটাই আমরা শিখি।খুব বড় হ্।মানুষের মতো মানুষ তৈরি হ্।

মিমানির বাবা রাহুল বাবু মিমানিকে খুঁজে পেয়ে ওকে কোলে তুলে,ওর দুগালে স্নেহ চুম্বন এঁকে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
চার বছরের অবুঝ মিমানি হাসতে হাসতে বললো,-"বাপি,বাপি আমিও টিপ পোব্বো।তাওলে আম্মিও মা হয়ে যাবো।
চাঁদের আলো মেখে হাসছে এক তারা।শিশুরা তো এমনই হয়।

মন খারাপ : পলি ঘোষ


আজ আকাশে চাঁদ উঠবে তোমার অপেক্ষায়।
আমি অবাক নয়নে নয়ন জুরে শুধু চেয়েছি তুমি প্রিয় আসবে বলেই।
আজ আমার মনের দুয়ারে এসো প্রিয় সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আমার মন খারাপের রাতে  তোমার মার অপেক্ষায় এখানে আমি একলা আকাশ দেখি।
জানো প্রিয় তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনও হয়নি ।
এখনো পর্যন্ত কোনো কিছু বলতে গিয়েও তুমি প্রিয় ভাবছো শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
একি তোমার আজকের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত প্রশান্ত সপ্ন গুলো।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি শুধু চেয়েছি তোমায় জানতে।
আমি আছি তোমার অপেক্ষায় থাকবো দেখার সুযোগ পেলেই দেখবো তোমায় হাজার হাজার তারার মাঝে এক শুকতারা রূপে শতবার।
আমি এখন মন খারাপের রাতে সুরে সুর মিলিয়ে গাইছি এক দুঃখের গীত।
আমার স্মৃতি গুলো আমায় উপহার দিতে এগিয়ে আসে আঁধার রাতে ঘুম আসে না মন খারাপের গভীর ঘুমে। 

নারী, তুমি মা হলে... : রমা



এভাবে এভাবেই বলে বুঝি কেউ !
চোখের জলের দাগ
এভাবেই পাথরের কারুকৃতি
জন্মদাগ পার করে
শিকড়ে রাখে নোনতা বিন্যাস,
যাবতীয় যাপনের ঊরুভাঙা 'দ'
এভাবেই পবিত্র যোনিপথে সুরাপাত্রে সুরক্ষিত রাখে বাৎসল্য !
এভাবেই পল্লবিত অক্ষরেরা দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে হৃদ-কুলুঙ্গীতে
মুগ্ধ মুদ্রা রাখে কাম কাম অন্তহীন রিপু !!
পাপ নয়, স্খলনের স্নিগ্ধ উচ্চারণে
পান্ডুলিপি জুড়ে পুড়ে যাই, মরে যাই, আমি এক নিঃস্ব প্রজাপতি!

ভ্রূণ মুখে রোদ  মেখে নেমে এসো নারী !
        একবার মা ডাকি দৃঢ় সন্ততি !!!

স্তব্ধতা :মিতা বিশ্বাস বসু



দিনের আলোতে
যে কথা স্তব্ধ
আঁধারে সে কথা
সাবলীল তত,
মনের বার্তা মনেতে চলেছে-
কালোতে মাখিয়ে
ভাবনা জুড়ছে।

নামুক আঁধার বন্ধ চোখেতে
ভালোবাসা শুধু আছে অনুভবে,
পারাপার তার
নাই কোনখানে-
'স্তব্ধতা'-সে তো
জীবনের মানে।


তখন রাত্রি নেমেছিল: মনোজ কুমার ঠাকুর

তখন রাত্রি নেমেছিল
আকাশের তারারাও চেয়েছিলো
আশাহত হয়ে,
আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি ফিরে আসার,
 সব শক্তি লোপ পেয়ে গিয়েছিলো তখন ।
মনে একরাশ দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম
কোনো এক অজানা গন্তব্যে,
খুব ইচ্ছে করছিলো তখন
কাউকে পাশে বসিয়ে
নিজের ব্যর্থতার গল্প শোনাই,
কিন্তু সেই নিকষ অন্ধকারে 
নিজের প্রতিচ্ছবিও তখন অবর্তমান ।
ভেবে নিয়েছিলাম শেষ সব,
এখানেই শেষ হয় জীবনের অধ্যায় ।
আর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করিনি
একটুখানি আলোর রেখার সন্ধান করার,
হ্যাঁ ঠিক তখনই রাত্রি নেমেছিলো ।

হায়! সভ্যতা : কাজী জুবেরী মোস্তাক


বিবস্ত্র আর বিপন্ন আজ সামাজ,সভ্যতা
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের এ সভ্যতা?
চারিদিকে সভ্যতার নামে চলছে অবাধ নগ্নতা,
সবার মাঝে থেকে দেখাই শুধু মেকি পরিপুর্ণতা
অথচ মনের মাঝে বিরাজ করে ঠিকই শুন্যতা ৷
থমকে যাই দেখে আজ সভ্যতার নামে অসভ্যতা
এটা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নাকি ব্যার্থতা বুঝিনা তা?
ভার্চুয়াল জগতে আজ মুঠোফোনে বন্দী আত্মীয়তা
আত্মার টানে নেই আজ বন্ধুত্ব কিম্বা আত্মীয়তা
সম্পর্ক আজ আছে যা সে শুধুই সামাজিকতা ৷
চারদিকে দেখি আজ লোক দেখানো মানবিকতা
মন নেই মনুষ্যত্বও নেই অথচ দিব্বি আছে বক্তৃতা ,
এই কি আমার সভ্য সমাজ,এই কি আমার সভ্যতা?

কপালে সিঁদুরের ছাপ এঁকে : অনোজ বানার্জী



রাঙা  বসন্ত এল, দিকে দিকে :
তবু ক্লিন্ন বরষা ঘনঘোর,
মেঘ, বৃষ্টি,ঝড়,বন্যা...
হৃদয়ে  ধূ ধূ তপ্ত বালুরাশি। শুভ মিলন হলনা,তবএওু কপালে পবিত্র  সিঁদুরের ছাপ এঁকে দেহজ  অবৈধ ভার;;
সমাজের চূণকালি মুখ
নাটকাভিনয় এর আড়ালে  ঢাকা।
সুখের শত ওয়াট বাল্ব ফিউজ হল
হৃদয়ের ল্যাম্পপোস্টএ
সংসারের বলবিয়ারিং বিকল,;
দুপয়সা রোজকার  নেই
বেকার দাদার, রিটায়ার্ড  বাবার।
দেহের বিজনেসে কলংকিত তাই,
ষোড়শী সুন্দরী  বাংলার নারী।
চ্যঁদনী নশ্বর দেহে বিলাসী ভোগী পশুর
অনিবার্য  রক্তজ পাথরের ভার ;
অবৈধ  ভবিষ্যৎ..
কপালে সিঁদুরের ছাপের আড়ালে
অতি সযত্নে লুকানো ।।

বসন্ত স্মৃতি :সামসুল হক


দুচোখে প্রেমের প্রদীপ
হৃদয়ে কাশের বন
চল না, ওলো সজনী
দুজনে হারিয়ে যাব মস্ত-মগন ।

শাখাতে আসবে মুকুল
অলিকুল গুনগুনাবে
রাখবো তোর হাতে হাত
জীবনের সুখ-দুঃখ সব খেই হারাবে ।

আজ এই বসন্ত-দিন
তোকে খুব পড়ছে মনে
ভুলে সব প্রতিশ্রুতি
সার ফেলে তুই, ছুটলি কার পিছনে ?

আজো সবুজ আমার আকাশ
শুভ্র স্মৃতি-মেঘ ভাসে মনে
ক'টাদিন কাটিয়ে যা না
রোদেলা বসন্ত দিন এই উঠানে ।

আসা আর যাওয়ার মাঝে
জমালি সই কত ধন ?
যোগ-বিয়োগের খাতাখানা
রাখছে হিসাব কোন্ মহাজন ?

নিকোটিন কাব্য: মহঃ রাফিউল আলম



পোড়া ঠোঁট নিকোটিন চাই;
অক্টাপাস হাঁতরে মরে পিরামিড অক্ষর।
চায়ের কাপে আত্মহনন যত
আমার বেদুইন শহর।

শোকার্ত মানচিত্র আমার : গোলাম মোস্তফা লিটু



মানবরুপী কতিপয়
দাতাল শুয়োরের কাছে সহসাই
ধর্ষিত হচ্ছে আমার মানচিত্র

সেই সব দাতাল শুয়োরের
বিষাক্ত দাত ও নখের আচরে
প্রত্যহ ই- রক্তাক্ত
ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে আমার মানচিত্রের
অধর, বুক পেট সর্বাঙ্গ

অভিজাত এলাকায়, পল্লীগায়ে
সেনাকুঞ্জে, আপনালয়ে
শহর কিংবা মফস্বলে ;
চলন্ত যানবাহনে, বনে জংগলে
পুকুর-ডোবার ধারে - সর্বব্যাপী
প্রত্যহ ই ধর্ষিত
রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে
আমার মানচিত্র

কতিপয় শিক্ষিত অ-শিক্ষিত
বিকৃত মস্তিষ্কধারী দু'পায়ের
দাতাল শুয়োরের
বিকৃত লালসার হিংস্র তান্ডবে
প্রতিনিয়ত দংশিত হচ্ছে
আমার মানচিত্র

রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত
শোকার্ত মানচিত্র আমার
কখনো নিভৃতে
ফেলছে চোখের জল
কখনো আপনার জীবনটাকে
করছে উৎসর্গ
অনন্ত - অসীমের কাছে।।

নৈঃশব্দের ব্যকরণ : নয়ন হাফিজ


সঙ্গম শেষে ক্লান্ত দেহে নেমে এলো অমাবস্যা, দু চার ফোঁটা বাক্য বিনিময় শেষ করে স্বপ্নের রেশ ক্রমাগত যাত্রা শুরু করলো নামহীন কোনো জনপদে, যেখানে অপ্সরীরা নগ্ন সুঠাম শাদা স্তনে প্রস্তর খচিত মানচিত্র ও উন্মুক্ত জংঘায় ঈশ্বরের নিস্তব্ধতা আঁকে।

নৈঃশব্দের ব্যকরণ ঘেসা ভুখণ্ডে সাপের খোলস জুড়ে থাকা ক'ফোঁটা শিশির, যেন সমুদ্রের আদিমতায় নুড়ি, পাথর কিংবা পোড়ামাটির ফলকে ছাপ রাখা প্রাচীনতম ভাষা।

শিশ্ন ক্রমশ সময়ের ছোঁয়া পেয়ে সমাজতন্ত্রের দিকে ধাবিত হয়ে পুঁজিবাদের বেশ্যালয়ে গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লাশকাটা ঘরে ব্যবচ্ছেদে উদাম করে রেখেছে অণ্ডকোষ।

হলদিয়া ধূমকেতু বাংলা ব্যান্ড। : শিশিরবিন্দু দত্ত



একটা  বেগুনীরঙের স্করপিও থামে,
একজন  বেসুরো  সিরিয়াল তারা
আর তার সাথে দু'জন সুডৌল নর্তকী  নামে।
প্রচুর ভিড় সেই খুল্লম  রাতে
খোলামেলা পোশাক ছাদনাতে,
উত্তাল পারাবার পার  হয়  জনতা  শব্দ রথে।
আর আমরা চারজন
করে যাই রোপন
সুরের বাঁশি বৃক্ষ  আমাদের  চেনা  গাঁয়ের  পথে।

আমাদের  জল নেই,
ছায়াটাও  বড়ো বিব্রত।
দু'একজন  দাঁড়িয়ে থাকে দূরে
সান্ত্বনার প্রলেপের  মতো।
আমাদের আকাশও নেই,
না কোনো পরিচিত  তারা,
মিথ্যে বলা কোনো  পুতুল ও নেই,
কাপড় সরিয়ে যে দিতে পারে  হরমোনাল  সাড়া।

আমরা  দিগন্ত খুলি,
স্বপ্ন জুড়ে কল্পনার সাগরে বুদবুদ,
ওভাবে  রাখিনা আমরা 
আতসকাচের নীচে  হঠাৎ  বারুদ।
আমরা সবাই মিলে  আমাদের  পরমায়ু,
নৈঃশব্দের  সুরে গাই 
বিদ্যুৎ -ধোঁয়া -জলবায়ু
রবীন্দ্রনাথ-লালন...
সদ্য প্রেমে পড়া  পাপড়ির প্রিয়  আলিঙ্গন।
কেউ নেই তার,  তাই ইচ্ছে -কোদালগুলো
মিথ্যে  থেকে  যায়,
হয়না কোনো কিছু,  সব  হওয়া বাকী  রেখে যায়
সম্ভাব্য  হাওয়ায়....
অকালবৃদ্ধ হয়ে ওঠে  ঘাসের  সুঘ্রাণ,
আমরা তবুও  গাই  সুতো বাঁধার  গান,
আমরা  তবুও গাই  প্রতিবাদের গান,
আমরা সবাই মিলে বাজাই ঐকতান...

নুনের কৌটো : অসীম মালিক


             
                     ( ১)
নুন ,
তুইতো ঝালেও আছিস
ঝোলেও আছিস
অম্বলেও আছিস ।

তুই তো সমুদ্রকে ভালোবাসিস !

নুন ,আমি যে বস্তির দগ্ধ চাঁদ ,
তোকে উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাই ---
একমুঠো গরম ভাতের সঙ্গে
তুই একটিবার আমার ঘরে আসিস ।

                            (২)
নুন
    নুন
         নুন ....

তোর গুনে বিস্বাদ লাগেনি ,
                         কচিপাঁঠার খুন !

                              (৩)

নুন ,
তুই কি খবর রাখিস ?
        একটা আস্ত নদী খেয়েও
                  কেন সমুদ্রের হয়না অবগুন !

                                  (৪)
নুন ,
   নুন ,
       নুন ....

তোকে দেখেছি ঘামে ।
শূন্য থালায় হারিয়ে গেছিস ,
                  ধর্মতলার জ্যামে ....

                                      (৫)
নুন ,
তুই কি জানিস ?
অন্ধকারেও বস্তির ছেলেটা
করে
      গুন
            গুন ....

                                    (৬)
নুন ,
   নুন ,
       নুন .....

ভাতের থালা দোলপূর্ণিমার চাঁদ হলে
            তুই আমার ফাগুন ...

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর : রোমা মন্ডল ব্যানার্জি



জীবন হতে স্বেচ্ছামৃত্যূ আমিও তো চেয়েছিলাম ..
তবু একদিনও  মৃত্যূর  জন্ম দিতে  পারিনি...

মনের  চিতায়  কাঠ  তুলেছি  বহুবার ,
এই  ধর  যতোবার জেনে বুঝে 'তুমিরা' হত্যা করতে চেয়েছ আমায়, ততোধিক..
কিন্তু  মুখাগ্নি করার প্রেম প্রতিশ্রুতি  কেও তো কোনদিন করলে না আমার  সাথে....!

মৃত্যূকে তো আমি ভয় পাইনি,
মৃত্যূকে কিছু ভালোবাসতে শিখেছিলাম,
যেমন প্রেম ছিল কিছু "তুমিতে'..
কিন্তু ছেঁড়া রক্তের গন্ধ আমার কোনদিন ভালো লাগেনি, সেই কৈশোরে যখন  প্রথম ঋতুমতি  হয়েছিলাম,সেদিন থেকে রক্ত আমাকে স্পর্শিত করে রেখেছে,যেমন প্রতিদিন স্পর্শ করে রাখে কিছু 'তুমির' অবারিত  প্রেম ....

যেমন  করে 'তুমিরা' ভালোবাসাহীন শরীর  দিতে  চাও রোজ , তেমন করেই  আমি রক্তশূন্য মৃত্যূ ভালোবাসতে  শিখেছি, 'তুমিদের' দেওয়া  আঘাতে যন্ত্রণা আসে, ব্যথারা মাথা  তোলে,যেমন আমার প্রথম কৈশোরে মুখ তুলেছিলে 'তুমিরা'....

মনেরও  রক্তক্ষরন  হয়,
তবে তা তোমাদের মৌনতার মতই  নীরব,
মনের  রক্তক্ষরন  কেও দেখেনা,
দেখনি তো কোন 'তুমিরাও'...
কিন্তু  তাতে তো 'তুমিদের' স্পর্শ ছিল..
তবে  ...?

যে 'তুমি' টা আমাকে চেয়েছিলে আশৈশব,
সে  'তুমি'ও তো পারতে খানিক জীবন শেখাতে  কিন্তু যতোবার প্রেমের  কথা  বলেছ ততোবারই স্পর্শের মোহে মৃত্যূর কথা শুনিয়েছ বার বার...
একটুও "জীবন"  শোনাওনি কেন  ?..

আর যে 'তুমিকে',
আমি  চেয়েছিলাম  কৈশোরী রোদে,
সে 'তুমিটা' নিখোঁজ নও,তবে আলোকবর্ষ  দূরত্বে সে  'তুমি' কবেই  নিরুদ্দেশ.......
মানুষ  হারালে,খুঁজে  পাওয়া  যায় ,
কিন্তু স্বেচ্ছায় চলে গেলে তাকে তো খুঁজে পাওয়া যায় না...
চলে  যেতে  যেতেও নিভৃত্যে  মৃত্যূ  শিখিয়ে  গেছ, ...

আর  যে  'তুমিদের' কাছে আমি রোজ থাকি সেই  'তুমিদের' কাছ থেকে কি চেয়েছিলাম আমি ?
মনে নেই তা, তবে যতদূর  মনে পড়ে তাদের সাথে ছিলতো আমার বহু বাস,সহবাস.....
তবু জীবন শেখায়নি তারা,
শেখায়নি  বাঁচতে...
তাই ঘৃণাটুকু প্রাপ্তিতে  রেখে
একদিন স্বেচ্ছামৃত্যূ চেয়েছিলাম আমিও...
কিন্তু  পারিনি...

বুজেছি , জীবনের থেকে  মৃত্যূ বড়  নয়..

হয়তো আমি 'তুমি' কেন্দ্রিক, কিছু  'তুমির' কাছে  হেরে  যাওয়া  মানুষ, এক জীবনে  কত  'তুমি' আসে  আবার  কত  'তুমিরা' চলেও  যায়, তবু আমি কেবল 'তুমিরে' তিমিরাচ্ছান্ন.....

একদিন কোন 'তুমি'ই তো আমাকে প্রথম দেহজ প্রেম শিখিয়েছিলে,কেও বা শিখিয়েছ ঘৃণা ,
কিন্তু এজীবনে কেও অথবা কোন 'তুমি' আমাকে জীবন শেখালে না কেন ??

তবু,
জীবন ভালোবাসি,
তাইতো, জীবন মৃত্যূ যন্ত্রণার মূলমধ্য রেখাতে কোনদিন মৃত্যূর জন্ম দিতে পারিনি,
বার বার জন্ম দিই জীবনের.....

তোমরা আমাকে  পতিতা  বলে  চেন  ,
আর,আমি বলি  নিজেকে গর্ভধারিনী  মা ..

বেরঙ: মৌসুমী রায়



আমার ধূসর শহর ধূসরই থাকুক..
যেমন করে কাটছে দিন কাটুক
সেই শূন্য থেকে শূন্যেই যাব ফিরে
এই বুকের আগুন অন্য বুকে নাইবা জ্বলুক।
আমি মেঘকে দাবড়ে রাখি বুকের মাঝে..
সময়ের সাথে সিঁথির রঙ ফিকে হচ্ছে
গোধূলীর রঙ চড়া দামে বিকোচ্ছে,
আর কেউ নিক আমি থাকি বেরঙ সাজে।
আমার ধার করা দিন বাঁচার যে ঋণ...
বাড়ছে হিসাব খাতে
তোমার ঠোঁট দিয়ে আমার কপাল ছুঁয়ে দেখো
ঋণ বেড়েছে তোমার কাছেও
আমার ভুলের হিসাব তোমার কাছেই রেখো।
যেদিন আমি শূন্যে ফিরে যাব..
সেদিন শুধু আমার হয়েই থেকো।


হিং টিং ছট :রাজিত বন্দোপাধ্যায়



 

পৃথিবীর সব কথা শুনেছি আমি --     
পৃথিবীর সব ব্যথা বুকেতে আমার !   
দহনে গিয়েছে বিগত অনেক দশক ,     
দেখেছি রাজনীতি কেবলি বিত্তের পোষক !     
তোমাকেও দেখেছি দু চোখ ভরে       
আজ যারা টু মি বলে --     
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়  !     
সুযোগ খুঁজেছে রেখে --   
বিত্তের কাঁধে দুই উষ্ণ হাত ,   
তাদেরই মুখেতে টুমি - র প্রভাত !!   
রাজনীতির ঘুঙুর শিঞ্জনে বাঁধা   
এদেরও অনেকের মুখ ,   
দশকের দহনের পরে পুরুষেরে     
দিয়ে দেখে অসুখ --   
হৃদয়ের জ্বালা জোডানোর ছলে ।     
কোন দুর্মুখ করে ব্যাদন ?   
রাজনীতি হিং টিং ছট বলা   
তোতার মতন --     
বিত্তের পোষক পরে নিজেরে পালে ।     
সোনার খাঁচার মোহ --   
সোনার সিংহাসন , গরীবের পোষক !   
হিং টিং ছট --  !     


হায়, হায়!! : মাধব মন্ডল



আজ তোমার উষ্ণতাটা খুব জুরুরী ছিল
আজ তোমার মনকে মনে গাঁথা খুব জরুরী ছিল
অথচ তুমি আজও নিজেকে জোর করে ধরে রাখলে!!
আমার অপেক্ষা শুধু দীর্ঘায়িত হলো......

ভাল নেই তুমি!! ভাল নেই তুমি!!
কতটা অবসর পেলে আবার জাগবে তুমি?
হায়, শিব চতুর্দশী!! হায়, হায়!!
হায়, শিবরাত্রি!!হায়, হায়, হায়!


(রক্ত জমে কুয়াশায় - ২৬)

পুড়ে পুড়ে :সুজাতা মিশ্র (সুজান মিঠি)


রোদ্দুরটাও হামাগুড়ি দিতে দিতে পরিণত হয়
ঘরপোড়া ঝড়ে,
ছাইভস্ব হয়েছে যে, সিঁদুরে মেঘ কি তাকে
ভয় দেখাতে পারে!

পান্তাভাত :মান্নুজা খাতুন ( মালা)


সেদিন প্রভাতবেলা, টিউশনের পথে যে বড় স্টেশনটি পড়ে
তারই এককোনে ; একটি যাযাবর পরিবারের বছর ছয়ে’'র ছেলেকে
শীতের মিস্টি রোদে বসে পান্তাভাত খেতে দেখেছি
পরমতৃপ্তিতে খাচ্ছিল  সকালের প্রথম জলখাবার।
আজ সকালবেলায় মায়ের কাছে আবদার করেছিলাম পান্তাভাতের জন্য
মা বলে গেল,  কেন! তোমার কি খাবারের অভাব?
পান্তাভাত খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে  এই অজুহাত দেখিয়ে
মা চলে গেল রান্নাঘরে, শুকনো কিছু খাবার আনতে।
ব্যালকনির ধারে চেয়ারে গা এলিয়ে পড়ার বইখানি হাতে নিয়ে ভাবছিলাম
ওই ছেলেটির কথা, ওর মায়ের কথা
আচ্ছা!  ছেলেটার কি শরীর খারাপ করেছিল?
শীতের সকালে পান্তাভাত খাবার জন্য

বিরহী প্রেমের ঝংকার : বিকাশ দাস (বিল্টু )



সুরগুলি হৃদয়কে চূর্ণ করে মনকে আহুতি দেয় ।
বুকের ভিতরের আর্তনাদ সুর হয়ে আকাশকে বাতাসকে এক করে ধূপের আগুনে মিশে ,
কিছুটা না পাওয়ার পরম বেদনায় বেদনার বালুচরে ।
রাধা বিরহী কানাইয়া কিংবা কালা !

জীবনের সুরের ছটায় জীবন মানে ভুলে জীবন আর জীবন থাকেনা ,
জীবন অঙ্গার হয়ে জ্বলতে থাকে ।
সুর মূর্ছা যায় ;
ঠিক তখনি সুরের বন্যার জোয়ারে মনে আসে বিশালতা ।
জীবন নিরুপায় ,
বাঁশি খোঁজে, মন খোঁজে আহুতি দেওয়ার জন্য ।
আর বাঁশি সুধায় এই তো জীবন ,
এই তো তৃপ্তি ।

এখনো বাজছে কানে সেই সুর -
    বিরহী প্রেমের অতৃপ্ত বাসনার ঝংকার....

পূজা: জয়ীতা চ্যাটার্জী



হে অপরূপ, তুমি সৃষ্টির সুন্দর পূজা নিবেদন।
                শ্বেত শুভ্র, তুমি বন্দনীয় আমার।
তোমার ভেতরের তুমি সে একান্তই আমার একমাত্র।
             অন্তরের সমস্ত শোক তাপ মুছে দেবো চুম্বনে।
তোমার ভেতরের হিম যুগকে
            শুষে নিতে খুলে যায় ওষ্ঠধার।
বার বার উচ্চারিত হয় শ্লোক, আমি সেই পূজারিনী
       যার বিশ্বাস একেশ্বরবাদ।
তোমার কাছে ,তোমার গুণের কাছে,
           তোমার রূপের কাছে চির ঋণী আমি।
আসনের সামনে সাজিয়েছি যজ্ঞবেদী,
               আগুন, কাঠ, হেম দিয়ে, সময় অভিমানী!
ক্ষয়ে যাচ্ছে জীবন অসম্ভব সহিষ্ণুতায়।
          জাগিয়ে রাখি তোমার বুকে গোটা একটা জীবন
মন্ত্র সাধনায়।
আদ্রতা কমে আসে ঠোঁটের,
চুঁয়ে চুঁয়ে রক্ত পড়ে
আঙুলের ডগায় তোমার বুকের আকাশ ছুঁই,
      তোমার প্রত্যেকটা নিশ্বাস জন্ম দেয় একটা একটা নক্ষত্র,আমি তাদের সযত্নে রাখি অধরে।
অপরূপের ভেতর তোমার যে বিশাল রূপ সেই পাবে পূর্ণতা আমার আরাধনায়।
পূজো হবে বিশ্বাসের মন্ত্রে, প্রেমের মন্ত্রে, সাধনার বলে ত্রিমাত্রিক ছায়ায়।।

ব্যক্তিগত ভুল:দেবযানী ভট্টাচার্য্য



অনুভূতিগুলো তবু ব্যক্তিগত  রয়ে যায়-
যদিও অক্ষরেরা জানে-
কতবার চাবুকে চাবুকে আহত করেছি  স্বপ্নদের,
স্বপ্নলীনা নদীটির মুখ   ঘুরিয়ে দিয়েছি স্বেচ্ছাচারে।
বুঝেও স্রোতস্বিনী সাম্পানের
নোঙর পিপাসা-
ভাতের অব্যর্থ  ঘ্রাণে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছি ফুসফুস ,
আমার ঘ্রাণের থেকে বিষম  দূরত্ব  ছুঁয়ে বয়ে গেছে প্রেমজ বাতাস--
অলক্ষ্য জমেছে মেঘ  ধূসরিত বর্ষণ খামে,
পাঁজরে  অনিচ্ছা খাঁজে অবিরল হিসেবের কড়ি গুনেছি ভুলের জ্বোরো ঘোরে।
এহাতে কামনা রেখে অন্যহাতে ঘেঁটেছি কাঞ্চন।

এখন হেমন্তের  ঝরে যাওয়া  পাতার উপর
ক্রমশ মিলিয়ে যায়   রমণের বিমর্ষ দাগ।


বাতাসে বারুদের গন্ধ :পবিত্র চক্রবর্তী


                (এক)


বাতাসে একটা জোলো জোলো গন্ধ উঠছে । সেদিনও ঠিক এমনটাই ছিল । আর মেশানো ছিল তাজা বারুদের গন্ধ , পোড়া লাশের কূট ঘ্রাণ । সব মিলিয়ে বাতাসকে আরও ভারী করেছিল । দীর্ঘ ৪৮ বছরের কথাটা খবরের কাগজে কিছু লেখা পড়েই মনে পরে গেল জামাল সাহেবের । কর্মজীবন থেকে অবসর আর কিছুকাল পরেই । বিশেষ কিছু জমাতে পারেন নি যদিও । কেমন করেই বা জমাবেন ! সরকারী স্কুলের চাকরীটা এপার বাংলায় ৭১ এর পর এসে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে পেয়েছিলেন । বয়স তখন ৩৫ ছুঁইছুঁই । সুলেখা লাল আন্দোলনে তখন ব্যাস্ত । ওরই ঠিক করে দেওয়া কানাগলির এক কামরা ঘরে শেষমেশ থাকতে শুরু করে যুবক জামাল ।
বিষয়টা যত সহজে লেখা হচ্ছে তা কিন্তু নয় । বাঙাল বাড়ীর মেয়ে সুলেখা । দেশ ভাগ হওয়ার পর বাবা এ দেশে চলে আসেন । কিন্তু তখনও সম্পর্কের,ভালো লাগার বাঁধ ভাঙে নি । সুতরাং যাতায়াত ছিলই । বাংলাদেশে মামা বাড়ীতে মাঝেমধ্যে যেত সুলেখা । আর ঠিক তখনই পরিচয় হয় জামালের সাথে । কলেজ পড়ুয়া দুজনাই । কেন জানি না  প্রথম দেখাতেই  ভালো লাগাটা ভালবাসায় পরিনত হয়ে যায় ।
সম্পর্কের বন্ধন দূরে থাকলেই হয়তো বেশী করে উপলব্ধি হয় । আর  এ দূরত্বটা কাঁটা তারের এপার আর ওপারের । ভিন্ন ধর্ম , দেশের । কিন্তু থামে নি তাদের অনুরাগের স্পর্শ । প্রথম প্রথম পার্টির কাজের নাম করে সুদূর কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তে যেখানে দুটি দেশের কাঁটা তার চলে গেছে ঠিক সেখানে বেড়ার এপার ওপার থেকে মনের কথা , হাতের ছোঁয়া চলত । যদিও সেটা বেশীদিন চলে নি , কারণ ৭১ এর মুক্তি আন্দোলন ।
সেদিন ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছিল জামাল , “ যদি বল তাহলে আসবো কী চলে ?”
হাল্কা হেসে সুলেখা উত্তর দিয়েছিল , “ এসো না , আমি তো আছি ।“ বড় ভরসার কথা ‘ আমি তো আছি ‘ কথাটা ।


                             (দুই)


আপত্তি করে নি সুলেখার বাড়ীর কেউই । ছোট থেকেই কান্তিবাবু তার মেয়েকে একটু অন্য ভাবে মানুষ করতে চেয়েছিলেন ,হয়েও ছিল তাই । জামাল আর সুলেখার বিয়ে হয়ে যায় । ভালবাসার জন্য দেশকে ভুলে যায় নি জামাল । হ্যাঁ প্রথম দিকে কান্তিবাবু বা জামালের বাবার মনেও এই চিন্তাটা এসেছিল । কিন্তু আর যাই হোক জামালের আত্ম মর্যাদাটা একটু বেশীই ।
বিয়ের কয়েকদিন পর বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে জামাল স্বাধীন বাংলাদেশে না ফিরে গেলেও এখান থেকে চেষ্টা করে গেছিলো পাশে থাকার । আজও করে ।
দেখতে দেখতে ছটি বছর কেটে যায় । সংসারের হাল কোন মতে চলে । জামাল বাংলার টিউশন করে আর সুলেখা রাজনীতি , ছাত্র আন্দোলনের ফাঁকে হাত মেশিনে ব্লাউজ বানায় । আর ঠিক এরই মধ্যে সন্তান । সুলেখা আর জামালের মেয়ে । নাম রাখে রূপকথা । রূপকথার মতই তো । না আছে কোন দেশের গণ্ডী , না আছে ধর্মের ঝাঁঝালো গন্ধ । রূপকথা সকলেরই ।
সময়ের তালে নদী যায় বয়ে । আর ক্রমে সেই বহমানতার সাথে মেশে বেশ কিছু তরতাজা রক্ত । সুলেখা তারই বলি হয় । জামাল রাজনীতি কোন কালেই বোঝে নি , বোঝার চেষ্টাও করে নি । তা বলে সুলেখাকে বাধা দেয় নি । সুলেখাও ধীরে ধীরে কোন ফাঁকে যে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে গেছিলো তা নিজেই বুঝে ওঠার আগেই ছিন্নভিন্ন করেছিল পুলিশের বুলেট । বুকটা রাতের অন্ধকারে হাহাকার করলেও সেই বুকেই মাথা রেখে ঘুমাতো রূপকথা । তবে অপুষ্টি আর জণ্ডিসে রূপকথার মৃত্যু শক্ত মুসলিম হৃদয়কে সমূলে নাড়িয়ে দিয়েছিল । কানাগলি ছেড়ে কয়েক মাস স্থান হয়েছিল মেন্টাল এসাইলামে ।
শেষ হয় জামালের অধ্যায় , ভালবাসার পর্ব ।




                     (তিন)

কাকারা বহুবার ফিরে যেতে বলেছিল জামালকে , নাহ জামাল এ অঞ্চল-সুলেখা-রূপকথা স্মৃতি মাখা একটুকরো জমি ছেড়ে যায় নি ।
“ ওরে পাগল একা বাঁচা যায় না , শাদিটা আবার কর “ কাকার কথায় অবাক চোখে তাকিয়েছিল কিছুক্ষন ।
অস্ফুট স্বরে বলে , “ বাঁচা যায় না বুঝি !” বাঁচার অর্থ যে হারিয়ে ফেলেছে সে একা থাকার অর্থই বা বোঝে কী করে ! বিয়ে হয় এদিকারই মেয়ে মাসূমার সাথে । সত্যি মাসূমার মত নিষ্পাপ । বাপের জমিজমা বেশ আছে পশ্চিমবাংলায় । দেখতে শুনতে মন্দ না , পড়াশুনা জানা । এত সুখ ! নাহ এত সুখ না । অর্থ দিয়ে হয়তো সব কেনা যায় না । দেহ কেনা গেলেও মন ! নাহ মনকে বিক্রী কোনদিনই করে নি মাসূমা । মাসূমা ডান হাত জন্ম থেকে অকেজো , পোলিওতে সরু ।
জামালের মত ছেলে যার হিন্দু স্ত্রী-কন্যা গত হয়েছে , মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিল । এমন মানুষকে মন থেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল সে । মনে মনে নিরাপদ হয়েছিল এই ভেবে যে আর যাই হোক এই মানুষটা ভালবাসতে জানে ।
বলা যায় একহাতেই মাসূমার সেবা আর বাপের পয়সার দৌলতে জামাল শুরু করে দ্বিতীয় অধ্যায় । যে বিয়ের আশাই ছেড়ে দিয়েছিল সেই মেয়ে এখন গর্ভবতী । জামাল সুস্থ অনেক । রাতে মাসূমার পেটের উপর কান পেতে আগামীর নড়াচড়া শোনে ।
বাচ্চাদের মত মুখে এক ঝলক হাসি । মাসূমার দিকে তাকিয়ে বলে , “ আসছে রূপকথা ।“
মাসূমা বোঝে জামালের হৃদয় । তাও সে তো সতন্ত্র । পাশ ফিরে খানিক অভিমান করে বলে , “ যদি ফারহান আসে ?” ফারহান আধুনিক , ভাগ্যবান । যদি ফারহান তার আধুনিক-নতুনের স্পর্শে সকল অতীতের কষ্টকে ভুলিয়ে দেয় ? নারী মনে ওঠে এই আশা বারবার ।
রূপকথা আসে নি ,এসেছিল ফারহান ।  সেও বড় হতে থাকে । জামাল ভালোবাসে কিন্তু প্রশ্রয় দেয় মাসূমা । না অন্যায় প্রশ্রয় নয় কিন্তু প্রচ্ছন্ন আবেগ ভাঙা ভালোবাসা ।



                       (  চার)


আজ বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ । মাধবীলতার গা দিয়ে জল চুঁইয়ে পরছে । স্কুল ছুটি । মাসূমা জামালের পাশে বসে চা খায় ।
“ বাড়ী আছেন ?” বাইরে কলিং বেলের শব্দ । বাইরে খানিকটা শোরগোল ।
মাসূমা উঠতে যাবে , জামাল ওকে হাতের ইশারায় বসতে বলে নিজেই দরজা খুলতে গেল ।
“ ফারহান আপনার ছেলে ?” পুলিশের কথা শুনে বুকটা কেঁপে ওঠে ।
“ হ্যাঁ কিন্তু…” শুকনো গলায় জানতে চায় জামাল । মাসূমা এরই মধ্যে উঠে এসেছে । মুখে উৎকণ্ঠা । এখন যা অবস্থা চারিদিকে ।
“ থানায় চলুন । আপনার ছেলে আমাদের কাছে আছে ।“ পুলিশের কথায় গলা বেয়ে আসে কান্না মাসূমার ।
জামাল আকাশের দিকে আল্লার কাছে জানতে চায় মনে মনে “ কেন প্রতিবার আমারই সাথে ?”
জামাল একা আসে নি । ঠিক সেই আগের মতই মাসূমা তার একহাত দিয়ে জামালের হাত ধরে আছে । পুলিশের গাড়ী ছেড়ে দেয় । পিছনে পরে থাকে মাধবীলতা , ঘর ।




বড়বাবু মন্দ লোক নন বরং খাতির করেই বসালেন । হাসতে হাসতে বললেন , “ জব্বর ছেলে তৈরী করেছেন আপনারা মশাই । এতবড় কাজ করে ফেলল !”
জামালরা জানে ফারহান দস্যুর মত । কোন বাধাই সে মানে না , পড়াশোনায় তেমন মন কালেই ছিল না । করুণ চোখে তাকায় বড়বাবুর দিকে । খানিক পরে ছেলে আসে ।
“ একটু ফর্মাল জিজ্ঞাসা বাদ করেই ছেড়ে দেব । আসলে ও আজ খেলে আসার সময় বাসে কিছু লোকের কথাবার্তা শুনে ওদের পিছনে পিছনে ডেরা অবধি যায় । যখন বোঝে ওরা মানে জব্বর , আবু মিস্ত্রী মেট্রো ষ্টেশনে অ্যাটাক করার মতলব আঁটছে ঠিক তখনই ভয় না পেয়ে থানায় ফোন করে । আর ধরা পরে…। ব্রেভ বয় ।“
জামালের চোখে জল । মাসূমা বলে , “ ও তো তোমার রূপকথা গো । রূপকথারা কী খারাপ করতে পারে …।“
জামালের চোখে ভেসে ওঠে সেই ছোট্ট জামাল বাবার কাছে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে আবৃতি করছে –
“ ধর্ম তুমি কোথায় থাকো
চুল , ত্বক না গোঁফের তলে ?
সত্যি তুমি থাকছো কোথায়
টাক , টিকি না দুই বগলে ?

ধর্ম তোমার কোথায় নিবাস
বোরখায় না লাল সিঁদুরে ?
ধর্ম কাকে দিচ্ছো মদত
মৌলবি না জাত হিঁদুরে ?

ধর্ম তুমি থাকছো কোথায়
চুল , দাড়ি না পৈতে গিঁটে ?
কোথায় তোমার আসল ঘাঁটি
মক্কায় না তারার পিঠে ?

ধর্ম তুমি কোথায় ঘোরো
বাবরিতে না রাম-দুয়ারে ?
ভাসছো নাকি শুনতে পেলাম
রাজনীতি আর ক্রোধ জোয়ারে ।

ধর্ম তুমি তৃপ্ত কিসে ,
কুরবানি না বলিদানে ?
কখন তুমি নাড়াও মাথা
আজান নাকি গীতার গানে ?

ধর্ম নাকি আড্ডা মারো
ব্লাডব্যাঙ্ক আর হোটেলগুলোয় ,
আড্ডা নাকি মারছো শুনি
কবরখানায় শ্মশান চুলোয় ;

ধর্ম তোমার ইচ্ছেটা কী
বিচ্ছেদ আর রক্তমাখা ?
স্রষ্টার সব সৃষ্টিকে কী
ধন্দ দিয়ে সরিয়ে রাখা ??”
                         ( সমাপ্ত )

প্যালেট উপচিয়ে: কল্যাণী মুম্মা



উল্টেপাল্টে রাখা একগোছা কথাদের
একপ্রান্তে সংশয়ের দোলাচল।

যেটুকুকে নিজের ভেবে যত্নেরাখা...
              সবটাই শব্দঋণ।

      অন্যের দেওয়ালজুড়ে পরিচিত ক্যানভাস!!
             রামধনু রঙ ছড়ায়...
ইচ্ছের আদর সেরে কাদা লাগা তুলিতে
 পছন্দের নারীমুখ...

আঁচলে রক্তের ছাপ লাগলে আঁশটে গন্ধময় শরীর।
      ধুলেই কি সব রঙ মুছে যায়....


শূণ্য মানেই ঈশ্বরে দেখা পাই :অলোক মিত্র



স্মৃতির কোষে জমা পড়েছে
একহ্রাস ধুলিকনা মেঘ,
আজ বাস্পয়িত হয়ে
নেমে পড়বো মাঠ ঘাট পথে প্রান্তরে,
তারপর সুপেয় মিঠা পানি হয়ে
সোজা হেটে পদ্মা যমুনায়,
আমার ঠিকানা খুঁজতে
এখানে এসো না এখন,
অনেক রাত, নিঃস্তব্ধ মহাসড়কে
মহাপ্রয়াণ চলছে,
গত আত্মাদের একা থাকার
যন্ত্রণা বিলাপে নতুন আত্মজ আত্মারা
উড়ালপুল হয়ে উড়াল দেয় আকাশে।
তারারা সব খসে পড়েছে
নিকশ কালো রাত্রিতে আরাধনা
ঈশ্বরে, ফেরেস্তারা নেমে আসে
কোলাহলবিহীন নিস্তেজ গহীনে
আত্মাদের নিয়ে টানাটানি।
একটা বিড়ালের চোখ গিলে খায়
সকল অন্ধকার, আমি ওর সাথে
নেমে পড়ি অাধাঁরের রূপ দেখতে,
দেখি ছায়া হেটে চলে, আমি নেই তাতে।

মরা গাঙ পাড়ে, আলো আঁধার বলেশ্বর।

ছায়া চিত্র:সায়ন্তনের ইতিকথা

 

বৈশাখীর তপ্ত দুপুর শেষে এখন অমাবস্যার রাত্রি যাপন করছে ঝড় আর শীতলতা, বাড়ির ওপরের ঘর গুলো বন্ধ। লোডশেডিং - এ আরো অন্ধকার চারিদিক, বাতাসে মো মো করছে বিদেশি মদের গন্ধ..  নিস্তদ্ধটা এতটাই জোড়ালো যেন শোক ছায়া বিদ্যমান প্রতিটি দেয়ালে।
আমি এমনই কোন কারণ ছাড়াই আঁচল লুটিয়ে ওপরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিমাম, পায়ের শব্দ পেয়ে পিছনে তাকাতে দেখলাম ছোটমা.. কিন্তু ছোটমা আমায় দেখেই এক রকম ভয় আর অবাক হয়ে ঞ্জান হারালেন..
আমি তরিঘরি করে জল আনতে গিয়ে নিচে যেতেই দেখলাম ঝড়ের কারণে দেয়ালে ঝোলানো জুঁই দিয়ে সাজানো ছবিটা  ভেঙে গেছে.. কাঁচের টুকরো পাছে পায় ফোঁটে সেই ভয়ে ছবিটা তুলতেই দেখলাম আমার ছবি...
মনে পড়লো আমি তো মারা গেছি...!

বিচারের বানী গুলো আজ কাঁদছে : মান্নুজা খাতুন





কাঁদছে!
হ্যাঁ! ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে
অসহায় নির্যাতিত মানুষদের প্রতি দেওয়া
‘বিচারের বাণী’ গুলো। 
কিছু নিন্দুকের ভয়ে গৃহকোণে আবদ্ধ হয়ে থাকা
ইমামপাড়ার শান্ত-লাজুক মেয়েটির উষ্ণ অশ্রু’র ছোঁয়া পেয়ে
ডুকরে ডুকরে কাঁদছে ‘বিচারের বাণী’ গুলো ;

সন্দেহ জাগছে মনে!  তবে খোঁজ নিতে পারো সীমান্ত ঘেষা ইমামপাড়ার মোড়ে।
রাস্তার পাশে ভেঙ্গে পড়া ছাউনির নীচে
ছেলেমেয়ে নিয়ে পড়ে থাকা ওই অভাগীনি কে দেখেছ
সমাজের দাদাদের চোখরাঙানী আর নিষ্ঠুর চক্রান্তে
আজ তারা গৃহছাড়া,  বড্ড ক্ষুধার্ত ওর ছেলেমেয়েরা
জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো তাদের
ওদের অসহায়ত্বের বেদনায় বেদনাতুর হয়ে
বিচারের মিথ্যে বাণী গুলোও আজ থেকে থেকে চোখ মুছে ফিরছে
প্রতিবাদের ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়ে।

একটি ব্যর্থ স্বপ্ন : বৈশাখী চক্কোত্তি




বলেছিলাম তোমায় বাঁচিয়ে রাখতে
কৃষ্ণাঙ্গিনী সেই মেয়েটিকে,
যার মধ্যে দেখি আমি বার বার
আমার আবছায়া এক প্রতিবিম্বকে ।।

কৃষ্ণাঙ্গিনী মেয়েটি নাকি ছিল
তোমার ভীষণ প্রিয়, আদরের,
"ম্যারাথন কিস" করবে বলেছিলে, কারণ,
 ওর গোলাপি ঠোঁট ছিল ভীষণ আকর্ষণের ।।

আদরে আদরে লুঠে নেবে ওর সমস্ত
ভালোবাসার নির্যাস, ছিল আশ্বাস,
সেই আদরের প্রতিক্ষাতেই দিন গুনেছিলো সে,
মনে নিয়ে তোমার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ।।


একটি একটি করে ছড়িয়ে দেবে তাতে
তোমার উনুন জ্বলা দেহ তাপ,
মরুক মেয়ে সেই তাপেতে দগ্ধ হয়ে,
মাথায় নিয়ে নিদারুন অভিশাপ ।।

লুঠে নেবে ওর সমস্ত সৌন্দর্যের স্নিগ্ধতা
তিল তিল করে জমিয়ে রাখা,
পর্বতশৃঙ্গ, চড়াই কিংবা উৎরাই, গভীর অরণ্য,
তোমার তৃপ্তিতেই তার যেন স্বপ্ন মেলে পাখা ।।

তার বক্ষের সফেন সমুদ্রে দারুন অশান্ত, বিশাল
 এক নীল ঢেউয়ের জলোচ্ছাস,
সেখানে তোমার গোলাপি মখমল রচিত শয়ান
রাত্রিব্যাপী তোমার দীর্ঘ অধিবাস ।।

সব ঠিকই ছিল, কিন্তু হঠাৎই এক দারুন ঝঞ্ঝা
করলো আক্রমণ, ভুলে গেলে কৃষ্ণাঙ্গিনীকে,
তোমার অভিসারের জন্য আজও সে বসে আছে
অপেক্ষায় সাজিয়ে বরণডালা, সজল চোখে ।।


হয়তো কোনো শেষবসন্তের পড়ন্ত বিকেলে আসবে ফিরে,
হয়তো আবার চাইবে তাকে ভালোবাসতে, তার ঘ্রান নিতে
হয়তো তোমার সমস্ত স্বত্তায় তার সাথে "ম্যারাথন কিসের" স্বাদ,
কিন্তু হয়তো তখন অনেক দেরি, সেকি থাকবে আর দীর্ঘশ্বাসের পৃথিবীতে???








কোন পার্থক্য নেই :কাজী জুবেরী মোস্তাক



একসময় তোমাকে নিজের ছায়া মনে করতাম
তোমার চোখেই আমি নিজেকে দেখতে পেতাম
কখনোবা তোমার মাঝেই নিজেকেও হারাতাম
তোমার স্বপ্নগুলোকেও নিজের স্বপ্নই ভাবতাম ৷

কিন্তু !
প্রকৃতির মতো তুমিও নিজেকে বদলে ফেললে
আমিও হারিয়ে ফেললাম আমার ছায়াসঙ্গীকে
যে চোখে আমি হারিয়ে ফেলতাম এই নিজেকে
আজ সেই চোখ দেখি কামনার আগুন পুড়তে ৷

জানো ?
আমি নিজেই নিজেকে কখনো বিশ্বাস করিনি
তবুও কিন্তু তোমাকে বিশ্বাস করেছি ঢের বেশি
তোমার বিশ্বাসের মূল্য দিতে সঁপেছি নিজেকে
অথচ তুমি'ই দেখি অবিশ্বাসের খেলা খেললে ৷

সেই তুমি !
শরীরটাকে শেয়াল শকুনের মতো ছিঁড়ে খেলে
শুধু আমার ভালোবাসা-বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ,
বাদামের খোসার মতো খেয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলে
আর আমি আজ উচ্ছিষ্ট হয়ে ঘুরছি পথে পথে ৷

জানো ?
কোনো পার্থক্য নেই তোমার আর ধর্ষকের মাঝে
একজন ধর্ষক যা করতো তুমিওতো তাই করলে ,
তোমরা দু'জনেই আমার চোখে সমান আজকে
তুমি ভালোবেসে ধর্ষণ করো , ধর্ষক জোর করে ৷

ক্লিভেজে আমরা:হেমন্ত সরখেল



                             



ক্লিভেজ থেকে মুখ সরাতে দ্বন্দ্বে ভুগেছি বারবার।
      মনে রাখা যায় নি- ঠিক কতোবার।

       রেজাল্ট প্রসবিতা অশ্বডিম্ব
                        কিংবা
      প্রথম চতুর্থকে প্রশান্তিতে রাখা
     মা আর তুমি, দুজনেই জলঢাকা।
              ক্লিভেজ- নয় নিতম্ব
     নয় কোনো প্রতিষ্ঠিত গালাজ
 শুদ্ধতা হরে প্রায়ই যত লালাবাজ।

ভেঙে খানখান্ হতে গেলে আমাদের ওটা প্রয়োজন
হেরে, ঘুরে দাঁড়াতে হলে এখানেই শক্তির আয়োজন
     ভেজা মাথা মুছবে আঁচল- ক্লিভেজ
 মৃত্যুপথের কোণ থেকে জাগবে দরবেশ।

আমরা জাড্যে একটাই মেতে আছি
সুখকে দাঁড় করাই অপরিমেয় দুখের কাছাকাছি।
সব রসে জমা থাকে বেদুঈন ধুলো
উন্মত্ত অঙ্গারে তীক্ষ্ণ রসস্থ আলো।
জঠর দেহজ হলেও ভূ-মিষ্ট-পরমধাম
অদৃশ্য দেওয়ালে লেখা আবির্ভাবী মধুনাম।

দৃশ্যমান যা - তা ই জড়িয়ে থাকা এখানে
মনের ক্লিভেজে তাই আশার যাওয়া সন্তর্পণে।
                             

হয়তো : সঞ্চিতা চক্রবর্তী


একফালি রোদ পেলে,
সেঁকে নেব...
স্যাঁতস্যাঁতে শব্দের সিঁড়ি।
রেশনকার্ডের বিষণ্ণ সারিতে
শেষাবধি উত্তাপ আসে কই!
অবেলার মেঘে গ্রাস করে
শ্যাওলা সাজায় শব্দাবলীতে।
সিঁড়ি ওঠানামায় পিছলে পড়ে
সোনার কাঠির খোঁজ,
রূপকথারা ক্রমশঃ...
অবলুপ্তিকে আলিঙ্গন করে চলে।

সকাল: শৌর্য্যিতি





মিঠে আলো ,কে ছুঁলো? রোদ ভিজেছে জানালা।
ঘুম ভাঙা গান,হারানো পাখির কলতান,মুখ ছুঁয়ে যায় ওড়না ।।

বেহাসাবি দিনযাপনে ,দৌড়ঝাঁপময়।হাতছানি'র সময় ।
আজ চেনা মুখ কাল মুখোশ'এ ,বাঁচার অভিনয় ।।

হদ্দ বোকার মত আমিও গিলছি আবেগে
ভাঙছে ,ভাঙছি নিজেই নিজে,চোখ ক্লান্ত হলে ।।

তারপর দীর্ঘ মৃত্যুর উপভোগ।নিথর শরীর
চোখ খুলে দেখি ,একা নই, অনেক মাছির ভিড় ।।

প্রকৃতি বাঁচাই চলো : রাণা চ্যাটার্জী



                   
                       

বৃষ্টির ধারা আজ বড়ো দিশেহারা-অঝরে শুধুই ঝরে,
জানি না কি রোষে,আজ নদী ফোঁসে,বসে থাকি ভয়ে  ঘরে ।

নদী কূল কূল,পাড় হুলুস্থুল,মাঝি মল্লার রাত জেগে,
দুপাড়ে ক্ষেত ,অপেক্ষা সমবেত ,বিধাতা কি তবে রেগে!

জানিনা কি হয় এই বুঝি ক্ষয় ,যেন বন্যার ভ্রুকুটি ছায়া,
দোষে-গুণে মোরা কখনো দেখি খরা বড় অদ্ভুত এ মায়া।

না হলে বৃষ্টি, হবে অনাসৃষ্টি ,জমি ক্ষেত রুখা খরা,
হলে পড়ে বেশি,হবো বানভাসি দুই তরফেই আধমরা।

কেন হয় এটা,ভেবেছ কি সেটা! ফাঁকা করি গাছ কেটে,
হায় বলিহারি,গড়ি স্বপ্ন নগরী, চলি প্রকৃতি ছাড়া পথ হেঁটে।

তবু আশা মনে,এই বুঝি ক্ষণে,সুদিন তো আসবেই,
শ্বাস চেপে থাকি,মরে যাব নাকি!সুসময়ের বাঁধ ভাসবেই ।

প্রকৃতির সৃষ্টি ,ঝরুক রূপবৃষ্টি,প্রচেষ্টা শান্তির বাতাবরণ,
নিজেদের খুঁজি প্রকৃতিকে পুজি,বাঁচানোর বড় প্রয়োজন