নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বৈশাখী চ্যাটার্জি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বৈশাখী চ্যাটার্জি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৈশাখী চ্যাটার্জি







সর্বনাশ 



এক অদ্ভুত ভালোলাগা ছুঁয়ে গিয়েছিল । 
তোমার নিস্তব্ধ অবয়ব জুড়ে ভেসে বেড়াতাম আমি , একটা সাদা মেঘের মতন। 
কতবার তোমায় বৃষ্টি ভিজিয়ে গেছি । 
তার থেকেও বেশি ভিজেছি নিজে । 
কি স্বছন্দে তুমি অস্বীকার করে গেছো ওই বৃষ্টির জল । 
কি স্বছন্দে তুমি জানাতে পেরেছ আরো কতো মেঘ আসে -ভেসে বেড়ায় তোমাকে ঘিরে । 
কিছু কষ্ট কথা নষ্ট ঘরে ভাসে , 
কিছু ভালোবাসা ফিরে যায় ফিরে ফিরে আসে । 
তুমি আমার তেমনটি এক সুখ । 
ভাঙ্গা আয়নার প্রতিফলনের বিরাট অসুখ। 
আজ বলছি ভালোবাসি । 
তোমায় ছুঁয়ে হাসি । আমার বৃষ্টি গুলো তোমায় ঘিরে ঝরে।  
ভাঙ্গা আমার ঘর 
কালো তোমার ঠোঁট 
মন সর্বনাশে পোড়ে । 
পোড়া বাতাস ওড়ে । 

বৈশাখী চ্যাটার্জী




পুজো এলে
**********



পুজো এলে -পুরনো উঠোনটায় একটা স্থলপদ্মের গাছ মনে পরে ।
ফ্রক পড়া একটা মেয়ে -ঝুড়িতে স্থলপদ্ম গুলো সাজিয়ে দুর্গা মণ্ডপে নিয়ে যেত পুজোর চারটে দিন ।
ষষ্ঠীর সকালটা কি দারুণ প্রত্যাশা নিয়ে আসত ।
মণ্ডপে তখন ব্যস্ততার চূড়ান্ত প্রস্তুতকরণ  ।

বাবা বলতেনা -'মা এসে গেছে ষষ্ঠী তলায়' । 
মেয়েটা কোথায় যে খুঁজবে সেই ষষ্ঠীতলা বুঝেই পেতনা ,
তবু অলীক স্বপ্ন সাজিয়ে নিয়ে দেখত কোন একটা গাছের তলায় মা দুর্গা দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে । পুলক লাগত মনে --!

শরৎকালীন সকালগুলো নদীর চর ধরে আজও আসে ।
ফ্রক পড়া মেয়েটা প্রবাহিনীর চরের ওপর  সাদা কাশফুলের পথে হাঁটতে হাঁটতে কখনো যেন বদলে গেলো ।
বদলে গেলো মহালয়ার ভোর ,
শরৎ আকাশ -
কাশফুল -
এমনকি দুর্গাপুজোর মন্ডপটাও  ।

পুরনো উঠোনটা এখন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো ।
স্থলপদ্ম আর ফোটে না ।
মেয়েটাও আর এ পাড়ায় আসে না পুজোতে ।
তবে তার চোখ এখনও সাদা সাদা মেঘে,  সাদা কাশফুল খুঁজে বেড়ায় ।
উঁকি মেরে খুঁজে আনতে চায়-
সেই সকালটা -ঢাকের শব্দ , নদী থেকে ঘট তুলে আনা , কলাবউ এর স্নান ।

চণ্ডীপাঠের শব্দ ভেসে আসলে -!
রোমকূপে কেমন শিহরণ হয় ,
মনে পড়ে,  দূরে অনেক দূরে একটা ফ্রক পড়া মেয়ে ।
অমনি আনমনে কেঁদে ওঠে ভেতরটা ।
শারদ সকালগুলো এখন নতুন শহরে ভাসে ।
ফ্রক পড়া মেয়েটির মুখে , মনকেমনগুলো সাদা কাশফুল হয়ে এখনও দিব্যি হাসে  ।

                   

বৈশাখী চ্যাটার্জি



বৃষ্টি
*****


বৃষ্টি তোমার সঙ্গে ঝরতে গিয়ে টিপটিপ শব্দ বেয়ে আমি জলনুপুর হয়েছি ।
শ্রাবণ শেষে ভাদরের দেশে নৌকো ভাসায় প্রজাপতি পাখা,
ডানা মেলে ওড়ে বৃষ্টির সুরে একাএকা ।

এলোকেশী চুল ভিজেছি ,
বৃষ্টি আমি জল থৈ থৈ সেজেছি ।
বৃষ্টি তোমার ছন্দ -
ফাঁকা মনে মেঘের উঁকি দ্বন্দ্ব ।
একপশলা ঝরেই আবার হাওয়ার সাথে হাসি ,
বৃষ্টি মেশা মনের নেশায় বৃষ্টি ভালোবাসি ।

বৈশাখী চ্যাটার্জী



মেঘ গুলো 



ছোট ছোট মেঘ জমে আছে দেওয়ালের গায়ে । 
সারা ঘর মাঝে মাঝে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে , 

জমা মেঘগুলো ওড়ে , 
জমা মেঘগুলো ঘোরে । 

বালিশ বিছানায় ভিজে ভাব 
শরীরে জ্বরের তাপ । 

ছোট ছোট মেঘগুলো জমে থাকে । 
নিকানো উঠোন -মনমেঘ উড়ে তাতে ,  

আকাশের থেকেও দূরে যেতে চায় ,
তবু গন্ডিটুকু ঘিরে বৃষ্টি ঝরে যায় । 

                 

বৈশাখে'তে বৈশাখী

বৈশাখে'তে বৈশাখী ...




প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ?

উত্তর:- মনের মধ্যে জমে থাকা এমন কিছু কথা যা হয়তো আমরা মুখে বলে ঠিক বোঝাতে পারিনা -আমাদের জীবন -ভালোবাসা -চাহিদা -পূর্ণতা আর অপূর্ণ চাপা কষ্ট গুলো আমার কাছে কবিতা । কবিতা আমার প্রেম । অফুরন্ত জ্যোৎস্নায় ডুব দেওয়া গল্প আমার কবিতা । আমার মনের নষ্ট নেশার কথা আমি কবিতায় বলি । ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনা যা সমাজকে ছোবল মারছে তার প্রতিবাদ হয়তো আমার কাছে কবিতা ।


২:-আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর:-বর্তমান সময়ের শ্রীজাত -তসলিমা ভালো লাগে -জীবনানন্দ খুব প্রিয় কবি ।

কবিতার অনুপ্রেরণা হয়তো জীবনবোধ ।

৩:-কেন লেখেন আপনি কবিতা ?

উত্তর:-কবিতা যে কেন লিখি ঠিক জানি না,  -তবে ভিতরের একটা তীব্র আকুতিই হয়তো কবিতার জন্ম দেয়। ভিতরটা যখন দমবন্ধ লাগে কবিতায় নিঃশ্বাস ভেসে আসে । সবথেকে বড় কথা ভালোলাগে -ভালবাসি তাই লিখি ।

৪:-আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত)

উত্তর:- প্রথম কবিতার নাম এই মুহূর্তে মনে নেই । অনেকটা ছোট বয়সেই খেয়ালের বসে শুরু করেছিলাম।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ বলতে একটি যৌথ সংকলন -'কাব্যমাস' ।
আর একক কাব্যগ্রন্থ -স্বপ্ন বুননের ফাঁকি।

৫:-কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?

উত্তর:- কবি -কবিতা আর পাঠক একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে । কবি- কবিতা লেখেন । পাঠক যদি না থাকে তবে হয়তো কবিতা লেখাই ব্যর্থ হয়ে যায় । একটি কবিতা ও তার সাথে যুক্ত কবির ভাবনা তখনই সার্থক হয় যখন পাঠক তার বিচার করে ।

৬:-ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ?

উত্তর:- বর্তমান সময়ে আমরা ফেসবুকে কবিতা লিখি। প্রথম প্রথম এটা খুব তিরষ্কার এর বিষয় থাকলেও আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যে এর একটা গুরুত্ব পূর্ন জায়গা তৈরী হবে । এখন অনেক বড় বড় কবি ফেসবুক এ কবিতা লেখেন ।ফেসবুকে কবিতা লেখার ফলে যে কবিতা লিখছি তার তৎক্ষনাৎ মূল্যায়ন হয় ।বর্তমান সময়ের কবিতার মূল্যায়ন বেশ কিছু বছর পর যখন হবে -তখন ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নেবে বলেই আমার মত ।এবং অনেক নতুন নতুন লেখক এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যেও উঠে আসবে ।

৭:-ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?

 উত্তর:- গুরুত্বের দিক থেকে বিচার করলে অবশ্যই ছাপা ম্যাগাজিনের গুরুত্বটা বেশি। একটি বইয়ে ছাপা আকারে নিজের কবিতা দেখতে সকলের ভালো লাগে । কবিতাটিও বইয়ে প্রকাশ পেলে গুরুত্ব বেশি পায় । ব্লগজিন আর ওয়েবজিন এর চাহিদা যদিও সমান তালে বাড়ছে । এতে পাঠক একটি ক্লিক করেই পড়তে পারে কবিতা বা গল্প ।সব সময় ইচ্ছে থাকলেও একটি ম্যাগাজিন কেনার সময় হয়ে উঠে না । সব জায়গায় সব ম্যাগাজিন পাওয়াও যায় না ॥

৮:-আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?

উত্তর:- আজকাল অনেক কবি উঠে আসছে একথা সত্যি -আর এটাও বাস্তব সকলের বই ছাপাবার ক্ষমতা নেই । ফলে প্রতিভা থাকলেও সব কবি পাঠকের নজরে আসেনা  বা নতুন কবিদের বই পাঠক কিনতেও চায় না । ফলে বই ছাপলেও তার বিক্রি হয় না ঠিক করে ।
পাঠক অবশ্যই আছে বই বিক্রিও অবশ্যই হয় । সব বই প্রচারের আলোয় সেভাবে আসে না আর অনেক সময় পাঠক যা চায় তা হয়তো লেখায় সেভাবে পায় না ফলে একটা বিরূপ মনোভাব তৈরী হয় ।পাঠককে বইয়ের অভিমুখে আনতে হলে অবশ্যই লেখার মান যথেষ্ট উন্নত হতে হবে,  -বিশেষ করে পাঠক কি চায় সেটা মাথায় রাখা দরকার । আর দ্বিতীয় হল বইটির ঠিক মতো প্রচার ।

৯:-উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ?

উত্তর:- উত্তরাধুনিক কবিতার সঠিক কোন সংজ্ঞা হয়তো সেভাবে বলা কঠিন । একটা সময় এসেছিল যখন আধুনিক কবিদের জন্ম হচ্ছিল । তাঁদের কবিতায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছিল পুরনো চিরাচরিত প্রথা বাদ দিয়ে । উত্তরাধুনিক হচ্ছে হয়তো আরও একটু আধুনিক হয়ে ওঠা -কোন নিয়মের বাইরে গিয়ে একান্ত নিজের মতন করে ।শৃংখলা পরায়ন না হয়ে -নিজের গতিতে নিজের ছন্দে -হয়তো নিজের দ্বন্দ্বে ।
তবে কবিতা যদি পাঠকের অন্তর ভেদ করতেই না পারে তবে তা কিসের কবিতা । সে আধুনিকই হোক আর উত্তরাধুনিকই হোক । কবিতা হতে হবে সহজ -সুন্দর -প্রানছোঁয়া -। দুচারটে জটিল ভাষা দিয়ে হয়তো কবিতার ওজন বাড়ানো যায় । তবে যা পাঠক গ্রহন করতে পারে না তার গুরুত্ব কতখানি বলা কঠিন ।

১০:--গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তর:- পদ্য বলতে এটি ছন্দমিল যুক্ত হবে । সহজ সরল হবে এর প্রকাশ ।
গদ্যকবিতায় ছন্দ মিল থাকে না ।শব্দের মধ্যেই শব্দ নিয়ে খেলে এই গদ্যকবিতা ।
মনের গভীর বোধ এর প্রকাশ যা কখনো সম্পূর্ন ভাবে পাঠকের কাছে ধরা দেয় না ।

হয়তো গদ্য কবিতায় অন্ত্যমিল থাকে না তবে নিজস্ব একটা ছন্দ আর তাল না থাকলে হয়তো কবিতা- কবিতা হয়ে ওঠে না ॥


কিছু কবিতায়
::::::::::::::::::::


অস্থির সময়
**********


চারিদিকে এখন শুধুই কালো রাত ।
বিষাক্ত হচ্ছে নিঃশ্বাস গুলো প্রতি মুহূর্তে ।
খুবলে খাচ্ছে ভালোবাসা গুলো সম্পর্কের মিষ্টি স্বাদ ।
পৃথিবী খুবলে খাচ্ছে মাটি ।
খুবলে খাচ্ছে দেহ ।
কিছু টানাটানি -মানহানি । শহরে বাড়ছে ভয় ।
অনৈতিক কিছু চরিত্র দিনরাত হুংকার দেয়।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ।
রক্ত চুষে খায় ।
ভালোবাসা বোবা ঘরে বন্দী ।
ছটফট করছে একটু মুখ তুলে নিঃশ্বাস নেবার ।
প্রতিমূহূর্ত প্লাবন নিয়ে আসে ।
মৃত্যু সলিলসমাধি ॥
কালো রাত বড় হয় দীর্ঘ হয় ॥

               
 
যা শুরু হয়নি
************


শুরুটা তেমন করে কোনদিন হয়নি ।
মাঝের কিছুটা সময় তবুও পেরিয়েছি সেই না শুরু হওয়া গল্পের হাত ধরে ।
একটা রাত আর দিনের মধ্যে যতটা পার্থক্য থাকে ঠিক ততখানি ফারাক ছিল  বোঝার আর বোঝানোর ।
তবু গল্পের ইতিটা বড্ড বেশি দাগ কাটলো মনে ।
গল্পের শেষে পিছন থেকে ছুরি মারে কাহিনী ।
সেখানেই মৃত্যু অপর পক্ষের ।
যদিও এমন করে শেষ করার বিশেষ কিছু দরকার ছিল না ।
কারন কাহিনী তো কোনদিন শুরুই হয়নি।
     
             

প্রয়োজন
*********


নিঃশব্দ শূন্যতার বুকে রোজ হাজার চিৎকার ডুকরে ওঠে ।
গরমে পুড়ছে ,
বৃষ্টিতে ভিজছে ।
দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় অস্বিত্বের সাদামাটা খোলস ।
মাটিটা বড্ড নরম মনে হচ্ছে আজ ।
পা ঢুকে যাচ্ছে বারবার ।
এটা হবার ছিল জানত সে -
তবুও এতদিন চলেছিল সাবধানে ।
কিন্তু এবার একটু শক্ত মাটির প্রয়োজন ॥



                   অন্তবিহীন
                   *********


আমায় নিবিড় করে ভালবাস একান্ত অবশেষ
তোমার বুকের দোদুলদোলায় অন্তবিহীন
আমি তো রয়েছি বেশ -
তুমি আমার কমলেশ ।
সুর লহরীর ঝরনা তুলেছ আছড়ে পড়েছ বুকে ,
সীমাহীন তুমি গতিহীন তুমি ভালবেসে গেছ সুখে -
ঘনিষ্ঠ সুখময় যত অনুভবে রঞ্জিত
আরও ঘনিষ্ঠ আরও যে নিবিড় কামনায় সিঞ্চিত ,
বিন্দু বিন্দু ভালবাসা রসে সাগর দিয়েছ ভোরে
সেই রসের সাগরে সাঁতরে মরেছ নিজেকে উজার করে -
প্লাবন এনেছ কুল ভাসিয়েছ অসুখের সমাবেশ
সীমাহীন তুমি গতিহীন তুমি আমার কমলেশ ॥
                                   
           

               চুম্বন
              *****

দুটো ঠোঁট দুটো ঠোঁটে ছুঁয়ে যায়
যেমনটা সেদিনের ছোঁয়াটুকু ।

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বুঝেছি
নীল মৃত্যুর আঠালো নির্যাস
বিষ ছিল ছুঁয়ে যাওয়া- বিষ ছিল শ্বাস ॥




সাক্ষাৎকারে ও সংগ্রহে : জ্যোতির্ময় রায়
         
         

বৈশাখী চ্যাটার্জী



কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে থাকা কিছু গদ্য কথা 
***********************************




কবিতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে বেঁচে ফেরে কিছু কাকতালীয় সুখ --
বড় রাস্তার মোড় থেকে সরু গলির ঘুপচি ঘর গুলো পর্যন্ত দিব্যি কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে থাকে । 
কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে ফেরে বড় শহর ছোট গ্রাম । 

সন্ধ্যেবেলায় বাঁশঝাড়ের অন্ধকারের মধ্যে তৈরি হওয়া এক ক্যাচ ক্যাচ শব্দ রহস্য না খুঁজে খুঁজেছিল কবিতা । 
পরদিন সেই বাঁশগাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলেছিল কোন মালতি নামের মেয়ে । 
তারপর আরও কত রাত অতৃপ্ত আত্মারা  ঘুরে গেছে -
কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে উঠেছে আরও কত অশরীরী কথা । 

কবিতা আছে বলে মালতি -আশা -লতা -বা সেই কোন এক কবির বনলতা আজও বেঁচে। 
কিন্তু সন্ত্রাস লোভ লালসার ইতিহাস গুলো শুধু বিদ্রোহ করে ফেরে । 

কবিতা আছে বলে ধুলো ঝড় গুলো বয়ে চলে । 
অযথা কিছু মুকুল খসে পড়ে ।    

তারপর কোন অন্ধকারের মধ্যে -কোন স্বপ্নের লাল রঙ ছুঁয়ে আসতে চায় আমেরিকা -ব্রিটেন-লন্ডন -অথবা প্যারিস। 

কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্য ওঠা বা কাশ্মীরের বরফের মধ্যে টুকরো টুকরো অভিমান বঞ্চনার কথা গুলো আলো আঁধারি কবিতা হয়ে বেঁচে ফেরে । 

বড় বড় উঁচু ফ্লাটের ওপর থেকে নিচে তলায় জমা কান্না আর অট্টহাসিরা ফোয়ারা ছোটায় বোতলের । 

সাধারনের পাঁচমিশালী পাঁচফোড়নের কাহিনীতে তেমন কোন কবিতা নেই । 

ঘাম ছোটা জীবনে -আঁচড় কাটা জীবনে -পাশবালিসে লেপ্টিয়ে ঘুমানো জীবনে তেমন কোন কবিতা নেই । 
তবু কবিতার মধ্যে এই ছোট ছোট অনুভূতিরা আটপৌরে হয়ে বেঁচে আছে - বেঁচে থাকে ।

আধঘুম চোখেও প্রতিটা কলমে সজীব হয়ে বাঁচে কবিতা আর কবিতা ছুঁয়ে বাঁচে কিছু গদ্য কথা ॥ 

                  

বৈশাখী চ্যাটার্জী



একুশের ধুলোয় দাঁড়িয়ে
*******************



একুশের ধুলো আজও ওড়ে
সেই ধুলোয় আজও ভাসে রক্তের গন্ধ ।
আজও বাতাস শুনতে পায় সেই ধুলো চিৎকার করে বলছে ---
আমার ভাষা আমার চাই ।

সেদিনের সেই রক্তাক্ত একুশের ধুলোয় দাঁড়িয়ে অামি কথা বলছি এক প্রতক্ষ্যদর্শী ।
আজও প্রতিটা একুশ আমাকে সেখানে নিয়ে যায় -যেখানে আমার মায়ের ভাষা দাঁড়িয়েছিল বুলেটের সামনে।

অামি এক প্রতক্ষ্যদর্শী অামি দেখছি আমার ভাই সাকিল -বরকত -শকিউব -সালাম ধুলোতে গড়াগড়ি করছে ,
শেষ রক্তবিন্দু আর শেষ নিঃশ্বাসের মাঝেও ওরা চিৎকার করে বলছে --
আমার ভাষা আমার চাই ।

অামি সেই ধুলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে -
অামি দেখছি আমার ভাষার যন্ত্রণা।
অামি দেখছি আমার মাতৃভাষার কান্না ।
দেখছি এক নির্লজ্জ লজ্জা ।

মৃত্যুমিছিল এগিয়ে চলেছে --,
এগিয়ে চলেছে ধুলো ঝড় ।
প্রতিটা ধুলো বুক পেতে ঝাঁঝরা হচ্ছে বুলেটের সামনে ।

আজও বাতাসে সেই গন্ধ পাই ।
সেদিনের সেই রক্তাক্ত ধুলো থেকে বলছি
আমার ভাষা আমার চাই ।
আমার ভাষা আমার চাই ॥

                   
                      

বৈশাখী চ্যাটার্জী





প্রেম 
*****



ফেসবুকের পাতায় শুধু ছবি দেখি তোমার
জানি আরও অনেক দূরে থাকো তুমি।

তোমার কবিতার মধ্যে বারবার তোমাকে ছুঁতে চাই ।
তোমার ছেঁড়া খাতার সব শব্দ গুলো দেখতে মন চায় বড্ড  ।
সেখানে কি আমার মত সামান্যার জন্য  আছে কোন আঁকিবুকি কাটা দাগ ?
তুমি দেখেছো কবি একবারো তাকে ,
অন্তরালে বসে তোমার কবিতার পাতা উল্টিয়ে চলে যে মেয়েটি  ।
সে তোমাকে ভালোবাসে ।

অামি জানি তুমি জানো এই গোপন অনুরাগেের কথা ।
হয়তো মনে মনে মানোও ।

তোমার ঠোঁটের কোণের মুচকি একটু হাসি আমাকে বলে দেয় -
এ প্রেম স্বীকার করার কোন দায় নেই তোমার ।
তবু যদি একবার দায় চাই -
একটু অনুভবে যদি একটা কবিতা চাই -
আমার জন্য --!
যদি লেখ তুমি --!
অসামান্য হতে পারি তবে ।

শুধু একবার ছুঁয়ে যাও কবি ।
শুধু একবার তোমার কবিতার ছেঁড়া খাতায় আমার নামখানা একটু যত্ন করে লেখো ।
মনে নয় শুধু কলমের কালিতেই আমার জন্য একটু ভালোবাসা রেখো ॥

               
                  

বৈশাখী চ্যাটার্জী এর গল্প





               দীপাবলী 

             বৈশাখী চ্যাটার্জী 



      গরীবের শহর -বড়লোকের শহর গোটা শহর জুড়ে কত আলো -পাশের বাড়ির বিট্টুরাও তাদের একচালা টিনের চালের ঘরটাকে ছোট ছোট টুনি আলো দিয়ে সাজিয়েছে -দেওয়ালী ঘর -দেওয়ালী ঠাকুর ।চরকি, তুবড়ি ,রসবাতি -আলোর বৃষ্টি হচ্ছে উঁচু কংক্রিটের দেওয়াল -আর একচালার ছোট্ট ঝুপড়িতে ।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে গোটা শহর ভিজে যাচ্ছে মন -।
       মনে কত জমা অন্ধকারের খোঁজ রাখে এই আলো, এই দীপাবলীর রাতে ঝড় ওঠে -আলোর ঝড়, মনের সব অন্ধকারের ইতিকথা গুলো ভুলে- কয়েক আলোকবর্ষ দুর থেকে কত আলো আসে লাল, নীল, সবুজ ,হলুদ -রঙীন মনের প্রতিটা ভাঁজ হারায়- ব্যথার কথা -মুখ হাসে ,চোখ হাসে, -হাসে বেদনার রঙ, -উঁচু বাহারি ঘর -রঙিন দেওয়াল সাজে রকমারি দামী আলো দিয়ে ।-ছোট্ট ঝুপড়ির মরচে পড়া জানলায় সাধ্য আর সাধের একটা ছোট্ট ইলেকট্রিক তার,- তাতে গুটিকয় ছোট ছোট নক্ষত্ররা মিটমিট করছে ।-
        আলো সবার, -সবাইকে আলোতে ভরে দেওয়া  তার কাজ -তাই সে জড়িয়ে ধরে চুমু দিচ্ছে সমস্ত অলি- গলি, পারা ,রাস্তা -বস্তি আর উঁচু উঁচ বাড়ির চূড়া গুলোকে ।
         
             বিট্টুরা তুবড়ি জ্বালাচ্ছে আগুনের আলো ফোয়ারা হয়ে উঠছে- আবার নিভে নেমে আসছে -কিন্তু শেষ নয় এই আলো, এর রেশ থেকে যায় মনে --।
          আমি দাঁড়িয়ে দেখছি ওইখানে ওই  দোতলা বাড়ির ছাদে তুবড়ির আলো জ্বলছে আর নিভে যাচ্ছে ,-মোমবাতির শিখা দোতলা থেকে একতলা হয়ে মিশে যাচ্ছে মাটির সাথে ।শুধু শেষে কিছু অনুভুতি বাকি থেকে যায়  -আমি দেখছি, আমি ভাবছি ,আমার অন্ধকারের জেগে থাকা ঘুম আজ আলোময় -আমার  রাত্রি গুলো ঘুমাবে বলে আলো জ্বেলেছে, দীপাবলীর আলো --অন্ধকারে ঘুমোতে বড্ড ভয় করে ঘুম আসেনা ,-গোটা শহর অন্ধকারে হাতড়ায় ঘুম ।জেগে থাকে নিঃশব্দ রাত। আজ আলো আছে -বাতাসের বুকে কত শব্দ কোলাহলের -আনন্দের -উৎসবের -মিলনের । আলোয় ভাসছে  শহর ,ভাসছে জীবন ।তবুও ছায়ায় কিছু অন্ধকার এখনো লুকিয়ে ॥