নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

উষ্ণতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
উষ্ণতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

✍️সম্পাদকীয়...




উষ্ণ ভীষণ শরীরে যেমন, রক্ত গরম, দেশ তখন ভোটময়,
মৃত্যুকে কেউ চুমু খায় রোজ, এই দেশ তারও যে নয়,
তাই ঘামের গন্ধে মন পোড়াবে, নয়'ক চুমু নয়'ক চা,
                       শুধুই "#উষ্ণতা"


শব্দবাণ "উষ্ণতা", আমার তোমার আমাদের সবার জীবনে কোথাও না কোথাও উষ্ণতার ছোঁয়াচ লেগেই থাকে। সেই সমস্ত উষ্ণতার গল্পের কোনটায় আসে প্রতিবাদের পুরা বারুদ গন্ধ , তো আবার কোনোটা প্রেমের মিছিলে প্রজ্বলিত মশাল কিংবা আবার বিষাদের স্লোগান মেখে সাজে কিছু ব্যক্তিগত কাহিনী। এই ভিন্ন স্বাদের মিশেলে সুসজ্জিত এবার আমাদের নিকোটিনের "উষ্ণতা" সংখ্যা , যার উষ্ণ আঁচ সেঁকুক মনপ্রিজমের গহীন কোনগুলো।

গভীর রাতে যখন মুখোমুখি শুকতারা আর কালপুরুষ,
অযন্ত্রিকতার উল্কাপাত নোনতা জলে;
টেলিগ্রামের বোবা জবাবে হয় ছন্দ পতন,
মনের জমিদারি ভেজা দেশলাই খোলে....

তাই ফিরে আসা একদম নতুন রূপে ,নতুন ভাবে ,পুরোনো কিছু স্মৃতি নিয়েই ,রোজ মরতে মরতে আবার বেঁচে থাকা ।শুধু " তোমার আমার কথা" বলবে বলে ,
যে কথা কোনোদিন হয়নি বলা , যে কথা শুনতে চায় নি কেউ
যে কথা পাহাড় সমান ,যে কথা লুকিয়ে বালিশ ভেঁজায় ,অভিমান।
সেই কথা গুলোকে নিয়েই আবার "নিকোটিন " ফিরে আসা। কিছু স্বপ্ন ,কিছু আবেগ ,কিছু ভালোবাসাকে বাজি রেখে হোক চলা পথ ফের।
কোথায় হারিয়েছো পথিক,ভিড়ের মাঝে ,খুঁজে নিতে তাই ফিরছে ,কাফের!


অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে ,যিনারা লেখা লেখা পাঠিয়েছেন,অনেক অনেক ধন্যবাদ ,যিনারা এখনো নিকোটিন এর কথা মনে রেখেছেন। প্রায় 250 জন লেখা'র মধ্যে এই 10 দিনের মধ্যেই একটা ম্যাগাজিন বের করা ,সহজ নয় ,তাই হয়তো সবার লেখা নেওয়া সম্ভব হয়নি ,প্রাপ্ত সব লেখাই ছিল অসাধারণ গুণ সম্পন্ন ,তাই যাদের লেখা নেওয়া হয়নি হতাশ হবেন না ,শীঘ্রই শুরু হচ্ছে আমাদের "সকাল বেলা ,চায়ে কাপে চুমুক দিতে দিতে পড়ে নেবেন তো ?
সঙ্গে আবার আসছে প্রতি রবিবার ধারাবাহিক ভাবে "উপন্যাস, গল্প কিংবা আপনার ডাইরির খাতার না বলা কথা গুলো নিয়ে ।


এবারের সংখ্যায় বিশেষ আকর্ষণ সবার প্রিয় তিন কবি  অভিষেক কর,কৃপা বসু ও অর্ঘ্যদিপ আচার্য্য লিখছেন ,অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সঙ্গে থাকবেন এভাবেই এই আসা রাখি বারবার।

এছাড়াও লিখছেন বাস্তববাদী কবি অতনু নন্দী ,হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতো শ্রদ্ধেয় গুরুজন।
এছাড়াও আরো অনেকে ,সবার কাছে তাই চির কৃতজ্ঞ।
সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন ,সঙ্গে থাকুন ,পাশে থাকুন ,যেমন ছিলেন আগেও ,এই আসা রাখছি ,থাকবেন তো ?


                                              ধন্যবাদান্তে ,
                                        মল্লিকা দাস
                                          (সভাপতি )
                                     ও নিকোটিন পরিবার






এবার দেখে নেওয়া যাক ,কাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফিরে এলো নিকোটিন

(নিকোটিন এর নতুন টিম )


মান্নুজা খাতুন (সম্পাদক)






রীনা চৌধুরী (সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার )






পিন্টু মাহাতো (মিডিয়া ম্যানেজার)



"উষ্ণতা "সংখ্যার সুচিপত্র ✍️




✍️কবিতা

অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য
অভিষেক কর
ইন্দ্রাণী
তপন কুমার মাজি
মো.রফিকুল ইসলাম
জয়ন্ত দত্ত
প্রভাত মণ্ডল
অলোক মিত্র
রিফাত ফাতিমা তানসি
রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
তন্ময় চৌধুরী
নবনীতা সরকার
তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
অজাত শত্রু
মল্লিকা দাস
রাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়
রিয়া ঘোষ
অঞ্জন দাস মহাপাত্র
কার্তিক ঢক্
সুতনু হালদার
জয়ীতা চ্যাটার্জী
দেবাশ্রিতা চৌধুরী
রিঙ্কু মণ্ডল
সজীব বড়ুয়া বাপ্পী
সন্দীপ দাস
ভগীরথ সর্দার
কুনাল গোস্বামী
সত্তাপ্রিয় বর্মন
রবি মল্লিক
 দেবলীনা চক্রবর্তী
বৈশাখী চক্কোত্তি
জয়দীপ সেন
মহঃ ওলিউল ইসলাম
সুজাতা মিশ্র(সুজান মিঠি)
অভিজিৎ দাসকর্মকার
কিশলয় গুপ্ত
উত্তম মণ্ডল
অতনু নন্দী
 মান্নুজা খাতুন
প্রীতি
কাজী জুবেরী মোস্তাক
ঋভুব্রত পাল
মোঃআলিফ
জয়তী দাস
ঋজু
রমা সিমলাই
নাহার নাসরিন

✍️অণুগুল্প
কৃপাণ মৈত্র
✍️গল্প

রাণা চ্যাটার্জী
প্রীতি দাস
দীপঙ্কর ঘোষ

শ্যামাপদ মালাকার

✍️গুচ্ছ কবিতা

দীপান্বিতা সরকার
অনিন্দ্য পাল

✍️দু এক কলম:


কৃপা বসু
রীনা চৌধুরী
অভিজিৎ পাল
দেবযানী ভট্টাচার্য্য
 ঈশিতা দেবনাথ

আমার গল্প লেখা এখনো শেষ হয়নি :রীনা চৌধুরী




আমার গল্প লেখা এখনও.... শেষ হয়নি। সেই প্রথম শুরু ছিল গল্প লেখার,আর আজও লিখে চলেছি। তারপর থেকে কেবল গল্প লিখেছি.... কেবল গল্প! যেই গল্পে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি.... শান্ত নদী,বিশাল বিশাল সব পাহাড়,কিছু মনোহরন করা জঙ্গল,সে আরও অনেক দৃশ্য আছে,অনেক রকম ঘুরে বেড়ানোর পথ.... এই ধরো যেমন পথ খুঁজতে বাঁক এসেছিল কত্ত। সেদিনের গল্প লেখার শুরুতে পথের দিশা দেখিয়েছিল কোনো এক আগন্তক। আর ঠিক সেখানে,সেখানেই... সমাপ্তির সূচনা ছিল অহেতুক। বোঝার ভুল?নাহ্ জানিনা কার। শুধু জানি  একজন আগন্তক ছিল সে,যার আগমন আর নিমেষেই উঁধাও সম্ভব। ঠিক যেমনি করে নৌকাডুবি ঘটেছিল কোনো এক ঝড়ের রাতে।  দেখো আমার গল্প লেখা এখনো...শেষ হল না।আর হ্যাঁ গল্প....আমি লিখবোই। তা সে হোক না,অল্প অল্প করে একটা গল্প লেখার চেষ্টা; ঠিক যেমন বিন্দু বিন্দু তে সিন্ধু গড়ে ওঠে।  আমিও লিখবো, গড়ে তুলবো একটা মন মতো গল্প। তা হোক না সেই গল্পে...পাহাড় এর রঙ এক্কেবারে ফিকে,রঙচটা। হোক সেখানে নদীর উচ্ছ্বাস কোনো এক মোহনার কাছে মাথা নত করে শান্ত হয়েছে। অথবা ধরো যে জঙ্গল,বনভূমি আমার মন কেঁড়ে নিতো এক  লহমায় সেটাও এখন ব্যার্থ;তা কেবল শূন্যতা পরিপূর্ণ,ধূঁ ধূঁ করছে ওই ফাঁকা স্থান টা। তাহলেও কোনো ক্ষতি নেই।  আর,হ্যাঁ সর্বোপরি আমাদের সেই...হাতে হাত না রেখে হেঁটে যাওয়া সেই সমুদ্র টা হোক উথ্থাল.... তার উন্মাদনা....কেবল প্রশ্রয় পাক আজ। আর আমাদের সাজানো গল্পটা না লেখাই হয়ে থাক।। 

একশো আট :অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য




গুহা চিত্র, প্রদোষ মিত্র, বাসে ভর্তি লেডিস সিট
ইয়ে দোস্তি, খাটে মস্তি, প্রেমে পড়তে কঠিন গিঁট ।

যা নিষিদ্ধ, অকাল বৃদ্ধ, আহা বৌদি পাড়ার ক্রাশ
অতি শান্ত, কি বৃত্তান্ত? কাশি কমতে চবনপ্রাশ !


যথা ইচ্ছে, জানান দিচ্ছে, জ্যামে আটকা আরাম যান
হেবি ফরসা, গুরুই ভরসা, বেবি ধরতে শারুক্ষান !

জমে যুদ্ধ, লাফিং বুদ্ধ, দামে তুঙ্গ বাজার হাট
যাহা দৃশ্য, পুরো নিঃস্ব, গোটা লাইফে একশো আট ।

রেখে উহ্য, দারুণ বুঝছো, ছবি ও সই, মানুষ ক্লোন
এত কান্ডে, এ ব্রহ্মান্ডে, একা হচ্ছে অনেক জন !

জানতে চাও: অভিষেক কর





জানতে চাও, আমার আর কি ইচ্ছা করে?
কাঁদতে। হ্যাঁ খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে।
আমাদের রোজ না-দেখা-হওয়ার জন্য কাঁদতে ইচ্ছা করে।
প্রত্যেকটি বন্ধুর বাড়ির নিমন্ত্রণে একসাথে যেতে না-পারার জন্য কাঁদতে ইচ্ছা করে,
আমাদের ব্যাপারে সবাই মানে এই পৃথিবীর সব্বাই কে জানানো-হয়নি বলে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
তোমায় চুমু খাওয়ার ইচ্ছে হয় আর তখন তোমায় না-পেলে কাঁদতে ইচ্ছে করে;
তোমার জ্বর হলে, তুমি কোথাও হোঁচট খেলে, তুমি বিষম খেলে—
কাঁদতে ইচ্ছে করে।
তোমার মাথা-ব্যথা হলে, মনখারাপ হলে, তুমি কোথাও ঝামেলা করে এলে,
তুমি ভীষণ মদ খেলে বা মিছিলে পুলিশের মার খেলে—
আমারও কাঁদতে ইচ্ছে করে।

যেমন ভাবে মন-শরীর-হাসি বা কামরস— প্রেমের অজুহাতে তোমার নামে লিখে দিয়েছি...
তেমনই আমার চোখ বেয়ে নামা প্রতিটি মুক্তধারা তোমায় উৎসর্গ করতে চাই।

নাঃ তোমাকে দোষী করে কান্নাকাটি করব না
তোমায় প্রেম করে, তোমার কষ্টগুলো অর্ধেক-অর্ধেক করে ভাগ করে নিতে চাই।
ব্যথা দরুন কান্না আমার হোক, স্বস্তির অধিকারী তুমি হয়ো। প্লিজ!

দুই পৃথিবী ও ভারতবর্ষ :কৃপা বসু





নাসির দার মা মারা গেছেন আজ তিনদিন হলো, সুইসাইড করেছেন, বাড়ির বাগানে আগাছা ঘাস পোকামাকড় পরিষ্কার করার বিষাক্ত কালো তেল খেয়ে। নাসির দার মাকে জানতে গেলে আমার কিশোরী বেলায় যেতে হবে আপনাদের, অর্থাৎ যখন আমার বয়স ষোলো কি সতেরো, সেই সময়ে, রাজি? চলুন টাইমমেশিনে করে ঘুরে আসি....

"মা ওই বাড়ির বউটা, ওইযে নতুন এসেছে গো, কি ভালো মাংস রান্না করতে পারে, কি ভালো গন্ধ বেরোয়, আহা! তুমি কেন পারোনা"

"বউটা কিসব ভাষা! জেঠিমা বলে ডাকবি"।

আমাদের পাড়ায় একটা রেওয়াজ ছিল যে ফ্যামিলি নতুন আসতো পাড়ায়, তারা মোটামুটি আশেপাশের বাড়িগুলোয় কোনো এক সন্ধেবেলায় গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতো চপ মুড়ি চা সহযোগে।

 এই ধরুন ফেসবুকে মিত্র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নতুন বন্ধুরা ইনবক্সে যেমন হাই, হ্যালো পাঠায়, তারপরেই কথা বলতে বলতে অনেকেই বন্ধু হয়ে ওঠে, অনেকে হয়না তেমনই ব্যাপারটা...

যাকগে নাসির দার মাও এভাবেই এলো, শুরু হলো গল্প, একটা প্রেমের গল্প, একটা রাজনীতির গল্প, একটা ধর্মের গল্প, একটা ডিপ্রেশন, আর নাসির দার মার মারা যাওয়ার গল্প....

জেঠিমা প্রথমবার বাড়িতে এসেছিলেন এক বাটি গরম গরম মাংস নিয়ে, আমি মনে মনে ভাবলাম "আরে এই বউটা আমার মনের খবর কেমন করে জানলো! বউটা কি জাদু বিদ্যা জানে?"

এরপর মাঝেমধ্যেই জেঠিমার বাড়ি যাওয়া শুরু করলাম, বেশিরভাগ সময় তিনট কারণে যেতাম। এক, না পড়তে বসার কারণে মা বকাঝকা করলে কিংবা মারলে নাসির দার বাড়ি ছুট দিতাম। জেঠিমা আমায় কাছে ডাকতো, মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ছোটবেলার, গ্রামের বাড়ির গল্প শোনাতো।

জেঠিমাকে কয়েকবার ভুল করে মা বলে ডেকেছিলাম, আমায় কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল, বলেছিল "আমার কোনো মেয়ে নেই, তুই আমায় মা বলেই ডাকিস কেমন"...

এক একসময় নিজের মায়ের থেকেও দ্বিগুন কাছের মনে হয়েছে নাসির দার মাকে, এটা সত্যি বলছি বাই গড।

দুই নাম্বার কারণটিতে আসা যাক জেঠিমার বাড়ি যাওয়ার। নতুন নতুন খাবার টেস্ট করতে।

 আর তিন...আর তিন নম্বর কারণ অফকোর্স নাসির দা!

জেঠিমার ছেলে নাসির দা! যাকে দেখলেই আমি ঘেমে যেতাম, যার নাম শুনলে খাট থেকে ডিগবাজি খেয়ে নীচে আছড়ে পড়তাম, একটুও লাগতো না আমার। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভিজে যেতাম, ভেতর ভেতর কিরকম যেন একটা হতো, বলে বোঝাতে পারবো না, গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে যেতো।

 তখন তো ফ্রক পরতাম, সারারাত জেগে পায়ে পা ঘষতে ঘষতে কোমরের উপর উঠে যেত ফ্রক, চোখ নামিয়ে নিতাম, গাল দুটো লাল হয়ে যেত, কি লজ্জা পেতাম! এই অবস্থায় যদি নাসির দা আমায় দেখে ফেলে, তাহলে কি করবে আমার সাথে! বারবার ঢোক গিলতাম, জল খেতাম,বাথরুমে যেতেও ভয় পেতাম, যদি নাসির দা দাঁড়িয়ে থাকে বাথরুমে।

সপ্তাহে দুটো দিন নাসির দার বাড়ি অঙ্ক করতে যেতাম, সেই প্রথম ফেয়ার এন্ড লাভলি কিনলাম, 5টাকার পাউচ। চোখের তলায় কালি ঢাকতে জনসন বেবি পাউডার ভরসা ছিল, পড়তে যাওয়ার পার্টিকুলার দিনগুলোয় ফেয়ার এন্ড লাভলি ঘষে, আঙুলের ডগায় মার লিপিস্টক থেকে লাল রং নিয়ে ঠোঁটে ডলে নিতাম...

ওরা কালিপুজোয় টুনিলাইট লাগাতো, আর ঝুলনযাত্রায় ওদের বারান্দায় রাধা কৃষ্ণ সাজাতাম।

কিন্তু শবেবরাতের দিন বাবা আমায় মোমবাতি জ্বালাতে দিত না, নাসির দা ওদের ঘরে মোমবাতি জ্বালাতো, কি পবিত্র আহা! ফ্যালফ্যাল করে দেখতাম, আমার কান্না পেতো, খুব কান্নাকাটি করায় বাবাও পারমিশন দিয়েছিল মোম জ্বালানোর।

 আমি ঠাকুর ঘরে দেশলাই ঘষে ঘষে মোম জ্বেলেছিলাম, আমার নাসির দা যেন সেদিন থেকেই ঠাকুরের আসনে ঠাকুরের পাশে বসে রোজ প্রসাদ খেতো, আমি দেখতাম, দেখতে দেখতে আমার চোখ পুড়ে যেত, আহা কি শান্তি!

স্কুল থেকে ফেরার সময় একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম নাসির দা তপস্যা দিকে চুমু খাচ্ছে, সেদিন আর ফুচকা ঘুগনি কিচ্ছু খাইনি বাড়ি ফেরার পথে। সোজা বাড়ি এসে দুটো জুতো দুদিকে ছুঁড়ে মারলাম, চুলের বিনুনি টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেললাম, ভাত খাওয়ার জন্য মা কানের কাছে সমানে ঘ্যানঘ্যান করছিল, রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ভাতের থালাও টেনে মাটিতে ছড়িয়ে দিলাম।

মা দুমাদুম সাত পাঁচ না ভেবেই পিঠের মধ্যে কয়েক ঘা বসিয়ে দিলো। সেদিন আর আদর খেতে জেঠিমার কাছে যাইনি, খটখটে রোদ ভাঙা ছাদের কোনায় হাঁটু গেড়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম।

তখন থেকে চাইতাম ওই মেয়েটা মরে যাক, ওর রূপ নষ্ট হয়ে যাক, ও নষ্ট হয়ে যাক, তপস্যা দিকে সামনে পেলে মাথায় শিল নোড়া দিয়ে মেরে চিবিয়ে খেয়ে নেবো...

কিন্তু হঠাৎ একদিন ঝড় উঠলো, দিনে দুপুরে ঘোর অন্ধকার নেমে আসলো। জেঠিমার বাড়ির সামনে কান্নার রোল উঠলো, জেঠিমা ঘরের ভেতর শুয়ে আছে, চোখের জায়গায় চোখ নেই যেন কোনো শিল্পী নিখুঁত ভাবে তিনকোনা কেটে দুটো পাথর বসিয়ে দিয়ে গেছে।

তপস্যা দি কাঁদছে, মাথা ঠুকে ঠুকে কাঁদছে, বুক চাপড়ে চাপড়ে কাঁদছে, আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে তপস্যা দিকে জড়িয়ে ধরি। ওর মাথায় লাগছে তাইনা! ওর মাথা আমার কোলে নিয়ে বলি...

 "ও তপস্যা দি আমি আর কোনোদিনও তোমার খারাপ চাইবো না, এই তোমার গা ছুঁয়ে প্রমিস করছি, আমি চাইবো না কখনো তোমার রূপ নষ্ট হয়ে যাক। তুমি প্লিজ কেঁদো না। আমি ভালো হয়ে যাবো, খুব ভালোবাসবো তোমায়, তুমি দেখো"...

তপস্যা দির কান্নার কারণ!!!

নাসির দা মারা গেল দুম করে, মাছ আনতে যাচ্ছিল সেদিন, বাজারের ব্যাগ ঝুলিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল মেইন রোডের উপর দিয়ে, সেই সময় জেঠু ফোন করেছিল, "ছেলের শেষ চিৎকার, সাইকেল ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার শব্দ তার বাবা শুনেছিল ফোনে।

আমার নেমন্তন্ন ছিল দুপুরে জেঠিমার বাড়ি। আর কোনোদিনই জেঠিমার বাড়ি খেতে যাইনি আমি। জেঠিমা আর কোনোদিন কাঁদেনি, পেঁয়াজ কাটতে কাটতেও না, আঁশ বটিতে হাত চিরে ফালাফালা হয়ে গেলেও না। তিনবছর হলো জেঠু মারা গেছেন ক্যান্সারে, জেঠিমা তখনও কাঁদেনি, শুধু নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল চিরকালের জন্য।

পেনশনের টাকায় জেঠিমার কোনোমতে কেটে যাচ্ছিল। আমি মাঝেমধ্যে বিকেল করে ঘুগনি কিনে নিয়ে যেতাম জেঠিমার কাছে, জেঠিমার চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ে দিতাম, গালে গাল ঘষে ঘুগনির বাটি জেঠিমার মুখের কাছে ধরতাম। খেতে চাইতো না বুড়ি, মুখ ঘুরিয়ে নিত, আমি ইচ্ছে করেই বারবার মা বলে ডাকতাম সেইসব মুহূর্তগুলোকে।

সাইকোলজিতে বলে কিছু ডাক কিছু গলার স্বর আমাদের সাবকনসাস মাইন্ডে চিরকালের জন্য গেঁথে যায়, সেই আওয়াজ গুলো শুনলে আমরা তৃপ্তি পাই...

 সারাদিন ঝাঁঝালো রোদ্দুরে বাগানে বসে থাকতো আকাশের দিকে মুখ করে জেঠিমা, কি জানি কি ভাবতো!

তিনদিন হলো জেঠিমা সুইসাইড করেছেন, ডিপ্রেশনের শিকার, বহু বছর ভুগছিলেন কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। যা হোক এতদিনে নাসির দার সাথে জেঠিমার আলাপ হবে, জেঠিমা হয়তো আজ স্নান করে হেঁসেলে ঢুকবে, মাংস রাঁধবে, সিমাই, লুচি, আরো কত কি!....

নাসির দা খুব খেতে ভালোবাসতো কিনা!

নাসির দা চলে গেছে অনেক বছর হলো, এখন এই মুখটাও ভালো করে মনে পড়েনা, শুধু তপস্যা দি আর নাসির দার চুমু খাওয়ার দৃশ্যটা এখনো ভেসে ওঠে, আমি কেঁপে উঠি যখন শীর্ষ আমায় চুমু খায়।

 শীর্ষের গায়ে খুব চেনা চেনা একটা গন্ধ আছে, যেটা নাসির দা যখন পাশে বসে উপপাদ্য করতে বলতো, ভুল হলে না বকে বুঝিয়ে দিতো, মুখ টিপে হাসতো, তখন পেতাম। শীর্ষর চুলগুলো ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া, গায়ের রং তামাটে, নাক লম্বা, হালকা দাঁড়ি গোঁফ আছে, এক্কেবারে নাসির দার মতো দেখতে শীর্ষ।

রাতে যখন নিজের রুমে শুয়ে শীর্ষকে ভাবতে ভাবতে গায়ের জামা সরিয়ে ফেলি, নিজের হাতে নিজের বুক চেপে ধরি, তখন শীর্ষ কেমন করে যেন নাসির দা হয়ে ওঠে। আমি শীর্ষের ভেতর নাসির দাকে দেখছি আবার নতুন করে....

আমার চোখের সামনেই শীর্ষ নাসির দা হয়ে উঠছে, আমি আটকাতে পারছিনা...

(ধর্ম আনার পেটের ভাত যোগায় না, আমার নিজের পেটের ভাত জোগাড় করার ক্ষমতা আমি রাখি। তাই আমি নিজে কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নৈ, মানবধর্ম ছাড়া)




আমাদের দেখা হয়েছিল :ইন্দ্রাণী






একটা বিচ্ছিরি বিকেলে আমাদের দেখা হয়েছিল।

মে মাসের শেষের দিকে, এক প্যাচপ্যাচে ঘেমো ভিড় বাস।
রাস্তায় তখন শাসক দলের বিজয় মিছিল, ট্র্যাফিক বড্ড স্লো,
থেমে থেমে বাস এগোচ্ছে। তোমার চোখ আটকে ছিল মোবাইলের স্ক্রিনে। আর আমার, তোমাতে
রুবি আসতেই হন্তদন্ত হয়ে নেমে পড়লে, জানলা দিয়ে দেখলাম ফুলের দর করছ;
এরপরের কয়েক দিন আর দেখিনি তোমায় বাসের লেডিস সিটে।

বোধ হয় সপ্তা খানেক পর, আগের বাসটা মিস করে স্ট্যান্ডে বসে আছি
ঘড়ির কাঁটা ছয়ের ঘর পেরিয়ে গুটিগুটি পায়ে সাতের দিকে এগোচ্ছে
কমলা রঙের কুর্তি এসে বসল পাশে। আড়চোখে দেখলাম, 'তুমি'
আমতা আমতা করে বললাম, 'তা সেদিন, ফুল কিনলেন শেষমেশ?'
'আমায় বলছেন?' বড় বড় চোখে জিজ্ঞেস করলে।
"হ্যাঁ, মানে ঐ যে, গত শুক্রবার আপনি রুবি তে নেমে রজনীগন্ধা দাম করছিলেন না.. সেদিনের কথা বলছি"

পরবর্তী চৌত্রিশ সেকেন্ড তুমি কটমট করে আমার দিকে চেয়েছিলে।
অতঃপর, 'কোনো কাজ বাজ নেই না? মেয়েদেরকে ফলো করে বেড়ান, হ্যাঁ...?'
আরও অনেক কিছু বলে যাচ্ছিলে... আমার শোনা হয় নি।
আমি শুধু দেখছিলাম, রেগে গেলে তোমার চিৎকারের সাথে সাথে দুচোখ দিয়ে জলও নেমে আসে, কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই।
তুমি ক্লান্ত হয়ে থামলে, বললাম, "কান্নাটা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী, আমিও মাঝে মাঝেই কেঁদে থাকি"
ভেবেছিলাম নির্ঘাত একটা চড় জুটবে এবার, কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুমি ফিক করে হেসে ফেললে।

বাসে উঠে পাশাপাশি বসল, কালো শার্ট আর কমলা কুর্তি।
আলাপ দীর্ঘায়িত হল। জানলাম, সেদিন রজনীগন্ধাই কিনেছিলে, তোমার মায়ের প্রিয় ফুল।
কবিতা ভালোবাসি শুনে হাতে ধরিয়ে দিলে 'পূর্ণেন্দু পত্রী'।
রুবি এসে গেল। নামার আগে বললে, 'বইটা ফেরত দেবেন কিন্তু'
ঐ অব্দি বলেই মিশে গেলে রাস্তার ভিড়ে; কীভাবে, কোথায় বইটা দেব, কিছুই না বলে। খেয়াল পড়ল নামটাই যে জানা হয়নি এতক্ষণেও...
বইটা খুলে দেখলাম তার প্রথম পাতায় লেখা আছে, "লাবণ্য মুখার্জি, 720817****"

বাস এগিয়ে চলল, আমি মনে মনে বললাম," আমাদের আবার দেখা হবে, কোনো এক বিচ্ছিরি বিকেলে।।"


তুমি নেই বলে:তপন কুমার মাজি






তুমি নেই বলে...
ক্ষয়ে গেছে তিলে তিলে স্বপ্নময় জীবন,
দিনে দিনে পাল্টে গেছে জীবনের প্রতিটি মৃত্যুর ধরণ--

তুমি নেই বলে...
রাতজাগার পরিধিটা বাড়তে বাড়তে অনেকটাই গেছে বেড়ে,
একে একে সুখেরা পালিয়েছে পিঞ্জর ছেড়ে--

তুমি নেই বলে...
জীবনের যত গল্প রয়ে গেছে অসমাপ্ত,
দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণারা এসে ভিড় জমিয়ে বাড়িয়েছে একাকীত্ব--

তুমি নেই বলে...
চোখের কোণে শোনা যায় অবিরত
অশ্রুদের নীরব চিৎকার
গোছানো ভাবনারা হয়ে গেছে এলোমেলো, একাকার--

তুমি নেই বলে...
সময়ের ঘেরাটোপে মুহূর্তেরা উঁকি মারে স্মৃতির জানালায়,
রঙিন ছবিরা সব মুছে গেছে হৃদয় হতে
বেঁচে আছে শুধু মনটা
বোবা কান্নায় !

হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি: মো.রফিকুল ইসলাম






ভোরের প্রভাতে শুনতে পাই তোমার সুরে
আর্তমানবতার ধ্বনি ।
তোমার সুরে ভেসে উঠে আকাশে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দানবের মরণ ফাঁদের বিরুদ্ধে তুমি
প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি ।
রাজপথে মুখরিত শ্লোগান তোমার সুরে
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জালিমের বিরুদ্ধে ধারালো তলোয়ার
তোমার তরঙ্গের গতি আজ ।
মেহনতি মানুষের আওয়াজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
শোষণ-বজ্ঞণা মজলুমের বিরুদ্ধে
অসহায় মানবের সম্মোহনী ।
অশুভ শক্তির ধ্বংসের সৈনিক তুমি অগ্নি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
দিন-মুজুরি শ্রমিকের আর্তনাদের হাহাকার
দিশাহারা মানবের সৈনিক তুমি ।
তোমার সুরে বাতাসে বহে মুক্তির গান
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
সাম্যের প্রতিকী নৃত্যের প্রাঙ্গণে
বীরঙ্গণা মায়ের আর্তনাদ ।
তোমার কন্ঠে রাজপথ আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
তুমি বিপ্লবীদের , বিপ্লবী কন্ঠস্বর
তোমার আওয়াজে মুখরিত ভূমি
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।
জোসনার আলোয় রজনী সন্ধ্যায়
আলোর দিশারী তুমি ।
অন্ধজনের স্বজন আজ
হে নবীণ , তোমার জয়ধ্বনি ।

স্বপ্নাভিষেক: জয়ন্ত দত্ত





দারুণ স্রোত...
পায়ে পায়ে এগিয় যাওয়ার 
দাঁড় টানা...

সোনালী গোধূলি পেরিয়েও যে
 শঙ্খ শব্দের সন্ধ্যা-গান আসে...তারপর যৌবন রাত্রি বুড়ো হলেও কখনো
থামে  না...

প্রতি রাতের কোলে জন্ম নেওয়া
 সকাল ফুলের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যে
 যে গল্প উপন্যাস মালা গাঁথে....

যেন
কানে কানে সেই অভিষেকের গান
শুনতে আমি পাই...

পলাশ:প্রভাত মণ্ডল






শৈত‌্য আদরে সন্ত্রস্ত
         ঝরা পাতার রুক্ষতা
                 তবু তোর অপেক্ষায় আমি
                          জানি তুই আসবি বসন্তে
                                দিগন্ত জোড়া করে রাঙা।
                                                     

রক্তক্ষরণ : অভিজিৎ পাল








১.
অনেক মিথ্যাকে ভালোবাসেন আপনি। অনেক মিথ্যাচারকেও। আপনি হয়তো জানেন না একটার পর একটা মিথ্যে আপনার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনি কুয়োর ব্যাঙের মতো উপুড় হয়ে আকাশ দেখে ভাবছেন, পৃথিবীতে এই কুয়োটাই একমাত্র সত্য। ভরসা রাখুন। আপনাকে কুয়ো থেকে বের হয়ে আসতে আমি আর অন্তত অনুরোধ করছি না।

২.
সারাজীবন শিল্প শিল্প বলতে বলতে ওরা ভেবেছিল, সাজানো মিথ্যাগুলোকে একদিন সত্যি করে দেবে। কোনোদিনই ভাবেনি একদিন আগুন আসবে ভেতর থেকে। নিজের জ্বালা থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসতে চাইবে দগদগে ব্যথা। না, আমি তোমার আত্মদহনের প্রার্থনা করিনি এখনও।

৩.
মুঠোর ভেতরে লাল ফিতে বাঁধা সার্টিফিকেট ধরে হয়তো ভেবেছো ওটাই তোমার দারুন একটা অ্যাচিভমেন্ট। আমরা হাসিনি ওসব দেখে। আমরা জানতে পেরেছিলাম কীভাবে দুয়ে দুয়ে মিলে চার সাজানো যায়। সাজানো যায় আপসেট হওয়ার নাটক। এরপরও আমরা সব জেনে বুঝে তোমার ওপর হাসিনি। এটুকু বলতে পারি, একদিন তোমার খেলাঋদ্ধ অ্যাচিভমেন্টটাই তোমার দিকে তাকিয়ে হাসবে, আমরা আজকের মতো সেদিনও চুপ করেই থাকব।

৪.
একে একে দূরে যাবে সবাই। কেউ কেউ নয়, সবাই। জীবনের অর্থ আমাদের কাছে নেই। শেখায়নি যিনি শিখিয়েছেন স্বার্থপর হয়ে ওঠার একের পর এক পাঠ। পাপ ছাড়ে না, ছাড়ছে না আপনাকে। কুমীরের চোখ দেখে এখন ছেলেমেয়েদের হাসি পায়। ওদের ছেলেবেলা থেকেই শেখানো হয়েছে রাখাল ছেলের গল্পটা। এবার তোমাকে সত্যি বাঘে ধরেছে। আমরা আর ফিরে তাকাচ্ছি না।

৫.
আমি দেখেছিলাম তাকে। সেই ছেলেটাকে। যাকে তোমরা বিনা কারণে অপমানিত করিয়েছিলে। ওর হাসিটা মুছে দিতে চেয়েছিলে হিংসায়। পেরেছিলে তোমরা। একা নও, অনেকে মিলে! কেউ বলেছিল, কেমন দিলাম! কেউ বলেছিল, হিপ হিপ হুররে! আমি সেদিনও চুপ ছিলাম। দুঃখগুলো ওর থেকে কেড়ে নিতে পারিনি বলে আজ আমাকে রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়ে আত্মশুদ্ধি করতে হবে।



অটিজম ভাবনাগুলো নিউরনে অসাড় : অলোক মিত্র







ইদানিং নিউরনে জমানো তোর স্বপ্নগুলো 
রিসাইকেলবিনে উদাসী হতে শিখেছে...
তোদের পুকুরপাড়ের বুড়ো বটগাছটা 
হাতপাখা মেলে আকাশে ছড়িয়েছে ওর বিশালতা। পুকুর পাড়ের ভরদুপুর কখন যেনো 
মাছরাঙার ঠোঁটে তুলে দেয় শিকার।
আমি ভাবনায় আবার সমুদ্র পাড়ি দেই,
এক উদাসী হাওয়া ছড়িয়েছে 
দেহময় জুড়ে কবিতার শিলালিপি,
নগর যাপিত জীবন হেটে হেটে 
ক্লান্ততা নিয়ে আসে, সাথে জড়াব্যাধি
মুঠোভর্তি সুখ নিকোটিনের ধোঁয়া আর
কার্বন সিসায় মিশে খুঁজে নেয় অসুখ।
মেঘভারি ঋতু ঋতুবতী হয়ে নিয়ে আসে শ্রাবণ
আমি ওর দুঃখে খুঁজি অযাচিত সুখ,
অতপর! অটিজম ভাবনাগুলো
এখন যেনো নিউরনে অসাড়।

"আজ-কাল" : রিফাত ফাতিমা তানসি







কাল ছিল;
ঝলসানো জোৎস্নামালার সাথে লুটোপুটিতে রাত লুকানোর দিন!
কাল ছিল;
পড়ার ছলে বায়োলজি খাতার ভাঁজের গোলাপপাতার গন্ধ শোঁকার দিন!
কাল ছিল;
উদোম পায়ে সাগরতীরে সোনা বালির সাথে কানামাছি খেলার দিন!
কাল ছিল;
বদরাগী ভুতুমপ্যাঁচার সাথে নাকি নাকি ঢঙ্গীসুরে ইটিশপিটিশ করার দিন!
কাল ছিল;
কব্জি ডুবিয়ে তোমার ক্যানভাস মূর্তিতে ইচ্ছেমতো রঙ ভাসানোর দিন!
আর আজ!
আজ যে বড্ড মন খারাপের দিন!
আজ যে আমার মন পালানোরও দিন!
আজ আমার একলা পথের একলা পথিক হওয়ার দিন!
আজ আমার মনের ঘরে তালা লাগিয়ে চুপটি করে বসে থাকার দিন!

এসরাজের সুরে : রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়





রাতের শরীরে আঁসটে গন্ধ ৷ তোমার রোজকার আকাঙ্ক্ষিত চুম্বনে , রমণের ঘ্রাণজ বাষ্প ভিজিয়ে দিয়ে যায় আমার পাহারতলি , উপত্যকা ৷ জ্বরে পুড়তে পুড়তে অরন্তুদ মুহুর্তগুলো ছেঁকে , ছুঁড়ে দিই নিভন্ত সূর্যের বাঁকে ৷ সোহাগী আতরে ঠোঁট ডুবিয়েছে অমার বেলোয়ারি  গমক ৷ আমার শরীরে ডুবতে ডুবতে সন্ধ্যা প্রসব যন্ত্রণায় লেপে দেয় বিছানার সুখ ৷ 

যাপনের ঘ্রাণে মসগুল উষ্ণতা কোথাও এসরাজের সুরে বেজে চলে বিলম্বিত লয়ে শরীরী আঙ্গিয়ায়

অটোওয়ালা : রাণা চ্যাটার্জী





অটোওয়ালার হাতে সত্তর টাকাটা এমন ভাবে গুঁজে দৌড় দিলেন পালবাবু  যেনো আর বেশি চাইতে পারার অবকাশ না পায় চালক ! অবশ্য অন্য কারণটাই প্রধান,ওই যে স্টেট বাসটা ছেড়ে যাচ্ছে সেটাকে  কোনরকমে ধরতেই হবে আজ । 

প্যাচ প্যাচে কাদায়,ভিড় ভাট্টার মধ্য দিয়ে ততক্ষণে এই একমাত্র অবলম্বন বাসটি গড়াতে গড়াতে গতি নিচ্ছে । 'আরে দাঁড়াও দাঁড়াও করতে করতে অফিস ব্যাগ ,বগলে ছাতা নিয়ে ড্রাইভারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন কি তখনও রাস্তা ক্রশ করে উঠতে পারেন নি বাইক ,অটো ওলাদের লাগাতার  লাইনে। ভিড় যতো বাড়ছে , বাসটা না পাবার গ্লানি ভ্রু কুঞ্চনে ততো  ধীর্ঘ হচ্ছে  ইরিগেসন দপ্তরের পাল দার ! আর থামে প্যাসেঞ্জারে  উপচে পড়া বাস ! ভুঁড়ি মোটা ট্রাফিক পুলিশ , দুবার লাঠির বাড়ি মারতেই চাকা গতি বাড়িয়ে এলাকা ছাড়ার প্রস্তুতি । তবুও ছুটেই চলেছেন যদি সামনের মোড়ের যানজটে, আর একটু দাঁড়ায় বাসটা ! 

"আরে ও দাদা, ও দাদা দাঁড়ান দাঁড়ান ছুটবেন না "আশ্চর্য্য তো ,  সেই ছেড়ে আসা অটোওয়ালাটার গলা না ! " আচ্ছা বজ্জাত তো ,উঠে থেকে আশি টাকা নেবার কথা বলে আসছিল" কিন্তু সত্তরের বেশি এক পয়সা দেবো না জিদ করে ছিলো পাল দা , নেমে দিয়েওছে সেটা,তবুও কিনা পিছু ধাওয়া ! ছুটতে ছুটতে এই কথা গুলো ভাবছিলো আর নাহ্,  পারছি না ,ছেচল্লিশ টা বসন্ত পার করা পালদার বুকের ভেতর টা ধরাস ধরাস করছে ,এই বুঝি হৃৎপিণ্ড ছিটকে বেরিয়ে আসবে ! বাসের আশা ছেড়ে চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে পড়তেই সেই অটো ওয়ালার সক্কাল সক্কাল এক মুখ পান বজবজে গলা ! 

"আরে কি হয়েছে কি তোর ! তোকে তো ভাড়া মিটিয়েই এলাম "একটু ক্ষেকিয়েই কথা গুলো বলে ফেললো  পালদা  ! সকাল থেকেই তার মেজাজটা খিচড়ে দিয়েছে অফিসের বড়ো বাবুর একটা ফোন "হটাত নাকি ইন্সপেকসন আসছে , দশটার আগে অফিস আসতেই হবে !" অন্যদিন খেয়েদেয়ে , সাড়ে নটায় বেরিয়ে, পরের বাস ধরে পৌনে এগারোটায় পৌছানো অভ্যাস , তাই আজ এই ৮-৫০ এর স্টেটটা ধরার এত্তো তাড়া ছিলো , ! 

"আরে দাদা তুমি খামোখাই রাগ করছো আমার ওপর" হাতে খৈনি ডলতে ডলতে উজ্জ্বল মায়াবী চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বললো অটোওয়ালা ছেলেটা । কিংকর্তব্যবিমূঢ় পাল ঘাড় উঁচু করে ওর দিকে তাকাতেই সে বললো , 'দাদা বসো , আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি তোমায় , আরে চিন্তা করো না দাদা বসো ,কোথায় তোমার অফিস শুধু সেটা বলো "
অলরেডি সকালে চৌদ্দটাকার  পরিবর্তে সত্তর খসেছে , আবার অটোতে মিনিট চল্লিশের পথ মানে মিনিমাম দুশো ! এই চিন্তায় বিভোর হওয়ার আগেই অফিস ব্যাগটা ধরে , "আরে এসো তো , সে আমায় না হয় কিছু দিতে হবে না "বলে অটোতে বসিয়ে স্টার্ট দিলো ! 

চিরটা কাল এই সংখ্যাতত্বের আঁকিবুঁকি হিসাবে সংসার চালানোর মতো কঠিন কাজে  জর্জরিত, পা টিপে চলা  মধ্যবিত্ত এই ছাপোষা মানুষ পালদা।  আর না করেন নি মুখে , করার উপায় ও খুব একটা ছিলো না । এটাই তাকে স্বস্তি দিয়েছে যে বেশি টাকা লাগলেও , দশটার আগে অফিস পৌঁছে গেলে অন্তত তার ইমেজটা ঠিক থাকবে অথরিটির কাছে । এই ভাবতে ভাবতেই ক্যাঁচ করে আমতলা মোড়ে আটকে গেলো অটোটা , সামনে তীব্র জটলা , ভিড়ে থিকথিক করছে ! অটোওয়ালা ছেলেটি ,  নেমে পরিস্থতি বুঝে এসে জানালো, কেলো হয়েছে , একটু আগে স্টেটবাস টা এক পথচারি কে ধাক্কা মেরেছে , স্থানীয়রা পথ অবরোধে সামিল ! 
হে ভগবান , কি যে আছে কপালে একথা ভাবতেই অটোওয়ালার নিশ্চিন্ত অভয়বাণী "দাদা সবে নয়টা বেজে সতের মিনিট ঘড়িতে , আমি ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি  আপনাকে , বিন্দাস বসুন চিন্তামুক্ত হয়ে ! "

"আচ্ছা কপালের গেরো লেগেছে তো আজ !তবে তো ওই স্টেট বাসটা না পেয়ে ভালোই হয়েছে ! অফিস পৌঁছানোর বারোটা 
বেজে যেত ,"এসব সাত পাঁচ ভাবনা ভাবতে ভাবতে গলি ,গলি তস্য গলি দিয়ে এগুতে লাগলো অটো।
কাউকে পেমেন্ট দিতে হলে ,সে বাস,ট্রেন অটো যাকেই হোক না কেনো ,অনেক আগে থেকে কিছুটা টাকা বের করে জামার পকেটে রেখে দেবার বহু পুরনো অভ্যাস পাল দার ।কিন্তু একি কাণ্ড ! প্যান্টের পকেটে  মানি ব্যাগ হাতড়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ !কেবল রুমাল টা !তবে কি আনেন নি !উঁহু তা হয় কি করে ,সকালে নিজে ওখান থেকে সত্তর টাকাটা নিয়ে  মিটিয়েছেন ! তবে কি রাস্তায় পরে গেলো ! চুরি নয় তো ,আরে কি সর্বনাশ আজ ছাব্বিশ তারিখ,এল আই সি প্রিমিয়াম ৫৪৩৫ টাকা গুনে কালরাতে গুনে  মানিব্যাগে রেখেছেন ! এই সব স্বগতোক্তির মতো বিড় বিড় করছেন আর কল কল করে ঘামছেন পাল দা !

ইশ এই অটোওলাকেই কি বলবে !এত্তো হয়রানি করে বেচারা নিয়ে আসছে ।লজ্জায় ,সংকোচে কাঁচুমাচু মুখ করে থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ ভেতরে !

"আরে ও দাদা ,ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি ! আরে দেখুন এসে গেছি আপনার অফিস "বলে হাত ঘড়িটা পেছন করে দেখালো নয়টা বেজে আটচল্লিশ ! ছেলেটির স্বগর্ব ঘোষণায় আরো যেন থমকে গেলো পালদা ,ওকে কি যে উত্তর দেবে ! নিচে আড়ষ্ট ভাবে নেমে আমতা আমতা করে দু হাত জড়ো আর  মাথা নিচু করে পালদা বলছেন ,'ভাই আমার খুব বিপদ হয়ে গেছে ,মানি ব্যাগটা খোয়া গেছে " যেই এটা বলা শেষ হয়েছে "আরে মশাই একি করছেন দাঁড়ান দাঁড়ান ,এই নিন আপনার মানি ব্যাগ !আপনি সকালে নেমে যেতেই দেখি পেছনের সিটে ফেলে গেছেন ,আর সেই জন্যই আপনাকে পিছু পিছু "ও দাদা ,ও দাদা করে হেঁকে অস্থির হয়েছিলাম ।"এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো অটোওলা ! 

ব্যাগ টা হাতে নিয়ে পাল দা তখনও কল কল করে ঘামছেন ,যেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন !কেয়ারটেকার চাবির গোছা নিয়ে অফিসের মেন গেট খুলছে ,আর সামনে যেন সাক্ষাত ভগবান রূপে অটোওলা । একটা ৫০০ টাকা জোর করে হাতে গুঁজে দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন নাছোড়বান্দা অটোওয়ালার কাছে ,কিছুতেই সে বেশি নেবেনা ।ছেলেটি দেড়শো নিয়ে বাকিটা ফেরত দিতে বাধা পেয়ে ,অবশেষে পাল দার পকেটে জোর করে ভরে দিলো বাকি টাকাটা ।অটো টা স্টার্ট দিতে দিতে বললো ,দাদা একটু সাবধানে হাঁটা চলা করবেন ,আর পারলে টিভি বাবু দের কাছে আমাদের ভালো দিকটাও অল্পবিস্তর বলবেন গো "

অফিসে নিজের টেবিলে পৌঁছে এক বুক শ্বাস নিলেন পাল দা ,হাত ঘড়িতে তখন নটা বেজে সাতান্ন মিনিট । রাত্রে গদ গদ হয়ে বড়ো বাবু মিত্র ফোনে খুশির খবর দিলো ,"ভায়া পার্টি দিচ্ছ কবে ,কতৃপক্ষ তো তোমার প্রমোশন দিচ্ছে শিগগিরি !"

কবিতার চারপাশ : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






গত রাতেও আমার কবিতায় এসেছে
একটা চড়ুই, দক্ষিণের দুটো হলুদ বারান্দা,
একটা বিষন্ন নদী, বর্ষার বৃষ্টিতে ভেজা একলা রাস্তা
আজ সকালে তারা কোথাও নেই
কবিতার পথ ধরে আমি তাদের চিনি নি
তারা এমনই আসত নিজের নিজের গান নিয়ে
আমিও যে তাকে দু'একটা শোনাইনি তা নয়

নদী বিষন্ন না হলে ঢেউ চাইব কার কাছে ?
চড়ুই ছাড়া সকালের ক্যানভাসে কোনো রোদ নেই
বর্ষার একলা রাস্তার কাছেই তো জেনে নেব
বাকি রাস্তা হেঁটে যেতে কতবার বসতে হবে

হঠাৎ করে এতটা ফাঁকা জায়গা দেখি নি তো আগে
বুঝতে পারছি না, ঠিক কোথায় দাঁড়াব
এরা সবাই আমার চারপাশে ছিল
আমরা যে খুব কথা বলেছি তা নয়
তবুও ওরা ছিল ওদের মতো করে ------- থাকতেই হয়, 
তা না হলে চোখ রাখব কোথায়?

এপার ওপার: দেবযানী ভট্টাচার্য্য








এত সাজছ কেন! -সবকিছু ভীষন  মানানসই - -আমার সহ্য হয়না- জানইতো-
যেখানে যেমনটি হবার কথ- পোশাক, অলংকার ,রং, ভঙ্গিমা, কেশবিন্যাস , আহ্লাদীপনা -। কেমন নিষ্ঠুর দেখাচ্ছে  তোমাকে- যেন প্রিয় কবিতাটিকে ধর্ষণ করত এগিয়ে আসছে কোন মেলোড্রামাটিক বাচিকশিল্পী। উদ্ধত গ্রীবায় এখনো আটকে আছে শাওয়ারের জলজ আদর । আয়নার কাঁচে  প্রত্যার্পিত একলক্ষ নার্সিসাস চুমুর রিফ্লেক্শনে আমার দুর্বল দৃষ্টি হেরে যাচ্ছে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
সেইসব অলীক আদর গায়ে জড়িয়ে এ নিয়ন শহরে বিজ্ঞাপিত হবার অমোঘ চুম্বকে কাবুলি  বেড়ালের গরগরে সুখ সুখ নম্রতায় এবার তোমার গোড়ালি ছুঁয়ে নেবে পেনসিল হিলের দাম্ভিক  শিখর, হাতের নাগালে এনে দেবে এলিট কাঁধের পেশল উচ্চতায় অনায়াস স্পর্শ !

   একটু আগেই--যখন সোনালী   বিকেলটা নিভন্ত আঁচে ঝিমিয়ে পড়ছিল--সেই পাখিটা আজও এসেছিল -বোধহয় আমার মতই সন্ধ্যেগুলোের আসন্নতায় ও ফেরার পথ হারিয়ে ফেলে--আমি তখন সুগন্ধ পাচ্ছিলাম , প্রসাধন  শেষে ছড়িয়ে দেওয়া শ্যানেল ফাইভের-তুমি কি বেরোবার আগে আসবে একবার! বেডরেস্টটা আর একটু তুলে দিয়ে যাবে কি ! জানলা দিয়ে দেখতাম কোন গাড়ি আজ- কি পোশাক সংগীর। বোধহয়  পাঁচটা বাজে--রোদ্দুর বসন্ত বিকেলের পলাশ রঙ মেখে ছুঁয়ে নিচ্ছে জাললায় রাখা ক্যাকটাসের কর্কশ ত্বক। মৌটুসি পাখিটিও এবার বেশ চঞ্চল-ওর ডিউটি শেষ--এবার তিরতিরে ডানা ওকে ফিরিয়ে দেবে কি প্রিয় কোন পরিসরে!
যাও পাখি--একা থেকোনা- ফিরে যাও আনন্দ কুলায়- অন্ধকার আমার একাকী  জানলায় রেখে দিয়ে চলে যাও।

এবার ফিরবো আমি এগারো বছর- যখন
তোমার চুলে কচুরিপানার তিরতির কোমল প্রশ্রয় অনাঘ্রাত সৌরভ নামিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মত ভেঙে পড়তো বুকের দামাল অববাহিকা  জুড়ে--যখন তোমার চোখে শ্রাবণ আকাশ জড়ো হলে ফুসফুস বাতাস হারাতো- যখন দক্ষিণ বাতাস বসন্তের খোঁজ নিয়ে এলে কোন্ সে পাগল করা টানে নিরুদ্দেশ- নিরুদ্বেগ-- ঘরের মধুকাল ভুলে বাউল জ্যোৎস্না  কিংবা পলাশ দুপুরে ঘাসে ঘাসে শরীরী আগুন । তখন জারুল রঙা তাঁতের শাড়ি,
তখন হঠাৎ  এলো খোঁপা ভেঙে গেলে ঝিমধরা সুগন্ধী আঁধার- তখন স্বর্ণাভ ত্বকে সহজ বৈভব-চোখের নিজস্ব  ঝিলে তখন নৌকাডুবি -তোমার পরাগরেণু মেখে নেওয়া তীব্র অসময়-।
তখন স্বল্পাহার , ধুলোমাখা গৃহস্থালি  , অভাবের অনিবার্য দিন -।তখন বেসামাল পরিযায়ী ডানার উড়ান- তবুও অজস্র  রাত একত্র উষ্ণ চুমুকে পার হত কবিতায় গানে । আকাশের রঙ ফিকে হয়ে এলে ঘুঘুর মত নরম বুকে মুখ ডুবিয়ে আসতো চন্দনগন্ধী ভোর-।

 যদি জানতাম একটি ডিসেম্বরের ভোরে আমার জীবন থেকে চিরতরে মুছে যাবে কস্তুরী  ঘ্রাণ--বড় কষ্টে সংগৃহীত সামান্য একত্র ভ্রমনপাথেয় অর্থহীন হয়ে যাবে--পাহাড়ী কুয়াশায় পিছল বাঁকে আমি হারাবো আমাদের ধুলোমাটি জীবনের সুখ--আমার চোখের সামনে তিরতিরে কচুরিপানা মুছে নেবে সকরুণ  রঙ- আমাকে ফিরিয়ে দিতে নিরক্ত জীবন অনায়াস ঝাঁপ দেবে লেলিহান
আগুনে ঝর্নায়-!

পরমান্ন  পরমায়ু থেকে চলে গেছে এলাচের ঘ্রাণ-।
হঠাৎই তাকিয়ে দেখি -পড়ে আছি পরাজিত
ঘৃণ্য সরীসৃপ -ক্রমশই ডুবে যাচ্ছি  স্তব্ধ প্রলয়ে।
এই যে অসহ প্রাণ , তবু দেখ অনিঃশেষ লোভ- তোমাকেই  শাপ দিচ্ছি -তোমাকেই পিষ্ট করে তবু পড়ে আছি পরগাছা এক-
স্মৃতির গন্ধটুকু মৃত্যুগামী শরীরে বিছিয়ে-।

উষ্ণতা বিষয়ক কালকূট : তন্ময় চৌধুরী







এরপর উষ্ঞতা
সব উষ্ঞতার ভেতর তলপাড় হয়
এমন কথা  নয়
বহুবিধ উপকরণ সাজানো
যেমন একটি গাছের আজুহাত
"আমি হীন মৃত্যুসয়ংবর "


চলো লাফায় সমঝতা করি
এর দুয়োর তার দুয়োরে ঘুরে অশ্বক্ষুরে বেঁধে দিই দ্রুততা

উষ্ঞতা ,বাতাসের সুরে ম্রীয়মান হোক
চলো লাফায় গণিতের মেরুদণ্ডে |


তোলপাড়  , দর দর ঘামের হৃদয় লুকানো
যজ্ঞ চলুক অভিমানের অভিযজ্ঞ

দুটি হাতের উপর মনাকুল

এও তো উষ্ঞতা

ছুঁয়ো না
কেমন যেন লাগছে |

নারীজন্ম : নবনীতা সরকার





শরীর থেকে খসে পড়া লাবণ্যের 
সবটুকু মেদ,
রোদচশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখে
আমার সার্থক নারীজন্ম। 

মাটি ছোঁয়া থেকে মাটিতে শোয়ার যাত্রাপথ,
ক বর্গ থেকে শ বর্গ পর্যন্ত হাজার একটা জন্মান্তর

একটাই আক্ষেপ ,
এ জন্মে ভালোবেসে
এক থালা ভাত বেড়ে খাওয়াতে পারিনি কাউকে। ।