নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সুজান মিঠি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সুজান মিঠি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

।।কুমারীপুজো ।। সুজাতা মিশ্র(সুজান মিঠি)




পুজোর সময় আসন্ন। প্যান্ডেল বাঁধাও শেষ।
রাত পেরোলেই ষষ্ঠীর বোধন হবে শুরু।
ব্যস্ততা চরমে সকলেরই। পুরোহিত মশাই
পঞ্জিকায় সঠিক সময় দেখে নিচ্ছিলেন ভালো করে।
দুহাতে পাঁজাকোলা করে মেয়েকে নিয়ে
 ভিতরে ঢুকলো গোপাল।
তার সারা গায়ে রক্তের বন্যা যেন। যে পথ দিয়ে ঢুকল
তার সবটুকুও।
অবাক পুরোহিত ও অন্যান্যজন।
গোপাল চিৎকার করে উঠলো কিছু মুহূর্ত পরেই।
ঠাকুরমশাই, এই দেখুন আমার মেয়ে, আপনাদের মন্দিরের পিছনের ড্রেনে পরে ছিল।
প্রাণ চলছে এখনো। তবে থাকবে না,  এই দেখুন দেখুন না
আমার মেয়ের সব জায়গা দিয়ে কত রক্ত বেরোচ্ছে!
এই দেখুন পুরোহিতমশাই ক্ষতবিক্ষত যোনি।
ও নতুন প্যান্ডেল দেখতে এসেছিল জানেন তো।
ওর মাকে বলেছিল, আমি দেখে আসি আমি কোথায় বসে
মা দুর্গা হবো।
ওর কুমারিপুজো করবেন আর পুরোহিত মশাই?
খুবলে খুবলে যারা ওকে খেল তাদের সামনে ওর অক্ষত যোনি পুজো করবেন, পুরোহিত মশাই?

গোপালের অচৈতন্য হয়ে পড়ার আগে ধরাধরি করে
নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে।
মেয়েটা আর বাবা পাশাপাশি দুই বেডে।
অচৈতন্য।

অষ্টমীর পুজো শুরু হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে।
পাড়ার মণ্ডপে পুজোর কোনো ঘাটতি নেই।
আয়োজন সম্পন্ন হলে পুরোহিত বললেন
এবার চলো আমার সঙ্গে।

হাসপাতালের বেড ঘিরে অতি সতর্কতায় সাবধানে
গোপালের সাতবছরের মেয়েকে সাজানো হলো।
শুরু হলো অষ্টমীর কুমারীর আরাধনা।
মৃন্ময়ীকে চিন্ময়ীরূপে আরাধনা।

মেয়েটা কিছু পরে ফিরে পেল জ্ঞান, কথা বললো,
'জল খাবো।' 
পুলিশ টানতে টানতে নিয়ে এলো দুটো লোককে।
পুরোহিত বললেন, অসুরবধ হবেই হবে, ভেবোনা গোপাল।
উঠে বসলো তার বাবাও, শোক সামলে।
বাচ্চা মেয়েটির পায়ে মাথা রাখলো পূজারী।

উষ্ণতা : সুজাতা মিশ্র(সুজান মিঠি)





চায়ের ভাঁড়টা গরম ছিল বড়, হাতে নিয়েই ছেড়ে দিলাম ভয়ে,
দুহাত দিয়ে চেপে ধরে আমার উষ্ণতা, বললে, ‘কেমন তুমি মেয়ে?
দেখছ না ধোঁয়া উঠছে পুরো, দিতে হয় না বুঝি সময়?’
ঐটুকুটতেই কপালে তোমার দেখেছিলাম ভয়।

ট্রেনে কী ভীষণ ভিড় সেদিন, ঘামে গরমে প্যাচপ্যাচে পুরো
তারই মধ্যে কনুই এগিয়ে সুযোগ নিতে চাইলে এক বুড়ো।
ভিড় সরিয়ে আমায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলে জোরে,
‘কোথায় গেলেন মিডিয়া, রিপোর্ট ক্যামেরায় নিন ভরে।
বুড়োর শখে সুযোগ মাটি, এই আগলেছি আমার বুকে,
বলুন বলুন শ্লীলতার মাথা কামড়ে খাচ্ছি ভর্তি ট্রেনে সুখে!’

লজ্জায় তোমার নীল শার্টটায় মিশিয়ে নিলাম আমার বোজা চোখ,
সমবেত আওয়াজ শুনি ‘ভালোবাসার জয় হোক, ভালোবাসার জয় হোক।’
সেই বুড়োটা কোথায় গেল, লুকালো নাকি মেলাল সুর
দেখিনি আমি কিচ্ছুটি আর, তোমার ঘামে তখন আমি ভরপুর।
কানের উপর নরম সুরে আলগা আলোয় গেয়েছিলে হাসি
এই সুরে, কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি, ভালোবাসি ভালোবাসি।
প্রথম রান্নার পরে অধীর হয়ে শুনতে চাওয়া, ‘কেমন হয়েছে বলো না?’
চোখে মুখে আরাম এঁকে বলেছিলে, ‘ আমার ভালোবাসার রান্না।’
তোমার পরে খেয়ে আমার ঝালে নুনে অক্কা পাওয়ার দশা,
হাত মুছে আঁচলে আমার বলেছিলে হেসে, ‘এটাই ভালোবাসা’।

যেবার প্রথম এলো কোলে আমার মিষ্টি একরত্তি
তুমি বললে,  ‘আমি খুশি, ভীষণ খুশি ,আমার স্বপ্ন সত্যি।’

আমার দস্যি যখন আমার রান্নাঘরে  হামাগুড়ি
সেদিন আমি প্রথম শুনেছিলাম কেমন তুমি মিছরি ছুরি!
বিদেশ ট্যুরে প্রতিমাসে তোমার আছে এমন মত কত,
তোমার বন্ধু মধুমিতা কাঁদলো এসে খুব, বললো  ‘বৌদি বুকে বড় ক্ষত।’

ওকেও নাকি স্বপ্ন দিয়ে গন্ধ দিতে, নীল শার্টের বোতাম খুলে,
সেই বুড়োটা প্রতিবারেই আসত নাকি ওই ভাবেই কনুই তুলে।
নুনে-ঝালে রান্নাটাও ‘ভালোবাসা’ মধুমিতার বিশ্বাসী চোখ,
জানো তো, সামলাচ্ছি দস্যিটাকে, আর ওই মেয়েটা গাইছে ভারী শোক।

সেই অবধি একটা কথাই ভাবছি আমি, কেবল একটা কথা,
চায়ের ভাঁড়ের উষ্ণতায়, সব মেয়েতেই তুমি সমান কি পাও ব্যাথা??

থেমে আছে : সুজাতা মিশ্র



সেইখানে থেমে আছে , যেইখানে জ্বলেছিল বিদ্যুৎ,
সন্ধ্যেবেলার অবসরে। সেইখানে সেই নিঃশেষ অচ্ছুৎ।
বিছানা হাতড়ানো সেই,  থেমে আছে বালিশের ঘ্রানে।
উপনদী মেশে আশ্বাসে। বর্ষা ভেজে শিউলির স্নানে।

পুড়ে পুড়ে :সুজাতা মিশ্র (সুজান মিঠি)


রোদ্দুরটাও হামাগুড়ি দিতে দিতে পরিণত হয়
ঘরপোড়া ঝড়ে,
ছাইভস্ব হয়েছে যে, সিঁদুরে মেঘ কি তাকে
ভয় দেখাতে পারে!

সুজান মিঠি



মহালয়ার ভোরে
*****************



মহালয়ার ভোরে হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি এলো,
রেডিওতে সবে শুরু হয়েছে বিরেনবাবু আর বাজলো…
জালনার কাঁচে থমকে দাঁড়ালো বৃষ্টি, ফোঁটা ফোঁটা করে,
রোজ চেনা শিউলিসুবাস পেলাম, ও তো জাগেই ভোরে।
উড়ে এসে সুবাসটা বললো, ‘আরে, দেখো, এসেছে বৃষ্টি,
খুশিমত শুনবো আগমনী,  নতুন করে পুরানো সৃষ্টি।

জানলার কাঁচে ফোঁটা গুলো তখন অনেক গেছে বেড়ে,
আনন্দে বৃষ্টি সম্মতি দিচ্ছে যে, যাবেনা বলছে ছেড়ে।
আমি মাথা নেড়ে বলি, বেশ,তবে বাইরে কেন, এস ঘরে
বৃষ্টি বলে, আমি যে মন ভেজাই গো, ঘর তো অনেকপরে
জানালাটা দিলাম খানিক খুলে, শিউলি সুবাস বললে
আচ্ছা, আমাদের সঙ্গে কেমন হয়, কাশের পাড়া গেলে?
চলো চলো, ওকে গিয়ে ডেকে আনি, আজ সবার ছুটি,
খেলবো নাচবো গাইবো  হাসবো একসাথে লুটোপুটি।

খোলা জানলার মধ্যে দিয়ে একরাশ শুভ্রতা নিয়ে এলো কাশ,
এসেই করলে শুরু, এস এস সবাই এস এটা পুজোর মাস।
বললো কি গো, কি সুন্দর মহালয়া, মায়ের হবে আগমন,
আমরা এখন বৃষ্টিমেখে সারাগায়ে হারাতেই পারি মন।
কি বলো, ও ধানের সবুজ, ও মা, দেখি সেও হাজির এসে,
কোত্থেকে এক বাবুই এলো হঠাৎ আকাশ ভেসে।
বললো, মুক্তি নেবে, মুক্তি? এক আকাশে খেলতে হবে,
দুই আকাশ যদি চাও… কি জানি, আসব আবার কবে।
বেশ, লিখে নিলাম ঠোঁটে, পরেরবার ঠিক আনব দেখো,
আমার জন্য আজের দিনে জানলা কিন্তু খোলা রেখো।

তিনটে শালিখ হাসছিল মিটিমিটি, শিউলি বললে এই,
হাসছো যে ভারী, ঝগড়া করার সময়, কাজে মন নেই!
হকচকিয়ে পরে কিচিমিচি ঝগড়া করলে শুরু খুব,
বলি আমি ওরে থাম থাম, ওই দেখ চড়াই দিচ্ছে ডুব।
উঠোনজুড়ে জমেছে বৃষ্টি, ফেলে ছড়িয়ে মাখছে চড়াই
মাধবী এসে বলে, জলকেলিতে আমায় নে’না ভাই।

রেডিওর পাশে জ্বালা ধুপ মা বলে গেলেন খবরদার,
নিভিয়ে যদি দিবি, মহালয়ায় তবে খাবি কিন্তু মার।
ততক্ষনে পাশে রাখা টগরগুলো হামাগুড়ি দিয়ে,
কানে কানে চুপিচুপি বললে, দেখো এসেছি কি নিয়ে,
হাতমুঠোতে দেখি চেয়ে  ঘুমিয়ে ছোট্ট কুঁড়িখানি ,
মায়ের স্নেহ চোখের উপর আড়াল করে আনি।
খেলতে চায় সেও সাথে, আদর করে বুকখানিতে,
রাখি তাকে। রেডিও তখন বীরেনবাবুর মিতে।
গমগম করছে ঘর দুয়ার উঠোন, আর আমরা,
মহালয়ার ভোরে আগমনী খেলায় সবুজ বৃষ্টি পাড়া।

ধীরে ধীরে শেষ হলো পুন্য নতুন ভোর, খুশির ক্ষণ,
হারিয়েছিল তখনো যেন সুরে-খেলায় বৃষ্টি মাখা মন।
হঠাৎ শুনি চমকে উঠে আধো গলায় আবার আগমনী,
বাজলো তোমার আলোর বেনু, গাইছে ছোট্ট ননী।

সুজান মিঠি



প্রতিবাদ
********




শোন্-রে হলো বুক শুলো হয়েছে অনেক, নয় আর,
বাসী পোড়াতে তেজি এখন খাবি উল্টো মার।
কি বললি, পাতবো হাত তোর সামনে? গেছে দিন তোর।
শোন্-রে হলো বুক শুলো মুখ লুকানো চোর।
লুকিয়ে খাবি, সামনে চা'বি চলবে না এসব ছুতো,
অনেক আগে বিড়ালি তোর ভয়ের চোটে শুতো ।
আজ বিড়ালি মানুষ ওরে চরবড়িয়ে ফোটে,
হির হিড়িয়ে তুলবো চল নারী আইন কোর্টে।
ঘরের কোণে মরদ-রে তুই সাপের তেল খুঁজিস,
এসব ছেড়ে কত মুরোদ দ্যাখা দেখি, ইইস।
লেকচার-টা মারবি পরে আগে ঠান্ডা কর,
ভারী বুঝি জোয়ান মরদ হয়েছিস যে বর।
ওসব নাটক চলবে না আর মুখ চেপে মার দিবি ,
হাত-টা লাগা দেখি সাহস এক ছোবলেই ছবি।
শোন্-রে হুলো বুক শুলো করগে রান্না আজ,
শরীর-টা নেই ভালো করে গুচ্ছেন কাজ।
সারাদিনের ছুটি আজ ঘুমাবো একটা দিন,।
কি-রে হুলো যা শিগগির, করছিস্ মিনমিন!
বড্ড জ্বালাস নরম পেয়ে এবার উল্টো হবে,
মার কখন দিয়েছিলিস কখন কখন কবে,
ভাব ভাব বসে এবার মিথ্যে নাটক ছেড়ে,
বা-রে হুলো রান্না খানা করেছিস তো বেড়ে।
করবি এমন মাঝেমাঝে আমিও বসে খাবো,
আজ বিকালে ভাবছি একবার পার্ক বেড়াতে যাবো।
নিয়ে যাবি সঙ্গে করে কিনে দিবি চাইবো যা,
দেখবি আমায় লাগে কেমন গয়না ভরা গা।
না না পা আর টিপতে হয়না রাখ,
ভয় পেয়েছিস বুঝছি ভালোই তবু এসব থাক।
তবে কান খোল্ শোন রে হুলোর জাত,
ভাববি মানুষ আছে ঘরে যতই রাঁধুক ভাত।
তোর ছেলেটা ধরেছে পেটে তুইও ছিলিস গর্ভে কারো,
পুরুষ বলে হম্বিতম্বি এগুলো এবার ছাড়ো।
নারীদিবস চাইনা ওসব বাসবি ভালো রোজ,।
কানটা খুলে এসব কথা ভালো করে বোঝ।
একটা বোতল কিংবা বিড়ি ঘরে যদি পাই,
সব পুড়িয়ে দেখবি তখন থাকবে পড়ে ছাই।
ভাববি মানুষ বউ-টা তোর, তোর ঘরেতেই থাকে,
সব ছেড়ে তোর্ জন্য সবকিছু তোর্ রাখে।
বুঝিস্ যদি ভালো কথা আদর পেতেও পারিস্,
তা নইলে ধরবো টুঁটি দেখবি কেমন মরিস্!