নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিশ্বজিৎ প্রামাণিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বিশ্বজিৎ প্রামাণিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অটোওয়ালা : রাণা চ্যাটার্জী





অটোওয়ালার হাতে সত্তর টাকাটা এমন ভাবে গুঁজে দৌড় দিলেন পালবাবু  যেনো আর বেশি চাইতে পারার অবকাশ না পায় চালক ! অবশ্য অন্য কারণটাই প্রধান,ওই যে স্টেট বাসটা ছেড়ে যাচ্ছে সেটাকে  কোনরকমে ধরতেই হবে আজ । 

প্যাচ প্যাচে কাদায়,ভিড় ভাট্টার মধ্য দিয়ে ততক্ষণে এই একমাত্র অবলম্বন বাসটি গড়াতে গড়াতে গতি নিচ্ছে । 'আরে দাঁড়াও দাঁড়াও করতে করতে অফিস ব্যাগ ,বগলে ছাতা নিয়ে ড্রাইভারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন কি তখনও রাস্তা ক্রশ করে উঠতে পারেন নি বাইক ,অটো ওলাদের লাগাতার  লাইনে। ভিড় যতো বাড়ছে , বাসটা না পাবার গ্লানি ভ্রু কুঞ্চনে ততো  ধীর্ঘ হচ্ছে  ইরিগেসন দপ্তরের পাল দার ! আর থামে প্যাসেঞ্জারে  উপচে পড়া বাস ! ভুঁড়ি মোটা ট্রাফিক পুলিশ , দুবার লাঠির বাড়ি মারতেই চাকা গতি বাড়িয়ে এলাকা ছাড়ার প্রস্তুতি । তবুও ছুটেই চলেছেন যদি সামনের মোড়ের যানজটে, আর একটু দাঁড়ায় বাসটা ! 

"আরে ও দাদা, ও দাদা দাঁড়ান দাঁড়ান ছুটবেন না "আশ্চর্য্য তো ,  সেই ছেড়ে আসা অটোওয়ালাটার গলা না ! " আচ্ছা বজ্জাত তো ,উঠে থেকে আশি টাকা নেবার কথা বলে আসছিল" কিন্তু সত্তরের বেশি এক পয়সা দেবো না জিদ করে ছিলো পাল দা , নেমে দিয়েওছে সেটা,তবুও কিনা পিছু ধাওয়া ! ছুটতে ছুটতে এই কথা গুলো ভাবছিলো আর নাহ্,  পারছি না ,ছেচল্লিশ টা বসন্ত পার করা পালদার বুকের ভেতর টা ধরাস ধরাস করছে ,এই বুঝি হৃৎপিণ্ড ছিটকে বেরিয়ে আসবে ! বাসের আশা ছেড়ে চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে পড়তেই সেই অটো ওয়ালার সক্কাল সক্কাল এক মুখ পান বজবজে গলা ! 

"আরে কি হয়েছে কি তোর ! তোকে তো ভাড়া মিটিয়েই এলাম "একটু ক্ষেকিয়েই কথা গুলো বলে ফেললো  পালদা  ! সকাল থেকেই তার মেজাজটা খিচড়ে দিয়েছে অফিসের বড়ো বাবুর একটা ফোন "হটাত নাকি ইন্সপেকসন আসছে , দশটার আগে অফিস আসতেই হবে !" অন্যদিন খেয়েদেয়ে , সাড়ে নটায় বেরিয়ে, পরের বাস ধরে পৌনে এগারোটায় পৌছানো অভ্যাস , তাই আজ এই ৮-৫০ এর স্টেটটা ধরার এত্তো তাড়া ছিলো , ! 

"আরে দাদা তুমি খামোখাই রাগ করছো আমার ওপর" হাতে খৈনি ডলতে ডলতে উজ্জ্বল মায়াবী চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বললো অটোওয়ালা ছেলেটা । কিংকর্তব্যবিমূঢ় পাল ঘাড় উঁচু করে ওর দিকে তাকাতেই সে বললো , 'দাদা বসো , আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি তোমায় , আরে চিন্তা করো না দাদা বসো ,কোথায় তোমার অফিস শুধু সেটা বলো "
অলরেডি সকালে চৌদ্দটাকার  পরিবর্তে সত্তর খসেছে , আবার অটোতে মিনিট চল্লিশের পথ মানে মিনিমাম দুশো ! এই চিন্তায় বিভোর হওয়ার আগেই অফিস ব্যাগটা ধরে , "আরে এসো তো , সে আমায় না হয় কিছু দিতে হবে না "বলে অটোতে বসিয়ে স্টার্ট দিলো ! 

চিরটা কাল এই সংখ্যাতত্বের আঁকিবুঁকি হিসাবে সংসার চালানোর মতো কঠিন কাজে  জর্জরিত, পা টিপে চলা  মধ্যবিত্ত এই ছাপোষা মানুষ পালদা।  আর না করেন নি মুখে , করার উপায় ও খুব একটা ছিলো না । এটাই তাকে স্বস্তি দিয়েছে যে বেশি টাকা লাগলেও , দশটার আগে অফিস পৌঁছে গেলে অন্তত তার ইমেজটা ঠিক থাকবে অথরিটির কাছে । এই ভাবতে ভাবতেই ক্যাঁচ করে আমতলা মোড়ে আটকে গেলো অটোটা , সামনে তীব্র জটলা , ভিড়ে থিকথিক করছে ! অটোওয়ালা ছেলেটি ,  নেমে পরিস্থতি বুঝে এসে জানালো, কেলো হয়েছে , একটু আগে স্টেটবাস টা এক পথচারি কে ধাক্কা মেরেছে , স্থানীয়রা পথ অবরোধে সামিল ! 
হে ভগবান , কি যে আছে কপালে একথা ভাবতেই অটোওয়ালার নিশ্চিন্ত অভয়বাণী "দাদা সবে নয়টা বেজে সতের মিনিট ঘড়িতে , আমি ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি  আপনাকে , বিন্দাস বসুন চিন্তামুক্ত হয়ে ! "

"আচ্ছা কপালের গেরো লেগেছে তো আজ !তবে তো ওই স্টেট বাসটা না পেয়ে ভালোই হয়েছে ! অফিস পৌঁছানোর বারোটা 
বেজে যেত ,"এসব সাত পাঁচ ভাবনা ভাবতে ভাবতে গলি ,গলি তস্য গলি দিয়ে এগুতে লাগলো অটো।
কাউকে পেমেন্ট দিতে হলে ,সে বাস,ট্রেন অটো যাকেই হোক না কেনো ,অনেক আগে থেকে কিছুটা টাকা বের করে জামার পকেটে রেখে দেবার বহু পুরনো অভ্যাস পাল দার ।কিন্তু একি কাণ্ড ! প্যান্টের পকেটে  মানি ব্যাগ হাতড়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ !কেবল রুমাল টা !তবে কি আনেন নি !উঁহু তা হয় কি করে ,সকালে নিজে ওখান থেকে সত্তর টাকাটা নিয়ে  মিটিয়েছেন ! তবে কি রাস্তায় পরে গেলো ! চুরি নয় তো ,আরে কি সর্বনাশ আজ ছাব্বিশ তারিখ,এল আই সি প্রিমিয়াম ৫৪৩৫ টাকা গুনে কালরাতে গুনে  মানিব্যাগে রেখেছেন ! এই সব স্বগতোক্তির মতো বিড় বিড় করছেন আর কল কল করে ঘামছেন পাল দা !

ইশ এই অটোওলাকেই কি বলবে !এত্তো হয়রানি করে বেচারা নিয়ে আসছে ।লজ্জায় ,সংকোচে কাঁচুমাচু মুখ করে থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ ভেতরে !

"আরে ও দাদা ,ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি ! আরে দেখুন এসে গেছি আপনার অফিস "বলে হাত ঘড়িটা পেছন করে দেখালো নয়টা বেজে আটচল্লিশ ! ছেলেটির স্বগর্ব ঘোষণায় আরো যেন থমকে গেলো পালদা ,ওকে কি যে উত্তর দেবে ! নিচে আড়ষ্ট ভাবে নেমে আমতা আমতা করে দু হাত জড়ো আর  মাথা নিচু করে পালদা বলছেন ,'ভাই আমার খুব বিপদ হয়ে গেছে ,মানি ব্যাগটা খোয়া গেছে " যেই এটা বলা শেষ হয়েছে "আরে মশাই একি করছেন দাঁড়ান দাঁড়ান ,এই নিন আপনার মানি ব্যাগ !আপনি সকালে নেমে যেতেই দেখি পেছনের সিটে ফেলে গেছেন ,আর সেই জন্যই আপনাকে পিছু পিছু "ও দাদা ,ও দাদা করে হেঁকে অস্থির হয়েছিলাম ।"এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো অটোওলা ! 

ব্যাগ টা হাতে নিয়ে পাল দা তখনও কল কল করে ঘামছেন ,যেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন !কেয়ারটেকার চাবির গোছা নিয়ে অফিসের মেন গেট খুলছে ,আর সামনে যেন সাক্ষাত ভগবান রূপে অটোওলা । একটা ৫০০ টাকা জোর করে হাতে গুঁজে দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন নাছোড়বান্দা অটোওয়ালার কাছে ,কিছুতেই সে বেশি নেবেনা ।ছেলেটি দেড়শো নিয়ে বাকিটা ফেরত দিতে বাধা পেয়ে ,অবশেষে পাল দার পকেটে জোর করে ভরে দিলো বাকি টাকাটা ।অটো টা স্টার্ট দিতে দিতে বললো ,দাদা একটু সাবধানে হাঁটা চলা করবেন ,আর পারলে টিভি বাবু দের কাছে আমাদের ভালো দিকটাও অল্পবিস্তর বলবেন গো "

অফিসে নিজের টেবিলে পৌঁছে এক বুক শ্বাস নিলেন পাল দা ,হাত ঘড়িতে তখন নটা বেজে সাতান্ন মিনিট । রাত্রে গদ গদ হয়ে বড়ো বাবু মিত্র ফোনে খুশির খবর দিলো ,"ভায়া পার্টি দিচ্ছ কবে ,কতৃপক্ষ তো তোমার প্রমোশন দিচ্ছে শিগগিরি !"

বিশ্বজিৎ প্রামাণিক





খুব সকালেই যদি
****************


খুব সকালেই যদি জানতে পারি--
আমি আজ বেঁচে নেই!
নাকে তুলো গুঁজিয়ে দেব!
শুঁকব না আর কারও ঘ্রাণ।
কানে তুলসি ঠেসে দেব!
শুনব না একটুও অভিমান।
চোখের পাতা নামিয়ে দেব!
আচ্ছন্ন করে দেব সমস্ত বন্ধন।
জিভের আগা বাঁকিয়ে নেব!
স্বাদকোষেদের দেব ভীষণ নিদ্রায় চির শয়ন।
হৃদয় থামিয়ে দেব!
রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেব।
মগজে ঘসে দেব চির পাষাণ।
তবুও মৃত্যুর পর চিৎকার করে সেদিনও বলতে চাইব--
যেভাবে আমি ভাবছি,
তুমিও কি এখনও আমায়
ভালোবসছো এতক্ষণ?
নাকি ভুলে গেছো প্রিয়!
আমাদের যা ছিল আগের সবটাই সন্ধিক্ষণ!

তবুও একবার যদি ফিরে যেতে পারি--
বারো বছর পর হঠাৎ তোমার সামনেই!
তোমার জন্যে রক্ত গোলাপ নেব!
শুঁকতে দেব না কাউকেই একটুও ঘ্রাণ।
কানে তোমার পুরোনো ছন্দ ধরব!
আগের মতোই ভোলাব সব অভিমান।
চোখে ভীষণ প্রেম রাখব!
তোমার জন্য রাখব অসংখ্য মধুর বন্ধন।
জিভের আগা ভিজিয়ে নেব!
জড়তাগুলোকে দেব ভীষণ নিদ্রায় চির শয়ন।
হৃদয় গুছিয়ে নেব!
রক্ত ছড়িয়ে দেব!
মগজে ভাসিয়ে দেব প্রেমের ভাসান!
তবুও আসার পর চিৎকার করে সেদিনও বলতে চাইব--
যেভাবে এত বছর ধরে চাইছি,
তুমিও কি চেয়ে গেছো আমায় তেষ্টায় এতক্ষণ?
নাকি ভুলে গেছো প্রিয়!
আমাদের যা ছিল অতীতের সব সন্ধিক্ষণ!