নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রবি মল্লিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রবি মল্লিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

।।ফাঁকা হাড়ীর ধর্ম ।।রবি মল্লিক





রাস্তা মেপে এগিয়ে যায় চেনা রোদ্দুর,
জগা অবাক চোখে প্রত্যক্ষ করে বর্তমান,
ইতিহাস মাথা চারা দেয় বারংবার ,
রাতারাতি  বদলে যায় পোষাকের রং,
শরীর আর চরিত্র সর্বদা ধ্রুবক ,
খাঁচায় বন্দী পাখিরা সুর বদলে গান ধরে ,
নতুনের আদেশে কেদারায় বসে নখহীন বাঘ,
চাওয়া পাওয়া উপেক্ষিত থেকে যায়,
পেট কেটে গড়ে ওঠে মূর্তি ও দেবালয়,
যোগ্যতা ঝলসায় গরম তেলের কড়াইয়ে,
খালি পেট বলে যায় ব্যর্থতার সংলাপ,
ধর্ম আজও শেখেনি ফাঁকা হাড়ী ভরতে৷ 

বৃস্টির বিকেল : রবি মল্লিক



প্রকৃতি আজি সেজেছে আবার
নববর্ষার সাজে,
স্নিদ্ধ শান্ত বারিধারায়
মনেতে মৃদঙ্গ বাজে৷

তাল সুপারি গাছের সারি
নৃত্য করেই চলে,
দীঘির জলের সমুখ পানে
ঢলা ঢলি খেলে৷

শান্ত বাগান উঠেছে মেতে
নিত্যনতুন তানে,
মনটা আমার উথালপাতাল
বর্ষামঙ্গল গানে৷

ঈশানকোণে মেঘের ফাঁকে
সূর্য্য মারেন উঁকি,
বৃষ্টি শেষে আবার নতুন
দিবার আলো দেখি৷

সভ্যতা: রবি মল্লিক





ভোর রাতের গাঢ় অন্ধকারের বুকে
বিক্ষিপ্ত তারাদের দীপ্ত প্রকাশ...

দিগন্তের সাঁকো বেয়ে হেঁটে আসা আভা
অন্ত ঘটায় স্বপ্নের-

ঘুমন্ত দানব জেগে ওঠে-
সড়কে, বাজারে , কারখানায়,
কামারশালায় চলে সভ্যতার সৃজন,
গাছের মৃতদেহের শ্রাদ্ধ হয় কংক্রিটে-
তুমি জাপটে ধরো মুঠোফোন,
কৃষ্ণচূড়া মাটিতে লুটায়-

প্রেমিকা : রবি মল্লিক




আষাঢ়ের তপ্ত দুপুর পেরিয়ে যখন বিকেলে
কৃষ্ণ কালো মেঘ জমাট বাঁধে গগন আঙিনায়;
বলাকা সারির ছুঁয়াছুঁয়ি খেলা,
দিঘির জলে হাঁসেদের মেলা,
আর স্নিগ্ধ শীতল উত্তাল বাতাস তোমার
আগমনের বার্তা দিয়ে যায় আমার জানালায়;
এই নিয়ে আমাদের সম্পর্কের মেয়াদ বছর পঁচিশ,
তবু আবিস্কার করেছি তোমায় সহস্র ভিন্ন রূপে!
খুঁজেছি তোমায় নতুন করে চেনার পথের হদিশ,
পেতেছি প্রেমের বাসা আমার হৃদয় দ্বীপে৷
                                                   
তোমার মেঘের কাজল পরা চোখের অপলক দৃষ্টি,
পাগলা হওয়ায় গাছগুলিতে উড়ন্ত কেশের বাহার,
বিদ্যুতে বুনট করা আঁচল,
মায়াবী চোখের চাউনি সজল
আর মেঘের ভেলায় চড়ে তোমার ভেসে যাওয়া,
মনে করিয়ে দেয় আমাদের প্রথম আলাপের উপহার;
আজও তুমি নবরূপে চিনিয়েছ নিজেকে আমার কাছে,
আঁচলে বিদ্যুতের সংখ্যাও বেড়েছে অনেকটাই!
রূপের নকশা এঁকেছি মন দিয়ে; ভুল হয়ে যায় পাছে
ক্যানভাসে পার্থক্য স্পট, ভিন্ন প্রায় সবকটাই৷

অরাজকতা: রবি মল্লিক





দেশ আমাদের এগিয়ে চলেছে,
                 উন্নয়ন হচ্ছে খুব,
  উন্নয়নের জোয়ারে তাই
                সকলেই দিয়েছে ডুব;
রাজ্য আমার দালালদের হাতে
              ঘুষখোরদের বাসা,
লন্ডন আজ রিক্সা নগরী
               চপ শিল্পীতে ঠাসা;
দেশ-প্রেম বাড়াতে নাকি
          সেনায় যোগদান চাই,
শারীরিক দুর্বল দের কী তবে
               দেশ ভক্তি নাই!
রাজ্যজুড়ে সুচিকিৎসার
           উল্লাস যখন বাড়ে,
গরিব রোগীরা ডাক্তারের অপেক্ষায়
            বিনা চিকিৎসায় মরে;
কোটি কোটি নয় ছয় করে
          কেউ দেশ ছেড়ে পালায়,
গরীবের টাকা কেটে নেওয়া হয়
           তিন হাজার নেই খাতায়৷

রবি মল্লিক




শেষ যাত্রা 
********




আমি সৌরভ; সৌরভ বিশ্বাস৷ বাবার নাম গোপাল কৃষ্ণ বিশ্বাস৷
স্থানীয় দেবীনগর এলাকায় বসত বাড়ি৷ বাড়িতে মা, দাদা , বৌদি, আর দেড় বছর এর এক ভাস্তি আছে৷ গত ফেব্রুয়ারিতে চব্বিশ বছর পূরণ হয়েছিল আমার৷ কম্পিউটার ডিপ্লোমা এবং বি.সি.এ শেষ করার পর গোয়ালপোখর ব্লক অফিসে টেক্নিক্যাল অপারেটর পদে কাজ করছিলাম গত সাত মাস থেকে৷ চাকরি পাওয়ার খবরটি যখন পেয়েছিলাম তখন সর্বপ্রথম বহু প্রতীক্ষিত স্পোর্টিং বাইকটি কিনেছিলাম৷ পূজো দিয়ে প্রথম বাইকটি দেখাতে নিয়ে যাই আমার মাস্তুতো দাদা ছোটকা'র কাছে৷ সেদিন আমার মা শাঁখ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে বাইকটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন৷
    
                       আরও একজন ছিলো আমার জীবনে যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ পারমিতা, আমার স্কুল জীবনের সাথী৷ দীর্ঘ বারো বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের৷ ওর বাবা কোনোদিনই মেনে নেয়নি আমাদের সম্পর্ককে; কিন্তু আমরা কোনমতেই আলাদা হতে রাজি ছিলাম না৷ তাই চাকরি পাওয়ার পর বাবাকে পাঠিয়েছিলাম ওদের বাড়ি পাকা কথা সেরে আসতে;এবার আর না করতে পারেনি পারমিতার বাবা৷ খুব ভালোভাবে চলছিল জীবনপ্রবাহ৷

                          এই সাত মাসের কর্মজীবনে একটিও সি.এলনেই নি, কেননা আমার অফিস কামাই দেওয়া একেবারেই পছন্দ ছিল না৷ প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনে চেপে যেতাম অফিসে, কারন রাস্তাও তো কম ছিল না৷ কোন কোন দিন খুব দেরি হয়ে গেলে বাইক নিয়েই বেড়িয়ে পরতাম৷ যদিও মায়ের সবচেয়ে বেশী আপত্তি ছিল তাতে; কারন, ওই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যেত৷
                         আজ সকালে মায়ের হাত থেকে ঘি ভাত খেয়ে সেই বাইক নিয়েই বেড়িয়েছিলাম,কেননা দেরি হয়েছিল সকালে ঘুম থেকে উঠতে৷ মা অনেক বারণ করেছিল আজও, তবু অন্যান্য দিনগুলির মতো বলেছিলাম কিচ্ছু হবে না মা তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো৷ পিঠে ব্যাগ, চোখে সানগ্লাস, কানে হেডফোন গুঁজে দিব্যি বেড়িয়েছিলাম৷ ও হ্যাঁ হেলমেটও ছিল সাথে, কিন্ত মাথায় নয় রেখেছিলাম বামহাতে৷ শিলিগুড়ি মোড় পেরিয়েই উঠেছিলাম ৩৪ নং জাতীয় সড়কে৷ বাস, ট্রাকের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম৷ তখনও ভাবতে পারিনি যে আর কিছু এগিয়ে কি আপেক্ষা করে ছিল আমার জন্যে৷ গতি না কমিয়েই এগোচ্ছিলাম,দেরি হয়ে গিয়েছিল যে৷ পানিশালার কাছে যে হিমঘরটি আছে সেখানে পৌঁছাতেই সামনের চলতে থাকা ষোনচাকা মালবাহী ট্রাকটিকে অতিক্রম করতেই বাইকের সামনের চাকাটি গিয়ে পড়ল রাস্তার মাঝবরাবর একটি গর্তে৷ আমি আর সামলাতে পারিনি৷ পড়ে গিয়েছিলাম রাস্তায়, এরপর আর কিছু মনে নেই৷
                              যখন  চোখ খুললাম তখন আমি রায়গঞ্জ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি৷ আমার চতুর্দিকে বহু মানুষের ভীড়৷ সবাই ভীড় কাটিয়ে আমাকে একবার দেখে নিতে চাইছে৷ আর কিছু মানুষ আমার পাশে বসে অনবরত কেঁদেই চলেছে৷ বুঝতে আর বাকি থাকল না যে আমার সাধের পার্থিব শরীরে আর প্রান নেই৷ হয়তো আর কিছু সময় পরে আমার এই শরীর চিতায় শায়িত থাকবে অগ্নিসংযোগের অপেক্ষায়, অর্থাৎ পুরে ছাই হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়৷  মনে পরতে লাগল মায়ের কথা৷ মাকে সকালে বলে এসেছিলাম আজ বিকালে কাঁঠাল চিংড়ি ভাত খাব; মা কী রান্না বসাতে পেরেছিল? মা যখন জানতে পারবে যে আমি আর নেই, তখন মা কী তা সহ্য করতে পারবে? বাবার সাথে গত পরশুই কথা হল আমার নতুন বাড়ির প্ল্যান নিয়ে; বাবা কী ইঞ্জিনিয়ার কাকুর সাথে কথা বলেছিল? পারমিতা কী খবর পেয়েছে? খবর পাওয়ার পর ও কী তা মেনে নিতে পারবে? মাঠে আজ বিকালে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার কথা ছিল, তাও আর সম্ভব হল না, অফিসে কত কাজ পরে আছে আমার অপেক্ষায়৷ এসকল কথা ভাবতে ভাবতেই ওরা মাচায় করে আমার  নিষ্প্রাণ দেহটিকে নিয়ে শ্মশানে এসে পৌঁছেছে৷  আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা সবাই এসেছে দেখছি৷ যাদের নিয়ে বরযাত্রী যাব ভেবেছিলাম তাঁরাই আজ আমার শ্মশানযাত্রী৷ ওই ভীড়ে একজন মানুষ ছিলেন যাঁকে এই রূপে আমি কোনদিন দেখিনি৷ যাঁর দাপটে আমাদের পাতিমিলের কেউ কখনও উচ্চ স্বরে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পেত না, তিনি আজ অসহায়ের মতো পড়ে রয়েছেন শ্মশানের বটগাছটির তলায়৷ হ্যাঁ উনি আমার বাবা৷ সকলের মুখগুলি ফ্যাকাসে ধরনের বিবর্ণ হয়ে ছিল৷ না, তবে মা এবং পারমিতার সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি; হয়তো ওদের যে অবস্থায় রেখে এই অকালে চলে যেতে হচ্ছে তা আমি দেখতে পারব না৷
                          এসবের মাঝে এক ঐশ্বরিক আলো চোখে এসে পড়ল কুলিক নদীর কিনারা থেকে৷ সেই আলোয় চোখ পরতেই দেখলাম একটি সোনালী আভাযুক্ত রথ দাঁড়িয়ে আছে৷ সেই রথ থেকে দু জন ডানাওলা দেবদূত আমার দিকেই এগিয়ে আসলেন৷ আমাকেও নাকি যেতে হবে উনাদের সাথে৷ গিয়ে উঠলাম সেই ঐশ্বরিক রথে৷ ততক্ষণে আমার পার্থিব শরীরকেও তুলে দেওয়া হয়েছে চিতায়; আমার দাদা হাতে আগুন নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ অজস্র অসম্পূর্ণ কাজ ফেলে চোখে জল নিয়েই চললাম মরণোত্তর শেষ যাত্রার উদ্দেশ্যে আরও ফেলে রেখে গেলাম পিছনে কিছু সম্পর্ক , একরাশ মায়া আর কিছু আফসোস৷

রবি মল্লিক





সৈনিক
*******



ইতিহাসের পাতা রক্তে রাঙ্গা
বিবিধ যুদ্ধে ভরা,
যাঁদের নাম লেখা রয়েছে
শুধুই কি ছিল তাঁরা?
শক, হুন, মুঘল, পাঠান
এলো আর কতো গেলো,
তাঁদের ধ্বজা তুলতে গিয়ে
নিভল সহস্র আলো৷
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সবই
সৈন্যের লাশের স্তূপ,
রক্তপিপাসু যুদ্ধক্ষেত্র
করবে যে কবে চুপ?
পাতা উল্টে শুধু যুদ্ধের
নায়কদের কথাই পাই,
রাজতন্ত্রের মূল কান্ডারি
সৈন্যরা কোথাও নাই!
সৈন্যরা সব রক্ত দিয়ে
রক্ষা করে সীমানা,
তাঁদের দুঃখ তাঁদের কষ্ট
আছে কী কারো জানা?
দেশের কাছে দশের কাছে
এটাই বলে যাই,
সন্মানের সাথে সৈন্যরা যেন
হৃদয়ে পায় ঠাঁই৷

রবি মল্লিক




বিপথগামী
**********




আর কতটা রক্ত ঝড়িয়ে
                  তোমরা শান্ত হবে?
আর কতগুলো লাশ দেখলে
                তোমাদের ঘোর কাটবে?
মৃত্যু মিছিল এর প্রচার
                করে চলেছ সগৌরবে,
রক্ষকই নিয়েছে আজ
                ভক্ষকের দায়িত্ব;
"জোর যার মুলুক তার"
                মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে,
রাখতে চাইছো অক্ষুণ্ন
                  ধ্বজার স্থায়িত্ব;
অনিবার্য প্রলয়
              ডেকে আনবেই ধরাধমে,
মায়ের শূন্য কোলের
              হাহকার কাতর বাণী,
বর্তমান আর ভবিষ্যত্‌
             প্রজন্মকে ধ্বংস করে,
কাদের ওপর শাসন চালাবে
             "রাজা আর রাণী"!