নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

পুলক মন্ডল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পুলক মন্ডল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

পুলক মন্ডল





ইচ্ছা-পানসি 
***********



আমার সকল ইচ্ছা পানসি নাও'য়ে 
পাড়ি দেয় ইচ্ছামতীর জলে 
আমি পাড়ে বসে গুনি 
 কুয়াশার ঢেউ ; অঘ্রানের হিমেল হাওয়া 
বলে যায়, ইচ্ছামতী শীতকাতুরে হয়েছে 
 কুয়াশার চাদর জড়িয়ে পানসি  
এখন কোথায়, কে জানে 
 আচ্ছা, আমার ইচ্ছাগুলো কি 
শীতজলে পা ডুবিয়ে বসে আছে ! 
 লজ্জাবতী চাঁদের বুঝি আজ 
জলের সাথে আড়ি ! 
আমি যে ভাব খুঁজি বাউলে 
আমার ইচ্ছে একতারাটা যে ঐ পানসিতে 
 ও চাঁদ দোহাই তোমায়, জোছ্না মেলো 
 আমার ইচ্ছা-পানসীকে খুঁজে দাও ; 
আমি যে ভাব খুঁজি বাউলে 
আমার ইচ্ছে একতারাটা যে ঐ পানসিতে 
দোহাই চাঁদ, একবার জোছ্না মেলো-

পুলক মন্ডল





বৃষ্টিধারা 
********


            
ছেলে বিশুকে নিয়ে দু'জনের সংসার তার।আর একটা বিয়ে করে পুরুষটা চলে গেছে অন‍্য কোথাও। অবশ‍্য তা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই রেখার।কেননা মানুষটার অত‍্যাচারী চেহারা এত দেখেছে দিনের পর দিন যে সে না থাকায় বরংস্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। ক্লাস টু-এর ছাত্র সাত বছরের বিশুও যেন হঠাৎ করে অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেছে ! তাই কোনদিন-ই কোন কিছুর জন‍্য বায়না করে না সে। অথচ ওর বন্ধুদের কত ঝকমারি জামাকাপড়, কতজনের টিফিনবাক্সে কত রকমের খাবার ভরা থাকে তা বিশু কোনদিন না বললেও কলতলায় জল আনতে গিয়ে এসব গল্প অনেক শুনেছে রেখা। তাই কাল রাতে যখন রোজকার মতো ছেলের মাথায় আলগোছে হাত বুলিয়ে তাকে ঘুম পাড়াচ্ছিল তখন বিশু আচমকা একটা চাবি ঘোরানো মোটরগাড়ী চেয়ে বসায় সে একটু অবাক হয়েছিল। কথায় কথায় জানতে পারলো মাছের আড়ৎদার চিত্ত-র ছেলে গাড়ীটা নিয়ে স্কুলে খেলছিল কিন্তু বিশুকে একবারও হাত দিতে দেয়নি, উল্টে বলেছিল এসব দেখেছিস্ কোনদিন ! জানিস্ পাঁচশ টাকা দাম !
                      ঘুমিয়ে পড়েছে বিশু। ঘুম নেই রেখার চোখে। সারাদিন রাখী তৈরী করে আর কটা পয়সা মেলে ! পাড়ার মুদী দোকানে ধার, সবজীওয়ালার কাছে ধার।   পাঁচশ টাকা ! কিভাবে আসবে ভাবতে ভাবতে কখন যেন ক্লান্তি আর অবসাদে রেখার দু'চোখের পাতা নেমে আসে।
                রাখী কারবারি জগার চোখদুটোতে সবসময় এক ধূর্ত চাহনি এদিক ওদিক করে। মানুষের দূর্বলতা মাপতে জগার খুব বেশী দেরী হয়না। তাই রেখা যখন ছেলের জন‍্য খেলনা কিনবে   
বলে পাঁচশ টাকা আগাম চাইল তখন তার অসহায় অবস্থা একনজরে বুঝে জগা বলে উঠল, চাবি দেওয়া মোটরগাড়ী তো শহরে পাওয়া যায়, তুই এক কাজ কর, সন্ধ‍্যেবেলা কারখানায় আয়, আমি আনিয়ে রেখে দেব। রেখা ইতস্ততঃ করছে দেখে সে বলে উঠল, তোর মজুরী থেকে একটু একটু করে কেটে নেব, চিন্তা করিস না।
                 আধখোলা দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই একা জগা'কে বসে থাকতে দেখে বুকটা ছ‍্যাৎ করে ওঠে রেখার। দেতোঁ হাসিতে জগা বলে ওঠে, ওই দ‍্যাখ তোর ছেলের মোটরগাড়ী। অফিসের টেবিলের ওপর চাবি ঝোলানো খেলনাটা দেখে রেখার চোখমুখ এক অনাবিল খুশীতে ভরে যায়।ঠিক তখনি চেয়ার থেকে উঠে ঘরের এককোনে থাকা তক্তপোষে বসে জগা বলে , ছেলের খেলনা তুই এমনিই পাবি, যা দরজাটা ভেজিয়ে দে। কয়েক পা পিছিয়ে এসেও তার চোখ পড়ে যায় চাবি ঝোলানো মোটরগাড়ীটার দিকে। ঐ চাবিটা ঘুরিয়ে দিলেই গাড়ীটা চলবে !
                    যেন একটা উত্তপ্ত লৌহশলাকা তীক্ষ্ণবেগে তার ভূমি ক্ষতবিক্ষত করে প্রবেশ করে। আচমকা যন্ত্রনায় চোখ বন্ধ করে রেখা। তার বন্ধ চোখের সামনে ভাসতে থাকে একটা কচি হাত। সেই হাতটা চাবিটা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। গাড়ীটা চলতে শুরু করেছে। গাড়ীটার পেছন পেছন হাসতে হাসতে ছোট ছোট পায়ে ছুটছে তার বিশু। রেখার বন্ধ দু'চোখের কোল বেয়ে হৃদয় নিংড়ানো জল ধীরে ধীরে নামতে থাকে ক্রমশঃ নীচের দিকে, বৃষ্টিধারার মতো ধুয়ে দিতে থাকে তার ক্ষতবিক্ষত ভূমির যত যন্ত্রনা আর অপমান.....