নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

শাহীন রায়হান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শাহীন রায়হান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শাহীন রায়হান

 তোমার বিরহ বেলুন 


মনের উঠোনে দাগ কেটে কেটে
প্রজাপতি রং সারাদিন আনমনে এঁকে যায়- 
মৃত প্রায় বিষখালী হরিণঘাটার ধূ ধূ বালুচর 
সর্পিল পায়রার সমুদ্রগামী ফেনায়িত লাল মোহনা
এক বিকারগ্রস্ত জলময়ুরীর ছবি। 

পুরনো স্মৃতির ঝলসানো ক্যানভাস থেকে 
পলেস্তরার মতো খসে পরে
আলুথালু চিরচেনা স্বপ্নীল দুটি হাত-

বেখেয়ালি মন হেঁটে যায়
নদীমুখী জল থৈ থৈ কালমেঘা খাল পেরিয়ে 
বকমুখী নলটোনা ঘাটে। 

বুকের চিকন সরল রেখায় থেমে থেমে দোলখায়
এক দিকভ্রান্ত দুর্ভাগা গো-শালিক
তার জরা চোখে বরাবর বেহিসাবি আমি 
জীবনের নতুন পুরনো সব হিসাব মিলাই 

তারপর পীতরঙা পৃথিবীর কোমল নিতম্ব ছিঁড়ে 
জেগে ওঠে ঘুমন্ত লাউ মাচা, দূর হিজলের বন
আমার লাজুক মনের ভাঁটফুল দাওয়ায় 
ঝড় তোলে পশ্চিমা বাউরি বাতাস
আর পলাশের লাল পাপড়ি ছুঁয়ে নীরবে উড়ে যায় 
তোমার বিরহ বেলুন।

জীবনের ধারাপাত : শাহীন রায়হান



ঘড়ির কাঁটায় শিশিরকণার মতো
ঝরে যায় জন্মান্ধ সময়। অস্তগামী সূর্য
মিলিয়ে যায় নিভৃত অন্ধকার মিছিলে-
স্ফটিক ডায়ালে কালবৈশাখীর মতো
আবার ধেয়ে আসে নতুন সময়।
ঋতু বদলে ঘড়ির কাঁটায় এখন
পাতা ঝরা নির্জন শীত-

বয়ে যাওয়া সময়ে অস্ফুট বিলাপ করে এক
গৃহহীন পথভ্রান্ত কুয়াশা ভেজা জবুথবু দাঁড়কাক-
যেমন বিলাপ করে জীবনের ধারাপাতে বাস্তুহীন
বরফ জমা পথ মানব।

অভিশপ্ত পৃথিবী : শাহীন রায়হান



বড় দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছি আজ
যেন দুর্দিনের যাত্রী ছাইচাপা আগুন মাড়িয়ে
অভিশাপের বোচকা কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেছি
নিদারুন যন্ত্রনাময় মৃত্যু অবগাহনে।

আজ নিজেকে বড়-ই অচেনা মনে হয়
পৃথিবীকে মনে হয় বিধ্বস্ত শ্মশান
যেখানে প্রতিটি লম্পট হাত বুবুক্ষু মানুষের খাবার কেড়ে নেয়
তরুণীর কাজল মুছে দেয় পাষাণ মীরজাফর-
রক্তাক্ত মানচিত্র পোড়ায় আবু জাহেল ফেরাউন।

আর পৃথিবী কাতরায় মহমারী রোগে
তার শরীরে কুষ্ঠের দগদগে ঘা
আজ পৃথিবীর বুকে গোলাপের সুবাস নেই
আছে শুধুই বারুদের গন্ধ শুধুই অভিশাপ।

তুমি হীনা নবান্ন : শাহীন রায়হান


নিঝুম রাতের নীরব কান্নায় বৃত্তাকারে ভিজে যায়
ধানহীন প্রাণহীন অর্ধমৃত অস্তগামী নবান্নের
রংহীন নিষ্প্রভ দুটি চোখ-

তুমিহীনা নবান্ন আজ এক পৈশাচিক সভ্যতার
নগ্ন শেকল বন্দী অন্ধ বোবা বধির কয়েদি
তার বুকে কোন ক্লোরোফিল নেই, নেই পুষ্পিত গোলাপের
রং মাখা ভোর ধানে ধানে প্রজাপতির উড়াউড়ি ভ্রমরের
কানাকানি গুনগুন গান-

তুমিহীনা অগ্রহায়ণ যেন ভাতহীন কৃষকের
কুঁচকানো মুখ ক্ষুধার রাজ্যে একটানা দুঃখের বিলাপ-

শাহীন রায়হানের দুটি কবিতা


.
১.
হারিয়ে খুঁজি হেমন্তে

ক্যালেন্ডারে প্রতিনিয়ত ঋতু বদল হয়
বাহারি কবিতার তুমুল বৃষ্টিতে ভেজে ফসলের মাঠ-
কবিতায় কবিতায় গানে গানে চলে
শুধু হেমন্ত বন্দনা।
কবির কল্পনায় নবান্ন আসে
শিশির ভেজা হিম কুয়াশায়।
পিঠাপুলির ঘ্রাণে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে উদাসী গঙ্গাফড়িং
চারুকলা রমনার বটমূলে চ্যানেলে চ্যানেলে চলে
হেমন্তবরণ।
..
জীর্ণ বিদীর্ণ কৃষকের অন্ধকার খুপরিতে
বাস্তবে হেমন্ত কোথায়!
সবুজহীন রিক্ত মাঠ আজ ধূমায়িত-
ইটভাটার দখলে।
আগ্রাসী নগরায়নে কান্না হয়ে ঝরে যায়
কৃষকের খুশির নবান্ন। তার নির্ঘুম রাত কাটে
চোখের জলে হারিয়ে যাওয়া নবান্নকে খুঁজে খুঁজে-
ফসলহীন আর্তনাদে বেদনার বিস্তীর্ণ পর্দায়-


২.
বিমূর্ত সুখ


এক বিমূর্ত সুখের সন্ন্যাসী আমি-
তবু,
ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দে ঝুলন্ত পেন্ডুলামে
পুরানো পত্রিকায় স্মৃতি-বিস্মৃতির আঁকিবুঁকিতে এতিমের বক্ষপিঞ্জরে সকালের খোলা জানালায় কাশ্মীর থেকে কারবালায় সসীম থেকে অসীমে অনন্তে অনন্তে....
ওর দেখা যে কোথাও পাইনি-

বিমূর্ত সুখ যে আজ বিলুপ্ত ডাইনোসর।
মরীচিকার মতো এক খোলস বদলানো নদী।
অনন্ত সূর্যলোকে পোড়া হাজার বছরের এক কল্পিত প্রত্নতত্ব।

প্রেম ও শোষণের বেড়াজাল :-শাহীন রায়হান



একটি মেঘ রং প্রেমের কবিতা লিখবো বলে-
প্রেম পর্যটক আমি
প্রতিদিন প্রতীক্ষার জানালায় অবসন্ন প্রহর গুনি-
ইছামতীর বাঁক ঘেষে বসে থাকি চরম উৎকন্ঠায়
গাঙচিলের ধূসর ডানায় খুঁজি প্রেমের প্রাঞ্জল পঙক্তিমালা।
.
একটি মেঘ রং প্রেমের কবিতা লিখবো বলে-
তোমার অসীম কল্পনায় আঁকি হেমন্তের সবুজ ধানক্ষেত
গঙ্গাফড়িং এর সমান্তরালে উড়াউড়ি
বৈকালি প্রজাপতির ডানায় স্মৃতির গোলাপি শহর।
.
একটি মেঘ রং প্রেমের কবিতা লিখবো বলে-
নিদ্রাহীন কলমে অধীর আগ্রহে-
বুকের অন্তরালে ঘুমন্ত ইচ্ছাকে বারবার
জাগ্রত করি-
কিন্তু না, আমার হেয়ালি কলম এখন
মেঘ রং প্রেমের কবিতা লিখে না।
ওর তুমুল আগ্রহ এখন
বিপন্ন মানুষের আর্তহাহাকার মানবাতিকার
ধর্ষণ গুম খুন হত্যা খোলস বদলানো রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা
মানুষে মানুষে অসাম্য দেয়াল শোষণের বেড়াজালে।

সমুদ্র ইতিহাস : শাহীন রায়হান


হিমালয়ের বরফকুচি থেকে অানমনে যে শিশির বিন্দুটি খসে পড়ে ছিল-
প্রকৃতির বুক চিড়ে সেই জলকণা আজ জল সমুদ্রের ঢেউ
যার বুকে প্রেম আছে বিরহ আছে-
আছে প্রেমের আগুনে পোড়া প্রেমময় বারুদের গন্ধ।
.
শ্রাবন মেঘের অন্ধ পদযাত্রায় ভেসে যায় এক ঝাঁক- পথভোলা বালিহাঁস
আমার উড়ো ভাবনার ব্যবচ্ছেদে
সমুদ্র ক্যানভাসে এঁকে যাই তার এক সমুদ্র ইতিহাস।

তোমার আবক্ষমূর্তি :শাহীন রায়হান


পানাম নগরে ঈঁশা খাঁর রাজধানী ডিঙিয়ে
প্রিয়তম কামাগ্নি নদী বার বার ফিরে আসো
পালক ঝরা ভাঙা হৃদয়ে পঞ্চ মোহনায়।
.
তোমার প্রেমময় গোপন চত্ত্বরে কামনায় জেগে থাকা
সূঁচালো কাঁটাতার উড়ন্ত পাখির ডানায় একাকি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
কুসুমিত জোড়া নিতম্বে আজও নগ্ন স্বপ্ন আঁকে।
সোঁদা গন্ধে অনন্ত ঝর্ণার অন্তহীন রিনিঝিনি শুনে
প্রতীক্ষার গ্রীবায় জাগা ফাল্গুনী রূপালী চাঁদ
পুরুষত্বের সুখে উষ্ণতায় গলে গলে যায়।
.
কামনা মেঘের প্রার্থণায় তখনও শুধুই তুমি
হৃদয় চত্ত্বরে দাগ কাটা অভিমানী নিশি কন্যা
কতোদিন তোমাকে নিয়ে জীর্ণ ছাদের চিলেকোঠায়
পুরনো টেপরেকর্ডারে সুরের মাতম তুলি না-
গড়িনা তোমার পতিত অন্দরে রক্তস্রোত পেরিয়ে
তোমার আবক্ষমূর্তি-

শাহীন রায়হানের গুচ্ছ কবিতা






মায়াবিনী


তোমার ভালোবাসার অগ্নি বারুদে কাঠ কয়লার মতো পুড়ে পুড়ে
জীবন ককপিটে জীবন্ত লাশ নৈঃশব্দ রাতে
নিমগ্নতায় ঘুরে বেড়াই বিধ্বস্ত গণকবরে।
.
এখন আমার জীবন পার্কে শুধু লাশের আনাগোনা
সামনে পেছনে ডানে বামে হোটেলে মোটেলে চেয়ারে বেঞ্চিতে
নাম না জানা বিচিত্র কতশত লাশ।
.
প্রতিটি স্নিগ্ধ সকাল ক্লান্ত দুপুর পড়ন্ত বিকেল ঝিঁঝিঁ ডাকা প্রতিটি ভয়ার্ত রাতে
ওদের সাথে পুরনো দিনের ধুলো ভরা মলিন মলাটের প্রেম বিরাগী বাউল জীবনের-
অদ্ভুত গল্প করে দিন কেটে যায়।
.
তোমার পড়িয়ে দেওয়া সাদা কাফনটা আজও খুব চকচকে
নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে সুবাসিত আতর গোলাপ
এখনও স্পন্দিত করে আমাকে।
.
আমি অবাক বিস্ময়ে শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলগুলো দেখে দেখে
নদীর মতো প্রবহমান তোমার পৃথিবীসম প্রাপ্তিকে ভাবি।
.
মায়াবিনী প্রিয়তম জীবন পুষ্পিতা কি দাওনি তুমি,
স্বার্থপর অবুঝ কুলাঙ্গার ভবঘুরে এ আমাকে
অবহেলা ঘৃণা নির্যাতন নিন্দা নিষ্ঠুরতা নিজ হাতে গ্লানিমাখা মৃত্যু সব, সবই তো দিয়েছো।
.
আমি তো কিছুই দেই নি তোমাকে-
শুধু দিয়েছি ভালোবাসাময় পিঁপড়া জীবনের-
যৎসামান্য মৃত্যু।




তৃষ্ণার্ত দুটি চোখ


তোমাকে দেখবে বলে আমার পরিশ্রান্ত ফোয়ারার মতো দুটি চোখ
নিঝুম রাতের নির্লিপ্ত অন্ধকার পেরিয়ে অস্ফুট কাব্য ব্যঞ্জনায়
সবুজ পাতার প্রাণ নিয়ে আহত চাঁদের মতো
একাকী জেগে উঠতো-
বিরহী ঘুঘু ডাকা ফাল্গুনী রূপালী সন্ধ্যায়-
.
বিজন দ্বীপের সবুজ গাঁয়ে হেঁটে যাওয়া প্রতিটি নিথর বিকেলে-
তুমিই ছিলে আমার শার্সী কাঁপানো খোলা জানালায় নীরব ইচ্ছে পাখির ডানা।
.
তখন অঝোর বর্ষায় জেগে ওঠা পরিপূর্ণ স্নিগ্ধ নদী
উতলানো সমুদ্রের মতো আছড়ে পড়তো 
তোমার ভেজানো সৈকতে।
..
হেয়ালি তুমি সময় চেয়ারে খুলে দিলে নীল সমুদ্র বাঁধন
আত্নমগ্ন নগ্ন মহাকাল পেরিয়ে তোমার অনন্ত যৌবন রেখায়
নিষিদ্ধ দিকভ্রান্ত পর্যটক হতো আমার তৃষ্ণার্ত মলিন দুটি চোখ-

জীবন এ্যাশট্রে :-শাহীন রায়হান


কতগুলো নিহত ধূসর ছাই নিঃসঙ্গ পড়ে আছে
বেদনাহত জীর্ণ এ্যাশট্রেতে
এক সময় ওরা ছিলো জেব্রা ক্রসিংয়ের মতো
সাদা কালো রং চকচকে জীবন্ত নিসর্গ
খরস্রোতা নদীর বুকে নক্ষত্র রাতে একাকী
ভেসে চলা প্রিয়তম জবা
হৃৎপিণ্ড রিদমে অন্ধকারে জ্বলে ওঠা
এক টুকরা অমলিন আশার আলো
প্রেম প্রত্যাশায় জেগে ওঠা এক বাসন্তী গোলাপ কুঁড়ি।
তোমাকে তৃষ্ণায় ছুঁয়ে যাওয়া বৈকালি
পাখির কলরব
.
আমার যন্ত্রনাময় ক্রুদ্ধ ব্রহ্মান্ডের জ্বলন্ত চিতায়
সেই কবে পুড়ে গেছো তুমি-
আজ তুমি স্বপ্নহীন স্মৃতির অদ্ভুত ক্যালেন্ডারে নেই
কোথাও নেই
শুধু জীবন এ্যাশট্রেতে দিশাহীন পড়ে আছে
নগ্ন আতশ কাঁচের প্রেমহীন আগুনে পোড়া
স্বপ্নহীন ঘাসের মিহি ডগার মতো
নিদ্রাহীন কতগুলো ছাই।

ছলনার শোপিচ: শাহিন রায়হান


.
প্রতীক্ষার জানালায় এখন আর সোনালী সূর্যটা দেখিনা
অবিরল বৃষ্টিতে ধুয়ে গ্যাছে গাছের সবুজ
তবু পুরনো ইচ্ছেগুলো নিঃশব্দে কড়া নাড়ছে
সমাধিত প্রেমের ঘুমন্ত দরোজায়।
.
ডুবে যাওয়া চাঁদ অভিযাত্রীর মতো এক মনে হেঁটে চলেছে
অবাধ্য অন্ধকার মাড়িয়ে নিভৃত ভালোবাসার নিরুত্তাপ সীমান্তে।
যেখানে বিরহী কাঁটাতার বিভক্তির চিহ্ন এঁকে দিয়েছে প্রিয়তম মরুদ্যানে।
.
অস্ফুট ভালোবাসায় জেগে ওঠা বকুল গাছটা এখন আর নেই
কাঁকর রঙা মালাটা সেই কবে ছিঁড়ে গ্যাছে
পাঁজর ভাঙা দূরন্ত বাতাসে।
.
শুধু পড়ে আছে কুয়াশা কাতর মৃদু অন্ধকারে রক্তাক্ত ছলনায়
তোমার ফেলে যাওয়া হতভাগ্য পুরনো শোপিচটা।

রিসাইকেল বিন: শাহীন রায়হান


ইদানিং হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো নিউরন কোষে
উন্মাদ হয়ে ঘুরে বেড়ায়
প্রতিনিয়ত প্রেমময় নীল যন্ত্রণায় ভূগী
হৃদয় শ্মশানে অতীত সুখানুভূতির
এক ব্যর্থ দামাল ঘোড়া উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসের বুদবুদে ডুবে যায় অবিরাম।
.
নিঃস্ব আমি অবাঞ্ছিত চিন্তার পরাজিত মসনদে-
তোমার চির অমর ভালোবাসার
রিসাইকেল বিনে তোমাকে হাতড়ে বেড়াই
কামনার শরাবে।

ছলনার শোপিচ -শাহীন রায়হান


.
প্রতীক্ষার জানালায় এখন আর সোনালী সূর্যটা দেখিনা
অবিরল বৃষ্টিতে ধুয়ে গ্যাছে গাছের সবুজ
তবু পুরনো ইচ্ছেগুলো নিঃশব্দে কড়া নাড়ছে
সমাধিত প্রেমের ঘুমন্ত দরোজায়।
.
ডুবে যাওয়া চাঁদ অভিযাত্রীর মতো এক মনে হেঁটে চলেছে
অবাধ্য অন্ধকার মাড়িয়ে নিভৃত ভালোবাসার নিরুত্তাপ সীমান্তে।
যেখানে বিরহী কাঁটাতার বিভক্তির চিহ্ন এঁকে দিয়েছে প্রিয়তম মরুদ্যানে।
.
অস্ফুট ভালোবাসায় জেগে ওঠা বকুল গাছটা এখন আর নেই
কাঁকর রঙা মালাটা সেই কবে ছিঁড়ে গ্যাছে
পাঁজর ভাঙা দূরন্ত বাতাসে।
.
শুধু পড়ে আছে কুয়াশা কাতর মৃদু অন্ধকারে রক্তাক্ত ছলনায়
তোমার ফেলে যাওয়া হতভাগ্য পুরনো শোপিচটা।

আমি ইরেজার হব - শাহীন রায়হান



আমি ইরেজার হব তোমার হৃৎপিন্ডের শিরা উপশিরায়
ধমনীর প্রতি রক্ত বিন্দুতে।
ইরেজার হব মস্তিষ্ক নিউরনে বেলা অবেলায়
তোমার স্বপ্ন বিলাসে প্রতিটি পদে পদক্ষেপে
ইরেজার হব তোমার নিঃসঙ্গতার বিবর্ণ আর্তনাদে
নিঝুম রাতের কান্না বিলাসে অন্তহীন  শব্দ বাক্য কথায়
ইরেজার হয়ে মুছিয়ে তোমার রক্ত আবীর দুঃখ বিলাস
নিজেকে নিঃশেষ করেও ধ্রবতারা হয়ে বেঁচে থাকব অনন্তকাল
তোমারই আকাশে।

রক্তাক্ত কুমারিত্ব ও কতগুলো বুক ভাঙা আর্তনাদ -শাহীন রায়হান



রাতের দেয়ালে ঠেস দিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে
বুক ভেঙে বেড়িয়ে আসা কতগুলো রক্তাক্ত আর্তনাদ।
এক অনাবৃত ক্ষত বিক্ষত বৃন্তচ্যুত অপরূপ
দেহের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলো ওরা।
.
দেহটা ছিলো বিনম্র লাজুক মাধবীলতা
তার স্বপ্ন ছিলো ঝর্ণার মতো উচ্ছল মনটা ছিলো
বাতাসের মতো দূরন্ত।
ছিলো মহাপ্রাচীরের মতো কুমারিত্ব  এভারেস্টসম
উচ্চতায় অনন্ত যৌবনের অহংকার।
নিঃস্বার্থ বাঁচা বাঁচানোর স্বপ্নে বিভোর
আগামীর সম্ভাবনাময়ী রাজকন্যা।
.
আজ-ও স্বপ্ন অবরুদ্ধ এক কফিনবদ্ধ লাশ
যার কুমারিত্ব বিবস্ত্র যৌবন ভূ-লুন্ঠিত
প্রতিবাদী ঠোঁটে হিংস্রতার অগনিত দাগ।
দেহটা দুর্বিনীত ঘাতকের পাশবিকতায় ক্ষত বিক্ষত
এক বিক্ষিপ্ত বিরাণভূমি।

সুখ:শাহীন রায়হান




আমার শ্যাওলা ধরা ভাঙা হৃদয়ে
 চির সবুজ ছত্রাক তুমি মরুর বুকে
 বয়ে যাওয়া এক অনন্ত সুখের
প্রবাহমান জলচ্ছবি।
 তোমায় নিভৃত নিশীথে দেখাতে সুখ
 স্পন্দিত হৃদয়ে লেখাতে সুখ
 প্রেমময় স্পর্শ অনুভব অনুভূতিতে
 সুখ তোমার গভীরতম অন্দরে
 সুখ অরণ্যময় বাহিরে
 সুখ কাল কালান্তরে ছুঁয়ে থাকা
মধ্যরাতের সুখচ্ছবি তুমি।
 আমি সুখ সমুদ্রে নোঙর ছিঁড়ে পাল তোলা এক
নিরুদ্দেশ নাবিক- জীবন কম্পাসে
 উষ্ণ স্পন্দন দেখে দেখে মনে হয়
 তোমাতে মরি তোমাতে থাকি বেঁচে।

শাহীন রায়হান




মৃত্যুময় মাতাল নগরে



জানি বৃষ্টির মত ঝরে যাব একদিন
অক্ষমতার প্রাচীরে ঝুলিয়ে শ্যাওলা পর্দা
বর্ষণমুখর দীঘল প্রাতে কদমের পাপড়ির মত
ভেসে যাব শ্রাবন নদীতে। 
স্বপ্নহীন ম্লান দুটি চোখে গোধূলীর শেষ আলো
তখন মিলাবে বেদনাহত নিঃস্তদ্ধ সন্ধ্যার আবছা আঁধারে।
মনের ফ্রেম ঢেকে যাবে নিঃসঙ্গ বার্ধক্য পলিতে
নিজেই নিজের কাছে হয়ে যাব অচেনা অপাংক্তেয়
যখন প্রতিটি ইচ্ছে পালক পুড়ে যাবে অবহেলার আগুনে।
যেদিন দূরন্ত শৈশব কামার্ত যৌবন বন্ধুত্বের
নিরন্তর উচ্ছ্বাস প্রেমিকার ত্রিভুজ চতুর্ভুজ ভালোবাসা
ধুলোচিহ্নের মত উড়ে যাবে গ্রীষ্মের
দূরন্ত বাতাসে।
আর আমি মৃত্যুময় মাতাল নগরীর
পথে হেঁটে যাব অবিরাম
মৃত্যুরই আবেশে।

শাহীন রায়হান





দুঃখের বীন
**********


বর্ষ আসে বর্ষ যায়
যায় চলে মাস দিন
সময় স্রোত দুই চলে যায়
যায় না দুঃখের বীন।

দুঃখের বীনা মনের মাঝে
ব্যাথার পাহাড় গড়ে
বুকের ব্যাথা দুটি চোখে
অশ্রু হয়ে ঝরে।

এই ব্যাথাটা মা হারানোর
এই ব্যাথাটা বোনের
এই ব্যাথাটা বাবা হারা
ঝলসানো এক মনের।

ভুল চিকিৎসায় মরছে বাবা
গুম হয়েছে মা
ধর্ষিত বোন মরল দুঃখে
ভাই হারালো পা।

অত্যাচারীর অত্যাচারে
বুকের ব্যাথা বাড়ে
পাইনা বিচার বিচার চেয়ে
ঘুরছি দ্বারে দ্বারে।

মানুষ আমি মানুষ তবু
মরছি ধুকে ধুকে
তাইতো বাজে দুঃখের বীনা
বারো মাস এ বুকে।