নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

✍️✍️✍️সম্পাদকীয় কলমে ....





এসো হে বৈশাখ - একটি একটি করে দিন যায়, যেমন নতুন উপন্যাসের প্রথম পৃষ্টায় লেখা থাকে গল্পের সূচনা। ঠিক তেমন'ই বৈশাখ আমাদের নতুন গল্পের প্রথম পাতা। বৈশাখ যেমন মিষ্টি আমের গন্ধে মাতিয়ে দেয় ছেলেবেলা। আবার এই বৈশাখে মিষ্টি কবিতার ডালি নিয়ে রবী ঠাকুরের জন্ম। বলতে পারি বৈশাখ মানেই কবিতা, আর কবিতার জন্মমাস। পুরনো সব গ্লানি ভুলে নতুন আলোতে চোখ মেলে দেখি কত পাখি উড়ে যাচ্ছে আকাশে। আমাদের আকাশ আর বারুদের ধোঁয়ায় ঢাকবে না। এই আকাশে রঙবেরঙ মেঘ খেলবে, বৃষ্টি হবে। রিমঝিম বৃষ্টিতে সোনালি ফসল ঢেউ তুলে বলবে " ভালো থেকো বৈশাখ "। মেঠো পথ দিয়ে কোনো এক বাউল তার একতারা বাজিয়ে গান গাইবে " তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না "। নব বধুর পায়ের আলতা দূর্বাঘাসের উপর ছাপ রেখে যাবে। আর কোনো রাখাল ছেলে শিমুল গাছের নিচে বসে মাটির সুরে বাঁশী বাজাবে।
বৈশাখী আয়জন আর সেই মিষ্টি ফুলের মতো কবিতার গন্ধ নিয়ে হাজির নিকোটিন সাহিত্য ম্যাগাজিন। কবিতার সুগন্ধে এবার হবো আমরা সবাই চাঁপাফুল।
সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই নিকোটিনের পাশে থাকার জন্য ,পাশে থাকবেন এই ভাবেই । বিশেষ ধন্যবাদ কবি বৈশাখী চ্যাটার্জী মহাশয়া কে ,উনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ,আমাদের অতিথি কবি হিসাবে আসার জন্য উনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।।
সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ নববর্ষের  শুভেচ্ছা ।ভালো থাকবেন সবাই সব সময় ,ভালো রাখবেন প্রিয় মানুষটিকে ।
                                       
       
                                        বিকি দাস
                                       (উপদেষ্টা )
ধন্যবাদান্তে ,
নিকোটিন ও নিকোটিন পরিবার






সূচীপত্র
******
অতিথী কবি
*********
বৈশাখী চ্যাটার্জী
কবিতা
*******
পবিত্র চক্রবর্তী 
চন্দ্রানী পাল
মিঠু মুখার্জি
মনি  আহমেদ
অmrita
বিকি দাস
মনোরঞ্জন সরকার
সুদীপ্ত সেন
মৌসুমী রায়
সমীর সরকার
মৌসুমী ভৌমিক
নীলা হোসেন
রুনা দত্ত
তনুজা চক্রবর্তী
আলো মন্ডল
অনোজ ব্যানার্জী
সুনন্দ মন্ডল
শরীফ সাথী
অসীম মালিক
বিশ্বজিৎ ভৌমিক
সৈকত বণিক
সুকান্ত মণ্ডল
শুভদীপ পাপলু
দেবাশিস সাহা
অর্ঘদীপ পানিগ্রাহী
জয়দীপ রায়
কাজী জুবেরী মোস্তাক
  রবীন সাহানা
সোহান আহমেদ
দেব চক্রবর্তী
সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র

ছোটগল্প
*******
শ্রী(জুঁই)  ঘোষ
কবির কাঞ্চন

অনুগল্প
*******
জিবেন্দু রাজবংশী


পবিত্র চক্রবর্তী

কৃষি কথা
**********




কোন এক গ্রীষ্মের দিনে -
যখন ধরিত্রী সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ একাকিনী ,
যখন , বিদ্ধস্তা - বিবস্ত্রআ -
ভালোবাসার শেষ জলটুকু শুষ্ক -
তখন তোমায়,সংকোচে সংগোপনে 
রোপণ করেছিলাম আলতো দুটি 
আঙুল দিয়ে ,আমার মনের মাটিতে ;


তারপর ! তারপর যখন তোমার কচি কলাপাতার মতো ছোট্ট দুটি হাত আমার নির্জীবতাকে সজীব করলো , তখন -
বিস্ময়ে বললাম -"এত প্রাণশক্তি কোথা হতে তুমি পেলে ?" উত্তর পেলাম না ;
অনুভব করলাম সেদিনকার নরম দুটি হাত অজস্র শাখায় বিভক্ত হয়ে -
গভীর শিকড় দিয়ে মাটির কোনো এক অতল থেকে শুষে নিচ্ছে বিন্দু বিন্দু ভালবাসা ।


এসব কবেকার কথা ; জীবনের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ,হয়তো শেষ বসন্তের শেষ হাওয়াকে নিচ্ছি প্রাণভরে  ।
একটা একটা করে কত সূর্য ডুবলো ,
অঙ্কুর হল মহীরূহ ; হলদে পাতায় কত কথা ;আমরা দুজনে কথা বলি,চিন্তা করি,
সবাই যেমন শেষ দিনে শেষ কথা বলে...।


সেইবার শরতে,তাকে দেখেছিলাম ভোরে সদ্য স্নাত হয়ে - কপালে চন্দনের ছোট্ট ছোট্ট ফোঁটা পরে মাথা নত করে দাঁড়িয়েছিল ; আহা! কি ন্যাকাটাই না লাগছিল । নরম দুটি গালে হাত রেখে বলেছিলাম-" কি গো,অমন করে দাঁড়িয়ে কি দেখছো?" সেদিন তোমার কি হাসি ;


খসে পড়ছিল চন্দনের ক্ষুদ্র টুকরো -
আমার মনের মাটিতে ! আর যখন চোখ খুললাম ; ওগুলো কখন অগোচরেই হলদে পাতায় হয়েছে পরিণত ।


হয়তো,কোনো একদিন প্রবল ঝড়ে ঝরে পড়ব আমরা - এই মাটি থেকে অন্য কোনো এক মাটিতে ! হয়তো সেদিনের রোপিত স্মৃতি হয়ে যাবে টুকরো টুকরো -
স্মৃতিগুলো সব বিস্মৃতি হয়ে যাবেই ।
তবুও থাকবো আমরা এরই মাঝে -
ধরার হৃদয় পিঞ্জরে ,
আমাদের ঝরে পরা স্মৃতির
নতুন বীজের মাঝে নব সূর্যের অপেক্ষায়॥

বৈশাখে'তে বৈশাখী

বৈশাখে'তে বৈশাখী ...




প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ?

উত্তর:- মনের মধ্যে জমে থাকা এমন কিছু কথা যা হয়তো আমরা মুখে বলে ঠিক বোঝাতে পারিনা -আমাদের জীবন -ভালোবাসা -চাহিদা -পূর্ণতা আর অপূর্ণ চাপা কষ্ট গুলো আমার কাছে কবিতা । কবিতা আমার প্রেম । অফুরন্ত জ্যোৎস্নায় ডুব দেওয়া গল্প আমার কবিতা । আমার মনের নষ্ট নেশার কথা আমি কবিতায় বলি । ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনা যা সমাজকে ছোবল মারছে তার প্রতিবাদ হয়তো আমার কাছে কবিতা ।


২:-আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর:-বর্তমান সময়ের শ্রীজাত -তসলিমা ভালো লাগে -জীবনানন্দ খুব প্রিয় কবি ।

কবিতার অনুপ্রেরণা হয়তো জীবনবোধ ।

৩:-কেন লেখেন আপনি কবিতা ?

উত্তর:-কবিতা যে কেন লিখি ঠিক জানি না,  -তবে ভিতরের একটা তীব্র আকুতিই হয়তো কবিতার জন্ম দেয়। ভিতরটা যখন দমবন্ধ লাগে কবিতায় নিঃশ্বাস ভেসে আসে । সবথেকে বড় কথা ভালোলাগে -ভালবাসি তাই লিখি ।

৪:-আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত)

উত্তর:- প্রথম কবিতার নাম এই মুহূর্তে মনে নেই । অনেকটা ছোট বয়সেই খেয়ালের বসে শুরু করেছিলাম।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ বলতে একটি যৌথ সংকলন -'কাব্যমাস' ।
আর একক কাব্যগ্রন্থ -স্বপ্ন বুননের ফাঁকি।

৫:-কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?

উত্তর:- কবি -কবিতা আর পাঠক একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে । কবি- কবিতা লেখেন । পাঠক যদি না থাকে তবে হয়তো কবিতা লেখাই ব্যর্থ হয়ে যায় । একটি কবিতা ও তার সাথে যুক্ত কবির ভাবনা তখনই সার্থক হয় যখন পাঠক তার বিচার করে ।

৬:-ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ?

উত্তর:- বর্তমান সময়ে আমরা ফেসবুকে কবিতা লিখি। প্রথম প্রথম এটা খুব তিরষ্কার এর বিষয় থাকলেও আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যে এর একটা গুরুত্ব পূর্ন জায়গা তৈরী হবে । এখন অনেক বড় বড় কবি ফেসবুক এ কবিতা লেখেন ।ফেসবুকে কবিতা লেখার ফলে যে কবিতা লিখছি তার তৎক্ষনাৎ মূল্যায়ন হয় ।বর্তমান সময়ের কবিতার মূল্যায়ন বেশ কিছু বছর পর যখন হবে -তখন ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নেবে বলেই আমার মত ।এবং অনেক নতুন নতুন লেখক এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যেও উঠে আসবে ।

৭:-ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?

 উত্তর:- গুরুত্বের দিক থেকে বিচার করলে অবশ্যই ছাপা ম্যাগাজিনের গুরুত্বটা বেশি। একটি বইয়ে ছাপা আকারে নিজের কবিতা দেখতে সকলের ভালো লাগে । কবিতাটিও বইয়ে প্রকাশ পেলে গুরুত্ব বেশি পায় । ব্লগজিন আর ওয়েবজিন এর চাহিদা যদিও সমান তালে বাড়ছে । এতে পাঠক একটি ক্লিক করেই পড়তে পারে কবিতা বা গল্প ।সব সময় ইচ্ছে থাকলেও একটি ম্যাগাজিন কেনার সময় হয়ে উঠে না । সব জায়গায় সব ম্যাগাজিন পাওয়াও যায় না ॥

৮:-আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?

উত্তর:- আজকাল অনেক কবি উঠে আসছে একথা সত্যি -আর এটাও বাস্তব সকলের বই ছাপাবার ক্ষমতা নেই । ফলে প্রতিভা থাকলেও সব কবি পাঠকের নজরে আসেনা  বা নতুন কবিদের বই পাঠক কিনতেও চায় না । ফলে বই ছাপলেও তার বিক্রি হয় না ঠিক করে ।
পাঠক অবশ্যই আছে বই বিক্রিও অবশ্যই হয় । সব বই প্রচারের আলোয় সেভাবে আসে না আর অনেক সময় পাঠক যা চায় তা হয়তো লেখায় সেভাবে পায় না ফলে একটা বিরূপ মনোভাব তৈরী হয় ।পাঠককে বইয়ের অভিমুখে আনতে হলে অবশ্যই লেখার মান যথেষ্ট উন্নত হতে হবে,  -বিশেষ করে পাঠক কি চায় সেটা মাথায় রাখা দরকার । আর দ্বিতীয় হল বইটির ঠিক মতো প্রচার ।

৯:-উত্তরাধুনিক কবিতা বলতে কি বোঝেন ? অনেক জনই আজকাল কিছু কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বলছে এটা উত্তরাধুনিক কবিতা , কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে দাঁত ভাঙার উপক্রম কিংবা মাথার উপর দিয়ে চলে যায় সেক্ষত্রে আপনার কি মতামত ?

উত্তর:- উত্তরাধুনিক কবিতার সঠিক কোন সংজ্ঞা হয়তো সেভাবে বলা কঠিন । একটা সময় এসেছিল যখন আধুনিক কবিদের জন্ম হচ্ছিল । তাঁদের কবিতায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছিল পুরনো চিরাচরিত প্রথা বাদ দিয়ে । উত্তরাধুনিক হচ্ছে হয়তো আরও একটু আধুনিক হয়ে ওঠা -কোন নিয়মের বাইরে গিয়ে একান্ত নিজের মতন করে ।শৃংখলা পরায়ন না হয়ে -নিজের গতিতে নিজের ছন্দে -হয়তো নিজের দ্বন্দ্বে ।
তবে কবিতা যদি পাঠকের অন্তর ভেদ করতেই না পারে তবে তা কিসের কবিতা । সে আধুনিকই হোক আর উত্তরাধুনিকই হোক । কবিতা হতে হবে সহজ -সুন্দর -প্রানছোঁয়া -। দুচারটে জটিল ভাষা দিয়ে হয়তো কবিতার ওজন বাড়ানো যায় । তবে যা পাঠক গ্রহন করতে পারে না তার গুরুত্ব কতখানি বলা কঠিন ।

১০:--গদ্য কবিতা ও গদ্য-পদ্য কবিতা কি ? গদ্য কবিতায় কি ছন্দ বা নির্দিষ্ট তাল থাকার প্রয়োজন নেই ?
উত্তর:- পদ্য বলতে এটি ছন্দমিল যুক্ত হবে । সহজ সরল হবে এর প্রকাশ ।
গদ্যকবিতায় ছন্দ মিল থাকে না ।শব্দের মধ্যেই শব্দ নিয়ে খেলে এই গদ্যকবিতা ।
মনের গভীর বোধ এর প্রকাশ যা কখনো সম্পূর্ন ভাবে পাঠকের কাছে ধরা দেয় না ।

হয়তো গদ্য কবিতায় অন্ত্যমিল থাকে না তবে নিজস্ব একটা ছন্দ আর তাল না থাকলে হয়তো কবিতা- কবিতা হয়ে ওঠে না ॥


কিছু কবিতায়
::::::::::::::::::::


অস্থির সময়
**********


চারিদিকে এখন শুধুই কালো রাত ।
বিষাক্ত হচ্ছে নিঃশ্বাস গুলো প্রতি মুহূর্তে ।
খুবলে খাচ্ছে ভালোবাসা গুলো সম্পর্কের মিষ্টি স্বাদ ।
পৃথিবী খুবলে খাচ্ছে মাটি ।
খুবলে খাচ্ছে দেহ ।
কিছু টানাটানি -মানহানি । শহরে বাড়ছে ভয় ।
অনৈতিক কিছু চরিত্র দিনরাত হুংকার দেয়।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ।
রক্ত চুষে খায় ।
ভালোবাসা বোবা ঘরে বন্দী ।
ছটফট করছে একটু মুখ তুলে নিঃশ্বাস নেবার ।
প্রতিমূহূর্ত প্লাবন নিয়ে আসে ।
মৃত্যু সলিলসমাধি ॥
কালো রাত বড় হয় দীর্ঘ হয় ॥

               
 
যা শুরু হয়নি
************


শুরুটা তেমন করে কোনদিন হয়নি ।
মাঝের কিছুটা সময় তবুও পেরিয়েছি সেই না শুরু হওয়া গল্পের হাত ধরে ।
একটা রাত আর দিনের মধ্যে যতটা পার্থক্য থাকে ঠিক ততখানি ফারাক ছিল  বোঝার আর বোঝানোর ।
তবু গল্পের ইতিটা বড্ড বেশি দাগ কাটলো মনে ।
গল্পের শেষে পিছন থেকে ছুরি মারে কাহিনী ।
সেখানেই মৃত্যু অপর পক্ষের ।
যদিও এমন করে শেষ করার বিশেষ কিছু দরকার ছিল না ।
কারন কাহিনী তো কোনদিন শুরুই হয়নি।
     
             

প্রয়োজন
*********


নিঃশব্দ শূন্যতার বুকে রোজ হাজার চিৎকার ডুকরে ওঠে ।
গরমে পুড়ছে ,
বৃষ্টিতে ভিজছে ।
দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় অস্বিত্বের সাদামাটা খোলস ।
মাটিটা বড্ড নরম মনে হচ্ছে আজ ।
পা ঢুকে যাচ্ছে বারবার ।
এটা হবার ছিল জানত সে -
তবুও এতদিন চলেছিল সাবধানে ।
কিন্তু এবার একটু শক্ত মাটির প্রয়োজন ॥



                   অন্তবিহীন
                   *********


আমায় নিবিড় করে ভালবাস একান্ত অবশেষ
তোমার বুকের দোদুলদোলায় অন্তবিহীন
আমি তো রয়েছি বেশ -
তুমি আমার কমলেশ ।
সুর লহরীর ঝরনা তুলেছ আছড়ে পড়েছ বুকে ,
সীমাহীন তুমি গতিহীন তুমি ভালবেসে গেছ সুখে -
ঘনিষ্ঠ সুখময় যত অনুভবে রঞ্জিত
আরও ঘনিষ্ঠ আরও যে নিবিড় কামনায় সিঞ্চিত ,
বিন্দু বিন্দু ভালবাসা রসে সাগর দিয়েছ ভোরে
সেই রসের সাগরে সাঁতরে মরেছ নিজেকে উজার করে -
প্লাবন এনেছ কুল ভাসিয়েছ অসুখের সমাবেশ
সীমাহীন তুমি গতিহীন তুমি আমার কমলেশ ॥
                                   
           

               চুম্বন
              *****

দুটো ঠোঁট দুটো ঠোঁটে ছুঁয়ে যায়
যেমনটা সেদিনের ছোঁয়াটুকু ।

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বুঝেছি
নীল মৃত্যুর আঠালো নির্যাস
বিষ ছিল ছুঁয়ে যাওয়া- বিষ ছিল শ্বাস ॥




সাক্ষাৎকারে ও সংগ্রহে : জ্যোতির্ময় রায়
         
         

শ্রী(জুঁই) ঘোষ

বৈশাখ
*****



ওর শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। ভ্রূক্ষেপও নেই যে পাঁচ মাইল পেরিয়ে এসেছে সে। পা দুটো যেন অবশ হয়ে আসছে। তৃষ্ণা নেই, ক্ষিদেও পায়না। চোখে ঘুম নেই। একটা সময় ওর খেয়াল হয়, সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে "মা" বলে চিৎকার করতে যায়। পারে না। কেউ কি দেখতে পাচ্ছে না তাকে? নাকি সে জনবসতি থেকে দূর দূরান্তে পাড়ি দিয়েছে?কোথায় চলেছে সে? পায় না কেউ দেখতে। এসব ঘটনা কেউ দেখেও দেখে না। কুমারীর শরীর রক্তে ভাসা মানে সমাজে আলোড়ন তোলা। যেন কোনো সুনামির উৎপত্তি হয়। সৃষ্টিস্থল কিনা নারীশরীর। নারীখাঁজ।



আজ চৌঠা বৈশাখ।
হ্যাঁ, আজকের দিনেই তো শৌর্য্য জানিয়েছিল তার মনের কথা কমলিকা কে। বৈশাখেই ভরা শ্রাবণ উঁকি দিয়েছিলো দুজনের মাঝে। তোলপাড় হয়েছিল দুটো হৃদয়। কালবৈশাখীর ঝড় তাদের নিয়ে গিয়েছিল কোনো এক অদূর ভবিষ্যতে। কোনো এক আদরবাসায়।
 পেরিয়ে গিয়েছিল চারটে বছর। স্বামী, সন্তান... ভরা সংসার কমলিকার।

আজ শৌর্য্যর জন্য উপহার কিনতে গিয়েছিল কমলিকা। শরৎ সমগ্র।


বইটা হাত থেকে পড়ে গেল। জন্মদিনে শৌর্য্যর উপহার দেওয়া ময়ূরপঙ্খীরঙা শাড়িটার অর্ধেক অংশ মাটিতে পড়ে আছে। রাস্তার ধূলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কমলিকার পরনে শুধু সায়া ব্লাউজ আর  শাড়ির অর্ধেক অংশ। ওর উন্মুক্ত শরীরের প্রতিটা খাঁজ ওরা চাখছে। স্বাদ জানেনা। তবু চাখে। নারীশরীর বলে কথা।

ওদের মধ্যে রয়েছে সৌভিক। কমলিকার পুরোনো বন্ধু। প্রেমপ্রস্তাব দিয়েছিল কোনোকালে।

কাউকে না পাওয়ার যন্ত্রণা যে মানুষকে এতো দূর টেনে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলে দিতে পারে, তার অভিজ্ঞতা ছিলো না কমলিকার।

একটা গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে ওরা সবাই মিলে কমলিকা কে ছিঁড়ে খায়। ও পারে না আটকাতে। অবশেষে সকলের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে আসে এই জনবিরল এলাকায়। হ্যাঁ জনবিরল। বাজার একটা। তবুও জনবিরল। সবাই যে অন্ধ। কেউ কমলিকা কে দেখতে চায় না। পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

কমলিকার চোখ দুটো শুধু খুঁজে চলে সেই বাড়িটা। যার প্রতিটা ইঁটে সাজানো সংসারের গন্ধ লেগে আছে। পুরোনো সংসারটায় আর ফিরে যেতে পারে না। লজ্জায়, ভয়ে, সঙ্কোচে। সে যে নষ্ট মেয়েমানুষ। বোশেখী ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া গাছের মতো।