নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সাজ্জাদ আলম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সাজ্জাদ আলম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সাজ্জাদ আলম









কাফন
 ******               

কামাল, এক নামেই গোটা গ্রাম চেনে, খুব নামকরা দর্জি, এমন সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের জামাকাপড় সেলাই করে যা বিশ্বের অন্য কোথাও মেলা মুশকিল. কামাল শুধু জমিদারদের জামাকাপড় বানাই কারন জমিদার ছাড়া সমাজের অন্য কোনো শ্রেনীর পক্ষে কামালকে অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য নেই. দোতলা বাড়ি, ওপর নীচ মিলিয়ে ছ'টা ঘর, দুটো বাথরুম ও একটা রান্নাঘর, ঠিক যেন জমিদার বাড়ির মতোই. কামাল জামাকাপড় সেলাই করে তার বাড়িতেই যদিও একটা দোকান আছে, সেই দোকানে কামাল বিক্রি করে "কাফন", আর এই দোকানকেই ঘিরে কামালের অহংকার. কামাল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, দুয়া করে, তবে দুয়াই উপরওয়ালার কাছে যা চাই সেটা শুনে হয়তো উপরওয়ালাও প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলেন. সে তার দুয়াই মানুষের মৃত্যুকামনা করতো, যাতে তার দোকান থেকে বেশী বেশী কাফন বিক্রি হয়. আর উপরওয়ালাও হয়তো তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন. প্রত্যেক দিন কামালের দোকান থেকে দশ-বারোটা কাফন বিক্রি হয়ে যেত. কাফন কিনতে আসা ব্যক্তির সঙ্গেও কামাল ভালো ব্যবহার করতো না, মৃত্যু কে নিয়ে মজা-মস্করা করতো, ক্রেতাদের যে রাগ হতো না তা কিন্তু নয়, হতো, কিন্তু সহ্য করতে হতো কারন কামালের মাথার উপর জমিদারদের হাত ছিল আর যদি অন্য কোনো দোকানে যেতে হয় তাহলে গ্রাম পেরিয়ে যেতে হবে শহরে তাতে অনেক সময় নষ্ট আর তাছাড়া মৃতদেহ বেশীক্ষণ রাখাও অশুভ, এইসব কারনে জনতা কামালের অত্যাচার সহ্য করতো, আর কামালের মৃত্যু কামনা করতো.

    একদিন কামাল কিছু কাজের জন্য কলকাতা যায়. সাতদিন পরেই ঈদ, জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা করতে হবে. কয়েকদিন পর ফিরে আসবে. 

  আজ কামাল ফিরছে. হাতে দুটো বড়ো বড়ো ব্যাগ, জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা রয়েছে সেই ব্যাগে. কামাল বেশ হাসিখুশি, তবে মনে মনে ভাবছে বঙ্কু এই কদিনে কটা কাফন বিক্রি করেছে সব হিসাব নিতে হবে আর কলকাতা থেকে নিয়ে আসা নতুন কাফনগুলোও যেন তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যায়. হঠাৎই বাইরে চেঁচামেচি শোনা যায়, বন্দুক, তলোয়ার,তিলক আর টুপির এক জগৎ দাড়িয়ে আছে বাইরে. বাস দাড়িয়ে আছে. হঠাৎই একটা কাচের বোতল বাসের সামনের কাঁচটি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেল, কিছুক্ষণের মধ্যেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো, হইহুল্লোড় পড়ে গেল, কামাল তার দুই ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইল, কিন্তু না! পারলো না, পড়ে গেল নীচে, আগুনে জ্বলন্ত একটা বড় কাঠের ঠুকরো সোজা এসে কামালের বুকে লাগল. কামালের সারা শরীর জ্বলে যেতে লাগল. কামাল চিৎকার করছে আর যেন প্রকৃতি মজা-মস্করা করছে কামালের সঙ্গে. চারদিকে আগুন আর রক্ত, একটা রক্তে রাঙা ওড়না হাওয়ায় উড়ে এসে কামালের শরীর ঢাকা দিয়ে দিল. 

কাফনটা যদি সাদা না হয়ে 
 হতো নীল,লাল বা সবুঝ
মৃতদেহ কী কিছু বুঝতে পারে?
       নাকি সে অবুঝ