নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বর্ষা তুমি : শিবানী বাগচি



বর্ষা তুমি অঝোর ধারায়,
সকাল বিকাল সন্ধ‍্যা সাঁঝে!
অনুভূতির ভাল লাগা,
মন লাগেনা তাইতো কাজে!

ঘন মেঘে আকাশ ভরা,
গুড় গুড় গুড় শব্দ মাতন!
উঠছে হাওয়া তাল মিলিয়ে,
নুপূর পায়ে ছন্দে নাচন!

বর্ষা তুমি দুষ্টু ভারী,
সময় টুকু;তাও মনে নেই?
ইচ্ছে হলেই ঝরছো কেবল-
তোমায় ছুঁয়ে লাগছে ভালই!

ভিজছি তো বেশ ছাতার তলে,
পথ ঘাট সব জলেই ভরা!
বৃষ্টি আমি তোমার সাথে;
ভিজবো;হবো আত্মহারা!

ভিজছে মাঠ চাষের জমি,
সবুজ মাখা দূর বনানী -
হাওয়ার মৃদু একটানা দোল,
নুপূর পায়ে বৃষ্টি রানী!

ফলে ফুলে ভরলো ভূবন,
মন ভ্রমরার গুঞ্জরণ;
বইছে হাওয়া;শীতল ছোঁয়া,
মন উদাসী একতারা মন!

উজাড় করে স্বপ্ন বোনে,
চাষের জমি,খাটছে চাষী।
ফলবে ফসল ,ভরবে গোলা;
অনুভবে,প্রানের খুশী!

বর্ষা রানী তোমায় দেখে,
ময়ূর কেমন পেখম তোলে!
প্রেম সোহাগী বন ময়ূরী,
নাচছে কেমন পায়ের তালে!

তোমার নাচন বাড়লো বুঝি;
ভাসল জমি,গরীব চাষী-
ঘর বাড়ী সব কোথায় গেল;
জলের তলার স্বপ্ন গুলো?

ঝরছো কেন এবার থামো!
ঝর ঝরিয়ে ঝরছো কেন?
আর কতকাল ঝরবে শুনি;
সৃষ্টি ছাড়া ঘ‍্যান ঘ‍্যানানী?
.

বৃস্টির বিকেল : রবি মল্লিক



প্রকৃতি আজি সেজেছে আবার
নববর্ষার সাজে,
স্নিদ্ধ শান্ত বারিধারায়
মনেতে মৃদঙ্গ বাজে৷

তাল সুপারি গাছের সারি
নৃত্য করেই চলে,
দীঘির জলের সমুখ পানে
ঢলা ঢলি খেলে৷

শান্ত বাগান উঠেছে মেতে
নিত্যনতুন তানে,
মনটা আমার উথালপাতাল
বর্ষামঙ্গল গানে৷

ঈশানকোণে মেঘের ফাঁকে
সূর্য্য মারেন উঁকি,
বৃষ্টি শেষে আবার নতুন
দিবার আলো দেখি৷

অকালে বর্ষণ : অনিন্দ্য পাল


পাঁচিলের উপরে পেরেকগুলো ভেজারোদে মাখামাখি
দুটো শালিখ সেই উল্টানো পেরেকের শাসানি ভুলে
নাচছিল
খুনসুটি করছিল
আর বৃষ্টিতে ভিজছিল
                                 এখন আইনত বসন্তের শেষ
বর্ষার ধারা নামে ঝুরঝুরে আইনের মত
এখন কি খুব দরকার ছিলো
                                         বৃষ্টির ?
বসন্ত শেষ হয়নি এখনও
টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্ম
বৃষ্টির কনভয় কোথাথেকে ঢুকে গেল
                                                      অকাল নিয়মে?
দরকার ছিল কি খুব ... এ বসন্তের শেষে
আকাশ-মেঘ আর দেবদারু গাছের দুঃখ দুঃখ খেলা?
দেবদারু পাতা থেকে স্রোত
নেমে এল অন্ধকূপ থেকে
নিদ্রা গেছেন দেব

অপ্সরীদের এখন ঋতুকালীন ছুটি
                                            ভেজা শিথিল রোদ্দুর
                         স্নান সেরে হেসে ওঠে বিফল বসন্ত
                  ভেজা হাসি থেকে ঝরে 
পারলৌকিক ফোঁটা

কান্না যদি বলা যায় সেই সব অকাল বৃষ্টিস্বরে
কবুতর মন তবে
                  ভেঙেচুরে নেমে আসা
                                           আকাশ আঁকড়ে ।

স্বপ্ন-পরী : মিঠুন কর্মকার


আর ঝরো না ও বৃষ্টি ভাই
                     দোহাই লাগি তোর,
তোর লাগি আজ বন্ধ হয়েছে
       নৌকা ক্ষেয়া দেওয়া মোর।
মাঝি আমি ক্ষেয়া দিয়েই
              মোর সংসারখানি চলে,
অতুরে দূরে বিদ্যুৎ চমকাইয়া
   কে যেন আসিতেছে দুলে দুলে।
কাছে আসতেই হৃদয় মোর
                  কেঁপে চলেছে হন হন,
কোন পরীর দেশ থেকে
            আজ তার অত্র আগমন ।
ভুলে গেছি আমি মাঝি
             দেখে এই অপ্সরীয় রূপ,
যেন স্বর্গ থেকে হেথায় এসে
           দিয়ে চলেছে দর্শনীয় সুখ।
বৃষ্টিতে ভেজা কালো চুল
                 আর চঞ্চল চক্ষু দুই খানি
হৃদয় ব্যাকুল করা কণ্ঠ স্বরে বলিল,
                আমায় পার করে দেবে তুমি?
কথা নয় যেন মুখ দিয়ে তার
                  বয়ে চলেছে অমৃতের ধারা,
আমি নিরবে নৌকা চালিয়ে চলেছি
                              লগি ও দাড় দ্বারা ।
হঠাৎ ভঙ্গিত হলে নিদ্রা
                     বসে পড়ি বিছানায় ,
একি দেখিলাম আমি,
কেন জাগিয়ে দিল বিধাতা মোরে হায় !
ছোট্ট বেলায় অনেক
                 পরীর গল্প শুনছিলাম আমি ,
স্বপ্নে দেখা দিয়ে আজ আমার
                  এ কি অবস্থা করিলে তুমি?
হে বিধাতা আমার সাথে
                       খেলিলে এ কি খেলা ,
আমি পাগলা নৌকায় পড়ে থাকি
                      সকাল সন্ধ্যা রাত্রি বেলা ।

বিষন্ন অপেক্ষায়: কৌশিক গাঙ্গুলি


অনেকদূর চলে যেতে যেতে
মনে হয় বলতে ভুলে গেছি
আসি বলে আসতে ,
আমার অপেক্ষায় বুড়ি মা
এখন অস্হির হয়ে আছে ।
তবু হাঁটছি চোখের জল মুছে
সামনে রুক্ষতা , সবুজ হারিয়ে গেছে , দেওয়ালেতে রক্তের দাগ যেন মানচিত্র ।
কে কাকে চিনতে পারছে বা পারবে কিনা তা নিয়ে শীতল প্রতিযোগিতা ।
তবু হাঁটছি অনেকদূর , রুক্ষতা
কুটিল কিংবা জটিল জীবন পেরিয়ে ,
অপেক্ষায় আছে বুড়ি মা , চোখের জল অবিরাম ,
এক বিষন্ন অপেক্ষায় .... ।
মনে হয় বলতে ভুলে গেছি
আসি বলে আসতে ।

চাতক পাখি : সুমিত মোদক



হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে এসে
চাতক পাখিও চেয়েছে জল ;
বার বার বলেছে ---
চোখ গেলো , জল ঢালো ....
কে আর জল ঢালবে !
জল ঢালার কেউ যে নেই এখানে  ;
বৃষ্টিও আর হয় না ;
প্রকৃতিও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
এ পরিত্যক্ত গ্রাম থেকে ;
#
এখানে এক সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতো
আষাঢ়-শ্রাবণ-ভদ্রে....
এখানে এক সময় সোনালী ধান ফলতো  ;
সবুজে সবুজের সমারোহ ;
পুকুরে পুকুরে ডুবসাঁতার , চিৎসাঁতার....
#
ওরাও একদিন পুকুর ভরাট করলো ,
খাল ভরাট করলো ,
কেটে ফেললো গাছ ;
বাদ পড়লো না ভূগর্ভস্থ জলও. . .
#
এখানে আর বৃষ্টি হয় না বর্ষা কালে ;
কোনো ঋতুতেই ;
#
একটু একটু করে শুরু হল জলের হাহাকার ;
শুরু হয় আরেক গ্রামের খোঁজ ...
কিন্তু , কোথায় পাবে আরেক গ্রাম !
সব গ্রাম যে মৃত , মৃত এক সভ্যতা  ;
#
অথচ , হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চাতক পাখি আসে
বৃষ্টির আবাহনে , বর্ষার আবাহনে ;
#
আর আমরা ,
চাতক পাখি হয়ে তাকিয়ে আছি
চাতক পাখির দিকে  ,
আকাশের দিকে
এক ফোঁটা বৃষ্টির আশায় ;
বাঁচার আশায়  ....

আর এক বৃস্টি :- শুভম চক্রবর্ত্তী


আকাশ আনন্দে আত্মহারা হয়ে
রোদনে ব‍্যস্ত।
গাছেরও ব‍্যস্ততার অবকাশ নেই,
তারা প্রেমিক- প্রেমিকার মতো
বৃষ্টি খাচ্ছে।
কবির কলম আর ছোটে না,
তাদের বাড়ির আর মনের
জানালা দরজা বন্ধ।
ভোগী বাঙালির জালাতনের অন্ত নেই।
সুযোগ বুঝে বিদ‍্যুৎ পাখি
ফুরুত করে উড়ে গেছে।
অনেকে আবার কাজ-কর্মে
ক্ষতির হিসাব গুনছে।

আজ আর কাগজের নৌকা
ভাসেনা জলে।
আজ আর কেউ ফুটবল
খেলে না বৃষ্টিতে।
আত্মা আছে, তবে তা আর-
আত্মহারা হয় না।
বৃষ্টি এখন পুলকের নয়,
তা স্বাভাবিক।

আর এক দিকে,
আজও টিনের চালে ঝম ঝম-
করে আওয়াজ ওঠে।
আজও ফুটো চালের নীচে
পাততে হয় গামলা বালতি।
আজও বৃষ্টিতে সংগ্ৰাম চালাতে হয়
বেঁচে থাকার।

তাই ছন্দ তোলা রইল
তোমাদের জন্য।
আমার বিদ্রোহী চোখে- বৃষ্টি
কঠোর বাস্তব হয়ে ফোটে।
আমার বৃষ্টি-এ আর এক বৃষ্টি।

অনেকে বলবে এ কেমন বৃষ্টি,
উত্তরে বলি- "বৃষ্টি একই আছে,
শুধু দৃষ্টি টা পাল্টেছে।"

বর্ষণ-স্পৃহা: তন্মনা চ্যাটার্জি



গলির মোড় পেরিয়ে হঠাৎই দেখা তোমার সাথে,
চিনতে পারছো না বোধহয় আমায়
তা না পারারই কথা ।
বহু বছর আগে এভাবেই হঠাৎই ছেড়ে গিয়েছিলে!
ওমা , তাও বুঝি বুঝতে পারছো না!
মনে পড়ছে না সেই সে দিনের বৃষ্টির রাতে
এই গাছটার তলাতেই তো
ভীষণ জোরে চিৎকার করেছিল
আমি আর আমার অধিকার বোধ!
আর সেই মুহূর্তেই ,ওই ঝড় জলের রাতে
একলা একাকী আমায় পরিত্যাগ করেছিলে তুমি!
কি হোলো অনুভূতি ,ওহ! থুড়ি!
তোমাকে তো মন বলে ডাকতাম।।
চিনতে পেরেছো তাহলে।
কি হোলো কি বলছো
ফিরতে চাইছো?
না গো আমার এই শুন্য হৃদয়ে
তোমার আর কোনো জায়গা নেই!
ভালো থেকো তোমার অসম্ভব
তীব্র চাওয়া পাওয়ার সংসারে ;
অন্য কোথাও ,অন্য কোনো ঘরে!!

অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো
চেনা বট গাছটার তলায় ভিজতে থাকলো
বেঁচে থাকার অন্য গল্পেরা!!

*******************


বৃস্টি দিন : রোমা মন্ডল ব্যানার্জি



আহা,এমন বৃষ্টি দিনে কি অভিমান করতে আছে !
এমন বরষায় কি অভিমান সাজে  !

এমন বৃষ্টি দিনে আরও একটু ইচ্ছে জ্বর বাড়ুক তবে,
কালো অভিমান আরও অনেকটা গাঢ় অন্ধকার না হয় হলে হবে..

বৃষ্টিদিনে প্রেম চোখে থাকুকনা কিছু লাজুকিয়া ভয়
প্রিয়জন কড়া চোখেই বুঝিয়ে দিক  ,
"বলি অনেক হয়েছে, আর কিন্তু ভেজা নয়..."

কপালে হাত দিয়ে বুঝে নিক অপলক মন উঁচাটন,
বৃষ্টি ভেজা  মুহুর্তেরাও উবু হয়ে বসে মাখুখ না হয় মুখোমুখি লজ্জার লেনদেনের ক্ষণ...

সাদা বৃষ্টিও তো নরম উত্তাপ চায়,
এমন অন্ধকার ঘন, তরল বরষায়..

বলো,এমন বৃষ্টি দিনে কি অভিমান করতে আছে !
এমন বরষায়  কি  অভিমান সাজে  !


গল্প: বৃস্টি নামার আগে :- পায়েল ব্যানার্জি



আজ সকাল থেকেই মেঘ করে আছে।যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে।সকাল থেকেই ফোনে একের পর এক মেসেজে আসছে।কাল বৃষ্টির জন্মদিন ছিল যারা উইশ করেনি সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা বি-লেটেড হ্যাপি বার্থডে জানাচ্ছে।কেউ কেউ আবার কালকের ফোটো গুলো তে কমেন্ট করছে।কাল বন্ধুদের সাথে রেস্তোরাঁয় খেতে গেছিলো।তাও বন্ধুরাই জোর করে ট্রিট দিতে হবে বলে নিয়ে গেছিলো।
তাতেও মন ভালো নেই বৃষ্টির।সব কিছুই জানো কেমন ফ্যাকাশে লাগছে তার।সেই এক অফিস বাড়ি,বাড়ি অফিস।কফির কাপটা নিয়ে  বারান্দায় গিয়ে বসলো বৃষ্টি।

বৃষ্টি সেন কাজের সূত্রে কলকাতার বাইরে থাকে।মা বাবা থাকে কলকাতায়।কিছু দিন হলো সেও ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছে।ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিরত।সেই সূত্রে কলকাতার বাইরেই থাকে সে একা।মাঝে মাঝে বাবা মা যায় ঘুরতে তার কাছে,কখনও আবার সে আসে কলকাতায়।

আকাশের আজ মুখ ভারী ,ঠিক বৃষ্টির মতো।যখন তখন ঝড় উঠবে বৃষ্টি নামবে।বন্ধু,পরিবার সব কিছুর মাঝে থেকেও বৃষ্টির জানো কেমন একলা লাগছে।চেষ্টা করেও আবিরের কথা সে ভুলতে পাচ্ছে না।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ফোন গ্যালারি খুলে সব পুরোনো ফটো গুলো দেখছিল সে।ফোটো গুলো খুব উজ্জ্বল লাগছে কিন্ত,বর্তমান টা ফোটো গুলোর মতো উজ্জ্বল নয়,আর ভবিষ্যতের কোনো ঠিকানা নেই।নিজের কলেজ লাইফের ফোটো,আবিরের সাথে তার কাটানো আবেগঘন মুহূর্তের সব ফোটো।তিন বছরে আর একবারও দেখা হয়নি তাদের।

কলেজে পড়তে পড়তেই তার সাথে আলাপ হয় আবির রায়ের।আবির আর বৃষ্টি একই সাথে পড়তো কলেজে।বেশ হ্যান্ডসাম আবির রায় কলেজের প্রতিটা মেয়ের হার্টথ্রব ছিল।আবির ও অনেক মেয়ের সাথেই ঘোরা ফেরা করতো।আবিরের মতে এটাই তো বয়স।আজ এর সাথে ডেটিং তো কাল ওর সাথে ডেটিং।আবির কে বৃষ্টি কলেজের প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করলেও তার এই হাজার মেয়েদের সাথে ঘোরা ফেরা কখনোই তার পছন্দ ছিল না।এক কলেজে পড়াকালীন তারা দুজনেই ভালো বন্ধু ছিল।বলা যায় দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেছিল।পরে বৃষ্টির আবিরের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হলেও  আবিরের দিক থেকে কোনোদিনই তেমন কিছুই ছিল না।বৃষ্টির বন্ধুরাও জানতো সে আবিরকে ভালোবাসে,কিন্তু বৃষ্টি তাদেরকেও কিছু বলতে দেয়নি আবিরকে।আবির রায় তখন অন্য মেয়েদের সাথে মত্ত।বৃষ্টিও ভয় আবিরকে কোনোদিন কিছু বলতে পারেনি যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।এরপর কলেজ শেষে চাকরি পেয়ে দুজন দুদিকে চলে যায়।

তারপর কেটে যায় তিনটে বছর।ফোনে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হলেও দেখা সাক্ষাৎ কিছুই নেই আবির আর বৃষ্টির মধ্যে।দেখা সাক্ষাৎ না হলেও প্রতি বছর জন্মদিনের প্রথম ফোনটা আবিরই করতো বৃষ্টিকে।কিন্তু,এ বছর আর আবিরের ফোন আসেনি একবারও।গত এক বছর ধরেই আবিরের ফোন আসেনি।বৃষ্টি অনেকবার ফোন করলেও কোনো উত্তর পায়নি সে।ফেসবুকে শুধু ফোটোতে লাইক কমেন্টেই সীমাবদ্ধ সম্পর্ক এখন।গত ছয়মাস সেটাও বন্ধ হয়েছে,  আবির আর তেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে এক্টিভ থাকে না।

বেশ কিছুদিন ধরেই মনটা বড্ড খারাপ বৃষ্টির।এবার চাকরি ছেড়ে কলকাতাতেই থাকবে বলে মনস্থির করেছে।বাইরে মা বাবা বন্ধু বান্ধব এই শহর ছেড়ে তার আর বাইরে পরে থাকতে ভালো লাগছে না।কলকাতায় চাকরিও খুঁজছে পেলেই ফিরে আসবে সে।ফোটো গ্যালারি তে কিছু পুরোনো ফোটো এখনো রয়েছে,সেই গুলোই বসে বসে দেখছে সে।হটাৎ ফোনটা বেজে উঠলো বৃষ্টির।

  - "হ্যাঁ বল।
  - বৃষ্টি আজ একবার দেখা করতে পারবি?
  - আজ আবার এই তো কাল দেখা হলো আজ আবার কেন? আজ আর হবে না রে শ্রীপর্ণা।
  - আরে না বললে শুনবো না দেখা করতেই হবে খুব দরকার।
  - কি দরকার।
  - তুই আয় এলেই বলবো।
  - আরে শোন শোন
  - না না কিছু শুনবো না আজ বিকাল পাঁচটা আমাদের পুরোনো ক্যাফেতে মনে ফ্রেন্ডস ক্যাফেতে।বাই।
  - আরে আরে শোন........


কিছু শোনার আগেই ফোনটা কেটে গেলো।বিকালে একটা থমথমে মুখ নিয়ে পৌঁছলো ফ্রেন্ডস ক্যাফেতে।সব পুরোনো বন্ধুরাও সবাই হাজির।

  - "কিরে তোরা সবাই তো দেখছি হাজির।কি ব্যাপার বলতো এই তো কাল আমার ঘাড় ভেঙে খেলি আবার আজ এত জরুরি তলব?কি ব্যাপার বলতো শ্রীপর্ণা?
  - দাঁড়া দাঁড়া একটু পরেই বুঝতে পারবি।

   বলতে বলতেই আবির ঢুকলো ক্যাফেতে।আগের থেকে আরো হান্ডসম লাগছে আবির কে।ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি,পাঞ্জাবি,পাঞ্জাবির নিচে জিন্স।
এক মুহূর্তে আবির কে দেখে কোথায় জানো হারিয়ে গেল বৃষ্টি।আবির কে দেখেই তো শ্রীপর্ণা বলে উঠলো' ইসঃ তোকে যদি কিছু দিন আগে দেখতাম না আবির তাহলে আর অন্য কাউকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলতাম না।'হা হা হা তাই নাকি রে শ্রী?সবাই  আড্ডা গল্পোয় মশগুল হয়ে পরে।এতদিন পর সবার সাথে দেখা আবিরের।

আজ খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টির আবিরকে নিজের মনের কথা বলতে। ইচ্ছে আজ শুধু একা আবিরের সাথে সময় কাটাতে।আবিরের হাতটা ধরে বলতে আবির তুই শুধু আমার,ইচ্ছে করছে আবিরের বুকে মাথা রেখে  মনের সব কথা উজাড় করে বলতে।এত দিনের রাগ,দুঃখ,অভিমান সব এক মুহূর্তে তার কাছে উজাড় করে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু,কাকে বলবে সে তার সমস্ত রাগ ,দুঃখ ,অভিমান সমস্তটাই তো শুধু তার একার,ভালোবাসাটা তো বড্ড একতরফা হয়ে গেছে।মনে মনে ভয় বন্ধুত্ব হারানোর ভয় বৃষ্টিকে গ্রাস করছে।যদি ভালোবাসার কথা বললে আবির তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে যদি সে আর বন্ধুত্বটাও না রাখে।না!আর না,তার এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো,আর বেশীক্ষন থাকলে সে আরো দুর্বল হয়ে পড়বে,আজকের পর আর কোনোদিনও সে আবিরের সামনে আসবে না,একবার খুব ইচ্ছে ছিল তার আবিরকে দেখার দেখা হয়ে গেছে আর সে কোনোদিনও আসবে না আবিরের সামনে কোনো যোগাযোগও রাখবে না।

সবাই ব্যস্ত দেখে,একরকম চুপিসারেই বৃষ্টি চলে যাচ্ছিল সেখান থেকে।না সে আর তার একতরফা ভালোবাসা বাড়াতে চায় না এতে তারই কষ্ট।কারণ আবির কোনো দিনই তাকে ভালোবাসেনি।আবিরের পছন্দ সে কোনোদিনই হয়ে উঠতে পারবে না।তাই চলে যাওয়াই ভালো।

  - "কোথায় যাচ্ছিস বৃষ্টি?
   থমকে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
-কিরে কেমন আছিস?
  - ভালো আছি আবির তুই?
  - ভালো।কোথায় যাচ্ছিস তুই?
  - আমার একটু তাড়া আছে আবির আমায় বাড়ি যেতে হবে।
  - আমার সাথে কথা না বলেই চলে যাবি?
  - অন্য কোনো সময় আবার কথা হবে আজ চলি।
  - আরে দাঁড়া দাঁড়া অন্তত আজকে তোদের সবাইকে যে কারণে ডেকেছি,সেটা শুনে তো যা যাবার আগে,তারপর চলে যাস আটকাবো না।আমি কলকাতা ছাড়ছি এবার দেশের বাইরে যেতে হবে বুঝলি কিছু বছরের জন্য তাই ভাবছি তার আগে বিয়েটা করেই যাবো।
  - তাই বাঃ খুব ভালো। কংগ্রাটস
  - হ্যাঁ রে বাড়ি থেকেও বলছে বিয়ের কথা তাই ভাবলাম করতে যেকালে হবে তা করেই নিয়ে বিয়েটা।
  - হ্যাঁ ভালো করছিস আবির।
  - হ্যাঁ ভালোতো অবশ্যই করছি।তোরা সবাই আসবি কিন্তু বিয়েতে।কি রে আসবি তো বৃষ্টি?
  - না রে আবির হয়তো হবে না যা কাজের চাপ........কাঁপা গলায় উত্তর দেয় বৃষ্টি।চলি আবির আবার.....
  - না বললে আমি শুনবো না বৃষ্টি তুই না থাকলে আমার বিয়েই হবে না।
  - আমায় জোর করিসনা আবির। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
  - তুই একবার দেখতেও চাস না আমার হবু বউ কে?
  - না চাই না।বেশ জোরেই  এবার উত্তর দেয় বৃষ্টি।
  - দেখতে তো তোকে হবেই বৃষ্টি না হলে যে আমি বিয়ে করতেই পারবো না.......একরকম জোরে বৃষ্টির হাতটা টেনে ধরে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায় আবির,ওই দেখ মেয়েটাকে।
  আমার সারা জীবনের দুস্টুমি গুলো সহ্য করার দায়িত্ব নিতে পারবি বৃষ্টি?
আমি জানি কলেজ জীবন থেকেই তুই আমায় ভালোবাসিস। কিন্তু,আমি তখন নিজের কেরিয়ার আর অবশ্যই অন্যদের সাথে ব্যস্ত ছিলাম।কিন্তু,বিশ্বাস কর তুই ছিলিস আমার বেস্ট চয়েস।আমাকে তুই ছাড়া আর কে বুঝবে বল।তোর থেকে যত দূরে গেছি তোর প্রতি ভালোবাসা তত বেড়েছে।গত এক বছর তোর সাথে সম্পর্ক রাখিনি ইচ্ছে করে ভেবেছি ভুলে যাবো,নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল না আমার তোকে কোনো ভাবেই ঠকাতে চাইনি,কিন্তু না পারিনি তোকে ভুলে থাকতে।আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমার জীবনের মিস পারফেক্ট।আমায় বিয়ে করবি?

আয়নায় নিজেকে দেখে লাজুক চোখে আবিরের দিকে তাকালো বৃষ্টি।আজ হটাৎ তার আবির কে দেখে লজ্জা লাগছে।এর আগে এমন কোনো দিনও হয়নি।
অঝোর ধারায় বৃষ্টির চোখেও জল।লোকজন কিছু না মেনেই সবার সামনে আবিরকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মেলায় বৃষ্টি।আজ বৃষ্টি কোনো বাঁধা না মেনে আবিরের ওপর ঝরে পড়তে চায়।প্রকৃতিতেও তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

                                   

বর্ষা এলো বুঝি :- মুকলেসুর রহমান



ঈশান কোণে মেঘ করেছে
ওই বর্ষা এলো বুঝি,
অনেক দিন পর পেলাম দেখা
তাই বরণ ডালা খুঁজি।

ওরে বৃষ্টি এতদিন তুই কোথায় ছিলি
আমায় একা রেখে,
এই বুঝি তুই উদয় হলি
আমার দারুন কষ্ট দেখে।

আমি মাটি তোরে ডাকি
ভিজা মোর গাঁ,
মানুষ পো হাটবে যখন
তার কাঁদা হবে পাঁ।

বৃস্টি :- দেবস্মিতা খাঁড়া


এক বৃষ্টিমুখর দিন, মেঘের গর্জন,
সারাক্ষণ বৃষ্টি, আকাশ মেঘলা,
তরতর করে রেলিং গড়িয়ে বৃষ্টি পড়ছে,
আজ তবু খোলা আমার ঘরের জানালা।
সেখানে নীরবে বসে আছি একেলা।

পথঘাট কর্দমাক্ত বৃক্ষ ভেঙে পড়ার শব্দে,
তবু আমি বসে আছি, একা নিস্তব্দে।
তখন আমার দৃষ্টি প্রকৃতি পেরিয়ে,
মাঠ-ঘাট, গাছপালা, সবকিছু এড়িয়ে।
তবু আজ মনে পড়ে সেই স্মৃতি,
কোথায়, কবে বিদায় দিয়েছি ইতি।
সেই ভূলুণ্ঠিতা প্রকৃতি বড় অসহায়,
আমারই মতো ঝরঝর দুচোখে অশ্রু ঝরে যায়।

শুনেছো সেই কথা ওগো অন্তর্যামী?
যে প্রকৃতির মাঝে হারিয়েছিলাম আমি