নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

পল্লব সিনহা




চোখ যায় যতদূর; কেবলই পড়ে থাকা হাড়।
'ইহা ভালোবাসার ধ্বংসস্তুপ' বলেছো তুমি।
মৃত পর্যটকের পাহাড়।

নেমেছে গৃহযুদ্ধ।

আমরা সেই পাহাড় ফেলে, এগিয়েছি ঈশ্বর।
এখানে রক্তের ঘ্রাণ, উড়িয়েছে বন্দুক।
ভুলিনি তাকে;

সে ঘ্রাণে মেখে সাদা ভাত, খাওয়ানো প্রিয় বন্ধু!

এখানেই শেষ প্রেম। শরীরও বন্ধ্যা।
জেনেছি হে জীবন; মৃত্যু অলকানন্দা!

বিরহের উদ্যান; সাজিয়েছে যখ।

আমরা-

পরিচয়হীন। শায়িত। দুই মৃত পর্যটক!

সারাফাত হোসেন






একা



বৃষ্টি এলো,
পাখি ফিরে গেলো বাসায়।

মেয়েটা ভিজছে
একা
দূরে অনেক দূরে আর একজন
সেও ভিজছে
তবে তার সাথে নতুন মানুষ,
নতুন বসন্তের মত ওদের প্রেম।

বৃষ্টিতে নাকি ভালোবাসা বাড়ে,
হয়ত বাড়ে
কিন্তু বৃষ্টি যত প্রখর হয় মেয়েটা তত একা একা হয়ে যায়।

এমনটা তো পারত ছেলেটার নতুন প্রেমিকা সে-ই হতো,
সে ভিজত ছেলেটার সাথে যেমন আগের বর্ষায় ভিজেছিল তারা দুজন।

শব্দ জব্দ (৪) : আজকের শব্দ "প্রেম"





প্রেম: /বিশেষ্য পদ/ প্রীতি স্নেহ অনুরাগ ভালবাসা ও ভক্তি মিশ্রিত ভাববিশেষ।

 প্রেম বা ভালোবাসা ,হম্ম পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি ,যা কিছু উৎপত্তি সবটুকুই এই প্রেম বা ভালোবাসা না থাকলে হতো না বা হবেও না ।



"প্রেম "
নিয়ে যারা লিখলেন


"আখের রস গুড়ের পাকে
প্রেমও তেমন মনের ফাঁকে।
ভালোবাসা আর দেহত্ববোধ
মিলেমিশে একাত্ম হোক।"

      - সুনন্দ মন্ডল

"আকাশলীনার কানের দুলে
শিশির জমাক কাব্য,
বুকের মাঝে নিবিড়ভাবে
প্রেমনদী হোক নাব্য…"

         - সৌমেন দাস

"চশমার কাছে ধার নেওয়া দৃষ্টি,
ব্যবধানে আটকে থাকা ফ্রেম
নন্দন থেকে ভিক্টোরিয়ায় আটকে আছে প্রেম"

        -  অরূপ সরকার



"দুর্বলতার দুর্বার মত প্রেম এক চির সবুজ
হৃদয় মাটির অনুভূমিক বুকে বিরাজ
প্রেম এক কাঁথা সেলাইয়ের সুচ
নক্সায় ইতিহাস বাঁধে জীবন অধ্যায়ের সুইচ...."
 
          -  হরেকৃষ্ণ দে



       "         ঘুম ঝির ঝির চোখের পাতা স্বপ্ন মাখানো মন,  আলসে আলসে ভোর আদুরে ঠোঁটে চুমু এঁকে দেয়
 মন বলছে আর একটু ঘুমোই কাজ যা আছে যাক না চুলোয়
 মন আজ হয়ে যাক ঘুমকাতুরে এক প্রেমিক।  "

      - বর্ণা দত্ত


"
গুনীজন কন, প্রেম লুকিয়ে
রাখতে পারাও শিল্প, নিগূঢ় প্রেমে।
তুমি কি পেরেছো সখী
রাখতে সমেত প্রেম বন্দি একফ্রেমে।"

      -   জিয়াউর রহমান


"প্রেম: জানি সবটুকু গেম,ফুরিয়ে গেলে মায়া তার,
ভালোবাসা: নিজের মৃত্যুতেই ,বেঁচে থাকা জন্মান্তরে বারবার।।"

          - জ্যোতির্ময় 

সৌমিক মৈত্র






১।।

যতক্ষন না ফুরিয়ে যায়, ততক্ষন অবদি সবকিছু রঙীন;
চোখ আলোর কাছে ঋণী আর অন্ধকার মোমবাতির কাছে।

২||

ভেঙে গেলে তা বিচ্ছিন্ন, মচকে গেলেও তা আটকে থাকে শুকিয়ে যাওয়ার আগে অবদি।।

৩||

জল জীবনের জল ধ্বংসের, পরিস্থিতি বেছে নেয় মরা বাঁচা।

৪||

মৃত্যুর পর মানুষ রূপে কুৎসিত হয়, আর গুনে সুখ্যাত।।

৫||

বিছানার সাথে নিঃশ্বাস ভাগ করতে শিখলে তবেই একসাথে বাঁচা যায়।।

শব্দ জব্দ (৩) : আজকের শব্দ " অক্ষর"






অক্ষর : অক্ষর বলতে আমরা বুঝি বর্ণমালা প্রতিটি বর্ণকে । 

অভিধান অনুযায়ী 

অক্ষর বি. 1 বর্ণ, letter (অক্ষরজ্ঞান); 2 যার ক্ষরণ নেই অর্থাত্ ব্রহ্ম, পরমাত্মা; 3 শিব; 4 বিষ্ণু; 5 আকাশ; 6 (ছন্দ.) একবারে উচ্চারণসাধ্য শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশ, syllable7 (বীজগ.) অঙ্কের প্রতীকরূপে ব্যবহৃত বর্ণ। ☐ বিণ. ক্ষরণহীন। [সং. ন+ √ ক্ষর্+অ]। ̃ .জীবী (বিন্), ̃ জীবক, ̃ জীবিক বি. লিপিকার, মুদ্রাকর, লেখক। অক্ষর পরিচয় বি. বর্ণজ্ঞান; বিদ্যারম্ভ (চার বত্সর বয়সে তাঁর অক্ষর-পরিচয় হয়); সামান্যতম জ্ঞান (এ বিষয়ে তার অক্ষর-পরিচয়ও নেই)। ̃ বিন্যাস বি. বর্ণ সংস্হাপন, লিখনপ্রণালী। ̃ বৃত্ত বি. অক্ষরসংখ্যার দ্বারা নিরূপিত বাংলা ছন্দবিশেষ (কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত)। ̃ মালা বি. বর্ণমালা, alphabetঅক্ষরে অক্ষরে ক্রি-বিণ. যথাযথভাবে, হুবহু।

এবার একটু অক্ষর নিয়ে ভাবা যাক :

এই যে আমরা রোজ লিখছি বা পড়ছি সেটা যেকোনো ভাষায়ই হোক না কেন প্রতিটি ভাষার একটা অক্ষর আছে ,আমরা বাংলা অক্ষর ও ইংরেজি অক্ষর জানি বুঝি লিখতে পারি ,কিন্ত চাইনিজ বা জাপানিজ অক্ষর বুঝতে পারি না পড়তেও পারি না ,তেমনি হায়ারোগ্লিফিকের বর্ণ বা অক্ষর গুলো আজও রিসার্চ করার বিষয় ,এই অক্ষর গুলো আসলে এক একটা ছবি যেমন "অ" এটাও একটা ছবি আমরা এটাকে "অ" উচ্চারণ করছি কিন্তুক যারা বাংলা জানে না পড়তে পারে না তাদের কাছে এটা একটা ছবি মাত্র ।
তাই বলা যায় কে অক্ষর আসলে ক্ষরণহীন ,একটি ছবি যার দ্বারা আমরা অনুভূতি ,ভাব প্রকাশকে একটা লিখিত রূপ দিতে পারি ।


অক্ষর শব্দ নিয়ে আজ যারা লিখলেন



"মানুষের চোখের সামনে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে অক্ষর!
'অ' টাই বেঁচে আছে মানুষেরই আগে, বাকি সব ক্ষর।"

              -   সুনন্দ মন্ডল




"অক্ষরের ঠোকাঠুকি তে জন্ম নিলেও নিতে পারে কাব্য

ভাবনার পোষাকে মিশে থাকে প্রবাদও ।।"

               - অরূপ সরকার



"কথা ভুলে যাওয়া শ্রমিকের ফ্যাকাসে শব্দ ঠোঁটে-
বপন করলে অক্ষর-বীজ একদিন গল্প গাছ হয়ে ওঠে।"

           - মেঘনা রায়

"অক্ষর : পরিচিত দেওয়াল লিপি ,
             যতটুকু এই আমি,মৃত্যর আগে রোজ শিখি।"

                - জ্যোতির্ময়

"অক্ষর সবসময় বুলি নয়
কখনো তা প্যারামিটারও হয়।
ঘটেছে কত ঘটনা অপ্রীতিকর
কথা শুনেনি বলে অক্ষরে অক্ষর।"

    -  জিয়াউর রহমান

উজান উপাধ্যায়







নিষিক্ত




স্নান করতে গেছি ভেবে ডুবে গেছি নিষিক্ত ডিম্বাণুর চোখে।

দাঁত খুলে দাঁড়িয়ে গেছি নর্দমায়, শেকড় উপড়ে ছয়ফুট উচ্চতার গাছ চুলে কলপ দিচ্ছে।

তুমি জানতে, আমি স্নানে। শহরের সব জল আমার শরীরে-

এইভাবে শুকিয়ে যাচ্ছি রোজ। আমাকে ভেঙেচুরে শহরের গাধাদের ঘর সংসার।

তোমার কোলেপিঠে চড়ে এইভাবে সন্দেহজনক হয়ে বেড়ে উঠছি। চাঁদ পর্যন্ত আমার পচাগলা হাত।

শব্দ জব্দ (২) : আজকের শব্দ " কথা"





শব্দ জব্দ : শব্দ জব্দ শুনলেই একটা লেখা মনে পড়ে যায় শব্দ নিয়ে যার শব্দ যাদু যার লেখায় 

"শব্দ কল্প দ্রুম



সুকুমার রায়


ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রাম, শুনে লাগে খটকা-
ফুল ফোটে? তাই বল। আমি ভাবি পটকা!
শাঁই শাঁই পনপন, ভয়ে কান বন্ধ-
ওই বুঝি ছুটে যায় সে ফুলের গন্ধ?
হুড়মুড় ধুপধাপ- ওকি শুনি ভাই রে!
দেখছ্ না হিম পড়ে- যেও নাকো বাইরে।
চুপচুপ ঐ শোন! ঝুপঝাপ ঝ-পাস!
চাঁদ বুঝি ডুবে গেল?গব গব গবা-স।
খ্যাঁশ খ্যাঁশ ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ, রাত কাটে ওই রে!
দুড় দাড় চুরমার - ঘুম ভাঙে কইরে!
ঘরঘর ভন ভন ঘোরে কত চিন্তা!
কত মন নাচে শোন - ধেই ধেই ধিনতা!
ঠুং ঠাং ঢং ঢং, কত ব্যথা বাজে রে-
ফট ফট বুক ফাটে তাই মাঝে মাঝে রে!
হৈ হৈ মার মার 'বাপ বাপ' চিৎকার -
মালকোঁচা মারে বুঝি.? সরে পড়, এইবার।"



তাই শব্দ নিয়ে কিছু কাজ করার চেষ্টায় আমাদের একটু শব্দ খোঁজার চেষ্টা ।

আজকের শব্দ  "কথা" 

কথা নিয়ে যারা লিখলেন 

"স্পর্শ কর মন ছুঁয়ে দেখো 
শিশির ভেজা ধান ,
এমনিই প্রাণ পাবে কথারা সব
এতো শব্দের আয়োজন বৃথাই আমার।"

        -  বর্ণা দত্ত

"হৃদয়ের চোরাকুঠুরিতে জমে আছে  নানা কথা 
বলি বলি করে বলা হয়  না তো 
জমে আছে হৃদয়ে সে ব্যাথা 
থেকে থেকে হায় 
চোখ ভরে যাই,  বেড়ে ওঠে ব্যাথা টুকু 
দীর্ঘনিঃশ্বাসের ছাতায়।"

          - মান্নুজা খাতুন

"অনেক অপ্রিয় কথা যা সত্যও হয়,
অনেক সত্য সবসময় প্রিয় হয় না।
বাস্তবতার ভিড়ে অহেতুক কথাও গল্প বানায়,
সত্যি মিথ্যের আমদানি রপ্তানিতে মজেছে জমানা।"

            - সুনন্দ মন্ডল


"ঠোঁট ঠোঁট রেখে বুনে চলি কথা 
নীরবতার ভাষা সহজ নয় বোঝা।
কথার ভীড়ে হারিয়ে গেছে সবাই একলা একা,
কথার মুখোশ চাপিয়ে নিয়েই ঘরের পথে ফেরা।"

            - অরূপ সরকার


"
কথার কথায় সময় কাটে
কাটে কথার ভালো লাগার ঘোর...
তোর দেওয়া সেই ইচ্ছেডানায়
কথা পায়না উড়ান দেওয়ার জোর।"

          - মৌসুমী রায়

" কথার উপর বৃষ্টি পড়ে নৌকো আসে ঘাটে,
মুঠোর মাঝে গল্প উড়ে কান্না বিকোয় হাটে।
শহর জুড়ে জীবন পুড়ে ধূলোয় মাখা চিমনি,
তোমার কাছে চাইতে গিয়ে দাঁড়াই ঘুরে এমনি।"

               -  অরুণাভ নিয়োগী




"চোখে চোখে আর কতো দেখা হবে
প্রিয়তম লাজুকলতা
আর দেখা নয়, আজ ছুঁয়ে তোমাকে
বলবো মনের কথা।"

          -শাহীন রায়হান

"কঠিন কথা সহজ করে বলতে সহজ কথা জটিল হয়ে যায়..."

          -অনিমূল ইসলাম

"কথার পরেও কথা থাকে 
কথায় কথায় কথা বাড়ে
সঠিক কথা অনেক সময় 
হারায় নানান কথার ভারে"

   - মোঃ গোলাম মোস্তফা লিটু

"জমে থাকে কথা প্রকাশিত শব্দ রূপে,
পুড়েছিলো রক্তিম পলাশ বিষাক্ত 'ধুপে'।"
          
        - রৌনক হাজরা 


"সজীব বলে অনর্গল
জড়ের কথা মনে,
প্রকৃতি বলে সবার কথা
ক'জন তা শোনে!"
        
     -বৈশালী ব্যানার্জী 


কথা : ফুরিয়ে যেতেই অভিমান  জালিওয়ালবাদ 

        - জ্যোতির্ময়

কৃতী রায়





অন্তর্বর্তীকালীন...



ঝুপ করে নেমে আসা বসন্তের সন্ধ্যেয় ঝরে পড়ে কোনো মায়াবী গন্ধ! তোর বুকের ছাদে উঁকি দিয়ে দাঁড়াই ক্লান্ত আমি; চুল খুলে দিই। বিপদ বাড়তে থাকে, তুই ঠোঁট এগিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত। বাইরে বিধ্বস্ত রাষ্ট্র জ্বলছে প্রতিকূল হাওয়ায়। বুলেটে বুনে দেওয়া তাত্ত্বিক উপত্যকায় গোলাপ বাগান চোখে পড়ছেনা দূরবীনেও।
 তুই জামার বোতাম খুলে রেখেছিস আজ অজান্তেই।আমি ভালোবাসার স্পর্ধায় তাকিয়ে থাকি অনেকক্ষণ। তোর দেওয়া নাম ধরে ডাকতেই পরিচিত হাসি ছড়িয়ে পড়লো আমার আনাচেকানাচে। তোর চশমার ওপার থেকেও একই রকম আলো। আর প্রত্যেকবার এভাবেই ফোনের স্ক্রিনে ভিডিও কলে কয়েক'শ কিলোমিটার দূর থেকেও তুই আমায়ে ছুঁয়ে ফেলিস অবলীলায়। আমি মুখ নীচু করে ফেলি লজ্জায়। তুই এগিয়ে এসে কপালে এঁকে দিস চুমু। অপটিকাল ফাইবারের ডিজিটাইজড পৃথিবীতেও সে স্পর্শ আমাকে ছুঁয়ে ফেলে ঠিক কোন অদৃশ্য সূক্ষ্ম তরঙ্গে। বিজ্ঞান কোনোদিন কি তাকেই "ভালোবাসা" নামে ব্যাখা দেবে!?..হয়ত বা। জাগতিক কিলোমিটারের হিসেব পেরিয়েও আমাদের মাঝে ঠিক কোনো দূরত্ব থাকেনা আর।তুই আমাকে স্পর্শ করিস, আমি তোকে আদর। তুই আমার চুল সরিয়ে দিস ব্যক্তিগত মুহুর্তে, আমি তোর বুকে মুখ! তুই আমার কোলে শুতে চাস ব্যস্ত দিনান্তে, আমি অভিমান করে তোর চোখে চোখ।
ভেবে দেখেছিস,যে পৃথিবীতে তুই আর আমি আস্ত একটা জড়পদার্থ  ফোনের দু'প্রান্তে থেকেও ভালোবেসে ফেলছি দূরত্ব সরিয়ে ! সে পৃথিবীতেই, "ধর্ম", " বর্ণ", "জাত" আরোও কত কি নামের কিছু অদৃশ্য অন্তর্বর্তী বস্তু দিয়ে একে অপরকে আলোকবর্ষ দূরত্বে সরিয়ে দিচ্ছে কত্ত মানুষ!.... অদ্ভুত, তাই না?


জয়তী দাস





"সত্যের মুখোমুখি,,



যতটুকু বিনিময় হলো সারাদিন,
সবাই একই শিকড়ে ভিন্ন ডালে জুড়ে জুড়ে -

যা কিছু স্পষ্ট - ঠোঁট থেকে বেরিয়ে যাওয়া শব্দ
যা কিছু অসংগত সংলাপ- হঠাৎই গেলো মুছে !

অস্পষ্ট আলোয় দীঘির জল কালো হয়ে আসে-
চোখের সামনে প্রতিটা মলাট ছেঁড়া মনেহয়!
সাজানো পাপড়িগুলো ছড়িয়ে আছে; অনাবৃষ্টির মুক্তো ছটায়!

কয়েকশো বার প্রমাণ লোপাট করে বারবার আয়নার সামনে,
রুমালে মুছে নেওয়া যথেচ্ছাচারে শনাক্তকরণের দাগ!
লুকিয়ে পড়া দেহঘরে;সেজে ওঠা জমকালো পোশাকে-

বদলাবো ভাবতেই সেই কবিতা হতে চাই আজ,
কলমের কাছে আর্জি; স্পষ্ট হোক সেই অন্ধকার -

জীবনকে সত্যের মুখোমুখি কাঠগড়ায় টেনে আনতে ;
কঠোর কিছু শব্দের মুখোমুখি! কবিই দাঁড়াক -

তিহার : শ্যামল কুমার রায়


অনেক ভেবে দেখেছি-
তিহার জেলেই থাকছি।
অভিযোগে শুরু, অভিযোগেই শেষ
অভিযোগের খাতা, দ্রুত নিঃশেষ।
বেশ কঠিন ছিল ভালো ছেলে হওয়া
যৌবনের ঝোঁক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
শাড়ির ভাঁজে ছিল আলতো ছোঁয়া
আঁচল সরিয়ে শুধু কাছে পাওয়া
কাছে পাওয়ার রেশ,থাকে না বিশেষ
তৃপ্তির শেষ, হিসেব শুরু,
কূটক্যাচালিতে বুক দুরুদুরু।
পাওনা গণ্ডা বুঝিয়ে দিতে হবে
রক্ত ৠণ শোধ করতে হবে।
আমিত্বের লড়াই এ সব ছারখার
থামতে চায় না, জীবন বারবার
জনারণ্যে শুধু আজ মুখোশের ভিড়
সম্পর্ক কোথাও নয়তো নিবিড়
এর চেয়ে ঢের ভালো তিহারে থাকা
অপরাধী মন নিয়ে শুধু বেঁচে থাকা।
           -----------------------------

আর নেই ভয় : সাহা শোমী



আনাড়ি সমাজের চোখে আমি যে কেবলই অবলা নারী
নারী সেও,যে লক্ষীবাঈ
শত শত‌ বিদেশীর ওপর পড়েছিল ভারী।
মরতেও যে নেই ভয় আর,
নিজ অস্তিত্বের দায় শুধুই যে আমার।
জড়াবো না কাউকেই আর।
নামেই আপন যারা ,সেসব ভীতুদের নেই স্থান জীবনে আমার।
বেঁচে  রোজ রোজ মরেছি,
 মরে মরে রোজ বেঁচেছি।
জানি‌ দৃঢ়তাই শুধু আছে সাথে,
তবু বাঁচা টা নাহোক মুক্তি তো আমারই হাতে।
ভীতুরা খুঁজিস না আমায়,
এসেছে আমার মুক্তির সময়।
তোরা থাক দূরে ,এ যে আমার একার সমর
ভাবিস না আত্মা যে অবিচল, রয়ে যাবে অমর।
নেই ভয় এ্যসিডে ,বরবাদ যে কুড়িতে
তার ভয় কি বল  শান দেওয়া ছুড়িতে?

রিয়াজুল হক সাগরের দুটি কবিতা



অবুঝ শিশু না বলে কথা
অহংকারি বেসে,
বাংলাব বুকে মরে কেন তারা
হায়না শত্র রেশে।
বাবা মায়ের আদর পেয়ে
থাকেন অনেক সুখে,
হাজার কথার ফুল ছড়িয়ে
অন্য তুলেন মুখে।
অনেক সপ্ন দেখেন বাবা
বুকে নিয়ে তাকে,
সেই শিশুকে হত্যা করেন
নরো পশু বেসে।
হারিয়ে গেছে বিবেক নামের
একটি শিরো নাম,
বাংলাদেশের সভাব এখন
হচ্ছে এমন কাম।
আজ আমাদের ভাবতে হবে
মানবতার দাম,
এটাই সত্য বুঝে নিও
আসল এটাই জাম।



ঋতুমনি


ঋতু মনি বেজায় খুশি
একটু আদর পেলে,
বাবা মায়ের চোখের মনি
থাকেন গাল ফুলে।
লেখা পড়ায় ভাল যে তার
রাগটা অনেক বেশি,
কথা বলে চপড় চপড়
মুখে অনেক হাসি।
বইয়ের পাতায় দেয়না সে মন
খেলায় ব্যস্ত থাকে,
পড়ার কথা বললে সে হায়
মিট মিটিয়ে দেখে।
বাবার কাছে হাজার বায়না
কথার নাই শেষ,
সকাল হলেই পড়ে পড়া
এখন দেখি বেশ।
স্কুল ফাকি দেয়াই ছিলো
একটু তার সভাব,
নিয়মিত স্কুল যায় সে
সবাই দেখে অবাক।

তুমিময় অতীত পাঠ : শাহীন রায়হান


জলের মতো স্বচ্ছ দুটি চোখ
দুর্ভাবনায় পড়ে ছিলো লালচে জলের অববাহিকায়
স্মৃতিময় স্বচ্ছ শোকেস ভেঙে বেরিয়ে আসা
এক পরিত্যাক্ত কাচের উপর।

তোমার প্রিয়তম দুটি হাতের নীরব স্পর্শে
এ পৃথিবীর সবুজ উদ্যানে একদিন
স্বচ্ছন্দে বেঁচে ছিলো ওরা।

আজ ওরা মৃতপ্রায় অন্ধ সভ্যতার বেলাভূমিতে বিলুপ্ত প্রত্নতত্ব। তবু আমি দুঃখ ঢাকা নির্জন মাটির গভীরে
প্রতিনিয়ত খুঁজে ফিরি ওদের
মন দেই তুমিময় অতীত পাঠে
অতীত থেকে অতীতে।

মনি : মিঠুন কর্মকার



দাঁড়িয়ে রয়েছো ছবি হয়ে
আমি দেখেই চলেছি অনিমেষ
মনে হচ্ছে কোনো পরি যেন
আজ ধরেছে মানুষের বেশ ।

কেশ তোমার ময়ূর পঙ্খ
হাসিতে মুক্তোর ধারা
মুখের সৌন্দর্য্যতা হার মানিয়েছে
সহস্র নক্ষত্র তাঁরা ।

বস্ত্রে যেন তুমি রাজ কুমারী
বদন অপ্সরার ন্যায়
হাসিতে মন কেড়েই নিয়েছো
চক্ষুও অনেক কিছু কয় ।

কেশ তোমার যেন ময়ূর পঙ্খ
চাহনি তোমার মধুরান্ত
বিধাতা কি আমায় সুযোগ দেবে
হতে 'কালিদাসিয়' শকুন্তলার দুষ্যন্ত?

জানি তোমার লক্ষ্মীয় চরণে
সৌভাগ্যবান হতে পারবো আমি
যেন এক হতদরিদ্র
খুজে পাবে সর্পিয় মণি ।

নির্বিকা সরকার





দুই এ মিলে এক...

#পাহাড়

মাটির উপর জমছে মাটি,
বাড়ছে ক্রমে আঘাত স্তূপ।
পাহাড়, বলে আমরা জানি–
নরম মাটির কঠিন রূপ।

#নদী

গভীরে খুব নরম মাটি,
কোমলতা ভীষণ স্পষ্ট।
নদী, যেন মায়ের মতই–
স‌ইতে পারে সকল কষ্ট।

#পুরুষ–#নারী

সৃষ্টির দুই ভিন্ন মেরু,
কেন্দ্রে তবু মিলবে গতি।
পুরুষ যদি অটল পাহাড়-
নারী তবে কোমল নদী।


সুকান্ত রায়




মনগুলো সব ঘুপচি ঘরের থেকে,
একে একে শব্দ খুঁজলো হাওয়ার।
পোশাক তবুও দেহের শরম ঢাকে...
মনের হদিস কজন পেল ছোঁয়ার?

ট্যাক্সির পেছন শহর থেকে শহর,
তোমার খবর এ শহরের  কোথায়?
যন্ত্রনাদায়ক বুকের পাশে পাথর,
একটা উল্কা গড়িয়ে পড়লো চিতায়।

এ উল্কা আমার যেমন, ঠিক তোমার...
এ শহরের মায়ার জালের ওপর।
আয়না থেকে আয়নাবাজির খেয়ায়
আমার মাথায় কেউ পরালো টোপর!

না আমার কারও ওপর রাগ নেই,
খাঁচার পাখিও এই জন্মে হয়রান।
মুক্তি পেয়েই ঘুরবো আকাশ যদ্দূর,
ব্রহ্মান্ড চুমে মারবো এক ছয়রান।

শব্দ জব্দ (১) : শব্দ " কবিতা"











১৯৮০-র দশকের শুরুর ভাগে একদল তরুণ কবি কোমর বেঁধে নতুন কবিতা লিখতে নেমেছিলেন। অভূতপূর্ব উপলব্ধি নতুনতর ভাষায় ব্যক্ত করে কবিতায় একটি হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটিয়ে দেওয়ার দুঃসাহস করেছিলেন তাঁরা। এক মন্থর সন্ধ্যায় বাংলা মোটরের চৌরাস্তায় জোহরা মার্কেটের এক সস্তা হোটেলের চায়ের টেবিলে খেলাচ্ছলে নতুন কবিতার একটা ইশতেহারও তাঁরা রচনা করেন। ইশতেহার লিখে কখনো কবিতা হয় না। কিন্তু যৌবনের নানা অতিরঞ্জন থাকে। যৌবনের সৌন্দর্যও হয়তো তাতেই। নিজেদের ছাপিয়ে নবীন সেই কবিরাও তখন অনেকখানি উপচে পড়েছিলেন। দূর থেকে তাকিয়ে তার অনেক কিছুকে আজ ছেলেমানুষী বলে মনে হবে। পাশাপাশি এও হয়তো মনে হবে—সে সময় অনেক বাড়াবাড়ির পরও এবং সবকিছু খুব স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে না পারলেও—বাংলা কবিতার বেশ কিছু সমস্যা সেই কবিদল তখন অনুভব করতে পেরেছিলেন। সমসাময়িক বাংলা কবিতার ওপর যে মোটের ওপর তাঁরা শ্রদ্ধা হারিয়েছিলেন, সেটি নেহাৎ অবান্তর বা অকারণ ছিল না। নন্দনতাত্ত্বিক বা দার্শনিকভাবে কারণগুলো হয়তো অনতিতরুণ সেই কবিরা ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি, কিন্তু কবিসুলভ সংবেদনশীলতা যে তাঁদের সঠিক সংকেত দিয়েছিল, গত দুই-আড়াই দশক ধরে বাংলা কবিতার ক্রমাগত পাল্টে যাওয়া ভাষা দেখে আজ তা-ই মনে হয়। কবিতার আজকের ভাষা আবার যে অন্ধগলির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমরা অন্যত্র আলোচনা করেছি।
ঠিক এক প্রজন্ম আগের কবিদের নিয়ে সেই কবিদলের আলাদাভাবে তেমন কোনো বিরোধ ছিল না, যেমনটা অনেকে বলে থাকেন। তাঁরা ভাবিত হয়ে উঠেছিলেন সে সময়ের বাংলা কবিতার পুরো অবয়বটি নিয়েই। তাঁদের মনে হয়েছিল, শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পর্যন্ত বাংলাদেশের কবিতার পুরো মূলধারার মধ্যে দশক-বিশেষে মৌলিক কোনো প্রভেদ আসলে নেই। নানাজনের নানা কবিতাকে একটি গুচ্ছে ধরে রাখার কোনো বিশেষ কৃতিত্ব যদি কাউকে দিতেই হয়, সেটি শামসুর রাহমানের। তিনি কবিতার এমন একটি ভাষা তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীকালের কবিতাকে প্রায় পুরোপুরি গ্রাস করেছিল। আলাদাভাবে পরবর্তী সময়ের কোনো একটি দশকের কবিতাকে দোষ দেওয়ার কিছু ছিল না। অল্প দু-চারজন যাঁরা কবিতায় নিজেদের কণ্ঠস্বর শোনাতে পারছিলেন, তেমন কবির সংখ্যা ছিল বিরল। নবীন কবিদলের মনে হচ্ছিল, যেসব কবিতা তখন লেখা হচ্ছে—হোক তা রাজনীতির বা প্রেমের, আশ্লেষের বা ধিক্কারের—সেগুলো নিজের মধ্যে কবিতার কোনো শর্ত তৈরি করতে পারছে না; কবিতার যোগ্য ভাষা থেকে সেসব চলে যাচ্ছে যোজন যোজন দূরে। এই একটা জায়গায় শামসুর রাহমান বা তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের যেকোনো কবির ভাষা ও উপলব্ধির মধ্যে একটা বড় ঐক্য তাঁদের নজরে পড়েছিল। ঠিক এই জায়গাটিতেই নবীন সেই কবিরা বেঁকে বসেছিলেন; এবং তাঁদের কেউ কেউ চেয়েছিলেন, সকল তরুণ কবি যে যার জায়গাতে দাঁড়িয়েই এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করুক।
কিন্তু কাকে বলে কবিতা? কী তার শর্ত? কেমন তার যোগ্য ভাষা?
একটি কবিতা কবিতা হয়ে ওঠার নানা শর্তই থাকতে পারে। কালান্তরে, এমনকি একই কালে সেসব শর্ত নিয়ে কবি ও পণ্ডিতদের মধ্যে বিতণ্ডারও শেষ নেই। মহত্তম কবিরা সেসব শর্ত পেরিয়ে গিয়ে কবিতার নতুন শর্ত তৈরি করেন; কখনো বা পুরোনো শর্তের স্তরান্তর ঘটান। সেসবের ব্যাখ্যানে যাওয়ার অবকাশ এখানে নেই। তবু একটি কবিতাকে যে প্রবন্ধ বা গল্প বা দস্তাবেজ হিসেবে না পড়ে কবিতা হিসেবেই আমরা পড়ে ফেলি, তার পেছনে আমাদের মনে—খুব সন্তর্পণে হলেও—কিছু শর্ত কাজ করে নিশ্চয়ই। সেসবের মধ্যে অন্তত যে শর্তটি পালন না করে কোনো রচনার পক্ষে আদৌ কবিতা হয়ে ওঠাই সম্ভব নয়, তা হলো অর্থ থেকে শব্দের প্রতিসরণ। আলোর প্রতিসরণের কারণে পানিতে ডোবানো লাঠি যেমন দৃশ্যত বেঁকে যায়, কবিতায় ঠাঁই পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দও তেমনই অভিধানের অর্থ থেকে সরে যেতে বাধ্য। এখানে কবির কাজ বড় বিপজ্জনক। চিত্রকর বা সংগীতশিল্পীর চেয়ে তার যাত্রাপথও ভিন্নতর ও দুর্গম। একজন চিত্রকর বা সংগীতশিল্পীর শিল্পবস্তুর মূল উপাদান রঙ বা স্বর স্বভাবগতভাবেই বিমূর্ত। এমনকি দৃশ্যমান জগতের প্রতিচিত্রণ না করে কিংবা অর্থময় শব্দের মুখাপেক্ষী না হয়েও একজন চিত্রকর বা সঙ্গীতশিল্পী তার জীবনব্যাপী শিল্পসাধনা চালিয়ে যেতে পারেন। হোয়ান মিরো বা মোহাম্মদ কিবরিয়া কিংবা মোৎসার্ট বা করিম খাঁর মতো মহত্তম উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। কিন্তু কবির উপাদান যে শব্দ, একটি ভাষাভাষী গোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্যের কাছে তার কতগুলো সুনির্দিষ্ট ‘মানে’ আছে। একজন কবি সেই ভাষিক গোষ্ঠীর বিপরীতে গিয়ে তার কবিতায় সেই ‘মানে’ থেকে শব্দকে সরিয়ে আনেন। একটি শব্দের নতুন দ্যোতনা তখন পাওয়া সম্ভব কেবল সুনির্দিষ্ট ওই কবিতাটিরই ভাষাবিন্যাসের অন্তর্জালে, ওই কবিতাটিরই নিজস্ব শর্তের ভেতরে। রহস্যময় এই ঘটনার কারণেই কবিতা তার বৈপ্লবিক কাণ্ডটি ঘটাতে সক্ষম হয়ে ওঠে। কবিতার মধ্য দিয়ে তার ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতার পরিমণ্ডলের মধ্যে উন্মেষ ঘটে ভাষায়-এখনো-দানা-না-বাঁধা নতুন উপলব্ধির। নতুন কবিতা মাত্রই তাই আমাদের যাপন ও সমাজ-রাষ্ট্রের বিদ্যমান ছকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
কবিতায় শব্দের এই অর্থান্তর কীভাবে ঘটে, সেটি আরেক জটিল আলোচনার বিষয়। এখানে তা আলোচ্যও নয়। কোনো কোনো তত্ত্ববিশারদ সাম্প্রতিক দর্শনের দোহাই দিয়ে হয়তো বলবেন, কোনো শব্দের অর্থই তো স্থির নয়, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তার মানে পাল্টে পাল্টে যায়, ফলে ভাষা মাত্রেই কবিতা। সে আলোচনায় প্রবেশের পথও এখানে প্রশস্ত নয়।
যা হোক, কবিতার সঙ্গে ভাষার এই অভিনব সম্পর্কটি অল্প কথায় সামান্য বিশদ করা যাক। একটি গল্প বা প্রবন্ধ পড়ে মুগ্ধ হলে নিকটজনদের কাছে আমরা সেই রচনার সারকথাটি তুলে ধরি। এভাবে কোনো না কোনো রচনার সারকথা তুলে ধরার অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই আছে। কিন্তু কোনো কবিতা—ধরা যাক জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’, যার মধ্যে এমনকি একটি কাহিনিরও মৃদু আভাস আছে—পড়ে মুগ্ধ হয়ে গল্প বা প্রবন্ধের মতো তার সারকথাটি কি আমরা বন্ধুদের কাছে তুলে ধরতে পারব? কেউ কি তার মর্মকথা এভাবে কখনো বলবেন যে, ‘কবি হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর নানা পথে পথে হাঁটছিলেন; তারপর নাটোরে গিয়ে বনলতা সেন নামে এক নারীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়...’ ইত্যাদি ইত্যাদি? কবিতার নিছক অর্থের ভাগটুকু এভাবে বলতে গেলে কবিতার অভিপ্রায় থেকে কীভাবে যেন তা সরে যায়। পুরো ব্যাপারটিই কেমন হাস্যকর হয়ে ওঠে। এভাবে অন্যের কাছে কোনো অর্থভাষ্য পৌঁছে দিতে না পারার এই স্বভাবের মধ্যেই নিহিত রয়েছে অন্য ভাষিক মাধ্যম থেকে কবিতার আলাদা হয়ে ওঠার বীজ। অন্যান্য ভাষিক মাধ্যমে—গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ বা বিজ্ঞাপনে—শব্দের কাজ বাহনের। অর্থের কাছে পাঠককে পৌঁছে দিয়েই সেখানে শব্দের দায়িত্ব শেষ। কিন্তু কবিতায় শব্দ একই সঙ্গে বাহন এবং গন্তব্য। তাই কোনো কবিতার অভিপ্রায় কারও কাছে পৌঁছে দিতে হলে শব্দে-শব্দে, পঙিক্ততে-পঙিক্ততে ধরে ধরেই আমরা সেটি উচ্চারণ করি। কবিতার সুনির্দিষ্ট বিন্যাসের মধ্যেই সে কবিতার প্রতিটি শব্দের নতুন রূপ, রং ও ঐশ্বর্য। সেখানেই তারা কবিতা। এর বাইরে শব্দগুলো নিতান্ত ব্যবহারিক।
বিশ শতকের শেষার্ধে বাংলাদেশে কবিতার এই মূল স্বভাবটিই উল্টে গিয়েছিল। আর সেটি প্রধানত ঘটেছিল শামসুর রাহমানের নিবিড় পৌরোহিত্যে। তিনি কবিতার এমন একটি ভাষা উদ্ভাবন করেছিলেন যেখানে শব্দের আর কোনো প্রতিসরণের দরকার হয় না। কবিতার অন্তস্তল উঠে আসে তার উপরিতলে। এগুলো ‘বোঝার’ জন্য কবিতার শর্তের কাছে পাঠকের আর নিজেকে সমর্পণ করতে হয় না। উদাহরণ হিসেবে শামসুর রাহমানের বহুপাঠ্য ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটিই পড়ে দেখা যাক। কবিতাটির কয়েকটি চরণ এ রকম: “তুমি আসবে ব’লে হে স্বাধীনতা,/সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,/সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।/তুমি আসবে ব’লে হে স্বাধীনতা,/শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মতো চিৎকার করতে করতে/তুমি আসবে ব’লে হে স্বাধীনতা,/ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল/আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।” এই কবিতার শব্দ মূলতই তাদের ‘অর্থে’ সিদ্ধ। তাই এতে যে আবেগ জেগে উঠেছে, তা যতটা না কবিতার, তার চেয়ে অনেক বেশি ইতিহাসের। পাঠক হিসেবে আমরা নিজের অজান্তে ইতিহাসের আবেগকে এখানে কবিতার আবেগ হিসেবে গ্রহণ করছি।
এ জাতীয় কবিতার ভেতরে আর ঢোকার প্রয়োজন হয় না। আর তা না করেও পাঠক দিব্যি সেটি ‘বুঝে’ তা থেকে এক ধরনের স্বাদ নিয়ে থাকেন। শামসুর রাহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে কবিতার এ ভাষার প্রায় সার্বভৌম প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল। এসব কবিতার জনপ্রিয়তার কারণ ছিল ‘সহজবোধ্যতা’ ও সুপাচ্যতা; ঢিলেঢালা গড়ন—অনেক যেমন বলে থাকেন—সম্ভবত নয়। তার মানে আবার এই নয় যে জনপ্রিয় কবিতা মাত্রেই অকবিতা। সেও আরেক ভিন্ন আলোচনার বিষয়।
কবিতা তার মৌলিক শর্তগুলো থেকে সরে এলে কী ঘটতে পারে, তারই উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশে এক সময় জেগে ওঠা তালিকা-প্রণয়নের রীতিতে কবিতা লেখার জোয়ার। তালিকা-প্রণয়নের রীতিতে কবিতা লেখার শৈলীটিও জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন শামসুর রাহমান। এ রীতিতে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা দুটি হলো ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’। এ ধারায় এরপর বাংলা কবিতায় বান ডাকে। সেসবের মধ্যে শহীদ কাদরীর ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, রফিক আজাদের ‘ভালবাসা মানে’ বা আবিদ আজাদের ‘যে শহরে আমি নেই, আমি থাকব না’ বিপুলভাবে পাঠকনন্দিত হয়েছে। সত্যি করে বললে এর সূত্রপাত ষাটের দশকে। পেঙ্গুইন প্রকাশনীর কল্যাণে লিভারপুলের এক গৌণ কবি অ্যাড্রিয়ান হেনরির মাধ্যমে বাংলা কবিতায় এর আছর পড়ে। কিন্তু তারও বহু আগে ফরাসি কিন্নরকণ্ঠ কবি পল এলুয়ার এ শৈলীতে তাঁর আসল শক্তির চিহ্ন রেখে গিয়েছিলেন। এমন কি, শামসুর রাহমানের বিখ্যাত রচনা ‘দুঃখ’ লেখা হয়েছিল এলুয়ারেরই ‘লিবার্টি’ কবিতাটি ভেঙে।
আমাদের প্রশ্ন হলো, একটি সময়কালে একই ভাষার বিভিন্ন কবি কীভাবে প্রায় একটি অভিন্ন শৈলীতে কবিতা লিখে উঠতে পারলেন? একটি সুনির্দিষ্ট শৈলীর পক্ষে কি নানা কবির বিচিত্র কবিতাকে আদৌ আকার দিতে পারা সম্ভব? আসলেই কি এমন একটি অবস্থার কথা ভাবা যায়, যখন কোনো কবিতা রচিত হওয়ার আগেই তার কাঠামোটি হাজির থাকবে? অথচ এমন কাণ্ডই বাংলা কবিতায় ঘটেছিল।
চেক কবি মিরোস্লাব হোলুবের একটি লেখা তুলে দিয়ে এ রচনাটি শেষ করা যেতে পারে। অনুবাদ করে দিচ্ছি ‘কবির সঙ্গে আলাপচারিতা’ শিরোনামে তাঁর একটি কবিতার অংশবিশেষ:
তুমি কি কবি?
হ্যাঁ, আমি কবি।

কী করে বুঝলে?
কবিতা লিখেছি যে।

যদি লিখে থাকো, তাহলে কবি ছিলে। কিন্তু এখন?
আবার একদিন কবিতা লিখব।

সে দিন হয়তো আবার কবি হবে। কিন্তু কী করে বুঝবে সেটা কবিতাই হয়েছে?
সেটাও আগেরটার মতো কবিতা হবে।

তাহলে তো সেটা কবিতাই হবে না। একটি কবিতা শুধু একবারই হয়, পরের বার একই রকম আর কখনোই হয় না।
আমার বিশ্বাস, সেটা একই রকমের ভালো হবে।

এতো নিশ্চিত তুমি হলে কী করে? কোনো কবিতার সার্থকতা তো ওই একবারই আসে। আর তা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর, তোমার ওপর নয়।
আমার ধারণা, পরিস্থিতিটাও অবিকল একই থাকবে।

তা-ই যদি মনে হয়, তাহলে তো তুমি কবি ছিলেও না, কবি হবেও না।...

(সংগৃহীত) 


শব্দ জব্দ এর আজকের টপিক 

      "কবিতা" 

কবিতাকে সহজ কথায় ব্যক্ত করা যায় না ,কবিতা আসলে একটা অনুভূতি ,অনুভূতিকে শুধুমাত্র অনুভব করা যায় ।

" কবিতা " শব্দ নিয়ে জিনিরা আজ লিখলেন 


"কবিতা আমার কাছে বেঁচে ওঠা শ্বাস
নির্ঘুম বিছানায় এপাশ- ওপাশ, 
কবিতা আমার কাছে বান্ধবীর মুখ
না-বোঝানো সে এক কঠিন অসুখ।"

                             - রবিন বসু


"কবিতাও কথা বলে শুনতে পারে আদেশে ।
তুমি ফিরতে বললে ফিরবো এতেই আছি বেশ।
জমা হয় খুচরো কত কথা জলের দরে বিকোয়।
যতবার হয়েছি অনুভূতির হীন কবিতা দিয়েছে আশ্রয়  ।।"

                              -  অরূপ সরকার

"তুমি রসধারা ধরে রাখো তোমার শিকড়ে
আমি মগ্ন তোমার চোখের ভাষায়
তোমার কবিতায় শব্দ হতে চেয়েছিলাম
আমায় মিশিও তোমার শিরায় শিরায়।"

               - মৌসুমী রায়



"আমার যা কিছু উপার্জন, আনন্দ-হাসি দুঃখ-ব্যথা।
সকলই তোমাকে দিয়েছি প্রিয়,সাথে থেকো তুমি কবিতা।"

            -   পিনাকী কর্মকার




"সময়ের ভীড়ে ব্যস্ত শহর 
ধকলে ভেজা কলার,
সারাদিনের কলরবগুলো 
খোঁজে সঙ্গি চলার।
না বলা কথা রয়ে যায় ভয়ে
কখনোও দ্বিধায় থামে,
তারাই সকলে মিলিয়ে হাত
কলম ধরে নামে।"

         - বৈশালী ব্যানার্জি



"কবিতায় কলম আর থাকে বিকশিত ভাবনা,
তা দিয়ে জাগে মনে কত শত রসনা।
সুখ-দুঃখ, যন্ত্রনা ব্যথা, বিরহ থেকে ভালোবাসা,
শব্দরা ভিড় জমায় কবিতার গায়ে বাঁধে বাসা।"

          -  সুনন্দ মন্ডল


"জমে থাক কিছু চেনা ডাক,প্রেমিকার ঠোঁট,
না বলা কথাদের,ভাষা হোক।।" 

                   - জ্যোতির্ময় 


"
মনে শব্দের মিছিল ছুটলে
     হাজার কবিতার লাইন বুনতে থাকে হৃদয়
 তখন কবির ব‍্যস্ত হাত হাজার কবিতা লিখে
          খাতার পাতাতে।
 কবি হয়ে উঠেন ঈশ্বর সম
         সমস্ত জীব জন্তু জড় 
               সবেতেই ভাষা পায়
              কবির কাব‍্যের অনন্ত ভাষ‍্য লিপিতে...."

                     - বর্ণা দত্ত