নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

পায়েল ব্যানার্জি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পায়েল ব্যানার্জি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

গল্প: বৃস্টি নামার আগে :- পায়েল ব্যানার্জি



আজ সকাল থেকেই মেঘ করে আছে।যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে।সকাল থেকেই ফোনে একের পর এক মেসেজে আসছে।কাল বৃষ্টির জন্মদিন ছিল যারা উইশ করেনি সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা বি-লেটেড হ্যাপি বার্থডে জানাচ্ছে।কেউ কেউ আবার কালকের ফোটো গুলো তে কমেন্ট করছে।কাল বন্ধুদের সাথে রেস্তোরাঁয় খেতে গেছিলো।তাও বন্ধুরাই জোর করে ট্রিট দিতে হবে বলে নিয়ে গেছিলো।
তাতেও মন ভালো নেই বৃষ্টির।সব কিছুই জানো কেমন ফ্যাকাশে লাগছে তার।সেই এক অফিস বাড়ি,বাড়ি অফিস।কফির কাপটা নিয়ে  বারান্দায় গিয়ে বসলো বৃষ্টি।

বৃষ্টি সেন কাজের সূত্রে কলকাতার বাইরে থাকে।মা বাবা থাকে কলকাতায়।কিছু দিন হলো সেও ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছে।ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিরত।সেই সূত্রে কলকাতার বাইরেই থাকে সে একা।মাঝে মাঝে বাবা মা যায় ঘুরতে তার কাছে,কখনও আবার সে আসে কলকাতায়।

আকাশের আজ মুখ ভারী ,ঠিক বৃষ্টির মতো।যখন তখন ঝড় উঠবে বৃষ্টি নামবে।বন্ধু,পরিবার সব কিছুর মাঝে থেকেও বৃষ্টির জানো কেমন একলা লাগছে।চেষ্টা করেও আবিরের কথা সে ভুলতে পাচ্ছে না।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ফোন গ্যালারি খুলে সব পুরোনো ফটো গুলো দেখছিল সে।ফোটো গুলো খুব উজ্জ্বল লাগছে কিন্ত,বর্তমান টা ফোটো গুলোর মতো উজ্জ্বল নয়,আর ভবিষ্যতের কোনো ঠিকানা নেই।নিজের কলেজ লাইফের ফোটো,আবিরের সাথে তার কাটানো আবেগঘন মুহূর্তের সব ফোটো।তিন বছরে আর একবারও দেখা হয়নি তাদের।

কলেজে পড়তে পড়তেই তার সাথে আলাপ হয় আবির রায়ের।আবির আর বৃষ্টি একই সাথে পড়তো কলেজে।বেশ হ্যান্ডসাম আবির রায় কলেজের প্রতিটা মেয়ের হার্টথ্রব ছিল।আবির ও অনেক মেয়ের সাথেই ঘোরা ফেরা করতো।আবিরের মতে এটাই তো বয়স।আজ এর সাথে ডেটিং তো কাল ওর সাথে ডেটিং।আবির কে বৃষ্টি কলেজের প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করলেও তার এই হাজার মেয়েদের সাথে ঘোরা ফেরা কখনোই তার পছন্দ ছিল না।এক কলেজে পড়াকালীন তারা দুজনেই ভালো বন্ধু ছিল।বলা যায় দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেছিল।পরে বৃষ্টির আবিরের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হলেও  আবিরের দিক থেকে কোনোদিনই তেমন কিছুই ছিল না।বৃষ্টির বন্ধুরাও জানতো সে আবিরকে ভালোবাসে,কিন্তু বৃষ্টি তাদেরকেও কিছু বলতে দেয়নি আবিরকে।আবির রায় তখন অন্য মেয়েদের সাথে মত্ত।বৃষ্টিও ভয় আবিরকে কোনোদিন কিছু বলতে পারেনি যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।এরপর কলেজ শেষে চাকরি পেয়ে দুজন দুদিকে চলে যায়।

তারপর কেটে যায় তিনটে বছর।ফোনে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হলেও দেখা সাক্ষাৎ কিছুই নেই আবির আর বৃষ্টির মধ্যে।দেখা সাক্ষাৎ না হলেও প্রতি বছর জন্মদিনের প্রথম ফোনটা আবিরই করতো বৃষ্টিকে।কিন্তু,এ বছর আর আবিরের ফোন আসেনি একবারও।গত এক বছর ধরেই আবিরের ফোন আসেনি।বৃষ্টি অনেকবার ফোন করলেও কোনো উত্তর পায়নি সে।ফেসবুকে শুধু ফোটোতে লাইক কমেন্টেই সীমাবদ্ধ সম্পর্ক এখন।গত ছয়মাস সেটাও বন্ধ হয়েছে,  আবির আর তেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে এক্টিভ থাকে না।

বেশ কিছুদিন ধরেই মনটা বড্ড খারাপ বৃষ্টির।এবার চাকরি ছেড়ে কলকাতাতেই থাকবে বলে মনস্থির করেছে।বাইরে মা বাবা বন্ধু বান্ধব এই শহর ছেড়ে তার আর বাইরে পরে থাকতে ভালো লাগছে না।কলকাতায় চাকরিও খুঁজছে পেলেই ফিরে আসবে সে।ফোটো গ্যালারি তে কিছু পুরোনো ফোটো এখনো রয়েছে,সেই গুলোই বসে বসে দেখছে সে।হটাৎ ফোনটা বেজে উঠলো বৃষ্টির।

  - "হ্যাঁ বল।
  - বৃষ্টি আজ একবার দেখা করতে পারবি?
  - আজ আবার এই তো কাল দেখা হলো আজ আবার কেন? আজ আর হবে না রে শ্রীপর্ণা।
  - আরে না বললে শুনবো না দেখা করতেই হবে খুব দরকার।
  - কি দরকার।
  - তুই আয় এলেই বলবো।
  - আরে শোন শোন
  - না না কিছু শুনবো না আজ বিকাল পাঁচটা আমাদের পুরোনো ক্যাফেতে মনে ফ্রেন্ডস ক্যাফেতে।বাই।
  - আরে আরে শোন........


কিছু শোনার আগেই ফোনটা কেটে গেলো।বিকালে একটা থমথমে মুখ নিয়ে পৌঁছলো ফ্রেন্ডস ক্যাফেতে।সব পুরোনো বন্ধুরাও সবাই হাজির।

  - "কিরে তোরা সবাই তো দেখছি হাজির।কি ব্যাপার বলতো এই তো কাল আমার ঘাড় ভেঙে খেলি আবার আজ এত জরুরি তলব?কি ব্যাপার বলতো শ্রীপর্ণা?
  - দাঁড়া দাঁড়া একটু পরেই বুঝতে পারবি।

   বলতে বলতেই আবির ঢুকলো ক্যাফেতে।আগের থেকে আরো হান্ডসম লাগছে আবির কে।ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি,পাঞ্জাবি,পাঞ্জাবির নিচে জিন্স।
এক মুহূর্তে আবির কে দেখে কোথায় জানো হারিয়ে গেল বৃষ্টি।আবির কে দেখেই তো শ্রীপর্ণা বলে উঠলো' ইসঃ তোকে যদি কিছু দিন আগে দেখতাম না আবির তাহলে আর অন্য কাউকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলতাম না।'হা হা হা তাই নাকি রে শ্রী?সবাই  আড্ডা গল্পোয় মশগুল হয়ে পরে।এতদিন পর সবার সাথে দেখা আবিরের।

আজ খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টির আবিরকে নিজের মনের কথা বলতে। ইচ্ছে আজ শুধু একা আবিরের সাথে সময় কাটাতে।আবিরের হাতটা ধরে বলতে আবির তুই শুধু আমার,ইচ্ছে করছে আবিরের বুকে মাথা রেখে  মনের সব কথা উজাড় করে বলতে।এত দিনের রাগ,দুঃখ,অভিমান সব এক মুহূর্তে তার কাছে উজাড় করে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু,কাকে বলবে সে তার সমস্ত রাগ ,দুঃখ ,অভিমান সমস্তটাই তো শুধু তার একার,ভালোবাসাটা তো বড্ড একতরফা হয়ে গেছে।মনে মনে ভয় বন্ধুত্ব হারানোর ভয় বৃষ্টিকে গ্রাস করছে।যদি ভালোবাসার কথা বললে আবির তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে যদি সে আর বন্ধুত্বটাও না রাখে।না!আর না,তার এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো,আর বেশীক্ষন থাকলে সে আরো দুর্বল হয়ে পড়বে,আজকের পর আর কোনোদিনও সে আবিরের সামনে আসবে না,একবার খুব ইচ্ছে ছিল তার আবিরকে দেখার দেখা হয়ে গেছে আর সে কোনোদিনও আসবে না আবিরের সামনে কোনো যোগাযোগও রাখবে না।

সবাই ব্যস্ত দেখে,একরকম চুপিসারেই বৃষ্টি চলে যাচ্ছিল সেখান থেকে।না সে আর তার একতরফা ভালোবাসা বাড়াতে চায় না এতে তারই কষ্ট।কারণ আবির কোনো দিনই তাকে ভালোবাসেনি।আবিরের পছন্দ সে কোনোদিনই হয়ে উঠতে পারবে না।তাই চলে যাওয়াই ভালো।

  - "কোথায় যাচ্ছিস বৃষ্টি?
   থমকে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
-কিরে কেমন আছিস?
  - ভালো আছি আবির তুই?
  - ভালো।কোথায় যাচ্ছিস তুই?
  - আমার একটু তাড়া আছে আবির আমায় বাড়ি যেতে হবে।
  - আমার সাথে কথা না বলেই চলে যাবি?
  - অন্য কোনো সময় আবার কথা হবে আজ চলি।
  - আরে দাঁড়া দাঁড়া অন্তত আজকে তোদের সবাইকে যে কারণে ডেকেছি,সেটা শুনে তো যা যাবার আগে,তারপর চলে যাস আটকাবো না।আমি কলকাতা ছাড়ছি এবার দেশের বাইরে যেতে হবে বুঝলি কিছু বছরের জন্য তাই ভাবছি তার আগে বিয়েটা করেই যাবো।
  - তাই বাঃ খুব ভালো। কংগ্রাটস
  - হ্যাঁ রে বাড়ি থেকেও বলছে বিয়ের কথা তাই ভাবলাম করতে যেকালে হবে তা করেই নিয়ে বিয়েটা।
  - হ্যাঁ ভালো করছিস আবির।
  - হ্যাঁ ভালোতো অবশ্যই করছি।তোরা সবাই আসবি কিন্তু বিয়েতে।কি রে আসবি তো বৃষ্টি?
  - না রে আবির হয়তো হবে না যা কাজের চাপ........কাঁপা গলায় উত্তর দেয় বৃষ্টি।চলি আবির আবার.....
  - না বললে আমি শুনবো না বৃষ্টি তুই না থাকলে আমার বিয়েই হবে না।
  - আমায় জোর করিসনা আবির। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
  - তুই একবার দেখতেও চাস না আমার হবু বউ কে?
  - না চাই না।বেশ জোরেই  এবার উত্তর দেয় বৃষ্টি।
  - দেখতে তো তোকে হবেই বৃষ্টি না হলে যে আমি বিয়ে করতেই পারবো না.......একরকম জোরে বৃষ্টির হাতটা টেনে ধরে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায় আবির,ওই দেখ মেয়েটাকে।
  আমার সারা জীবনের দুস্টুমি গুলো সহ্য করার দায়িত্ব নিতে পারবি বৃষ্টি?
আমি জানি কলেজ জীবন থেকেই তুই আমায় ভালোবাসিস। কিন্তু,আমি তখন নিজের কেরিয়ার আর অবশ্যই অন্যদের সাথে ব্যস্ত ছিলাম।কিন্তু,বিশ্বাস কর তুই ছিলিস আমার বেস্ট চয়েস।আমাকে তুই ছাড়া আর কে বুঝবে বল।তোর থেকে যত দূরে গেছি তোর প্রতি ভালোবাসা তত বেড়েছে।গত এক বছর তোর সাথে সম্পর্ক রাখিনি ইচ্ছে করে ভেবেছি ভুলে যাবো,নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল না আমার তোকে কোনো ভাবেই ঠকাতে চাইনি,কিন্তু না পারিনি তোকে ভুলে থাকতে।আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমার জীবনের মিস পারফেক্ট।আমায় বিয়ে করবি?

আয়নায় নিজেকে দেখে লাজুক চোখে আবিরের দিকে তাকালো বৃষ্টি।আজ হটাৎ তার আবির কে দেখে লজ্জা লাগছে।এর আগে এমন কোনো দিনও হয়নি।
অঝোর ধারায় বৃষ্টির চোখেও জল।লোকজন কিছু না মেনেই সবার সামনে আবিরকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মেলায় বৃষ্টি।আজ বৃষ্টি কোনো বাঁধা না মেনে আবিরের ওপর ঝরে পড়তে চায়।প্রকৃতিতেও তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

                                   

ডায়েরির পাতা থেকে,, পায়েল ব্যানার্জি



আজ আমার জন্মদিন।সকালবেলা ছেলে একটা কেক এনেছিলো,সেটা কাটলাম।দুপুরে মিমি (ছেলের বউ) পায়েস বানিয়েছিল,আর আমার ছোট নাতিটা একটা পেন দিয়েছে আমাকে।ডায়েরি লিখতে ভালোবাসি জানে।মাঝে মাঝে এসে আমাকে বলে
"ও ঠাম্মি তুমি যখন দাদুর কাছে চলে যাবে আমায় তোমার ঐ নোটবুকটা দিয়ে যেও।আর তোমার লেখা গল্প কবিতার ডায়েরিটা।আমি তোমার লেখা গুলো ছাপাব।তোমার প্রচুর নাম হবে।"
আমি শুধু হাসি আর বলি হ্যাঁ দিয়ে যাবো দাদুভাই।খুব পাকা পাকা কথা।ওকে নিয়েই সারাদিন কাটে আমার।এখন ওই আমার কর্তা মশাই।

আজ আমি সত্তর বছরের প্রৌঢ়া।কোথা দিয়ে পলকে জীবন কেটে গেল বুঝতেও পারলাম না।পড়াশোনায় ছোটো থেকেই ভালো ছিলাম।গ্র্যাজুয়েট হবার আগে থেকেই ছেলে দেখা শুরু হয়ে গেলো।তারপরেই বিয়ে।বাবা- মা কে বলেছিলাম আরো পড়তে চাই,চাকরি করতে চাই তারপর বিয়ে করবো।বাবা বলেছিলেন না ভালো ছেলে পেয়েছি করে নে মা।আমাদের অবর্তমানে কে দেখবে তোকে?মা বলতো বিয়ের পর পড়াশোনা করিস শ্বশুর বাড়ি গিয়ে। শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে পড়লাম বড় সংসার।তার উপর আবার বাড়ির বড় বউ ছিলাম সংসার সামলাতে সামলাতে পড়াশোনাটা ধোঁয়াশা হয়ে গেল।পুরো সংসারের সমস্ত দায়িত্ব আমার কাঁধে থাকলেও স্বাধীনতা কিছুই ছিল না আমার।বাড়িতে আমি বৌমা,জা,কাকী,মামী বেশি ছিলাম রঞ্জিতের (আমার বর)বউ কম ছিলাম।সামান্য রঞ্জিতের পাশে বসতেও পারতাম না কে কি ভাববে এই ভেবে।দিনের শেষে বিছানায় দুটো শরীর চাহিদা বসতো এক হতো।তারপরেই যে যার মতো সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে এপাস ওপাশ।মন দুটো যেন কর্পূরের মতো উবে যেতো।
                              তারপর বউ,বৌমা সমস্ত সম্পর্ক ফেলে মা হলাম।নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সব পালন করে বাচ্চাকে মানুষ করতে করতে কেটে গেলো সারাটা জীবন।নিজের শখ বলতে শুধু ছেলে কে কি করে বড় করবো মানুষ করবো।নিজের লেখার শখ ছিল খুব।সেটা আর চরিতার্থ হয়নি।আর তখন তো এখনকার মতো এত মুঠোফোনের ব্যবহার ছিল না।যে তার মধ্যে দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেকে পৌঁছে দিতে পারবো।দায়দায়িত্ব আমার থাকলেও বাচ্চার কোনো ব্যাপারে ডিসিশন নেওয়ায় অধিকার আমায় দেওয়া হতো না কোনদিন,সব রঞ্জিত নিত।কোনোদিন আমিও প্রশ্ন তুলিনি নিজের অধিকার প্রসঙ্গে।ভেবেছিলাম ও তো বাবা যা করবে ভালোই হবে।দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো ছেলে,বিদেশ গেলো পড়তে।নিজের ইচ্ছায় বিয়ে।ছেলের বিয়ে দিয়ে ভেবেছিলাম রঞ্জিতের সাথে কাটাবো।ব্যাস ছেড়ে চলে গেলো আমাকে।ছেলে বউয়ের হাতে ফেলে রেখে।'আমাদের দুজনের'আর সময় কাটানো হলো না কোনোদিনই।পুরোপুরি ভাবে ছেলের ওপর নির্ভর করে দিন কাটাতে হয় এখন।না ছেলে বউ আমার খুবই ভালো তাদের নিয়ে অভিযোগ কিছুই নেই আমার।সারাদিন ছেলে বউ চাকরিতে বেরিয়ে গেলে নাতির সাথে ভালোই সময় কাটে আমার।ওই সব মুঠোফোনের দরকার ও হয়নি,আর ব্যবহারটাও ও ঠিক জানিনা ওই সব স্পর্শকাতর ফোনের।কিন্তু,তবুও দিনের শেষে কোথাও যেনো আমি একা।কিছু,টেলিভিশন সিরিয়াল আর আমি সন্ধ্যে থেকে একসাথে কাটাই।মাঝে মাঝে এই নীল রঙের ডায়েরিটার সাথে নিজের রাগ,দুঃখ,আবেগ,আক্ষেপ ভাগ করেনি।ছেলে বউ নিজের মতো সময় কাটায়, বাইরে ঘুরতে যায় ,সময় কাটায় নাতিও যায়,সারা বাড়িতে আমি একা।না,তারা তো তাদের মতো সময় কাটাবেই,সেই নিয়ে আক্ষেপ নেই আমার।আমি যা পাইনি,রঞ্জিতের সাথে সময় কাটাতে ,তারা তাই করুক আমি চাই।তারা আমাকেও নিয়ে যেতে চায় সাথে করে।কিন্তু,এখন যে আমি শরীরের অধীনতা শিকার করেছি।আমার শরীর আমার সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।এখন সারা শরীর শুধু ব্যাথার অধীনে।ভালো করে নড়তেই পারিনা।এবার গেলেই হয় সব ছেড়ে।কিন্তু, মৃত্যু যতো দিন না চাইবে আমায় নেবে না।সেখানেও আমার স্বাধীনতা নেই।মৃত্যুর ওপর তো কারুর হাত নেই।সে নিজে বড় স্বেচ্ছাচারী।বড় রাগ হয় মহাভারতের  ভীষ্মের ওপর যদি পারতাম অমন স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করতে।

আসল কিছু মেয়েদের সারাটা জীবন শুধু পরের অধীনতাতেই কেটে যায়।বিয়ের আগে ভাবি স্বাধীন আছি।কিন্তু,বাড়ি থেকে বেরোলেই সময় বেঁধে দেওয়া হয়,মনে করিয়ে দেওয়া হয় আমরা মেয়ে। বাড়ির বাইরে বিপদ নাকি পদে পদে!সন্ধ্যের পর বাড়ির বাইরে মানেই হাজার সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়।এখন অবশ্য সময় বদলেছে।তবুও কাগজের পাতায় যা পড়ি তাতে মনে হয় না মেয়েরা স্বাধীনতা পেয়েছে।আরও বেশি পরাধীন হয়েছে হয়তো।বিয়ের পর স্বামী সংসারের অধীনে থাকতে হয়।তারপর জীবনের কোন এক মোড়ে এসে বাচ্চাদের অধীনে  আসতে হয় ইচ্ছা অনিচ্ছাকৃত ভাবে।এই সমস্ত বাধা কাটাতে না কাটাতে 'রোগ 'হানা দেয় শরীর জুড়ে।আর তার কাছে মৃত্যু কাল অবধি মাথানত করে থাকতে হয়।
আমার মতো অনেকেই হয়তো এই অবস্থায় আছে।এই ভাবেই সাদরে গ্রহণ করে চলেছে জীবনটাকে।নিজের আক্ষেপ গুলো দূরে সরিয়ে রেখে,জীবনের এই শেষ বয়সে উপনীত হয়ে এখন শুধুই বলতে হয় যেভাবেই আছি 'ভালো আছি'।ছেলে,বৌমা,নাতি নিয়ে ভরা সংসারে বেশ কাটছে দিন গুলো।আজকে আরও একধাপ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলতে চাই এবার মৃত্যু চাই স্বাধীন হতে চাই সারা জীবনের মতো।
          রমলা।