নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

আতপ-প্রেম :দেবাশ্রিতা চৌধুরী







থার্মোমিটারের ফারেনহাইটের মাত্রা
 সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে প্রেম।
উত্তর মেরুপ্রান্তে হাতে হাত রেখে
উষ্ণ চুম্বনেও শীতলতার হিম চাদর।

মরুপ্রান্তরে তীব্র উষ্ণতায় মরুদ্যানের
খোঁজে অসীম হাহাকার, জলীয়
ফলের আকুল আহ্বান খরখরে
জিহ্বাগ্ৰে কাতর পিপাসা 
আমাদের কর্কটক্রান্তি রেখার এপারে
শরীরে শরীরে উষ্ণতা অন্বেষণ।

একটুকরো উষ্ণতার জন্য উন্মুখ
তুমি আমি আর আমাদের মতো 
লিভিং অর্গানিজম।হে শীতলতা
তুমি থাকো ডাল লেকের বরফপিন্ডে,
উষ্ণতা আমাদের শরীরে মননে উজাড়
করে ঢেলে যায় ভালোবাসা আর ভালো লাগা...


নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত







অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষক, এম.এ.বি.টি.।মুখ্যত ছোটোগল্প লেখক। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ:পতঙ্গ বাসনা,ভেতরের মানুষ,হয়তো গল্প। প্রায় সবকবিতাই ২০১৬ সালে রোগশয্যায় রচিত।



কিছু আলাপ কিছু কথা 
*********************

১.কবিতা কি ? 
উত্তর:কবিতা আমার কাছে এক সঞ্জীবনী সুধা।
২)আপনার প্রিয়কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর: আমার প্রিয় কবি(রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত) -
জীবনানন্দ দাস
৩)কেন লেখেন আপনি কবিতা ?
উত্তর: বর্তমানে আমি কবিতা লিখি দীর্ঘ অসুস্থতাজনিত ঘরবন্দি জীবনের নিঃসঙ্গতা কাটাবার জন্য।
৪)আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্যগ্রন্থের নাম ?(প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত)
উত্তর: প্রথম কবিতা (কলেজ জীবনে):প্রভু,আমি গ্রাজুয়েট
   প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ  : স্বপ্নশ্যামাপোকা(২০১৬)!৫)নবদম্পতির সম্পর্কের মতো।




                                   কবিতা গুচ্ছ 
                                ***************



                            পথরেখা 

                      (পঞ্চদশপদী কবিতা)



ওই যে খোকা, একটি রেখা পাহাড় থেকে নামে
মাঠ ছাড়িয়ে,গ্রাম ছাড়িয়ে সাগরপারে থামে
ওই রেখাটি আবেগ দিয়ে স্বদেশ ঘিরে রাখে।
সে-রেখাতে সঠিক পথের হদিশ আঁকা থাকে।

পথের ডাকে পথ চলেছে মাতাল হয়ে একা
পথ কী,জানো?পথ মানে এমন একটি রেখা
চলতে গিয়ে ডাইনে-বাঁয়ে প্রত্যহ হয় দেখা
উভয়ে ডাকবে তোমায় উঠতে তাদের না'য়ে
বলো কোন্ পথে চলতে চাও ডাইনে, নাকি বাঁয়ে?

পথ চলেছে ডাইনে -বাঁয়ে, পথ চলেছে সোজা
পথের খোপায় কেউ দেখে ফুলের মালা গোঁজা
কেউ বা দেখে কাঁটা শুধুই, কান্নাভেজা পথ
ওই পথের শেষেই তোমার সিদ্ধ মনোরথ।

ডাইনে আছে ডাইনিরানী ফুলমালায় সেজে
বাঁয়ের পথে সুখের দাসী চোখের জলে ভেজে।




               শিল্প ও শিল্পী 




ছবি আঁকছেন চিত্রশিল্পী
তাঁর সামনে এক বিষাদ প্রতিমা
মুখে হাসি নেই
অধরোষ্ঠে নেই খুশি একতিল।
শিল্পীর ইচ্ছে
সন্তানসম্ভবা সুন্দরীর প্রশান্তির হাসিমুখ
বন্দি করে রাখবেন ছবির খাঁচায়।

অদূর অতীতে প্রথম সন্তানহারা জননীর মুখে
অকৃত্রিম হাসি ফোটাতে চেষ্টার অন্ত ছিলনা।
ভাড়াকরা ভাঁড় এলো,ভাঁড়ামির চূড়ান্ত হল
সুন্দরীর ভারাক্রান্ত মনে তার ছায়াপাত ঘটলো না।
নৃত্যশিল্পী এলো,এলো সঙ্গীতশিল্পীও
সুন্দরীর মনের জমাট  অন্ধকারের শরীরের ভাঁজে
তবু কোনো দুলুনি নেই,বিদ্যুতের ঝলকানি নেই,
এমনকি ঘাসফড়িঙের ওড়াওড়িও নেই।

অবশেষে শিল্পীর মনোবিদ এক বন্ধু
সেদিনের খবরের কাগজখানা ধরলেন তার সামনে
প্রথম পাতাতেই রাজ্যের বাক্যবাগীশ মহারানীর ছবি
তাঁকে দেয়া হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বিদুষীর সম্মান
স্বয়ং রাজাধিরাজ তাঁকে পরিয়ে দিচ্ছেন উত্তরীয়
হাতে তুলে দিচ্ছেন শ্রেষ্ঠত্বের অভিজ্ঞান।
সেই চিত্রদর্শনে সুন্দরীর সর্বাঙ্গ 
বিচিত্র হাসির গমকে কেঁপেকেঁপে উঠলো
আর সেই উদ্ভটসুন্দর হাসির মুহূর্তটি
শিল্পী বন্দি করে ফেললেন তাঁর ছবির মুখাবয়বে।

দুষ্পাঠ্য শিলালিপির মতো শিল্পশালার এক কোণে
পড়ে রইলো বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই শিল্পকীর্তি।
অবশেষে চোখ পড়লো শিল্পরসিকদের।
অনন্ত বিভ্রমে ভরা আলো- অন্ধকারের রহস্যেঘেরা
বহুমাত্রিক সেই ছবি আলোড়ন তুললো শিল্পীমহলে।

শিল্পীকে পেছনে ফেলে শিল্প এগিয়ে গেলো
অমরত্বের নিঃশব্দ দ্রাঘিমায়।
             

            

             শব্দকথা 





প্রথমে ভেসে আসছিলো জলপথে
পরে আকাশপথেও।
ছড়িয়ে পড়ছিলো নগরে-শহরে,গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র।
ভিনজাতের সাথে শুরু হল ওঠা-বসা,মেলা-মেশা
ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা,মন দেওয়া-নেওয়া--অসবর্ণমিলন।
জাতকের চেহারায় পড়লো তার ছাপ।
ভিনদেশ থেকে উড়েআসা ভেসেআসা শব্দরাশি
নবরূপে ঠাঁই পেলো এদেশের শব্দখনিতে,
হয়ে উঠলো সহৃদয়হৃদয়সংবেদী শব্দবাণ।

কবিরা কুড়োচ্ছিলো শব্দরত্ন 
বিশ্বের বিস্তৃত অঙ্গন থেকে
তখন ক্রমশ জটিল হচ্ছিল সময়
এবং সময়ের কুম্ভীপাকে বিপর্যস্ত হচ্ছিল মানুষ।
সহৃদয় শব্দ এসে দাঁড়ালো তার পাশে,
ঢুকে পড়লো কাব্য-কথায়
গন্ধ পেয়ে ছুটে এলো বিজ্ঞান, এলো প্রযুক্তি ও দর্শন
সাহিত্যকে অভয় দিয়ে বললো: 
হ্যাশ ট্যাগ--মি টু--আমিও আছি।
মহাকাব্য এসে আশীর্বাদ করে বললো  :
সুখী হও,দীর্ঘজীবী হও,
বিশ্বময় গড়ে তোলো অখণ্ড শব্দের সংসার।

আমি তাই বনেজঙ্গলে, পাহাড়েপর্বতে,সাগরেনগরে
শব্দ কুড়োতে বসেছি--যে শব্দ সহৃদয়হৃদয়সংবেদী,
যে শব্দ ভেসে আসে ঢেউয়ে ঢেউয়ে বাতাসে বাতাসে
যে শব্দ পাক হয় বাংলার অদৃশ্য ভিয়েনে।



                    বিভ্রান্তি 



দাঁড়ালাম অবশেষে
সংসারের সমুদ্রবন্দরে
তীরে এসে ভিড়েছে জাহাজ

চলে যাব বহু দূরে
কোনো পিছুটান নেই আর
ফুরিয়েছে জগতের কাজ।

মগজে বেঁধেছে বাসা
অর্থহীন শব্দ রাশি রাশি
সেগুলোকে কোথা রেখে যাব?

কবিতা লিখবো বলে
যা কিছু দেখেছি মর-চোখে
সেগুলোকে কোথায় লুকোবো?

সূর্য অস্ত যায় ডানে
বামে জাগে পৌর্ণমাসী চাঁদ
যখন দক্ষিণমুখো হই

উত্তরমুখো হলেই
অবস্থানে বৈপরীত্য আসে
বলো,আমি কোনদিকে রই।

উত্তর-দক্ষিণ ভেদে
এতই পার্থক্য ফলাফলে
উদভ্রান্ত কোন্ দিকে যাব

সমুদ্রেই দেব ঝাঁপ
যা হওয়ার কপালে হোক
সাঁতরেই সাগর পেরোবো।





        পথপ্রান্তে ঘর 


পথের ধারে ঘর
সেই ঘরের  ভেতর
সারাদিন ছটফট করি দুরারোগ্য রোগের জ্বালায়
কুয়াশার চাদরে মুখ ঢাকে মুমূর্ষু হেমন্তের দিন
আমার অবস্থা যদিও সঙ্গিন
তথাপি বর্ষণশেষে বর্ণালি রামধনুর ন্যায় 
ক্ষণিক খুশির আবেগ আমাকে ভাসায়
যখন চতুর্থ বর্ষীয় পৌত্রী পাশে এসে বসে
বলে,দাদু, হাঁটো,আমার হাত ধরে হাঁটো।
মাঝে মাঝে স্পর্শ করি
অকল্পনীয় দুরাশার উচ্চতম চূড়া
যদি সেরে উঠি
যদি বিধাতা দেন বরাদ্দের অধিক পরমায়ু
তবে দূর করে দেব সর্ববিধ বেজন্মা হৃদয়ের খেদ
ঘুণধরা ভঙ্গুর হাড়ে লাগুক বাতাস
নাতনির হাত ধরে ঋজু হেঁটে চলে যাবো
অহর্নিশ অসন্তুষ্ট এ শহর ছেড়ে
শান্ত কোনো পল্লীর দূরতম কোণে
বেঁধে নেবো বাসযোগ্য প্রশান্ত কুটির
যার পাশে পথ নয়,থাকবে নিস্তরঙ্গ দিঘি।
পৌত্রী বলবে,দাদু, চলো ফিরে যাই
উত্তরে বলবো,তুমি ফিরে যাও দিদিভাই
বাকি কটা দিন আমি এখানে কাটাই
এখানে শহুরে মানুষের  প্রবেশ অবান্তর
এখানে পথের ধারে নয়, পথপ্রান্তে ঘর।