নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

চন্দ্রানী পাল

বৈশাখী ঝড় 
*********


বৈশাখী ঝড়,মন তোলপাড়,
ঝরা বকুলের গন্ধ,
মনের পালে লাগুক হাওয়া
কোরো না দুয়ার বন্ধ।

বৈশাখী ঝড়,মন তোলপাড়,
মনের মাটিতে বৃষ্টি,
মেঘ সরিয়ে আসুক আলো
হোক নব সৃষ্টি।

বৈশাখী ঝড় ,মন তোলপাড়
ইচ্ছে পালে হাওয়া,
সবার সাথে গলা মিলিয়ে
খুশিতে গান গাওয়া।

বৈশাখী ঝড়,মন তোলপাড়
মনটা পুড়ে খাক,
যাবার যে,সে যাবেই চলে
থাকার যে,সে থাক।।

মিঠু মুখার্জি

তুমি ডাকলে
*********



তুমি ডাকলে এইইই --
আমি আনমনে উঁহুঁ-
এক ঝাঁক বুনোহাঁস
ডানা মেলে উড়ে গেল নীল আকাশে ।
কি জানি কি ভেবে!
অরণ্য কাঁপিয়ে আমরা হেসে উঠি
যেন ঝড়ের লুটোপুটি
অরণ্য!মহুল বনের অরণ্য।
কি বন্য!
তোমার দুচোখ আমার চোখে নিবদ্ধ
লজ্জায় আমি জড়সড়
তোমার তখন লতানো দাঁড়ি
আমি তখন অষ্টাদশী
আকাশে ছিল চতুর্দশী চাঁদ
কোথায় গেল!সেসব  দিন আজ?
বললে তুমি যাবি? ঝুমরিতিলাইয়ার বাঁধ?
দে তোর হাতটা আমার হাতে আজ।
মুখ বাঁকিয়ে আমি বলি
কি হবে ওখানে?
বললে তুমি, হাজার পাখির
মেলা সেখানে।
দেখবি তাদের সুখের ঘরকন্না
শিখবি কতো জানা অজানা।
বাঁধের ধারে গিয়ে দেখি
রঙবাহারি পাখির জটলা
যেন শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা।
হাতে তালি মেরে আমি বলি বাহ্!
এসব তো আমার জানা ছিল না?
সব কিছু হল জানা বোঝা
কত অচেনা কে হল চেনা ।
শুধু হাতটি ধরে যে চেনালো
আজকে সেযে বড় অচেনা!

মনি আহমেদ

বৈশাখ এসো
**********



বৈশাখ আমার  জীবনে  জুড়ে আছে ,
তাই  বৈশাখ  আসলে মনে  পরে যায় ,
সব কথা  সব  ভালোবাসা ।
শাহবাগের  কর্নারে  আমারা
মঙ্গলযাত্রা  দেখবো  বলে  দাড়িয়ে আছি ,
চুতুর্দিকে  গান  বাজছে ----------------
 রবীঠাকুরের "এসো  হে  বৈশাঁখ  এসো  এসো "
নূতন  লাল  পারের  সাদা  শাড়ি  পড়েছি ,
প্রথম  শাড়ি  পড়ার  আনন্দ  আলাদা ।

হটাৎ  আমার  এক বন্ধু  বললো ,
দেখ  এই  ছেলেটা  কোলকাতার ,
তোদের  পাড়ায়  থাকে  ।
বেখেয়ালে  মুখের  ঘাম  মুছলা্‌ম,
মঙ্গল  শোভাযাত্রা  আসছে  ।
সমস্ত  অমঙ্গলের  প্রতিবাদ  চিহ্ন নিয়ে ।
চতুর্দিকে  ঢোল  বাজছে  -----------
সাদা  লাল  পাড়ের শাড়ি  সাদা  লাল পাঞ্জাবী ,
কি দারুণ  লাগছে  সবাই কে ।

বাসায়  আসার  সময়  দেখলাম  ,
সেই  ছেলেটা  আমায়  দেখছে ।
পহেলা  বৈশাঁখ  বাংলা  যেন হাসছিল ।
মন  বড়  অনমনা  ছিল -------
মুঠো  মুঠো  মেঘের  মতো  ছিল  ভাললাগা ।
হটাৎ  একদিন  আমার  এক ছোট  ভাই
এসে  বললো  তোমাকে  পাড়ার ভাইয়া ,
এই  বই টা  দিতে  বলেছে।

হৃদপিণ্ডের  শব্দ  ফুসফুসের  চাপ
সেই  বইটা  ছিল  রবীঠাকুরের
সঞ্চয়িতা  কিছু  বেলি  ফুল -----
ভিতরে  লিখা  তোমায়  কত  টা
রবীঠাকুরের  সঞ্চয়িতার  মত
প্রমান  আমার  কাছে  নেই  ।
তবু  যেন  অনেক  অনেক  ভালোবাসি ।
অল্প  বয়স  প্রেমের  মেঘলা  দিন আসে ,
সারা  বাংলা  হেসেছিল সেইদিন ।

প্রথম  ভালো  লাগা মুগ্ধতার  বীজ
বাতাসে  গাঢ়  হতে  থাকে  বনজ  গন্ধ ,
রাতের  আকাশে  নেমে  আসছে
স্বপ্নের  জলাশয়  হয়ে ।

অmrita

অতীত
*****



চূড়ান্ত ধাক্কাতে শরীরের সমস্ত উপদ্রুত অঞ্চলে অবরোধ জারি হয়।।

মাথায় সম্প্রচারিত খবর আসে,,'সাক্ষ-প্রমাণ লোপাট,আসামি ফেরার'।।

ওলট পালট খাতা,পেন। আফসোসে ভিজে যায় শুয়ে থাকার ধ্বংস-চাদর। আচমকা বিদ্যুত-ঘুম ভেঙে যায়,,,,। এত খোলামেলা কেন শরীর?

এত খুলে রাখা কেন? টানটান পদ্ম-বুকে সাফ লেখা দেখতে পাই 'আসামি ফেরার'। ফেরারি ব্যক্তিগত হাতের ঘ্রাণ।।

তারপর থেকে বিশ্বাস-ঘরে পাসওয়ার্ড-লক লাগিয়ে বাড়ি ফিরি উল্টোরথের দিন, মনে মনে আউরে যাই চোয়াল-চাপা হুমকি-মন্ত্র,,
          তুমি ক্ষমা চাও,ক্ষমা চাও হে অতীত।।
                                              

বিকি দাস

রাধাচূড়া 
******


তাহলে তুমি'ই ছিলে সেই রাধাচূড়া?
একা একা বৃষ্টিতে ভিজেছিলে।
বৃষ্টি - তো তোমার চোখেও জমে,
শুধু তুমি বুঝতে দাও না।
রোদ্দুরে পুড়ে যাওয়া মন তোমার
তবুও কত চকচকে করে.....
এমনিতেই হীরে কখনো গলে না,
আর আগুন তোমায় পোড়াবে কি...?
আমার যে একেলা একটা সিন্দুক আছে,
তোমার হীরের মন টা দাও ?
লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখি।


মনোরঞ্জন সরকার

তারপর আর আসোনি...
*******************



রোজ দেখি এরাস্তায় যাও
কাধে ঝোলানো লালনীল ওড়না। পিঠ ব্যাগ। বইখাতা।স্কেল।
টিউশনে বুঝি? বলতে চেয়েও বলা হয়ে ওঠেনি, কিভাবে
এপথে যেতে যেতে বারবার, মারিয়ে যাও এ-বুক তুমি আর, তোমার কন্যাশ্রী সাইকেল।
ভুলকরে যেই দিন প্রথম চোখে রেখেছিলে চোখ
চলার গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়ে। কি নির্মমতায় মারিয়ে গেছ বুক। তুমি জানো?
ভেবিছিলাম এইতো প্রেমের শুরু। সেদিন থকে তুমি ভীষন সাবধানে
ফেলেছো পা হয়তো দুরুূুদুরু। চোখাচুখির করোনি ভুলচুখ আর কোনোদিন কখ্খনো।
তারপর হঠাত্ যেদিন তুমি নতুন সাজে এলে
হাটুর নীচে দোপাটি রং ফ্রক,
বলেছিলাম।কি দারুন লাগছে তোমায়!
দেখেছিলাম। ভেতর ভেতর ভীষন লজ্জাতে লাল হলে।

তারপর পুজো এলো।
ছুটি ছিল। সেই থেকে আর এ-পথে আসোনি।
না বলাই থেকেছে মনের কথা। শোনাও হয়নি-
ভালোবেসেছিলে কি বাসনি...
আমি এখনো শুধু সেই ভুলের মাশুল গুনি
দু-কানেতে বাহারি হেডফোন,
নচিকেতার নীলাঞ্জনা শুনি।

সুদীপ্ত সেন

 গ্রীষ্ম গরম
::::::::::::::::



জলের তলাই মাছের খেলা কিলবিলিয়ে
আমড়া গাছের পাতা পরেছে জল ছুঁয়ে থাক

চিলেরা কেমন বৃষ্টি আশায় ডাক দিয়ে যাই
পায়রা গুলো গোলির গায়ে ঘর করেছে

ছাদের নীচে গরম সরে জলের ফোটা
গাছের থেকে বাষ্পমোচন ধোঁয়ার মতো
দূরের পাখি ফিরছে দেখো শান্ত হাওয়ায়
চাতক গুলো তাকিয়ে থাকে জলের ফোটায়।

অনেক পরে সাঁঝের তারা,মধ্য আকাশ
জোনাকি পোকা, নিভিয়ে গেলে বিজলিবাতি
আমার থেকে অনেক দূরে ঝি'ঝি পোকা
ছাদের গায়ে বেলি ফুলের গন্ধ একা।

তাল পাতাতে বানিয়ে ছিলাম হাত পাখাটা
এক নিমেষে নামিয়ে দিলাম ছাতুর থালা
সেদ্ধভাতে গল্প গুলো শান্তি খোঁজে
রিলিপ মাখি গুড নাইটে চোখটি বুজে।

মৌসুমী রায়

বৈশাখী সাঁঝবেলা 
~~~~~~~~~~~~~~~




ছুটছে ট্রেন ছুটছে সাথে
ধানক্ষেত,নদী জঙ্গল ঘরবাড়ি
নামছে সাথে আমার প্রিয়
বৈশাখী সাঁঝবেলা
আমার দিনের সাথে আড়ি।
নকশা কাটা আকাশটাতে
নানান রঙের খেলা
আশায় আছি কবে আমার
কাটবে এমন একাকী
বৈশাখী সাঁঝবেলা।
নদীর জলে সুখের আঁচল
ভিজবে খেয়াল খুশি মত
পায়ে কাঁটাতার আর বেঁধোনা
দেখো বাড়ছে পায়ের ক্ষত।
শব্দগুলো মনের ভিতর
ঝড় ওঠাতে চায়
পালিয়ে যাবই অচিনপুরে
যাতে কেউ না খুঁজে পায়।
হঠাৎ নামা বৃষ্টি আমার
সাঁঝবেলার স্বপ্ন ভাঙ্গায়।


সমীর সরকার

ছায়াপোড়া মন
***********


গুল্ম ঘুমের কুশি
নরম হাওয়ার দোল ছোঁয়ায়

জলছবির আকর্ষ
চুঁইয়ে পড়ছে অর্বুদে

জড়া মুখ তুলে
বোঁটা খসা আলো
শিষ  কাটছে জলবাঁশি

ঠেস দুয়ার
কোদাল ছাটা অন্ধকার
আড়ষ্ট চোখ
এক দোয়াত হিমেল কুচো
উত্তুরে জানালা
ভাবডোবা খাগ সুদূর প্রান্তীয়

বাড়িয়ে হাত টানছে দাগ
 তোমার সেই অনুক্ষণ

কি করব বলো -

কথাঝরা গাছ আমার যে
 ছায়াপোড়া মন ...

মৌসুমী ভৌমিক

অবান্তর আমি 
=============



অবান্তর বার্তালাপে, কাটাই
           অবান্তর বার্তালাপে
যাক না এভাবেই
            বিলাপে প্রলাপে।

অকথার কথা শুনে
           ভাবিস অযথা যাপন
কিই-বা ক্ষতি বল্
           যদি এমনই আয়োজন !

ভাববি সেদিন ভাববি
           এমন কেন দিন
প্রলাপগুলোই খুঁজে
           খুঁজে ঘুরবি সেদিন।

নীলা হোসেন

বৈশাখ আগত
""""""""""""""""""
               
  

বিদায়ী  ১৪২৪ বর্ষ
ঝড়ো ঝড়ো আগত
ক্রমান্বয়ী  বিশাখা  হর্ষ।।

মনো প্রান্তরে যতো পাপ
নিমিষে ধূলায় উড়ায়ে
 দীপ্ত হোক ঋত প্রতাপ।।

জমাক্ত যতো জঞ্জাল
বৈশাখ আগমনে দ্বন্দ্বিত
হৃদে বিনাশিত  কজ্জল।।

রুনা দত্ত

হংসীনি রাই 
***********




 খোঁপায় চাঁদের পালক গুঁজে হংসীনি
 রাই জলকে নামে 
 বাদামী পিঠে ঝুরো ঝুরো জোছনা
 অভ্র আল্পনা এঁকে দেয়। 

 জুঁই চাঁপার গন্ধে মদির কুঞ্জবনে
 কৃষ্ণপক্ষের গাঢ় ইশারা
  প্লাবিত স্নায়ুতে শ্যাম শিউলির ঘ্রাণ 
  আর ভ্রমর বিলাস।
   
 উন্মুক্ত নাভিমূলে ময়ূরাক্ষী নদীর 
  আন্তরিক সৃজনানুরাগে...
  সোহাগী শরীর জোড়া জল,কলসী
  ভেসে যায়।
  মৌসুমী মৌতাতে সিক্ত শরীরে
  বিন্দু বিন্দু পরাগরেণুর মিলনাভূতি।
   রিরংসার অভিসারে পেখম মেলে
   হংসমিথুন রাই!

    

তনুজা চক্রবর্তী

হারানো সময়
*************


      

সময়ের আগে সন্ধ্যে এল 
আকাশের সেকি রাগ,
থেমে থেমে গর্জে উঠছে
বলছে তোরা ভাগ!
আমরা তখন নতুন পাতা
কিছুতেই নেই ডর,
আকাশ দেখে মন বুঝেছে,
পূর্বাভাস দিচ্ছে ঝড়।
টালির চালে পড়ার শব্দ
গড়ছে আমের পাহাড়, 
জিভের জল ভাবছে তখন,
আচারের কত বাহার!
আকাশ তখনও রাঙাচ্ছে চোখ
গলার সেকি জোর,
সব শুনেও না শোনায় যেন
কিসের একটা ঘোর----
এখনও আসে বৈশাখী ঝড়,
আমও পড়ে ঝরে,
আমি এখন অমলের মতো
দেখি জানলা ধরে---

আলো মণ্ডল

থমকে যাওয়া সময় 
 ******************



তোমার দেওয়া মেঘ গুলো সব
জানলা'র গ্রিল ছুঁয়ে ,
নীল পর্দায় সব'টুকু রঙ
বৃষ্টি দিয়েছে ধুয়ে !!

থমকে গিয়েছে হঠাৎ সময়
ইটের ফাঁকে-ফাঁকে ,
ক্ষত গুলো সব দিচ্ছে জ্বালা
সলতে পুড়ছে বুকে !!

মেরুদণ্ড টান-টান করে
আমার তুমি'তে ভরা ,
কথায় -কথায় কথা গুলো সব 
ঝরায় পলে'স্তারা !!

রাতের আঁধারে অজুহাত গুলো
খেরো'র খাতা খুলে,
না পাওয়া গুলো'ই বাড়িয়েছে হাত
চৌকাঠ পিছে ফেলে !!

এক মুঠো সুখ স্বপ্ন চোখে
চলার ছিল শুরু ,
কর্পূর হয়ে মিশেছে বাতাসে
আজ অজানা মেরু !!

ছোট্ট  পৃথিবী টুকরো হয়েছে
হাজার অজুহাতে ,
একটা কাগজে কলম আঁচড়ে
হাত নেই আজ হাতে !!

অনোজ ব্যানার্জী

আমি নেতাজী,আমি আছি
*************************





সেদিনের বিমান দুর্ঘটনায় আমি মরিনি।
আমি আজো আছি,
থাকবো ও  চিরকাল।
ভুলিনি তোমাদের,
আমি আছি,
অগণণ জননারায়নের হৃদয়ের গভীরে,
 চেতনার অনু পরমাণুতে,
ইলেকট্রোনে প্রোটনে।

আমি আছি ফুলে ফলে বৃক্ষে
লতায়, পাতায়,ঘাসে ঘাসে।
বিশুদ্ধ বাতাসের স্তরে স্তরে
কোশে কোশে।
নীলাকাশে গ্রহ নক্ষত্র  চাঁদে।
পবিত্র সূর্যের আলোর তরঙ্গস্রোতে।

স্নিগ্ধ  মধুর ঝর্ণাধারায়।
আমি আছি প্রতিবাদী মানুষের
দীপ্ত কন্ঠের বজ্রে।

আমি আছি, তোমাদের পবিত্র
রক্তের জিনে ক্রোমোজোমে।
আমার মৃত্যু  নেই
আমি অমর।
আমি বলবো না আর
তোমরা আমাকে রক্ত দাও
আমি তোমাদের স্বাধীনতা  দেবো।
আমি গড়বো না আর
আজাদ  হিন্দ বাহিনী।
আমি  ডাক দেবো না
দিল্লী  চলো।
আর মুখোশের অন্তরালে নয়,,
এবার তোমরা মানুষ হও।

আমার জন্মদিনে আর শুধু
ফুলচন্দনের পবিত্র মালা নয়।
ফুল নয়,ধূপ নয়।
অগণন  ক্ষুধিত মানুষের মুখে
তুলে দিও দুমুঠো ভাত।
প্রকৃত মানুষ হয়ে নিজে নিজে,,

অসহায় দুর্বল  মানুষের
পাশে পাশে এসে দাঁড়াও। 
মানুষই দেবতা,মানুষের

সেবা করো হাসিমুখে,নির্মল সুখে।

সুনন্দ মন্ডল

হিপ্নোটাইজ
*********                


সন্ধ্যারতি--শাঁখের আওয়াজ
গৃহবধূর ছড়ানো ধূপ-ধোঁয়া।
লাল পাড় সাদা শাড়িতে গন্ধ লেগে শুদ্ধতার
মিষ্টতার পরিবেশ বাড়িময়।
মশাদের আক্রমনে ডেঙ্গু কিংবা ম্যালেরিয়া
রোগের আস্তিন ঝেড়ে তকতকে।
সকাল থেকেই খরপ্রখর মাথা ঝিনঝিন
কর্মব্যস্ততার ভিড় ঠেলে বেরিয়ে
বিকেলের হাওয়ায় গায়ের ঘাম শুকিয়ে
মায়ের যত্নে লালিত ধুপকাঠির ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে
বাড়ির রাস্তা চিনে ফেরা।
গোরুর পালও ফিরে আসে মাটির গন্ধ শুঁকে।
মায়ের মমতায় আঁকা স্নিগ্ধতার জাল
কী মায়াময়! কোলে মাথা রেখে শান্তির ছটা।
চোখ বুজে স্বস্তির পাতায় শিরা-উপশিরা বেয়ে
রক্ত চলাচলের অদম্য প্রয়াস।
মোহিনীর কুহকের মতো ছড়িয়ে শুচিতা
আত্মতুষ্টির বশ্যতায় আবিষ্ট দেহ-মন।

শরীফ সাথী

স্বাধীনতা 
*********

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা
আমরা পালন করি,
একাত্তরের সেই ইতিহাস
বুকে লালন করি।
সবুজ বনে থাকলে চেয়ে
কত স্মৃতি ভাসে,
মায়ের কান্না বোনের করুণ
দৃশ্য চোখে আসে।
শহীদ সেনার বুকের রক্তে
ভিজে সবুজ বুক,
সৃষ্টি হলো এ বাংলাদেশ
দৃষ্টি হলো লুক।
স্বর্ন ফলা অপরূপা
মমতাময় মুখ,
অবশেষে পেলাম আমরা
স্বাধীনতার সুখ।

কবির কাঞ্চন

নববর্ষে একদিন
**********




"কিরে মা, এখনও ঘুমাসনি! রাত কয়টা বাজে? সেদিকে খেয়াল আছে!"
মায়ের প্রশ্নে মৌমিতার কাজের একাগ্রতা ভাঙে। সে হাত থেকে সাইনপেনটা রেখে মাথাটা উপরে উঁচিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
- মা, আরেকটু। এই পোস্টারটায় রঙ করলেই আমার কাজ শেষ হবে।
- কিসের পোস্টার?
- কেন? তুমি কি ভুলে গেছো - আগামীকাল পহেলা বৈশাখ,বাংলা নববর্ষ। আমাদের স্কুল দিবসটি জাঁকজমকভাবে পালন করছে। আমরা সবাই তাতে মজা করবো।
মৌমিতাকে এমন উচ্ছল দেখে শারমিন খানমের খুব ভালো লাগে। মেয়ের কাছাকাছি বসে একে একে তার আঁকা সব ছবি বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখেন। আবহমান বাংলার নানান ঘটনা তার অঙ্কনে ফুটে উঠেছে। মৌমিতা এতো সুন্দর ছবি আঁকতে পারে তা তার জানা ছিল না। এরপর আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে মৌমিতার ছবি আঁকা দেখেন। এরপর মৌমিতা 
সবকিছু গুছিয়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ রাখে। রাত সাড়ে বারোটা বাজে। মৌমিতা ব্যস্ত গলায় বলল,
- মা, আমার কাজ শেষ হয়েছে। আমি ঘুমোতে যাচ্ছি। সকাল সাড়ে ছয়টা বাজলে কিন্তু আমায় জাগিও। 
- এতো সকালে কেন?
- ‎আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মেলায় একটি স্টল নিয়েছি। সেখানে আমরা বিভিন্ন ডিজাইনের দেশীয় পিঠাসহ রকমারি খাবার বিক্রি করবো। 
- ‎তো তোমাদেরকে কে রান্না করে দেবে?
- ‎মা, আমরা যে খাবারগুলো বিক্রি করবো সেগুলো একটি দোকানে আজ অর্ডার করে এসেছি। কাল সকালেই সব পাবো। আর আমার বান্ধবী সবিতার মা হাতের তৈরি কয়েক আইটেম পিঠা তৈরি করে দেবেন। দোকানে নুডুলসের ব্যবস্থাও থাকবে। নুডুলস রান্না করে আনবে আমাদের আরেক বন্ধু দুর্জয়। আর নববর্ষকে ঘিরে সুন্দর সুন্দর পোস্টার তৈরি করা আমার দায়িত্বে পড়েছে।
- ‎আচ্ছা মৌমিতা, বাংলা নববর্ষের মেলায় তোমাদের দোকানে দেখছি সব আইটেমই আছে। কিন্তু----।

মৌমিতা মায়ের মুখ থেকে কিন্তু কথাটা বের হতে না হতে কপালের ডানপাশে তর্জনীটা ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ করে বলল,
- ওহ্! হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সকালবেলার পান্তা-ইলিশ! আমাদের স্টলের মূল আকর্ষণ কিন্তু ঐ পান্তা- ইলিশই। আমার বান্ধবী সোহেলীর মা পান্তা ভাত আর ইলিশ রান্না করবেন। এতো কাজের চাপে নববর্ষের মূল আকর্ষণকে ভুলে গেছি।
শারমিন খানম মেয়ের কথা শুনে মিটিমিটি হাসেন। তার মনে হতে থাকে, মৌমিতা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে আনন্দ পাচ্ছে। অথচ  এর আগে ও নিজের কাজেও ফাঁকি দিয়ে মজা নিতো। আজ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এক মৌমিতাকে পেয়ে মায়ের মন ভরে।
মৌমিতার রাতের ঘুম খুব ভালো হয়নি। মনের মধ্যে আগে থেকেই পহেলা বৈশাখের আমেজ আনাগোনা করছিল। খুব রাত করে ঘুমিয়েছে সে। সকাল সাড়ে ছয়টা বাজতেই বালিশের পাশের মোবাইলটার ক্রিং ক্রিং আওয়াজে ঘুম ভাঙে তার। ঘুম ঘুম চোখে হাতঘড়িটার দিকে এক নজর দেখে নিয়ে আলসেমি তাড়াতে রুমের মধ্যে এদিকওদিক পায়চারি শুরু করে। 
এরপর সকালের নাস্তা সেরে মায়ের শাড়ি পরে মেলায় আসে সে। 

সকাল দশটা বাজতে না বাজতে মেলা জমে উঠেছে। চারিদিকে বাংলা নববর্ষের উৎসবের আমেজ। সবার শরীরে বাঙালি পোশাক। মেয়েরা প্রায় শাড়ী পরেছে। আর ছেলেরা কেউ ফতুয়া, কেউ আবার লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলমাঠের এককোণে নাগরদোলায় ছোট ছোট শিশুদের উচ্ছ্বাসে খুশির সুবাতাস বইছে। পাশেই চলছে ম্যাজিক শো। জাদুপ্রিয় ছেলেমেয়েরা জাদু দেখতে টিকিট কাউন্টারে ভীড় করছে। 
কেউ কেউ মৃৎশিল্পের জিনিসপত্র, বাঁশি, রকমারি সামগ্রী কিনছে। কেউ আবার তীব্র গরমে স্টলে গিয়ে প্রাণভরে বাঙালি-খাবার খাচ্ছে। 

মৌমিতা একটানা এগারোটা পর্যন্ত স্টলে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে সোহেলীকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিছু দূরে কয়েকজন ক্লাসমেটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে ওরা। 
একজন শিল্পী রঙ দিয়ে সবার গালে বাংলা নববর্ষের নানান নকশা আঁকছেন। সিরিয়াল নিয়ে ওরাও গালে নকশা আঁকায়। এরপর ঘুরে ঘুরে পছন্দের জিনিস কিনে নেয় ওরা। 
এরিমধ্যে ওদের সামনে কয়েকজন শিক্ষককে ঘিরে আছে অনেকে। সবাই স্যারদের সাথে সেলফি তুলছে। 
মৌমিতাকে দেখে মিন্টু স্যার বললেন,
- এই মৌমিতা, ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
এদিকে এসো। আজ দূরে একাকী দাঁড়িয়ে থাকার সময় নয়। আজ সবাই মিলে দূরত্ব ভুলে আনন্দ করবার দিন। আজকে আমরা কেউই শিক্ষক-শিক্ষার্থী নই। আজ আমাদের পরিচয়- আমরা বাঙালি।
স্যারের কথায় মৌমিতারাও সবার সাথে দাঁড়িয়ে সেলফিতে অংশ নেয়। সেলফি তোলা শেষে আবার স্টলের দিকে পা বাড়ায় ওরা। হঠাৎ সোহেলীকে উদ্দেশ্য করে মৌমিতা দুর্বল গলায় বলল,
- এই সোহেলী, আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে। চল, শরবত খাবো।
- হ্যাঁ, আমারও তৃষ্ণা পেয়েছে। কিন্তু কীসের শরবত খাবি? এখানে তো অনেক আইটেমের শরবত দেখা যাচ্ছে।
- আমি বেলের শরবত খাবো। তুই কোনটা খাবি?
আমি তরমুজ আর লেবুর শরবত খাবো।

শরবত খেয়ে ওরা নিজেদের স্টলে ফিরে আসে। ততক্ষণে স্টলের প্রায় সব খাবার বিক্রি হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে মেলায় মধ্যাহ্নভোজের বিরতি চলছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আগে থেকে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারিদের জন্য খাবার রান্না করে রেখেছে।  শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টোকন জমা দিয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করছে। মৌমিতারা স্টল গুছিয়ে লাইন হয়ে খাবার গ্রহণ করে। 
খাবার পর্ব শেষে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের জারি-সারি, ভাটিয়ালী নানান বাংলা গানে উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। 
এরপরপর মঞ্চে আসে ভাড়া করে আনা ব্র্যান্ড দল "অনির্বাণ" এর শিল্পী রিকি। দর্শকরা তুমুল করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানায়। রিকি তার ভরাট কন্ঠে পরপর তিনটি হিন্দী গান পরিবেশন করে। উপস্থিত দর্শকবৃন্দ নেচে গেয়ে তার গান উপভোগ করে। মৌমিতা, সোহেলীরা দর্শকসারির এককোণে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। মৌমিতা সোহেলীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
- দ্যাখ্ বন্ধুরা, আজ আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সারা বছর না পারি। অন্তত আজকের দিনের জন্য হলেও আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির লালন করা উচিত। হৃদয়ে ধারণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। তোরা কি বলিস?

সবিতা গম্ভীর হয়ে বলল,
- তুই একদম ঠিক কথা বলেছিস, মৌমিতা। আজ বাংলা নববর্ষ। নববর্ষের অনুষ্ঠানে হিন্দী গান মানে বিদেশী সংস্কৃতি চর্চা করাটা আমার কাছেও খারাপ লাগছে। অথচ দ্যাখ্,  সবাই কীভাবে উল্লাস করছে!

পাশ থেকে দুর্জয় বলে ওঠলো,
- এখানেই আমাদের সমস্যা। আমরা কোনকিছুর ভালোমন্দ বিচার বিবেচনা না করে আনন্দ পাই। এখানে যাদের নাচতে দেখছিস আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, তাদের অনেকেই গানের অর্থ পর্যন্ত ভালো করে বুঝে না। শুধু বাদ্যের তালে তালে মাতছে। আমার ভাবতে অবাক লাগছে, যারা গান গাইছে তারাও তো বাঙালি। আজকের দিনটির কথা মাথায় নিয়ে তাদেরও তো একবার ভাবা উচিত ছিল। 

মৌমিতা অভিযোগের সুরে বলল,
- তাহলে শোন, গত বছর আমি আমার পরিবারের সাথে পাঁচদিনের ট্যুরে ইন্ডিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওদের দু/চারটি  অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছি। কোথাও বাঙালি সংস্কৃতি আমার চোখে পড়েনি। আরও অবাক  করা কথা কী জানিস, আমাদের দেশে যেখানে প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন চ্যানেল চলে সেখানে ইন্ডিয়া গিয়ে যেটুকু দেখেছি তাদের কাউকে বাংলাদেশি কোন চ্যানেল ভুল করে দেখতেও দেখিনি। এটাই ওদের সাথে আমাদের পার্থক্য। 

সোহেলী বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলল,
- তাহলে আয়, আজ থেকে আমরা শপথ করি। আমরা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিই ধারণ করবো। আমরাই শুরু করি। হয়তো একসময় দেখা যাবে আমাদের দল ভারী হচ্ছে।

সবাই তা সমর্থন করে হাতে হাত রেখে শপথ করলো। এরিমধ্যে মঞ্চে শুরু হয়ে গেলো স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিনয়ে নাটক "পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ"। 
অল্প সময়ের মধ্য পুরো মঞ্চকে একটি সুসজ্জিত দোকানঘরে পরিণত করা হলো। দোকানের ক্যাশবাক্সের পাশে বসে আছেন একজন দোকানদার।  দোকানের সম্মুখে দুই সারিতে কয়েকটি কলাগাছ রাখা হয়েছে। সেই গাছগুলোর সাথে ত্রিকোণাকার রঙিন কাগজ লাগানো হয়েছে। একটু পর একজন খরিদ্দার দোকানের গেইট পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। দোকানদার তাকে সালাম জানিয়ে সুন্দর করে বসতে অনুরোধ করেন। তারা একে অন্যের মধ্য কুশল বিনিময় করেন। দোকানী ও খরিদ্দার পুরনো বছরের বকেয়া হিসাব করছেন। ততক্ষণে দোকানের একজন কর্মচারী মিষ্টি নিয়ে খরিদ্দারের সামনে দেন। 
খরিদ্দার মিষ্টিমুখ করে দোকানীর বকেয়া পরিশোধ করেন। এরপর খরিদ্দার খুশিমনে দোকানীর সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে যান। 
মুহূর্তে দর্শকবৃন্দ তুমুল করতালির মাধ্যমে অভিনেতা-শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানায়। 
মৌমিতারা নাটকটি দারুণ উপভোগ করে। বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির চাক্ষুষ উপস্থাপনা উপস্থিত দর্শকের মনে পরিতৃপ্তিতে ভরে দেয়। সবশেষে মঞ্চ আসে স্কুলের প্রধানশিক্ষক। তিনি হাতঘড়িটার দিকে একনজর তাকিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বললেন,
- আজ আমাদের বাংলা নববর্ষ। নববর্ষের এই শুভক্ষণে সবাইকে জানাই আবারো নববর্ষের শুভেচ্ছা। নিয়মিত পড়াশুনার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আজ আমরা নববর্ষের নতুন সাজে নিজেদের সাজিয়েছি। প্রাণভরে আনন্দ করেছি। পুরোপুরি বাঙালি হবার চেষ্টা করেছি। আশা করি আমাদের আজকের আয়োজন সবার কাছে ভালো লেগেছে। সকডল থেকে দুপুর। আবার দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। তাই এখনই আমাদের অনুষ্ঠানকে সমাপ্ত করতে হচ্ছে। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করে আজকের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। 
মুহূর্তে দর্শকরা করতালির মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানায়।
অনুষ্ঠান শেষে যে যার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। মৌমিতারাও একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আপন গন্তব্যপথে ছুটছে।

অসীম মালিক

টোপ
****              


মাছ ধরতে মাছের টোপ যেই দিয়েছি আমি , 
রুপোলি মাছ , সোনালি মাছ টোপ গিলেছ তুমি । 
মাছের টোপে মাছের খিদে কক্ষনো কী সাড়ে ? 
বড়শি হাতে ঘাটের দখল মনের অসুখ বাড়ে । 
টোপ গিললে ছিপুরে খুশি খেলায় অথই জলে , 
রাজাও কী এখন ছিপ ফেলে নদী নালা বিলে ! 

কোন নদীতে কী মাছ থাকে কোন টোপেতে খুশি , 
রাজাকে রোজ খবর পাঠায় আমার পাড়া পড়শি । 
ঘাট বদলে টোপ পাল্টায় রাজা , পাল্টায় না সমাজ 
মন্দিরে গিয়ে পুজো করি মসজিদে পড়ি নামাজ । 
শিক্ষা , স্বাস্থ্য , অন্ন-সংস্থান কমন কোনও টোপ নয় , 
যদি বিশ্বাস হয় মঙ্গলঘট , চাল কলাতেই তুষ্ট রয় । 

রামের চর্চা কিসের ভরসা কোন আগুনের টোপ , 
কেঁচো আজও কৃষক বন্ধু , রক্ত চোষে জোঁক । 

বিশ্বজিৎ ভৌমিক

বৈশাখ এলো 
**********


আবার এলো বৈশাখ ফিরে,
লাগছে ভীষন ভালো।

মনেতে আজ খুশির জোয়ার,
নাচতে থাকে হৃদয়ও।

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা,
চোখ ফিরালেই আর দেখা নাই।

গাছে গাছে আমের মুকুল,
সুবাস তার হাওয়ায় হাওয়ায়।

বৈশাখ এলো নদীর তীরে,
বটবৃক্ষের ছায়াতে।

বৈশাখ এসো নতুন দিনের,
স্বপ্ন-রঙিন আশাতে।

বৈশাখ থাকুক সবার প্রাণে,
স্নেহ আর পরম ভালোবাসাতে।‌।

সৈকত বণিক

 নিরুদ্দেশের শেষে 
*******************




একটা দেশলাই কাঠি জ্বালালাম
হঠাৎ যেন আঁধার নেমে এলো 
চলে গেলাম সিন্ধু সভ্যতার ৩৪ ফুট গভীর স্নানাগারটায়... 
আড়াল থেকে দেখলাম নগ্নতার বেশে তোর অর্ধসিক্ত তনুরাশি। 
কিন্তু সেই দেহটায় আজকের মতো কালো দাগ খুঁজে পাইনি তো... 
বুঝলাম পাঁচ মাথার ভিড়
আর পার্ক স্ট্রিটের ধোঁয়া- তোকে বড্ড বেশি আপন করেছে... 
আজও কিন্তু আমি তোর চোখে 
একটা নকশী কাঁথা আর একটা সাজুকে খুঁজে বেড়াই... 
কিন্তু তোর পছন্দ তো গুচ্চিও গুচ্চির ডিজাইনার 
আর ইসাবেলা মার্চেন্ট। 
সত্যি ঐন্দ্রিলা, আমার ভালো লাগে না
ভালো লাগে না, যখন সবাই তোর বুকের খয়েরি তিলটা দেখে
নিজের বুকে হাত ঘষে। 
তুই তো জানিস, দক্ষিণেশ্বরের ঘন্টা 
আর সোনামা'র মুড়ি মাখা আমার কতটা প্রিয়! 
তবু বারবার কেন শরীর দোলাতে নিয়ে যাস
ডিজে-লাউঞ্জের ডান্স ফ্লোরে??
কেন রোজই বার্মিস ককটেলের পেগে চুমুক দেওয়াস???
না ঐন্দ্রিলা, আমি পারবো না 
স্টারডাস্টর কভার পেজে তোর নাভির পাশে সূর্য দেখতে... 
তুই বরং ছুটির দিনে আমায়
মুগের বড়া আর মোচার ঘন্ট খাওয়াস, 
পারলে শোনাস দক্ষিণেশ্বরের ঘন্টা।
স্বপ্নে বরং নিয়ে যাস হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োয়...



-জিবেন্দু রাজবংশী

অভাব হলেও হারিনি 
*******************



তুচ্ছ হলে কি হবে!
রাতে সরু গলির মোরে আমার কদর এখন অনেক।
ওই যে সমাজের লোকেরা কি যেন বলে আমায় বেশ‍্যা নাকি?
বলি হে বড় বাবুরা আজ তোমরা যারে বেশ‍্যা বলো,
আমার পেছনের হিস্ট্রী একটু শুনবে চলো।
এক কালে আমার বাবার টানের সংসারে অভাব পড়েছিল খুব,
তা দেখে আমি থাকতে পারিনি চুপ।
তবে সার্টিফিকেটের উপর ভরসা ছিলো বটে,
রোজগারের দায়িত্ব তো আমাকেই নিতে হবে মাথায় উঠলো চটে।
এই এম.এ পি.এইচ.ডির যুগে কমদামী মাধ‍্যমিক পাশের সার্টিফিকেট কি হবে শুনি?
মুদ্দা কথা গরীবের মেয়ে তো ঘুষের টাকা দিতে পারবো নি।
তাই সরকারি চাকরি আর করা হয়নি,
বেসরকারি কোম্পানি গুলোতেও টাকা দেয়না খুব একটা কমী!
এদিকে বাপটাও আমাদের ছেড়ে ইহলোকে গেল চলে
এ আবার নতূন কি?
আমি মা আর ভাই পরলাম বড় অভাবের গেরাকলে।
ভি.আই.পি অফিসের দরজায় কত ঘুরলো আমার দু-পা,
টাকা ছাড়া গতিক নেই জীবন করছিল খাঁ খাঁ।
কালো কোট পরা বাবুরা চাইনি আমার কমদামী সার্টিফিকেট,
চেয়েছিলো সাধাসিধা গরীব মেয়েটার উষ্ণ শরীরের স্রোত।
গরীব হলে কি হবে আমি কিন্তু অনেক দামী,
তাই দেয়া-নেয়ার চাকরিটা আর হয়ে ওঠেনি।
একদিকে দারুণ অভাব আর অন‍্যদিকে গরীবত্বের অভিশাপ,
শেষমেষ নিরুপায়,দামী শরীরটা নিয়ে দিতেই হলো ঝাঁপ।
না না মৃত‍্যূতে নয় বাবুদের একটু উষ্ণ স্বাদ দেবার তরে,
মরতে পারলে তো বড়জোড় বাঁচতাম,
কিন্তু আমি হারিনি টাইপরা কথ‍্যবাবুদের কাছে,
আজও অন্ধকার রাতে মেদ জমে যাওয়া বাবুরা টাকা নিয়ে ছুটছে আমার পাছে।।
                            

সুকান্ত মণ্ডল

 আমি বৈশাখ 
**********



চৈত্র তুমি ভালো থেকো-
আমি বৈশাখ এসেছি বাংলায়।
নতুন করে সৃষ্টি হব ,আবার ধ্বংস ও হবো;
মনে মনে বাঁধব এক আকাশ শপথ।

ইচ্ছে হলে, ভালবাসা হয়ে ঝরবো-
           সবুজের পাতায় -পাতায়।
জলোচ্ছাসের প্রেমে আনব শস্যোচ্ছাসের বিপ্লব ।

আবার, ইচ্ছেমতন ধুয়ে ফেলব-
   নরপিশাচদের শিরায়- শিরায়।
অবক্ষয়ী আমার দেশে বেলাফুল হবে চিরবিরাজিত।


শুভদীপ পাপলু

সাডেন ডেথ
 ***********



অন্য ঋণের সাতসকালে,
কালো মানুষের ছাল
তোমার দেহে গাছ পুঁতেছে,
শুকনো লংকা'র ঝাল।

বাকি যুগের হিসেব খাতা,
সাইরেন-এ কফি মাগ
কলমপেষা জীবিকা তোমার,
আমার দেশ ভাগ।

কড়িবরগায় নকশালবাড়ি,
আসমুদ্র হিমাচল
ছন্দ হারুক তোমার নিচে,
আমার কর্মফল।

কাল কিশোরী'র রান্নাবাটি,
ইছামতি'র কূল
তোমার ওজোন্ বাড়ছে খুব'ই,
আমার ভাতে ভুল।

তোমার ছবি দ্য ভিঞ্চি মুখ,
শ্রমিক শ্রেণি'র ঝি
তোমার চোখের আইন অমান্যে,
ব্যারিকেড ভেঙেছি।


দেবাশিস সাহা

সার্কাস জীবন 
**************

            

হে ঈশ্বর
সার্কাসের তাঁবু থেকে বলছি

তাঁবুর সারা শরীরে 
বড় বড় আইহোল

ঝড় এসে উকিঁ দেয়
দ্যাখে
     জোকারেরা কষ্ট আর কান্নাগুলোকে
ধর্মান্তরিত করছে হাসি আর মজা

বিদেশী শরীরের জ্যোতস্না 
কুড়িয়ে নিচ্ছে দর্শক

হাতি-ঘোড়া-কুকুর আর পাখি
কসরত ফেরি করছে
কংক্রিটের জঙ্গলে

একটা দুখি খিদে
ট্রাপিজের খেলা দেখাতে দেখাতে
এগিয়ে আসছে আমার দিকে

সেই আদিম যুগের ছেঁড়া জাল
আজো ব্যালান্স করছে মানুষের

হে ঈশ্বর
এই সার্কাস জীবন আর 
জীবনের সার্কাস
   মেলাবো কোন অংকে....

অর্ঘদীপ পানিগ্রাহী

আনকোরা বনবাসী
*******************



অনাবৃত শব্দপুঞ্জে হারাতে গিয়ে -
দিগন্তের অনাবিল আলোর মেলায় -
মধুমালতীর ছায়ার সঙ্গোপনে ,
ঝরে পড়েছি শিউলী বেলায়...
অধরা ঘুমপাড়ানি সজীব মিঠে হাওয়ায় -
একরাশ স্বপ্ন বুক চুপকথায়.....,
এ অভাগী মন ফিনিক্সের ক্ষুধার্ত ঠোঁটে -
উষ্ণ আবহের গালিচায় একান্তে গুমরে মরে -
অনাস্বাদিত উড়ো প্রেমের তর্পণে -
শ্যাওলা ভেজা কোন এক কাক ভোরে -
আড়ষ্ট একবিংশীয় অবিন্যস্ত প্রহরে...,
প্রানহীন ইঁট পাথর আর কংক্রীটের -
কান্নাভেদী বাড়তি নেশায় - চিরকল্পিত শহরে ,
ভালো থাকার স্বল্পমেয়াদী সুদ আসলের -
অমলিন জটিল প্যাঁচের , অসম্পূর্ণ গর্ভ দ্বারে ,
তোর আলতো ছোঁয়ায়, শতপদী কেন্নো মন..
আবার ও খুঁজে নেয় সব হারিয়ে হারানোর কারণ...

জয়দীপ রায়

কল্প দুপুর 
*********



আমার এক চিলেকোঠা রদ্দুর
মসৃণ আম্রফলকে পোহাচ্ছিল
এক ঝিমানো দুপুরে
বড্ড লোভী ওই দুপুর পোড়া রোদ
দড়িতে টাঙানো আঁচলটা
ঘুম চোখের মারীচকে
ধরবে বলে পার হয়েছিল
সাবধানীর গণ্ডি
আর ফেরেনি
মার্কেন্ডীয় মতে ওটা এক কল্পনা
একটা দুপুর রোদের ।

কাজী জুবেরী মোস্তাক

 আজ আমি কাল তুমি 
**********************




আজকে যেমনটা তুমি ঘুমিয়ে আছো
আগামীকাল আমিও ঘুমিয়ে থাকবো ,
আজকে যেমনটা আমি আছি প্রেসে
আগামীকাল তোমার সংবাদ থাকবে ৷

যেমনটা তুমি জেগে ওঠোনি আজকে
আগামীকাল তুমিও পাবেনা কাউকে ,
আজকে যেমনটা অসহায় এই আমি
আগামীকাল তেমনটাই থাকবে তুমি ৷

আজকে যেমন চলেছো পাশ কাটিয়ে
আগামীকাল তোমাকেও যাবে এড়িয়ে ,
আজকে যেমন আমি চলছি একাএকা
আগামীকাল তুমিও থাকবে একাএকা ৷

আজকে যেমন আমাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে
আমার ভাইকে রক্তাক্ত ফেলে রেখেছে ,
আগামীকাল তোমার বোনটাকে খাবে
আর ভাইকে আবিষ্কার করবে ডোবাতে ৷

আমার সাথে অন্যায় তবু তুমি চুপচাপ
আগামীকাল তুমিও পাবেনা কোন মাফ ,
তাই সময় থাকতে প্রতিবাদী হয়ে ওঠো
আঁধার ভেদিয়া আলোক মশাল জ্বালো ৷

রবীন সাহানা

বিদারণ
 *******
              


দিশাহীন সীমাহীন আকাশের পানে চেয়ে
কেটে গেছে কতো নিদ্রাহীন রাত্রিবেলা।
পেরিয়েছে কত কম্বল মোড়া রাত।
গগনের কালো গায়।
দেখেছি উজ্জ্বল আভা কুমকুম
দিগন্ত প্রান্তরেখায়।

 বহুকাল কেটে গেছে,
মিহিয়ে গেছে কত খই
   মধ্য রজনী বুকে।

কেটে গেছে কত শত ঋতু
   বয়ে গেছে বহু কাল।
এ যেন নতুন শতাব্দীর বছর।
  দেখেছি অচেনা কিছু।
এ যেন আগের মতো নয়।

যেদিন রঙিন হোরিখেলা হলো
কেমিক্যালে ভেজা ,পেটে কেমিক্যাল
 কটা মুখ...
ভেসেছিল বসন্তের স্তম্ভিত হাওয়ায়।
কেঁপেছিল বুক।
কাঁটা এসেছিল গায়
সেবেলা ছিলনা শীত ,ছিলনা
 কিছু হারানোর ভয়।

যুগের হাওয়ায় বুঝেছি কত জোর।
নারীরা যৌবনে বিভোর
পুরুষের লালসায় দৃঢ় পেশিজোর।
বুকে দেয় শিশু ধোঁয়া
এ জগৎ ধর্মের ডোরে বাঁধা ,
চারদিকে হানাহানি ,শোরগোল।

সকলে ভুলে গেছে মানবতা
ভুলে গেছে বিবেকানন্দ,কালাম |
চূর্ণ হল কী শান্তির বাণী
রাজনীতির দলাদলে?

আসছে নতুন বছর, আসছে নবীন সুর
মুছে দিয়ে যাক মলিনতার লজ্জা।
প্রানে বাঁধুক প্রেমের গান বাজুক ছেঁড়া তানপুরা।
মিলনের ঐক্যে হউক ব্রতী।
নয় ধর্মের স্লোগান ,নয় কোন রাজনীতি
কাঁপুক পৃথিবী মানবের ডাকে
আমরা মানবজাতি |

সোহান আহমেদ

একদিন 
********



একদিন সবকিছু ভেংঙে-গড়বো নতুন করে,
রাখবো না আর-কুসংস্কার আমার জগতে।
থাকবে না সেখানে গণতন্ত্রের নামে কুমন্ত্রণা!
সৃষ্টিশীল পৃথিবী গড়বো নতুন সৃজনধারায়,
,
মানুষের পৃথিবীতে-থাকবেনা কোন অমানুষ,
ক্ষমতার লোভে হবেনা কেউ- বিশ্বাস কসাই!
মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করবে সবাই-বিবেক,
শান্তিনীড়ে পরিণত হবে জগত-মুক্তমন্ত্র সব।

দেব চক্রবর্তী

অমরেশ 
*****



গতকাল অমরেশ এসেছিল -
রুক্ষ চুল , ক্ষয়াটে চেহারা , অগ্নিভ চোখ....
যেন সবকিছু ছিনিয়ে নিতে চায় ও । 
ওর মভ রঙ্গের ফাটা পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বার করলো এক টুকরো হারানো স্বপ্ন । 
আমাকে দেখিয়ে বললো , 'খবর আছে ! '
আমি কোনও উত্তর দিই না । 
দেওয়ার মতো সাহসও আমার নেই । 
তারপর মুচকি হাসি মেখে অগ্নিগোলক চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এলো , ' একটা বিড়ি দে তো ! ' 
আমি তাকে সিগারেটের ঠাসা প্যাকেট এগিয়ে দিই । 
' ও , আজকাল বিড়ি খাচ্ছিস না বোধহয় ! ' 
বিড়ি-পোড়া ঠোঁটে বিস্ময়কর প্রশ্ন । 
দুরন্ত ইংরেজী বলা ঠোঁট হটাৎ শুয়ে পড়ল আমার ডিভানে আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো জন কিট্স । 
আমার নিশ্চুপ থাকাটা ওকে আরও বিস্মিত করে তুলল -
' কিরে , কিছু বলছিস না যে ! ভুলে গেছিস নাকি ! ' 
' না.....মানে.....' 
সিগারেটের ধোঁয়া কুন্ডলী পাকাতে পাকাতে অবশেষে মেঝেতে শরীর দিল ছেড়ে । 
কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ঘাড় ঘুরিয়ে নিল ক্লান্তিতে । 

অমরেশ , আমার বন্ধু 
শৈশব , যৌবন পার করে আজও....
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ট্পার । 
বুকে ছিল পাহাড় উপড়ে ফেলার শপথ 
ভূমধ্যসাগরে দুর্গমের অভিযান করার উন্মত্ত পাগলামি 
আর মননে ছিলো প্রিয় রবীন্দ্রনাথ , কীটস , কাফকা আর চে' র মতো চিন্তাবিদরা । 
গনগনে আগুনের মতো তেজ আর নেই । কিছুটা নির্লিপ্ত । 
তবু পোড়া কাঠের মতো দেহ শ্বাপদ খুঁজে বেড়ায়....
খুঁজে বেড়ায় ধারাশ্রাবণ । 
চিরকুটটি পড়ে দেখলাম , ' তুমি শিলিগুড়ি থেকে ফিরে ফোন কোরো  ' 
নীলা 
ওর 'ভার্সিটির বন্ধু 
ওদের আড্ডায় মাঝেমধ্যে থাকতাম আমিও । 
চা-গুঁড়ো মেশানো গরম জল খেতে খেতে কাফকা পড়ে শোনাতো । 
কতবার যে নীলা ওর ঠোঁট থেকে কেড়ে নিয়েছিলো বিড়ি-তা মনে নেই । 
হিমালয়ের কাঁপন ধরানো কন্ঠে হঠাৎ গেয়ে উঠতো নীলার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ অথবা মহীনের ঘোড়াগুলি । 

দীর্ঘ সতেরো বছর পর ফিরে এলো স্মৃতি....ফিরে এলো কেডি স্যারের ইন্দ্রনাথ....আমার অরাজকতার সংসারে....দশ বাই বারোর জীবনযুদ্ধে....যেখানে আলো পরে না প্রখর সূর্যের , ছোঁয় না কোনও পক্ষের চাঁদ । 
সেখানে শুধুই অন্ধকার আর ধ্বংসের গাঢ় শীত 
' আর চারিদিকে অদ্ভুত আঁধার এক ' ॥ 

সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র


      এসো হে বৈশাখ     
     *****************                          


এসো হে বৈশাখ,
বসন্তের একঘেয়ে সৌন্দর্যে
তোমায় স্মরি।
উঠুক প্রবল ঝড়,কাঁপুক মাতৃভুমি,
স্পর্ধা জাহির করুক তোমার আগমনী।

এসো হে বৈশাখ,
শীতের নৈসর্গিক বিলাসিতায়
তোমায় স্মরি।
যাদের মাথার ছাদ অতীত ও আগামী,
তাদের করেছ শিকার
শুনিয়েছ বজ্রবাণী।
যাদের বিলাসিতা কিনেছে বসন্ত,
তোমার বজ্রবাণ তারা করেছে আত্মসাৎ,
তোমার প্রবল ঝড়ে তাদের বিলাসী প্রেমালাপ।

এসো হে বৈশাখ,
শরৎ এর আগমনী কাশবনে
তোমায় স্মরি।
তোমার প্রবল ক্ষোভ শুধু বিরহ কুটীরে!
প্রাসাদ বিলাসী মনে তুমি যে আজও বসন্ত।
তোমার অগ্নিবাণে শুধু বিদ্ধ সর্বহারা,
আর্থিক সুখী গৃহকোণে
তুমি যে বৃহন্নলা।

এসো হে বৈশাখ,
বর্ষার পেখমনৃত্যে আজ
তোমায় স্মরি।
তোমার প্রবাহী প্রকোপে শুধু মুর্ছিত ঘাসফুল।
বিলাসী গোলাপে আজও
বিজীত বসন্তধ্বনি।

এসো হে বৈশাখ,আজ ভিন্নতা পাক প্রাণ।
গাও হে বৈশাখ আজ গাও হে সাম্যের গান