নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

মোঃ মিজানুর রহমান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মোঃ মিজানুর রহমান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শেষ যাত্রা : মোঃ মিজানুর রহমান



চারিদিক মেঘে ঢাকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি
তাকিয়ে দেখি আমি কোনো এক
বিশাল উচ্চতার দালানের অচেনা
শতশত মানুষের ভিড়ে শুয়ে আছি।
ভাবলাম আমি কি স্বপ্ন দেখছি!
কেমন জানি ভয় ভয় লাগলো
খানিক বাদে আমার কানে ভেসে এলো
জৈনিক এক লোকের কন্ঠ।
বুঝতে পারলাম আমি-
জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কেলেজের
তৃতীয় তলার কোনো এক বেডে শুয়ে আছি।
আমার মাথার কাছে বসা
সবচেয়ে আপনজন
আমার ভালোবাসা সারা জীবনের সঙ্গী
ডান পাশে বসা আমার অতি আদরের
তনয় তনয়া
যাক একটু স্বস্তি পেলাম।
সবার মুখ মলিন হয়ে আছে
সবাইকে আমি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কেনো জানি আজ আমার কোনো কথাই ওদের কানে পৌছে না
আমি একটু অভিমান করলাম।
গা কেমন জানি ব্যথায় জ্বলে যাচ্ছে
কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চারপাশে
লোকজন জড়ো হতে লাগলো।
ওমা ওরা আমাকে এভাবে দেখছে কেনো?
ও আল্লাহ্ কেউ আমার কথা শুনছেনা কেন?
হায় আল্লাহ্ লাশের গাড়ি আসলো কেনো?
কে জানে কার কি হয়েছে।
একটু পরেই তিন চারজন আমাকে আলগা করে তিন তলা থেকে নামাতে
শুরু করলো।
আমার সারা শরীরে ব্যথা
আমি চিৎকার করে বলতে থাকলাম
আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও
আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছি না
আমি মরে গেলাম
আমার বউ ছেলে মেয়েদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না।
আমি নিরুপায়।

মিনিট পাঁচেক পর আমাকে লাশের গাড়িতে উঠানো হলো
আমি ভয় পেয়ে গেলাম
ভাবলাম আমাকে এ গাড়িতে তুলছে কেনো?
আমি সারা জীবন যাকে আগলে রাখলাম
সেই অর্ধাঙ্গীনী আমার কথা শুনছেনা
এতো আদর যত্নে যে সন্তানদে বড় করে তুললাম তারা আমার সাথে এমন করছে।
কথা শুনেও না বুঝার ভান করছে
যাক যখন আমার কথা কেউ শুনবে না
আমার শরীরে যতই ব্যথা হোক ওদের আর বলবো না দেখি কি হয়।
কয়েক ঘন্টা পর আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হলো।
বাড়ির লোক পাড়াপড়শির সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো।
হঠাৎ মা এসে আমার মুখের কাছে মুখ করে অঝরে মায়ের চোখের পানি ঝরছে
আর চিৎকার করে বলছে
খোকা ও খোকা সোনা মানিক আমার
ঘুমিয়ে আছিস ওঠো বাবা আমার
আমি মা বলছি ওঠো যাদু আমার
আমার কলিজা ছিড়া ধন
চল তোকে নতুন কলম কিনে দিবো
তুই না কবিতা লিখতে পছন্দ করিস
একটা ডাইরীও কিনে দিব বাপ
মাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবি না খোকা।
আমি মাকে বললাম মা ওমা
লিখবো তো তোমার জন্য একটা কেনো হাজারো কবিতা হৃদয়ে জমা।
আজ আমার কথা মা শুনতে পাচ্ছেনা
কেনো?
দেখলাম আমার মমতাময়ী মা জ্ঞান
হারিয়ে আমার বুকের উপর শুয়ে পড়লো।
আমি চিৎকার করে উঠলাম ওমা গো
আস্তে আমাকে ধরো সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা।
একটু পরেই আমাকে সবাই আলগা করে ধরে উঠানের পূর্ব কোণে নিম গাছের নিচে
একটা চৌকির উপর কলা গাছ বিছানো
তার উপর আমাক শুইয়ে দিলো।
ও মাগো মরে গেলাম পিঠে কি অসহ্য ব্যথা।
এমন খোলা আকাশের নিচে আমাকে শুয়াতে পারলো।
যেখানে আমি নতুন পরিষ্কার মশাড়ি ছাড়া ঘুমাইনি আজ আমাকে ওরা একটা জীর্ণ মশাড়ির নিচে শুইয়ে দিলো।
যাক হয়তো মশার কামড়ানি খেতে হবে না।
 এরপর যা শুরু হলো আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
কয়েকজন আমার শরীর থেকে সমস্ত পোশাক খুলে ফেলল আমি লজ্জানত হয়ে গেলাম এরা
করে কি আমার সাথে?
ভাবলাম কিছু একটা না বললে চলবে না
কিন্তু কি করার ওরাও আমাকে পাত্তা দিলোনা।
স্বস্তি এতটুকুই ওরা আমার লজ্জাস্থান ঢেকে দিল।
এবার আমার শরীরে গরম জল ঢেলে দেওয়া হলো আমি সইতে পারিনা
কইতে পারিনা।
কি সব পাতা ভিজানো গরম জলে
আমাকে কসকো সাবান ঘসা হচ্ছে।
মনে হচ্ছে আমার গায়ের সব চামড়া তুলে ফেলবে।
গোসল সেরে আমাকে পাঁচ টুকরো সাদা
কাপড় পরিয়ে দিলো।
আমি মনে মনে কষ্ট পেলাম সারা জীবন কতো দেশি-বিদেশী নামি দামি ব্রান্ডের কাপড় পরলাম আর আজ শুধু পাঁচ টুকরো সাদা কাপড়?
আমি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম
কিন্তু লাভ হলোনা।
কেউ আমার কথা শুনার প্রয়োজন মনে করলো না।
এতদিন যারা আমার কথায় উঠবস করতো তারা আজ কেউ আমার কথা রাখেনা আমি নিরুপায় দেখে যাওয়া ছাড়া
কিছুই করার নেই।
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে আসলো
বাড়ির পাশে মাদ্রাসা মাঠে হাজারো মানুষের সামনে আমাকে রাখা হলো
একটা চারপাওয়ালা খাটে।
সবাইকে দেখছি কিন্তু আমার মা-বাবা কই
আমার সহধর্মীনী কই।
আমার অতি আদরের মা-মনি কোথায়?
আমার বাড়ির সবাই কই।
এ সাদা কাপড়ের ভিতর আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।
ও আল্লাহ সবাই আমার সাথে এমন করতেছে কেনো।
যাক এইতো আমার আদরের মানিক গুলো
আমার কাছে আসতেছে।
ওরা সবাই আমাকে খাটে করে সামনে যেতে আমি খুশিতে আটখানা হয়ে গেলাম।
মনে মনে ভাবলাম যাক আমাকে ওরা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
এবার শান্তিতে ঘুমোতে পারবো।
কিন্তু মিনিট দুয়েক পরে আমাকে গোরস্থানের পাশে খোড়া একটা কবরের পাশ রাখা হলো।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম আমাকে এখানে আনা হলো কেন?
আশপাশে হাওমাও কান্নাকাটিতে
আমি চমকে যাই।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম সবাই আমাকে খাট থেকে নামাচ্ছে আর আমার অতি আদরের দুজন সন্তান কবরের দুইপ্রান্তে নামলে আমি চিৎকার মেরে কেঁদে ফেলি
বাবা সোনা মানি আমার ওখানে নামিস না
ওখানে তো মরা লাশ থাকে
ওখানে থাকতে অনেক কষ্ট হয় বাবা তোরা উঠে আয়।
আয় আমার বুকে আয়
তোদের গালে আমি চুমো খাব
আয় বাবা উঠে আয়।
হায় আল্লাহ মাবুদ এতো দেখি ওদের সাথে আমাকেও করবে নামিয়ে দিলো।
যাক তবুও ভালো হলো আমার মানিকদের আর ভয় নেই।
আমি বাবা ওদের সাথে আছি।
বড় ছেলে আমার মুখের মোড়া খুলে
মুখের কাপড় সরালে একটু সস্তি পেলাম।
পাশে কেউ নেই ওদের দুজনকে দেখে গায়ের ব্যথা মনের কষ্ট সব ভুলে গেলাম।
কিন্তু একি আমার এতো ভয় লাগছে কেন?
ও মানিক ধন তোরা আমাকে এ অন্ধকারে একা রেখে কই গেলি বাবা।
একি পাশে কেউ নেই ?
মা ওমা বাবা গো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আল্লাহ গো ওরা সবাই আমার সাথে এমন করছে কেন
আমাকে ওরা বাঁশ চাটাই দিয়ে ঢেকে দিলো কেন?
তাহলে কি ভাবনা নয় এটাই চরম সত্য
আমি আর পৃথিবীর সদস্য নই
এটাই আমার শেষ যাত্রা।
ওমা তুমি কই ও বাবা গো
 ও আল্লাহ মাবুদ সহায় হোন।
দুনিয়ার সবাই তোমরা এমন স্বার্থপর।
কি না করেছি তোমাদের জন্য
আর আমাকে পাঁচ টুকরো সাদা কাপড় সাড়ে তিন হাত মাটি কয়েক টুকরো বাঁশ
আর কয়েক ফোঁটা আতর গোলাপের ছিটা ব্যাশ এ হলো আমার জীবনের পরম
পাওয়া।

মোঃ মিজানুর রহমান



বেহায়া-০৯



নেহ মোরে দিলো ডাক
নাম ধরে দাঁড়কাক,
যাবে কুমার নদীতে 
একা ডিঙি বাইয়া,
ছুটেছি পিছু পিছু 
আমি যে অতিশয় বেহায়া।

হিসেবে কাঁচা যে 
করি কাজে শুধু ভুল,
ভাবনার বেড়াজালে
পাইনা না তো কোনো কূল।

সুপ্তিরা করে খেলা
নয়নের নয়নে,
বেহায়া মন স্যাঙাতের খোঁজে
দিবানিশি শয়নে স্বপনে।

বিনি সুতার ওড়াটা
ছেড়েছি দূর আকাশে,
হঠাৎ অনপেখিত বৃষ্টিতে
ঝলমলে আকাশটা ফ্যাকাশে।

পাইনা যে কোনো ভয়
মেঘের আড়ালে,
বেহায়া মন খুশি
প্রীতিজন প্রণয়ের দুটি হাত বাড়ালে।

মোঃ মিজানুর রহমান





রসের হাঁড়ি ফরহাদ


চলে দিন কোনোমতে 
টার্গেটের চাপে উঠেছে মাথাতে হাত,
আড্ডাবাজ নয় সে যে
আমাদের রসের হাঁড়ি ফরহাদ।

দেখতে যেন সুবোধ বালক
ফুঁ দিয়ে পথ চলে,
কথা নামের ফুলঝুড়ি আজ
অনায়াসে বলে।

বলে সবই কথায় কথা
মনের খেয়ালে,
স্বপ্ন যেন ইচ্ছেঘুড়ি
লিখে যায় স্মৃতির দেয়ালে।

মনের পাখি দু হাত তুলি 
করি মোনাজাত,
সুখি হও  জীবন নামের খেয়ায়
রসের হাঁড়ি ফরহাদ।