নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

পায়েল খাঁড়া





আশ্রয়
********


সিগারেটটায় একটা লম্বা টান দিয়ে ছাদের কার্নিশে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো কাঞ্চন। পশ্চিম আকাশটা কালো করে আছে, হাওয়ায় শোঁ-শোঁ শব্দ—এক্ষুনি তেড়ে বৃষ্টি নামবে!
কালো আকাশের বুকে বিদ্যুৎএর কয়েকটা ধারালো আঁকিবুঁকি কেটে গেল নিমেষে আর সাথে সাথেই বাজ পড়ার কড়কড় শব্দ।ছেলেবেলায় বাজ পড়লেই কাঞ্চন ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরত তার মা’কে।বাজের শব্দে বড় ভয় পেত সে।ভয় সে এখনও পায়; শুধু তেমন করে আঁকড়ে ধরার মত কাউকে আর কাছে পায় না, যার বুকে মুখ গুঁজে পৃথিবীর সমস্ত ভয় থেকে রেয়াত পাওয়া যায়! পাওয়া যায় একটা তুমুল নিরাপত্তার আশ্বাস।
“আহ, তুমি না পুরুষ মানুষ!” সুচেতার কথাগুলো বেজে ওঠে কাঞ্চনের কানে।সত্যিই তো, সে যে পুরুষ মানুষ—বাড়ির মাথা, পরিবারের অভিভাবক;   তার যেঅমনি  কথায় কথায় অত উতলা হতে নেই।মেয়েছেলেদের মতো অত ফ্যাচফ্যাচ ক’রে কাঁদতে নেই, কষ্ট পেলে বলতে নেই, ভয় পেলে দেখাতে নেই—এতে না’কি সোসাইটিতে লোকের কাছে নিজের ওজন থাকে না, সম্মানহানি থুড়ি পৌরুষহানি ঘটে!” নিজের স্ত্রী’র মানসিকতার সাথে এখনও ঠিকমতো নিজেকে রিলেট করতে পারে কাঞ্চন।কেমন  যেন হাঁপিয়ে ওঠে সে। “কোন শালা বলে যে ‘নেই’গুলো শুধু মেয়েদের বেলাতেই খাটে; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তো তার লিস্টটা নেহাত ছোট নয়...”, নিজের মনেই বিড়বিড় ক’রতে থাকে কাঞ্চন।
দেখতে দেখতে দু-চার ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল সাথে ঝোড়ো হাওয়া।সামনের কলমি আম গাছটার ডালে একটা ডাকপাখির বাসা; বৃষ্টি আর ঝড়ের ঝাপট থেকে বাঁচতে মায়ের ডানার মধ্যেই ঢুকে গুটিসুটি মেরে বসে আছে দুটো বাচ্চা।মায়ের বুকের উষ্ণ ওমে কত নিরাপদ বোধ করছে ওরা।একটা তৃপ্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা সহসা ভারী হয়ে ওঠে—হায় পোড়া কপাল, তার যে মা’ও নেই!
বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই মা’কে হারিয়েছিল কাঞ্চন।আর থাকলেই বা এমন কী উদ্ধার করে ফেলত সে—ছেলে হয়ে সন্তানের কোন কর্তব্যটা সে পালন করতে পেরেছে! বিয়ের দু’সপ্তাহ পরই শ্বশুর মশায়ের কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পোষ্ট নিয়ে কোম্পানির ফ্ল্যাটে উঠে আসতে হয়েছিল তাকে।মা’কে ভীষন মিস করত সে; মনে হত ছুটে চলে যায় মায়ের কাছে, তাঁর হাতের সেই আদর, কপালে ভাঁজ ফেলা চিন্তার রেখা—যেখানে সে আজও সেই ছোট্ট খোকা, যেখানে পুরুষ হয়ে ওঠার কঠিনতা জটিলতাগুলো নেই।একটা সহজ জীবন, কিন্তু ফিরতে চাইলেই সুচেতা অশান্তি করত তাই একরকম বাধ্য হয়েই...  
আরেক ঝলক তড়িৎ রেখা চিরে গেল মেঘলা ফরাস।আবার গর্জে উঠল আকাশ।একটা অস্পষ্ট শিহরন খেলে গেল কাঞ্চনের শরীরে।ছেলেবেলার সেই অনুভূতিটা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনা সে।দীর্ঘ সতের বছরের দৃঢ় সাংসারিকতা পেরিয়ে আসা তার ঋজু শিরদাঁড়াটা সবার অলক্ষ্যে আজও নুয়ে পড়ে এক বালখিল্য ভীতির কাছে।
“বাপি...”, কুঁকড়ানো হাতটার উপর একটা নরম স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখল কাঞ্চন, পাশে কখন এসে দাঁড়িয়েছে তার তের বছরের মেয়ে কেতকী।
“মেঘ ডাকলে তুমি ভয় পাও তাই না বাপি! আমি জানি, মামনি রাগ করে বলেই তুমি...
বাট ডোন্ট ওয়ারি, আমি তো আছি।তুমি আমার হাত চেপে ধরো, দেখবে আর একটুও ভয় করছে না।” বিহ্বল দৃষ্টিতে কেতকীর হাসিমাখা মুখের দিকে তাকালো কাঞ্চন তারপর পরম আদরে মেয়েকে বুকে টেনে নিল; এই পৃথিবী থেকে আসলে হয়ত কিছুই হারায় না—আজ অনেকগুলো বছর পর, সেই মায়ের গায়ের গন্ধ, সেই নিবিড় আশ্রয়ের অনুভূতি, আর মায়ের সেই ডাকনাম ‘কেতকী’।

পায়েল খাঁড়া*আশ্রয়*
সিগারেটটায় একটা লম্বা টান দিয়ে ছাদের কার্নিশে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো কাঞ্চন। পশ্চিম আকাশটা কালো করে আছে, হাওয়ায় শোঁ-শোঁ শব্দ—এক্ষুনি তেড়ে বৃষ্টি নামবে!
কালো আকাশের বুকে বিদ্যুৎএর কয়েকটা ধারালো আঁকিবুঁকি কেটে গেল নিমেষে আর সাথে সাথেই বাজ পড়ার কড়কড় শব্দ।ছেলেবেলায় বাজ পড়লেই কাঞ্চন ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরত তার মা’কে।বাজের শব্দে বড় ভয় পেত সে।ভয় সে এখনও পায়; শুধু তেমন করে আঁকড়ে ধরার মত কাউকে আর কাছে পায় না, যার বুকে মুখ গুঁজে পৃথিবীর সমস্ত ভয় থেকে রেয়াত পাওয়া যায়! পাওয়া যায় একটা তুমুল নিরাপত্তার আশ্বাস।
“আহ, তুমি না পুরুষ মানুষ!” সুচেতার কথাগুলো বেজে ওঠে কাঞ্চনের কানে।সত্যিই তো, সে যে পুরুষ মানুষ—বাড়ির মাথা, পরিবারের অভিভাবক;   তার যেঅমনি  কথায় কথায় অত উতলা হতে নেই।মেয়েছেলেদের মতো অত ফ্যাচফ্যাচ ক’রে কাঁদতে নেই, কষ্ট পেলে বলতে নেই, ভয় পেলে দেখাতে নেই—এতে না’কি সোসাইটিতে লোকের কাছে নিজের ওজন থাকে না, সম্মানহানি থুড়ি পৌরুষহানি ঘটে!” নিজের স্ত্রী’র মানসিকতার সাথে এখনও ঠিকমতো নিজেকে রিলেট করতে পারে কাঞ্চন।কেমন  যেন হাঁপিয়ে ওঠে সে। “কোন শালা বলে যে ‘নেই’গুলো শুধু মেয়েদের বেলাতেই খাটে; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তো তার লিস্টটা নেহাত ছোট নয়...”, নিজের মনেই বিড়বিড় ক’রতে থাকে কাঞ্চন।
দেখতে দেখতে দু-চার ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল সাথে ঝোড়ো হাওয়া।সামনের কলমি আম গাছটার ডালে একটা ডাকপাখির বাসা; বৃষ্টি আর ঝড়ের ঝাপট থেকে বাঁচতে মায়ের ডানার মধ্যেই ঢুকে গুটিসুটি মেরে বসে আছে দুটো বাচ্চা।মায়ের বুকের উষ্ণ ওমে কত নিরাপদ বোধ করছে ওরা।একটা তৃপ্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা সহসা ভারী হয়ে ওঠে—হায় পোড়া কপাল, তার যে মা’ও নেই!
বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই মা’কে হারিয়েছিল কাঞ্চন।আর থাকলেই বা এমন কী উদ্ধার করে ফেলত সে—ছেলে হয়ে সন্তানের কোন কর্তব্যটা সে পালন করতে পেরেছে! বিয়ের দু’সপ্তাহ পরই শ্বশুর মশায়ের কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পোষ্ট নিয়ে কোম্পানির ফ্ল্যাটে উঠে আসতে হয়েছিল তাকে।মা’কে ভীষন মিস করত সে; মনে হত ছুটে চলে যায় মায়ের কাছে, তাঁর হাতের সেই আদর, কপালে ভাঁজ ফেলা চিন্তার রেখা—যেখানে সে আজও সেই ছোট্ট খোকা, যেখানে পুরুষ হয়ে ওঠার কঠিনতা জটিলতাগুলো নেই।একটা সহজ জীবন, কিন্তু ফিরতে চাইলেই সুচেতা অশান্তি করত তাই একরকম বাধ্য হয়েই...  
আরেক ঝলক তড়িৎ রেখা চিরে গেল মেঘলা ফরাস।আবার গর্জে উঠল আকাশ।একটা অস্পষ্ট শিহরন খেলে গেল কাঞ্চনের শরীরে।ছেলেবেলার সেই অনুভূতিটা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনা সে।দীর্ঘ সতের বছরের দৃঢ় সাংসারিকতা পেরিয়ে আসা তার ঋজু শিরদাঁড়াটা সবার অলক্ষ্যে আজও নুয়ে পড়ে এক বালখিল্য ভীতির কাছে।
“বাপি...”, কুঁকড়ানো হাতটার উপর একটা নরম স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখল কাঞ্চন, পাশে কখন এসে দাঁড়িয়েছে তার তের বছরের মেয়ে কেতকী।
“মেঘ ডাকলে তুমি ভয় পাও তাই না বাপি! আমি জানি, মামনি রাগ করে বলেই তুমি...
বাট ডোন্ট ওয়ারি, আমি তো আছি।তুমি আমার হাত চেপে ধরো, দেখবে আর একটুও ভয় করছে না।” বিহ্বল দৃষ্টিতে কেতকীর হাসিমাখা মুখের দিকে তাকালো কাঞ্চন তারপর পরম আদরে মেয়েকে বুকে টেনে নিল; এই পৃথিবী থেকে আসলে হয়ত কিছুই হারায় না—আজ অনেকগুলো বছর পর, সেই মায়ের গায়ের গন্ধ, সেই নিবিড় আশ্রয়ের অনুভূতি, আর মায়ের সেই ডাকনাম ‘কেতকী’।


কোন মন্তব্য নেই: