।। পনের ।।
গরমকালের ভোরবেলা একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিবেশ। মা ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে থাকত। আমি আস্তে আস্তে উঠে বাইরে পালাতাম। তখন সবেমাত্র একটু একটু আলো ফুটছ। উদ্দেশ্য আম কুড়ানো। কিন্তু সেটাই একমাত্র নয়। আসলে ভোরের আকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস আর চারপাশের নির্জনতা আমাকে ভীষণভাবে টানতো। তাই যখন আমবাগানে গিয়ে দেখতাম আমার অনেক আগেই অনেকে আমতলা খুঁজে ফেলেছে তখন এতটুকু মনখারাপ হতো না। ভোরবেলা বাইরে আসতে পেরেছি এটাই যেন অনেক আনন্দের। কোনো কোনো দিন আমবাগানের ভেতরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। চারপাশের মানুষজনদের আস্তে আস্তে জেগে ওঠা, পাখির ডাক ----- এসব কিছুর মধ্যে ভাসতে ভাসতে কখন যেন আমের কথা ভুলে যেতাম।
।। ষোল ।।
সন্ধে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ আস্তে আস্তে নির্জনতায় ডুবে যাওয়া, বাসায় ফেরা পাখিদের চিৎকার চেঁচামেচি। ঠিক এর পরেই কানে আসত কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। আর কান পেতে শুনতাম সন্ধের আবহসঙ্গীত। একটু পরেই শুরু হতো সন্ধের আরতি। দেখতাম মা হাতজোড় করে ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কোনো দিন দেখতাম মা ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাঁদছে। আজও যখনই কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ কানে আসে তখনই ভেতর থেকে আমাকে কে যেন টেনে ধরে। সন্ধের আবহসঙ্গীত আবিষ্ট হয়ে পড়ি। পার্থিব জগৎ থেকে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই।
(ক্রমশ...)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন