নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

কলম চলবে লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কলম চলবে লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অক্ষয় কুমার সামন্ত





অসুখ
******



যেমন করে নদীর ব্যথার কথা
ঝড়ের রাতে বুঝতে পারে নদীর পাড়
তেমন করে অসুখ সহসা এসে
মৃত্যুর পথ চিনিয়ে দিয়ে গেছে।

অবহেলার সিঁড়িতে কতটুকু আর ওঠা যায়
কাজগুলোকে জমিয়ে জমিয়ে স্তূপের নীচে
চাপা পড়ে গেছি - শব্দ খুঁজি অক্সিজেনে
আমাকে থামিয়ে শেষ চিঠি লেখে কলম
তার না লেখা ব্যথার কালিতে।

অগোছালো সময় ঘড়ির কাঁটাকে
অবজ্ঞা করে হারিয়ে ফেলে গতি 
আর তার পিছনে আমি প্রবাহহীন --
বিছানায় শুয়ে শুয়ে মুমুর্ষু চোখে
ব্যর্থতাকে ফিরে ফিরে যোগ করি;
আর কি এক মোহে একটু ভালোবাসার জন্যে
গায়ে লেপ মুড়ি দিয়ে
শীতের রাতে নক্ষত্রের কপালে
আমার মৃত্যুচিহ্ন আঁকি।

কাজী জুবেরী মোস্তাক





নেতা তুমি কি শুনছো 
*******************



নেতা আমাকে চিন্তে কষ্ট হচ্ছে তোমার?
আমি বাংলাদেশ জনগন নাম আমার
পাঁচটা বছর আগে গিয়েছিলে সেবার

ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী ছিলো পরনে
হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালার মতো করে
পিছনে একঝাঁক তরুন তরুনীদের নিয়ে
ছুটে চলেছিলে তুমি শহরের প্রতি ঘরে
আর আশার বাণী শুনিয়েছিলে কানে
বলেছিলে অন্যায়ের প্রতিবাদী কন্ঠ হবে ৷

গরীব অসহায়রা স্বপ্ন দেখেছিলো বাঁচবে
তুমিই দেখিয়েছিলে সে স্বপ্ন ওদেরকে ,
একদিন কাঙ্খিত সে ক্ষণ এলো অবশেষে
বিজয়ের বাণী ধ্বণীত আকাশে বাতাসে
তখনও তুমি আশার বাণী শুনিয়েছিলে ৷

অথচ !
সময়ের সাথে সব নেতাদের মতো করে
তুমিও দেখি তোমার স্বভাব পাল্টে নিলে,
কাঁধে হাত রেখে কানে কানে এসে বললে
ভয় পেওনা আমি আছি তোমাদের পাশে ,
এটাকেই এখন ক্ষমতার রাজনীতি বলে
ইস্পাতের কি যেন কোমরে গুঁজে দিলে
বললে এটা কাছে রাখ কাজে লাগবে ,
আর আমার সাথে সাথে সবসময় থাকবে
আমার যা কিছু আছে সব নিয়ন্ত্রণ করবে ৷

কিন্তু বেইমানি করলে তোমার জীবন যাবে
অসহায় আমি ভয়ে কাতরতায় আরষ্ঠ হয়ে
তোমার কথা মেনে নিলাম মাথা নিচু করে ,
পথচলা শুরু হলো আমার ঘোর অন্ধকারে
শুনেছি সে ইস্পাত অনেককেই দিয়েছিলে ৷
অতঃপর একদিন তুমি সময় সুযোগ বুঝে
আমাকে দিয়ে জ্বলজ্যান্ত মানুষ হত্যা করালে ,
যেই আমার হাত কাঁপে একটা পিপরা মারতে ৷

আর বললে কেউ জানলে তোকেও মরতে হবে
নেতা তুমি কি জানো সেই রাতের পর থেকে
এতটুকু নিঃশ্ছিদ্র নিদ্রা আসেনি এ দু'চোখে ৷

সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র



পরিণাম
***★***
 


 ১
শুধু তোমাকে ছেড়ে যাবো বলেই
কার্তিক দা আমার প্রাণের দোসর।

দু জোড়া ঠোঁটে মহুল গন্ধ, রঙীন নেশা
বন্ধুত্বের মদ্যপ বন্ধন, বেপরোয়া বাক্য সমর্পণ।

নেশা চড়তে চড়তে ছুঁয়ে যায়
ভাতের হাড়ি, মায়ের পিঠ, বাবার গাল
ভুল নয় ঠিক নির্ভুল ভাবে
নিজেকে চড়িয়ে রাখি নিজের ওপর।
তোমাকে ভুলেছি কবেই, কতকাল
কার্তিক দা এখন ছায়া শরীর, স্মরণে তাকে জিইয়ে রাখি

আজ নেশাহীন জোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে
অলীক স্বপ্নের মতো অতীত আসে,
মায়ের আদুরে গলা, বাবার গম্ভীর স্নেহ
পরিবার, ছেলেবেলা যেন জরাহীন রামরাজ্য।

এক অনুতাপ এসে ঘাড় ধাক্কা দেয়,
পচনশীল শরীর মৃত্যুভিক্ষা চায়, মুক্তি চায়
মুক্তি মেলেনা,
প্রতি মুহুর্তে এক মৃত্যুযন্ত্রণা ছুঁয়ে যায় প্রতিটা কোশ।

সুনন্দ মন্ডল




বিসর্জন
 *******

              

এ পাড়ায় কাঁসর ঘন্টা,
সমারোহে পুজোর কটা দিন।
ঢাকের বোলে নবমীর রাত
এলো মায়ের বিদায়ী ক্ষণ।

ভাসান যাবে মা, দশেরা হুল্লোড়ে
সংসার গুছিয়ে পাট চুকাবে।
ঢাকির নাচ, ঢাকের শব্দ
ছেলেরা সব নেশা মেখে মাতাল হবে।

পিছনে পিছনে ভক্তরা লুটাবে
চোখের জলে শোকের টিকা।
শান বাঁধা পুকুরে মায়ের দেহ
ভেসে যাবে সব গ্লানি দৈন্যতার রেখা।

ও পাড়ায় দেখ ঝোপের আড়াল
বিসর্জনে নাচছে মত্ত যুবকেরা।
পাতার খসখস শব্দ, কিছু বেড়াল
ভেসে যাচ্ছে কুমারীর ইচ্ছেরা।

লাল রক্তে ভাসে যোনি, কেউ নেই উৎসবে
শুধু শিকারির ছোবল, নরম মাংস পিণ্ডে।
কোথায় মা? কোথায় মানুষের শুভ চেতন
ফুস-ফুসমন্তর সকালটা হয়ে গেল সন্ধ্যে।

চোখের জলের নেই দাম আর
কামার্ত চাইবেই দাবি মেটাতে।
সুখের মুহূর্ত দান করে একা যুবতী
নিজেই গভীরে যাবে মায়ের সাথে।

যে পুরুষ মায়ের ভাসানে উদ্দাম নাচে
চোখের জলে আবেগটুকুই প্রদর্শিত।
বিসর্জনের শেষে হাসাহাসি পাশাপাশি
যুবতী তখনও ঝোপের পাশে গচ্ছিত।

চিরঞ্জিত সাহা





দুর্গা




শেষ স্টেশনের শেষ বেঞ্চে ঝরা বকুলের নতুন দেশ
গোলাপ হেথায় পাপড়ি ঝরায়, ক্যাকটাসেরা হাসছে বেশ ;
গান ভুলেছে হলুদ পাখি , নীলাঞ্জনা নিরুদ্দেশ
নেমেসিস মেশে ধমনিস্রোতে , রাজশ্রী আজ খুলছে বেশ । 
সিয়াচেনে সৈন্য মরে , পিঁপড়ের ডিম আমলাশোল ,
মগ্ন তখন দশভূজা , ম্যাডক্সে তো ঢাকের বোল ।
পাড় গড়নে বিরক্ত ঢেউ , বিষ মিশেছে সবুজ ঘাসে ,
বৃষ্টি হয়ে ঝিন্টি ঝরে আপনার ঐ ভূ-কৈলাসে ? 
চোখটা ধাঁধায় ডুমুর ফুলে , শিবঠাকুরের আপন দেশে ,
কাক কোকিলে লড়াই করে শ্বেতপায়রার শুভ্র বেশে ;
আসবি যখন বছর ঘুরে , সঙটি সেজে মর্ত্যলোকে ,
পারলে আনিস আশার ফানুস , স্বপ্নমোড়া লাল ঝিনুকে ॥ 

প্রাপ্তি মণ্ডল ভৌমিক

  




অন্য বিসর্জন 

**************




মুখের হাসি হলো ম্লান 
দুর্গা এবার যাবে ভাসান ।
ঢাকের আওয়াজ হলো মলিন 
জলে দূর্গা হবে বিলীন ।

দূর্গা মায়ের বিসর্জনে 
অশ্রুচোখেও আশা থাকে,
বছর ঘুরে আবার মা
আসবে ফিরে ঘরে ঘরে ।

ফিরবে না আর সেই দূর্গা 
রাতের আঁধারে যার হয় ভাসান ।
শূন্য করে মায়ের কোল 
মানুষরূপী অসুর করছে শোষণ।

পুরুষত্ব ফলাস তোরা 
সদ্যজাত শিশুর দেহে ।
লালসায় ভরা নরপশুর চোখে 
নারী শরীর হলেই চলে ।

রক্তমাখা ছিন্ন দেহ 
ফেলে গেলি পথের ধারে ।
তোদের লোভের অত্যাচারে 
ছোট্ট দূর্গার বিসর্জন হল চিরতরে ।

সাজ্জাদ আলম









কাফন
 ******               

কামাল, এক নামেই গোটা গ্রাম চেনে, খুব নামকরা দর্জি, এমন সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের জামাকাপড় সেলাই করে যা বিশ্বের অন্য কোথাও মেলা মুশকিল. কামাল শুধু জমিদারদের জামাকাপড় বানাই কারন জমিদার ছাড়া সমাজের অন্য কোনো শ্রেনীর পক্ষে কামালকে অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য নেই. দোতলা বাড়ি, ওপর নীচ মিলিয়ে ছ'টা ঘর, দুটো বাথরুম ও একটা রান্নাঘর, ঠিক যেন জমিদার বাড়ির মতোই. কামাল জামাকাপড় সেলাই করে তার বাড়িতেই যদিও একটা দোকান আছে, সেই দোকানে কামাল বিক্রি করে "কাফন", আর এই দোকানকেই ঘিরে কামালের অহংকার. কামাল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, দুয়া করে, তবে দুয়াই উপরওয়ালার কাছে যা চাই সেটা শুনে হয়তো উপরওয়ালাও প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলেন. সে তার দুয়াই মানুষের মৃত্যুকামনা করতো, যাতে তার দোকান থেকে বেশী বেশী কাফন বিক্রি হয়. আর উপরওয়ালাও হয়তো তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন. প্রত্যেক দিন কামালের দোকান থেকে দশ-বারোটা কাফন বিক্রি হয়ে যেত. কাফন কিনতে আসা ব্যক্তির সঙ্গেও কামাল ভালো ব্যবহার করতো না, মৃত্যু কে নিয়ে মজা-মস্করা করতো, ক্রেতাদের যে রাগ হতো না তা কিন্তু নয়, হতো, কিন্তু সহ্য করতে হতো কারন কামালের মাথার উপর জমিদারদের হাত ছিল আর যদি অন্য কোনো দোকানে যেতে হয় তাহলে গ্রাম পেরিয়ে যেতে হবে শহরে তাতে অনেক সময় নষ্ট আর তাছাড়া মৃতদেহ বেশীক্ষণ রাখাও অশুভ, এইসব কারনে জনতা কামালের অত্যাচার সহ্য করতো, আর কামালের মৃত্যু কামনা করতো.

    একদিন কামাল কিছু কাজের জন্য কলকাতা যায়. সাতদিন পরেই ঈদ, জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা করতে হবে. কয়েকদিন পর ফিরে আসবে. 

  আজ কামাল ফিরছে. হাতে দুটো বড়ো বড়ো ব্যাগ, জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা রয়েছে সেই ব্যাগে. কামাল বেশ হাসিখুশি, তবে মনে মনে ভাবছে বঙ্কু এই কদিনে কটা কাফন বিক্রি করেছে সব হিসাব নিতে হবে আর কলকাতা থেকে নিয়ে আসা নতুন কাফনগুলোও যেন তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যায়. হঠাৎই বাইরে চেঁচামেচি শোনা যায়, বন্দুক, তলোয়ার,তিলক আর টুপির এক জগৎ দাড়িয়ে আছে বাইরে. বাস দাড়িয়ে আছে. হঠাৎই একটা কাচের বোতল বাসের সামনের কাঁচটি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেল, কিছুক্ষণের মধ্যেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো, হইহুল্লোড় পড়ে গেল, কামাল তার দুই ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইল, কিন্তু না! পারলো না, পড়ে গেল নীচে, আগুনে জ্বলন্ত একটা বড় কাঠের ঠুকরো সোজা এসে কামালের বুকে লাগল. কামালের সারা শরীর জ্বলে যেতে লাগল. কামাল চিৎকার করছে আর যেন প্রকৃতি মজা-মস্করা করছে কামালের সঙ্গে. চারদিকে আগুন আর রক্ত, একটা রক্তে রাঙা ওড়না হাওয়ায় উড়ে এসে কামালের শরীর ঢাকা দিয়ে দিল. 

কাফনটা যদি সাদা না হয়ে 
 হতো নীল,লাল বা সবুঝ
মৃতদেহ কী কিছু বুঝতে পারে?
       নাকি সে অবুঝ

কৌশিক চক্রবর্ত্তী






ধার্মিক 
*******




বুকে আঁক কেটে রাখো
কখনো সাগরের নোনা জল এলে ভিজিয়ে নাও দাগ

সেপিয়া টোন থেকে তুমিও হিঁচড়ে আনতে পারো প্রবহমানতা-
যারা বয়ে যাচ্ছে 
তাদের আটকাতে যেও না...
যারা জ্বলে উটছে
বরং তাদের পাশে পুঁতে রাখো সৌধ...

হয়ত বুকে মাটি পড়লেই
নিজেকে বিক্রি করতে ইচ্ছে হবে,
আর তখন তুমি হয়ে উঠবে প্রকৃত ধার্মিক...

সোমিনা ইয়াসমিন








মুক্তি
****




                      
নীলপাহাড়  একটি ছোট্ট, সুন্দর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার। সেখানেই জন্ম মুক্তির,নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তান। বাবা ক্ষেতমজুর, হতদরিদ্র না হলেও দারিদ্রতা বর্তমান। মুক্তি নীলপাহাড় গ্রামের উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী এবং অত্যান্ত মেধাবী। গায়ের রং শ্যামলা,নয়ন তার মায়াবী, মুখাকৃতি লক্ষ্মীমন্ত। অনেকেই তাকে কখনো শ্যামা অথবা দস্যিকন্যে বলে ডাকে। ধানক্ষেত, আমবাগান,পুকুরপাড়, নদীর ধারে দাপিয়ে বেড়ানো তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যে পড়ে। শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে বাচ্চাদের সঙ্গে মাছ ধরে,কালবৈশাখীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে আম কুড়ানোর উদ্দেশ্যে, আবার বিচ্ছুদের সঙ্গে
লুকোচুরিও খেলে, গ্রামের বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলোও মুক্তিদিদি বলতে অজ্ঞান। মুক্তিদিদি ছাড়া তারাও যেন অসম্পূর্ণ, মুক্তিও ভীষণ ভালোবাসে ওদের।
গ্রামের মানুষের কাছে মুক্তি দস্যিকন্যা নামে পরিচিত। বাবামায়ের একমাত্র আদরের দুলালী সেইহেতু খুবই স্নেহের, নয়নের পুত্তলী।
তবে তার প্রকৃতি হলো জেদি, ন্যায়পরায়না,সাহসিনী,প্রতিবাদিনী, মুখরা। রুপে লক্ষ্মী নয়,কিন্তু গুনে সরস্বতী। কয়েকদিন হলো উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ হয়েছে, আর কিছুদিনের মধ্যেই তার ফলাফল প্রকাশিত হবে।
ইতিমধ্যেই পাড়া প্রতিবেশীরা বলতে থাকে মুক্তির বিবাহের কথা। কিন্তু মুক্তি চায় পড়াশোনা করে স্বনির্ভর হতে। তার স্বপ্ন, জীবনে নিজের পরিচয়ে বাঁচবে, প্রতিষ্ঠিত হবে, পরিবারে পুত্রসন্তানের অভাব দূর করবে, দারিদ্রতার অবসান ঘটাবে। শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্নের জালে এক বালতি জল ঢেলে বিবাহের আয়োজন শুরু হলো। বাবা-মার মুখ রাখতে অগত্যা রাজি হতে হলো, কিন্তু বাধ সাধলো যৌতুক। পাত্রপক্ষের দাবী পূরণ করার সামর্থ্য নেই মুক্তির বাবার। অন্যদিকে শ্যামলা মেয়ে হওয়ায় দুঃশ্চিন্তারও অবকাশ নেই। নিরুপায় হয়ে দাবী পূরণের অঙ্গীকার  করেন, শেষ সম্বল ভিটেমাটি বন্ধক রাখেন। মুক্তিও বাধ্য হয়েই মেনে নেয় অদৃষ্টকে।
       বিবাহের লগ্ন উপস্থিত,পাত্রপক্ষের দাবী অনুযায়ী নগদ দুইলক্ষ টাকা,তিনভরি গহনা ও মোটরবাইক যৌতুক দেওয়ার কথা। কিন্তু সময়ের স্বল্পতায় শেষ পর্যন্ত পঞ্চাশহাজার টাকা জোগাড় করে উঠতে পারেননি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা।
     নির্ধারিত সময়ে মুক্তিকে আনা হলো ছাদনা তলায়, হঠাৎই বরপক্ষ বলে ওঠে, আগে যৌতুক কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নেবে,তারপর বিবাহের যাবতীয় কার্য্যাদি সম্পন্ন হবে। ফলস্বরুপ, পঞ্চাশ হাজার টাকা কম পড়ল। মুক্তির হবুশ্বশুরমশাইয়ের দাবী পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যতীত এ বিবাহ দেবেন না। মেয়েকে লগ্নভ্রষ্টা হতে হবে এ কথা ভেবেই শিউরে ওঠেন মুক্তির বাবা মা প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন। এতক্ষন মুক্তি নিরবে অবাকদৃষ্টিতে মুখে পান পাতা ঢেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসে দেখছিলো মানুষরুপী অর্থলোলুপ পিশাচের বহিঃপ্রকাশ। চারিদিকে তাকিয়ে অনেক খুঁজলো মানবতাকে। কোথায় সে ?  সে কি বিসর্জিত! না, সভ্যতার নুড়িপাথরে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে?
   পাত্রের পিতা যখন বললেন, এ বিয়ে হবে না ঠিক সেই মুহুর্তেই লাজ-লজ্জার তোয়াক্কা না করেই মুখের পানপাতা সরিয়ে গলার রক্ত গোলাপের মালা ছিন্নভিন্ন করে ছুঁড়ে মারলো পাত্রপক্ষের মুখে। মুক্তির এ হেন আচরণে বিবাহমন্ডপে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কোনো কথা না বলেই বিয়ের মন্ডপ ত্যাগ করল মুক্তি। পাত্রপক্ষ লজ্জায়, ক্ষোভে ফিরে গেল। নাহ, এরপর মুক্তির আর সংসারটা করা হয়নি,উচ্চমাধ্যমিকে ফলাফল ঘোষনা হয়েছে,সে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে, স্কলারশিপের টাকায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে, পাড়ি দিয়েছে শহরে, প্রবেশ করেছে বৃহত্তর জগতে।
    হ্যাঁ, দীর্ঘ  সাধনার পর আজ আবার সে ফিরছে তার প্রিয় জন্মভূমি নীলপাহাড়ে। আজ সে শুধুই নীলপাহাড়ের দস্যিকন্যে নয়, নীলপাহাড়ের অহংকার,ঐতিহ্য,গর্ব। সে তারই বাল্যকালের বিদ্যালয়ের হেডমিস্ট্রেস পদে আসীন, এক মুখ সাফল্যের হাসি আর আনন্দাশ্রু নয়নে। সামনে দাঁড়িয়ে গোলাপের মালা নিয়ে গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান ,লগ্নভ্রষ্টা মুক্তির হবুশ্বশুরমশাই,বরণ করে নিতে। আজ সে পেরেছে,নৃশংস পিশাচগুলোর যোগ্য জবাব দিতে।
  মুক্তি বোধ হয় সত্যিই মুক্তি পেলো সংসারের সংকীর্ণ কূটনৈতিক বেড়াজাল থেকে। দেবী পক্ষের পদধ্বনি টের পাচ্ছে, সূচিত হচ্ছে নারীশক্তির। তার লক্ষ্য,নীলপাহাড়ের প্রত্যেক মেয়েই যেন মুক্তি পায়, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ও পনপ্রথার  নির্মম অত্যাচার থেকে। সে তিলে তিলে গড়ে তুলছে তার প্রতিটি ছাত্রীকে এক একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র। একটু একটু করে তার স্বপ্ন স্বার্থক হচ্ছে, গড়ে তুলছে ভবিষ্যত প্রজন্মের ভাগ্য। শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি নারী সংগঠনও গড়ে তুলেছে, যার নাম "মুক্তি"।
    জয় হোক মুক্তির, বাঙালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্ম হোক মুক্তির,গড়ে উঠুক নিষ্কলুষ নারীসমাজ। মাথা তুলে দাঁড়াক প্রতিটি মা, স্ত্রী, বোন, কন্যা। বন্ধ হোক কন্যাভ্রূণ হত্যা, চীরতরে বিদায় নারী নেবে নারী নির্যাতন। সভ্যতার নুড়িপাথরের তলায় ঘুমিয়ে পড়া মানবতা অন্তত এবার জেগে উঠুক, শতহস্তে ধারণ করুক শান দেওয়া মানবিক অস্ত্র। 

সোমা দাস






আদিম
*****



তাল তমালের বন, মাঠ ঘাট -
পিছনে ফেলে উদভ্রান্ত আমি 
ছুটে চলেছি আদিমতার পথে. . 

তোমরা আধুনিকতার নামে -
ছুঁয়ে থাকো শিশুর যোনি ! 
রাজনীতি নিয়ে খেলো পাশা! 

আমি আদিমতাকে ছুঁতে চাই. . . . 

তোমরা আধুনিকতার নামে -
ভাঙো লেনিনের মূর্তি , 
খেলো রক্তের হোলি ! 

আমি আদিমতাকে ছুঁতে চাই. . . 

উদভ্রান্ত আমি ছুটে চলি
সব পথ পিছনে ফেলে 
গুহা পথের মশাল জ্বেলে ! 

স্বরূপা রায়






বিসর্জনের সুর
*************




"কি রে, আজ তোকে খুব খুশি খুশি লাগছে।" ত্রিদীব বললো অংশুমানকে।
"ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে, বাড়ি যাচ্ছি ভাই।" খুশি হয়ে বললো অংশুমান।
"তাই নাকি? আমার পরশুদিন থেকে।"
"তোদের তো নবরাত্রী আর দশেরা। আমাদের তো মহালয়া থেকে পূজো পূজো রব শুরু। প্রতি বছর মহালয়া থেকেই কত ব্যস্ত থাকতাম পাড়ার প্যান্ডেলে। এবার তো তাও সপ্তমীতে যাচ্ছি।"
"আমাদের নববাত্রী নয়দিন ধরে বাড়িতে পালন হয়। বাড়িতে এই সময় পরিবেশই আলাদা থাকে। এইবার প্রথম শেষদিন গিয়ে উপস্থিত হবো বাড়িতে।"
"আমাদের দায়িত্ব যে আজ দেশ ভাই!"
"সেটাই! একদিকে ভালো হয়েছে। নাহলে এই নয়দিন মাম্মি কত যে কাজ করায়!" বলে হেসে দিল ত্রীদিব। অংশুমানও হেসে ফেললো।
"তা ঠিক বলেছিস। আমার তো বাবা নেই। আর কোনো দিদি বা বোনও নেই। তাই মা বাজারে যেত দুর্গাপূজার আগে আমাকে নিয়েই। নিজের জামা কেনার সময় ঠিক আছে। বাকি সময় খুব বিরক্ত লাগতো!"
"সত্যি রে!"
"কিন্তু কষ্টও লাগে ভাবলে, এবার মাকে একা একাই সব করতে হয়েছে। আমার কথা তো সারাক্ষন ভাবেই।"
"আমাদের পরিবারের কষ্ট আমাদের থেকেই দ্বিগুন।"
"সেটাই!"
"আমার সেই গম্ভীর পাপা তো ফোন করলেই শুধু কাঁদে ফোনে।"
"আমার মাও তাই। তখন আরোও খারাপ লাগে।"
"আসলে আমাদের এক বছর মাত্র হয়েছে তো তাই অভ্যেস হয়নি বাবা-মায়ের। আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর জিনিসপত্র গোছানো শেষ?"
"হ্যাঁ ভাই।"
"কখন বেরুবি?"
"এই আধ ঘন্টার মধ্যেই।"
"থোরা সা ভি হিলনা মাত।" একজন বন্দুকধারী মুখে কালো কাপড় বাঁধা জঙ্গী ত্রীদিব আর অংশুমানের পেছন থেকে মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে বললো।
সাথে সাথে অংশুমান আর ত্রীদিব হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদের বুঝতে অসুবিধে হলো না যে, ওদের সেনা ক্যাম্পে জঙ্গীহানা পড়েছে।
অংশুমান চালাকি করে হাত বাড়িয়ে পাশে রাখা বন্দুকটা নিতে গেলে জঙ্গী টের পেয়ে যায়, আর সাথে সাথে এক সেকেন্ডেরও দেরী হলো না। জঙ্গীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল অংশুমানের তাজা প্রাণ।
তেরো ঘন্টার জঙ্গী আর সেনার লড়াইয়ে পাঁচজন সেনার মৃত্যু ঘটলো। অংশুমানের মতো ত্রীদিবের তাজা প্রাণটাও অকালে চলে গেল।
দেবীর বিসর্জনের দিন অংশুমান আর ত্রীদিবের সাথে আরোও তিন জন শহীদ যুবকের মৃতদেহ এসে পৌঁছালো ওদের বাড়িতে। যেখানে মানুষ ব্যস্ত দুর্গামা চারদিন বাপের বাড়ি থাকার পরে ফিরে যাওয়ার দুঃখ নিয়ে। সেখানে পাঁচ মায়ের কোল খালি করে চলে গেল ছেলেগুলো।
আমাদের দেশে যেখানে একজন সেনার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে উৎসব না মানানোটাই ভালো। আমরা যখন নতুন জামা কার কয়টা হলো, কার এখনো জুতো কেনা হলো না, কার অফিস এখনো বোনাস দিল না, কার সেল্ফিটা ভালো উঠলো না, পূজোর চারদিন বৃষ্টি হবে কিনা, দুর্গাপূজায় ঘোরার জন্য বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড পাবো কিনা বা কোন দুর্গা প্যান্ডেলের থিমটা ভালো, এই নিয়ে ব্যস্ত। তখন আমাদের দেশের সেনা পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে দেশকে পাহাড়া দিচ্ছে। যাদের জন্য আমাদের বাড়িতে উৎসবের আলো ফুটছে৷ তাদের বাড়িতেই ছেলে বা মেয়ের শহীদ সংবাদে বাজে বিসর্জনের সুর।


কামরুল বসির





বাইফোকালে রাত্রিবিভ্রম
**********************



তিনটি নি:সঙ্গ পাতা আর একটি নিকশ কালো আকাশ, ছায়া হয়ে- বয়ে যাওয়া নিরব হ্রদের চৌহদ্দিতে ব্যথার মতো নিরবতা ঢালছিল- মাঝরাতে। আমার পরনে আদ্দিকালের প্লাস্টিক, মাথায় জুবোথুবো শুষ্ক চুলের ঢেউ; চোখে নির্ঘুম বাতাসী পরাগ। বাইফোকালের অস্পষ্ট তারায় নি:প্রভ নক্ষত্রের মৃত্যাদেশ-

তিনটি পাতার একটি বোধের লহমায় সৌম কুন্তলীর আত্মিয়স্হানীয়, অন্যটি ইকুয়েডরের প্রান্তিক গিরির দলিত লতা; অবশিষ্টে হাইডপার্ক উল্টে আছে বিচিত্র শৈলশিরায়- আমি হ্রদের নিরাবতায় আমার মাথার শুষ্কতা ভিজিয়ে দু’টো এ্যাসপিরিন গুলিয়ে দিলাম। যেমন কেউ কেউ পকেটে হাত রেখে স্রাগ করে বলে: জীবন বইছে এখন সেন্ট্রাল লাইনের সপ্তম কামরায়! অথবা ক্যাপাচিনোর ফেনা ততটা ফেনিল নয় আজকাল! আমি যেন তার বাহুতে হাত রেখে সমার্থনের সবকটা শব্দ নি:শেষ করে বললাম- তুমি প্রাগে যেতে পারো, সেখানেও তিনটি পাতার হ্রদে মাঝরাত এখন।

হঠাৎ দমকায় বাইফোকালটি উডে গেল।
শুনশান হেমন্তে হলুদ ট্রাকটি ছডিয়ে দিল অপেক্ষার গুঙানি- মনান্তরে শেষ হয়ে এলো আশ্চর্য্য একপেশি মাঝরাত। 

নক্ষত্রের মৃত্যাদেশ নিয়ে আমি লোহার চেয়ারে নি:শ্চল- কোন মানুষ এখানে আসেনি আজও, শুধু কিছু কিছু দ্বিপদ কখনও আলিঙ্গন করেছে বহুতল লালসার জনপদে- এ জনশ্রুতিতে বিভেদের শরীরে না হয় একটু জমুক স্বেদ, যেখানে আমি নিয়তির  
টিস্যুতে নিয়ত মুছছি বাইফোকালের লেন্স।

যতীন্দ্র নাথ মণ্ডল(অতিথি)

   
           
  


              কবিতার নিলাম 
               :::::::::::::::::::::::::


                       
নিষিদ্ধ খেয়ালে আমার কবিতা আজ;
সম্মান বিক্রির নিলাম ডেকেছে।
সভ্যতার শবচ্ছেদে,লাশকাটা ঘরে।
চারিদিকে রক্তের দাগ,
কলমে;কফিনে;অন্তর্বাসের লজ্জায়--
প্রতিবাদী মুখগুলি সব পরজীবী।
চক্রান্তের আবার সংক্রান্তি!
পৌষ-ভাদ্র-কালরোগ।
রক্তমৈথুনে ব্যস্ত কালের শিখণ্ডীরা।
অলক্ষ্যে শকুনির পাশা চলছে,
উৎসবের সিংহাসনে কালশিটে দাগ।
সবাই অভিমূন্য,কালপূরুষের শিষ্য।
উগরে দিচ্ছে সব...
আমিও কবি,হাতে নিয়ে মোমবাতি;
হাজির স্মরণ সভার মৌনমিছিলে।
কবিতা বেচবো বলে।

টিংকু রঞ্জন মিত্র





অলক্ষ্মী "গয়নার বাক্স"
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,




আজ ধরণীর শান্তির সাদা আকাশ ছেয়ে গেছে ;
অশনি সংকেতের শোকাকালো স্তরিত মেঘের গোছে।
সূক্ষ্ম অনাচার চতুর্দিকে, রক্তিম খুনোখুনি,
                                                     নারী বধূ নির্যাতন ;
কামুক অসুরেরাও করিছে, আলো আঁধারির
                                                ধরা'তে মা'দের ধর্ষণ।


হে ঈশ্বর !!
তুমি ধরণীতে ফেরো, ফেরিরূপে মনিহারির বেশে,
চুনি হীরা পান্নার বহুমূল্য,
                             অশুভ শক্তি'র রত্ন পূর্ণ বাক্সে ;
লয়ে কাঁধে,,,,
                 অচিন সাগরে করো কালের বিসর্জন ;
অলক্ষ্মী "গয়নার বাক্স",,,,
                      পিছুটানে নাহি পাক পুনরুজ্জীবন।

অজন্তা রায় আচার্য্য





অপেক্ষারা
------------------------

রাত ছুঁই ছুঁই সন্ধ্যা
       আগেই দিয়েছে পাড়ি
এই নিঃশব্দ উপত‍্যকা 
        এখন শুধু আমারই
ধ‍্যান মগ্ন রাত্রির কোলে
        একলা মন কথা বলি
শুভ্র তুষার আভরণে
        কি সাধনে পাহাড় মৌনি
এক সূর্য দহন শেষে
       শীতল আজ কতখানি
নিঃসঙ্গ আছি দাঁড়িয়ে 
           নির্লিপ্ত নিঃস্পৃহ আমি
আঁকা বাঁকা পাকদন্ডী বেয়ে
          সব খুঁজেছি আঁতি পাঁতি
কোনো পাথরের গায়ে 
          ঠিকানা লিখেছ নাকি

এখানেই কি সমাপ্তি 
        গল্পের আরো আছে বাকি
অপেক্ষারা হয়ে যাবে নদী
         তোমার ইচ্ছে গুলো যদি
কখনো সকালের রোদ হয়
         একবার উষ্ণ ছুঁয়ে যায়।।
      

                            

তানিয়া ব্যানার্জী




উপসংহার
-------------------



অশৌচ পালছে বোধ-
  প্রায়শ্চিত্ত! 
মৃত্যু যে বাকি আছে এখনো! 
এহেন রাজরোগে শয্যাশায়ী প্রাণ, 
প্রমাদ গুনছে সময়...
হবে আদ্য শ্রাদ্ধ সপিন্ডি করণ। 

কীটনাশকের বোতলে মিনারেল ওয়াটারের বিজ্ঞাপনী  ছবি 
সততাও তুরুপের তাস,  মোম পেন্সিল আঁকে, 
     নকল ঘাসের জলছবি। 

এ বড় চেনা ছবি,  রাজা রাজা খেলা -
  রানীর হাতেই ঘরের চাবি। 
ভাঙছে ব্রিজ... মরছে নীচ, 
  আকাশ রঙে ঢাকছে ক্ষত। 
তবুও চোখ বাঁধা দাড়িপাল্লা!  গাইছে গান...
 " যায় যদি যাক প্রাণ!  হিরকের রাজা ভগবান "
  
  অশৌচ পালছে বোধ... 
  প্রায়শ্চিত্তে অনড় মেরুদন্ড, 
   এবার কাঠামো হোক বিসর্জন।

রূপা রায়





বিসর্জন
******


মায়ের আসা মায়ের যাওয়া
সবই বুঝি ভ্রম
মা কি কভু কখনো যায় রে বিসর্জন!
তবু যখন বলে লোকে
মা আসছেন ঘরে
আমি তাকে সদাই দেখি
মনের ও মুকুরে ।
মায়ের হাসি মায়ের স্নেহ
চারটি দিনের নয়,
আমার মা যে সারা জনম
 আগলে রাখে আমায়।
যখন আমি দিশা হারাই
কোনো পথের বাঁকে
মা  যে আমার আলো হয়ে
হাত বাড়িয়ে ডাকে;
চলার পথে এলেমেলো ক্লান্ত যখন পা
 স্নেহের শীতল পরশ তখন
আমার সোনা মা।
মায়ের হাতের কোমল ছোঁয়া
আকাশ হয়ে যায়,
দুর্গা মায়ের বিসর্জন
কভু নাহি হয়;
হয় যে  কেবল রূপের বদল
আদল একই থাকে
তাই তো সবাই আমার মতই
মা-কে 'মা' ই ডাকে।।


প্রবীর রায়






বদল চাই
*********






"সারে জাহা সে আচ্ছা" কথাটা কি শুধুই শব্দ-
ইতিহাস রচতে শান্তনা, নাকি অনুভূতি !
প্রতিটি ভারতবাসী হৃদে -ভ্রমের চাদর,
"হাম বুলবুলে হে উসকে-এ গুলিস্তাঁ হামারা"
আমরা কি সত্যিই মানি-একে অপরকে ভাই বলে !
কখনো কি আপন ভেবেছি-এই দেশকে,প্রাণকে !
"বন্দেমাতরম" শব্দটির অর্থ-আমরা কি আদৌ জানি !
যদি জানতাম নিজেদের শুধরাতাম,দেশ ও প্রাণকে বাঁচাতে,
বিপ্লবীদের রক্ত-বলিদান ,বৃথা যেতে দিতামনা কখনো !
নিজেকে প্রশ্ন করো ? নিজ মাতৃভূমিকে কখনো সন্মান করেছো !
জাতীয় সঙ্গীতকে কখনো তার পাওনা মর্যাদা দিয়েছো ! 
না! যদি করতে-সকলের কণ্ঠে একটাই গান ভাসতো প্রভাতে,
গানের প্রতিটি শব্দ কানে-কানে বাজতো আর অর্থটা রক্তে- রোমকূপে শিহরন জাগাতো,
হিংস্ররা ভেদাভেদ ভুলতো,ভাঙতো জাত-ধর্মের অদৃশ্য প্রাচীর,
নারী-শিশু-বৃদ্ধ সকলের অধিকার সমান হত-কেউ বেকার থাকতোনা !
সকলেই শির উঁচু করে বাঁচতো,গর্বে বলতো আমি ভারত বাসী !
কোনো শিশুই মূর্খ বা শ্রমিক হতোনা ! কোনো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ঘরছাড়া হতোনা বা একলাও হতোনা সব হারিয়ে ! 
না আসতো দেশে ভ্রষ্টাচারী রাজনেতা-রাজনেত্রী,না হারাতো দেশের সম্পদ !
তবে এ কেমন স্বাধীনতা-কেমন মাতৃ সন্তান ! যারা নিজ মাকে খুন করে-ধর্ষণ করে উল্লাসে !
একজনও কি আছে ! যে চেঁচিয়ে বলবে-বদল চাই-বদল চাই-বদল চাই।।

পাপাই সেন





আগলে
,******


ধর্মভীরু মানুষ কিছু, ছাদে
মিথ্যে জ্বালায় টুনী
রক্ত গড়াচ্ছে চিকন রেখায়
আমি কাটামাথা গুনি।
চোখ থেকে দূরেই ধানেরক্ষেত
বালিতে পুরোনো রেখা…
কখন, কোথায়,কেন কী হচ্ছে?
হয়না তেমন দেখা।
তারা কত হিংসে জমায় আমি 
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি,
স্বস্তিতে কত বস্তি পুড়ছে
তাকে আগলে রাখা যায় কি?
                          

কার্তিক ঢক্







সরলীকরণ 
**********



চোখেতে চোখ রেখে বলো
কতোটা সরলীকরণে হেঁটেছে ঝর্ণা-জল..
নুড়ি পাথরকেই সঙ্গ দিয়েছো বেশী। 
যতোটা নাব্যতা চেয়ে ছিলাম-
তার থেকে অনেক দিয়েছো নোনা-ঢেউ--
দাঁতালো মাছ আর জেলিফিশ... 

হাতে হাত রেখে বলো
হৃদয়-গ্রাহ্য হাওয়া দিয়েছো কতোটুকু--
আইভি-লতায় গন্ধ ফোটেনি এখনো
মৌমাছিদের হুলের তীব্র  চিৎকার... 
বাগান শুকায় ঝর্ণা-জল ক্ষিদে নিয়ে বুকে..

বৃষ্টি চাইতেই,  কান্না ঝরায় মেঘ ! 
ভেবে দেখো , ভিজছি দু-জনেই...