আলোর স্পর্শ
মূল শহর থেকে কিছুটা ছাড়িয়ে জায়গাটা, তবে শহর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ঠিক বলা যায়না। শহরের বড় রাস্তা থেকেই একটা রাস্তা ভেঙে গিয়ে ঢুকে গিয়েছে এই দিকটায়, গেল বছরই পিচ হলো এই রাস্তাটা। আশেপাশের নিচু জমি গুলো এখন বাবুরা কম দামে কিনে সব পেল্লাই বাড়ি হাঁকাচ্ছে তাই বোধহয় পাল্লা দিয়ে রাস্তার এই রূপ বদল। পিচ রাস্তাটা ছাড়িয়ে একটু এগোলেই কালভার্টটা নজরে পড়ে, এতোই তার উচ্চতা যে অপর প্রান্তটা এদিক থেকে দেখা যায়না। কালভার্টের নীচ দিয়ে চলে গেছে একটা বড় খাল, হয়তো কোনোদিনও জল যেতো সেটা দিয়ে, এখন আগাছা আর আবর্জনাতেই প্রত্যেকটা দিন সমৃদ্ধ হয় সে। কালভার্টটা পেরোলে ওপারে প্রায় দুশো মিটার মত জায়গা বেওয়ারিশ অবস্থায় বিরাজমান। দু’শো মিটার… শুনতে সামান্যই কিন্তু ওই টুকু রাস্তাই পথচারীদের কাছে বিভীষিকাসম। বড় বড় হাঁ করে সে সদাই কাউকে গিলে নিতে প্রস্তুত, খুব সন্তর্পনে পেরোতে হয় সেখান। ওই দুশো মিটার রাস্তা পেরোলেই আবার সিমেন্ট ঢালা বাঁধানো রাস্তা গিয়ে শহরের মূল রাস্তার সাথে মিশেছে। সিমেন্ট ঢালা রাস্তাটার এক পাশে রয়েছে উঁচু পাঁচিল ঘেরা একটা পরিত্যক্ত কারখানা আর অন্যপাশে কারখানার কর্মচারীদের জন্য নির্মিত বাসভবন। একসময় নাকি এই কারখানাটা রমরমিয়ে চলত, সেসব কথা শুনেছে বকুল। কিন্তু তার জন্মের পরে পরেই বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটা, তাই বকুলের কাছে কারখানার স্মৃতি বলতে এখন শুধু একটা নোনা ধরা বিশাল কাঠামো, স্থানে স্থানে যার দেওয়াল ফাটিয়ে ছোটো ছোটো আগাছার সঙ্গে জন্ম নিয়েছে অশ্বত্থ, বট। কারখানার বাসভবনগুলোতেও এখন আর কেউ থাকে না, তবে ইদানিং কিছু লোককে ঘরগুলোয় ঢুকতে দেখেছে বকুল। কিন্তু মাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই মা এড়িয়ে যায়, বকুলকে বারণ করে ওদিকে যেতে।
পিচ রাস্তা শেষে কালভার্টটার যেখানে শুরু সেখানেই রাস্তার একধারে বকুলদের ঝুপড়িটা। আগে এখানটায় শ্রমিকদের ছোটোখাটো একটা বস্তি ছিলো কিন্তু কারখানা বন্ধ হওয়ার পর সব এক এক করে উঠে যেতে যেতে এখন শুধু বকুলদের ঝুপড়িটাই রয়ে গেছে। বকুলের বাবাও কারখানায় কাজ করত, কাজ চলে যাওয়ার পর থেকে ভীষন মনমরা হয়ে থাকতো মানুষটা। তারপর একদিন হঠাৎ বলল বড় রাস্তা দিয়ে যে ট্রাকগুলো আলু নিয়ে মহারাষ্ট্র যায় সেই ট্রাকগুলোয় চড়ে যাবে কাজের সন্ধানে, এই বলে সেই যে গেল আর ফিরলোনা কোনোদিনও। সে হয়ে গেল প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। মা তারপর থেকে ঠিকে ঝি এর কাজ করে, কখনও আবর্জনা কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসার চালায়। বকুলের ভাইটাও আবার তার পরের বছরই মারা যায়। ভাইটার পা দুটো ছিল জন্ম থেকেই অকেজো, পায়ের পাতা দুটো গোড়ালির থেকে ছিলো উল্টানো আর কোনো আঙ্গুল ছিলো না পায়ে, তাই হাঁটতে পারতো না সে। সেবার কখন যেন সবার অলক্ষ্যে হামা দিয়ে দিয়ে ওই কালভার্টের দিকে চলে গিয়েছিল তারপর টাল সামলাতে না পেরে গড়িয়ে পড়ে একটা বড় ট্রাকের সামনে…
পিচ রাস্তার ওদিকে একটা দোকানে রাখি ঝুলতে দেখে বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে বকুলের। ভাইটা যতদিন বেঁচে ছিলো এই দিনটায় সে নিয়ম করে ভোরে উঠে স্নান সেরে রাখি পরাতো ভাইকে। তাদের আড়ম্বরহীন জীবনে এই ছোট ছোট আনন্দ গুলোই ছিল একমাত্র বিলাসিতা। ভাইটা যাওয়ার পর সে বিলাসীতাটুকুও হারিয়েছে জীবন থেকে। রাখির দিনগুলো বড় কষ্ট হয় বকুলের, মনে পড়ে যায় ভাইটার হাতে রাখি বেঁধে দিলে সে কেমন আনন্দে চিৎকার করে মেঝেতে চক্কর কাটতো। ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে তার লালা ঝরে গড়িয়ে পড়ত গায়ে, বকুল পরম যত্নে নিজের জামার খুঁট দিয়ে মুছিয়ে দিতো ওর মুখ। ভাই চলে যাওয়ার পরও বকুল নিয়ম করে রাখি কিনেছে প্রতি বছর, গুছিয়ে রেখেছে ওর সাদা প্লাস্টিকের বাক্সটায়। মা বলে কেউ মারা গেলে নাকি ওই দূর আকাশে চলে যায়, বকুল ভাবে সেও যদি কোনোদিনও যেতে পারে ওই আকাশে তখন ভাইকে একসাথে পরিয়ে দেবে সব রাখিগুলো। ভাই নিশ্চয় খুব খুশি হবে। কিন্তু মাঝেমাঝেই আবার মনে প্রশ্ন জাগে দেখা হলে ভাই চিনতে পারবে তো তাকে!
পাঁউরুটির প্যাকেটগুলো বুকের কাছে চেপে ধরে সন্তর্পনে এগোচ্ছিল রাকেশ। অনেক চেষ্টা করছে চোখ মুখ স্বাভাবিক রাখার কিন্তু কিছুতেই পারছেনা, বুকের মধ্যে জমে থাকা ভয়টা নাড়াচাড়া দিচ্ছে মাঝেমাঝেই। সবাই কি ওকেই পায়! বারবার কেন ওকেই যেতে হয় খাবার আনতে! ওই রফিকটাই হচ্ছে যত নষ্টের গোড়া, ওরই উস্কানিতে দাদা রাকেশকে এরকম গরু গাধার মত খাটাচ্ছেন। তবে রাকেশেরও দিন আসবে ঠিক, তখন রফিক বুঝবে কত ধানে কত চাল।
রাকেশ যখন চার বছরের তখন ওর মা ওকে ফেলে অন্য লোকের সঙ্গে পালিয়ে যায়, এরপর ঠাকুমার কোলেই মানুষ হতে থাকে সে। রাকেশের জীবনের একমাত্র ভালো স্মৃতি ওই ঠাকুমার সঙ্গে কাটানো দিনগুলো, বাকি আর কিছুই মনে পড়ে না। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর বাবা ওকে পিসির কাছে রেখে এসে আবার বিয়ে করেন। এদিকে পিসির বাড়িতেও কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয় পিসিমশায়ের অত্যাচার, বেগার খাটুনি থেকে শুরু করে কারণে অকারণে জুটত মধ্যম। বাবার কাছে ফিরে যেতে চাইলে বাবা তাকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন, হয়তো নতুন সংসারে পুরোনো বোঝা টানতে চাননি আর। এই ভাবেই পিসির বাড়িতে সে কাটিয়েছিল কয়েকটা বছর, তারপর একদিন সুযোগ বুঝে পালায় সেখান থেকে। সেই শুরু, আজও রাকেশ ছুটে চলেছে ক্রমাগত। এই তেইশ বছরের জীবনে সে এটুকু বুঝে গেছে যে পৃথিবীতে ভালোবাসা, অনুভূতি এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই আদৌ, এগুলো বড়লোকেদের কল্পনামাত্র। এই পৃথিবীতে আছে শুধু লড়াই… ক্ষমতার লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই আর এই লড়াইতে জিততেই হবে তাকে।
এসব কথা মনে হতেই মুখ থেকে একদলা থুতু ফেললো রাকেশ, আর তখনই একটা বাচ্চা মেয়ে এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।
“দাদা দুটো টাকা দেবে মুড়ি কিনবো?”
“ফুট... রাস্তা ছাড়।”
“দাওনা দাদা দুটো টাকা, আমার মায়ের খুব জ্বর তাই মা কাজে যেতে পারেনি।”
“যা যা ওসব টাকা ফাকা হবে না আমার কাছে।”
“এমনি টাকা দিতে বলছিনা গো, তোমার কোনো কাজ থাকলে বলবে আমি করে দেবো।”
“আমার কাজ করে দিবি তোর এই দেড় ফুটের শরীরটা নিয়ে!” মুখটা বিকৃত করে হাসলো রাকেশ।
“হ্যাঁ গো সত্যি বলছি।”
“তা কি কাজ করবি শুনি?”
“যা বলবে, বাসন মাজা, কুটনো কাটা সব।”
“হুরর… আমার এসব দরকার নেই।”
“ও দাদা শোনো না…”
বাচ্চাটার কথা শুনতে শুনতেই কিছুটা দূরে পিচ রাস্তাটার দিকে চোখ গেল রাকেশের, একটা লোক কেমন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে না ওদের দিকে! কে হতে পারে লোকটা! নাহ তাড়াতাড়ি এখান থেকে পালাতে হবে। বাচ্চাটা বড্ড ভ্যানভ্যান করছে, ওর মুখ বন্ধ করতেই একটা পাঁউরুটির প্যাকেট ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে ত্বরিৎ গতিতে পা চালালো রাকেশ। বাচ্চাটা অবাক হয়ে ওকে দেখলো পুরোনো কারখানার অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে।
সন্ধ্যে থেকেই বৃষ্টিটা নেমেছিলো, তারপর যত রাত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তার বেগ, সাথে শুরু হয়েছে নিদারুণ বজ্রপাত। বৃষ্টির তেজ, দমকা হাওয়া আর বজ্রপতন সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে বাড়ির টিনের চালটা উড়ে যাবে। বকুল তার এই ছোট্ট জীবনে এমন ভয়ঙ্কর দুর্যোগ আগে কখনও দেখেনি, যতবার বাজ পড়ছে ততবার কেঁপে উঠছে ওর বুক। মায়ের কোল ঘেঁষে চুপটি করে শুয়ে থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু সেটাও পারছেনা ঠিকমত, পেটের মধ্যে চলছে ছুঁচোর দৌরাত্ম। বিকেলের সেই দাদাটার কাছ থেকে পাওয়া পাঁউরুটিটা মাকে খাইয়ে দিয়েছিল, কিন্তু নিজের পেটে দানাপানি অবধি পড়েনি।
আচমকাই বাইরের দরজাটা খুলে গেল সশব্দে, ছিটকিনিটা নড়বড়ে তাই বাইরে থেকে একটু জোরে দরজাটা ঠেললেই হলো… ভয় পেয়ে উঠে বসল বকুল, মাও কোনোমতে উঠলেন। একটা লোক ঢুকেছে দরজা দিয়ে, অন্ধকারে মুখ না দেখা গেলেও অবয়বটা স্পষ্ট। বকুলের মা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন ওকে তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “কে?”
“চোপ একদম চোপ।” হিসহিসিয়ে বলল আগন্তুক। এতক্ষণে সে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে চলে এসেছে বকুলদের সামনে। লোকটার হাতে একটা ছোটো টর্চ, সেটা জ্বালতেই ওরা দেখতে পেল লোকটার মুখটা ঢাকা আর ডান হাতে ধরা একটা ধারালো ছুরি। লোকটা ছুরিটা বকুলের মায়ের সামনে উঁচিয়ে ধরে বললো কাউকে যদি বলেছিস আমি এখানে আছি তাহলে কিন্তু তোর এই বাচ্চাটা… কথাটা সম্পূর্ণ না করেই লোকটা ছুরিটা ঠেকিয়ে দিলো বকুলের গলায়। ওর মা আর্তনাদ করে উঠলেন, আর তৎক্ষণাৎ শোনা গেল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। লোকটা চোখের ইশারায় বকুলের মাকে দরজার দিকে যেতে বলে নিজে বকুলকে কাছে টেনে নিয়ে টর্চ নিভিয়ে সেঁধিয়ে গেল ঘরের এককোণে রাখা আবর্জনা ভর্তি বস্তাটার পেছনে।
বকুলের মা দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে দুটো লোক হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো ভেতরে, ওদের আপাদমস্তক বর্ষাতিতে মোড়া।
“কেউ ঢুকেছে আপনার ঘরে?”
“ক্ক… কে ঢুকবে?”
“কেউ ঢুকেছে কিনা বলুন।”
“না… কিন্তু আপনারা কে? এতো রাতে আমার ঘরে…”
“আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেন?”
“ভয় পাবোনা! আপনারা এভাবে…”
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমরা পুলিশ। কেউ ঢোকেনি যদি তাহলে একটু আগে আপনার ঘর থেকে চিৎকার শোনা গেল কেন?”
“চ্চ… চিৎকার! আ… আসলে আমার খুব জ্বর কদিন, গোটা গায়ে ব্যাথা তাই যন্ত্রনায় চিৎকার করে ফেলছি মাঝেমাঝে, হয়তো সেটাই শুনেছেন।”
“হুমম।” এই বলে ঘরের মধ্যে টর্চের আলোটা একবার ঘুরিয়ে নিয়ে তারা বলে, “আমরা এখন আসছি, কেউ এলে ঘরে ঢুকতে দেবেন না, কেমন?”
“আচ্ছা।”
পুলিশের লোকদুটো চলে যায়, বকুলের মা দরজা লাগিয়ে দেওয়ার পরও কিছুক্ষণ ঘাপটি মেরে বসে থাকে লোকটা তারপর বকুলকে নিয়ে সরে আসে বস্তার পেছন থেকে। আস্তে আস্তে মুখের কাপড়টা সরায় সে, টর্চের আলোয় ওর মুখটা দেখে চমকে ওঠে বকুল।
ভোরের আলো বকুলদের বাড়িটাকে স্পর্শ করছে একটু একটু করে, পুরোপুরি আলো ফোটার আগেই পালাতে হবে রাকেশকে। বাচ্চাটা আর তার মা বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে, রাকেশেরও তন্দ্রা মতন আসছিল কিন্তু ঘুমোলে তো তার চলবেনা। বাচ্চাটার ওপর প্রচন্ড রাগ উঠছে ওর, কাল এই চিংড়িটার সাথে কথা বলতে গিয়েই পুলিশের চরটার নজরে পড়ে গিয়েছিল সে। এটার গলাটা টিপে দিতে ইচ্ছে করছে রাগে কিন্তু এখন এসব ঝামেলা করে লাভ নেই। দলের সবার কি হল কে জানে! উঠে দাঁড়ালো রাকেশ, নাহ এবার তাকে বেরোতেই হবে। এগিয়ে গিয়ে দরজার ছিটকিনিটা টানতেই বাচ্চাটার গলা ভেসে এলো, “একটু দাঁড়াবে?”
চমকে উঠে পেছন ফিরল রাকেশ, ঘুমঘুম চোখে অনুরোধ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বাচ্চাটা। কালকে এটার জন্যই সব গন্ডগোল হলো কিন্তু আজ তাও কেন কে জানে ওর চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থমকে গেল রাকেশ, ওই চোখ দুটোয় যেন কোন মায়া জড়িয়ে আছে! বাচ্চাটা একগাল হেসে উঠে গেল তারপর তাক থেকে পেড়ে আনলো একটা কাগজের বাক্স। বাক্সটা খুলতেই চমকে গেল রাকেশ, সেটাতে ভর্তি রাখি। তার মধ্যে বেছে বেছে একটা রাখি বের করলো বাচ্চাটা। রাকেশ ওর মুখের দিকে তাকাতেই ও বললো, “কাল তুমি আমাকে যখন এমনি এমনিই পাঁউরুটিটা দিলে তখনই ভেবেছিলাম তোমাকে আজ রাখি পরাবো তোমার বাসায় গিয়ে কিন্তু আজ তো তুমিই আমার বাড়ি চলে এলে। জানো তো আমার ভাইটা মরে যাওয়ার পর থেকে কাউকে রাখি পরাইনি আমি, তুমি আমার দাদা হবে?”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো বাচ্চাটা, তারপর রাকেশের হাতটা টেনে নিয়ে বাঁধতে শুরু করলো রাখিটা, অপটু হাতে বাঁধতে গিয়ে গিঁট দিয়ে ফেললো সুতোটায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে শুধু দাঁড়িয়ে রইল রাকেশ। কিন্তু রাখিটা বাঁধা শেষ হওয়া মাত্রই কারা যেন দরজা খুলে ঢুকে পড়ল হুড়মুড়িয়ে। রাকেশ দেখলো উর্দিধারী তিনজন পুলিশ।
“কাল ঠিকই দেখেছিলাম, কি ভেবেছিলি লুকিয়ে পালাবি?”
দাঁতে দাঁত চিপে কথাগুলো বলতে বলতে একজন এসে মুঠো করে ধরে ফেলল রাকেশের হাতটা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রাকেশ এই মুহূর্তে যেন আর পালানোর তাগিদ অনুভব করছেনা, বড্ড ক্লান্ত লাগছে ওর। জল ভরা চোখ নিয়ে বকুল হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে; আজ বহুবছর বাদে কান্না পাচ্ছে রাকেশেরও, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বকুলের মুখের মাঝেই ঠাকুমার মুখের আদল যেন আজ এতো বছর বাদে আবার ভেসে উঠছে রাকেশের সামনে, আজ এতো বছর বাদে তার ভেতর থেকে কেউ যেন চিৎকার করে বলে উঠছে : "অনেক হয়েছে, এবার থামা তোর এই মিথ্যে লড়াই। খুলে ফেল এই কালো মুখোশ, কারণ তুইও জানিস ভালোবাসা কারুর কল্পনামাত্র নয়, ভালোবাসা আছে আমাদের অস্তিত্বে মিশে…"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন