নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রূপা রায়




কিছুক্ষণ(ভ্রমন কাহিনী)




নিউদিঘা থেকে সকাল আটটায় রওনা দিলাম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে গন্তব্য স্থল এক নতুন ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঘেরা দ্বীপ।
তালসারি থেকে বারো কিলোমিটার দূরত্বে যার অবস্থান,  পথের দুপাশে দেবদারু গাছের দীর্ঘ রহস্য, মাঝে মাঝে রিসর্ট পেরিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে বাংলা উড়িষ্যা র সীমানা বরাবর।
দেবদারুর রহস্য পেরিয়ে  চন্দনেশ্বর মন্দির কে বাঁ পাশে রেখে বড়ো রাস্তা ধরে সোজা পথ, তেমন ঘন জনবসতি দেখা যায় না , পথের দুপাশে মাঝে মাঝে রাস্তার উপর ঝুঁকে পড়া কাজুবাদাম এর গাছের পাতা, তার ফাঁকে হলুদ,  পেয়ারা ফলের মতন দেখতে তার নিচে সবুজ রঙের বাদাম উঁকি দিচ্ছে ।
রৌদ্র ছায়ার খেলার অদ্ভুত সৌন্দর্য প্রকৃতির বুকে,
একসময় বড়ো রাস্তা পার করে প্রবেশ করলাম আঁকাবাঁকা গ্রামের মেঠো পথ ধরে গত রাতের বৃষ্টি তে কোথাও কোথাও জল জমে আছে । বাংলা হোক বা উড়িষ্যা
ভারতবর্ষের সমস্ত গ্রামের ছবি বোধহয় এক, পথের দু পাশে বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও ধানের জমি কোন কোন জায়গায় কপি, ফুলের চাষ,
আরো একটু সামনে এগিয়ে দেখলাম বিস্তারিত তরমুজের ক্ষেত্র।
 সামনের পথ যত প্রশস্ত ততই নতুন দ্বীপের রহস্য উন্মোচন এর কৌতুহল!
বুকের ভেতর অজানা উদ্দীপনা, বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ, দু একটা চায়ের দোকান পার করে গাড়ি এসে থামলো এক বটগাছের ছায়ায়।
সকাল দশটা, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক আগন্তুক বললেন হাতে মাত্র এক ঘন্টা, তার মধ্যে ফিরতে হবে,
দারুণ উৎসাহে জানতে চাইলেও সময়ের জন্য জানা হলো না।
টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে পাঁচ মিনিট এর হাঁটা পথে এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে,দুপাশে দেখলাম কিছু অজানা গাছ(ফেরার পথে  নাম জেনেছি লাম এরাই ম্যানগ্রোভ,  গ‍রাণ, হোগলা)
কোনক্রমে ছোট সেতু পার করে  মাঝি ভাইএর সহায়তায় বোর্ডে উঠলাম। শান্ত প্রবাহমান জলধারা দুপাশে শ্বাসমূল, ঠেসমূল যুক্ত কেয়া, গেওয়া, গোলপাতা সমৃদ্ধ বনরাশি,

মিনিট পনেরো পর স্পিড বোট নামিয়ে দিলো  মোহনার কাছাকাছি একটি দ্বীপে; যেখানে সুবর্ণরেখা সাগরে পড়েছে৷ অভিভূত নামনা জানা পাখির কলকাকলি, শহরের  ব‍্যস্ততা যাদের কাছে হার মানে,
সেই দ্বীপে নেমে প্রথম স্পর্শ করলাম ম্যানগ্রোভ সুন্দরী কে , তার ডালে আটকানো দোলনায় বসে ফিরে গেলাম শৈশবের দেশে ।
সময় খুব সংক্ষিপ্ত এই দ্বীপ পৃথিবীর বুকে জেগে থাকে মাত্র দিনে ছয় ঘন্টা, আমাদের হাতে মাত্র তিরিশ মিনিট, 
বোর্ড চালকের কড়া নির্দেশ ।
অতএব সময় নষ্ট না করে যতটা সম্ভব সৌন্দর্য আর অভিজ্ঞতা উপভোগ করা,
নরম পলিমাটি পায়ের গভীর ছাপ রেখে এগিয়ে যাওয়া সামনের দিকে। চারিপাশে ছড়ানো সাদা গাছের ডাল, মনে হবে শুকনো কাঠের বিক্ষিপ্ত পতন।কোন মানুষ রেখে যাইনি রাতের জোয়ার এদের উপহার দিয়ে গেছে,
সামনে কোন জনবসতি নেই, একটু এগিয়ে দেখলাম একজন মাঝবয়সী মহিলা  নীচু হয়ে কি সংগ্রহ করছে ,কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম প্রথমে আমার কথা বুঝলো না পরে ইশারা করতে যা বললো বাংলায় যার অর্থ শামুক, কাঁকড়া ধরছে, আর বেশ কিছুটা দূরে এদের কয়েকঘর বসতি ।  এভাবে যাদের জীবন যাপন, শহরের ঝাঁ-চকচকে জীবন সম্পর্কে যাদের তেমন কৌতূহল নেই তা ব‍্যস্ত মহিলা কে দেখেই বুঝলাম।
প্রশস্ত বালুরাশির মাঝে দাঁড়িয়ে মনে পড়ছে কপাল কুন্ডলার নবকুমার কে,
দূরে শোনা যাচ্ছে সাগরের গর্জন তবে বিস্তারিত কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে সে পথ।
সময় যেনো গন্ডী টেনে দিয়েছে ,সে ভুলে যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ সম্বিত ফিরে দেখলাম হাতে মাত্র সাযমিনিট আর অনেকদূর চলে এসেছি পায়ে পায়ে,
প্রকৃতির এই অপরূপ শোভা দেখে এত অল্প সময়ে তৃষ্ণা মিটলো না।
শুনেছিলাম মহাদেশের সূর্য মুখীর  আঁতুরঘর , সময়ের অভাবে সেই ঘর দেখার স্বাদ অপূর্ণ রয়ে গেলো, 
যে পথে নরম মাটির গভীরে পায়ের ছাপ পড়েছিলো সেই পথেই ফিরে এলাম বোর্ডের কাছে,
রেখে এলাম বিচিত্রপুরের দ্বীপে আসা-যাওয়ার পদচিহ্ন।
দুপাশের ম্যানগ্রোভ পেরিয়ে স্পিড বোর্ড তীব্র গতিতে ফিরে চললো পরিচিত সভ‍্য পৃথিবীর দিকে।।


কোন মন্তব্য নেই: