আর ফিরে পাবো না
রণজিৎকুমারমুখোপাধ্যায়
তোমাকে আর কেউ চিনুক বা না চিনুক
আমি হাড়ে হাড়ে চিনেছি ।
চৈত্র বৈশাখে গাছের শীতলছায়ায় বসে
ক্লান্ত শরীরের ঘাম মুছতে মুছতে বাতাস
খেতে খেতে দেখেছি তোমার তপনে তপ্ত
ঝলসানো মুখখানি দিগন্তের দিকে চেয়ে ।
ভরা শ্রাবণে অবিশ্রান্ত বৃষ্টিধারায় প্রবল বন্যায়
আধমরা হয়ে লঙ্গরখানার খিচুড়ি নিয়ে যে ক'টা
দিন খেয়েছি ,অমন খাওয়ার স্বাদ আমি পাইনি জীবনে ।
আশ্বিনে নদীর দুকূলের কাশ বনে
তোমার সাথে খেলতে খেলতে যে
আনন্দ আমি পেয়েছি , অমন আনন্দ
আর জীবনে আমাকে কেউ দেয় নি কখনো ।
অঘ্রানে ক্ষেতভরা ফসলে নবান্নের উৎসবে
তুমি আমি যে পড়শির বাড়ি বাড়ি গিয়ে
নবান্নের মিষ্টি মধুর স্বাদ উপভোগ করেছি
তেমন আর এখন দেহাতে পড়ে না নজরে ।
পৌষে কাঠের উনোনের পাশে বসে মায়ের হাতে গড়া পিঠে আখের গুড় দিয়ে কত যে খেতাম পিঠে
এখন সে রকম করে মা তার ছেলেকে খাওয়ায় না।
ফাগুনে দোলের রাতে বাবুদের বাঁধাঘাটে তুমি আমি দুজনে পাশাপাশি বসে রূপালী চাঁদের আলো
যেভাবে মেখেছি গায়ে ; এখন আর সে সব করতে
মন চাই না ।
এই সুন্দর পৃথিবীতে তুমি আমি দুজনে আজো আছি ।একদিন তুমি হিজলের ছায়ায় বসে
ইশারায় কাছে ডেকে বলেছিলে ,প্রতিদিন প্রতিক্ষণে
তোমার আমাকে করে চলেছ ধর্ষণ, আমি তো
সকল সময় তোমাদের সকল কাজে দিই সাথ ,
তবে কেন আমার শুভ্রতায় দাও কলঙ্কের দাগ ?
আমি যুগে যুগে তোমাদেরই আছি আর থাকবো ও
চিরদিন , আমি যে তোমাদের মনোরঞ্জনা ।শুধু মিনতি আমার যেন আমাকে তোমরা তোমাদের
মতো কলঙ্কিত করো না আধুনিকতার রূপে রসে মজে,কারণ এ সভ্যতা আদিমকেও মানিয়েছে হার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন