নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সুনন্দ মন্ডল




বিসর্জন
 *******

              

এ পাড়ায় কাঁসর ঘন্টা,
সমারোহে পুজোর কটা দিন।
ঢাকের বোলে নবমীর রাত
এলো মায়ের বিদায়ী ক্ষণ।

ভাসান যাবে মা, দশেরা হুল্লোড়ে
সংসার গুছিয়ে পাট চুকাবে।
ঢাকির নাচ, ঢাকের শব্দ
ছেলেরা সব নেশা মেখে মাতাল হবে।

পিছনে পিছনে ভক্তরা লুটাবে
চোখের জলে শোকের টিকা।
শান বাঁধা পুকুরে মায়ের দেহ
ভেসে যাবে সব গ্লানি দৈন্যতার রেখা।

ও পাড়ায় দেখ ঝোপের আড়াল
বিসর্জনে নাচছে মত্ত যুবকেরা।
পাতার খসখস শব্দ, কিছু বেড়াল
ভেসে যাচ্ছে কুমারীর ইচ্ছেরা।

লাল রক্তে ভাসে যোনি, কেউ নেই উৎসবে
শুধু শিকারির ছোবল, নরম মাংস পিণ্ডে।
কোথায় মা? কোথায় মানুষের শুভ চেতন
ফুস-ফুসমন্তর সকালটা হয়ে গেল সন্ধ্যে।

চোখের জলের নেই দাম আর
কামার্ত চাইবেই দাবি মেটাতে।
সুখের মুহূর্ত দান করে একা যুবতী
নিজেই গভীরে যাবে মায়ের সাথে।

যে পুরুষ মায়ের ভাসানে উদ্দাম নাচে
চোখের জলে আবেগটুকুই প্রদর্শিত।
বিসর্জনের শেষে হাসাহাসি পাশাপাশি
যুবতী তখনও ঝোপের পাশে গচ্ছিত।

চিরঞ্জিত সাহা





দুর্গা




শেষ স্টেশনের শেষ বেঞ্চে ঝরা বকুলের নতুন দেশ
গোলাপ হেথায় পাপড়ি ঝরায়, ক্যাকটাসেরা হাসছে বেশ ;
গান ভুলেছে হলুদ পাখি , নীলাঞ্জনা নিরুদ্দেশ
নেমেসিস মেশে ধমনিস্রোতে , রাজশ্রী আজ খুলছে বেশ । 
সিয়াচেনে সৈন্য মরে , পিঁপড়ের ডিম আমলাশোল ,
মগ্ন তখন দশভূজা , ম্যাডক্সে তো ঢাকের বোল ।
পাড় গড়নে বিরক্ত ঢেউ , বিষ মিশেছে সবুজ ঘাসে ,
বৃষ্টি হয়ে ঝিন্টি ঝরে আপনার ঐ ভূ-কৈলাসে ? 
চোখটা ধাঁধায় ডুমুর ফুলে , শিবঠাকুরের আপন দেশে ,
কাক কোকিলে লড়াই করে শ্বেতপায়রার শুভ্র বেশে ;
আসবি যখন বছর ঘুরে , সঙটি সেজে মর্ত্যলোকে ,
পারলে আনিস আশার ফানুস , স্বপ্নমোড়া লাল ঝিনুকে ॥ 

ঋজুলেখা দত্ত






নির্লজ্জ উৎসব
____________






উৎসব এবার মাটিতেই হোক
             মণ্ডপে যাবো না ,
মাটির ঠাকুর সাজিয়ে রেখেছ
             ভগবান পাবোনা l

এখানে এখন হাহাকার শুধু
              ঢাকের বাদ্যি বৃথা ,
অশক্ত বৃদ্ধা ধর্ষিতা সেও
               লজ্জায় ঢাকি মাথা !

আমার ভায়েরা ইসলামপুরে
              গুলি বুকে প্রাণ দিলো ,
দোষের মধ্যে তারা নাকি শুধু
             শিক্ষক চেয়েছিলো !

আমার পুত্র ছোট্ট বিভাস
            জন্মদিনের আগে ,
মস্ত বোমা উপহার পেলো
          তবু কি লজ্জা জাগে ?

তবুও আমরা উৎসব করি
           উল্লাসে দিই তালি ,
বিবেক তবুও জাগছে  না দেখো
          মায়ের বুক যে খালি।

নিউজের সাথে ডিনার করি ,
           টুথপিকে দাঁত খোঁচায় ,
বলি , "গোল্লায় গেলো দেশটা আহা !
             কে যে এখন বাঁচায় ? "

পুজোয় পড়ি নতুন কাপড়
            একটুও নেই লাজ ,
আসল দুর্গা রক্তে ভাসে
           মডেলের দশভূজা সাজ ।

শ্রাবণী নায়েক





জাগরণ... 
------------------


সহসা রাত্রির অন্ধ তামস ভেদ করে 
এক গুরুগম্ভীর ওঁ-কার ধ্বনি 
আমার সমস্ত চেতনাকে জাগ্রত করে
টেনে তুলল আলস্যময় নিদ্রামগ্ন শরীরকে।
চোখ মেলতেই ঝলসে উঠলো চোখ,
সূর্যের চেয়েও সহস্র কোটি দীপ্যমান 
এক আলোকরশ্মি... 
আমি দু-হাতে চোখ ঢাকলাম
ভয়ে নিশ্চল আমার সমস্ত শরীর, সমস্ত অস্তিত্ব। 
আমার কন্ঠ থেকে নির্গত হলো শুধু একটা প্রশ্ন,
কে তুমি...?

আমি আদিশক্তি,
আমি সৃষ্টি - স্থিতি - প্রলয়ের প্রথম ওঁ-কার ধ্বনি, 
আমি চেতনেরও চেতন,
সৃষ্টির রহস্য, প্রলয়ের বজ্রনির্ঘোষ, 
আমি প্রাণের আধার মহাপ্রাণ। 

এবার চোখ মেলো, চেয়ে দ্যাখো --
আমি দেখলাম, 
দেখলাম আমার সহস্র কোটি জীবন পার হওয়া পদচিহ্ন। 
দেখলাম নিজেকে বারংবার 
দেখলাম এক প্রজ্বলিত দীপশিখাসম ক্ষুদ্র আলোকবিন্দু 
যেন মিলে যাচ্ছে সেই মহান আলোকরশ্মির মাঝে।
আমি হাত বাড়ালাম... 
একটা স্নিগ্ধ স্পর্শে জুড়িয়ে গেল
আমার জন্ম-জন্মান্তরের তৃষ্ণাসম মিলন পিপাসা। 
শীতল হয়ে এলো আমার সমস্ত শরীর,
এ যেন এক নতুন জন্ম আমার
নতুন পথের দিশা।

প্রাপ্তি মণ্ডল ভৌমিক

  




অন্য বিসর্জন 

**************




মুখের হাসি হলো ম্লান 
দুর্গা এবার যাবে ভাসান ।
ঢাকের আওয়াজ হলো মলিন 
জলে দূর্গা হবে বিলীন ।

দূর্গা মায়ের বিসর্জনে 
অশ্রুচোখেও আশা থাকে,
বছর ঘুরে আবার মা
আসবে ফিরে ঘরে ঘরে ।

ফিরবে না আর সেই দূর্গা 
রাতের আঁধারে যার হয় ভাসান ।
শূন্য করে মায়ের কোল 
মানুষরূপী অসুর করছে শোষণ।

পুরুষত্ব ফলাস তোরা 
সদ্যজাত শিশুর দেহে ।
লালসায় ভরা নরপশুর চোখে 
নারী শরীর হলেই চলে ।

রক্তমাখা ছিন্ন দেহ 
ফেলে গেলি পথের ধারে ।
তোদের লোভের অত্যাচারে 
ছোট্ট দূর্গার বিসর্জন হল চিরতরে ।

সাজ্জাদ আলম









কাফন
 ******               

কামাল, এক নামেই গোটা গ্রাম চেনে, খুব নামকরা দর্জি, এমন সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের জামাকাপড় সেলাই করে যা বিশ্বের অন্য কোথাও মেলা মুশকিল. কামাল শুধু জমিদারদের জামাকাপড় বানাই কারন জমিদার ছাড়া সমাজের অন্য কোনো শ্রেনীর পক্ষে কামালকে অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য নেই. দোতলা বাড়ি, ওপর নীচ মিলিয়ে ছ'টা ঘর, দুটো বাথরুম ও একটা রান্নাঘর, ঠিক যেন জমিদার বাড়ির মতোই. কামাল জামাকাপড় সেলাই করে তার বাড়িতেই যদিও একটা দোকান আছে, সেই দোকানে কামাল বিক্রি করে "কাফন", আর এই দোকানকেই ঘিরে কামালের অহংকার. কামাল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, দুয়া করে, তবে দুয়াই উপরওয়ালার কাছে যা চাই সেটা শুনে হয়তো উপরওয়ালাও প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলেন. সে তার দুয়াই মানুষের মৃত্যুকামনা করতো, যাতে তার দোকান থেকে বেশী বেশী কাফন বিক্রি হয়. আর উপরওয়ালাও হয়তো তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন. প্রত্যেক দিন কামালের দোকান থেকে দশ-বারোটা কাফন বিক্রি হয়ে যেত. কাফন কিনতে আসা ব্যক্তির সঙ্গেও কামাল ভালো ব্যবহার করতো না, মৃত্যু কে নিয়ে মজা-মস্করা করতো, ক্রেতাদের যে রাগ হতো না তা কিন্তু নয়, হতো, কিন্তু সহ্য করতে হতো কারন কামালের মাথার উপর জমিদারদের হাত ছিল আর যদি অন্য কোনো দোকানে যেতে হয় তাহলে গ্রাম পেরিয়ে যেতে হবে শহরে তাতে অনেক সময় নষ্ট আর তাছাড়া মৃতদেহ বেশীক্ষণ রাখাও অশুভ, এইসব কারনে জনতা কামালের অত্যাচার সহ্য করতো, আর কামালের মৃত্যু কামনা করতো.

    একদিন কামাল কিছু কাজের জন্য কলকাতা যায়. সাতদিন পরেই ঈদ, জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা করতে হবে. কয়েকদিন পর ফিরে আসবে. 

  আজ কামাল ফিরছে. হাতে দুটো বড়ো বড়ো ব্যাগ, জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা রয়েছে সেই ব্যাগে. কামাল বেশ হাসিখুশি, তবে মনে মনে ভাবছে বঙ্কু এই কদিনে কটা কাফন বিক্রি করেছে সব হিসাব নিতে হবে আর কলকাতা থেকে নিয়ে আসা নতুন কাফনগুলোও যেন তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যায়. হঠাৎই বাইরে চেঁচামেচি শোনা যায়, বন্দুক, তলোয়ার,তিলক আর টুপির এক জগৎ দাড়িয়ে আছে বাইরে. বাস দাড়িয়ে আছে. হঠাৎই একটা কাচের বোতল বাসের সামনের কাঁচটি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেল, কিছুক্ষণের মধ্যেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো, হইহুল্লোড় পড়ে গেল, কামাল তার দুই ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইল, কিন্তু না! পারলো না, পড়ে গেল নীচে, আগুনে জ্বলন্ত একটা বড় কাঠের ঠুকরো সোজা এসে কামালের বুকে লাগল. কামালের সারা শরীর জ্বলে যেতে লাগল. কামাল চিৎকার করছে আর যেন প্রকৃতি মজা-মস্করা করছে কামালের সঙ্গে. চারদিকে আগুন আর রক্ত, একটা রক্তে রাঙা ওড়না হাওয়ায় উড়ে এসে কামালের শরীর ঢাকা দিয়ে দিল. 

কাফনটা যদি সাদা না হয়ে 
 হতো নীল,লাল বা সবুঝ
মৃতদেহ কী কিছু বুঝতে পারে?
       নাকি সে অবুঝ