নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




রঙ
-----





সদর দরজা পার হলো মেঘ
গভীর রাতে চোখ খুলে গাছ
চৌমাথায়
দুহাতে মেঘ সরিয়ে গাছ বলল,
এখনও রঙ নিয়ে গায়ে মাখো

আর রঙ হয় না ----- বলতে বলতে
মেঘ হারিয়ে গেল
আজ
গাছ নিজেও কোনো রঙ পেল না

দুপুরের রোদ্দুরে
আলো ছায়ায় গাছ
গাছের ছায়ায়
শিশু ধুলো খেলে

অনেক নিচু হয়ে
গাছ এখন
শিশুকে জড়িয়ে ।

রুদ্র সাহাদাৎ




নিঃশব্দে
*******


কাত হয়ে পড়ে আছি বালিয়াড়ির বুকে
নগ্ন পদে হাঁটছি উত্তর-দক্ষিন দিকহারিয়ে।
হিমছড়ির ঝর্ণা দেখি ঝর ঝর ঝরছে অবিরত
আমার ইচ্ছেগুলি দীর্ঘশ্বাস হয়ে
উড়ছে
হাওয়ায়
হাওয়ায়।
নিথর চোখ,বোবামুখ, নগ্নদেহ
কাত হয়ে পড়ে আছে
কতোদিন,কতোবছর
কেউ জানেনা, কেউ বুঝেনা।

তুমিও বুঝনি কোনোদিন কোনো কিচ্ছু, তবে
জানিনা এখন ফিরবে কবে
যাযাবর মন নগ্ন পদচিহ্ন আঁকছে
সমুদ্রতীরে অজান্তে নিঃশব্দে....।




মৃত্যুকূপ
*******


মৃত্যুকূপে হাঁটছি চল্লিশ বছর হয়ে গেলো
মাঝে মাঝে অজান্তে দৌঁড়াচ্ছি
কতো আর এভাবে পথচলা।

চোখের পাতা বন্ধ করলেই পাহাড় দেখি,
ঝর্ণা দেখি, সমুদ্র দেখি, বালুচর দেখি
রুদ্রোজ্জল দিন দেখি,জোসনাময় রাত্রি দেখি
ভালোবাসার মানুষ দেখি,
ভালো একটা বাসা দেখি,
চোখের পাতা খুললেই সামনে মৃত্যুকূপ।

অমিতাভ মীর




বিদায়ী শারদ বাণী 
 **************



বিদায়ের আয়োজনে চোখ ছলছল,
শরৎ রাণীর বুকে ঘোর ঘনঘটা,
বায়ু উতরোল মেঘে বিজরির ছটা;
চোখ বেয়ে কলকল নামলো যে ঢল।
বিদায় বেলায় ডেকে বলে হেমন্তকে-
'দুই মাস কোরো রাজ নবান্নের গানে,
ভরে রেখো মাঠ মুঠো মুঠো সোনা ধানে;
পিঠা-পুলি-রসে সেবা দিও আগন্তকে।

কিষানীর বুকে দিও সুখ অনাবিল,
কিষানের ব্যথা-জ্বালা যায় যেন সরে,
নবান্নের সুখে যেন প্রাণ থাকে ভরে;
ছোট ছোট সুখ হোক শান্তির মিছিল।'
বিদায় নেবার কালে শরতের রাণী, 
হেমন্তকে দিয়ে গেল- শারদীয়া বাণী।

জয়দীপ রায়




ফেরার তরী 
***********




কান্নাহীন সমুদ্র পাড়ে
ওপার হতে ফিরেছে আবার তরী
মেঘে ঢাকা অভিমানী চাদর
ঘামে ভেজা পুরোনো পারফিউমের গন্ধ
লেগে আছে কাল রাতের মাথার বালিশে
এপিঠ  ওপিঠ কত কথা
ভিড়ে ঠাসা প্যান্ডেলের যাত্রী শুন্য প্ল্যাটফর্মে
কারা যেন মিলিয়ে যায় হাত বুলিয়ে
ডাকার সাধ্যি আছে তোর না আমার
ওই সিদুর মাখা ভিড়ে ফের হয়ত আসবে
নাম না জানা গলি গুলো গুগল ট্র‍্যাকে
ধরা দেবে সন্ধ্যে গুলোও 
কাধে হাত রাখা পুজোর পঞ্জিকায়
হাত গোটানো পাঞ্জাবির বেশে
তোকে বেশ লাজুক লাগে 
গলির ভিতর দাড়াতে দেখে
বেরোই চল ঘুরে আসি
দুরের হই হুল্লোড় না হোক ফুচকার স্টলে
আসিস আবার মিস্টি মুখে
দেরিতে যাস ফেরার তরী। 
                                               

সুধাশ্রী মণ্ডল






 শেষ কবিতা তোমার নামে
 **********************
           

ভাবছি তোমার নামে
শেষ কবিতাটা এবার লিখেই ফেলবো
খুব আদরে, যত্নে লিখব
এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি
এরপর, হয়তো ভালোবাসার কথা লিখবনা
তারচেয়ে বরং আগুন লিখব --
পাহাড়ী নদী , ঝর্ণা ,ফুল -পাতা
কিংবা রাত জাগা পাখিদের গান
তোমার প্রিয় নীল রঙা মেঘ
ঝরা পালকের গল্প কথা লিখব না আর ...
অনাসৃষ্টি নিয়ে লিখতে পারি ;
অমাবস্যার অন্ধকারে দুঃস্বপ্ন বোনা ঝলসানো রাত !
মনে হয় ,যেন দু দণ্ড তোমার পাশে বসি
বেশতো না হয় বসতে না দিলে
একটা পদ্য লিখলে কেমন হবে ?
এভাবে ফেরালে ! এভাবেই ফিরিয়ে দিলে !
আমার হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ বীথিকা তলে
সিঁদুরে মেঘ কৃষ্ণচূড়ায় 
এক নিমিষে উড়িয়ে দিলে ধুলোর ঝড়ে !
আগুন বুকে গোঙানির শব্দ 
ভারসাম্য হীন উথালপাতাল
গুমরে মরা সাত জন্মের হাহাকার
প্রেম বিশ্বাস অহঙ্কার , বিষাদ ঝড়ের আস্ফালন ....
সব ভাসিয়ে দেব জোয়ারে ; চিরতরে দেব বিসর্জন
এ হৃদি অলকানন্দা জলে ;
এলোমেলো কল্পনায় আর তোমায়
ইচ্ছে মতো রাঙাব না প্রিয় !
স্মৃতির দিগন্ত রেখায় স্মরণের বালুচরে   
মৃত স্বপ্নের ছায়াপথে জাগব না আর
নিদহারা মুগ্ধতার মিথ্যা এ বাসর রাত !
শেষ বিকেলে বৃষ্টি এলে মুষলধারে 
বুকের ক্ষত নিভিয়ে দিও তবে ;
শত সহস্র উত্তরহীন প্রশ্নেরা 
আজও যে জর্জরিত ;  দিশাহারা ....
ছিন্ন কবিতার পাতায় কিলবিলিয়ে মাথা কুটে মরে ,
(তবু) শেষ বারের মত বড় জানতে ইচ্ছে করে ....
রবি ঠাকুর তোমার ও তো প্রিয়
আচ্ছা ধরো ....
" কথায় কথায় দইওয়ালা অমলের কথা এলে "
" তুলবে তখন সুধার কথা " ?

অমৃতা রায় চৌধুরী




"অপরাজিতা" 
***********





  
                                (১)
সকালবেলা খবরের কাগজ হাতে নিয়ে প্রথম পাতার খবরটাগুলোতে চোখ পড়তেই নিজের মনেই শিউরে উঠল আকাশ। গোটা পাতা জুড়ে খুন-জখম-ধর্ষণের খবর।খবরগুলো পড়তে পড়তে আকাশের মনের মধ্যে এক অবাধ্য অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তার ধীরে ধীরে ছয় বছর আগের এক মুহূর্তের কথা মনে পড়ে যায়। 

"কি গো,তোমার পেপার পড়া হল? "....

হঠাৎ ভেসে আসা গলার আওয়াজে আকাশের চিন্তার সূত্রটা ছিন্ন হয়ে গেল। 

" এখনো এখানে বসে আছ? কফিটাও শেষ করনি?কত বেলা হয়ে গেল ! আজ মেয়েটার জন্মদিন। নাও ওঠো...অনেক আয়োজন বাকি। "

আকাশ এবার মুখ তুলে প্রথমাকে দেখল। ওর ব্যস্ততা,কথা,সারা ঘর জুড়ে ওর ছোটাছুটি দেখে মনে হল কে বলবে এই প্রথমাই বিয়ে-সংসার-সন্তান মানুষের চিন্তায় দুশ্চিন্তিত হয়ে পড়ত। কিন্তু জীবনেঅপরাজিতা আসার পর সত্যিই তার পরশপাথরের ছোঁয়ায় সে নিজেও হয়ে উঠেছে আর একজন অপরাজিতা। 
                                 
                                (২)
প্রথমা আকাশকে লিস্ট ধরে কাজ বুঝিয়ে বাজারে পাঠাল। আজ সে খুব ব্যস্ত। মেয়েটা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। গুটিসুটি মেরে ওর পছন্দের টেডি বিয়ারটা জড়িয়ে শুয়ে আছে। ওকে দেখে প্রথমার মন খুশীতে ভরে উঠলো। ও আছে বলেই আজ প্রথমার সংসারটা টিকে আছে ;নাহলে আকাশের পরিবার তো তাকে প্রায়..... এই যুদ্ধে আকাশ ছাড়া কেউ তো তার পাশে থাকেনি। আজও সেই দিনটির কথা ভাবলে...... 

"মামমাম"....

কচি গলার আদুরে ডাক শুনে প্রথমা
পিছন ফিরে দেখল তার আদরের সোনামণি ছোটো ছোটো হাত দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে এসে দাঁড়িয়েছে।সে ঘুরতেই তার ছোটো ছোটো হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল আর প্রথমা তাকে কোলে তুলে গালে আদর করে বলল--"হ্যাপি বার্থডে, সোনা।"  

                                     (৩)
বাজার থেকে ফেরার পথে আকাশ একবার ফের দেখে নিল সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। সংসারের সব বিষয়ে প্রথমা খুব খুঁতখুঁতে আর মেয়ের ব্যাপারে তো অতি সাবধানী। অথচ বিয়ের পরপর তার ইচ্ছা- অনিচ্ছা ,ভাললাগা -মন্দলাগা---সব আকাশের একান্নবর্তী পরিবারের কঠোর নিয়মের বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছিল। সেই প্রথমাই যেদিন সবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ঐরকম সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেদিন আকাশের পৌরুষও প্রথমাকে বাহবা না দিয়ে পারেনি। সবার মত অগ্রাহ্য করে এককথায় সে তাদের আলাদা সংসার পেতেছিল। 

                                   (৪ )
প্রথমা অপরাজিতাকে আজ খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।আকাশ ওর মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মনে মনে বলে, "তোকে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। অতীতের পুনরাবৃত্তি আমি আর হতে দেব না। শুধু সেই দিনটায় যদি আমরা বাইরে বের না হতাম...." ; ভাবতে ভাবতে তার অজান্তেই এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। এই অপরাধবোধের পাথর নিয়ে সে আজ দীর্ঘ ছয় বছর কাটিয়ে দিল।

                                 (৫) 
ছয় বছর আগের কথা। দুর্গাপূজার অষ্টমীর আলো ঝলমলে সন্ধ্যা। বাড়ির সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে বের হলো। যদিও প্রথমা জ্বর গায়ে প্রথমে বের হতে চায়নি। সবাই জোর করায় অল্প সময়ের জন্য সে বের হতে রাজি হয়। বাড়িতে থেকে যায় আকাশের ছোটো ভাই, আদিত্য। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য সে শত অনুরোধেও সবার সাথে বের হয় না। রাস্তায় প্রথমার শরীর বেশী খারাপ লাগায় তারা দুজনে বাড়ি ফিরে আসে। এসে দেখে গোটা বাড়ি জুড়ে চলছে এক নারকীয় উল্লাস। আদিত্য ও তার এক বন্ধু অসুরের মতো এক অসহায় প্রায় অচৈতন্য মেয়ের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। সেই মেয়েটির আর্তনাদ নিশ্চয় পূজামন্ডপের  মাইকের আওয়াজে চাপা পড়ে গেছে। ঘরে ঢুকে ঐ দৃশ্য দেখে প্রথমার মাথা ঘুরে ওঠে। আদিত্য ও তার বন্ধু এই সুযোগে হতচকিত আকাশকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়।ঘরের মেঝে তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। 
                                   (৬)
"বসে আছ কেন? কিছু কর... ও যে মরে যাবে...  "--প্রথমার সুতীব্র চিৎকারে আকাশ সম্বিত ফিরে পায়। দুজনেই মেয়েটিকে নিয়ে ছুটে যায় প্রথমে হাসপাতালে ও পরে খবর দেয় পুলিশে।এই সময় গোটা পরিবার ওদের বিপক্ষে চলে গেলেও প্রথমার অনড় জেদের কাছে সবাই হার মানে। ধীরে ধীরে মেয়েটা প্রাণে বাঁচলেও মানসিক স্থিরতা হারিয়ে ফেলে।ওর ঠাঁই হয় সরকারী হোমে। এরপর একদিন সবাই মেয়েটির কথা ভুলে যায়, ভোলে না কেবল একজন -- প্রথমা। এইভাবে দেখতে দেখতে বেশ কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর সেই হতভাগীনির কোল জুড়ে আসে সন্তান, কিন্তু তাকে দেখার সুযোগ তার হয় না।সব অপমান, সকল বঞ্চনাকে সঙ্গী করে সে মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে। 

বাচ্চাটির কি হবে? এই প্রশ্ন উঠতেই প্রথমা জানায়, "সে বড় হবে তার বাবা-মায়ের কাছে। সে হবে তাদের হৃদমাঝারের স্বর্ণকমল। সেই হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের অপরাজিতা।"

আজ পাঁচ বছর বাদে ওর হাসিমুখ , সহজেই সবাইকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা , ওর নিষ্পাপ সারল্য দেখে আকাশের বারবার মনে হয়, সমাজের সব ক্লেদাক্ততাকে সরিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বড় হয়ে ওঠা তাদের কন্যা তো সত্যিই 'অপরাজিতা''।সে শুধু জীবনযুদ্ধে জয়ী কোনো ভবিষ্যত মানবীই  নয়, সমাজের বুকে বেড়ে ওঠা  আরো অনেক  অপরাজিতার মনোবল।।