নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো - ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। একুশ ।।




          একদিন এক কবিসম্মেলন থেকে রাতের ট্রেনে ফেরার সময় মনে হল, কতদিন বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা হয় নি। কথাও হয় নি কতদিন। এরকম মাঝে মাঝেই মনে হয়। এমন নয়, কবিতা লেখার একটা ঘোরার মধ্যে আছি তাই এমন একটা ইচ্ছা জেগে উঠেছে। এই মনে হওয়াটা ভীষণই স্বাভাবিক। নিজের মধ্যেই কেমন যেন একটা তালগোল পাকিয়ে যায়। কিছুতেই সেই জট ছাড়াতে পারি না। ভেতরে ভেতরে এত অস্থির হয়ে উঠি যে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারি না। জন্মগ্রামে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা দূরে থাকি। মনে হয় এক্ষুণি দূরত্বটা পেরিয়ে যাই।
          যে কথা মাকে বলা যায় তা তো আর কাউকে বলা যায় না। হয়ত বলা যায় কিন্তু শুনবে কে মায়ের মতো অত ধৈর্য্য ধরে ? কার অত সময় আছে ? তাই বলতেও পারি না। বুকের মধ্যে জমা হয়ে থাকে কত কথা। হঠাৎ যেদিন সন্ধেবেলা বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় সেদিন বই পড়তে, কবিতা লিখতে কিছুই ইচ্ছা করে না। চোখের সামনে ভাসে,  মা রান্না দুয়ারে বসে ভাত রান্না করে। ভাত ফোটার আওয়াজ শুনতে পাই। খিদে বাড়তে থাকে। রান্না দুয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকি। লম্ফর আলোয় মায়ের মুখের ঘাম চকচক করে। একসময় মা ভাত খেতে ডাকে। গরম ভাতের গন্ধ আর মায়ের মুখের হাসি। আমি ভাত খাই আর মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কত বছর কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি। তাই মাঝেমাঝেই মাথাটা খুব ভারি হয়ে যায়, কিছুতেই তুলতে পারি না।



।। বাইশ ।।


          রথ এলেই মেজ জেঠিমার কথা খুব মনে পড়ে। আমাকে রথ দেখতে দিত পঞ্চাশ পয়সা। আর ছোটো ঠাকুমা দিত পঞ্চাশ পয়সা। তবে মেজ জেঠিমাই এই নিয়ম প্রথম চালু করে। আমার একটা মন আছে আর সেই মনও আনন্দ চায়। তাই কোনো মেলা উপলক্ষে আমার মতো একটা ছেলেকে পয়সা দেওয়া যেতেই পারে। এই এক টাকা নিয়ে আমি সেদিন রথের রাজা। আজ বড় হয়ে গিয়ে কত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পয়সা দিতে হয় কোনো মেলা উপলক্ষে। খুব আনন্দ পাই এসব দেওয়াতে। তবুও আজ খুব পেতে ইচ্ছা করে। আমি চাই কেউ মেলা উপলক্ষে আমাকেও পয়সা দিক। তবে এসব কথা তো কাউকে ভুলেও বলা যাবে না। কারণ খুব সহজেই সে আমাকে পাগল বলে চিহ্নিত করবে। মনে পড়ে, তখন মহাশ্বেতা দেবীর "বর্তিকা" পত্রিকাটি দেখাশোনা করি। বিকেল হয়ে গেছে। কাজ শেষ করে বাড়ি আসব এমন সময় দিদি আমাকে ঘরে ডেকে দশটা টাকার একটা নোট হাতে দিলেন বইমেলায় যাবার জন্য। আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম সেদিন।  সত্যিই আজ আমার জীবনে পয়সা দেবার মতো কোনো মানুষ নেই।




কোন মন্তব্য নেই: