নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অপরাজিতা(প্রথম পর্ব) : দেবব্রত সেন






কতই বা বয়স বাপ মরা মেয়েটার, সবে স্কুল ছেড়ে কলেজে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে আবার গোলাপের হাবুডুবু, রঙ্গিলা বাতাসের গুন গুন সূর। ভালোবাসার পরশপাথর ছুঁয়েছে, হৃদয়পূর্ণ কোকিল কোকিলা মন। মধু চন্দ্রিমার রাতে শশীবাবু যেমন একলা বসে থাকা রুপসীর ঘরে জানলা দিয়ে উকি মারে কিংবা কোনো এক দুপুরে ছায়া ঘেঁষা শ্রাবণী মেঘের বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধে শালিক জোড়াযুগলের অপরুপ রোমান্টিক দৃশ্যের মতো।  তার পর আর কি! বিয়ে -সংসার জীবন। মেয়ে মানুষের নাকি স্বামী ব্রত প্রধান ধর্ম।


১//সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে

সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে, ঘরটা শূন্য মানবহীন! শোনার কেউ নেই একলা বসে শুনছে ঘরটা। থাকলেও থাকতে পারে, তবে হয়তো যে যার কাজে ব্যাস্ত আছে ক্ষন, তাই বোধ হয় এরকম হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর, দশ সাড়ে দশটা নাগাদ হবে, একজন যুবকের বাইক এসে দাঁড়াল পূজাদের বাড়ির সামনে। এসেই দেখল কলিংবেল আছে! সে কলিংবেল টিপল। সঙ্গে সঙ্গে পূজার মা পূজাকে বলল, এই পূজা, পূজা কই গেলি মা! দ্যাখ না কে এল। পুজা তখন স্নান করছে, সে কলেজে যাবে! পূজা স্নান ঘর থেকে বলল, মা আমি স্নানে। তুমি যাও। আমি পারব না মা।
ঠিক এই সময়ে আবার কে এল বাবা আর পারছি না, ঠাকুর ঘর ফেলে আসতে হচ্ছে এই বলতে বলতে পূজার মা বাড়ির উঠান পেরিয়ে সদর দরজার কাছে এল এবং দরজা খুলে দেখল  বছর পচিঁশ ছাব্বিশের একজন যুবক, কাধে একটা ব্যাগ ঝোলানো, চোখে চশমা, গায়ের রং ফরসা আর লম্বা। সে দাড়িয়ে আছে কখন দরজা খুলবে তার অপেক্ষায়।

দরজা খোলার সাথে পুজার মা একটু হতভম্ব হল কারন এই ছেলেটা হঠাৎ করে, তাছাড়া ওনার ছেলের বন্ধু বান্ধব হলে না হয় হত কিন্তু ছেলের বয়স চৌদ্দ পনের হবে,  আর এই ছেলেটা এসে দাড়িয়ে আছে সে তো বয়সে অনেক বড়! পূজার মা গড় হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারল না, সে শুধু অবাক দৃষ্টিতে ভাবতেই লাগল। আত্মীয় স্বজন হলেও হতো কিন্তু সেই ছেলেটা অচেনা, কি আর বলবে?
এরম করতে করতে পূজার মা আমতো আমতো করে ছেলেটাকে বলল, আপনি কে বাপু? আপনাকে তো এর আগে দেখিনি?
------আপনি পুজার মা তো?
---- আজ্ঞে হুম, বলুন।
-----নমস্কার নেবেন মাসিমা, আমি শচীন বর্মন, বাড়ি শিলিগুড়ি শিব মন্দির এলাকায়।
-----সে কি মাসিমা পুজা আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেনি?

পুজার মা একটু ঘাবরে গেলেন আর ভাবলেন বাইরের একটা অচেনা ছেলে আমাকে কিসব বলছে, বিষয়টা ভালো ঠেকছে না।
হুম মনে পড়েছে, কলেজে প্রথম প্রথম যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুজা একটি ছেলের কথা বলেছিল কিন্তু সে তো সাংবাদিকতার চাকরি করত! আলাপ হয়েছে পূজার কলেজে, কিন্তু সে আবার প্রেম করছে না তো?  আমাদের মতো গরিবের কপালে প্রেমট্রেম হজম হয় না বাবা, সে না হলেই ভালো হয়। এই ভাবে ভাবতে বলল, ও হ্যাঁ মনে পরেছে। আপনিই তাহলে সেই শচীন? আমি ভাবছি কোন, কোন শচীন! এসো বাড়ির ভেতর এসো।

শচীন পূজাদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেই দাড়িয়ে পড়ল, কারনটা কি! পুজা তাকে বলেছিল ওদের বাড়ির উঠানের উত্তর দিকে একটা নারকেল গাছ আর সেখানে বৈশাখ - জ্যৈষ্ঠে বাবুই পাখির দল বাসা বানিয়েছে, দেখতে লাগছে খুবই সুন্দর যেন সবুজ সবুজ কলসী ঝুলছে। অন্য দিকে উঠানে প্রবেশ করার মুহূর্তে একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ, গাছে লালে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে দেখলে চোখ জুড়োয়। আর পায়রা গুলো বাকুম বাকুম করে ডাকছে,  এ টিনের চাল থেকে ও চাল উড়ে যাচ্ছে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য। পুজার মা বলল, কি দেখছো বাবা? বারান্দায় চেয়ার টেনে বসো যাও।

হয়তো টিনের চালের বাড়ি,দোচালা চৌয়ারি ঘর দুটো ইংরেজি এল এর মতো গঠন। যদিও ঘর গুলো অনেক পুরোনো, তবুও মোটামুটি ভালোই আছে।  আর ডিতটা সিমেন্টে পাকা করা, বাড়িটা শতকরা অঙ্কের হিসেব করলে পাঁচ পৌনেপাঁচ কাঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। শহর লাগোয়া তিস্তা পাড়ের গ্রাম। বর্তমান বাড়িটার চেহারা গরীব গরীব বোঝালেও গাছগুলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা এরকম যে যেকোনো লোক বাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবে। আর গ্রামের বাড়ি গুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাই সাধারণত হয়ে থাকে।

পূজার মা শচীনকে বারান্দায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো বাবা, বসো। যা গরম পরেছে সহ্য করা যায় না বাবা। একটা টেবিল ফ্যান বের করে শচীনের কাছাকাছি রেখে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বলল, তুমি বাবা এখানে বিশ্রাম নাও আমি বরং ঠাকুর ঘরে ফুলজল দে আসি কেমন!
-----ঠিক আছে মাসিমা। যাই বলুন মাসিমা প্রচন্ড রোদ্দুর পড়েছে, এই সময়টা বাইরে বেরোনোটা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।

পুজার মা ঠাকুর ঘরে গেল, আকাশটা তখন চুপচাপ, শুধু গরম আর গরম!  এই সময় একটা হালকা বাতাস এল, মে জুন মাসে যেরকম লু নামের গরম বাতাস বয় ঠিক সেরকম ভাবে শীতল বাতাস এল, আকাশটা যে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলি হাওয়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল, দুচারটে পায়রা ডানা ঝাপটে আঙিনা থেকে টিনের চালে গিয়ে বসল, দুজোড়া পাশাপাশি!চোখ বিনিময় করছে এরকমটা বোঝাচ্ছে,   মনে হয় যেন তারাও যুগল প্রেম করছে। আর শচীন একা একা সেটা ভোগ করল, সে ভাবছে ইস যদি আমার জীবনে কখনও এমন সময় আসে খুব রোমান্স হবে।শচীনের ইচ্ছে হল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে চেয়ারটা নিয়ে বসি কিন্তু হল না, ততক্ষণে পূজার মা ঠাকুর ঘর থেকে বারান্দায় এল, শচীন একা বসে আছে।
বলল,  তো এখানে কোথায় এসছো ? আমি মাসিমা
----হুম।
......জানতেই পাচ্ছেন আমি সাংবাদিকতার মানুষ, খবর সংগ্রহে এখানে ওখানে যেতে হয়। জানো মাসিমা,  আপনাদের পাশে জমিদারপাড়ায় একটা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তারই কিছু তথ্য সংগ্রহে এসেছি। তাড়াতাড়ি হয়েগেল তাই ভাবলাম একটু পূজার সঙ্গে দেখা করেই যাই।
-----না না  বাবা বেশ ভালো করেছো। পুজার মুখে তোমার সাংবাদিকতার কথা শুনেছি বাবা, তবে ......
এই বলে চুপ করল।
-----তবে কি মাসিমা? বলেন সংকোচন করবেন না।

আসলে কি, পূজা আর শচীনের মধ্যে যে প্রেম ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সেটা পূজার মা ভালো করেই আন্দাজ করেছিল, তাই বোধহয় তবে করেই থেমে গেল। আর মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়, এটা ছেলেখেলা নয়। আর যদি ভালোভাবে তাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তাহলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে,পূজার বাপটা বেচে থাকলে হয়তো তাকে এসব বিষয়ে মাথা ঘামতে হত না।  সত্যিই তো প্রেম ভালোবাসা এরকম জিনিস সেটা উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না অন্তরের ভিতর প্রবেশ করে বুজে নিতে হয়। এটাই ভাবছে সে।আর এটাও ঠিক মেয়ে ও ওই ছেলেদের তো মন বলে কিছু আছে, সব থেকে বড় কথা কারও মন ভাঙা হচ্ছে মন্দির ও মসজিদ ভাঙার সমান সমান।



(চলবে ...)

কোন মন্তব্য নেই: