নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আত্মহনন :বিশ্বজিৎ সরকার

শরীরের ভিতর জ্বলছে শহর
তোমার চুল এসে তবু আজও মুখ ঢাকে,
ভালো থাকার নামে পুড়ে যাই
লুকানোর মিথ্যে আচেঁ।

গ্রামের পথ ভুলে গেছি
প্রেমিক হবার শখে,
ভালোবাসি তবু আমি
অন্ধগলির শোঁকে।

সৌরভ :দোলন দাস মন্ডল



সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছ তুমি,
প্রতিটা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে সে তোমার
নীল শার্ট, নীল জিন্স, চশমার ফ্রেম.....
চলার পথেই তোমার হাত ঠিক করে নিলো চুল। 
তুমি ছোট থেকে বড় হতে হতে মিশে গেলে ভীড়ে,
খুব সামনে ছবি হয়ে ফুটে উঠলে তারপর
হাতের ইশারায় তাকে ডেকে নিলে কাছে।
পাশাপাশি হাঁটছে এখন দুটো মানুষ,
পা মেলাচ্ছে পায়ে ।
এ ছন্দ যেন ভুল হবার নয়!
দু'জোড়া আড়চোখের দৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে গাল-কপাল-চুল পরস্পরের
এখন তার সামনাসামনি বসে তুমি... কথা ঝরে পরছে টুপটাপ
তোমার হাত আবার ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার চুল অভ্যাসবশত।
আবার বদলে যাচ্ছে স্থান, সামনে থেকে পাশে....
পথের দোলানিতে হাঁটু ছুঁয়ে যাচ্ছে হাঁটু,
হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে হাত। 
চোখে চোখও যাচ্ছে ছুঁয়ে.....
ভিতরে ভিতরে অনুসন্ধিৎসু আরও দু'জোড়া চোখ...
ঠোঁটের পাতারা গল্প বুনছে।
গভীর পুলকে হেসে উঠছে সময়।
ধারাপাতের হিসাব থেকে দুটো মানুষ সংখ্যা তুলে নিচ্ছে ইচ্ছে মতো।
তারপর নিজেদের মন মতো লিখছে নামতা।

খুব কাছ থেকে আমি ওদের দেখছি...
এ শহর ওদের চেনে না,
তারপরও ওদের গা থেকে খুব সন্তর্পণে মেখে নিচ্ছে সৌরভ
রেলস্টেশন থেকে পথ, পথ থেকে শপিং মল, শপিংমল থেকে ফুটপাত....।

এর বহুদিন পর,
অনেকগুলো শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে
একলা জোড়া পা...আজও
শহরটার শরীর জুড়ে গন্ধটা খোঁজে,
মিলিয়ে যাওয়া ধূলোছাপে পা মিলিয়ে হাঁটতে যায়...
ফুটপাতের ঘাড়ে নাক গুঁড়ে গন্ধটা নিতে চায় প্রাণপণ...।

কিছু গন্ধেরাও আসলে নদীর মতো.....
যার উৎস থেকে মোহনা...মোহনা থেকে উৎস..
শেষ হয়, তবু শেষ হয় না।





স্ত্রী :শুভ্রা দে



আমি নারী তাই তো পুরুষ তোমার পুরুষ বলে  এত গর্ব।
আমি নিচু করি মাথা তাইত পুরুষ তুমি পারো মাথা উঁচু  করে চলতে।
আমি কাঁদি তাইত তুমি পুরুষ পারো অট্টহাসি হাসতে।
আমি রাখি গুছিয়ে তোমার সংসার  তাইত পুরুষ  তুমি সুখি।
আমি দিই তোমায় সন্মান তাইত তুমি পুরুষ পারো নারী কে করতে অসন্মান।
আমি নারী।
পারি আমিও হতে পুরুষ কিন্তু হইনা
থাকি স্ত্রী হয়ে তবেই তো  বাঁচো তুমি পুরুষ।
নারী সমর্পণ করে নিজেকে তবেই আজ তুমি পুরুষ।
অবহেলা,অনাদর, অপমান নিজের অস্তিত্ব ত্যাগ করি, যাতে তুমি থাকো  অহংকারি হয়ে।
বেঁচে আছি পরাধীন হয় তবেই তো তুমি পুরুষ স্বাধীন।
বেকার নই আমি!  আমি নারী আমি ই শক্তি।
পুরুষ তুমি কি প্রমাণ করতে চাও। নারী আমি!  আমার জন্যই তোমার অস্তিত্ব।
নারী আমি আমার জন্যই পুরুষ তুমি।
 আমাতেই জন্ম তোমার।
আমি নারী!  নারী আমি।
আমি গর্বিত আমি নারী।
আমি পুরুষ নই।

উপলব্ধি শিবির: অঞ্জনা দে ভৌমিক



জীবনের করিডোরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছে
উপলব্ধি শিবির!
হৃদয়ের আকাশে আবেগের প্রহরী সাক্ষ্য দেবে মরনে।
চোখে, পাপ পূণ্যের সঞ্চয়ের স্তুপ!
বেহাল জীবনের কিছু জিজ্ঞাসা?
দৃষ্টিতে,  ধ্বংস স্তুপ!
পিপাসা প্রশ্বাস ছুঁয়ে, ক্লান্ত হৃৎপিন্ড দিশাহারা;
দিঘির জলে ভিড় করে আসে সন্ধ্যার তারারা
রাত্রি এসে শেখায় কানামাছি খেলা।

চাঁদের ছবি যখন নদীর জলে
মিষ্টি ছোঁয়া  তৃষ্ণা মেটায় শীতল বুকে ;
আগুন নিয়ে যত খেলা,  কাঁদায় বিশ্ব নগরীকে
হিসাব নিকাশ  জীবন খাতায় তারই অংক করে।
কেউ বা কাঁদে সারারাত জেগে
কেউ বা হাসে তৃপ্তির অহংকারে!
জীবনযুদ্ধে স্যালুট করে অস্তমিত সূর্যে,
পূর্ণতার সন্ধানে।


লাল অক্টোপাস :অনিন্দ্য পাল


একটা লাল অক্টোপাস
হিমাঙ্কের নিচে থাকা একতাল হতাশা
আর চালচিত্রে ভণিতা সার্কাস
এসব আমাকে আর ঘুমাতে দেয় না
এসব নষ্টনাটক ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে
আমার ধৈর্য্য
এমনকি আমার পৌরুষযাপন ও যেন
চাল ধোওয়া জল
সমস্ত ইহলোক ডুবে যাচ্ছে আমার পায়ের তলায়
এক সর্বংসহা যোনি সেখানে শুয়ে আছে
নির্বিকল্প মা হয়ে।

একের পর এক চামড়ার মুখোশ খুলে পড়ছে
এমনকি লাল থেকে বিবর্ণ অক্টোপাসের দেহ
ছিঁড়ে ফেলছে ভাবলেশহীন, ফ্যাকাসে পাঁজর
আশ্চর্য একফোঁটা রক্ত পড়েনি আজও !
অথচ এইতো সেদিন চুক্তিবদ্ধ হল সমস্ত শুষে
নেবার পরও অন্তত পৃথিবীকে ভেজাবে একবার
প্রথম বাসর সঙ্গমের মত।

চুক্তিবদ্ধ সব লাল নীল সবুজ গেরুয়া অক্টোপাসের দল একে একে চলেছে ,আমার বিছানার পাশদিয়ে
খুলে রাখা অন্তর-বাসের দিকে ...

টিপ পড়া বৃহন্নলা : পায়েল মিত্র


রিষড়া মিলনমেলা প্রাঙ্গনে প্রতিবার খুব বড় করে দূর্গা পুজো হয়।চার বছরের ছোট্ট মিমানি সকাল থেকে বায়না ধরেছে আজ সে বাপির সাথে রিষড়া পুজো দেখতে যাবে।মা হারা মিমানির অদম্য জেদের উপর না করতে পারলেন না রাহুল বাবু।

একটু বিকেল থাকতেই রিষড়ার উদ্দেশ্য রওনা হলো ছোট্ট মিমানি আর রাহুল বাবু।পুজো মণ্ডপে পৌঁছে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা নেমে এলো।পুজো উপলক্ষ্যে চারিদিকে আলোর ঝলক বাড়ছে,বিভিন্ন ধরনের জিনিস,ভিন্ন ভিন্ন লোকজন মন্ডপের মাঠজুড়ে।চোখজোড়া পুজো অনুষ্ঠান রেখে মিমানির চোখ দুটো দেখছে মায়ের আদর।যেখানে যেখানে মায়েরা তার সন্তানকে আগলে ধরছে ভিড়ের ভয়ে।ছোট্ট  মিমানির চোখ দুটো আটকে যাচ্ছে অলৌকিকভাবে।
কী বোঝে চার বছরের ওই মেয়ে?কিছুই বোঝে না,তবে ও জানে ওর মা তারার দেশে চলে গেছে।যেখান থেকে কেউ আর ফিরতে পারে না।
সারাবিকেল বাবার হাত ধরে অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে মিমানি।
অবুঝ চোখে জল নেই আছে একরাশ না জানি কেমন হতাশা।
উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে রাত্রি হয়ে এলো। মন্ডপে ভিড় বাড়ছে,এমন সময় ছোট্ট মিমানি দেখলো মা দূর্গার মূর্তির আড়ালে দাঁড়িয়ে কে যেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রতিমার দিকে।মিমানি কোনমতে ওর বাবার হাতটা ছাড়িয়ে ছুটলো মণ্ডপের ওদিকে।শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরতেই ঘুরে তাকালো সে।মিমানিকে কোলে তুলে নিয়ে কর্কশ গলায় বললেন,-"কেরে তুই?"এত ভিড়ে একা কেন ঘুরছিস বাছা?"মা,বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিস নাকি?
একটা মোটা গলার স্বর কেমন যেন অদ্ভুত।মিনিট দশেক পর তার ভাবভঙ্গি দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো মিমানি।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ছোট্ট মিমানি বললো,-"মা"
আরে আমাকে মা বলছে পাগলি মেয়ে,ততক্ষনে হিজড়া হিজড়া বলে কিছু লোকজন ছুটে এলো মণ্ডপের কাছে।
এত সুন্দর নাক মুখের নকশা,বোঝার উপায় নেই যে সে একজন বৃহন্নলা।মিমানি কোল থেকে নেমে মা দূর্গার পাশে রাখা থালা থেকে একটা লাল টিপ এনে পড়িয়ে দিয়ে বললো,-"একোন তোমায় পুলো মা লাগছে।"
বৃহন্নলা ছলছলে চোখে ছোট্ট মিমানিকে আশির্বাদে ভরিয়ে দিয়ে বললো,-"তোর মতো অবুঝ নিষ্পাপ একটা মন যদি সবার থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের স্থান নির্দিষ্ট হিজড়া গোষ্ঠীতে নয় এই সমাজে হতো রে মা।কিন্তু আফসোস আমাদের কোনদিন মায়ের মতো লাগতেই পারে না,প্রতিপলে এটাই আমরা শিখি।খুব বড় হ্।মানুষের মতো মানুষ তৈরি হ্।

মিমানির বাবা রাহুল বাবু মিমানিকে খুঁজে পেয়ে ওকে কোলে তুলে,ওর দুগালে স্নেহ চুম্বন এঁকে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
চার বছরের অবুঝ মিমানি হাসতে হাসতে বললো,-"বাপি,বাপি আমিও টিপ পোব্বো।তাওলে আম্মিও মা হয়ে যাবো।
চাঁদের আলো মেখে হাসছে এক তারা।শিশুরা তো এমনই হয়।