নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সুষ্মিতা কর

   


ব্যর্থ প্রেমিকা
**************



নজর রাখি রোজই যখনই আসো তুমি
জানালার সামনে বসানো গ্যালিলিওর দূরবীনে,
চাইতাম তোমার জগৎকে প্রদক্ষিণ করতে
কোপারনিকাসের সূত্রে চাঁদ রূপে।
অনভিজ্ঞ হাতে সাদা কাগজের উপর
মন্থর গতিতে চলত ফাউনটেইন কলমের আঁচড়-
অসমাপ্তই থেকে যেত প্রতিটি চিঠি
আর, মনে চলত অবিরাম ঘূর্ণিঝড়।
সময়ের সমুদ্রে জাহাজ ফেললাম কম্পাস হাতে
যোগ্যতার দেশ আবিষ্কারের তাড়নায়;
সামাজিক দুর্যোগ, পরনিন্দার বৃষ্টি,
চর্চার স্রোতে ভেসে জাহাজ এগোয়।
সাফল্যের স্পর্শ পেয়েছি জানাতে
ছুটে যাই প্রাপ্তির থলি নিয়ে;
বসে আছো, পাশে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী
নতুন আবিষ্কার তুমি ছাদনাতলায়!
নই শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস'; ব্যর্থ প্রেমিকা আমি-
নই কোনো উপন্যাসের নায়িকা,
সহ্য করতেই হল কষ্টটা
হতে পারিনি যে রবীঠাকুরের 'বলাকা'!
ফেলে দিলাম ডাস্টবিনে অবাঞ্ছিত চিঠিগুলি
অনুভব করলাম অন্য বাতাস জানালা খুলতেই
মুছে যাচ্ছে সব গুমোট গন্ধ, বদ্ধতা,
পাচ্ছি এক স্নিগ্ধতা নিঃশ্বাস নিতেই।

প্রশান্ত সেন






জতুগৃহে

*******



ঝলসে গেছে কলজেটা তোর
রাজনীতি-বোম বিস্ফোরণে
খবর তো নয়, খাবার তো সব
মশলা একটু দিস্ ফোড়নে।

আমরা-ওরা দামড়া বুড়ো,
চাল চেলে  যায় দাবার ঘুঁটি
আকাশপানে নিথর চেয়ে
বছর সাতের ও-চোখ দুটি...


ছুঁড়ছি কাদা এর মুখে ও
মাতছি সবাই তরজা গানেই
ঘুম ভাঙলে দেখব যেদিন
সাবধানতার দরজাটা নেই


সেদিনও কি খুলবে রে চোখ?
বিবেক সেদিন জাগবে কি হে?
আমরা কিন্তু করছি যাপন
জীবনটা এই জতুগৃহে।

কিশলয় গুপ্ত



সহজিয়া
*********



ভাঙনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে নদীর শীৎকার শুনি
রোজনামচার  ভুল বানানগুলো সংশোধন হেতু
আরও একবার ব্যাকরণে চোখ রাখি স্বেচ্ছায়
তখন হাজার ঢেউ পরিচয় বয়ে আনে ঠিকানায়
ছায়াহীন সংসার পেতে বসে আছি বিশ্বাসে তবু।
তারাখসার গল্পে রাত বেড়ে ওঠে মতবাদ প্রথায়
রোদ্দুর গলে গলে পড়ে গরীব,জীর্ন শীর্ন বুকে
অগোছালো ঘরে অনাদর পড়ে থাকে খাটে
নগ্ন গণিকার ছেড়ে যাওয়া ওড়নার মতো...
রুমাল ভেবে হাতে নিই- কপালের ঘাম মুছিয়ে
ভাঙনের কাছে শ্বাস বেঁধে রেখে একদিন-
সহজিয়া দিনের কাছে আহুতি দিও নিজেকে।
                       

মোনালিসা নায়েক





এ কোন স্বরাজ 
*************


ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবস পালন করলেই কি তাঁর উদ্দেশ্য স্বার্থক হবে?
জীবন বোধের আলো তো এখন ও অন্ধকারে,
বিবাদের আবাদে দেশ মেতেছে সন্ত্রাসে!
আত্মমগ্ন ভোগবিলাসী সমাজে অরাজকতার ঢেউ,
মেধাবী কৌশলে সভ্যতায় নগ্নতার প্রকাশ,
এইসব দেখে অবাক লাগে –
শহীদস্মরণ নিছক ই উদযাপন,
তাঁদের স্বপ্নে দেশবাসীর মিথ্যে পণ,
দীপ্ত প্রদীপ শিখা লালসার আগুনের আঁচ–
মহত্ব হারিয়ে টিকে আছে খাণ্ডবদাহন,
সর্বহারা মানুষের স্বাধীনতা বৈষম্যের পাতায়,
সমাজ কি দিতে পেরেছে তাদের ভালোথাকার অধিকার?
এইভাবে কি শ্রেষ্ঠ জাতির অস্তিত্ব রক্ষা হয়?

অনুপ রায়




আমি ঝগড়া করতে আসিনি
*************************



বিশ্বাস করুন আমি ঝগড়া করতে আসিনি,রক্ত ঝরাতেও আসিনি
আমি ঐ উঁচু মঞ্চে একটা টেবিল বা মাইক দাবী করতেও আসিনি।
আমি পাঞ্জাবী পরেও আসিনি, যেমন সাদা বুদ্ধিজীবীরা পড়েন,
আমার শুধু কিছু শ্রবনুনমুখ কান দরকার, আমার কিছু কথা আছে,
আজ এই মঞ্চের নীচে, মাটিতে দাঁড়িয়ে, ঘামে ভেজা মানুষগুলোকে,
আমার কিছু বলার আছে।
বিশ্বাস করুন,আমি আজ ঝগড়া করতে আসিনি।

সমবেত সকলের মতো আমারও ভাতের গন্ধ ভালো লাগে, 
টাটকা ভাতের গন্ধে মধ্যে গোলাপের মতো সুবাস থাকে পেট ভরে যায়,
অনেক গুলো না খেতে পাওয়া পেট আমায় ভাতের কবিতা লিখতে বলেছিলো,
আমি তাদের কথা বলতে এসেছি।

এই আজ গতকালের মতো নয়, বোধের রাজপ্রাসাদের দেওয়াল থেকে,
রোজ একটা একটা করে খসে পড়ছে রক্তাক্ত ইঁট;
তাঁরা গতকাল আমায় জানিয়েছে আমি যেন কবিতায় তাদের কথা বলি,
আমি যেনো সমবেত সকল সর্বংসহা মানুষের কানে তাদের কথা তুলে দিতে পারি;
আমি তাদের কথায় বলতে এসেছি।

আমিও সমবেত সকলের মতো শিউলি ভালোবাসি,
আমিও সমবেত সকলের মতো শরতের আকাশ ভালবাসি;
সেই শিশির মাখা সদ্য ফোঁটা শিউলি আমায় বলেছিলো,
আমার কবিতায় সেই সব ঝরে যাওয়া শৈশবের কথা বলতে,
যারা খিদের তাড়নায় অশিক্ষার ছায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিনই।
আমি তাদের কথা বলতে এসেছি।

সমবেত সকলের মতো আমার রজনীগন্ধা খুব প্রিয়
যেমন রাতের কোলে নিঃস্বতা  ভয়হীন ঘুম যদিও 
স্বপ্নগুলো অতৃপ্তির পক্ষপাত দুষ্ট,
গতকাল রাতে সামান্য ভালো থাকার হাতছানিতে হারিয়ে যাওয়া,
আমার আপনার পাশের বাড়ির মেয়েটা চোরাবালির বাঁকে ডুবতে,
ডুবতে আকুল আর্তিতে তাদের মতো আরো  অনেকের কথা বলতে বলেছিলো,
আমি তাদের কথাই বলতে এসেছি।

আজ এই শারদীয় সকালে, আমি এসেছি গোলাপের কথা রাখতে,
আমি এসেছি পলাশের কথা রাখতে,
আমি এসেছি রজনীগন্ধার কথা রাখতে।
এই আগমনী পল্লবীত প্রকৃতি সাক্ষী,
আমি তাদের কথা রাখলাম,
বিশ্বাস করুন আজ আমি ঝগড়া করতে আসিনি।
আজ আমি রক্ত ঝরাতেও আসিনি।
#অযান্ত্রিক

সুদীপ ঘোষাল



শিশিরের শিকল
***************



যে ছেলেটি বাবা মা কে নিজের শ্রদ্ধা উজাড় করে দিয়েছিলো
সে  আলাদা করে ঈশ্বর চেনে না
আলোকিত পূর্ণিমার মত উজ্জ্বল দুটি চোখে
মা বাবাকে দেখতো
তারপর সেবাব্রত তার কাছে  আনন্দময়...

তারপর সে এক আলোর দূত হলো
ও দেবদূত হলো
অথচ দেবতা বলতে সে বোঝে মানুষ
জোছনার মত উৎসারিত আলো তার মুখমন্ডলে
মানুষ তাকে মানুষ বলছে না
দেবতার আসনে বসেও সে দেবদেবী বোঝে না
ও বোঝে মানুষ,প্রাণী,কীটপতঙ্গ আর নির্জন শিশিরের শিকল...