নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রাজকুমার বিশ্বাস




বেকার




একটা তীব্র যন্ত্রণা...
 রৌনক কে
শুঁয়োপোকার
 সজনে -পাতা ...
খাওয়ার মতো 
কুটে কুটে খাচ্ছে।

 
বছর বিয়াল্লিশের রৌনক
 বেকার। 
সে তো...
 বাজ পড়া
 মুখ থুবড়ে যাওয়া
 তাল গাছ। 

সে তো ---
বাবা-মায়ের ---
অল্পে অল্পে সঞ্চিত 
রেকারিং ডিপোজিটের
 লালবাতি জ্বলা ব্যাংক ।

বছর বিয়াল্লিশের রৌনক
আজ বেকার---
কাজ নেই ওর! 

তাইতো ,

ভাইপো টুবাইকে 
স্কুল পৌঁছে দিতে 
যেতে হয় ওকেই--
-সাত সকালে। 

সকাল সাতটা র মধ্যে -
বাজারটা সারতেই হয়
ওকে-----
বৌদি র কড়া হুকুম ।

তা না হলে 
দাদা ভাত পাবে না 
অফিসের। 

বাবার পেশারের
ঔষধ টা 
ওকেই
আনতে হয়। 

মায়ের--
বাতের ব্যথা 
ওর বুকে বাজে
তাইতো---
ওকেই ছুটতে হয়
ফার্মেসি তে ।

কাজ নেই ওর 

তাইতো
বোনের টিউশনির পথের
পাহারাদারি
ওকেই
করতে হয়। 

অপগন্ড রৌনক,
কমপিটিশন পরীক্ষা 
দিয়েছিল
অনেক কটা ।
নেহাত
মন্দ নয়;
কিন্তুু 
কোথায় যেন
সব গোলমেলে
হিসাব মেলে না। 

বছর বিয়াল্লিশ র রৌনক
আজ বেকার। 

মায়ের অভিমান মাখা বকুনি', 
বাবার ক্লান্তিকর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ;
বোনের রাগত উষ্মা,
দাদার তাচ্ছিল্য ,
আর বৌদির ঘৃনা,
ওকে 
পরিনত
করেছে
সাহারা মরুভূমিতে।

বছর বিয়াল্লিশের রৌনক
আজ বেকার।

রজত শুভ্র কর্মকার




আত্মঘাতী মথ


                           (এক)

অদ্বিতীয় ওরফে অডি কেষ্ট খুব খোশমেজাজে রয়েছেননতুন অ্যালবাম বেরিয়েছে, "আমার বোতল হলো খালি।" আর বেরোনোর সাথে সাথে যাকে বলে "সুপারহিট"! মানে অদ্বিতীয়র  এটা সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবাম হতে চলেছে। আর এই অ্যালবাম এ অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছেহয়েছে মানে পরীক্ষার চূড়ান্ত হয়েছেএমন পরীক্ষা দিলে অদ্বিতীয় স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হতেনই। সকাল থেকে এই অ্যালবাম এর সাফল্যের জন্য প্রচুর ফোন এসেছেফ্যান মেল এসেছে আর এসেছে শুভেচ্ছাবার্তা। যদিও কিছু কিছু লোক আছেযারা অদ্বীতিয়র সাফল্য দেখতে পারেননা। ওই লোকগুলো বলে অদ্বিতীয় নাকি অটোটিউনে গলা ঠিক করেনঅদ্বিতীয় নাকি লাইভ গাইলে ভুলভাল পিচে গান! আরো কত কি! ফাজলামি নাকিঅদ্বিতীয় এইসব লোকগুলোকে পাত্তা দেননা একদমমানে কে পাত্তা দেবে এদের কেএরা কেকোত্থেকে এলো সব?সেই কবেকার হারমোনিয়াম আর গিটার কপচে বেড়ানো কতগুলো বুড়ো হাবড়া লোক আর কিছু জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া ভদ্রমহিলাসব নাকি এককালে মহান সিঙ্গার ছিলেন! হুহ! মহান সিঙ্গার না ছাই! এখন অদ্বিতীয় এর সামনে পড়ে পাত্তাও পাচ্ছেনা ! তাই সব জ্বলছেজ্বলছে জ্বলুক! অদ্বিতীয় আরো জ্বালাবেন সবাইকেজ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবেন। লোকজন পাগল হয়ে যাবে। রকিং চেয়ারে বসে বসে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলেন অদ্বিতীয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একসময় নিজেকে বলতেন, "তুই পারবিতোকে পারতেই হবে। তুই বাংলা তথা ভারতের সেরা গায়ক হবি। তোকে হতেই হবে।" সেই সময় থেকে বেরিয়ে ৪টে অ্যালবাম হলো। সিগারেটটা নেভালেনবাথরুমে ঢুকলেন অদ্বিতীয়।  গোটা দিনের মিউজিক প্রমোশন এর পর একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার। ফ্রেশ হয়ে স্কচ এর বোতলটা খালি করে দেবেন একদম।


                                     (দুই)

তোয়ালেটা ছেড়ে দাঁড়ালেন অদ্বিতীয়। হ্যাআগের মতো সেই প্যাংলা মার্কা ব্যাপারটা নেইসিক্স প্যাক ভালো মতোই হয়েছে। এই চেহারা না থাকলে মিউজিক ভিডিও হিট করবে কি করেহিট হতে হবেনাহলে এই মার্কেটে কেউ পাত্তা দেবেনা। সহজ ব্যাপার। বডি স্প্রে টা লাগলেন অদ্বিতীয়। রাতের খাবার বাইরে থেকে খেয়েই এসেছেন। এখন খাওয়া দাওয়া বাইরেই হয়আগের মতো আর হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হয়না। মনে আছেকলেজে থাকতে বন্ধুদের সাথে গান বাজনা হতোএকটা কিছু করার স্বপ্ন দেখতেনএকটা গিটার সম্বল করে কত কি ভাবনা চিন্তা চলতো। গান দিয়ে দুনিয়া বদলে দেবার। মিউজিককেই কেরিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখা তখন থেকেই। আর স্বপ্ন দেখলেই তো হলোনাসেটাকে পূরণ করার মতো জেদ চাই। সেটাকে সম্বল করে পাস্ কোর্স নিয়ে পাশ করার পরে চলে আসলেন স্বপ্নের মহানগরীতে। আর বুঝে গেলেন দুনিয়াটা একটা আস্ত কুম্ভীপাক। আর শুরুর দিনগুলোতে প্রচুর ধাক্কা খেতে হয়েছিল তাঁকে। কেউ তাকে একটা সুযোগ দেয়নি। সেই থেকে অদ্বিতীয় বুঝে গেছিলেন শীর্ষে পৌঁছতে হলে তাকে যা দরকার করতে হবে। দুনিয়া যা চাইছে করতে হবে। গিটার ফেলে ওসব পুরোনো ধাঁচের মিউজিক থেকে বেরোতে হবে। ওসব দুনিয়া বদলানোর স্বপ্নটপ্ন তখনই জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। বাজারে সব পাঞ্জাবি হিপহপ শুনছেমাথামুণ্ডুবিহীন কবন্ধ সংগীতে মজে গোটা দুনিয়া। অতএব এই দিকে হাতে খড়ি দিতে হলে কন্ট্রোভার্সি চাই। ইউটিউবে প্রথম ডিস্ ট্র্যাক বেরোলো, "মিউজিক ঢোকাও পশ্চাদ্দেশে!" অদ্বীতিয়র প্রথম মাম্বলিং র‍্যাপ আর বাংলা পপ এর কম্বো। লোকে খিস্তি মেরেছিলো প্রচুর কিন্তু বিনিময়ে অদ্বিতীয় পাল্টা খিস্তি দিতে ছাড়েননি।  ইউটিউব থেকে আস্তে আস্তে জনতার কাছে পৌঁছনো শুরুজনতার মন জয় করা শুরু। আর জনতার নজরে পড়ার পর অদ্বীতিয়র নতুন ধাঁচের বাংলা র‍্যাপ-পপ মিউজিক কোম্পানিগুলো আর অগ্রাহ্য করতে পারলোনা। হুঁহুঁ বাবামার্কেট কে অগ্রাহ্য করবে কার এতো বড়ো বুকের পাটা আছেনিজের লোমবিহীন বুকের দিকে তাকিয়ে সেটাই ভাবলেন। মুচকি হাসলেন। গান এখন দেখার জিনিস। ইউটিউব খুললেনঅ্যালবাম এর টাইটেল ট্র্যাক ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ ভিউ ছাড়িয়ে গেছে। আর কি চাই! স্কচ এর বোতলটা খুলতে হয়। সাকসেস পার্টিমস্তিমেয়ে নিয়ে ফুর্তি যা হবার তা হবেকিন্তু এখন এই মুহূর্তটা অদ্বিতীয় এনজয় করবেন। বোতল খালি হবে। ড্রয়ারের ভেতরে পাউডারটা রয়েছে বোধ হয়! ওটার ধোঁয়াটা চাই। আয়নার সামনে নিজের পেটানো নগ্ন চেহারাটা দেখছিলেন অদ্বিতীয়। "হু ইস দ্য বেস্টইটস মাদারফাকিং অডি কেষ্ট! ওহ ইয়াহ।"
স্কচ গলা দিয়ে নামলোঅদ্বিতীয় চোখ বন্ধ করলেনএকটা কলেজে  থাকতে লেখা পুরোনো গানের কথা মনে পড়লো,
"বন্ধ হাওয়ায় তোর ঠিকানায় হারিয়ে যাওয়ার রেশ,
খোলামকুচি স্মৃতির কবরে আমার অবশেষ।"
অদ্বীতিয়র কি নিজের অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লোনাতা কি করে হবেএইসব বস্তাপচা গান নিয়ে কে বড়োলোক হয়েছেওসব কাব্যি কে করে?এসব ভাবা যাবেনা। অদ্বিতীয় পাউডারটা বের করলেন,একটা চামচে রাংতায় ওটা পোড়ালেনধোয়াটা নাসারন্ধ্র দিয়ে ভেতরে গেলো। আহএই নাহলে শান্তি! সব ভুলভাল চিন্তা দূরে থাক। অডি কেষ্ট নিডস সাম ফান!


                        (তিন)

"অদ্বিতীয় স্যার! অদ্বিতীয় স্যারআছেন?"
হঠাৎ আওয়াজে তন্দ্রাটা ভাঙলো অদ্বীতিয়র। ঘরে একটা নাইট ল্যাম্প জ্বলছেঘড়িতে সময় রাত দেড়টা। আবছা আলোয় লোকটার চেহারা চোখে পড়লো না ঠিক করে। নেশার ঘোরে ভয়ের বদলে একটা চাপা বিরক্তি এলো
"কে ভাইকি চাইকেন এতো চুদুরবুদুর তোমার?"
"স্যার নেশাটা একটু কম করলে হয়নাএতো দারুন গলা আপনারআমি তো আপনার ফ্যান!"
এতো রাত্তিরে ফ্যান এখানেকিন্তু অদ্বীতিয়র বেশ ভালোই লাগলো ব্যাপারটাপাগলগুলো কি না করে! এর আগে একদিন কতগুলো মেয়ে এসে হামলে পড়েছিল! অদ্বিতীয় মজা পেলেন
"আরে ভাই তুমি আমার ফ্যানতাই বুঝি ১২ তলার ফ্ল্যাটেও চলে এসেছোজিয়োএই নাহলে ফ্যান। ভাই তোমাদের জন্যই আমি গানটান করি। সালা তোমাদের জন্যই তো গান করাতোমরা না থাকলে কি আমার গান করা হতো বলো?"
"স্যার সে তো অবশ্যইআমি আপনার সবচেয়ে বড়ো এবং পুরোনো ভক্ত স্যার।"
"আরেহ তাই নাকি?"
"হ্যা স্যারআপনার সেই প্রথম ইউটিউব হিট, "মিউজিক ঢোকাও পশ্চাদ্দেশে" ! এরকম মাম্বলিং র‍্যাপ এর সাথে বাংলা পপ এর কম্বোকে ভেবেছেআপনি ভেবেছেন। আপনি আমাদের এক এবং অদ্বিতীয়অডি কেষ্ট! ইউটিউবে ১ বছরের মধ্যে ১০ লাখের ওপরে সাবস্ক্রাইবার৪ নম্বর অ্যালবাম বেরিয়ে গেলোওয়ার্ল্ড ট্যুর করার প্ল্যান চলছে আপনার। এই তো আপনার সেকেন্ড হিট গান "বেবি তুমি আমার আলুসেদ্ধ" একটা বড় সিনেমায় দেখা গেলো।"
অদ্বিতীয় পুলকিত বোধ করলেন
"আরেহ সালাতুই সব জেনে বসে আছিসতুই তো চরম চিজ ভাই?"
"হ্যা স্যারআর স্যার কি সব ফালতু মাল খাচ্ছেন। আজকের দিনে চাই পাউডার। আজকেই তো মস্তি হবে স্যার!"
"পাউডার অলরেডি নিয়েছি বে। আর না। কাল সাকসেস পার্টি আছেলিজা আর অ্যাশ আসছেজানিস তো কেআমার মিউজিক ভিডিওতে ওরা থাকে। ওদের সাথে তো একটু মস্তি করবোবাকিটা কালকের জন্যই তোলা থাক!"
"স্যারকাল যা হবার হবেআজকেই হোক নাকে বলতে পারেযদি কাল না হয়কাল হো না হো?"
"হাহাহা সালা শাহরুখ এর বাচ্চা এসেছিস! দাঁড়া পাউডারটা বের করি।"
"বের করাই আছে স্যারওই দেখুন! "
"হ্যা এই তোঠিক। আহ।"
"স্যারকেমন লাগছে?"
"নেশা বে! সালা দেখিস পরের ডিস্ ট্র্যাকটাতে সবকটা হারামি যেগুলো আমাকে সারাক্ষন কাঠি করার চেষ্টা করে ওদের হুড়কো করে দেব!"
"হ্যা স্যারসে তো হবেইসে ট্র্যাক আপনার রেডি করাই আছে তো?"
"থাকবেনা আবার, "তোরা সব ডুবে মর" এটা হলো নেক্সট ট্র্যাক। সব কটা আঁতেল কে ঠুকে গানটা করা। মাম্বলিং র‍্যাপ এর বেস্ট এক্সাম্পল বুঝলি?"
"সেইজন্যই তো তোমার কাছে আসাসেই এক্সাম্পল এর সোর্স টা আমার চাই। গানের সাথে গানের সোর্স টা চাই। তোমার গলাটা চাই! মানে জাস্ট চাইআমাকে ফিরিয়োনা না প্লিজ?"
অদ্বিতীয় একটু থতমত খেলেন, "মানে?"
অপর দিকের আওয়াজটা একটু পরে এলো, "তোমার গলার নেশাতুর মাদকতায়ডুবে যাইস্রেফ ডুবে যাই। তোমার কথার অবিরাম কথকতায়, ডুবে যাইস্রেফ ডুবে যাই।"
এটাও অদ্বীতিয়র সেই কলেজে লেখা গানকিন্তু এটা খাতার মধ্যে চাপা ছিল! মহানগরের কুম্ভীপাকে এইসব বিসর্জন দিয়েছিলেন! এই জিনিসটা তো কারুর জানার কথা নয়! কে এই লোকটাঅপর দিকের আওয়াজটা বলে চলেছে তখন,
"তোমার সবকটা অ্যালবাম আমার কাছে আছে। আর তোমাকে আমি চিনি দাদাতোমার গান এখন হিট। কিন্তু পরে যদি হিট না হয়তোমার জায়গা অন্য কেউ নেয়?"
অদ্বিতীয় ঘামছেনকিন্তু দমবন্ধ করা রাগ আর ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন
"আমার জায়গা কোন শুয়োরের বাচ্চা নেবেকারুর ক্ষমতা নেই আমার জায়গা নেবার। এসব ভুলভাল কথা বললে থাবড়াব সালা।"
"না দাদাভেবে দেখতোমার এখন দিন চলছেআস্তে আস্তে কিন্তু সেই দিন আর থাকবে নাপাবলিক একদিন রিজেক্ট করবে। করবেই। ভেবে দেখ। তাই এটাই সময় আমাকে গলাটা দিয়ে একদম পিক ফর্মে থেকে চলে যাবার! আর আমি তোমার এতো বড় ফ্যানআমার কথাটা ভাবো একটু!"
"গলা দিয়ে যাবোচলে যাবোকি সব বলছিসকেন যাবোআমার অনেক কাজ বাকিঅনেক অ্যালবাম বের করতে হবে। আমি সালা রাজ করবো। সবাই আমার পায়ের তলায় থাকবো।"
"সে এখনই আছেআর পায়ের তলাতেই থাকবে। কিন্তু দাদাতোমার গলাটা চাইওটা আমার কালেকশনে লাগবেই। সময় নেই দাদাআমাকে যেতে হবে। এখন ই দাও।"
"গলা কিভাবে দেবআর কেন চলে যাবোকোথায় যাবোএই তুই অনেক ভাটাচ্ছিসযা সালা বের এখন থেকে।"
"দাদা চ্যাঁচাচ্ছো কেনপাশের ফ্ল্যাটের ঘোষ বাবু নাহলে আবার পুলিশ ডাকবে! মনে নেইআগের দিন অ্যাশ কে নিয়ে যখন মস্তি করছিলে তখন ঘোষবাবু তোমাকে থ্রেট দিয়েছিলো! বেশি আওয়াজ করলে পুলিশ ডাকবে!"
"ঘোষ গাঁড় মারাকআমার দেখার দরকার নেই। তুই আগে বের এখন থেকে!"
"না দাদাতোমার গলা নিয়েই যাবো। এই দেখো হাতে কিন্তু স্ক্যালপেলটা ধরা আছে!"
একটা চকচকে স্ক্যালপেল এগিয়ে আসছে! জিনিষটা খুব চেনা! অনেকটা সেই জিনিসটার মতো যেটা দিয়ে অদ্বিতীয় নিজের শরীরকে লোমবিহীন রাখেন! অদ্বিতীয় রীতিমতো ভয় পাচ্ছেনশরীর অবশ হয়ে আসছে,
"কি করছিসনা! ওটা রাখ!"
"একটু ব্যাথা করবেকিন্তু তারপরে সব ঠিক হয়ে যাবে! মনে আছেকলেজে গাইতে  ইটস বেটার টু বার্ন আউটদ্যান টু ফেড অ্যাওয়ে ?"
"তুই কি করে জানলিকে তুই? "
"আমাকে এককালে সবাই আদি বলতএখন আর কেউ এই নাম ডাকেনা যদিও। তোমাকে খুব ভালো করে চিনিবলেছি তো। এটাই সময়দাও গলাটা দাও। স্ক্যালপেলটা ধরে আছি। তোমার লিগ্যাসি এটাইইটস টাইম! স্ক্যালপেল চলছে দেখো।"
অদ্বিতীয় স্থানুর মতো বসে রইলেনগলার থেকে রক্ত বয়ে গেলো বুকের ওপর। সামনে সেই পুরোনো খাতাটা খোলাঅদ্বীতিয়র একটা বহু পুরোনো লেখা ওর মধ্যে জ্বলজ্বল করছে,
"দিন বদলের গান গাইবোসবকিছু জ্বালিয়ে! 
নিজের আগুনে পুড়বোআত্মঘাতী মথ হয়ে।"



                                 (চার)

জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা উত্তেজিত হয়ে ব্রেকিং নিউস পরিবেশন করছেন, "বিতর্কিত এবং জনপ্রিয় বাংলা মাম্বলিং র‍্যাপ-পপস্টার ও ইউটিউব আইকন অডি কেষ্ট ওরফে অদ্বিতীয় সরকার মাত্র ৩১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনাস্থলে মাদকদ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে ড্রাগ ওভারডোসের জন্য তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারেকিন্তু তার সাথে গলায় একটি গভীর ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। আর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অডি কেষ্টর অ্যালবাম এর বিক্রি এখন আকাশচুম্বী। তার জীবনের সমস্ত ঘটনা এবং কেচ্ছা সম্পর্কে জানতে হলে চ্যানেলে চোখ রাখতে ভুলবেননা!"

সায়ন্তনী হোড়





দূরত্বের সমীকরণ 
****************



 হিমাঙ্কের নীচে থাকা সময়কে
আজ কাছে টেনে নিতে ইচ্ছে করে
অপ্রেমিকার কাব্যহীনতা প্রতি মুহূর্তে
ছুঁতে চায় ।

হঠাৎই   একটা খসখসে রাস্তাতে 
সাদাকালো রামধনুর অস্তিত্ব খুঁজে পাই ।

একটা নীলচে রাত । সেই রাতকে বেঁধে
    রাখতে চায় রাত জাগা পাখিরা ।
বিন্দু থেকে সরে যাওয়া তার সব সিঁড়ি কে 
 রিংটোনের মধ্যেই মিলিয়ে যেতে দেখি ।

চোখ বোজা দেওয়ালের গা বেয়ে
চুঁয়ে পড়ে অব্যক্ত শব্দরা ।

কিছুটা  দূরত্ব । তবুও সেই দূরত্বের শহরকে অতিক্রম করেই নেমে আসে তার  শরীরের গন্ধ ।
শরীর... দূরত্ব ..মন-সমীকরণ .. ।।

                             

ইউনুস হোসেন





     দাম্ভিক প্রেমের রূঢ় বাস্তবতা
     *****************



কবরের গভীরতা জানো ?
বলবে;তা তো সাড়ে তিন হাত,
আর ইমারতের?
এই ধরো চার ষোল কুড়ি তলা;
কিন্তু এ যে বাহ্যিকতা;দৃষ্টি ক্ষীণ।
আজ যে শুয়ে সাদা কাফনে সেই অন্ধকারে;
বেদনাময় বাতাস,ঘুরে ফিরে সেখানেই।
মৃত পিঠ ঠেকেছে পাতালে;
সাড়ে তিন হাতের মাপনি ছাপিয়ে,
গভীরের কতটা আকর্ষণ টান ?
অদৃশ্য শিকড় আঁকড়ে ধরে,জড়িয়ে পিষ্ট।
কত ভালোবাসা কুঁড়ি পেল,কত ফুটলো
আর কতো পাপড়ি খসা।
কেঁদে ওঠে কত স্বপ্ন,কোন বুকভেজা কবরে
                                  নীরব অজান্তেই।
আত্মার সেই স্বজন হারিয়ে গেছে,
খুঁজো নি অভিমানী,
মাটির গহীন গহ্বরে মিলিয়েছে হিসেবে রেখেছ কি?
                                             কবে দিনক্ষণ?
দৃঢ় কংক্রিট গম্বুজ মাটি ফুঁড়ে আকাশ ছোয়,
উঠছে স্বপ্ন ইমারত;অজান্তেই কোন এক কবরের উপর।
হয়তো যাকে তুমি খোঁজ নি পরে আর কখনোই    অবহেলায়;
নিস্বার্থতায় তাকে গ্রাস করেছে স্বার্থ মৃত্যু।

তোমার প্রেম অনেক দামি,
আর ভালোবাসা তার সস্তার দু পয়সা;তাও দস্তার।
পরিচয় হীন সেই কবর ভিজে রয় সারা দিনবেলা,
এরই মাঝে উঠছে ইমারত,ফুটছে দাম্ভিক প্রেমের রূঢ় বাস্তবতা।

দেবব্রত মল্লিক




জীবনচক্র
*********

বীর্য স্খলন,জরায়ু-ভ্রূণ,দশমাস দশ দিন।
লেবার পেইন...হসপিটাল... সিজারেক্টমি... আঁতুড়ঘর... নামকরণ... সেরেলাক... হাঁটি-হাঁটি-পা-পা... অন্নপ্রাশন...ইউনিফর্ম... স্কুলবাস... নামতা... কার্টুন... গোঁফের রেখা... হোমওয়ার্ক... ম্যাথ টিউশন... ইংলিশ টিচারকে নিয়ে ফ্যান্টাসি... স্কুল কেটে ম্যাটিনি শো... পানিশমেন্ট... কলেজে দাদাগিরি... ব্লুফিল্ম... হস্তমৈথুন...  ভোটার লিস্টে নাম... এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ... অর্কুট... চ্যাটিং... পাড়ার চায়ের দোকান... আড্ডা... নতুন খিস্তি শেখা... ইভ টিজিং...বাবার পকেট কাটা... বিড়ি... লেট-নাইট-পার্টি... স্কচ...প্রেম... ক্যান্ডেল-লাইট-ডিনার... নলবন... ছাতার আড়ালে চুমু... বেকারত্ব... সন্দেহ... বিরহ... রাতজাগা...কবি কবি ভাব... একাকিত্ব... নেশা... বাবার রিটায়ারমেন্ট... টিউশনি... অবিবাহিত বোন... পাত্রপক্ষের আকাশচুম্বি পণ... বাবার হার্ট-অ্যাটাক... হাফ-পেনশন... বকেয়া বাড়িভাড়া... ওয়াক-ইন-ইন্টারভিউ... সাত টা দশের বনগাঁ লোকাল... সেলস্ টার্গেট... বসের হেনস্তা... দশ হাজার... সহকর্মী... লিভ-ইন-রিলেশন... প্রথম যৌন স্বাদ... ফেডেরালিসম... ইগোইজম... অ্যাবরশন... ব্রেক-আপ... হা-হুতাশ... সোনাগাছি... রফা... সস্তা হোটেল... বোনের পালিয়ে বিয়ে... মায়ের মৃত্যু... ব্রাহ্মণভোজন... প্রমোশন... ম্যাট্রিমনি ডট কম... মাথা জুড়ে টাক... আত্মীয়দের ন্যাকামো বিলাপ...কলিগের ডিভোর্সি দিদি... মুখে মেচেতার দাগ... ম্যারেজ সার্টিফিকেট... ফুলশয্যা... পুরীতে হানিমুন...

বীর্য... স্খলন... জরায়ু... ভ্রূণ...



মোঃ মিজানুর রহমান





রসের হাঁড়ি ফরহাদ


চলে দিন কোনোমতে 
টার্গেটের চাপে উঠেছে মাথাতে হাত,
আড্ডাবাজ নয় সে যে
আমাদের রসের হাঁড়ি ফরহাদ।

দেখতে যেন সুবোধ বালক
ফুঁ দিয়ে পথ চলে,
কথা নামের ফুলঝুড়ি আজ
অনায়াসে বলে।

বলে সবই কথায় কথা
মনের খেয়ালে,
স্বপ্ন যেন ইচ্ছেঘুড়ি
লিখে যায় স্মৃতির দেয়ালে।

মনের পাখি দু হাত তুলি 
করি মোনাজাত,
সুখি হও  জীবন নামের খেয়ায়
রসের হাঁড়ি ফরহাদ।