নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

টাট্টুঘোড়া.. জ্যোতির্ময় রায়



জ্যোতিষীর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখলাম
পশ্চিমবঙ্গ একটা বিস্কুট।

মন্ত্রী আর বুদ্ধিজীবীরা গবেট।আর মুখ্যমন্ত্রী
 টাট্টু ঘোড়ার মত,টেমসের তীরে পিকনিকে ব্যস্ত।।

আমি ,তুমি আপনারা ,তখন ধর্ষক।

মিডিয়া তখন কপিরাইট বলে চালিয়ে দিয়েছে
ডাক্তার প্রবাসী।।

বাঃ ,আস্ত ঘোড়া তো!
বাঃ হিসু পেয়েছে বলে আপনি বই বিক্রি করেনি।

ম্যাগাজিন এ পদ্যে লিখে বলছেন
      জুয়ার আসর,মদ আর মাগী।


ব্যারিকেট ভাঙার দিন নেই।।


#এবং_ও_তারপর

বিকেলের আসা বাকি... অভিজিৎ দাসকর্মকার।



যতটা পূর্বনির্ধারিত দূরত্ব এগিয়ে গেলে
সুর্যের কক্ষে গোধূলির শব্দতরঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়
সেই খানে ছেলেটি উলম্ব  দাঁড়িয়ে
               সূক্ষ্মকোণে জ্যা-মিতি করে
           
চাঁদ যেন আলতামিরা গুহার হলুদ জ্যোৎস্নায় ভাষাস্নান করে
স্তবক থেকে স্তবক
    পরস্পর কৃষ্ণচূড়া দেওয়া নেয়া করে---

সুপ্তি ম্যাডামের অনার্স উচ্চারণে প্রবীন বৃষরাশির অবায়বীয় হাসি মুখ-

নীল তন্তু নিজেকে ফাটিয়ে ছায়া বরাবর উড়ছে

নির্দেশনামায় দেখো,
শুখের অনিবার্য কার্নিশে
তখনও আবশ্যিক বিকেলের আসা বাকি।

উচ্চতা / জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়




পাহাড় উঠেছে খাড়া কোন পরিচয়ে
কালোসাদা দুধজল মাখামাখি।
প্রকল্প ছিল কি ? পরিকল্পনাময় প্রবীন প্রান্তর
পাথরের দ্বীপ তরলজমানো সুখ
বিক্ষোভবিভোর
জিনগত ব্যাপার ছিল না দ্বিপদের
মগজও ছিল না কূট তবে?
সঙ্ক্ষুব্ধ বাষ্পীয় উষ্ণতার বুড়োকাল
ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে আক্ষেপে ফোঁসে।

এই সবুজের ভিড়ে সোনালি ধানের শিষ নেই
আকাশমঞ্জরিরেণু পোড়াবাড়ির ছাই হয়ে ওড়ে
মরা ব্যাঙের মতো পড়ে আছে অন্ধকার
এ উচ্চতায় খুজে নাও
জোনাকির সিগন্যাল নীল ও হলুদ।

তীর্থ যাত্রার পূর্ব কল্প.. আমিনুল ইসলাম




পোয়াতি রাত প্রসব করে আলো
আলো ছায়ায় অন্তরালে প্রেমপর্ব
বটগাছ বিছিয়ে দেয় ছায়া, পাখিরা আশ্রয় খুঁজে নিলে
তুমিও মেখে নাও সবুজ শীতলতা।
মায়াজাল বুনে চলে প্রতিটি অন্ধকার গর্ভপাত,
কোথায় যাচ্ছ সরে সরে সুমেরু সাগর?
অগুণতি প্রেমিকের দল ছেঁকে নিতে দুধের ফেনা
ঠেলাঠেলি বিভেদের মৌতাত।
আমার মৌনতা জুড়ে শুয়ে থাকে
রেড এলার্ট কানা গলি, অলিগলি অন্ধগলি পাকস্থলী
জুড়ে গা বমি বমি। উলঙ্গ শয্যায় বসে থাকা রাত
পিতৃত্ব জাগায় । আমার কামের অ আ ক খ
থেকে ছিটিয়ে দিই মাতৃত্বের মৌলিকতা।
গৌণ বিষয়গূলিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেকে ভাঙতে হয়
ভাঙতে ভাঙতে গড়তে ভাঙতে পৌঁছে যায় গন্তব্যের গহীন প্রেক্ষাপট। তুমি কুড়িয়ে রাখ খুনসুটি অভিমান।
আমি অভিযানে অভিযানে ভরিয়ে দিলাম
বোতাম খোলার অমনিবাস।

মুক্ত ভালোবাসা.. অয়ন চ্যাটার্জি



মুক্ত অঙ্গে,মুক্ত বিহঙ্গে হয়
   আজও অকারন চোখাচুখি;
জ্বলন্ত হৃদয় মাঝে প্রিয় নাম
  "ভালোবাসা"কে লিখে রাখি।।
       

আত্মবিলাপ.. পিয়াষা মহলদার


সুখটা তো তার কাঙ্খিত
          ভালো থাকার তরে
তবু সে আজ বঞ্চিত
         স্বপ্ন ভাঙার ঝড়ে ।
খেলছে তবু জীবন খেলা
         ভাঙা গড়ার তালে
সুপ্ত আছে গল্প মেলা
          হৃদয় সেঁচা জলে।
কেউ রাখেনি খোঁজ
কেমন করে হারিয়ে গেছে
যত্নে গড়া স্বপ্নগুলো রোজ।


ভীষণ কঠিন ক্লান্ত দুটো চোখ
     হারিয়ে গেছে জলছবিরই রঙ
 আজ তো তার বজ্র কঠিন বুক
   কল্পনাতেও আজ পড়েছে জং।
জীবন মানে এক অঙ্কের নাটক
     অভিনয়টা নিখুঁত করা চায়
সত্যিগুলো রঙের নীচে আটক
      ভরঙ পাবে সবার কাছে সায়।
তাইতো তার একলা চলার পথে
                 তার শূন্য ক্যানভাসে
                    কেউ থাকেনি সাথে

ঈশ্বর আর বুভুক্ষ মানুষ.... বিকাশ দাস (বিল্টু )


বেদেনীর  মেয়ের চালধোয়া  হাতে নতুন সকালের এক ফালি রোদ
দু টাকা কেজি দরের চালের ফেন ভাতে একটা নতুন সূর্যোদয়
লাল লাল মোটা ভাতে হার না মানা বেঁচে থাকার লড়াই
চা পাতার আনাচে কানাচে ওল আলুতে, রক্তের  শিরায় শিরায় বাঁচার রসদ

ফেন   গড়াগড়ি খায় ডাস্টবিনের ডাম্পার থেকে,  ঝাঁকড়া চুলের শিশুটি বোতল কুড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে  13 নাম্বার প্লাটফর্মে,  একটু ফেন'ই হতো যদি রাতে.....
হারিয়ে যাই দাবী আর ন্যায্যর কাছে

থমকে যাওয়া কিছু কথার উত্তর বড্ড দোটানা
"ঈশ্বর "মার খায় "ঈশ্বরের"  হাতে গড়া "অসুর সন্তানের" কাছে
শানিত কাঁচির ছোঁয়ায়, "ঈশ্বরের" হাতের পরশে  দগদগে  ক্ষত মোলায়েম হয়

তবুও "ঈশ্বরের হাত "বেঁধে ঈশ্বর কে ভুলি
ঈশ্বর মুখ ফিরিয়ে প্রলয়ের অপেক্ষায়....

বুভুক্ষ মানুষেরা আকাশের দিকে, ঈশ্বর যদি কথা শোনে
বেদেনীর হাতে সাদা কাফন,  কুকুরের  খাওয়া ফেনে সভ্যতার ইতিহাস কথা বলে

রোজনামচা সভ্যতা  চোখাচোখি করে

        

চলেছি কোন পথে ... রাণা চ্যাটার্জী



যত বেশি স্বাধীনতা তত দেখছি এর অপব্যবহার।চায়ের দোকানে এঁটো বাসন মাজা ছেলেটার বাড়িতে ভাত ফুটানোর জোগাড় আছে কিনা ঠিক নেই,হকার দাদাটার কাল কি করে চলবে চিন্তায় নেই কপালে ভাঁজ কিন্তু পকেটে এন্ড্রয়েড মোবাইল আর ডেলি ফ্রি ডাটা মজুত। হোক আটা দামি বয়েই গেল,নেট দুনিয়ায় রগরগে ভিডিওর প্রতুলতা বুঁদ করে রেখেছে শিক্ষিত অশিক্ষিত ছোট বড় সকলকে। প্রকাশ্যে ঘুরছে যৌন উস্কানি ভিডিও রমরমা।অশ্লীলতার মোড়কে পণ্য জাত হচ্ছে নারী শরীর।এ যেন মগের মুলুক স্বাধীনতা,যখন যাকে খুশি যা খুশি ভাবে করায়ত্ত করার প্রচেষ্টা আর বাধা পেলেই নোংরা তকমায় বিদ্ধ।

কি দেখতে হয় আর কি দেখার বয়স হয় নি এই লক্ষণ গন্ডি ধুয়ে মুছে সাফ। পরশু খবরে পড়লাম মফস্বল ছোট শহরে এক মধ্য বয়স্ক ঠান্ডা মাথায় প্রতিদিন বিভিন্ন বাড়ি ঢুকে মহিলাদের খুন করতেন আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন। শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে ভয়ঙ্কর অপরাধ প্রবণতা।স্কুল বাচ্চা প্রায়শই ধর্ষণের শিকার,সদ্যজাত ঝলসে উঠছে লালসার আগুনে,বৃদ্ধা হোক মধ্যবয়সী সে হোক নান কিংবা ভিখারি সবাই টার্গেট এই নর পিশাচ আবহাওয়ায়।তবে কি  কোথাও  নিরাপদ নয় আমরা,আমাদের মহিলা,শিশু কন্যা মহল?

কিসের আমাদের বড়াই তবে?রুচি সংস্কৃতির দোহাই। দেওয়াল জুড়ে মনীষী দের বাণী নিভৃতে কাঁদে।সদা জাগ্রত প্রশাসন কি করবে মনের মধ্যে যদি অপরাধ প্রবণতার বিষাক্ত লেলিহান আষ্টেপৃষ্টে বাঁধে আমাদের। সম্প্রতি ফুলের মতো একরত্তি শিশু তিন বছরের টুইঙ্কেলকে যেভাবে নৃশংসতার সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় খুন করে  ফেলে দিয়ে যাওয়া হলো শিহরণ বয়ে গেল ঠান্ডা রক্ত স্রোতের।দেখ কেমন লাগে আর কত ভয়ঙ্কর হতে পারি আমরা এই বার্তা  প্রকাশ্যে খুল্লম খুল্লা ছোবল মারছে। "দেশ বাঁচাও বেটি বাঁচাও স্লোগানের ছত্রছায়ায় মা বাবার স্নেহ ভালোবাসায় হাসি খুশিতে বড়ো  হওয়া শিশু কন্যা যার বাড়ির  উঠোন জুড়ে  এখনো পাবে হরেক খেলনা বাটি,পুতুল ঘর কন্না। কানে বাজছে বাঁশি লাগানো জুতোর পিক পিক শব্দ।কিন্তু কোথাও নেই,হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গেল তাকে এক ডাস্টবিনে না চিনতে পারা ছিন্ন ভিন্ন  টুকরো হয়ে নৃশংশতার  স্মৃতি চিন্হ মেখে এক তাল রক্তাক্ত মাংস পিন্ড হয়ে।

মানুষ কখনো এভাবে ঐ টুকু বাচ্চা কে শ্রীখন্ডি করে মা বাবাকে শিক্ষা দিতে এতটা বীভৎসতার নজীর সৃষ্টি করতে কি  পারে ভাবতে অবাক লাগছে।কিন্তু কি অপরাধ মা বাবার?
প্রায় দশহাজার টাকা ধার নিয়ে অভাবের সংসারে শোধ করে উঠতে পারছিল না  তারা। চেষ্টা চলছিলো যত জলদি  টাকা দিয়ে দিতে পারে হুমকি ভয় ,নোংরামি থেকে মুক্তি।কিন্তু কি পেলাম আমরা? অসহায় মা বাবাকে শিক্ষা দিতে তাদের তিন বছরের ফুলের শিশু টুইঙ্কেল কে তুলে নিয়ে গিয়ে চোখ,চুল উপড়ে, গায়ের চামড়া চেঁছে,শরীরের সব অঙ্গ বিকৃতি বা গায়েব করে ফেলে দিয়ে গেছে বাড়ির কাছে।শ্বাস নালি,কিডনি,যৌন অঙ্গ সব কিছু তছনছ যে আসলে সমাজের গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসানো পেল্লাই চড়।

ভাবতে অবাক লাগে কোন মায়ের কোলে জন্মেছিল এই কুলাঙ্গার গণ, তাদের কি বাড়ি,পরিবার সন্তান বলে কিছুই নেই। কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ কে ফোঁপড়া করে বহাল তবিয়তে দিন গুজরান কিছু মহান চোরের, আর সামান্য কিছু টাকা ধার নিয়ে এ এমন পাশবিক ঘটনার সাক্ষী হওয়া তাও নিজের সন্তানকে এভাবে দেখা কি যায় ,না সম্ভব কখনো?আবার আমরা মোমবাতি জ্বালাবো,শোক প্রস্তাব পাঠ করে মৌন মিছিলে হাঁটবো কিন্তু পারবো না সমাজটাকে নিরাপদ আশ্রয়ে মুড়ে রাখতে,এই সুন্দর সমাজকে ফুলের মতো শিশুদের বাসযোগ্য করে তুলতে । তাই আর কিছু চাইনা,স্তব্ধ হোক লোকদেখানি এই  প্রতিবাদ ,সহানুভূতি।

ছলনার শোপিচ -শাহীন রায়হান


.
প্রতীক্ষার জানালায় এখন আর সোনালী সূর্যটা দেখিনা
অবিরল বৃষ্টিতে ধুয়ে গ্যাছে গাছের সবুজ
তবু পুরনো ইচ্ছেগুলো নিঃশব্দে কড়া নাড়ছে
সমাধিত প্রেমের ঘুমন্ত দরোজায়।
.
ডুবে যাওয়া চাঁদ অভিযাত্রীর মতো এক মনে হেঁটে চলেছে
অবাধ্য অন্ধকার মাড়িয়ে নিভৃত ভালোবাসার নিরুত্তাপ সীমান্তে।
যেখানে বিরহী কাঁটাতার বিভক্তির চিহ্ন এঁকে দিয়েছে প্রিয়তম মরুদ্যানে।
.
অস্ফুট ভালোবাসায় জেগে ওঠা বকুল গাছটা এখন আর নেই
কাঁকর রঙা মালাটা সেই কবে ছিঁড়ে গ্যাছে
পাঁজর ভাঙা দূরন্ত বাতাসে।
.
শুধু পড়ে আছে কুয়াশা কাতর মৃদু অন্ধকারে রক্তাক্ত ছলনায়
তোমার ফেলে যাওয়া হতভাগ্য পুরনো শোপিচটা।

মা,,, রৌনক হাজরা



পবিত্র গর্ভে ঠাঁই দিয়ে,
হাঁটতে শেখালে আঙুল ধরে,
তোমার চোখে পৃথিবী দেখি,
ভালোবাসা দিলে উজাড় করে।।

বৃথা মা'গো তোমায় ছাড়া,
দুর্গা রূপে বিরাজ করো,
জ্বরের রাতে অশ্রু নিয়ে,
বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরো।।

দুঃখে যখন একলা থাকি,
কারণ ছাড়াই ডাকো আমায়,
বাইরে যখন দি পাড়ি,
বিপদ নেই তোমার প্রার্থনায়।।

সবাই যখন তুচ্ছ বলে,
ফেলে দিলো মাটির বুকে,
শিখিয়ে দিলে লড়তে আমায়,
কাছে বসিয়ে যত্নে ডেকে।।

স্বর্গ পাই মায়ের কোলে,
আঁচল যেন শান্তির ছায়া,
আর জীবনে চাইনা কিছু,
মিটে গেছে সমস্ত চাওয়া ।।

প্রতি জনম মায়ের রূপে,
জঠোর মাঝে দিয়ো ঠাঁই,
প্রতিবার তোমার মুখে,
খোকা ডাক শুনতে চাই।।

   

আছি. ... রুদ্র সুশান্ত



বসে আছি
প্রেমের বুদঁবুদেঁ সাঁতারে আছি
করুণভাবে আছি
মোহ-প্রেমে ডুবে আছি
প্রেমিকার কাছাকাছি।
আমি একলা আছি
কোয়াবে আছি
নদীর ধারে বসে আছি
কোথায় আছে দূরে-কাছে
এ মনের মন মাঝি।
  লিপ্ত আছি
কানে আছে লেগে প্রেমিকার হাসি
আমি উন্মুক্ত, বনের মৌমাছি।
কাছে-দূরে ঘোরে আছি
না মরে বেঁচে আছি।

আমি... দেবলীনা অধিকারী



ঝরা  পাতার শব্দ  শুনি
বয়ে যাওয়া নদীর স্রোতে শান্তি খুঁজি
ভালোবাসার  আমি কি ই বা বুঝি!
কবি নই, আবৃত্তি কার নই,
নই শিল্পী  কিংবা গীতিকার
নই নাম যশ খ্যাত নারী
ভালোবেসে পুড়তে জানি
অভিমানে নীরব হতে মানি
উড়েযাওয়া পাখিদের -
ডানার  পালক ধরেই স্বপ্ন দেখি,
রোদের পরশ গায়ে মাখি
নাম না জানা ঠিকানা তে চিঠি লিখি
ঐ যে দেখা যায়-দূরে
কবিতার জানালা , সুরের খিড়কি
মই বেয়ে সব শব্দ রা আকাশে দিয়েছে পাড়ি ! ! !.....

আমার এদেশ...... মুহাম্মদ মাহমুদ হাসান



আমার এদেশ আলতো পরশ
প্রভাতশিশির ছুঁয়া
ভোরের পাখি পালতু সরস
কোকিল কাকাতুয়া।

আমাদের এদেশ হিজলডালে
গোলাপ-জবার হাসি
পল্লীগাঁয়ে দীঘল খালে
শাপলা রাশি রাশি।

আমার এদেশ নীল সবুজাভ
লাল পতাকার ছবি
মায়ের স্নেহ,রাগ-অনুতাপ
দুপুরতেজী রবি।

আমার এদেশ মুকুট বাহার
শহীদ-গাজীর শিরে
পাঁজরবাঁধা অটুট পাহাড়
পদ্মাজলের তীরে।

পৌঁছায়নি এখনও...... অনিন্দ্য পাল


ওয়াটার প্রুফ প্যাকেটে মুড়ে পাঠিয়েছি সন্তান
অথচ একবারও প্রাপ্তি স্বীকার করেনি কেউ

আমার আর সেই ডাকদেশের মধ্যে আছে মনে হয়
অমীমাংসিত কোনও কৃষ্ণ গহ্বর
সমস্ত অক্ষর, মাত্রা আর যতি পাল্টে চলেছে নিয়ত
অভিশপ্ত অসীম ক্ষুধায় ...

অসংখ্য শব্দ ঝনঝন করে টুকরো হবার আগে
কোথায় তলিয়ে যায় অন্ধকূপের যোনিতে
হয়ত অন্য কোথাও জন্ম হয় আবার
অন্য কোন উচ্চারণে

অতীত মুছে ফেলা সেই সব জারজ সংলাপ
বড় চেনা মনে হয়
তবু চিনতে পারি না একবারে
মনে হয় যেন সব কটা মুখোশের নিচে শুয়ে আছে
আমার অলাজ মুখ ...

ম্যাসোচিস্ট..... অভিজিৎ দাসকর্মকার



এক বালতি জল তাকে
বেগের মান অভিমুখের পরিবর্তনহীন সমত্বরণে রাখা মাত্রই
দ্বিতীয় পুলকেশি শিলালিপি লেখে
অশ্বক্ষুরাকৃতি মালভূমিতে।

অসংখ্য ব-দ্বীপে অশান্ত গঙ্গার পলি পড়ে জীবাশ্ম হয়েছে আজ
ছোট বালিয়াড়িতে ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
সি-ইউ-কি র পাতা ওল্টায় আর
তৃতীয় গতিসূত্রে নিউটনের সাক্ষাৎকার নেয়

যে স্লোগানটি উত্তোলনের পর বি-বা-দি বাগে ফটকা ফেটেছিল
আর্কিমিডিসের বাউন্ডারি ভেঙে উপচে পড়া জলে পিছল খেয়েছিল
ফরাসি শব্দের সামনে রাখা বেদের আরণ্যক ভাগ।

অথচ মুখ শুকনো করা লাইন হাতে বনলতা কবি আজও দাঁড়িয়ে
কাঁধে দাঁড়ি-ব্যাগ আর
সেই বিখ্যাত ম্যাসোচিস্ট ট্রাম...**

আলো ছায়ার কথামালা. ... হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। ছত্রিশ ।।



               আজ ব্যানার্জী কেবিনে বসে আছি। হঠাৎ একটা কথা কানে এলো। কেবিনের শম্ভুদা একজনকে বলছে, "আপনার যদি দরকার হয় তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলে নিন না।" শম্ভুদার কথা শুনে লোকটির মন্তব্য ----- "সত্যি শম্ভু, তোর যেমন বুদ্ধি ! আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে একজন রঙমিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলতে যাব ! তুই ওকে বল আমার বাড়িতে এসে একদিন কথা বলে যেতে।" দুজনের কাউকেই আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুধুমাত্র শম্ভুদার গলা চিনি বলে এতক্ষণ বুঝতে পারছিলাম যে ওটা শম্ভুদার গলা। এবার পিছনে ঘুরে না তাকিয়ে পারলাম না। হ্যাঁ, লোকটাকে আমি চিনি। কিন্তু ওনার যে এতবড় একটা গুণ আছে আমি জানতাম না।
               সত্যি মানুষ এখনও এসব ভাবে ! অনুপাতটা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। নিজের প্রয়েজনে একটা মানুষ আর একটা মানুষের সঙ্গে কথা বলবে তাও তার কত ভাবনা ! সত্যি, আমরা আর মানুষ হলাম না !



।। সাঁইত্রিশ ।।



               মহাশ্বেতা দেবীর একটা কথা খুব মনে পড়ে, "অকাজে ঘুরে না বেড়িয়ে বাড়িতে পড়বি, অনেক কাজ দেবে।" এখন এটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। ছাত্র পড়িয়ে যতটুকু সময় পাই পড়ি আর লিখি। কবিতা লিখতে এসে কত মানুষের সঙ্গে তো মিশলাম। শিক্ষকতার ত্রিশ বছরে আরও অনেক অনেক মানুষ। যাকেই নিজের মনে করে একটু কথা বলতে যাচ্ছি সে-ই ঘুরে গিয়ে নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিচ্ছে। তাই এখন নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়ে এসেছি। তবে অবশ্যই নিজেকে অন্যের থেকে উন্নতমানের মনে করে সরে আসা নয়। বরং ঠিক উল্টোটাই। আমিই ঠিক সকলের যোগ্য নই। তা না হলে সবাই হেসে খেলে কথা বলে দারুণভাবে বেঁচে থাকতে পারছে আর আমি পারছি না কেন ?

অনন্ত যাত্রা : সাব্বির সেখ



ক্লান্ত জীবন থমকে আছে জীবনের শেষ তীরে,
অনেক ইচ্ছে গুমরে রইলো সবার অগোচরে।

অবসন্ন দেহ ক্লান্ত হয়ে ঘুমের পরশ খোঁজে,
শ্রান্ত আত্মা পাড়ি দিবে চিরনিদ্রার দেশে।

শেষ চিঠিটি আসতে আর নেইকো খুব দেরী,
জীবনের সব হিসেব নিয়ে দিতে হবে পাড়ি।

ছিল যত দর্প আমার,অহংকার আর জ্ঞান,
মরণ আমার সব গর্ব করে দেবে ম্লান।

আমার জানাজার পথে যদি তোমরা দাও মন ,
দেখবে আমি নিয়ে যাচ্ছি শুধু একটুকরো কাফন।

জীবনের আগল ঢেলে যখন ঢুকবো মৃত্যুপুরে,
নাম না জানা গুল্মলতা জন্মিবে মোর গোরে।

আমার আত্মীয় স্বজন যখন পুছবে আমার খবর,
কেউ তোমরা দেখিয়ে দিও আমার দেহের কবর।

আমি যদি কোথাও একটু পূণ্য করে থাকি,
সেটাই হবে আঁধার গোরে আমার আলোর বাতি।

আমি ইরেজার হব - শাহীন রায়হান



আমি ইরেজার হব তোমার হৃৎপিন্ডের শিরা উপশিরায়
ধমনীর প্রতি রক্ত বিন্দুতে।
ইরেজার হব মস্তিষ্ক নিউরনে বেলা অবেলায়
তোমার স্বপ্ন বিলাসে প্রতিটি পদে পদক্ষেপে
ইরেজার হব তোমার নিঃসঙ্গতার বিবর্ণ আর্তনাদে
নিঝুম রাতের কান্না বিলাসে অন্তহীন  শব্দ বাক্য কথায়
ইরেজার হয়ে মুছিয়ে তোমার রক্ত আবীর দুঃখ বিলাস
নিজেকে নিঃশেষ করেও ধ্রবতারা হয়ে বেঁচে থাকব অনন্তকাল
তোমারই আকাশে।

অপেক্ষা ,,,,,, আহাম্মেদ হৃদয়



মেঘলা বিকেলে বসে আছি,
তুমি আসবে বলে।
সময় আমার পার হয়না
তুমি পাশে নেই বলে।

নদীর কিনারায় দাড়িয়ে দেখি
মাঝি নাই ওপারে।
কষ্ট হলেও বসে আছি
তুমি আসবে বলে।

হাজারো মানুষের আনাগোনা
তোমার দেখা নাই,
বিশ্বাস ছিলো আসবে তুমি
অপেক্ষা করে যাই।

বৃষ্টি আকাশে মেঘ ডাকছে,
তবু যাইনি সরে।
চিঠি দিয়েছিলে আসবে তুমি
কদম গাছের তলে।

 দুপুর কেটে সন্ধা হলো
তোমার দেখা নাই।
অপেক্ষা আমার শেষ হয়েছে
বাড়ি ফিরে যাই।

বাড়ি ফিরে অপেক্ষায় ছিলাম
একটি চিঠি দিবো।
তুমি বোধহয় ভালো নাই,
সে খবরটি নিবো।

ঘাম... জ্যোতির্ময় রায়



১.

শরীরকে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছি।
       খিদে পায়না।পান্তা ভাতে।

৩.
আয়নাও মিথ্যে বলে।রক্ত জমাট।

৫.

বাহারি ডাকটিকে তুমি প্রেম লিখে দিও
রাতের মতই ,আদ্র তোমার চুমু ।

৭.
চিমিনির ধোঁয়াটা জানে কি ?
মিথ্যে বলেছো "ভালো আছি তাও!"

৯.
অফিস ফেরত চোখে বুজে আসে
দু টাকার স্বপ্ন গুলো ।

২.৪.৬.৮.১০

যে শরীরে রক্ত ভীষণ,সে শরীর দাগ কাটা।
যে চুমু তিক্ত নয়,পাওয়ার ভীষণ চশমাটা'র

#এবং_ও_তারপর

অঝোর প্রেমের কালবৈশাখী ...... অনুরাধা কৃষ্ণকলি বন্দ্যোপাধ্যায়



সাজানো অর্কিড মাখছে  আদর, অমিল মেঘেরা  বুনছে বেসামাল প্রহর। ভাসানো নিরুদ্দেশের ভেলা কোথায় তোমার অচীনপুরের বাসা?আজ অনশন বসা নীলচে বিকেল আঁকছে বুকে নরম কোনো সন্ধ্যা চাদর;
ক্লান্ত  তোমার কথা ভেবে! তোমার নেশায় রাত্রি জাগে, নামে অঝোর প্রেমের কাল বৈশাখী, তারা রাও স্বাক্ষী থাকে মুন্সীয়ানার মিলন দেখে; তাও প্রিয় তোমার কথা ভেবে!
তোমার যত্ন ভালোবাসা অলস ব্যস্ত সকাল খোঁজে। শিশির ভেজা হাজার প্রজাপতি ব্যস্ত রঙের দোলায় ওড়ে,
মনের সঠিক স্বপ্ন খুঁজে
বাঁচতে শেখায় প্রেমের মানে।

লাল রঙের স্বপ্ন... আহাম্মেদ হৃদয়



কোন এক মেঘলা দিনে,শনশন বাতাসের মাঝে,
লাল শাড়ি পড়ে অপেক্ষা ছিলো কোনো এক মেয়ে।
লাল শাড়িতে সাজবে বলে,
কথা ছিলো লাল খামের চিরকুটের মাঝে লেখা।

হাতে ছিলো এক গুচ্ছ লাল টকটকে ফুল
দাড়িয়েছিলো লাল রঙ করা উঁচু  দেয়ালের পাশে। অপেক্ষায় ছিলো লাল ফিতা লাগালো ঘড়ির দিকে,
কখন আসবে, যাকে লালন করছে এতদিন বুকে।

পড়ন্ত বিকেলের সূর্য ডোবা লাল আলোটি,
এসে ওকি দিচ্ছে লাল রেশমি চুড়িতে।
লাল চুড়ির রিনিঝিনি ভেসে বেড়ায় আকাশের তরে
লাল ঝুমকোতে অপরুপ সৌন্দর্য লাগছে তাকে।

আমিও অপেক্ষায় ছিলাম লাল পান্জাবী পরে,
লাল খামে তোলা একটি চিরকুট পেয়ে।
সেই লাল রঙ আমি পড়িয়ে দিয়েছি,
এই মেঘলা আকাশ ও পড়ন্ত বিকেলের মাঝে।

প্রকৃতিকে কি চমৎকার লাগছে!লাল রঙে সেজে
প্রিয়তমার সাথে দাড়িয়েছিলাম,
কৃষ্ণচূড়া ফুলফোটানো মুগ্ধকর গাছের নিচে।
বাতাসে শূন্য ভাসছিলো ফুলগুলো মাথার উপরে।

তোমার সাথে দেখা হবে কি?এমনটি করে,
নাকি আমার লাল রঙের সপ্ন হারিয়ে যাবে
কোন এক কালো রঙের আড়ালে।
নাকি লাল হয়ে ওকি দিবে আমার হৃদয়ে।

আমার পৃথিবীর --- সাব্বির সেখ



আমি অপেক্ষায় আছি সেই পৃথিবীর,

যেখানে স্বপ্নরা বিকশিত হবে পূর্ণতার সৌরভে।
যেখানে শিশুরা অট্টহাস্যে মুখরিত করবে তোমাকে আমাকে ।

যেখানে হবে না তারা শিকার বিকৃত যৌনতার।
ভালোবাসার পরম স্নেহাশিসে লালিত হবে সবার।

আমি অপেক্ষায় আছি সেই পৃথিবীর ---

যেখানে হিংসা বিদ্বেষ ঠাঁই পাবে কিতাবের পাতায়।
আলো যেখানে অন্ধকারে আঘাত হেনে সূচনা করবে নতুন প্রভাতের।

আমি অপেক্ষায় আছি সেই পৃথিবীর ---

যেখানে বিশ্বাস পূজিত হবে পরম মানবগুন রূপে -
সততা আর ন্যায় পরাজিত হবে না অর্থের দাপটে।

অধিকার যেখানে দয়া নয় সমতার আধার।
ভালোবাসা যেখানে স্বার্থে নয় হৃদয়ে জাগরিত হয়।

রক্তাক্ত কুমারিত্ব ও কতগুলো বুক ভাঙা আর্তনাদ -শাহীন রায়হান



রাতের দেয়ালে ঠেস দিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে
বুক ভেঙে বেড়িয়ে আসা কতগুলো রক্তাক্ত আর্তনাদ।
এক অনাবৃত ক্ষত বিক্ষত বৃন্তচ্যুত অপরূপ
দেহের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলো ওরা।
.
দেহটা ছিলো বিনম্র লাজুক মাধবীলতা
তার স্বপ্ন ছিলো ঝর্ণার মতো উচ্ছল মনটা ছিলো
বাতাসের মতো দূরন্ত।
ছিলো মহাপ্রাচীরের মতো কুমারিত্ব  এভারেস্টসম
উচ্চতায় অনন্ত যৌবনের অহংকার।
নিঃস্বার্থ বাঁচা বাঁচানোর স্বপ্নে বিভোর
আগামীর সম্ভাবনাময়ী রাজকন্যা।
.
আজ-ও স্বপ্ন অবরুদ্ধ এক কফিনবদ্ধ লাশ
যার কুমারিত্ব বিবস্ত্র যৌবন ভূ-লুন্ঠিত
প্রতিবাদী ঠোঁটে হিংস্রতার অগনিত দাগ।
দেহটা দুর্বিনীত ঘাতকের পাশবিকতায় ক্ষত বিক্ষত
এক বিক্ষিপ্ত বিরাণভূমি।

ভারত সৈন্য ,, রৌনক হাজরা



ফিরে আসছি 'মা' তোমার কোলে,
কথা দিয়েছিলাম শেষের বারে,
এবারে বুলেট ছাড়েনি আমায়,
কফিনে আসবো পতাকায় মুড়ে।।

পালিয়ে যায়নি যুদ্ধের ময়দান থেকে,
লড়ে গেছি শরীরের শেষ বিন্দু অব্দি,
কাপুরুষ ছিলো না তোমার ছেলে,
শুধু মৃত্যুর দ্বারে হলাম বন্দী।।

বোনকে বলো রক্ষা করেছি ভারতকে,
রাখীর মূল্য দিলাম প্রান দিয়ে,
অশ্রু যেন ঝরে না দুই নয়নে,
গর্ব করে একবার দাদা বলে ধরে জড়িয়ে।।

ভাইকে বলো পড়াশোনায় মন দিতে,
উপহারে বাইক দিয়ে গেলাম তাকে,
কষ্ট পেয়ে ভেঙে যেন না পরে,
রক্ষা করতে হবে তার ভূমি মা'কে।।

বাবাকে দিলাম সমস্ত দায়িত্ব থেকে ছুটি,
ফিরে আসবো  তোমার সন্তান রুপে,
মনের মানুষকে বলো সম্পর্কে টানলাম ইতি,
নিজেকে বারেবার দেবো,এই ভূমিতে সপে।।

             

ব্যাকুলতা... অয়ন চ্যাটার্জি



আজ কেমন যেন কেটে গেছে মনের ত্রাস,
হয়তো বুঝি মন পেয়েছে প্রেমের নিঃশ্বাস।

দেখেছি তো তোমায় আমি বহুবার,
পেয়েছি তোমার মধ্যে স্বপ্নের বাস্তব দ্বার।

লিখেছি আজ তোমা পদ্যের ফুলবাগানে,
আবেগ ভরা ব্যাকুলতার কথা কলমটাই জানে।

চলে গেছে সকল বিষন্ন, মন যে আনন্দিত,
আজ একটু বেশি অবাধ্য মন আর শিহরিত।

রাতের তারাভরা আকাশ দেখে মনে ওঠে ব্যাকুলতা,
তার মাঝেই দেখেছে মন তোমায়  এ তার উন্মত্ততা।
    

ফোন আসক্তি.. আফরোজা সুলতানা



মানুষ যে বড় ব্যস্ত,
পুরো পৃথিবীটা মুঠোয় বন্দি করে
সেল ফোন নিয়েই মত্ত।
তাই তো চোখে চোখ রেখে কথা হয় না
পাড়ায় ক্রিকেট এর হৈচৈ শোনা যায় না
মাঠের বুকে দৌড়ে ফোরিং ধরে না কেউ
চা এর দোকানে হুল্লোর মাখা আড্ডা দেখা যায় না..
আরে সেল ফোনের মধ্যেই যখন দোকান
বাইরে এক পা হাঁটারও প্রয়োজন পড়ে না
'আসুন দিদি' ডাকটা বোধ হয় একদিন হয়ে যাবে লুপ্ত;
ক্রেতা বিক্রেতার সম্পর্ক আর গড়ে উঠবে না ।
মনের অবস্থাটা ঠিক কিরকম
তা জানে না বাড়ির লোকজন
তবে বন্ধুত্বের অনুমতি গৃহীত হওয়া
লোকগুলোকে জানানোটা খুব প্রয়োজন
হাজার বন্ধুর লাইক পেয়ে ওদের আনন্দ হয় ভারী
অবশ্য এসব কিছু কে বুড়ো আঙুল আমিও দেখাতে পারি!

আলো ছায়ার কথামালা --- হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। পঁয়ত্রিশ ।।



               খুব ছোটবেলায় একা একাই সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম। তার মানে এই নয় যে আমি কারও সঙ্গে মিশতে চাইতাম না বা মিশতে পারতাম না। আর পাঁচটা মানুষের মতো স্বাভাবিক সব গুণই আমার ছিল। তবু একা একা থাকতে হলে আমার খুব একটা অসুবিধা হতো না। ছোটবেলায় আমাকে একা রেখে কেউ বাইরে গেলে অথবা এখনও যখন প্রয়োজনে একা থাকতে হয় তখন আমার তো বেশ ভালোই লাগে। তখন কলেজে পড়তাম, ট্রেনের জন্যে স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি, ট্রেন আসতে দেরি করছে ; কত মানুষ কত কি বলছে। আমার বন্ধুরাই কত কিছু বলত। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। আমি একটুও বিরক্ত হতাম না। বরং ট্রেন আসতে দেরি হলে আমার বেশ ভালোই লাগতো। আমি বসে বসে কবিতা পড়তাম। তাই আমার কাছে কেউ ট্রেনের আসা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করত না। কারণ ওরা জানতো, আমাকে বলে কিছু লাভ হবে না।
               একা একা থাকলে আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারি। নিজের কোনো লেখা নিয়ে আরও গভীর চিন্তা ভাবনা করা যায়। সে যাই হোক, কোনো কিছু নিয়ে একবার ভাবনার গভীর জলে ডুবে গেলে আর দেখতে হবে না। তখন কে কোথায় আছে, আমিই বা কোথায় কি জন্যে বেরিয়েছি সব ভুলে যাই। তখন আমিই আমাকে সঙ্গ দিই। আমার কোনো ভালো লাগা নিয়ে আমিই আমাকে একটা বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যাই। এটা সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন জগৎ। এই জায়গায় কারও সঙ্গে কারও দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই কারও জন্যে মনে কোনো অভাব বোধ জাগ্রত হয় না। আত্মমগ্নতার চূড়ান্ত স্তরে গিয়ে পোঁছানো যায়।

হে গিরিরাজ... অভিজিৎ দাসকর্মকার



তারপরও
ছায়ারাও বাবার আচরণে
বৃক্ষের নীচে দাঁড়ায়-

বিস্তীর্ণ কাঁসাইয়ে কৃষ্ণগহ্বর
নদীর সাথে শুয়ে আছে
স্নানঘাট গুলি
কাব্যের স্পষ্ট একাকিত্ব,আর-
নাব্যতার বৈধব্য নিয়ে-

মহড়া সাজাও
হে গিরিরাজ,!
আজ কিছুটা আলতা পরে
হেমলক খাবো
তোমার সোসাইটির সক্রেটিস বলে...

নিয়ম,, বৈশাখী গোস্বামী



একঘেয়েমি যাপন শেষ করে
রাত ভোর হয় নতুন অভ্যাসে,
ক্যালেন্ডার বদলায় না সময়ে
বছর পুরোনো দেবতার দোঁহাই,
অথচ নিত্য প্রতিমার বিসর্জন!
প্রতিকৃতিই পূর্ণ সহায়।

নিয়ম বানায় নিয়ম ভেঙে
নিয়ম মানি সমাজ নামেই।
প্রমাণ লোপাট যুগ পেরিয়েও
চোখ সয়ে যায়, চোখ সরিয়ে
মাত্রা মানলে মাত্রাতিরিক্ত
মাত্রা ছাড়ায়, অনাশক্ত ।

সুখ:শাহীন রায়হান




আমার শ্যাওলা ধরা ভাঙা হৃদয়ে
 চির সবুজ ছত্রাক তুমি মরুর বুকে
 বয়ে যাওয়া এক অনন্ত সুখের
প্রবাহমান জলচ্ছবি।
 তোমায় নিভৃত নিশীথে দেখাতে সুখ
 স্পন্দিত হৃদয়ে লেখাতে সুখ
 প্রেমময় স্পর্শ অনুভব অনুভূতিতে
 সুখ তোমার গভীরতম অন্দরে
 সুখ অরণ্যময় বাহিরে
 সুখ কাল কালান্তরে ছুঁয়ে থাকা
মধ্যরাতের সুখচ্ছবি তুমি।
 আমি সুখ সমুদ্রে নোঙর ছিঁড়ে পাল তোলা এক
নিরুদ্দেশ নাবিক- জীবন কম্পাসে
 উষ্ণ স্পন্দন দেখে দেখে মনে হয়
 তোমাতে মরি তোমাতে থাকি বেঁচে।

তোমার অপেক্ষায়: সাব্বির সেখ




একদিন আমিও হেঁটেছিলাম কালবৈশাখীর ঝড়ে,
বিবর্ন আকাশে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষায়।
একদিন আমিও হেঁটেছিলাম তপ্ত ধু ধু মরু প্রান্তরে।
নীল দিগন্তে শীতল মরুদ্যানের প্রতীক্ষায়,
তারপর..


তুমি এসেছিলে বিদগ্ধ হৃদয়ে বৃষ্টির বারিধারা হয়ে,
জীবনের গোধূলিবেলায় শীতল মরুদ্যান হয়ে,
ধ্রুবতারাও হিংসে করে জ্বলেছিল তখন,
তোমার ভালোবাসায় তৃপ্ত হয়েছিল তৃষিত এই মন।

তারপর ভেসেছিলাম আমি সুখের সুনামিতে,
আবেগের ভেলায় পাড়ি দিয়ে অজানা এক দেশে.
আজও আছো তুমি, ঠিক আমার পাশে,
তবে তোমার আমার মাঝে শত বিরহের সুর বাজে.

প্রেম এসেছিল নীরবে :- তোহাদ্দেশ সেখ



তোমার মুখ ফেরানো আমার ভাবের পোড়া বাড়ি
শহরের লালচে জ্বরেও আদর কাড়ি
তোমার চোখ রাঙ্গানো আমার শেষ বিকেলের সূর্য যেমন
তবুও রাত নামলে তোমায় খোঁজে বেহায়া মন
তোমার অনিদ্রা আমার হলুদ স্বপন
আর ব্যাস্ত আঙ্গুল তোমার চুলে আদর বুনন
কোন এক আনমনা দুপুর ছুঁয়ে
হয়তো তুমি বুঝনি প্রেম এসেছিল নিরবে।

তোমার খুব ঝগড়ার ক্লাসরুম
আমার হাসতে থাকা উদাস আকাশ
তোমার চিমটি কাটা মিষ্টি ছোঁয়া কেন আমার তাতে
হাত বোলানো রাত কাটানো ভাবের প্রকাশ
তোমার রাগি মুখ আর গাল রক্তজবা
আমি শিল্পী তখন তোমার ঠোঁটে স্বপ্ন এঁকে বাচঁতে শেখা
আমার বন্ধু ভাবা আর তোমার মান অভিমান সবই
হয়তো তুমি বুঝনি প্রেম এসেছিল নিরবে।

পোষা কষ্টগুলো :- আহাম্মেদ হৃদয়



মনের ভিতরে পুষে রাখা
কষ্টগুলো ফুঁসে উঠতে চায় অন্তনির্শে

বলতে ইচ্ছে করে বজ্রকন্ঠ সুরে
আমি তো অভাগার সন্তান নয়।
তবে আজ কেনো লোকে আমাকে ডাকে
সমাজের দেওয়া নাম ধরে।

মার আদর স্নেহ ভালোবাসায়
কেটেছে আমার দিনকাল।
আজ আদর স্নেহ করার মতো কেউ নেই,
বলছি আমি এক সমাজের দেওয়া কাঙ্গাল।

হাজারো বায়না পূরণ করতে
চেষ্টায় ছিলো মা আমার।
আজ বায়না করতে মানা আমার
চেষ্টায় থাকি অন্ন যোগাতে।

বায়না আমার অন্ন দেয়না
কষ্টে কাটায় তিনবেলা।

আজ ভাগ্যর নিয়তির টানে,
রাত-যাপন করছি রাস্তার পশুদের সাথে।
এখন আমার দিনরাত কাটে
মার মতো মানুষের অবহেলা পেয়ে।

হাত পেতে বলি দুঃখি আমি
ধাক্কা মেরে বলে শালা এখানে কি?
আমি তো নবাবপুরের ছিলামনা দুঃখি।
নবাবের একমাত্র ছেলে ছিলাম আমি।

যারা আমার বাবার পদতলে ছিলো
আজ তারা আমাকে লাথি মারে।
সমাজ সেবার অন্তরালে
লুকানো ওদের লোমশ চরিত্র।

তাই, কখনো ইচ্ছে করে,
বনের হিংস্র পশু হয়ে যেতে।
ইচ্ছে করে প্রচন্ডগর্জনে
পৃথিবীটাকে কাঁপিয়ে দিতে।

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। চৌত্রিশ ।।


               আজ আমার এক ছাত্রী আমার কাছে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে হাজির। একটা প্রশ্নের ঘা সামলাতে না সামলাতে আরও একটা। প্রশ্ন শুনেই বোঝা যায়, এগুলো তার মনে অনেক দিন ধরে চেপে রাখা কথার পাহাড়। তার প্রশ্নগুলোকে পর পর সাজিয়ে দিলে ঠিক এরকম দাঁড়ায় --------- " আচ্ছা মানুষ সবসময় তার প্রিয় জিনিসটাকে নিজের আয়ত্তের মধ্যে পেতে উদ্যত হয় কেনো ? তার প্রিয় ফুলের গাছটিকে বাগানে এনে বসায়, প্রিয় রঙের জামা পড়তে পছন্দ করে, প্রিয়  খাবার খেতে পছন্দ করে, প্রিয় রঙের জিনিসের প্রতি তার একটা আলাদা আকর্ষণ থাকে। এমন কি মানুষের ক্ষেত্রেও।  সে তার প্রিয় মানুষটিকে জীবনে পেতে চায়। প্রিয় জিনিস বা বস্তু বা মানুষটিকে, নিজের সব প্রিয় বিষয়গুলোকে নিজের করে পাওয়াটা কী খুব জরুরী ? "
               ভীষণ গরমের মধ্যে একটা মানুষ ঘরে ঢুকেই আগে সব জানলাগুলো খুলে দেয়। তারপর পাখাটা চালিয়ে দিয়ে মেঝেতে একটু বসে। ক্লান্তি বেশি থাকলে ঠাণ্ডা মেঝেতে সে শুয়েও পড়তে পারে। কিছুক্ষণ পরে স্নান করে সে বারান্দার ঠাণ্ডা হাওয়ায় এসে বসবে। এই যে মানুষটা বাড়ি ফিরে পর পর কাজগুলো করে গেল সবগুলোই তার ভালোলাগা। প্রিয় বলেই সবগুলোকে সে কাছে ডেকে নিল। শুধু তাই নয়, প্রিয় জিনিসগুলো তাকে ভালোও রাখলো।
               এবার একটু অন্য দিকে তাকাই। প্রিয় ফুল, প্রিয় পোশাক, প্রিয় খাবার ------ এগুলো তো আসলে খণ্ড খণ্ড আমি। এসবের যোগফলই তো সম্পূর্ণ আমি। এগুলো কেন প্রিয় ? কারণ এগুলো আমাকে ভালো রাখে। এগুলোর সংস্পর্শে আমি ভালো থাকি। আমার মাথার ওপর যে পাখাটা ঘুরছে, আমি চাইবো না পুরো গরমটায় পাখাটা আমার মাথার ওপর যেন সবসময় ঘোরে ? যে যে খাবারগুলো আমি ভালোবাসি আমি চাইবো না সারা বছর যেন আমি ওই খাবারগুলো খেতে পাই ?
               " নিজের সব প্রিয় বিষয়গুলোকে নিজের করে পাওয়াটা কী খুব জরুরী ? " ------- হ্যাঁ,  অবশ্যই জরুরী। তা যদি না হয় তাহলে তো ওই প্রচন্ড গরমের মধ্যে ক্লান্ত মানুষটার মাথার ওপর পাখাটা বন্ধ করে দিতে হয়। রৌদ্রদগ্ধ পথিক গাছের নিচে না দাঁড়িয়ে প্রখর রোদে দাঁড়িয়েই বিশ্রাম নিতে পারত। কিন্তু তা তো হয় না। সে তখন শীতলতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়।
               প্রতিটা মানুষ চায়, তার চারপাশে যেন সবসময় ইতিবাচক আবহাওয়ার প্রাধান্য থাকে। যদিও তা মানুষ পায় না কিন্তু যাত্রাটা সেদিকেই থাকে।

গাছের ভিতরে অভ্যাস লিখেছি : অভিজিৎ দাসকর্মকার



আজ হঠাৎ প্রতিফলিত হচ্ছি
জিভের ভিতর
পতঙ্গভূক হয়েছি স্ত্রী-লিঙ্গেরই ছায়া বরাবর।

গাছের ভিতরে অভ্যাস লিখেছি।
আমি ভিজেছি
         নীলা আর মেঘমিলনে-

আনন্দ একপ্রকার লাফদড়ি-
নদীতে হাসিনি কেনো বিকেল জানে
অথচ
ওখানে চলছে রাসায়নিক আড্ডা
পাখি নেই
ফটোগ্রাফার নেই
শুধু রেশম আছে, তারপরও-
          ভাঙা গালের
তোবড়ানো কথায় কাঠপোকার গায়ে
দক্ষিণ-পূর্ব হয়ে যাচ্ছি...

মিলাপ :-তাপসী লাহা





আহা মন , রোদ ছায়ার এই নিত্য খেলায় অংশ নাও যখন মেঘের গুড়্গুড় তখনও ভোরের প্রথম আলোর মত কিছু সত্য।

জানালার শিক কেটে মন ভালোরা তাও ঢুকে পড়বে  ঘরের মেঝেয় আর পাখিদের সম্মিলিত কোরাস কলরবে বুঁদ হয়ে কাঠবেড়ালি হাওয়ারা বলবে ও লো, সই, আয় রে আয় , এই আমাদের কিচিরমিচির এতেই আছে তোর অসুখের দাওয়াই।

কান পাশে একটু আলতু ঠোটমগ্নতা,
আর অবাক মন্ত্রের পিহুকণায় তুই আবার সেই  তেপান্তরে হারিয়ে যাওয়া রাজকন্যার হইচইরবে প্রত্যাবর্তন।

  যে  পথ তোর ফেরা চিনে নেবে,দুধারে সারি সারি গাছ,নাম জানা, নাম না জানা ওদের বিভঙ্গে শুধু হর্ষ,রুপ আর মোক্ষ।

আর সব জীব, জড় আর আনন্দের কোলাজে কাহার্বা বেজে ওঠবে তোর বাহারি ঘাঘরার আন্দোলিত ছন্দে। ফুলে ফলে সুগন্ধের মাতাল করা এমন প্রজাপতির মতন ক্লেদহীন আকাশে  সুর ঘনাবে চিরমলনের।

রাতের ভাঁজে চশমাকাচে:- সৌমেন দাস




রাত বাড়ে

ফ্যাকাশে হয় অনুভূতির মানিপ্লান্ট

শেষ চুমুকে পেয়ালাজুড়ে উঁকি দেয়
কত শত কাহিনিরা

শীর্ণ হয়ে আসে খুশির রেখা

টেবিলে রাখা নতুন চশমাটাও ঠাট্টা করে

ভিজে যায় নিরিহ দুটি চোখ

আর পদ্যরা সব গদ্যপাড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে …

ফাঁকি দিয়ে :- মান্নুজা খাতুন ( মালা)



ফাঁকি দিয়ে যদি লুকায় মাগো
মেঘের আড়াল কোনে
দিনের শেষে হন্য হয়ে
খুজবি কি আর পথে?

খাবার খেতে বসবি যখন
চিনু মিনুর সাথে
আমার অনুপস্থিতি দেখে
ডাকবি কি আর খেতে?

দিনের শেষে ফিরতে হলে দেরি
বারে বারে করবি কি আর খোঁজ
পদধ্বনি শুনলে মাগো
দু চোখ রোষে আগুন করে
বকবি কি মা রোজ?

ছোট্ট আমি ভয় পেলে মা
গভীর রাতের শেষে
উঁকি মেরে দেখবি কি মা
দোরের আড়াল হতে!
সত্যি করে বল না মা আমায়!
তোর ওই বন্য চোখের দুপথ বেয়ে
ফেলবি কি আর অশ্রুধারা
দীর্ঘদিনের জন্য যদি
লুকায় মাগো কোথাও।।

ভুলটুল: রাকেশ কুণ্ডু




প্যাকেট ভর্তি নিকোটিন আর
বুকের ভেতর তাসের দেশ ।
অন্ধকারে ঠোঁট পুড়ে যায়
করতে গিয়ে হিসেব নিকেশ ।

সাক্সেস রেট নামছে দ্রুত
হচ্ছে উঁচু ভুলের পাহাড় ..
জিতবো বলেই নামছি মাঠে ..
তবুও দেখো হারছি 

ভালো থেকো : রৌনক









চলতি পথে সেই দেখা যে হলো,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন,
ঝড়ের পূর্বে সব শান্ত হয়ে গেলো,
অতীতের কাছে বাকি আছে ঋণ।।

শেষের দেখায় কান্না ছিলো চোখে,
এখন হাসি ঝরে ঠোঁটের কোনে,
থমকে গেলাম হঠাৎ তোমায় দেখে,
নামলো শ্রাবন চোখের মধ্যিখানে।।

আকাশ তখন মেঘলা হয়ে আসে,
স্মৃতি থাকে বৃষ্টির প্রত্যেক ফোঁটায়,
সব ভুলে মন তোমাতেই ভাসে,
মৃত ইচ্ছে জ্যান্ত হয় হৃদয় আঙিনায়।।

পরনে লাল চোখে কাজল লাগছে বেশ,
হয়তো আজ প্রয়োজন নেই আমার,
গল্পটা হয়েছে অনেক আগেই শেষ,
মহোৎসবে মেতেছে দেশ তোমার।।

বছর আটেক গেলো বিচ্ছিন্ন হয়ে দুজন,
সময়ের হিসাব বলছে অনেক কথা,
গেলো দিনে ছিলাম তোমার স্বজন,
দিনের গভীরে সয়ে গেছি  ব্যথা।।

হাজার প্রশ্ন ঠোঁটের কোনে রয়,
উপাধি'তো প্রাক্তন দিয়েছে সমাজ,
ভীষণ জ্বরে মন, তোমার কথাই কয়,
খুশিতে ভরুক তোমার মনখারাপী সাঁঝ।।

বাতাস মেতেছে নতুন গানের সুরে,
রাজ্য আমার ধ্বংসের মুখে প্রায়,
গেলে অজুহাতের পাহাড় গড়ে,
ভাবি কি করে তোমায় মোছা যায়।।

ভালো থেকো তুমি তার ভালোবাসায়,
আমার ইচ্ছেদের মৃত্যু হোক তোমার সকল আশায়।।

               

পায়ে পায়ে বিকেল বেলা : বৈশাখী গোস্বামী





পায়ে পায়ে বিকেলবেলা,
পথ গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে
কে লেখে, কার কথা?
শুধু গল্প বলার ছুতোয়
আটকে গেছে বিকেল শেষের ঠোঁট
জমিয়ে রাখা মুঠোফোনের মুঠোয় ।
একটা দু'টো চলতি পথ
হালকা হওয়ার নেশায়,
পথ গড়িয়ে ফিরতি পথ
সরল নাকি ব্যস্তনুপাতিক হারে?
থমকে যাওয়া সমীকরণ শেষে
হাঁটতে থাকি মনখারাপের দেশে।

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






।। তেত্রিশ ।।


               বিকেলবেলা। গ্রামের একটি বাস স্টপেজ। একটা পাড়াই বলতে গেলে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কিছু মানুষ। একটা গাছের গোড়া গোল করে বাঁধানো। ঠিক তার পাশেই একটা ঠাকুরের বেদি। দু'একটা দোকান।
               রাস্তার ওপারে একটা টাইম কল। মুখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে যাচ্ছে। বেশ জোরেই। আমি এ নিয়ে দু'এক কথা বলতেই দু'একজন কথা বলে উঠল। তারা বললো, কল বন্ধ করে কিছু করতে গেলে পাইপ ফেটে যাবে। আমি অন্য টাইমকলের কথা উল্লেখ করে বললাম, কেন, অন্যান্য কলের পাইপগুলো তো ফেটে যাচ্ছে না। ওরা বললো, এই কলটা অন্য জাতের। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
               একটা জিনিস লক্ষ্য করে আমি অবাক হলাম। আশে পাশে কত মানুষ। এদের মুখে একবারেও জন্যেও আমি জল নিয়ে কোনো কথা শুনলাম না। আমি নিজে থেকে বললাম কিন্তু কেউ ব্যাপারটাকে বিশেষ পাত্তা দিল না। একজন শুধু বললো, মুখে প্যাঁচ একটা লাগানো হয়েছিল কিন্তু একদিন যেতে না যেতেই হাওয়া।
               নিজেরটুকু ছাড়া দেশের অন্য আর সকল কিছুকে আমার বলে দাবি করার ইচ্ছাটা এদেশের মানুষদের মধ্যে জন্মাল না কেন? শুধু তাই নয়, কৃত কর্মের জন্য মানুষের কোনো অপরাধবোধ নেই, লজ্জা তো কোন কালে ত্যাগ করে ফেলেছে।
               গ্রাম বলেই চিন্তাটা বেশি হয়। শহরের ইঁট কাঠ পাথরের মানুষ তো নয়। মাটির মানুষেরাও এসব নিয়ে ভাববে না ? আমরা তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ?
               ওখানে যতক্ষণ ছিলাম কি অস্বস্তিটাই না হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এখনই বাস চলে আসুক। আমি এখান থেকে পালিয়ে যাই।



(চলবে ..)

দশচক্র : সিদ্ধার্থ সিংহ





হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে ঋজু আর পরমার্থ অপেক্ষা করছিল। ওরা একটু আগেই এসেছে। গত কাল রাত সাড়ে বারোটায় অফিস থেকে বেরিয়ে নীচে যখন ড্রপ কারের জন্য অপেক্ষা করছে ঋজু, তখন হঠাত্‌ই পরমার্থ ওর কাছে এসে বলল, এই রে, আশিস তোমাকে বলতে বলেছিল। একদম ভুলে গেছি। কাল দাঁতনে একটা উত্‌সব আছে। সেখানে কবিতা পাঠেরও ব্যবস্থা আছে। ও তোমাকে বারবার করে যেতে বলেছে। তুমি যাবে?
ঋজু কী ভাবছিল। ও কিছু বলছে না দেখে পরমার্থ ফের বলল, কাল তো তোমার অফ ডে। চলো না।
— কখন?
— কাল সকালে। সাতটার সময়। হাওড়া থেকে।

হাওড়া থেকে ঋজুর বাড়ি খুব একটা দূরে নয়, চেতলায়। ওখান থেকে একটাই বাস। সতেরো নম্বর। কখন আসে কোনও ঠিক নেই। তাই হাতে একটু সময় নিয়েই ও বেরিয়েছিল। কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার আগেই দেখে বাস আসছে। ফলে সাতটা নয়, তার অনেক আগেই ও চলে এসেছে। এসে দেখে, অফিস থেকে অত রাতে বাড়ি গিয়েও এই সাতসকালেই সেই বিরাটি থেকে পরমার্থও এসে হাজির। ঘড়িতে তখনও সাতটা বাজতে মিনিট দশেক বাকি।
ও সামনে আসতেই পরমার্থ বলল, চা খাবে?
— ওরা আসুক না। একসঙ্গে খাব। ট্রেন ক’টায়?
— তা তো জানি না। আশিস তো বলল, সাতটার সময় এখানে দাঁড়াতে।
— এখানেই বলেছে তো?
— হ্যাঁ রে বাবা...
— সাতটা তো প্রায় বাজে।
— এখনও বাজেনি। আসবে তো সেই সল্টলেক থেকে। সবার বাড়ি তো আর তোমার মতো হাওড়া স্টেশনের পাশে নয়, যে বাসে উঠলাম আর হাওড়ায় পৌঁছে গেলাম। চা খাবে? ওই তো আশিস...
ঋজু দেখল, শুধু আশিস নয়, ট্যাক্সি থেকে একে একে নামছে আরও তিন জন। তার মধ্যে দু’জন মহিলা।
আশিস কাজ করে আকাশবাণীতে। পরের সপ্তাহে রেডিওতে কী কী অনুষ্ঠান হবে, সেই অনুষ্ঠান-সূচি আনতে প্রত্যেক সপ্তাহে পরমার্থকে যেতে হয় ওর কাছে। আনন্দবাজারের যে দফতরে ও কাজ করে, সেখানে প্রুফ দেখা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ওই অনুষ্ঠান-সূচি এনে কম্পোজ করে দেওয়া ওর কাজ।
এই কাজ করতে করতেই আশিসের সঙ্গে ওর বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সেই সূত্রেই পরমার্থ যেমন জেনেছে, ও লোকসঙ্গীত গায়। কবিতা লেখে। দুটো কবিতার বইও বেরিয়েছে। শুধু ও একাই নয়, ওর বউ রিনাও কবিতা লেখে। তেমনি আশিসও জেনেছে, পরমার্থও ইদানিং কবিতা লিখতে শুরু করেছে। অনেক কবির সঙ্গেই ওর আলাপ আছে। ওর মুখেই ঋজুর নাম শুনে আশিস বলেছিল, উনি কি আপনাদের অফিসে কাজ করেন নাকি?
— কেন, আপনি চেনেন?
আশিস বলেছিল, না, আলাপ নেই। তবে ওর অনেক কবিতা পড়েছি। উনি তো প্রচুর লেখেন। এত লেখেন কী করে? আপনার সঙ্গে ওনার কী রকম সম্পর্ক?
পরমার্থ বলেছিল, ভালই। ও তো আমাদের ডিপার্টমেন্টেই আছে।
— তাই নাকি? পারলে এক দিন নিয়ে আসুন না, জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।

ঋজুকে সে কথা বলতেই ঋজু বলেছিল, ঠিক আছে এক দিন যাবখ’ন। কিন্তু আজ নয়, কাল নয়, করে আর যাওয়া হচ্ছিল না। তাই পরমার্থ এক দিন ওকে বলল, আরে বাবা চলো না, গেলে তোমার লাভই হবে। ও এখন অভিজ্ঞানটা দেখে। কবিতা পড়ার জন্য ওর পেছনে কত লোক ঘুরঘুর করে, জানো? আর ও নিজে থেকে তোমাকে ডাকছে, তুমি যাবে না? ওখানে কবিতা পড়লে পাঁচশো টাকা দেয়।
তাতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিল না দেখে ঋজুকে প্রায় জোর করেই ও একদিন নিয়ে গিয়েছিল আকাশবাণীতে। সেই আলাপ। তার পর এই।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে কাঁধের ব্যাগটা সামলাতে সামলাতে লম্বা লম্বা পা ফেলে ওদের সামনে দিয়ে যেতে যেতেই আশিস বলল, চলে আসুন, চলে আসুন। দেরি হয়ে গেছে।
ও আগে আগে। পেছনে ঋজুরা। তারও পেছনে ট্যাক্সি থেকে নামা বাকি তিন জন।
কাউন্টারে তেমন ভিড় ছিল না। টিকিট-ফিকিট কেটে ওরা ট্রেনে উঠে পড়ল। না। ট্রেনেও খুব একটা ভিড় নেই। ছুটির দিন। তাই ফাঁকা ফাঁকা। একটা খোপেই ওরা সবাই বসার জায়গা পেয়ে গেল। এ দিকের সিটে ঋজু, পরমার্থ আর ট্যাক্সি থেকে নামা কোর্ট-প্যান্ট পরা ওই ভদ্রলোক। বাকিরা উল্টো দিকের সিটে। ট্রেন ছাড়ার আগেই আশিস সবার সঙ্গে সবার আলাপ করিয়ে দিল। কোর্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোকটাকে দেখিয়ে বলল, ইনি মহাদেব মোশেল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। বিবাহের ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক একটা বই লিখেছেন। এ ছাড়া ছড়া-টাড়াও লেখেন। আর ইনি হচ্ছেন কণিকা রায়। কলকাতা টেলিফোন্‌সে কাজ করেন। এখন টেলিফোন ভবনে, না? কণিকার দিকে তাকিয়ে নিজেই যেন তার কাছে জানতে চাইল। তার পরে বলল, ক’দিন আগে ওর একটা সুন্দর কবিতার বই বেরিয়েছে। আর এর পরিচয় কী দেব, ইনি আমার গিন্নি, রিনা গিরি।
ঋজু মহাদেববাবুর দিকে তাকাল। মহাদেববাবু আর কণিকার কথাবার্তা দেখে হঠাৎ কেন জানি ঋজুর মনে হল, ওদের মধ্যে কোনও একটা সম্পর্ক আছে।
বেশ কিছু দিন আগে স্কটিশ চার্চ কলেজের সামনে জটলা দেখে ও দাঁড়িয়ে পড়েছিল। জটলার মধ্যমণি মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রমহিলা। তাঁর অভিযোগ, তাঁর স্বামী এই কলেজে পড়ান। তাঁরই এক ছাত্রীর সঙ্গে তিনি প্রেম করেন। তাঁকে বহু বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। তাঁর বড় বড় ছেলেমেয়ে আছে। তারা স্কুলে পড়ে। স্কুলের মাইনে পর্যন্ত উনি দিচ্ছেন না। সংসার খরচা তো নয়ই। সব ওই মেয়েটার পেছনে ঢালছেন। তাই শেষ পর্যন্ত উনি নাকি থানায় গিয়েছিলেন। থানা থেকেও ভদ্রলোককে ডেকে বলে দিয়েছে, যাতে তিনি ঠিকঠাক মতো সংসার করেন। বউয়ের গায়ে যেন হাত না তোলেন। অথচ তার পর থেকেই তিনি আর বাড়ি ফিরছেন না। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য উনি কলেজে এসেছিলেন। কিন্তু টিচার্স রুমের সামনে যেতেই উনি তাঁকে দেখতে পেয়ে যান। অমনি ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে এক দৌড়। ভদ্রমহিলা এখন বলছেন, উনি এ দিকেই এসেছেন, আপনারা কেউ কি দেখেছেন? ঘিয়ে রঙের জামা পরা। কালো প্যান্ট। চোখে চশমা। মাথায় পাতলা-পাতলা চুল...
ওই দৃশ্যটা মনে পড়ে গেল ঋজুর। মহাদেববাবু আবার সে রকম নন তো! ঘরে বউ-ছেলেমেয়ে সব আছে। আর বাইরে এর সঙ্গে... এরা নিশ্চয়ই স্বামী স্ত্রী নন। ওঁর পদবি তো রায়। আর এঁর মোশেল।
টুকটাক কথা হচ্ছিল। ঋজু কথায় কথায় মহাদেববাবুকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কোথায় থাকেন?
উনি বললেন, সল্টলেকে।
— সল্টলেকে কোথায়?
— তেরো নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে।
— আর আপনি? কণিকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল ঋজু।
— আমিও সল্টলেকে।
— সল্টলেকে কোথায়?
— তেরো নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে।
— ও। দু’জনেই কাছাকাছি থাকেন?
হঠাত্‌ মহাদেববাবু বলে উঠলেন, কাছাকাছি নয়, খুব কাছাকাছি। একই বাড়িতে। একই ঘরে। আসলে আমি ওর বাড়িতে থাকি।
কথাটা শুনে একটু থতমত খেল ঋজু। এত দিন ও শুনেছে, ছেলেরা মেয়েদের রক্ষিতা রাখে। এ তো উল্টো কেস। মেয়েটা এঁকে রেখেছে! নাকি মেয়েটা তাঁর বাড়িতে পেয়িং গেস্ট চালায়! ঋজু ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা কী? ও তখন মনে মনে ওর মতো করে দুই আর দুইয়ে চার করার চেষ্টা করছে।
তখন আশিসই বলল, এখনও বুঝতে পারলেন না, ওরা কর্তা-গিন্নি। ওদের আনতে গিয়েই তো এত দেরি হয়ে গেল।
কণিকা বলল, আমার কোনও দোষ নেই। আমি তো আসব না বলেই দিয়েছিলাম। কিন্তু রিনা গত কাল রাতে এত বার করে বলল যে, না এসে থাকতে পারলাম না। আর তা ছাড়া ছুটির দিনে এত তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস নেই তো...
ওকে মাঝপথে থামিয়ে মহাদেববাবু বললেন, আমি কিন্তু তোমাকে সাড়ে পাঁচটায় ডেকে দিয়েছিলাম।

ট্রেন চলছিল। কথা হচ্ছিল। জানালা দিয়ে হুহু করে হাওয়া আসছে। কণিকার কপালের দু’দিক দিয়ে নামানো দুটো লকস বারবার ওর চোখের উপরে এসে পড়ছে। হঠাৎ মহাদেববাবু তাঁর কোর্টের ভিতর পকেট থেকে একটা ছোট্ট পকেট-বুক বার করে ঋজুর দিকে এগিয়ে দিলেন— এটা বহু দিন আগে বেরিয়েছিল। তখন ছড়াই লিখতাম। এখন আর সময় পাই না।
ঋজু উল্টেপাল্টে দেখছে। একটা পড়তে গিয়েই হুচোট খেল। প্রচ্ছদ দেখে মনে হয়েছিল ছোটদের বই। কিন্তু এ কী! বইটা বন্ধ করে আশিসের দিকে এগিয়ে দিল। আশিস বলল, এটা আমি আগেই দেখেছি।
শব্দ ক’টার মধ্যে বইটা হাতে নেবার সামান্যতম সম্ভাবনা না দেখে রিনার দিকে বাড়িয়ে দিল ঋজু। বইটা হাতে নিয়ে রিনা বলল, এটা আমার পড়া। যখন বেরিয়েছিল, তখনই উনি দিয়েছিলেন। এখনও বোধহয় বাড়িতে আছে।
পরমার্থ বলল, ঋজুর কিন্তু অনেকগুলো বই আছে। তার পর ঋজুর দিকে তাকিয়ে বলল, সঙ্গে আছে নাকি?
— হ্যাঁ, আছে বোধহয়। বলেই, কাঁধের ব্যাগ থেকে দুটো বই বার করল ঋজু। একটা গল্পের আর একটা কবিতার।
পরমার্থ গল্পের বইটা নিয়ে আশিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, জানো তো, এই গল্পটা যখন সানন্দায় বেরোয়, তখন বিশাল হইচই হয়েছিল। ওর বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মামলা হয়েছিল।
ঋজু একটু লজ্জার ভান করে বলল, না না। আমার একার নামে নয়। আমাদের পাঁচ জনের নামে পাঁচ কোটি। আমার নামে শুধু এক কোটি।
— তাই নাকি? কী হয়েছিল? মহাদেববাবু জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠলেন।
পরমার্থ বলল, সে সময় তো সমস্ত খবরের কাগজের প্রথম পাতায় এটা বেরিয়েছিল...
— তাই নাকি? ঋজুর দিকে তাকিয়ে মহাদেববাবু বললেন, কী হয়েছিল?
ঋজু বলল, আসলে আমি তখন সানন্দায় ফ্রিল্যান্স করি। মানে, লেখা ছাপা হলে টাকা পাই। না হলে, নয়। তো, সানন্দায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সিদ্ধার্থ সরকার আর অনিরুদ্ধ ধর ছিলেন আমার খুব কাছের মানুষ। তা, ওঁরা ঠিক করলেন, উত্তমকুমারকে নিয়ে একটা টিভি সিরিয়াল বানাবেন। তো, আমিও ভিড়ে গেলাম ওঁদের সঙ্গে। লেখালিখি তখন মাথায় উঠেছে। কিন্তু না লিখলে আমার চলবে কী করে? অনিরুদ্ধদাকে সে কথা বলতেই উনি বললেন, গল্প লিখতে পারবি? আমি তখন কবিতা ছড়া লিখি। তবু বললাম, পারব। উনি বললেন, তা হলে আজকে রাতের মধ্যেই একটা গল্প লিখে ফেল। কাল বারোটা-সাড়ে বারোটার মধ্যে পিটিএসে ধরিয়ে দিস। পিটিএস মানে, যেখানে কম্পোজ হয়। আমি বললাম, তুমি দেখবে না? উনি বললেন, তোর লেখা আবার দেখার কী আছে? ঠিক আছে, প্রুফে দেখে নেব। তার পর যখন লেখাটা ছেপে বেরোল, স্টলে খোঁজ করতে গিয়ে দেখি, আশপাশের কোনও স্টলে সানন্দা নেই। সে দিনই বেলার দিকে লোকাল কাউন্সিলারের সঙ্গে আমার বাড়িতে এসে হাজির সৌগত রায়।
— কোন সৌগত রায়? আমাদের সৌগত রায়? অধ্যাপক?
পরমার্থ বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, কংগ্রেসের এমএলএ।
— তার পর?


ক্রমশঃ...

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়







।। একত্রিশ ।।

               ভোরে উঠতে আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে গরমকালের ভোর। ভোর মানেই একটা ঠাণ্ডার বাতাবরণ। একটা সুন্দর মিষ্টি হাওয়া দেয়। গরমকালের ভোরে ওই মিষ্টি হাওয়াটাই আরও মধুর হয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষই ওইসময় মাথার বা পায়ের জানলাটা খুলে দিয়ে পাশ ফিরে শোয়। আমি কিন্তু উঠে পড়ি। এর প্রধান কারণ, ওইসময় চারপাশটা খুব চুপচাপ থাকে। মনে হচ্ছে সবদিক থেকে সবাই আস্তে আস্তে ঘুম থেকে জেগে উঠছে। এটা মনে মনে ভেবে নিয়ে চারপাশটা দেখলে চোখের সামনে সবকিছুই খুব কাছের বলে মনে হয়।
               ছোটবেলায় খুব ভোরে উঠেই পানপুকুরের পারে আমগাছতলায় ছুটতাম আম কুড়ানোর জন্যে। বেশিরভাগ দিনই আম পেতাম না কিন্তু তাতে বিরক্ত হতাম না। আসলে ভোরবেলা উঠে ভোরের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আমতলায় যাওয়াটাই আমার কাছে প্রধান ছিল। তাই আম পেলাম কি পেলাম না তাতে আমার কিছু যায় আসতো না।




।। বত্রিশ ।।



               বর্ষায় বৃষ্টির দিনগুলোতে আমার মোটেই ভালো লাগত না। মনে মনে খুব একা হয়ে যাই। এইজীবনের ফেলে আসা সময়ের মানুষজনরা আমার ভাবনার পথ আঁকড়ে ধরে। কত কত কথা যে মনে পড়ে যায় ------ অথচ আজ তারা কতদূরে। যে রোদ ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলে না, সেই আকাশ আজ মেঘে ঢাকা। চাইতে পারি না আকাশের দিকে। মনে হয় আমি যেন তার গলা টিপে ধরেছি। সে ঠিক ঠিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না। এই অস্বস্তি তখন আমার মধ্যেও কাজ করে। কিছুই ভালো লাগে না তখন।
               ছোটবেলায় বর্ষার সময় মাকে খুব জ্বালাতন করতাম। ঘুরতে ফিরতে মায়ের মুখের কাছে এসে বলতাম, " কিচ্ছু ভালো লাগছে না।" এক একসময় মা খুব রেগে যেত। সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার আগে মাকে জিজ্ঞাসা করতাম, " মা রোদ উঠেছে ? " মা ' না ' বললেই একরাশ মন খারাপ নিয়ে পাশ ফিরতাম।


(চলবে...)