নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়






আটত্রিশ


               প্রায় ত্রিশ বছর হল গৃহশিক্ষকতা করছি। কত যে অভিজ্ঞতা তা লিখলে একটা মহাভারত হয়ে যাবে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের একটা বিশেষ আচরণ। গত দশ বছরে যেটা একটা মারাত্মক আকার নিয়েছে। প্রতি বছরই আমার মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী থাকে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে পঁচানব্বই শতাংশ ছাত্রছাত্রী শিক্ষককে জানায়। এর একটাই কারণ তারা প্রায় সবাই আবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা ফলাফল প্রকাশিত হলে মাত্র কুড়ি শতাংশ শিক্ষককে জানায়। এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথম যে কারণটা সবচেয়ে বড় কারণ সেটা হল, অনেক ছাত্রছাত্রীই অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে শিক্ষকদের নিয়মিত গুরুদক্ষিণা দেয় না। তাই শিক্ষককে ফলাফল জানাতে গেলে বাকি থাকা টাকা মেটাতে হবে, সেই কারণে এই পথ আর কেউ মারায় না। দ্বিতীয় কারণ, শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীরা আজকাল আর কেউ শ্রদ্ধাভক্তি করে না। পরীক্ষার ফলাফল সবার আগে যে শিক্ষককে জানান উচিৎ সেই শিক্ষা তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে পায় নি। আর তৃতীয় কারণ হল, বর্তমানে সবকিছুই তো অর্থের অঙ্কে কেনা যায়। তাই আজকের ছাত্রছাত্রীরাও টাকা দিয়ে শিক্ষাকে কিনতে শিখে গেছে। আসলে অভিভাবকদের শিক্ষায় এই শিক্ষা তারা ভালোই আয়ত্ব করে ফেলেছে।
               বারবার অভিভাবকদের কথা বলছি একটাই কারণে, অভিভাবকরা একটু সচেতন হলেই এই চিত্র পুরোপুরি বদলে যেতে পারে। গুরুদক্ষিণার প্রসঙ্গ উঠলেই অভিভাবকদের মুখের ভাষাই হল, " কেন ? আপনাকে দেয় নি ? আমি তো মাস শেষ হলেই নিয়মমতো আপনাকে টাকা দিয়ে গেছি ! " আমি জানি উনি ভুল বলছেন না। কিন্তু টাকা দিয়েই একজন অভিভাবকের দায়িত্ব শেষ ? শিক্ষকের সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ রাখতে হবে না ? আমি তো অর্ধেকের বেশি অভিভাবককে চিনিই না। এটা কেন হবে ? অভিভাবকরা যদি শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখেন তাহলেই তো আর কোনো সমস্যা তৈরি হয় না। পড়া যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন শিক্ষকের কাছে তাঁর সন্তানের কোনো গুরুদক্ষিণা বাকি থাকল কি না সেটা ওনারা জানতে চাইবেন না ? বাকি যদি নাইবা থাকে, একটা শেষ সৌজন্য সাক্ষাৎকারও আশা করা যায় না ?
               পরীক্ষার ফলাফলের খবর সবাই পেয়ে যায়, একমাত্র শিক্ষক ছাড়া ! অথচ তিনিই আসল কাণ্ডারী। অভিভাবকরা তাঁর সন্তানকে কি শেখাচ্ছেন ? শিক্ষক----- যিনি সম্মানে সকলের আগে অথচ মান মর্যাদায় তাঁকে কোথায় রাখা হচ্ছে। তাহলে অভিভাবকরাই তাদের সন্তানদের শেখাচ্ছেন, প্রয়োজনে শিক্ষকের কাছে যাও আর আসল সময় তাঁকে ভুলে যাও। এরপরেও বাবা মাকে যদি তাঁর সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তাহলে কি সেই সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা মায়ের কোনো কিছু বলার মুখ থাকবে ? কারণ, দায় দায়িত্ব ভুলতে কে শিখিয়েছে ? দিনের পর দিন একটা অমানুষ প্রকৃতিকে আমরা প্রশ্রয় দিয়ে গেছি। আজকে তারই ফলভোগ করতে হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই: